আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

পরিবেশ

মশা নিধনে কোনো উদ্যোগই কাজে আসছে না

## মশা নিধনে ৪ বছরে ডিএসসিসির ব্যয় ৭৬ কোটি
## ডিএনসিসির নোভালুরন ব্যবহৃত এলাকায়ই বেশি মশা

ঢাকার সিটি করপোরেশন নির্বাচন এলেই নাগরিক সেবার নানান প্রতিশ্রুতি দেন প্রার্থীরা। সেই তালিকায় সবার ওপরে থাকে মশা নিধন। প্রার্থীদের দেয়া সেই প্রতিশ্রুতিতে আশায় বুক বাঁধেন নগরবাসী। তবে হতাশার কথা হলো, এখন পর্যন্ত ঢাকার কোনো মেয়রই মশা নিধন বা নিয়ন্ত্রণে সফলতা অর্জন করতে পারেননি। উল্টো দিন যতোই যাচ্ছে, রাজধানীতে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মশা। বাড়ছে মশাবাহিত রোগ, এমনকি সেই রোগে ঝরছে প্রাণও।

 আমাদের বিশেষজ্ঞ যারা আছেন, তারা ঘটনা ঘটে গেলে অনেক বড় বড় পরামর্শ দিতে পারেন। কিন্তু ঘটনা ঘটার আগে আমাদের কী করণীয়, আমাদের কী পদক্ষেপ নিতে হবে, সে রকম পরামর্শ আমরা পাই না 

রাজধানীতে মশার ঘনত্ব নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক এক গবেষণার তথ্য বলছে, গত বছরের জুন থেকে সেপ্টেম্বরের তুলনায় চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকায় মশার ঘনত্ব চারগুণ বেড়েছে। এখন যে মশা দেখা যাচ্ছে, তার মধ্যে ৯০ শতাংশই কিউলেক্স মশা। সাধারণত শুষ্ক মৌসুমে কিউলেক্স মশার প্রকোপ বাড়ে।

অথচ গত বছরের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) নির্বাচনের আগে মশা নিধনে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন নির্বাচিত মেয়রেরা।

ডিএসসিসিতে শেখ ফজলে নূর তাপস মেয়র হওয়ার আগে সংস্থার সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের মশা নিধন কার্যক্রমের নানা অসঙ্গতি তুলে ধরে সমালোচনা করেছিলেন। কিন্তু এক বছরের মাথায় তাকেই সইতে হচ্ছে সেই সমালোচনা। সম্প্রতি নিজের মশা নিধন কৌশলে কিছুটা ভুল হয়েছে বলেও স্বীকার করেছেন তিনি।

একইভাবে সমালোচনার মুখে পড়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম। মশা নিধনে তিনিও তার প্রতিশ্রুতি যথাযথভাবে রক্ষা করতে পারেননি। তবে মশা নিধনে গত ৮ মার্চ থেকে সমন্বিত ক্র্যাশ প্রোগ্রাম কর্মসূচি শুরু করেছেন তিনি। আগামী ১৬ মার্চ পর্যন্ত এ কার্যক্রম চলবে।

 এডিস এবং কিউলেক্স মশা নিধনে সিটি করপোরেশনকে বছরব্যাপী কর্মসূচি নিতে হবে। ওষুধের গুণগতমান এবং ব্যবহার যথাযথভাবে নিশ্চিত করতে হবে 

২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকার দুই মেয়রের শপথ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের সতর্ক করে বলেছিলেন, ‘মশা আপনার ভোট যেন খেয়ে না ফেলে, সেটা নিশ্চয়ই আপনাদের দেখতে হবে। মশা ক্ষুদ্র হলেও অনেক শক্তিশালী। এটা মাথায় রাখতে হবে।’

নগরবিদ ও কীটতত্ত্ববিদেরা বলছেন, নির্বাচনের আগে মেয়রপ্রার্থীরা মশা নিধন, যানজট নিরসনসহ অনেক প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু এর অধিকাংশই সিটি করপোরেশনের একার পক্ষে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না। আর যেসব প্রতিশ্রুতি সরাসরি সিটি করপোরেশনের বাস্তবায়ন করার কথা, সেগুলোতেও তারা অনেকাংশ সফল হতে পারেননি। তাই আগে নিজ সংস্থার কাজগুলো ঠিক মত করতে হবে।

মশা নিধনে যতো উদ্যোগ
১৯৯০ সালের আগে ঢাকা সিটি করপোরেশন ‘ঢাকা মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন’ নামে পরিচিত ছিল। পরে নাম পরিবর্তন হয়ে ঢাকা সিটি করপোরেশন করা হয়। ১৯৯৪ সালের ৩০ জানুয়ারি নগরবাসীর প্রত্যক্ষ ভোটে মোহাম্মদ হানিফ ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন। মেয়র নির্বাচিত হওয়ার আগের দিন তিনি মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জনসভা করেছিলেন। ওই জনসভায় তিনি নির্বাচনী ইশতেহার চারটি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এর মধ্যে মশা নিয়ন্ত্রণে স্থায়ী পরিকল্পনা ছিল অন্যতম।

২০০২ সালের ২৫ এপ্রিল ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী সাদেক হোসেন খোকা নির্বাচিত হন। তার নির্বাচনী ইশতেহারে ছয়টি বিষয়কে অগ্রাধিকার দেয়ার প্রতিশ্রুতি ছিল। এর মধ্যে চার নম্বরে ছিল মশা নিধন। খোকা নির্বাচিত হওয়ার পর ঢাকায় অ্যারিয়াল স্প্রে করে মশা নিধন পরিকল্পনা করা হয়। সে সময় পরিবেশবাদীদের তীব্র বিরোধিতার কারণে তা সম্ভব হয়নি।

২০১৫ সালের এপ্রিলে নির্বাচনী ইশতেহারে ‘মশার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা’ করে ডিএনসিসিতে আনিসুল হক ও ডিএসসিসিতে সাঈদ খোকন মেয়র নির্বাচিত হন। এর মধ্যে ২০১৭ সালে আনিসুল হক মারা যাওয়ার পর নগরে ব্যাপকভাবে চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ বেড়ে যায়। ২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকাসহ সারাদেশে এডিস মশার বিস্তার ঘটে।

পূর্বপ্রস্তুতি না থাকায় তা নিয়ন্ত্রণে দুই সিটি করপোরেশনকে হিমশিম খেতে হয়েছে। তখন দুই সিটি করপোরেশনের ওষুধের মান, কেনাকাটায় অনিয়ম, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্ব অবহেলাসহ অনেক বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন নাগরিকেরা। এমনকি সাঈদ খোকন মেয়র পদে নির্বাচনে দ্বিতীয় দফায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইলেও না পাওয়ার পেছনে এই মশা নিধনে ব্যর্থতাও দায়ী বলে ধারণা বিশ্লেষকদের। সরকারি হিসাবে ২০১৯ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয় ১১১ জন মারা যান।

মশা নিধনে ৪ বছরে ডিএসসিসির ব্যয় ৭৬ কোটি
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের হিসাব বিভাগ সূত্র জানায়, (ডিএসসিসি) গত চার বছরে শুধু মশা মারতে ৭৬ কোটি ৩৫ লাখ টাকা খরচ করেছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে প্রতিবছরই মশা আগের তুলনায় বাড়ছে। এখন চলতি অর্থবছরে প্রায় ৩৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছেন মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। এর মধ্যে গত জুন থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত খরচ হয়েছে প্রায় সাত কোটি টাকা।

ডিএসসিসির স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানায়, মেয়র তাপস নির্বাচিত হওয়ার পরপরই মশা নিধনে গুরুত্ব দেন। এর মধ্যে মশার লার্ভা ধ্বংসে গত বছরের জুনে রমনা লেক, খিলগাঁও ঝিলসহ ঢাকা দক্ষিণের ১০টি অঞ্চলের পুকুর, জলাশয়ে হাঁস ও তেলাপিয়া মাছ ছাড়েন। কিন্তু এখন অধিকাংশ হাঁস মারা গেছে। কিছু হাঁস চুরি হয়েছে। ফলে যে উদ্দেশ্যে হাঁস অবমুক্ত করা হয়েছিল তার সুফল মেলেনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসসিসির এক কর্মকর্তা বলেন, ঢাকার লেক, জলাশয়, পুকুরের পানি অনেক নোংরা। সেখানে প্রচুর জীবাণু রয়েছে। বাস্তবতা না বুঝে হাঁসগুলো ছাড়া হয়েছিল। এরমধ্যে বিদেশি প্রজাতির হাঁসের সংখ্যাই বেশি ছিল। অথচ এসব হাঁস দেখভাল এবং খাবারের ব্যবস্থা করেনি সংস্থাটি। ফলে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই অধিকাংশ হাঁস মারা যায়। এখন নগরে কিউলেক্স মশার প্রভাব বাড়লেও ডিএসসিসি তেমন কোনো কর্মসূচি নেয়নি। আগের মতোই মশা নিধন কার্যক্রম ঢিলেঢালাভাবে চলছে।

যদিও কিউলেক্স মশার প্রকোপ উত্তরের তুলনায় দক্ষিণে কম বলে দাবি করেছেন সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী। তিনি জানান, মশার ওষুধ ছিটানোর কাজের তদারকি বাড়াতে আরও বেশি তৎপর হচ্ছেন তারা।

তবে গত ৩ মার্চ পান্থপথে এক অনুষ্ঠানে ডিএসএসসি মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘আমাদের বিশেষজ্ঞ যারা আছেন, তারা ঘটনা ঘটে গেলে অনেক বড় বড় পরামর্শ দিতে পারেন। কিন্তু ঘটনা ঘটার আগে আমাদের কী করণীয়, আমাদের কী পদক্ষেপ নিতে হবে, সে রকম পরামর্শ আমরা পাই না। আমাদেরকে বলা হয়েছিল—ডেঙ্গুর প্রকোপটা যেহেতু আছে, তাই এই কার্যক্রম ডিসেম্বর পর্যন্ত চালিয়ে নিতে হবে। কিন্তু সেই কার্যক্রমটা ভুল ছিল। শীত আসার সঙ্গে সঙ্গেই আমাদের কিউলেক্স মশার বিরুদ্ধে কার্যক্রম নেয়া উচিত ছিল। কারণ পানি বদ্ধ হয়ে যাচ্ছিল।’

ডিএনসিসির নোভালুরন ব্যবহৃত এলাকায়ই বেশি মশা
গত বছরের অক্টোবর থেকে কিউলেক্স মশা নিয়ন্ত্রণে গুলশান, বনানী, উত্তরা, মিরপুরের ৬২৯টি লেক, খাল, জলাশয় চিহ্নিত করে ট্যাবলেট বড়ির মত দেখতে নোভালুরন ওষুধ ব্যবহার শুরু করে ডিএনসিসি। মশার প্রজনন ও বংশবিস্তার রোধে ওই ওষুধ ব্যবহার করেছিল বলে জানায় সংস্থাটি। কিন্তু এখন এই এলাকাগুলো শহরের অন্যতম মশাপ্রবণ এলাকা হিসেবে আলোচিত। অর্থাৎ ডিএনসিসির নোভালুরন পদ্ধতি কাজে লাগেনি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ডিএনসিসির স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানায়, কিউলেক্স মশা নিধনে গত ৮ মার্চ থেকে ডিএনসিসির ১০টি অঞ্চলে একযোগে ক্রাশ প্রোগ্রাম কর্মসূচি শুরু করেছেন তারা। এই কর্মসূচিতে এক হাজার ৪০০ কর্মী কাজ করছেন। এর মধ্যে ১০ মার্চ মেয়র আতিকুল ইসলামের উপস্থিতিতে মোহাম্মদপুরের রিং রোডে সূচনা কমিউনিটি সেন্টারের সামনে থেকে ক্রাশ প্রোগ্রাম কর্মসূচি শুরু করে ডিএনসিসি। তবে এই ক্রাশ প্রোগ্রামে মশার উপদ্রব কমছে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দারা।

গত ৯ মার্চ দারুসসালাম ঈদগাহ মাঠ এলাকায় ক্রাশ প্রোগ্রাম চালিয়েছিল ডিএনসিসি। স্থানীয় বাসিন্দা জয়নাল আবদীন বলেন, সিটি করপোরেশনের ক্রাশ প্রোগ্রামের পর ওই রাতেই মশার উপদ্রব ছিল। বাসায় কয়েল জ্বালানোর পাশাপাশি মশারি টানিয়ে ঘুমাতে হয়েছে।

তবে ভিন্ন কথা বলেছেন ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘গত দুই দিন (৮ ও ৯ মার্চ) যেসব এলাকায় ক্রাশ প্রোগ্রাম চালানো হয়েছে, সেখানে মশার উপদ্রব কিছুটা কমেছে। তবে মশা নিধনে আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জ থেকে গেছে। আমরা দেখব এই ১০ দিনের অভিযান শেষে কী ফল দাঁড়ায়। থার্ড পার্টির কীটতত্ত্ববিদরা আমাকে জানাবে কী কী ভুল হয়েছে। এছাড়া এখন আমরা কীটনাশকের পরিমাণ (ডোজিং) নিয়ে চিন্তা করছি। অনেক ক্ষেত্রে মশা নকডাউন হচ্ছে না। ডোজিং বাড়ানো যায় কি-না সে বিষয়ে কীটতত্ত্ববিদদের সঙ্গে কথা বলছি।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার জাগো নিউজকে বলেন, ‘এডিস এবং কিউলেক্স মশা নিধনে সিটি করপোরেশনকে বছরব্যাপী কর্মসূচি নিতে হবে। ওষুধের গুণগতমান এবং ব্যবহার যথাযথভাবে নিশ্চিত করতে হবে। যদিও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ওষুধের মান এবং ব্যবহার নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে।’

  • মশা নিধনে কোনো উদ্যোগই কাজে আসছে না

    মশা নিধনে কোনো উদ্যোগই কাজে আসছে না

  • মশা নিধনে কোনো উদ্যোগই কাজে আসছে না

    মশা নিধনে কোনো উদ্যোগই কাজে আসছে না

  • মশা নিধনে কোনো উদ্যোগই কাজে আসছে না

    মশা নিধনে কোনো উদ্যোগই কাজে আসছে না

  • মশা নিধনে কোনো উদ্যোগই কাজে আসছে না

    মশা নিধনে কোনো উদ্যোগই কাজে আসছে না

  • মশা নিধনে কোনো উদ্যোগই কাজে আসছে না

    মশা নিধনে কোনো উদ্যোগই কাজে আসছে না

  • মশা নিধনে কোনো উদ্যোগই কাজে আসছে না
  • মশা নিধনে কোনো উদ্যোগই কাজে আসছে না
  • মশা নিধনে কোনো উদ্যোগই কাজে আসছে না
  • মশা নিধনে কোনো উদ্যোগই কাজে আসছে না
  • মশা নিধনে কোনো উদ্যোগই কাজে আসছে না
বিজ্ঞাপন
মন্তব্য করুন

অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন

Leave a Reply

পরিবেশ

ছাদ বাগানের জন্য কয়েকটি টিপস

ছাদ বাগানীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। টবে, ড্রামে গাছ লাগানো হয়। কেউ ফল, কেউবা সবজির গাছ লাগান। কেউ সফল হন। কেউ সফল হন না। ছোট ছোট কিছু ভুল বাগানীরা করে থাকেন। সে কারণে যত্ন নিলেও ফল আসে না। এখানে ছাদ বাগানীদের জন্য কিছু টিপস দেয়া হলো, যা মানলে সফলতা পাওয়া সহজ হতে পারে।

প্রথমেই মনে রাখতে হবে, টবে বা ড্রামে গাছ লাগালে তাকে খাবার দিতে হবে। প্রকৃতিতে বিদ্যমান গাছের মতো সে খাবার সংগ্রহ করতে পারে না। রোগ-বালাই হলো কিনা সেটাও বুঝে ব্যবস্থা নিতে হবে। ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে।

