আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

এগ্রোবিজ

২০ মণ ‘সাদা সোনা’তেও মিলছে না এক বস্তা চাল

বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপ উপজেলা মহেশখালী; বিখ্যাত মিষ্টিপানের জন্য। এরপরেই লবণ। এখানকার লবণ কক্সবাজারের অন্য উপকূলে উৎপাদিত লবণের তুলনায় উন্নত, অর্থাৎ লবণাক্ততার পরিমাণ বেশি। ফলে দামেও চড়া। একসময় চড়া মূল্যে বিক্রি হওয়ায় স্থানীয় ব্যক্তিরা লবণকে ‘সাদা সোনা’র সঙ্গে তুলনা করেন।

কিন্তু করোনা মহামারির কালে এসে যেন জৌলুশ হারিয়েছে মহেশখালীবাসীর সাদা সোনা। ২০ মণ লবণ বিক্রি করে এখন এক বস্তা চালও কিনতে পারছেন না চাষিরা, বরং লবণ বেচে বিনিয়োগের টাকা তুলতে না পারায় গুনতে হচ্ছে লোকসান। অথচ প্রচণ্ড গরমে এবার লবণের ভালোই উৎপাদন হয়েছে। এখন কালবৈশাখীর ঝড়–বৃষ্টিতে মাঠের লবণ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় চাষিরা।

প্রান্তিক পর্যায়ে বাজারের এমন অবস্থার জন্য ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের বড় ব্যবসায়ীদের দুষলেন কক্সবাজারের স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। আবার কতিপয় প্রভাবশালী শিল্পের কাঁচামাল আমদানির নামে সোডিয়াম সালফেট এনে বাজারজাত করায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন চাষি ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।বিজ্ঞাপন

সাদা সোনায় ভরপুর মাঠ, তবু হতাশা

১১ এপ্রিল সকাল ৯টা। কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদী থেকে দ্রুতগতির স্পিডবোটে বঙ্গোপসাগর চ্যানেল পাড়ি দিয়ে গেলাম মহেশখালী দ্বীপের গোরকঘাটা জেটিতে। সেখান থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় (সড়কপথে) উত্তর দিকে ২৫ কিলোমিটার গেলে পাহাড়ঘেরা ইউনিয়ন কালারমারছড়া। ইউনিয়নের উত্তর দিকে উত্তর নলবিলা গ্রাম, তারপর দরকাঘোনা এলাকা। এলাকাটি যেন সাদা সোনায় ভরপুর। খোলা মাঠে পড়ে আছে লবণের অসংখ্য স্তূপ। প্রচণ্ড গরম উপেক্ষা করে চাষিরা ব্যস্ত লবণ উৎপাদনে। প্রখর সূর্যতাপে লবণের বাম্পার উৎপাদন হলেও চাষিদের মুখে হাসি নেই।

প্রতিবছর নভেম্বর মাসে লবণ উৎপাদনের তোড়জোড় শুরু হয়। প্রথমে মাঠ পরিচর্যা, তারপর সমুদ্রের লোনা পানি ধরে রাখার জন্য মাঠে তৈরি হয় ছোট ছোট বাঁধ দিয়ে চারকোনাবিশিষ্ট কক্ষ বা ঘর। সেই ঘরে বিছানো হয় কালো পলিথিন। তারপর পলিথিনের ওপর লোনা পানি জমিয়ে সূর্যের তাপে শুকিয়ে উৎপাদিত হয় লবণ। ১৫ ডিসেম্বর থেকে লবণ উৎপাদন শুরু হয়ে চলে ১৫ মে পর্যন্ত, টানা পাঁচ মাস।

দরকাঘোনার এক পাশে লবণ উৎপাদন করছেন প্রান্তিক চাষি মোহাম্মদ ইউসুফ। সঙ্গে তাঁর ১২ বছরের কিশোরী মেয়ে সালমা। কাছে গিয়ে লবণের বাজার নিয়ে কথা শুরু করতেই খানিক্ষণ চুপ থাকেন ইউসুফ (৪০)। এরপর বললেন, এক মণ (৪৭ কেজিতে একমণ) লবণ উৎপাদন করতে তাঁর খরচ যাচ্ছে ২৪০ টাকা, অথচ বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়। প্রতি মণে তাঁর লোকসান যাচ্ছে ১১০ টাকা। লাভ তো দূরের কথা, লোকসান গুনতে গুনতে এখন ফতুর হওয়ার অবস্থা।
মোহাম্মদ ইউসুফ এবার ৬০ শতক জমিতে লবণের চাষ করছেন। বেশি দামে বিক্রির জন্য ২০ মণের বেশি লবণ মাঠের এক কোণে স্তূপ করে রেখেছেন। কিন্তু কালবৈশাখীর ঝড়-বৃষ্টির আশঙ্কাও তাঁর মনে। তিনি বলেন, আকাশের মেঘের আনাগোনা চলছে, ঝড়-বৃষ্টি হলে সর্বনাশ হবে। বৃষ্টিতে ভিজে লবণ নষ্ট (গলে) হলে পথে বসতে হবে।

লবণের মাঠে মেয়ে কেন? মোহাম্মদ ইউসুফের সাফ জবাব, জমি বর্গা নিয়ে লবণ চাষ করছেন। লবণ বিক্রি না হওয়ায় এখনো জমির মালিকের টাকা পরিশোধ করতে পারেননি, শ্রমিক খরচ চালাবেন কোত্থেকে, তাই কাজে সহযোগিতার জন্য মেয়েকেও মাঠে এনেছেন।

কালারমারছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তারেক বিন ওচমান শরীফ বলেন, এই ইউনিয়নে প্রায় ২ হাজার একর জমিতে লবণের উৎপাদন হচ্ছে। লবণ উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত আছেন অন্তত পাঁচ হাজার মানুষ। প্রচণ্ড গরমে লবণের বাম্পার উৎপাদন হলেও নায্যমূল্য না পেয়ে হতাশ চাষিরা। এখন করোনা মহামারিতে লবণ বেচাবিক্রিও কমে গেছে। আসন্ন রমজান মাস ও রোজার ঈদ নিয়ে চিন্তিত চাষিরা।

কক্সবাজারের মহেশখালীর দরকাঘোণা এলাকায় কিশোরী  মেয়েকে নিয়ে মাঠে লবণ উৎপাদনের কাজ করছেন মোহাম্মদ ইউসুফ
কক্সবাজারের মহেশখালীর দরকাঘোণা এলাকায় কিশোরী মেয়েকে নিয়ে মাঠে লবণ উৎপাদনের কাজ করছেন মোহাম্মদ ইউসুফ

কালারমারছড়ার উত্তরে মাতারবাড়ী ইউনিয়ন। আগে এই ইউনিয়নে ৪ হাজার একরের বেশি জমিতে লবণ উৎপাদিত হতো। চলতি মৌসুমে হচ্ছে মাত্র ১ হাজার ২০০ একরে।

এর কারণ জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, মাতারবাড়ীতে কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য ২ হাজার ৮০০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। সেখানে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ কারণে অধিগ্রহণকৃত জমিতে লবণ উৎপাদন বন্ধ আছে। ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ১ হাজার ২০০ একর জমিতে লবণের উৎপাদন হলেও লোকসান দিয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে প্রান্তিক চাষিদের। মাঠপর্যায়ে ব্যবসায়ীরা প্রতি মণ লবণ ১৩০ টাকার বেশি দামে কিনতে রাজি হচ্ছেন না।বিজ্ঞাপন

২০ মণ লবণে মিলছে না ১ বস্তা চাল

মহেশখালীর কালারমারছড়া, মাতারবাড়ী ও গোরকঘাটার লবণচাষি মোহাম্মদ রফিক, সিরাজুল ইসলাম ও বেলাল হোসাইন বলেন, বাজারে চাল, তেল, শাকসবজি থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম হু হু করে বাড়ছে, অথচ লবণের দাম ক্রমান্বয়ে তলানিতে যাচ্ছে। এখন ২০ মণ লবণ বিক্রি করেও উন্নত মানের ৫০ কেজি ওজনের এক বস্তা চাল পাওয়া যাচ্ছে না।

হিসাব কষে তাঁরা বলেন, প্রতি মণ লবণ ১৩০ টাকা হলে ২০ মণে পাওয়া যায় ২ হাজার ৬০০ টাকা। আর ৫০ কেজি ওজনের এক বস্তা চাল বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৬০০-৩ হাজার ২০০ টাকায়। স্বাধীনতার পর এত কম দামে তাঁরা লবণ বিক্রি করেননি।

পেকুয়া উপজেলার মগনামা ইউনিয়নে লবণ উৎপাদন হচ্ছে অন্তত ছয় হাজার একরে। দাম কমে যাওয়ায় সেখানকার চাষিরাও পড়েছেন বিপাকে।

ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ ওয়াসিম বলেন, নায্যমূল্য না পেলে ইউনিয়নের পাঁচ হাজার চাষি পথে বসবেন। এখানেও লবণ বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়।

ঢাকা–নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ীদের কারণে দামে ধস?

উপজেলার গোরকঘাটা, বড় মহেশখালী, ছোট মহেশখালী, কুতুবজোম, হোয়ানক, ধলঘাটা ইউনিয়নেও অন্তত ৭ হাজার একরে লবণ উৎপাদন হচ্ছে। মাঠ থেকে কেনা লবণ ট্রাক কিংবা কার্গোবোটে বোঝাই করে সরবরাহ হচ্ছে চট্টগ্রামের পটিয়া, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও খুলনা এলাকায়।

চলতি এপ্রিলের প্রথম ১০ দিনে চারটি কার্গো বোঝাই করে প্রায় ৮ হাজার মণ লবণ নারায়ণগঞ্জে সরবরাহ করেছেন চকরিয়ার বদরখালী এলাকার ব্যবসায়ী সরওয়ার আলী। মাঠ থেকে তিনি প্রতি মণ লবণ কিনেছেন ১৩০ টাকায়, সেই লবণ নারায়ণগঞ্জে বিক্রি করেন ১৯৫ টাকায়।

প্রতি মণে ৬৫ টাকা লাভ! জবাবে সরওয়ার আলী বললেন, এত টাকা লাভ হলে তো সবাই লবণ ব্যবসায়ী হয়ে যেতেন। মাঠ থেকে ১৩০ টাকায় এক মণ লবণ নারায়ণগঞ্জে পৌঁছাতে খরচ যায় ৬০ থেকে ৭০ টাকা। এর মধ্যে মাঠ থেকে ট্রাক কিংবা কার্গোতে বোঝাই করতে শ্রমিক খরচ যায় ২০-২৫ টাকা, ট্রাক অথবা কার্গো ভাড়া লাগে ৩৭ টাকা, আড়তের কমিশন দিতে হয় ৮ টাকা। সব মিলিয়ে লাভ থাকে ৫ থেকে ৭ টাকা। কোনো কোনো সময় আবার লোকসানও যায়। তিনি বলেন, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ীরা মিলেমিশে লবণের দাম কমিয়ে দিয়েছেন। কয়েক মাস আগেও নারায়ণগঞ্জে প্রতি মণ লবণ বিক্রি হয়েছে ৩৬০ টাকায়।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশনের (বিসিক) তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে (২০২১ সালে) লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২২ লাখ ১৭ হাজার মেট্রিক টন। গত ৯ এপ্রিল পর্যন্ত উৎপাদিত হয়েছে ১০ লাখ ১৫ হাজার মেট্রিক টন, যা গত বছর এ সময়ে উৎপাদিত হয়েছিল ১১ লাখ ২৩ হাজার মেট্রিক টন। এবার প্রায় ৩ হাজার একর জমিতে লবণ উৎপাদন বন্ধ থাকায় উৎপাদনও কমে গেছে। চলতি মৌসুমে কক্সবাজারের ৫৪ হাজার ৬৫৪ একর জমিতে লবণ উৎপাদিত হচ্ছে।

সোডিয়াম সালফেট আমদানি বন্ধের দাবি

কক্সবাজার লবণচাষি ও ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি শহিদ উল্লাহ বলেন, ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় জেলায় উৎপাদিত প্রায় ৪ লাখ মেট্রিক টন লবণ পড়ে আছে মাঠে, লোকসান দিয়েও বিক্রি করতে পারছেন না চাষিরা। মাঠে প্রতি কেজি লবণ বিক্রি হচ্ছে ৩ থেকে সাড়ে ৩ টাকায়। অথচ খুচরা বাজারে প্যাকেটজাত প্রতি কেজি লবণ বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৪৫ টাকায়।

শহিদ উল্লাহ বলেন, কতিপয় ব্যবসায়ী শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে বিদেশ থেকে সোডিয়াম সালফেট লবণ আমদানি করে বাজার সয়লাব করছেন। আর এতে কপাল পুড়ছে কক্সবাজারের ৫৫ হাজার প্রান্তিক চাষিসহ লবণ উৎপাদন ও বিপণনের সঙ্গে যুক্ত পাঁচ লাখ মানুষের। তিনি বলেন, গত ৩১ মার্চ সোডিয়াম সালফেট আমদানি বন্ধের দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি পাঠানো হয়। স্মারকলিপির অনুলিপি সংশ্লিষ্ট একাধিক দপ্তরে পাঠানো হয়, কিন্তু কাজ হচ্ছে না।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, ভোজ্যলবণ আমদানিতে বিধিনিষেধ থাকায় কতিপয় প্রভাবশালী শিল্পের কাঁচামাল আমদানির নামে সোডিয়াম সালফেট এনে বাজারজাত করছেন। এ সুযোগে মিলের (লবণ) মালিকেরা দেশীয় লবণ ক্রয় বন্ধ করে সোডিয়াম সালফেটের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। এ কারণে মাঠে উৎপাদিত লবণ বিক্রি হচ্ছে না।

কক্সবাজারের মহেশখালীর মাঠে উৎপাদিত লবণ  নারায়ণগঞ্জে সরবরাহের জন্য ট্রাকে তোলা হচ্ছে
কক্সবাজারের মহেশখালীর মাঠে উৎপাদিত লবণ নারায়ণগঞ্জে সরবরাহের জন্য ট্রাকে তোলা হচ্ছে

মহেশখালীর লবণচাষি হাসানুল আবেদীন চৌধুরী বলেন, চলতি মৌসুমে কোটি টাকা বিনিয়োগ করে তিনি ৩০০ একর জমিতে লবণ উৎপাদন শুরু করেন। ৯ এপ্রিল পর্যন্ত তিনি ৭০ লাখ টাকা দামের ৪৫ হাজার মেট্রিক টন লবণ উৎপাদন করেন, কিন্তু বিক্রি করতে হচ্ছে প্রতি মণে ১১০ টাকা লোকসান গুনে।

টেকনাফ লবণ চাষি সংগ্রম পরিষদ সভাপতি মো. শফিক মিয়া বলেন, ‘৩০ একরের বেশি জমিতে লবণ উৎপাদন করেও লাভের মুখ দেখব দূরের কথা, মূল খরচও তোলা যাচ্ছে না। সোডিয়াম সালফেট স্থানীয় লবণের বাজার শেষ করে দিচ্ছে। শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে সোডিয়াম সালফেট লিকুইড আমদানি হলে এ সমস্যা হতো না।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিসিক কক্সবাজার লবণ শিল্প উন্নয়ন প্রকল্পের উপমহাব্যবস্থাপক জাফর ইকবাল বলেন, বিদেশ থেকে লবণ আমদানি বন্ধ আছে, কিন্তু সোডিয়াম সালফেট আমদানি বন্ধ করা তাঁদের পক্ষে সম্ভব না। তা ছাড়া লবণের দাম নির্ধারণ করে বাজার, এতে কারও হাত নেই।

বিজ্ঞাপন
মন্তব্য করুন

অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন

Leave a Reply

এগ্রোবিজ

যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশে হতে পারে সারের সংকট

সারের সংকট
সারের সংকট
সারের সংকট

চলতি বোরো মৌসুমে সার কিনতে কৃষকদের সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা করে বেশি দিতে হয়েছে। আর সরকারকেও সার বাবদ ভর্তুকি দিতে হচ্ছে বাজেটে বরাদ্দের তিন গুণের বেশি—প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশ এখন মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) সার আমদানি নিয়ে বিপাকে পড়েছে।

ধান, আলু ও সবজি চাষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এমওপি সারের ৬০ শতাংশ আনা হতো রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে। ওই দুই দেশ নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়ায় এখন বাংলাদেশকে এমওপি কিনতে হচ্ছে কানাডা থেকে। বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়া ও আমদানিতে অনিশ্চয়তার কারণে বাংলাদেশে সারের সংকট হতে পারে। ভর্তুকির চাপ সামলাতে বাংলাদেশকে সব ধরনের সারের খুচরা মূল্য বাড়াতে হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিবিষয়ক সংস্থা ইউএসডিএর চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ‘বাংলাদেশে সার সরবরাহ ও ব্যবহারে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের এমওপি সারের ২০ শতাংশ সরবরাহ কমানো হলে সামনের বোরো মৌসুমে ধান, গম ও রবি মৌসুমের অন্যান্য ফসলের উৎপাদন ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কমতে পারে। এতে বাংলাদেশের খাদ্য উৎপাদন ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে।

এমনিতেই এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমাদের ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সারের কারণে নতুন করে যাতে আর সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।

এ এম এম শওকত আলী, সাবেক কৃষিসচিব

তবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, দেশে চলতি বোরো মৌসুমে নতুন করে আর সারের দরকার হবে না। সামনে আলুর মৌসুমে ইউরিয়া, এমওপিসহ অন্যান্য সারের চাহিদা বাড়বে। ওই সময়ের জন্য সার সরবরাহ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ কানাডা ও মধ্যপ্রাচ্যের সার সরবরাহকারী দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে।

জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কানাডা থেকে মোট আট লাখ টন এমওপি সার আমদানির উদ্যোগ নিয়েছি। এ ব্যাপারে ওই দেশের সঙ্গে আমাদের সমঝোতা স্মারক হয়েছে। ফলে এই সার নিয়ে সরকারের কোনো দুশ্চিন্তা নেই। তবে সার বাবদ সরকারের বিপুল পরিমাণে ভর্তুকি বাড়ছে। এই চাপ নিয়েও সরকার ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ওই ভর্তুকি দিয়ে যাবে।’

কমানো হয়েছে চাহিদা

বাংলাদেশে চলতি অর্থবছরে ৬৯ লাখ টন রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয়েছে। এর মধ্যে ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি—এই চার ধরনের সার ব্যবহার হয় ৫৭ লাখ টন। আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের ওই চার ধরনের সারের চাহিদা কমিয়ে ৫৫ লাখ ৫০ হাজার টনে নামিয়ে আনা হয়েছে।

দেশে প্রয়োজনীয় সারের ৮০ শতাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এর মধ্যে এমওপি সারের বড় অংশ আসে রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে।

প্রসঙ্গত, ওই চারটি প্রধান সার কৃষকদের কাছে বিক্রির ক্ষেত্রে সরকার ভর্তুকি দিয়ে থাকে। চলতি অর্থবছরে সরকার প্রাথমিকভাবে সারে ভর্তুকি বাবদ ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে গত ছয় মাসে সারের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। বেশির ভাগ সারের দাম তিন থেকে চার গুণ বেড়ে যাওয়ায় সরকারকে ভর্তুকির পরিমাণ ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা করতে হয়। কিন্তু অর্থবছরের শেষের দিকে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে হিসাব করে দেখা হয়েছে, ভর্তুকির পরিমাণ এবার বেড়ে কমপক্ষে ৩০ হাজার কোটি টাকা গিয়ে দাঁড়াবে।

জিপসাম, জিংক সালফেট ও অ্যামোনিয়াম সালফেট ও ম্যাগনেসিয়াম সালফেট সারে সরকার কোনো ভর্তুকি দেয় না। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কিনে ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কাছে তা বিক্রি করে থাকেন। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষককেও বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে।

সাবেক কৃষিসচিব এ এম এম শওকত আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমনিতেই এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমাদের ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সারের কারণে নতুন করে যাতে আর সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। আর সরকারের অন্যান্য খাতের ভর্তুকি কমিয়ে প্রয়োজনে সারে ভর্তুকি বাড়াতে হবে, যাতে সারের দাম কম থাকে। কারণ, কৃষকের হাতে এখন টাকা কম। বিশ্ববাজার থেকেও খাদ্য আমদানি করা সামনের দিনে আরও কঠিন হতে পারে। ফলে দেশের উৎপাদন ঠিক রাখতে সারের দাম ও জোগান ঠিক রাখা উচিত।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

বিদেশ থেকে খালি হাতে ফিরে ড্রাগন চাষে সাফল্য

বাগানে চাষ করা ড্রাগন হাতে মিরাজুল ইসলাম
বাগানে চাষ করা ড্রাগন হাতে মিরাজুল ইসলাম

মিরাজুল ইসলাম (৩৩)। ১০ বছর সৌদি আরবে ছিলেন। আকামা জটিলতায় খালি হাতে দেশে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। এক বছর বেকার থাকার পর ইউটিউবে পতিত জমিতে ড্রাগন চাষের ভিডিও দেখেন। বাবার কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে নেমে পড়েন ড্রাগন চাষে। দেড় বছরের ব্যবধানে এখন উপজেলার সবচেয়ে বড় ড্রাগন বাগান তাঁর। এ বছর খরচ বাদে আট থেকে নয় লাখ টাকা লাভের আশা করছেন তিনি।

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার ইন্দুরকানি গ্রামের বাসিন্দা মিরাজুল। উপজেলার টগরা গ্রামে দেড় একর জমিতে তিনি ড্রাগনের বাগান তৈরি করেছেন। তাঁর বাগানে এখন সাড়ে তিন হাজার ড্রাগন ফলের গাছ আছে।

মিরাজুল ইসলাম বলেন, শ্রমিক হিসেবে ১০ বছর সৌদিতে কাজ করে ২০১৯ সালে দেশে ফেরেন তিনি। আকামা সমস্যার কারণে শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। কিছু একটা করবেন বলে ভাবছিলেন। একদিন ইউটিউবে ড্রাগন চাষের ভিডিও দেখতে পান। সেই থেকে ড্রাগন চাষে আগ্রহ জন্মে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে দেড় একর পতিত জমি ড্রাগন চাষের উপযোগী করেন। গাজীপুর থেকে ৬০ টাকা দরে ৬০০ চারা নিয়ে আসেন। বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে শুরু করেন চাষাবাদ। পরের বছর জুনে ফল পাওয়া শুরু করেন।

ড্রাগনের বাগান করতে মিরাজুলের খরচ হয়েছিল ছয় থেকে সাত লাখ টাকা। ইতিমধ্যে ফল বিক্রি করে তাঁর খরচ উঠে গেছে। সাধারণত মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত গাছে ফল আসে। বছরে ছয় থেকে সাতবার পাকা ড্রাগন সংগ্রহ করা যায়। এখন পরিপক্ব ও রোগমুক্ত গাছের শাখা কেটে নিজেই চারা তৈরি করেন। ড্রাগন চাষের পাশাপাশি বাগানে চুইঝাল, এলাচ, চায়না লেবুসহ মৌসুমি সবজি চাষ করেন। এ ছাড়া ড্রাগনের চারাও উৎপাদন করে বিক্রি করেন তিনি।

মিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বাগানের বেশির ভাগ গাছে এ বছর ফল ধরেছে। গত মঙ্গলবার বাগান থেকে দেড় টন ফল সংগ্রহ করেছেন। ২৫০ টাকা কেজি দরে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পাইকারদের কাছে বিক্রি করেছেন। স্থানীয় বাজারে ৩০০ টাকা কেজি দরে ড্রাগন বিক্রি হয়। নভেম্বর পর্যন্ত আরও পাঁচ–ছয়বার বাগান থেকে ফল তোলা যাবে। আশা করছেন, খরচ বাদে এবার আট থেকে নয় লাখ টাকা লাভ থাকবে।

মিরাজুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমার বাগান থেকে চারা নিয়ে অনেকে বাড়িতে ও ছাদে ছোট পরিসরে ড্রাগনের বাগান করেছেন। আমি এ পর্যন্ত ৪০ টাকায় দেড় হাজার চারা বিক্রি করেছি।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পূর্ণ বয়সের একটি ড্রাগনের চারা রোপণের পর ২৫ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। এর মৃত্যুঝুঁকি নেই বললেই চলে। তবে কয়েক দিন পরপর সেচ দিতে হয়। বৃষ্টির পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হয়। ড্রাগন ফল চাষে রাসায়নিক সার দিতে হয় না।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইশরাতুন্নেছা বলেন, মিরাজুল ইসলামকে ড্রাগন চাষে নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে আসছে কৃষি বিভাগ। উপজেলায় তাঁর বাগানটি সবচেয়ে বড়। তিনি নিরলস পরিশ্রম করে ছোট থেকে বাগানটি বড় করেছেন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

নাসিরনগরে বন্যায় তলিয়ে গেল কৃষকের বাদামখেত

নাসিরনগরের গোয়ালনগর ইউনিয়নে অতিবৃষ্টি ও আগাম বন্যায় তলিয়ে গেছে কৃষকদের বাদামখেত। আজ মঙ্গলবার ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রামে
নাসিরনগরের গোয়ালনগর ইউনিয়নে অতিবৃষ্টি ও আগাম বন্যায় তলিয়ে গেছে কৃষকদের বাদামখেত। আজ মঙ্গলবার ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রামে

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নে অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে কৃষকের প্রায় ৩০ হেক্টর বাদাম চাষের জমি। কয়েক দিন আগে উজানের পানিতে তাঁদের পাকা ধানের জমি তলিয়ে গিয়েছিল। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষকেরা বাদাম চাষ করেছিলেন। আবারও ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ার বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হলেন চাষিরা।

উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১১ এপ্রিল উপজেলায় শিলাবৃষ্টি এবং ১৪ থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত উজানের পানিতে কৃষকের পাকা ধানের জমি তলিয়ে যায়। কৃষকেরা সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ২০০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করেছিলেন। এর মধ্যে উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নে ৩০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করা হয়। উপজেলায় এবার প্রায় ৫০ হাজার মণ বাদাম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। কিন্তু উজানের পানিতে হঠাৎ বন্যায় সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

গোয়ালনগর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আজহারুল হক বলেন, ‘নাসিরনগর উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাদাম চাষ করা হয় আমাদের ইউনিয়নে। কিন্তু এ বছর আগাম বন্যার কারণে কৃষকেরা তাঁদের ফসল ঘরে তুলতে পারেননি। তাঁদের সব ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।’

ওই এলাকার বাদামচাষি মেরাজ মিয়া বলেন, তিনি ছয় বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করেন। দু-এক দিনের মধ্যে বাদাম তুলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু খেতে গিয়ে দেখেন সব বাদাম পানির নিচে। এখন এই বাদাম তুলে কোনো লাভ নেই। এগুলো গরুও খাবে না।

মো. রজব আলী নামের এক কৃষক বলেন, ‘আমাদের ইউনিয়নের জামারবালি, সোনাতলা ও মাইজখোলা গ্রামে বাদামখেত আছে। গত তিন দিনে পাঁচ-ছয় ফুট পানি বাড়ায় সব তলিয়ে গেছে। এখন বাদাম তুলতে কাজের লোকও পাওয়া যাচ্ছে না।’

কৃষক ফতু মিয়া বলেন, গোয়ালনগর ইউনিয়নের বাদাম চাষের জমিগুলো হঠাৎ পানি আসায় তলিয়ে গেছে। ফসল তলিয়ে তাঁদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেল। কয়েক দিন আগেও পাকা ধান পানির নিচে তলিয়ে গিয়েছিল। কৃষকদের দাবি, গোয়ালনগরে বাদাম চাষের জমি তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকদের প্রায় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আবু সাইদ প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলার কয়েকটি চরাঞ্চলে বাদাম চাষ করা হয়। চরাঞ্চলের উঁচু জমিতে প্রথমে আলু চাষের পর বাদাম চাষ করা হয়। আগাম বন্যার কারণে নিচু এলাকার কিছু বাদামখেত পানিতে তলিয়ে গেছে।

আবু সাইদ আরও বলেন, ১৫-২০ দিন আগে উপজেলার প্রায় সব বাদাম উঠে গেছে। গোয়ালনগর ইউনিয়নে ৩০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করা হয়েছিল। এর মধ্যে এক হেক্টর জমির বাদাম তলিয়ে গেছে। সব মিলিয়ে ৭০ হাজার টাকার মতো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সিলেটে বন্যা হওয়ায় এমনটি হয়েছে বলে তিনি জানান।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

পানি দিতে অতিরিক্ত টাকা

পানি দিতে অতিরিক্ত টাকা
পানি দিতে অতিরিক্ত টাকা

ঠাকুরগাঁওয়ে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) একটি গভীর নলকূপের সেচের পানি সরবরাহে কৃষকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হচ্ছে। ভুক্তভোগী কৃষকদের কাছ থেকে পাওয়া এমন অভিযোগের তদন্ত করে সত্যতা পেয়েছে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষ। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বড় বালিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে।

ভুক্তভোগী কৃষকেরা বলছেন, সেচের পানির জন্য প্রিপেইড কার্ডের বাইরে কোনো টাকা দেওয়ার নিয়ম নেই। কিন্তু বিএমডিএর ১০৮ নম্বর গভীর নলকূপের অপারেটরের দায়িত্বে থাকা বিউটি বেগমের স্বামী আকতারুজ্জামান বোরো ধান চাষের জন্য প্রতি বিঘার জন্য ১ হাজার ২০০ টাকা ও অন্য মৌসুমে ৩০০ টাকা নেন। ১০ বছর ধরে তিনি এভাবেই বাণিজ্য করে আসছেন।

সম্প্রতি রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে বিএমডিএর গভীর নলকূপ থেকে খেতে সেচের পানি পেতে হয়রানির শিকার দুই কৃষকের মৃত্যুর ঘটনা দেশজুড়ে আলোচিত হয়।

ঠাকুরগাঁও জেলায় বিএমডিএর ১ হাজার ৪৩১টি গভীর নলকূপ রয়েছে। এর মধ্যে সচল ১ হাজার ৪১৮টি। সেচের আওতায় ৭৬ হাজার ৫০০ পরিবারের জমি রয়েছে ৫৩ হাজার ৫০০ হেক্টর।

* সেচের পানির জন্য প্রিপেইড কার্ডের বাইরে কোনো টাকা দেওয়ার নিয়ম নেই। * সেচের আওতায় ৭৬ হাজার ৫০০ পরিবারের জমি আছে। * কৃষকদের নলকূপের আবেদন পেলে যাচাই করে স্কিম তৈরি করা হয়।

বিএমডিএ সূত্রে জানা গেছে, কৃষকদের নলকূপের আবেদন পেলে যাচাই করে স্কিম তৈরি করা হয়। এরপর সমবায়ের ভিত্তিতে অংশীদারি ফি বাবদ এক লাখ টাকা জমা দিতে হয়। এই নলকূপ পরিচালনার জন্য বিএমডিএ একজন অপারেটর নিয়োগ দেন। প্রিপেইড মিটারিং পদ্ধতিতে কৃষকের নিজ নামে প্রিপেইড কার্ড থাকতে হয়। সেই কার্ড থেকে প্রতি ঘণ্টায় সেচের পানির জন্য ন্যূনতম ১১০ টাকা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কেটে নেওয়া হয়। এর বাইরে অতিরিক্ত কোনো টাকা দেওয়ার নিয়ম নেই।

বড় বালিয়া এলাকার কৃষকেরা জানান, ২০১১ সালের দিকে বড় বালিয়া মণ্ডলপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. আকতারুজ্জামান এলাকায় গভীর নলকূপ স্থাপনের উদ্যোগ নেন। ফি হিসেবে এক লাখ জমা দেওয়ার নিয়ম থাকলেও কোনো কৃষক সেটা দিতে এগিয়ে আসেননি। ফলে আকতারুজ্জামান, দাউদুল ইসলাম ও জোবায়দুর রহমান মিলে অংশীদারি ফি দেন। আকতারুজ্জামানের ৮০ শতাংশ টাকা থাকায় গভীর নলকূপের নিয়ন্ত্রণ তিনিই পান। অপারেটর হিসেবে নিয়োগ পান তাঁর স্ত্রী বিউটি বেগম। যদিও কৃষকেরা আকতারুজ্জামানকেই অপারেটর হিসেবে জানতেন।

সেচের পানি পেতে হয়রানির শিকার হয়ে সদর উপজেলার বড় বালিয়া এলাকার ৫০ জন কৃষক গত ১৭ এপ্রিল বিএমডিএ সহকারী প্রকৌশলীর কাছে অভিযোগ দেন। সেখানে গিয়ে কৃষক ও অপারেটরের সঙ্গে কথা বলে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়।

ভুক্তভোগী কৃষকেরা বলেন, ২০১২ সালে নলকূপটি চালু হলে আওতাধীন কৃষকের কাছ থেকে আকতারুজ্জামান সেচের পানির জন্য প্রিপেইড কার্ডের অতিরিক্ত টাকা আদায় শুরু করেন। আর সেই টাকা থেকে তিনি মাঝেমধ্যে অন্য দুই অংশীদারকে কিছু টাকা ভাগ দেন।

ভুক্তভোগী কৃষক মো. শাহজাহান আলী বলেন, গভীর নলকূপটির আওতায় তাঁর ১০ বিঘা জমি রয়েছে। কার্ডের বাইরে টাকা দেওয়ার নিয়ম না থাকলেও আকতারুজ্জামানকে প্রতি বিঘায় সেচের জন্য ১ হাজার ২০০ টাকা দিতে হয়। এই টাকা না দিলে তিনি পানি দেন না।

ওই নলকূপের আওতায় চার বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করছেন কৃষক মো. হেলাল। তিনি অতিরিক্ত টাকা না দেওয়ায় অপারেটর খেতে পানি দেননি। এতে জমি ফেটে যায়। পরে তিনি শ্যালো ইঞ্জিন দিয়ে জমিতে সেচ দিয়ে খেত রক্ষা করেছেন।

আরেক ভুক্তভোগী মোকলেসুর রহমান বলেন, ১০ বছর ধরে সেচের পানির জন্য অতিরিক্ত টাকা দিয়ে আসছেন। এখন বিরক্ত হয়ে বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। এরপরও কোনো বিচার পাননি।

এ বিষয়ে মো. আকতারুজ্জামান বলেন, তিনি সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেওয়ার পর দেখেন গ্রামে কোনো গভীর নলকূপ নেই। পরে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে নলকূপটি স্থাপন করেন। কৃষকেরা অংশীদারত্বের টাকা দিতে রাজি না হলে তিনি বিএমডিএকে জানান। সে সময় তাঁরা টাকা দিয়ে দিতে পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘পরে আপনি টাকাটা ধীরে ধীরে তুলে নেবেন।’ সেই পরামর্শেই সেচের পানি বাবদ প্রিপেইড কার্ডের অতিরিক্ত কিছু টাকা তিনি নিচ্ছেন। জোর করে কিছু নিচ্ছেন না।

বিএমডিএ ঠাকুরগাঁও কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, অভিযোগটি যাচাই করে সত্যতা পাওয়া গেছে। নলকূপটি সুষ্ঠুভাবে চালানোর জন্য সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ওই অপারেটরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোটেক

কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তারা এক সঙ্গে কাজ করতে রাজি

ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকেরাফাইল ছবি
ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকেরাফাইল ছবি

ডাচ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে দুই দেশের বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা একসঙ্গে কাজ করতে রাজি হয়েছেন।

গতকাল সোমবার নেদারল্যান্ডসের রাজধানী হেগে অনুষ্ঠিত কৃষি খাতের ব্যবসাবিষয়ক এক সম্মেলনে দুই দেশের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা সহযোগিতার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।

নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম রিয়াজ হামিদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত এগ্রি বিজনেস কনক্লেভে বাংলাদেশের প্রায় ৪০জন উদ্যোক্তা ডাচ কৃষি খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি প্রযুক্তি সহযোগিতা ও ব্যবসায়িক সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। দিনব্যাপী আয়োজিত অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেছে ওয়েগেনিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়।

আলোচনায় বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা প্রযুক্তি কিনতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দিলে নেদারল্যান্ডসের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা প্রযুক্তি সহযোগিতা দিতে রাজি থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।

রিয়াজ হামিদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে ডাচরা প্রস্তুত এবং বাংলাদেশি উদ্যোক্তারাও তাদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। এ ছাড়া ডাচ সরকার ইতিমধ্যে বাংলাদেশের বীজ, পশু খাদ্য, পোলট্রি, হর্টিকালচার ও এ্যাকুয়াকালচার বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম সম্পাদন করেছে, যা ওই দেশের বেসরকারি খাতকে আরও উৎসাহিত করেছে।

আলোচনায় কৃষি সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করতে তৈরি আছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্কয়ার, ইস্পাহানি এগ্রো, একে খান অ্যান্ড কোম্পানি, প্যারাগন গ্রুপ, এসিআই, জেমকন গ্রুপসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তিনি জানান, মঙ্গলবার বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা ডাচ প্রযুক্তির প্রয়োগ সরেজমিনে দেখতে যাবেন।

বাংলাদেশের সঙ্গে নেদারল্যান্ডসের পোল্ট্রিখাতে সহযোগিতার আলোচনা অনেকটা এগিয়েছে উল্লেখ করে মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, দুই দেশের মধ্যে মৎস্য, পশুপালন ও হর্টিকালচারে সহযোগিতার বিপুল সম্ভাবনা আছে।

কনক্লেভ আয়োজনে প্রথমবারের মতো দূতাবাসের সঙ্গে অংশীদার হয়েছে নেদারল্যান্ডসের কৃষি মন্ত্রণালয়, নেদারল্যান্ডস এন্টারপ্রাইজ এজেন্সি, নেদারল্যান্ডস ফুড পার্টনারশিপ, ডাচ-গ্রিন-হাইজডেল্টা, লারিভ ইন্টারন্যাশনাল, স্টান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ।

কৃষিজাত পণ্য রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থানকারী নেদারল্যান্ডসের আয়তন বাংলাদেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের কম। ২০২১-এ কৃষিপণ্য ও খাদ্য রপ্তানি করে নেদারল্যান্ডস ১১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি আয় করেছে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশক: শাইখ সিরাজ
© ২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। দা এগ্রো নিউজ, ফিশ এক্সপার্ট লিমিটেডের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। ৫১/এ/৩ পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থাপথ, ঢাকা -১২০৫
ফোন: ০১৭১২-৭৪২২১৭
ইমেইল: info@agronewstoday.com, theagronewsbd@gmail.com