আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

এগ্রোবিজ

বাসমতি চাল কার- ভারত ও পাকিস্তানের নতুন বিরোধ

সুগন্ধি ও স্বাদের কারণে বাসমতি চালের রয়েছে বিশ্বখ্যাতি
সুগন্ধি ও স্বাদের কারণে বাসমতি চালের রয়েছে বিশ্বখ্যাতি

বাসমতি চাল নিয়ে ভারত ও পাকিস্তান নতুন করে বিরোধে জড়িয়েছে।

স্বাদে ও গন্ধে অতুলনীয় এই চাল চিরবৈরী এই দুটো দেশের বিশেষ কিছু অঞ্চলেই শুধু উৎপন্ন হয়।

সম্প্রতি ভারতের পক্ষ থেকে বাসমতি চালকে ‘ভারতীয় পণ্য’ হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার জন্য ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কাছে আবেদন করার পর এই বিরোধের সৃষ্টি হয়েছে।

ভারতের এই আবেদনে আপত্তি উঠেছে পাকিস্তানে। তারা বলছে, শুধু ভারতে নয়, এই একই চাল পাকিস্তানেও উৎপাদিত হয়। ফলে বাসমতি চালকে শুধু ভারতীয় পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া উচিত হবে না।

পাকিস্তানি ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই চালকে শুধুমাত্র ভারতীয় পণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হলে তারা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এজন্য ভারতীয় আবেদনের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তারা পাকিস্তান সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।

কিন্তু ভারতীয় কর্মকর্তারা বলছেন, ভারতের এই আবেদনে পাকিস্তানের উদ্বিগ্ন হওয়ার কোন কারণ নেই। পাকিস্তান চাইলে ভারতের মতো তারাও এই পণ্যটিকে নিজেদের দাবি করে আবেদন করতে পারে।

ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন বাসমতি চালের সবচেয়ে বড় আমদানিকারক এবং পাকিস্তান ও ভারত এই দুটো দেশই এই জোটের দেশগুলোর কাছে প্রচুর পরিমাণে বাসমতি চাল রফতানি করে থাকে।

কী আছে ভারতের আবেদনে?

ভারত সরকার সম্প্রতি এই বাসমতি চালের জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন বা জিআই ট্যাগের জন্য ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কাছে আবেদন করেছে।

ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অফিসিয়াল জর্নালে ভারতের এই আবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে ১১ই সেপ্টেম্বর।

এই আবেদনে বলা হয়েছে বাসমতি চাল ভারতীয় উপমহাদেশের একেবারে স্বতন্ত্র একটি চাল। আকারে এটি লম্বাটে। অনন্য স্বাদ ও সুগন্ধের কারণে সারা বিশ্বে ভারতীয় এই চালের সুখ্যাতি রয়েছে।

বাসমতি চালের বড় বাজার ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও মধ্যপ্রাচ্য
বাসমতি চালের বড় বাজার ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও মধ্যপ্রাচ্য

ভারত বলছে, হিমালয়ের পাদদেশীয় অঞ্চল, বিশেষত ইন্দো-গাঙ্গেয় অঞ্চলে বাসমতি চাল উৎপন্ন হয়।

ভারতে কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের প্রধান ড. অশোক কুমার সিং বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, সবচেয়ে ভাল মানের বাসমতি চাল উৎপাদিত হয় ভারতের যে সাতটি রাজ্যে সেগুলোকে ইতোমধ্যে জাতীয়ভাবে জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন বা জিআই দেওয়া হয়েছে।

“জম্মুর তিনটি জেলা, অরুণাচল, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, দিল্লি, উত্তরাখণ্ড ও উত্তর প্রদেশের কিছু এলাকায় ভাল মানের বাসমতি চাল হয়। এসব রাজ্যকে ইতোমধ্যেই জিআই ট্যাগ দেওয়া হয়েছে। জাতীয়ভাবে এই ট্যাগ দেওয়ার পর সেটা আন্তর্জাতিক পর্যায়েও নিতে হয়। ভারত এখন সেটাই করেছে।”

পাকিস্তানের উদ্বেগ

করাচি থেকে সাংবাদিক তানভীর মালিক জানিয়েছেন, ভারতের এই আবেদনের পর পাকিস্তানের চাল ব্যবসায়ী ও সরকারের ভেতরে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

তিনি বলেন, পাকিস্তান মনে করে ভারতের এধরনের পদক্ষেপ নেওয়া একেবারেই উচিত হয়নি। কারণ এই চাল শুধু ভারতে নয়, পাকিস্তানেও উৎপাদিত হয়।

পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর, বালুচিস্তান এবং পাঞ্জাবে উৎপাদিত বাসমতি চালের খ্যাতি রয়েছে ইউরোপের বাজারে।

করাচি-ভিত্তিক সংবাদপত্র বিজনেস রেকর্ডারের সাংবাদিক মি. মালিক বলেন, “পাকিস্তানি ব্যবসায়ীদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে যে দিল্লিকে এই ট্যাগ দেওয়া হলে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে পাকিস্তানের বাসমতি চাল রপ্তানির বাজারে বড় ধরনের ধ্বস নামবে।”

ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশের পর পাকিস্তান সরকারও ভারতীয় আবেদনের জবাবে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কাছে পাল্টা আবেদন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এজন্যে তারা সরকারের বিভিন্ন দপ্তর ও এই খাতের সঙ্গে বেসরকারি পর্যায়ে যারা যারা জড়িত তাদের সঙ্গেও আলাপ আলোচনা শুরু করেছে।

পাকিস্তানি কর্মকর্তারা আশা করছেন যে ভারতের এই আবেদন শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হবে। তারা বলছেন, সফল কূটনীতির মাধ্যমে তারা দিল্লির এই পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দেবেন।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে খুব শীঘ্রই তারা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কাছে ভারতীয় আবেদনের বিপরীতে পাল্টা আবেদন দায়ের করবেন।

জিআই আইন কী

বাসমতি চালকে নিজেদের দাবি করে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের জিআই আইনে আবেদন করেছে ভারত সরকার।

জিআই এর অর্থ হলো জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন। অর্থাৎ পণ্যটির উৎস, উৎপত্তি, চরিত্র, বৈশিষ্ট্য ইত্যাদি এই আইনটিতে নিশ্চিত করা হয়।

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সদস্য দেশগুলোকে ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য এই আইনটিকে গ্রহণ করতে হয়।

দুবাই এর একটি সুপারমার্কেটে বিক্রি হচ্ছে বাসমতি চাল
দুবাই এর একটি সুপারমার্কেটে বিক্রি হচ্ছে বাসমতি চাল

পাকিস্তানও ২০২০ সালের মার্চ মাসে এই আইনটি গ্রহণ করেছে। তবে এর বাস্তবায়ন এখনও শুরু হয়নি। কিন্তু ভারতে এই আইনটি গৃহীত হয়েছে বহু আগে, ১৯৯৯ সালে।

এই আইনের আওতায় যে পণ্যটির গায়ে জিআই ট্যাগ থাকবে সেটি যে অঞ্চলে উৎপন্ন হয় সেই এলাকা ছাড়া ওই পণ্যের নাম আর কেউ ব্যবহার করতে পারবে না।

ভারতের যে পণ্যটিতে সর্বপ্রথম এই জিআই ট্যাগ লাগানো হয় সেটি হচ্ছে দার্জিলিং চা। এর পর এই তালিকায় তিনশোটিরও বেশি পণ্য যুক্ত হয়েছে।

এখন তাদের টার্গেট: বাসমতি চাল।

পাকিস্তানের আপত্তি

পাকিস্তানের একজন চাল রপ্তানিকারক এবং চাল রপ্তানিকারক সমিতির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান তৌফিক আহমেদ খান বিবিসি উর্দু সার্ভিসকে বলেছেন, বাসমতি চালকে ভারতীয় পণ্য হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার জন্য দিল্লি সরকার কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে।

তিনি বলেন, ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগ হওয়ার আগের দলিলপত্রের ওপর ভিত্তি করে ভারত যুক্তি দিতে চাইছে যে বাসমতি চাল তাদের নিজেদের পণ্য।

তার মতে, “পাকিস্তানের যেসব অঞ্চলে বাসমতি চাল উৎপন্ন হয় সেসব ব্রিটিশ ভারতের অংশ ছিল এবং ভারত এখন এই কৌশলের আশ্রয় নিয়ে বাসমতি চালকে নিজেদের পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ের চেষ্টা করছে।”

কী বলছে ভারত

কিন্তু ভারত বলছে, এনিয়ে পাকিস্তানের উদ্বেগের কিছু নেই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভারতীয় একজন কর্মকর্তা বলেছেন, “ভারত ও পাকিস্তানের সরকারি পর্যায়ে এনিয়ে আগেও আলোচনা হয়েছে। বাসমতি চাল এই দুটো দেশেই উৎপাদিত হয়। দুটো দেশেরই পণ্য এই চাল।”

তিনি বলেন, “ভারত স্বীকৃতি চেয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আবেদন করেছে। পাকিস্তান চাইলে তারাও সেটা করতে পারে। এখানে তো বিরোধের কিছু নেই।”

ভারতে চালের একটি মিলে কাজ করছেন কয়েকজন শ্রমিক
ভারতে চালের একটি মিলে কাজ করছেন কয়েকজন শ্রমিক

বাসমতি চালের ঐতিহাসিক দিক

ভারতীয় উপমহাদেশে বাসমতি চাল উৎপাদনের ইতিহাস বহু পুরনো।

দুশো বছরেরও বেশি সময় ধরে এই চালটি ব্রিটিশ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে চাষ করা হচ্ছে।

অভিনব সুগন্ধ ও স্বাদের জন্য চালের এই বিশেষ জাতটি বিশ্বখ্যাত যা অখণ্ড ভারতের বিশেষ কিছু এলাকায় উৎপন্ন হতো। এই বাসমতি চাল শুধু আজকের ভারত ও পাকিস্তানের কিছু অঞ্চলে হিমালয়ের পাদদেশের এলাকায় উৎপাদিত হয়।

প্রাচীন কাল থেকে সুতলেজ ও চানাবের মধ্যবর্তী সমতলভূমিতে বাসমতি চলের চাষ হয়ে আসছে। ব্রিটিশ ভারত ভাগ হওয়ার পর আজকের পাকিস্তানে যেসব অঞ্চলে এই চাল উৎপন্ন হয় সেগুলো হচ্ছে গুর্জরানওয়ালা, মান্দি বাহাউদ্দিন, হাফিজাবাদ, সিয়ালকোট, শেইখুপুরা, গুজরাট এবং আরো কিছু এলাকা।

আদিকাল থেকে ভারতের পাঞ্জাব, হরিয়ানা এবং জম্মু কাশ্মীরে বাসমতি চালের চাষাবাদ হয়ে আসছে। পাকিস্তানের পাঞ্জাবেও এই চালটির উৎপাদন হয়।

বাসমতি চাল এখন ভারত ও পাকিস্তানের আরো কিছু অঞ্চলেও উৎপন্ন হচ্ছে। কিন্তু এসব চালের গুণগত মান ও গন্ধ আদি জায়গাগুলোর চালের চেয়ে আলাদা।

পাকিস্তানের চাল রপ্তানিকারক তৌফিক আহমেদ খান জানান, আফ্রিকা ও আমেরিকাতেও বাসমতি চাল উৎপাদনের চেষ্টা করা হয়েছে। তবে সেগুলো সফল হয়নি।

তিনি বলেন, “বাসমতি চাল ভারত ও পাকিস্তানের যৌথ ঐতিহ্য এবং তাদের উৎপাদিত এই চালের স্বাদ ও গন্ধ চালের অন্যান্য জাতের চেয়ে ভিন্ন।”

এই চালের জন্য যেসব ভৌগলিক উপাদান প্রয়োজন সেগুলো শুধু ভারত ও পাকিস্তানের কিছু এলাকাতেই আছে।

বাসমতি চাল রপ্তানি

পাকিস্তান সাধারণ প্রতি বছর ৫০ থেকে ৭০ লক্ষ টন চাল রপ্তানি করে থাকে। গত অর্থ বছরে রপ্তানি করেছে ৪০ লাখ টন। তার মধ্যে পাঁচ লাখ টন ছিল বাসমতি চাল।

চাল রপ্তানি করে পাকিস্তান গত অর্থ বছরে আয় করেছে দুশো কোটি ডলার।

বাসমতি চাল একটু লম্বাটে। শুধু ভারত ও পাকিস্তানের কিছু এলাকায় উৎপন্ন হয়
বাসমতি চাল একটু লম্বাটে। শুধু ভারত ও পাকিস্তানের কিছু এলাকায় উৎপন্ন হয়

ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, চীন এবং কেনিয়াতে সবচেয়ে বেশি চাল রপ্তানি করে পাকিস্তান। তার মধ্যে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন বাসমতি চাল, চীন সব ধরনের চাল আমদানি করে থাকে।

পাকিস্তানের চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণে বাসমতি চাল রপ্তানি করে ভারত। গত অর্থ বছরে তাদের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৪৪ লাখ টন যার আর্থিক পরিমাণ প্রায় পাঁচশো কোটি ডলার।

কিন্তু ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে ভারতের বাসমতি চাল রপ্তানি হয় খুবই কম। ভারতের কাছে বাসমতি চালের সবচেয়ে বড় বাজার সৌদি আরব ও ইরান।

ভারতে বাসমতি চাল বিশেষজ্ঞ এবং ভারতে কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের প্রধান অশোক কুমার সিং বলেন, “ভারত সারা বিশ্বে যতো বাসমতি চাল রপ্তানি করে তার ৭৫ শতাংশই করা হয় মধ্যপ্রাচ্যে। ভারতের জন্য বাসমতি চালের সবচেয়ে বড় বাজার সৌদি আরব ও ইরান।”

পাকিস্তানের উদ্বেগের কারণ কী

পাকিস্তানের চাল রপ্তানিকারক তৌফিক আহমেদ খান মনে করেন, অসৎ উদ্দেশ্য থেকেই ভারত বাসমতি চালকে নিজেদের পণ্য বলে দাবি করছে।

তিনি বলেন, ভারত যদি এতে সফল হয় তাহলে সবচেয়ে খারাপ যেটা হতে পারে তা হলো ভারত হয়তো পাকিস্তানকে বাসমতি নাম ব্যবহার করতে বাধা দিতে পারে।

“তখন হয়তো পাকিস্তান তার চালের ব্যাগ কিম্বা প্যাকেটের গায়ে বাসমতি নামটি ব্যবহার করতে পারবে না।”

তার আশঙ্কা বাসমতি নামটি ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হলেও এই নামের জন্য ভারতকে হয়তো রয়্যালটি প্রদান করতে হতে পারে।

তিনি জানান, ভারতীয় আবেদনের বিরুদ্ধে পাল্টা আবেদনের জন্য পাকিস্তানের হাতে এখনও তিন মাস সময় আছে।

ইতালির একটি মেলায় বাসমতি চালের প্যাভিলিয়ন
ইতালির একটি মেলায় বাসমতি চালের প্যাভিলিয়ন

পাকিস্তান কী ঠেকাতে পারবে?

ভারতের আবেদনের পর এবিষয়ে পাকিস্তান সরকার তৎপর হয়ে উঠেছে এবং তাদের পরবর্তী পদক্ষেপের ব্যাপারে সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলাপ আলোচনা শুরু করেছে।

পাকিস্তানি পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষ সেনেটের একটি প্যানেলও ভারতীয় আবেদন ঠেকানোর ব্যাপারে সক্রিয় হয়েছে।

সেনেট কমিটির চেয়ারম্যান মির্জা মোহাম্মদ আফ্রিদি বলেছেন, পাকিস্তানে জিআই আইনটি পাস হয়েছে এবছরের মার্চ মাসে কিন্তু ভারতে বহু আগেই সেটা করা হয়েছে।

“ভারত এথেকে সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছে,” বলেন তিনি।

তিনি আশা করেন যে সরকারের গৃহীত উদ্যোগের ফলে ভারতের আবেদন ব্যর্থ হবে এবং তারাও “মেইড ইন পাকিস্তান” এই ট্যাগ লাগিয়ে বাসমতি চালের রপ্তানি অব্যাহত রাখতে পারবেন।

পাকিস্তানে ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি অর্গানাইজেশনের চেয়ারম্যান মুজিব খান বলেছেন, ২০০৬ সালের ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের এক আইনে বাসমতি চাল ভারত ও পাকিস্তানের যৌথ পণ্য হিসেবে ইতোমধ্যেই উল্লেখ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ভারতীয় আবেদনের বিরোধিতা করতে পাকিস্তানের প্রস্তুতি চলছে এবং ইউরোপিয়ান কাউন্সিলে হেরে গেলেও তারা ইউরোপিয়ান কোর্ট অফ জাস্টিসের কাছে নিয়ে যাবেন।

  • ইতালির একটি মেলায় বাসমতি চালের প্যাভিলিয়ন

    ইতালির একটি মেলায় বাসমতি চালের প্যাভিলিয়ন

  • বাসমতি চাল একটু লম্বাটে। শুধু ভারত ও পাকিস্তানের কিছু এলাকায় উৎপন্ন হয়

    বাসমতি চাল একটু লম্বাটে। শুধু ভারত ও পাকিস্তানের কিছু এলাকায় উৎপন্ন হয়

  • ভারতে চালের একটি মিলে কাজ করছেন কয়েকজন শ্রমিক

    ভারতে চালের একটি মিলে কাজ করছেন কয়েকজন শ্রমিক

  • দুবাই এর একটি সুপারমার্কেটে বিক্রি হচ্ছে বাসমতি চাল

    দুবাই এর একটি সুপারমার্কেটে বিক্রি হচ্ছে বাসমতি চাল

  • বাসমতি চালের বড় বাজার ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও মধ্যপ্রাচ্য

    বাসমতি চালের বড় বাজার ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও মধ্যপ্রাচ্য

  • সুগন্ধি ও স্বাদের কারণে বাসমতি চালের রয়েছে বিশ্বখ্যাতি

    সুগন্ধি ও স্বাদের কারণে বাসমতি চালের রয়েছে বিশ্বখ্যাতি

  • ইতালির একটি মেলায় বাসমতি চালের প্যাভিলিয়ন
  • বাসমতি চাল একটু লম্বাটে। শুধু ভারত ও পাকিস্তানের কিছু এলাকায় উৎপন্ন হয়
  • ভারতে চালের একটি মিলে কাজ করছেন কয়েকজন শ্রমিক
  • দুবাই এর একটি সুপারমার্কেটে বিক্রি হচ্ছে বাসমতি চাল
  • বাসমতি চালের বড় বাজার ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও মধ্যপ্রাচ্য
  • সুগন্ধি ও স্বাদের কারণে বাসমতি চালের রয়েছে বিশ্বখ্যাতি
বিজ্ঞাপন
মন্তব্য করুন

অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন

Leave a Reply

এগ্রোবিজ

যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশে হতে পারে সারের সংকট

সারের সংকট
সারের সংকট
সারের সংকট

চলতি বোরো মৌসুমে সার কিনতে কৃষকদের সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা করে বেশি দিতে হয়েছে। আর সরকারকেও সার বাবদ ভর্তুকি দিতে হচ্ছে বাজেটে বরাদ্দের তিন গুণের বেশি—প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশ এখন মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) সার আমদানি নিয়ে বিপাকে পড়েছে।

ধান, আলু ও সবজি চাষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এমওপি সারের ৬০ শতাংশ আনা হতো রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে। ওই দুই দেশ নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়ায় এখন বাংলাদেশকে এমওপি কিনতে হচ্ছে কানাডা থেকে। বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়া ও আমদানিতে অনিশ্চয়তার কারণে বাংলাদেশে সারের সংকট হতে পারে। ভর্তুকির চাপ সামলাতে বাংলাদেশকে সব ধরনের সারের খুচরা মূল্য বাড়াতে হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিবিষয়ক সংস্থা ইউএসডিএর চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ‘বাংলাদেশে সার সরবরাহ ও ব্যবহারে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের এমওপি সারের ২০ শতাংশ সরবরাহ কমানো হলে সামনের বোরো মৌসুমে ধান, গম ও রবি মৌসুমের অন্যান্য ফসলের উৎপাদন ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কমতে পারে। এতে বাংলাদেশের খাদ্য উৎপাদন ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে।

এমনিতেই এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমাদের ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সারের কারণে নতুন করে যাতে আর সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।

এ এম এম শওকত আলী, সাবেক কৃষিসচিব

তবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, দেশে চলতি বোরো মৌসুমে নতুন করে আর সারের দরকার হবে না। সামনে আলুর মৌসুমে ইউরিয়া, এমওপিসহ অন্যান্য সারের চাহিদা বাড়বে। ওই সময়ের জন্য সার সরবরাহ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ কানাডা ও মধ্যপ্রাচ্যের সার সরবরাহকারী দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে।

জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কানাডা থেকে মোট আট লাখ টন এমওপি সার আমদানির উদ্যোগ নিয়েছি। এ ব্যাপারে ওই দেশের সঙ্গে আমাদের সমঝোতা স্মারক হয়েছে। ফলে এই সার নিয়ে সরকারের কোনো দুশ্চিন্তা নেই। তবে সার বাবদ সরকারের বিপুল পরিমাণে ভর্তুকি বাড়ছে। এই চাপ নিয়েও সরকার ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ওই ভর্তুকি দিয়ে যাবে।’

কমানো হয়েছে চাহিদা

বাংলাদেশে চলতি অর্থবছরে ৬৯ লাখ টন রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয়েছে। এর মধ্যে ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি—এই চার ধরনের সার ব্যবহার হয় ৫৭ লাখ টন। আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের ওই চার ধরনের সারের চাহিদা কমিয়ে ৫৫ লাখ ৫০ হাজার টনে নামিয়ে আনা হয়েছে।

দেশে প্রয়োজনীয় সারের ৮০ শতাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এর মধ্যে এমওপি সারের বড় অংশ আসে রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে।

প্রসঙ্গত, ওই চারটি প্রধান সার কৃষকদের কাছে বিক্রির ক্ষেত্রে সরকার ভর্তুকি দিয়ে থাকে। চলতি অর্থবছরে সরকার প্রাথমিকভাবে সারে ভর্তুকি বাবদ ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে গত ছয় মাসে সারের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। বেশির ভাগ সারের দাম তিন থেকে চার গুণ বেড়ে যাওয়ায় সরকারকে ভর্তুকির পরিমাণ ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা করতে হয়। কিন্তু অর্থবছরের শেষের দিকে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে হিসাব করে দেখা হয়েছে, ভর্তুকির পরিমাণ এবার বেড়ে কমপক্ষে ৩০ হাজার কোটি টাকা গিয়ে দাঁড়াবে।

জিপসাম, জিংক সালফেট ও অ্যামোনিয়াম সালফেট ও ম্যাগনেসিয়াম সালফেট সারে সরকার কোনো ভর্তুকি দেয় না। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কিনে ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কাছে তা বিক্রি করে থাকেন। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষককেও বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে।

সাবেক কৃষিসচিব এ এম এম শওকত আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমনিতেই এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমাদের ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সারের কারণে নতুন করে যাতে আর সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। আর সরকারের অন্যান্য খাতের ভর্তুকি কমিয়ে প্রয়োজনে সারে ভর্তুকি বাড়াতে হবে, যাতে সারের দাম কম থাকে। কারণ, কৃষকের হাতে এখন টাকা কম। বিশ্ববাজার থেকেও খাদ্য আমদানি করা সামনের দিনে আরও কঠিন হতে পারে। ফলে দেশের উৎপাদন ঠিক রাখতে সারের দাম ও জোগান ঠিক রাখা উচিত।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

বিদেশ থেকে খালি হাতে ফিরে ড্রাগন চাষে সাফল্য

বাগানে চাষ করা ড্রাগন হাতে মিরাজুল ইসলাম
বাগানে চাষ করা ড্রাগন হাতে মিরাজুল ইসলাম

মিরাজুল ইসলাম (৩৩)। ১০ বছর সৌদি আরবে ছিলেন। আকামা জটিলতায় খালি হাতে দেশে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। এক বছর বেকার থাকার পর ইউটিউবে পতিত জমিতে ড্রাগন চাষের ভিডিও দেখেন। বাবার কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে নেমে পড়েন ড্রাগন চাষে। দেড় বছরের ব্যবধানে এখন উপজেলার সবচেয়ে বড় ড্রাগন বাগান তাঁর। এ বছর খরচ বাদে আট থেকে নয় লাখ টাকা লাভের আশা করছেন তিনি।

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার ইন্দুরকানি গ্রামের বাসিন্দা মিরাজুল। উপজেলার টগরা গ্রামে দেড় একর জমিতে তিনি ড্রাগনের বাগান তৈরি করেছেন। তাঁর বাগানে এখন সাড়ে তিন হাজার ড্রাগন ফলের গাছ আছে।

মিরাজুল ইসলাম বলেন, শ্রমিক হিসেবে ১০ বছর সৌদিতে কাজ করে ২০১৯ সালে দেশে ফেরেন তিনি। আকামা সমস্যার কারণে শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। কিছু একটা করবেন বলে ভাবছিলেন। একদিন ইউটিউবে ড্রাগন চাষের ভিডিও দেখতে পান। সেই থেকে ড্রাগন চাষে আগ্রহ জন্মে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে দেড় একর পতিত জমি ড্রাগন চাষের উপযোগী করেন। গাজীপুর থেকে ৬০ টাকা দরে ৬০০ চারা নিয়ে আসেন। বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে শুরু করেন চাষাবাদ। পরের বছর জুনে ফল পাওয়া শুরু করেন।

ড্রাগনের বাগান করতে মিরাজুলের খরচ হয়েছিল ছয় থেকে সাত লাখ টাকা। ইতিমধ্যে ফল বিক্রি করে তাঁর খরচ উঠে গেছে। সাধারণত মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত গাছে ফল আসে। বছরে ছয় থেকে সাতবার পাকা ড্রাগন সংগ্রহ করা যায়। এখন পরিপক্ব ও রোগমুক্ত গাছের শাখা কেটে নিজেই চারা তৈরি করেন। ড্রাগন চাষের পাশাপাশি বাগানে চুইঝাল, এলাচ, চায়না লেবুসহ মৌসুমি সবজি চাষ করেন। এ ছাড়া ড্রাগনের চারাও উৎপাদন করে বিক্রি করেন তিনি।

মিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বাগানের বেশির ভাগ গাছে এ বছর ফল ধরেছে। গত মঙ্গলবার বাগান থেকে দেড় টন ফল সংগ্রহ করেছেন। ২৫০ টাকা কেজি দরে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পাইকারদের কাছে বিক্রি করেছেন। স্থানীয় বাজারে ৩০০ টাকা কেজি দরে ড্রাগন বিক্রি হয়। নভেম্বর পর্যন্ত আরও পাঁচ–ছয়বার বাগান থেকে ফল তোলা যাবে। আশা করছেন, খরচ বাদে এবার আট থেকে নয় লাখ টাকা লাভ থাকবে।

মিরাজুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমার বাগান থেকে চারা নিয়ে অনেকে বাড়িতে ও ছাদে ছোট পরিসরে ড্রাগনের বাগান করেছেন। আমি এ পর্যন্ত ৪০ টাকায় দেড় হাজার চারা বিক্রি করেছি।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পূর্ণ বয়সের একটি ড্রাগনের চারা রোপণের পর ২৫ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। এর মৃত্যুঝুঁকি নেই বললেই চলে। তবে কয়েক দিন পরপর সেচ দিতে হয়। বৃষ্টির পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হয়। ড্রাগন ফল চাষে রাসায়নিক সার দিতে হয় না।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইশরাতুন্নেছা বলেন, মিরাজুল ইসলামকে ড্রাগন চাষে নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে আসছে কৃষি বিভাগ। উপজেলায় তাঁর বাগানটি সবচেয়ে বড়। তিনি নিরলস পরিশ্রম করে ছোট থেকে বাগানটি বড় করেছেন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

নাসিরনগরে বন্যায় তলিয়ে গেল কৃষকের বাদামখেত

নাসিরনগরের গোয়ালনগর ইউনিয়নে অতিবৃষ্টি ও আগাম বন্যায় তলিয়ে গেছে কৃষকদের বাদামখেত। আজ মঙ্গলবার ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রামে
নাসিরনগরের গোয়ালনগর ইউনিয়নে অতিবৃষ্টি ও আগাম বন্যায় তলিয়ে গেছে কৃষকদের বাদামখেত। আজ মঙ্গলবার ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রামে

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নে অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে কৃষকের প্রায় ৩০ হেক্টর বাদাম চাষের জমি। কয়েক দিন আগে উজানের পানিতে তাঁদের পাকা ধানের জমি তলিয়ে গিয়েছিল। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষকেরা বাদাম চাষ করেছিলেন। আবারও ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ার বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হলেন চাষিরা।

উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১১ এপ্রিল উপজেলায় শিলাবৃষ্টি এবং ১৪ থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত উজানের পানিতে কৃষকের পাকা ধানের জমি তলিয়ে যায়। কৃষকেরা সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ২০০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করেছিলেন। এর মধ্যে উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নে ৩০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করা হয়। উপজেলায় এবার প্রায় ৫০ হাজার মণ বাদাম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। কিন্তু উজানের পানিতে হঠাৎ বন্যায় সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

গোয়ালনগর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আজহারুল হক বলেন, ‘নাসিরনগর উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাদাম চাষ করা হয় আমাদের ইউনিয়নে। কিন্তু এ বছর আগাম বন্যার কারণে কৃষকেরা তাঁদের ফসল ঘরে তুলতে পারেননি। তাঁদের সব ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।’

ওই এলাকার বাদামচাষি মেরাজ মিয়া বলেন, তিনি ছয় বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করেন। দু-এক দিনের মধ্যে বাদাম তুলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু খেতে গিয়ে দেখেন সব বাদাম পানির নিচে। এখন এই বাদাম তুলে কোনো লাভ নেই। এগুলো গরুও খাবে না।

মো. রজব আলী নামের এক কৃষক বলেন, ‘আমাদের ইউনিয়নের জামারবালি, সোনাতলা ও মাইজখোলা গ্রামে বাদামখেত আছে। গত তিন দিনে পাঁচ-ছয় ফুট পানি বাড়ায় সব তলিয়ে গেছে। এখন বাদাম তুলতে কাজের লোকও পাওয়া যাচ্ছে না।’

কৃষক ফতু মিয়া বলেন, গোয়ালনগর ইউনিয়নের বাদাম চাষের জমিগুলো হঠাৎ পানি আসায় তলিয়ে গেছে। ফসল তলিয়ে তাঁদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেল। কয়েক দিন আগেও পাকা ধান পানির নিচে তলিয়ে গিয়েছিল। কৃষকদের দাবি, গোয়ালনগরে বাদাম চাষের জমি তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকদের প্রায় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আবু সাইদ প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলার কয়েকটি চরাঞ্চলে বাদাম চাষ করা হয়। চরাঞ্চলের উঁচু জমিতে প্রথমে আলু চাষের পর বাদাম চাষ করা হয়। আগাম বন্যার কারণে নিচু এলাকার কিছু বাদামখেত পানিতে তলিয়ে গেছে।

আবু সাইদ আরও বলেন, ১৫-২০ দিন আগে উপজেলার প্রায় সব বাদাম উঠে গেছে। গোয়ালনগর ইউনিয়নে ৩০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করা হয়েছিল। এর মধ্যে এক হেক্টর জমির বাদাম তলিয়ে গেছে। সব মিলিয়ে ৭০ হাজার টাকার মতো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সিলেটে বন্যা হওয়ায় এমনটি হয়েছে বলে তিনি জানান।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

পানি দিতে অতিরিক্ত টাকা

পানি দিতে অতিরিক্ত টাকা
পানি দিতে অতিরিক্ত টাকা

ঠাকুরগাঁওয়ে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) একটি গভীর নলকূপের সেচের পানি সরবরাহে কৃষকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হচ্ছে। ভুক্তভোগী কৃষকদের কাছ থেকে পাওয়া এমন অভিযোগের তদন্ত করে সত্যতা পেয়েছে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষ। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বড় বালিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে।

ভুক্তভোগী কৃষকেরা বলছেন, সেচের পানির জন্য প্রিপেইড কার্ডের বাইরে কোনো টাকা দেওয়ার নিয়ম নেই। কিন্তু বিএমডিএর ১০৮ নম্বর গভীর নলকূপের অপারেটরের দায়িত্বে থাকা বিউটি বেগমের স্বামী আকতারুজ্জামান বোরো ধান চাষের জন্য প্রতি বিঘার জন্য ১ হাজার ২০০ টাকা ও অন্য মৌসুমে ৩০০ টাকা নেন। ১০ বছর ধরে তিনি এভাবেই বাণিজ্য করে আসছেন।

সম্প্রতি রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে বিএমডিএর গভীর নলকূপ থেকে খেতে সেচের পানি পেতে হয়রানির শিকার দুই কৃষকের মৃত্যুর ঘটনা দেশজুড়ে আলোচিত হয়।

ঠাকুরগাঁও জেলায় বিএমডিএর ১ হাজার ৪৩১টি গভীর নলকূপ রয়েছে। এর মধ্যে সচল ১ হাজার ৪১৮টি। সেচের আওতায় ৭৬ হাজার ৫০০ পরিবারের জমি রয়েছে ৫৩ হাজার ৫০০ হেক্টর।

* সেচের পানির জন্য প্রিপেইড কার্ডের বাইরে কোনো টাকা দেওয়ার নিয়ম নেই। * সেচের আওতায় ৭৬ হাজার ৫০০ পরিবারের জমি আছে। * কৃষকদের নলকূপের আবেদন পেলে যাচাই করে স্কিম তৈরি করা হয়।

বিএমডিএ সূত্রে জানা গেছে, কৃষকদের নলকূপের আবেদন পেলে যাচাই করে স্কিম তৈরি করা হয়। এরপর সমবায়ের ভিত্তিতে অংশীদারি ফি বাবদ এক লাখ টাকা জমা দিতে হয়। এই নলকূপ পরিচালনার জন্য বিএমডিএ একজন অপারেটর নিয়োগ দেন। প্রিপেইড মিটারিং পদ্ধতিতে কৃষকের নিজ নামে প্রিপেইড কার্ড থাকতে হয়। সেই কার্ড থেকে প্রতি ঘণ্টায় সেচের পানির জন্য ন্যূনতম ১১০ টাকা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কেটে নেওয়া হয়। এর বাইরে অতিরিক্ত কোনো টাকা দেওয়ার নিয়ম নেই।

বড় বালিয়া এলাকার কৃষকেরা জানান, ২০১১ সালের দিকে বড় বালিয়া মণ্ডলপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. আকতারুজ্জামান এলাকায় গভীর নলকূপ স্থাপনের উদ্যোগ নেন। ফি হিসেবে এক লাখ জমা দেওয়ার নিয়ম থাকলেও কোনো কৃষক সেটা দিতে এগিয়ে আসেননি। ফলে আকতারুজ্জামান, দাউদুল ইসলাম ও জোবায়দুর রহমান মিলে অংশীদারি ফি দেন। আকতারুজ্জামানের ৮০ শতাংশ টাকা থাকায় গভীর নলকূপের নিয়ন্ত্রণ তিনিই পান। অপারেটর হিসেবে নিয়োগ পান তাঁর স্ত্রী বিউটি বেগম। যদিও কৃষকেরা আকতারুজ্জামানকেই অপারেটর হিসেবে জানতেন।

সেচের পানি পেতে হয়রানির শিকার হয়ে সদর উপজেলার বড় বালিয়া এলাকার ৫০ জন কৃষক গত ১৭ এপ্রিল বিএমডিএ সহকারী প্রকৌশলীর কাছে অভিযোগ দেন। সেখানে গিয়ে কৃষক ও অপারেটরের সঙ্গে কথা বলে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়।

ভুক্তভোগী কৃষকেরা বলেন, ২০১২ সালে নলকূপটি চালু হলে আওতাধীন কৃষকের কাছ থেকে আকতারুজ্জামান সেচের পানির জন্য প্রিপেইড কার্ডের অতিরিক্ত টাকা আদায় শুরু করেন। আর সেই টাকা থেকে তিনি মাঝেমধ্যে অন্য দুই অংশীদারকে কিছু টাকা ভাগ দেন।

ভুক্তভোগী কৃষক মো. শাহজাহান আলী বলেন, গভীর নলকূপটির আওতায় তাঁর ১০ বিঘা জমি রয়েছে। কার্ডের বাইরে টাকা দেওয়ার নিয়ম না থাকলেও আকতারুজ্জামানকে প্রতি বিঘায় সেচের জন্য ১ হাজার ২০০ টাকা দিতে হয়। এই টাকা না দিলে তিনি পানি দেন না।

ওই নলকূপের আওতায় চার বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করছেন কৃষক মো. হেলাল। তিনি অতিরিক্ত টাকা না দেওয়ায় অপারেটর খেতে পানি দেননি। এতে জমি ফেটে যায়। পরে তিনি শ্যালো ইঞ্জিন দিয়ে জমিতে সেচ দিয়ে খেত রক্ষা করেছেন।

আরেক ভুক্তভোগী মোকলেসুর রহমান বলেন, ১০ বছর ধরে সেচের পানির জন্য অতিরিক্ত টাকা দিয়ে আসছেন। এখন বিরক্ত হয়ে বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। এরপরও কোনো বিচার পাননি।

এ বিষয়ে মো. আকতারুজ্জামান বলেন, তিনি সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেওয়ার পর দেখেন গ্রামে কোনো গভীর নলকূপ নেই। পরে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে নলকূপটি স্থাপন করেন। কৃষকেরা অংশীদারত্বের টাকা দিতে রাজি না হলে তিনি বিএমডিএকে জানান। সে সময় তাঁরা টাকা দিয়ে দিতে পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘পরে আপনি টাকাটা ধীরে ধীরে তুলে নেবেন।’ সেই পরামর্শেই সেচের পানি বাবদ প্রিপেইড কার্ডের অতিরিক্ত কিছু টাকা তিনি নিচ্ছেন। জোর করে কিছু নিচ্ছেন না।

বিএমডিএ ঠাকুরগাঁও কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, অভিযোগটি যাচাই করে সত্যতা পাওয়া গেছে। নলকূপটি সুষ্ঠুভাবে চালানোর জন্য সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ওই অপারেটরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোটেক

কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তারা এক সঙ্গে কাজ করতে রাজি

ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকেরাফাইল ছবি
ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকেরাফাইল ছবি

ডাচ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে দুই দেশের বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা একসঙ্গে কাজ করতে রাজি হয়েছেন।

গতকাল সোমবার নেদারল্যান্ডসের রাজধানী হেগে অনুষ্ঠিত কৃষি খাতের ব্যবসাবিষয়ক এক সম্মেলনে দুই দেশের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা সহযোগিতার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।

নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম রিয়াজ হামিদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত এগ্রি বিজনেস কনক্লেভে বাংলাদেশের প্রায় ৪০জন উদ্যোক্তা ডাচ কৃষি খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি প্রযুক্তি সহযোগিতা ও ব্যবসায়িক সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। দিনব্যাপী আয়োজিত অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেছে ওয়েগেনিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়।

আলোচনায় বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা প্রযুক্তি কিনতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দিলে নেদারল্যান্ডসের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা প্রযুক্তি সহযোগিতা দিতে রাজি থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।

রিয়াজ হামিদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে ডাচরা প্রস্তুত এবং বাংলাদেশি উদ্যোক্তারাও তাদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। এ ছাড়া ডাচ সরকার ইতিমধ্যে বাংলাদেশের বীজ, পশু খাদ্য, পোলট্রি, হর্টিকালচার ও এ্যাকুয়াকালচার বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম সম্পাদন করেছে, যা ওই দেশের বেসরকারি খাতকে আরও উৎসাহিত করেছে।

আলোচনায় কৃষি সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করতে তৈরি আছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্কয়ার, ইস্পাহানি এগ্রো, একে খান অ্যান্ড কোম্পানি, প্যারাগন গ্রুপ, এসিআই, জেমকন গ্রুপসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তিনি জানান, মঙ্গলবার বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা ডাচ প্রযুক্তির প্রয়োগ সরেজমিনে দেখতে যাবেন।

বাংলাদেশের সঙ্গে নেদারল্যান্ডসের পোল্ট্রিখাতে সহযোগিতার আলোচনা অনেকটা এগিয়েছে উল্লেখ করে মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, দুই দেশের মধ্যে মৎস্য, পশুপালন ও হর্টিকালচারে সহযোগিতার বিপুল সম্ভাবনা আছে।

কনক্লেভ আয়োজনে প্রথমবারের মতো দূতাবাসের সঙ্গে অংশীদার হয়েছে নেদারল্যান্ডসের কৃষি মন্ত্রণালয়, নেদারল্যান্ডস এন্টারপ্রাইজ এজেন্সি, নেদারল্যান্ডস ফুড পার্টনারশিপ, ডাচ-গ্রিন-হাইজডেল্টা, লারিভ ইন্টারন্যাশনাল, স্টান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ।

কৃষিজাত পণ্য রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থানকারী নেদারল্যান্ডসের আয়তন বাংলাদেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের কম। ২০২১-এ কৃষিপণ্য ও খাদ্য রপ্তানি করে নেদারল্যান্ডস ১১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি আয় করেছে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশক: শাইখ সিরাজ
© ২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। দা এগ্রো নিউজ, ফিশ এক্সপার্ট লিমিটেডের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। ৫১/এ/৩ পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থাপথ, ঢাকা -১২০৫
ফোন: ০১৭১২-৭৪২২১৭
ইমেইল: info@agronewstoday.com, theagronewsbd@gmail.com