কৃষি হলো পৃথিবীর প্রাচীনতম এবং গুরুত্বপূর্ণ পেশাগুলোর একটি। এটি মানব সভ্যতার মৌলিক চাহিদা, যেমন খাদ্য, বস্ত্র, এবং আশ্রয় পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশের মতো কৃষিনির্ভর দেশে কৃষি শুধুমাত্র খাদ্যের যোগান দেয় না, এটি অর্থনৈতিক উন্নয়ন, কর্মসংস্থান এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায়ও সহায়তা করে।
কৃষির গুরুত্ব
কৃষি একটি দেশের অর্থনীতি, সমাজ, এবং পরিবেশের অন্যতম প্রধান ভিত্তি। এটি খাদ্য উৎপাদন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, এবং জাতীয় উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো কৃষিনির্ভর দেশে কৃষির গুরুত্ব অপরিসীম।
কৃষির গুরুত্বের বিভিন্ন দিক
১. খাদ্য নিরাপত্তা
কৃষি মানুষের মৌলিক চাহিদা, যেমন খাদ্য, সরবরাহ করে।
ধান, গম, ভুট্টা, শাকসবজি, এবং ফলমূল উৎপাদন খাদ্য সংকট মোকাবিলায় সহায়ক।
২. অর্থনীতিতে অবদান
বাংলাদেশের মোট জাতীয় উৎপাদনের (GDP) একটি বড় অংশ কৃষি খাত থেকে আসে।
কৃষি পণ্য রপ্তানি দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সহায়তা করে।
৩. কর্মসংস্থান
দেশের বেশিরভাগ মানুষ সরাসরি কৃষি পেশার সাথে জড়িত।
কৃষি থেকে প্রাপ্ত কাঁচামাল ব্যবহার করে শিল্পখাতে কর্মসংস্থান তৈরি হয়।
৪. দারিদ্র্য বিমোচন
কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর আয় বৃদ্ধি করা যায়।
এটি দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৫. শিল্পের কাঁচামাল সরবরাহ
পাট, তুলা, চিনি, এবং তেলবীজের মতো কৃষি পণ্য শিল্পখাতে কাঁচামাল সরবরাহ করে।
এসব পণ্যের ওপর ভিত্তি করে নতুন শিল্প গড়ে ওঠে।
৬. পরিবেশগত ভারসাম্য
সঠিক কৃষি চর্চা মাটির উর্বরতা রক্ষা এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে সাহায্য করে।
জৈব কৃষি এবং সেচ ব্যবস্থার উন্নতি পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন নিশ্চিত করে।
৭. রপ্তানি এবং বৈদেশিক মুদ্রা
বাংলাদেশ থেকে পাট, চা, এবং অন্যান্য কৃষি পণ্য রপ্তানি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সাহায্য করে।
৮. সংস্কৃতি এবং জীবনযাত্রা
কৃষি আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
দেশের গ্রামীণ সমাজ কৃষির ওপর নির্ভরশীল।
কৃষির ধরন
কৃষি মূলত মানুষের খাদ্য, পোশাক, এবং জীবিকার উৎস। এটি উৎপাদন পদ্ধতি, পরিবেশ, এবং অঞ্চলভিত্তিক বৈচিত্র্যের কারণে বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। নিম্নে কৃষির বিভিন্ন ধরন তুলে ধরা হলো:
১. ফসলি কৃষি (Crop Farming)
ফসলি কৃষি হলো কৃষির সবচেয়ে প্রচলিত ধরন, যেখানে প্রধানত বিভিন্ন ধরনের শস্য উৎপাদন করা হয়।
ধান, গম, ভুট্টা: প্রধান খাদ্যশস্য।
ডাল, তেলবীজ: প্রোটিন ও চর্বির উৎস।
শাকসবজি ও ফলমূল: পুষ্টির জন্য।
২. বাণিজ্যিক কৃষি (Commercial Agriculture)
এ ধরনের কৃষিতে কৃষি পণ্য উৎপাদন করা হয় ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে।
চা, পাট, তুলা: শিল্পের কাঁচামাল।
চিনি, তামাক: অর্থকরী শস্য।
৩. জৈব কৃষি (Organic Farming)
জৈব পদ্ধতিতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের পরিবর্তে প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে কৃষি করা হয়।
পরিবেশবান্ধব।
স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য উৎপাদন।
৪. সেচনির্ভর কৃষি (Irrigated Agriculture)
যেসব অঞ্চলে প্রাকৃতিক বৃষ্টিপাত কম হয়, সেখানে সেচের মাধ্যমে কৃষি কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
ধান, গম এবং অন্যান্য জলসেচনির্ভর ফসল।
৫. শুষ্ক কৃষি (Dryland Farming)
যেসব অঞ্চলে বৃষ্টিপাত কম এবং পানির অভাব, সেখানে শুষ্ক কৃষি প্রচলিত।
যেমন: বাজরা, জোয়ার।
৬. মিশ্র কৃষি (Mixed Farming)
এখানে একইসাথে ফসল উৎপাদন, পশুপালন, এবং মৎস্যচাষ করা হয়।
অধিকতর লাভজনক।
বহুমুখী পণ্য উৎপাদনের সুবিধা।
৭. পশুপালন ও হাঁস-মুরগি পালন (Livestock and Poultry Farming)
গরু, ছাগল, মহিষ, হাঁস-মুরগি পালনের মাধ্যমে দুধ, ডিম, এবং মাংস উৎপাদন করা হয়।
পুষ্টি ও আয় বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ।
৮. মৎস্য চাষ (Aquaculture)
পুকুর, নদী বা জলাশয়ে মাছ চাষকে মৎস্য চাষ বলা হয়।
মাছ প্রধান প্রোটিন উৎস।
অর্থনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে।
৯. বনায়ন ও সামাজিক বনায়ন (Forestry and Agroforestry)
বনায়নের মাধ্যমে কাঠ, ফলমূল এবং পরিবেশ সংরক্ষণ করা হয়।
কার্বন নিঃসরণ কমায়।
পরিবেশ রক্ষা করে।
১০. স্থায়ী কৃষি (Sustainable Agriculture)
টেকসই কৃষি পরিবেশগত এবং অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষার মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদে কৃষি উৎপাদনশীলতা বজায় রাখে।
বাংলাদেশের কৃষিতে এ সকল ধরণের চাষাবাদের সমন্বয় রয়েছে। অঞ্চলভেদে কৃষির ধরন পরিবর্তিত হয়, তবে প্রতিটি ধরণের গুরুত্ব রয়েছে কৃষির টেকসই উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে।
কৃষির আধুনিকীকরণ
কৃষির আধুনিকীকরণ
কৃষির আধুনিকীকরণ হলো কৃষি উৎপাদনকে উন্নত প্রযুক্তি, যন্ত্রপাতি, এবং নতুন উদ্ভাবন দ্বারা সহজ ও কার্যকর করা। এটি ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি, সময় ও শ্রম সাশ্রয়, এবং কৃষিকে আরও লাভজনক করার জন্য একটি অত্যাবশ্যক প্রক্রিয়া। বাংলাদেশের মতো কৃষিনির্ভর দেশে কৃষির আধুনিকীকরণ টেকসই উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি।
কৃষির আধুনিকীকরণের উপাদানসমূহ
১. উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার
কৃষি যন্ত্রপাতি: ট্রাক্টর, কম্বাইন হারভেস্টার, রোটাভেটর ইত্যাদি ফসলের চাষ এবং সংগ্রহকে সহজ ও দ্রুততর করে।
ড্রোন: জমির স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ এবং কীটনাশক প্রয়োগে ব্যবহৃত হয়।
সেচ ব্যবস্থার উন্নয়ন: ড্রিপ সেচ এবং স্প্রিংকলার সেচ পদ্ধতি।
২. উন্নত বীজের ব্যবহার
উচ্চফলনশীল ও রোগ প্রতিরোধী জাতের বীজ ব্যবহার ফসল উৎপাদন বাড়ায়।
জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়ানোর জন্য বিশেষ জাতের বীজ উদ্ভাবন।
৩. জৈব কৃষি এবং জৈব সার
রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের পরিবর্তে জৈব সার ও প্রাকৃতিক কীটনাশকের ব্যবহার।
মাটির স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ।
৪. ডিজিটাল প্রযুক্তি
স্মার্টফোন অ্যাপ: আবহাওয়ার পূর্বাভাস, বাজারমূল্য, এবং কৃষি সংক্রান্ত পরামর্শ সহজলভ্য করে।
জিপিএস এবং সেন্সর প্রযুক্তি: জমি পর্যবেক্ষণ এবং সঠিক চাষ পদ্ধতি নির্ধারণ।
৫. গবেষণা ও উদ্ভাবন
ফসলের নতুন জাত উদ্ভাবন এবং আধুনিক চাষ পদ্ধতি চালু করা।
কীটপতঙ্গ এবং রোগ প্রতিরোধে নতুন প্রযুক্তি ও পদ্ধতি।
৬. কৃষিতে শিক্ষার প্রসার
কৃষকদের প্রশিক্ষণ এবং আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি।
মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ সেবা।
৭. সেচ ব্যবস্থার উন্নয়ন
পানির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে আধুনিক সেচ পদ্ধতির প্রয়োগ।
ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমিয়ে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ।
৮. যান্ত্রিকীকরণ
চাষ, বপন, সেচ, এবং ফসল কাটার জন্য স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রপাতি ব্যবহার।
সময় ও শ্রম সাশ্রয় হয়।
আধুনিকীকরণের সুবিধাসমূহ
উৎপাদন বৃদ্ধি: অধিক ফসল উৎপাদন এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত।
শ্রম সাশ্রয়: যন্ত্রপাতির ব্যবহার শ্রমের প্রয়োজনীয়তা কমায়।
সময় বাঁচায়: আধুনিক পদ্ধতি এবং যন্ত্রপাতি দ্রুত ফলাফল দেয়।
পরিবেশ রক্ষা: জৈব চাষ এবং সঠিক প্রযুক্তি পরিবেশ দূষণ কমায়।
কৃষকদের আয় বৃদ্ধি: উৎপাদন ও বাজারমূল্যের উন্নয়নের ফলে কৃষকদের আয় বাড়ে।
বাংলাদেশে আধুনিকীকরণের চ্যালেঞ্জ
কৃষকদের আর্থিক সক্ষমতার অভাব।
প্রযুক্তি সম্পর্কে সচেতনতার ঘাটতি।
প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সহজলভ্য না হওয়া।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব।
কৃষির আধুনিকীকরণ বাংলাদেশের অর্থনীতি ও খাদ্য নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক পরিকল্পনা, আধুনিক প্রযুক্তির সহজলভ্যতা, এবং কৃষকদের জন্য প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত করা গেলে কৃষি খাত আরও উন্নত হবে এবং জাতীয় অর্থনীতিতে আরও বড় ভূমিকা রাখবে।
কৃষির চ্যালেঞ্জ
কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতি, খাদ্য নিরাপত্তা, এবং জীবনযাত্রার প্রধান ভিত্তি হলেও এটি বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। কৃষির চ্যালেঞ্জগুলো টেকসই উন্নয়ন ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করতে বড় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে।
কৃষির প্রধান চ্যালেঞ্জ
১. জলবায়ু পরিবর্তন
বন্যা, খরা, এবং ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি।
অনিয়মিত বৃষ্টিপাত ও তাপমাত্রা ফসল উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
২. জমির অবক্ষয়
কৃষি জমি প্রতিনিয়ত কমছে, যার প্রধান কারণ শিল্পায়ন, নগরায়ণ এবং আবাসন প্রকল্প।
অপরিকল্পিত কৃষি পদ্ধতির কারণে মাটির উর্বরতা হ্রাস পাচ্ছে।
৩. পানির সংকট
সেচের জন্য প্রয়োজনীয় পানির অভাব।
ভূগর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত ব্যবহার এবং নদী ও খালের জলস্তর কমে যাওয়া।
৪. আর্থিক সংকট
ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের পুঁজি এবং ঋণ প্রাপ্তিতে অসুবিধা।
কৃষি যন্ত্রপাতি এবং প্রযুক্তির উচ্চমূল্য।
৫. আধুনিক প্রযুক্তির অভাব
অনেক কৃষক এখনও প্রথাগত কৃষি পদ্ধতিতে নির্ভরশীল।
আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি এবং যন্ত্রপাতি ব্যবহার সম্পর্কে সচেতনতার অভাব।
৬. কীটপতঙ্গ এবং রোগের আক্রমণ
ফসলের ক্ষেতে কীটপতঙ্গ এবং বিভিন্ন রোগের প্রকোপ।
কীটনাশক ও বালাইনাশকের সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে জ্ঞানের অভাব।
৭. বাজার ব্যবস্থার সমস্যা
কৃষিপণ্যের সঠিক মূল্য না পাওয়া।
বাজারজাতকরণে মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাব।
৮. কৃষি শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণের অভাব
কৃষকদের আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি সম্পর্কে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ না থাকা।
প্রযুক্তি ব্যবহার এবং ফসল ব্যবস্থাপনায় দক্ষতার অভাব।
৯. প্রাকৃতিক সম্পদের অবক্ষয়
বনজ সম্পদ এবং জীববৈচিত্র্যের অবক্ষয়ের কারণে কৃষি জমির উপর চাপ বাড়ছে।
মাটির লবণাক্ততা বৃদ্ধি এবং ভূমিক্ষয়ের মতো সমস্যা।
১০. সরকারী সহায়তার অভাব
কৃষি ঋণ এবং ভর্তুকি প্রদানে জটিলতা।
কৃষিখাতে পর্যাপ্ত বিনিয়োগের অভাব।
কৃষির এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে হলে সঠিক পরিকল্পনা, প্রযুক্তির ব্যবহার, এবং কৃষকদের জন্য আর্থিক সহায়তা ও প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে। সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থাগুলোর সম্মিলিত উদ্যোগে কৃষি খাতের সমস্যাগুলো সমাধান করা গেলে এটি দেশের অর্থনীতি এবং খাদ্য নিরাপত্তায় আরও বড় ভূমিকা রাখতে পারবে।
কৃষি শুধু জীবিকা নয়, এটি আমাদের সংস্কৃতি, অর্থনীতি, এবং টেকসই উন্নয়নের ভিত্তি। সঠিক পরিকল্পনা, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, এবং সরকারি সহায়তা নিশ্চিত করা গেলে কৃষি খাত আরও সমৃদ্ধ হবে এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করবে।
ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলায় এ বছর রোপা আমন ধানে বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষকের মুখে ফুটেছে তৃপ্তির হাসি। এবার আবহাওয়া ধান চাষে অনুকূলে থাকায় ধানের ফলন ভালো হয়েছে।
সরেজমিনে উপজেলার চতুল ইউনিয়নের বিল দাদুরিয়া ও ধুলপুখুরিয়া গ্রামের বিস্তীর্ণ মাঠে আমন ধানের ক্ষেত চোখে পড়ে। বেশিরভাগ ক্ষেতের ধান পাকতে শুরু করেছে। এবছর রোপা আমন ধানের উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে একর প্রতি প্রায় ৫৫ থেকে ৬০ মণ। একর প্রতি খরচ হয়েছে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। উপজেলার ধুলপুকুরিয়া গ্রামের ধান চাষি মো. শামীম মোল্লা বলেন, এক একর জমিতে হাইব্রিড ধানের চাষ করেছি। একর প্রতি ৮০ মণ ফলন আশা করছি, খরচের চেয়ে দুই ভাগ বেশি লাভ হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ প্রীতম হোড় বলেন, এ বছর উপজেলার একটি পৌরসভাসহ ১১টি ইউনিয়নে ১৩ হাজার চারশ’ ৪২ হেক্টর জমিতে আমনের চাষ করা হয়েছে। পরমাণু কৃষি গবেষণা ইন্সটটিউিট (বিনা) র্কতৃক উদ্ভাবিত স্বল্পজীবনকাল বিশিষ্ট বিনা ধান-১৬, বিনা ধান-১৭ জাতগুলো আগাম পাকতে শুরু করছে। হাইব্রিড ধান ছাড়াও উচ্চ ফলনশীল ব্রিধান-৭৫, ব্রিধান-৮৭ জাতের বেশিরভাগ ধান কাটা-মাড়াই আগামী ৫-৭ দিনের মধ্যে শুরু হবে। ধানের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষে এবং মাঠ র্পযায়ে পোকামাকড়ের উপদ্রব কমাতে নিয়মিত আলোক ফাঁদ স্থাপন করাসহ কৃষিবিভাগ কৃষকদের পরার্মশ দিয়ে যাচ্ছে।
জোয়ার-ভাটা, স্বাদু-নোনাপানির সঙ্গে সমুদ্রসংলগ্ন নদী হওয়ায় দেশের সবচেয়ে বৈচিত্র্যপূর্ণ মাছ পাওয়া যায় সাতক্ষীরা এবং এর আশপাশের এলাকায়। এসব মাছের অধিকাংশ রাজধানীর বাজার পর্যন্ত আসে না। সেখানকার স্থানীয় ও আশপাশের জেলা-উপজেলার হাটবাজারে বিক্রি হয় এই মাছ।
খুলনা বাজারে বিক্রেতারা কলাপাতা নিয়ে বসেছেন মাছ বরণ করতে। এসেছে জাভা, ভোলার মতো মাছ
হাটবাজার মানেই হুলুস্থুল ব্যাপার। হাটসংশ্লিষ্ট খেয়াঘাটের চরিত্রটা আবার একটু আপন আপন। তাড়া থাকলেও মানুষ দুদণ্ড দাঁড়িয়ে কথা বলে। চা-পান খায়। শ্যামনগরের প্রণব মণ্ডল ওই করতে গিয়ে ধরাটা খেলেন। ভালোই যাচ্ছিলেন লম্বা-চওড়া হাসিমুখে। নীলডুমুরের নওয়াবেঁকী ঘাটে উঠতেই কয়েকজন মাছের দাম জানতে চাইল। ভীষণ খুশি মানুষটা একটু থেমে গর্বের সঙ্গে জানালেন, হাজার টাকায় নিয়েছেন শ্বশুরবাড়ির জন্য। প্রাগৈতিহাসিক কালের পাথুরে রঙের শরীর আর পৃথক অঙ্গের মতো বসিয়ে রাখা কুদেমার্কা চোখের খুদে তিমির এমন সংস্করণ আগে দেখিনি। সরল মনে মাছের নাম জানতে চাইলাম। ওটা ‘চরখাদা’ শুনেই নদীর খাদ থেকে লাফিয়ে উঠলেন একজন। বিচিত্র অঙ্গভঙ্গি করে বললেন, ‘এহ্, নাম জানে না, দ্বিগুণ দামে মাছ কিনে কত খুশি। এর নাম “মোচড়”।’ প্রণব মণ্ডলের হাসিটাই দুমড়েমুচড়ে গেল এবার।বিজ্ঞাপনবিজ্ঞাপন
নওয়াবেঁকীর ঘাটে চরখাদা হয়ে গেল মোচড়
ছোট জালে নদীর কুলীন মীন
সুন্দরবনের উপকূলঘেঁষা জনপদের মাছেরা স্বভাবে ও বিচরণে দেশের অন্য সব এলাকার মাছেদের সঙ্গে কৌলীন্য প্রথা বজায় রেখে চলেছে সব সময়ই। তবে স্থানীয় মানুষের মাছের নাম না জানা হলো মাঝির সেই সাঁতার না জানা গল্পের মতো। প্রণব মণ্ডল তাঁর শোক কবে ভুলবেন জানি না, আমি উৎসুক হলাম এমন আরও কিছু মাছের সঙ্গে পরিচিত হতে। বৃক্ষের পরিচয় ফলে হলে নদীর পরিচয় মাছে হওয়া উচিত। সুন্দরবন মানেই আঠারো ভাটির বারো রকম। বাদাবনের মাছ দেখতে হলে যাওয়া উচিত ছোট জাল দিয়ে শুধু পরিবারের জন্য মাছ ধরা মানুষদের কাছে। নদীর কিনারে ফেলা তাদের ছোটখাটো ঝাঁকি বা ঠেলাজালে বড় মাছের কমতি হলেও বৈচিত্র্যে ভরন্ত। শ্যামনগরের নীলডুমুর হয়ে গাবুরার শেষ মাথায় চাঁদনীমুখা একেবারে বাদাবনের প্রতিবেশী গ্রাম। গনগনে দুপুরে উপস্থিত হলেই এ অঞ্চলের ‘গনগনে’ মাছের সঙ্গে দেখা হওয়ার নিশ্চয়তা দেওয়া যাচ্ছে না, তবে যাদের দেখা পাবেন, তাদের ঠিকুজি মুখস্থ কঠিন। এখানে খোলপেটুয়া পেটমোটা। মাঝেমধ্যেই সে তেড়ে আসে লোকালয়ে। দক্ষিণে সামান্য আগালেই রেসের গতিতে বঙ্গোপসাগরের দিকে দৌড়াচ্ছে আড়পাঙাশিয়া। পাঙাশের কদর একটু কম হলেও সমগোত্রীয় মাসতুতো-পিসতুতো মীন ভাইবোন ভাঙান, কাইন, পারশের আদর আছে। যদিও ভাঙান মাছের সঙ্গে রুইয়ের স্বাদের ব্যবধান পাওয়া কঠিন। কপোতাক্ষ, খোলপেটুয়া, আড়পাঙাশিয়ার মতো দাপুটে নদ-নদীর পানি সময়ভেদে নোনা-স্বাদু—দুই স্বাদ হওয়ায় বাস্তুতন্ত্রের প্রভাবে বৈচিত্র্য পেয়েছে কুলীন মাছেরা।বিজ্ঞাপন
শ্যামনগেরর গাবুরার চন্দ্রমুখায় মাছ উৎসব
সুন্দরবনের জাভা আর সুন্দরী পায়রা
চন্দ্রমুখার কাছে তখন সদ্যই জাল টেনে উঠেছেন কয়েকজন। একই জালে নানা রকম মীনশাবক আসায় জড়ো হলো একদঙ্গল ছেলেমেয়ে। রুপচাঁদার ধরন কিন্তু গায়ের রংটা শ্যামলা মেয়ের মতো একটা চ্যাপ্টা মাছের। চাপা রং বলেই কি না নিজেকে সুন্দর করার প্রচেষ্টায় শরীরে নানা বর্ণের নকশা তৈরি করেছে ‘পায়রা’। তার নামে পাখি আর বন্দর দুই-ই আছে। পাওয়াও যায় দুরকম চাঁদা আর অলি পায়রা। এর পাশেই রাখা রঙিন তেলাপিয়া, কথ্য সম্বোধনে ফাইশ্যা হচ্ছে ফেসা, আছে খয়রা, পারশে। ধবধবে একটা মাছ কাদায় গড়াগড়ি দিয়েছে ধরে আনার শেষ সময়। শৈশবকালে মাছ ও মানুষ দুটোরই কাদা মাখার অবাধ স্বাধীনতা থাকে। এ মাছের নাম শুনে আমার চোখও জ্বলজ্বল করে উঠল। সুন্দরবনের সবচেয়ে দামি মাছগুলোর মধ্যে অন্যতম ‘জাভা’। বড় হলে এর কেজি ১০ হাজার টাকায়ও বিক্রি হয়। তবে জাভার রূপ-গুণের গোপন রহস্য থাকে গোপনে। পেটের মধ্যে মূল্যবান ফুসফুস, যেটা থেকে তৈরি হয় আরও মূল্যবান ওষুধ। বাতাসযন্ত্রটা বের করে নিলে এর সঙ্গে নছি মাছের বিশেষ পার্থক্য নেই দামে। আফসোস যে জাভার পরিণত খোলতাই চেহারাটা দেখা হলো না। কী আর করা যাবে, এখন তো আর হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর সেই হাজার বছর আগেকার রুপা রাজার নির্দেশ মেনে একমণি কম ওজনের মাছ ধরা হয় না (বেণে মেয়ে উপন্যাস)।
গাবুরার চন্দ্রমুখায় ছোট জালে ধরা মাছ
সাতক্ষীরার বিনেরপোতায় গামবুট আর চিংড়ির মাথা
ভাগ্য ভালো, এই শিশু মাছদের সঙ্গে দেখা হলো। স্থানীয় মানুষ ধরে না আনলে বাজারে এ বয়সের মৎস্যপুত্র-কন্যাদের দেখা মেলে না। বাজার বলতেই বিপণনটা দেখতে ইচ্ছা হলো।
সাতক্ষীরার বিনেরপোতা বাজারে আসে সব রকম মাছ
সাতক্ষীরার বিনেরপোতা মাছের আড়তটা সদর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে। সেখানে দেখবেন, আড়তের নোনাপানি থেকে পা বাঁচাতে গামবুট পায়ে হাঁটাহাঁটি করছে। সকাল আটটার দিক থেকে ট্রাক আসা শুরু হলে রীতিমতো মচ্ছব। এ বাজারে ঘোরাফেরা করলে সমুদ্র থেকে ঘের, নদী থেকে পুকুরে চাষ করা সব মাছের সঙ্গে দেখা হবে। বড় সমস্যা হচ্ছে, মাছের নাম জানা। এক দোকানে শুনলেন ‘ভাঙান’ তো পাশের দোকানে বলবে ‘সেলুর ভাঙন’। ভোলা মাছের নাম শুনে খুশি হয়ে আগাতে আগাতেই দেখি আরেক দোকানে ডাকছে ‘পোয়া’ নামে। এখানে মুফতে পাওয়া যাবে বড় চিংড়ির বিচ্ছিন্ন মাথাও। এসব বিক্রি হবে আলাদাভাবে। কেজিপ্রতি মাত্র ৭০ টাকা। অথচ মাথার আকার দেখেই বোঝা যাচ্ছে, আসল মাছ কেজিপ্রতি কমসে কম হাজার টাকার কমে বললে বিক্রেতা রাগ হতে পারেন। এ বাজার বিচিত্র। এখানে মাছ পাল্লা হিসেবে নিলামে তোলা হয়। আধা কেজি, এক কেজির সুযোগ নেই। অধিকাংশ ক্রেতা আসেন নিজের দোকানের জন্য মাছ নিতে। তবে এর মধ্যেই গোপনে একজন নিয়ে বসেছেন কিছু খুদে কাঁকড়া।
নানা বয়সী কাঁকড়া হচ্ছে কালো সোনা
কালো সোনার কাঁকড়া
কাঁকড়ার প্রসঙ্গ আসায় দুটো কথা না বললেই নয়। পানির ভারসাম্য রক্ষায় খুবই দায়িত্বশীল সে। ঝরে যাওয়া পাতা নিজ দায়িত্বে কুচি কুচি করে কেটে মাছেদের খাবার তৈরি করে প্রাকৃতিক রন্ধনশিল্পীর খেতাব পেয়েছে কাঁকড়া। অবশ্য সন্ন্যাসী কাঁকড়া আবার ভয় পেলেই শামুকখোলে আশ্রয় নেয়। রপ্তানিযোগ্য কাঁকড়ার পুলসিরাত অতিক্রম কায়ক্লেশের। নারী কাঁকড়া ১০০ গ্রাম আর পুরুষ কাঁকড়া ১৫০ গ্রামের কম ধরা নিষেধ। রপ্তানিযোগ্য কাঁকড়ার মূল্য নির্ধারণ হয় ওজনে। যদিও কাঁকড়াদের অঙ্ক করার অদূর ভবিষ্যতেও সম্ভাবনা নেই, তবে তাদের মগজের পরিমাণ পরীক্ষা হয় রীতিমতো টর্চ জ্বালিয়ে। কাঁকড়া যে চিংড়িকে এক দৌড়ে পেছনে ফেলে দিয়ে সামনে এগিয়েছে, তা নিয়ে আর নতুন কিছু বলার নেই। তবে খামারে ওদের বড় হওয়ার ধরনটা একটু সঙিন। তাদের নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত খেলার সঙ্গী ছাড়া একা একাই বড় হতে হয়। এ অঞ্চলের নদী আর বননির্ভর মানুষের হিসাবটা ভিন্ন। তাঁরা ভাটিগা আর গোণের কালের হিসাব করে। সে হিসেবে গোণের কাল এলে কাঁকড়ারা ডাঙার দিকে উঠে আসতে চায়।বিজ্ঞাপন
সুন্দরবনের মূল্যবান জাভা মাছ।
খুলনার বাজারে কলাপাতার ডালি
পরিণত জাভা না দেখে এ অঞ্চল থেকে ফিরে যাওয়া অনুচিত। তাকে খুঁজতে রওনা হলাম খুলনায়। সকাল সকাল গেলে নিউমার্কেটের বাজারে পাবেন মাছ বরণের আয়োজন। ককশিটের বাক্সে বরফ রেখে ডালায় কলাপাতা বিছিয়ে বসে আছেন বিক্রেতারা। কলাপাতায় কাঁচা মাছ ঠান্ডা থাকে। কিছুক্ষণ পরই এ অঞ্চলের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মাছ আসবে ঘাট হয়ে বাজারে। সে অপেক্ষা করতে করতে দেখা হলো সেই কুলীন জাভার সঙ্গে। বিক্রেতা মাছের পেট থেকে বাতাসযন্ত্র বের করে দেখালেন। এই সেই মহার্ঘ, যার জন্য দামের ও রকম তফাত। পরিণত জাভা খুলনার বাজারে শুয়ে আছে মৎস্যকন্যার মতো আয়েশে। পাশেই পাওয়া গেল হলুদ কেশরের ভোলা মাছকে। দেখতে ছোটখাটো হলেও ভোলা নামে জেলা, এ নামে নদী থাকায় তারও দেমাক কম নয়। মুখ ঘুরিয়েই রইল সে।
ছবি: সাদিয়া মাহ্জাবীন ইমাম
মাছ খুঁজতে হলে বাজার একটা বড় ব্যাপার। কোন দোকানের চাল খাচ্ছেনের মতো অবস্থা। এখানকার সন্ধ্যা বাজার অসূর্যম্পশ্যা। পথের পাশ দিয়ে বাতি জ্বালিয়ে ডালা নিয়ে যেন লাইন টেনে বসেছেন বিক্রেতারা। একগাল হেসে পরিচয় করিয়ে দিলেন একজন ‘তাইড়্যাল’ শুদ্ধ ভাষায় তাড়িয়ালের সঙ্গে। প্রায় ‘ভোলা’ মাছের কাছাকাছি রূপ। গুণ কেমন জানি না, তবে একে বেশি ঝাঁজে রাঁধতে নেই। মাছবাজারে ঘুরলে আপনার দশাও সাতক্ষীরার প্রণব মণ্ডলের মতো হতে পারে। এ বলল পারশে তো কিছু দূর গিয়েই শুনবেন সেটার আরেক নাম। এখানে বলল ভাঙন তো ওখানে বলবে এটা ‘আধা ভাঙন’।
সন্ধ্যা বাজারে চিংড়ি ছিল চার রকমের
তাড়িয়াল দেখে তাড়া নিয়ে ফেরার পথে সেই কুলীন হয়েও সর্বজনে মিশে যাওয়া ‘সাদা সোনা’র থালা চোখের সামনে। বাগদা, গলদা, চাকা আর হরিণা চিংড়ি। এমনি তো আর অস্থির মানুষকে চিংড়ির মতো ছটফট করছে বলা হয় না। না হলে বোকার মতো নোনাপানি সয়ে নিয়ে কৃষকের ক্ষতি হতে দেয়? এখন নিজের দৌড়েই কাঁকড়ার কাছে রানার্সআপ। এখান থেকে বের হয়ে এলাম দ্রুত। সাতসকালে দাকোপে অভিযান আছে। এ অঞ্চলে একটু দূরেই যাওয়া মানে খেয়াঘাটের সঙ্গে দেখা। আর ঘাট মানেই নতুন নতুন মাছ আর ভিন্ন মুখে এক মাছের অনেক রকম নাম।
ভদ্রার মেনির কাছে পানি আর কাদা দুই ই প্রিয়
ভদ্রা নদীর রঙিন মেনি
কে জানত দাকোপের কালাবগি যাওয়ার পথে তারই সঙ্গে দেখা হবে, যে আছে অপেক্ষা করে গায়ে রং নিয়ে। তাঁর সমস্ত শরীরে আলোর দ্যুতি। সে এ অঞ্চলের খুদে ক্ষেত্রাধিপতি। ভদ্রা নদীর খেয়াঘাটে অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে প্রায় পায়ের কাছ দিয়ে লাফিয়ে গেল নীল আলোর ছটা। সে কাদা ও পানি উভয়েই সমান চটপটে। ক্যামেরা তাক করার আগেই এক ফুটের লাফ। গাল ফোলানো সে ‘মেনি’। ওকেই আবার কেউ কেউ ডাকে মেনু বা মিনু নামে। অনেকেই চেনে ইংরেজি ‘মাডস্কিপার’ হিসেবে। মেঘলা দিন না হলে আরও বেশি জেল্লাই দেখাত রঙের। তাঁর এই বিচিত্র রং সুন্দরবনের বৈচিত্র্যময় বাস্তুসংস্থানের প্রতীক। স্কুলের ব্যাক বেঞ্চের শিশুর মতোই বুদ্ধিতেও সেরা। ফোলা মুখে পানি ছিটিয়ে ঝুঁকে থাকা পাতায় বসা পোকাকে সশস্ত্র হামলা চালিয়ে ঘায়েল করে মেনি।
সুন্দরবনের নদী মানে মাছের বাস্তুসংস্থান
বাদাবনে নদীর খাঁড়ি থেকে সরু গোপন নালা, শ্বাসমূলের ফাঁকে ফাঁকে লুকোনোর আস্তানা, জোয়ারে উঠে ভাটায় নেমে যাওয়ার অভিজ্ঞতা সেই সঙ্গে স্বাদু-নোনাপানির সঙ্গে সহাবস্থানে সুন্দরবনের মিনেরা বাংলাদেশের উচ্চবংশীয়। রহস্যময় সুন্দরবনের অলিগলির সন্ধান জানে ওরা। চোখেমুখে সে গর্ব স্পষ্ট এই লোকালয়ের মাছেদের। বিশ্বাস না হলে নিজেই একবার ঘুরে দেখতে পারেন। সুন্দরবন ভালোবাসা মানুষ যদি বাদাবনের নদী, মাছ না চেনে, তাহলে আকবর বাদশার সঙ্গে হরিপদ কেরানির কোনো ভেদ থাকে না। ভালো কথা, আকবর বাদশা কিন্তু সত্যি সত্যি মাছ খেতে ভালোবাসতেন। আইন-ই-আকবরি আর ইম্পিরিয়াল গেজেটে উল্লেখ আছে, প্রাচীন ভারতবর্ষের ১৩টি মহাবন ছিল। এরই একটি আঙ্গেরীয়। মতান্তরে সে আঙ্গেরীয়রই অংশ আজকের সুন্দরবনের অরণ্য। মাছে-ভাতে বাঙালির পাতে নাম না জানা মাছের টুকরো উঠে এলে নিজের সম্মান থাকে?
কিছু কৌশল অবলম্বন করলে খামারে মুরগির বাচ্চার মৃত্যু অনেকাংশে কমিয়ে আনা যায়। নিচে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হল-
১। খামারে মুরগির বাচ্চার মৃত্যুর ঝুঁকি কমানোর জন্য থাকার স্থান যাতে বেশ বড় হয় সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। মুরগির বাচ্চার থাকার জায়গা কম হলে বাচ্চাগুলো গাদাগাদি হয়ে মারা যেতে পারে। গাদাগাদি হওয়া থেকে বাচ্চাগুলোকে রক্ষা করতে বেশি পরিমাণ জায়গা বরাদ্দ রাখতে হবে।
২। বাচ্চার থাকার স্থানের তাপমাত্রা যেন খুব বেশি কিংবা খুব কম না হয় সেদিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে। বাচ্চার শরীরের সাথে বাইরের তাপমাত্রার বড় কোন পরিবর্তন হলে অনেক সময় বাচ্চা মারা যেতে পারে। এজন্য মুরগির বাচ্চা সহনীয় তাপমাত্রায় মধ্যে রাখতে হবে।
৩। খামারে বাচ্চার মৃত্যুর হার কমানোর জন্য বাচ্চা পরিবহণ করার সময় এমনভাবে পরিবহণ করতে হবে যাতে কোনভাবেই মুরগির বাচ্চাগুলো আঘাত না পায়। পরিবহণের সময় বাচ্চা আঘাত পেলে পরে বাচ্চা মারা যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
৪। খামারে মুরগির বাচ্চার মৃত্যু ঝুঁকি কমিয়ে আনার জন্য খামারে প্রয়োজনীয় আলো ও বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে।
৫। খামারে বাচ্চার মৃত্যুর হার কমানোর জন্য জটিল রোগ থেকে বাচ্চাগুলোকে রক্ষা করতে হবে। কোন কারণে বাচ্চাগুলো রোগে আক্রান্ত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
তুলসী গাছ ভেষজ চিকিৎসায় একটি অনন্য উপাদান। এই তুলসীর যে কত গুণ আছে তা বলে শেষ করা যাবে না। প্রায় সব জায়গাতেই এটা কম বেশী পাওয়া যায়।
তুলসীতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে,যা ক্যান্সার প্রতিরোধে পর্যন্ত কাজ করে। শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবেও দারুন ভূমিকা তুলসীর।ছত্রাক ও অন্যান্য জীবাণুনাশকের কাজ করে তুলসী পাতা।
১। আপনি হঠাৎ দেখলেন আপনার গোয়ালের গরু বা বাছুর পেটের ব্যাথায় কাৎরাচ্ছে। একবার উঠছে,একবার বসছে। অর্থাৎ ব্যাথায় সে অস্থির। ঠিক সেই মুহুর্তে আপনি কি করবেন? চিন্তার কিছু নেই, আপনি বড় বা মাঝারী আকারের গরুকে ৩০ মি:লি: এবং বাছুর বা ছোট গরুকে ২০ মি:লি: তুলসী পাতার রস খাইয়ে দিন, ইনশাআল্লাহ ব্যাথা চলে যাবে। এটা ৬ ঘন্টা পর পর তিন বার দিবেন। ২। আপনি দেখলেন যে,আপনার গাভী বা বাছুরের গায়ে জ্বর বা সামান্য কাশি হয়েছে। হাতের কাছে ডাক্তার বা ওষুধপাতি নেই।
কোন দুশ্চিন্তা করবেন না, গাভীকে ৩০ মি:লি: তুলসী পাতার রসের সাথে চার চা চামচ মধু মিশিয়ে ৩/৪ বেলা খাইয়ে দিন,ইনশাআল্লাহ সেরে যাবে। বাছুরের ক্ষেত্রে পথ্যের পরিমাণ টা অর্ধেক হবে।
৩। হঠাৎ দেখলেন আপনার গরু বা বাছুরটি কোন কারণে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে শরীরের উপরিভাগে হাল্কা ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। দুশ্চিন্তার কিছুই নেই,কিছু তুলসী পাতা বেঁটে একটা পেস্টের মত তৈরী করে ক্ষততে লাগিয়ে দিন,২/৩ দিন লাগালেই ক্ষত সেরে যাবে। তুলসী পাতার পেস্ট কিন্তু ইনফেকশন রোধেও কাজ করে।
৪। আপনি দেখলেন যে, আপনার খামারের বাছুরটি কৃমিতে আক্রান্ত, কৃমিনাশক ওষুধপাতি নেই হাতের কাছে অথবা আপনি এলোপ্যাথিক ওষুধ দিতে চাচ্ছেন না।
কোন সমস্যা নেই তাতে,তুলসী পাতা ও মুলের রস বের করে ১৫ মি:লি: আন্দাজ নিয়ে খাইয়ে দিন খালি পেটে বাছুরকে, কৃমিনাশক ওষুধের কাজ করবে।
প্রথম বার খাওয়ানোর ৭ দিন পর আবার খাওয়াবেন। ভালো কাজ করবে, ইনশাআল্লাহ।এভাবে তুলসী গরু বাছুরের অনেক রোগের ওষুধ হিসাবে কাজ করে,যার জুড়ি নেই বললেই চলে। তাই যারা গরু পালনের সাথে যুক্ত তারা অবশ্যই বাড়ির আশে পাশে কিছু তুলসী গাছ লাগাবেন।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন