আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

এগ্রোবিজ

৭ টাকার লবণ যেভাবে ৩৫ টাকা হয়

বাজারে ঝরঝরে মিহিদানার ১ কেজি লবণের দাম ৩৫ টাকা। যাঁরা অনলাইনে কেনাকাটা করেন, তাঁরা এখনই সুপরিচিত ই-কমার্স সাইটগুলোতে দাম দেখে নিতে পারেন।
আপনার হাতে যে লবণ কেজিপ্রতি ৩৫ টাকায় পৌঁছাচ্ছে, তা চাষ করে বছর বছর লোকসান গুনছেন চাষিরা। ওই এক কেজি লবণে দেড় টাকা মুনাফা করে পরিশোধনকারী কোম্পানি বিক্রি করে ২৫ টাকার কমে। লাভের গুড় আসলে খান খুচরা বিক্রেতারা, কেজিতে ৯ টাকা।

গড়পড়তা একটি পরিবারে রান্না, খাওয়া ও মাছ ধোয়ার কাজে মাসে ৩ কেজির মতো লবণ লাগেই। লবণে খুচরা বিক্রেতার লাভ যদি ৩ টাকায় সীমিত থাকত, তাহলে ১ কেজিতে একটি পরিবারের সাশ্রয় হতো ৬ টাকা। বাংলাদেশে বছরে লবণ কেনাবেচা হয় ১৭৪ কোটি কেজির বেশি। তাহলে ভেবে দেখুন, দেশের মানুষের কত টাকা বাড়তি ব্যয় হচ্ছে।

প্রশ্ন হলো, কোম্পানিগুলো কেন খুচরা বিক্রেতাকে এতটা বেশি মুনাফার সুযোগ দিচ্ছে? এর সমাধান কী? এসব জানিয়ে মাস দুয়েক আগে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি) বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোকে একটি প্রতিবেদন দিয়েছে। কিন্তু সমাধানের উদ্যোগ ততটা নেই।

লবণ খাতের সমস্যা নিয়ে ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদনের পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে কি না, জানতে চাইলে বাণিজ্যসচিব মো. জাফর উদ্দিন বলেন, লবণের বিষয়টি দেখে শিল্প মন্ত্রণালয়। ট্যারিফ কমিশন যে প্রতিবেদন দিয়েছে, সেটি শিল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে করণীয় নির্ধারণের জন্য।

চাহিদায় গোলমাল
দেশে জাতীয় লবণ নীতি নামের একটি নীতিমালা রয়েছে। এতে ২০১৯-২০ অর্থবছরে অপরিশোধিত লবণের চাহিদা দেখানো হয়েছে ১৭ লাখ টনের কিছু বেশি। ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো এ হিসাব মানে না।

লবণ মিলমালিক সমিতির হিসাবে, দেশে অপরিশোধিত লবণের চাহিদা ২৮ থেকে ৩০ লাখ টন। নারায়ণগঞ্জ লবণ মিল মালিক গ্রুপের হিসাবে ২৮ লাখ টন। আর বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) হিসাবে ২৮ থেকে ৩০ লাখ টন।
ট্যারিফ কমিশন অপরিশোধিত লবণের চাহিদা প্রাক্কলন করেছে ২২ লাখ ৩২ হাজার টন। কমিশন বলছে, লবণ নীতিতে রাসায়নিক, ওষুধ, সিরামিক, রং প্রভৃতি নানা শিল্পে লবণের চাহিদা বিবেচনায় নেওয়া হয়নি।

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি পরিতোষ কান্তি সাহা বলেন, চাহিদা কম দেখানো নানা সমস্যার কারণ। চাহিদা কম ও উৎপাদন বেশি দেখানোর ফলে বৈধ পথে লবণ আমদানি করতে দেওয়া হয় না। অবৈধ পথে আসা লবণে বাজার সয়লাব হয়ে যায়। এতে সরকার রাজস্ব হারায়। আর প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ডগুলো বাজার হিস্যা হারায়।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) উৎপাদনের যে হিসাব দেয়, তার চেয়ে প্রকৃত উৎপাদন কম হয় বলে মনে করেন মিলমালিকেরা।

ট্যারিফ কমিশনের পর্যালোচনাও বলছে, বিসিকের হিসাব সঠিক নয়। কমিশনের হিসাবে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রতি কানিতে গড় উৎপাদন ২৫০ মণ ধরে সাড়ে ১৩ লাখ টন হয়েছে। আর ৩০০ মণ ধরে উৎপাদন হয়েছে সর্বোচ্চ সোয়া ১৬ লাখ টন। অবশ্য বিসিকের হিসাবে উৎপাদন ছিল আরও দুই লাখ টন বেশি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, মিলমালিকদের একাংশ সব সময় আমদানির সুযোগ চায়। আমদানি করলে চাষিরা বাঁচতে পারবেন না। এখন কি চাষিরা বাঁচতে পারছেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, সোডিয়াম সালফেট ও শিল্প লবণের নামে ভোজ্য লবণ আমদানি ঠেকাতে হবে।

ভুতুড়ে আমদানি
চাষিদের সুরক্ষা দিতে দেশে ভোজ্য লবণ আমদানি নিষিদ্ধ। উৎপাদন কম হলে মাঝেমধ্যে আমদানির সুযোগ দেয় সরকার। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, লবণ দুভাবে আমদানি হয়ে বাজারে চলে আসছে। একটি পথ হলো, রাসায়নিক কারখানার নামে আমদানি করা লবণ বাজারে ছেড়ে দেওয়া। আরেকটি পথ হলো, সোডিয়াম সালফেট আমদানি করে ভোজ্য লবণ হিসেবে বাজারে ছেড়ে দেওয়া।

ভোজ্য লবণ আমদানিতে করভার ৮৯ শতাংশ। ওষুধশিল্পের জন্য লবণ আমদানিতে করভার ৩৭ শতাংশ। আর শিল্প লবণে (কস্টিক সোডাসহ অন্যান্য) ছিল ৩১ শতাংশ, এবারের বাজেটে যা ৪৩ শতাংশ করা হয়েছে। ওষুধশিল্পের জন্য আনা লবণ এ খাতে কোনো সমস্যা তৈরি করছে না বলে উল্লেখ করছেন মিলমালিকেরা। তাঁরা বলছেন, কস্টিক সোডা তৈরির নামে লবণ এনে বাজারে ছাড়ছেন অনেকে।

শিল্প লবণের নামে ভোজ্য লবণ আমদানি হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদনেও। বলা হয়েছে, জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে এ লবণ আমদানি বেড়ে যায়। শিল্প লবণের নামে ভোজ্য লবণ আমদানি করতে পারলে অধিক মুনাফা করা সম্ভব। এটা ঠেকাতে কমিশনের সুপারিশ হলো, ভোজ্য লবণের শুল্ক আরও বাড়িয়ে জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত আমদানি উন্মুক্ত করে দেওয়া। এতে সরকার রাজস্ব পাবে। যেহেতু বাড়তি শুল্কে আমদানি খরচ বেশি পড়বে, সেহেতু চাষিরাও সুরক্ষিত থাকবেন।

বাজারে সুপরিচিত ব্র্যান্ডগুলোর নাম ও মোড়কের নকশায় ভ্যাকুয়াম ইভাপোরেশন পদ্ধতিতে পরিশোধিত সাদা, ঝরঝরে মিহিদানার অনেক ব্র্যান্ডের লবণ অহরহ বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু সেই সব মিলের ভ্যাকুয়াম ইভাপোরেশন পদ্ধতিতে পরিশোধন কারখানাই নেই। মিলমালিকদের অভিযোগ, এসব মিল ধরা খুব সহজ। কিন্তু কেউ ব্যবস্থা নেয় না।

মোল্লা সল্টের মহাব্যবস্থাপক মো. আবদুল মান্নান বলেন, দেশে পাঁচটি কোম্পানির ভ্যাকুয়াম ইভাপোরেশন কারখানা রয়েছে। এর বাইরে অনেকগুলো ব্র্যান্ড কীভাবে ভ্যাকুয়াম ইভাপোরেশন পদ্ধতিতে প্রক্রিয়া করা লবণ বিক্রি করে?

চাষিদের লাভ নেই
বাংলাদেশ মূলত ভারত থেকে লবণ আমদানি করে। এক কেজি লবণ আমদানিতে ভারতে দাম পড়ে (এফওবি) ৯০ পয়সা থেকে ১ টাকা ২০ পয়সা। সব ধরনের কর ও খরচ দিয়ে এ লবণ কারখানায় পৌঁছাতে খরচ দাঁড়ায় কেজিপ্রতি ৬ টাকার কিছু কম।
ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদন বলছে, দেশে এক কেজি লবণের উৎপাদন খরচ ৫ টাকা ৬৭ পয়সা থেকে ৬ টাকা ৮৭ পয়সা। ভারতে যেখানে দামই কেজিপ্রতি ১ টাকার আশপাশে, সেখানে বাংলাদেশে উৎপাদন খরচ এত বেশি কেন, তার একটা ব্যাখ্যা পাওয়া যায় ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদনে।

কমিশন বলছে, লবণ উৎপাদন ব্যয়ের ৪১ শতাংশই জমির ভাড়া। অবশ্য ভাড়ার পরিমাণ লবণের দামের সঙ্গে ওঠানামা করে। ভালো দাম দেখলে মালিকেরাও জমির ভাড়া বাড়িয়ে দেন।
দেশের কক্সবাজার জেলায় মূলত সবচেয়ে বেশি লবণ উৎপাদিত হয়। এর সঙ্গে জড়িত ৪০ হাজারের বেশি চাষি। লবণ চাষি কল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কায়সার ইদ্রিস বলেন, চাষিরা লবণ চাষ করে কোনো লাভ করতে পারছেন না। বিদেশ থেকে শিল্প লবণের নামে ভোজ্য লবণ এনে বাজারে ছাড়া হচ্ছে। তাই চাষিরা উৎপাদন খরচের কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। কয়েক বছর ধরে এই অবস্থা চলছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

ভোক্তার পকেট কাটা
দেশে তিন পদ্ধতিতে লবণ পরিশোধিত হয়। ভ্যাকুয়াম ইভাপোরেশন, মেকানিক্যাল ও সনাতনী পদ্ধতি। তিন পদ্ধতিতে পরিশোধিত লবণ বিক্রিতে খুচরা বিক্রেতাদের মুনাফা করার সুযোগ দেওয়া হয় কেজিপ্রতি ৯ থেকে ১২ টাকারও বেশি। মুনাফার হার ৩৯ থেকে ৮৭ শতাংশ।

আসুন দেখে নিই ৭ টাকার লবণ কীভাবে ৩৫ টাকা হয়। ট্যারিফ কমিশনের হিসাবে, কোম্পানিগুলো ১ কেজি অপরিশোধিত লবণ কেনে ৭ টাকায়। প্রসেস লস হিসাব করে ১ কেজি পরিশোধিত লবণ উৎপাদনে ১২ টাকার অপরিশোধিত লবণ লাগে। এরপর অন্যান্য উপকরণ, পরিচালন ও আর্থিক ব্যয় মিলিয়ে প্রতি কেজি ভ্যাকুয়াম ইভাপোরেশন পদ্ধতিতে পরিশোধিত লবণের উৎপাদন খরচ ২৩ টাকা ৩৩ পয়সা।

মিলমালিকের মুনাফা ১ টাকা ৪৭ পয়সা ও পরিবেশকের লাভ ১ টাকা ২০ পয়সা। আর খুচরা বিক্রেতা লবণ কেনেন ২৬ টাকা দরে। মোড়কে লেখা সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য (এমআরপি) ৩৫ টাকা। এর ফলে খুচরা বিক্রেতা মুনাফার সুযোগ পান কেজিপ্রতি ৯ টাকা।
মেকানিক্যাল পদ্ধতিতে পরিশোধিত লবণের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৩২ টাকা। এ ক্ষেত্রে খুচরা বিক্রেতার মুনাফার সুযোগ থাকে কেজিপ্রতি ১২ টাকা ৪০ পয়সা। আর সনাতনী পদ্ধতিতে পরিশোধিত লবণের খুচরা মূল্য লেখা থাকে কেজিপ্রতি ২৫ টাকা। বিক্রেতারা কেজিতে মুনাফার সুযোগ পান ১১ টাকার কিছু বেশি।

অবশ্য বড় বাজার ও বড় দোকানে সর্বোচ্চ মূল্যের চেয়ে কিছু কম দামে বিক্রি করা হয়। তবে পাড়ার মুদি দোকান ও বাকিতে কেনার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যই রাখেন বিক্রেতারা।

খুচরা বিক্রেতারা এত বেশি মুনাফার সুযোগ পান কোম্পানির কারণে। তারাই খুচরা মূল্য বেশি লেখে। কেন, তার পেছনেও কারণ অবৈধ আমদানি। সুপরিচিত একটি কোম্পানির একজন ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, শিল্প লবণের নামে আনা ভোজ্য লবণ কেজিপ্রতি ১৫ টাকা লাভের সুযোগ দিয়ে খুচরা বিক্রেতার কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। সুপরিচিত কোম্পানি যদি সেটা ৩ টাকায় নামিয়ে আনে, তাহলে কোনো খুচরা বিক্রেতা তাঁর লবণ দোকানে রাখবেন না।

এ বিষয়ে ট্যারিফ কমিশনের সুপারিশ হলো, লবণ পরিশোধনকারীদের নির্দেশনা দিয়ে খুচরা ব্যবসায়ীদের মুনাফা কমিয়ে দিয়ে লবণের দাম কমানো সম্ভব।

ট্যারিফ কমিশন প্রতিবেদনটি তৈরি করেছিল ব্যবসায়ীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে। কমিশন এ বিষয়ে গণশুনানিরও আয়োজন করেছিল। প্রতিবেদনের পর সমস্যার সমাধানে কী কী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে? জানতে চাইলে কনফিডেন্স সল্টের মহাব্যবস্থাপক মো. শামসুদ্দিন বলেন,

বিজ্ঞাপন
মন্তব্য করুন

অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন

Leave a Reply

এগ্রোবিজ

যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশে হতে পারে সারের সংকট

সারের সংকট
সারের সংকট
সারের সংকট

চলতি বোরো মৌসুমে সার কিনতে কৃষকদের সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা করে বেশি দিতে হয়েছে। আর সরকারকেও সার বাবদ ভর্তুকি দিতে হচ্ছে বাজেটে বরাদ্দের তিন গুণের বেশি—প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশ এখন মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) সার আমদানি নিয়ে বিপাকে পড়েছে।

ধান, আলু ও সবজি চাষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এমওপি সারের ৬০ শতাংশ আনা হতো রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে। ওই দুই দেশ নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়ায় এখন বাংলাদেশকে এমওপি কিনতে হচ্ছে কানাডা থেকে। বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়া ও আমদানিতে অনিশ্চয়তার কারণে বাংলাদেশে সারের সংকট হতে পারে। ভর্তুকির চাপ সামলাতে বাংলাদেশকে সব ধরনের সারের খুচরা মূল্য বাড়াতে হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিবিষয়ক সংস্থা ইউএসডিএর চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ‘বাংলাদেশে সার সরবরাহ ও ব্যবহারে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের এমওপি সারের ২০ শতাংশ সরবরাহ কমানো হলে সামনের বোরো মৌসুমে ধান, গম ও রবি মৌসুমের অন্যান্য ফসলের উৎপাদন ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কমতে পারে। এতে বাংলাদেশের খাদ্য উৎপাদন ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে।

এমনিতেই এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমাদের ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সারের কারণে নতুন করে যাতে আর সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।

এ এম এম শওকত আলী, সাবেক কৃষিসচিব

তবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, দেশে চলতি বোরো মৌসুমে নতুন করে আর সারের দরকার হবে না। সামনে আলুর মৌসুমে ইউরিয়া, এমওপিসহ অন্যান্য সারের চাহিদা বাড়বে। ওই সময়ের জন্য সার সরবরাহ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ কানাডা ও মধ্যপ্রাচ্যের সার সরবরাহকারী দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে।

জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কানাডা থেকে মোট আট লাখ টন এমওপি সার আমদানির উদ্যোগ নিয়েছি। এ ব্যাপারে ওই দেশের সঙ্গে আমাদের সমঝোতা স্মারক হয়েছে। ফলে এই সার নিয়ে সরকারের কোনো দুশ্চিন্তা নেই। তবে সার বাবদ সরকারের বিপুল পরিমাণে ভর্তুকি বাড়ছে। এই চাপ নিয়েও সরকার ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ওই ভর্তুকি দিয়ে যাবে।’

কমানো হয়েছে চাহিদা

বাংলাদেশে চলতি অর্থবছরে ৬৯ লাখ টন রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয়েছে। এর মধ্যে ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি—এই চার ধরনের সার ব্যবহার হয় ৫৭ লাখ টন। আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের ওই চার ধরনের সারের চাহিদা কমিয়ে ৫৫ লাখ ৫০ হাজার টনে নামিয়ে আনা হয়েছে।

দেশে প্রয়োজনীয় সারের ৮০ শতাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এর মধ্যে এমওপি সারের বড় অংশ আসে রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে।

প্রসঙ্গত, ওই চারটি প্রধান সার কৃষকদের কাছে বিক্রির ক্ষেত্রে সরকার ভর্তুকি দিয়ে থাকে। চলতি অর্থবছরে সরকার প্রাথমিকভাবে সারে ভর্তুকি বাবদ ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে গত ছয় মাসে সারের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। বেশির ভাগ সারের দাম তিন থেকে চার গুণ বেড়ে যাওয়ায় সরকারকে ভর্তুকির পরিমাণ ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা করতে হয়। কিন্তু অর্থবছরের শেষের দিকে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে হিসাব করে দেখা হয়েছে, ভর্তুকির পরিমাণ এবার বেড়ে কমপক্ষে ৩০ হাজার কোটি টাকা গিয়ে দাঁড়াবে।

জিপসাম, জিংক সালফেট ও অ্যামোনিয়াম সালফেট ও ম্যাগনেসিয়াম সালফেট সারে সরকার কোনো ভর্তুকি দেয় না। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কিনে ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কাছে তা বিক্রি করে থাকেন। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষককেও বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে।

সাবেক কৃষিসচিব এ এম এম শওকত আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমনিতেই এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমাদের ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সারের কারণে নতুন করে যাতে আর সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। আর সরকারের অন্যান্য খাতের ভর্তুকি কমিয়ে প্রয়োজনে সারে ভর্তুকি বাড়াতে হবে, যাতে সারের দাম কম থাকে। কারণ, কৃষকের হাতে এখন টাকা কম। বিশ্ববাজার থেকেও খাদ্য আমদানি করা সামনের দিনে আরও কঠিন হতে পারে। ফলে দেশের উৎপাদন ঠিক রাখতে সারের দাম ও জোগান ঠিক রাখা উচিত।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

বিদেশ থেকে খালি হাতে ফিরে ড্রাগন চাষে সাফল্য

বাগানে চাষ করা ড্রাগন হাতে মিরাজুল ইসলাম
বাগানে চাষ করা ড্রাগন হাতে মিরাজুল ইসলাম

মিরাজুল ইসলাম (৩৩)। ১০ বছর সৌদি আরবে ছিলেন। আকামা জটিলতায় খালি হাতে দেশে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। এক বছর বেকার থাকার পর ইউটিউবে পতিত জমিতে ড্রাগন চাষের ভিডিও দেখেন। বাবার কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে নেমে পড়েন ড্রাগন চাষে। দেড় বছরের ব্যবধানে এখন উপজেলার সবচেয়ে বড় ড্রাগন বাগান তাঁর। এ বছর খরচ বাদে আট থেকে নয় লাখ টাকা লাভের আশা করছেন তিনি।

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার ইন্দুরকানি গ্রামের বাসিন্দা মিরাজুল। উপজেলার টগরা গ্রামে দেড় একর জমিতে তিনি ড্রাগনের বাগান তৈরি করেছেন। তাঁর বাগানে এখন সাড়ে তিন হাজার ড্রাগন ফলের গাছ আছে।

মিরাজুল ইসলাম বলেন, শ্রমিক হিসেবে ১০ বছর সৌদিতে কাজ করে ২০১৯ সালে দেশে ফেরেন তিনি। আকামা সমস্যার কারণে শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। কিছু একটা করবেন বলে ভাবছিলেন। একদিন ইউটিউবে ড্রাগন চাষের ভিডিও দেখতে পান। সেই থেকে ড্রাগন চাষে আগ্রহ জন্মে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে দেড় একর পতিত জমি ড্রাগন চাষের উপযোগী করেন। গাজীপুর থেকে ৬০ টাকা দরে ৬০০ চারা নিয়ে আসেন। বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে শুরু করেন চাষাবাদ। পরের বছর জুনে ফল পাওয়া শুরু করেন।

ড্রাগনের বাগান করতে মিরাজুলের খরচ হয়েছিল ছয় থেকে সাত লাখ টাকা। ইতিমধ্যে ফল বিক্রি করে তাঁর খরচ উঠে গেছে। সাধারণত মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত গাছে ফল আসে। বছরে ছয় থেকে সাতবার পাকা ড্রাগন সংগ্রহ করা যায়। এখন পরিপক্ব ও রোগমুক্ত গাছের শাখা কেটে নিজেই চারা তৈরি করেন। ড্রাগন চাষের পাশাপাশি বাগানে চুইঝাল, এলাচ, চায়না লেবুসহ মৌসুমি সবজি চাষ করেন। এ ছাড়া ড্রাগনের চারাও উৎপাদন করে বিক্রি করেন তিনি।

মিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বাগানের বেশির ভাগ গাছে এ বছর ফল ধরেছে। গত মঙ্গলবার বাগান থেকে দেড় টন ফল সংগ্রহ করেছেন। ২৫০ টাকা কেজি দরে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পাইকারদের কাছে বিক্রি করেছেন। স্থানীয় বাজারে ৩০০ টাকা কেজি দরে ড্রাগন বিক্রি হয়। নভেম্বর পর্যন্ত আরও পাঁচ–ছয়বার বাগান থেকে ফল তোলা যাবে। আশা করছেন, খরচ বাদে এবার আট থেকে নয় লাখ টাকা লাভ থাকবে।

মিরাজুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমার বাগান থেকে চারা নিয়ে অনেকে বাড়িতে ও ছাদে ছোট পরিসরে ড্রাগনের বাগান করেছেন। আমি এ পর্যন্ত ৪০ টাকায় দেড় হাজার চারা বিক্রি করেছি।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পূর্ণ বয়সের একটি ড্রাগনের চারা রোপণের পর ২৫ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। এর মৃত্যুঝুঁকি নেই বললেই চলে। তবে কয়েক দিন পরপর সেচ দিতে হয়। বৃষ্টির পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হয়। ড্রাগন ফল চাষে রাসায়নিক সার দিতে হয় না।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইশরাতুন্নেছা বলেন, মিরাজুল ইসলামকে ড্রাগন চাষে নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে আসছে কৃষি বিভাগ। উপজেলায় তাঁর বাগানটি সবচেয়ে বড়। তিনি নিরলস পরিশ্রম করে ছোট থেকে বাগানটি বড় করেছেন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

নাসিরনগরে বন্যায় তলিয়ে গেল কৃষকের বাদামখেত

নাসিরনগরের গোয়ালনগর ইউনিয়নে অতিবৃষ্টি ও আগাম বন্যায় তলিয়ে গেছে কৃষকদের বাদামখেত। আজ মঙ্গলবার ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রামে
নাসিরনগরের গোয়ালনগর ইউনিয়নে অতিবৃষ্টি ও আগাম বন্যায় তলিয়ে গেছে কৃষকদের বাদামখেত। আজ মঙ্গলবার ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রামে

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নে অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে কৃষকের প্রায় ৩০ হেক্টর বাদাম চাষের জমি। কয়েক দিন আগে উজানের পানিতে তাঁদের পাকা ধানের জমি তলিয়ে গিয়েছিল। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষকেরা বাদাম চাষ করেছিলেন। আবারও ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ার বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হলেন চাষিরা।

উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১১ এপ্রিল উপজেলায় শিলাবৃষ্টি এবং ১৪ থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত উজানের পানিতে কৃষকের পাকা ধানের জমি তলিয়ে যায়। কৃষকেরা সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ২০০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করেছিলেন। এর মধ্যে উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নে ৩০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করা হয়। উপজেলায় এবার প্রায় ৫০ হাজার মণ বাদাম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। কিন্তু উজানের পানিতে হঠাৎ বন্যায় সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

গোয়ালনগর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আজহারুল হক বলেন, ‘নাসিরনগর উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাদাম চাষ করা হয় আমাদের ইউনিয়নে। কিন্তু এ বছর আগাম বন্যার কারণে কৃষকেরা তাঁদের ফসল ঘরে তুলতে পারেননি। তাঁদের সব ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।’

ওই এলাকার বাদামচাষি মেরাজ মিয়া বলেন, তিনি ছয় বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করেন। দু-এক দিনের মধ্যে বাদাম তুলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু খেতে গিয়ে দেখেন সব বাদাম পানির নিচে। এখন এই বাদাম তুলে কোনো লাভ নেই। এগুলো গরুও খাবে না।

মো. রজব আলী নামের এক কৃষক বলেন, ‘আমাদের ইউনিয়নের জামারবালি, সোনাতলা ও মাইজখোলা গ্রামে বাদামখেত আছে। গত তিন দিনে পাঁচ-ছয় ফুট পানি বাড়ায় সব তলিয়ে গেছে। এখন বাদাম তুলতে কাজের লোকও পাওয়া যাচ্ছে না।’

কৃষক ফতু মিয়া বলেন, গোয়ালনগর ইউনিয়নের বাদাম চাষের জমিগুলো হঠাৎ পানি আসায় তলিয়ে গেছে। ফসল তলিয়ে তাঁদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেল। কয়েক দিন আগেও পাকা ধান পানির নিচে তলিয়ে গিয়েছিল। কৃষকদের দাবি, গোয়ালনগরে বাদাম চাষের জমি তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকদের প্রায় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আবু সাইদ প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলার কয়েকটি চরাঞ্চলে বাদাম চাষ করা হয়। চরাঞ্চলের উঁচু জমিতে প্রথমে আলু চাষের পর বাদাম চাষ করা হয়। আগাম বন্যার কারণে নিচু এলাকার কিছু বাদামখেত পানিতে তলিয়ে গেছে।

আবু সাইদ আরও বলেন, ১৫-২০ দিন আগে উপজেলার প্রায় সব বাদাম উঠে গেছে। গোয়ালনগর ইউনিয়নে ৩০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করা হয়েছিল। এর মধ্যে এক হেক্টর জমির বাদাম তলিয়ে গেছে। সব মিলিয়ে ৭০ হাজার টাকার মতো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সিলেটে বন্যা হওয়ায় এমনটি হয়েছে বলে তিনি জানান।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

পানি দিতে অতিরিক্ত টাকা

পানি দিতে অতিরিক্ত টাকা
পানি দিতে অতিরিক্ত টাকা

ঠাকুরগাঁওয়ে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) একটি গভীর নলকূপের সেচের পানি সরবরাহে কৃষকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হচ্ছে। ভুক্তভোগী কৃষকদের কাছ থেকে পাওয়া এমন অভিযোগের তদন্ত করে সত্যতা পেয়েছে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষ। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বড় বালিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে।

ভুক্তভোগী কৃষকেরা বলছেন, সেচের পানির জন্য প্রিপেইড কার্ডের বাইরে কোনো টাকা দেওয়ার নিয়ম নেই। কিন্তু বিএমডিএর ১০৮ নম্বর গভীর নলকূপের অপারেটরের দায়িত্বে থাকা বিউটি বেগমের স্বামী আকতারুজ্জামান বোরো ধান চাষের জন্য প্রতি বিঘার জন্য ১ হাজার ২০০ টাকা ও অন্য মৌসুমে ৩০০ টাকা নেন। ১০ বছর ধরে তিনি এভাবেই বাণিজ্য করে আসছেন।

সম্প্রতি রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে বিএমডিএর গভীর নলকূপ থেকে খেতে সেচের পানি পেতে হয়রানির শিকার দুই কৃষকের মৃত্যুর ঘটনা দেশজুড়ে আলোচিত হয়।

ঠাকুরগাঁও জেলায় বিএমডিএর ১ হাজার ৪৩১টি গভীর নলকূপ রয়েছে। এর মধ্যে সচল ১ হাজার ৪১৮টি। সেচের আওতায় ৭৬ হাজার ৫০০ পরিবারের জমি রয়েছে ৫৩ হাজার ৫০০ হেক্টর।

* সেচের পানির জন্য প্রিপেইড কার্ডের বাইরে কোনো টাকা দেওয়ার নিয়ম নেই। * সেচের আওতায় ৭৬ হাজার ৫০০ পরিবারের জমি আছে। * কৃষকদের নলকূপের আবেদন পেলে যাচাই করে স্কিম তৈরি করা হয়।

বিএমডিএ সূত্রে জানা গেছে, কৃষকদের নলকূপের আবেদন পেলে যাচাই করে স্কিম তৈরি করা হয়। এরপর সমবায়ের ভিত্তিতে অংশীদারি ফি বাবদ এক লাখ টাকা জমা দিতে হয়। এই নলকূপ পরিচালনার জন্য বিএমডিএ একজন অপারেটর নিয়োগ দেন। প্রিপেইড মিটারিং পদ্ধতিতে কৃষকের নিজ নামে প্রিপেইড কার্ড থাকতে হয়। সেই কার্ড থেকে প্রতি ঘণ্টায় সেচের পানির জন্য ন্যূনতম ১১০ টাকা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কেটে নেওয়া হয়। এর বাইরে অতিরিক্ত কোনো টাকা দেওয়ার নিয়ম নেই।

বড় বালিয়া এলাকার কৃষকেরা জানান, ২০১১ সালের দিকে বড় বালিয়া মণ্ডলপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. আকতারুজ্জামান এলাকায় গভীর নলকূপ স্থাপনের উদ্যোগ নেন। ফি হিসেবে এক লাখ জমা দেওয়ার নিয়ম থাকলেও কোনো কৃষক সেটা দিতে এগিয়ে আসেননি। ফলে আকতারুজ্জামান, দাউদুল ইসলাম ও জোবায়দুর রহমান মিলে অংশীদারি ফি দেন। আকতারুজ্জামানের ৮০ শতাংশ টাকা থাকায় গভীর নলকূপের নিয়ন্ত্রণ তিনিই পান। অপারেটর হিসেবে নিয়োগ পান তাঁর স্ত্রী বিউটি বেগম। যদিও কৃষকেরা আকতারুজ্জামানকেই অপারেটর হিসেবে জানতেন।

সেচের পানি পেতে হয়রানির শিকার হয়ে সদর উপজেলার বড় বালিয়া এলাকার ৫০ জন কৃষক গত ১৭ এপ্রিল বিএমডিএ সহকারী প্রকৌশলীর কাছে অভিযোগ দেন। সেখানে গিয়ে কৃষক ও অপারেটরের সঙ্গে কথা বলে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়।

ভুক্তভোগী কৃষকেরা বলেন, ২০১২ সালে নলকূপটি চালু হলে আওতাধীন কৃষকের কাছ থেকে আকতারুজ্জামান সেচের পানির জন্য প্রিপেইড কার্ডের অতিরিক্ত টাকা আদায় শুরু করেন। আর সেই টাকা থেকে তিনি মাঝেমধ্যে অন্য দুই অংশীদারকে কিছু টাকা ভাগ দেন।

ভুক্তভোগী কৃষক মো. শাহজাহান আলী বলেন, গভীর নলকূপটির আওতায় তাঁর ১০ বিঘা জমি রয়েছে। কার্ডের বাইরে টাকা দেওয়ার নিয়ম না থাকলেও আকতারুজ্জামানকে প্রতি বিঘায় সেচের জন্য ১ হাজার ২০০ টাকা দিতে হয়। এই টাকা না দিলে তিনি পানি দেন না।

ওই নলকূপের আওতায় চার বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করছেন কৃষক মো. হেলাল। তিনি অতিরিক্ত টাকা না দেওয়ায় অপারেটর খেতে পানি দেননি। এতে জমি ফেটে যায়। পরে তিনি শ্যালো ইঞ্জিন দিয়ে জমিতে সেচ দিয়ে খেত রক্ষা করেছেন।

আরেক ভুক্তভোগী মোকলেসুর রহমান বলেন, ১০ বছর ধরে সেচের পানির জন্য অতিরিক্ত টাকা দিয়ে আসছেন। এখন বিরক্ত হয়ে বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। এরপরও কোনো বিচার পাননি।

এ বিষয়ে মো. আকতারুজ্জামান বলেন, তিনি সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেওয়ার পর দেখেন গ্রামে কোনো গভীর নলকূপ নেই। পরে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে নলকূপটি স্থাপন করেন। কৃষকেরা অংশীদারত্বের টাকা দিতে রাজি না হলে তিনি বিএমডিএকে জানান। সে সময় তাঁরা টাকা দিয়ে দিতে পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘পরে আপনি টাকাটা ধীরে ধীরে তুলে নেবেন।’ সেই পরামর্শেই সেচের পানি বাবদ প্রিপেইড কার্ডের অতিরিক্ত কিছু টাকা তিনি নিচ্ছেন। জোর করে কিছু নিচ্ছেন না।

বিএমডিএ ঠাকুরগাঁও কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, অভিযোগটি যাচাই করে সত্যতা পাওয়া গেছে। নলকূপটি সুষ্ঠুভাবে চালানোর জন্য সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ওই অপারেটরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোটেক

কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তারা এক সঙ্গে কাজ করতে রাজি

ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকেরাফাইল ছবি
ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকেরাফাইল ছবি

ডাচ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে দুই দেশের বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা একসঙ্গে কাজ করতে রাজি হয়েছেন।

গতকাল সোমবার নেদারল্যান্ডসের রাজধানী হেগে অনুষ্ঠিত কৃষি খাতের ব্যবসাবিষয়ক এক সম্মেলনে দুই দেশের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা সহযোগিতার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।

নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম রিয়াজ হামিদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত এগ্রি বিজনেস কনক্লেভে বাংলাদেশের প্রায় ৪০জন উদ্যোক্তা ডাচ কৃষি খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি প্রযুক্তি সহযোগিতা ও ব্যবসায়িক সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। দিনব্যাপী আয়োজিত অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেছে ওয়েগেনিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়।

আলোচনায় বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা প্রযুক্তি কিনতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দিলে নেদারল্যান্ডসের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা প্রযুক্তি সহযোগিতা দিতে রাজি থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।

রিয়াজ হামিদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে ডাচরা প্রস্তুত এবং বাংলাদেশি উদ্যোক্তারাও তাদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। এ ছাড়া ডাচ সরকার ইতিমধ্যে বাংলাদেশের বীজ, পশু খাদ্য, পোলট্রি, হর্টিকালচার ও এ্যাকুয়াকালচার বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম সম্পাদন করেছে, যা ওই দেশের বেসরকারি খাতকে আরও উৎসাহিত করেছে।

আলোচনায় কৃষি সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করতে তৈরি আছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্কয়ার, ইস্পাহানি এগ্রো, একে খান অ্যান্ড কোম্পানি, প্যারাগন গ্রুপ, এসিআই, জেমকন গ্রুপসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তিনি জানান, মঙ্গলবার বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা ডাচ প্রযুক্তির প্রয়োগ সরেজমিনে দেখতে যাবেন।

বাংলাদেশের সঙ্গে নেদারল্যান্ডসের পোল্ট্রিখাতে সহযোগিতার আলোচনা অনেকটা এগিয়েছে উল্লেখ করে মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, দুই দেশের মধ্যে মৎস্য, পশুপালন ও হর্টিকালচারে সহযোগিতার বিপুল সম্ভাবনা আছে।

কনক্লেভ আয়োজনে প্রথমবারের মতো দূতাবাসের সঙ্গে অংশীদার হয়েছে নেদারল্যান্ডসের কৃষি মন্ত্রণালয়, নেদারল্যান্ডস এন্টারপ্রাইজ এজেন্সি, নেদারল্যান্ডস ফুড পার্টনারশিপ, ডাচ-গ্রিন-হাইজডেল্টা, লারিভ ইন্টারন্যাশনাল, স্টান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ।

কৃষিজাত পণ্য রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থানকারী নেদারল্যান্ডসের আয়তন বাংলাদেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের কম। ২০২১-এ কৃষিপণ্য ও খাদ্য রপ্তানি করে নেদারল্যান্ডস ১১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি আয় করেছে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশক: শাইখ সিরাজ
© ২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। দা এগ্রো নিউজ, ফিশ এক্সপার্ট লিমিটেডের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। ৫১/এ/৩ পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থাপথ, ঢাকা -১২০৫
ফোন: ০১৭১২-৭৪২২১৭
ইমেইল: info@agronewstoday.com, theagronewsbd@gmail.com