আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

পরিবেশ

সাগরের বড় মাছ–প্রাণীরা মোহনায়, গবেষণার তাগিদ

বঙ্গোপসাগর থেকে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ও প্রাণীর সাগর মোহনায় ছুটে আসার প্রবণতা সাম্প্রতিক সময়ে বেড়েছে। এসব মাছ ও প্রাণী জেলেদের জালে আটকাও পড়ছে। এগুলোর মধ্যে আছে বিপন্ন প্রজাতির ডলফিন, সেইলফিশ ও স্টিং রে প্রজাতির শাপলাপাতা মাছ।

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কুয়াকাটা সৈকতে ১৫টি মৃত ডলফিন ভেসে এসেছে। গত ২৮ আগস্ট কক্সবাজারের হিমছড়ি সৈকতে আড়াই টন ওজনের একটি মৃত নীল তিমি ভেসে আসে। এ ছাড়া কক্সবাজার সৈকতে গত বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ১৬টি ডলফিন ও ২টি তিমির মৃতদেহ ভেসে আসে। ১৩ সেপ্টেম্বর উত্তরাঞ্চলের তিস্তা নদীতে পাওয়া গেছে মৃত একটি ডলফিন। গত আগস্টে বরগুনার পাথরঘাটা বিএফডিসি মৎস্য অবতরণকেন্দ্রে ৩০০ থেকে ৩২০টি সেইলফিশ এসেছে। সেইলফিশগুলোর দৈর্ঘ্য ছিল ৫ থেকে ৯ ফুট। এ ছাড়া চলতি বছর পদ্মা, ঝুনাহারসহ উপকূলের নদ-নদীতে একাধিক স্টিং রে জেলেদের জালে আটকা পড়েছে।

ইরাবতী ডলফিনের এত মৃত্যু খুবই ভয়াবহ বার্তা। আমরা মাঠপর্যায়ে অনুসন্ধানে দেখেছি, অনেক ডলফিন জালে আটকা পড়ে মারা পড়েছে। কিন্তু এখন সেটা আশঙ্কার পর্যায়ে। এ ক্ষেত্রে সাগরে বাস্তুতন্ত্রে বড় ধরনের কোনো পরিবর্তনের লক্ষণ ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে। এ জন্য ব্যাপকভিত্তিক গবেষণা দরকার। ইতিমধ্যে আমরা অনেক দেরি করে ফেলেছি। এ জন্য এখনই সরকারের আন্তরিক উদ্যোগ নেওয়া উচিত।

ডলফিন গবেষক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মো. আবদুল আজিজ

মৎস্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাগরের বাসিন্দাদের যেমন মাছ ও অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণী মোহনায় চলে আসার বিষয়টি অস্বাভাবিক। আগে এ রকম দু-একটি ঘটনার নজির থাকলেও এত বেশি কখনো হয়নি। গবেষকেরা বলছেন, সাগরে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা, মোহনাগুলোতে মাছ সংরক্ষণের নানামুখী উদ্যোগের ফলে উপকূলীয় অঞ্চলে পরিবেশের যে উন্নতি হয়েছে, তাতে ছোট মাছ ও অন্যান্য খাবারের পরিমাণ বেড়েছে। ফলে সাগরের বড় মাছ কিংবা অন্য প্রাণী উপকূলে ছুটে আসতে পারে। তবে সেইলফিশ স্বাদুপানির উপকূলে চলে আসার বিষয়টি আগে কখনো ঘটেনি। এটা সাগরের পরিবেশে বড় ধরনের কোনো পরিবর্তনের আভাস দিচ্ছে কি না, তা অনুসন্ধান ও গবেষণা করা দরকার।বিজ্ঞাপন

কুয়াকাটা সৈকতে ভেসে আসা মৃত ডলফিন। ৯ সেপ্টেম্বর
কুয়াকাটা সৈকতে ভেসে আসা মৃত ডলফিন। ৯ সেপ্টেম্বর

ডলফিনের মৃত্যু বাড়ছে

কুয়াকাটা ডলফিন রক্ষা কমিটির তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কুয়াকাটা সৈকতে ১৫টি মৃত ডলফিন ভেসে এসেছে। এগুলোর মধ্যে আগস্টেই এসেছে ৯টি মৃত ডলফিন। সেপ্টেম্বরের ৯ দিনে চারটি মৃত ডলফিন ভেসে আসে। কক্সবাজার সৈকতে গত বছরের জানুয়ারি থেকে জুন—এই পাঁচ মাসে ১৬টি ডলফিন ও ২টি তিমির মৃতদেহ ভেসে আসে। কলাপাড়া উপজেলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা জানান, গত বছরও কুয়াকাটা–সংলগ্ন উপকূলে সাত–আটটি মৃত ডলফিন ভেসে এসেছিল।

ডেড জোন অঞ্চলে অক্সিজেন কমে যাওয়ায় ছোট ছোট জলজ প্রাণী যেমন ছোট মাছ, চিংড়ি, শামুক, কাঁকড়াসহ অন্যান্য কাঁকড়া প্রজাতি বেড়ে উঠতে সমস্যা হবে। এদের প্রজননের জন্য এরা অন্যত্র চলে যাবে। একসময় এখানে আর এ ধরনের প্রাণীর অস্তিত্ব থাকবে না।

সম্প্রতি কুয়াকাটায় বেশ কয়েকটি মৃত ডলফিন পাওয়ার পর ইকোফিশের গবেষক মীর মোহাম্মদ আলী সেখানে এগুলোর মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধান শুরু করেন। এসব ডলফিনের মৃতদেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছেন তিনি। মীর মোহাম্মদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘সুন্দরবন–সংলগ্ন সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড থেকে সোনারচর পর্যন্ত ইরাবতী ডলফিনের বিরাট দল ঘোরাফেরা করে। এদের মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে অনুসন্ধানে আমরা কাজ শুরু করেছি। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, তিনটি কারণে ডলফিন মারা যাচ্ছে। এগুলো হচ্ছে, সাগরের ১২০ ফুট গভীরতায়ও ট্রলিংয়ের মাধ্যমে মাছ শিকার, জেলেদের জালে আটকা পড়ার পর পিটিয়ে হত্যা এবং দূষণ।’বিজ্ঞাপন

ইরাবতী ডলফিনের আবাস বাংলাদেশ

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরাবতী ডলফিনের প্রজাতি বিশ্ব থেকে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে টিকে আছে মাত্র সাত হাজারটি। যেগুলোর প্রায় ৫ হাজার ৮০০টিই বাংলাদেশে। বিশ্বজুড়ে বিপন্ন হয়ে পড়া ইরাবতী ডলফিনের সবচেয়ে বড় আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। বিশ্বের কোথাও ২০০টির বেশি এই প্রজাতির ডলফিন একসঙ্গে দেখা যায় না। বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। এর কারণ, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার নদীগুলোতে রয়েছে নোনা ও মিঠাপানির অনুকূল ভারসাম্য।

বন বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, ২০১২ সালের ২৯ জানুয়ারি এক প্রজ্ঞাপনে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সুন্দরবনের তিনটি নদীর ৪৭ কিলোমিটার নৌপথকে ডলফিনের অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করে। এরপর ২০১৪ সালের ২৭ অক্টোবর, সোয়াচ-অফ-নো-গ্রাউন্ডের উত্তর প্রান্ত ঘিরে ১ হাজার ৭৩৮ বর্গকিলোমিটার এলাকাকে ডলফিন, তিমি, কচ্ছপ, হাঙর ও শাপলাপাতা মাছ সংরক্ষণের জন্য সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা (এমপিএ) ঘোষণা করে।

ডলফিন গবেষক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মো. আবদুল আজিজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইরাবতী ডলফিনের এত মৃত্যু খুবই ভয়াবহ বার্তা। আমরা মাঠপর্যায়ে অনুসন্ধানে দেখেছি, অনেক ডলফিন জালে আটকা পড়ে মারা পড়েছে। কিন্তু এখন সেটা আশঙ্কার পর্যায়ে। এ ক্ষেত্রে সাগরে বাস্তুতন্ত্রে বড় ধরনের কোনো পরিবর্তনের লক্ষণ ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে। এ জন্য ব্যাপকভিত্তিক গবেষণা দরকার। ইতিমধ্যে আমরা অনেক দেরি করে ফেলেছি। এ জন্য এখনই সরকারের আন্তরিক উদ্যোগ নেওয়া উচিত।’

পাথরঘাটা বিএফডিসি মৎস্য অবতরণকেন্দ্রে আসা সেইলফিশ। 
সাম্প্রতিক ছবি
পাথরঘাটা বিএফডিসি মৎস্য অবতরণকেন্দ্রে আসা সেইলফিশ। সাম্প্রতিক ছবি

আটকা পড়ছে প্রচুর সেইলফিশ

বঙ্গোপসাগরে এক মাসের বেশি সময় ধরে ঝাঁকে ঝাঁকে সেইলফিশ ধরা পড়ছে। আন্তর্জাতিক মৎস্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ডফিশের ইকোফিশ—বাংলাদেশ প্রকল্প-২–এর গবেষকেরা তাঁদের পর্যবেক্ষণে জানিয়েছেন, গত আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে পদ্মা, মেঘনা, যমুনাসহ বেশ কয়েকটি নদীতে বিলুপ্তপ্রায় সেইলফিশ ধরা পড়তে দেখা গেছে। ১৫ থেকে ২৬ আগস্টের মধ্যে কক্সবাজার বিএফডিসি ঘাটে ১২ হাজার ৪৪১ কেজি মাছ বিক্রি করা হয়েছে। গড়ে প্রতিদিন ১০ থেকে ৪০টি সেইলফিশ জেলেরা এ ঘাটে নিয়ে আসেন এবং এর ওজন সর্বনিম্ন ১০ থেকে ৮০ কেজি পর্যন্ত।

ইকোফিশের এই পর্যবেক্ষণের সত্যতা পাওয়া যায় উপকূলের অন্যান্য মৎস্যবন্দরেও। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মৎস্যবন্দর পাথরঘাটার বিএফডিসি মৎস্য অবতরণকেন্দ্রে গত আগস্টের শুরু থেকে প্রতিদিন গড়ে ১৫টি করে সেইলফিশ আসছে। গত ২৬ আগস্ট পটুয়াখালীর মহিপুরের জেলেদের জালে ধরা পড়ে ৮টি সেইলফিশ।

পাথরঘাটার সমুদ্রগামী একটি ট্রলারের মাঝি সিদ্দিক জমাদ্দারের বয়স ৫৫ বছর। তিনি ৪০ বছর ধরে সাগরে মাছ ধরেন। তিনি জানান, আগে সাগরে এই মাছ এক–দুটি ধরা পড়ত। কিন্তু এক মাসের বেশি সময় ইলিশ না পেলেও জাল ফেললেই বড় বড় সেইলফিশ পাচ্ছেন।

আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) ২০০০ সালে সেইলফিশকে লাল তালিকাভুক্ত করে। মূলত তীর থেকে সমুদ্রের ৫০ কিলোমিটার আয়তনের মধ্যেই এদের বাস। এরা খুব গভীর জলের মাছ না হলেও ৯১৫ মিটার পানির নিচ পর্যন্ত চলাচল করে। মাঝে মাঝে তীরের কাছাকাছি এলেও কখনো এরা নদীতে প্রবেশ করে না। ঘণ্টায় ১১০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার গতিতে ছুটতে পারে সেইলফিশ। দ্রুতগতির মাছ সেইলফিশ এ দেশে ‘পাখি মাছ’ নামে বেশি পরিচিত। মাছটির পেছনে থাকা বিশালাকার পাখনাই স্থানীয়দের ‘পাখি মাছ’ নামকরণে উৎসাহিত করেছে বলে মনে করা হয়।

বরিশালের ঝুনাহার নদে ধরা পড়েছে বিশাল আকৃতির শাপলাপাতা মাছ। ৩১ আগস্ট দুপুরে
বরিশালের ঝুনাহার নদে ধরা পড়েছে বিশাল আকৃতির শাপলাপাতা মাছ। ৩১ আগস্ট দুপুরে

উজানে আসছে শাপলাপাতা মাছ

সেইলফিশের মতো সাগরের আরেক বাসিন্দা স্টিং রে প্রজাতির মাছ, যা স্থানীয়ভারে শাপলাপাতা মাছ হিসেবে পরিচিত। ৩০ আগস্ট রাতে বরিশালের ঝুনাহার নদীতে ইলিশের জালে পেঁচিয়ে ধরা পড়ে ১৩ মণের বেশি ওজনের একটি শাপলাপাতা মাছ। ২৯ আগস্ট দৌলতদিয়ায় পদ্মা নদীতে জেলের জালে ধরা পড়ে ১২ মণ ওজনের আরও একটি শাপলাপাতা মাছ।

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকুয়াকালচার বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও ইকোফিশের গবেষক মীর মোহাম্মদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, বাঘ যেমন খাদ্যসংকট দেখা দিলে বন ছেড়ে লোকালয়ে আসে, তেমনি সাগরের প্রাণীরা বাস্তুতন্ত্রের সংকট হলে একইভাবে স্থানান্তরিত হতে পারে। সেইলফিশ, স্টিং রে—এরা সাগরের বাসিন্দা। সাগরে বাস্তুতন্ত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন এবং মানবসৃষ্ট উৎপীড়ন বেড়ে যাওয়ার কারণে এটা হতে পারে। আবার মোহনায় খাবারের সংস্থান বেড়ে যাওয়ার কারণেও এরা উপকূলে ছুটে আসতে পারে। এই গবেষক আরও বলেন, আগে কালেভাদ্রে দু–একটি এমন প্রজাতির মাছ নদীতে পাওয়া গেলে সেটাকে দুর্ঘটনাবশত গতিপথ পরিবর্তন মনে করা হতো। কিন্তু এখন সেটা বলার সুযোগ কমছে। এ জন্যই এ বিষয়ে গভীর অনুসন্ধান দরকার।

চট্টগ্রাম মেরিন ফিশারিজের পরিচালক শরিফ উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, সেইলফিশ অতি লবণাক্ত পানির মাছ। এটা কোনোক্রমেই মিঠাপানির নদীতে আসতে পারে না। হয়তো নদীতে আসার খবরটি অতি উৎসাহী কোনো জেলে দিয়েছে। তবে সাগরে ঝাঁকে ঝাঁকে সেইল ধরা পড়ার বিষয়টি অস্বাভাবিক। এটা বাস্তুতন্ত্রে কোনো বড় পরিবর্তনের কারণেই হচ্ছে কি না, সেটা অনুসন্ধানের ব্যাপার।বিজ্ঞাপন

বঙ্গোপসাগরে ‘ডেড জোন’

যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান-এ ২০১৭ সালের ৩১ জুন এ–বিষয়ক একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। ‘বে অব বেঙ্গল ডিপলেটেড ফিশ স্টকস অ্যান্ড হাগ ডেড জোন সিগন্যাল টিপিং পয়েন্ট’ শিরোনামে নিবন্ধটি লিখেছিলেন দুই জলবায়ু বিশেষজ্ঞ অমিতাভ ঘোষ ও অ্যারন সাভিও লোবো।

তাঁরা ওই নিবন্ধে উল্লেখ করেন, ২০১৭ সালের মে মাসে বিজ্ঞানীদের একটি বহুজাতিক দল একটি উদ্বেগজনক তথ্য জানিয়েছে। তা হচ্ছে, বঙ্গোপসাগরে খুব বড় একটি অক্সিজেনশূন্য এলাকার সন্ধান পেয়েছে তারা। অঞ্চলটি ৬০ হাজার বর্গকিলোমিটারজুড়ে বিস্তৃত। এই ‘ডেড জোন’ হবে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম ‘ডেড জোন’। এখানে অক্সিজেন কমে গিয়ে সালফার ও ফসফরাসের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় কিছু কিছু ফাইটোপ্ল্যাংকটন এবং জুয়োপ্ল্যাংকটনের এই পরিবেশে হয়তো বেঁচে থাকতে পারবে। কিন্তু ধীরে ধীরে অক্সিজেনের
মাত্রা আরও কমে গেলে পানিতে নাইট্রোজেনের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাবে। ফলে খাদ্যশৃঙ্খল পুরোপুরি ভেঙে যাবে।

ডেড জোন অঞ্চলে অক্সিজেন কমে যাওয়ায় ছোট ছোট জলজ প্রাণী যেমন ছোট মাছ, চিংড়ি, শামুক, কাঁকড়াসহ অন্যান্য কাঁকড়া প্রজাতি বেড়ে উঠতে সমস্যা হবে। এদের প্রজননের জন্য এরা অন্যত্র চলে যাবে। একসময় এখানে আর এ ধরনের প্রাণীর অস্তিত্ব থাকবে না।

সমুদ্রের ছোট ছোট মাছ, চিংড়ি ও জলজ প্রাণী খেয়ে বড় মাছেরা বেঁচে থাকে। খাদ্যসংকটের কারণে বড় মাছগুলো খাবারের জন্য দিগ্বিদিক ছুটে চলবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ডাঙার দিকে কিংবা সাগরের মোহনার নদীগুলোতে অধিক বড় আকৃতির সামুদ্রিক মাছ ধরা পড়বে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্লাষ্টিক ও অন্যান্য অপচনশীল বর্জ্যের দূষণ বা বর্ষার পরিবর্তন, উষ্ণায়নসহ নানা কারণে এই ডেড জোনের সৃষ্টি
হতে পারে।

সাগরের বড় মাছ ও প্রাণীরা মোহনায় চলে আসার বিষয়টি তারই প্রভাব কি না, সেটা অনুসন্ধানের সময় এসেছে। কারণ, সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র সুরক্ষা করতে না পারলে দেশের মৎস্য সম্পদের সম্প্রসারণ, সুরক্ষা, বৃদ্ধি থমকে যেতে পারে।

বিজ্ঞাপন
মন্তব্য করুন

অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন

Leave a Reply

পরিবেশ

ছাদ বাগানের জন্য কয়েকটি টিপস

ছাদ বাগানীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। টবে, ড্রামে গাছ লাগানো হয়। কেউ ফল, কেউবা সবজির গাছ লাগান। কেউ সফল হন। কেউ সফল হন না। ছোট ছোট কিছু ভুল বাগানীরা করে থাকেন। সে কারণে যত্ন নিলেও ফল আসে না। এখানে ছাদ বাগানীদের জন্য কিছু টিপস দেয়া হলো, যা মানলে সফলতা পাওয়া সহজ হতে পারে।

প্রথমেই মনে রাখতে হবে, টবে বা ড্রামে গাছ লাগালে তাকে খাবার দিতে হবে। প্রকৃতিতে বিদ্যমান গাছের মতো সে খাবার সংগ্রহ করতে পারে না। রোগ-বালাই হলো কিনা সেটাও বুঝে ব্যবস্থা নিতে হবে। ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে।

১. মাটির সাথে অবশ্যই কিছু কোকোপিট মেশাবেন। গাছের গোড়া স্যাতস্যাতে হতে দিবেন না। স্যাতস্যাতে হলে অসংখ্য রোগ হবে। মাটি ভেজা থাকবে তবে স্যাতস্যাতে না। কেকোপিট মেশালে পানি কম দিলেও হবে। কোকোপিট (নারকেলের ছোবলার গুড়া) পানি ধরে রাখে। অতি বৃষ্টি হলে গোড়ায় পানি জমতে দেয় না। হালকা হওয়ায় ছাদে ওজনের চাপ পড়ে না। এছাড়া কোকোপিটে কিছু পুষ্টি উপাদান আছে। যা গাছের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। কোকোপিটে চারা দ্রুত গজায়, বড় হয়। মাটির চেয়ে কোকোপিটে চারা ভালো হয়।

২. গাছের জন্য বিরিয়ানি হলো সরিষার খৈল-পচা পানি। মাটির হাড়িতে খৈল পচাতে হবে। কমপক্ষে ৫ দিন। ৭ দিন কিংবা বা ১৫ দিন হলে উত্তম। অল্প পানিতে পচিয়ে তার সাথে আরো পানি মিশিয়ে দিতে হবে। এটি গাছের জন্য অত্যন্ত উপকারী। একটু গন্ধ হয়, তাই অল্প একটু গুড় দিতে পারেন। ছাদে হাড়িতে পচালে বাসায় গন্ধ আসবে না। বৃষ্টির সময় খৈল-পচা পানি দেবেন না। পুকুরের নিচে থাকা পাক কাদা গাছের জন্য খুব উপকারী।

৩. আমরা জানি, মাটিতে অসংখ্য ক্ষতিকর ছত্রাক থাকে। যা গাছকে মেরে ফেলার জন্য যথেস্ট। তাই মাটি রেডি করার সময় কিছুটা বায়োডামা সলিট দিবেন। এটি উপকারী ছত্রাক। মাটিতে ক্ষতিকারক উপাদানগুলো মেরে ফেলে। আবার জৈব সারের কাজও করে। গাছের জন্য মাটি হবে ঝুরঝুরে, হালকা।

৪. যাই লাগান না কেন, ভালো জাতের বীজ কিনা নিশ্চিত হয়ে নেবেন। ভালো বীজে ভালো ফসল হবে। নতুবা যতই যত্ন নেন না কেন, সব পরিশ্রম বেলাশেষে জলে যাবে। বীজ থেকে নিজে চারা করা উত্তম। কারণ বাজার থেকে যে চারা কিনবেন সেটার জাত ভালো হবে সে নিশ্চয়তা কোথায়? ছত্রাকনাশক দিয়ে বীজ শোধন করে নেয়া উত্তম। পদ্ধতি হলো- ছত্রাকনাশক দেয়া পানিতে কিছুটা সময় বীজ ভিজিয়ে রাখতে হবে। ম্যানসার, মেটারিল দুটি ছত্রাকনাশক।

৫. গাছ বেশি তো ফলন বেশি- এটি ভুল ধারণা। অল্প জায়গায় বেশি গাছ লাগানো যাবে না। গাছ পাতলা করে লাগাতে হবে। বেশি লাগালে গাছ প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাবে না। একটি ফলের ক্রেটে মাত্র দুটি গাছ। একটি টবে একটি গাছ। ক্রেট বা টবে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।

৬. ছাদে মাচা দেয়া সমস্যা। কারণ ঘুঁটি থাকে না। এ জন্য ফলের ক্রেটের চারপাশে লাঠি বেঁধে সহজে মাচা দেয়া যায়। লতাপাতা জাতীয় গাছ লাগানোর পাত্র একটু গভীর হলে উত্তম। গাছের জন্য সবচেয়ে বেশি ভালো জৈব সার হলো পাতা-পচা সার, তারপর ভার্মি কম্পোস্ট, তারপর গোবর সার। পাতা-পচা সার সহজলভ্য নয়। দাম বেশি। কিন্তু ভার্মি কম্পোস্ট সহজলভ্য। মাটির সঙ্গে মিনিমাম ৪০% জৈব সার দেয়া উত্তম।
৭. নিম কীটনাশককে ক্ষতিকারক পোকা-মাকড় খুব অপছন্দ করে। এটি দিলে তারা বিরক্ত বোধ করে। গাছে বাসা বাঁধতে পারে না। প্রতি সাত দিনে একবার সব গাছের পাতায় নিম কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। মাসে একবার ইপসম সল্ট স্প্রে করে দেয়া উত্তম। একইভাবে মাসে একবার পানির সঙ্গে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড মিশিয়ে স্প্রে করা ভালো।

৮. ডাটা, পুইশাক, লালশাক, ধনেপাতা এসব লাগাতে পারেন। মাত্র ২৫ দিনে খেতে পারবেন। লালশাক লাগালে নেট দিয়ে ঘিরে দেবেন। শাকপাতা লাগালে দ্রুত আউটপুট পাবেন। যা আপনাকে প্রেরণা দেবে। পুইশাক গাছের পাতায় দাগ হলে পাতা কেটে দিন। অথবা ছত্রাকনাশক স্প্রে করেন। অথবা গাছ উঠিয়ে আবার লাগান। ইউরিয়া সার দিলে পুইশাক দ্রুত বাড়বে। শশা গাছের বৃদ্বির জন্য ডিএপি সার দিলে ভালো হবে। শশা গাছে ছাড়া ছাড়া ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হয়। খুব রোদ, গাছের গোড়ায় মালচিং করে দিয়ে উত্তম ফল মিলবে। মালচিং হলো গাছের গোড়ায় বিশেষ পলিথিন কিংবা শুকনো পাতা, খড় দিয়ে ঢেকে দেয়া।

৯. ফুল আসার পরে প্রানোফিক্স অথবা মিরাকুরান গাছের পাতায় শেষ বিকালে স্প্রে করবেন। বাসায় দুইটি গ্রুপের ছত্রাকনাশক রাখা ভালো। যেমন- ম্যানসার, মেটারিল। ১৫ দিনে একবার স্প্রে করবেন। এগরোমিন্ড গোল্ড অনুখাদ্য বা অন্য কোনো অনুখাদ্য বাসায় রাখতে হবে। মাসে কমপক্ষে একবার স্প্রে করবেন। অতিরিক্ত গরম, বৃষ্টি, খাদ্যের অভাব, গাছ রোগাক্রান্ত, আবহাওয়া দ্রুত আপডাউন করা ইত্যাদি কারণে ফুল ঝরে পড়তে পারে। আবার পরাগায়ন না হলে ঝরে পড়তে পারে। এ জন্য হাতের মাধ্যমে পরাগায়ন করতে হবে। পুরুষ ফুলের পরাগদণ্ড নারী ফুলে গর্ভে ঘষে দিতে হবে।

১০. ছাদ বাগানে গাছ মারা যাওয়ার অন্যতম কারণ পানি বেশি বা কম দেয়া। যতটুকু লাগে ঠিক ততটুকু পানি দিতে হবে। কোন গাছের কি চাহিদা, রোগ একটু স্টাডি করলে সহজে সফল হতে পারবেন।

১১. গাছের পাতার নিচে খেয়াল করবেন। বেগুন গাছের পোকা মারার জন্য সেক্স ফোরেমান ফাঁদ লাগাবেন। ডগা ছিদ্র বা ফল ছিদ্র হলে সাইপারমেত্রিন গ্রুপের কীটনাশক দিতে হবে। একটি বেগুন গাছ অনেক দিন ফল দেয়। ঢেড়স গাছ বেশি রোদ পড়ে এমন জায়গায় লাগাবেন। বেগুন, ঢেড়স, লালশাক, পুইশাক, ধনেপাতা, ডাটা শাক- এসব গাছের খুব যত্ন করতে হয় না।

১২. রসুন আর লবঙ্গ বেটে সেই পানি গাছে স্প্রে করলে পোকা কম আসবে। মরিচ গাছে নেপথলিন বেঁধে দিন, পোকা কম আসবে। পাতা কোকড়ালে ভার্মিটেক কিংবা এবোম কীটনাশক দিন। কোকড়ানো পাতা ফেলে দিন। মরিচ গাছে দশ দিন পর পর ডায়মেথট গ্রুপের (যেমন টাফগর) কীটনাশক দিলে উপকার হবে। সবকিছু করছেন, তারপরও কাজ হচ্ছে না। এক্ষেত্রে গাছের জায়গা বদল করেন, উঠিয়ে অন্যত্র লাগান।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

দৈনন্দিন

নিপাহ্‌ ভাইরাসঃ খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়

নিপাহ্‌ ভাইরাস খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়
নিপাহ্‌ ভাইরাস খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়
খেজুরের রস সংগ্রহের প্রক্রিয়া।

শীতকাল এলেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে খেজুরের রস খাওয়ার চল বেড়ে যায়। অনেকে গাছ থেকে খেজুরের কলসি নামিয়ে সরাসরি কাঁচা রস খেয়ে থাকেন।

আবার অনেকে এই রস চুলায় ফুটিয়ে সিরাপ, পায়েস বা ক্ষীর বানিয়ে খান। এছাড়া রসের তৈরি ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়, ভেলি গুড়, বালুয়া গুড়, মিছরি গুড়সহ নানা ধরণের পিঠার বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।

নিপাহ্‌ ভাইরাস আতঙ্ক

খেজুর আরব দেশের প্রচলিত ফল হলেও ওইসব দেশে খেজুর, মূলত ফল উৎপাদননির্ভর, যেখানে কিনা বাংলাদেশের খেজুর গাছ রস উৎপাদননির্ভর।

কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, বাংলাদেশে সাধারণত কার্তিক থেকে মাঘ অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ হয়ে থাকে।

দেশটির সবচেয়ে বেশি রস সংগ্রহ হয় যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে।

মূলত খেজুর গাছের ডালপালা পরিষ্কার করে, ডগার দিকের কাণ্ড চেঁছে তাতে একটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি চোঙ বসিয়ে দেয়া হয়। চোঙের শেষ প্রান্তে ঝুলিয়ে দেয়া হয় একটি মাটির হাড়ি বা কলসি।

সেই চোঙ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রস এসে জমা হতে থাকে মাটির হাড়ি বা কলসিতে। এভাবে একটি গাছ থেকে দৈনিক গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লিটার রস সংগ্রহ করা যায় বলে কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গিয়েছে।

কিন্তু গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে নিপাহ্‌ ভাইরাস আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

পরিবেশ

জেনে নিন এই মরসুমে কোন কোন ঔষধি উদ্ভিদের চাষ আপনার জন্য সেরা

দেশের বিভিন্ন রাজ্যেই বর্ষার (Monsoon 2021) প্রভাবে চলছে বৃষ্টিপাত। এসময় কৃষকেরা খারিফ শস্য (Kharif Crops) বপনে তৎপর হয়ে ওঠেন। এই খরিফ মরসুমে কৃষকভাইরা সাধারণত অঞ্চলভেদে ধান, অড়হর, সোয়াবিন সহ বিভিন্ন চাষে মনযোগ দিয়ে থাকেন ৷ তবে এসব ছাড়াও, ঔষধি গুন সমৃদ্ধ (Medicinal Crops) গাছ চাষে বর্ষায় যে কতটা লাভ হতে পারে সে সম্পর্কে অনেকেই হয়তো জানেন না৷

বিশেষ করে বর্ষাকালেই এমন বহু ঔষধি গুন সম্পন্ন গাছ রয়েছে যাদের চাষ হতে পারে লাভজনক৷

বর্ষাকালে কোন কোন ঔষধি উদ্ভিদের চাষ করা যেতে পারে অথবা এই চাষ কীভাবেই বা করা যাবে সে বিষয়ে সঠিক তথ্য না পাওয়ার কারণেই অনেকের কাছে বিষয়টি অধরা৷ চলুন এই প্রতিবেদনে এমনই কিছু গাছ নিয়ে আলোচনা করা যাক যা কৃষকদের জন্য হতে পারে লাভদায়ক৷ তবে সঠিক সময়ে, সঠিক রোপন, সেচ, কীটনাশক দেওয়ার প্রয়োজন এগুলিতে, না হলে এর ওপর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে৷

অশ্বগন্ধা –

বর্ষায় এর চাষ ভালো৷ জুন থেকে অগস্ট পর্যন্ত এর চাষ করতে পারেন৷ এর বিভিন্ন জাত রয়েছে৷ উন্নত মানের গাছের চাষে কৃষকের লাভের পরিমাণও বৃদ্ধি পেতে পারে৷ উল্লেখ্য, প্রতি হেক্টরে ৫ কিলোগ্রাম বীজ ব্যবস্থা করতে হবে৷ যদি কেউ ১ হেক্টর জমিতে অশ্বগন্ধার চাষ করতে চায় তাহলে তাকে প্রায় ৫০০ বর্গমিটারে নার্সারি তৈরি করতে হবে৷ প্রায় ১ সেন্টিমিটার গভীরে বীজ বপন করতে হবে৷

শতমূলী –

শীত বাদ দিয়ে বছরের যে কোনও সময়ে এই গাছের চাষ করতে পারেন৷ বর্ষাকালে এই চারা রোপন করলে সহজেই তা বেড়ে উঠতে থাকে৷ তবে বীজ বপনের আগে বীজ ১ দিন পর্যন্ত হালকা গরম জলে ভিজিয়ে রাখতে হয়৷

যষ্টিমধু –

জুলাই থেকে অগস্ট পর্যন্ত এর চাষ করা হয়৷ আর তাই জুন থেকেই এর প্রস্তুতি শুরু করে দেন কৃষকেরা৷ জলনিকাশি ব্যবস্থা উচ্চমানের হওয়া প্রয়োজন এই গাছ চাষের জন্য৷ মনে রাখতে হবে এর চাষের আগে জমিতে কমপক্ষে ১৫ টন গোবর সার দেওয়া প্রয়োজন, এরপরেই এটি চাষ করা উচিত৷

ঘৃতকুমারী –

এর ভালো উৎপাদনের জন্য জলনিকাশি ব্যবস্থা ঠিক রাখতে হবে৷ এই ধরনের ঔষধি গুনসম্পন্ন গাছ শীতকাল বাদ দিয়ে যে কোনও সময় চাষ করতে পারেন৷ বর্ষাকালে দূরত্ব রেখে বীজ বপন করতে হবে৷ কম সময়ের মধ্যেই ব্যবহারোপযোগী হয়ে ওঠে এগুলি৷

অগ্নিশিখা বা কলিহারি –

এটি চাষের জন্য কৃষকেরা জুন মাসেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন৷ জুলাইয়ে ভালো বৃষ্টিতে এর চাষ শুরু করা যেতে পারে৷ উল্লেখ্য, ১ হেক্টর জমির জন্য প্রায় ১০ ক্যুইন্টাল কন্দের প্রয়োজন৷ এটি চাষের আগেও জমিতে গোবর সার প্রয়োগ করে তা প্রস্তুত করে নিতে হবে৷

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

পরিবেশ

শিখে নিন টবে দারুচিনির চাষের কৌশল

পৃথিবীতে ভোজ্য মসলা যতরকম আছে তারমধ্যে দারুচিনি সবথেকে উল্লেখযোগ্য। এই প্রাচীনতম মসলা বহুদিন ধরে ওষধি হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে চলেছে। এছাড়াও খাবারে স্বাদ বাড়ানো থেকে শুরু করে, পানীয় এবং তরল মশলাদার খাবারে স্বাদ বাড়ানোর জন্যও এই দারচিনির ব্যবহার হয়। এলাচ, গোলমরিচ, লবঙ্গের সাথে সাথে দারুচিনির নামও মসলা হিসেবে একই পংক্তিতে উচ্চারিত হয়। বহু কৃষক দারুচিনির চাষ করে ভীষণভাবে উপকৃত হয়েছেন। বাজারে এই দারুচিনির চাহিদা প্রচুর পরিমানে থাকায়, এই চাষে ভালো লাভ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও সৌখিন মানুষেরাও ভালোবেসে দারুচিনির চাষ বাড়িতে করে থাকেন। দারুচিনি গাছের বাকল, ফুল, কুঁড়ি, পাতা, ফল, শেকড় সবকিছুই কাজে লেগে যায়। দারুচিনি গাছ বাড়িতে চাষ করতে গেলে ঘরে ছাদে দুই জায়গাতেই চাষ করা যায়।

মনে রাখতে হবে এই চাষ করতে গেলে উপযুক্ত পরিমানে রোদ দরকার। বাংলার জলবায়ুতে মূলত শীতকালে এই চাষ করা সবথেকে ভালো। জানুয়ারি মাসে দারুচিনি গাছে ফুল ফোটা আরম্ভ করে, এবং এই গাছের ফল পাকতে আরম্ভ করে জুলাইয়ে। সেইসময়ই ফল থেকে বীজ সংগ্রহ করে নিয়ে এসে বাগানে বা টবে রোপন করে দেওয়া উচিত।

প্রয়োজনীয় রোদ (Sunlight)

কড়া সূর্যালোক দারুচিনি জন্য প্রয়োজনীয়, তাই এটি পর্যাপ্ত রোদ পাওয়া যায় এমন জায়গায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দারুচিনি রোপন করতে গেলে রৌদ্রোজ্জ্বল স্থান যেমন জানালার ধারে, ব্যালকনি কিংবা ছাদের খালি স্থান ব্যবহার করতে হবে।

উপযুক্ত মাটি (Soil)

দারুচিনি চাষের জন্য ভাল মানের মাটি ব্যবহার করা আবশ্যক। বাগানের মাটি ব্যবহার না করাই ভালো, কেননা এতে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। অনে সময় আমরা আশেপাশ থেকে মাটি নিয়েই টব ভরে গাছ লাগানো হয়।  বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সংবেদনশীল গাছগুলোতে এই উপায় কার্যকরী হয় না। নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভাল এমন মাটি ব্যবহার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে উত্তম নিষ্কাশনযুক্ত বেলে দোআঁশ মাটি ব্যবহার করা সবথেকে উত্তম। জেনে রাখা ভালো দারুচিনি খরা একদমই সহ্য করতে পারে না। মাটির বিকল্প হিসেবে ১৫% ট্রাইকোকমপোস্টযুক্ত কোকোডাস্ট ব্যবহার করা যেতে পারে।

বাইরে চাষ করার জন্য এক মিটার (৩০ সেন্টিমিটার গভীর) পর্যন্ত গর্ত করে মাটি দিয়ে পূরণ করে নিতে হবে। ঘরের ভিতরে বা ছাদবাগানের দারুচিনি চাষের জন্য একটি বড় পাত্র প্রয়োজন হবে।

রোপন (Planting)

দারুচিনির বীজ সংগ্রহও করা যায় অথবা নার্সারি থেকে দারুচিনির গাছ কিনেও আনা যায়।

বাইরে চাষের ক্ষেত্রে

দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে ১ মিটার x ১ মিটার এবং ৩০ সেমি গভীরতায় খনন করে মাটি দিয়ে গর্তটি পূরণ করতে হবে।

ঘরের মধ্যে টবে রোপনের ক্ষেত্রে

নিচে গর্ত সহ বড় সিরামিক পাত্র (৬০ x ৫০ সেমি) ব্যবহার করতে হবে। পাত্রটি মাটি বা কোকোডাস্ট দিয়ে পূরণ করে নিতে হবে। ৩০ সেন্টিমিটার গভীরতা এবং ৩০ সেন্টিমিটার প্রস্থের একটি গর্ত তৈরি করতে একটি বাগান ট্রোয়েল ব্যবহার করে নেওয়া ভালো। বীজ ব্যবহার করলে  ১.৫ সেন্টিমিটার গভীর গর্ত তৈরি করে নেওয়া উচিত। এবার গাছটি গর্তের মধ্যে রেখে মাটি দিয়ে চাপা দিতে হবে। বীজ ব্যবহার করলে প্রতি ১.৫ সেমি গর্তে একটি করে বীজ পুঁততে হবে এবং মাটি দিয়ে বীজটি ঢেকে দিতে হবে।

মাটি সবসময় ভেজা রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণ জল দিতে হবে। দারুচিনি গাছ পাত্রে রোপন করার পর, টবের নিচের গর্ত থেকে জল বের না হওয়া পর্যন্ত জল দিতে হবে। টবের উপরের ৫ সেন্টিমিটার শুকিয়ে গেলেই আবার গাছটিকে জল দিতে হবে।

গাছের পরিচর্যা (Caring)

দারুচিনি গাছে নিয়মিত সার প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম বছর ৫০ গ্রাম টিএসপি, ৭৫ গ্রাম এমওপি ও ৫০ গ্রাম ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে। প্রতিবছর ২-৩ কেজি ট্রাইকোকম্পোস্ট ও সার প্রয়োগ শেষে একই হারে টিএসপি, এমওপি ও ইউরিয়া দিতে হবে।

দারুচিনি প্রথম ধরতে দুই থেকে তিন বছর সময় নেয় এবং তার পরে প্রতি দুই বছর পরপরই ফসল দিতে থাকে। দারুচিনি গাছ কম করে ১০-১৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। তাই একে নিয়মিত করে ছোট রাখতে হবে। পাঁচ বছর বয়সী দারুচিনি গাছ থেকে নিয়মিত দারুচিনি সংগ্রহের ডাল পাওয়া সম্ভব। দারুচিনি ব্যবহার করার জন্য যে শাখাগুলি কাটা হবে সেগুলি থেকে বাকল তুলে নিতে হবে, বাকলগুলি ব্যবহার করার আগে জলে ভালোভাবে ভিজিয়ে নেওয়া উচিত।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

আঙিনা কৃষি

টবে লাগান মিষ্টি তেঁতুল গাছ

পৃথিবীতে জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, হারিয়ে যাচ্ছে বহু প্রাণী ও উদ্ভিদ বৈচিত্র। চাষবাসের জমিরও সংকুলান ঘটছে সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে। গগনচুম্বী বাড়ি ঘিরে ফেলছে সমস্ত ফাঁকা জমিন। শখ করে মানুষ খোলা জায়গায় যে গাছ লাগবে অথবা ফল-ফুলের চারা সেই উপায়ও আর নেই। গাছ লাগানোর জন্য সামান্য জায়গাও ফাঁকা থাকছে না আর। তবে আমাদের করণীয় কী? বৃক্ষরোপন কি তবে অচিরেই বন্ধ হয়ে যাবে। বেঁচে থাকার জন্য তো গাছ লাগাতে হবেই। বাড়ির একটুকরো বারান্দা অথবা ব্যালকনিতেও সুন্দর ভাবে ইচ্ছা করলে গাছ লাগানো যায়। বাড়ির ছাদেও বানানো যায় সুন্দর বাগিচা। শহরের মানুষদের জন্য ছাদ বাগানের কোনও বিকল্পও নেই। বাড়ির মধ্যেকার ব্যালকনি অথবা ছাদের একটুকরো জমিতেও, ইচ্ছা করলে টবে চাষ করা যায় বিভিন্ন ফুলের ও ফলের গাছ।

শাকসবজি, পেয়ারা, লেবু প্রভৃতি দেশীয় গাছ টবে বাড়তে দেওয়া থেকে শুরু করে বর্তমানে বহু বিদেশী গাছের চারাও মানুষ ব্যালকনি অথবা ছাদে চাষ করছেন। তার মধ্যে থাই মিষ্টি তেঁতুল টবের চাষ পদ্ধতি হিসাবে অত্যন্ত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। প্রথমত মিষ্টি তেঁতুলের চাষ করতে গেলে, নার্সারি থেকে এই বিশেষ তেঁতুলের সঠিক বীজ নিয়ে আনতে হবে। তবে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কলম পাওয়া একটু দুষ্কর কাজ। বুঝে সঠিক চারা নিয়ে আসা বাগান মালিকের উপরেই বর্তায়।

থাই মিষ্টি তেঁতুলের ফুল থেকে ফল ধরতে প্রায় ৭ মাস সময় লাগে। বছরে দু’বার থাই মিষ্টি তেঁতুলের গাছে ফল ধরে। প্রথমবার বর্ষাকালে এবং দ্বিতীয়বার শীতকালে। এই গাছের পরিচর্যা আলাদা করে করার কোনও দরকার পড়ে না। গাছের যত্নআত্তি নিতে হয় ঠিকই, কিন্তু তা বলে, আলাদা করে কোনও বিশেষ যত্ন নিতে হয় না।

গাছ লাগানোর পদ্ধতি (Planting):

থাই মিষ্টি তেঁতুল চাষের জন্য আদর্শ মাটি হল, দো-আঁশ বা বেলে দো-আঁশ মাটি। এই দু’টি মৃত্তিকার মধ্যে যে কোনও একটি বেছে নিন। তারপর বেছে নেওয়া মাটির দুই ভাগ অংশের সাথে গোবর, ১০০ গ্রাম, টিএসপি ১০০ গ্রাম, পটাশ, ২৫০ গ্রাম, হাড়ের গুঁড়ো এবং ৫০ গ্রাম সরিষার খোল একসঙ্গে মিশিয়ে ২০ ইঞ্চি মাপের বড় টবে জল মিশিয়ে রেখে দিতে হবে। ১০ থেকে ১২ দিন পর টবের মাটি ভালো করে খুঁচিয়ে দিয়ে আরও ৪-৫ দিন রেখে দিতে হবে। ৪ থেকে ৫ দিন বাদে মিষ্টি তেঁতুলের একটি ভালো চারা ওই টবে লাগান।

পরিচর্যা(Caring):

চারা লাগানোর প্রথম কয়েক মাস তেমন যত্নের দরকার পড়বে না। অবশ্যই গাছে এই সময়টুকু পর্যাপ্ত জলের যোগান, এবং আগাছা পরিষ্কারের কাজ করতে হবে।  ছয় মাস চারা লাগানোর সময়সীমা ফুরোলেই ১ মাস বাদে বাদে গাছে সরষের খোল মিশ্রিত পচা জল দিতে হবে। মনে রাখতে  হবে খোল দেওয়ার আগে গাছের মাটি খুঁচিয়ে নিতে হবে।

রোগ দমন (Disease management):

সাধারণত থাই মিষ্টি তেঁতুল গাছে পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখা যায় না। কিন্তু বর্ষাকালে অনেক সময় তেঁতুল গাছে ছত্রাক হানা দেয়। এর ফলে তেঁতুল ফেটে যায়। এই অসুবিধার থেকে গাছকে বাঁচাতে হলে, বর্ষাকাল আসার আগেই ভালো ছত্রাকনাশক ওষুধ ১০ দিন অন্তর গাছে স্প্রে করে ছড়িয়ে দিতে হবে।

বাংলার বেজায় টক তেঁতুলের সঙ্গে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কোনও তুলনাই চলে না। অত্যন্ত মিষ্টি খেতে এই তেঁতুল থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়ায় চাষ প্রভূত পরিমাণে হলেও, আমাদের রাজ্য এই ফলের চাষ এখনও ততটা গতি পায়নি। কিন্তু আপনি আপনার ব্যালকনি অথবা ছাদে সহজেই এই থাই তেঁতুলের গাছ লাগাতে পারেন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশক: শাইখ সিরাজ
© ২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। দা এগ্রো নিউজ, ফিশ এক্সপার্ট লিমিটেডের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। ৫১/এ/৩ পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থাপথ, ঢাকা -১২০৫
ফোন: ০১৭১২-৭৪২২১৭
ইমেইল: info@agronewstoday.com, theagronewsbd@gmail.com