যুক্তরাজ্যের শর্পশায়ারে দিনের পর দিন হারিয়ে যাচ্ছে পারিবারিক ঐতিহ্য কৃষি কাজ। যাদের পূর্ব পুরুষ কৃষক ছিলেন, তাদের দাদা বা বাবার সময় পর্যন্তই কৃষি কাজের ইতি টানতে হচ্ছে কৃষি পেশায়। কেউ কেউ এই পেশা ধরে আছেন, কিন্তু পরবর্তী প্রজন্ম এই কাজে আর আগ্রহী নন।
জমির মালিক ও কৃষকদের মধ্যে একজন হলেন স্টিফেন। তিনি বলেন, তাদের অনেক জমি এখন দিনের পর দিন পরে আছে। আমি পূর্ব পুরুষের পেশা কৃষি ধরে রাখলেও আমার দুই সন্তানের একজন চিকিৎসক, আরেকজন ইঞ্জিনিয়ার। তারা কৃষি আবাদ করার কথা কল্পনাও করতে পারে না।
উন্নত বিশ্বে ঐতিহ্যবাহী কৃষক পরিবার থেকে কৃষি চলে যাচ্ছে পুরোপুরি ব্যবসায়ীদের হাতে। আর বাংলাদেশে ভূমির মালিকের হাত থেকে কৃষি চলে যাচ্ছে ক্ষেত মজুর আর বর্গা চাষীদের হাতে।
পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার মুলাডুলি কৃষি ব্লকে আসলেই দেখা যায়, ৮টি গ্রামের প্রায় শতভাগ আবাদী জমিতে আবাদ করেন বর্গা চাষীরা। তারা কিছু দিন আগেও ছিলেন ক্ষেত মজুর বা কৃষি শ্রমিক।
এদের মধ্যে একজন বর্গাচাষী জানান, আমার নিজের কোনো জমি নেই। অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চাষ করি আমি। আবার কোনো কোনো বর্গা চাষী বলেন, বছরে বিঘায় ১২ হাজার টাকা করে জমি লীজ নেন তারা।
জমির মালিকরা কেন সব জমি লীজ দিয়ে দেয় তার কারণ জানতে চাইলে বর্গা চাষীরা বলেন, জমির মালিকরা নিজেরা জমিতে এসে কাজ করলে তাদের মান সম্মান যাবে। এই ভয়ে তারা জমি লীজ দিয়ে দেয়।
তবে কৃষি কাজে পুষিয়ে উঠতে পারছেন না বলে জানান ভূমি মালিকরা। মুলাডুলির কৃষি কাজ থেকে সরে আসা ভূমি মালিক আমিনুর রহমান বাবু বলেন, গত দুই বছরে কৃষকরা একদম সর্বসান্ত হয়ে গেছে। আবাদ করতে কৃষকদের যে খরচ হয়, বাজার না থাকার কারণে সেই খরচটা পর্যন্ত আমরা উঠাতে পারিনি।
তবে ১২ হাজার টাকায় ১ বিঘা জমি লীজ নেওয়া একজন কৃষক বলেন, জমির মালিকরা জৈষ্ঠ্য মাসে ধান কাটলে ১ বিঘা থেকে ২০ মণ ধান পায়। যার দাম প্রায় ১০ হাজার টাকা। ওই টাকাটা তারা বিনা খরচে পাচ্ছেন।
পক্ষান্তরে বর্গা চাষীর জন্য কৃষি এখন লাভজনক। তাই তারা হয়ে উঠছেন ভূমি মালিক। প্রথম দিকে কেউ কেউ ১ বিঘা জমি নিয়ে কাজ শুরু করলেও ৫ বছরের ব্যবধানে এখন ১০ বিঘা জমিতে কাজ করে তারা। তাদের কেউ কেউ গত ৫ বছরে ১৫ লাখ টাকা জমিয়েছেন।
এখন সবার মনে প্রশ্ন আসছে কৃষির এই পরিবর্তনের ফলাফল নিয়ে। প্রাথমিকভাবে মাঠ পর্যায়ের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাটি হয়ে পড়ছে অভিভাবকহীন।
মুলাডুলির উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা রুমানা পারভীন জানান, জমির ওপর মালিকদের আর তদারকি থাকছে না। আবার যারা লীজ নিচ্ছেন তারা অতিরিক্ত ফসল উৎপাদনের জন্য জমিতে লবণ ব্যবহার করেন।
নীতি নির্ধারকদের আগামী খাদ্য নিরাপত্তা ও কৃষি পরিকল্পনায় এই আবর্তনটিকে আমলে নিতে হবে। ভিতরে ভিতরে কৃষির বাণিজ্য ও লাভ ভাগ হযে যাচ্ছে বড়, মাঝারি ও প্রান্তিক কৃষকদের মধ্যে। এ যেনো এক ধরণের বিকেন্দ্রিকরণ। প্রতিনিয়তই এর প্রসার ঘটছে। এর ফলে গ্রাম বাংলার অর্থনীতি যেমন চাঙ্গ হচ্ছে, গোটা দেশের অর্থনীতিতে আসছে আমূল পরিবর্তন।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন