খাবারের স্বাদ ও গন্ধ বাড়াতে সেই আদিকাল থেকে নানা রকমের মসলার ব্যবহার হয়ে আসছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের খাদ্য সংস্কৃতিতে মসলা বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা অনস্বীকার্য। বেশির ভাগ মানুষ মসলাদার খাবার পছন্দ করে থাকে। এসব মসলা শরীরের জন্য বিশেষ উপকারী।
নানা দেশে বহু বছর আগে থেকে ঔষধি উপাদান হিসেবে দারুচিনি, হলুদ, জিরা, মরিচ, আদা, রসুন ও লবঙ্গের মতো মসলা ব্যবহার হয়ে আসছে। আধুনিক যুগে এসেও অনেক চিকিৎসক কিছু নির্দিষ্ট রোগের চিকিৎসার জন্য রোগীদের মসলা এবং এ দিয়ে তৈরি খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। বিজ্ঞাপন
দীর্ঘায়ু করে হার্ভার্ড ও চায়নিজ ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন ২০১৫ সালে একটি গবেষণা প্রতিবেদন বের করে। সেই প্রতিবেদনে বলা হয়, যারা সপ্তাহে সাত বা অন্তত একদিনের জন্য হলেও মসলাযুক্ত খাবার খায়, তাদের মৃত্যুর ঝুঁকি শতকরা ১৪ শতাংশ হ্রাস পায়।
বিপাকক্রিয়া বাড়িয়ে দেয় অসংখ্য গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য নির্দেশ করে যে নির্দিষ্ট মসলা, যেমন: জিরা, দারুচিনি, হলুদ ও মরিচ বিপাকের হার বাড়িয়ে তুলতে পারে এবং ক্ষুধা কমাতে পারে। একটি সমীক্ষায় আরও দেখা গেছে যে হলুদ চর্বিযুক্ত টিস্যু বৃদ্ধিকে দমন করে। অন্যদিকে, মরিচের ক্যাপসেইসিন পরিপাকতন্ত্রের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া সরিয়ে উপকারী ব্যাকটেরিয়ায় সংখ্যা বাড়ায়, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে ও বিপাকক্রিয়ায় সাহায্য করে। এ জন্য ওজন কমাতে বেশি করে মসলাযুক্ত খাবার খান।
মসলা ইনফ্ল্যামেশনের বিরুদ্ধে লড়াই করে সব রকমের মসলায় একের অধিক অ্যান্টি–ইনফ্ল্যামেটরি উপাদানে ভরপুর। হলুদে বিদ্যমান একটি শক্তিশালী উপাদান—যা কুরকুমিন নামে পরিচিত—শরীরের ইনফ্ল্যামেশন কমাতে পারে। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় হাজার বছর ধরে আদা, রসুন, হলুদ ব্যবহার হয়ে আসছে আর্থ্রাইটিস, বমিভাব, মাথাব্যথা ইত্যাদির চিকিৎসা করাতে।
জ্বর–সর্দি-কাশির উপশমে এখনো ঠান্ডা জ্বরের চিকিৎসায় মসলার ব্যবহার দেখা যায়। চিকিৎসকেরা জ্বর–সর্দি-কাশি হলে ওষুধের পাশাপাশি বিভিন্ন রকমের মসলা এবং আদা দিয়ে তৈরি চা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।বিজ্ঞাপন
ক্যানসার কোষ সারাতে পারে প্রায় সব রকমের মসলায় আছে অনেক ধরনের অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট। অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট ফ্রি রেডিকেলের ফলে হওয়া ক্ষতি সারিয়ে তুলতে বিশেষভাবে সহায়ক। এই ফ্রি রেডিকেল শরীরের ক্যানসার কোষ সৃষ্টির জন্য দায়ী।
পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, মরিচের ক্যাপসেইসিন নামের উপাদান ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি হ্রাস, এমনকি ধ্বংস পর্যন্ত করতে পারে। আবার ইউসিএলের করা একটি সমীক্ষা বলা হয়েছে যে শরীরের সুস্থ কোষের ক্ষতি না ক্যাপসেইসিন প্রোস্টেট ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত করতে পারে। তাই ক্যানসার প্রতিরোধে সবার উচিত মসলা ও ঝালযুক্ত খাবার খাওয়া।
হৃৎস্বাস্থ্যের উন্নতি করে যেসব দেশের নাগরিকেরা বেশি পরিমাণে মসলাযুক্ত খাবার খেয়ে থাকে, তাদের ভেতর হৃদ্রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কম। মসলাযুক্ত খাবার খেলে শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে যায় এবং ভালো কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পায়।
ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে মসলা ও ঝাল–জাতীয় খাবার রক্তের শর্করা কমাতে পারে। তাই ডায়াবেটিক রোগীদের চিকিৎসকেরা স্বাভাবিক মাত্রায় মসলাযুক্ত খাবার খেতে বলেন।
মানসিক প্রশান্তির জন্য গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে ঝাল–মসলা দেওয়া খাবার খেলে মস্তিষ্কে সেরোটোনিন নামে হরমোন নিঃসরণ বেড়ে যায়। এই হরমোনকে ‘ফিল গুড’ বা ভালো বোধের হরমোন বলা হয়। তাই মন খারাপ বা অতিরিক্ত রাগের সময় নিজের পছন্দের মসলাদার বা ঝাল খাবার খেয়ে দেখতে পারেন।
শীতকাল এলেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে খেজুরের রস খাওয়ার চল বেড়ে যায়। অনেকে গাছ থেকে খেজুরের কলসি নামিয়ে সরাসরি কাঁচা রস খেয়ে থাকেন।
আবার অনেকে এই রস চুলায় ফুটিয়ে সিরাপ, পায়েস বা ক্ষীর বানিয়ে খান। এছাড়া রসের তৈরি ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়, ভেলি গুড়, বালুয়া গুড়, মিছরি গুড়সহ নানা ধরণের পিঠার বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।
নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক
খেজুর আরব দেশের প্রচলিত ফল হলেও ওইসব দেশে খেজুর, মূলত ফল উৎপাদননির্ভর, যেখানে কিনা বাংলাদেশের খেজুর গাছ রস উৎপাদননির্ভর।
কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, বাংলাদেশে সাধারণত কার্তিক থেকে মাঘ অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ হয়ে থাকে।
দেশটির সবচেয়ে বেশি রস সংগ্রহ হয় যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে।
মূলত খেজুর গাছের ডালপালা পরিষ্কার করে, ডগার দিকের কাণ্ড চেঁছে তাতে একটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি চোঙ বসিয়ে দেয়া হয়। চোঙের শেষ প্রান্তে ঝুলিয়ে দেয়া হয় একটি মাটির হাড়ি বা কলসি।
সেই চোঙ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রস এসে জমা হতে থাকে মাটির হাড়ি বা কলসিতে। এভাবে একটি গাছ থেকে দৈনিক গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লিটার রস সংগ্রহ করা যায় বলে কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গিয়েছে।
কিন্তু গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
উপকরণ: বাঁধাকপির কুচি ৪ কাপ, কই মাছের টুকরো ৬টি, তেজপাতা ১টি, শুকনো মরিচ ২টি, মেথি অল্প পরিমাণ, মরিচবাটা ১ চা-চামচ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, লবণ পরিমাণমতো, নারকেল কোরানো স্বল্প পরিমাণে, হলুদ পরিমাণমতো ও সরিষার তেল পরিমাণমতো।
প্রণালি: তেলে শুকনো মরিচ ও মেথি ফোড়ন দিতে হবে। ফোড়ন হয়ে এলে হালকা করে ভেজে উঠিয়ে রাখতে হবে। ওই তেলেই বাঁধাকপির কুচি ও পেঁয়াজ কুচি দিয়ে ভালো করে কষে নিতে হবে। তারপর লবণ, মরিচ ও হলুদবাটা দিয়ে আরও কিছুক্ষণ বসাতে হবে। সেদ্ধ হয়ে এলে অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে ভাজা মাছগুলো দিয়ে ঢাকা দিতে হবে। পানি শুকিয়ে গেলে এবং মাছ সেদ্ধ হয়ে এলে অল্প পরিমাণ নারকেল কোরানো দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।
উপকরণ: বড় শোল মাছ ৫০০ গ্রাম, টমেটো টুকরো আধা কাপ, সরিষার তেল ৩ টেবিল চামচ, টমেটোবাটা আধা কাপ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, আদাবাটা ১ চা-চামচ, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, হলুদ গুঁড়া ১ চা-চামচ, ধনেপাতা আধা কাপ, শুকনো মরিচের গুঁড়া ১ চা-চামচ, লবণ স্বাদ অনুসারে ও কাঁচা মরিচ ৭-৮টি (চেরা)।
প্রণালি: শোল মাছ লবণ, হলুদ ও সরিষার তেল মাখিয়ে ভেজে তুলে রাখতে হবে। আর ওই তেলেই পেঁয়াজ কুচি দিতে হবে। পেঁয়াজ বাদামি রং হলে রসুন, আদা, মরিচের গুঁড়া, হলুদ ও লবণ দিয়ে ভালোভাবে কষাতে হবে। টমেটোবাটা দিতে হবে, কিছুক্ষণ কষানোর পর প্রয়োজনমতো গরম পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে ভেজে রাখা মাছগুলো দিতে হবে। ঝোল মাখা-মাখা হলে টমেটোর টুকরো আর ধনেপাতা দিয়ে কিছুক্ষণ পর নামিয়ে ফেলতে হবে। নামানোর আগে কাঁচা মরিচ দিতে হবে।
উপকরণ: ছোট টুকরো করে কাটা টাকি মাছ ২ কাপ, ডুমো ডুমো করে কাটা লাউ ৪ কাপ, হলুদ সিকি চা-চামচ, লবণ পরিমাণমতো, পেঁয়াজ ১ কাপ, ধনেপাতা কুচি পরিমাণমতো, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, কাঁচা মরিচ ১০-১২টি, আদাবাটা আধা চা-চামচ ও রাঁধুনি বাটা সিকি চা-চামচ।
প্রণালি: তেলে পেঁয়াজ দিয়ে হালকা করে ভেজে নিতে হবে। তারপর একে একে রসুনবাটা, আদাবাটা ও রাধুনি (গুঁড়া সজ) বাটা ও হলুদের গুঁড়া দিয়ে ভালো করে কষাতে হবে। কষানো হলে লাউ দিতে হবে। লাউ দিয়ে কিছুক্ষণ কষিয়ে অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে আগে থেকে হালকা করে ভেজে রাখা টাকি মাছ দিতে হবে। পানি শুকিয়ে এলে কাঁচা মরিচের ফালি ও সবশেষে ধনেপাতা দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।
উপকরণ: চিংড়ি মাছ ২০০ গ্রাম, সয়াবিন তেল পরিমাণমতো, বাঁধাকপি কুচি ১ কাপ, ক্যাপসিকাম কুচি ১ কাপ, টমেটো কুচি আধা কাপ, পেঁয়াজপাতা কুচি ১ কাপ, কাঁচা মরিচবাটা ১ চা-চামচ, ধনেপাতাবাটা ১ চা-চামচ, হলুদের গুঁড়া পরিমাণমতো, চিলি সস ২ চা-চামচ, টমেটো সস ২ চা-চামচ, বাঁধাকপির ভেতরের পাতা ৪টি, ভিনেগার ২ চা-চামচ, রসুন ১ চা-চামচ ও লবণ স্বাদমতো।
প্রণালি: বাঁধাকপির শক্ত অংশ ফেলে দিন। পাতার ভেতরের অংশ একটু ভাপিয়ে রাখুন। মাছ ধুয়ে ভিনেগার মাখিয়ে রাখুন। এবার কড়াইয়ে সয়াবিন তেল গরম হলে তাতে রসুন কুচি দিয়ে মাছগুলো দিন। একে একে কোঁচানো বাঁধাকপি, ক্যাপসিকাম, টমেটো ও পেঁয়াজপাতা দিয়ে নেড়েচেড়ে নিন। এরপর কাঁচা মরিচবাটা, ধনেপাতাবাটা, চিলি সস ও টমেটো সস দিয়ে নেড়ে নিন। পানি শুকিয়ে এলে নামিয়ে বাঁধাকপির পাতায় অল্প করে চিংড়ি মাছ সুতা দিয়ে বেঁধে স্টিমারে ভাপিয়ে নিন। সুতো কেটে পাতা খুলে পরিবেশন করুন।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন