পরিবেশ
শিকার-পাচারে বিলুপ্তির পথে কচ্ছপ
লেখক
জাগোনিউজ২৪.কমবন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে যেকোনো প্রজাতির কচ্ছপ ধরা, কেনা-বেচা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তবে কচ্ছপ ব্যবসায়ীদের কাছে এই আইন যেন কোনো বাধা নয়। আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যাপক চাহিদার কারণে বরিশালের বিভিন্ন নদী-খাল-বিল-জলাশয়ে নির্বিচারে চলছে কচ্ছপ নিধন। ফলে কচ্ছপ এখন বিলুপ্তির পথে।
রোববার (২৩ মে) আন্তর্জাতিক কচ্ছপ দিবস উপলক্ষে বরিশালের ১০ উপজেলার ৩৫ ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তারা জানান, আগৈলঝাড়া, বানারীপাড়া, উজিরপুর, বাবুগঞ্জ, হিজলা ও মেহেন্দিগঞ্জে কচ্ছপ কেনাবেচা হয়। এর মধ্যে আগৈলঝাড়ার মোল্লাপাড়ায় সাহেবেরহাট ও উজিরপুরের হারতায় কচ্ছপ বিক্রির সবচেয়ে বড় বাজার। মোল্লাপাড়ায় সাহেবেরহাটে প্রকাশ্যে কচ্ছপ বিক্রি হয়। বানারীপাড়ার বিশরকান্দি হাটেও বেচা-কেনা হয় বিক্রি নিষিদ্ধ এ প্রাণী।আগৈলঝাড়ার সাহেবেরহাট বাজার কমিটির এক সদস্য নাম না প্রকাশের শর্তে জানান, হাটে প্রতিদিনই দুই একজন কচ্ছপ আনেন। বৃহস্পতি ও সোমবার হাট হাটে কচ্ছপ বেশি আসে। এ দুই কচ্ছপ কিনতে দূর-দূরন্ত থেকে ক্রেতারাও আসেন। প্রতি হাটে ৩০-৪০ হাজার টাকার কচ্ছপ বিক্রি হয়।
সুভাষ (৫০) নামে সাহেবেরহাটের এক কচ্ছপ বিক্রেতা জানান, এসব কচ্ছপের বেশিরভাগ আশপাশের খাল-বিল জলাশয়ের।এছাড়া নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া ও পটুয়াখালী থেকেও শিকারিরা নিয়ে আসেন। আগৈলঝাড়ায় কচ্ছপের চাহিদা একটু বেশি। মিঠা পানির কচ্ছপ আকার ও প্রজাতি ভেদে প্রতিকেজি হাজার টাকা থেকে ১৬০০ টাকায় বিক্রি হয়।
মনিন্দ্র নামের আরেক বিক্রেতা জানান, হাটে এক সময় বিশাল আকৃতির কচ্ছপ পাওয়া যেত।এখন আসে না।৭০০ গ্রাম থেকে এককেজি ওজনের কচ্ছপ বেশি বেচাকেনা হয়। দু একটা সোয়া কেজি ওজনের থাকে। জীবিত কচ্ছপই বেশি বিক্রি হয়। প্রজাতির মধ্যে সুন্ধি কাছিম, কড়ি কাইট্টা ও গাঙ্গুয়া কাছিম বেশি পাওয়া যায়। আরও দুই এক প্রজাতির কচ্ছপ মাঝে মধ্যে হাটে ওঠে।বড় কচ্ছপের দাম ১২০০ টাকা এবং কেজির নিচের সাইজে বিক্রি হয় ৮০০ টাকা দরে।
হাটে আসা আরও কয়েকজন বিক্রেতা জানান, নদী, খাল-বিল, পুকুর-জলাশয়ে বড়শি, কোঁচ, কারেন্ট জালসহ নানা সরঞ্জাম দিয়ে শিকার করা হয় কচ্ছপ। শীতকালে কচ্ছপ বেশি পাওয়া যায়। কার্তিক থেকে চৈত্রমাস কচ্ছপ শিকারের মৌসুম। এ সময় প্রজনন মৌসুম হওয়ায় কচ্ছপ ডাঙায় ওঠে।ফলে বেশি ধরা পড়ে।
বিক্রেতারা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তারা হাটে কচ্ছপ বিক্রি করলেও এখন পর্যন্ত কোনো বাধা পাননি।
তারা বলেন, সাহেবেরহাট ছাড়াও এ উপজেলার গৈলা বাজারের উত্তর দিকে রথখোলা বাজার ও উজিরপুর উপজেলার হারতা এবং কারফা বাজারের কয়েকটি মাছের আড়তে কচ্ছপ বিক্রি হয়।
হারতা বাজারের আকন্দ ফিস এন্টারপ্রাইজের মালিক ইউনুস আকন জানান, মাঝে মধ্যে গোপনে কিছু লোককে কচ্ছপ বিক্রি করে।তবে আইনগতভাবে নিষিদ্ধি হওয়ায় স্থানীয় কেউ কচ্ছপ বিক্রি করেন না। যারা বিক্রি করেন তারা বিভিন্ন জায়াগা থেকে আসেন।
বানারীপাড়ার বিশরকান্দি ইউনিয়নের এক আওয়ামী লীগ নেতা জানান, রোববার ও বুধবার বিশরকান্দিতে হাটে মাঝে মধ্যে কচ্ছপ বিক্রি হয়।
বাবুগঞ্জ উপজেলার মীরগঞ্জ ফেরিঘাট সংলগ্ন মাছ বাজারের এক বিক্রেতা জানান, আড়িয়াল খাঁ নদীতে জেলেরা মাছ শিকারের সময় মাঝে মধ্যে কচ্ছপ পায়।সেগুলো কেউ বিক্রির জন্য বাজারে আনেন। আবার কেউ পরিচিতদের বাড়ি দিয়ে আসেন।
হিজলা উপজেলার পলাশ চন্দ্র জানান, কয়েক বছর আগেও মেঘনার তীরবর্তী বিভিন্ন আড়ৎ বা হাট-বাজারে কচ্ছপ বিক্রি হতো।তবে এখন সেভাবে পাওয়া যায় না।কচ্ছপ বিক্রির ধর এখন বদলেছে।বিক্রেতারা ক্রেতাদের কাছে ফোন নম্বর দিয়ে রাখেন। প্রয়োজনে ফোন দিলেই পৌঁছে দেয়া হয়।
পলাশ চন্দ্র বলেন, মুলাদী ও মেহেন্দিগঞ্জেরকিছু স্থানে এ পদ্ধতিতে কচ্ছপ বেচাকেনা চলছে।
মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার একাধিক মানুষ জানান, উলানিয়া পাইকারী মাছ বাজারে অনেক আড়ৎ। কিছু আড়তে গোপনে কচ্ছপ বিক্রি হয়।
সদর উপজেলার শায়েস্তাবাদ ইউনিয়নের বাসিন্দা প্রবীণ জেলে খোরশেদ আলী জানান, কদমতলি নদীতে বেশ কয়েকজন নৌকায় করে বড়শি দিয়ে মাছ শিকার করেন। ওই বড়শিতে অনেক সময় কচ্ছপ ধরা পড়ে।পরে তা বিক্রি করা হয়।
শায়েস্তাবাদ বাজারের এক মাছ বিক্রেতা জানান, ১৫ দিন আগে বাইল্লারচরের একজন ব্যক্তি বাজারে সাত কেজি ওজনের বড় একটি কাছিম এনেছিলেন। তিনি ওই কচ্ছপের দাম চেয়েছিলেন সাত হাজার টাকা। তবে গ্রামের বাজারে এত বেশি দামে কেনার কেউ ছিল না। পরে তিনি বরিশালের নতুন বাজারের সঞ্জয় দাস নামে এক মাছের আড়তদারের কাছে ছয় হাজার টাকায় সেটি বিক্রি করেছেন বলে শুনেছি।
নগরীর একাধিক বাসিন্দা জানান, কয়েক বছর আগে নগরীর বড় বাজার, নতুন বাজার ও পোর্টরোড মাছের আড়তে কচ্ছপ বিক্রি হতো। তখন বিশাল আকারের কাছিম কেটে কেজি হিসেবে বিক্রি হতো। এখন পোর্টরোডে মাঝে মধ্যে ডাকের মাধ্যমে কচ্ছপ বিক্রি হয়। ডাকের মাধ্যমে ওই কচ্ছপ কিনেন মৎস্য শ্রমিকদের একটি চক্র। পরে তারা বেশি দামে বাইরে বিক্রি করেন।
নগরীর নতুন বাজারে দীর্ঘদিন ধরে কখনো গোপনে কখনো প্রকাশ্যে মাছ বিক্রির আড়ালে কচ্ছপ বিক্রি করে আসছেন সঞ্জয় দাস। তার বিরুদ্ধে ঢাকাসহ বিভিন্নস্থানে কচ্ছপ পাচারের অভিযোগও রয়েছে। গোটা দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে তার ব্যবসার নেটওয়ার্ক।টাকার বিনিময় অতি বিরল কচ্ছপও সংগ্রহ করে দিতে পারেন তিনি।
শুক্রবার (২১ মে) দুপুরে ক্রেতা পরিচয়ে সঞ্জয় দাসের মুঠোফোনে কল করা হয়। প্রথমে তিনি পরিচয় জানতে চান। তার পরিচিত মাছ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে নম্বর পেয়েছি জানালে তিনি ওই মাছ ব্যবসায়ীর নাম জানতে চান। মাছ ব্যবসায়ীর নাম জানালে তার সন্দেহ দূর হয়। এরপর বলেন, কত বড় ও কোন প্রজাতির কচ্ছপ লাগবে। বড় সাইজের কচ্ছপের কথা জানালে সময় নিয়ে ফোন রেখে দেন।
পরদিন শনিবার (২২ মে) সকাল পৌনে ৭টার দিকে সঞ্জয় দাস ফোনে জানান, তিন কেজি ওজনের ডাউঙ্গা প্রজাতির কচ্ছপ দিতে পারবেন। যার মাংস খুব সুস্বাদু।তবে আরও বড় সাইজের কচ্ছপ লাগবে, না দিতে পারলে অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগের কথা বলা হয়।এতে কিছুটা অপমানিত বোধ করেন সঞ্জয়। রাগান্বিত স্বরে বলেন, আমি না দিতে পারলে বরিশালের আর কেউ দিতে পারবে না। এরপর তিনি প্রশ্ন করেন কচ্ছপ কী কাজে প্রয়োজন। তাকে বলা হয় কচ্ছপের খামারের কথা। জবাবে সঞ্জয় নতুন বাজারে দেখা করে অতি বিরল প্রজাতির কচ্ছপের ছবি দেখে কনফার্ম হয়ে টাকা পরিশোধ করতে হলেন। এরপর বাসায় কচ্ছপ পৌঁছে যাবে বলে জানান।
কচ্ছপের দাম সম্পর্কে সঞ্জয় দাস বলেন, নাহাসি প্রজাতির কেজি ১৬০০, ডাউঙ্গা ও সোম ১২০০। এছাড়া সুন্ধি, কাঠা প্রজাতির কচ্ছপ ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা পড়বে। এছাড়া আরও কয়েক প্রজাতির কচ্ছপ সংগ্রহ করে দিতে পারবেন। কিন্তু সেগুলো অতি বিরল প্রজাতির হওয়ায় কয়েকগুন বেশি দাম পড়বে।
কথোপকথনের এক পর্যায়ে জানতে চাওয়া হয়, নিষিদ্ধ ব্যবসায় পুলিশ বা বন দফতরের লোক কিছু বলে কি না? জবাবে সঞ্জয় দাস বলেন, লুকিয়ে ব্যবসা করি। অনেকেই টের পায় না। এছাড়া সবার সঙ্গে বেচাকেনা করি না বলে জানান তিনি।
বরিশাল ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রধান মো. মতিয়ার রহমান জানান, মিঠা পানির কচ্ছপ বিভিন্ন ধরনের খাদ্য খেয়ে বাঁচে। জলাভূমিতে মরা, গলা, পচা, ময়লা জিনিস খেয়ে পানি পরিষ্কার রাখে। মশার লার্ভাও খায়। সুন্ধি কচ্ছপ থাকা জলাশয়ে পানি স্বচ্ছ ও মাছ দ্রুত বড় হয়। সামুদ্রিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় কচ্ছপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করা হয়। কিন্তু মন খারাপের ব্যাপার হলো, মানবসৃষ্ট কারণে বেশিরভাগ প্রজাতির কচ্ছপই এখন বিলুপ্তির মুখে।
তিনি বলেন, ১৫-২০ বছর আগেও দেশের বিভিন্ন নদ-নদী ও খাল-বিলে ১৫-১৬ প্রজাতির কচ্ছপ দেখা যেত। কিন্তু নদীর নাব্যহীনতা, দূষণ, ভরাট, যত্রতত্র মাছের খামার, জমিতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ও বন বিভাগের তদারকি না থাকায় নির্বিচারে চলছে কচ্ছপ নিধন।দেশে বণ্যপ্রাণী সংরক্ষণে অনেক আইন থাকলেও প্রয়োগ নেই। আইনের প্রয়োগ ও জনসচেতনা বাড়লেই বিলুপ্তপ্রায় কচ্ছপ রক্ষা সম্ভব।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান ও বন্যপ্রাণী গবেষক ড. নূরজাহান সরকার জানান, বিশ্বে যে কয়েকটি প্রাণী দীর্ঘকাল ধরে টিকে আছে কচ্ছপ তার অন্যতম। কচ্ছপরা ২০০ মিলিয়ন বছর সবরকমের প্রাকৃতিক বিপর্যয় সামলে পৃথিবীতে টিকে রয়েছে।তবে মানুষের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কারণেই এখন বিলুপ্তির পথে । পৃথিবীতে প্রায় ৩২০ প্রজাতির কচ্ছপ ছিল। এর প্রায় ১৫ প্রজাতি ইতিমধ্যে বিলুপ্ত হয়েছে। দেশে প্রায় ৩০ প্রজাতির কচ্ছপ ছিল। এর মধ্যে পাঁচটি সামুদ্রিক, দুটি স্থলচর ও বাকি মিঠাপানির। বর্তমানে মিঠাপানির বেশ কয়েকটি ও সামুদ্রিক প্রায় সবকটিই বিলুপ্তির পথে।
আশঙ্কাজনকভাবে কচ্ছপের সংখ্যা কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে তিনি বলেন, দেশে ও আন্তর্জাতিক বাজারে কচ্ছপের ডিম, মাংস, খোলস, হাড় ও চর্বির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কেউ কেউ কচ্ছপের মাংস আয়ু বাড়ার ওষুধ মনে করেন। অনেকেই বাত-ব্যাথার জন্য চর্বি থেকে তৈরি তেল ব্যবহার বা মাংস খান। খোলস দিয়ে তৈরি হয় নানা মূল্যবান সামগ্রী। ওষুধ তৈরির কাজে হাড় ব্যবহার হয়। এ ব্যবসায় দ্রুত অনেক টাকা উপার্জন করা যায়। তাই টাকার লোভে নির্বিচারে শিকার হচ্ছে কচ্ছপ।
বরিশাল বিভাগীয় বন কর্মকতা জি এম রফিক আহমেদ বলেন, প্রকাশ্যে বা গোপনে বরিশালে কোথাও কচ্ছপ বেচাকেনার কথা জানা নেই। কোথাও বিক্রি হলে তা বন্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আগৈলঝাড়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুর রব হাওলাদার জানান, কচ্ছপ বিক্রির কথা জানা নেই।সাহেবেরহাট ও রথখোলা বাজারে খোঁজ নেয়া হবে। সত্যতা পেলে অভিযান চালানো হবে।
-
শিকার-পাচারে বিলুপ্তির পথে কচ্ছপ
-
শিকার-পাচারে বিলুপ্তির পথে কচ্ছপ
-
শিকার-পাচারে বিলুপ্তির পথে কচ্ছপ
-
শিকার-পাচারে বিলুপ্তির পথে কচ্ছপ
আপনার জন্য নির্বাচিত সংবাদ
-
লাভজনক সবজি চাষ পদ্ধতি
-
ছাদ বাগানের জন্য কয়েকটি টিপস
-
কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ
-
যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশে হতে পারে সারের সংকট
-
বিদেশ থেকে খালি হাতে ফিরে ড্রাগন চাষে সাফল্য
-
নাসিরনগরে বন্যায় তলিয়ে গেল কৃষকের বাদামখেত
-
পানি দিতে অতিরিক্ত টাকা
-
কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তারা এক সঙ্গে কাজ করতে রাজি
-
‘শিক্ষিত কৃষক’ বলেই তাঁকে নিয়ে মানুষের আগ্রহটা বেশি
-
ব্যবসায়ীর কাছ থেকে বীজ কিনে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত
ছাদ বাগানীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। টবে, ড্রামে গাছ লাগানো হয়। কেউ ফল, কেউবা সবজির গাছ লাগান। কেউ সফল হন। কেউ সফল হন না। ছোট ছোট কিছু ভুল বাগানীরা করে থাকেন। সে কারণে যত্ন নিলেও ফল আসে না। এখানে ছাদ বাগানীদের জন্য কিছু টিপস দেয়া হলো, যা মানলে সফলতা পাওয়া সহজ হতে পারে।
প্রথমেই মনে রাখতে হবে, টবে বা ড্রামে গাছ লাগালে তাকে খাবার দিতে হবে। প্রকৃতিতে বিদ্যমান গাছের মতো সে খাবার সংগ্রহ করতে পারে না। রোগ-বালাই হলো কিনা সেটাও বুঝে ব্যবস্থা নিতে হবে। ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে।
১. মাটির সাথে অবশ্যই কিছু কোকোপিট মেশাবেন। গাছের গোড়া স্যাতস্যাতে হতে দিবেন না। স্যাতস্যাতে হলে অসংখ্য রোগ হবে। মাটি ভেজা থাকবে তবে স্যাতস্যাতে না। কেকোপিট মেশালে পানি কম দিলেও হবে। কোকোপিট (নারকেলের ছোবলার গুড়া) পানি ধরে রাখে। অতি বৃষ্টি হলে গোড়ায় পানি জমতে দেয় না। হালকা হওয়ায় ছাদে ওজনের চাপ পড়ে না। এছাড়া কোকোপিটে কিছু পুষ্টি উপাদান আছে। যা গাছের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। কোকোপিটে চারা দ্রুত গজায়, বড় হয়। মাটির চেয়ে কোকোপিটে চারা ভালো হয়।
২. গাছের জন্য বিরিয়ানি হলো সরিষার খৈল-পচা পানি। মাটির হাড়িতে খৈল পচাতে হবে। কমপক্ষে ৫ দিন। ৭ দিন কিংবা বা ১৫ দিন হলে উত্তম। অল্প পানিতে পচিয়ে তার সাথে আরো পানি মিশিয়ে দিতে হবে। এটি গাছের জন্য অত্যন্ত উপকারী। একটু গন্ধ হয়, তাই অল্প একটু গুড় দিতে পারেন। ছাদে হাড়িতে পচালে বাসায় গন্ধ আসবে না। বৃষ্টির সময় খৈল-পচা পানি দেবেন না। পুকুরের নিচে থাকা পাক কাদা গাছের জন্য খুব উপকারী।
৩. আমরা জানি, মাটিতে অসংখ্য ক্ষতিকর ছত্রাক থাকে। যা গাছকে মেরে ফেলার জন্য যথেস্ট। তাই মাটি রেডি করার সময় কিছুটা বায়োডামা সলিট দিবেন। এটি উপকারী ছত্রাক। মাটিতে ক্ষতিকারক উপাদানগুলো মেরে ফেলে। আবার জৈব সারের কাজও করে। গাছের জন্য মাটি হবে ঝুরঝুরে, হালকা।
৪. যাই লাগান না কেন, ভালো জাতের বীজ কিনা নিশ্চিত হয়ে নেবেন। ভালো বীজে ভালো ফসল হবে। নতুবা যতই যত্ন নেন না কেন, সব পরিশ্রম বেলাশেষে জলে যাবে। বীজ থেকে নিজে চারা করা উত্তম। কারণ বাজার থেকে যে চারা কিনবেন সেটার জাত ভালো হবে সে নিশ্চয়তা কোথায়? ছত্রাকনাশক দিয়ে বীজ শোধন করে নেয়া উত্তম। পদ্ধতি হলো- ছত্রাকনাশক দেয়া পানিতে কিছুটা সময় বীজ ভিজিয়ে রাখতে হবে। ম্যানসার, মেটারিল দুটি ছত্রাকনাশক।
৫. গাছ বেশি তো ফলন বেশি- এটি ভুল ধারণা। অল্প জায়গায় বেশি গাছ লাগানো যাবে না। গাছ পাতলা করে লাগাতে হবে। বেশি লাগালে গাছ প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাবে না। একটি ফলের ক্রেটে মাত্র দুটি গাছ। একটি টবে একটি গাছ। ক্রেট বা টবে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
৬. ছাদে মাচা দেয়া সমস্যা। কারণ ঘুঁটি থাকে না। এ জন্য ফলের ক্রেটের চারপাশে লাঠি বেঁধে সহজে মাচা দেয়া যায়। লতাপাতা জাতীয় গাছ লাগানোর পাত্র একটু গভীর হলে উত্তম। গাছের জন্য সবচেয়ে বেশি ভালো জৈব সার হলো পাতা-পচা সার, তারপর ভার্মি কম্পোস্ট, তারপর গোবর সার। পাতা-পচা সার সহজলভ্য নয়। দাম বেশি। কিন্তু ভার্মি কম্পোস্ট সহজলভ্য। মাটির সঙ্গে মিনিমাম ৪০% জৈব সার দেয়া উত্তম।
৭. নিম কীটনাশককে ক্ষতিকারক পোকা-মাকড় খুব অপছন্দ করে। এটি দিলে তারা বিরক্ত বোধ করে। গাছে বাসা বাঁধতে পারে না। প্রতি সাত দিনে একবার সব গাছের পাতায় নিম কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। মাসে একবার ইপসম সল্ট স্প্রে করে দেয়া উত্তম। একইভাবে মাসে একবার পানির সঙ্গে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড মিশিয়ে স্প্রে করা ভালো।
৮. ডাটা, পুইশাক, লালশাক, ধনেপাতা এসব লাগাতে পারেন। মাত্র ২৫ দিনে খেতে পারবেন। লালশাক লাগালে নেট দিয়ে ঘিরে দেবেন। শাকপাতা লাগালে দ্রুত আউটপুট পাবেন। যা আপনাকে প্রেরণা দেবে। পুইশাক গাছের পাতায় দাগ হলে পাতা কেটে দিন। অথবা ছত্রাকনাশক স্প্রে করেন। অথবা গাছ উঠিয়ে আবার লাগান। ইউরিয়া সার দিলে পুইশাক দ্রুত বাড়বে। শশা গাছের বৃদ্বির জন্য ডিএপি সার দিলে ভালো হবে। শশা গাছে ছাড়া ছাড়া ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হয়। খুব রোদ, গাছের গোড়ায় মালচিং করে দিয়ে উত্তম ফল মিলবে। মালচিং হলো গাছের গোড়ায় বিশেষ পলিথিন কিংবা শুকনো পাতা, খড় দিয়ে ঢেকে দেয়া।
৯. ফুল আসার পরে প্রানোফিক্স অথবা মিরাকুরান গাছের পাতায় শেষ বিকালে স্প্রে করবেন। বাসায় দুইটি গ্রুপের ছত্রাকনাশক রাখা ভালো। যেমন- ম্যানসার, মেটারিল। ১৫ দিনে একবার স্প্রে করবেন। এগরোমিন্ড গোল্ড অনুখাদ্য বা অন্য কোনো অনুখাদ্য বাসায় রাখতে হবে। মাসে কমপক্ষে একবার স্প্রে করবেন। অতিরিক্ত গরম, বৃষ্টি, খাদ্যের অভাব, গাছ রোগাক্রান্ত, আবহাওয়া দ্রুত আপডাউন করা ইত্যাদি কারণে ফুল ঝরে পড়তে পারে। আবার পরাগায়ন না হলে ঝরে পড়তে পারে। এ জন্য হাতের মাধ্যমে পরাগায়ন করতে হবে। পুরুষ ফুলের পরাগদণ্ড নারী ফুলে গর্ভে ঘষে দিতে হবে।
১০. ছাদ বাগানে গাছ মারা যাওয়ার অন্যতম কারণ পানি বেশি বা কম দেয়া। যতটুকু লাগে ঠিক ততটুকু পানি দিতে হবে। কোন গাছের কি চাহিদা, রোগ একটু স্টাডি করলে সহজে সফল হতে পারবেন।
১১. গাছের পাতার নিচে খেয়াল করবেন। বেগুন গাছের পোকা মারার জন্য সেক্স ফোরেমান ফাঁদ লাগাবেন। ডগা ছিদ্র বা ফল ছিদ্র হলে সাইপারমেত্রিন গ্রুপের কীটনাশক দিতে হবে। একটি বেগুন গাছ অনেক দিন ফল দেয়। ঢেড়স গাছ বেশি রোদ পড়ে এমন জায়গায় লাগাবেন। বেগুন, ঢেড়স, লালশাক, পুইশাক, ধনেপাতা, ডাটা শাক- এসব গাছের খুব যত্ন করতে হয় না।
১২. রসুন আর লবঙ্গ বেটে সেই পানি গাছে স্প্রে করলে পোকা কম আসবে। মরিচ গাছে নেপথলিন বেঁধে দিন, পোকা কম আসবে। পাতা কোকড়ালে ভার্মিটেক কিংবা এবোম কীটনাশক দিন। কোকড়ানো পাতা ফেলে দিন। মরিচ গাছে দশ দিন পর পর ডায়মেথট গ্রুপের (যেমন টাফগর) কীটনাশক দিলে উপকার হবে। সবকিছু করছেন, তারপরও কাজ হচ্ছে না। এক্ষেত্রে গাছের জায়গা বদল করেন, উঠিয়ে অন্যত্র লাগান।
শীতকাল এলেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে খেজুরের রস খাওয়ার চল বেড়ে যায়। অনেকে গাছ থেকে খেজুরের কলসি নামিয়ে সরাসরি কাঁচা রস খেয়ে থাকেন।
আবার অনেকে এই রস চুলায় ফুটিয়ে সিরাপ, পায়েস বা ক্ষীর বানিয়ে খান। এছাড়া রসের তৈরি ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়, ভেলি গুড়, বালুয়া গুড়, মিছরি গুড়সহ নানা ধরণের পিঠার বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।
নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক
খেজুর আরব দেশের প্রচলিত ফল হলেও ওইসব দেশে খেজুর, মূলত ফল উৎপাদননির্ভর, যেখানে কিনা বাংলাদেশের খেজুর গাছ রস উৎপাদননির্ভর।
কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, বাংলাদেশে সাধারণত কার্তিক থেকে মাঘ অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ হয়ে থাকে।
দেশটির সবচেয়ে বেশি রস সংগ্রহ হয় যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে।
মূলত খেজুর গাছের ডালপালা পরিষ্কার করে, ডগার দিকের কাণ্ড চেঁছে তাতে একটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি চোঙ বসিয়ে দেয়া হয়। চোঙের শেষ প্রান্তে ঝুলিয়ে দেয়া হয় একটি মাটির হাড়ি বা কলসি।
সেই চোঙ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রস এসে জমা হতে থাকে মাটির হাড়ি বা কলসিতে। এভাবে একটি গাছ থেকে দৈনিক গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লিটার রস সংগ্রহ করা যায় বলে কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গিয়েছে।
কিন্তু গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
দেশের বিভিন্ন রাজ্যেই বর্ষার (Monsoon 2021) প্রভাবে চলছে বৃষ্টিপাত। এসময় কৃষকেরা খারিফ শস্য (Kharif Crops) বপনে তৎপর হয়ে ওঠেন। এই খরিফ মরসুমে কৃষকভাইরা সাধারণত অঞ্চলভেদে ধান, অড়হর, সোয়াবিন সহ বিভিন্ন চাষে মনযোগ দিয়ে থাকেন ৷ তবে এসব ছাড়াও, ঔষধি গুন সমৃদ্ধ (Medicinal Crops) গাছ চাষে বর্ষায় যে কতটা লাভ হতে পারে সে সম্পর্কে অনেকেই হয়তো জানেন না৷
বিশেষ করে বর্ষাকালেই এমন বহু ঔষধি গুন সম্পন্ন গাছ রয়েছে যাদের চাষ হতে পারে লাভজনক৷
বর্ষাকালে কোন কোন ঔষধি উদ্ভিদের চাষ করা যেতে পারে অথবা এই চাষ কীভাবেই বা করা যাবে সে বিষয়ে সঠিক তথ্য না পাওয়ার কারণেই অনেকের কাছে বিষয়টি অধরা৷ চলুন এই প্রতিবেদনে এমনই কিছু গাছ নিয়ে আলোচনা করা যাক যা কৃষকদের জন্য হতে পারে লাভদায়ক৷ তবে সঠিক সময়ে, সঠিক রোপন, সেচ, কীটনাশক দেওয়ার প্রয়োজন এগুলিতে, না হলে এর ওপর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে৷
অশ্বগন্ধা –
বর্ষায় এর চাষ ভালো৷ জুন থেকে অগস্ট পর্যন্ত এর চাষ করতে পারেন৷ এর বিভিন্ন জাত রয়েছে৷ উন্নত মানের গাছের চাষে কৃষকের লাভের পরিমাণও বৃদ্ধি পেতে পারে৷ উল্লেখ্য, প্রতি হেক্টরে ৫ কিলোগ্রাম বীজ ব্যবস্থা করতে হবে৷ যদি কেউ ১ হেক্টর জমিতে অশ্বগন্ধার চাষ করতে চায় তাহলে তাকে প্রায় ৫০০ বর্গমিটারে নার্সারি তৈরি করতে হবে৷ প্রায় ১ সেন্টিমিটার গভীরে বীজ বপন করতে হবে৷
শতমূলী –
শীত বাদ দিয়ে বছরের যে কোনও সময়ে এই গাছের চাষ করতে পারেন৷ বর্ষাকালে এই চারা রোপন করলে সহজেই তা বেড়ে উঠতে থাকে৷ তবে বীজ বপনের আগে বীজ ১ দিন পর্যন্ত হালকা গরম জলে ভিজিয়ে রাখতে হয়৷
যষ্টিমধু –
জুলাই থেকে অগস্ট পর্যন্ত এর চাষ করা হয়৷ আর তাই জুন থেকেই এর প্রস্তুতি শুরু করে দেন কৃষকেরা৷ জলনিকাশি ব্যবস্থা উচ্চমানের হওয়া প্রয়োজন এই গাছ চাষের জন্য৷ মনে রাখতে হবে এর চাষের আগে জমিতে কমপক্ষে ১৫ টন গোবর সার দেওয়া প্রয়োজন, এরপরেই এটি চাষ করা উচিত৷
ঘৃতকুমারী –
এর ভালো উৎপাদনের জন্য জলনিকাশি ব্যবস্থা ঠিক রাখতে হবে৷ এই ধরনের ঔষধি গুনসম্পন্ন গাছ শীতকাল বাদ দিয়ে যে কোনও সময় চাষ করতে পারেন৷ বর্ষাকালে দূরত্ব রেখে বীজ বপন করতে হবে৷ কম সময়ের মধ্যেই ব্যবহারোপযোগী হয়ে ওঠে এগুলি৷
অগ্নিশিখা বা কলিহারি –
এটি চাষের জন্য কৃষকেরা জুন মাসেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন৷ জুলাইয়ে ভালো বৃষ্টিতে এর চাষ শুরু করা যেতে পারে৷ উল্লেখ্য, ১ হেক্টর জমির জন্য প্রায় ১০ ক্যুইন্টাল কন্দের প্রয়োজন৷ এটি চাষের আগেও জমিতে গোবর সার প্রয়োগ করে তা প্রস্তুত করে নিতে হবে৷
পৃথিবীতে ভোজ্য মসলা যতরকম আছে তারমধ্যে দারুচিনি সবথেকে উল্লেখযোগ্য। এই প্রাচীনতম মসলা বহুদিন ধরে ওষধি হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে চলেছে। এছাড়াও খাবারে স্বাদ বাড়ানো থেকে শুরু করে, পানীয় এবং তরল মশলাদার খাবারে স্বাদ বাড়ানোর জন্যও এই দারচিনির ব্যবহার হয়। এলাচ, গোলমরিচ, লবঙ্গের সাথে সাথে দারুচিনির নামও মসলা হিসেবে একই পংক্তিতে উচ্চারিত হয়। বহু কৃষক দারুচিনির চাষ করে ভীষণভাবে উপকৃত হয়েছেন। বাজারে এই দারুচিনির চাহিদা প্রচুর পরিমানে থাকায়, এই চাষে ভালো লাভ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও সৌখিন মানুষেরাও ভালোবেসে দারুচিনির চাষ বাড়িতে করে থাকেন। দারুচিনি গাছের বাকল, ফুল, কুঁড়ি, পাতা, ফল, শেকড় সবকিছুই কাজে লেগে যায়। দারুচিনি গাছ বাড়িতে চাষ করতে গেলে ঘরে ছাদে দুই জায়গাতেই চাষ করা যায়।
মনে রাখতে হবে এই চাষ করতে গেলে উপযুক্ত পরিমানে রোদ দরকার। বাংলার জলবায়ুতে মূলত শীতকালে এই চাষ করা সবথেকে ভালো। জানুয়ারি মাসে দারুচিনি গাছে ফুল ফোটা আরম্ভ করে, এবং এই গাছের ফল পাকতে আরম্ভ করে জুলাইয়ে। সেইসময়ই ফল থেকে বীজ সংগ্রহ করে নিয়ে এসে বাগানে বা টবে রোপন করে দেওয়া উচিত।
প্রয়োজনীয় রোদ (Sunlight)
কড়া সূর্যালোক দারুচিনি জন্য প্রয়োজনীয়, তাই এটি পর্যাপ্ত রোদ পাওয়া যায় এমন জায়গায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দারুচিনি রোপন করতে গেলে রৌদ্রোজ্জ্বল স্থান যেমন জানালার ধারে, ব্যালকনি কিংবা ছাদের খালি স্থান ব্যবহার করতে হবে।
উপযুক্ত মাটি (Soil)
দারুচিনি চাষের জন্য ভাল মানের মাটি ব্যবহার করা আবশ্যক। বাগানের মাটি ব্যবহার না করাই ভালো, কেননা এতে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। অনে সময় আমরা আশেপাশ থেকে মাটি নিয়েই টব ভরে গাছ লাগানো হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সংবেদনশীল গাছগুলোতে এই উপায় কার্যকরী হয় না। নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভাল এমন মাটি ব্যবহার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে উত্তম নিষ্কাশনযুক্ত বেলে দোআঁশ মাটি ব্যবহার করা সবথেকে উত্তম। জেনে রাখা ভালো দারুচিনি খরা একদমই সহ্য করতে পারে না। মাটির বিকল্প হিসেবে ১৫% ট্রাইকোকমপোস্টযুক্ত কোকোডাস্ট ব্যবহার করা যেতে পারে।
বাইরে চাষ করার জন্য এক মিটার (৩০ সেন্টিমিটার গভীর) পর্যন্ত গর্ত করে মাটি দিয়ে পূরণ করে নিতে হবে। ঘরের ভিতরে বা ছাদবাগানের দারুচিনি চাষের জন্য একটি বড় পাত্র প্রয়োজন হবে।
রোপন (Planting)
দারুচিনির বীজ সংগ্রহও করা যায় অথবা নার্সারি থেকে দারুচিনির গাছ কিনেও আনা যায়।
বাইরে চাষের ক্ষেত্রে
দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে ১ মিটার x ১ মিটার এবং ৩০ সেমি গভীরতায় খনন করে মাটি দিয়ে গর্তটি পূরণ করতে হবে।
ঘরের মধ্যে টবে রোপনের ক্ষেত্রে
নিচে গর্ত সহ বড় সিরামিক পাত্র (৬০ x ৫০ সেমি) ব্যবহার করতে হবে। পাত্রটি মাটি বা কোকোডাস্ট দিয়ে পূরণ করে নিতে হবে। ৩০ সেন্টিমিটার গভীরতা এবং ৩০ সেন্টিমিটার প্রস্থের একটি গর্ত তৈরি করতে একটি বাগান ট্রোয়েল ব্যবহার করে নেওয়া ভালো। বীজ ব্যবহার করলে ১.৫ সেন্টিমিটার গভীর গর্ত তৈরি করে নেওয়া উচিত। এবার গাছটি গর্তের মধ্যে রেখে মাটি দিয়ে চাপা দিতে হবে। বীজ ব্যবহার করলে প্রতি ১.৫ সেমি গর্তে একটি করে বীজ পুঁততে হবে এবং মাটি দিয়ে বীজটি ঢেকে দিতে হবে।
মাটি সবসময় ভেজা রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণ জল দিতে হবে। দারুচিনি গাছ পাত্রে রোপন করার পর, টবের নিচের গর্ত থেকে জল বের না হওয়া পর্যন্ত জল দিতে হবে। টবের উপরের ৫ সেন্টিমিটার শুকিয়ে গেলেই আবার গাছটিকে জল দিতে হবে।
গাছের পরিচর্যা (Caring)
দারুচিনি গাছে নিয়মিত সার প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম বছর ৫০ গ্রাম টিএসপি, ৭৫ গ্রাম এমওপি ও ৫০ গ্রাম ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে। প্রতিবছর ২-৩ কেজি ট্রাইকোকম্পোস্ট ও সার প্রয়োগ শেষে একই হারে টিএসপি, এমওপি ও ইউরিয়া দিতে হবে।
দারুচিনি প্রথম ধরতে দুই থেকে তিন বছর সময় নেয় এবং তার পরে প্রতি দুই বছর পরপরই ফসল দিতে থাকে। দারুচিনি গাছ কম করে ১০-১৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। তাই একে নিয়মিত করে ছোট রাখতে হবে। পাঁচ বছর বয়সী দারুচিনি গাছ থেকে নিয়মিত দারুচিনি সংগ্রহের ডাল পাওয়া সম্ভব। দারুচিনি ব্যবহার করার জন্য যে শাখাগুলি কাটা হবে সেগুলি থেকে বাকল তুলে নিতে হবে, বাকলগুলি ব্যবহার করার আগে জলে ভালোভাবে ভিজিয়ে নেওয়া উচিত।
পৃথিবীতে জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, হারিয়ে যাচ্ছে বহু প্রাণী ও উদ্ভিদ বৈচিত্র। চাষবাসের জমিরও সংকুলান ঘটছে সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে। গগনচুম্বী বাড়ি ঘিরে ফেলছে সমস্ত ফাঁকা জমিন। শখ করে মানুষ খোলা জায়গায় যে গাছ লাগবে অথবা ফল-ফুলের চারা সেই উপায়ও আর নেই। গাছ লাগানোর জন্য সামান্য জায়গাও ফাঁকা থাকছে না আর। তবে আমাদের করণীয় কী? বৃক্ষরোপন কি তবে অচিরেই বন্ধ হয়ে যাবে। বেঁচে থাকার জন্য তো গাছ লাগাতে হবেই। বাড়ির একটুকরো বারান্দা অথবা ব্যালকনিতেও সুন্দর ভাবে ইচ্ছা করলে গাছ লাগানো যায়। বাড়ির ছাদেও বানানো যায় সুন্দর বাগিচা। শহরের মানুষদের জন্য ছাদ বাগানের কোনও বিকল্পও নেই। বাড়ির মধ্যেকার ব্যালকনি অথবা ছাদের একটুকরো জমিতেও, ইচ্ছা করলে টবে চাষ করা যায় বিভিন্ন ফুলের ও ফলের গাছ।
শাকসবজি, পেয়ারা, লেবু প্রভৃতি দেশীয় গাছ টবে বাড়তে দেওয়া থেকে শুরু করে বর্তমানে বহু বিদেশী গাছের চারাও মানুষ ব্যালকনি অথবা ছাদে চাষ করছেন। তার মধ্যে থাই মিষ্টি তেঁতুল টবের চাষ পদ্ধতি হিসাবে অত্যন্ত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। প্রথমত মিষ্টি তেঁতুলের চাষ করতে গেলে, নার্সারি থেকে এই বিশেষ তেঁতুলের সঠিক বীজ নিয়ে আনতে হবে। তবে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কলম পাওয়া একটু দুষ্কর কাজ। বুঝে সঠিক চারা নিয়ে আসা বাগান মালিকের উপরেই বর্তায়।
থাই মিষ্টি তেঁতুলের ফুল থেকে ফল ধরতে প্রায় ৭ মাস সময় লাগে। বছরে দু’বার থাই মিষ্টি তেঁতুলের গাছে ফল ধরে। প্রথমবার বর্ষাকালে এবং দ্বিতীয়বার শীতকালে। এই গাছের পরিচর্যা আলাদা করে করার কোনও দরকার পড়ে না। গাছের যত্নআত্তি নিতে হয় ঠিকই, কিন্তু তা বলে, আলাদা করে কোনও বিশেষ যত্ন নিতে হয় না।
গাছ লাগানোর পদ্ধতি (Planting):
থাই মিষ্টি তেঁতুল চাষের জন্য আদর্শ মাটি হল, দো-আঁশ বা বেলে দো-আঁশ মাটি। এই দু’টি মৃত্তিকার মধ্যে যে কোনও একটি বেছে নিন। তারপর বেছে নেওয়া মাটির দুই ভাগ অংশের সাথে গোবর, ১০০ গ্রাম, টিএসপি ১০০ গ্রাম, পটাশ, ২৫০ গ্রাম, হাড়ের গুঁড়ো এবং ৫০ গ্রাম সরিষার খোল একসঙ্গে মিশিয়ে ২০ ইঞ্চি মাপের বড় টবে জল মিশিয়ে রেখে দিতে হবে। ১০ থেকে ১২ দিন পর টবের মাটি ভালো করে খুঁচিয়ে দিয়ে আরও ৪-৫ দিন রেখে দিতে হবে। ৪ থেকে ৫ দিন বাদে মিষ্টি তেঁতুলের একটি ভালো চারা ওই টবে লাগান।
পরিচর্যা(Caring):
চারা লাগানোর প্রথম কয়েক মাস তেমন যত্নের দরকার পড়বে না। অবশ্যই গাছে এই সময়টুকু পর্যাপ্ত জলের যোগান, এবং আগাছা পরিষ্কারের কাজ করতে হবে। ছয় মাস চারা লাগানোর সময়সীমা ফুরোলেই ১ মাস বাদে বাদে গাছে সরষের খোল মিশ্রিত পচা জল দিতে হবে। মনে রাখতে হবে খোল দেওয়ার আগে গাছের মাটি খুঁচিয়ে নিতে হবে।
রোগ দমন (Disease management):
সাধারণত থাই মিষ্টি তেঁতুল গাছে পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখা যায় না। কিন্তু বর্ষাকালে অনেক সময় তেঁতুল গাছে ছত্রাক হানা দেয়। এর ফলে তেঁতুল ফেটে যায়। এই অসুবিধার থেকে গাছকে বাঁচাতে হলে, বর্ষাকাল আসার আগেই ভালো ছত্রাকনাশক ওষুধ ১০ দিন অন্তর গাছে স্প্রে করে ছড়িয়ে দিতে হবে।
বাংলার বেজায় টক তেঁতুলের সঙ্গে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কোনও তুলনাই চলে না। অত্যন্ত মিষ্টি খেতে এই তেঁতুল থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়ায় চাষ প্রভূত পরিমাণে হলেও, আমাদের রাজ্য এই ফলের চাষ এখনও ততটা গতি পায়নি। কিন্তু আপনি আপনার ব্যালকনি অথবা ছাদে সহজেই এই থাই তেঁতুলের গাছ লাগাতে পারেন।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন