আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

পরিবেশ

বারোবাজারে সুলতানি আমলের ১৯ মসজিদ ও নিদর্শন

পঞ্চদশ শতাব্দির রাজধানীখ্যাত শাহ মোহাম্মদাবাদে সুলতানী সাশনামলের ঐতিহাসিক স্থান বারোবাজারে দাঁড়িয়ে রয়েছে ঐতিহাসিক ১৯ মসজিদ, স্থাপনা ও নিদর্শন। এ সবই সুলতানি আমলের স্থাপত্য শিল্পের অনন্য নিদর্শন।

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলায় ঐতিহাসিক স্থাপনার জন্য সুপরিচিত স্থান বারোবাজার। এটি উপজেলা সদর থেকে ১১ কিলোমিটার দক্ষিণে আর যশোর জেলা শহর থেকে ১৭ মাইল উত্তরে অবস্থিত।

ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের দুই ধারে শত শত পুকুর ও দিঘির স্বচ্ছ পানির ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঢেউ আর বুড়ি ভৈরব নদীর তীরে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে ঘেরা ঐতিহাসিক মসজিদ পরিবেষ্টিত এই বারোবাজার।

জানা যায়, বারোজন আউলিয়ার নামানুসারে বারোবাজারের নামকরণ করা হয়। আউলিয়ারা হলেন- এনায়েত খাঁ, আবদাল খাঁ, দৌলত খাঁ, রহমত খাঁ, শমসের খাঁ, মুরাদ খাঁ, হৈবত খাঁ, নিয়ামত খাঁ, সৈয়দ খাঁ, বেলায়েত খাঁ ও শাহাদাত খাঁ।

এই বারোবাজারকে পর্যটন এলাকা ও প্রত্নতাত্তিক জাদুঘর স্থাপনের দাবিতে সম্প্রতি স্থানীয় কিছু ব্যক্তি সামাজিক আন্দোলন শুরু করেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার প্রচারণা, সংবাদ সম্মেলনসহ নানা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। স্থানীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার ও উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর সিদ্দিক ঠাণ্ডু তাদের এই দাবির সাথে একমত ঘোষণা করে সহযোগিতার আশ্বাসও দিয়েছেন।

ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘বারোবাজার প্রাচীন ঐতিহ্য রক্ষা আন্দোলন কমিটি’ নামে একটি গ্রুপ প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। গ্রুপের ভাষ্য, কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজার এলাকায় রাজ্য ছিল, রাজ সিংহাসনও ছিল, একসময় এখানে সুপ্রশস্ত রাজপথ আর শান বাঁধানো ঘাটও ছিল। যা কালের চক্রে বিলিন হবার পথে।

১৯৯০-৯২ সালে স্থানীয়দের দাবির প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ব বিভাগ এখানে প্রত্ননিদর্শনগুলো উদ্ধারের জন্য খনন কার্য পরিচালনা শুরু করে। সেই সময় বেশ কিছু মসজিদ, সেনা ছাউনি, সিড়ি, কবরস্থান, নদী বন্দর বা জাহাজ ঘাট আবিস্কৃত হয়।

আউলিয়াদের পূন্যভূমি বারোবাজারে আরও রয়েছে ইতিহাস প্রসিদ্ধ গাজি-কালু-চম্পাবতীর মাজার। রয়েছে সুলতানী শাসন আমলের ১৯ টি মসজিদ। যা এতদিন মাটির নীচে ঢাকা ছিল। এখনো মাটির নীচে ঢাকা রয়েছে সাতটি মসজিদ। এছাড়া দিঘি রয়েছে ২০ টি।

ইতিহাস থেকে জানা যায় এখানে ১২৬ টি দিঘি ছিল কিন্তু কালের বিবর্তনে সব হারিয়ে গেছে। অনেক স্থান দখল হয়ে গেছে। প্রায় ১০ বর্গ মাইল এলাকাজুড়ে রয়েছে বহু অজানা প্রত্ন সম্পদ।

‘বিলুপ্তি নগরী বারোবাজার’-এর লেখক ও গবেষক রবিউলি ইসলাম জানান, বারোবাজারে প্রতিদিন শত শত লোক আসে পঞ্চদশ শতাব্দির নিদর্শন ও সুলতানি আমলে স্থাপিত মসজিদসহ আবিস্কৃত স্থাপনা দেখতে। এই এলাকা এখন পর্যটন এলাকা। তাই এখানে প্রত্নতাত্তিক জাদুঘর স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

বিশেষ করে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মুসলিম আর্কিটেক্চরের শিক্ষার্থীরা এখানে আসে রিসার্চ করতে। তাদের প্রয়োজনে আমরা এলাকার মানুষদের নিয়ে সামাজিক আন্দোলন করছি। আন্দোলনে অংশ নিয়েছে এলাকার তরুণ যুবকসহ স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান, এলাকার সুধীজন, সাংবাদিক ও শিক্ষকরা।

বারোবাজার এলাকা  যদি পর্যটন এলাকা ও প্রত্নতাত্তিক জাদুঘর স্থাপন করা হয় তাহলে এলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন অনেক এগিয়ে যাবে।

এ প্রসঙ্গে ঝিনাইদহ-৪ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার জানান, বারোবাজার এলাকা প্রত্নতাত্তিক নিদর্শনে ভরপুর। ১৯৯২ সালের দিকে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ বেশ কিছু ঢিবি খুড়ে এই নিদর্শনগুলো উদ্ধার করে। এলাকাবাসীর জোর দাবি, এখানে পর্যটন এলাকা ও জাদুঘর স্থাপনের।

তিনি আরও বলেন, এই সংক্রান্ত তথ্যপ্রমাণাদি যদি আমার কাছে দেয়া হয়, তাহলে তিনি পর্যটন এলাকা ও জাদুঘর স্থাপনের জন্য মহান সংসদে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি কামনা করবেন।

ইতিহাস থেকে জানা যায়-

বঙ্গ বিজয়ী বীর ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজি নদীয়া দখলের পর নদীয়ার দক্ষিণ বা দক্ষিণ পূর্বে বিস্তীর্ণ অঞ্চলের দিকে মনোযোগী না হয়ে উত্তর দিকে বেশি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। ফলে তার বিজিত রাজ্য উত্তর দিকে প্রশস্ত হতে থাকে।

অবশেষে সামছুদ্দিন ইলিয়াস শাহের পৌত্র নাসির উদ্দিন মাহমুদ শাহ (১৪৪২-১৬৬৮)-এর শাসনামলে যশোর ও খুলনার কিছু কিছু অংশ তার রাজ্যভুত হয়।

ওই অঞ্চলে বিজয়ের গৌরব অর্জন করেন বৃহত্তর খুলনা জেলার বাগেরহাটের পরশমণি শ্রেষ্ঠ আওলিয়া হযরত খান জাহান আলী। তিনি ১৪৫৯ সালে (৮৬৩) হিজরী ২৩ অক্টোবর ইন্তেকাল করেন।

তিনি এক সময় নিজের আত্মরক্ষার্থে একটি ক্ষুদ্র সেনাবাহিনীর অধিনায়ক হয়ে কুষ্টিয়া জেলার দৌলতগঞ্জ প্রবেশ করেন। সেখান থেকে বৃহত্তর যশোর জেলার কোটচাঁদপুর উপজেলার হাকিমপুর হয়ে বারবাজার অভিমুখে রওয়ানা দেন।

পথিমধ্যে জনসাধারনের পানীয় জলের তীব্র কষ্ট দেখে তিনি এ অঞ্চলে অগনিত দিঘি আর পুকুর খনন করেন। কথিত আছে, একই রাতে এ সব জলাশয় খনন করা হয়েছিল। ফলে বারোবাজার অঞ্চলের ৮৪ একর পুকুর ও দিঘি এখনও বিদ্যমান।

বারোবাজার ইউনিয়নে যত প্রত্নতত্ব নির্দশন

– বারবাজারে সাতগাছিয়া মৌজায় আদিনা মসজিদ অবস্থিত। এটি ৩৫ গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ। এটি ১৯৯২ সালের দিকে আংশিক সংস্কার করা হয়। সাতগাছিয়া মৌজায় কোটালী মসজিদও অবস্থিত।

– ঘোপপাড়া মৌজায় ঘোপ ও আড়পাড়া ঢিবি অবস্থিত। এটি রওজাশরীফ।

– সাদিকপুর মৌজায় চোরাগদানি মসজিদ অবস্থিত। সাদিকপুর মৌজায় মনোহর ১৬ গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটিও অবস্থিত।

– বারবাজার মৌজায় জোড় বাংলা মসিজদ অবস্থিত। এটিও ১৯৯২ সালের দিকে সংস্কার করা হয়। এখন এখানে লোকজন নামাজ পড়ে। তবে পাশে একটি দিঘী আছে যা সংস্কার করা প্রয়োজন। বারবাজার মৌজায় ৬ গম্বজ বিশিষ্ট গলাকাটা মসজিদও অবস্থিত।

– বেলাট দৌলথপুর মৌজায় নামাজগাজ রওজাশরীফ অবস্থিত। একই মৌজায় ৪ গম্বুজ বিশিষ্ট গোড়ার মসজিদ অবস্থিত। এখানে মানুষ নামাজ পড়ে। অনেক সময় এখানে বিভিন্ন সময় মনের বাসনা পুরণে মানত করে সাধারণ মানুষ।

তাছাড়া এ মৌজায় ১৬ গম্বুজ বিশিষ্ট পীর পুকুর মসজিদ, সওদাগর মসজিদ এবং পাঠাগার মসজিদ আবিস্কৃত হয়। এখানেই রয়েছে ঐতিহাসিক শাহী মহল। যা সেকেন্দার বাদশার বসতবাড়ি ছিল।

– বারোবাজারের মিঠাপুকুর এলাকায় আবিস্কৃত হয় নুনগোলা মসজিদ। মাতারানী রওজা শরিফও রয়েছে এখানে।

– হাসিলবাগ এলাকায় দমদম জাহাজঘাট, সেনানিবাস ও নদী বন্দর ছিল। সেখানে আবিস্কৃত হয় শুকুর আলী মসজিদ।

– বাদিডিহি এলাকায় রয়েছে আলোখা মসজিদ। ২০০২ সালে প্রত্নতত্ব বিভাগ এটি খনন করে।

– বারবাজার  ইউনিয়নের বাদুরগাছা এলাকায় গাজী-কালু-চম্পাবতীর আস্তানা ও রওজা শরিফ রয়েছে। এ এলাকায় দিঘী পরিবেষ্টিত শ্রী রাম রাজার বাড়িও অবস্থিত।

– মুরাদগড় এলাকায় রয়েছে ৩টি ঢিবি।

এছাড়াও বারোবাজার ইউনিয়নের ১০ বর্গমাইল এলাকাজুড়ে রয়েছে প্রচুর দীঘি ও পুকুর। বারোবাজার ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত অনেক প্রত্নতত্ব সম্পদ বিলুপ্তির পথে। যার বেশির ভাগই খনন বা পুনঃখনন খুবই প্রয়োজন।

বারোবারের পুকুর নিয়ে জনশ্রুতি আছে-

এ ইউনিযনে ছয় কুড়ি ছয়টি অর্থাৎ ১২৬টি দীঘি ও পুকুর রয়েছে। এর মধ্যে ১৮টি উল্লেখযোগ্য দিঘির নাম ও পরিধির কথা জানা যায়-

– পীরপুকুর : ৪ একর;

– গোড়ার পুকুর : ৫ একর;

– সওদাগর দিঘি : ১১ একর;

– সানাইদার পুকুর : ৩ একর;

– সাত পীরের পুকুর : ৩ একর;

– ভাইবোনের দিঘী : ৪ একর;

– আনন্দ দিঘী : ২ একর;

– গলাকাটা দিঘী : ৪ একর;

– জোড়াবাংলা দিঘী : ৩ একর;

– চোরাগদা দিঘী : ৪ একর;

– মাতারানী দিঘী : ৮ একর;

– নুনগোলা দিঘী : ৩ একর;

– কানাই দিঘী : ৩ একর;

– পাঁচ পীরের দিঘী : ৩ একর;

– মনোহর দিঘী : ৩ একর;

– আদিনা দিঘী : ৩ একর;

– শ্রীরাম রাজার দিঘী : ১০ একর এবং

– বেড় দিঘী : আট একর।

  • বারোবাজারে সুলতানি আমলের ১৯ মসজিদ ও নিদর্শন

    বারোবাজারে সুলতানি আমলের ১৯ মসজিদ ও নিদর্শন

  • বারোবাজারে সুলতানি আমলের ১৯ মসজিদ ও নিদর্শন

    বারোবাজারে সুলতানি আমলের ১৯ মসজিদ ও নিদর্শন

  • বারোবাজারে সুলতানি আমলের ১৯ মসজিদ ও নিদর্শন

    বারোবাজারে সুলতানি আমলের ১৯ মসজিদ ও নিদর্শন

  • বারোবাজারে সুলতানি আমলের ১৯ মসজিদ ও নিদর্শন

    বারোবাজারে সুলতানি আমলের ১৯ মসজিদ ও নিদর্শন

  • বারোবাজারে সুলতানি আমলের ১৯ মসজিদ ও নিদর্শন

    বারোবাজারে সুলতানি আমলের ১৯ মসজিদ ও নিদর্শন

  • বারোবাজারে সুলতানি আমলের ১৯ মসজিদ ও নিদর্শন

    বারোবাজারে সুলতানি আমলের ১৯ মসজিদ ও নিদর্শন

  • বারোবাজারে সুলতানি আমলের ১৯ মসজিদ ও নিদর্শন

    বারোবাজারে সুলতানি আমলের ১৯ মসজিদ ও নিদর্শন

  • বারোবাজারে সুলতানি আমলের ১৯ মসজিদ ও নিদর্শন

    বারোবাজারে সুলতানি আমলের ১৯ মসজিদ ও নিদর্শন

  • বারোবাজারে সুলতানি আমলের ১৯ মসজিদ ও নিদর্শন

    বারোবাজারে সুলতানি আমলের ১৯ মসজিদ ও নিদর্শন

  • বারোবাজারে সুলতানি আমলের ১৯ মসজিদ ও নিদর্শন

    বারোবাজারে সুলতানি আমলের ১৯ মসজিদ ও নিদর্শন

  • বারোবাজারে সুলতানি আমলের ১৯ মসজিদ ও নিদর্শন
  • বারোবাজারে সুলতানি আমলের ১৯ মসজিদ ও নিদর্শন
  • বারোবাজারে সুলতানি আমলের ১৯ মসজিদ ও নিদর্শন
  • বারোবাজারে সুলতানি আমলের ১৯ মসজিদ ও নিদর্শন
  • বারোবাজারে সুলতানি আমলের ১৯ মসজিদ ও নিদর্শন
  • বারোবাজারে সুলতানি আমলের ১৯ মসজিদ ও নিদর্শন
  • বারোবাজারে সুলতানি আমলের ১৯ মসজিদ ও নিদর্শন
  • বারোবাজারে সুলতানি আমলের ১৯ মসজিদ ও নিদর্শন
  • বারোবাজারে সুলতানি আমলের ১৯ মসজিদ ও নিদর্শন
  • বারোবাজারে সুলতানি আমলের ১৯ মসজিদ ও নিদর্শন
বিজ্ঞাপন
মন্তব্য করুন

অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন

Leave a Reply

পরিবেশ

ছাদ বাগানের জন্য কয়েকটি টিপস

ছাদ বাগানীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। টবে, ড্রামে গাছ লাগানো হয়। কেউ ফল, কেউবা সবজির গাছ লাগান। কেউ সফল হন। কেউ সফল হন না। ছোট ছোট কিছু ভুল বাগানীরা করে থাকেন। সে কারণে যত্ন নিলেও ফল আসে না। এখানে ছাদ বাগানীদের জন্য কিছু টিপস দেয়া হলো, যা মানলে সফলতা পাওয়া সহজ হতে পারে।

প্রথমেই মনে রাখতে হবে, টবে বা ড্রামে গাছ লাগালে তাকে খাবার দিতে হবে। প্রকৃতিতে বিদ্যমান গাছের মতো সে খাবার সংগ্রহ করতে পারে না। রোগ-বালাই হলো কিনা সেটাও বুঝে ব্যবস্থা নিতে হবে। ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে।

১. মাটির সাথে অবশ্যই কিছু কোকোপিট মেশাবেন। গাছের গোড়া স্যাতস্যাতে হতে দিবেন না। স্যাতস্যাতে হলে অসংখ্য রোগ হবে। মাটি ভেজা থাকবে তবে স্যাতস্যাতে না। কেকোপিট মেশালে পানি কম দিলেও হবে। কোকোপিট (নারকেলের ছোবলার গুড়া) পানি ধরে রাখে। অতি বৃষ্টি হলে গোড়ায় পানি জমতে দেয় না। হালকা হওয়ায় ছাদে ওজনের চাপ পড়ে না। এছাড়া কোকোপিটে কিছু পুষ্টি উপাদান আছে। যা গাছের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। কোকোপিটে চারা দ্রুত গজায়, বড় হয়। মাটির চেয়ে কোকোপিটে চারা ভালো হয়।

২. গাছের জন্য বিরিয়ানি হলো সরিষার খৈল-পচা পানি। মাটির হাড়িতে খৈল পচাতে হবে। কমপক্ষে ৫ দিন। ৭ দিন কিংবা বা ১৫ দিন হলে উত্তম। অল্প পানিতে পচিয়ে তার সাথে আরো পানি মিশিয়ে দিতে হবে। এটি গাছের জন্য অত্যন্ত উপকারী। একটু গন্ধ হয়, তাই অল্প একটু গুড় দিতে পারেন। ছাদে হাড়িতে পচালে বাসায় গন্ধ আসবে না। বৃষ্টির সময় খৈল-পচা পানি দেবেন না। পুকুরের নিচে থাকা পাক কাদা গাছের জন্য খুব উপকারী।

৩. আমরা জানি, মাটিতে অসংখ্য ক্ষতিকর ছত্রাক থাকে। যা গাছকে মেরে ফেলার জন্য যথেস্ট। তাই মাটি রেডি করার সময় কিছুটা বায়োডামা সলিট দিবেন। এটি উপকারী ছত্রাক। মাটিতে ক্ষতিকারক উপাদানগুলো মেরে ফেলে। আবার জৈব সারের কাজও করে। গাছের জন্য মাটি হবে ঝুরঝুরে, হালকা।

৪. যাই লাগান না কেন, ভালো জাতের বীজ কিনা নিশ্চিত হয়ে নেবেন। ভালো বীজে ভালো ফসল হবে। নতুবা যতই যত্ন নেন না কেন, সব পরিশ্রম বেলাশেষে জলে যাবে। বীজ থেকে নিজে চারা করা উত্তম। কারণ বাজার থেকে যে চারা কিনবেন সেটার জাত ভালো হবে সে নিশ্চয়তা কোথায়? ছত্রাকনাশক দিয়ে বীজ শোধন করে নেয়া উত্তম। পদ্ধতি হলো- ছত্রাকনাশক দেয়া পানিতে কিছুটা সময় বীজ ভিজিয়ে রাখতে হবে। ম্যানসার, মেটারিল দুটি ছত্রাকনাশক।

৫. গাছ বেশি তো ফলন বেশি- এটি ভুল ধারণা। অল্প জায়গায় বেশি গাছ লাগানো যাবে না। গাছ পাতলা করে লাগাতে হবে। বেশি লাগালে গাছ প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাবে না। একটি ফলের ক্রেটে মাত্র দুটি গাছ। একটি টবে একটি গাছ। ক্রেট বা টবে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।

৬. ছাদে মাচা দেয়া সমস্যা। কারণ ঘুঁটি থাকে না। এ জন্য ফলের ক্রেটের চারপাশে লাঠি বেঁধে সহজে মাচা দেয়া যায়। লতাপাতা জাতীয় গাছ লাগানোর পাত্র একটু গভীর হলে উত্তম। গাছের জন্য সবচেয়ে বেশি ভালো জৈব সার হলো পাতা-পচা সার, তারপর ভার্মি কম্পোস্ট, তারপর গোবর সার। পাতা-পচা সার সহজলভ্য নয়। দাম বেশি। কিন্তু ভার্মি কম্পোস্ট সহজলভ্য। মাটির সঙ্গে মিনিমাম ৪০% জৈব সার দেয়া উত্তম।
৭. নিম কীটনাশককে ক্ষতিকারক পোকা-মাকড় খুব অপছন্দ করে। এটি দিলে তারা বিরক্ত বোধ করে। গাছে বাসা বাঁধতে পারে না। প্রতি সাত দিনে একবার সব গাছের পাতায় নিম কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। মাসে একবার ইপসম সল্ট স্প্রে করে দেয়া উত্তম। একইভাবে মাসে একবার পানির সঙ্গে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড মিশিয়ে স্প্রে করা ভালো।

৮. ডাটা, পুইশাক, লালশাক, ধনেপাতা এসব লাগাতে পারেন। মাত্র ২৫ দিনে খেতে পারবেন। লালশাক লাগালে নেট দিয়ে ঘিরে দেবেন। শাকপাতা লাগালে দ্রুত আউটপুট পাবেন। যা আপনাকে প্রেরণা দেবে। পুইশাক গাছের পাতায় দাগ হলে পাতা কেটে দিন। অথবা ছত্রাকনাশক স্প্রে করেন। অথবা গাছ উঠিয়ে আবার লাগান। ইউরিয়া সার দিলে পুইশাক দ্রুত বাড়বে। শশা গাছের বৃদ্বির জন্য ডিএপি সার দিলে ভালো হবে। শশা গাছে ছাড়া ছাড়া ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হয়। খুব রোদ, গাছের গোড়ায় মালচিং করে দিয়ে উত্তম ফল মিলবে। মালচিং হলো গাছের গোড়ায় বিশেষ পলিথিন কিংবা শুকনো পাতা, খড় দিয়ে ঢেকে দেয়া।

৯. ফুল আসার পরে প্রানোফিক্স অথবা মিরাকুরান গাছের পাতায় শেষ বিকালে স্প্রে করবেন। বাসায় দুইটি গ্রুপের ছত্রাকনাশক রাখা ভালো। যেমন- ম্যানসার, মেটারিল। ১৫ দিনে একবার স্প্রে করবেন। এগরোমিন্ড গোল্ড অনুখাদ্য বা অন্য কোনো অনুখাদ্য বাসায় রাখতে হবে। মাসে কমপক্ষে একবার স্প্রে করবেন। অতিরিক্ত গরম, বৃষ্টি, খাদ্যের অভাব, গাছ রোগাক্রান্ত, আবহাওয়া দ্রুত আপডাউন করা ইত্যাদি কারণে ফুল ঝরে পড়তে পারে। আবার পরাগায়ন না হলে ঝরে পড়তে পারে। এ জন্য হাতের মাধ্যমে পরাগায়ন করতে হবে। পুরুষ ফুলের পরাগদণ্ড নারী ফুলে গর্ভে ঘষে দিতে হবে।

১০. ছাদ বাগানে গাছ মারা যাওয়ার অন্যতম কারণ পানি বেশি বা কম দেয়া। যতটুকু লাগে ঠিক ততটুকু পানি দিতে হবে। কোন গাছের কি চাহিদা, রোগ একটু স্টাডি করলে সহজে সফল হতে পারবেন।

১১. গাছের পাতার নিচে খেয়াল করবেন। বেগুন গাছের পোকা মারার জন্য সেক্স ফোরেমান ফাঁদ লাগাবেন। ডগা ছিদ্র বা ফল ছিদ্র হলে সাইপারমেত্রিন গ্রুপের কীটনাশক দিতে হবে। একটি বেগুন গাছ অনেক দিন ফল দেয়। ঢেড়স গাছ বেশি রোদ পড়ে এমন জায়গায় লাগাবেন। বেগুন, ঢেড়স, লালশাক, পুইশাক, ধনেপাতা, ডাটা শাক- এসব গাছের খুব যত্ন করতে হয় না।

১২. রসুন আর লবঙ্গ বেটে সেই পানি গাছে স্প্রে করলে পোকা কম আসবে। মরিচ গাছে নেপথলিন বেঁধে দিন, পোকা কম আসবে। পাতা কোকড়ালে ভার্মিটেক কিংবা এবোম কীটনাশক দিন। কোকড়ানো পাতা ফেলে দিন। মরিচ গাছে দশ দিন পর পর ডায়মেথট গ্রুপের (যেমন টাফগর) কীটনাশক দিলে উপকার হবে। সবকিছু করছেন, তারপরও কাজ হচ্ছে না। এক্ষেত্রে গাছের জায়গা বদল করেন, উঠিয়ে অন্যত্র লাগান।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

দৈনন্দিন

নিপাহ্‌ ভাইরাসঃ খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়

নিপাহ্‌ ভাইরাস খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়
নিপাহ্‌ ভাইরাস খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়
খেজুরের রস সংগ্রহের প্রক্রিয়া।

শীতকাল এলেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে খেজুরের রস খাওয়ার চল বেড়ে যায়। অনেকে গাছ থেকে খেজুরের কলসি নামিয়ে সরাসরি কাঁচা রস খেয়ে থাকেন।

আবার অনেকে এই রস চুলায় ফুটিয়ে সিরাপ, পায়েস বা ক্ষীর বানিয়ে খান। এছাড়া রসের তৈরি ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়, ভেলি গুড়, বালুয়া গুড়, মিছরি গুড়সহ নানা ধরণের পিঠার বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।

নিপাহ্‌ ভাইরাস আতঙ্ক

খেজুর আরব দেশের প্রচলিত ফল হলেও ওইসব দেশে খেজুর, মূলত ফল উৎপাদননির্ভর, যেখানে কিনা বাংলাদেশের খেজুর গাছ রস উৎপাদননির্ভর।

কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, বাংলাদেশে সাধারণত কার্তিক থেকে মাঘ অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ হয়ে থাকে।

দেশটির সবচেয়ে বেশি রস সংগ্রহ হয় যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে।

মূলত খেজুর গাছের ডালপালা পরিষ্কার করে, ডগার দিকের কাণ্ড চেঁছে তাতে একটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি চোঙ বসিয়ে দেয়া হয়। চোঙের শেষ প্রান্তে ঝুলিয়ে দেয়া হয় একটি মাটির হাড়ি বা কলসি।

সেই চোঙ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রস এসে জমা হতে থাকে মাটির হাড়ি বা কলসিতে। এভাবে একটি গাছ থেকে দৈনিক গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লিটার রস সংগ্রহ করা যায় বলে কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গিয়েছে।

কিন্তু গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে নিপাহ্‌ ভাইরাস আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

পরিবেশ

জেনে নিন এই মরসুমে কোন কোন ঔষধি উদ্ভিদের চাষ আপনার জন্য সেরা

দেশের বিভিন্ন রাজ্যেই বর্ষার (Monsoon 2021) প্রভাবে চলছে বৃষ্টিপাত। এসময় কৃষকেরা খারিফ শস্য (Kharif Crops) বপনে তৎপর হয়ে ওঠেন। এই খরিফ মরসুমে কৃষকভাইরা সাধারণত অঞ্চলভেদে ধান, অড়হর, সোয়াবিন সহ বিভিন্ন চাষে মনযোগ দিয়ে থাকেন ৷ তবে এসব ছাড়াও, ঔষধি গুন সমৃদ্ধ (Medicinal Crops) গাছ চাষে বর্ষায় যে কতটা লাভ হতে পারে সে সম্পর্কে অনেকেই হয়তো জানেন না৷

বিশেষ করে বর্ষাকালেই এমন বহু ঔষধি গুন সম্পন্ন গাছ রয়েছে যাদের চাষ হতে পারে লাভজনক৷

বর্ষাকালে কোন কোন ঔষধি উদ্ভিদের চাষ করা যেতে পারে অথবা এই চাষ কীভাবেই বা করা যাবে সে বিষয়ে সঠিক তথ্য না পাওয়ার কারণেই অনেকের কাছে বিষয়টি অধরা৷ চলুন এই প্রতিবেদনে এমনই কিছু গাছ নিয়ে আলোচনা করা যাক যা কৃষকদের জন্য হতে পারে লাভদায়ক৷ তবে সঠিক সময়ে, সঠিক রোপন, সেচ, কীটনাশক দেওয়ার প্রয়োজন এগুলিতে, না হলে এর ওপর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে৷

অশ্বগন্ধা –

বর্ষায় এর চাষ ভালো৷ জুন থেকে অগস্ট পর্যন্ত এর চাষ করতে পারেন৷ এর বিভিন্ন জাত রয়েছে৷ উন্নত মানের গাছের চাষে কৃষকের লাভের পরিমাণও বৃদ্ধি পেতে পারে৷ উল্লেখ্য, প্রতি হেক্টরে ৫ কিলোগ্রাম বীজ ব্যবস্থা করতে হবে৷ যদি কেউ ১ হেক্টর জমিতে অশ্বগন্ধার চাষ করতে চায় তাহলে তাকে প্রায় ৫০০ বর্গমিটারে নার্সারি তৈরি করতে হবে৷ প্রায় ১ সেন্টিমিটার গভীরে বীজ বপন করতে হবে৷

শতমূলী –

শীত বাদ দিয়ে বছরের যে কোনও সময়ে এই গাছের চাষ করতে পারেন৷ বর্ষাকালে এই চারা রোপন করলে সহজেই তা বেড়ে উঠতে থাকে৷ তবে বীজ বপনের আগে বীজ ১ দিন পর্যন্ত হালকা গরম জলে ভিজিয়ে রাখতে হয়৷

যষ্টিমধু –

জুলাই থেকে অগস্ট পর্যন্ত এর চাষ করা হয়৷ আর তাই জুন থেকেই এর প্রস্তুতি শুরু করে দেন কৃষকেরা৷ জলনিকাশি ব্যবস্থা উচ্চমানের হওয়া প্রয়োজন এই গাছ চাষের জন্য৷ মনে রাখতে হবে এর চাষের আগে জমিতে কমপক্ষে ১৫ টন গোবর সার দেওয়া প্রয়োজন, এরপরেই এটি চাষ করা উচিত৷

ঘৃতকুমারী –

এর ভালো উৎপাদনের জন্য জলনিকাশি ব্যবস্থা ঠিক রাখতে হবে৷ এই ধরনের ঔষধি গুনসম্পন্ন গাছ শীতকাল বাদ দিয়ে যে কোনও সময় চাষ করতে পারেন৷ বর্ষাকালে দূরত্ব রেখে বীজ বপন করতে হবে৷ কম সময়ের মধ্যেই ব্যবহারোপযোগী হয়ে ওঠে এগুলি৷

অগ্নিশিখা বা কলিহারি –

এটি চাষের জন্য কৃষকেরা জুন মাসেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন৷ জুলাইয়ে ভালো বৃষ্টিতে এর চাষ শুরু করা যেতে পারে৷ উল্লেখ্য, ১ হেক্টর জমির জন্য প্রায় ১০ ক্যুইন্টাল কন্দের প্রয়োজন৷ এটি চাষের আগেও জমিতে গোবর সার প্রয়োগ করে তা প্রস্তুত করে নিতে হবে৷

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

পরিবেশ

শিখে নিন টবে দারুচিনির চাষের কৌশল

পৃথিবীতে ভোজ্য মসলা যতরকম আছে তারমধ্যে দারুচিনি সবথেকে উল্লেখযোগ্য। এই প্রাচীনতম মসলা বহুদিন ধরে ওষধি হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে চলেছে। এছাড়াও খাবারে স্বাদ বাড়ানো থেকে শুরু করে, পানীয় এবং তরল মশলাদার খাবারে স্বাদ বাড়ানোর জন্যও এই দারচিনির ব্যবহার হয়। এলাচ, গোলমরিচ, লবঙ্গের সাথে সাথে দারুচিনির নামও মসলা হিসেবে একই পংক্তিতে উচ্চারিত হয়। বহু কৃষক দারুচিনির চাষ করে ভীষণভাবে উপকৃত হয়েছেন। বাজারে এই দারুচিনির চাহিদা প্রচুর পরিমানে থাকায়, এই চাষে ভালো লাভ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও সৌখিন মানুষেরাও ভালোবেসে দারুচিনির চাষ বাড়িতে করে থাকেন। দারুচিনি গাছের বাকল, ফুল, কুঁড়ি, পাতা, ফল, শেকড় সবকিছুই কাজে লেগে যায়। দারুচিনি গাছ বাড়িতে চাষ করতে গেলে ঘরে ছাদে দুই জায়গাতেই চাষ করা যায়।

মনে রাখতে হবে এই চাষ করতে গেলে উপযুক্ত পরিমানে রোদ দরকার। বাংলার জলবায়ুতে মূলত শীতকালে এই চাষ করা সবথেকে ভালো। জানুয়ারি মাসে দারুচিনি গাছে ফুল ফোটা আরম্ভ করে, এবং এই গাছের ফল পাকতে আরম্ভ করে জুলাইয়ে। সেইসময়ই ফল থেকে বীজ সংগ্রহ করে নিয়ে এসে বাগানে বা টবে রোপন করে দেওয়া উচিত।

প্রয়োজনীয় রোদ (Sunlight)

কড়া সূর্যালোক দারুচিনি জন্য প্রয়োজনীয়, তাই এটি পর্যাপ্ত রোদ পাওয়া যায় এমন জায়গায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দারুচিনি রোপন করতে গেলে রৌদ্রোজ্জ্বল স্থান যেমন জানালার ধারে, ব্যালকনি কিংবা ছাদের খালি স্থান ব্যবহার করতে হবে।

উপযুক্ত মাটি (Soil)

দারুচিনি চাষের জন্য ভাল মানের মাটি ব্যবহার করা আবশ্যক। বাগানের মাটি ব্যবহার না করাই ভালো, কেননা এতে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। অনে সময় আমরা আশেপাশ থেকে মাটি নিয়েই টব ভরে গাছ লাগানো হয়।  বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সংবেদনশীল গাছগুলোতে এই উপায় কার্যকরী হয় না। নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভাল এমন মাটি ব্যবহার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে উত্তম নিষ্কাশনযুক্ত বেলে দোআঁশ মাটি ব্যবহার করা সবথেকে উত্তম। জেনে রাখা ভালো দারুচিনি খরা একদমই সহ্য করতে পারে না। মাটির বিকল্প হিসেবে ১৫% ট্রাইকোকমপোস্টযুক্ত কোকোডাস্ট ব্যবহার করা যেতে পারে।

বাইরে চাষ করার জন্য এক মিটার (৩০ সেন্টিমিটার গভীর) পর্যন্ত গর্ত করে মাটি দিয়ে পূরণ করে নিতে হবে। ঘরের ভিতরে বা ছাদবাগানের দারুচিনি চাষের জন্য একটি বড় পাত্র প্রয়োজন হবে।

রোপন (Planting)

দারুচিনির বীজ সংগ্রহও করা যায় অথবা নার্সারি থেকে দারুচিনির গাছ কিনেও আনা যায়।

বাইরে চাষের ক্ষেত্রে

দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে ১ মিটার x ১ মিটার এবং ৩০ সেমি গভীরতায় খনন করে মাটি দিয়ে গর্তটি পূরণ করতে হবে।

ঘরের মধ্যে টবে রোপনের ক্ষেত্রে

নিচে গর্ত সহ বড় সিরামিক পাত্র (৬০ x ৫০ সেমি) ব্যবহার করতে হবে। পাত্রটি মাটি বা কোকোডাস্ট দিয়ে পূরণ করে নিতে হবে। ৩০ সেন্টিমিটার গভীরতা এবং ৩০ সেন্টিমিটার প্রস্থের একটি গর্ত তৈরি করতে একটি বাগান ট্রোয়েল ব্যবহার করে নেওয়া ভালো। বীজ ব্যবহার করলে  ১.৫ সেন্টিমিটার গভীর গর্ত তৈরি করে নেওয়া উচিত। এবার গাছটি গর্তের মধ্যে রেখে মাটি দিয়ে চাপা দিতে হবে। বীজ ব্যবহার করলে প্রতি ১.৫ সেমি গর্তে একটি করে বীজ পুঁততে হবে এবং মাটি দিয়ে বীজটি ঢেকে দিতে হবে।

মাটি সবসময় ভেজা রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণ জল দিতে হবে। দারুচিনি গাছ পাত্রে রোপন করার পর, টবের নিচের গর্ত থেকে জল বের না হওয়া পর্যন্ত জল দিতে হবে। টবের উপরের ৫ সেন্টিমিটার শুকিয়ে গেলেই আবার গাছটিকে জল দিতে হবে।

গাছের পরিচর্যা (Caring)

দারুচিনি গাছে নিয়মিত সার প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম বছর ৫০ গ্রাম টিএসপি, ৭৫ গ্রাম এমওপি ও ৫০ গ্রাম ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে। প্রতিবছর ২-৩ কেজি ট্রাইকোকম্পোস্ট ও সার প্রয়োগ শেষে একই হারে টিএসপি, এমওপি ও ইউরিয়া দিতে হবে।

দারুচিনি প্রথম ধরতে দুই থেকে তিন বছর সময় নেয় এবং তার পরে প্রতি দুই বছর পরপরই ফসল দিতে থাকে। দারুচিনি গাছ কম করে ১০-১৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। তাই একে নিয়মিত করে ছোট রাখতে হবে। পাঁচ বছর বয়সী দারুচিনি গাছ থেকে নিয়মিত দারুচিনি সংগ্রহের ডাল পাওয়া সম্ভব। দারুচিনি ব্যবহার করার জন্য যে শাখাগুলি কাটা হবে সেগুলি থেকে বাকল তুলে নিতে হবে, বাকলগুলি ব্যবহার করার আগে জলে ভালোভাবে ভিজিয়ে নেওয়া উচিত।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

আঙিনা কৃষি

টবে লাগান মিষ্টি তেঁতুল গাছ

পৃথিবীতে জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, হারিয়ে যাচ্ছে বহু প্রাণী ও উদ্ভিদ বৈচিত্র। চাষবাসের জমিরও সংকুলান ঘটছে সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে। গগনচুম্বী বাড়ি ঘিরে ফেলছে সমস্ত ফাঁকা জমিন। শখ করে মানুষ খোলা জায়গায় যে গাছ লাগবে অথবা ফল-ফুলের চারা সেই উপায়ও আর নেই। গাছ লাগানোর জন্য সামান্য জায়গাও ফাঁকা থাকছে না আর। তবে আমাদের করণীয় কী? বৃক্ষরোপন কি তবে অচিরেই বন্ধ হয়ে যাবে। বেঁচে থাকার জন্য তো গাছ লাগাতে হবেই। বাড়ির একটুকরো বারান্দা অথবা ব্যালকনিতেও সুন্দর ভাবে ইচ্ছা করলে গাছ লাগানো যায়। বাড়ির ছাদেও বানানো যায় সুন্দর বাগিচা। শহরের মানুষদের জন্য ছাদ বাগানের কোনও বিকল্পও নেই। বাড়ির মধ্যেকার ব্যালকনি অথবা ছাদের একটুকরো জমিতেও, ইচ্ছা করলে টবে চাষ করা যায় বিভিন্ন ফুলের ও ফলের গাছ।

শাকসবজি, পেয়ারা, লেবু প্রভৃতি দেশীয় গাছ টবে বাড়তে দেওয়া থেকে শুরু করে বর্তমানে বহু বিদেশী গাছের চারাও মানুষ ব্যালকনি অথবা ছাদে চাষ করছেন। তার মধ্যে থাই মিষ্টি তেঁতুল টবের চাষ পদ্ধতি হিসাবে অত্যন্ত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। প্রথমত মিষ্টি তেঁতুলের চাষ করতে গেলে, নার্সারি থেকে এই বিশেষ তেঁতুলের সঠিক বীজ নিয়ে আনতে হবে। তবে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কলম পাওয়া একটু দুষ্কর কাজ। বুঝে সঠিক চারা নিয়ে আসা বাগান মালিকের উপরেই বর্তায়।

থাই মিষ্টি তেঁতুলের ফুল থেকে ফল ধরতে প্রায় ৭ মাস সময় লাগে। বছরে দু’বার থাই মিষ্টি তেঁতুলের গাছে ফল ধরে। প্রথমবার বর্ষাকালে এবং দ্বিতীয়বার শীতকালে। এই গাছের পরিচর্যা আলাদা করে করার কোনও দরকার পড়ে না। গাছের যত্নআত্তি নিতে হয় ঠিকই, কিন্তু তা বলে, আলাদা করে কোনও বিশেষ যত্ন নিতে হয় না।

গাছ লাগানোর পদ্ধতি (Planting):

থাই মিষ্টি তেঁতুল চাষের জন্য আদর্শ মাটি হল, দো-আঁশ বা বেলে দো-আঁশ মাটি। এই দু’টি মৃত্তিকার মধ্যে যে কোনও একটি বেছে নিন। তারপর বেছে নেওয়া মাটির দুই ভাগ অংশের সাথে গোবর, ১০০ গ্রাম, টিএসপি ১০০ গ্রাম, পটাশ, ২৫০ গ্রাম, হাড়ের গুঁড়ো এবং ৫০ গ্রাম সরিষার খোল একসঙ্গে মিশিয়ে ২০ ইঞ্চি মাপের বড় টবে জল মিশিয়ে রেখে দিতে হবে। ১০ থেকে ১২ দিন পর টবের মাটি ভালো করে খুঁচিয়ে দিয়ে আরও ৪-৫ দিন রেখে দিতে হবে। ৪ থেকে ৫ দিন বাদে মিষ্টি তেঁতুলের একটি ভালো চারা ওই টবে লাগান।

পরিচর্যা(Caring):

চারা লাগানোর প্রথম কয়েক মাস তেমন যত্নের দরকার পড়বে না। অবশ্যই গাছে এই সময়টুকু পর্যাপ্ত জলের যোগান, এবং আগাছা পরিষ্কারের কাজ করতে হবে।  ছয় মাস চারা লাগানোর সময়সীমা ফুরোলেই ১ মাস বাদে বাদে গাছে সরষের খোল মিশ্রিত পচা জল দিতে হবে। মনে রাখতে  হবে খোল দেওয়ার আগে গাছের মাটি খুঁচিয়ে নিতে হবে।

রোগ দমন (Disease management):

সাধারণত থাই মিষ্টি তেঁতুল গাছে পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখা যায় না। কিন্তু বর্ষাকালে অনেক সময় তেঁতুল গাছে ছত্রাক হানা দেয়। এর ফলে তেঁতুল ফেটে যায়। এই অসুবিধার থেকে গাছকে বাঁচাতে হলে, বর্ষাকাল আসার আগেই ভালো ছত্রাকনাশক ওষুধ ১০ দিন অন্তর গাছে স্প্রে করে ছড়িয়ে দিতে হবে।

বাংলার বেজায় টক তেঁতুলের সঙ্গে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কোনও তুলনাই চলে না। অত্যন্ত মিষ্টি খেতে এই তেঁতুল থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়ায় চাষ প্রভূত পরিমাণে হলেও, আমাদের রাজ্য এই ফলের চাষ এখনও ততটা গতি পায়নি। কিন্তু আপনি আপনার ব্যালকনি অথবা ছাদে সহজেই এই থাই তেঁতুলের গাছ লাগাতে পারেন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশক: শাইখ সিরাজ
© ২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। দা এগ্রো নিউজ, ফিশ এক্সপার্ট লিমিটেডের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। ৫১/এ/৩ পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থাপথ, ঢাকা -১২০৫
ফোন: ০১৭১২-৭৪২২১৭
ইমেইল: info@agronewstoday.com, theagronewsbd@gmail.com