বিশ্বে প্রতি বছর ৩৮ লাখ পুরুষ এবং ৩৪ লাখ নারী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তার মধ্যে প্রতি ৪ জনের একজনের মৃত্যুর কারণ হচ্ছে করোনারি হার্ট ডিজিজ বা ইসকেমিক হার্ট ডিজিজ। যা মূলত এথোরোসক্লেরোসিস এর ফলাফল।
এথোরোসক্লেরোসিস কি?
এথোরো+সক্লেরোসিস থেকে এথোরোসক্লেরোসিস শব্দটা এসেছে। এথোরো মূলত অ্যাথেরোমা থেকে এসেছে। আর্টারি বা ধমনির ওয়ালে ফ্যাটি ম্যাটেরিয়াল বা চর্বি জাতীয় বস্তু জমা হয়। তখন ধমনীর ওয়ালসমূহ মোটা হয়ে যায়। ফলশ্রুতিতে ধমনীর লুমেন সরু হয়ে যায় এবং রক্তপ্রবাহ কমে যায় এবং আর্টারিসমূহ শক্ত হয়ে যায়। এই অবস্থাকে এথোরোসক্লেরোসিস বলা হয়।
সহজ কথায়, যদি কোনো ফ্যাটি প্ল্যাক এর কারণে রক্তনালী দিয়ে রক্ত চলাচল সীমিত হয়ে যায়; তখন এই অবস্থাকে এথোরোসক্লেরোসিস বলে। এথোরোসক্লেরোসিস বলতে মূলত হার্টের ধমনীসমূহে তথা করোনারি আর্টারিসমূহের মধ্যে ডিজেনারেটিভ পরিবর্তনকে বোঝানো হয়।
তবে এথোরোসক্লেরোসিস শরীরের যেকোনো রক্তনালিতে হতে পারে। হাতে-পায়ে হলে পেরিফেরাল ভাস্কুলার ডিজিজ বলা হয়। শরীরে যদি অতিরিক্ত এলডিএল ক্লোরেস্টেরল থাকে; তখন সেটা রক্তনালীতে জমা হয়ে এথোরোসক্লেরোসিস তৈরি করে।
করোনারি আর্টারিতে এথোরোসক্লেরোসিস হলে সেখানে রক্ত প্রবাহ কমে যায় কিংবা রক্ত সঞ্চালন বাঁধাগ্রস্ত হয়। আর যেখানেই রক্ত প্রবাহ কমে যায়; সেখানে অক্সিজেন পরিবহন কমে যায়। কারণ রক্তের হিমোগ্লোবিনের সঙ্গে মিশেই অক্সিজেন সারা দেহে সঞ্চালিত হয়।
শরীরের কোনো টিস্যুতে চাহিদার তুলনায় অক্সিজেন সরবরাহ কমে গেলে তাকে ইসকেমিয়া বলে। হার্টের মধ্যে যদি অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায়; তাহলে এই অবস্থাকে ইসকেমিক হার্ট ডিজিজ বলে।
হার্ট অ্যাটাক
হার্ট এর মাংশপেশীসমূহ সচল রাখতে এর মধ্যকার দুইটি রক্তনালী-রাইট এন্ড লেফট করোনারি আর্টারি বিশেষ ভূমিকা রাখে। এই করোনারি আর্টারিসমূহে ফ্যাট কিংবা চর্বি জমে যদি রক্ত সঞ্চালনে বাঁধাগ্রস্ত হয়; তাহলে এই অবস্থাকে করোনারি আর্টারি ডিজিজ বলে। এই অবস্থাকে আবার হার্ট ব্লক ও বলা হয়। আর ফ্যাট জমে আর্টারি মোটা আর শক্ত হয়ে যাওয়াকে এথোরোসক্লেরোসিস বলে।
এথোরোসক্লেরোসিস হলে যেকোনো মুহুর্তে রক্তনালী ছিড়ে রক্ত জমাট বেঁধে যেতে পারে। রক্তনালীর ভিতর যদি রক্ত জমাট বাঁধে; তাহলে রক্ত চলাচলে বাঁধাগ্রস্ত হয়। ফলে হার্টের রক্তনালীতে যদি রক্ত চলাচল করতে না পারে; সেক্ষেত্রে হার্টের মাংসপেশিসমূহ অক্সিজেন পায় না। অক্সিজেন না পেলে হার্টের টিস্যুসমূহ ড্যামেজ হতে থাকে। হার্টের পেশীসমূহে যদি পরিমিত অক্সিজেন দিতে না পারে; তখন হার্টের টিস্যুসমূহ ড্যামেজ হয়ে যায়। যাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন বা হার্ট অ্যাটাক বলা হয়। এ সময় খুব দ্রুত রক্ত সরবরাহ চালু করতে না পারলে তাৎক্ষণিক মৃত্যু হতে পারে। এক্সেত্রে রোগীর প্রচণ্ড বুকে ব্যাথা হয় সঙ্গে শ্বাসকষ্ট, অতিরিক্ত ঘাম, ঘাড়-হাত-পিঠে বা থুতনিতে তীব্র ব্যথা হতে পারে।
ইশকেমিক হার্ট ডিজিজ এর উপসর্গ:
ব্লাড প্রেশার নিয়মিত চেক করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্লাড প্রেশার পরিমাপ না করায়, রোগী হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক করে মৃত্যুবরণ করতে পারেন। আবার কারও কারও ক্ষেত্রে নিম্নের কিছু উপসর্গ দেখা দেয়-
১. চলতে ফিরতে বুকে ব্যথা ২. শ্বাসকষ্ট ৩. খাওয়ার পরে বুকে ব্যথা ৪. একটু টেনশন করলে বুকে ব্যথা ৫. মাথা ঘোরানো এবং মাথা ব্যথা ৬. ঘাড় কিংবা বাহুতে ব্যথা ৭. বমি বা বমির ভাব
ইসকেমিক হার্ট ডিজিজের কারণ-
১. উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন ২. অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার যথা- গরুর গোস্ত, ডিম বা ট্রান্স ফ্যাট জাতীয় খাবার ইত্যাদি ৩. সিগারেট স্মোকিং বা জর্দা ইত্যাদি ৪. অবেসিটি বা অতিরিক্ত ওজন ৫. অ্যালকোহল ও কোমল পানীয় ৬. পর্যাপ্ত ব্যায়াম না করা ৭. শারীরিক পরিশ্রম না করা ৮. সবসময় শুয়ে থাকা ইত্যাদি
ইসকেমিক হার্ট ডিজিজ এর কারণে জটিলতা-
১. হার্ট অ্যাটাক হতে পারে ২. ব্রেইন স্ট্রোক হতে পারে
প্রতিকার-
১. ধূমপান ত্যাগ করতে হবে। ২. ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। ৩. ওজন স্বাভাবিক বিএমআই অনুযায়ী রাখা জরুরি। ৪. অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে এবং লবণ কম খেতে হবে। ৫. নিয়মিত ব্যায়াম করা উচিত। ৬. স্বাভাবিক শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে।
চিকিৎসা:
১. লাইফস্টাইল মোডিফাই করতে হবে এবং অতিরিক্ত ওজন কমার জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে।
২. ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। সেজন্য নিয়মিত রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত খেয়ে যেতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া মেডিসিন বাদ দেওয়া যাবে না।
সময়মতো ওষুধ খেতে হবে। এ ছাড়াও যেকোনো জটিলতায় চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। বুকে ব্যথা হলে দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
লেখক: চিকিৎসক, ঢাকা কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল; পরিচালক, সেন্টার ফর ক্লিনিক্যাল এক্সিলেন্স এন্ড রিসার্চ
শীতকাল এলেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে খেজুরের রস খাওয়ার চল বেড়ে যায়। অনেকে গাছ থেকে খেজুরের কলসি নামিয়ে সরাসরি কাঁচা রস খেয়ে থাকেন।
আবার অনেকে এই রস চুলায় ফুটিয়ে সিরাপ, পায়েস বা ক্ষীর বানিয়ে খান। এছাড়া রসের তৈরি ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়, ভেলি গুড়, বালুয়া গুড়, মিছরি গুড়সহ নানা ধরণের পিঠার বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।
নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক
খেজুর আরব দেশের প্রচলিত ফল হলেও ওইসব দেশে খেজুর, মূলত ফল উৎপাদননির্ভর, যেখানে কিনা বাংলাদেশের খেজুর গাছ রস উৎপাদননির্ভর।
কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, বাংলাদেশে সাধারণত কার্তিক থেকে মাঘ অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ হয়ে থাকে।
দেশটির সবচেয়ে বেশি রস সংগ্রহ হয় যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে।
মূলত খেজুর গাছের ডালপালা পরিষ্কার করে, ডগার দিকের কাণ্ড চেঁছে তাতে একটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি চোঙ বসিয়ে দেয়া হয়। চোঙের শেষ প্রান্তে ঝুলিয়ে দেয়া হয় একটি মাটির হাড়ি বা কলসি।
সেই চোঙ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রস এসে জমা হতে থাকে মাটির হাড়ি বা কলসিতে। এভাবে একটি গাছ থেকে দৈনিক গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লিটার রস সংগ্রহ করা যায় বলে কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গিয়েছে।
কিন্তু গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
উপকরণ: বাঁধাকপির কুচি ৪ কাপ, কই মাছের টুকরো ৬টি, তেজপাতা ১টি, শুকনো মরিচ ২টি, মেথি অল্প পরিমাণ, মরিচবাটা ১ চা-চামচ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, লবণ পরিমাণমতো, নারকেল কোরানো স্বল্প পরিমাণে, হলুদ পরিমাণমতো ও সরিষার তেল পরিমাণমতো।
প্রণালি: তেলে শুকনো মরিচ ও মেথি ফোড়ন দিতে হবে। ফোড়ন হয়ে এলে হালকা করে ভেজে উঠিয়ে রাখতে হবে। ওই তেলেই বাঁধাকপির কুচি ও পেঁয়াজ কুচি দিয়ে ভালো করে কষে নিতে হবে। তারপর লবণ, মরিচ ও হলুদবাটা দিয়ে আরও কিছুক্ষণ বসাতে হবে। সেদ্ধ হয়ে এলে অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে ভাজা মাছগুলো দিয়ে ঢাকা দিতে হবে। পানি শুকিয়ে গেলে এবং মাছ সেদ্ধ হয়ে এলে অল্প পরিমাণ নারকেল কোরানো দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।
উপকরণ: বড় শোল মাছ ৫০০ গ্রাম, টমেটো টুকরো আধা কাপ, সরিষার তেল ৩ টেবিল চামচ, টমেটোবাটা আধা কাপ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, আদাবাটা ১ চা-চামচ, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, হলুদ গুঁড়া ১ চা-চামচ, ধনেপাতা আধা কাপ, শুকনো মরিচের গুঁড়া ১ চা-চামচ, লবণ স্বাদ অনুসারে ও কাঁচা মরিচ ৭-৮টি (চেরা)।
প্রণালি: শোল মাছ লবণ, হলুদ ও সরিষার তেল মাখিয়ে ভেজে তুলে রাখতে হবে। আর ওই তেলেই পেঁয়াজ কুচি দিতে হবে। পেঁয়াজ বাদামি রং হলে রসুন, আদা, মরিচের গুঁড়া, হলুদ ও লবণ দিয়ে ভালোভাবে কষাতে হবে। টমেটোবাটা দিতে হবে, কিছুক্ষণ কষানোর পর প্রয়োজনমতো গরম পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে ভেজে রাখা মাছগুলো দিতে হবে। ঝোল মাখা-মাখা হলে টমেটোর টুকরো আর ধনেপাতা দিয়ে কিছুক্ষণ পর নামিয়ে ফেলতে হবে। নামানোর আগে কাঁচা মরিচ দিতে হবে।
উপকরণ: ছোট টুকরো করে কাটা টাকি মাছ ২ কাপ, ডুমো ডুমো করে কাটা লাউ ৪ কাপ, হলুদ সিকি চা-চামচ, লবণ পরিমাণমতো, পেঁয়াজ ১ কাপ, ধনেপাতা কুচি পরিমাণমতো, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, কাঁচা মরিচ ১০-১২টি, আদাবাটা আধা চা-চামচ ও রাঁধুনি বাটা সিকি চা-চামচ।
প্রণালি: তেলে পেঁয়াজ দিয়ে হালকা করে ভেজে নিতে হবে। তারপর একে একে রসুনবাটা, আদাবাটা ও রাধুনি (গুঁড়া সজ) বাটা ও হলুদের গুঁড়া দিয়ে ভালো করে কষাতে হবে। কষানো হলে লাউ দিতে হবে। লাউ দিয়ে কিছুক্ষণ কষিয়ে অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে আগে থেকে হালকা করে ভেজে রাখা টাকি মাছ দিতে হবে। পানি শুকিয়ে এলে কাঁচা মরিচের ফালি ও সবশেষে ধনেপাতা দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।
উপকরণ: চিংড়ি মাছ ২০০ গ্রাম, সয়াবিন তেল পরিমাণমতো, বাঁধাকপি কুচি ১ কাপ, ক্যাপসিকাম কুচি ১ কাপ, টমেটো কুচি আধা কাপ, পেঁয়াজপাতা কুচি ১ কাপ, কাঁচা মরিচবাটা ১ চা-চামচ, ধনেপাতাবাটা ১ চা-চামচ, হলুদের গুঁড়া পরিমাণমতো, চিলি সস ২ চা-চামচ, টমেটো সস ২ চা-চামচ, বাঁধাকপির ভেতরের পাতা ৪টি, ভিনেগার ২ চা-চামচ, রসুন ১ চা-চামচ ও লবণ স্বাদমতো।
প্রণালি: বাঁধাকপির শক্ত অংশ ফেলে দিন। পাতার ভেতরের অংশ একটু ভাপিয়ে রাখুন। মাছ ধুয়ে ভিনেগার মাখিয়ে রাখুন। এবার কড়াইয়ে সয়াবিন তেল গরম হলে তাতে রসুন কুচি দিয়ে মাছগুলো দিন। একে একে কোঁচানো বাঁধাকপি, ক্যাপসিকাম, টমেটো ও পেঁয়াজপাতা দিয়ে নেড়েচেড়ে নিন। এরপর কাঁচা মরিচবাটা, ধনেপাতাবাটা, চিলি সস ও টমেটো সস দিয়ে নেড়ে নিন। পানি শুকিয়ে এলে নামিয়ে বাঁধাকপির পাতায় অল্প করে চিংড়ি মাছ সুতা দিয়ে বেঁধে স্টিমারে ভাপিয়ে নিন। সুতো কেটে পাতা খুলে পরিবেশন করুন।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন