আমাদের দেশে আকছার হার্নিয়া অপারেশনের কথা শোনা যায়। কিন্তু এত পরিচিত অসুখ নিয়েও ভ্রান্ত ধারণা প্রচুর। অনেকেই মনে করেন, এটা পুরুষদের অসুখ। আবার অনেকে ভেবে নেন, হার্নিয়া নিয়ে মাথা না ঘামালেও চলে। এত ভুল ভাবনার জন্য তাঁরা সময়মতো চিকিৎসকের কাছে আসেন না। ফলে, পরিস্থিতি জটিল হয়। রোগটি কেন হয়, কী ভাবে তাকে চিনবেন ও তার চিকিৎসাপদ্ধতি বুঝিয়ে বললেন গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল, ল্যাপরোস্কোপি, হার্নিয়া ও বেরিয়াট্রিক সার্জন ডা. সরফরাজ় বেগ।
হার্নিয়া ঠিক কী
কোথায় হতে পারে
প্রাইমারি হার্নিয়া: ভ্রূণ অবস্থাতেই ছেলেদের গোনাড অঙ্গ শরীরের বাইরে আসে। সেখানে দুর্বলতা সৃষ্টি হলে গ্রোইন হার্নিয়া হতে পারে। পরিণতবয়স্ক পুরুষের ক্ষেত্রে এই হার্নিয়া বেশি হয়। গ্রোইনের মতো নাভিও আর একটি ‘উইক স্পট’। স্থূলতার কারণে নাভিতেও হার্নিয়া হতে পারে। বেশ কয়েক বার গর্ভবতী হলে মহিলাদের তলপেটের অংশ দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ব্যায়াম না করলে মেয়েদের তলপেট কমজোরি হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। হতে পারে আম্বিলিক্যাল হার্নিয়া।
সেকেন্ডারি বা ইনসিশনাল হার্নিয়া: অস্ত্রোপচারের পরবর্তী সেলাইয়ের সঙ্গে স্বাভাবিক ক্ষতের পার্থক্য আছে। সেলাইয়ের ক্ষতের পেশিগুলোর শক্তি স্বাভাবিক ক্ষতের চেয়ে কম হয়। এ সময় যদি রোগী কাশেন বা অতর্কিতে জোর দিয়ে ফেলেন, বেশি কাজকর্ম করেন, তবে ক্ষতে সংক্রমণ হতে পারে। তার থেকে বা কোনও কারণে সেলাই খুলে গেলে ইনসিশনাল হার্নিয়া হয়। মহিলাদের সিজ়ারিয়ান সেকশন বা হিস্টেরেক্টমি-র পর তলপেটে এই হার্নিয়া দেখা যায়। হয়তো রোগী কেশেছেন, বমি করেছেন বা ওবিস ছিলেন, তাই সমস্যাটি হয়েছে। যে কোনও অস্ত্রোপচারের পরেই এই হার্নিয়া হতে পারে। ক্যানসার রোগীর অস্ত্রোপচারের পরে শারীরিক দুর্বলতার জন্য ঘা না শুকোলেও হার্নিয়া হয়। পেটে ফুটো বা সংক্রমণের জরুরিভিত্তিক অস্ত্রোপচারের পরেও ঘা পেকে হার্নিয়া হতে পারে।
রোগের লক্ষণ
ডা. বেগ সাবধান করলেন, ‘‘কুঁচকিতে, নাভির কাছে বা পুরনো অস্ত্রোপচারের ক্ষতের কাছে কোনও ফোলা ভাব থাকলে, সেখানে ব্যথা হলে হার্নিয়া হতে পারে। কাশির দমকের সঙ্গে ওই ব্যথা বাড়তে পারে। কালক্ষেপ না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।’’
আরোগ্যের রাস্তা
সাধারণত হার্নিয়ায় অস্ত্রোপচার করাতে হয়। তবে সব ক্ষেত্রে সার্জারির দরকার নেই। ৭০-৮০ বছরের পুরুষের গ্রোইন হার্নিয়া হলে অনেক সময়ই কোনও কষ্ট থাকে না। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসক কিছু দিন তাঁর পরিস্থিতির উপর নজর রাখেন। হয়তো কিছু করার দরকারই পড়ল না।
নাভির কাছে বা ইনসিশনাল হার্নিয়ায় এই ‘ওয়েট অ্যান্ড ওয়াচ’ নীতি চলবে না। এই হার্নিয়া আস্তে আস্তে বাড়তে পারে। খাদ্যনালি বা চর্বি তো ওই হার্নিয়ার মধ্য দিয়ে বাইরে বার হয়ে এসেছে। তাই কখনও সেখানে রক্তসঞ্চালন আটকে গেলে গ্যাংগ্রিন হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। আম্বিলিক্যাল ও ইনসিশনাল হার্নিয়ায় কিন্তু এই বিপদ আছে।
হার্নিয়া ফেলে রাখলে বড় হয়ে যেতে পারে। তখন রোগীর শ্বাসকষ্ট, পিঠে ব্যথা, কোষ্ঠকাঠিন্য হবে। তা ছাড়া হার্নিয়া বড় হলে সার্জারিতে সাফল্য পাওয়াও মুশকিল। কোনও কোনও গ্রোইন হার্নিয়া ছাড়া সব হার্নিয়ায় সময়মতো সার্জারি (সুযোগ থাকলে ল্যাপরোস্কোপি) করানো উচিত। হার্নিয়া বাড়লে মাইক্রোসার্জারি না-ও চলতে পারে। তখন ওপেন সার্জারি করা হয়। কম্পোনেন্ট সেপারেশন টেকনিকের সাহায্যে কমপ্লেক্স হার্নিয়া সার্জারিও হয়। না কেটে অস্ত্রোপচার করলে ৫-৭ দিনে এবং কাটতে হলে ২-৩ সপ্তাহের মধ্যেই রোগী স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন। তবে আগে ৪০% ক্ষেত্রেই বড় হার্নিয়ার অস্ত্রোপচার ব্যর্থ হত। নতুন প্রযুক্তিতে কিন্তু হার্নিয়া ফিরে আসার ঘটনা ১০%-এরও কম।
ডা. বেগের পরামর্শ, ‘‘শল্যচিকিৎসককে অবশ্যই জিজ্ঞেস করে নেবেন, হার্নিয়া অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে কোন জালি ব্যবহার করা উচিত। ছোট হার্নিয়া থেকে ক্যানসার হয় না। তবে আর একটা হার্নিয়া বা রেকারেন্ট হার্নিয়া হয়ে যেতে পারে। রোগীর সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করে ও উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে রেকারেন্ট হার্নিয়ার হার অনেকটাই কমানো গিয়েছে। ওজন বশে থাকলে প্রাইমারি হার্নিয়াকে ঠেকিয়ে রাখা যায়। সদ্যোজাতেরও জন্মগত হার্নিয়া হতে পারে। তবে গত দশ বছরে হার্নিয়া চিকিৎসা খুবই এগিয়ে গিয়েছে। রোগ থাকলে তার প্রতিকারও রয়েছে।’’
শীতকাল এলেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে খেজুরের রস খাওয়ার চল বেড়ে যায়। অনেকে গাছ থেকে খেজুরের কলসি নামিয়ে সরাসরি কাঁচা রস খেয়ে থাকেন।
আবার অনেকে এই রস চুলায় ফুটিয়ে সিরাপ, পায়েস বা ক্ষীর বানিয়ে খান। এছাড়া রসের তৈরি ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়, ভেলি গুড়, বালুয়া গুড়, মিছরি গুড়সহ নানা ধরণের পিঠার বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।
নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক
খেজুর আরব দেশের প্রচলিত ফল হলেও ওইসব দেশে খেজুর, মূলত ফল উৎপাদননির্ভর, যেখানে কিনা বাংলাদেশের খেজুর গাছ রস উৎপাদননির্ভর।
কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, বাংলাদেশে সাধারণত কার্তিক থেকে মাঘ অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ হয়ে থাকে।
দেশটির সবচেয়ে বেশি রস সংগ্রহ হয় যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে।
মূলত খেজুর গাছের ডালপালা পরিষ্কার করে, ডগার দিকের কাণ্ড চেঁছে তাতে একটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি চোঙ বসিয়ে দেয়া হয়। চোঙের শেষ প্রান্তে ঝুলিয়ে দেয়া হয় একটি মাটির হাড়ি বা কলসি।
সেই চোঙ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রস এসে জমা হতে থাকে মাটির হাড়ি বা কলসিতে। এভাবে একটি গাছ থেকে দৈনিক গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লিটার রস সংগ্রহ করা যায় বলে কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গিয়েছে।
কিন্তু গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
উপকরণ: বাঁধাকপির কুচি ৪ কাপ, কই মাছের টুকরো ৬টি, তেজপাতা ১টি, শুকনো মরিচ ২টি, মেথি অল্প পরিমাণ, মরিচবাটা ১ চা-চামচ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, লবণ পরিমাণমতো, নারকেল কোরানো স্বল্প পরিমাণে, হলুদ পরিমাণমতো ও সরিষার তেল পরিমাণমতো।
প্রণালি: তেলে শুকনো মরিচ ও মেথি ফোড়ন দিতে হবে। ফোড়ন হয়ে এলে হালকা করে ভেজে উঠিয়ে রাখতে হবে। ওই তেলেই বাঁধাকপির কুচি ও পেঁয়াজ কুচি দিয়ে ভালো করে কষে নিতে হবে। তারপর লবণ, মরিচ ও হলুদবাটা দিয়ে আরও কিছুক্ষণ বসাতে হবে। সেদ্ধ হয়ে এলে অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে ভাজা মাছগুলো দিয়ে ঢাকা দিতে হবে। পানি শুকিয়ে গেলে এবং মাছ সেদ্ধ হয়ে এলে অল্প পরিমাণ নারকেল কোরানো দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।
উপকরণ: বড় শোল মাছ ৫০০ গ্রাম, টমেটো টুকরো আধা কাপ, সরিষার তেল ৩ টেবিল চামচ, টমেটোবাটা আধা কাপ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, আদাবাটা ১ চা-চামচ, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, হলুদ গুঁড়া ১ চা-চামচ, ধনেপাতা আধা কাপ, শুকনো মরিচের গুঁড়া ১ চা-চামচ, লবণ স্বাদ অনুসারে ও কাঁচা মরিচ ৭-৮টি (চেরা)।
প্রণালি: শোল মাছ লবণ, হলুদ ও সরিষার তেল মাখিয়ে ভেজে তুলে রাখতে হবে। আর ওই তেলেই পেঁয়াজ কুচি দিতে হবে। পেঁয়াজ বাদামি রং হলে রসুন, আদা, মরিচের গুঁড়া, হলুদ ও লবণ দিয়ে ভালোভাবে কষাতে হবে। টমেটোবাটা দিতে হবে, কিছুক্ষণ কষানোর পর প্রয়োজনমতো গরম পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে ভেজে রাখা মাছগুলো দিতে হবে। ঝোল মাখা-মাখা হলে টমেটোর টুকরো আর ধনেপাতা দিয়ে কিছুক্ষণ পর নামিয়ে ফেলতে হবে। নামানোর আগে কাঁচা মরিচ দিতে হবে।
উপকরণ: ছোট টুকরো করে কাটা টাকি মাছ ২ কাপ, ডুমো ডুমো করে কাটা লাউ ৪ কাপ, হলুদ সিকি চা-চামচ, লবণ পরিমাণমতো, পেঁয়াজ ১ কাপ, ধনেপাতা কুচি পরিমাণমতো, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, কাঁচা মরিচ ১০-১২টি, আদাবাটা আধা চা-চামচ ও রাঁধুনি বাটা সিকি চা-চামচ।
প্রণালি: তেলে পেঁয়াজ দিয়ে হালকা করে ভেজে নিতে হবে। তারপর একে একে রসুনবাটা, আদাবাটা ও রাধুনি (গুঁড়া সজ) বাটা ও হলুদের গুঁড়া দিয়ে ভালো করে কষাতে হবে। কষানো হলে লাউ দিতে হবে। লাউ দিয়ে কিছুক্ষণ কষিয়ে অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে আগে থেকে হালকা করে ভেজে রাখা টাকি মাছ দিতে হবে। পানি শুকিয়ে এলে কাঁচা মরিচের ফালি ও সবশেষে ধনেপাতা দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।
উপকরণ: চিংড়ি মাছ ২০০ গ্রাম, সয়াবিন তেল পরিমাণমতো, বাঁধাকপি কুচি ১ কাপ, ক্যাপসিকাম কুচি ১ কাপ, টমেটো কুচি আধা কাপ, পেঁয়াজপাতা কুচি ১ কাপ, কাঁচা মরিচবাটা ১ চা-চামচ, ধনেপাতাবাটা ১ চা-চামচ, হলুদের গুঁড়া পরিমাণমতো, চিলি সস ২ চা-চামচ, টমেটো সস ২ চা-চামচ, বাঁধাকপির ভেতরের পাতা ৪টি, ভিনেগার ২ চা-চামচ, রসুন ১ চা-চামচ ও লবণ স্বাদমতো।
প্রণালি: বাঁধাকপির শক্ত অংশ ফেলে দিন। পাতার ভেতরের অংশ একটু ভাপিয়ে রাখুন। মাছ ধুয়ে ভিনেগার মাখিয়ে রাখুন। এবার কড়াইয়ে সয়াবিন তেল গরম হলে তাতে রসুন কুচি দিয়ে মাছগুলো দিন। একে একে কোঁচানো বাঁধাকপি, ক্যাপসিকাম, টমেটো ও পেঁয়াজপাতা দিয়ে নেড়েচেড়ে নিন। এরপর কাঁচা মরিচবাটা, ধনেপাতাবাটা, চিলি সস ও টমেটো সস দিয়ে নেড়ে নিন। পানি শুকিয়ে এলে নামিয়ে বাঁধাকপির পাতায় অল্প করে চিংড়ি মাছ সুতা দিয়ে বেঁধে স্টিমারে ভাপিয়ে নিন। সুতো কেটে পাতা খুলে পরিবেশন করুন।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন