আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

ইসলাম

মুসলিম উম্মাহর পক্ষে বিশ্বনবির অবমাননায় শায়খ সুদাইসির নিন্দা

পবিত্র কাবা শরিফের জুমআর খুতবায় গত ১৩ রবিউল আউয়াল ফ্রান্সের ধৃষ্টতার প্রতিবাদে বিশ্বের ১৮০ কোটি মুসলমানের পক্ষ থেকে শায়খ সুদাইসি বিশ্বনবির অবমাননাকারীদের প্রতি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরেন প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুন্দর চারিত্রিক মাধুর্যের অনন্য দৃষ্টান্ত। হারামাইন ডটইনফো ফেসবুক পেজ অবলম্বনে তা তুলে ধরা হলো-

তিনি বলেন, ‘বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নবুয়ত লাভের পর থেকে গত প্রায় দেড় হাজার বছর ধরে সারা জগত জুড়ে আলোকিত মনোহর চরিত্রমাধুরীর সুবাস ছড়িয়ে আসছেন। তাঁর চরিত্র মাধুর্যে বিমোহিত পুরো বিশ্ব। কথা ও কাজের ঝলকে মুগ্ধ পৃথিবী। অথচ মত প্রকাশের স্বাধীনতার নামে তাঁরই ব্যাপারে ঘৃণ্য ও নিকৃষ্ট খেলায় মেতে ওঠেছে ফ্রান্স। দেশটির এ ধৃষ্টতাপূর্ণ বক্তব্যে ১৮০ কোটি মুসলমানের পক্ষ থেকে বিশ্বনবির অবমাননাকারীদের প্রতি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।

কাবা শরিফের প্রধান ইমাম ও খতিব শায়খ সুদাইসি প্রতিবাদ ও নিন্দা জানানোর আগে ১৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪২ হিজরির জুমআর খুতবার শুরুতেই বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের তুলনাহীন চারিত্রিক মাধুর্য ও জগত শ্রেষ্ঠ তাঁর অনন্য সব বৈশিষ্ট্যগুলো তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, আল্লাহ তাঁর নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যেসব গুণ, মর্যাদা, শ্রেষ্ঠত্ব, মনোনয়ন ও উজ্জ্বল চয়নের মাধ্যমে বিশিষ্ট করেছেন; কলম, কালি ও কাগজে তা লিখে শেষ করা যাবে না। এ ব্যাপারে আমাদের রবের একটি বাণীই যথেষ্ট, ‘আমি আপনার আলোচনাকে সমুচ্চ করেছি।’ (সুরা আলাম-নাশরাহ : ৪)
কবির ভাষায়-
‘তাঁর চরিত্রালেখ্য আলোচনায় অন্তর জেগে ওঠে
যেমন বৃষ্টিতে প্রাণ ফিরে পায় সৃষ্টিজগত।
তাঁর স্বভাব পবিত্র, মর্যাদা সউচ্চ,
তাঁর সবই সুন্দরম, সবই মুক্তোসম।’

তিনি বলেন, তাঁর চরিত্রমাধুরীগুলো কল্যাণ, ছোট-বড় পুণ্য, পূর্ণতর হেদায়েত, সুষম ইনসাফে ভরপুর। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন গঠনে-আচরণে ও চেহারা-চরিত্রে অনন্য। গঠনগত দিক থেকে তিনি উজ্জ্বল বর্ণ, নির্মল ও দীপ্তিময় ছিলেন। সুদর্শন ও কমনীয়। তাঁর দুই চোখ ছিল কালো ও ডাগর। চোখের পাতার প্রান্তদেশ ছিল ঘন ভ্রবিশিষ্ট। কণ্ঠ ছিল স্বরভাঙা। কাঁধ ছিল প্রশস্ত। চুল ছিল মিশমিশে কালো।

তিনি নীরব থাকলে গাম্ভীর্য ফুটে উঠত। কথা বললে সৌন্দর্য ঝরে পড়ত। দূর থেকে দেখলে মানুষের মধ্যে সবচেয়ে উজ্জ্বল ও মনোহর ছিলেন তিনি। কাছে থেকে দেখলে সবচেয়ে উত্তম ও চিত্তাকর্ষক। মিষ্টভাষী; একেবারে নিখুঁত। এতে এতটুকু কমও নয়, বেশিও নয়।

তাঁর শারীরিক গঠনও ছিল চমৎকার। তাঁর ঘন শ্মশ্রুমণ্ডিত, পুরু কাঁধবিশিষ্ট, হাত ও পায়ের দুই তালু চওড়া, তিনি লিকলিকে লম্বা ছিলেন না; আর দৃষ্টিকটু খাটোও ছিলেন না। সিঁথি কাটা চুলবিশিষ্ট পরিপাটি ছিলেন তিনি। যখন কথা বলতেন তখন মনে হতো যেন তাঁর সামনের দাঁতগুলো থেকে আলো বের হচ্ছে। হাদিসের একাধিক বর্ণনায় যেমন ছিলেন বিশ্বনবি-

– ইমাম বুখারি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি হজরত বারা বিন আজেব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর চেহারা মোবারক কি তরবারির মতো (চকচকে) ছিল? তিনি বললেন, ‘না, বরং চাঁদের মতো (স্নিগ্ধ ও মনোরম) ছিল।’ তিনি আরও বলেন, ‘নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাঝারি গড়নের ছিলেন। তাঁর উভয় কাঁধের মধ্যবর্তী স্থান প্রশস্ত ছিল। তাঁর মাথার চুল দুই কানের লতি পর্যন্ত প্রসারিত ছিল।’ (বুখারি)

– হজরত আলি বিন আবি তালেব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম না অতি লম্বা ছিলেন আর না (অতি) বেঁটে ছিলেন। তাঁর দুই হাত ও দুই পা ছিল গোশতবহুল, মাথা ছিল আকারে বড় এবং হাড়ের গ্রন্থিগুলো ছিল স্থূল ও শক্তিশালী। তার বুক থেকে নাভি অবধি প্রলম্বিত ফুরফুরে পশমের একটি রেখা ছিল। চলার সময় তিনি সম্মুখের দিকে ঝুঁকে হাঁটতেন, যেন তিনি ঢালবিশিষ্ট জায়গা দিয়ে হেঁটে চলেছেন। আমি তাঁর আগে কিংবা তাঁর পরে আর কাউকে তাঁর মতো দেখিনি।’ (তিরমিজি)

হজরত জাবির বিন সামুরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘আমি একবার পূর্ণিমা রাতের স্নিগ্ধ আলোতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে লাল চাদর ও লুঙ্গি পরিহিত অবস্থায় দেখলাম। তখন আমি একবার তাঁর দিকে ও একবার চাঁদের দিকে তাকাতে থাকলাম। মনে হলো তিনি আমার কাছে পূর্ণিমার চাঁদের চেয়ে অধিক সুন্দর।’

তাঁর শারীরিক সৌন্দর্য বর্ণনা শায়খ সুদাইসি বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সভা কবি হাসসান বিন সাবেতের একটি কবিতাংশ তুলে ধরেন। কবি বলেন-
‘তোমার চেয়ে সুন্দর কোনো চোখ পৃথিবীতে দেখেনি
তোমার মহৎ কোনো মাতা প্রসব করেনি।
তুমি এমন দোষমুক্ত হয়ে সৃষ্টি হয়েছ
যেন তুমি যেভাবে চেয়েছ সেভাবেই জন্ম নিয়েছ।’

মুসলিম উম্মাহকে লক্ষ্য করে শায়খ সুদাইসি বলেন- ইসলামের ভাইয়েরা! সৃষ্টির সেরা মানবের প্রিয় উম্মতেরা! নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বাচন ও বাকরীতি সম্পর্কে যদি বলতে যাই, তাহলে আমরা দেখি- তিনি ছিলেন দীর্ঘ নীরবতার অধিকারী, প্রয়োজন ছাড়া কথা বলতেন না। কথা শুরু ও শেষ করতেন ‘বিসমিল্লাহ’ দিয়ে। সারগর্ভ ও সুস্পষ্ট কথা বলতেন।

– উম্মুল মোমিনিন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তোমাদের মতো চটপটে তথা অস্পষ্টভাবে তাড়াতাড়ি কথা বলতেন না, বরং তাঁর প্রতিটি কথা ছিল সুস্পষ্ট। শ্রোতারা খুব সহজেই তা হৃদয়ঙ্গম করতে পারত।’ (তিরমিজি)

– নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সঙ্গীদের সঙ্গে অধিকাংশ সময় মুচকি হাসিতে কথা বলতেন। হজরত আবদুল্লাহ বিন হারিস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর চেয়ে বেশি মুচকি হাসি দিতে আমি আর কাউকে দেখিনি।’

– তিনি আরও বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুধু মুচকি হাসিই দিতেন।’
– হজরত জারির বিন আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন ‘আমি ইসলাম গ্রহণ করার পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর ঘরে প্রবেশ করতে কোনোদিন আমাকে বাধা প্রদান করেননি এবং যখনই আমাকে দেখেছেন মুচকি হাসি দিয়েছেন।’ (বুখারি)।

– হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, লোকেরা বলল- ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি আমাদের সঙ্গে কৌতুকও করেন, তিনি বললেন, ‘আমি সত্য ব্যতিত কিছু বলি না।’

শায়খ সুদাইসি আরও বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন মানুষের মধ্যে সর্বাধিক বিনয়ী। একাধিক হাদিসে তা প্রমাণিত।
– হজরত আনাস বিন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, এক মহিলা নবীজির কাছে এসে বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহু! আপনার সঙ্গে আমার কিছু প্রয়োজন আছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন : ‘হে অমুকের মা! তুমি যে কোনো গলিতে ইচ্ছে বস, আমি তোমার কাছে গিয়ে বসব।’ বর্ণনাকারী বলেন, ‘অতপর ওই মহিলা গিয়ে বসল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও গিয়ে বসলেন। এমনকি সে তার প্রয়োজনীয় কাজ সেরে নিল।’ (মুসনাদে আহমাদ)
– হজরত আনাস বিন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রুগ্ণ ব্যক্তিকে দেখতে যেতেন, জানাজায় হাজির হতেন, গাধায় আরোহণ করতেন। গোলামের দাওয়াতও কবুল করতেন। বনু কুরায়যার যুদ্ধের দিন তিনি একটি গাধায় সওয়ার ছিলেন, খর্জুর ছাল নির্মিত লাগাম ছিল এর মুখে আর তাতে ছিল খর্জুর ছাল নির্মিত একটি আসন।’ (তিরমিজি)

শায়খ সুদাইসি বলেন, প্রিয় ভাইয়েরা, এ হলো বর্ণাঢ্য আদর্শ ও আলোকিত চরিত্রসম্পন্ন পবিত্র রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আলো ও চরিতমালার সমৃদ্ধ সাগরের সামান্য ঝলক। যেন সুমিষ্ট ভারী মেঘমালার এক পশলা বৃষ্টি। আল্লাহ যার সমুচ্চ মর্যাদা ও সুউচ্চ মাহাত্ম্য বর্ণনায় কথা বলেছেন।

সুতরাং আপনারা নিজেদের নবীর জীবনচরিত অনুসরণ করুন। এটিই তাঁর ভালোবাসার প্রমাণ, যা সর্বোচ্চ শোভা ও মহত্তম লক্ষ্য। নিছক প্রদর্শনী, আকৃতি, সমাবেশ, অনুষ্ঠান, বিরামহীন গল্প-উপন্যাস, স্তুতি বা গান নয় তাঁর ভালোবাসা। এসব তো তাঁর ভালোবাসা প্রকাশের ধরন-প্রকরণমাত্র। কবি বলেন-
‘তাদের জিজ্ঞেস কর বিশুদ্ধ ভালোবাসা ও বিবরণ সম্পর্কে,
অচিরেই তুমি সত্য সংবাদদাতাকে বলতে শুনবে
রাসুলের ভালোবাসা হলো আঁকড়ে ধরায়
তাঁর দৃশ্য-অদৃশ্য সমৃদ্ধ শরিয়ত।’

এর চেয়ে আরও পরিষ্কার ও জোরাল হলো মহান আল্লাহর ঘোষণা। তিনি বলেন-
‘(হে রাসুল!) আপনি বলে দিন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসো, তাহলে আমাকে (রাসুলকে) অনুসরণ কর, যাতে আল্লাহও তোমাদের ভালোবাসেন এবং তোমাদেরকে তোমাদের পাপ মার্জনা করে দেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাকারী দয়ালু।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ৩১)

শায়খ সুদাইসি উম্মতে মুসলিমাকে মুমিন ভাই সম্বোধন করেন বলেন, ‘উম্মতের সঙ্গে তাদের রাসুলের, তাদের প্রিয়তম ও সুপারিশকারী মহামানবের এবং তাঁর সুবাসিত জীবন ও চরিত্রমাধুরীর সঙ্গে সম্পর্ক ও ভালোবাসা কোনো সময় বা উপলক্ষের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়, বরং এ গভীর সম্পর্ক সব প্রয়োজনে, সব অনুষঙ্গে এবং আমৃত্যু প্রতিটি অবস্থার সঙ্গে।

আমরা কাবার এ পবিত্র প্রান্ত মিম্বার থেকে; কল্যাণ, সত্য ও শান্তির মঞ্চ থেকে বিভিন্ন দেশ ও ভূখণ্ডে অবস্থানরত সব মুমিন মুসলমান বিশ্ববাসীর উদ্দেশে আহ্বান জানাচ্ছি-

‘সবাই সম্মানিত রাসুলদের চরিত্রে সুশোভিত হোন, যাদের পুরোভাগে রয়েছেন বিভিন্ন ধর্মের মাঝে ব্যাপকতর শান্তি ও পূর্ণতর দয়ার আহ্বায়ক আমাদের নবি ও আমাদের প্রিয়তম রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। সবাই সব ধরনের ধর্মীয় প্রতীকের অসম্মান, সাংঘর্ষিকতা, বিদ্রুপ ও ছিদ্রান্বেষণ থেকে বিরত থাকি। যে ধর্মীয় প্রতীকগুলোর শিরোভাগে রয়েছেন নবি-রাসুলদের পবিত্র সত্তা। আল্লাহ বলেন-

‘আমরা তাঁর পয়গম্বরদের মধ্যে কোনো তারতম্য করি না।’ (সুরা বাকারাহ : আয়াত ২৮৫)

প্রিয় মুসলিম উম্মাহ! আমরা ১৮০ কোটি মুসলমানের পক্ষ থেকে নবি-রাসুলদের সম্মানে আঘাতের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। তীব্রভাবে আমরা এসবের প্রতিবাদ করছি। বিশেষত নবীদের মধ্যে সর্বশেষজন, সরলপথ ও সৌহার্দ্যরে নবি, আমাদের নেতা, নবি, প্রিয়তম, সুপারিশকারী ও আদর্শ মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শানে ধৃষ্টতা। এসব ব্যঙ্গ-কার্টুন ও নিকৃষ্ট কর্মকাণ্ড আসলে এক ধরনের সন্ত্রাস। এসব ঘৃণা ও জঘন্য বর্ণবাদ উস্কে দেয়াও উগ্রতা।

আর ধর্মীয় নিদর্শনাদি ও পবিত্র বস্তুগুলোকে অসম্মান ও বিদ্রুপ করা কোনোভাবেই মতপ্রকাশের স্বাধীনতার মধ্যে পড়ে না। এটা বরং শিষ্টাচার লঙ্ঘন ও সম্মানে আঘাত। যা তার ওপরই পতিত হয়।

মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ভোগ করতে গিয়ে অবশ্যই মানবিক মূল্যবোধ রক্ষা করতে হবে, যা অন্যের অনুভূতিকে সম্মান দানের ওপর প্রতিষ্ঠিত।

কেউ যখন এই মূল্যবোধ থেকে বের হয়ে যায়, তখন তা স্বাধীনতা, সংস্কৃতি ও ধর্মের নৈতিকতার মর্মমূলে আঘাত করে। এ ধরনের অবমাননা আসলে উগ্রবাদী চিন্তাধারীদের সেবা করে।

যারা চায় মানবসমাজের ঘৃণার আবহাওয়া ছড়িয়ে দিতে। ইসলাম এটি এবং ওইসব থেকে মুক্ত। সন্ত্রাসের তকমা তার গায়ে লাগা থেকে মুক্ত। ইসলাম তো পরস্পর উদারতা, দয়া ও সম্প্রীতির ধর্ম। ইসলামে সন্ত্রাস, উগ্রবাদ ও নাশকতা এবং আল্লাহর নবি আলাইহিস সালামদের প্রতি বিদ্রুপ, বিষোদ্গার বা বিভেদ সৃষ্টির কোনো সুযোগ নেই।

আমরা একইভাবে আহ্বান জানাই আবেগ ও প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণের। প্রতিক্রিয়া ও প্রতিবাদে অনিয়ন্ত্রিত ও অপরিকল্পিত উত্তেজনা ও ঝুঁকি পরিহারের। আহ্বান জানাই পরিণতিতে দৃষ্টি দেয়া এবং ভবিষ্যত নিয়ে ভাবার। কেননা বাস্তবতা হলো, এসব ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ নবি-রাসুলদের এতটুকু মানহানি ঘটাতে পারবে না। কেননা আল্লাহ তাআলাই বলেছেন-
‘আল্লাহ আপনাকে মানুষের কাছ থেকে রক্ষা করবেন।’ (সুরা মায়েদা : আয়াত ৬৭

সুতরাং মুসলিমরা যেন এসব বিলীয়মান বুদ্ধুদের সামনে নিশ্চিত ও স্থিরচিত্ত থাকেন, এসবের মাধ্যমে তারা নিজেদের ছাড়া আর কারও ক্ষতি করছে না। অতপর কুরআনের এসব আয়াত দিয়ে তিনি তাঁর খুতবা শেষ করেন। যেভাবে বলেছেন মহান আল্লাহ-
– ‘যদি তোমরা তাঁকে (রাসুলকে) সাহায্য না করো, তবে মনে রেখ, আল্লাহ তাঁর সাহায্য করেছিলেন।’ (সুরা তওবাহ : আয়াত ৪০)
– ‘বিদ্রুপকারীদের জন্য আমি আপনার পক্ষ থেকে যথেষ্ট।’ (সুরা হিজর : আয়াত ৯৫)
– ‘আর আল্লাহ নিজ কর্ম সম্পাদনে প্রবল-অপ্রতিরোধ্য; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না।’ (সুরা ইউসুফ : আয়াত ২১)

বিজ্ঞাপন
মন্তব্য করুন

অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন

Leave a Reply

ইসলাম

পবিত্র ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম ১৭ নভেম্ব

দেশের আকাশে ১৪৪৩ হিজরি সালের পবিত্র রবিউস সানি মাসের চাঁদ দেখা গিয়েছে। ফলে রবিবার থেকে পবিত্র রবিউস সানি মাস গণনা করা হবে।

সেই হিসেবে দেশে আগামী ১১ রবিউস সানি ১৪৪৩ হিজরি (১৭ নভেম্বর, বুধবার) পবিত্র ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম পালিত হবে।

শনিবার ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এদিন সন্ধ্যায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পূর্ব সাহানে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী এনামুল হাসান। 

সভায় সব জেলা প্রশাসন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রধান কার্যালয়, বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর এবং মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করে পবিত্র রবিউস সানি মাসের চাঁদ দেখার ব্যাপারে নিশ্চিত হয় চাঁদ দেখা কমিটি।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

ইসলাম

নামাজের রাকাতসংখ্যায় সন্দেহ হলে কী করবেন?

নামাজে থাকাকালীন কারও মনে সংশয় জাগে কত রাকাত হলো, রাকাত ভুলে ছুটে যায়নি তো? কিংবা নামাজের পরেও সন্দেহ জাগতে পারে রাকাত পূর্ণ হয়েছে নাকি হয়নি। নামাজের রাকাতসংখ্যায় সন্দেহ হলে কী করবেন- সে সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত নির্দেশনা:

নামাজ পড়ার সময়ে রাকাতসংখ্যা নিয়ে সন্দেহ হলে এবং এই সন্দেহ প্রথমবারের মতো হলে ওই নামাজ বাতিল হয়ে যাবে। নামাজ পুনরায় পড়া আবশ্যক। (ইবনে আবি শায়বা, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ২৮)

নামাজের সালাম ফেরানোর পর যদি রাকাতসংখ্যা নিয়ে সন্দেহ হয়, তবে তার নামাজ বাতিল হয়ে যাবে। (ইবনে আবি শায়বা, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ২৮)

কারও যদি নামাজের পর দৃঢ়বিশ্বাস হয় যে কিছু রাকাত পড়া হয়নি এবং যদি নামাজ পরিপন্থী কোনো কাজ না হয়ে থাকে, তাহলে ছুটে যাওয়া রাকাত পড়ে নেবে। যদি নামাজ পরিপন্থী কোনো কাজ হয়ে যায়, তাহলে ওই নামাজ পুনরায় পড়বে। (ইবনে আবি শায়বা, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ২৪)

যে ব্যক্তির প্রায় সময় সন্দেহ হয় এবং সন্দেহ তার অভ্যাসে পরিণত হয়, তবে যেদিকে তার মন বেশি যায়, সেটার ওপর আমল করবে। যদি সব বিষয়ে ধারণা সমান হয়, তবে কমটির ওপর আমল করবে এবং প্রতি রাকাতকে নামাজের শেষ মনে করে বসবে এবং শেষে সিজদায়ে সাহু করবে। (মুসলিম, হাদিস: ৮৮৮)

তিন রাকাত পড়া হয়েছে নাকি চার রাকাত- সে ব্যাপারে সন্দেহ হলে তিন রাকাত মনে করে চতুর্থ রাকাত পড়বে। এরপর শেষে সিজদায়ে সাহু করবে। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ১৬৭৭)

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

ইসলাম

আজান শোনার পর প্রিয় নবি (সা.)-এর সুন্নাত কী?

প্রিয় নবির ঘর সুমহান আদর্শের কেন্দ্রবিন্দু। এ ঘর থেকে বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়েছিল উত্তম আদর্শ, পরিপূর্ণ আদব, অতুলনীয় শিষ্টাচার ও স্বাধীন সমাজ ব্যবস্থা। নবিজীর যুগে এমন সমাজ ব্যবস্থা প্রবতির্তত হয়েছিল যে, পরিবারের সবাই সমভাবে কাজ করতেন। পুরুষরা স্ত্রীদের কাজে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতেন। আর একটি সময় হলেই সবাই একত্রিত হতেন। তা ছিল নামাজের আজান। আজান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মুহূর্তের মধ্যে সবাই কাজ রেখে নামাজ পড়তে মসজিদে একত্রিত হতেন।

স্বয়ং বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরিবারিক কাজে সময় দিতেন। স্ত্রীদের কাজে সহযোগিতা করতেন। নামাজের আজান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কাজ ছেড়ে দিতেন। হাদিসে পাকের একাধিক বর্ণনা থেকে প্রমাণিত যে-

১. হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ঘরে কী কী কাজ করতেন? তিনি উত্তর দেন-

كان بشرًا من البشر: يفلي ثوبه ويحلب شاته، ويخدم نفسه

‘তিনি একজন মানুষ ছিলেন, তিনি তাঁর কাপড় সেলাই করতেন, ছাগলের দুধ দহন করতেন এবং নিজের কাজ নিজেই করতেন।’ (মুসনাদে আহমাদ)

তিনি কি শুধু সাধারণ মানুষের মতো মানুষ ছিলেন? না তিনি ছিলেন চারিত্রিক মাদুর্য ও বিনয়ের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। কোনো গুণেই কেউ তার সমকক্ষ ছিল না। তিনি যেমন বিনয়ী ছিলেন, তেমনি ছিলেন অহংকারমুক্ত মানুষ।

প্রিয় নবি কেমন মানুষ ছিলেন? তিনি কোনো দিন কাউকে কষ্ট দেননি। তিনি ছিলেন প্রতিটি কাজে অংশগ্রহণকারী সেরা মানুষ। অন্যকে সেরা সাহায্যকারী ও শ্রেষ্ঠ মানুষ। ইবাদত-বন্দেগি ও আল্লাহর হুকুম পালনে তিনি ছিলেন অনুকরণীয় আদর্শ। তাঁর প্রতি নাজিল হয়েছে এ আয়াত-

لَقَدۡ کَانَ لَکُمۡ فِیۡ رَسُوۡلِ اللّٰهِ اُسۡوَۃٌ حَسَنَۃٌ لِّمَنۡ کَانَ یَرۡجُوا اللّٰهَ وَ الۡیَوۡمَ الۡاٰخِرَ وَ ذَکَرَ اللّٰهَ کَثِیۡرًا

‘তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও পরকালকে ভয় করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে তাদের জন্য রাসুলুল্লাহর (চরিত্রের) মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে।’ (সুরা আহজাব : আয়াত ২১)

আজান শোনার পর প্রিয় নবির সুন্নাত

কোরআনের ঘোষণার পরও তিনি আল্লাহর ইবাদাত ও তার অনুসরণ থেকে কখনো বিরত হতেন না। বরং মসজিদে আজান হওয়ার ধ্বনি শোনার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি তাতে সাড়া দিয়ে সব কাজ রেখে মসজিদে ছুটে যেতেন। হাদিসের বর্ণনায় এসেছে-

হজরত আসওয়াদ বিন ইয়াজিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘আমি হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে জিজ্ঞাসা করলাম যে, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাড়ীতে কি কি ধরনের কাজ করতেন? উত্তরে তিনি বললেন-

كان يكون في مهن أهله، فإذا سمع بالأذان خرج

‘তিনি তার পরিবারের সব কাজে নিয়োজিত থাকতেনতবে আজান শোনার সঙ্গে সঙ্গেই বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতেন।’ (বুখারি)

ফরজ নামাজ মসজিদে পড়ার গুরুত্ব

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি যে, তিনি বাড়িতে ফরজ নামাজ পড়েছেন। তবে তিনি মৃত্যুর আগ মুহূর্তে যখন প্রচণ্ড রোগাক্রান্ত; শোয়া থেকে উঠতে পারছিলেন না; যখন মসজিদে যেতে অপরাগ ছিলেন তখন বাড়িতে নামাজ আদায় করেছেন। কিন্তু তিনি দরজা দিয়ে মসজিদে নামাজ পড়ার দৃশ্য অস্রুসিক্ত নয়নে অবলোকন করতেন।

প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতের প্রতি খুবই দয়াশীল ছিলেন। কিন্তু নামাজের জামাতের অংশগ্রহণের ব্যাপারে তাঁর মতো এতো কঠোর দ্বিতীয় আর কেউ ছিল না। তিনি জামাতে অনুপস্থিত ব্যক্তিদের ব্যাপারে এভাবে কঠোর শাস্তি দেওয়ার কথা ঘোষণা দিয়েছিলেন যে-

لقد هممت أن آمر بالصلاة فتقام ثم آمر رجلاً أن يصلي بالناس ثم أنطلق معي برجال معهم حزم من حطب إلى قوم لا يشهدون الصلاة فأحرق عليهم بيوتهم

‘আমার ইচ্ছা হয় যে, আমি কাউকে নামাজের ইমামতি করার আদেশ দেই আর আমি কাঠসহ কিছু লোককে সঙ্গে নিয়ে ঐ সব লোকদের বাড়িতে যাই; যারা জামাতের সঙ্গে নামাজ পড়ার জন্য উপস্থিত হয়নি। এরপর তারাসহ তাদের বাড়ি-ঘরকে জালিয়ে দেই।’ (বুখারি ও মুসলিম)

মসজিদে না গেলে নামাজ কবুল হবে না!

মসজিদে গিয়ে জামাতে নামাজ পড়ার প্রতি ছিল নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিশেষ গুরুত্ব। শরিয়তের ওজর ছাড়া আজান শোনার পর মসজিদে না গেলে নামাজ কবুল হবে মর্মেও প্রিয় নবি ঘোষণা করেছেন-

من سمع النداء فلم يجب فلا صلاة له إلا من عذر، والعذر خوف أو مرض

‘শরিয়তের ওজর ব্যতিত যে ব্যক্তি আজান শোনার পর জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করলো নাতার নামাজ কবুল হবে না।’ (তিরমিজি) আর ওজর বলতে: শত্রুর ভয় অথবা রোগকে বুঝানো হয়েছে।

প্রিয় নবির যুগের সে দৃশ্য আজ কোথায়? কোথায় সেই নামাজি? মসজিদে আজান হয় ঠিকই কিন্তু মসজিদের কাতারপূর্ণ হয় না। অথচ বর্তমান সময়ে মসজিদে নামাজ পড়তে না যাওয়ার পেছনে নেই কোনো শরিয়তের ওজর। না কোনো শত্রুর ভয় কিংবা বিপদের ভয়।

মুমিন মুসলমান মাত্রই উচিত, আজান হলে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সোনালী যুগের মতো কাজ রেখে মসজিদে উপস্থিত হওয়া। একত্রে নামাজ আদায় করা। প্রিয় নবির প্রিয় সুন্নাতকে জাগ্রত করা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। হাদিসের উপর আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

ইসলাম

হিজরতের কঠিন বিপদে যে দোয়া নাজিল হয়েছি

মানসিক চাপ, বিষন্নতা ও জীবনের নানা কষ্ট থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর সাহায্যের বিকল্প নেই। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জীবনের ঝুঁকির মুহূর্তে আল্লাহর নির্দেশে মক্কা থেকে মদিনার উদ্দেশ্যে বের হওয়ার সময় চরম বিপদের মুহূর্তে প্রশান্তি স্বরূপ এ আয়াতটি নাজিল হয়। যা সত্যিই প্রশান্তির। এ আয়াতটি পড়লে এমনিতেই কঠিন বিপদে মিলে প্রশান্তি ও নিরাপত্তা। তাহলো-

رَّبِّ اَدۡخِلۡنِیۡ مُدۡخَلَ صِدۡقٍ وَّ اَخۡرِجۡنِیۡ مُخۡرَجَ صِدۡقٍ وَّ اجۡعَلۡ لِّیۡ مِنۡ لَّدُنۡکَ سُلۡطٰنًا نَّصِیۡرًا

উচ্চারণ : রাব্বি আদ্খিলনি মুদ্খালা সিদ্ক্বিও ওয়া আখরিঝ্নি মুখরাঝা সিদ্ক্বিও ওয়াঝ্আললি মিল্লাদুংকা সুলত্বানান নাছিরা

অর্থ : ‘হে আমার প্রভু! তুমি আমাকে কল্যাণসহ প্রবেশ করাও এবং কল্যাণসহ বের কর। আর তোমার কাছ থেকে আমাকে দান কর সাহায্যকারী শক্তি।’ (সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ৮০)

উল্লেখ্য, এ আয়াতটি প্রিয় নবির হিজরতের সময় নাজিল হয়েছিল। যখন নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা থেকে বের হওয়ার এবং মদিনাতে প্রবেশ করার সময় উপস্থিত হয়েছিল।

কেউ কেউ বলেন, এ প্রার্থনামূলক আয়াতের মর্মার্থ হলো- সত্যের উপর আমার মৃত্যু দিও এবং সত্যের উপর আমাকে কেয়ামতের দিন উত্থিত করো।

আবার কেউ কেউ বলেন, সত্যতার সঙ্গে আমাকে কবরে প্রবিষ্ট করো এবং কেয়ামতের দিন সত্যতার সঙ্গে আমাকে কবর থেকে বের করো ইত্যাদি।

ইমাম শাওকানি বলেন, এ আয়াতটি যেহেতু দোয়া; বিধায় এর ব্যাপকতায় উল্লিখিত সব কথাই এসে যায়।

কেউ কেউ বলেন, যারা বিভিন্ন কষ্ট ভোগ করেন, তারাও এ দোয়াটি প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত নামাজের পর পড়তে পারেন। আশা করা যায়, এতে তার উল্লেখিত রোগ ও সমস্যাগুলো সমাধান হয়ে যাবে।

আবার কেউ কেউ বলেছেন, যদি কারো ডায়বেটিস রোগ হয়; তবে এ রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম ও শৃঙ্ক্ষলাবদ্ধ জীবনের পাশাপাশি এ দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা। এ রোগ থেকে মুক্ত থাকতে এটিকে কোরআনি আমল মনে করা হয়।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বিভিন্ন রোগ মুক্তিতে কোরআনের এ আয়াতের আমলটি বেশি বেশি করার তাওফিক দান করুন। দুনিয়ার ও পরকালের সব বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

ইসলাম

কেয়ামতের দিনের মুক্তিতে মুমিনের করণীয় কী?

শিরকমুক্ত ঈমান এবং নেক আমল ছাড়া কেয়ামতের দিন মুক্তির বিকল্প নেই। কেয়ামতের ময়দানে সব মানুষ আল্লাহর ভয়ে ভীত থাকবে। এমনকি নবি-রাসুলগণও আল্লাহর ভয়ে ভীত থাকবেন। কারণ কেউ জানেন না আল্লাহ তাআলা সে দিন কার সঙ্গে কীরূপ ব্যবহার করবেন।

হাদিসের বর্ণনায় যদিও কেয়ামতের দিনের ভয়বাহতার বর্ণনা দিয়েছেন প্রিয়নবি। তিনি সেদিন সেজদায় থাকবেন। স্বয়ং আল্লাহ তাআলা তাকে সেজদা থেকে উঠতে বলবেন। তিনি সেজদা থেকে মাথা উঠিয়ে বিচার কাজ শুরু করার জন্য সুপারিশ করবেন। তারপরই শুরু হবে পরকালের বিচারকার্য।

সেদিন যার আমলনামা ভালো হবে সে সফল হবে। শুধু মানুষ নয়, সেদিন নবি-রাসুলরা কতটা ভয়াবহ সময় কাটাবেন তা হাদিসের একটি বর্ণনা থেকেই সুস্পষ্ট-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, যখন এ আয়াত নাজিল হয়-
وَأَنذِرْ عَشِيرَتَكَ الْأَقْرَبِينَ
(হে রাসুল!) আপনি আপনার নিকটাত্মীয়দেরকে সতর্ক করুন।’ (সুরা শুআরা : আয়াত ২১৪)
তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাঁড়িয়ে ঘোষণা করলেন-
> হে কুরাইশ দল! (তোমরা আল্লাহর একত্ববাদ ও ইবাদতের ধারায়) নিজেদের আত্মাকে প্রস্তুত কর। আমি আল্লাহর কাছে তোমাদের কোনো কাজে আসতে পারব না।
> হে বনি আবদে মানাফ! আমি আল্লাহর কাছে তোমাদের কোনো উপকার করতে পারব না।
> হে আব্দুল মুত্তালিবের পুত্র আব্বাস! আমি আল্লাহর কাছে তোমার কোনো উপকার করতে পারব না।
> হে রাসুলের ফুফু সাফিয়্যাহ! আমি আল্লাহর কাছে আপনার কোনো কাজে আসব না।
> হে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কন্যা ফাতেমা! তুমি আমার সম্পদ থেকে যা ইচ্ছা চেয়ে নাও। আমি আল্লাহর কাছে তোমার কোনো কাজে আসব না।’ (বুখারি)

সুতরাং মুমিন মুসলমানের করণীয়-
এ সতর্কবার্তা ঘোষণার পরপরই মহান আল্লাহ তাআলা পরবর্তী আয়াতে প্রিয়নবিকে অনুসরণ ও অনুকরণ করার যে ঘোষণাগুলো দিয়েছেন, সে অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা। আর তাহলো-
‘আর মুমিনদের মধ্যে যারা তোমার অনুসরণ করে, তাদের প্রতি তোমার বাহুকে অবনত কর। তারপর যদি তারা তোমার অবাধ্য হয়, তাহলে বল, তোমরা যা কর, নিশ্চয় আমি তা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। আর তুমি মহাপরাক্রমশালী পরম দয়ালু (আল্লাহর) উপর তাওয়াক্কুল কর। যিনি তোমাকে দেখেন যখন তুমি (নামাজে) দণ্ডায়মান হও এবং সেজদাকারীদের মধ্যে তোমার ওঠা-বসা। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা মহাজ্ঞানী।’ (সুরা শুআরা : আয়াত ২১৫-২২০)

আল্লাহর একত্ববাদ ও ইবাদতে যদি প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার নিজ বংশধর, চাচা, ফুফু ও কন্যার ব্যাপারে এমন ঘোষণা দেন তবে অন্যান্য মুসলমান কিভাবে আল্লাহর নাফরমানি করে প্রিয়নবির শাফায়াত লাভের আশা করতে পারে!

কোরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনা থেকে এ কথা প্রমাণিত যে, শিরক মুক্ত ঈমান ও নেক আমল ছাড়া কোনো আদম সন্তানই পরকালে মুক্তি পাবে না। যারাই প্রিয় নবির অনুসরণ ও অনুকরণ করবে তাদের মুক্তি হবে নিরাপদ ও সহজ।

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, শিরকমুক্ত ঈমান ও নেক আমলে নিজেদের জীবন সাজানো। কোরআন-সুন্নাহর আলোকে জীবন পরিচালনা করা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে শিরকমুক্ত ঈমান লাভ ও তার ইবাদত-বন্দেগিতে নিজেদের নিয়োজিত করার তাওফিক দান করুন। হাশরের ময়দানে হাদিসে ঘোষিত সব ধরনের শাফায়াত লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশক: শাইখ সিরাজ
© ২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। দা এগ্রো নিউজ, ফিশ এক্সপার্ট লিমিটেডের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। ৫১/এ/৩ পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থাপথ, ঢাকা -১২০৫
ফোন: ০১৭১২-৭৪২২১৭
ইমেইল: info@agronewstoday.com, theagronewsbd@gmail.com