১. মাটির সাথে অবশ্যই কিছু কোকোপিট মেশাবেন। গাছের গোড়া স্যাতস্যাতে হতে দিবেন না। স্যাতস্যাতে হলে অসংখ্য রোগ হবে। মাটি ভেজা থাকবে তবে স্যাতস্যাতে না। কেকোপিট মেশালে পানি কম দিলেও হবে। কোকোপিট (নারকেলের ছোবলার গুড়া) পানি ধরে রাখে। অতি বৃষ্টি হলে গোড়ায় পানি জমতে দেয় না। হালকা হওয়ায় ছাদে ওজনের চাপ পড়ে না। এছাড়া কোকোপিটে কিছু পুষ্টি উপাদান আছে। যা গাছের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। কোকোপিটে চারা দ্রুত গজায়, বড় হয়। মাটির চেয়ে কোকোপিটে চারা ভালো হয়।

২. গাছের জন্য বিরিয়ানি হলো সরিষার খৈল-পচা পানি। মাটির হাড়িতে খৈল পচাতে হবে। কমপক্ষে ৫ দিন। ৭ দিন কিংবা বা ১৫ দিন হলে উত্তম। অল্প পানিতে পচিয়ে তার সাথে আরো পানি মিশিয়ে দিতে হবে। এটি গাছের জন্য অত্যন্ত উপকারী। একটু গন্ধ হয়, তাই অল্প একটু গুড় দিতে পারেন। ছাদে হাড়িতে পচালে বাসায় গন্ধ আসবে না। বৃষ্টির সময় খৈল-পচা পানি দেবেন না। পুকুরের নিচে থাকা পাক কাদা গাছের জন্য খুব উপকারী।

৩. আমরা জানি, মাটিতে অসংখ্য ক্ষতিকর ছত্রাক থাকে। যা গাছকে মেরে ফেলার জন্য যথেস্ট। তাই মাটি রেডি করার সময় কিছুটা বায়োডামা সলিট দিবেন। এটি উপকারী ছত্রাক। মাটিতে ক্ষতিকারক উপাদানগুলো মেরে ফেলে। আবার জৈব সারের কাজও করে। গাছের জন্য মাটি হবে ঝুরঝুরে, হালকা।

৪. যাই লাগান না কেন, ভালো জাতের বীজ কিনা নিশ্চিত হয়ে নেবেন। ভালো বীজে ভালো ফসল হবে। নতুবা যতই যত্ন নেন না কেন, সব পরিশ্রম বেলাশেষে জলে যাবে। বীজ থেকে নিজে চারা করা উত্তম। কারণ বাজার থেকে যে চারা কিনবেন সেটার জাত ভালো হবে সে নিশ্চয়তা কোথায়? ছত্রাকনাশক দিয়ে বীজ শোধন করে নেয়া উত্তম। পদ্ধতি হলো- ছত্রাকনাশক দেয়া পানিতে কিছুটা সময় বীজ ভিজিয়ে রাখতে হবে। ম্যানসার, মেটারিল দুটি ছত্রাকনাশক।

৫. গাছ বেশি তো ফলন বেশি- এটি ভুল ধারণা। অল্প জায়গায় বেশি গাছ লাগানো যাবে না। গাছ পাতলা করে লাগাতে হবে। বেশি লাগালে গাছ প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাবে না। একটি ফলের ক্রেটে মাত্র দুটি গাছ। একটি টবে একটি গাছ। ক্রেট বা টবে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।

৬. ছাদে মাচা দেয়া সমস্যা। কারণ ঘুঁটি থাকে না। এ জন্য ফলের ক্রেটের চারপাশে লাঠি বেঁধে সহজে মাচা দেয়া যায়। লতাপাতা জাতীয় গাছ লাগানোর পাত্র একটু গভীর হলে উত্তম। গাছের জন্য সবচেয়ে বেশি ভালো জৈব সার হলো পাতা-পচা সার, তারপর ভার্মি কম্পোস্ট, তারপর গোবর সার। পাতা-পচা সার সহজলভ্য নয়। দাম বেশি। কিন্তু ভার্মি কম্পোস্ট সহজলভ্য। মাটির সঙ্গে মিনিমাম ৪০% জৈব সার দেয়া উত্তম।
৭. নিম কীটনাশককে ক্ষতিকারক পোকা-মাকড় খুব অপছন্দ করে। এটি দিলে তারা বিরক্ত বোধ করে। গাছে বাসা বাঁধতে পারে না। প্রতি সাত দিনে একবার সব গাছের পাতায় নিম কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। মাসে একবার ইপসম সল্ট স্প্রে করে দেয়া উত্তম। একইভাবে মাসে একবার পানির সঙ্গে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড মিশিয়ে স্প্রে করা ভালো।

৮. ডাটা, পুইশাক, লালশাক, ধনেপাতা এসব লাগাতে পারেন। মাত্র ২৫ দিনে খেতে পারবেন। লালশাক লাগালে নেট দিয়ে ঘিরে দেবেন। শাকপাতা লাগালে দ্রুত আউটপুট পাবেন। যা আপনাকে প্রেরণা দেবে। পুইশাক গাছের পাতায় দাগ হলে পাতা কেটে দিন। অথবা ছত্রাকনাশক স্প্রে করেন। অথবা গাছ উঠিয়ে আবার লাগান। ইউরিয়া সার দিলে পুইশাক দ্রুত বাড়বে। শশা গাছের বৃদ্বির জন্য ডিএপি সার দিলে ভালো হবে। শশা গাছে ছাড়া ছাড়া ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হয়। খুব রোদ, গাছের গোড়ায় মালচিং করে দিয়ে উত্তম ফল মিলবে। মালচিং হলো গাছের গোড়ায় বিশেষ পলিথিন কিংবা শুকনো পাতা, খড় দিয়ে ঢেকে দেয়া।

৯. ফুল আসার পরে প্রানোফিক্স অথবা মিরাকুরান গাছের পাতায় শেষ বিকালে স্প্রে করবেন। বাসায় দুইটি গ্রুপের ছত্রাকনাশক রাখা ভালো। যেমন- ম্যানসার, মেটারিল। ১৫ দিনে একবার স্প্রে করবেন। এগরোমিন্ড গোল্ড অনুখাদ্য বা অন্য কোনো অনুখাদ্য বাসায় রাখতে হবে। মাসে কমপক্ষে একবার স্প্রে করবেন। অতিরিক্ত গরম, বৃষ্টি, খাদ্যের অভাব, গাছ রোগাক্রান্ত, আবহাওয়া দ্রুত আপডাউন করা ইত্যাদি কারণে ফুল ঝরে পড়তে পারে। আবার পরাগায়ন না হলে ঝরে পড়তে পারে। এ জন্য হাতের মাধ্যমে পরাগায়ন করতে হবে। পুরুষ ফুলের পরাগদণ্ড নারী ফুলে গর্ভে ঘষে দিতে হবে।

১০. ছাদ বাগানে গাছ মারা যাওয়ার অন্যতম কারণ পানি বেশি বা কম দেয়া। যতটুকু লাগে ঠিক ততটুকু পানি দিতে হবে। কোন গাছের কি চাহিদা, রোগ একটু স্টাডি করলে সহজে সফল হতে পারবেন।

১১. গাছের পাতার নিচে খেয়াল করবেন। বেগুন গাছের পোকা মারার জন্য সেক্স ফোরেমান ফাঁদ লাগাবেন। ডগা ছিদ্র বা ফল ছিদ্র হলে সাইপারমেত্রিন গ্রুপের কীটনাশক দিতে হবে। একটি বেগুন গাছ অনেক দিন ফল দেয়। ঢেড়স গাছ বেশি রোদ পড়ে এমন জায়গায় লাগাবেন। বেগুন, ঢেড়স, লালশাক, পুইশাক, ধনেপাতা, ডাটা শাক- এসব গাছের খুব যত্ন করতে হয় না।

১২. রসুন আর লবঙ্গ বেটে সেই পানি গাছে স্প্রে করলে পোকা কম আসবে। মরিচ গাছে নেপথলিন বেঁধে দিন, পোকা কম আসবে। পাতা কোকড়ালে ভার্মিটেক কিংবা এবোম কীটনাশক দিন। কোকড়ানো পাতা ফেলে দিন। মরিচ গাছে দশ দিন পর পর ডায়মেথট গ্রুপের (যেমন টাফগর) কীটনাশক দিলে উপকার হবে। সবকিছু করছেন, তারপরও কাজ হচ্ছে না। এক্ষেত্রে গাছের জায়গা বদল করেন, উঠিয়ে অন্যত্র লাগান।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

দৈনন্দিন

নিপাহ্‌ ভাইরাসঃ খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়

নিপাহ্‌ ভাইরাস খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়
নিপাহ্‌ ভাইরাস খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়
খেজুরের রস সংগ্রহের প্রক্রিয়া।

শীতকাল এলেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে খেজুরের রস খাওয়ার চল বেড়ে যায়। অনেকে গাছ থেকে খেজুরের কলসি নামিয়ে সরাসরি কাঁচা রস খেয়ে থাকেন।

আবার অনেকে এই রস চুলায় ফুটিয়ে সিরাপ, পায়েস বা ক্ষীর বানিয়ে খান। এছাড়া রসের তৈরি ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়, ভেলি গুড়, বালুয়া গুড়, মিছরি গুড়সহ নানা ধরণের পিঠার বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।

নিপাহ্‌ ভাইরাস আতঙ্ক

খেজুর আরব দেশের প্রচলিত ফল হলেও ওইসব দেশে খেজুর, মূলত ফল উৎপাদননির্ভর, যেখানে কিনা বাংলাদেশের খেজুর গাছ রস উৎপাদননির্ভর।

কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, বাংলাদেশে সাধারণত কার্তিক থেকে মাঘ অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ হয়ে থাকে।

দেশটির সবচেয়ে বেশি রস সংগ্রহ হয় যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে।

মূলত খেজুর গাছের ডালপালা পরিষ্কার করে, ডগার দিকের কাণ্ড চেঁছে তাতে একটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি চোঙ বসিয়ে দেয়া হয়। চোঙের শেষ প্রান্তে ঝুলিয়ে দেয়া হয় একটি মাটির হাড়ি বা কলসি।

সেই চোঙ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রস এসে জমা হতে থাকে মাটির হাড়ি বা কলসিতে। এভাবে একটি গাছ থেকে দৈনিক গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লিটার রস সংগ্রহ করা যায় বলে কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গিয়েছে।

কিন্তু গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে নিপাহ্‌ ভাইরাস আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

পরিবেশ

জেনে নিন এই মরসুমে কোন কোন ঔষধি উদ্ভিদের চাষ আপনার জন্য সেরা

দেশের বিভিন্ন রাজ্যেই বর্ষার (Monsoon 2021) প্রভাবে চলছে বৃষ্টিপাত। এসময় কৃষকেরা খারিফ শস্য (Kharif Crops) বপনে তৎপর হয়ে ওঠেন। এই খরিফ মরসুমে কৃষকভাইরা সাধারণত অঞ্চলভেদে ধান, অড়হর, সোয়াবিন সহ বিভিন্ন চাষে মনযোগ দিয়ে থাকেন ৷ তবে এসব ছাড়াও, ঔষধি গুন সমৃদ্ধ (Medicinal Crops) গাছ চাষে বর্ষায় যে কতটা লাভ হতে পারে সে সম্পর্কে অনেকেই হয়তো জানেন না৷

বিশেষ করে বর্ষাকালেই এমন বহু ঔষধি গুন সম্পন্ন গাছ রয়েছে যাদের চাষ হতে পারে লাভজনক৷

বর্ষাকালে কোন কোন ঔষধি উদ্ভিদের চাষ করা যেতে পারে অথবা এই চাষ কীভাবেই বা করা যাবে সে বিষয়ে সঠিক তথ্য না পাওয়ার কারণেই অনেকের কাছে বিষয়টি অধরা৷ চলুন এই প্রতিবেদনে এমনই কিছু গাছ নিয়ে আলোচনা করা যাক যা কৃষকদের জন্য হতে পারে লাভদায়ক৷ তবে সঠিক সময়ে, সঠিক রোপন, সেচ, কীটনাশক দেওয়ার প্রয়োজন এগুলিতে, না হলে এর ওপর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে৷

অশ্বগন্ধা –

বর্ষায় এর চাষ ভালো৷ জুন থেকে অগস্ট পর্যন্ত এর চাষ করতে পারেন৷ এর বিভিন্ন জাত রয়েছে৷ উন্নত মানের গাছের চাষে কৃষকের লাভের পরিমাণও বৃদ্ধি পেতে পারে৷ উল্লেখ্য, প্রতি হেক্টরে ৫ কিলোগ্রাম বীজ ব্যবস্থা করতে হবে৷ যদি কেউ ১ হেক্টর জমিতে অশ্বগন্ধার চাষ করতে চায় তাহলে তাকে প্রায় ৫০০ বর্গমিটারে নার্সারি তৈরি করতে হবে৷ প্রায় ১ সেন্টিমিটার গভীরে বীজ বপন করতে হবে৷

শতমূলী –

শীত বাদ দিয়ে বছরের যে কোনও সময়ে এই গাছের চাষ করতে পারেন৷ বর্ষাকালে এই চারা রোপন করলে সহজেই তা বেড়ে উঠতে থাকে৷ তবে বীজ বপনের আগে বীজ ১ দিন পর্যন্ত হালকা গরম জলে ভিজিয়ে রাখতে হয়৷

যষ্টিমধু –

জুলাই থেকে অগস্ট পর্যন্ত এর চাষ করা হয়৷ আর তাই জুন থেকেই এর প্রস্তুতি শুরু করে দেন কৃষকেরা৷ জলনিকাশি ব্যবস্থা উচ্চমানের হওয়া প্রয়োজন এই গাছ চাষের জন্য৷ মনে রাখতে হবে এর চাষের আগে জমিতে কমপক্ষে ১৫ টন গোবর সার দেওয়া প্রয়োজন, এরপরেই এটি চাষ করা উচিত৷

ঘৃতকুমারী –

এর ভালো উৎপাদনের জন্য জলনিকাশি ব্যবস্থা ঠিক রাখতে হবে৷ এই ধরনের ঔষধি গুনসম্পন্ন গাছ শীতকাল বাদ দিয়ে যে কোনও সময় চাষ করতে পারেন৷ বর্ষাকালে দূরত্ব রেখে বীজ বপন করতে হবে৷ কম সময়ের মধ্যেই ব্যবহারোপযোগী হয়ে ওঠে এগুলি৷

অগ্নিশিখা বা কলিহারি –

এটি চাষের জন্য কৃষকেরা জুন মাসেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন৷ জুলাইয়ে ভালো বৃষ্টিতে এর চাষ শুরু করা যেতে পারে৷ উল্লেখ্য, ১ হেক্টর জমির জন্য প্রায় ১০ ক্যুইন্টাল কন্দের প্রয়োজন৷ এটি চাষের আগেও জমিতে গোবর সার প্রয়োগ করে তা প্রস্তুত করে নিতে হবে৷

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

পরিবেশ

শিখে নিন টবে দারুচিনির চাষের কৌশল

পৃথিবীতে ভোজ্য মসলা যতরকম আছে তারমধ্যে দারুচিনি সবথেকে উল্লেখযোগ্য। এই প্রাচীনতম মসলা বহুদিন ধরে ওষধি হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে চলেছে। এছাড়াও খাবারে স্বাদ বাড়ানো থেকে শুরু করে, পানীয় এবং তরল মশলাদার খাবারে স্বাদ বাড়ানোর জন্যও এই দারচিনির ব্যবহার হয়। এলাচ, গোলমরিচ, লবঙ্গের সাথে সাথে দারুচিনির নামও মসলা হিসেবে একই পংক্তিতে উচ্চারিত হয়। বহু কৃষক দারুচিনির চাষ করে ভীষণভাবে উপকৃত হয়েছেন। বাজারে এই দারুচিনির চাহিদা প্রচুর পরিমানে থাকায়, এই চাষে ভালো লাভ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও সৌখিন মানুষেরাও ভালোবেসে দারুচিনির চাষ বাড়িতে করে থাকেন। দারুচিনি গাছের বাকল, ফুল, কুঁড়ি, পাতা, ফল, শেকড় সবকিছুই কাজে লেগে যায়। দারুচিনি গাছ বাড়িতে চাষ করতে গেলে ঘরে ছাদে দুই জায়গাতেই চাষ করা যায়।

মনে রাখতে হবে এই চাষ করতে গেলে উপযুক্ত পরিমানে রোদ দরকার। বাংলার জলবায়ুতে মূলত শীতকালে এই চাষ করা সবথেকে ভালো। জানুয়ারি মাসে দারুচিনি গাছে ফুল ফোটা আরম্ভ করে, এবং এই গাছের ফল পাকতে আরম্ভ করে জুলাইয়ে। সেইসময়ই ফল থেকে বীজ সংগ্রহ করে নিয়ে এসে বাগানে বা টবে রোপন করে দেওয়া উচিত।

প্রয়োজনীয় রোদ (Sunlight)

কড়া সূর্যালোক দারুচিনি জন্য প্রয়োজনীয়, তাই এটি পর্যাপ্ত রোদ পাওয়া যায় এমন জায়গায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দারুচিনি রোপন করতে গেলে রৌদ্রোজ্জ্বল স্থান যেমন জানালার ধারে, ব্যালকনি কিংবা ছাদের খালি স্থান ব্যবহার করতে হবে।

উপযুক্ত মাটি (Soil)

দারুচিনি চাষের জন্য ভাল মানের মাটি ব্যবহার করা আবশ্যক। বাগানের মাটি ব্যবহার না করাই ভালো, কেননা এতে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। অনে সময় আমরা আশেপাশ থেকে মাটি নিয়েই টব ভরে গাছ লাগানো হয়।  বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সংবেদনশীল গাছগুলোতে এই উপায় কার্যকরী হয় না। নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভাল এমন মাটি ব্যবহার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে উত্তম নিষ্কাশনযুক্ত বেলে দোআঁশ মাটি ব্যবহার করা সবথেকে উত্তম। জেনে রাখা ভালো দারুচিনি খরা একদমই সহ্য করতে পারে না। মাটির বিকল্প হিসেবে ১৫% ট্রাইকোকমপোস্টযুক্ত কোকোডাস্ট ব্যবহার করা যেতে পারে।

বাইরে চাষ করার জন্য এক মিটার (৩০ সেন্টিমিটার গভীর) পর্যন্ত গর্ত করে মাটি দিয়ে পূরণ করে নিতে হবে। ঘরের ভিতরে বা ছাদবাগানের দারুচিনি চাষের জন্য একটি বড় পাত্র প্রয়োজন হবে।

রোপন (Planting)

দারুচিনির বীজ সংগ্রহও করা যায় অথবা নার্সারি থেকে দারুচিনির গাছ কিনেও আনা যায়।

বাইরে চাষের ক্ষেত্রে

দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে ১ মিটার x ১ মিটার এবং ৩০ সেমি গভীরতায় খনন করে মাটি দিয়ে গর্তটি পূরণ করতে হবে।

ঘরের মধ্যে টবে রোপনের ক্ষেত্রে

নিচে গর্ত সহ বড় সিরামিক পাত্র (৬০ x ৫০ সেমি) ব্যবহার করতে হবে। পাত্রটি মাটি বা কোকোডাস্ট দিয়ে পূরণ করে নিতে হবে। ৩০ সেন্টিমিটার গভীরতা এবং ৩০ সেন্টিমিটার প্রস্থের একটি গর্ত তৈরি করতে একটি বাগান ট্রোয়েল ব্যবহার করে নেওয়া ভালো। বীজ ব্যবহার করলে  ১.৫ সেন্টিমিটার গভীর গর্ত তৈরি করে নেওয়া উচিত। এবার গাছটি গর্তের মধ্যে রেখে মাটি দিয়ে চাপা দিতে হবে। বীজ ব্যবহার করলে প্রতি ১.৫ সেমি গর্তে একটি করে বীজ পুঁততে হবে এবং মাটি দিয়ে বীজটি ঢেকে দিতে হবে।

মাটি সবসময় ভেজা রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণ জল দিতে হবে। দারুচিনি গাছ পাত্রে রোপন করার পর, টবের নিচের গর্ত থেকে জল বের না হওয়া পর্যন্ত জল দিতে হবে। টবের উপরের ৫ সেন্টিমিটার শুকিয়ে গেলেই আবার গাছটিকে জল দিতে হবে।

গাছের পরিচর্যা (Caring)

দারুচিনি গাছে নিয়মিত সার প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম বছর ৫০ গ্রাম টিএসপি, ৭৫ গ্রাম এমওপি ও ৫০ গ্রাম ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে। প্রতিবছর ২-৩ কেজি ট্রাইকোকম্পোস্ট ও সার প্রয়োগ শেষে একই হারে টিএসপি, এমওপি ও ইউরিয়া দিতে হবে।

দারুচিনি প্রথম ধরতে দুই থেকে তিন বছর সময় নেয় এবং তার পরে প্রতি দুই বছর পরপরই ফসল দিতে থাকে। দারুচিনি গাছ কম করে ১০-১৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। তাই একে নিয়মিত করে ছোট রাখতে হবে। পাঁচ বছর বয়সী দারুচিনি গাছ থেকে নিয়মিত দারুচিনি সংগ্রহের ডাল পাওয়া সম্ভব। দারুচিনি ব্যবহার করার জন্য যে শাখাগুলি কাটা হবে সেগুলি থেকে বাকল তুলে নিতে হবে, বাকলগুলি ব্যবহার করার আগে জলে ভালোভাবে ভিজিয়ে নেওয়া উচিত।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

আঙিনা কৃষি

টবে লাগান মিষ্টি তেঁতুল গাছ

পৃথিবীতে জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, হারিয়ে যাচ্ছে বহু প্রাণী ও উদ্ভিদ বৈচিত্র। চাষবাসের জমিরও সংকুলান ঘটছে সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে। গগনচুম্বী বাড়ি ঘিরে ফেলছে সমস্ত ফাঁকা জমিন। শখ করে মানুষ খোলা জায়গায় যে গাছ লাগবে অথবা ফল-ফুলের চারা সেই উপায়ও আর নেই। গাছ লাগানোর জন্য সামান্য জায়গাও ফাঁকা থাকছে না আর। তবে আমাদের করণীয় কী? বৃক্ষরোপন কি তবে অচিরেই বন্ধ হয়ে যাবে। বেঁচে থাকার জন্য তো গাছ লাগাতে হবেই। বাড়ির একটুকরো বারান্দা অথবা ব্যালকনিতেও সুন্দর ভাবে ইচ্ছা করলে গাছ লাগানো যায়। বাড়ির ছাদেও বানানো যায় সুন্দর বাগিচা। শহরের মানুষদের জন্য ছাদ বাগানের কোনও বিকল্পও নেই। বাড়ির মধ্যেকার ব্যালকনি অথবা ছাদের একটুকরো জমিতেও, ইচ্ছা করলে টবে চাষ করা যায় বিভিন্ন ফুলের ও ফলের গাছ।

শাকসবজি, পেয়ারা, লেবু প্রভৃতি দেশীয় গাছ টবে বাড়তে দেওয়া থেকে শুরু করে বর্তমানে বহু বিদেশী গাছের চারাও মানুষ ব্যালকনি অথবা ছাদে চাষ করছেন। তার মধ্যে থাই মিষ্টি তেঁতুল টবের চাষ পদ্ধতি হিসাবে অত্যন্ত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। প্রথমত মিষ্টি তেঁতুলের চাষ করতে গেলে, নার্সারি থেকে এই বিশেষ তেঁতুলের সঠিক বীজ নিয়ে আনতে হবে। তবে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কলম পাওয়া একটু দুষ্কর কাজ। বুঝে সঠিক চারা নিয়ে আসা বাগান মালিকের উপরেই বর্তায়।

থাই মিষ্টি তেঁতুলের ফুল থেকে ফল ধরতে প্রায় ৭ মাস সময় লাগে। বছরে দু’বার থাই মিষ্টি তেঁতুলের গাছে ফল ধরে। প্রথমবার বর্ষাকালে এবং দ্বিতীয়বার শীতকালে। এই গাছের পরিচর্যা আলাদা করে করার কোনও দরকার পড়ে না। গাছের যত্নআত্তি নিতে হয় ঠিকই, কিন্তু তা বলে, আলাদা করে কোনও বিশেষ যত্ন নিতে হয় না।

গাছ লাগানোর পদ্ধতি (Planting):

থাই মিষ্টি তেঁতুল চাষের জন্য আদর্শ মাটি হল, দো-আঁশ বা বেলে দো-আঁশ মাটি। এই দু’টি মৃত্তিকার মধ্যে যে কোনও একটি বেছে নিন। তারপর বেছে নেওয়া মাটির দুই ভাগ অংশের সাথে গোবর, ১০০ গ্রাম, টিএসপি ১০০ গ্রাম, পটাশ, ২৫০ গ্রাম, হাড়ের গুঁড়ো এবং ৫০ গ্রাম সরিষার খোল একসঙ্গে মিশিয়ে ২০ ইঞ্চি মাপের বড় টবে জল মিশিয়ে রেখে দিতে হবে। ১০ থেকে ১২ দিন পর টবের মাটি ভালো করে খুঁচিয়ে দিয়ে আরও ৪-৫ দিন রেখে দিতে হবে। ৪ থেকে ৫ দিন বাদে মিষ্টি তেঁতুলের একটি ভালো চারা ওই টবে লাগান।

পরিচর্যা(Caring):

চারা লাগানোর প্রথম কয়েক মাস তেমন যত্নের দরকার পড়বে না। অবশ্যই গাছে এই সময়টুকু পর্যাপ্ত জলের যোগান, এবং আগাছা পরিষ্কারের কাজ করতে হবে।  ছয় মাস চারা লাগানোর সময়সীমা ফুরোলেই ১ মাস বাদে বাদে গাছে সরষের খোল মিশ্রিত পচা জল দিতে হবে। মনে রাখতে  হবে খোল দেওয়ার আগে গাছের মাটি খুঁচিয়ে নিতে হবে।

রোগ দমন (Disease management):

সাধারণত থাই মিষ্টি তেঁতুল গাছে পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখা যায় না। কিন্তু বর্ষাকালে অনেক সময় তেঁতুল গাছে ছত্রাক হানা দেয়। এর ফলে তেঁতুল ফেটে যায়। এই অসুবিধার থেকে গাছকে বাঁচাতে হলে, বর্ষাকাল আসার আগেই ভালো ছত্রাকনাশক ওষুধ ১০ দিন অন্তর গাছে স্প্রে করে ছড়িয়ে দিতে হবে।

বাংলার বেজায় টক তেঁতুলের সঙ্গে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কোনও তুলনাই চলে না। অত্যন্ত মিষ্টি খেতে এই তেঁতুল থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়ায় চাষ প্রভূত পরিমাণে হলেও, আমাদের রাজ্য এই ফলের চাষ এখনও ততটা গতি পায়নি। কিন্তু আপনি আপনার ব্যালকনি অথবা ছাদে সহজেই এই থাই তেঁতুলের গাছ লাগাতে পারেন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশক: শাইখ সিরাজ
© ২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। দা এগ্রো নিউজ, ফিশ এক্সপার্ট লিমিটেডের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। ৫১/এ/৩ পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থাপথ, ঢাকা -১২০৫
ফোন: ০১৭১২-৭৪২২১৭
ইমেইল: info@agronewstoday.com, theagronewsbd@gmail.com