পূর্ব আফ্রিকার দেশ উগান্ডার ৭৫ ভাগ কৃষকের প্রধান উৎপাদিত পণ্য কলা। বর্তমানে দেশটির অর্ধেক জমি এসেছে আবাদের আওতায়। আর ৭৮ শতাংশ জমিতেই রয়েছে কলা গাছ। কলা আবাদে ঝুট ঝামেলা কম। উর্বর মাটিতে চারা পুঁতে যৎসামান্য যত্ন করলেই ফলন নিশ্চিত। তাই যুগ যুগ ধরেই প্রধান খাদ্য পণ্য উৎপাদনেই পারদর্শিদতা উগান্ডার কৃষিজীবী মানুষের।
দুর-দুরান্তের বাজারে বাই-সাইকেলে বিমেষ কায়দায় কলা বহন সেখানকার চিরপরিচিত দৃশ্যের একটি। উগান্ডার এক কৃষক জানায়, সে ১৬ কিলোমিটার সাইকেলে চেপে কলা নিয়ে বাজারে যায় বিক্রি করতে।
বিশ্বব্যাপী পানামা রোগ কলা উৎপাদনকে সংকটে ফেলে। চীনে উজাড় হয়ে যায় হাজার হাজার হেক্টরের কলা বাগান। এ বির্পজয় সমপ্রতি চীন কাটিয়ে উঠেছে।কৃষকের অর্থকারী এই পণ্য নিয়ে নানামুখী গবেষণা ও সহায়তায় সরকারের পাশাপাশি উদ্যোগী হয়েছে উন্নয়ন সংগঠনগুলি।
টিস্যু কালচার চারা উৎপাদন নিয়ে এগিযে এসেছে ব্র্যাক। উগান্ডার টিস্যু কালচার ল্যাবের ব্যবস্থাপক খন্দকার সালেহ আহমেদ বলেন, কলার যে পানামা রোগ তার ক্ষতির পরিমাণ শতকরা শতভাগ। উগান্ডায় আমরা খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি যে কিছু কৃষক কলার আবাদই ছেড়ে দিয়েছে।
তিনি আরো বলেন, এখানকার জাতীয় কৃষি গবেষণা কেন্দ্র এটা নিয়ে গবেষণা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে টিস্যু কালচার পদ্ধতি যদি ব্যবহার করা যায় সেক্ষেত্রে এ রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
দেশজুড়ে রয়েছে কলার অসখ্য বাজার।উগান্ডার কলার চার রকমের ব্যবহারকে ঘিরে রয়েছে বহু সংখ্যক কলার জাত। সেদ্ধ করে প্রধান খাদ্য হিসেবে, বিয়ার উৎপাদন শিল্পে ব্যবহারের জন্য, পুড়িয়ে খাওয়ার জন্য এবং ডেজার্ট হিসেবে খাওয়ার জন্য রয়েছে পৃথক পৃথক রকমের কলা।
উগান্ডার মানুষের প্রধান খাদ্য কলা। একসময় প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত কলাই ছেলো তাদের জীবন ধারণের প্রধান উপকরণ। কিন্ত পরে চাষ ও বাণিজ্য শুরু হওয়ার পর কৃষকদেরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে কলা।
বিপুল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও পূর্ব আফ্রিকার দেশ উগান্ডার ৪০ ভাগ মানুষ এখনও বাস করে দারিদ্র্য সীমার নীচে। জনগোষ্ঠির দারিদ্র্য দূর করতে কৃষি ও পুষ্টি উন্নয়নের দিকে জোর দিচ্ছে সে দেশের সরকার। এক্ষেত্রে প্রান্তিক জনগোষ্ঠিকে একেবারে গোড়া থেকে এগিয়ে নিতে কাজ করছে বাংলাদেশভিত্তিক বিশ্বের বৃহৎ বেসরকারি সংগঠন ব্র্যাক।
উগান্ডাকে বলা হয় পার্ল অব আফ্রিকা। ১৯৭০ থেকে ৮০ এক দশক এই দেশটির জন্য এক অন্ধকার সময়। গৃহযুদ্ধে প্রাণ দিতে হয়েছে ৫ লাখেরও বেশি মানুষকে। তারপরও বহুদিন চলেছে এর জের। সে কারণে ২ লাখ ৩৬ হাজার ৪০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের দেশটিকে চার কোটিরও কম জনগোষ্ঠির খাদ্য চাহিদা পূরণে এখনও হিমশিম খেতে হচ্ছে। এমন একটি দেশের মানুষের চিন্তাকে ঘুরিয়ে দিতে পাশে দাঁড়িয়েছে বিশ্বের বৃহৎ এনজিও ব্র্যাক। তারা কাজ করছে জনগোষ্ঠির কৃষি ও পুষ্টি সম্পর্কে চোখ খুলে দিতে।
উগান্ডার প্রধান খাদ্য মিষ্টি আলু। ব্র্যাকের কাছ থেকে এদেশের মানুষ চিনেছে কমলা শাসযুক্ত ভিটামিন এ ও বিটা ক্যারোটিন সমৃদ্ধ মিষ্টি আলু।এর চাষ ও কৌশল ও উপকরণ পেয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বহু কৃষক কৃষাণী।
কৃষি ও পুষ্টির এই সমন্বিত অভিযান ছড়িয়ে পড়েছে দেশটির ১২০ জেলার মধ্যে ৬৪টিতে। কৃষি আর পুষ্টির নতুন নতুন তথ্য জানাতে দেশটির মানুষের আগ্রহই জানান দিচ্ছে খাদ্য নিরাপত্তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য পূরণে সফল হবে এর সঙ্গে থাকা সংশ্লিষ্ট সবাই।
এ নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন রয়েছে আজ রাত ৯টার সংবাদের পর হৃদয়ে মাটি ও মানুষ অনুষ্ঠানে।
বছরে এমন দুইটি দিন আসে যখন পৃথিবী তার অক্ষের ওপরে একেবারে সোজা হয়ে যায়। তখন বিষুবরেখার ওপরে লম্বভাবে সূর্যরশ্মি এসে পড়ে এবং দিন-রাত্রির দৈর্ঘ্য সমান হয়। মহাকালের যাত্রায় আজ ২৩ সেপ্টেম্বর সেই বিশেষ দিনের একটি, যাকে বলা যায় শারদ বিষুব।
ধরে নিন এই হলুদ চিহ্নটি একটি অদৃশ্য সুতো হয়ে প্যাচ দিচ্ছে পৃথিবীকে। এটি বিষুব রেখা। পৃথিবীর অন্তত ১৪টি দেশের স্থলভাগ ছুয়ে গেছে এই বিষুব রেখা। কলম্বিয়া, ব্রাজিল, কঙ্গো, উগান্ডা, কেনিয়া, সোমালিয়া, মালদ্বীপ, ইন্দোনেশিয়া। তার মধ্যে পূর্ব আফ্রিকার দেশ উগান্ডাই যেন বিষুবরেখার উপস্থিতি জানান দেয় পাকাপোক্তভাবে।
পৃথিবীর এই অদৃশ্য রেখার ভাগ টের পেতে আপনাকে নিতে হবে বিজ্ঞানের আশ্রয়। হিসাব পাক্কা। বিষুব রেখার দক্ষিণের পানির পাক ঘুরবে ঘড়ির কাটার উল্টো দিকে বা বাম দিকে। আর উত্তর ঘুরবে ঘড়ির কাটার সোজা দিকে বা ডানে।
২১ মার্চ ও ২৩ মার্চ সেপ্টেম্বর সূর্যকিরণ লম্বাভাবে পড়ে পৃথিবীর ওপর। এই কারণে পৃথিবীর সবখানেই দিনরাত্রী সমান। পূর্ব আফ্রিকার দেশ উগান্ডা সারাটি বছরই এমন হিসেবের মধ্যে থাকে। বিষুব রেখার প্রভাবে তাপমাত্রা বাড়াকমা নেই।নেই রোদ বৃষ্টি ও শীতের বাহুল্য।
জীবনকে এক অদ্ভুত শীতলতায় মুড়িয়ে রাখে সারাটি বছর। তাই সারা পৃথিবীর পর্যটকদের আকর্ষণেক্ষেত্র এই উগান্ডা।
এ দিনটির বিকেলে যদি কোনো মানুষ বিষুব রেখার লাইনে দাঁড়ায় তাহলে তার নিজের শরীরের কোন ছায়া পড়ে না। কারণ সূর্য তখন থাকে একাবারে সরাসরি। কোন ওপর বিষুব রেখার কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে অকারণেই কিছুটা গা ছম ছম করে।
কারণ, আপনার ওজন যাই হোক, বিজ্ঞানসম্মত কারণে একমাত্র এখানে আপনি কমে যান আপনার দেহের ওজনের তিন ভাগ।
মহা জাগতিক রহস্যের এক অন্যতম আবিস্কার এই বিষুব রেখা। যেখান থেকে পৃথিবী সূর্য এবং সকল দেশের গতি প্রকৃতিকে আলাদা করা যায়। যার ফলে বিষুব রেখাকে কেন্দ্র করে উগান্ডায় এতো পর্যটকদের সমাগম।
উগান্ডায় কৃষি ও পুষ্টি উন্নয়ন তৎপরতায় সবচেয়ে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে শিশু পুষ্টির বিষয়টি। পরিবর্তন আনা হয়েছে শিশুখাদ্যে। দাতা সংস্থা ও উন্নয়ন সংগঠনগুলোর পরামর্শ ও সহায়তা কাজে লাগিয়ে শিশুদের পুষ্টি উন্নয়নে পাচ্ছেন ভালো ফল।
পূর্ব আফ্রিকার উগান্ডায় খাদ্য মানে কোনো রকমের উদরপূর্তি। পুষ্টি নিয়ে চিন্তা নেই তেমন। পৃথিবীতে যখন ২০০ কোটি মানুষের অদৃশ্য ক্ষুধার হিসেব কষা হচ্ছে, উগান্ডার মানুষ প্রতিনিধিত্ব করে তার বড় অংশের।
পুষ্টিতে শিশুরাও ছিলো পিছিয়ে হঠাৎই যেনো চোখ খুলে গেছে মানুষের। কমলার শাস যুক্ত মিষ্টি আলু হাতে পেয়ে। কৃষক মেয়েরাই উদ্ভাবন করেছেন দুধের সঙ্গে আয়রন বিন এবং মিষ্টি আলুর গুড়ো মিশিয়ে দারুণ পুষ্টিকর শিশু খাদ্যের।
তারপর এই খাদ্য ব্যবহারে শিশু সাস্থ্য উন্নয়নের রেকর্ডও রাখা হয়ে গ্রাম্য সমাবেশে। একজন উন্নয়ন কর্মী বলেন, দেখুন এই শিশুটির প্রথম মাসে ওজন ছিলো ৯.৭ কেজি। ঠিক একমাস পর তার ওজন ৯.৭ কেজি থেকে পৌঁছে গেছে ১০.৫ কেজিতে।
কিন্তু পরের মাসে অপ্রত্যাশিত ভাবে ওজন কমে যায়। কারণ হিসেবে তারা বলেন, শিশুটির মা অসুস্থ ছিলো। ঠিক মতো তার যত্ন নিতে না পারায় তার ধারাবাহিক উন্নতি ব্যাহত হয় এবং ওজন কমে যায়।
ব্র্যাক-উগান্ড কৃষি ও পুষ্টি প্রকল্পের মাধ্যমে এসেছে এ সাফল্য। যা ছড়িয়ে গেছে সে দেশে পিছিয়ে থাকা বহু এলাকায়।
হেলথ ব্র্যাক উগান্ডার ব্যবস্থাপক শারমিন শরিফ বলেন, ‘আমরা কি করতে পারি যাতে আমাদের বাচ্চারা ভালো থাকে। অবশ্যই নিউট্রিশন যেটা কি খাওয়াতে হবে, তারপর কিভাবে খাওয়াতে হবে। এই বিষয়গুলো এখানে দেখানো হয়।
ব্র্যাক উগান্ডার প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো: হান্নান আলী বলেন, এইভাবে চারটা ডিস্ট্রিকে আমরা হেলথের আঙ্গিকে করি। তবে আমাদের প্রধান ফোকাস কৃষি এরপর অন্য গুলো নিয়ে আমরা ভাবি। পুষ্টি উন্নয়নের এই কার্যক্রমে আশাবাদী বিশ্বব্যাংকও।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন