আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

পরিবেশ

বন্যপ্রাণি অপরাধ দমন খুবই চ্যালেঞ্জিং কাজ

এ এস এম জহির উদ্দিন আকন বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জে ১৯৭১ সালের ১ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মরহুম মো. ইলিয়াছ আকন ছিলেন প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক, মা সেলিমা খানম গৃহিণী। জহির ১৯৮৭ সালে বরিশালের গৌরনদী সরিকল ম্যাধমিক বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও ১৯৮৯ সালে সরকারি গৌরনদী কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। এরপর বরিশালের বিএম কলেজ থেকে উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগে ১৯৯৩ সালে স্নাতক ও ১৯৯৪ সালে স্নাতকোত্তর শেষ করেন। জহির উদ্দিন আকন ২০১৯ সালে বাংলাদেশ বন্যপ্রাণি অপরাধ দমন ইউনিটের পরিচালক হিসেবে যোগদান করেন।

তার কর্মময় জীবনের চ্যালেঞ্জ, সাফল্য ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা হয় জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ফিচার লেখক সাজেদুর আবেদীন শান্ত—

জাগো নিউজ: আপনার ছোটবেলা কেমন কেটেছে?
জহির উদ্দিন আকন: বাল্যজীবন কেটেছে গ্রামীণ পরিবেশে প্রকৃতির মধ্যে। আমাদের ছোটবেলায় গ্রামের প্রত্যেকটি বাড়িতেই ছিল ছোট একটি গ্রামীণ বন। এ বনে ফলদ, কাষ্ঠল গাছ ছাড়াও ছিল প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো অনেক পশু-পাখির আবাস উপযোগী গাছ, ঝোঁপ, লতা-আগাছা ইত্যাদি। ছোটবেলায় সুযোগ পেলেই এসব বন-বাঁদাড়ে দৌড়-ঝাঁপ ছিল নিত্য-নৈমিত্তিক কাজ।

জাগো নিউজ: পড়াশেনায় কোনো প্রতিবন্ধকতা ছিল কি?
জহির উদ্দিন আকন: ছোটবেলায় পড়াশোনার প্রতি বেশ আগ্রহ ছিল। কিন্তু পড়াশোনার উপকরণের ঘাটতি ছিল প্রকট। পাঠ্যবইয়ের বাইরে পড়া যায় এমন কোনো বই কোথাও পাওয়া যেতে পারে, তা জানতাম না। হাই স্কুল জীবনে পাঠ্যবইয়ের বাইরে হাতেগোনা কয়েকটি বই পড়ার সৌভাগ্য হয়েছিল। আর পাঠ্যবই অধ্যয়নে কোনো সমস্যা সৃষ্টি হলে হাতের কাছে কাউকে পাওয়া যেত না তা সমাধানের জন্য। অবশ্য এতে একটি বড় সুবিধা হতো, তা হলো- সমস্যাটি নিয়ে নিজস্ব সমাধানের চেষ্টা চলতো। যা অনেক ক্ষেত্রেই মেধার বিকাশ সাধন করতো। বাবা-মা পড়াশোনার মাধ্যমে বড় কিছু হওয়ার স্বপ্ন দেখাতেন। স্কুল শিক্ষক হিসেবে বাবার স্বল্প আয় লেখাপড়ার জন্য কখনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেনি।

জাগো নিউজ: কখনো কি স্বপ্ন দেখেছিলেন বন্যপ্রাণি নিয়ে কাজ করবেন?
জহির উদ্দিন আকন: বন্যপ্রাণি নিয়ে কাজকে ঠিক স্বপ্ন হিসেবে না দেখলেও প্রকৃতি তথা বন্যপ্রাণির আবাসস্থল উন্নয়নে ছোটবেলা থেকেই কাজ করে আসছি। বিশেষ করে বন্যপ্রাণির খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত বট, পাকুড়, ডুমুর, ডেউয়া, দেশিগাব, জিবন ইত্যাদি গাছ জন্মানোর চেষ্টা ছোটবেলা থেকেই অব্যাহতভাবে চালিয়ে আসছি। যখনই সুযোগ হয়েছে, একটি গাছ লাগিয়েছি কিংবা একটি গছের যত্ন নিয়েছি, যা মানুষের চেয়ে পশু-পাখির কল্যাণে বেশি কাজে এসেছে।

জাগো নিউজ: আপনি বন্যপ্রাণি অপরাধ দমন ইউনিটের পরিচালক। চ্যালেঞ্জিং এ কর্মজীবনের গল্প শুনতে চাই—
জহির উদ্দিন আকন: বন্যপ্রাণি অপরাধ দমন ইউনিটের পরিচালকের দায়িত্বের অধিক্ষেত্র সমগ্র বাংলাদেশ। দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে প্রথমেই আমার ইউনিটের এগারো জন লোকবল দেখে মারাত্মক হতাশ হয়ে যাই। অধিকন্তু ইউনিটে কাজ করার জন্য কোনো যানবাহন নেই, যা আমাকে আরও দুর্বল করে দেয়। বন্যপ্রাণি অপরাধের কাজ করতে গিয়ে দেখি অপরাধ সংঘঠিত হয় বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। সেখানে কিভাবে পৌঁছাবো, কিভাবে সেবা দেব, কিভাবে মানুষের পাশে দাঁড়াবো- ভাবনাটি প্রথমদিকে আমাকে খুব বেশি বেদনা মথিত করে দিত। প্রথমদিকে সমস্যাগুলোকে খুব বেশি করে দেখতাম। সমস্যা সমাধানের বিশেষ কোনো উপায় পেতাম না। কেননা বন্যপ্রাণি অপরাধ দমন ইউনিটটি ২০১২ সালে বন্যপ্রাণি (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনটি পাস হওয়ার পরে প্রকল্পের আওতাধীনে কার্যক্রম শুরু করলেও এবং সে অবধি ইউনিটটি প্রকল্পের আওতায় চললেও এখানে সরকার কাউকে স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য নিযুক্ত করেননি। কাজেই সে হিসেবে পূর্বসূরিরও বিশেষ কোনো অভিজ্ঞতা আমাকে পথ দেখায়নি।

কিছুদিন অতিবাহিত হওয়ার পর সমস্যাগুলো সমাধানের নিজস্ব উপায় খুঁজতে থাকলাম। প্রথমেই বন্যপ্রাণি অপরাধের তথ্য প্রাপ্তির বিষয়ে নিজস্ব ফেসবুক প্রোফাইলকে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার কাজে নিজেকে নিয়োজিত করলাম। মোবাইল নাম্বারকে হটলাইন নাম্বার ঘোষণা করে ফেসবুকে সারাদেশে বন্যপ্রাণি অপরাধের তথ্য জানানোর আহ্বান জানাই। এরপর জাতীয় জরুরি কল সেন্টার ৯৯৯-এ নিজের এবং ইউনিটের কয়েকজনের নাম্বারকে সংযুক্ত করার ব্যবস্থা করি। সেইসঙ্গে সামাজিক মিডিয়ায় নিজেকে এবং ইউনিটের সবাইকে ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করি। এছাড়াও নিজের এবং ইউনিটের সবার মোবাইল নাম্বার ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে যেখানেই সুযোগ সৃষ্টি হয়; সেখানেই ভিজিটিং কার্ড বিলি করার ব্যবস্থা করি।

অল্প কিছুদিন যেতে না যেতেই সারাদেশ থেকে বন্যপ্রাণি অপরাধের তথ্য প্রাপ্তির সমস্যাটা সমাধান করতে পারলাম। কিন্তু তথ্য প্রাপ্তির সাথে সেবা প্রদানের চ্যালেঞ্জটি প্রকটভাবে পরিলক্ষিত হলো। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বন্যপ্রাণি অপরাধ দমনের টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পারে না। কাজেই এ সমস্যা সমাধানের জন্য ইউনিটের সব সদস্যকে নিয়ে সিদ্ধান্ত নিলাম, বন্যপ্রাণি অপরাধের তথ্য প্রাপ্তির পর প্রতিটি তথ্যকে অত্যন্ত আন্তরিকভাবে গ্রহণ করার। তথ্য প্রদানকারীর মোবাইলে প্রয়োজনে ফোন ব্যাক করে সমস্যা বিস্তারিতভাবে জেনে তথ্য প্রদানকারীর মাধ্যমেই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে তাকে সন্তুষ্ট করতে। এ ক্ষেত্রে সমস্যা সমাধান করা না গেলে চেষ্টা করা হয় স্থানীয় বন বিভাগ, এলাকার মেম্বার, চেয়ারম্যান, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন কিংবা ওই এলাকায় বিদ্যমান স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের। দেখা গেছে, উল্লেখিত প্রক্রিয়ায় প্রায় শতভাগ সমস্যারই সমাধান করা সম্ভব হয়। আর এভাবেও যদি সমস্যার সমাধান করা না যায়, তখন বন্যপ্রাণি অপরাধ দমন ইউনিটের টিম সেখানে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হয়।

তৃতীয় চ্যালেঞ্জিং কাজটি হলো বন্যপ্রাণি অপরাধের তথ্য প্রদানকারীদের সমন্বিত করা। তাদের এ কল্যাণকর চিন্তাটিকে জীবনের প্রাত্যহিক অভ্যাসে পরিণত করা। এ জন্য প্রত্যেকটি উপজেলায় এদের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের আওতায় সংগঠিত করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী কাজ। এ জন্য তথ্য প্রদানকারীদের সাথে ধারাবাহিক যোগাযোগ অব্যাহত রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

বন্যপ্রাণি অপরাধ দমন ইউনিটকে রাজস্ব খাতের আওতায় নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জিং কাজ। কেননা রাজস্ব খাতে অন্তর্ভুক্তি ছাড়া ইউনিটের কাজকে টেকসই ও গতিশীল করা কখনোই সম্ভব নয়।

জাগো নিউজ: কর্মজীবনে কার কার অনুপ্রেরণা পেয়েছেন?
জহির উদ্দিন আকন: কর্মজীবনে দায়িত্বানুভূতিকে কাজের প্রেরণা হিসেবে নিয়েছি। কাজ করতে গিয়ে সাধারণ মানুষের ভালোবাসা দায়িত্বকে বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে।

জাগো নিউজ: বন্যপ্রাণি অপরাধ দমন ইউনিট কোন কোন বিষয়ে কাজ করে?
জহির উদ্দিন আকন: বন্যপ্রাণি অপরাধ দমন ইউনিট বন ও বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ, বন্যপ্রাণি অপরাধ দমন, বন্যপ্রাণি বিষয়ক জনসচেতনতা সৃষ্টি, এলাকাভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তৈরি, যুবসমাজকে সংগঠিত করা প্রভৃতি কাজ করে যাচ্ছে।

জাগো নিউজ: বন্যপ্রাণি আইন সবার কাছে কীভাবে পৌঁছানো যায়?
জহির উদ্দিন আকন: বন্যপ্রাণি (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ বাংলাদেশের সব মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্য প্রথমেই এ বিষয়ে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা পাঠ্যক্রমে বন্যপ্রাণি সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা ও আইন সম্পর্কে বেসিক ধারণা প্রদান করতে হবে। মসজিদের ইমাম ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের পুরোহিত বা ধর্মগুরুদের এ আইন সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে পারলে, তারাও সাধারণ মানুষকে বন্যপ্রাণি সংরক্ষণে উপদেশ দিতে পারবেন। সর্বোপরি এ কাজে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াকে (আইনটি সবার কাছে পৌঁছাতে) বিশেষ অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। আর এ ধরনের সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারলে অল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের এ আইনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সব মানুষের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হবে।

জাগো নিউজ: প্রত্যন্ত অঞ্চলে কতটুকু কার্যকর এ আইন?
জহির উদ্দিন আকন: প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ মানুষের কাছে বাংলাদেশের বন্যপ্রাণি (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ এর গুরুত্ব এখনো সঠিকভাবে তুলে ধরা সম্ভব হয়নি। বন্যপ্রাণি সংরক্ষণই এ আইনের অন্যতম লক্ষ্য। কাজেই ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে এ দেশের সর্বস্তরের মানুষকে সম্পৃক্ত করার কাজ এখনো অনেক বাকি।

জাগো নিউজ: আপনার কাজ নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
জহির উদ্দিন আকন: ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাসমূহের মধ্যে বন্যপ্রাণি সংরক্ষণে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া, বন্যপ্রাণি বিষয়ক সচেতনতামূলক লিফলেট, পোস্টার, বুকলেট এবং স্টিকার বিতরণ, যুবসমাজকে সংগঠিত করে বাংলাদেশের সব জেলা এবং উপজেলায় বন্যপ্রাণি ও পরিবেশ সংরক্ষণে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তৈরি করা, পশু-পাখির জন্য উপযুক্ত গাছ-পালা লাগানো, সরকারি দফতর ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ ও আইন সম্পর্কে সম্যক ধারণা প্রদান এবং মসজিদের ইমাম ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের পুরোহিত বা ধর্মগুরুদের এ আইন সম্পর্কে সচেতন করে তোলা।

  • বন্যপ্রাণি অপরাধ দমন খুবই চ্যালেঞ্জিং কাজ

    বন্যপ্রাণি অপরাধ দমন খুবই চ্যালেঞ্জিং কাজ

  • বন্যপ্রাণি অপরাধ দমন খুবই চ্যালেঞ্জিং কাজ

    বন্যপ্রাণি অপরাধ দমন খুবই চ্যালেঞ্জিং কাজ

  • বন্যপ্রাণি অপরাধ দমন খুবই চ্যালেঞ্জিং কাজ

    বন্যপ্রাণি অপরাধ দমন খুবই চ্যালেঞ্জিং কাজ

  • বন্যপ্রাণি অপরাধ দমন খুবই চ্যালেঞ্জিং কাজ

    বন্যপ্রাণি অপরাধ দমন খুবই চ্যালেঞ্জিং কাজ

  • বন্যপ্রাণি অপরাধ দমন খুবই চ্যালেঞ্জিং কাজ

    বন্যপ্রাণি অপরাধ দমন খুবই চ্যালেঞ্জিং কাজ

  • বন্যপ্রাণি অপরাধ দমন খুবই চ্যালেঞ্জিং কাজ

    বন্যপ্রাণি অপরাধ দমন খুবই চ্যালেঞ্জিং কাজ

  • বন্যপ্রাণি অপরাধ দমন খুবই চ্যালেঞ্জিং কাজ
  • বন্যপ্রাণি অপরাধ দমন খুবই চ্যালেঞ্জিং কাজ
  • বন্যপ্রাণি অপরাধ দমন খুবই চ্যালেঞ্জিং কাজ
  • বন্যপ্রাণি অপরাধ দমন খুবই চ্যালেঞ্জিং কাজ
  • বন্যপ্রাণি অপরাধ দমন খুবই চ্যালেঞ্জিং কাজ
  • বন্যপ্রাণি অপরাধ দমন খুবই চ্যালেঞ্জিং কাজ
বিজ্ঞাপন
মন্তব্য করুন

অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন

Leave a Reply

পরিবেশ

ছাদ বাগানের জন্য কয়েকটি টিপস

ছাদ বাগানীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। টবে, ড্রামে গাছ লাগানো হয়। কেউ ফল, কেউবা সবজির গাছ লাগান। কেউ সফল হন। কেউ সফল হন না। ছোট ছোট কিছু ভুল বাগানীরা করে থাকেন। সে কারণে যত্ন নিলেও ফল আসে না। এখানে ছাদ বাগানীদের জন্য কিছু টিপস দেয়া হলো, যা মানলে সফলতা পাওয়া সহজ হতে পারে।

প্রথমেই মনে রাখতে হবে, টবে বা ড্রামে গাছ লাগালে তাকে খাবার দিতে হবে। প্রকৃতিতে বিদ্যমান গাছের মতো সে খাবার সংগ্রহ করতে পারে না। রোগ-বালাই হলো কিনা সেটাও বুঝে ব্যবস্থা নিতে হবে। ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে।

১. মাটির সাথে অবশ্যই কিছু কোকোপিট মেশাবেন। গাছের গোড়া স্যাতস্যাতে হতে দিবেন না। স্যাতস্যাতে হলে অসংখ্য রোগ হবে। মাটি ভেজা থাকবে তবে স্যাতস্যাতে না। কেকোপিট মেশালে পানি কম দিলেও হবে। কোকোপিট (নারকেলের ছোবলার গুড়া) পানি ধরে রাখে। অতি বৃষ্টি হলে গোড়ায় পানি জমতে দেয় না। হালকা হওয়ায় ছাদে ওজনের চাপ পড়ে না। এছাড়া কোকোপিটে কিছু পুষ্টি উপাদান আছে। যা গাছের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। কোকোপিটে চারা দ্রুত গজায়, বড় হয়। মাটির চেয়ে কোকোপিটে চারা ভালো হয়।

২. গাছের জন্য বিরিয়ানি হলো সরিষার খৈল-পচা পানি। মাটির হাড়িতে খৈল পচাতে হবে। কমপক্ষে ৫ দিন। ৭ দিন কিংবা বা ১৫ দিন হলে উত্তম। অল্প পানিতে পচিয়ে তার সাথে আরো পানি মিশিয়ে দিতে হবে। এটি গাছের জন্য অত্যন্ত উপকারী। একটু গন্ধ হয়, তাই অল্প একটু গুড় দিতে পারেন। ছাদে হাড়িতে পচালে বাসায় গন্ধ আসবে না। বৃষ্টির সময় খৈল-পচা পানি দেবেন না। পুকুরের নিচে থাকা পাক কাদা গাছের জন্য খুব উপকারী।

৩. আমরা জানি, মাটিতে অসংখ্য ক্ষতিকর ছত্রাক থাকে। যা গাছকে মেরে ফেলার জন্য যথেস্ট। তাই মাটি রেডি করার সময় কিছুটা বায়োডামা সলিট দিবেন। এটি উপকারী ছত্রাক। মাটিতে ক্ষতিকারক উপাদানগুলো মেরে ফেলে। আবার জৈব সারের কাজও করে। গাছের জন্য মাটি হবে ঝুরঝুরে, হালকা।

৪. যাই লাগান না কেন, ভালো জাতের বীজ কিনা নিশ্চিত হয়ে নেবেন। ভালো বীজে ভালো ফসল হবে। নতুবা যতই যত্ন নেন না কেন, সব পরিশ্রম বেলাশেষে জলে যাবে। বীজ থেকে নিজে চারা করা উত্তম। কারণ বাজার থেকে যে চারা কিনবেন সেটার জাত ভালো হবে সে নিশ্চয়তা কোথায়? ছত্রাকনাশক দিয়ে বীজ শোধন করে নেয়া উত্তম। পদ্ধতি হলো- ছত্রাকনাশক দেয়া পানিতে কিছুটা সময় বীজ ভিজিয়ে রাখতে হবে। ম্যানসার, মেটারিল দুটি ছত্রাকনাশক।

৫. গাছ বেশি তো ফলন বেশি- এটি ভুল ধারণা। অল্প জায়গায় বেশি গাছ লাগানো যাবে না। গাছ পাতলা করে লাগাতে হবে। বেশি লাগালে গাছ প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাবে না। একটি ফলের ক্রেটে মাত্র দুটি গাছ। একটি টবে একটি গাছ। ক্রেট বা টবে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।

৬. ছাদে মাচা দেয়া সমস্যা। কারণ ঘুঁটি থাকে না। এ জন্য ফলের ক্রেটের চারপাশে লাঠি বেঁধে সহজে মাচা দেয়া যায়। লতাপাতা জাতীয় গাছ লাগানোর পাত্র একটু গভীর হলে উত্তম। গাছের জন্য সবচেয়ে বেশি ভালো জৈব সার হলো পাতা-পচা সার, তারপর ভার্মি কম্পোস্ট, তারপর গোবর সার। পাতা-পচা সার সহজলভ্য নয়। দাম বেশি। কিন্তু ভার্মি কম্পোস্ট সহজলভ্য। মাটির সঙ্গে মিনিমাম ৪০% জৈব সার দেয়া উত্তম।
৭. নিম কীটনাশককে ক্ষতিকারক পোকা-মাকড় খুব অপছন্দ করে। এটি দিলে তারা বিরক্ত বোধ করে। গাছে বাসা বাঁধতে পারে না। প্রতি সাত দিনে একবার সব গাছের পাতায় নিম কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। মাসে একবার ইপসম সল্ট স্প্রে করে দেয়া উত্তম। একইভাবে মাসে একবার পানির সঙ্গে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড মিশিয়ে স্প্রে করা ভালো।

৮. ডাটা, পুইশাক, লালশাক, ধনেপাতা এসব লাগাতে পারেন। মাত্র ২৫ দিনে খেতে পারবেন। লালশাক লাগালে নেট দিয়ে ঘিরে দেবেন। শাকপাতা লাগালে দ্রুত আউটপুট পাবেন। যা আপনাকে প্রেরণা দেবে। পুইশাক গাছের পাতায় দাগ হলে পাতা কেটে দিন। অথবা ছত্রাকনাশক স্প্রে করেন। অথবা গাছ উঠিয়ে আবার লাগান। ইউরিয়া সার দিলে পুইশাক দ্রুত বাড়বে। শশা গাছের বৃদ্বির জন্য ডিএপি সার দিলে ভালো হবে। শশা গাছে ছাড়া ছাড়া ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হয়। খুব রোদ, গাছের গোড়ায় মালচিং করে দিয়ে উত্তম ফল মিলবে। মালচিং হলো গাছের গোড়ায় বিশেষ পলিথিন কিংবা শুকনো পাতা, খড় দিয়ে ঢেকে দেয়া।

৯. ফুল আসার পরে প্রানোফিক্স অথবা মিরাকুরান গাছের পাতায় শেষ বিকালে স্প্রে করবেন। বাসায় দুইটি গ্রুপের ছত্রাকনাশক রাখা ভালো। যেমন- ম্যানসার, মেটারিল। ১৫ দিনে একবার স্প্রে করবেন। এগরোমিন্ড গোল্ড অনুখাদ্য বা অন্য কোনো অনুখাদ্য বাসায় রাখতে হবে। মাসে কমপক্ষে একবার স্প্রে করবেন। অতিরিক্ত গরম, বৃষ্টি, খাদ্যের অভাব, গাছ রোগাক্রান্ত, আবহাওয়া দ্রুত আপডাউন করা ইত্যাদি কারণে ফুল ঝরে পড়তে পারে। আবার পরাগায়ন না হলে ঝরে পড়তে পারে। এ জন্য হাতের মাধ্যমে পরাগায়ন করতে হবে। পুরুষ ফুলের পরাগদণ্ড নারী ফুলে গর্ভে ঘষে দিতে হবে।

১০. ছাদ বাগানে গাছ মারা যাওয়ার অন্যতম কারণ পানি বেশি বা কম দেয়া। যতটুকু লাগে ঠিক ততটুকু পানি দিতে হবে। কোন গাছের কি চাহিদা, রোগ একটু স্টাডি করলে সহজে সফল হতে পারবেন।

১১. গাছের পাতার নিচে খেয়াল করবেন। বেগুন গাছের পোকা মারার জন্য সেক্স ফোরেমান ফাঁদ লাগাবেন। ডগা ছিদ্র বা ফল ছিদ্র হলে সাইপারমেত্রিন গ্রুপের কীটনাশক দিতে হবে। একটি বেগুন গাছ অনেক দিন ফল দেয়। ঢেড়স গাছ বেশি রোদ পড়ে এমন জায়গায় লাগাবেন। বেগুন, ঢেড়স, লালশাক, পুইশাক, ধনেপাতা, ডাটা শাক- এসব গাছের খুব যত্ন করতে হয় না।

১২. রসুন আর লবঙ্গ বেটে সেই পানি গাছে স্প্রে করলে পোকা কম আসবে। মরিচ গাছে নেপথলিন বেঁধে দিন, পোকা কম আসবে। পাতা কোকড়ালে ভার্মিটেক কিংবা এবোম কীটনাশক দিন। কোকড়ানো পাতা ফেলে দিন। মরিচ গাছে দশ দিন পর পর ডায়মেথট গ্রুপের (যেমন টাফগর) কীটনাশক দিলে উপকার হবে। সবকিছু করছেন, তারপরও কাজ হচ্ছে না। এক্ষেত্রে গাছের জায়গা বদল করেন, উঠিয়ে অন্যত্র লাগান।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

দৈনন্দিন

নিপাহ্‌ ভাইরাসঃ খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়

নিপাহ্‌ ভাইরাস খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়
নিপাহ্‌ ভাইরাস খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়
খেজুরের রস সংগ্রহের প্রক্রিয়া।

শীতকাল এলেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে খেজুরের রস খাওয়ার চল বেড়ে যায়। অনেকে গাছ থেকে খেজুরের কলসি নামিয়ে সরাসরি কাঁচা রস খেয়ে থাকেন।

আবার অনেকে এই রস চুলায় ফুটিয়ে সিরাপ, পায়েস বা ক্ষীর বানিয়ে খান। এছাড়া রসের তৈরি ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়, ভেলি গুড়, বালুয়া গুড়, মিছরি গুড়সহ নানা ধরণের পিঠার বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।

নিপাহ্‌ ভাইরাস আতঙ্ক

খেজুর আরব দেশের প্রচলিত ফল হলেও ওইসব দেশে খেজুর, মূলত ফল উৎপাদননির্ভর, যেখানে কিনা বাংলাদেশের খেজুর গাছ রস উৎপাদননির্ভর।

কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, বাংলাদেশে সাধারণত কার্তিক থেকে মাঘ অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ হয়ে থাকে।

দেশটির সবচেয়ে বেশি রস সংগ্রহ হয় যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে।

মূলত খেজুর গাছের ডালপালা পরিষ্কার করে, ডগার দিকের কাণ্ড চেঁছে তাতে একটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি চোঙ বসিয়ে দেয়া হয়। চোঙের শেষ প্রান্তে ঝুলিয়ে দেয়া হয় একটি মাটির হাড়ি বা কলসি।

সেই চোঙ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রস এসে জমা হতে থাকে মাটির হাড়ি বা কলসিতে। এভাবে একটি গাছ থেকে দৈনিক গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লিটার রস সংগ্রহ করা যায় বলে কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গিয়েছে।

কিন্তু গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে নিপাহ্‌ ভাইরাস আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

পরিবেশ

জেনে নিন এই মরসুমে কোন কোন ঔষধি উদ্ভিদের চাষ আপনার জন্য সেরা

দেশের বিভিন্ন রাজ্যেই বর্ষার (Monsoon 2021) প্রভাবে চলছে বৃষ্টিপাত। এসময় কৃষকেরা খারিফ শস্য (Kharif Crops) বপনে তৎপর হয়ে ওঠেন। এই খরিফ মরসুমে কৃষকভাইরা সাধারণত অঞ্চলভেদে ধান, অড়হর, সোয়াবিন সহ বিভিন্ন চাষে মনযোগ দিয়ে থাকেন ৷ তবে এসব ছাড়াও, ঔষধি গুন সমৃদ্ধ (Medicinal Crops) গাছ চাষে বর্ষায় যে কতটা লাভ হতে পারে সে সম্পর্কে অনেকেই হয়তো জানেন না৷

বিশেষ করে বর্ষাকালেই এমন বহু ঔষধি গুন সম্পন্ন গাছ রয়েছে যাদের চাষ হতে পারে লাভজনক৷

বর্ষাকালে কোন কোন ঔষধি উদ্ভিদের চাষ করা যেতে পারে অথবা এই চাষ কীভাবেই বা করা যাবে সে বিষয়ে সঠিক তথ্য না পাওয়ার কারণেই অনেকের কাছে বিষয়টি অধরা৷ চলুন এই প্রতিবেদনে এমনই কিছু গাছ নিয়ে আলোচনা করা যাক যা কৃষকদের জন্য হতে পারে লাভদায়ক৷ তবে সঠিক সময়ে, সঠিক রোপন, সেচ, কীটনাশক দেওয়ার প্রয়োজন এগুলিতে, না হলে এর ওপর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে৷

অশ্বগন্ধা –

বর্ষায় এর চাষ ভালো৷ জুন থেকে অগস্ট পর্যন্ত এর চাষ করতে পারেন৷ এর বিভিন্ন জাত রয়েছে৷ উন্নত মানের গাছের চাষে কৃষকের লাভের পরিমাণও বৃদ্ধি পেতে পারে৷ উল্লেখ্য, প্রতি হেক্টরে ৫ কিলোগ্রাম বীজ ব্যবস্থা করতে হবে৷ যদি কেউ ১ হেক্টর জমিতে অশ্বগন্ধার চাষ করতে চায় তাহলে তাকে প্রায় ৫০০ বর্গমিটারে নার্সারি তৈরি করতে হবে৷ প্রায় ১ সেন্টিমিটার গভীরে বীজ বপন করতে হবে৷

শতমূলী –

শীত বাদ দিয়ে বছরের যে কোনও সময়ে এই গাছের চাষ করতে পারেন৷ বর্ষাকালে এই চারা রোপন করলে সহজেই তা বেড়ে উঠতে থাকে৷ তবে বীজ বপনের আগে বীজ ১ দিন পর্যন্ত হালকা গরম জলে ভিজিয়ে রাখতে হয়৷

যষ্টিমধু –

জুলাই থেকে অগস্ট পর্যন্ত এর চাষ করা হয়৷ আর তাই জুন থেকেই এর প্রস্তুতি শুরু করে দেন কৃষকেরা৷ জলনিকাশি ব্যবস্থা উচ্চমানের হওয়া প্রয়োজন এই গাছ চাষের জন্য৷ মনে রাখতে হবে এর চাষের আগে জমিতে কমপক্ষে ১৫ টন গোবর সার দেওয়া প্রয়োজন, এরপরেই এটি চাষ করা উচিত৷

ঘৃতকুমারী –

এর ভালো উৎপাদনের জন্য জলনিকাশি ব্যবস্থা ঠিক রাখতে হবে৷ এই ধরনের ঔষধি গুনসম্পন্ন গাছ শীতকাল বাদ দিয়ে যে কোনও সময় চাষ করতে পারেন৷ বর্ষাকালে দূরত্ব রেখে বীজ বপন করতে হবে৷ কম সময়ের মধ্যেই ব্যবহারোপযোগী হয়ে ওঠে এগুলি৷

অগ্নিশিখা বা কলিহারি –

এটি চাষের জন্য কৃষকেরা জুন মাসেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন৷ জুলাইয়ে ভালো বৃষ্টিতে এর চাষ শুরু করা যেতে পারে৷ উল্লেখ্য, ১ হেক্টর জমির জন্য প্রায় ১০ ক্যুইন্টাল কন্দের প্রয়োজন৷ এটি চাষের আগেও জমিতে গোবর সার প্রয়োগ করে তা প্রস্তুত করে নিতে হবে৷

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

পরিবেশ

শিখে নিন টবে দারুচিনির চাষের কৌশল

পৃথিবীতে ভোজ্য মসলা যতরকম আছে তারমধ্যে দারুচিনি সবথেকে উল্লেখযোগ্য। এই প্রাচীনতম মসলা বহুদিন ধরে ওষধি হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে চলেছে। এছাড়াও খাবারে স্বাদ বাড়ানো থেকে শুরু করে, পানীয় এবং তরল মশলাদার খাবারে স্বাদ বাড়ানোর জন্যও এই দারচিনির ব্যবহার হয়। এলাচ, গোলমরিচ, লবঙ্গের সাথে সাথে দারুচিনির নামও মসলা হিসেবে একই পংক্তিতে উচ্চারিত হয়। বহু কৃষক দারুচিনির চাষ করে ভীষণভাবে উপকৃত হয়েছেন। বাজারে এই দারুচিনির চাহিদা প্রচুর পরিমানে থাকায়, এই চাষে ভালো লাভ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও সৌখিন মানুষেরাও ভালোবেসে দারুচিনির চাষ বাড়িতে করে থাকেন। দারুচিনি গাছের বাকল, ফুল, কুঁড়ি, পাতা, ফল, শেকড় সবকিছুই কাজে লেগে যায়। দারুচিনি গাছ বাড়িতে চাষ করতে গেলে ঘরে ছাদে দুই জায়গাতেই চাষ করা যায়।

মনে রাখতে হবে এই চাষ করতে গেলে উপযুক্ত পরিমানে রোদ দরকার। বাংলার জলবায়ুতে মূলত শীতকালে এই চাষ করা সবথেকে ভালো। জানুয়ারি মাসে দারুচিনি গাছে ফুল ফোটা আরম্ভ করে, এবং এই গাছের ফল পাকতে আরম্ভ করে জুলাইয়ে। সেইসময়ই ফল থেকে বীজ সংগ্রহ করে নিয়ে এসে বাগানে বা টবে রোপন করে দেওয়া উচিত।

প্রয়োজনীয় রোদ (Sunlight)

কড়া সূর্যালোক দারুচিনি জন্য প্রয়োজনীয়, তাই এটি পর্যাপ্ত রোদ পাওয়া যায় এমন জায়গায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দারুচিনি রোপন করতে গেলে রৌদ্রোজ্জ্বল স্থান যেমন জানালার ধারে, ব্যালকনি কিংবা ছাদের খালি স্থান ব্যবহার করতে হবে।

উপযুক্ত মাটি (Soil)

দারুচিনি চাষের জন্য ভাল মানের মাটি ব্যবহার করা আবশ্যক। বাগানের মাটি ব্যবহার না করাই ভালো, কেননা এতে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। অনে সময় আমরা আশেপাশ থেকে মাটি নিয়েই টব ভরে গাছ লাগানো হয়।  বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সংবেদনশীল গাছগুলোতে এই উপায় কার্যকরী হয় না। নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভাল এমন মাটি ব্যবহার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে উত্তম নিষ্কাশনযুক্ত বেলে দোআঁশ মাটি ব্যবহার করা সবথেকে উত্তম। জেনে রাখা ভালো দারুচিনি খরা একদমই সহ্য করতে পারে না। মাটির বিকল্প হিসেবে ১৫% ট্রাইকোকমপোস্টযুক্ত কোকোডাস্ট ব্যবহার করা যেতে পারে।

বাইরে চাষ করার জন্য এক মিটার (৩০ সেন্টিমিটার গভীর) পর্যন্ত গর্ত করে মাটি দিয়ে পূরণ করে নিতে হবে। ঘরের ভিতরে বা ছাদবাগানের দারুচিনি চাষের জন্য একটি বড় পাত্র প্রয়োজন হবে।

রোপন (Planting)

দারুচিনির বীজ সংগ্রহও করা যায় অথবা নার্সারি থেকে দারুচিনির গাছ কিনেও আনা যায়।

বাইরে চাষের ক্ষেত্রে

দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে ১ মিটার x ১ মিটার এবং ৩০ সেমি গভীরতায় খনন করে মাটি দিয়ে গর্তটি পূরণ করতে হবে।

ঘরের মধ্যে টবে রোপনের ক্ষেত্রে

নিচে গর্ত সহ বড় সিরামিক পাত্র (৬০ x ৫০ সেমি) ব্যবহার করতে হবে। পাত্রটি মাটি বা কোকোডাস্ট দিয়ে পূরণ করে নিতে হবে। ৩০ সেন্টিমিটার গভীরতা এবং ৩০ সেন্টিমিটার প্রস্থের একটি গর্ত তৈরি করতে একটি বাগান ট্রোয়েল ব্যবহার করে নেওয়া ভালো। বীজ ব্যবহার করলে  ১.৫ সেন্টিমিটার গভীর গর্ত তৈরি করে নেওয়া উচিত। এবার গাছটি গর্তের মধ্যে রেখে মাটি দিয়ে চাপা দিতে হবে। বীজ ব্যবহার করলে প্রতি ১.৫ সেমি গর্তে একটি করে বীজ পুঁততে হবে এবং মাটি দিয়ে বীজটি ঢেকে দিতে হবে।

মাটি সবসময় ভেজা রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণ জল দিতে হবে। দারুচিনি গাছ পাত্রে রোপন করার পর, টবের নিচের গর্ত থেকে জল বের না হওয়া পর্যন্ত জল দিতে হবে। টবের উপরের ৫ সেন্টিমিটার শুকিয়ে গেলেই আবার গাছটিকে জল দিতে হবে।

গাছের পরিচর্যা (Caring)

দারুচিনি গাছে নিয়মিত সার প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম বছর ৫০ গ্রাম টিএসপি, ৭৫ গ্রাম এমওপি ও ৫০ গ্রাম ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে। প্রতিবছর ২-৩ কেজি ট্রাইকোকম্পোস্ট ও সার প্রয়োগ শেষে একই হারে টিএসপি, এমওপি ও ইউরিয়া দিতে হবে।

দারুচিনি প্রথম ধরতে দুই থেকে তিন বছর সময় নেয় এবং তার পরে প্রতি দুই বছর পরপরই ফসল দিতে থাকে। দারুচিনি গাছ কম করে ১০-১৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। তাই একে নিয়মিত করে ছোট রাখতে হবে। পাঁচ বছর বয়সী দারুচিনি গাছ থেকে নিয়মিত দারুচিনি সংগ্রহের ডাল পাওয়া সম্ভব। দারুচিনি ব্যবহার করার জন্য যে শাখাগুলি কাটা হবে সেগুলি থেকে বাকল তুলে নিতে হবে, বাকলগুলি ব্যবহার করার আগে জলে ভালোভাবে ভিজিয়ে নেওয়া উচিত।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

আঙিনা কৃষি

টবে লাগান মিষ্টি তেঁতুল গাছ

পৃথিবীতে জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, হারিয়ে যাচ্ছে বহু প্রাণী ও উদ্ভিদ বৈচিত্র। চাষবাসের জমিরও সংকুলান ঘটছে সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে। গগনচুম্বী বাড়ি ঘিরে ফেলছে সমস্ত ফাঁকা জমিন। শখ করে মানুষ খোলা জায়গায় যে গাছ লাগবে অথবা ফল-ফুলের চারা সেই উপায়ও আর নেই। গাছ লাগানোর জন্য সামান্য জায়গাও ফাঁকা থাকছে না আর। তবে আমাদের করণীয় কী? বৃক্ষরোপন কি তবে অচিরেই বন্ধ হয়ে যাবে। বেঁচে থাকার জন্য তো গাছ লাগাতে হবেই। বাড়ির একটুকরো বারান্দা অথবা ব্যালকনিতেও সুন্দর ভাবে ইচ্ছা করলে গাছ লাগানো যায়। বাড়ির ছাদেও বানানো যায় সুন্দর বাগিচা। শহরের মানুষদের জন্য ছাদ বাগানের কোনও বিকল্পও নেই। বাড়ির মধ্যেকার ব্যালকনি অথবা ছাদের একটুকরো জমিতেও, ইচ্ছা করলে টবে চাষ করা যায় বিভিন্ন ফুলের ও ফলের গাছ।

শাকসবজি, পেয়ারা, লেবু প্রভৃতি দেশীয় গাছ টবে বাড়তে দেওয়া থেকে শুরু করে বর্তমানে বহু বিদেশী গাছের চারাও মানুষ ব্যালকনি অথবা ছাদে চাষ করছেন। তার মধ্যে থাই মিষ্টি তেঁতুল টবের চাষ পদ্ধতি হিসাবে অত্যন্ত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। প্রথমত মিষ্টি তেঁতুলের চাষ করতে গেলে, নার্সারি থেকে এই বিশেষ তেঁতুলের সঠিক বীজ নিয়ে আনতে হবে। তবে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কলম পাওয়া একটু দুষ্কর কাজ। বুঝে সঠিক চারা নিয়ে আসা বাগান মালিকের উপরেই বর্তায়।

থাই মিষ্টি তেঁতুলের ফুল থেকে ফল ধরতে প্রায় ৭ মাস সময় লাগে। বছরে দু’বার থাই মিষ্টি তেঁতুলের গাছে ফল ধরে। প্রথমবার বর্ষাকালে এবং দ্বিতীয়বার শীতকালে। এই গাছের পরিচর্যা আলাদা করে করার কোনও দরকার পড়ে না। গাছের যত্নআত্তি নিতে হয় ঠিকই, কিন্তু তা বলে, আলাদা করে কোনও বিশেষ যত্ন নিতে হয় না।

গাছ লাগানোর পদ্ধতি (Planting):

থাই মিষ্টি তেঁতুল চাষের জন্য আদর্শ মাটি হল, দো-আঁশ বা বেলে দো-আঁশ মাটি। এই দু’টি মৃত্তিকার মধ্যে যে কোনও একটি বেছে নিন। তারপর বেছে নেওয়া মাটির দুই ভাগ অংশের সাথে গোবর, ১০০ গ্রাম, টিএসপি ১০০ গ্রাম, পটাশ, ২৫০ গ্রাম, হাড়ের গুঁড়ো এবং ৫০ গ্রাম সরিষার খোল একসঙ্গে মিশিয়ে ২০ ইঞ্চি মাপের বড় টবে জল মিশিয়ে রেখে দিতে হবে। ১০ থেকে ১২ দিন পর টবের মাটি ভালো করে খুঁচিয়ে দিয়ে আরও ৪-৫ দিন রেখে দিতে হবে। ৪ থেকে ৫ দিন বাদে মিষ্টি তেঁতুলের একটি ভালো চারা ওই টবে লাগান।

পরিচর্যা(Caring):

চারা লাগানোর প্রথম কয়েক মাস তেমন যত্নের দরকার পড়বে না। অবশ্যই গাছে এই সময়টুকু পর্যাপ্ত জলের যোগান, এবং আগাছা পরিষ্কারের কাজ করতে হবে।  ছয় মাস চারা লাগানোর সময়সীমা ফুরোলেই ১ মাস বাদে বাদে গাছে সরষের খোল মিশ্রিত পচা জল দিতে হবে। মনে রাখতে  হবে খোল দেওয়ার আগে গাছের মাটি খুঁচিয়ে নিতে হবে।

রোগ দমন (Disease management):

সাধারণত থাই মিষ্টি তেঁতুল গাছে পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখা যায় না। কিন্তু বর্ষাকালে অনেক সময় তেঁতুল গাছে ছত্রাক হানা দেয়। এর ফলে তেঁতুল ফেটে যায়। এই অসুবিধার থেকে গাছকে বাঁচাতে হলে, বর্ষাকাল আসার আগেই ভালো ছত্রাকনাশক ওষুধ ১০ দিন অন্তর গাছে স্প্রে করে ছড়িয়ে দিতে হবে।

বাংলার বেজায় টক তেঁতুলের সঙ্গে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কোনও তুলনাই চলে না। অত্যন্ত মিষ্টি খেতে এই তেঁতুল থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়ায় চাষ প্রভূত পরিমাণে হলেও, আমাদের রাজ্য এই ফলের চাষ এখনও ততটা গতি পায়নি। কিন্তু আপনি আপনার ব্যালকনি অথবা ছাদে সহজেই এই থাই তেঁতুলের গাছ লাগাতে পারেন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশক: শাইখ সিরাজ
© ২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। দা এগ্রো নিউজ, ফিশ এক্সপার্ট লিমিটেডের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। ৫১/এ/৩ পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থাপথ, ঢাকা -১২০৫
ফোন: ০১৭১২-৭৪২২১৭
ইমেইল: info@agronewstoday.com, theagronewsbd@gmail.com