আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

এগ্রোবিজ

সামনে কী হবে, কে জানে!

দেখতে দেখতে ২০২১ সালের চতুর্থ মাস এসে গেল। সামনে বাঙালির নববর্ষ অর্থাৎ পহেলা বৈশাখ। সম্ভবত একই দিনে পবিত্র রমজানও শুরু হবে। কয়েকদিনের রাজনৈতিক খবর বাদে সব কাগজেই গুরুত্ব দিয়ে ছাপা হচ্ছে দ্রব্যমূল্যের খবর। পবিত্র রমজান মাস সামনে রেখে একশ্রেণির ব্যবসায়ী প্রায় সব ভোগ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি অব্যাহত রেখেছে। এই কীর্তি দেখে আমার পাকিস্তান আমলের (১৯৪৭-৭১) কথা মনে পড়ে গেল। তখন বিশেষ করে স্বাধীনতার পূর্ববর্তীকালে মূল্যবৃদ্ধি ঘটলেই আমরা মিছিল নিয়ে বেরোতাম। স্লোগান একটা: ‘দ্রব্যমূল্য কমাতে হবে, নইলে গদি ছাড়তে হবে।’ সেই আমলে বাজেট হলেই মূল্যবৃদ্ধি ঘটত।

এটি ছিল একটি নিয়মিত ঘটনা। আর প্রতিবাদ মিছিল, এমনকি হরতালও ছিল নিয়মিত ঘটনা। আমরা মনে করতাম, দ্রব্যমূল্য বাড়ানোটা অন্যায় এবং ব্যবসায়ীদের কারসাজি। দেখতে দেখতে মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা এলো। স্বাধীনতার পর আবার বিশ্বে তেলের মূল্য মাত্রাতিরিক্ত হারে বাড়ে। এর প্রভাব পড়ে সব দ্রব্যমূল্যের ওপর। সেটি ১৯৭২-৭৩ সালের দিকের ঘটনা। আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং দৈনিক সংবাদের অর্থনীতির পাতার সম্পাদক। বলা বাহুল্য, আর কোনো কাগজে এ ধরনের পাতা ছিল না। একবার দ্রব্যমূল্যের ওপর একটি স্টোরি করি। শিরোনাম দিই ‘বাজারে আগুন’। এই সংবাদ পাঠ করে বিখ্যাত সাংবাদিক প্রয়াত জহুর হোসেন চৌধুরী আমাকে ফোন করে জিজ্ঞাসা করলেন, মিঞা আগুন তো লাগালেন, জিনিসের দাম আরও বাড়ালে শিরোনাম কী করবেন? আমি লা জওয়াব।

তখন এ কথার তাৎপর্য বুঝিনি। প্রায় পাঁচ দশক যাওয়ার পর আজ বুঝতে পারছি দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ছাড়া কমার কোনো কারণ নেই। আমার বোঝার কাজটি আরও শক্ত হয়েছে সাম্প্রতিক একটি অনভিপ্রেত হরতাল থেকে। এ হরতাল কোনো অর্থনৈতিক দাবির ওপর নয়। নয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে। কোনো রাজনৈতিক দলও এখন দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বিরুদ্ধে আর আগের মতো মিছিল-মিটিং করে না, হরতাল তো দূরের কথা। তার মানে কী? সবাই কি আমার মতো ধরে নিয়েছেন, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাবেই? এর থেকে রেহাই নেই? প্রত্যেক বাজেটের সময়, পবিত্র রমজান ও কোরবানির ঈদের সময়, শীতকালে পিকনিকের সময়, বন্যা ও খরার সময়, সরবরাহ ঘাটতি ও উৎপাদন ঘাটতির সময়, আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির সময়সহ নানা সময়ে নানা অজুহাতে ব্যবসায়ী ভাইয়েরা মূল্যবৃদ্ধি ঘটাবেন। নিয়মিতভাবে তা করবেন তারা। দেখা যাচ্ছে, তারা সরকারের কথাও রাখেন না। পবিত্র ধর্মীয় উৎসবে সাধারণ মুসল্লিদের কথাও চিন্তা করেন না। যদি করতেন তাহলে আর দুদিন বাদেই যখন পবিত্র রমজান মাস, তখন তারা সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষকে একটু স্বস্তি দিতেন। না, তা হওয়ার নয়। বাজারে সব ভোগ্যপণ্যের মূল্য ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। চাল, গম, আটাও বাদ নেই। সরকারের গুদামে ১৩-১৪ লাখ টনের স্থলে ৪-৫ লাখ টন চাল আছে-এ খবরের সুবাদে চালের মূল্য ব্যবসায়ীরা বাড়াচ্ছেন আজ দু-তিন মাস ধরে। চিনি, সয়াবিন তেল, ময়দা, ছোলা, খেজুর, মসলাপাতি, মুরগিসহ এমন কোনো দ্রব্য নেই, যার মূল্য বাড়েনি, বাড়ছে না। অথচ কেউ এখন আর প্রতিবাদ করছে না। মনে হয় সবাই ধরে নিয়েছেন এটাই নিয়তি, এর থেকে রেহাই নেই।

স্বাধীনতা-পূর্ববর্তী সময়ের দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে এখনকার দ্রব্যমূল্যের তুলনা করলে বোঝা যাবে ঘটনাটা কী ঘটছে। চাল বাদে সব জিনিসের দাম ২০০-৩০০-৪০০ গুণ, এমনকি আরও বেশি বেড়েছে। একটি কাগজে দেখলাম, ১৯৭২-৭৩ সালের তুলনায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় বেড়েছে ৩০১ গুণের মতো। এটি হয়তো ঠিক। এবং তা-ও গড়ের হিসাবে। এখানে বড়লোকের হিসাব যেমন আছে, তেমনি আছে বেকার ও নিম্নবিত্তের হিসাবও। এরপরও যদি তা ধরে আলোচনা করি, তাহলে কী দাঁড়াল? আয় যেভাবে বেড়েছে, দ্রব্যমূল্য কি তার তুলনায় বেশি হারে বাড়েনি? অবশ্যই তাই হচ্ছে চিত্র। এখানে প্রশ্নটা হচ্ছে: দ্রব্যমূল্য যখন বাড়বেই, তা যখন কমার কোনো কারণ নেই, তাহলে সেই অনুপাতে আয় বাড়ানো হোক, বেতনভাতা বাড়ানো হোক। অথবা আরেকটি বিকল্প হচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সহনীয় মূল্যে মানুষকে সরবরাহ করা হোক। অন্তত গরিব, মধ্যবিত্ত, বেওয়া-বিধবা, বেকার লোকজনদের মধ্যে যাতে তারা খেয়ে-পরে বাঁচতে পারে। যেমন, প্রতিবেশী ভারতের কথা বলা যায়। সেখানে দুই ধরনের রেশন কার্ড আছে বলে শুনেছি। দারিদ্র্যসীমার ওপরে যারা তাদের এক ধরনের কার্ড এবং দারিদ্র্যসীমার নিচে যারা তারা সারা বছর ১-২ রুপিতে এক কেজি গম/চাল পায় বলে কাগজে দেখেছি। আমাদের এ ধরনের কোনো ব্যবস্থা নেই। আমাদের জরুরি ভিত্তিতে চাল-গম দেওয়ার একটা ব্যবস্থা আছে, তা-ও সারা বছর নয়। আর মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত সেখানে যোগ্যপ্রার্থী নয়। এ ছাড়া সরকার জরুরিকালে খোলাবাজারি নীতিতে জিনিসপত্র সরবরাহ করে একটা নির্দিষ্ট মূল্যে। এটিও সারা বছরের জন্য নয় এবং নিখিল বাংলাদেশের জন্য নয়। এ অবস্থায় বাকি থাকে আয়বৃদ্ধির পথ।

এ মুহূর্তের খবর, করোনাকালীন গত এক বছরে লক্ষ লক্ষ মানুষ বেকার ও কর্মহীন হয়েছে। কলকারখানা বন্ধ হয়েছে। অগণিত মানুষ নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে। শহরের দারিদ্র্য গ্রামের চেয়ে বেশি বেড়েছে। মানুষের হাতে ‘ক্যাশ’ নেই, কাজ নেই। এখন নতুন করে করোনা-১৯-এর দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। বর্তমানের করোনা এক বছর আগের চেয়ে ভয়াবহ। প্রচুর লোক মারা যাচ্ছে। হাসপাতালে কোনো জায়গা নেই, রোগীদের অক্সিজেন নেই; যা-ও অর্থনীতি ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল তাতেও ছেদ পড়েছে। সামনে বাজেট। আর মাত্র দুই মাস বাকি। জুন মাসে বাজেট দেওয়া হবে। অর্থনীতির ‘পারফরমেন্স’ কী হবে, তা এখনই সঠিক বলা যাচ্ছে না। করোনার নতুন আঘাত অর্থনীতি কতটুকু সহ্য করতে পারবে তা অনিশ্চিত। রপ্তানি, আমদানি, রেমিটেন্স ও রাজস্ব ইত্যাদি স্বাভাবিক হয়ে আসছিল; কিন্তু এসবেও অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে। এর অর্থ রোজগারের বাজার আবারও অস্থিতিশীল হওয়ার আশঙ্কা। আমার জানা এক কাঠমিস্ত্রি ডিসেম্বর-জানুয়ারির দিকে ভালোই কাজ পাচ্ছিল। কিন্তু করোনার নতুন আক্রমণের কারণে সে আবার বেকার হয়েছে। হাতে কোনো কাজ নেই। রাজস্ব ঘাটতির কারণে সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিও কাটছাঁট হয়েছে। অথচ এর আকার ঠিক থাকলে প্রচুর মানুষের কর্মসংস্থান হয়।

সরকার নতুন করে ১৮ দফা নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে গত বুধবার। এতে জনজীবন বেশকিছুটা শৃঙ্খলাবদ্ধ হবে। মাস্ক পরতে হবে। ট্রেন অর্ধেক ক্যাপাসিটিতে চলবে, বাসও তাই, কিন্তু বাসের ভাড়া ৬০ শতাংশ বেশি। জরুরি সেবায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান ছাড়া সব সরকারি-বেসরকারি অফিস/প্রতিষ্ঠান/শিল্পকারখানা ৫০ ভাগ জনবল দ্বারা পরিচালনা করতে হবে। হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোয় ধারণক্ষমতার ৫০ ভাগের বেশি মানুষের প্রবেশ বন্ধ করতে হব। সভা-সেমিনার-প্রশিক্ষণ অনলাইনে করতে হবে। পর্যটন, বিনোদন কেন্দ্র/সিনেমা হল/থিয়েটার হলে জনসমাগম সীমিত করতে হবে। উচ্চ সংক্রমণযুক্ত এলাকায় সব ধরনের জনসমাগম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বিয়ে/জন্মদিনের উৎসবে জনসমাগম নিরুৎসাহিত করতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনের ১৮টি দফা পাঠ করলে বোঝা যায়, মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য এসব জরুরি পদক্ষেপ। এ ছাড়া উপায় নেই।

প্রয়োজনবোধে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হতে পারে, যদি পরিস্থিতি বাধ্য করে। এর অর্থ কী? এর অর্থ হচ্ছে, এসব পদক্ষেপের কারণে কাজের পরিমাণ হ্রাস পাবে, কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা সংকুচিত হবে, মানুষের চলাচল হ্রাস পাবে। করোনা থেকে বাঁচার পথ গ্রহণ করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে মানুষের আয় কমে যাবে। এমনিতেই বাজার মন্দা। তাহলে মানুষের ভাতের ব্যবস্থা কী? আয়ের ব্যবস্থা না-থাকলে ভাতের ব্যবস্থাও বিঘ্নিত হবে। এ দুয়ের মাঝখানে দেখা যাচ্ছে একশ্রেণির ব্যবসায়ী চুটিয়ে ব্যবসা করে যাচ্ছেন। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিষয়টি আরও মর্মান্তিক। সারা বিশ্বে যখন হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন মারা যাচ্ছে, লাখ লাখ লোক করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে, যখন মানুষকে বাঁচানোর জন্য টিকার সরবরাহ প্রতুল, তখন বিশ্বের তাবৎ ধনীর সম্পদ ২০২০ সালে বেড়েছে। একই অবস্থা আমাদেরও। আমাদের ব্যবসায়ীরা কোনো সুযোগ ছাড়ছেন না। তারাও সামান্য অজুহাতে দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে যাচ্ছেন। সমস্যাটা তো এখানেই, দ্রব্যমূল্য বাড়ছে অথচ মানুষের আয় নেই, আয় সেভাবে বাড়ছে না, অন্যদিকে ধনীদের-ব্যবসায়ীদের আয় স্ফীতি হচ্ছে। এ অবস্থায় সবার সামনেই প্রশ্ন: জীবন ও জীবিকার। জীবন বাঁচাতে রোগ থেকে যেমন রক্ষা পেতে হবে, তেমনি দরকার জীবিকা/আয় তথা ইনকাম। এর ব্যবস্থা কী? দৃশ্যত কোনো বিকল্প দেখা যাচ্ছে না। এর মধ্যে যদি দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিটা ঠেকানো যেত, তাহলেও কিছটা রক্ষা পাওয়া যেত। না, তা হওয়ার নয়। গত সপ্তাহেরই একটা খবর ব্যক্তিগত পর্যায়ের। পরিচিত এক বুয়াকে ‘ঘর’ ছাড়তে হয়েছে ঘরভাড়া বৃদ্ধির জন্য। তার আয় কোনোভাবেই বাড়েনি।

শাকসবজি, মাছ-মাংস কোনোটারই দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই। আমার বাসা রাস্তার পাশে। মুরগিওয়ালাদের চিৎকারে বাসায় থাকা যেত না। বেশ কিছুদিন ধরে মুরগিওয়ালা নেই, মুরগিও নেই; যা আছে তার দাম অনেক অনেক বেশি। এভাবে প্রতিটি জিনিসের মূল্য বেড়ে চলেছে। অথচ আমাদের ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা জিনিসপত্রের দাম কমবে না। বিপরীতে দেখা যাচ্ছে, মানুষের আয়ও সমানুপাতে বাড়ছে না। নতুন কর্মসংস্থাও সেভাবে সৃষ্টি হচ্ছে না। যাদের চাকরি আছে তাদের চাকরিও যাচ্ছে। সেদিনই খবর পেলাম একটা বড় গ্রুপের হিসাবরক্ষণ বিভাগে ৬০ জন কর্মচারী-কর্মকর্তা ছিল; ৩৫ জনকেই ছাঁটাই করা হয়েছে। এদিকে ৪০০০ কোটি বিনিয়োগ করে ৩০০-৪০০ লোকের কর্মসংস্থান হচ্ছে। তাহলে সার্বিক পরিস্থিতিটা কী দাঁড়াচ্ছে? মানুষ কি তাহলে সরকারের ‘সামাজিক নিরাপত্তা বলায়’ থেকে প্রাপ্ত সাহায্য নিয়েই চলবে? দেখাও যাচ্ছে প্রতিবছর ‘সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের’ অধীন লোকের সংখ্যা বাড়ছে? তাহলে টেকসই উন্নয়নের কী হবে? দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি কি শেষ পর্যন্ত টেকসই উন্নয়নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে?

বিজ্ঞাপন
মন্তব্য করুন

অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন

Leave a Reply

এগ্রোবিজ

যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশে হতে পারে সারের সংকট

সারের সংকট
সারের সংকট
সারের সংকট

চলতি বোরো মৌসুমে সার কিনতে কৃষকদের সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা করে বেশি দিতে হয়েছে। আর সরকারকেও সার বাবদ ভর্তুকি দিতে হচ্ছে বাজেটে বরাদ্দের তিন গুণের বেশি—প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশ এখন মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) সার আমদানি নিয়ে বিপাকে পড়েছে।

ধান, আলু ও সবজি চাষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এমওপি সারের ৬০ শতাংশ আনা হতো রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে। ওই দুই দেশ নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়ায় এখন বাংলাদেশকে এমওপি কিনতে হচ্ছে কানাডা থেকে। বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়া ও আমদানিতে অনিশ্চয়তার কারণে বাংলাদেশে সারের সংকট হতে পারে। ভর্তুকির চাপ সামলাতে বাংলাদেশকে সব ধরনের সারের খুচরা মূল্য বাড়াতে হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিবিষয়ক সংস্থা ইউএসডিএর চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ‘বাংলাদেশে সার সরবরাহ ও ব্যবহারে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের এমওপি সারের ২০ শতাংশ সরবরাহ কমানো হলে সামনের বোরো মৌসুমে ধান, গম ও রবি মৌসুমের অন্যান্য ফসলের উৎপাদন ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কমতে পারে। এতে বাংলাদেশের খাদ্য উৎপাদন ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে।

এমনিতেই এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমাদের ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সারের কারণে নতুন করে যাতে আর সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।

এ এম এম শওকত আলী, সাবেক কৃষিসচিব

তবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, দেশে চলতি বোরো মৌসুমে নতুন করে আর সারের দরকার হবে না। সামনে আলুর মৌসুমে ইউরিয়া, এমওপিসহ অন্যান্য সারের চাহিদা বাড়বে। ওই সময়ের জন্য সার সরবরাহ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ কানাডা ও মধ্যপ্রাচ্যের সার সরবরাহকারী দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে।

জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কানাডা থেকে মোট আট লাখ টন এমওপি সার আমদানির উদ্যোগ নিয়েছি। এ ব্যাপারে ওই দেশের সঙ্গে আমাদের সমঝোতা স্মারক হয়েছে। ফলে এই সার নিয়ে সরকারের কোনো দুশ্চিন্তা নেই। তবে সার বাবদ সরকারের বিপুল পরিমাণে ভর্তুকি বাড়ছে। এই চাপ নিয়েও সরকার ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ওই ভর্তুকি দিয়ে যাবে।’

কমানো হয়েছে চাহিদা

বাংলাদেশে চলতি অর্থবছরে ৬৯ লাখ টন রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয়েছে। এর মধ্যে ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি—এই চার ধরনের সার ব্যবহার হয় ৫৭ লাখ টন। আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের ওই চার ধরনের সারের চাহিদা কমিয়ে ৫৫ লাখ ৫০ হাজার টনে নামিয়ে আনা হয়েছে।

দেশে প্রয়োজনীয় সারের ৮০ শতাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এর মধ্যে এমওপি সারের বড় অংশ আসে রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে।

প্রসঙ্গত, ওই চারটি প্রধান সার কৃষকদের কাছে বিক্রির ক্ষেত্রে সরকার ভর্তুকি দিয়ে থাকে। চলতি অর্থবছরে সরকার প্রাথমিকভাবে সারে ভর্তুকি বাবদ ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে গত ছয় মাসে সারের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। বেশির ভাগ সারের দাম তিন থেকে চার গুণ বেড়ে যাওয়ায় সরকারকে ভর্তুকির পরিমাণ ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা করতে হয়। কিন্তু অর্থবছরের শেষের দিকে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে হিসাব করে দেখা হয়েছে, ভর্তুকির পরিমাণ এবার বেড়ে কমপক্ষে ৩০ হাজার কোটি টাকা গিয়ে দাঁড়াবে।

জিপসাম, জিংক সালফেট ও অ্যামোনিয়াম সালফেট ও ম্যাগনেসিয়াম সালফেট সারে সরকার কোনো ভর্তুকি দেয় না। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কিনে ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কাছে তা বিক্রি করে থাকেন। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষককেও বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে।

সাবেক কৃষিসচিব এ এম এম শওকত আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমনিতেই এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমাদের ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সারের কারণে নতুন করে যাতে আর সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। আর সরকারের অন্যান্য খাতের ভর্তুকি কমিয়ে প্রয়োজনে সারে ভর্তুকি বাড়াতে হবে, যাতে সারের দাম কম থাকে। কারণ, কৃষকের হাতে এখন টাকা কম। বিশ্ববাজার থেকেও খাদ্য আমদানি করা সামনের দিনে আরও কঠিন হতে পারে। ফলে দেশের উৎপাদন ঠিক রাখতে সারের দাম ও জোগান ঠিক রাখা উচিত।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

বিদেশ থেকে খালি হাতে ফিরে ড্রাগন চাষে সাফল্য

বাগানে চাষ করা ড্রাগন হাতে মিরাজুল ইসলাম
বাগানে চাষ করা ড্রাগন হাতে মিরাজুল ইসলাম

মিরাজুল ইসলাম (৩৩)। ১০ বছর সৌদি আরবে ছিলেন। আকামা জটিলতায় খালি হাতে দেশে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। এক বছর বেকার থাকার পর ইউটিউবে পতিত জমিতে ড্রাগন চাষের ভিডিও দেখেন। বাবার কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে নেমে পড়েন ড্রাগন চাষে। দেড় বছরের ব্যবধানে এখন উপজেলার সবচেয়ে বড় ড্রাগন বাগান তাঁর। এ বছর খরচ বাদে আট থেকে নয় লাখ টাকা লাভের আশা করছেন তিনি।

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার ইন্দুরকানি গ্রামের বাসিন্দা মিরাজুল। উপজেলার টগরা গ্রামে দেড় একর জমিতে তিনি ড্রাগনের বাগান তৈরি করেছেন। তাঁর বাগানে এখন সাড়ে তিন হাজার ড্রাগন ফলের গাছ আছে।

মিরাজুল ইসলাম বলেন, শ্রমিক হিসেবে ১০ বছর সৌদিতে কাজ করে ২০১৯ সালে দেশে ফেরেন তিনি। আকামা সমস্যার কারণে শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। কিছু একটা করবেন বলে ভাবছিলেন। একদিন ইউটিউবে ড্রাগন চাষের ভিডিও দেখতে পান। সেই থেকে ড্রাগন চাষে আগ্রহ জন্মে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে দেড় একর পতিত জমি ড্রাগন চাষের উপযোগী করেন। গাজীপুর থেকে ৬০ টাকা দরে ৬০০ চারা নিয়ে আসেন। বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে শুরু করেন চাষাবাদ। পরের বছর জুনে ফল পাওয়া শুরু করেন।

ড্রাগনের বাগান করতে মিরাজুলের খরচ হয়েছিল ছয় থেকে সাত লাখ টাকা। ইতিমধ্যে ফল বিক্রি করে তাঁর খরচ উঠে গেছে। সাধারণত মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত গাছে ফল আসে। বছরে ছয় থেকে সাতবার পাকা ড্রাগন সংগ্রহ করা যায়। এখন পরিপক্ব ও রোগমুক্ত গাছের শাখা কেটে নিজেই চারা তৈরি করেন। ড্রাগন চাষের পাশাপাশি বাগানে চুইঝাল, এলাচ, চায়না লেবুসহ মৌসুমি সবজি চাষ করেন। এ ছাড়া ড্রাগনের চারাও উৎপাদন করে বিক্রি করেন তিনি।

মিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বাগানের বেশির ভাগ গাছে এ বছর ফল ধরেছে। গত মঙ্গলবার বাগান থেকে দেড় টন ফল সংগ্রহ করেছেন। ২৫০ টাকা কেজি দরে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পাইকারদের কাছে বিক্রি করেছেন। স্থানীয় বাজারে ৩০০ টাকা কেজি দরে ড্রাগন বিক্রি হয়। নভেম্বর পর্যন্ত আরও পাঁচ–ছয়বার বাগান থেকে ফল তোলা যাবে। আশা করছেন, খরচ বাদে এবার আট থেকে নয় লাখ টাকা লাভ থাকবে।

মিরাজুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমার বাগান থেকে চারা নিয়ে অনেকে বাড়িতে ও ছাদে ছোট পরিসরে ড্রাগনের বাগান করেছেন। আমি এ পর্যন্ত ৪০ টাকায় দেড় হাজার চারা বিক্রি করেছি।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পূর্ণ বয়সের একটি ড্রাগনের চারা রোপণের পর ২৫ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। এর মৃত্যুঝুঁকি নেই বললেই চলে। তবে কয়েক দিন পরপর সেচ দিতে হয়। বৃষ্টির পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হয়। ড্রাগন ফল চাষে রাসায়নিক সার দিতে হয় না।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইশরাতুন্নেছা বলেন, মিরাজুল ইসলামকে ড্রাগন চাষে নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে আসছে কৃষি বিভাগ। উপজেলায় তাঁর বাগানটি সবচেয়ে বড়। তিনি নিরলস পরিশ্রম করে ছোট থেকে বাগানটি বড় করেছেন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

নাসিরনগরে বন্যায় তলিয়ে গেল কৃষকের বাদামখেত

নাসিরনগরের গোয়ালনগর ইউনিয়নে অতিবৃষ্টি ও আগাম বন্যায় তলিয়ে গেছে কৃষকদের বাদামখেত। আজ মঙ্গলবার ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রামে
নাসিরনগরের গোয়ালনগর ইউনিয়নে অতিবৃষ্টি ও আগাম বন্যায় তলিয়ে গেছে কৃষকদের বাদামখেত। আজ মঙ্গলবার ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রামে

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নে অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে কৃষকের প্রায় ৩০ হেক্টর বাদাম চাষের জমি। কয়েক দিন আগে উজানের পানিতে তাঁদের পাকা ধানের জমি তলিয়ে গিয়েছিল। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষকেরা বাদাম চাষ করেছিলেন। আবারও ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ার বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হলেন চাষিরা।

উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১১ এপ্রিল উপজেলায় শিলাবৃষ্টি এবং ১৪ থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত উজানের পানিতে কৃষকের পাকা ধানের জমি তলিয়ে যায়। কৃষকেরা সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ২০০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করেছিলেন। এর মধ্যে উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নে ৩০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করা হয়। উপজেলায় এবার প্রায় ৫০ হাজার মণ বাদাম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। কিন্তু উজানের পানিতে হঠাৎ বন্যায় সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

গোয়ালনগর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আজহারুল হক বলেন, ‘নাসিরনগর উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাদাম চাষ করা হয় আমাদের ইউনিয়নে। কিন্তু এ বছর আগাম বন্যার কারণে কৃষকেরা তাঁদের ফসল ঘরে তুলতে পারেননি। তাঁদের সব ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।’

ওই এলাকার বাদামচাষি মেরাজ মিয়া বলেন, তিনি ছয় বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করেন। দু-এক দিনের মধ্যে বাদাম তুলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু খেতে গিয়ে দেখেন সব বাদাম পানির নিচে। এখন এই বাদাম তুলে কোনো লাভ নেই। এগুলো গরুও খাবে না।

মো. রজব আলী নামের এক কৃষক বলেন, ‘আমাদের ইউনিয়নের জামারবালি, সোনাতলা ও মাইজখোলা গ্রামে বাদামখেত আছে। গত তিন দিনে পাঁচ-ছয় ফুট পানি বাড়ায় সব তলিয়ে গেছে। এখন বাদাম তুলতে কাজের লোকও পাওয়া যাচ্ছে না।’

কৃষক ফতু মিয়া বলেন, গোয়ালনগর ইউনিয়নের বাদাম চাষের জমিগুলো হঠাৎ পানি আসায় তলিয়ে গেছে। ফসল তলিয়ে তাঁদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেল। কয়েক দিন আগেও পাকা ধান পানির নিচে তলিয়ে গিয়েছিল। কৃষকদের দাবি, গোয়ালনগরে বাদাম চাষের জমি তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকদের প্রায় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আবু সাইদ প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলার কয়েকটি চরাঞ্চলে বাদাম চাষ করা হয়। চরাঞ্চলের উঁচু জমিতে প্রথমে আলু চাষের পর বাদাম চাষ করা হয়। আগাম বন্যার কারণে নিচু এলাকার কিছু বাদামখেত পানিতে তলিয়ে গেছে।

আবু সাইদ আরও বলেন, ১৫-২০ দিন আগে উপজেলার প্রায় সব বাদাম উঠে গেছে। গোয়ালনগর ইউনিয়নে ৩০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করা হয়েছিল। এর মধ্যে এক হেক্টর জমির বাদাম তলিয়ে গেছে। সব মিলিয়ে ৭০ হাজার টাকার মতো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সিলেটে বন্যা হওয়ায় এমনটি হয়েছে বলে তিনি জানান।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

পানি দিতে অতিরিক্ত টাকা

পানি দিতে অতিরিক্ত টাকা
পানি দিতে অতিরিক্ত টাকা

ঠাকুরগাঁওয়ে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) একটি গভীর নলকূপের সেচের পানি সরবরাহে কৃষকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হচ্ছে। ভুক্তভোগী কৃষকদের কাছ থেকে পাওয়া এমন অভিযোগের তদন্ত করে সত্যতা পেয়েছে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষ। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বড় বালিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে।

ভুক্তভোগী কৃষকেরা বলছেন, সেচের পানির জন্য প্রিপেইড কার্ডের বাইরে কোনো টাকা দেওয়ার নিয়ম নেই। কিন্তু বিএমডিএর ১০৮ নম্বর গভীর নলকূপের অপারেটরের দায়িত্বে থাকা বিউটি বেগমের স্বামী আকতারুজ্জামান বোরো ধান চাষের জন্য প্রতি বিঘার জন্য ১ হাজার ২০০ টাকা ও অন্য মৌসুমে ৩০০ টাকা নেন। ১০ বছর ধরে তিনি এভাবেই বাণিজ্য করে আসছেন।

সম্প্রতি রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে বিএমডিএর গভীর নলকূপ থেকে খেতে সেচের পানি পেতে হয়রানির শিকার দুই কৃষকের মৃত্যুর ঘটনা দেশজুড়ে আলোচিত হয়।

ঠাকুরগাঁও জেলায় বিএমডিএর ১ হাজার ৪৩১টি গভীর নলকূপ রয়েছে। এর মধ্যে সচল ১ হাজার ৪১৮টি। সেচের আওতায় ৭৬ হাজার ৫০০ পরিবারের জমি রয়েছে ৫৩ হাজার ৫০০ হেক্টর।

* সেচের পানির জন্য প্রিপেইড কার্ডের বাইরে কোনো টাকা দেওয়ার নিয়ম নেই। * সেচের আওতায় ৭৬ হাজার ৫০০ পরিবারের জমি আছে। * কৃষকদের নলকূপের আবেদন পেলে যাচাই করে স্কিম তৈরি করা হয়।

বিএমডিএ সূত্রে জানা গেছে, কৃষকদের নলকূপের আবেদন পেলে যাচাই করে স্কিম তৈরি করা হয়। এরপর সমবায়ের ভিত্তিতে অংশীদারি ফি বাবদ এক লাখ টাকা জমা দিতে হয়। এই নলকূপ পরিচালনার জন্য বিএমডিএ একজন অপারেটর নিয়োগ দেন। প্রিপেইড মিটারিং পদ্ধতিতে কৃষকের নিজ নামে প্রিপেইড কার্ড থাকতে হয়। সেই কার্ড থেকে প্রতি ঘণ্টায় সেচের পানির জন্য ন্যূনতম ১১০ টাকা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কেটে নেওয়া হয়। এর বাইরে অতিরিক্ত কোনো টাকা দেওয়ার নিয়ম নেই।

বড় বালিয়া এলাকার কৃষকেরা জানান, ২০১১ সালের দিকে বড় বালিয়া মণ্ডলপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. আকতারুজ্জামান এলাকায় গভীর নলকূপ স্থাপনের উদ্যোগ নেন। ফি হিসেবে এক লাখ জমা দেওয়ার নিয়ম থাকলেও কোনো কৃষক সেটা দিতে এগিয়ে আসেননি। ফলে আকতারুজ্জামান, দাউদুল ইসলাম ও জোবায়দুর রহমান মিলে অংশীদারি ফি দেন। আকতারুজ্জামানের ৮০ শতাংশ টাকা থাকায় গভীর নলকূপের নিয়ন্ত্রণ তিনিই পান। অপারেটর হিসেবে নিয়োগ পান তাঁর স্ত্রী বিউটি বেগম। যদিও কৃষকেরা আকতারুজ্জামানকেই অপারেটর হিসেবে জানতেন।

সেচের পানি পেতে হয়রানির শিকার হয়ে সদর উপজেলার বড় বালিয়া এলাকার ৫০ জন কৃষক গত ১৭ এপ্রিল বিএমডিএ সহকারী প্রকৌশলীর কাছে অভিযোগ দেন। সেখানে গিয়ে কৃষক ও অপারেটরের সঙ্গে কথা বলে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়।

ভুক্তভোগী কৃষকেরা বলেন, ২০১২ সালে নলকূপটি চালু হলে আওতাধীন কৃষকের কাছ থেকে আকতারুজ্জামান সেচের পানির জন্য প্রিপেইড কার্ডের অতিরিক্ত টাকা আদায় শুরু করেন। আর সেই টাকা থেকে তিনি মাঝেমধ্যে অন্য দুই অংশীদারকে কিছু টাকা ভাগ দেন।

ভুক্তভোগী কৃষক মো. শাহজাহান আলী বলেন, গভীর নলকূপটির আওতায় তাঁর ১০ বিঘা জমি রয়েছে। কার্ডের বাইরে টাকা দেওয়ার নিয়ম না থাকলেও আকতারুজ্জামানকে প্রতি বিঘায় সেচের জন্য ১ হাজার ২০০ টাকা দিতে হয়। এই টাকা না দিলে তিনি পানি দেন না।

ওই নলকূপের আওতায় চার বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করছেন কৃষক মো. হেলাল। তিনি অতিরিক্ত টাকা না দেওয়ায় অপারেটর খেতে পানি দেননি। এতে জমি ফেটে যায়। পরে তিনি শ্যালো ইঞ্জিন দিয়ে জমিতে সেচ দিয়ে খেত রক্ষা করেছেন।

আরেক ভুক্তভোগী মোকলেসুর রহমান বলেন, ১০ বছর ধরে সেচের পানির জন্য অতিরিক্ত টাকা দিয়ে আসছেন। এখন বিরক্ত হয়ে বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। এরপরও কোনো বিচার পাননি।

এ বিষয়ে মো. আকতারুজ্জামান বলেন, তিনি সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেওয়ার পর দেখেন গ্রামে কোনো গভীর নলকূপ নেই। পরে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে নলকূপটি স্থাপন করেন। কৃষকেরা অংশীদারত্বের টাকা দিতে রাজি না হলে তিনি বিএমডিএকে জানান। সে সময় তাঁরা টাকা দিয়ে দিতে পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘পরে আপনি টাকাটা ধীরে ধীরে তুলে নেবেন।’ সেই পরামর্শেই সেচের পানি বাবদ প্রিপেইড কার্ডের অতিরিক্ত কিছু টাকা তিনি নিচ্ছেন। জোর করে কিছু নিচ্ছেন না।

বিএমডিএ ঠাকুরগাঁও কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, অভিযোগটি যাচাই করে সত্যতা পাওয়া গেছে। নলকূপটি সুষ্ঠুভাবে চালানোর জন্য সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ওই অপারেটরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোটেক

কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তারা এক সঙ্গে কাজ করতে রাজি

ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকেরাফাইল ছবি
ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকেরাফাইল ছবি

ডাচ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে দুই দেশের বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা একসঙ্গে কাজ করতে রাজি হয়েছেন।

গতকাল সোমবার নেদারল্যান্ডসের রাজধানী হেগে অনুষ্ঠিত কৃষি খাতের ব্যবসাবিষয়ক এক সম্মেলনে দুই দেশের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা সহযোগিতার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।

নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম রিয়াজ হামিদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত এগ্রি বিজনেস কনক্লেভে বাংলাদেশের প্রায় ৪০জন উদ্যোক্তা ডাচ কৃষি খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি প্রযুক্তি সহযোগিতা ও ব্যবসায়িক সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। দিনব্যাপী আয়োজিত অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেছে ওয়েগেনিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়।

আলোচনায় বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা প্রযুক্তি কিনতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দিলে নেদারল্যান্ডসের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা প্রযুক্তি সহযোগিতা দিতে রাজি থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।

রিয়াজ হামিদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে ডাচরা প্রস্তুত এবং বাংলাদেশি উদ্যোক্তারাও তাদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। এ ছাড়া ডাচ সরকার ইতিমধ্যে বাংলাদেশের বীজ, পশু খাদ্য, পোলট্রি, হর্টিকালচার ও এ্যাকুয়াকালচার বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম সম্পাদন করেছে, যা ওই দেশের বেসরকারি খাতকে আরও উৎসাহিত করেছে।

আলোচনায় কৃষি সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করতে তৈরি আছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্কয়ার, ইস্পাহানি এগ্রো, একে খান অ্যান্ড কোম্পানি, প্যারাগন গ্রুপ, এসিআই, জেমকন গ্রুপসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তিনি জানান, মঙ্গলবার বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা ডাচ প্রযুক্তির প্রয়োগ সরেজমিনে দেখতে যাবেন।

বাংলাদেশের সঙ্গে নেদারল্যান্ডসের পোল্ট্রিখাতে সহযোগিতার আলোচনা অনেকটা এগিয়েছে উল্লেখ করে মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, দুই দেশের মধ্যে মৎস্য, পশুপালন ও হর্টিকালচারে সহযোগিতার বিপুল সম্ভাবনা আছে।

কনক্লেভ আয়োজনে প্রথমবারের মতো দূতাবাসের সঙ্গে অংশীদার হয়েছে নেদারল্যান্ডসের কৃষি মন্ত্রণালয়, নেদারল্যান্ডস এন্টারপ্রাইজ এজেন্সি, নেদারল্যান্ডস ফুড পার্টনারশিপ, ডাচ-গ্রিন-হাইজডেল্টা, লারিভ ইন্টারন্যাশনাল, স্টান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ।

কৃষিজাত পণ্য রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থানকারী নেদারল্যান্ডসের আয়তন বাংলাদেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের কম। ২০২১-এ কৃষিপণ্য ও খাদ্য রপ্তানি করে নেদারল্যান্ডস ১১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি আয় করেছে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশক: শাইখ সিরাজ
© ২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। দা এগ্রো নিউজ, ফিশ এক্সপার্ট লিমিটেডের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। ৫১/এ/৩ পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থাপথ, ঢাকা -১২০৫
ফোন: ০১৭১২-৭৪২২১৭
ইমেইল: info@agronewstoday.com, theagronewsbd@gmail.com