আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

এগ্রোবিজ

অপার সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে সুনীল অর্থনীতি

শ ম রেজাউল করিম। মন্ত্রী, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। সাবেক সাধারণ সম্পাদক, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি।

স্বাধীনতার ৫০ বছরে মৎস্যখাতের অর্জন, করোনাকালে মৎস্যখাতের কার্যক্রম, ইলিশ উৎপাদন, সুনীল অর্থনীতি ও বিলুপ্ত মাছ পাতে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ইসমাইল হোসাইন রাসেল।

 গত দুটি কোরবানির ঈদে একটি পশুও বাইরে থেকে আসেনি বাংলাদেশে। বাজারে যে পশু এসেছিল বিক্রির জন্য, তার এক-দশমাংশও বিক্রি হয়নি। এতো বেশি উৎপাদিত হচ্ছে 

জাগো নিউজ: স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশের কোন অর্জনকে বড় করে দেখেন? মৎস্যখাতের অর্জন কতটুকু?

শ ম রেজাউল করিম: বাংলাদেশ তলাবিহীন ঝুড়ি’র যে একটা অপবাদের ভেতরে ছিল, দুর্নীতিতে বারবার চ্যাম্পিয়ন হচ্ছিল, খাবারের অভাবে লঙ্গরখানা খুলতে হতো, বিবস্ত্র মানুষকে দেখতে হতো, টাকার অভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে পারতো না শিশুরা, আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থার কোনো সুযোগ-সুবিধা পেতো না, বিদ্যুতের সুবিধা ছিল না, রাস্তার সুবিধা ছিল না, প্রত্যন্ত অঞ্চলের কোনো উন্নয়ন ছিল না, তার একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে এখন। বাংলাদেশ এখন উন্নত-সমৃদ্ধ আধুনিক ডিজিটাল বাংলাদেশ। যেখানে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষাসহ সব নাগরিক সুবিধা রয়েছে। বাংলাদেশ শতভাগ বিদ্যুতায়িত হচ্ছে। দেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না, এই পরিকল্পনায় ইতোমধ্যে ৭০ হাজার মানুষকে ঘর এবং জায়গার মালিকানা দেয়া হয়েছে, ৯ লাখ লোককে এটি দেয়ার কর্মসূচি রয়েছে। ফলে বলা যেতে পারে স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশ আধুনিক বাংলাদেশে পরিণত হয়েছে, সমৃদ্ধ বাংলাদেশে পরিণত হয়েছে, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে পরিণত হয়েছে। এগিয়ে যাচ্ছে অপ্রতিরোধ্য গতিতে।

জাগো নিউজ: করোনার পেক্ষাপটে মৎস্যখাতের কোন বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছেন?

শ ম রেজাউল করিম: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ যেসব কাজ, তার মধ্যে মাছ, মাংস, দুধ, ডিম জাতীয় বিষয়গুলো সম্পৃক্ত। সেক্ষেত্রে আমরা প্রাধান্য দিয়েছি যে, প্রাণিসম্পদ অর্থাৎ গবাদি পশুর উৎপাদন বাড়াতে হবে। মাছের উৎপাদন বাড়াতে হবে, ডিমের উৎপাদন বাড়াতে হবে, দুধের উৎপাদন বাড়াতে হবে। একটা সময় হাহাকার ছিল, মাছের আকাল বলা হতো। একসময় কোরবানি এলে ভারত বা মিয়ানমারের গরুর জন্য অপেক্ষা করতে হতো। সপ্তাহে একটা দিন ডিম খাওয়া অনেকে কল্পনাও করতে পারতো না।

 এ বছর গোটা বিশ্বে যে ইলিশ উৎপাদন হয়েছে, তার ৮০ শতাংশ বাংলাদেশের। আমি আশা করছি, আগামী দুই বছরের মধ্যে বিশ্বের ৯০ শতাংশ ইলিশ উৎপাদন বাংলাদেশে হবে 

গত দুটি কোরবানির ঈদে একটি পশুও বাইরে থেকে আসেনি বাংলাদেশে। বাজারে যে পশু এসেছিল বিক্রির জন্য, তার এক-দশমাংশ বিক্রিও হয়নি। এতো বেশি উৎপাদিত হচ্ছে। আমাদের পোল্ট্রি সেক্টরে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। এখন গ্রাম থেকে শহরে প্রতিটি পরিবারে, আমার মনে হয় প্রতি বেলায় তারা মুরগির মাংস, খাসির মাংস, গরুর মাংস বা ভেড়ার মাংস খাচ্ছে।

