বাঁশ শব্দের সঙ্গে পরিচিতি নেই এমন মানুষ খুঁজে বের করা কঠিন। বাঁশ শব্দটি যদিও মানুষ ব্যঙ্গ হিসেবেই ব্যবহার করে থাকন। তবে এই বাঁশ খাওয়ার রয়েছে অনেক উপকারিতা। বাঁশের নরম অংশকে বাঁশ কোড়ল বলা হয়। চীনে প্রচুর পরিমাণে বাঁশ কোড়ল খাওয়া হয়। তবে আমাদের দেশে বাঁশ খাওয়ার প্রচলন খুব একটা না থাকলেও, পাহাড়ি অঞ্চলে বাঁশের কোড়ল দিয়ে বিভিন্ন সুস্বাদু খাবার তৈরি করা হয়।
বিশেষ করে মুলি বাঁশের কোড়ল সবচেয়ে সুস্বাদু। স্বাদের পাশাপাশি দৈহিক সুস্থতায় বাঁশের ভূমিকা অপরিসীম। চীনের অধিবাসীরা বাঁশের কোড়লকে ‘স্বাস্থ্যকর খাবারের রাজা’ বলে অভিহিত করেন।
বাঁশ কোড়লের পুষ্টিগুণ
বাঁশে রয়েছে প্রচুর পুষ্টিগুণ। বাঁশের কোড়লে ৮৮ থেকে ৯৩ শতাংশ পানি, ১.৫ থেকে ৪ শতাংশ প্রোটিন, ০.২৫ থেকে ০.৯৫ শতাংশ চর্বি, ০.৭৮ থেকে ৫.৮৬ শতাংশ চিনি, ০.৬০ থেকে ১.৩৪ শতাংশ সেলুলোজ এবং ১.১শতাংশ খনিজ পদার্থসহ পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিনও রয়েছে।
>> শীতকালে সাধারণত বয়স্ক এবং শিশুদের কাশি হয়। এসময় বাঁশ পাতার রস খেলে কাশি কমে।
বাঁশ কোড়ল দিয়ে মাংস
মাংসের সঙ্গে বাঁশ কোড়ল রান্না খুবই মজাদার। প্রথমে স্বাভাবিক নিয়মেই মুরগি কিংবা অন্যান্য পশুর মাংস রাঁধতে হবে। শুধু মাংসটা হওয়ার ১০ থেকে ১৫ মিনিট আগে কুচি করে কাটা সিদ্ধ বাঁশ কোড়লগুলো দিতে হবে।
বাঁশ কোড়লে শুটকি
সিদ্ধ করে বাঁশ কোড়ল কুচি কুচি করে কেটে নিতে হবে। তারপর পাত্রে পরিমাণ মতো তেল দিয়ে চুলায় বসিয়ে শুঁটকি ও কুচি করা পেঁয়াজ তেলে ভেজে নিতে হবে। কিছুক্ষণ ভাজার পর বাঁশ কোড়ল দিয়ে নেড়ে লবণ ও হালকা লাল মরিচের গুঁড়া মেশাতে হবে। এরপর সামান্য পানি দিয়ে ঢেকে অল্প তাপে বাঁশ কোড়লে শুঁটকি রান্না করতে হবে।
শুটকির জায়গায় চিংড়ি দিয়েও রান্না করা যায়। চিংড়ি দিয়ে রান্না করলে নামানোর আগে হালকা জিরা গুঁড়া মেশাতে হবে।
এছাড়াও বাঁশ কোড়ল দিয়ে সালাদ বানিয়ে খেতে পারেন। কিংবা বাঁশের কোড়ল দিয়ে চিংড়ির দোপেঁয়াজা কিংবা স্যুপ বানাতে পারেন। ওয়ান বাইট বাঁশ কোড়ল ও স্টাইয়ার ফ্রাই বাঁশ কোড়লও দারুণ সুস্বাদু খাবার।
শীতকাল এলেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে খেজুরের রস খাওয়ার চল বেড়ে যায়। অনেকে গাছ থেকে খেজুরের কলসি নামিয়ে সরাসরি কাঁচা রস খেয়ে থাকেন।
আবার অনেকে এই রস চুলায় ফুটিয়ে সিরাপ, পায়েস বা ক্ষীর বানিয়ে খান। এছাড়া রসের তৈরি ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়, ভেলি গুড়, বালুয়া গুড়, মিছরি গুড়সহ নানা ধরণের পিঠার বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।
নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক
খেজুর আরব দেশের প্রচলিত ফল হলেও ওইসব দেশে খেজুর, মূলত ফল উৎপাদননির্ভর, যেখানে কিনা বাংলাদেশের খেজুর গাছ রস উৎপাদননির্ভর।
কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, বাংলাদেশে সাধারণত কার্তিক থেকে মাঘ অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ হয়ে থাকে।
দেশটির সবচেয়ে বেশি রস সংগ্রহ হয় যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে।
মূলত খেজুর গাছের ডালপালা পরিষ্কার করে, ডগার দিকের কাণ্ড চেঁছে তাতে একটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি চোঙ বসিয়ে দেয়া হয়। চোঙের শেষ প্রান্তে ঝুলিয়ে দেয়া হয় একটি মাটির হাড়ি বা কলসি।
সেই চোঙ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রস এসে জমা হতে থাকে মাটির হাড়ি বা কলসিতে। এভাবে একটি গাছ থেকে দৈনিক গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লিটার রস সংগ্রহ করা যায় বলে কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গিয়েছে।
কিন্তু গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
উপকরণ: বাঁধাকপির কুচি ৪ কাপ, কই মাছের টুকরো ৬টি, তেজপাতা ১টি, শুকনো মরিচ ২টি, মেথি অল্প পরিমাণ, মরিচবাটা ১ চা-চামচ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, লবণ পরিমাণমতো, নারকেল কোরানো স্বল্প পরিমাণে, হলুদ পরিমাণমতো ও সরিষার তেল পরিমাণমতো।
প্রণালি: তেলে শুকনো মরিচ ও মেথি ফোড়ন দিতে হবে। ফোড়ন হয়ে এলে হালকা করে ভেজে উঠিয়ে রাখতে হবে। ওই তেলেই বাঁধাকপির কুচি ও পেঁয়াজ কুচি দিয়ে ভালো করে কষে নিতে হবে। তারপর লবণ, মরিচ ও হলুদবাটা দিয়ে আরও কিছুক্ষণ বসাতে হবে। সেদ্ধ হয়ে এলে অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে ভাজা মাছগুলো দিয়ে ঢাকা দিতে হবে। পানি শুকিয়ে গেলে এবং মাছ সেদ্ধ হয়ে এলে অল্প পরিমাণ নারকেল কোরানো দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।
উপকরণ: বড় শোল মাছ ৫০০ গ্রাম, টমেটো টুকরো আধা কাপ, সরিষার তেল ৩ টেবিল চামচ, টমেটোবাটা আধা কাপ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, আদাবাটা ১ চা-চামচ, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, হলুদ গুঁড়া ১ চা-চামচ, ধনেপাতা আধা কাপ, শুকনো মরিচের গুঁড়া ১ চা-চামচ, লবণ স্বাদ অনুসারে ও কাঁচা মরিচ ৭-৮টি (চেরা)।
প্রণালি: শোল মাছ লবণ, হলুদ ও সরিষার তেল মাখিয়ে ভেজে তুলে রাখতে হবে। আর ওই তেলেই পেঁয়াজ কুচি দিতে হবে। পেঁয়াজ বাদামি রং হলে রসুন, আদা, মরিচের গুঁড়া, হলুদ ও লবণ দিয়ে ভালোভাবে কষাতে হবে। টমেটোবাটা দিতে হবে, কিছুক্ষণ কষানোর পর প্রয়োজনমতো গরম পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে ভেজে রাখা মাছগুলো দিতে হবে। ঝোল মাখা-মাখা হলে টমেটোর টুকরো আর ধনেপাতা দিয়ে কিছুক্ষণ পর নামিয়ে ফেলতে হবে। নামানোর আগে কাঁচা মরিচ দিতে হবে।
উপকরণ: ছোট টুকরো করে কাটা টাকি মাছ ২ কাপ, ডুমো ডুমো করে কাটা লাউ ৪ কাপ, হলুদ সিকি চা-চামচ, লবণ পরিমাণমতো, পেঁয়াজ ১ কাপ, ধনেপাতা কুচি পরিমাণমতো, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, কাঁচা মরিচ ১০-১২টি, আদাবাটা আধা চা-চামচ ও রাঁধুনি বাটা সিকি চা-চামচ।
প্রণালি: তেলে পেঁয়াজ দিয়ে হালকা করে ভেজে নিতে হবে। তারপর একে একে রসুনবাটা, আদাবাটা ও রাধুনি (গুঁড়া সজ) বাটা ও হলুদের গুঁড়া দিয়ে ভালো করে কষাতে হবে। কষানো হলে লাউ দিতে হবে। লাউ দিয়ে কিছুক্ষণ কষিয়ে অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে আগে থেকে হালকা করে ভেজে রাখা টাকি মাছ দিতে হবে। পানি শুকিয়ে এলে কাঁচা মরিচের ফালি ও সবশেষে ধনেপাতা দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।
উপকরণ: চিংড়ি মাছ ২০০ গ্রাম, সয়াবিন তেল পরিমাণমতো, বাঁধাকপি কুচি ১ কাপ, ক্যাপসিকাম কুচি ১ কাপ, টমেটো কুচি আধা কাপ, পেঁয়াজপাতা কুচি ১ কাপ, কাঁচা মরিচবাটা ১ চা-চামচ, ধনেপাতাবাটা ১ চা-চামচ, হলুদের গুঁড়া পরিমাণমতো, চিলি সস ২ চা-চামচ, টমেটো সস ২ চা-চামচ, বাঁধাকপির ভেতরের পাতা ৪টি, ভিনেগার ২ চা-চামচ, রসুন ১ চা-চামচ ও লবণ স্বাদমতো।
প্রণালি: বাঁধাকপির শক্ত অংশ ফেলে দিন। পাতার ভেতরের অংশ একটু ভাপিয়ে রাখুন। মাছ ধুয়ে ভিনেগার মাখিয়ে রাখুন। এবার কড়াইয়ে সয়াবিন তেল গরম হলে তাতে রসুন কুচি দিয়ে মাছগুলো দিন। একে একে কোঁচানো বাঁধাকপি, ক্যাপসিকাম, টমেটো ও পেঁয়াজপাতা দিয়ে নেড়েচেড়ে নিন। এরপর কাঁচা মরিচবাটা, ধনেপাতাবাটা, চিলি সস ও টমেটো সস দিয়ে নেড়ে নিন। পানি শুকিয়ে এলে নামিয়ে বাঁধাকপির পাতায় অল্প করে চিংড়ি মাছ সুতা দিয়ে বেঁধে স্টিমারে ভাপিয়ে নিন। সুতো কেটে পাতা খুলে পরিবেশন করুন।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন