পরিবেশ
লকডাউনের স্বস্তি মুছে ঢাকার বাতাসে বাড়ছে বিষ
লেখক
বিডি নিউজ ২৪করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সরকারের ‘কঠোর’ লকডাউনের প্রথম সপ্তাহে ঢাকার বায়ুমানে যে স্বস্তি ফিরে এসেছিল, তা মুছে দিয়ে আবার বাড়ছে দূষণ।
গত চার দিনে ঢাকার বাতাস আবার ‘অস্বাস্থ্যকর’ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। আর এই পরিস্থিতিতে দূষণের উৎসগুলো বন্ধের পুরনো দাওয়াই সরকারকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
গত ১৪ এপ্রিল থেকে অফিস ও গণপরিবহন বন্ধ থাকায় জনব্যস্ততা কমে এসেছিল রাজধানীতে। তবে সপ্তাহ ঘুরতেই ঢিলেঢালা হয়ে এসেছে বিধিনিষেধ; গাড়ির চাকা ঘোরার পাশাপাশি খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসছে ঢাকার চেনা চেহারা।
রোববার থেকে খুলেছে বিপনি বিতানগুলো। কর্মব্যস্ততা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গ্রীষ্মের এই তপ্ত দিনে ঢাকার বাতাসেও বিপদ বাড়ছে।
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বায়ুমান পযবেক্ষণ ওয়েবসাইট এয়ারনাও এর তথ্য অনুযায়ী, শনিবার সকাল ৭টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত ৫ ঘণ্টা ঢাকার বায়ুমান সূচক ছিল বিপদজনক (হ্যাজার্ডাস) সীমায়। আবার রোববার ভোরেও দুই ঘণ্টা একই পরিস্থিতি ছিল।
বাতাসের মান নির্ভর করে ভাসমান সূক্ষ্ম ধূলিকণার পরিমাণ (পার্টিকুলেট ম্যাটার বা পিএম-১০) এবং অতি সূক্ষ্ম ধূলিকণার পরিমাণের (পিএম ২.৫) ওপর, যা পরিমাপ করা হয় প্রতি ঘনমিটারে মাইক্রোগ্রাম (পার্টস পার মিলিয়ন-পিপিএম) এককে।
পিএম ২.৫, পিএম ১০ ছাড়াও সালফার ডাই অক্সাইড, কার্বন মনো-অক্সাইড, নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড ও গ্রাউন্ড লেভেল ওজোনে সৃষ্ট বায়ুদূষণ বিবেচনা করে এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স বা একিউআই তৈরি হয়। একিউআই নম্বর যত বাড়তে থাকে, বায়ুমান তত ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচিত হয়।
একিউআই শূন্য থেকে ৫০ এর মধ্যে থাকলে সেই এলাকার বাতাসকে ভালো বলা যায়। ৫১ থেকে ১০০ হলে বাতাসের মান মডারেট বা মোটামুটি গ্রহণযোগ্য ধরা হয়।
একিউআই ১০১ থেকে ১৫০ হলে সেই বাতাস স্পর্শকাতর শ্রেণির মানুষের (শিশু, বৃদ্ধ, শ্বাসকষ্টের রোগী) জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং ১৫১ থেকে ২০০ হলে তা সবার জন্যই অস্বাস্থ্যকর বিবেচিত হয়।
আর একিউআই ২০১ থেকে ৩০০ হলে তা খুবই অস্বাস্থ্যকর এবং ৩০১ ছাড়িয়ে গেলে সেই বাতাসকে বিপদজনক ধরা হয়।
এয়ারনাও বলছে, শনিবার সকালে ঢাকার একিউআই ৪৬৮ তেও উঠেছিল। আর শনিবার রাত ১১টা থেকে রোববার সকাল ৭টা পর্যন্ত একিউআই ছিল ২০০ এর উপরে, এর মধ্যে দুই ঘণ্টা তা ছিল বিপদজ্জনক সীমার উপরে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে ‘সর্বাত্মক লকডাউনের’ সপ্তম দিন মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর নিউ মার্কেটে এলাকায় মিরপুর রোডের চিত্র। ছবি: মাহমুদ জামান অভিএকিউআই বিপদজনক পর্যায়ে পৌঁছালে পুরো জনগোষ্ঠীর গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়, যা জরুরি স্বাস্থ্য সতর্কতা জারির পরিস্থিতি সৃষ্টি করে।
বাংলাদেশে নভেম্বর থেকে বাড়তে থাকা বায়ুদূষণ এপ্রিলে কমে আসে। তবে এবার এপ্রিলের শুরুতেও ঢাকার ধুলো দূষণ ছিল অস্বাস্থ্যকর পর্যায়ে।
আন্তর্জাতিক বায়ুমান প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের তথ্য অনুযায়ী, ২৯ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত এক সপ্তাহে ঢাকার গড় একিউআই ছিল ১৬৮।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ৫ এপ্রিল এ বছরের প্রথম দফা লকডাউন শুরু হয়। ঢিলেঢালা সেই লকডাউনের এক সপ্তাহে ঢাকার গড় একিউআই নেমে আসে ১৫৮ তে।
পরে ১৪ এপ্রিল ‘কঠোর’ লকডাউন শুরু হলে গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে স্বস্তিদায়ক পরিবেশ ফিরে আসে নগরীতে।
‘কঠোর’ লকডাউনের প্রথম সপ্তাহে দেখা যায়, ঢাকার গড় একিউআই ছিল ১০৪। ওই সময়ে দৈনিক সর্বোচ্চ একিউআই ১১৪ উঠেছিল গত ১৫ এপ্রিল।
আর ১৮ থেকে ২০ এপ্রিল পযন্ত টানা তিন দিন একিউআই ছিল একশ এর নিচে, গত ২ নভেম্বরের পর সাড়ে পাঁচ মাসে এবারই প্রথম রাজধানীর একিউআই একশর নিচে নেমে আসে।
তবে এরপর আবার বাড়তে শুরু করে ঢাকার বাতাসের ধুলো। আইকিউএয়ারের হিসাবে ২১ এপ্রিল থেকে বাড়তে থাকা ঢাকার একিউআই শনিবার ১৯৩ এ দাঁড়ায়।
কয়েকদিনের স্বস্তির পর আবার আগের চেহারায় ফিরছে ঢাকার দূষণ। গত তিনদিন ধরে অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় আছে ঢাকার একিউআই। আন্তর্জাতিক বায়ুমান প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের শেষ এক মাসের পরিসংখ্যান।
লকডাউনে কতটা কমেছে বায়ুদূষণ?
স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরের গড়ের তুলনায় ২০২১ সালের জানুয়ারিতে প্রায় ৭ শতাংশ, ফেব্রুয়ারিতে প্রায় ৭ শতাংশ, মার্চে প্রায় ১৮ শতাংশ এবং এপ্রিলে প্রায় ১৩ শতাংশ বায়ুদূষণ বেড়েছে।
চলতি বছরে দূষণের এই মাত্রাবৃদ্ধির মধ্যেই লকডাউন যে বায়ুমানে কিছুটা স্বস্তি এনেছিল, তা ক্যাপসের পর্যবেক্ষণওে ধরা পড়েছে।
সেখানে দেখা যায়, লকডাউনের এই সময়ে বাতাসে ২০১৬ সালের তুলনায় ৩ দশমিক ৩ শতাংশ, ২০১৭ সালের তুলনায় ২০ দশমিক ৩ শতাংশ, ২০১৮ সালের তুলনায় ১০ দশমিক ৬ শতাংশ, ২০১৯ সালের তুলনায় ১৫ দশমিক ৭ শতাংশ দূষণ কম ছিল।
তবে গতবছর লকডাউনের মধ্যে একই সময়ের তুলনায় এবারের লকডাউনে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ দূষণ বেশি ছিল বলে তথ্য দিচ্ছে ক্যাপস।
তাদের পরিসংখ্যান বলছে, চলতি এপ্রিলের অন্যান্য দিনগুলোর তুলনায় লকডাউনের মধ্যে বায়ুদূষণ কমেছে ৪৫ শতাংশ।
স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) পর্যবেক্ষণ বলছে, ২০২০ সাল ছাড়া গত পাঁচ বছরের মধ্যে ১৪ থেকে ২১ এপ্রিলে সবচেয়ে কম দূষণ ছিল চলতি বছর। লকডাউনের এই সাতদিনের পর আবার বাড়ছে দূষণ।
এই সময়ে রাস্তায় অনিয়ন্ত্রিত নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকা, ফিটনেসবিহীন যানবাহন বন্ধ থাকা, যানবাহন বন্ধ থাকায় রাস্তার ধুলো ওড়া কমে যাওয়া, বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ থাকার কারণে তুলনামূলকভাবে নির্মল বায়ু পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন ক্যাপসের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার।
তিনি বলেন, “লকডাউন কোনো সমাধান না। এটার প্রভাব ক্ষণস্থায়ী। গত বছরও আমরা দেখেছি, মার্চ-এপ্রিলে বায়ুদূষণ কমেছিল, জুন-জুলাইয়ে আবার বাড়তে শুরু করে। অগাস্টে তা আগের অবস্থায় চলে যায়। গতবছর অক্টোবরে সেটা ২০১৯ সালের তুলনায় ১০ থেকে ১৬ শতাংশ বেড়ে যায়।”
এবারও লকডাউনে শিথিলতা আসার পর বায়ুদূষণ বাড়ছে জানিয়ে অধ্যাপক কামরুজ্জমান বলেন, “লকডাউনে আগের তুলনায় বায়ুদূষণ কমেছে। কিন্তু শনিবার বায়ুমান খুব খারাপ ছিল।”
বিপদ যেখানে
আন্তর্জাতিক বায়ুমান প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ঢাকা বিশ্বের অন্যতম দূষিত শহর।
আইকিউএয়ারের ২০১৯ ও ২০২০ সালের বায়ুমান প্রতিবেদনে সবচেয়ে দূষিত দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান সবার উপরে।
প্রতিষ্ঠানটির ২০২০ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, মহামারীর এই বছরে মাত্র ২৪টি দেশে অতি সূক্ষ্ম ধূলিকণার (পিএম ২.৫) পরিমাণ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মাত্রা ছাড়িয়েছে। তার মধ্যে বাংলাদেশ একটি।
বছরজুড়ে বাংলাদেশে অতি সূক্ষ্ম ধূলিকণার (পিএম ২.৫) পরিমাণ ছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গ্রহণযোগ্য মাত্রার ৭ গুণ বেশি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকায় প্রতি ঘনমিটারে ১০ মাইক্রোগ্রাম পিএম ২.৫ কে গ্রহণযোগ্য সীমা ধরা হয়। গত বছর বাংলাদেশে বাতাসে পিএম ২.৫ এর মাত্রা ছিল প্রতি ঘনমিটারে ৭৭ দশমিক ১০ মাইক্রোগ্রাম।
বায়ুদূষণের কারণে জনজীবনে যে ব্যাপক প্রভাব পড়ছে, তা উঠে এসেছে বিভিন্ন পরিসংখ্যান ও গবেষণায়।
যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট অব গ্লোবাল এয়ারের ২০২০ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৯ সালে বাংলাদেশে ২০ শতাংশ অকাল মৃত্যুর কারণ ছিল বায়ুদূষণ। বায়দূষণের শিকার হয়ে এক বছরে প্রায় ১ লাখ ৭৪ হাজার মানুষ মারা গেছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রায় ২০ শতাংশ নবজাতকের মৃত্যুর জন্য বায়ুদূষণ দায়ী। ২০১০ সালের তুলনায় সাম্প্রতিক সময়ে যে আরও বেশি পরিমাণ অতি সূক্ষ্ম ধূলিকণা দেশের বাতাসে ঘুরছে, সে তথ্য দেখিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের শতভাগ মানুষই দূষিত বায়ুর শিকার।
বায়ুদূষণের কারণে বাংলাদেশে যে গর্ভপাত বাড়ছে, সে তথ্য এসেছে জানুয়ারিতে ‘দ্য ল্যানসেট প্ল্যানেটরি হেল্থ জার্নালে’ প্রকাশিত এক গবেষণায়।
বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে ১৯৯৬ থেকে ২০১৬ সাল পযন্ত গর্ভপাত হওয়া নারীদের সাথে বায়ুদূষণের যোগ থাকার যে ফলাফল গবেষণায় পাওয়া যায়, তাতে বাংলাদেশে কমপক্ষে ১০ দশমিক ৮ শতাংশ নারীর গর্ভপাত হয়েছে দূষণের কারণে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সরকার ঘোষিত এক সপ্তাহের ‘সর্বাত্মক লকডাউনের’ তৃতীয় দিন শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে মেয়র হানিফ উড়াল সড়কের চিত্র। ছবি: মমিনুল ইসলাম মমিন
যা করতে হবে
আইকিউএয়ারের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ঢাকার বাতাসকে ভয়াবহ করে তুলছে মূলত যানবাহন, শিল্প-কারখানা, নির্মাণ কাজ ও নির্মাণ কাজের দুর্বল ব্যবস্থাপনা এবং ইটভাটার ধোঁয়া।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বায়ুদূষণে যে বিপুল ক্ষতি হচ্ছে, তাতে লাগাম টানতে দূষণের উৎসমুখ বন্ধে সরকারকে কঠোর হতে হবে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন-বাপার নির্বাহী সহ-সভাপতি ডা. আব্দুল মতিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গাড়ি, কল-কারখানাতে ইটিপি থাকবে না, থাকলেও নষ্ট থাকবে বা খরচের ভয়ে চালাবে না, ইটের ভাটা চলবে, এগুলোতে বিষাক্ত কয়লা দেওয়া হয়- তাতে ইটিপি লাগানো হবে না- এগুলো হলে বায়ুদূষণ হবেই।
“লকডাউনে এগুলো হয়ত কম ছিল বা বন্ধ ছিল, এ কারণে দূষণ কমেছিল। এখন আবার চালু হয়েছে, তাই দূষণও বাড়ছে। লকডাউনের সময় তো প্রমাণিত হলই যদি যানবাহন না চলে, তাহলে দূষণ কমে যাবে। অকেজো, ধোঁয়া নির্গমণ হয়- এমন যানবাহন বন্ধ করে দিতে হবে। ইটিপি লাগাতে খরচ হবে, কিন্তু সামগ্রিকভাবে সবার লাভ হবে। চিকিৎসা ব্যয় কমে আসবে।”
বায়ুদূষণের উৎসমুখ বন্ধের তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, “সরকারকে আগে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, বায়ুদূষণ বন্ধ করতে চান কিনা। সরকার চায় কিন্তু হয়নি, এমন তো কখনো হয়নি। সরকার চাইলেই বায়ুদূষণ বন্ধ হয়ে যাবে। দূষণের সাথে জড়িত জলবায়ু পরিবর্তন, টেকসই উন্নয়ন। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার না কমালে, দূষণ না কমালে, টেকসই উন্নয়ন হবে না।”
কল-কারখানা, যানবাহন, নির্মাণকাজ পুরোদমে চালু হলে আবার যে বায়ুদূষণ বাড়বে সেটি মনে করিয়ে সরকারকে উদ্যোগী হতে বলেছেন ক্যাপসের পরিচালক অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদারও।
তিনি বলেন, হাই কোর্টের নির্দেশনাগুলো মেনে চললে বায়ুদূষণ কমানো যেতে পারে। রাস্তায় পানি দেওয়া, নির্মাণ সামগ্রী ঢেকে বহন করা- এগুলো মানতে হবে।
“পুরানো গাড়িগুলো বায়ুদূষণের বড় উৎস। এসব গাড়ি বাদ দিয়ে পাবলিক বাসকে আমরা বাড়াতে বলছি এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণে একটি কমিশন গঠনের কথা বলছি। কারণ পৃথিবীর সবচেয়ে দূষিত রাজধানীর একটি ঢাকা। এমন একটি দেশের নাগরিকদের নির্মল বাতাস দেওয়ার জন্য একটি কমিশন যৌক্তিক দাবি।”
আপনার জন্য নির্বাচিত সংবাদ
-
ছাদ বাগানের জন্য কয়েকটি টিপস
-
নিরাপদ খাদ্য: দেশি মাছ কাকিলাকে যেভাবে রক্ষা করার চেষ্টা করছেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা
-
নিপাহ্ ভাইরাসঃ খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়
-
ফুল চাষে যেসব বিষয় খেয়াল রাখতে হবে
-
জেনে নিন এই মরসুমে কোন কোন ঔষধি উদ্ভিদের চাষ আপনার জন্য সেরা
-
শিখে নিন টবে দারুচিনির চাষের কৌশল
-
টবে লাগান মিষ্টি তেঁতুল গাছ
-
ছাদে বেদানা চাষের সহজতম পদ্ধতি
-
সহজ উপায়ে টবে লঙ্কা চাষ
-
কেমন হবে আগামীর কৃষি:
ছাদ বাগানীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। টবে, ড্রামে গাছ লাগানো হয়। কেউ ফল, কেউবা সবজির গাছ লাগান। কেউ সফল হন। কেউ সফল হন না। ছোট ছোট কিছু ভুল বাগানীরা করে থাকেন। সে কারণে যত্ন নিলেও ফল আসে না। এখানে ছাদ বাগানীদের জন্য কিছু টিপস দেয়া হলো, যা মানলে সফলতা পাওয়া সহজ হতে পারে।
প্রথমেই মনে রাখতে হবে, টবে বা ড্রামে গাছ লাগালে তাকে খাবার দিতে হবে। প্রকৃতিতে বিদ্যমান গাছের মতো সে খাবার সংগ্রহ করতে পারে না। রোগ-বালাই হলো কিনা সেটাও বুঝে ব্যবস্থা নিতে হবে। ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে।
১. মাটির সাথে অবশ্যই কিছু কোকোপিট মেশাবেন। গাছের গোড়া স্যাতস্যাতে হতে দিবেন না। স্যাতস্যাতে হলে অসংখ্য রোগ হবে। মাটি ভেজা থাকবে তবে স্যাতস্যাতে না। কেকোপিট মেশালে পানি কম দিলেও হবে। কোকোপিট (নারকেলের ছোবলার গুড়া) পানি ধরে রাখে। অতি বৃষ্টি হলে গোড়ায় পানি জমতে দেয় না। হালকা হওয়ায় ছাদে ওজনের চাপ পড়ে না। এছাড়া কোকোপিটে কিছু পুষ্টি উপাদান আছে। যা গাছের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। কোকোপিটে চারা দ্রুত গজায়, বড় হয়। মাটির চেয়ে কোকোপিটে চারা ভালো হয়।
২. গাছের জন্য বিরিয়ানি হলো সরিষার খৈল-পচা পানি। মাটির হাড়িতে খৈল পচাতে হবে। কমপক্ষে ৫ দিন। ৭ দিন কিংবা বা ১৫ দিন হলে উত্তম। অল্প পানিতে পচিয়ে তার সাথে আরো পানি মিশিয়ে দিতে হবে। এটি গাছের জন্য অত্যন্ত উপকারী। একটু গন্ধ হয়, তাই অল্প একটু গুড় দিতে পারেন। ছাদে হাড়িতে পচালে বাসায় গন্ধ আসবে না। বৃষ্টির সময় খৈল-পচা পানি দেবেন না। পুকুরের নিচে থাকা পাক কাদা গাছের জন্য খুব উপকারী।
৩. আমরা জানি, মাটিতে অসংখ্য ক্ষতিকর ছত্রাক থাকে। যা গাছকে মেরে ফেলার জন্য যথেস্ট। তাই মাটি রেডি করার সময় কিছুটা বায়োডামা সলিট দিবেন। এটি উপকারী ছত্রাক। মাটিতে ক্ষতিকারক উপাদানগুলো মেরে ফেলে। আবার জৈব সারের কাজও করে। গাছের জন্য মাটি হবে ঝুরঝুরে, হালকা।
৪. যাই লাগান না কেন, ভালো জাতের বীজ কিনা নিশ্চিত হয়ে নেবেন। ভালো বীজে ভালো ফসল হবে। নতুবা যতই যত্ন নেন না কেন, সব পরিশ্রম বেলাশেষে জলে যাবে। বীজ থেকে নিজে চারা করা উত্তম। কারণ বাজার থেকে যে চারা কিনবেন সেটার জাত ভালো হবে সে নিশ্চয়তা কোথায়? ছত্রাকনাশক দিয়ে বীজ শোধন করে নেয়া উত্তম। পদ্ধতি হলো- ছত্রাকনাশক দেয়া পানিতে কিছুটা সময় বীজ ভিজিয়ে রাখতে হবে। ম্যানসার, মেটারিল দুটি ছত্রাকনাশক।
৫. গাছ বেশি তো ফলন বেশি- এটি ভুল ধারণা। অল্প জায়গায় বেশি গাছ লাগানো যাবে না। গাছ পাতলা করে লাগাতে হবে। বেশি লাগালে গাছ প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাবে না। একটি ফলের ক্রেটে মাত্র দুটি গাছ। একটি টবে একটি গাছ। ক্রেট বা টবে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
৬. ছাদে মাচা দেয়া সমস্যা। কারণ ঘুঁটি থাকে না। এ জন্য ফলের ক্রেটের চারপাশে লাঠি বেঁধে সহজে মাচা দেয়া যায়। লতাপাতা জাতীয় গাছ লাগানোর পাত্র একটু গভীর হলে উত্তম। গাছের জন্য সবচেয়ে বেশি ভালো জৈব সার হলো পাতা-পচা সার, তারপর ভার্মি কম্পোস্ট, তারপর গোবর সার। পাতা-পচা সার সহজলভ্য নয়। দাম বেশি। কিন্তু ভার্মি কম্পোস্ট সহজলভ্য। মাটির সঙ্গে মিনিমাম ৪০% জৈব সার দেয়া উত্তম।
৭. নিম কীটনাশককে ক্ষতিকারক পোকা-মাকড় খুব অপছন্দ করে। এটি দিলে তারা বিরক্ত বোধ করে। গাছে বাসা বাঁধতে পারে না। প্রতি সাত দিনে একবার সব গাছের পাতায় নিম কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। মাসে একবার ইপসম সল্ট স্প্রে করে দেয়া উত্তম। একইভাবে মাসে একবার পানির সঙ্গে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড মিশিয়ে স্প্রে করা ভালো।
৮. ডাটা, পুইশাক, লালশাক, ধনেপাতা এসব লাগাতে পারেন। মাত্র ২৫ দিনে খেতে পারবেন। লালশাক লাগালে নেট দিয়ে ঘিরে দেবেন। শাকপাতা লাগালে দ্রুত আউটপুট পাবেন। যা আপনাকে প্রেরণা দেবে। পুইশাক গাছের পাতায় দাগ হলে পাতা কেটে দিন। অথবা ছত্রাকনাশক স্প্রে করেন। অথবা গাছ উঠিয়ে আবার লাগান। ইউরিয়া সার দিলে পুইশাক দ্রুত বাড়বে। শশা গাছের বৃদ্বির জন্য ডিএপি সার দিলে ভালো হবে। শশা গাছে ছাড়া ছাড়া ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হয়। খুব রোদ, গাছের গোড়ায় মালচিং করে দিয়ে উত্তম ফল মিলবে। মালচিং হলো গাছের গোড়ায় বিশেষ পলিথিন কিংবা শুকনো পাতা, খড় দিয়ে ঢেকে দেয়া।
৯. ফুল আসার পরে প্রানোফিক্স অথবা মিরাকুরান গাছের পাতায় শেষ বিকালে স্প্রে করবেন। বাসায় দুইটি গ্রুপের ছত্রাকনাশক রাখা ভালো। যেমন- ম্যানসার, মেটারিল। ১৫ দিনে একবার স্প্রে করবেন। এগরোমিন্ড গোল্ড অনুখাদ্য বা অন্য কোনো অনুখাদ্য বাসায় রাখতে হবে। মাসে কমপক্ষে একবার স্প্রে করবেন। অতিরিক্ত গরম, বৃষ্টি, খাদ্যের অভাব, গাছ রোগাক্রান্ত, আবহাওয়া দ্রুত আপডাউন করা ইত্যাদি কারণে ফুল ঝরে পড়তে পারে। আবার পরাগায়ন না হলে ঝরে পড়তে পারে। এ জন্য হাতের মাধ্যমে পরাগায়ন করতে হবে। পুরুষ ফুলের পরাগদণ্ড নারী ফুলে গর্ভে ঘষে দিতে হবে।
১০. ছাদ বাগানে গাছ মারা যাওয়ার অন্যতম কারণ পানি বেশি বা কম দেয়া। যতটুকু লাগে ঠিক ততটুকু পানি দিতে হবে। কোন গাছের কি চাহিদা, রোগ একটু স্টাডি করলে সহজে সফল হতে পারবেন।
১১. গাছের পাতার নিচে খেয়াল করবেন। বেগুন গাছের পোকা মারার জন্য সেক্স ফোরেমান ফাঁদ লাগাবেন। ডগা ছিদ্র বা ফল ছিদ্র হলে সাইপারমেত্রিন গ্রুপের কীটনাশক দিতে হবে। একটি বেগুন গাছ অনেক দিন ফল দেয়। ঢেড়স গাছ বেশি রোদ পড়ে এমন জায়গায় লাগাবেন। বেগুন, ঢেড়স, লালশাক, পুইশাক, ধনেপাতা, ডাটা শাক- এসব গাছের খুব যত্ন করতে হয় না।
১২. রসুন আর লবঙ্গ বেটে সেই পানি গাছে স্প্রে করলে পোকা কম আসবে। মরিচ গাছে নেপথলিন বেঁধে দিন, পোকা কম আসবে। পাতা কোকড়ালে ভার্মিটেক কিংবা এবোম কীটনাশক দিন। কোকড়ানো পাতা ফেলে দিন। মরিচ গাছে দশ দিন পর পর ডায়মেথট গ্রুপের (যেমন টাফগর) কীটনাশক দিলে উপকার হবে। সবকিছু করছেন, তারপরও কাজ হচ্ছে না। এক্ষেত্রে গাছের জায়গা বদল করেন, উঠিয়ে অন্যত্র লাগান।
শীতকাল এলেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে খেজুরের রস খাওয়ার চল বেড়ে যায়। অনেকে গাছ থেকে খেজুরের কলসি নামিয়ে সরাসরি কাঁচা রস খেয়ে থাকেন।
আবার অনেকে এই রস চুলায় ফুটিয়ে সিরাপ, পায়েস বা ক্ষীর বানিয়ে খান। এছাড়া রসের তৈরি ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়, ভেলি গুড়, বালুয়া গুড়, মিছরি গুড়সহ নানা ধরণের পিঠার বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।
নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক
খেজুর আরব দেশের প্রচলিত ফল হলেও ওইসব দেশে খেজুর, মূলত ফল উৎপাদননির্ভর, যেখানে কিনা বাংলাদেশের খেজুর গাছ রস উৎপাদননির্ভর।
কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, বাংলাদেশে সাধারণত কার্তিক থেকে মাঘ অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ হয়ে থাকে।
দেশটির সবচেয়ে বেশি রস সংগ্রহ হয় যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে।
মূলত খেজুর গাছের ডালপালা পরিষ্কার করে, ডগার দিকের কাণ্ড চেঁছে তাতে একটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি চোঙ বসিয়ে দেয়া হয়। চোঙের শেষ প্রান্তে ঝুলিয়ে দেয়া হয় একটি মাটির হাড়ি বা কলসি।
সেই চোঙ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রস এসে জমা হতে থাকে মাটির হাড়ি বা কলসিতে। এভাবে একটি গাছ থেকে দৈনিক গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লিটার রস সংগ্রহ করা যায় বলে কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গিয়েছে।
কিন্তু গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
দেশের বিভিন্ন রাজ্যেই বর্ষার (Monsoon 2021) প্রভাবে চলছে বৃষ্টিপাত। এসময় কৃষকেরা খারিফ শস্য (Kharif Crops) বপনে তৎপর হয়ে ওঠেন। এই খরিফ মরসুমে কৃষকভাইরা সাধারণত অঞ্চলভেদে ধান, অড়হর, সোয়াবিন সহ বিভিন্ন চাষে মনযোগ দিয়ে থাকেন ৷ তবে এসব ছাড়াও, ঔষধি গুন সমৃদ্ধ (Medicinal Crops) গাছ চাষে বর্ষায় যে কতটা লাভ হতে পারে সে সম্পর্কে অনেকেই হয়তো জানেন না৷
বিশেষ করে বর্ষাকালেই এমন বহু ঔষধি গুন সম্পন্ন গাছ রয়েছে যাদের চাষ হতে পারে লাভজনক৷
বর্ষাকালে কোন কোন ঔষধি উদ্ভিদের চাষ করা যেতে পারে অথবা এই চাষ কীভাবেই বা করা যাবে সে বিষয়ে সঠিক তথ্য না পাওয়ার কারণেই অনেকের কাছে বিষয়টি অধরা৷ চলুন এই প্রতিবেদনে এমনই কিছু গাছ নিয়ে আলোচনা করা যাক যা কৃষকদের জন্য হতে পারে লাভদায়ক৷ তবে সঠিক সময়ে, সঠিক রোপন, সেচ, কীটনাশক দেওয়ার প্রয়োজন এগুলিতে, না হলে এর ওপর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে৷
অশ্বগন্ধা –
বর্ষায় এর চাষ ভালো৷ জুন থেকে অগস্ট পর্যন্ত এর চাষ করতে পারেন৷ এর বিভিন্ন জাত রয়েছে৷ উন্নত মানের গাছের চাষে কৃষকের লাভের পরিমাণও বৃদ্ধি পেতে পারে৷ উল্লেখ্য, প্রতি হেক্টরে ৫ কিলোগ্রাম বীজ ব্যবস্থা করতে হবে৷ যদি কেউ ১ হেক্টর জমিতে অশ্বগন্ধার চাষ করতে চায় তাহলে তাকে প্রায় ৫০০ বর্গমিটারে নার্সারি তৈরি করতে হবে৷ প্রায় ১ সেন্টিমিটার গভীরে বীজ বপন করতে হবে৷
শতমূলী –
শীত বাদ দিয়ে বছরের যে কোনও সময়ে এই গাছের চাষ করতে পারেন৷ বর্ষাকালে এই চারা রোপন করলে সহজেই তা বেড়ে উঠতে থাকে৷ তবে বীজ বপনের আগে বীজ ১ দিন পর্যন্ত হালকা গরম জলে ভিজিয়ে রাখতে হয়৷
যষ্টিমধু –
জুলাই থেকে অগস্ট পর্যন্ত এর চাষ করা হয়৷ আর তাই জুন থেকেই এর প্রস্তুতি শুরু করে দেন কৃষকেরা৷ জলনিকাশি ব্যবস্থা উচ্চমানের হওয়া প্রয়োজন এই গাছ চাষের জন্য৷ মনে রাখতে হবে এর চাষের আগে জমিতে কমপক্ষে ১৫ টন গোবর সার দেওয়া প্রয়োজন, এরপরেই এটি চাষ করা উচিত৷
ঘৃতকুমারী –
এর ভালো উৎপাদনের জন্য জলনিকাশি ব্যবস্থা ঠিক রাখতে হবে৷ এই ধরনের ঔষধি গুনসম্পন্ন গাছ শীতকাল বাদ দিয়ে যে কোনও সময় চাষ করতে পারেন৷ বর্ষাকালে দূরত্ব রেখে বীজ বপন করতে হবে৷ কম সময়ের মধ্যেই ব্যবহারোপযোগী হয়ে ওঠে এগুলি৷
অগ্নিশিখা বা কলিহারি –
এটি চাষের জন্য কৃষকেরা জুন মাসেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন৷ জুলাইয়ে ভালো বৃষ্টিতে এর চাষ শুরু করা যেতে পারে৷ উল্লেখ্য, ১ হেক্টর জমির জন্য প্রায় ১০ ক্যুইন্টাল কন্দের প্রয়োজন৷ এটি চাষের আগেও জমিতে গোবর সার প্রয়োগ করে তা প্রস্তুত করে নিতে হবে৷
পৃথিবীতে ভোজ্য মসলা যতরকম আছে তারমধ্যে দারুচিনি সবথেকে উল্লেখযোগ্য। এই প্রাচীনতম মসলা বহুদিন ধরে ওষধি হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে চলেছে। এছাড়াও খাবারে স্বাদ বাড়ানো থেকে শুরু করে, পানীয় এবং তরল মশলাদার খাবারে স্বাদ বাড়ানোর জন্যও এই দারচিনির ব্যবহার হয়। এলাচ, গোলমরিচ, লবঙ্গের সাথে সাথে দারুচিনির নামও মসলা হিসেবে একই পংক্তিতে উচ্চারিত হয়। বহু কৃষক দারুচিনির চাষ করে ভীষণভাবে উপকৃত হয়েছেন। বাজারে এই দারুচিনির চাহিদা প্রচুর পরিমানে থাকায়, এই চাষে ভালো লাভ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও সৌখিন মানুষেরাও ভালোবেসে দারুচিনির চাষ বাড়িতে করে থাকেন। দারুচিনি গাছের বাকল, ফুল, কুঁড়ি, পাতা, ফল, শেকড় সবকিছুই কাজে লেগে যায়। দারুচিনি গাছ বাড়িতে চাষ করতে গেলে ঘরে ছাদে দুই জায়গাতেই চাষ করা যায়।
মনে রাখতে হবে এই চাষ করতে গেলে উপযুক্ত পরিমানে রোদ দরকার। বাংলার জলবায়ুতে মূলত শীতকালে এই চাষ করা সবথেকে ভালো। জানুয়ারি মাসে দারুচিনি গাছে ফুল ফোটা আরম্ভ করে, এবং এই গাছের ফল পাকতে আরম্ভ করে জুলাইয়ে। সেইসময়ই ফল থেকে বীজ সংগ্রহ করে নিয়ে এসে বাগানে বা টবে রোপন করে দেওয়া উচিত।
প্রয়োজনীয় রোদ (Sunlight)
কড়া সূর্যালোক দারুচিনি জন্য প্রয়োজনীয়, তাই এটি পর্যাপ্ত রোদ পাওয়া যায় এমন জায়গায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দারুচিনি রোপন করতে গেলে রৌদ্রোজ্জ্বল স্থান যেমন জানালার ধারে, ব্যালকনি কিংবা ছাদের খালি স্থান ব্যবহার করতে হবে।
উপযুক্ত মাটি (Soil)
দারুচিনি চাষের জন্য ভাল মানের মাটি ব্যবহার করা আবশ্যক। বাগানের মাটি ব্যবহার না করাই ভালো, কেননা এতে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। অনে সময় আমরা আশেপাশ থেকে মাটি নিয়েই টব ভরে গাছ লাগানো হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সংবেদনশীল গাছগুলোতে এই উপায় কার্যকরী হয় না। নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভাল এমন মাটি ব্যবহার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে উত্তম নিষ্কাশনযুক্ত বেলে দোআঁশ মাটি ব্যবহার করা সবথেকে উত্তম। জেনে রাখা ভালো দারুচিনি খরা একদমই সহ্য করতে পারে না। মাটির বিকল্প হিসেবে ১৫% ট্রাইকোকমপোস্টযুক্ত কোকোডাস্ট ব্যবহার করা যেতে পারে।
বাইরে চাষ করার জন্য এক মিটার (৩০ সেন্টিমিটার গভীর) পর্যন্ত গর্ত করে মাটি দিয়ে পূরণ করে নিতে হবে। ঘরের ভিতরে বা ছাদবাগানের দারুচিনি চাষের জন্য একটি বড় পাত্র প্রয়োজন হবে।
রোপন (Planting)
দারুচিনির বীজ সংগ্রহও করা যায় অথবা নার্সারি থেকে দারুচিনির গাছ কিনেও আনা যায়।
বাইরে চাষের ক্ষেত্রে
দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে ১ মিটার x ১ মিটার এবং ৩০ সেমি গভীরতায় খনন করে মাটি দিয়ে গর্তটি পূরণ করতে হবে।
ঘরের মধ্যে টবে রোপনের ক্ষেত্রে
নিচে গর্ত সহ বড় সিরামিক পাত্র (৬০ x ৫০ সেমি) ব্যবহার করতে হবে। পাত্রটি মাটি বা কোকোডাস্ট দিয়ে পূরণ করে নিতে হবে। ৩০ সেন্টিমিটার গভীরতা এবং ৩০ সেন্টিমিটার প্রস্থের একটি গর্ত তৈরি করতে একটি বাগান ট্রোয়েল ব্যবহার করে নেওয়া ভালো। বীজ ব্যবহার করলে ১.৫ সেন্টিমিটার গভীর গর্ত তৈরি করে নেওয়া উচিত। এবার গাছটি গর্তের মধ্যে রেখে মাটি দিয়ে চাপা দিতে হবে। বীজ ব্যবহার করলে প্রতি ১.৫ সেমি গর্তে একটি করে বীজ পুঁততে হবে এবং মাটি দিয়ে বীজটি ঢেকে দিতে হবে।
মাটি সবসময় ভেজা রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণ জল দিতে হবে। দারুচিনি গাছ পাত্রে রোপন করার পর, টবের নিচের গর্ত থেকে জল বের না হওয়া পর্যন্ত জল দিতে হবে। টবের উপরের ৫ সেন্টিমিটার শুকিয়ে গেলেই আবার গাছটিকে জল দিতে হবে।
গাছের পরিচর্যা (Caring)
দারুচিনি গাছে নিয়মিত সার প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম বছর ৫০ গ্রাম টিএসপি, ৭৫ গ্রাম এমওপি ও ৫০ গ্রাম ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে। প্রতিবছর ২-৩ কেজি ট্রাইকোকম্পোস্ট ও সার প্রয়োগ শেষে একই হারে টিএসপি, এমওপি ও ইউরিয়া দিতে হবে।
দারুচিনি প্রথম ধরতে দুই থেকে তিন বছর সময় নেয় এবং তার পরে প্রতি দুই বছর পরপরই ফসল দিতে থাকে। দারুচিনি গাছ কম করে ১০-১৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। তাই একে নিয়মিত করে ছোট রাখতে হবে। পাঁচ বছর বয়সী দারুচিনি গাছ থেকে নিয়মিত দারুচিনি সংগ্রহের ডাল পাওয়া সম্ভব। দারুচিনি ব্যবহার করার জন্য যে শাখাগুলি কাটা হবে সেগুলি থেকে বাকল তুলে নিতে হবে, বাকলগুলি ব্যবহার করার আগে জলে ভালোভাবে ভিজিয়ে নেওয়া উচিত।
পৃথিবীতে জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, হারিয়ে যাচ্ছে বহু প্রাণী ও উদ্ভিদ বৈচিত্র। চাষবাসের জমিরও সংকুলান ঘটছে সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে। গগনচুম্বী বাড়ি ঘিরে ফেলছে সমস্ত ফাঁকা জমিন। শখ করে মানুষ খোলা জায়গায় যে গাছ লাগবে অথবা ফল-ফুলের চারা সেই উপায়ও আর নেই। গাছ লাগানোর জন্য সামান্য জায়গাও ফাঁকা থাকছে না আর। তবে আমাদের করণীয় কী? বৃক্ষরোপন কি তবে অচিরেই বন্ধ হয়ে যাবে। বেঁচে থাকার জন্য তো গাছ লাগাতে হবেই। বাড়ির একটুকরো বারান্দা অথবা ব্যালকনিতেও সুন্দর ভাবে ইচ্ছা করলে গাছ লাগানো যায়। বাড়ির ছাদেও বানানো যায় সুন্দর বাগিচা। শহরের মানুষদের জন্য ছাদ বাগানের কোনও বিকল্পও নেই। বাড়ির মধ্যেকার ব্যালকনি অথবা ছাদের একটুকরো জমিতেও, ইচ্ছা করলে টবে চাষ করা যায় বিভিন্ন ফুলের ও ফলের গাছ।
শাকসবজি, পেয়ারা, লেবু প্রভৃতি দেশীয় গাছ টবে বাড়তে দেওয়া থেকে শুরু করে বর্তমানে বহু বিদেশী গাছের চারাও মানুষ ব্যালকনি অথবা ছাদে চাষ করছেন। তার মধ্যে থাই মিষ্টি তেঁতুল টবের চাষ পদ্ধতি হিসাবে অত্যন্ত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। প্রথমত মিষ্টি তেঁতুলের চাষ করতে গেলে, নার্সারি থেকে এই বিশেষ তেঁতুলের সঠিক বীজ নিয়ে আনতে হবে। তবে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কলম পাওয়া একটু দুষ্কর কাজ। বুঝে সঠিক চারা নিয়ে আসা বাগান মালিকের উপরেই বর্তায়।
থাই মিষ্টি তেঁতুলের ফুল থেকে ফল ধরতে প্রায় ৭ মাস সময় লাগে। বছরে দু’বার থাই মিষ্টি তেঁতুলের গাছে ফল ধরে। প্রথমবার বর্ষাকালে এবং দ্বিতীয়বার শীতকালে। এই গাছের পরিচর্যা আলাদা করে করার কোনও দরকার পড়ে না। গাছের যত্নআত্তি নিতে হয় ঠিকই, কিন্তু তা বলে, আলাদা করে কোনও বিশেষ যত্ন নিতে হয় না।
গাছ লাগানোর পদ্ধতি (Planting):
থাই মিষ্টি তেঁতুল চাষের জন্য আদর্শ মাটি হল, দো-আঁশ বা বেলে দো-আঁশ মাটি। এই দু’টি মৃত্তিকার মধ্যে যে কোনও একটি বেছে নিন। তারপর বেছে নেওয়া মাটির দুই ভাগ অংশের সাথে গোবর, ১০০ গ্রাম, টিএসপি ১০০ গ্রাম, পটাশ, ২৫০ গ্রাম, হাড়ের গুঁড়ো এবং ৫০ গ্রাম সরিষার খোল একসঙ্গে মিশিয়ে ২০ ইঞ্চি মাপের বড় টবে জল মিশিয়ে রেখে দিতে হবে। ১০ থেকে ১২ দিন পর টবের মাটি ভালো করে খুঁচিয়ে দিয়ে আরও ৪-৫ দিন রেখে দিতে হবে। ৪ থেকে ৫ দিন বাদে মিষ্টি তেঁতুলের একটি ভালো চারা ওই টবে লাগান।
পরিচর্যা(Caring):
চারা লাগানোর প্রথম কয়েক মাস তেমন যত্নের দরকার পড়বে না। অবশ্যই গাছে এই সময়টুকু পর্যাপ্ত জলের যোগান, এবং আগাছা পরিষ্কারের কাজ করতে হবে। ছয় মাস চারা লাগানোর সময়সীমা ফুরোলেই ১ মাস বাদে বাদে গাছে সরষের খোল মিশ্রিত পচা জল দিতে হবে। মনে রাখতে হবে খোল দেওয়ার আগে গাছের মাটি খুঁচিয়ে নিতে হবে।
রোগ দমন (Disease management):
সাধারণত থাই মিষ্টি তেঁতুল গাছে পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখা যায় না। কিন্তু বর্ষাকালে অনেক সময় তেঁতুল গাছে ছত্রাক হানা দেয়। এর ফলে তেঁতুল ফেটে যায়। এই অসুবিধার থেকে গাছকে বাঁচাতে হলে, বর্ষাকাল আসার আগেই ভালো ছত্রাকনাশক ওষুধ ১০ দিন অন্তর গাছে স্প্রে করে ছড়িয়ে দিতে হবে।
বাংলার বেজায় টক তেঁতুলের সঙ্গে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কোনও তুলনাই চলে না। অত্যন্ত মিষ্টি খেতে এই তেঁতুল থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়ায় চাষ প্রভূত পরিমাণে হলেও, আমাদের রাজ্য এই ফলের চাষ এখনও ততটা গতি পায়নি। কিন্তু আপনি আপনার ব্যালকনি অথবা ছাদে সহজেই এই থাই তেঁতুলের গাছ লাগাতে পারেন।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন