আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

এগ্রোবিজ

সুগন্ধি ধান চাষে কম খরচে বেশি লাভ

বাঙালির উৎসব ও ঐতিহ্যের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত সুগন্ধি চাল। সুপ্রাচীনকাল থেকে গ্রামে ও নগরে ধনী-গরিব সবার ঘরোয়া উৎসবে, গায়েহলুদ, জন্মদিন, বিয়ে-শাদি, নববর্ষ, ঈদ, পূজায় অতিথি আপ্যায়নে সুগন্ধি চালের তৈরি মুখরোচক খাবার ব্যবহার হয়ে আসছে। এসব খাবারের মধ্যে রয়েছে পোলাও, বিরিয়ানি, কাচ্চি বিরিয়ানি, জর্দা, পায়েস, ফিরনি, পিঠাপুলি ইত্যাদি। দ্রুত নগরায়ণ, মানুষের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি এবং রুচি ও অভ্যাস পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে দেশে বাড়ছে সুগন্ধি চালের ব্যবহার। অন্যদিকে সাধারণ ধানের চেয়ে বেশি লাভ হওয়ায় কৃষকেরও আগ্রহ বাড়ছে সুগন্ধি ধান চাষে।

কৃষকের কাছ থেকে জানা যায়, এ বছর প্রতি মণ আমন ধানের উৎপাদন খরচ পড়েছে ৭৫০ টাকা। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাট-বাজারে প্রতি মণ আমন ধান বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা মণ দরে। সে হিসেবে প্রতি মণ আমন ধানে কৃষকের ক্ষতি হচ্ছে ৫০ থেকে ১০০ টাকা। সাধারণ ধান চাষে কৃষক লাভবান না হলেও সুগন্ধি ধান চাষে কৃষক এখনো লাভবান হচ্ছেন। সুগন্ধি ধান চাষের বেশ কিছু সুবিধা আছে। সুবিধাগুলো হলো সুগন্ধি ধানের উৎপাদন খরচ কম। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরও নামলা আবাদ করা যায়। সাধারণ ধানের তুলনায় কম সার লাগে। কম উর্বর জমি; বিশেষ করে বেলে-দোআঁশ মাটিতেও এই ধানের চাষ করা যায়। সাধারণ ধানের দ্বিগুণ দামে সুগন্ধি ধান বিক্রি হয়। বাজারে চাহিদা বেশি। সুগন্ধি ধানের চাল বিদেশে রপ্তানি করা যায়। 

ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার দরিরামপুর খাবলাপাড়া গ্রামের কৃষক মো. নজরুল ইসলাম এ বছর ১০ শতক জমিতে ব্রি-ধান ৩৪ জাতের সুগন্ধি ধানের চাষ করেন। ১০ শতক জমিতে তার ধান ফলেছে ৪ মণ। এই পরিমাণ ধান থেকে চাল হবে ৮০ কেজি। প্রতি কেজি চালের দাম ১০০ টাকা হলে ৮০ কেজি চালের দাম হবে ৮ হাজার টাকা। ধান উৎপাদন ও ধান থেকে চাল তৈরি বাবদ খরচ দুই হাজার টাকা বাদ দেওয়ার পর তার নিট লাভ হবে ছয় হাজার টাকা, যা সাধারণ ধান চাষে কোনো অবস্থাতেই সম্ভব নয়। বেশি লাভের কারণে একই উপজেলার ত্রিশাল ভাটিপাড়া গ্রামের কৃষক মো. আবু তাহের এবার ৮০ শতক জমিতে ব্রি-ধান-৩৪-এর চাষ করেন। এই ধান চাষে একরপ্রতি তার খরচ হয়েছে প্রায় ১৪ হাজার টাকা। কম করে হলেও তার ধান হবে একরপ্রতি ৩০ মণ। ১ হাজার ৫০০ টাকা মণ দরে ৩০ মণ ধানের দাম হবে ৪৫ হাজার টাকা। ১৪ হাজার টাকা খরচ বাদ দিলেও তার লাভ হবে ৩১ হাজার টাকা। এতেই তিনি খুশি। কারণ গত বোরো মৌসুমে হাইব্রিড জাতের সাধারণ ধানের চাষ করে উৎপাদন খরচও তুলতে পারেননি তিনি। 

ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার বইলর বাঁশকুড়ি গ্রামের আরেক কৃষক এ বছর তার ৫০ শতক জমিতে আমন ধানের চাষ করেন। তার মধ্যে সাড়ে ছয় শতক জমিতে চাষ করেন ‘তুলসীমালা’ জাতের সুগন্ধি ধান। সাড়ে ছয় শতক জমিতে ওই কৃষকের ধান ফলেছে দুই মণ। দুই মণ ধান থেকে পাওয়া যাবে ৪০ কেজি সুগন্ধি চাল। প্রতি কেজি চালের দাম ১০০ টাকা হলে, তার সাড়ে ছয় শতক জমির উৎপাদিত সুগন্ধি চাল বিক্রি হবে চার হাজার টাকায়। উৎপাদন খরচ এক হাজার টাকা বাদ দিলে তার নিট লাভ হবে তিন হাজার টাকা। একই গ্রামের আরেক কৃষক আবুল কালাম জানান, তিনি এবার ৫০ শতক জমিতে ব্রি-ধান ৪৯ জাতের সাধারণ আমন ধানের চাষ করেছেন। তার ওই জমিতে ধান ফলেছে ২০ মণ। ৭০০ টাকা মণ দরে ২০ মণ ধানের দাম ১৪ হাজার টাকা। ৫০ শতক জমিতে ধান চাষে মোট খরচ হয়েছে তার ৯ হাজার ৬০০ টাকা। সে হিসেবে ৫০ শতক জমিতে ধান চাষে তার নিট লাভ ৪ হাজার ৪০০ অর্থাৎ একরপ্রতি নিট লাভ হয়েছে মাত্র ৮ হাজার ৮০০ টাকা। 

পারিবারিক প্রয়োজনে সারা দেশে স্বল্প পরিমাণে সুগন্ধি ধানের চাষ করে থাকে কৃষকরা। তুলনামূলক ঠাণ্ডাপ্রবণ এলাকার ধানে বেশি সুগন্ধ থাকার কারণে দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, রংপুর, রাজশাহী, নওগাঁ ও ময়মনসিংহ জেলায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সুগন্ধি ধানের চাষ বেশি হয়। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণা প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, একসময় ৫৭ ধরনের সুগন্ধি ধানের চাষ হতো দেশে। বর্তমানে চাষ হচ্ছে ৩২ ধরনের সুগন্ধি ধানের চাষ। এগুলোর মধ্যে কতগুলো অতিসুগন্ধি জাত। আবার কতগুলো হালকা সুগন্ধি জাত। অতিসুগন্ধি জাতগুলো হলো কালিজিরা, চিনিগুঁড়া, কাটারিভোগ, তুলসীমালা, বাদশাভোগ, চিনিআতপ, বাঁশফুল, দুর্বাশাইল, বেগুনবিচি ও কালপাখারি ইত্যাদি। হালকা সুগন্ধিযুক্ত জাতগুলোর মধ্যে রয়েছে কৃষ্ণভোগ, গোবিন্দভোগ, জিরাভোগ, চিনিশাইল, সাদাগুঁড়া, মধুমাধব ও দুধশাইল উল্লেখযোগ্য।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা এ পর্যন্ত আটটি সরু ও সুগন্ধি ধানের জাত উদ্ভাবন করেছেন। এই ৮টি জাতের মধ্যে ৭টি চাষ হয় আমন মৌসুমে আর একটি চাষ হয় বোরো মৌসুমে। আমন মৌসুমে চাষ উপযোগী ব্রি উদ্ভাবিত ধানের জাতগুলো হলো বিআর-৫ (দুলাভোগ), ব্রি-ধান ৩৪, ব্রি-ধান ৩৭, ব্রি-ধান ৩৮, ব্রি-ধান ৭০, ব্রি-ধান ৭৫ ও ব্রি-ধান ৮০। অন্যদিকে বোরো মৌসুমে চাষযোগ্য ব্রি উদ্ভাবিত সুগন্ধি ধানের জাতটির নাম হলো ব্রি-ধান ৫০ বা ‘বাংলামতি’। প্রচলিত সুগন্ধি ধানের জাতগুলোর যেখানে বিঘাপ্রতি ফলন ৫ থেকে ৮ মণ, সেখানে ব্রি উদ্ভাবিত সুগন্ধি ধানের জাতগুলোর ফলন ১২ থেকে ২২ মণ। এ ছাড়া বাংলাদেশ পরমাণু গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিনাধান-৯ ও বিনাধান-১৩ এবং বাংলাদেশ  কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভাবিত বিইউ সুগন্ধি হাইব্রিড ধান-১ নামে তিনটি সুগন্ধি জাতের ধান রয়েছে। 

অধিক ফলন, চিনিগুঁড়ার মতো আকার ও সুগন্ধের জন্য ব্রি-ধান ৩৪ কৃষকের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। বাজারে ‘চিনিগুঁড়া’ নামে যে সুগন্ধি চাল পাওয়া যায় তার শতকরা ৮০ ভাগই হলো ব্রিধান-৩৪-এর চাল। সাধারণ ধানের চেয়ে বেশি দাম ও অধিক লাভজনক হওয়ার কারণে দিনাজপুর জেলার বিরল, কাহারোল, পার্বতীপুর ও চিরিরবন্দর এলাকায় বর্তমানে কৃষক পর্যায়ে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ হচ্ছে ব্রি-ধান ৩৪। এ ছাড়া ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল, ভালুকা, ফুলবাড়িয়া, ফুলপুর, হালুয়াঘাট ও তারাকান্দা উপজেলাতেও অল্প পরিমাণে চাষ হচ্ছে সুগন্ধি জাতের এ ধানটি। আলোক সংবেদনশীল হওয়ায় এই জাতটি আমনে বন্যাপ্রবণ এলাকায় নাবিতে রোপণ উপযোগী। ব্রি-ধান ৭০ দেখতে কাটারিভোগের মতো। কিন্তু ফলন বিঘাপ্রতি ১৭ মণ, যা কাটারিভোগের দ্বিগুণ এবং চালও কাটারিভোগের চেয়ে কিছুটা লম্বা। ব্রি-ধান ৮০ আলোক অসংবেদনশীল এবং বিঘাপ্রতি ফলন ১৮ মণ। এটি থাইল্যান্ডের জনপ্রিয় জাত জেসমিন ধানের মতো সুগন্ধযুক্ত এবং খেতেও বেশ সুস্বাদু। অন্যদিকে বোরো মৌসুমে সুগন্ধিযুক্ত আধুনিক জাত ব্রি-ধান ৫০ বা ‘বাংলামতি’। এর বিঘাপ্রতি ফলন প্রায় ২০ মণ। এ জাতের চালের মান, স্বাদ ও গন্ধ বাসমতি চালের মতোই। 

বিইউ সুগন্ধি হাইব্রিড-১ জাতের সুবিধা হচ্ছে এটি আমন ও বোরো উভয় মৌসুমেই চাষ করা যায়। কিন্তু এ জাতের বীজ এখনো ব্রি-ধান ৩৪ জাতের মতো সহজলভ্য নয় এবং কৃষকদেরও এ জাতটি সম্পর্কে তেমন ধারণা নেই। বোরো মৌসুমে কৃষকের সুগন্ধি ধানের চাহিদা পূরণের জন্য এই জাতটির বীজ বিএডিসিসহ বিভিন্ন বেসরকারি বীজ কোম্পানির মাধ্যমে জরুরি ভিত্তিতে বাজারজাত করা প্রয়োজন। 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১০ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে সুগন্ধি চাল রপ্তানি। ২০০৯-১০ অর্থবছরে ৬৬৩ টন রপ্তানির মাধ্যমে বাংলাদেশ শুরু করে সুগন্ধি চাল রপ্তানি। ২০১২-১৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৩ হাজার ৭৮৭ টন সুগন্ধি চাল রপ্তানি করা হয়। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে রপ্তানি বেড়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার ৬৭৮ টনে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ৮ হাজার ২১০ টন সুগন্ধি চাল রপ্তানি হয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। রপ্তানিকারকরা বলছেন, যেসব দেশে প্রধানত বাংলাদেশি এবং ভারত, পাকিস্তান ও মিয়ানমারের লোকজন বেশি রয়েছে, সেখানে সুগন্ধি চালের চাহিদা বেশি। এ ছাড়া ইউরোপ ও আমেরিকায় সম্প্রতি স্থানীয় লোকজনের মধ্যে সুগন্ধি চালের চাহিদা বেড়েছে। বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে সবচেয়ে বেশি সুগন্ধি চাল রপ্তানি হয়। এ ছাড়া মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ব্রুনাই, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের সুগন্ধি চাল রপ্তানি হচ্ছে।

সুগন্ধি ধানের অনেক সুবিধার মধ্যে একটি সীমাবদ্ধতা হলো ব্লাস্ট রোগের আক্রমণ। সুগন্ধি ধানের জাতগুলো ‘নেক ব্লাস্ট’ রোগের আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই ব্লাস্ট রোগের আক্রমণ থেকে সুগন্ধি ধান সুরক্ষায় শিষ বের হওয়ার আগ মুহূর্তে প্রতি ৫ শতক জমিতে ৮ গ্রাম ট্রুপার ৭৫ ডব্লিউপি বা ৬ গ্রাম নেটিভো ৭৫ ডব্লিউপি ১০ লটিার পানতিে মশিয়িে বকিলেে পাঁচ থকেে সাত দনি অন্তর দুবার স্প্ের করতে হবে। রাসায়নকি সাররে পাশাপাশি জবৈ সার ব্যবহাররে মাধ্যমে চাষাবাদ করলে সুগন্ধি চালে সুঘ্রাণ বশেি হয় বলে জানান ধান বজ্ঞিানীরা। এ জন্য প্রতি শতকে চার কজেি র্ভামি কম্পোস্ট বা কঁেচো সার ব্যবহার করা যতেে পারে।

নতুন উদ্ভাবতি উন্নত জাতরে সুগন্ধি ধানরে চাষ, ফলন, বাজার মূল্য ও লাভ-ক্ষতি সর্ম্পকে সারা দশেরে কৃষকদরে মধ্যে তমেন স্বচ্ছ ধারণা নইে। তাদরে ধারণা– সুগন্ধি ধানরে ফলন কম। তাই সুগন্ধি ধানরে চাষকে জনপ্রয়ি করতে হলে কৃষকদরে মধ্যে ব্যাপক প্রচার, ফলাফল প্রর্দশনী ও মাঠ দবিসরে মতো সম্প্রসারণ র্কমকাণ্ডরে প্রতি নজর দতিে হব।ে সইে সঙ্গে সুগন্ধি ধান চাষরে আধুনকি কলাকৌশলরে ওপর কৃষক প্রশক্ষিণরে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সুগন্ধি ধানরে বীজ কৃষক যাতে সহজে সংগ্রহ করতে পারনে, সে ব্যাপারওে বাংলাদশে কৃষি উন্নয়ন করপোরশেনকে উদ্যোগ নতিে হবে। প্রয়োজনে কৃষকদরে মধ্যে বনিামূল্যে সুগন্ধি ধানরে উচ্চফলনশীল জাতরে বীজ বতিরণ করতে হব।

বিজ্ঞাপন
মন্তব্য করুন

অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন

Leave a Reply

এগ্রোবিজ

যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশে হতে পারে সারের সংকট

সারের সংকট
সারের সংকট
সারের সংকট

চলতি বোরো মৌসুমে সার কিনতে কৃষকদের সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা করে বেশি দিতে হয়েছে। আর সরকারকেও সার বাবদ ভর্তুকি দিতে হচ্ছে বাজেটে বরাদ্দের তিন গুণের বেশি—প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশ এখন মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) সার আমদানি নিয়ে বিপাকে পড়েছে।

ধান, আলু ও সবজি চাষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এমওপি সারের ৬০ শতাংশ আনা হতো রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে। ওই দুই দেশ নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়ায় এখন বাংলাদেশকে এমওপি কিনতে হচ্ছে কানাডা থেকে। বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়া ও আমদানিতে অনিশ্চয়তার কারণে বাংলাদেশে সারের সংকট হতে পারে। ভর্তুকির চাপ সামলাতে বাংলাদেশকে সব ধরনের সারের খুচরা মূল্য বাড়াতে হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিবিষয়ক সংস্থা ইউএসডিএর চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ‘বাংলাদেশে সার সরবরাহ ও ব্যবহারে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের এমওপি সারের ২০ শতাংশ সরবরাহ কমানো হলে সামনের বোরো মৌসুমে ধান, গম ও রবি মৌসুমের অন্যান্য ফসলের উৎপাদন ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কমতে পারে। এতে বাংলাদেশের খাদ্য উৎপাদন ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে।

এমনিতেই এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমাদের ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সারের কারণে নতুন করে যাতে আর সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।

এ এম এম শওকত আলী, সাবেক কৃষিসচিব

তবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, দেশে চলতি বোরো মৌসুমে নতুন করে আর সারের দরকার হবে না। সামনে আলুর মৌসুমে ইউরিয়া, এমওপিসহ অন্যান্য সারের চাহিদা বাড়বে। ওই সময়ের জন্য সার সরবরাহ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ কানাডা ও মধ্যপ্রাচ্যের সার সরবরাহকারী দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে।

জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কানাডা থেকে মোট আট লাখ টন এমওপি সার আমদানির উদ্যোগ নিয়েছি। এ ব্যাপারে ওই দেশের সঙ্গে আমাদের সমঝোতা স্মারক হয়েছে। ফলে এই সার নিয়ে সরকারের কোনো দুশ্চিন্তা নেই। তবে সার বাবদ সরকারের বিপুল পরিমাণে ভর্তুকি বাড়ছে। এই চাপ নিয়েও সরকার ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ওই ভর্তুকি দিয়ে যাবে।’

কমানো হয়েছে চাহিদা

বাংলাদেশে চলতি অর্থবছরে ৬৯ লাখ টন রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয়েছে। এর মধ্যে ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি—এই চার ধরনের সার ব্যবহার হয় ৫৭ লাখ টন। আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের ওই চার ধরনের সারের চাহিদা কমিয়ে ৫৫ লাখ ৫০ হাজার টনে নামিয়ে আনা হয়েছে।

দেশে প্রয়োজনীয় সারের ৮০ শতাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এর মধ্যে এমওপি সারের বড় অংশ আসে রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে।

প্রসঙ্গত, ওই চারটি প্রধান সার কৃষকদের কাছে বিক্রির ক্ষেত্রে সরকার ভর্তুকি দিয়ে থাকে। চলতি অর্থবছরে সরকার প্রাথমিকভাবে সারে ভর্তুকি বাবদ ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে গত ছয় মাসে সারের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। বেশির ভাগ সারের দাম তিন থেকে চার গুণ বেড়ে যাওয়ায় সরকারকে ভর্তুকির পরিমাণ ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা করতে হয়। কিন্তু অর্থবছরের শেষের দিকে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে হিসাব করে দেখা হয়েছে, ভর্তুকির পরিমাণ এবার বেড়ে কমপক্ষে ৩০ হাজার কোটি টাকা গিয়ে দাঁড়াবে।

জিপসাম, জিংক সালফেট ও অ্যামোনিয়াম সালফেট ও ম্যাগনেসিয়াম সালফেট সারে সরকার কোনো ভর্তুকি দেয় না। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কিনে ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কাছে তা বিক্রি করে থাকেন। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষককেও বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে।

সাবেক কৃষিসচিব এ এম এম শওকত আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমনিতেই এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমাদের ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সারের কারণে নতুন করে যাতে আর সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। আর সরকারের অন্যান্য খাতের ভর্তুকি কমিয়ে প্রয়োজনে সারে ভর্তুকি বাড়াতে হবে, যাতে সারের দাম কম থাকে। কারণ, কৃষকের হাতে এখন টাকা কম। বিশ্ববাজার থেকেও খাদ্য আমদানি করা সামনের দিনে আরও কঠিন হতে পারে। ফলে দেশের উৎপাদন ঠিক রাখতে সারের দাম ও জোগান ঠিক রাখা উচিত।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

বিদেশ থেকে খালি হাতে ফিরে ড্রাগন চাষে সাফল্য

বাগানে চাষ করা ড্রাগন হাতে মিরাজুল ইসলাম
বাগানে চাষ করা ড্রাগন হাতে মিরাজুল ইসলাম

মিরাজুল ইসলাম (৩৩)। ১০ বছর সৌদি আরবে ছিলেন। আকামা জটিলতায় খালি হাতে দেশে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। এক বছর বেকার থাকার পর ইউটিউবে পতিত জমিতে ড্রাগন চাষের ভিডিও দেখেন। বাবার কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে নেমে পড়েন ড্রাগন চাষে। দেড় বছরের ব্যবধানে এখন উপজেলার সবচেয়ে বড় ড্রাগন বাগান তাঁর। এ বছর খরচ বাদে আট থেকে নয় লাখ টাকা লাভের আশা করছেন তিনি।

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার ইন্দুরকানি গ্রামের বাসিন্দা মিরাজুল। উপজেলার টগরা গ্রামে দেড় একর জমিতে তিনি ড্রাগনের বাগান তৈরি করেছেন। তাঁর বাগানে এখন সাড়ে তিন হাজার ড্রাগন ফলের গাছ আছে।

মিরাজুল ইসলাম বলেন, শ্রমিক হিসেবে ১০ বছর সৌদিতে কাজ করে ২০১৯ সালে দেশে ফেরেন তিনি। আকামা সমস্যার কারণে শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। কিছু একটা করবেন বলে ভাবছিলেন। একদিন ইউটিউবে ড্রাগন চাষের ভিডিও দেখতে পান। সেই থেকে ড্রাগন চাষে আগ্রহ জন্মে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে দেড় একর পতিত জমি ড্রাগন চাষের উপযোগী করেন। গাজীপুর থেকে ৬০ টাকা দরে ৬০০ চারা নিয়ে আসেন। বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে শুরু করেন চাষাবাদ। পরের বছর জুনে ফল পাওয়া শুরু করেন।

ড্রাগনের বাগান করতে মিরাজুলের খরচ হয়েছিল ছয় থেকে সাত লাখ টাকা। ইতিমধ্যে ফল বিক্রি করে তাঁর খরচ উঠে গেছে। সাধারণত মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত গাছে ফল আসে। বছরে ছয় থেকে সাতবার পাকা ড্রাগন সংগ্রহ করা যায়। এখন পরিপক্ব ও রোগমুক্ত গাছের শাখা কেটে নিজেই চারা তৈরি করেন। ড্রাগন চাষের পাশাপাশি বাগানে চুইঝাল, এলাচ, চায়না লেবুসহ মৌসুমি সবজি চাষ করেন। এ ছাড়া ড্রাগনের চারাও উৎপাদন করে বিক্রি করেন তিনি।

মিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বাগানের বেশির ভাগ গাছে এ বছর ফল ধরেছে। গত মঙ্গলবার বাগান থেকে দেড় টন ফল সংগ্রহ করেছেন। ২৫০ টাকা কেজি দরে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পাইকারদের কাছে বিক্রি করেছেন। স্থানীয় বাজারে ৩০০ টাকা কেজি দরে ড্রাগন বিক্রি হয়। নভেম্বর পর্যন্ত আরও পাঁচ–ছয়বার বাগান থেকে ফল তোলা যাবে। আশা করছেন, খরচ বাদে এবার আট থেকে নয় লাখ টাকা লাভ থাকবে।

মিরাজুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমার বাগান থেকে চারা নিয়ে অনেকে বাড়িতে ও ছাদে ছোট পরিসরে ড্রাগনের বাগান করেছেন। আমি এ পর্যন্ত ৪০ টাকায় দেড় হাজার চারা বিক্রি করেছি।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পূর্ণ বয়সের একটি ড্রাগনের চারা রোপণের পর ২৫ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। এর মৃত্যুঝুঁকি নেই বললেই চলে। তবে কয়েক দিন পরপর সেচ দিতে হয়। বৃষ্টির পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হয়। ড্রাগন ফল চাষে রাসায়নিক সার দিতে হয় না।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইশরাতুন্নেছা বলেন, মিরাজুল ইসলামকে ড্রাগন চাষে নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে আসছে কৃষি বিভাগ। উপজেলায় তাঁর বাগানটি সবচেয়ে বড়। তিনি নিরলস পরিশ্রম করে ছোট থেকে বাগানটি বড় করেছেন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

নাসিরনগরে বন্যায় তলিয়ে গেল কৃষকের বাদামখেত

নাসিরনগরের গোয়ালনগর ইউনিয়নে অতিবৃষ্টি ও আগাম বন্যায় তলিয়ে গেছে কৃষকদের বাদামখেত। আজ মঙ্গলবার ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রামে
নাসিরনগরের গোয়ালনগর ইউনিয়নে অতিবৃষ্টি ও আগাম বন্যায় তলিয়ে গেছে কৃষকদের বাদামখেত। আজ মঙ্গলবার ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রামে

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নে অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে কৃষকের প্রায় ৩০ হেক্টর বাদাম চাষের জমি। কয়েক দিন আগে উজানের পানিতে তাঁদের পাকা ধানের জমি তলিয়ে গিয়েছিল। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষকেরা বাদাম চাষ করেছিলেন। আবারও ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ার বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হলেন চাষিরা।

উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১১ এপ্রিল উপজেলায় শিলাবৃষ্টি এবং ১৪ থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত উজানের পানিতে কৃষকের পাকা ধানের জমি তলিয়ে যায়। কৃষকেরা সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ২০০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করেছিলেন। এর মধ্যে উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নে ৩০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করা হয়। উপজেলায় এবার প্রায় ৫০ হাজার মণ বাদাম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। কিন্তু উজানের পানিতে হঠাৎ বন্যায় সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

গোয়ালনগর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আজহারুল হক বলেন, ‘নাসিরনগর উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাদাম চাষ করা হয় আমাদের ইউনিয়নে। কিন্তু এ বছর আগাম বন্যার কারণে কৃষকেরা তাঁদের ফসল ঘরে তুলতে পারেননি। তাঁদের সব ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।’

ওই এলাকার বাদামচাষি মেরাজ মিয়া বলেন, তিনি ছয় বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করেন। দু-এক দিনের মধ্যে বাদাম তুলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু খেতে গিয়ে দেখেন সব বাদাম পানির নিচে। এখন এই বাদাম তুলে কোনো লাভ নেই। এগুলো গরুও খাবে না।

মো. রজব আলী নামের এক কৃষক বলেন, ‘আমাদের ইউনিয়নের জামারবালি, সোনাতলা ও মাইজখোলা গ্রামে বাদামখেত আছে। গত তিন দিনে পাঁচ-ছয় ফুট পানি বাড়ায় সব তলিয়ে গেছে। এখন বাদাম তুলতে কাজের লোকও পাওয়া যাচ্ছে না।’

কৃষক ফতু মিয়া বলেন, গোয়ালনগর ইউনিয়নের বাদাম চাষের জমিগুলো হঠাৎ পানি আসায় তলিয়ে গেছে। ফসল তলিয়ে তাঁদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেল। কয়েক দিন আগেও পাকা ধান পানির নিচে তলিয়ে গিয়েছিল। কৃষকদের দাবি, গোয়ালনগরে বাদাম চাষের জমি তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকদের প্রায় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আবু সাইদ প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলার কয়েকটি চরাঞ্চলে বাদাম চাষ করা হয়। চরাঞ্চলের উঁচু জমিতে প্রথমে আলু চাষের পর বাদাম চাষ করা হয়। আগাম বন্যার কারণে নিচু এলাকার কিছু বাদামখেত পানিতে তলিয়ে গেছে।

আবু সাইদ আরও বলেন, ১৫-২০ দিন আগে উপজেলার প্রায় সব বাদাম উঠে গেছে। গোয়ালনগর ইউনিয়নে ৩০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করা হয়েছিল। এর মধ্যে এক হেক্টর জমির বাদাম তলিয়ে গেছে। সব মিলিয়ে ৭০ হাজার টাকার মতো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সিলেটে বন্যা হওয়ায় এমনটি হয়েছে বলে তিনি জানান।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

পানি দিতে অতিরিক্ত টাকা

পানি দিতে অতিরিক্ত টাকা
পানি দিতে অতিরিক্ত টাকা

ঠাকুরগাঁওয়ে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) একটি গভীর নলকূপের সেচের পানি সরবরাহে কৃষকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হচ্ছে। ভুক্তভোগী কৃষকদের কাছ থেকে পাওয়া এমন অভিযোগের তদন্ত করে সত্যতা পেয়েছে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষ। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বড় বালিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে।

ভুক্তভোগী কৃষকেরা বলছেন, সেচের পানির জন্য প্রিপেইড কার্ডের বাইরে কোনো টাকা দেওয়ার নিয়ম নেই। কিন্তু বিএমডিএর ১০৮ নম্বর গভীর নলকূপের অপারেটরের দায়িত্বে থাকা বিউটি বেগমের স্বামী আকতারুজ্জামান বোরো ধান চাষের জন্য প্রতি বিঘার জন্য ১ হাজার ২০০ টাকা ও অন্য মৌসুমে ৩০০ টাকা নেন। ১০ বছর ধরে তিনি এভাবেই বাণিজ্য করে আসছেন।

সম্প্রতি রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে বিএমডিএর গভীর নলকূপ থেকে খেতে সেচের পানি পেতে হয়রানির শিকার দুই কৃষকের মৃত্যুর ঘটনা দেশজুড়ে আলোচিত হয়।

ঠাকুরগাঁও জেলায় বিএমডিএর ১ হাজার ৪৩১টি গভীর নলকূপ রয়েছে। এর মধ্যে সচল ১ হাজার ৪১৮টি। সেচের আওতায় ৭৬ হাজার ৫০০ পরিবারের জমি রয়েছে ৫৩ হাজার ৫০০ হেক্টর।

* সেচের পানির জন্য প্রিপেইড কার্ডের বাইরে কোনো টাকা দেওয়ার নিয়ম নেই। * সেচের আওতায় ৭৬ হাজার ৫০০ পরিবারের জমি আছে। * কৃষকদের নলকূপের আবেদন পেলে যাচাই করে স্কিম তৈরি করা হয়।

বিএমডিএ সূত্রে জানা গেছে, কৃষকদের নলকূপের আবেদন পেলে যাচাই করে স্কিম তৈরি করা হয়। এরপর সমবায়ের ভিত্তিতে অংশীদারি ফি বাবদ এক লাখ টাকা জমা দিতে হয়। এই নলকূপ পরিচালনার জন্য বিএমডিএ একজন অপারেটর নিয়োগ দেন। প্রিপেইড মিটারিং পদ্ধতিতে কৃষকের নিজ নামে প্রিপেইড কার্ড থাকতে হয়। সেই কার্ড থেকে প্রতি ঘণ্টায় সেচের পানির জন্য ন্যূনতম ১১০ টাকা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কেটে নেওয়া হয়। এর বাইরে অতিরিক্ত কোনো টাকা দেওয়ার নিয়ম নেই।

বড় বালিয়া এলাকার কৃষকেরা জানান, ২০১১ সালের দিকে বড় বালিয়া মণ্ডলপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. আকতারুজ্জামান এলাকায় গভীর নলকূপ স্থাপনের উদ্যোগ নেন। ফি হিসেবে এক লাখ জমা দেওয়ার নিয়ম থাকলেও কোনো কৃষক সেটা দিতে এগিয়ে আসেননি। ফলে আকতারুজ্জামান, দাউদুল ইসলাম ও জোবায়দুর রহমান মিলে অংশীদারি ফি দেন। আকতারুজ্জামানের ৮০ শতাংশ টাকা থাকায় গভীর নলকূপের নিয়ন্ত্রণ তিনিই পান। অপারেটর হিসেবে নিয়োগ পান তাঁর স্ত্রী বিউটি বেগম। যদিও কৃষকেরা আকতারুজ্জামানকেই অপারেটর হিসেবে জানতেন।

সেচের পানি পেতে হয়রানির শিকার হয়ে সদর উপজেলার বড় বালিয়া এলাকার ৫০ জন কৃষক গত ১৭ এপ্রিল বিএমডিএ সহকারী প্রকৌশলীর কাছে অভিযোগ দেন। সেখানে গিয়ে কৃষক ও অপারেটরের সঙ্গে কথা বলে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়।

ভুক্তভোগী কৃষকেরা বলেন, ২০১২ সালে নলকূপটি চালু হলে আওতাধীন কৃষকের কাছ থেকে আকতারুজ্জামান সেচের পানির জন্য প্রিপেইড কার্ডের অতিরিক্ত টাকা আদায় শুরু করেন। আর সেই টাকা থেকে তিনি মাঝেমধ্যে অন্য দুই অংশীদারকে কিছু টাকা ভাগ দেন।

ভুক্তভোগী কৃষক মো. শাহজাহান আলী বলেন, গভীর নলকূপটির আওতায় তাঁর ১০ বিঘা জমি রয়েছে। কার্ডের বাইরে টাকা দেওয়ার নিয়ম না থাকলেও আকতারুজ্জামানকে প্রতি বিঘায় সেচের জন্য ১ হাজার ২০০ টাকা দিতে হয়। এই টাকা না দিলে তিনি পানি দেন না।

ওই নলকূপের আওতায় চার বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করছেন কৃষক মো. হেলাল। তিনি অতিরিক্ত টাকা না দেওয়ায় অপারেটর খেতে পানি দেননি। এতে জমি ফেটে যায়। পরে তিনি শ্যালো ইঞ্জিন দিয়ে জমিতে সেচ দিয়ে খেত রক্ষা করেছেন।

আরেক ভুক্তভোগী মোকলেসুর রহমান বলেন, ১০ বছর ধরে সেচের পানির জন্য অতিরিক্ত টাকা দিয়ে আসছেন। এখন বিরক্ত হয়ে বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। এরপরও কোনো বিচার পাননি।

এ বিষয়ে মো. আকতারুজ্জামান বলেন, তিনি সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেওয়ার পর দেখেন গ্রামে কোনো গভীর নলকূপ নেই। পরে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে নলকূপটি স্থাপন করেন। কৃষকেরা অংশীদারত্বের টাকা দিতে রাজি না হলে তিনি বিএমডিএকে জানান। সে সময় তাঁরা টাকা দিয়ে দিতে পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘পরে আপনি টাকাটা ধীরে ধীরে তুলে নেবেন।’ সেই পরামর্শেই সেচের পানি বাবদ প্রিপেইড কার্ডের অতিরিক্ত কিছু টাকা তিনি নিচ্ছেন। জোর করে কিছু নিচ্ছেন না।

বিএমডিএ ঠাকুরগাঁও কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, অভিযোগটি যাচাই করে সত্যতা পাওয়া গেছে। নলকূপটি সুষ্ঠুভাবে চালানোর জন্য সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ওই অপারেটরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোটেক

কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তারা এক সঙ্গে কাজ করতে রাজি

ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকেরাফাইল ছবি
ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকেরাফাইল ছবি

ডাচ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে দুই দেশের বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা একসঙ্গে কাজ করতে রাজি হয়েছেন।

গতকাল সোমবার নেদারল্যান্ডসের রাজধানী হেগে অনুষ্ঠিত কৃষি খাতের ব্যবসাবিষয়ক এক সম্মেলনে দুই দেশের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা সহযোগিতার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।

নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম রিয়াজ হামিদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত এগ্রি বিজনেস কনক্লেভে বাংলাদেশের প্রায় ৪০জন উদ্যোক্তা ডাচ কৃষি খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি প্রযুক্তি সহযোগিতা ও ব্যবসায়িক সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। দিনব্যাপী আয়োজিত অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেছে ওয়েগেনিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়।

আলোচনায় বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা প্রযুক্তি কিনতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দিলে নেদারল্যান্ডসের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা প্রযুক্তি সহযোগিতা দিতে রাজি থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।

রিয়াজ হামিদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে ডাচরা প্রস্তুত এবং বাংলাদেশি উদ্যোক্তারাও তাদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। এ ছাড়া ডাচ সরকার ইতিমধ্যে বাংলাদেশের বীজ, পশু খাদ্য, পোলট্রি, হর্টিকালচার ও এ্যাকুয়াকালচার বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম সম্পাদন করেছে, যা ওই দেশের বেসরকারি খাতকে আরও উৎসাহিত করেছে।

আলোচনায় কৃষি সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করতে তৈরি আছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্কয়ার, ইস্পাহানি এগ্রো, একে খান অ্যান্ড কোম্পানি, প্যারাগন গ্রুপ, এসিআই, জেমকন গ্রুপসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তিনি জানান, মঙ্গলবার বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা ডাচ প্রযুক্তির প্রয়োগ সরেজমিনে দেখতে যাবেন।

বাংলাদেশের সঙ্গে নেদারল্যান্ডসের পোল্ট্রিখাতে সহযোগিতার আলোচনা অনেকটা এগিয়েছে উল্লেখ করে মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, দুই দেশের মধ্যে মৎস্য, পশুপালন ও হর্টিকালচারে সহযোগিতার বিপুল সম্ভাবনা আছে।

কনক্লেভ আয়োজনে প্রথমবারের মতো দূতাবাসের সঙ্গে অংশীদার হয়েছে নেদারল্যান্ডসের কৃষি মন্ত্রণালয়, নেদারল্যান্ডস এন্টারপ্রাইজ এজেন্সি, নেদারল্যান্ডস ফুড পার্টনারশিপ, ডাচ-গ্রিন-হাইজডেল্টা, লারিভ ইন্টারন্যাশনাল, স্টান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ।

কৃষিজাত পণ্য রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থানকারী নেদারল্যান্ডসের আয়তন বাংলাদেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের কম। ২০২১-এ কৃষিপণ্য ও খাদ্য রপ্তানি করে নেদারল্যান্ডস ১১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি আয় করেছে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশক: শাইখ সিরাজ
© ২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। দা এগ্রো নিউজ, ফিশ এক্সপার্ট লিমিটেডের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। ৫১/এ/৩ পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থাপথ, ঢাকা -১২০৫
ফোন: ০১৭১২-৭৪২২১৭
ইমেইল: info@agronewstoday.com, theagronewsbd@gmail.com