ডিমের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। আজ ডিমের ক্ষেত্রে একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। এখন এতো পরিমাণ ডিম উৎপাদন হচ্ছে যে অধিকাংশ মানুষ কিন্তু দিনে দুইটি ডিম খেতে পারছে এবং অপেক্ষাকৃতভাবে কম মূল্যে তারা খেতে পারছে। দুধের উৎপাদন এতোটা বেড়েছে যে দুধ উৎপাদনকারীদের সহায়তা করার জন্য আমরা মিল্ক সেপারেটিং মেশিন দিচ্ছি, যা ভেতর থেকে সে দুধের ক্রিম আলাদা করে নিতে পারবে। প্রতিটি জেলায় আমরা কুলিং সেন্টার করছি। এই যে সেক্টরটা রয়েছে- গবাদি পশু, মুরগি-হাঁস ইত্যাদি, এর চিকিৎসার জন্য আমরা মোবাইল ক্লিনিকের ব্যবস্থা শুরু করে দিয়েছি। অর্থাৎ ক্লিনিক তার বাড়িতে চলে যাবে। একটা গরু, খাসি, ভেড়া নিয়ে আমার কাছে আসতে হবে না, আমার ডাক্তারের কাছে যেতে হবে না। একটা ফোনে ডাক্তার তার বাড়িতে সরাসরি মোবাইল ক্লিনিক নিয়ে চলে যাবে। এখানে লাভটা হচ্ছে মানুষের পুষ্টি ও আমিষের চাহিদা যেমন মিটছে, তেমনি যারা বেকার তারা উদ্যোক্তা হচ্ছেন, তাদের অর্থনৈতিক সচ্ছলতা আসছে। অন্যদিকে যে মানুষগুলো কল্পনা করতে পারেনি চাকরি না পেলে কী হবে? সেই মানুষগুলো আর্থিকভাবে সচ্ছলতার জায়গায় আসছে এবং উদ্যোক্তা হচ্ছে। আর গ্রামীণ অর্থনীতি সচল হচ্ছে। ফলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আমরা যেমন পুষ্টি ও আমিষের চাহিদা মেটাচ্ছি, তেমনি উৎপাদিত পণ্য বিদেশে রফতানি করার মাধ্যমে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা আনছি। দূর করছি বেকারত্ব, মানুষের গড় আয়ু বাড়ানোর মতো আমিষ সরবরাহও করছি।

জাগো নিউজ: বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালে বলেছিলেন, মাছ হবে দ্বিতীয় বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী সম্পদ। সেক্ষেত্রে মাছ রফতানি নিয়ে আপনাদের ভবিষ্যৎ ভাবনা কী?

 মৎস্যখাতের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে আমাদের দেশের বিভিন্ন নদী, হাওর-বাঁওড়ে কৃত্রিম ওষুধের ব্যবহার 

শ ম রেজাউল করিম: মাছের ব্যাপক রফতানি বাংলাদেশ থেকে হয়, প্রধানত চিংড়ি মাছ। আমরা এখন সাদা মাছসহ দেশীয় মাছ রফতানির প্রক্রিয়ায় আছি। কানাডা, আমেরিকা, ইংল্যান্ডের বিভিন্ন বাঙালি অধ্যুষিত এলাকায় গিয়ে দেখবেন, দোকানের সাইনবোর্ডে লেখা আছে বাংলাদেশের মিষ্টি পানির দেশীয় মাছ এখানে পাওয়া যায়। অর্থাৎ মাছের উৎপাদন আমরা এমন পর্যায়ে নিয়ে এসেছি যে, এই জাতীয় মাছ এখন আমরা বিদেশে রফতানি করছি এবং সেখান থেকে বিপুল অংকের বৈদেশিক মুদ্রা আসছে। বঙ্গবন্ধু যে সুদূরপ্রসারী চিন্তা করেছিলেন, সেটা বাস্তবায়িত হচ্ছে। আমি আশা করছি যে, আগামী দুই বছরের মধ্যে বিপুল পরিমাণে ইলিশ মাছসহ সাদা পানির মাছ রফতানি করবো। পোশাকশিল্প থেকে যেভাবে বৈদেশিক মুদ্রা আসে, আমরা সেরকম একটি বড় অংকের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে সক্ষম হবো মাছ রফতানি করে।

জাগো নিউজ: অনেক দেশই ইলিশ নেয়ার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে, ইলিশ রফতানির বিষয়ে আপনাদের ভাবনা কী?

শ ম রেজাউল করিম: ইলিশের বিষয়টাকে আমি এভাবে রেখেছি যে, ইলিশ উৎপাদন আগে বাড়াতে হবে। আমার দেশের সকল মানুষকে ইলিশের যে স্বাদটা, তাদের নিতে দেবো। আমরা এখনো বাণিজ্যিকভাবে বিপুল পরিমাণ ইলিশ রফতানি করছি না। তবে ইলিশ উৎপাদনের জন্য যেখানে ইলিশ ডিম পাড়ে, সেখানে একটা অভয়াশ্রম করেছি। যারা জাটকা নিধন করতো, তাদের বিরত করার জন্য কঠিন ব্যবস্থা নিয়েছি। মা ইলিশ যেন নিধন করতে না পারে সেজন্য ব্যবস্থা নিয়েছি। ফলে এ বছর গোটা বিশ্বে যে ইলিশ উৎপাদিত হয়েছে, তার ৮০ শতাংশ বাংলাদেশের। আমি আশা করছি, আগামী দুই বছরের মধ্যে বিশ্বের ৯০ শতাংশ ইলিশের উৎপাদন বাংলাদেশে হবে। তখন আমরা ব্যাপক আকারে বিদেশে ইলিশ রফতানি করতে পারব।

jagonews24দেশীয় মাছের প্রজাতি সংরক্ষণে ময়মনসিংহে গড়ে উঠেছে লাইভ জিন ব্যাংক

 পোশাকশিল্প থেকে যেভাবে বৈদেশিক মুদ্রা আসে, আমরা সেরকম একটি বড় অংকের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে সক্ষম হবো মাছ রফতানি করে 

শ ম রেজাউল করিম: জাটকা নিধন বন্ধ করার জন্য আমরা ব্যাপক কর্মসূচি নিয়েছি। নদীতে আমি নিজে অপারেশনে যাই। কোথায় জাটকা ধরা হচ্ছে, কারেন্ট জাল, বিন্দি জাল তৈরি হচ্ছে, এসব দেখছি। এমনকি যেসব জায়গায় জাল তৈরি হচ্ছে, আমরা সেসব কারখানায় অভিযান চালিয়ে সেই জাল পুড়িয়ে দিচ্ছি, জরিমানার ব্যবস্থা করছি এবং সাজা দেয়ার ব্যবস্থা করছি। আমরা একেবারে গভীরভাবে এটাকে পর্যবেক্ষণ করছি কঠোরভাবে। ন্যূনতম ছাড়ও কাউকে দিচ্ছি না। গতবার জাটকা নিধনে আমাদের সাফল্য ছিল, এবারে তার চেয়ে আরও অনেক বেশি সাফল্য আসবে।

jagonews24প্রায় ২২ প্রকারের হারিয়ে যাওয়া মাছ পাতে ফিরিয়েছে মৎস্য মন্ত্রণালয়

জাগো নিউজ: করোনাকালে বিভিন্ন ফার্মের পণ্য ভ্রাম্যমাণভাবে বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছিলেন। সে বিষয়ে যদি কিছু বলেন?

শ ম রেজাউল করিম: করোনাকালে আমরা লক্ষ্য করলাম মাছ, মাংস, দুধ, ডিম যারা উৎপাদন করছেন বা বিপণন করছেন, তারা বিক্রি করতে পারছেন না। কারণ করোনার প্রথমদিকে কিন্তু গাড়ি বা কিছুই চলত না। দোকানপাট বন্ধ ছিল, মানুষ তার বাসার গেটটাও বন্ধ করে রাখতো। ফলে উৎপাদনকারীদের ভয়াবহ বিপন্ন অবস্থায় পড়তে হলো। অপরদিকে যারা মাছ, মাংস, দুধ, ডিম খেতে চাইত, খাবারের একটি অংশ তো এটি এবং আমিষ ও পুষ্টির সঙ্গে এটি সম্পৃক্ত; দেখলাম তারাও পাচ্ছে না। অর্থাৎ উপকারভোগী এবং বিপণনকারী দুই পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তখন আমরা একটা কন্ট্রোল রুম করলাম, এবং পরিকল্পনা নিলাম ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় কেন্দ্র চালু করব। তখন আমরা বিভিন্ন অঞ্চলে প্রশাসনের সহায়তা নিয়ে ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় কেন্দ্র চালু করি। এতে প্রায় ৯০০ কোটি টাকার মাছ, মাংস, দুধ, ডিম বিক্রি হয়েছে। সেটির ফলে মানুষ যেমন পুষ্টি ও আমিষের চাহিদা মেটাতে পেরেছে তেমনি করোনা প্রতিরোধের জন্য তার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য যে পুষ্টি সেটা সরবরাহ করতে পেরেছে। একইসঙ্গে যারা উৎপাদনকারী খামারের মানুষ, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। যারা বিক্রেতা তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। প্রধানমন্ত্রীও এই পরিকল্পনাটার ভীষণ প্রশংসা করেছেন যে, এটা অভিনব হলেও সময়োপযোগী ছিল।

jagonews24এক দশকে ইলিশ উৎপাদনের গড় প্রবৃদ্ধি প্রায় ৬ দশমিক ২০ শতাংশ। ছবি : সংগৃহীত

জাগো নিউজ: মৎস্যখাতের কোন বিষয়গুলোকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে মনে করেন এবং সেগুলো উত্তরণে আপনার ভাবনা কী?

শ ম রেজাউল করিম: মৎস্যখাতের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে আমাদের দেশের বিভিন্ন নদী, হাওর-বাওরে কৃত্রিম ওষুধের ব্যবহার। চাষাবাদের নামে নদীগুলোতে বিভিন্ন যানবাহন থেকে পচনধরা এবং ক্ষতিকর বিভিন্ন কেমিক্যাল ঢেলে দেয়া হয়। পাশাপাশি ইরি-বোরো চাষের ক্ষেত্রে যে কেমিক্যাল জাতীয় সার দেয়া হয় সেই সারের ফলে পানির ভেতরে যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মাছ এবং মাছের ডিমগুলো থাকে, সেগুলো ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এজন্য জলাশয়গুলোতে, যেসব এলাকায় অভয়াশ্রম, যেখানে মাছ ডিম দেবে, বা মাছের বাচ্চাগুলো বেড়ে উঠবে, সেসব এলাকাগুলোকে সংরক্ষণ করা এবং পানি রক্ষা করা—এটা এখন আমার কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

jagonews24মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম

জাগো নিউজ: সাগরকেন্দ্রিক ব্লু ইকোনমি বা সুনীল অর্থনীতির অপার সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশের। এটি নিয়ে শুরু থেকেই আপনি ব্যাপক গুরুত্ব দিচ্ছেন। এ বিষয়ে পরিকল্পনা জানতে চাই?

শ ম রেজাউল করিম: সুনীল অর্থনীতি বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য অপার সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। আমরা সমুদ্রে অপ্রচলিত মাছ, শৈবাল, যে শৈবালগুলো খুবই মূল্যবান। শুধু তাই নয়, এগুলি খুবই স্বাদের এবং ভিটামিনসমৃদ্ধ। সেগুলোকে সংগ্রহ করে বিদেশে রফতানি করতে পারি এবং দেশের চাহিদা মেটাতে পারি। সমুদ্রের গভীরে আমাদের অনেক অনেক খনিজদ্রব্য রয়েছে। আমাদের অনেক দামি মাছ যেমন টুনা মাছ, আজ পর্যন্ত বাংলাদেশে টুনা মাছ ধরা হয়নি। আমরা সরকারিভাবে একটা প্রকল্প নিয়েছি যে, আমাদের টুনা ধরার দেখাদেখি অন্যরাও চলে আসবে। আমরা শ্রীলঙ্কার যারা টুনা মাছ ধরতে অভ্যস্ত তাদের নিয়ে আসছি। ভিয়েতনামসহ অন্যান্য দেশ থেকে যারা এক্সপার্ট সেখান থেকে তাদের যে নৌযান দিয়ে এটা ধরা হয় এবং এক্সপার্ট লোক যারা, তাদের নিয়ে আসছি। আমরা একটা ব্যাপক পরিকল্পনা নিয়েছি যে, সমুদ্রে যেসব সম্পদ এখনো আহরণ করতে আমরা যেতেই পারিনি, সেসব সম্পদ আহরণ করতে হবে। কারণ বাংলাদেশের বিভিন্ন পর্যায়ে অনেক সম্পদ রয়েছে। যার বিশাল একটি আধার আমাদের সমুদ্র এলাকায়।

jagonews24সাগরের টুনা মাছ ভীষণ স্বাদের

জাগো নিউজ: বিলুপ্ত প্রজাতির মাছ ফিরিয়ে আনতে আপনাদের উদ্যোগ কী?

শ ম রেজাউল করিম: দেশীয় প্রজাতির প্রায় ১২৪ প্রকার মাছ অধিকাংশ এলাকা থেকে হারিয়ে গেছে। চুসরা মাছ, নন্দি মাছ, ভেনি মাছ, টাকি মাছ, খলিসা মাছ—বিভিন্ন এলাকায় এমন ছোট ছোট মাছ ছিল, সে মাছগুলি হারিয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো, মাঠে যেখানে মাছ বড় হতো সেখানে চাষাবাদ করতে গিয়ে মাঠটাকে একেবারে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড করে ফেলেছি। সেখানে দেখা গেলো চৈত্র মাসে কোনো পানি আর থাকে না। ফলে দেখা যায় মাছের ডিমগুলি থাকার জায়গা থাকে না। অনেকে পুকুরগুলো ভরাট করে ফেলেছে। অনেক এলাকায় কীটনাশকের ব্যবহার হয়েছে ব্যাপক। কৃত্রিম রাসায়নিক সার ব্যবহার হয়েছে, এভাবে ওই অঞ্চলের মাছগুলো নষ্ট হয়েছে। আমরা এখন একটি লাইভ জিন ব্যাংক করেছি মাছের। সেখানে আমরা বিভিন্ন গবেষণার ভেতর থেকে বৈজ্ঞানিক প্রজনন পদ্ধতিতে হারিয়ে যাওয়া মাছগুলোকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যে প্রায় ২২ প্রকারের হারিয়ে যাওয়া মাছকে আমরা ফিরিয়ে এনেছি। তাদের বাচ্চা, ডিম আমরা ভালোভাবে উৎপাদন করতে পেরেছি। ক্রমান্বয়ে আমরা আরও এগিয়ে যাবো।

যেসব মাছ এখন পাওয়া যায় না, সে মাছ আমরা দেশের সব এলাকায় ছড়িয়ে দেব। আবার সেই মাছে ভাতে বাঙালি এবং বাঙালির নিজস্ব চরিত্র, বাংলাদেশের চরিত্র আবার ফিরে আসবে।

এগ্রোবিজ

যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশে হতে পারে সারের সংকট

সারের সংকট
সারের সংকট
সারের সংকট

চলতি বোরো মৌসুমে সার কিনতে কৃষকদের সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা করে বেশি দিতে হয়েছে। আর সরকারকেও সার বাবদ ভর্তুকি দিতে হচ্ছে বাজেটে বরাদ্দের তিন গুণের বেশি—প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশ এখন মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) সার আমদানি নিয়ে বিপাকে পড়েছে।

ধান, আলু ও সবজি চাষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এমওপি সারের ৬০ শতাংশ আনা হতো রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে। ওই দুই দেশ নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়ায় এখন বাংলাদেশকে এমওপি কিনতে হচ্ছে কানাডা থেকে। বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়া ও আমদানিতে অনিশ্চয়তার কারণে বাংলাদেশে সারের সংকট হতে পারে। ভর্তুকির চাপ সামলাতে বাংলাদেশকে সব ধরনের সারের খুচরা মূল্য বাড়াতে হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিবিষয়ক সংস্থা ইউএসডিএর চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ‘বাংলাদেশে সার সরবরাহ ও ব্যবহারে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের এমওপি সারের ২০ শতাংশ সরবরাহ কমানো হলে সামনের বোরো মৌসুমে ধান, গম ও রবি মৌসুমের অন্যান্য ফসলের উৎপাদন ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কমতে পারে। এতে বাংলাদেশের খাদ্য উৎপাদন ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে।

এমনিতেই এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমাদের ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সারের কারণে নতুন করে যাতে আর সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।

এ এম এম শওকত আলী, সাবেক কৃষিসচিব

তবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, দেশে চলতি বোরো মৌসুমে নতুন করে আর সারের দরকার হবে না। সামনে আলুর মৌসুমে ইউরিয়া, এমওপিসহ অন্যান্য সারের চাহিদা বাড়বে। ওই সময়ের জন্য সার সরবরাহ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ কানাডা ও মধ্যপ্রাচ্যের সার সরবরাহকারী দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে।

জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কানাডা থেকে মোট আট লাখ টন এমওপি সার আমদানির উদ্যোগ নিয়েছি। এ ব্যাপারে ওই দেশের সঙ্গে আমাদের সমঝোতা স্মারক হয়েছে। ফলে এই সার নিয়ে সরকারের কোনো দুশ্চিন্তা নেই। তবে সার বাবদ সরকারের বিপুল পরিমাণে ভর্তুকি বাড়ছে। এই চাপ নিয়েও সরকার ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ওই ভর্তুকি দিয়ে যাবে।’

কমানো হয়েছে চাহিদা

বাংলাদেশে চলতি অর্থবছরে ৬৯ লাখ টন রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয়েছে। এর মধ্যে ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি—এই চার ধরনের সার ব্যবহার হয় ৫৭ লাখ টন। আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের ওই চার ধরনের সারের চাহিদা কমিয়ে ৫৫ লাখ ৫০ হাজার টনে নামিয়ে আনা হয়েছে।

দেশে প্রয়োজনীয় সারের ৮০ শতাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এর মধ্যে এমওপি সারের বড় অংশ আসে রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে।

প্রসঙ্গত, ওই চারটি প্রধান সার কৃষকদের কাছে বিক্রির ক্ষেত্রে সরকার ভর্তুকি দিয়ে থাকে। চলতি অর্থবছরে সরকার প্রাথমিকভাবে সারে ভর্তুকি বাবদ ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে গত ছয় মাসে সারের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। বেশির ভাগ সারের দাম তিন থেকে চার গুণ বেড়ে যাওয়ায় সরকারকে ভর্তুকির পরিমাণ ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা করতে হয়। কিন্তু অর্থবছরের শেষের দিকে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে হিসাব করে দেখা হয়েছে, ভর্তুকির পরিমাণ এবার বেড়ে কমপক্ষে ৩০ হাজার কোটি টাকা গিয়ে দাঁড়াবে।

জিপসাম, জিংক সালফেট ও অ্যামোনিয়াম সালফেট ও ম্যাগনেসিয়াম সালফেট সারে সরকার কোনো ভর্তুকি দেয় না। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কিনে ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কাছে তা বিক্রি করে থাকেন। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষককেও বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে।

সাবেক কৃষিসচিব এ এম এম শওকত আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমনিতেই এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমাদের ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সারের কারণে নতুন করে যাতে আর সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। আর সরকারের অন্যান্য খাতের ভর্তুকি কমিয়ে প্রয়োজনে সারে ভর্তুকি বাড়াতে হবে, যাতে সারের দাম কম থাকে। কারণ, কৃষকের হাতে এখন টাকা কম। বিশ্ববাজার থেকেও খাদ্য আমদানি করা সামনের দিনে আরও কঠিন হতে পারে। ফলে দেশের উৎপাদন ঠিক রাখতে সারের দাম ও জোগান ঠিক রাখা উচিত।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

বিদেশ থেকে খালি হাতে ফিরে ড্রাগন চাষে সাফল্য

বাগানে চাষ করা ড্রাগন হাতে মিরাজুল ইসলাম
বাগানে চাষ করা ড্রাগন হাতে মিরাজুল ইসলাম

মিরাজুল ইসলাম (৩৩)। ১০ বছর সৌদি আরবে ছিলেন। আকামা জটিলতায় খালি হাতে দেশে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। এক বছর বেকার থাকার পর ইউটিউবে পতিত জমিতে ড্রাগন চাষের ভিডিও দেখেন। বাবার কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে নেমে পড়েন ড্রাগন চাষে। দেড় বছরের ব্যবধানে এখন উপজেলার সবচেয়ে বড় ড্রাগন বাগান তাঁর। এ বছর খরচ বাদে আট থেকে নয় লাখ টাকা লাভের আশা করছেন তিনি।

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার ইন্দুরকানি গ্রামের বাসিন্দা মিরাজুল। উপজেলার টগরা গ্রামে দেড় একর জমিতে তিনি ড্রাগনের বাগান তৈরি করেছেন। তাঁর বাগানে এখন সাড়ে তিন হাজার ড্রাগন ফলের গাছ আছে।

মিরাজুল ইসলাম বলেন, শ্রমিক হিসেবে ১০ বছর সৌদিতে কাজ করে ২০১৯ সালে দেশে ফেরেন তিনি। আকামা সমস্যার কারণে শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। কিছু একটা করবেন বলে ভাবছিলেন। একদিন ইউটিউবে ড্রাগন চাষের ভিডিও দেখতে পান। সেই থেকে ড্রাগন চাষে আগ্রহ জন্মে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে দেড় একর পতিত জমি ড্রাগন চাষের উপযোগী করেন। গাজীপুর থেকে ৬০ টাকা দরে ৬০০ চারা নিয়ে আসেন। বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে শুরু করেন চাষাবাদ। পরের বছর জুনে ফল পাওয়া শুরু করেন।

ড্রাগনের বাগান করতে মিরাজুলের খরচ হয়েছিল ছয় থেকে সাত লাখ টাকা। ইতিমধ্যে ফল বিক্রি করে তাঁর খরচ উঠে গেছে। সাধারণত মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত গাছে ফল আসে। বছরে ছয় থেকে সাতবার পাকা ড্রাগন সংগ্রহ করা যায়। এখন পরিপক্ব ও রোগমুক্ত গাছের শাখা কেটে নিজেই চারা তৈরি করেন। ড্রাগন চাষের পাশাপাশি বাগানে চুইঝাল, এলাচ, চায়না লেবুসহ মৌসুমি সবজি চাষ করেন। এ ছাড়া ড্রাগনের চারাও উৎপাদন করে বিক্রি করেন তিনি।

মিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বাগানের বেশির ভাগ গাছে এ বছর ফল ধরেছে। গত মঙ্গলবার বাগান থেকে দেড় টন ফল সংগ্রহ করেছেন। ২৫০ টাকা কেজি দরে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পাইকারদের কাছে বিক্রি করেছেন। স্থানীয় বাজারে ৩০০ টাকা কেজি দরে ড্রাগন বিক্রি হয়। নভেম্বর পর্যন্ত আরও পাঁচ–ছয়বার বাগান থেকে ফল তোলা যাবে। আশা করছেন, খরচ বাদে এবার আট থেকে নয় লাখ টাকা লাভ থাকবে।

মিরাজুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমার বাগান থেকে চারা নিয়ে অনেকে বাড়িতে ও ছাদে ছোট পরিসরে ড্রাগনের বাগান করেছেন। আমি এ পর্যন্ত ৪০ টাকায় দেড় হাজার চারা বিক্রি করেছি।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পূর্ণ বয়সের একটি ড্রাগনের চারা রোপণের পর ২৫ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। এর মৃত্যুঝুঁকি নেই বললেই চলে। তবে কয়েক দিন পরপর সেচ দিতে হয়। বৃষ্টির পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হয়। ড্রাগন ফল চাষে রাসায়নিক সার দিতে হয় না।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইশরাতুন্নেছা বলেন, মিরাজুল ইসলামকে ড্রাগন চাষে নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে আসছে কৃষি বিভাগ। উপজেলায় তাঁর বাগানটি সবচেয়ে বড়। তিনি নিরলস পরিশ্রম করে ছোট থেকে বাগানটি বড় করেছেন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

নাসিরনগরে বন্যায় তলিয়ে গেল কৃষকের বাদামখেত

নাসিরনগরের গোয়ালনগর ইউনিয়নে অতিবৃষ্টি ও আগাম বন্যায় তলিয়ে গেছে কৃষকদের বাদামখেত। আজ মঙ্গলবার ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রামে
নাসিরনগরের গোয়ালনগর ইউনিয়নে অতিবৃষ্টি ও আগাম বন্যায় তলিয়ে গেছে কৃষকদের বাদামখেত। আজ মঙ্গলবার ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রামে

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নে অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে কৃষকের প্রায় ৩০ হেক্টর বাদাম চাষের জমি। কয়েক দিন আগে উজানের পানিতে তাঁদের পাকা ধানের জমি তলিয়ে গিয়েছিল। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষকেরা বাদাম চাষ করেছিলেন। আবারও ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ার বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হলেন চাষিরা।

উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১১ এপ্রিল উপজেলায় শিলাবৃষ্টি এবং ১৪ থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত উজানের পানিতে কৃষকের পাকা ধানের জমি তলিয়ে যায়। কৃষকেরা সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ২০০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করেছিলেন। এর মধ্যে উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নে ৩০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করা হয়। উপজেলায় এবার প্রায় ৫০ হাজার মণ বাদাম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। কিন্তু উজানের পানিতে হঠাৎ বন্যায় সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

গোয়ালনগর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আজহারুল হক বলেন, ‘নাসিরনগর উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাদাম চাষ করা হয় আমাদের ইউনিয়নে। কিন্তু এ বছর আগাম বন্যার কারণে কৃষকেরা তাঁদের ফসল ঘরে তুলতে পারেননি। তাঁদের সব ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।’

ওই এলাকার বাদামচাষি মেরাজ মিয়া বলেন, তিনি ছয় বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করেন। দু-এক দিনের মধ্যে বাদাম তুলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু খেতে গিয়ে দেখেন সব বাদাম পানির নিচে। এখন এই বাদাম তুলে কোনো লাভ নেই। এগুলো গরুও খাবে না।

মো. রজব আলী নামের এক কৃষক বলেন, ‘আমাদের ইউনিয়নের জামারবালি, সোনাতলা ও মাইজখোলা গ্রামে বাদামখেত আছে। গত তিন দিনে পাঁচ-ছয় ফুট পানি বাড়ায় সব তলিয়ে গেছে। এখন বাদাম তুলতে কাজের লোকও পাওয়া যাচ্ছে না।’

কৃষক ফতু মিয়া বলেন, গোয়ালনগর ইউনিয়নের বাদাম চাষের জমিগুলো হঠাৎ পানি আসায় তলিয়ে গেছে। ফসল তলিয়ে তাঁদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেল। কয়েক দিন আগেও পাকা ধান পানির নিচে তলিয়ে গিয়েছিল। কৃষকদের দাবি, গোয়ালনগরে বাদাম চাষের জমি তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকদের প্রায় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আবু সাইদ প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলার কয়েকটি চরাঞ্চলে বাদাম চাষ করা হয়। চরাঞ্চলের উঁচু জমিতে প্রথমে আলু চাষের পর বাদাম চাষ করা হয়। আগাম বন্যার কারণে নিচু এলাকার কিছু বাদামখেত পানিতে তলিয়ে গেছে।

আবু সাইদ আরও বলেন, ১৫-২০ দিন আগে উপজেলার প্রায় সব বাদাম উঠে গেছে। গোয়ালনগর ইউনিয়নে ৩০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করা হয়েছিল। এর মধ্যে এক হেক্টর জমির বাদাম তলিয়ে গেছে। সব মিলিয়ে ৭০ হাজার টাকার মতো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সিলেটে বন্যা হওয়ায় এমনটি হয়েছে বলে তিনি জানান।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

পানি দিতে অতিরিক্ত টাকা

পানি দিতে অতিরিক্ত টাকা
পানি দিতে অতিরিক্ত টাকা

ঠাকুরগাঁওয়ে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) একটি গভীর নলকূপের সেচের পানি সরবরাহে কৃষকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হচ্ছে। ভুক্তভোগী কৃষকদের কাছ থেকে পাওয়া এমন অভিযোগের তদন্ত করে সত্যতা পেয়েছে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষ। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বড় বালিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে।

ভুক্তভোগী কৃষকেরা বলছেন, সেচের পানির জন্য প্রিপেইড কার্ডের বাইরে কোনো টাকা দেওয়ার নিয়ম নেই। কিন্তু বিএমডিএর ১০৮ নম্বর গভীর নলকূপের অপারেটরের দায়িত্বে থাকা বিউটি বেগমের স্বামী আকতারুজ্জামান বোরো ধান চাষের জন্য প্রতি বিঘার জন্য ১ হাজার ২০০ টাকা ও অন্য মৌসুমে ৩০০ টাকা নেন। ১০ বছর ধরে তিনি এভাবেই বাণিজ্য করে আসছেন।

সম্প্রতি রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে বিএমডিএর গভীর নলকূপ থেকে খেতে সেচের পানি পেতে হয়রানির শিকার দুই কৃষকের মৃত্যুর ঘটনা দেশজুড়ে আলোচিত হয়।

ঠাকুরগাঁও জেলায় বিএমডিএর ১ হাজার ৪৩১টি গভীর নলকূপ রয়েছে। এর মধ্যে সচল ১ হাজার ৪১৮টি। সেচের আওতায় ৭৬ হাজার ৫০০ পরিবারের জমি রয়েছে ৫৩ হাজার ৫০০ হেক্টর।

* সেচের পানির জন্য প্রিপেইড কার্ডের বাইরে কোনো টাকা দেওয়ার নিয়ম নেই। * সেচের আওতায় ৭৬ হাজার ৫০০ পরিবারের জমি আছে। * কৃষকদের নলকূপের আবেদন পেলে যাচাই করে স্কিম তৈরি করা হয়।

বিএমডিএ সূত্রে জানা গেছে, কৃষকদের নলকূপের আবেদন পেলে যাচাই করে স্কিম তৈরি করা হয়। এরপর সমবায়ের ভিত্তিতে অংশীদারি ফি বাবদ এক লাখ টাকা জমা দিতে হয়। এই নলকূপ পরিচালনার জন্য বিএমডিএ একজন অপারেটর নিয়োগ দেন। প্রিপেইড মিটারিং পদ্ধতিতে কৃষকের নিজ নামে প্রিপেইড কার্ড থাকতে হয়। সেই কার্ড থেকে প্রতি ঘণ্টায় সেচের পানির জন্য ন্যূনতম ১১০ টাকা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কেটে নেওয়া হয়। এর বাইরে অতিরিক্ত কোনো টাকা দেওয়ার নিয়ম নেই।

বড় বালিয়া এলাকার কৃষকেরা জানান, ২০১১ সালের দিকে বড় বালিয়া মণ্ডলপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. আকতারুজ্জামান এলাকায় গভীর নলকূপ স্থাপনের উদ্যোগ নেন। ফি হিসেবে এক লাখ জমা দেওয়ার নিয়ম থাকলেও কোনো কৃষক সেটা দিতে এগিয়ে আসেননি। ফলে আকতারুজ্জামান, দাউদুল ইসলাম ও জোবায়দুর রহমান মিলে অংশীদারি ফি দেন। আকতারুজ্জামানের ৮০ শতাংশ টাকা থাকায় গভীর নলকূপের নিয়ন্ত্রণ তিনিই পান। অপারেটর হিসেবে নিয়োগ পান তাঁর স্ত্রী বিউটি বেগম। যদিও কৃষকেরা আকতারুজ্জামানকেই অপারেটর হিসেবে জানতেন।

সেচের পানি পেতে হয়রানির শিকার হয়ে সদর উপজেলার বড় বালিয়া এলাকার ৫০ জন কৃষক গত ১৭ এপ্রিল বিএমডিএ সহকারী প্রকৌশলীর কাছে অভিযোগ দেন। সেখানে গিয়ে কৃষক ও অপারেটরের সঙ্গে কথা বলে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়।

ভুক্তভোগী কৃষকেরা বলেন, ২০১২ সালে নলকূপটি চালু হলে আওতাধীন কৃষকের কাছ থেকে আকতারুজ্জামান সেচের পানির জন্য প্রিপেইড কার্ডের অতিরিক্ত টাকা আদায় শুরু করেন। আর সেই টাকা থেকে তিনি মাঝেমধ্যে অন্য দুই অংশীদারকে কিছু টাকা ভাগ দেন।

ভুক্তভোগী কৃষক মো. শাহজাহান আলী বলেন, গভীর নলকূপটির আওতায় তাঁর ১০ বিঘা জমি রয়েছে। কার্ডের বাইরে টাকা দেওয়ার নিয়ম না থাকলেও আকতারুজ্জামানকে প্রতি বিঘায় সেচের জন্য ১ হাজার ২০০ টাকা দিতে হয়। এই টাকা না দিলে তিনি পানি দেন না।

ওই নলকূপের আওতায় চার বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করছেন কৃষক মো. হেলাল। তিনি অতিরিক্ত টাকা না দেওয়ায় অপারেটর খেতে পানি দেননি। এতে জমি ফেটে যায়। পরে তিনি শ্যালো ইঞ্জিন দিয়ে জমিতে সেচ দিয়ে খেত রক্ষা করেছেন।

আরেক ভুক্তভোগী মোকলেসুর রহমান বলেন, ১০ বছর ধরে সেচের পানির জন্য অতিরিক্ত টাকা দিয়ে আসছেন। এখন বিরক্ত হয়ে বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। এরপরও কোনো বিচার পাননি।

এ বিষয়ে মো. আকতারুজ্জামান বলেন, তিনি সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেওয়ার পর দেখেন গ্রামে কোনো গভীর নলকূপ নেই। পরে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে নলকূপটি স্থাপন করেন। কৃষকেরা অংশীদারত্বের টাকা দিতে রাজি না হলে তিনি বিএমডিএকে জানান। সে সময় তাঁরা টাকা দিয়ে দিতে পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘পরে আপনি টাকাটা ধীরে ধীরে তুলে নেবেন।’ সেই পরামর্শেই সেচের পানি বাবদ প্রিপেইড কার্ডের অতিরিক্ত কিছু টাকা তিনি নিচ্ছেন। জোর করে কিছু নিচ্ছেন না।

বিএমডিএ ঠাকুরগাঁও কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, অভিযোগটি যাচাই করে সত্যতা পাওয়া গেছে। নলকূপটি সুষ্ঠুভাবে চালানোর জন্য সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ওই অপারেটরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোটেক

কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তারা এক সঙ্গে কাজ করতে রাজি

ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকেরাফাইল ছবি
ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকেরাফাইল ছবি

ডাচ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে দুই দেশের বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা একসঙ্গে কাজ করতে রাজি হয়েছেন।

গতকাল সোমবার নেদারল্যান্ডসের রাজধানী হেগে অনুষ্ঠিত কৃষি খাতের ব্যবসাবিষয়ক এক সম্মেলনে দুই দেশের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা সহযোগিতার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।

নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম রিয়াজ হামিদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত এগ্রি বিজনেস কনক্লেভে বাংলাদেশের প্রায় ৪০জন উদ্যোক্তা ডাচ কৃষি খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি প্রযুক্তি সহযোগিতা ও ব্যবসায়িক সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। দিনব্যাপী আয়োজিত অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেছে ওয়েগেনিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়।

আলোচনায় বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা প্রযুক্তি কিনতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দিলে নেদারল্যান্ডসের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা প্রযুক্তি সহযোগিতা দিতে রাজি থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।

রিয়াজ হামিদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে ডাচরা প্রস্তুত এবং বাংলাদেশি উদ্যোক্তারাও তাদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। এ ছাড়া ডাচ সরকার ইতিমধ্যে বাংলাদেশের বীজ, পশু খাদ্য, পোলট্রি, হর্টিকালচার ও এ্যাকুয়াকালচার বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম সম্পাদন করেছে, যা ওই দেশের বেসরকারি খাতকে আরও উৎসাহিত করেছে।

আলোচনায় কৃষি সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করতে তৈরি আছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্কয়ার, ইস্পাহানি এগ্রো, একে খান অ্যান্ড কোম্পানি, প্যারাগন গ্রুপ, এসিআই, জেমকন গ্রুপসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তিনি জানান, মঙ্গলবার বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা ডাচ প্রযুক্তির প্রয়োগ সরেজমিনে দেখতে যাবেন।

বাংলাদেশের সঙ্গে নেদারল্যান্ডসের পোল্ট্রিখাতে সহযোগিতার আলোচনা অনেকটা এগিয়েছে উল্লেখ করে মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, দুই দেশের মধ্যে মৎস্য, পশুপালন ও হর্টিকালচারে সহযোগিতার বিপুল সম্ভাবনা আছে।

কনক্লেভ আয়োজনে প্রথমবারের মতো দূতাবাসের সঙ্গে অংশীদার হয়েছে নেদারল্যান্ডসের কৃষি মন্ত্রণালয়, নেদারল্যান্ডস এন্টারপ্রাইজ এজেন্সি, নেদারল্যান্ডস ফুড পার্টনারশিপ, ডাচ-গ্রিন-হাইজডেল্টা, লারিভ ইন্টারন্যাশনাল, স্টান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ।

কৃষিজাত পণ্য রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থানকারী নেদারল্যান্ডসের আয়তন বাংলাদেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের কম। ২০২১-এ কৃষিপণ্য ও খাদ্য রপ্তানি করে নেদারল্যান্ডস ১১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি আয় করেছে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশক: শাইখ সিরাজ
© ২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। দা এগ্রো নিউজ, ফিশ এক্সপার্ট লিমিটেডের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। ৫১/এ/৩ পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থাপথ, ঢাকা -১২০৫
ফোন: ০১৭১২-৭৪২২১৭
ইমেইল: info@agronewstoday.com, theagronewsbd@gmail.com