সামান্য একটু অসুস্থ হলেই আমরা ডাক্তারের কাছে দৌঁড়াই। ওষুধ না খেলে আমাদের হয়ই না।
কিন্তু ওষুধ ছাড়াই যে সুস্থ থাকা যায়, সে বিষয় নিয়ে আমরা ভাবি না। অনেকে বিশ্বাসও করি না।
সুস্থ থাকতে ভেষজের তুলনা নেই। প্রাচীনকাল থেকেই সুস্থতার জন্য মানুষ ভেষজের ব্যবহার করে আসছে। সুস্থ থাকার জন্য যেসব ভেষজ দরকার, তার জন্য বনে বাদাড়ে ঘুরতে হবে না। সাধারণ রান্না ঘরেই এখন সেগুলো পাওয়া যায়। তাহলে চলুন জেনে নিই সেসব ভেষজের কথা।
বর্তমানে আবহাওয়া বেশ পরিবর্তনশীল। এর ফলে শরীরে দেখা দিতে পারে নানা সমস্যা। এর মধ্যে পেট গরম আর শরীরের অতিরিক্ত গরম অনুভব হওয়া খুব সাধারণ একটা বিষয়।
অতিরিক্ত প্রদাহ বা ইনফ্লামেশন রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় সহায়ক নয়। এর ফলে প্রায়ই কোষ্ঠকাঠিন্য, ফোলাভাব, পিসিওএস, এমনকি থাইরয়েডসহ অন্ত্রে সম্পর্কিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস থেকে অটো-ইমিউন ডিজঅর্ডারের অন্যতম প্রধান কারণ প্রদাহ। এই সময়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা অবশ্যই দরকার। তাই বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রদাহ সমস্যার মূল কারণ মোকাবিলা করতে হবে।
এজন্য হলুদ, গোলমরিচ, লবঙ্গ, মেথি আর আদা। ব্যস, আর কিছু দরকার নেই।
হলুদে আছে কার্কিউমিন, যা সংক্রমণ এবং এমনকি বাহ্যিক ক্ষতের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য সেরা প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট।
গোলমরিচ শরীরের জন্য উপকারী। গলা ব্যথা, কাশি, ফুসফুস, অন্ত্র, পেশী এবং জয়েন্ট ছাড়াও যে কোনো প্রদাহ সারিয়ে তোলার জন্য এটা দারুণ কার্যকরী।
আদার গুণ বলে শেষ করা যাবে না। বিশেষ করে শুকনো আদা বিশ্বভেষজ নামে আয়ুর্বেদে অভিহিত। এটি মূলত ফুলে যাওয়া কোনও স্থান, গাঁটে ব্যথা এমনকি ঋতুচক্রের ব্যথায় উপশম দেয়।
গাঁটে ব্যথা, কোষ্ঠকাঠিন্য, ফোলাভাব, ওজন হ্রাস ইত্যাদির জন্য কয়েক শতক ধরে মেথি বা মেথি ভেজানো পানি ব্যবহার করা হচ্ছে। মেথি পানি শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রদাহ হ্রাস করে। শুধু তাই নয়, ঋতুচক্রের অনিয়মও ঠিক হয়ে যায়।
হলুদ তরকারি ও দুধ কিংবা লিকার চায়ের সঙ্গে খাওয়া যায়। গোলমরিচ খাওয়া যায় অল্প গরম পানিতে মধু দিয়ে। আদা অল্প শুকিয়ে লেবু ও লবণ দিয়ে খেলে উপকার বেশি। চায়ের সঙ্গে লবঙ্গ। আর মেথি গুঁড়া পানি দিয়ে খেতে পারেন বা মেথি ভেজানো পানি খেতে পারেন। রান্নায়ও মেথির ব্যবহার করতে পারেন।
শীতকাল এলেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে খেজুরের রস খাওয়ার চল বেড়ে যায়। অনেকে গাছ থেকে খেজুরের কলসি নামিয়ে সরাসরি কাঁচা রস খেয়ে থাকেন।
আবার অনেকে এই রস চুলায় ফুটিয়ে সিরাপ, পায়েস বা ক্ষীর বানিয়ে খান। এছাড়া রসের তৈরি ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়, ভেলি গুড়, বালুয়া গুড়, মিছরি গুড়সহ নানা ধরণের পিঠার বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।
নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক
খেজুর আরব দেশের প্রচলিত ফল হলেও ওইসব দেশে খেজুর, মূলত ফল উৎপাদননির্ভর, যেখানে কিনা বাংলাদেশের খেজুর গাছ রস উৎপাদননির্ভর।
কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, বাংলাদেশে সাধারণত কার্তিক থেকে মাঘ অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ হয়ে থাকে।
দেশটির সবচেয়ে বেশি রস সংগ্রহ হয় যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে।
মূলত খেজুর গাছের ডালপালা পরিষ্কার করে, ডগার দিকের কাণ্ড চেঁছে তাতে একটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি চোঙ বসিয়ে দেয়া হয়। চোঙের শেষ প্রান্তে ঝুলিয়ে দেয়া হয় একটি মাটির হাড়ি বা কলসি।
সেই চোঙ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রস এসে জমা হতে থাকে মাটির হাড়ি বা কলসিতে। এভাবে একটি গাছ থেকে দৈনিক গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লিটার রস সংগ্রহ করা যায় বলে কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গিয়েছে।
কিন্তু গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
উপকরণ: বাঁধাকপির কুচি ৪ কাপ, কই মাছের টুকরো ৬টি, তেজপাতা ১টি, শুকনো মরিচ ২টি, মেথি অল্প পরিমাণ, মরিচবাটা ১ চা-চামচ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, লবণ পরিমাণমতো, নারকেল কোরানো স্বল্প পরিমাণে, হলুদ পরিমাণমতো ও সরিষার তেল পরিমাণমতো।
প্রণালি: তেলে শুকনো মরিচ ও মেথি ফোড়ন দিতে হবে। ফোড়ন হয়ে এলে হালকা করে ভেজে উঠিয়ে রাখতে হবে। ওই তেলেই বাঁধাকপির কুচি ও পেঁয়াজ কুচি দিয়ে ভালো করে কষে নিতে হবে। তারপর লবণ, মরিচ ও হলুদবাটা দিয়ে আরও কিছুক্ষণ বসাতে হবে। সেদ্ধ হয়ে এলে অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে ভাজা মাছগুলো দিয়ে ঢাকা দিতে হবে। পানি শুকিয়ে গেলে এবং মাছ সেদ্ধ হয়ে এলে অল্প পরিমাণ নারকেল কোরানো দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।
উপকরণ: বড় শোল মাছ ৫০০ গ্রাম, টমেটো টুকরো আধা কাপ, সরিষার তেল ৩ টেবিল চামচ, টমেটোবাটা আধা কাপ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, আদাবাটা ১ চা-চামচ, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, হলুদ গুঁড়া ১ চা-চামচ, ধনেপাতা আধা কাপ, শুকনো মরিচের গুঁড়া ১ চা-চামচ, লবণ স্বাদ অনুসারে ও কাঁচা মরিচ ৭-৮টি (চেরা)।
প্রণালি: শোল মাছ লবণ, হলুদ ও সরিষার তেল মাখিয়ে ভেজে তুলে রাখতে হবে। আর ওই তেলেই পেঁয়াজ কুচি দিতে হবে। পেঁয়াজ বাদামি রং হলে রসুন, আদা, মরিচের গুঁড়া, হলুদ ও লবণ দিয়ে ভালোভাবে কষাতে হবে। টমেটোবাটা দিতে হবে, কিছুক্ষণ কষানোর পর প্রয়োজনমতো গরম পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে ভেজে রাখা মাছগুলো দিতে হবে। ঝোল মাখা-মাখা হলে টমেটোর টুকরো আর ধনেপাতা দিয়ে কিছুক্ষণ পর নামিয়ে ফেলতে হবে। নামানোর আগে কাঁচা মরিচ দিতে হবে।
উপকরণ: ছোট টুকরো করে কাটা টাকি মাছ ২ কাপ, ডুমো ডুমো করে কাটা লাউ ৪ কাপ, হলুদ সিকি চা-চামচ, লবণ পরিমাণমতো, পেঁয়াজ ১ কাপ, ধনেপাতা কুচি পরিমাণমতো, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, কাঁচা মরিচ ১০-১২টি, আদাবাটা আধা চা-চামচ ও রাঁধুনি বাটা সিকি চা-চামচ।
প্রণালি: তেলে পেঁয়াজ দিয়ে হালকা করে ভেজে নিতে হবে। তারপর একে একে রসুনবাটা, আদাবাটা ও রাধুনি (গুঁড়া সজ) বাটা ও হলুদের গুঁড়া দিয়ে ভালো করে কষাতে হবে। কষানো হলে লাউ দিতে হবে। লাউ দিয়ে কিছুক্ষণ কষিয়ে অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে আগে থেকে হালকা করে ভেজে রাখা টাকি মাছ দিতে হবে। পানি শুকিয়ে এলে কাঁচা মরিচের ফালি ও সবশেষে ধনেপাতা দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।
উপকরণ: চিংড়ি মাছ ২০০ গ্রাম, সয়াবিন তেল পরিমাণমতো, বাঁধাকপি কুচি ১ কাপ, ক্যাপসিকাম কুচি ১ কাপ, টমেটো কুচি আধা কাপ, পেঁয়াজপাতা কুচি ১ কাপ, কাঁচা মরিচবাটা ১ চা-চামচ, ধনেপাতাবাটা ১ চা-চামচ, হলুদের গুঁড়া পরিমাণমতো, চিলি সস ২ চা-চামচ, টমেটো সস ২ চা-চামচ, বাঁধাকপির ভেতরের পাতা ৪টি, ভিনেগার ২ চা-চামচ, রসুন ১ চা-চামচ ও লবণ স্বাদমতো।
প্রণালি: বাঁধাকপির শক্ত অংশ ফেলে দিন। পাতার ভেতরের অংশ একটু ভাপিয়ে রাখুন। মাছ ধুয়ে ভিনেগার মাখিয়ে রাখুন। এবার কড়াইয়ে সয়াবিন তেল গরম হলে তাতে রসুন কুচি দিয়ে মাছগুলো দিন। একে একে কোঁচানো বাঁধাকপি, ক্যাপসিকাম, টমেটো ও পেঁয়াজপাতা দিয়ে নেড়েচেড়ে নিন। এরপর কাঁচা মরিচবাটা, ধনেপাতাবাটা, চিলি সস ও টমেটো সস দিয়ে নেড়ে নিন। পানি শুকিয়ে এলে নামিয়ে বাঁধাকপির পাতায় অল্প করে চিংড়ি মাছ সুতা দিয়ে বেঁধে স্টিমারে ভাপিয়ে নিন। সুতো কেটে পাতা খুলে পরিবেশন করুন।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন