এগ্রোবিজ
যমুনার পানিতে তলিয়ে গেছে চরের শত শত বিঘা বাদামের খেত
লেখক
প্রথম আলোপাবনার বেড়া উপজেলায় যমুনা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় চরাঞ্চলের শত শত বিঘা বাদামখেত তলিয়ে গেছে। এসব স্থানে বাদামচাষিরা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তলিয়ে যাওয়া বাদাম তোলার চেষ্টা করছেন। আবার কোনো কোনো স্থানে চাষিরা তলিয়ে যাওয়ার ভয়ে আধা পাকা বাদামও তুলে ফেলছেন। সব মিলিয়ে বাদাম চাষে চরম লোকসানের আশঙ্কা করছেন চাষিরা।
উপজেলা কৃষি কার্যালয় ও কৃষকদের সূত্রে জানা গেছে, বেড়ার চরাঞ্চলে প্রতিবছর প্রচুর বাদামের আবাদ হয়ে থাকে। এবার উপজেলার আটটি ইউনিয়নের ১ হাজার ৩৬০ হেক্টর জমিতে বাদামের আবাদ করা হয়েছে। আর দু-এক সপ্তাহের মধ্যেই বাদাম কৃষকদের ঘরে ওঠার কথা। আবাদ করা বেশির ভাগ জমির বাদাম এখনো পুরোপুরি পুষ্ট না হয়ে আধা পাকা অবস্থায় রয়েছে।
পাবনার বেড়া উপজেলায় যমুনা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় চরাঞ্চলের শত শত বিঘা বাদামখেত তলিয়ে গেছে। এসব স্থানে বাদামচাষিরা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তলিয়ে যাওয়া বাদাম তোলার চেষ্টা করছেন। আবার কোনো কোনো স্থানে চাষিরা তলিয়ে যাওয়ার ভয়ে আধা পাকা বাদামও তুলে ফেলছেন। সব মিলিয়ে বাদাম চাষে চরম লোকসানের আশঙ্কা করছেন চাষিরা।
উপজেলা কৃষি কার্যালয় ও কৃষকদের সূত্রে জানা গেছে, বেড়ার চরাঞ্চলে প্রতিবছর প্রচুর বাদামের আবাদ হয়ে থাকে। এবার উপজেলার আটটি ইউনিয়নের ১ হাজার ৩৬০ হেক্টর জমিতে বাদামের আবাদ করা হয়েছে। আর দু-এক সপ্তাহের মধ্যেই বাদাম কৃষকদের ঘরে ওঠার কথা। আবাদ করা বেশির ভাগ জমির বাদাম এখনো পুরোপুরি পুষ্ট না হয়ে আধা পাকা অবস্থায় রয়েছে।
কৃষকেরা জানান, জানুয়ারির মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু করে প্রায় এক মাস ধরে কৃষকেরা চরের বালুমিশ্রিত জমিতে বাদাম আবাদ করে থাকেন। আর সেই বাদাম জমি থেকে তোলা শুরু হয় মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে। সাধারণত জুনের শেষ সপ্তাহের মধ্যে সব বাদাম কৃষকের ঘরে উঠে যায়।
সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, তিন দিন ধরে যমুনার পানি দ্রুত বাড়ছে। এরই ফলে চরাঞ্চলের বাদামের খেত তলিয়ে যাচ্ছে। কৃষকেরা জানান, তাঁরা ঈদের পর জমি থেকে বাদাম তোলার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই উঠতি বাদাম তলিয়ে যাওয়ায় তাঁরা চরম বিপাকে পড়েছেন। ঠিক এই সময়েই আবার শ্রমিকসংকটও দেখা দিয়েছে। ফলে বাধ্য হয়ে অনেক স্থানেই চাষিরা পরিবারের নারী, শিশুসহ সব সদস্যকে নিয়ে ডুবে যাওয়া বাদাম তুলছেন। কিন্তু এভাবে বাদাম তোলার পর অর্ধেক ফলনও পাওয়া যাচ্ছে না। এর ওপর বেশির ভাগ ডুবে যাওয়া জমি থেকে বাদাম তোলা সম্ভবও হচ্ছে না।
আজ বৃহস্পতিবার উপজেলার মাসুমদিয়া, রূপপুর, হাটুরিয়া-নাকালিয়া ইউনিয়নের কয়েকটি চরাঞ্চলে গিয়ে দেখা যায়, বাদামের অনেক খেত পানিতে তলিয়ে গেছে। সেসব জমি থেকে কৃষক পরিবারের নারী, শিশুসহ সব সদস্য মিলে বাদাম তুলছেন। আবার কোথাও কোথাও তাঁরা জমি থেকে তোলা বাদামগাছ থেকে বাদাম ছাড়াচ্ছেন।
রূপপুর ইউনিয়নের দড়িশরীফপুর গ্রামের বাদামচাষি লিয়াকত আলী জানান, তিনি ৯ বিঘা জমিতে বাদামের আবাদ করেছিলেন। আর দুই সপ্তাহ জমিতে থাকলেই সব বাদাম পুরোপুরি পুষ্ট হয়ে যেত। কিন্তু যমুনার পানি হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় তাঁর চার বিঘা জমির বাদাম তলিয়ে গেছে। বাকি জমিও তলিয়ে যাওয়ার মুখে রয়েছে। তিনি জানান, তলিয়ে যাওয়া কিছু জমি থেকে তিনি বাদাম তুললেও তাতে এক–চতুর্থাংশ বাদামও মিলবে না। তাঁর জমির আশপাশে ৬০ থেকে ৭০ বিঘা বাদামখেত তলিয়ে গেছে বলে তিনি জানান।
কাজীরহাট লঞ্চঘাটে গিয়ে কথা হয় ঘাটে ভিড়ে থাকা একটি লঞ্চের চালক সাইফুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এই লঞ্চঘাটের আশপাশে প্রচুর বাদামের খেত। এসব খেত তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকদের দুরবস্থা দেখে আমরা লঞ্চের কর্মীরা মিলে গত দুদিনে প্রচুর বাদাম তুলে দিয়েছি। করোনার কারণে লঞ্চ বন্ধ থাকায় কৃষকদের সাহায্য করছি।’
বেড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মশকর আলী বলেন, যমুনায় পানি বাড়ায় বেশ কিছু বাদামের খেত তলিয়ে গেছে। তিনি সরেজমিনে দেখে এলেও তলিয়ে যাওয়া জমির পরিমাণ এখনো নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। শিগগিরই জমির পরিমাণ ও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা নির্ধারণ করা হবে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সরকারঘোষিত আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া হবে।
আপনার জন্য নির্বাচিত সংবাদ
-
ভুট্টার উপকারিতা ও চাষ পদ্ধতি: পুষ্টিগুণ এবং লাভজনক কৃষি উদ্যোগ
-
ফাতেমা ধান’ চাষে বাম্পার ফলন
-
গোল মরিচের উপকারিতা ও চাষ পদ্ধতি: পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং লাভজনক একটি ফসল
-
জমি এবং কৃষক ছাড়াই যেভাবে কৃষিকাজে বিপ্লব আনছে জাপান
-
ছোলার উপকারিতা ও চাষ পদ্ধতি: পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি অর্থকরী ফসল
-
এক গাছে পাঁচবার ধান!
-
যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশে হতে পারে সারের সংকট
-
বিদেশ থেকে খালি হাতে ফিরে ড্রাগন চাষে সাফল্য
-
নাসিরনগরে বন্যায় তলিয়ে গেল কৃষকের বাদামখেত
-
পানি দিতে অতিরিক্ত টাকা
জয়পুরহাটে পাঁচবিবি উপজেলার বিনধারার গ্রামে এবার হচ্ছে মাঠজুড়ে চায়না জাতের তরমুজের চাষ। উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের রফিকুল ইসলাম শাহিন এবং কয়েকজন প্রান্তিক কৃষক বিনধারা মাঠে প্রায় ১৫ বিঘা জমিতে চায়না জাতের ব্লাকবেবী তরমুজের চাষ করছেন।
আকারে ছোট খেতে সুস্বাধু এ জাতের তরমুজের গায়ের রং কালো হওয়ায় ”ব্লাকবেবী” হিসাবেই পরিচিত। ব্লাকবেবী চাষ অন্য ফসলের তুলনায় বহুগুনে লাভজনক।
মাচা পদ্ধতিতে বারোমাসি তরমুজ চাষ বিবেচিত হচ্ছে সম্ভাবনাময় একটি কৃষি পণ্য হিসাবে। এই তরমুজের জীবনকাল মাত্র ৬০ দিনের। ১ বিঘা জমির জন্য প্রয়োজন ৫০ গ্রাম বীজ। যার দাম ৩ হাজার ৮’শ টাকা। বিঘাপ্রতি সেড তৈরীর মালসিং পেপার ৭ হাজার ৫’শ, মাচা পদ্ধতিতে শেড তৈরীর বাঁশ আর মজুরী খরচ ১০ হাজার, সার মাটি আর বালাই নাশক স্প্রে বাবদ ৭ হাজার ৫’শ, পরিচর্য্যা মজুরী ৬ হাজার, পরিবহন খরচ ২ হাজার সর্বমোট বিঘা প্রতি তরমুজ চাষে খরচ হয় ৩০-৩৫ হাজার টাকা।
এক বিঘা জমিতে ৬০ দিনে তরমুজ উৎপাদন হয় প্রায় ১২ ’শ থেকে ১৫’শ পিস তরমুজ যার ওজন প্রায় ৪ থেকে ৪.৫ মেট্রিক টন। প্রতিটি তরমুজ ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করলে যার বিক্রি মূল্য হয় ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় নীট লাভ থাকে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা। যা তুলনামূলক অন্যান্য ফসলের চাইতে অনেক লাভজনক। একটি সেড তৈরী হলে সেই শেডে নুন্যতম তিনটি তরমুজের আবাদ করা যায়। ফলে স্থায়ী এই খরচটি পরের দু’বার হয় না। ফলে পরের দু’বারে উৎপাদন খরচ কমে গিয়ে লাভের ভাগ আরো বেশী হয়।আবার বারোমাসই এই তরমুজ পাওয়া যায় বলে এর চাহিদা বেশী। তাইওয়ানের জেসমিন-১, জেসমিন-২ ও ব্লাক প্রিন্স জাতের তরমুজে পোকামাকড়ের আক্রমণ তুলনা মূলক বলে ফসলে মার খাওয়ার ঝুঁকিও কম। গাছের গোড়ায় জলাবদ্ধতা ছাড়া এই জাতের উৎপাদন ব্যাহত হবার আর কোন কারন নেই। এই তরমুজ অনেক সুস্বাদু, পুষ্টিকর। সবচেয়ে বড় আশা জাগানিয়া কথা হচ্ছে বোরো ধান কাটার পর প্রায় দু’ আড়াই মাস জমি পতিত থাকে। দু’টি ধান চাষের মাঝে অনায়াসে একার তরমুজের ফলন সম্ভব। ফলে জমির সঠিক ব্যবহার যেমন নিশ্চিত হচ্ছে তেমনি বাড়ছে আয়। এ সব কারনে তরমুজ চাষে বাড়ছে কৃষকের সংখ্যা।
সরেজমিনে দেখাযায়, পলিথিন দিয়ে তরমুজের বীজ বোপনের জন্য বরাবর বেড তৈরী করা হয়েছে। বাশ ও জিআই তারে তৈরী ঝাংলায় তরমুজ গাছের সবুজ পাতাগুলো শোভা বর্ধন করছে। কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, পরিচিত এক বন্ধুর এ জাতের তরমুজ চাষে লাভবান হয়েছে এবং তার কথা শুনেই তিনিও শুরু করেছেন। প্রায় ৪০ হাজার টাকা বিঘা প্রতি খরচ হলেও এক থেকে দেড় লক্ষ টাকার তরমুজ বিক্রয় হবে এমন আশা প্রকাশ করেন তিনি। চায়না তরমুজ ছাড়াও তিনি টমেটোসহ বিভিন্ন ধরনের মৌসুমী সবজিও চাষ করেছেন।
সুদূর যুক্তরাজ্য থেকে ‘পোকা’ এনে সিলেটের বিশ্বনাথে খামার গড়ে তুলেছেন খলিলুর রহমান নামের এক প্রবাসী যুবক। উপজেলার খাজাঞ্চী ইউনিয়নের তেঘরী গ্রামের নিজ বাড়ির পাশে ‘হাজি বায়োসাইকেল কোম্পানি’ নামে প্যারেট পোকার (ব্ল্যাক সোল্ডার ফ্লাই) এই খামারটি গড়ে তুলেছেন তিনি। এ ধরনের পোকার খামার সিলেট বিভাগে এই প্রথম বলে জানা গেছে।
রোববার সকালে সরেজমিনে খামারটিতে গিয়ে দেখা যায়, একটি টিনসেড ঘরের ভেতরে ৫টি বড় মশারি দিয়ে সুন্দর করে তৈরি করা হয়েছে ৫টি খাঁচা। খাঁচার ভেতরে রয়েছে পোকা। আর এই পোকার খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে পরিত্যক্ত বিভিন্ন খাবার (ওয়েস্ট ফুড)।
যুক্তরাজ্য প্রবাসী খলিলুর রহমান জানান, মাতৃভূমিতে কিছু একটা করার ইচ্ছে ছিল দীর্ঘদিন থেকে। তাই জন্মভূমি বিশ্বনাথে একটি কোয়েল পাখি ও লেয়ার মুরগির খামার করি। কিন্তু কোয়েল পাখি ও লেয়ার মুরগির খাদ্যের মূল্য বেশি হওয়ায় চিন্তা করি কীভাবে কম মূল্যে খাবার সংগ্রহ করা যায়। এরপর সিদ্ধান্ত নেই একটি প্যারেট পোকার খামার করার। যাতে কম মূল্যে খামারের কোয়েল পাখি ও লেয়ার মুরগির পুষ্টিকর খাবার সংগ্রহ সম্ভব হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী যুক্তরাজ্যর একটি ফার্ম থেকে ১৫০ গ্রাম (প্রায় ১৫০টি) পোকা সংগ্রহ করে দেশে নিয়ে আসি। এরপর গত ২৬ জুন থেকে বাড়ির পাশে খামার তৈরি করে থেকে পোকার চাষ শুরু করি।
তিনি আরও জানান, পাখি ও মুরগির পুষ্টিকর খাবার ‘প্যারেট পোকা’। এই পোকায় রয়েছে ৪০ শতাংশ প্রোটিন ও ২০ শতাংশ ফ্যাট। একটি স্ত্রী পোকা ৫০০ থেকে ৬০০টি ডিম দেয়। ডিম থেকে বাচ্চা (লার্ভা) জন্ম নেয়। এরপর ২১দিনে পোকা পরিপূর্ণ হলে তা পাখি ও মুরগির খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ১৫ দিনে একটি পোকা ডিম দেয়ার উপযুক্ত হয় এবং ডিম দেয়ার পরই ওই পোকা মারা যায়। মরা এই পোকাই কোয়েল ও মুরগির প্রিয় খাবার।
পোকার খাদ্য হিসেবে উচ্ছিষ্ট ও পঁচা খাবার ব্যবহৃত হয়। চাষের জন্য প্রতি কেজি পোকা ১২ হাজার টাকা এবং পাখি ও মুরগির খাবারের জন্য ৩৫-৪০ টাকায় বিক্রি করা সম্ভব। এটি একটি লাভজনক খামার। খামারে তিন ধরনের (ভিটল, কিক্রেটস ও ব্ল্যাক সোল্ডার ফ্লাই) পোকা চাষ করা হচ্ছে।
খলিলুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে ‘বায়োকনর্ভাশন ইনোভেটিভ’ সেন্টার শুরু করার লক্ষ্যে ১৫০ গ্রাম (প্রায় ১৫০টি) পোকা ২৫০ টাকায় ক্রয় করি। বর্তমানে আমার খামারে প্রায় ৩৫-৪০ হাজার পোকা রয়েছে। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে খামারটি আরও বড় করার পরিকল্পনা আছে।
এদিকে পোকার এই ব্যতিক্রমী খামার দেখতে উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে নানা বয়সের লোকজন প্রতিদিন খলিলুর রহমানের খামারে ভিড় করছেন। মানুষের এই আগ্রহ ও কৌতুহল তাকে আরও বেশি খামারের প্রতি মনোযোগী করে তুলছে বলে জানান তিনি।
এদিকে পোকার এই ব্যতিক্রমী খামার দেখতে উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে নানা বয়সের লোকজন প্রতিদিন খলিলুর রহমানের খামারে ভিড় করছেন। মানুষের এই আগ্রহ ও কৌতুহল তাকে আরও বেশি খামারের প্রতি মনোযোগী করে তুলছে বলে জানান তিনি।
চলতি বোরো মৌসুমে সার কিনতে কৃষকদের সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা করে বেশি দিতে হয়েছে। আর সরকারকেও সার বাবদ ভর্তুকি দিতে হচ্ছে বাজেটে বরাদ্দের তিন গুণের বেশি—প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশ এখন মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) সার আমদানি নিয়ে বিপাকে পড়েছে।
ধান, আলু ও সবজি চাষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এমওপি সারের ৬০ শতাংশ আনা হতো রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে। ওই দুই দেশ নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়ায় এখন বাংলাদেশকে এমওপি কিনতে হচ্ছে কানাডা থেকে। বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়া ও আমদানিতে অনিশ্চয়তার কারণে বাংলাদেশে সারের সংকট হতে পারে। ভর্তুকির চাপ সামলাতে বাংলাদেশকে সব ধরনের সারের খুচরা মূল্য বাড়াতে হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিবিষয়ক সংস্থা ইউএসডিএর চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ‘বাংলাদেশে সার সরবরাহ ও ব্যবহারে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের এমওপি সারের ২০ শতাংশ সরবরাহ কমানো হলে সামনের বোরো মৌসুমে ধান, গম ও রবি মৌসুমের অন্যান্য ফসলের উৎপাদন ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কমতে পারে। এতে বাংলাদেশের খাদ্য উৎপাদন ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে।
এমনিতেই এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমাদের ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সারের কারণে নতুন করে যাতে আর সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
এ এম এম শওকত আলী, সাবেক কৃষিসচিব
তবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, দেশে চলতি বোরো মৌসুমে নতুন করে আর সারের দরকার হবে না। সামনে আলুর মৌসুমে ইউরিয়া, এমওপিসহ অন্যান্য সারের চাহিদা বাড়বে। ওই সময়ের জন্য সার সরবরাহ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ কানাডা ও মধ্যপ্রাচ্যের সার সরবরাহকারী দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে।
জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কানাডা থেকে মোট আট লাখ টন এমওপি সার আমদানির উদ্যোগ নিয়েছি। এ ব্যাপারে ওই দেশের সঙ্গে আমাদের সমঝোতা স্মারক হয়েছে। ফলে এই সার নিয়ে সরকারের কোনো দুশ্চিন্তা নেই। তবে সার বাবদ সরকারের বিপুল পরিমাণে ভর্তুকি বাড়ছে। এই চাপ নিয়েও সরকার ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ওই ভর্তুকি দিয়ে যাবে।’
কমানো হয়েছে চাহিদা
বাংলাদেশে চলতি অর্থবছরে ৬৯ লাখ টন রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয়েছে। এর মধ্যে ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি—এই চার ধরনের সার ব্যবহার হয় ৫৭ লাখ টন। আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের ওই চার ধরনের সারের চাহিদা কমিয়ে ৫৫ লাখ ৫০ হাজার টনে নামিয়ে আনা হয়েছে।
দেশে প্রয়োজনীয় সারের ৮০ শতাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এর মধ্যে এমওপি সারের বড় অংশ আসে রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে।
প্রসঙ্গত, ওই চারটি প্রধান সার কৃষকদের কাছে বিক্রির ক্ষেত্রে সরকার ভর্তুকি দিয়ে থাকে। চলতি অর্থবছরে সরকার প্রাথমিকভাবে সারে ভর্তুকি বাবদ ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে গত ছয় মাসে সারের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। বেশির ভাগ সারের দাম তিন থেকে চার গুণ বেড়ে যাওয়ায় সরকারকে ভর্তুকির পরিমাণ ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা করতে হয়। কিন্তু অর্থবছরের শেষের দিকে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে হিসাব করে দেখা হয়েছে, ভর্তুকির পরিমাণ এবার বেড়ে কমপক্ষে ৩০ হাজার কোটি টাকা গিয়ে দাঁড়াবে।
জিপসাম, জিংক সালফেট ও অ্যামোনিয়াম সালফেট ও ম্যাগনেসিয়াম সালফেট সারে সরকার কোনো ভর্তুকি দেয় না। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কিনে ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কাছে তা বিক্রি করে থাকেন। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষককেও বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে।
সাবেক কৃষিসচিব এ এম এম শওকত আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমনিতেই এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমাদের ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সারের কারণে নতুন করে যাতে আর সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। আর সরকারের অন্যান্য খাতের ভর্তুকি কমিয়ে প্রয়োজনে সারে ভর্তুকি বাড়াতে হবে, যাতে সারের দাম কম থাকে। কারণ, কৃষকের হাতে এখন টাকা কম। বিশ্ববাজার থেকেও খাদ্য আমদানি করা সামনের দিনে আরও কঠিন হতে পারে। ফলে দেশের উৎপাদন ঠিক রাখতে সারের দাম ও জোগান ঠিক রাখা উচিত।
মিরাজুল ইসলাম (৩৩)। ১০ বছর সৌদি আরবে ছিলেন। আকামা জটিলতায় খালি হাতে দেশে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। এক বছর বেকার থাকার পর ইউটিউবে পতিত জমিতে ড্রাগন চাষের ভিডিও দেখেন। বাবার কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে নেমে পড়েন ড্রাগন চাষে। দেড় বছরের ব্যবধানে এখন উপজেলার সবচেয়ে বড় ড্রাগন বাগান তাঁর। এ বছর খরচ বাদে আট থেকে নয় লাখ টাকা লাভের আশা করছেন তিনি।
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার ইন্দুরকানি গ্রামের বাসিন্দা মিরাজুল। উপজেলার টগরা গ্রামে দেড় একর জমিতে তিনি ড্রাগনের বাগান তৈরি করেছেন। তাঁর বাগানে এখন সাড়ে তিন হাজার ড্রাগন ফলের গাছ আছে।
মিরাজুল ইসলাম বলেন, শ্রমিক হিসেবে ১০ বছর সৌদিতে কাজ করে ২০১৯ সালে দেশে ফেরেন তিনি। আকামা সমস্যার কারণে শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। কিছু একটা করবেন বলে ভাবছিলেন। একদিন ইউটিউবে ড্রাগন চাষের ভিডিও দেখতে পান। সেই থেকে ড্রাগন চাষে আগ্রহ জন্মে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে দেড় একর পতিত জমি ড্রাগন চাষের উপযোগী করেন। গাজীপুর থেকে ৬০ টাকা দরে ৬০০ চারা নিয়ে আসেন। বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে শুরু করেন চাষাবাদ। পরের বছর জুনে ফল পাওয়া শুরু করেন।
ড্রাগনের বাগান করতে মিরাজুলের খরচ হয়েছিল ছয় থেকে সাত লাখ টাকা। ইতিমধ্যে ফল বিক্রি করে তাঁর খরচ উঠে গেছে। সাধারণত মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত গাছে ফল আসে। বছরে ছয় থেকে সাতবার পাকা ড্রাগন সংগ্রহ করা যায়। এখন পরিপক্ব ও রোগমুক্ত গাছের শাখা কেটে নিজেই চারা তৈরি করেন। ড্রাগন চাষের পাশাপাশি বাগানে চুইঝাল, এলাচ, চায়না লেবুসহ মৌসুমি সবজি চাষ করেন। এ ছাড়া ড্রাগনের চারাও উৎপাদন করে বিক্রি করেন তিনি।
মিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বাগানের বেশির ভাগ গাছে এ বছর ফল ধরেছে। গত মঙ্গলবার বাগান থেকে দেড় টন ফল সংগ্রহ করেছেন। ২৫০ টাকা কেজি দরে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পাইকারদের কাছে বিক্রি করেছেন। স্থানীয় বাজারে ৩০০ টাকা কেজি দরে ড্রাগন বিক্রি হয়। নভেম্বর পর্যন্ত আরও পাঁচ–ছয়বার বাগান থেকে ফল তোলা যাবে। আশা করছেন, খরচ বাদে এবার আট থেকে নয় লাখ টাকা লাভ থাকবে।
মিরাজুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমার বাগান থেকে চারা নিয়ে অনেকে বাড়িতে ও ছাদে ছোট পরিসরে ড্রাগনের বাগান করেছেন। আমি এ পর্যন্ত ৪০ টাকায় দেড় হাজার চারা বিক্রি করেছি।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পূর্ণ বয়সের একটি ড্রাগনের চারা রোপণের পর ২৫ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। এর মৃত্যুঝুঁকি নেই বললেই চলে। তবে কয়েক দিন পরপর সেচ দিতে হয়। বৃষ্টির পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হয়। ড্রাগন ফল চাষে রাসায়নিক সার দিতে হয় না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইশরাতুন্নেছা বলেন, মিরাজুল ইসলামকে ড্রাগন চাষে নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে আসছে কৃষি বিভাগ। উপজেলায় তাঁর বাগানটি সবচেয়ে বড়। তিনি নিরলস পরিশ্রম করে ছোট থেকে বাগানটি বড় করেছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নে অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে কৃষকের প্রায় ৩০ হেক্টর বাদাম চাষের জমি। কয়েক দিন আগে উজানের পানিতে তাঁদের পাকা ধানের জমি তলিয়ে গিয়েছিল। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষকেরা বাদাম চাষ করেছিলেন। আবারও ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ার বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হলেন চাষিরা।
উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১১ এপ্রিল উপজেলায় শিলাবৃষ্টি এবং ১৪ থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত উজানের পানিতে কৃষকের পাকা ধানের জমি তলিয়ে যায়। কৃষকেরা সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ২০০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করেছিলেন। এর মধ্যে উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নে ৩০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করা হয়। উপজেলায় এবার প্রায় ৫০ হাজার মণ বাদাম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। কিন্তু উজানের পানিতে হঠাৎ বন্যায় সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
গোয়ালনগর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আজহারুল হক বলেন, ‘নাসিরনগর উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাদাম চাষ করা হয় আমাদের ইউনিয়নে। কিন্তু এ বছর আগাম বন্যার কারণে কৃষকেরা তাঁদের ফসল ঘরে তুলতে পারেননি। তাঁদের সব ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।’
ওই এলাকার বাদামচাষি মেরাজ মিয়া বলেন, তিনি ছয় বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করেন। দু-এক দিনের মধ্যে বাদাম তুলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু খেতে গিয়ে দেখেন সব বাদাম পানির নিচে। এখন এই বাদাম তুলে কোনো লাভ নেই। এগুলো গরুও খাবে না।
মো. রজব আলী নামের এক কৃষক বলেন, ‘আমাদের ইউনিয়নের জামারবালি, সোনাতলা ও মাইজখোলা গ্রামে বাদামখেত আছে। গত তিন দিনে পাঁচ-ছয় ফুট পানি বাড়ায় সব তলিয়ে গেছে। এখন বাদাম তুলতে কাজের লোকও পাওয়া যাচ্ছে না।’
কৃষক ফতু মিয়া বলেন, গোয়ালনগর ইউনিয়নের বাদাম চাষের জমিগুলো হঠাৎ পানি আসায় তলিয়ে গেছে। ফসল তলিয়ে তাঁদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেল। কয়েক দিন আগেও পাকা ধান পানির নিচে তলিয়ে গিয়েছিল। কৃষকদের দাবি, গোয়ালনগরে বাদাম চাষের জমি তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকদের প্রায় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আবু সাইদ প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলার কয়েকটি চরাঞ্চলে বাদাম চাষ করা হয়। চরাঞ্চলের উঁচু জমিতে প্রথমে আলু চাষের পর বাদাম চাষ করা হয়। আগাম বন্যার কারণে নিচু এলাকার কিছু বাদামখেত পানিতে তলিয়ে গেছে।
আবু সাইদ আরও বলেন, ১৫-২০ দিন আগে উপজেলার প্রায় সব বাদাম উঠে গেছে। গোয়ালনগর ইউনিয়নে ৩০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করা হয়েছিল। এর মধ্যে এক হেক্টর জমির বাদাম তলিয়ে গেছে। সব মিলিয়ে ৭০ হাজার টাকার মতো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সিলেটে বন্যা হওয়ায় এমনটি হয়েছে বলে তিনি জানান।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন