আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি বিশ্বের ১৮টি ইংরেজি অভিধান ও গ্রামার মুখস্থ করার বিরল রেকর্ডের অধিকারী রেজাউল ইসলাম ওরফে জাফরের এখন দিন কাটে অর্ধাহারে কিংবা অনাহারে। এক সময়ের কোটিপতি সদালাপী এই অনন্য প্রতিভাধর ব্যক্তি এক বিরল রোগে আক্রান্ত হয়ে সব হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

রেজাউল ইসলাম পাবনার বেড়া উপজেলার নতুন ভারেঙ্গা গ্রামের ছেলে। তিনি ১৯৮৫ সালে ধোবাখোলা করোনেশন (নাটিয়াবাড়ি) উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ঢাকার সরকারি তিতুমীর কলেজ থেকে ১৯৮৭ সালে প্রথম বিভাগে এইচএসসি পাস করেন। এরপর আর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা তার নেয়া হয়নি।

রেজাউল ইসলামের জীবন যেন এক রঙ্গমঞ্চ। যার অধিকাংশই ট্র্যাজেডিতে ভরা। বাবা গোলাম খলিফা ও মা লাইলি খাতুনের চার ছেলে চার মেয়ের মধ্যে তিনি তিন নম্বর সন্তান। দারিদ্র্যের কষাঘাত আর বাবার নির্যাতনে তার শৈশব কাটে। পাঁচ বছর বয়স থেকেই বাবার অমানবিক নির্যাতনের শিকার হতে হতে তার মাথায় যন্ত্রণার বীজ রোপিত হয়। সেই যন্ত্রণাই তার জীবনে মহীরুহ হওয়ার পথে বাধা হয়েছে।

শত কষ্টের মধ্যেও বাড়ির কাছের চর সাফুল্লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৫ম শ্রেণি পাস করেন। ওই স্কুল থেকে বৃত্তি পরীক্ষা দিয়ে উপজেলায় প্রথম হয়েছিলেন। তার হাতের লেখা সুন্দর ছিল। বৃত্তি পরীক্ষার হলে সে বিষয়টি পরিদর্শকসহ সবার নজর কাড়ে। ১৯৭৯ সালে ৫ম শ্রেণি পাস করার পর বাবার অত্যাচারে তাকে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হয়।

একজন সমাজ হিতৈষি মানুষের সহযোগিতায় ভর্তি হন পাবনা জিলা স্কুলে। কিন্তু বিদ্যালয়ের গতানুগতিক পাঠ আর নিয়মের বেড়াজাল অবহেলা-অনাদরে বেড়ে ওঠা রেজাউলের ভালো লাগেনি। ষষ্ঠ শ্রেণির অর্ধবার্ষিক পরীক্ষায় তিনি দ্বিতীয় হন। ফলাফল চ্যালেঞ্জ করে প্রথম হন অনেক নম্বরের ব্যবধানে। এরপর পাবনা জিলা স্কুল ছাড়েন। শুরু হয় যাযাবর জীবন।

পাবনার বেড়া উপজেলার নগরবাড়ী ঘাটে চলে আসেন। তাকে একজন নগরবাড়ীর পাশেই নাটিয়াবাড়ি ধোবাকোলা করোনেশন উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেন। এ সময় তার থাকা খাওয়ার ঠিক ছিল না। এর মধ্যে নগরবাড়ীতে সৌদি প্রবাসী এক ব্যক্তি ‘ভিসিআর’র দোকান করেন। রেজাউলের কাজ ছিল ভিসিআর চালানো। আর রাতে লোকজন চলে গেলে সেখানে রাত্রিযাপন করতেন।

‘শো’ না চললে তাকে টাকার অভাবে না খেয়ে থাকতে হতো। এভাবে কেটে গেছে ৫ বছর। স্কুল ঠিকমতো না করেও ৮ম শ্রেণি পাস করে নবম শ্রেণিতে ওঠেন। সায়েন্স না আর্টস নেবেন তাও ঠিক করেননি। স্যাররা তাকে সায়েন্সে ভর্তি করে দেন। সেখানে মোবারক হোসেন নামে একজন স্যার তাকে অনেক সহায়তা করতেন বলে রেজাউল জানান।

ভিসিআর দোকানের সেই ‘টোকাই বালক’ এসএসসি পরীক্ষা দেন। পরীক্ষার কয়েকদিন আগে একটা গাইড কিনে পড়েন। সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়ে প্রথম বিভাগে পাসও করেন। এত প্রতিকূলতার মাঝেও তিনি একটি কাজ নিয়মিত করেছেন সেটা হলো ইংরেজী ডিকশনারি মুখস্থ করা।

জানালেন ১৯৭৭ সালের কথা, তখন তিনি তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র। তাদের প্রাইমারি স্কুলে একদিন একজন ইংরেজ এসেছিলেন বেড়াতে। তার সঙ্গে দেখা হওয়ার পর রেজাউলের মনে আকাঙ্ক্ষা জাগে ইংরেজি শেখার। সেখান থেকেই শুরু। হাইস্কুল জীবনে নগরবাড়ীর শাহজাহান সিরাজ নামের একজন তাকে বেশ কয়েকটি ইংরেজি ডিকশনারি কিনে দেন। তিনি এসএসসি পাসের আগেই সেগুলো মুখস্থ করে ফেলেন। তিনি যা পড়তেন মুখস্থ হয়ে যেত বলে জানালেন।

পরবর্তী জীবনে রেজাউল অক্লান্ত চেষ্টার ফল হিসেবে অক্সফোর্ডসহ একে একে বিশ্বের ১৮টি ইংরেজি ভাষার অভিধান ও গ্রামার আয়ত্ত করেন। তার পঠিত অভিধান ও গ্রামারের তালিকায় রয়েছে- অর্নামেন্টাল, ফেদম, ওয়েবস্টারস, কেপিলার্স, আলেকজান্ডার, এলনস, টমাস, ও’লেনস, থ্রিচার্স, মার্টিনস, জেসি নেসফিল্ডস, ওকেন্স, ওয়েল ফক্স, চেম্বারস, কেমব্রিজ ও অক্সফোর্ড। এছাড়া তিনি বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক লেক্সিকন পড়েছেন।

শুধু শব্দভান্ডার নয়। প্রতিশব্দ, পরিভাষা, উপভাষা এমনকি ইংরেজি গ্রামার ও বাংলা ব্যাকরণের আদ্যপান্ত রেজাউলের নখদর্পণে।

রেজাউল জানান, ২৫ লাখেরও বেশি শব্দ তার আয়ত্তে। মস্তিষ্কে শব্দ ধারণের দিক থেকে এটাই নাকি সবচেয়ে বড় রেকর্ড বলে দাবি করেন রেজাউল।

jagonews24

রেজাউল করিম জানান, তার ইচ্ছা ছিল ইংরেজি শব্দ মুখস্থ করা। এমন কোনো শব্দ ইংরেজিতে থাকবে না, যা তার মুখস্থ নেই।

এদিকে ১৯৮৫ সালে এসএসসি পাস করে ঢাকায় চলে আসেন রেজাউল। সেখানে শুরু হয় তার ভয়াবহ জীবন যুদ্ধ। কখনো নাইটগার্ড কখনো ট্রাকে কুলির কাজ করেছেন। দোকানের মেঝেতে বা ফুটপাতে শুয়ে বহু রাত কেটেছে। গোসলহীন চলে গেছে দিনের পর দিন। তার গায়ের রং ফর্সা হলেও শরীরে ময়লা জমতে জমতে কৃষ্ণাঙ্গদের মতো চেহারা হয়ে গিয়েছিল।

তার এক বন্ধু তিতুমীর কলেজে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলেন তাকে। কিন্তু ঢাকায় টিকতে না পেরে সিরাজগঞ্জের এক কলেজে গিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। তার ইংরেজি দক্ষতা দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন কলেজের অধ্যক্ষসহ শিক্ষকরা। সিরাজগঞ্জে রফিক নামের তার এক বন্ধু থাকা- খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন।

সেখানে কিছুদিন থাকার পর সেই বন্ধুই তাকে আবার ঢাকায় নিয়ে তিতুমীর কলেজে ভর্তির ব্যবস্থা করেন। সায়েন্সের ছাত্র হলেও তিনি পড়তেন সাহিত্য কিম্বা ইতিহাসের বই।

ঢাকায় আসার এ পর্বে তার একটি কাজ জুটে যায়। একটি বাসায় ১০ম শ্রেণির এক ধনীর দুলালের দেখাশোনা করা ছিল তার কাজ। তার ফরমায়েশ খাটার পাশাপাশি তার পায়ের কাছে বসে থেকে সেবা যত্ম করতেন। ওই বাড়িতে সবার উচ্ছিষ্ট খেতে দেয়া হত রেজাউলকে। তরকারি দেয়া হত না তাকে। তবে তরকারি কপালে না জুটলেও ওই ছেলেটির ‘লাথি’ তার কপালে জুটেছে বহুবার।

কিছুদিন পর ওই বাড়িতে গৃহশিক্ষক পরিবর্তন হয়। লজিং বাড়ির নতুন শিক্ষক ছিলেন মিজানুর রহমান। তিনি এসেই বললেন ‘এত বড় একটি ছেলে সবার পায়ের নিচে বসে থাকে, এ কেমন কথা!’

তাকে (রেজাউলের) বসার স্থান না দিলে তিনি পড়াবেন না বলেও জানিয়ে দেন। এরপর রেজাউলের বসার আসন দেয়া হয়। একদিন শিক্ষক মিজানুর রহমান রেজাউলকে বলেন, সে লেখাপড়া জানে কিনা? রেজাউল জানিয়েছিলেন, পড়াশোনা বেশি জানেন না। তবে ইংরেজী জানেন। শুনে মিজানুর রহমান হাসেন।

আবার যখন রেজাউল বলেন আমি সবার চেয়ে বেশি ইংরেজী জানি। এ কথা শুনে ওই শিক্ষক তো রেজাউলকে পাগলই মনে করে ফেলেন। টেস্ট করতে দেয়া হয় ইংরেজীতে কয়েকটি বাক্য অনুবাদ করার জন্য। রেজাউল ইসলাম অন্তত ২০ রকম করে সেটি অনুবাদ করে দেন। এতে ওই শিক্ষক হতবাক হন। আবেগে কেঁদে ফেলেন তিনি, এমন একজন বিরল প্রতিভা নষ্ট হচ্ছে দেখে।

তিনি রেজাউলকে তার বাসায় নিয়ে যান। তার জন্য নতুন শার্ট-প্যান্টের ব্যবস্থা করেন। তাকে টিউশনি ঠিক করে দেন। তার টিউশনিকালে দ্রুত ছাত্র/ ছাত্রী বৃদ্ধি পায়। রেজাউলের দিন বদলাতে থাকে। ঢাকার সরকারি তিতুমীর কলেজ থেকে ১৯৮৭ সালে প্রথম বিভাগে এইচএসসি পাসও করেন।

বন্ধুরা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য কোচিং সেন্টারের দ্বারে-দ্বারে তখন কোচিং সেন্টারে ইংরেজির ক্লাস নেয়া শুরু করেন রেজাউল। কোচিংয়ে পড়ানোর পাশাপাশি রেজাউল ইংরেজি অভিধানের ‘প্রেমে’ পড়ে থাকেন।

jagonews24

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কেন নেননি এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের দেশে শিক্ষার সনদই মুখ্য, জ্ঞানার্জন হচ্ছে গৌণ। কিন্তু আমি সনদ অর্জনের চেয়ে জ্ঞানার্জনকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষ ও মানুষের প্রকৃতি-সংস্কৃতি জানা-বোঝার জন্য রেজাউল ঘুরে বেড়িয়েছেন অনেক দেশ। বিশেষ করে মিশেছেন ইংরেজি ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর সাথে। ভারত, নেপাল, ভুটান, চীন, জাপান, ব্রিটেন, জার্মান, যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশে গিয়েছেন। বিদেশ বিভুঁইয়ে তিনি জানার চেষ্টা করেছেন বিশ্বে তার সমকক্ষের ইংরেজি জানা কেউ আছেন কিনা?

রেজাউলের ভাষ্য, ইংরেজি লেখা, বোঝা, বলা ও লেখার দিক থেকে বিশ্বে তার সমকক্ষ কম লোকই আছেন। ইংরেজরাও তার মতো এত শব্দ জানেন না, এত দ্রুত ইংরেজি বলতে পারেন না।

রেজাউল জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও বিশ্বের নামকরা প্রায় ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষকদের সংস্পর্শে তিনি গেছেন। তাদের সঙ্গে মিশেছেন এবং ইংরেজির নানা বিষয়ে কথা বলেছেন। ইংরেজির শিক্ষকরা তার সঙ্গে কথা বলে এবং ইংরেজি ভাষায় তার গভীরতা দেখে অবাক হয়েছেন।

এদিকে কোচিং সেন্টার থেকে তার বহু টাকা আয় রোজগার হতে থাকে। ইংরেজীর কোর্স করানো শিক্ষক হিসেবে তিনি মাসে লাখ- লাখ টাকা আয় করতে থাকেন। তিনি আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হন এবং তার জন্য বেশ কয়েকটি কোচিং সেন্টার ব্যাপক সুনাম অর্জন করে। জীবন বদলে যায় রেজাউলের। তিনি নিজেও ‘জাফর’ নামে পরিচিত হয়ে ওঠেন। ‘জাফর’ নামটি তার খুব প্রিয়। বলেন, এ নামটি সাফল্য পাওয়া মানুষদের নাম।

রেজাউল এরপর ভারতে যান বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। কিন্তু কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সে সময় বলে দেয়া হয়, বাংলাদেশের ছাত্রকে ভর্তি করা হবে না। এক পর্যায়ে তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হন। কিন্তু সেখানে তার সিলেবাসভুক্ত পাঠ ভালো লাগেনি। তিনি পড়াশোনা শেষ না করে আবার বাংলাদেশ ফিরে আসেন। এটা ১৯৯০ সালের কথা।

ভারত থেকে এসে তিনি ফেয়ার মেট কম্পর্টমেন্ট নামে ধনাঢ্য ব্যক্তিদের একটি সংস্থায় যোগ দেন। সেখানে তিনি প্রচুর অর্থ আয় করেন। তার সুযোগ সুবিধা ছিল অসামান্য। কিছুদিন পরই ‘মাথা যন্ত্রণা’র রোগটি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। তিনি ভারত, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও জার্মানীতে চিকিৎসা নেন। বিশেষ কোনো রোগ ধরা পড়েনি। এতে তিনি সুস্থ না হলেও নিঃস্ব হয়ে যান।

তিনি জানতেন- অসুস্থ লোককে কেউ দীর্ঘমেয়াদে রাখবেন না। তাই তিনি কাউকে কিছু না জানিয়ে পাবনা চলে আসেন শূন্য হাতে। এসে স্থানীয় সুহৃদদের পরামর্শে একটি সাধারণ ঘরের মেয়েকে বিয়ে করেন। তবে তার স্ত্রীর ধারণা ছিল- রেজাউল মানেই টাকার মেশিন। কোটি কোটি টাকা। তিনি স্বামীর আর্থিক দুরাবস্থাকে মেনে নিতে পারেননি।

এক বছর পর ১৯৯৮ সালে রেজাউল স্ত্রীর চাপে অসুস্থতা নিয়েই আবার ঢাকা যান। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে/ সংস্থায় দোভাষী/ লবিস্টের কাজ করেন দু’ বছর। এ সময় স্ত্রীর নামে পাঠান লাখ-লাখ টাকা। শেষে অসুস্থ হয়ে পড়লে তার আর ঢাকায় থাকা হয়নি। তিনি পাবনায় চলে যান। বেকার স্বামীকে তার স্ত্রী মেনে নিতে পারেননি। রেজাউল অবহেলার পাত্রে পরিণত হন। বেশ কয়েক বছর বেকার ছিলেন। দুটি সন্তানের জন্য মাঝে মধ্যে টিউশনিও করে সংসার চালানোর চেষ্টা করেন।

এর মধ্যে ২০১৪ সালের দিকে পাবনার কাশীনাথপুরে স্কাইলার্ক ইন্টারন্যাশনাল স্কুল তাকে সেখানে সপরিবারে নিয়ে যায়। রেজাউলের মাসে ১০-১২ হাজার টাকার সংস্থান হয়। কিন্তু তার স্ত্রী অল্প আয় মেনে নিতে পারেননি। রেজাউল এ চাকরিও ছাড়েন। এরপর থেকে তার অসুস্থতা বাড়তেই থাকে। অসুসস্থতা বলতে মাথায় ভয়াবহ যন্ত্রণা।

তিনি জানান, তার যন্ত্রণা মৃত্যু যন্ত্রণার কাছাকাছি। কিন্তু বাইরে থেকে তাকে সুস্থ বলে মনে হয়। চাকরি ছেড়ে, স্ত্রী- সন্তানদের কাছ থেকে বিতাড়িত হয়ে গ্রামের বাড়ি পুরাণভারেঙ্গা গ্রামে চলে আসেন। তিনি সপ্তাহে একটি টিউশনি করতেন। এক ঘণ্টা পড়িয়ে এক ঘণ্টার টাকা নগদ নিয়ে দু’মুঠো ভাতের ব্যবস্থা করতেন। কিন্তু করোনাকালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ টিউশনি বন্ধ হয়ে গেলে তিনি ভয়াবহ মানবিক সংকটে পড়েন। খুব প্রয়োজনীয় ওষুধও কিনতে পারছেন না। দিনের পর দিন অভুক্ত থাকতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, অসুস্থতা বেড়েছে। এখন তার পক্ষে অন্যকে পড়ানোর মতো মানসিক শক্তি বা সামর্থ্য নেই। প্রতিটি দিন যাচ্ছে তিনি বেশি অসুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। তার থাকার ঘরটি বসবাসের অযোগ্য। পচা নর্দমার মতো তার থাকার ঘর। গন্ধে সেখানে শ্বাস নেয়া যায় না।

jagonews24

তার ফুফু মরিয়ম খাতুন বলেন, এত জ্ঞান বুদ্ধির ছেলেটি আজ বড় অসহায়। তার দেখার কেউ নেই। তার দুটি ছেলে মায়ের কাছে থেকে লেখাপড়া করে। তারা অসহায় রেজাউলের কোনো খোঁজ নেয় না। রেজাউল ভিক্ষাও করতে পারে না। তাই অনাহারে অর্ধাহারে তার দিন কাটে।

রেজাউলের মা লাইলি খাতুনও নিজের পেটের তাগিদে এখানে- সেখানে থাকেন। তিনিও ছেলের জন্য কিছু করতে পারেন না। তিনি তার ছেলের করুণ দুর্দশার কথা বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

তিনি বলেন, তার ছেলে সুস্থ অবস্থায় লাখ-লাখ টাকা আয় করেছে। আজ অসুস্থ হয়ে, বিনা চিকিৎসায়, না খেয়ে তার দিন কাটে। মা হয়ে তিনি সহ্য করতে পারছেন না। কিন্তু তিনি নিজেই মানুষের দ্বারে-দ্বারে ভাতের কাঙাল। তিনি রেজাউলের জন্য কিছুই করতে পারছেন না বলে আফসোস করেন।

কাশীনাথপুর স্কাইলার্ক ইন্টারন্যাশনাল বিজ্ঞান স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিচালক আলাউল হোসেন জানান, বিরল প্রতিভার রেজাউল ইসলামকে কয়েক বছর আগে তিনি তাদের প্রতিষ্ঠানে খন্ডকালীন চাকরি দিয়েছিলেন। এখন তার মাথায় ভয়াবহ অসুখের জন্য তার পক্ষে ক্লাস নেয়া বা টিউশনি করা সম্ভব না। তিনি সত্যিকার অর্থেই অনাহারে-অর্ধাহারে থাকেন। দেশ বিদেশের হৃদয়বান ব্যক্তিরা একটু করে সাহায্যের হাত বাড়ালে তিনি অন্তত দু’মুঠো ভাত খেয়ে বেঁচে থাকতে পারবেন।

পরিবেশ

ছাদ বাগানের জন্য কয়েকটি টিপস

ছাদ বাগানীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। টবে, ড্রামে গাছ লাগানো হয়। কেউ ফল, কেউবা সবজির গাছ লাগান। কেউ সফল হন। কেউ সফল হন না। ছোট ছোট কিছু ভুল বাগানীরা করে থাকেন। সে কারণে যত্ন নিলেও ফল আসে না। এখানে ছাদ বাগানীদের জন্য কিছু টিপস দেয়া হলো, যা মানলে সফলতা পাওয়া সহজ হতে পারে।

প্রথমেই মনে রাখতে হবে, টবে বা ড্রামে গাছ লাগালে তাকে খাবার দিতে হবে। প্রকৃতিতে বিদ্যমান গাছের মতো সে খাবার সংগ্রহ করতে পারে না। রোগ-বালাই হলো কিনা সেটাও বুঝে ব্যবস্থা নিতে হবে। ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে।

১. মাটির সাথে অবশ্যই কিছু কোকোপিট মেশাবেন। গাছের গোড়া স্যাতস্যাতে হতে দিবেন না। স্যাতস্যাতে হলে অসংখ্য রোগ হবে। মাটি ভেজা থাকবে তবে স্যাতস্যাতে না। কেকোপিট মেশালে পানি কম দিলেও হবে। কোকোপিট (নারকেলের ছোবলার গুড়া) পানি ধরে রাখে। অতি বৃষ্টি হলে গোড়ায় পানি জমতে দেয় না। হালকা হওয়ায় ছাদে ওজনের চাপ পড়ে না। এছাড়া কোকোপিটে কিছু পুষ্টি উপাদান আছে। যা গাছের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। কোকোপিটে চারা দ্রুত গজায়, বড় হয়। মাটির চেয়ে কোকোপিটে চারা ভালো হয়।

২. গাছের জন্য বিরিয়ানি হলো সরিষার খৈল-পচা পানি। মাটির হাড়িতে খৈল পচাতে হবে। কমপক্ষে ৫ দিন। ৭ দিন কিংবা বা ১৫ দিন হলে উত্তম। অল্প পানিতে পচিয়ে তার সাথে আরো পানি মিশিয়ে দিতে হবে। এটি গাছের জন্য অত্যন্ত উপকারী। একটু গন্ধ হয়, তাই অল্প একটু গুড় দিতে পারেন। ছাদে হাড়িতে পচালে বাসায় গন্ধ আসবে না। বৃষ্টির সময় খৈল-পচা পানি দেবেন না। পুকুরের নিচে থাকা পাক কাদা গাছের জন্য খুব উপকারী।

৩. আমরা জানি, মাটিতে অসংখ্য ক্ষতিকর ছত্রাক থাকে। যা গাছকে মেরে ফেলার জন্য যথেস্ট। তাই মাটি রেডি করার সময় কিছুটা বায়োডামা সলিট দিবেন। এটি উপকারী ছত্রাক। মাটিতে ক্ষতিকারক উপাদানগুলো মেরে ফেলে। আবার জৈব সারের কাজও করে। গাছের জন্য মাটি হবে ঝুরঝুরে, হালকা।

৪. যাই লাগান না কেন, ভালো জাতের বীজ কিনা নিশ্চিত হয়ে নেবেন। ভালো বীজে ভালো ফসল হবে। নতুবা যতই যত্ন নেন না কেন, সব পরিশ্রম বেলাশেষে জলে যাবে। বীজ থেকে নিজে চারা করা উত্তম। কারণ বাজার থেকে যে চারা কিনবেন সেটার জাত ভালো হবে সে নিশ্চয়তা কোথায়? ছত্রাকনাশক দিয়ে বীজ শোধন করে নেয়া উত্তম। পদ্ধতি হলো- ছত্রাকনাশক দেয়া পানিতে কিছুটা সময় বীজ ভিজিয়ে রাখতে হবে। ম্যানসার, মেটারিল দুটি ছত্রাকনাশক।

৫. গাছ বেশি তো ফলন বেশি- এটি ভুল ধারণা। অল্প জায়গায় বেশি গাছ লাগানো যাবে না। গাছ পাতলা করে লাগাতে হবে। বেশি লাগালে গাছ প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাবে না। একটি ফলের ক্রেটে মাত্র দুটি গাছ। একটি টবে একটি গাছ। ক্রেট বা টবে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।

৬. ছাদে মাচা দেয়া সমস্যা। কারণ ঘুঁটি থাকে না। এ জন্য ফলের ক্রেটের চারপাশে লাঠি বেঁধে সহজে মাচা দেয়া যায়। লতাপাতা জাতীয় গাছ লাগানোর পাত্র একটু গভীর হলে উত্তম। গাছের জন্য সবচেয়ে বেশি ভালো জৈব সার হলো পাতা-পচা সার, তারপর ভার্মি কম্পোস্ট, তারপর গোবর সার। পাতা-পচা সার সহজলভ্য নয়। দাম বেশি। কিন্তু ভার্মি কম্পোস্ট সহজলভ্য। মাটির সঙ্গে মিনিমাম ৪০% জৈব সার দেয়া উত্তম।
৭. নিম কীটনাশককে ক্ষতিকারক পোকা-মাকড় খুব অপছন্দ করে। এটি দিলে তারা বিরক্ত বোধ করে। গাছে বাসা বাঁধতে পারে না। প্রতি সাত দিনে একবার সব গাছের পাতায় নিম কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। মাসে একবার ইপসম সল্ট স্প্রে করে দেয়া উত্তম। একইভাবে মাসে একবার পানির সঙ্গে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড মিশিয়ে স্প্রে করা ভালো।

৮. ডাটা, পুইশাক, লালশাক, ধনেপাতা এসব লাগাতে পারেন। মাত্র ২৫ দিনে খেতে পারবেন। লালশাক লাগালে নেট দিয়ে ঘিরে দেবেন। শাকপাতা লাগালে দ্রুত আউটপুট পাবেন। যা আপনাকে প্রেরণা দেবে। পুইশাক গাছের পাতায় দাগ হলে পাতা কেটে দিন। অথবা ছত্রাকনাশক স্প্রে করেন। অথবা গাছ উঠিয়ে আবার লাগান। ইউরিয়া সার দিলে পুইশাক দ্রুত বাড়বে। শশা গাছের বৃদ্বির জন্য ডিএপি সার দিলে ভালো হবে। শশা গাছে ছাড়া ছাড়া ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হয়। খুব রোদ, গাছের গোড়ায় মালচিং করে দিয়ে উত্তম ফল মিলবে। মালচিং হলো গাছের গোড়ায় বিশেষ পলিথিন কিংবা শুকনো পাতা, খড় দিয়ে ঢেকে দেয়া।

৯. ফুল আসার পরে প্রানোফিক্স অথবা মিরাকুরান গাছের পাতায় শেষ বিকালে স্প্রে করবেন। বাসায় দুইটি গ্রুপের ছত্রাকনাশক রাখা ভালো। যেমন- ম্যানসার, মেটারিল। ১৫ দিনে একবার স্প্রে করবেন। এগরোমিন্ড গোল্ড অনুখাদ্য বা অন্য কোনো অনুখাদ্য বাসায় রাখতে হবে। মাসে কমপক্ষে একবার স্প্রে করবেন। অতিরিক্ত গরম, বৃষ্টি, খাদ্যের অভাব, গাছ রোগাক্রান্ত, আবহাওয়া দ্রুত আপডাউন করা ইত্যাদি কারণে ফুল ঝরে পড়তে পারে। আবার পরাগায়ন না হলে ঝরে পড়তে পারে। এ জন্য হাতের মাধ্যমে পরাগায়ন করতে হবে। পুরুষ ফুলের পরাগদণ্ড নারী ফুলে গর্ভে ঘষে দিতে হবে।

১০. ছাদ বাগানে গাছ মারা যাওয়ার অন্যতম কারণ পানি বেশি বা কম দেয়া। যতটুকু লাগে ঠিক ততটুকু পানি দিতে হবে। কোন গাছের কি চাহিদা, রোগ একটু স্টাডি করলে সহজে সফল হতে পারবেন।

১১. গাছের পাতার নিচে খেয়াল করবেন। বেগুন গাছের পোকা মারার জন্য সেক্স ফোরেমান ফাঁদ লাগাবেন। ডগা ছিদ্র বা ফল ছিদ্র হলে সাইপারমেত্রিন গ্রুপের কীটনাশক দিতে হবে। একটি বেগুন গাছ অনেক দিন ফল দেয়। ঢেড়স গাছ বেশি রোদ পড়ে এমন জায়গায় লাগাবেন। বেগুন, ঢেড়স, লালশাক, পুইশাক, ধনেপাতা, ডাটা শাক- এসব গাছের খুব যত্ন করতে হয় না।

১২. রসুন আর লবঙ্গ বেটে সেই পানি গাছে স্প্রে করলে পোকা কম আসবে। মরিচ গাছে নেপথলিন বেঁধে দিন, পোকা কম আসবে। পাতা কোকড়ালে ভার্মিটেক কিংবা এবোম কীটনাশক দিন। কোকড়ানো পাতা ফেলে দিন। মরিচ গাছে দশ দিন পর পর ডায়মেথট গ্রুপের (যেমন টাফগর) কীটনাশক দিলে উপকার হবে। সবকিছু করছেন, তারপরও কাজ হচ্ছে না। এক্ষেত্রে গাছের জায়গা বদল করেন, উঠিয়ে অন্যত্র লাগান।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

দৈনন্দিন

নিপাহ্‌ ভাইরাসঃ খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়

নিপাহ্‌ ভাইরাস খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়
নিপাহ্‌ ভাইরাস খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়
খেজুরের রস সংগ্রহের প্রক্রিয়া।

শীতকাল এলেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে খেজুরের রস খাওয়ার চল বেড়ে যায়। অনেকে গাছ থেকে খেজুরের কলসি নামিয়ে সরাসরি কাঁচা রস খেয়ে থাকেন।

আবার অনেকে এই রস চুলায় ফুটিয়ে সিরাপ, পায়েস বা ক্ষীর বানিয়ে খান। এছাড়া রসের তৈরি ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়, ভেলি গুড়, বালুয়া গুড়, মিছরি গুড়সহ নানা ধরণের পিঠার বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।

নিপাহ্‌ ভাইরাস আতঙ্ক

খেজুর আরব দেশের প্রচলিত ফল হলেও ওইসব দেশে খেজুর, মূলত ফল উৎপাদননির্ভর, যেখানে কিনা বাংলাদেশের খেজুর গাছ রস উৎপাদননির্ভর।

কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, বাংলাদেশে সাধারণত কার্তিক থেকে মাঘ অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ হয়ে থাকে।

দেশটির সবচেয়ে বেশি রস সংগ্রহ হয় যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে।

মূলত খেজুর গাছের ডালপালা পরিষ্কার করে, ডগার দিকের কাণ্ড চেঁছে তাতে একটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি চোঙ বসিয়ে দেয়া হয়। চোঙের শেষ প্রান্তে ঝুলিয়ে দেয়া হয় একটি মাটির হাড়ি বা কলসি।

সেই চোঙ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রস এসে জমা হতে থাকে মাটির হাড়ি বা কলসিতে। এভাবে একটি গাছ থেকে দৈনিক গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লিটার রস সংগ্রহ করা যায় বলে কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গিয়েছে।

কিন্তু গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে নিপাহ্‌ ভাইরাস আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

পরিবেশ

জেনে নিন এই মরসুমে কোন কোন ঔষধি উদ্ভিদের চাষ আপনার জন্য সেরা

দেশের বিভিন্ন রাজ্যেই বর্ষার (Monsoon 2021) প্রভাবে চলছে বৃষ্টিপাত। এসময় কৃষকেরা খারিফ শস্য (Kharif Crops) বপনে তৎপর হয়ে ওঠেন। এই খরিফ মরসুমে কৃষকভাইরা সাধারণত অঞ্চলভেদে ধান, অড়হর, সোয়াবিন সহ বিভিন্ন চাষে মনযোগ দিয়ে থাকেন ৷ তবে এসব ছাড়াও, ঔষধি গুন সমৃদ্ধ (Medicinal Crops) গাছ চাষে বর্ষায় যে কতটা লাভ হতে পারে সে সম্পর্কে অনেকেই হয়তো জানেন না৷

বিশেষ করে বর্ষাকালেই এমন বহু ঔষধি গুন সম্পন্ন গাছ রয়েছে যাদের চাষ হতে পারে লাভজনক৷

বর্ষাকালে কোন কোন ঔষধি উদ্ভিদের চাষ করা যেতে পারে অথবা এই চাষ কীভাবেই বা করা যাবে সে বিষয়ে সঠিক তথ্য না পাওয়ার কারণেই অনেকের কাছে বিষয়টি অধরা৷ চলুন এই প্রতিবেদনে এমনই কিছু গাছ নিয়ে আলোচনা করা যাক যা কৃষকদের জন্য হতে পারে লাভদায়ক৷ তবে সঠিক সময়ে, সঠিক রোপন, সেচ, কীটনাশক দেওয়ার প্রয়োজন এগুলিতে, না হলে এর ওপর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে৷

অশ্বগন্ধা –

বর্ষায় এর চাষ ভালো৷ জুন থেকে অগস্ট পর্যন্ত এর চাষ করতে পারেন৷ এর বিভিন্ন জাত রয়েছে৷ উন্নত মানের গাছের চাষে কৃষকের লাভের পরিমাণও বৃদ্ধি পেতে পারে৷ উল্লেখ্য, প্রতি হেক্টরে ৫ কিলোগ্রাম বীজ ব্যবস্থা করতে হবে৷ যদি কেউ ১ হেক্টর জমিতে অশ্বগন্ধার চাষ করতে চায় তাহলে তাকে প্রায় ৫০০ বর্গমিটারে নার্সারি তৈরি করতে হবে৷ প্রায় ১ সেন্টিমিটার গভীরে বীজ বপন করতে হবে৷

শতমূলী –

শীত বাদ দিয়ে বছরের যে কোনও সময়ে এই গাছের চাষ করতে পারেন৷ বর্ষাকালে এই চারা রোপন করলে সহজেই তা বেড়ে উঠতে থাকে৷ তবে বীজ বপনের আগে বীজ ১ দিন পর্যন্ত হালকা গরম জলে ভিজিয়ে রাখতে হয়৷

যষ্টিমধু –

জুলাই থেকে অগস্ট পর্যন্ত এর চাষ করা হয়৷ আর তাই জুন থেকেই এর প্রস্তুতি শুরু করে দেন কৃষকেরা৷ জলনিকাশি ব্যবস্থা উচ্চমানের হওয়া প্রয়োজন এই গাছ চাষের জন্য৷ মনে রাখতে হবে এর চাষের আগে জমিতে কমপক্ষে ১৫ টন গোবর সার দেওয়া প্রয়োজন, এরপরেই এটি চাষ করা উচিত৷

ঘৃতকুমারী –

এর ভালো উৎপাদনের জন্য জলনিকাশি ব্যবস্থা ঠিক রাখতে হবে৷ এই ধরনের ঔষধি গুনসম্পন্ন গাছ শীতকাল বাদ দিয়ে যে কোনও সময় চাষ করতে পারেন৷ বর্ষাকালে দূরত্ব রেখে বীজ বপন করতে হবে৷ কম সময়ের মধ্যেই ব্যবহারোপযোগী হয়ে ওঠে এগুলি৷

অগ্নিশিখা বা কলিহারি –

এটি চাষের জন্য কৃষকেরা জুন মাসেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন৷ জুলাইয়ে ভালো বৃষ্টিতে এর চাষ শুরু করা যেতে পারে৷ উল্লেখ্য, ১ হেক্টর জমির জন্য প্রায় ১০ ক্যুইন্টাল কন্দের প্রয়োজন৷ এটি চাষের আগেও জমিতে গোবর সার প্রয়োগ করে তা প্রস্তুত করে নিতে হবে৷

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

পরিবেশ

শিখে নিন টবে দারুচিনির চাষের কৌশল

পৃথিবীতে ভোজ্য মসলা যতরকম আছে তারমধ্যে দারুচিনি সবথেকে উল্লেখযোগ্য। এই প্রাচীনতম মসলা বহুদিন ধরে ওষধি হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে চলেছে। এছাড়াও খাবারে স্বাদ বাড়ানো থেকে শুরু করে, পানীয় এবং তরল মশলাদার খাবারে স্বাদ বাড়ানোর জন্যও এই দারচিনির ব্যবহার হয়। এলাচ, গোলমরিচ, লবঙ্গের সাথে সাথে দারুচিনির নামও মসলা হিসেবে একই পংক্তিতে উচ্চারিত হয়। বহু কৃষক দারুচিনির চাষ করে ভীষণভাবে উপকৃত হয়েছেন। বাজারে এই দারুচিনির চাহিদা প্রচুর পরিমানে থাকায়, এই চাষে ভালো লাভ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও সৌখিন মানুষেরাও ভালোবেসে দারুচিনির চাষ বাড়িতে করে থাকেন। দারুচিনি গাছের বাকল, ফুল, কুঁড়ি, পাতা, ফল, শেকড় সবকিছুই কাজে লেগে যায়। দারুচিনি গাছ বাড়িতে চাষ করতে গেলে ঘরে ছাদে দুই জায়গাতেই চাষ করা যায়।

মনে রাখতে হবে এই চাষ করতে গেলে উপযুক্ত পরিমানে রোদ দরকার। বাংলার জলবায়ুতে মূলত শীতকালে এই চাষ করা সবথেকে ভালো। জানুয়ারি মাসে দারুচিনি গাছে ফুল ফোটা আরম্ভ করে, এবং এই গাছের ফল পাকতে আরম্ভ করে জুলাইয়ে। সেইসময়ই ফল থেকে বীজ সংগ্রহ করে নিয়ে এসে বাগানে বা টবে রোপন করে দেওয়া উচিত।

প্রয়োজনীয় রোদ (Sunlight)

কড়া সূর্যালোক দারুচিনি জন্য প্রয়োজনীয়, তাই এটি পর্যাপ্ত রোদ পাওয়া যায় এমন জায়গায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দারুচিনি রোপন করতে গেলে রৌদ্রোজ্জ্বল স্থান যেমন জানালার ধারে, ব্যালকনি কিংবা ছাদের খালি স্থান ব্যবহার করতে হবে।

উপযুক্ত মাটি (Soil)

দারুচিনি চাষের জন্য ভাল মানের মাটি ব্যবহার করা আবশ্যক। বাগানের মাটি ব্যবহার না করাই ভালো, কেননা এতে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। অনে সময় আমরা আশেপাশ থেকে মাটি নিয়েই টব ভরে গাছ লাগানো হয়।  বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সংবেদনশীল গাছগুলোতে এই উপায় কার্যকরী হয় না। নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভাল এমন মাটি ব্যবহার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে উত্তম নিষ্কাশনযুক্ত বেলে দোআঁশ মাটি ব্যবহার করা সবথেকে উত্তম। জেনে রাখা ভালো দারুচিনি খরা একদমই সহ্য করতে পারে না। মাটির বিকল্প হিসেবে ১৫% ট্রাইকোকমপোস্টযুক্ত কোকোডাস্ট ব্যবহার করা যেতে পারে।

বাইরে চাষ করার জন্য এক মিটার (৩০ সেন্টিমিটার গভীর) পর্যন্ত গর্ত করে মাটি দিয়ে পূরণ করে নিতে হবে। ঘরের ভিতরে বা ছাদবাগানের দারুচিনি চাষের জন্য একটি বড় পাত্র প্রয়োজন হবে।

রোপন (Planting)

দারুচিনির বীজ সংগ্রহও করা যায় অথবা নার্সারি থেকে দারুচিনির গাছ কিনেও আনা যায়।

বাইরে চাষের ক্ষেত্রে

দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে ১ মিটার x ১ মিটার এবং ৩০ সেমি গভীরতায় খনন করে মাটি দিয়ে গর্তটি পূরণ করতে হবে।

ঘরের মধ্যে টবে রোপনের ক্ষেত্রে

নিচে গর্ত সহ বড় সিরামিক পাত্র (৬০ x ৫০ সেমি) ব্যবহার করতে হবে। পাত্রটি মাটি বা কোকোডাস্ট দিয়ে পূরণ করে নিতে হবে। ৩০ সেন্টিমিটার গভীরতা এবং ৩০ সেন্টিমিটার প্রস্থের একটি গর্ত তৈরি করতে একটি বাগান ট্রোয়েল ব্যবহার করে নেওয়া ভালো। বীজ ব্যবহার করলে  ১.৫ সেন্টিমিটার গভীর গর্ত তৈরি করে নেওয়া উচিত। এবার গাছটি গর্তের মধ্যে রেখে মাটি দিয়ে চাপা দিতে হবে। বীজ ব্যবহার করলে প্রতি ১.৫ সেমি গর্তে একটি করে বীজ পুঁততে হবে এবং মাটি দিয়ে বীজটি ঢেকে দিতে হবে।

মাটি সবসময় ভেজা রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণ জল দিতে হবে। দারুচিনি গাছ পাত্রে রোপন করার পর, টবের নিচের গর্ত থেকে জল বের না হওয়া পর্যন্ত জল দিতে হবে। টবের উপরের ৫ সেন্টিমিটার শুকিয়ে গেলেই আবার গাছটিকে জল দিতে হবে।

গাছের পরিচর্যা (Caring)

দারুচিনি গাছে নিয়মিত সার প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম বছর ৫০ গ্রাম টিএসপি, ৭৫ গ্রাম এমওপি ও ৫০ গ্রাম ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে। প্রতিবছর ২-৩ কেজি ট্রাইকোকম্পোস্ট ও সার প্রয়োগ শেষে একই হারে টিএসপি, এমওপি ও ইউরিয়া দিতে হবে।

দারুচিনি প্রথম ধরতে দুই থেকে তিন বছর সময় নেয় এবং তার পরে প্রতি দুই বছর পরপরই ফসল দিতে থাকে। দারুচিনি গাছ কম করে ১০-১৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। তাই একে নিয়মিত করে ছোট রাখতে হবে। পাঁচ বছর বয়সী দারুচিনি গাছ থেকে নিয়মিত দারুচিনি সংগ্রহের ডাল পাওয়া সম্ভব। দারুচিনি ব্যবহার করার জন্য যে শাখাগুলি কাটা হবে সেগুলি থেকে বাকল তুলে নিতে হবে, বাকলগুলি ব্যবহার করার আগে জলে ভালোভাবে ভিজিয়ে নেওয়া উচিত।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

আঙিনা কৃষি

টবে লাগান মিষ্টি তেঁতুল গাছ

পৃথিবীতে জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, হারিয়ে যাচ্ছে বহু প্রাণী ও উদ্ভিদ বৈচিত্র। চাষবাসের জমিরও সংকুলান ঘটছে সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে। গগনচুম্বী বাড়ি ঘিরে ফেলছে সমস্ত ফাঁকা জমিন। শখ করে মানুষ খোলা জায়গায় যে গাছ লাগবে অথবা ফল-ফুলের চারা সেই উপায়ও আর নেই। গাছ লাগানোর জন্য সামান্য জায়গাও ফাঁকা থাকছে না আর। তবে আমাদের করণীয় কী? বৃক্ষরোপন কি তবে অচিরেই বন্ধ হয়ে যাবে। বেঁচে থাকার জন্য তো গাছ লাগাতে হবেই। বাড়ির একটুকরো বারান্দা অথবা ব্যালকনিতেও সুন্দর ভাবে ইচ্ছা করলে গাছ লাগানো যায়। বাড়ির ছাদেও বানানো যায় সুন্দর বাগিচা। শহরের মানুষদের জন্য ছাদ বাগানের কোনও বিকল্পও নেই। বাড়ির মধ্যেকার ব্যালকনি অথবা ছাদের একটুকরো জমিতেও, ইচ্ছা করলে টবে চাষ করা যায় বিভিন্ন ফুলের ও ফলের গাছ।

শাকসবজি, পেয়ারা, লেবু প্রভৃতি দেশীয় গাছ টবে বাড়তে দেওয়া থেকে শুরু করে বর্তমানে বহু বিদেশী গাছের চারাও মানুষ ব্যালকনি অথবা ছাদে চাষ করছেন। তার মধ্যে থাই মিষ্টি তেঁতুল টবের চাষ পদ্ধতি হিসাবে অত্যন্ত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। প্রথমত মিষ্টি তেঁতুলের চাষ করতে গেলে, নার্সারি থেকে এই বিশেষ তেঁতুলের সঠিক বীজ নিয়ে আনতে হবে। তবে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কলম পাওয়া একটু দুষ্কর কাজ। বুঝে সঠিক চারা নিয়ে আসা বাগান মালিকের উপরেই বর্তায়।

থাই মিষ্টি তেঁতুলের ফুল থেকে ফল ধরতে প্রায় ৭ মাস সময় লাগে। বছরে দু’বার থাই মিষ্টি তেঁতুলের গাছে ফল ধরে। প্রথমবার বর্ষাকালে এবং দ্বিতীয়বার শীতকালে। এই গাছের পরিচর্যা আলাদা করে করার কোনও দরকার পড়ে না। গাছের যত্নআত্তি নিতে হয় ঠিকই, কিন্তু তা বলে, আলাদা করে কোনও বিশেষ যত্ন নিতে হয় না।

গাছ লাগানোর পদ্ধতি (Planting):

থাই মিষ্টি তেঁতুল চাষের জন্য আদর্শ মাটি হল, দো-আঁশ বা বেলে দো-আঁশ মাটি। এই দু’টি মৃত্তিকার মধ্যে যে কোনও একটি বেছে নিন। তারপর বেছে নেওয়া মাটির দুই ভাগ অংশের সাথে গোবর, ১০০ গ্রাম, টিএসপি ১০০ গ্রাম, পটাশ, ২৫০ গ্রাম, হাড়ের গুঁড়ো এবং ৫০ গ্রাম সরিষার খোল একসঙ্গে মিশিয়ে ২০ ইঞ্চি মাপের বড় টবে জল মিশিয়ে রেখে দিতে হবে। ১০ থেকে ১২ দিন পর টবের মাটি ভালো করে খুঁচিয়ে দিয়ে আরও ৪-৫ দিন রেখে দিতে হবে। ৪ থেকে ৫ দিন বাদে মিষ্টি তেঁতুলের একটি ভালো চারা ওই টবে লাগান।

পরিচর্যা(Caring):

চারা লাগানোর প্রথম কয়েক মাস তেমন যত্নের দরকার পড়বে না। অবশ্যই গাছে এই সময়টুকু পর্যাপ্ত জলের যোগান, এবং আগাছা পরিষ্কারের কাজ করতে হবে।  ছয় মাস চারা লাগানোর সময়সীমা ফুরোলেই ১ মাস বাদে বাদে গাছে সরষের খোল মিশ্রিত পচা জল দিতে হবে। মনে রাখতে  হবে খোল দেওয়ার আগে গাছের মাটি খুঁচিয়ে নিতে হবে।

রোগ দমন (Disease management):

সাধারণত থাই মিষ্টি তেঁতুল গাছে পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখা যায় না। কিন্তু বর্ষাকালে অনেক সময় তেঁতুল গাছে ছত্রাক হানা দেয়। এর ফলে তেঁতুল ফেটে যায়। এই অসুবিধার থেকে গাছকে বাঁচাতে হলে, বর্ষাকাল আসার আগেই ভালো ছত্রাকনাশক ওষুধ ১০ দিন অন্তর গাছে স্প্রে করে ছড়িয়ে দিতে হবে।

বাংলার বেজায় টক তেঁতুলের সঙ্গে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কোনও তুলনাই চলে না। অত্যন্ত মিষ্টি খেতে এই তেঁতুল থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়ায় চাষ প্রভূত পরিমাণে হলেও, আমাদের রাজ্য এই ফলের চাষ এখনও ততটা গতি পায়নি। কিন্তু আপনি আপনার ব্যালকনি অথবা ছাদে সহজেই এই থাই তেঁতুলের গাছ লাগাতে পারেন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

শীর্ষ সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশক: শাইখ সিরাজ
© ২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। দা এগ্রো নিউজ, ফিশ এক্সপার্ট লিমিটেডের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। ৫১/এ/৩ পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থাপথ, ঢাকা -১২০৫
ফোন: ০১৭১২-৭৪২২১৭
ইমেইল: info@agronewstoday.com, theagronewsbd@gmail.com