আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

বিশ্ব

বর্ষ পরিক্রমা ২০২০ : ফেলে আসা বছরে ভারতের সবচেয়ে বড় পাঁচটি ঘটনা

দিল্লির একটি বাস টার্মিনাসে কোভিড পরীক্ষা। ডিসেম্বর, ২০২০
ছবির ক্যাপশান,দিল্লির একটি বাস টার্মিনাসে কোভিড পরীক্ষা। ডিসেম্বর, ২০২০

বছরের শেষ প্রান্তে এসে ফিরে তাকানো যাক পেছনে ফেলে আসা ২০২০ সালে ভারতের ঘটনা পরম্পরার দিকে।

বাকি দুনিয়ার মতো ভারতেও করোনাভাইরাস মহামারি এবছর বাকি সব কিছু তছনছ করে দিয়েছে।

বস্তুত গোটা দুনিয়ায় এখনও পর্যন্ত ভারতেই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক কোভিড রোগী শনাক্ত হয়েছেন।

এর পাশাপাশি বছরের শুরুতে নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বা বছরের শেষে কৃষক আন্দোলনেও উত্তাল হয়েছে ভারত।

ভয়াবহ হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গায় রক্তাক্ত হয়েছে রাজধানী দিল্লি, ভারতীয় সেনাদের রক্ত ঝরেছে লাদাখের চীন-ভারত সীমান্তেও।

এই প্রতিবেদনে নজর দেওয়া হয়েছে মহামারি-সহ বছরের এমনই পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার দিকে।

মুম্বাইতে নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে জমায়েত। জানুয়ারি, ২০২০
ছবির ক্যাপশান,মুম্বাইতে নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে জমায়েত। জানুয়ারি, ২০২০

নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ

করোনাভাইরাসের সঙ্গে তখনও ভারতের পরিচয় হয়নি – এদেশে ২০২০ সাল শুরু হয়েছিল তখন সদ্য পাস-হওয়া নাগরিকত্ব আইন আর প্রস্তাবিত এনআরসি-র বিরুদ্ধে দেশব্যাপী উত্তাল প্রতিবাদের মধ্যে দিয়ে।

এই উদ্যোগকে অনেকেই দেখেছিলেন সমাজের একটা শ্রেণীকে নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা হিসেবে – যারা শপথ নিচ্ছিলেন কিছুতেই সরকারের কাছে নিজেদের পরিচয়ের নথিপত্র পেশ করবেন না, কাগজ দেখাবেন না!

দিল্লির শাহীনবাগ হয়ে উঠেছিল নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের এপিসেন্টার।

আট থেকে আশি বছর বয়সী মুসলিম নারীরাই সে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন।

নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের আইকন হয়ে উঠেছিল দিল্লির শাহীন বাগ
ছবির ক্যাপশান,নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের আইকন হয়ে উঠেছিল দিল্লির শাহীন বাগ

তারা বলছিলেন, “আমাদের দেশদ্রোহী বা পাকিস্তানি বলে চিহ্নিত করার হাজার চেষ্টা সত্ত্বেও ভারতীয়রা কিন্তু সেই চেষ্টার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন।”

জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার ছাত্রী তবাসসুম বিবিসিকে বলছিলেন, “কাশ্মীরের অবরোধ, এনআরসি-র ঘোষণা বা মুসলিমদের পিটিয়ে মারার ঘটনা যখন ঘটেছে তখন কিন্তু দেশ পথে নামেনি।”

“আজ অবশেষে নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে সারা দেশের সঙ্গে দিল্লি রাজপথে নেমে এসেছে – আমি এখন কীভাবে ঘরে আটকে থাকতে পারি?”

দিল্লিতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা

ফেব্রুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে এই বিক্ষোভকারীরাই যখন উত্তর-পূর্ব দিল্লির জাফরাবাদে পথ অবরোধ করে অবস্থান বিক্ষোভে বসলেন, পরিস্থিতি দ্রুত অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠল।

বিজেপির বিতর্কিত নেতা কপিল মিশ্র পুলিশ কর্মকর্তাদের সামনে দাঁড়িয়েই হুমকি দিলেন, ভালোয় ভালোয় রাস্তা খালি না-করা হলে তারা হাত গুটিয়ে বসে থাকবেন না এবং পরিণতির জন্যও দায়ী থাকবেন না।

জাফরাবাদে নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে পথ অবরোধ তোলার চেষ্টা থেকে হিংসা ছড়িয়ে পড়ে দিল্লিতে
ছবির ক্যাপশান,জাফরাবাদে নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে পথ অবরোধ তোলার চেষ্টা থেকে হিংসা ছড়িয়ে পড়ে দিল্লিতে

পরবর্তী প্রায় চারদিন ধরে রাজধানীর এক বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে যে সাম্প্রদায়িক তান্ডব চলল, তাতে কম করে ৫৩জন নিহত হলেন – যার দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি ছিলেন মুসলিম।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তখন দিল্লি সফরে, এরই মধ্যে জ্বালিয়ে দেওয়া হল শহরের অসংখ্য মসজিদ। নালা থেকে উদ্ধার হল দাঙ্গায় নিহতদের লাশ।

মুস্তাফাবাদে ভস্মীভূত ফারুকিয়া মসজিদে দাঁড়িয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা সেদিন বিবিসিকে বলছিলেন, আরএসএসের গুন্ডারা কীভাবে নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে আর লুঠতরাজ করেছে।

তাদের অভিযোগ ছিল, “হামলার সময় দিল্লি পুলিশ ছিল নীরব দর্শকের ভূমিকায়। আর এই হামলা থেকে রেহাই পায়নি মাদ্রাসার ছোট ছোট ছাত্ররাও।”

সম্পন্ন একজন মুসলিম ব্যবসায়ীর বাসার ড্রয়িংরুমে সেদিন আশ্রয় নিয়েছিলেন শত শত মুসলিম নারী-শিশু-পুরুষ, ভয়ার্ত সেই মানুষগুলোকে প্রশাসন দেখতেও আসেনি।

দিল্লির মুস্তাফাবাদে একটি ভস্মীভূত মসজিদের ভেতরটি দেখছেন মুসলিম নারীরা
ছবির ক্যাপশান,দিল্লির মুস্তাফাবাদে একটি ভস্মীভূত মসজিদের ভেতরটি দেখছেন মুসলিম নারীরা

মাসকয়েক পরে দিল্লি পুলিশ যখন এই দাঙ্গার চার্জশিট জমা দিল, তারা কিন্তু দায়ী করল নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে যারা বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন, তাদেরই।

তবে লেখক ও চিন্তাবিদ তিলোত্তমা মজুমদার বলছিলেন, তিনি কিন্তু মনে করেন না দাঙ্গা আর প্রতিবাদের রসায়নটা কখনও একই রকম হতে পারে।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলছিলেন, “চরিত্রগতভাবেই প্রতিবাদ আর দাঙ্গা দুটো কিন্তু আলাদা জিনিস।”

“একটা দাঙ্গার পেছনে সামাজিক বা রাজনৈতিক নানা রকম উসকানি থাকতে পারে। ব্যক্তিগত কোনও উদ্দেশ্যও থাকতে পারে দাঙ্গা লাগানোর।”

“তবু আমি বলব, দিল্লির দাঙ্গা যে সারা দেশে ছড়ায়নি সেটা প্রমাণ করে যে মানুষের শুভ বোধ এখনও জাগ্রত আছে। বেশির ভাগ ভারতীয় যে দাঙ্গা চান না সেই বিশ্বাসটাই তাতে জোরালো হয়।”

উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে দাঙ্গায় পুড়ে ছাই হওয়া দোকানের সামনে বসে একজন ব্যবসায়ী
ছবির ক্যাপশান,উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে দাঙ্গায় পুড়ে ছাই হওয়া দোকানের সামনে বসে একজন ব্যবসায়ী

“অন্যদিকে যে মানুষের আন্দোলনগুলো – সেটা কখনও কোনও নতুন আইনের বিরুদ্ধে, কখনও সরকারি কোনও প্রকল্প বা পদক্ষেপের বিরুদ্ধে – গণতন্ত্রে কিন্তু তার গুরুত্বই আলাদা।”

“যে কোনও সার্থক গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল বিরুদ্ধ মতকেও স্বাধীনভাবে প্রকাশ করার জায়গাটা থাকা, সাহসটা থাকা।”

“এবছর প্রমাণ হয়েছে যে ভারতে এখনও সেই প্রতিবাদের স্পেসটা আছে এবং এ দেশের গণতন্ত্র নিয়ে এখনও ভরসাটুকু হারিয়ে যায়নি”, বলছিলেন তিলোত্তমা মজুমদার।

মহামারি, লকডাউন, টিকা

দিল্লি দাঙ্গার রেশ না থিতোতেই দেশ পড়ল ভয়াবহ মহামারির কবলে। পুলিশ জোর করে উঠিয়ে দিল শাহীনবাগের বিক্ষোভ। আর একশো তিরিশ কোটি মানুষের বিশাল দেশ রাতারাতি পড়ল কঠোর লকডাউনের কবলে।

২৪শে মার্চ রাতে মাত্র তিন ঘন্টার নোটিশে সারা দেশে লকডাউন জারির কথা ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

মোবাইল ফোনে, টিভিতে প্রধানমন্ত্রীর সে দিনের ভাষণ শোনেন কোটি কোটি ভারতীয়
ছবির ক্যাপশান,মোবাইল ফোনে, টিভিতে প্রধানমন্ত্রীর সে দিনের ভাষণ শোনেন কোটি কোটি ভারতীয়

বললেন, “দেশের প্রতিটি পরিবারকে বাঁচানোর জন্যই এই পদক্ষেপ – ঘর থেকে বেরোনোও পুরোপুরি নিষেধ।”

পরবর্তী কয়েকদিনে দেখা গেল হাজার হাজার দরিদ্র অভিবাসী শ্রমিক গ্রামে ফেরার মরিয়া চেষ্টায় পথে নেমে এসেছেন, জাতীয় সড়ক বেয়ে শত শত মাইল হাঁটতেও শুরু করে দিয়েছেন।

কোলের শিশুকে শহরে কিছু খাওয়াতে না-পেরে গ্রামের পথে হাঁটা ছাড়া যে কোনও উপায় নেই, কাজকর্ম হারিয়ে সে কথাই বলছিলেন শ্রমিক বধূরা।

বিহারের ট্রেনের টিকিটের ভাড়া আড়াই হাজার রুপি করে, দুজনের ভাড়া কীভাবে জোগাড় করবেন অসহায়ভাবে সে প্রশ্ন তুলছিলেন চম্পারন থেকে দিল্লিতে কাজ করতে আসা মজদুর রাজেন রাম।

লকডাউনে জাতীয় সড়ক বেয়ে চলতে শুরু করেন হাজার হাজার পরিযায়ী শ্রমিক
ছবির ক্যাপশান,লকডাউনে জাতীয় সড়ক বেয়ে চলতে শুরু করেন হাজার হাজার পরিযায়ী শ্রমিক

“এই পরিযায়ী শ্রমিকরাও তো ভারতেরই নাগরিক, বিদেশে প্লেন পাঠিয়ে যদি আটকে পড়া ভারতীয়দের ফিরিয়ে আনা যায় তাহলে এই গরিব মেহনতি মানুষগুলোকে কেন সরকার ঘরে ফেরানোর ব্যবস্থা করবে না?”, সে প্রশ্নও তুললেন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী।

ওদিকে ভাইরাসের বিস্তার ক্রমশ বাড়তে থাকায় হিমশিম খেতে শুরু করল ভারতের স্বাস্থ্য অবকাঠামো।

মুম্বাইয়ের এক হাসপাতালে চিকিৎসকরা বিবিসিকে বলছিলেন, কী অসম্ভব কঠিন এক যুদ্ধ তাদের লড়তে হচ্ছে – রোগী, ডাক্তার, নার্স সবাই এক অচেনা শত্রুর বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে মানসিকভাবেও বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছেন।

কোভিড টেস্ট করানো কিংবা হাসপাতালে বেড পাওয়ার সমস্যা তো ছিলই, গ্রামীণ ভারতেও সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর পরিস্থিতি একটা পর্যায়ে প্রায় হাতের বাইরেই চলে গিয়েছিল।

বহু মানুষ তখন প্রায় বিনা চিকিৎসায় প্রিয়জনকে হারিয়েছেন। কোভিড-আক্রান্ত মা কীভাবে হাসপাতাল থেকে চিরতরে চোখের আড়ালে চলে গেলেন, বাচ্চা ছেলেকে তার কোনও জবাব দিতে পারেননি অসহায় বাবা।

দিল্লিতে গড়ে তোলা একটি অস্থায়ী কোভিড হাসপাতাল
ছবির ক্যাপশান,দিল্লিতে গড়ে তোলা একটি অস্থায়ী কোভিড হাসপাতাল

তিলোত্তমা মজুমদার বলছিলেন, ভারতবর্ষ যে পথে এই সঙ্কটের মুখোমুখি হয়েছে সেই রাস্তাটা কিন্তু একটা চরম অপ্রস্তুতির পরিচয় দিয়েছে।

স্বাস্থ্য অবকাঠামোর দিক থেকে আমরা যে এই পরিস্থিতির জন্য বিন্দুমাত্র তৈরি ছিলাম না সেটা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট হয়ে গেছে।

পাশাপাশি অসংখ্য পরিযায়ী শ্রমিককে এই লকাডাউনে যে করুণ পরিণতির সম্মুখীন হতে হয়েছে তাতেও পরিষ্কার যে খেটে-খাওয়া, দরিদ্র মেহনতি মানুষগুলোর জন্য আমাদের ন্যূনতম পরিকল্পনাও ছিল না।

অথচ সারা দেশে যখন আধার কার্ডের মতো জাতীয় পরিচয়পত্র চালু হল, তখন বলা হয়েছিল এই একটা নম্বর দিয়েই ভারতীয়রা বিভিন্ন আধুনিক দেশের নাগরিকদের মতো সব সুযোগ-সুবিধা পাবেন।

সেই বড় বড় প্রতিজ্ঞাগুলো যে কত বড় মিথ্যা ও কত অন্ত:সারশূন্য, লকডাউনের সময় ভারতের মানুষ কিন্তু তা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছেন।

লেখক তিলোত্তমা মজুমদার
ছবির ক্যাপশান,লেখক তিলোত্তমা মজুমদার

বছরশেষে কিছুটা আশার আলো অবশ্য দেখিয়েছে অচিরেই করোনা ভ্যাকসিন মেলার খবর – এবং বিশ্বের ভ্যাকসিন উৎপাদনে ভারতও সম্ভবত একটি প্রধান কেন্দ্র হয়ে উঠতে চলেছে।

পুনের সিরাম ইনস্টিটিউটের সিইও আদার পুনাওয়ালার কথায়, “যেহেতু বিশ্বের মোট ভ্যাকসিন উৎপাদন সামর্থ্যের ৭০ শতাংশই ভারতে তাই অবশ্যই এখানে ভারতের বড় ভূমিকা থাকবে।”

“কিন্তু এটা সেরা ভ্যাকসিন হবে কি না আমরা সত্যিই জানি না – কারণ যেখানে একটা নতুন টিকা উদ্ভাবনে তিন থেকে পাঁচ বছর লাগে, সেই জায়গায় আমাদের এখানে খুবই তাড়াহুড়ো করতে হচ্ছে।”

মহামারির প্রকোপ হয়তো একদিন থিতোবে, কিন্তু ভারতীয়দের রোজকার অর্থনীতিতে তা কত বড় আঘাত দিয়ে গেল সেই হিসেব কিন্তু এখনও কষাই শুরু হয়নি – বলছিলেন লেখিকা তিলোত্তমা মজুমদার।

ভারতে সেরাম ইনস্টিটিউটের প্রধান আদার পুনাওয়ালা
ছবির ক্যাপশান,ভারতে সেরাম ইনস্টিটিউটের প্রধান আদার পুনাওয়ালা

তার কথায়, “লকডাউনে কত লোককে যে কত কোম্পানি ছাঁটাই করেছে, কত লোক যে গত সাত-আটমাস ধরে অর্ধেক বেতনে বা কম বেতনে কাজ করছে তার কোনও পরিসংখ্যান কিন্তু এখনও নেই।”

“এগুলো পেলেই হয়তো একদিন বোঝা যাবে মহামারি আর লকডাউন কী বিরাট আঘাত হেনে গেল!”

লাদাখে ভারত-চীন সংঘর্ষ

মহামারি যখন তুঙ্গে, তখনই জুন মাসের মাঝামাঝি খবর এল লাদাখ সীমান্তে গালওয়ান উপত্যকায় চীনা সৈন্যদের সঙ্গে সংঘর্ষে ভারতের অন্তত বিশজন সেনা প্রাণ হারিয়েছেন।

গত পঁয়তাল্লিশ বছরের মধ্যে সেই প্রথম চীন-ভারত সীমান্তে রক্তপাতের ঘটনা ঘটল।

দেশের নানা প্রান্তে নিহত সৈন্যদের শেষ বিদায় জানানো হল সামরিক মর্যাদায়।

লাদাখের এই প্যাংগং লেকেও ভারত ও চীনের সেনারা রয়েছে মুখোমুখি অবস্থানে
ছবির ক্যাপশান,লাদাখের এই প্যাংগং লেকেও ভারত ও চীনের সেনারা রয়েছে মুখোমুখি অবস্থানে

লাদাখে বাড়তি সেনা মোতায়েন করে আর একগুচ্ছ চীনা অ্যাপ নিষিদ্ধ করে পাল্টা পদক্ষেপ নিল ভারত।

চীনের সঙ্গে পরবর্তী কয়েক দফা শান্তি আলোচনায় অংশ নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করও স্বীকার করলেন, “সীমান্তে শান্তি যখন একবার বিঘ্নিত হয়েছে তখন দুদেশের সম্পর্ক আগের মতোই থাকবে সেটা আর আশা করা যায় না।”

তিলোত্তমা মজুমদার মনে করছেন, চীন-ভারত সীমান্ত বিতর্কের নিষ্পত্তি না-হওয়াই এই সংঘাতের মূলে।

বিবিসিকে তিনি বলছিলেন, “যেভাবে কাশ্মীর ইস্যুটাকে বছরের পর বছর ধরে অমীমাংসিত রাখা হয়েছে, আমার ধারণা চীন-ভারত সীমান্ত প্রশ্নটাও সেভাবেই বহু বছর ধরে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।

“দুদেশের সীমান্তই এখনও স্পষ্টভাবে চিহ্নিত নয়, কিন্তু আজ পর্যন্ত আমরা কোনও সরকার বা প্রধানমন্ত্রীকেই দেখিনি এই বিষয়টার একটা নিষ্পত্তি করে ছাড়বেন সেই অঙ্গীকারের জায়গায় পৌঁছতে পেরেছেন।”

গালওয়ান উপত্যকায় নিহত ভারতীয় সেনা সতনাম সিংকে শেষ বিদায়
ছবির ক্যাপশান,গালওয়ান উপত্যকায় নিহত ভারতীয় সেনা সতনাম সিংকে শেষ বিদায়

“ফলে এই পরিণতি বোধহয় অনিবার্যই ছিল। তবে অনেক সময় আবার এটাও মনে হয় রাজনীতি বোধহয় এই ধরনের পরিস্থিতিগুলোকে ব্যবহারও করে।”

“যেমন মহামারিতে যখন অর্থনীতির বিপর্যস্ত দশা, ঠিক তখনই কিন্তু আমরা দেখলাম লাদাখে চীনের সঙ্গে সাঙ্ঘাতিক গন্ডগোল শুরু হয়ে গেল।”

“ব্যাস, সারা দেশে সঙ্গে সঙ্গে দেশাত্মবোধের ঝড় বইতে লাগল। হুকুম এল, অমুক অমুক চাইনিজ অ্যাপ ব্যবহার করা যাবে না – কেন না চীন এখন আমাদের শত্রু হয়ে গেছে।”

“তাহলে এগুলোকে সরকার এতদিন অ্যালাও করেছিল কীভাবে, আমার প্রশ্ন সেটাই!”

গত ২৬ নভেম্বর থেকে দিল্লির সীমান্তে অবস্থান করছেন হাজার হাজার কৃষক
ছবির ক্যাপশান,গত ২৬ নভেম্বর থেকে দিল্লির সীমান্তে অবস্থান করছেন হাজার হাজার কৃষক

বছর শেষে কৃষক আন্দোলন

এদিকে চীন সীমান্তে উত্তেজনা আর অশান্তির ঘনঘটার মধ্যেই নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে রাজধানী দিল্লি অবরুদ্ধ করে ফেললেন পাঞ্জাব ও হরিয়ানা থেকে আসা হাজার হাজার কৃষক।

তাদের দাবি, সম্প্রতি পাস হওয়া তিনটি কৃষি আইন – যা ভারতে কর্পোরেট-নিয়ন্ত্রিত, চুক্তিবদ্ধ চাষের পথ প্রশস্ত করবে বলে বলা হচ্ছে সেগুলো বাতিল করতে হবে এবং মিনিমাম সাপোর্ট প্রাইস বা ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের গ্যারান্টি দিতে হবে।

দাবি আদায়ে চাপ দিতে তারা যে বেশ কয়েক মাসের রসদ নিয়েই দিল্লি এসেছেন সে কথাও জানিয়ে দেন পাঞ্জাবের এই কৃষকরা।

পাঞ্জাবের কৃষকরা বলছেন দীর্ঘ আন্দোলনের প্রস্তুতি নিয়েই তারা দিল্লিতে এসেছেন
ছবির ক্যাপশান,পাঞ্জাবের কৃষকরা বলছেন দীর্ঘ আন্দোলনের প্রস্তুতি নিয়েই তারা দিল্লিতে এসেছেন

এর মধ্যে সরকারের সঙ্গে কৃষক নেতাদের বেশ কয়েক দফা বৈঠক হলেও কোনও সমাধান বেরোয়নি।

বড়দিনের মুখেও তারা দিল্লির সিঙ্ঘু ও টিকরি, এই দুটি সীমান্ত অবরোধ করে রেখেছেন।

ফলে দিল্লিতে বছর শুরু হয়েছিল শাহীনবাগ দিয়ে, আর শেষ হচ্ছে সিঙ্ঘুতে – যার মাঝখানে পুরো সময়টা জুড়িয়ে জাঁকিয়ে রইল করোনাভাইরাস মহামারি।

বিজ্ঞাপন
মন্তব্য করুন

অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন

Leave a Reply

ফসল

লাভজনক সবজি চাষ পদ্ধতি

সবজি একটি গুরুত্বপূর্ণ ফসল। কৃষি বিজ্ঞানের ভাষায় সবজিকে উদ্যানতাত্বিক ফসল (Horticultural crops) বলা হয়ে থাকে। পুষ্টিমানের দিক থেকে সবজি ফসল যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি বাণিজ্যিকভাবেও এর গুরুত্ব অপরিসীম। সেজন্য সবজি চাষের আধুনিক কলাকৌশল জানা জরুরি।

আর আধুনিক কলাকৌশল বলতে বৈজ্ঞানিক উপায়ে চাষাবাদকেই বোঝানো হয়ে থাকে। বাংলাদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু সবজি চাষের জন্য খুবই উপযোগী। তবে সারাদেশে যেমন সব ধরনের সবজি উৎপাদিত হয়না ঠিক তেমনি সকল সবজিই আবার সারাবছর উৎপাদিত হয়না। একেক অঞ্চলে একেক ধরনের শাকসবজি উৎপাদিত হয়ে থাকে। আবার বছরের বিশেষ বিশেষ সময়ে বিশেষ বিশেষ সবজির জাত উৎপাদন করা যায়।

সারাদেশে সারাবছরই যেসকল সবজি সহজে উৎপাদিত হয়ে থাকে তাদের কিছু শাকসবজির কথা এখানে তুলে ধরছি। লালশাক, ডাটাশাক, পুইশাক, কলমিশাক, মিষ্টিআলু শাক, ঢেড়শ, গাজর, বরবটি, টমেটো, লাউ ও লাউশাক, পাটশাক, শশা, কাঁচকলা, বেগুন, পেপে, করলা, কচুশাক, কচুর লতি, ধনে পাতা, পুদিনা পাতা ইত্যাদি পরিচিত শাকসবজি। তাছাড়া অপরিচিত বিশেষ কিছু সবজি বিশেষ বিশেষ এলাকার বিশেষত্ব হিসেবে উৎপাদিত হয়ে থাকে। উপরোক্ত ফসলগুলোর মধ্যে কিছু শুধু শাক আর বাকীগুলো শাক এবং সবজি উভয় হিসেবেই প্রচলিত রয়েছে।

কৃষিতাত্বিকভাবে রবি (শীতকাল) ও খরিপ (গ্রীষ্মকাল)- এ দুধরনের মৌসুম রয়েছে। খরিপের আবার দুটি ভাগ, যথা- খরিপ-১ (আগাম গ্রীষ্ম) এবং খরিপ-২ (বর্ষাকাল)। তবে শীতকালীন শাকসবজির মধ্যে বাহারি ও রকমারি বৈচিত্র একটু বেশি। শুধুমাত্র শীতকালে উৎপাদিত হয় এমন ফসলগুলোর মধ্যে রয়েছে- টমেটো, শীতলাউ, ফুলকপি, বাধাকপি, গাজর, সীম, মূলা, ব্রকলি, বাটিশাক, ওলকপি, শালগম, বেগুন, গোল আলু ইত্যাদিই প্রধান। অপরদিকে শুধুমাত্র গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে উৎপাদিত হয় এমন ফসলের মধ্যে রয়েছে- বিভিন্ন ধরনের কচু, ওলকচু, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, কাকরোল, পটোল, করলা, মিষ্টি কুমড়া, চাল কুমড়া ইত্যাদিই প্রধান।

সবজি ফসল উৎপাদন অন্যান্য ফসলের মতো নয়। সবজি ফসল উৎপাদনের জন্য বিশেষ ধরনের যত্নের প্রয়োজন হয়। আর বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আবাদ করতে গেলে অল্প পরিমাণ জায়গায় অধিক পরিমাণ ফসল ফলিয়ে লাভবান হওয়া সম্ভব। সবজি আবাদেও জন্য বাড়ির আঙ্গিনায় অথবা অপেক্ষাকৃত উঁচু জায়গা বেছে নিতে হবে। সেখানে ভালোভাবে চাষ-মই দিয়ে জমির মাটি জো অবস্থায় ঝুরঝুরে করে সেখানে এক মিটার প্রশস্ত এবং প্রয়োজনমত জমির আকার-আকৃতির সাথে সঙ্গতি রেখে লম্বা বেড তৈরী করে নিতে হবে। প্রতিটি বেডের মাঝখানে ৬ থেকে ৮ ইঞ্চি পরিমাণ গর্ত করে নালা সৃষ্টি করতে হবে। অর্থাৎ নালার মাটি তুলেই দুইপাশে বেড প্রয়োজনমত উঁচু করতে হবে।

এভাবে বেড তৈরীর একটি বিশেষত্ব হলো শাকসবজি চাষাবাদ অন্য সাধারণ ফসল আবাদের চেয়ে একটু ভিন্ন। এর জন্য প্রয়োজন হয় বাড়তি সতর্কতা ও যত্নের। শাকসবজির চাষাবাদে যেমন শুষ্ক মৌসুমে সেচের চাহিদা থাকে অপরদিকে বর্ষাকালে অতিরিক্ত বৃষ্টির পানি বের করে দেওয়ার প্রয়োজন হয়। সেজন্যই বেড তৈরী করে মাটি কিছুটা উঁচু করা হয় সেখানে আবার নালা তৈরী করে নিষ্কাষনের ব্যবস্থাও রাখা হয়। কিন্তু বেড এবং নালা তৈরী না করলে সেটা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আবাদ হয়না। সেঠা হয় সাধারণ শাকসবজি চাষ। এতে ফলন অনেক কমে যায়।

পেপে, কাঁচকলা- এ জাতীয় সবজি বসতবাড়ির আঙ্গিনায়, রাস্তা বা পুকুরের ধারে সহজেই আবাদ করা যায়। লালশাক, ডাটা শাক, পাটশাক, মূলাশাক, গাজর, শালগম ইত্যাদি সবজি তৈরীকৃত বেডে ছিটিয়ে বীজ বুনে দিলেই ভালো ফলন পাওয়া যায়। তাছাড়া টমেটো, বেগুন, ফুলকপি, বাধাকপি, ঢেড়শ, কচু, ওলকচু ইত্যাদি সবজি এক মিটারের বেডে দুই সারি করে নির্ধারিত দূরত্বে চারা লাগিয়ে আবাদ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। সেজন্য এসব সবজি উৎপাদনের জন্য আলাদাভাবে নার্সারিতে চারা তৈরী করে নিতে হয়। অপরদিকে লাউ, মিষ্টি কুমড়া, শশা, চাল কুমড়া, পটোল, কাকরোল, করলা, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, সীম, বরবটি ইত্যাদি লতাজাতীয় সবজি চাষের জন্য উক্ত বেডে দুইটি সারি করে সেখানে জাংলা দিয়ে দিতে হয়। সাধারণত বেডের দুইপাশে খুটি দিয়ে পরে তা ইংরেজি অক্ষর ‘এক্স’ আকৃতিতে বা ‘ভি’ আকৃতিতে বাঁকিয়ে বেঁধে দিতে হয়।

বেড ছাড়াও লতাজাতীয় এসব সবজি অতি সহজেই ক্ষেতের আইলে, রাস্তার ধারে, পুকুরের পাড়ে বিশেষ ব্যবস্থায় আবাদ করে ভালো ফলন পাওয়া যায়। তবে অন্যান্য যেকোন ফসলের তুলনায় এসব সবজি ফসলের একটু বেশি যত্নের প্রয়োজন হয়। বিনা আবাদেই এসব সবজি চাষ করা যেতে পারে। সেজন্য বন্যা পরবর্তীতে পুনর্বাসনের সময় বিনাচাষে এসব আবাদের পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। সম্পূর্ণ জৈবভাবেই এসব সবজি ফসল উৎপাদন সম্ভব। আবাদের পূর্বে সামান্য পরিমাণ প্রয়োজনীয় রাসায়নিক সার ব্যবহার করে বাকীটা মেটাতে হবে বাড়িতে উৎপাদিত জৈব সারের মাধ্যমে। তারপর আন্তপরিচর্যা এবং পোকামাকড়ের আক্রমণ ঠেকাতেও জৈব পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে। তখন এসব উৎপাদিত ফসল সকলের জন্য নিরাপদ খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।

কাজেই এভাবেই সারাবছর নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় স্বষ্পপরিসরে শাকসবজি উৎপাদন করে নিজের চাহিদা মিটিয়ে তা বাণিজ্যিকভাবেও লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে। আমাদের শারীরিক পুষ্টি চাহিদার একটি বিরাট অংশ শাকসবজি থেকে আসা দরকার। দৈনিক একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের গড়ে কমপক্ষে আড়াইশ গ্রাম শাকসবজি খাওয়া প্রয়োজন। আর সেটা নিবিড়ভাবে এবং নিরাপদভাবে খেতে হলে নিজের উৎপাদিত শাকসবজি খাওয়াই সবচেয়ে উত্তম। কাজেই আমাদের সারাবছর অলস সময়টাকে কাজে লাগিয়ে আসুন নিজের বাড়ির আঙ্গিনায় সবজির বাগান গড়ে তুলি।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

বাংলাদেশ

কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ

একজন টেলিভিশন তারকা, কৃষি উন্নয়ন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজের জন্মদিন আজ। তিনি ১৯৫৪ সালের এদিনে জন্মগ্রহণ করেন চাঁদপুরে (সার্টিফিকেট অনুযায়ী তার জন্মতারিখ ২৮শে জুন ১৯৫৬)। শাইখ সিরাজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন ভূগোলে। ছাত্রজীবনেই সম্পৃক্ত হন বাংলাদেশ টেলিভিশন, বেতার ও সংবাদপত্রের সঙ্গে।

কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ

শাইখ সিরাজ ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিমিটেড, চ্যানেল আই-এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও বার্তা প্রধান। টানা সাড়ে চার দশক ধরে তিনি গণমাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে দেশের কৃষি ও কৃষক তথা উৎপাদন-অর্থনৈতিক খাতে অপরিসীম ভূমিকা রেখে চলেছেন।

বাংলাদেশ টেলিভিশনের মাটি ও মানুষ অনুষ্ঠান উপস্থাপনার মধ্য দিয়ে সকল শ্রেণিপেশার মানুষের মধ্যে বিপুল গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেন তিনি। পরে তার নিজস্ব পরিচালনাধীন টেলিভিশন ‘চ্যানেল আই’তে শুরু করেন কৃষি কার্যক্রম হৃদয়ে মাটি ও মানুষ। উন্নয়ন সাংবাদিকতার জন্য তিনি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দু’টি রাষ্ট্রীয় সম্মান স্বাধীনতা পুরস্কার (২০১৮) ও একুশে পদক (১৯৯৫) লাভ করেন।

কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৬৮তম জন্মদিন আজ
কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ

টেলিভিশনসহ গণমাধ্যমের সঙ্গে প্রায় চার দশকের একনিষ্ঠ পথচলার মধ্য দিয়ে শাইখ সিরাজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন উন্নয়ন সাংবাদিকতার এক অগ্রপথিক হিসাবে। গণমাধ্যমে তার উদ্বুদ্ধকরণ প্রচারণায় আমূল পরিবর্তন এসেছে বাংলাদেশের কৃষিতে। বাংলাদেশে খাদ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে সূচিত হয়েছে বৈপ্লবিক সাফল্য।

গ্রামীণ জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এসেছে ইতিবাচক পরিবর্তন। একইসঙ্গে শহর-নগরের মানুষকে করেছেন কৃষিমুখি। ফলে দেশের অর্থনীতিতে কৃষির বহুমুখি অবদান সূচিত হয়েছে।

‘মাটি ও মানুষ’

বাংলাদেশের কৃষিতে গত কয়েক দশকে যে বিরাট পরিবর্তন ঘটেছে, শাইখ সিরাজকে বর্ণনা করা হয় সেই পরিবর্তনের পেছনে অন্যতম প্রধান এক চরিত্র হিসেবে।

বাংলাদেশে যখন বিজ্ঞানীরা একের পর এক নতুন উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান উদ্ভাবন করে চলেছেন, কৃষিতে নতুন ধ্যান ধারণা এবং কৌশল চালুর জন্য সরকারের নানা পর্যায় থেকে চেষ্টা চলছে, সেগুলো সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে বিরাট ভূমিকা রাখে তার কৃষি বিষয়ক অনুষ্ঠান, ‘মাটি ও মানুষ।’

“শুরুতে এই অনুষ্ঠানটা হতো আমার দেশ নামে। তখন এটি ৫০ মিনিটের পাক্ষিক অনুষ্ঠান। পরে এটিকেই ‘মাটি ও মানুষ’ নামে সাপ্তাহিক অনুষ্ঠানে রূপান্তরিত করি। আমার মনে হয়েছিল বাংলাদেশের মানুষের বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানের চেয়ে বেশি দরকার শিক্ষামূলক মোটিভেশনাল অনুষ্ঠান। কৃষকদের যদি নতুন বীজ, নতুন প্রযুক্তি, নতুন কৌশল, এসব ঠিকমত বোঝানো যায়, তাহলে কৃষিতে বিরাট পরিবর্তন নিয়ে আসা সম্ভব।”

গত চার দশক ধরে শাইখ সিরাজ হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশের কৃষকদের কাছে কৃষি বিষয়ক তথ্যের প্রধান উৎস। উনিশ’শ আশির দশকে, যখনো টেলিভিশন ঘরে ঘরে পৌঁছায়নি, তখনো গ্রামের হাটেবাজারে, কমিউনিটি সেন্টারে প্রতি শনিবার সন্ধ্যায় ‘মাটি ও মানুষ’ দেখার জন্য ভিড় করতো মানুষ।

কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৬৮তম জন্মদিন আজ
কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ

তবে কৃষকদের নতুন ধরণের কৃষিতে উৎসাহিত করার কাজটা সহজ ছিল না।

“আজকের কৃষক এবং তিরিশ বছর আগের কৃষকের মধ্যে তফাৎ আকাশ আর পাতাল। তখন কৃষকের কাছে একজন কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা যে কথা বলতেন, একজন টেলিভিশন উপস্থাপক হিসেবে আমি যেকথা বলতাম, সেটা তারা মানতে চাইতো না। তারা ভাবতো, আমরা যেধরণের কৃষির কথা বলছি, যদি সেটাতে ভালো ফসল না হয়? এ কারণে সে সহজে মোটিভেট হতে চাইতো না। সহজে নতুন প্রযুক্তি নিতে চাইতো না।”

“আমি যখন আশির দশকে উচ্চফলনশীল নতুন জাতের ধানের কথা বলছি, গমের কথা বলছি, তখন পরিস্কার তারা আমাকে বলতো এই রাবার ভাত খাবো না। তখন পর্যন্ত উদ্ভাবিত নতুন জাতের ধানের মান তেমন ভালো ছিল না। ভাতটা ছিল রাবারের মতো, ভাতের দানা উপর থেকে থালার উপর ফেললে সেটি রাবারের মতো ড্রপ করতো।”

কিন্তু বিজ্ঞানীরা যখন তাদের গবেষণায় নতুন নতুন সাফল্য পাচ্ছিলেন, আর সেই সঙ্গে শাইখ সিরাজও তার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কৃষকদের মন জয় করার জন্য নতুন কৌশল নিচ্ছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের অশোকা ফেলো শাইখ সিরাজ খাদ্য নিরাপত্তা ও দারিদ্র বিমোচন বিষয়ে সাংবাদিকতায় অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসাবে তিনি ২০০৯ সালে অর্জন করেন জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার এ এইচ বুর্মা এ্যাওয়ার্ড। এ ছাড়া তিনি পেয়েছেন এশিয়ার মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার গুসি পিস প্রাইজ, বৃটেনের বিসিএ গোল্ডেন জুবিলি অনার এ্যাওয়ার্ডস। বৃটিশ হাউজ অব কমন্স তাকে প্রদান করেছে বিশেষ সম্মাননা, বৃটিশ-বাংলাদেশ ব্যবসায়ী সংগঠন তাকে দিয়েছে গ্রীন এ্যাওয়ার্ড। এ ছাড়া পেয়েছেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির স্বর্ণপদক, ডা. ইব্রাহিম মেমোরিয়াল স্বর্ণপদক, রণদা প্রসাদ সাহা স্বর্ণপদকসহ অর্ধশত দেশি-বিদেশি পুরস্কার ও সম্মাননা।

কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ
কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ

চ্যানেল আই ও বাংলাদেশ টেলিভিশনে কৃষি বিষয়ক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত লিখে থাকেন। তিনি এদেশে কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে নিরস বিষয় হিসাবে উপেক্ষিত কৃষিতে জাতীয় সংবাদের প্রধান খবরের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন। শাইখ সিরাজের প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- মৎস্য ম্যানুয়েল, মাটি ও মানুষের চাষবাস, ফার্মার্স ফাইল, মাটির কাছে মানুষের কাছে, বাংলাদেশের কৃষি: প্রেক্ষাপট ২০০৮, কৃষি ও গণমাধ্যম, কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট (সম্পাদিত), আমার স্বপ্নের কৃষি, কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট (২০১১), সমকালীন কৃষি ও অন্যান্য প্রসঙ্গ (২০১১), কৃষি ও উন্নয়ন চিন্তা (২০১৩) ইত্যাদি।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশে হতে পারে সারের সংকট

সারের সংকট
সারের সংকট
সারের সংকট

চলতি বোরো মৌসুমে সার কিনতে কৃষকদের সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা করে বেশি দিতে হয়েছে। আর সরকারকেও সার বাবদ ভর্তুকি দিতে হচ্ছে বাজেটে বরাদ্দের তিন গুণের বেশি—প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশ এখন মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) সার আমদানি নিয়ে বিপাকে পড়েছে।

ধান, আলু ও সবজি চাষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এমওপি সারের ৬০ শতাংশ আনা হতো রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে। ওই দুই দেশ নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়ায় এখন বাংলাদেশকে এমওপি কিনতে হচ্ছে কানাডা থেকে। বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়া ও আমদানিতে অনিশ্চয়তার কারণে বাংলাদেশে সারের সংকট হতে পারে। ভর্তুকির চাপ সামলাতে বাংলাদেশকে সব ধরনের সারের খুচরা মূল্য বাড়াতে হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিবিষয়ক সংস্থা ইউএসডিএর চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ‘বাংলাদেশে সার সরবরাহ ও ব্যবহারে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের এমওপি সারের ২০ শতাংশ সরবরাহ কমানো হলে সামনের বোরো মৌসুমে ধান, গম ও রবি মৌসুমের অন্যান্য ফসলের উৎপাদন ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কমতে পারে। এতে বাংলাদেশের খাদ্য উৎপাদন ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে।

এমনিতেই এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমাদের ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সারের কারণে নতুন করে যাতে আর সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।

এ এম এম শওকত আলী, সাবেক কৃষিসচিব

তবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, দেশে চলতি বোরো মৌসুমে নতুন করে আর সারের দরকার হবে না। সামনে আলুর মৌসুমে ইউরিয়া, এমওপিসহ অন্যান্য সারের চাহিদা বাড়বে। ওই সময়ের জন্য সার সরবরাহ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ কানাডা ও মধ্যপ্রাচ্যের সার সরবরাহকারী দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে।

জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কানাডা থেকে মোট আট লাখ টন এমওপি সার আমদানির উদ্যোগ নিয়েছি। এ ব্যাপারে ওই দেশের সঙ্গে আমাদের সমঝোতা স্মারক হয়েছে। ফলে এই সার নিয়ে সরকারের কোনো দুশ্চিন্তা নেই। তবে সার বাবদ সরকারের বিপুল পরিমাণে ভর্তুকি বাড়ছে। এই চাপ নিয়েও সরকার ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ওই ভর্তুকি দিয়ে যাবে।’

কমানো হয়েছে চাহিদা

বাংলাদেশে চলতি অর্থবছরে ৬৯ লাখ টন রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয়েছে। এর মধ্যে ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি—এই চার ধরনের সার ব্যবহার হয় ৫৭ লাখ টন। আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের ওই চার ধরনের সারের চাহিদা কমিয়ে ৫৫ লাখ ৫০ হাজার টনে নামিয়ে আনা হয়েছে।

দেশে প্রয়োজনীয় সারের ৮০ শতাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এর মধ্যে এমওপি সারের বড় অংশ আসে রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে।

প্রসঙ্গত, ওই চারটি প্রধান সার কৃষকদের কাছে বিক্রির ক্ষেত্রে সরকার ভর্তুকি দিয়ে থাকে। চলতি অর্থবছরে সরকার প্রাথমিকভাবে সারে ভর্তুকি বাবদ ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে গত ছয় মাসে সারের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। বেশির ভাগ সারের দাম তিন থেকে চার গুণ বেড়ে যাওয়ায় সরকারকে ভর্তুকির পরিমাণ ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা করতে হয়। কিন্তু অর্থবছরের শেষের দিকে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে হিসাব করে দেখা হয়েছে, ভর্তুকির পরিমাণ এবার বেড়ে কমপক্ষে ৩০ হাজার কোটি টাকা গিয়ে দাঁড়াবে।

জিপসাম, জিংক সালফেট ও অ্যামোনিয়াম সালফেট ও ম্যাগনেসিয়াম সালফেট সারে সরকার কোনো ভর্তুকি দেয় না। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কিনে ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কাছে তা বিক্রি করে থাকেন। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষককেও বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে।

সাবেক কৃষিসচিব এ এম এম শওকত আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমনিতেই এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমাদের ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সারের কারণে নতুন করে যাতে আর সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। আর সরকারের অন্যান্য খাতের ভর্তুকি কমিয়ে প্রয়োজনে সারে ভর্তুকি বাড়াতে হবে, যাতে সারের দাম কম থাকে। কারণ, কৃষকের হাতে এখন টাকা কম। বিশ্ববাজার থেকেও খাদ্য আমদানি করা সামনের দিনে আরও কঠিন হতে পারে। ফলে দেশের উৎপাদন ঠিক রাখতে সারের দাম ও জোগান ঠিক রাখা উচিত।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোটেক

কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তারা এক সঙ্গে কাজ করতে রাজি

ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকেরাফাইল ছবি
ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকেরাফাইল ছবি

ডাচ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে দুই দেশের বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা একসঙ্গে কাজ করতে রাজি হয়েছেন।

গতকাল সোমবার নেদারল্যান্ডসের রাজধানী হেগে অনুষ্ঠিত কৃষি খাতের ব্যবসাবিষয়ক এক সম্মেলনে দুই দেশের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা সহযোগিতার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।

নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম রিয়াজ হামিদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত এগ্রি বিজনেস কনক্লেভে বাংলাদেশের প্রায় ৪০জন উদ্যোক্তা ডাচ কৃষি খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি প্রযুক্তি সহযোগিতা ও ব্যবসায়িক সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। দিনব্যাপী আয়োজিত অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেছে ওয়েগেনিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়।

আলোচনায় বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা প্রযুক্তি কিনতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দিলে নেদারল্যান্ডসের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা প্রযুক্তি সহযোগিতা দিতে রাজি থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।

রিয়াজ হামিদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে ডাচরা প্রস্তুত এবং বাংলাদেশি উদ্যোক্তারাও তাদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। এ ছাড়া ডাচ সরকার ইতিমধ্যে বাংলাদেশের বীজ, পশু খাদ্য, পোলট্রি, হর্টিকালচার ও এ্যাকুয়াকালচার বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম সম্পাদন করেছে, যা ওই দেশের বেসরকারি খাতকে আরও উৎসাহিত করেছে।

আলোচনায় কৃষি সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করতে তৈরি আছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্কয়ার, ইস্পাহানি এগ্রো, একে খান অ্যান্ড কোম্পানি, প্যারাগন গ্রুপ, এসিআই, জেমকন গ্রুপসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তিনি জানান, মঙ্গলবার বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা ডাচ প্রযুক্তির প্রয়োগ সরেজমিনে দেখতে যাবেন।

বাংলাদেশের সঙ্গে নেদারল্যান্ডসের পোল্ট্রিখাতে সহযোগিতার আলোচনা অনেকটা এগিয়েছে উল্লেখ করে মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, দুই দেশের মধ্যে মৎস্য, পশুপালন ও হর্টিকালচারে সহযোগিতার বিপুল সম্ভাবনা আছে।

কনক্লেভ আয়োজনে প্রথমবারের মতো দূতাবাসের সঙ্গে অংশীদার হয়েছে নেদারল্যান্ডসের কৃষি মন্ত্রণালয়, নেদারল্যান্ডস এন্টারপ্রাইজ এজেন্সি, নেদারল্যান্ডস ফুড পার্টনারশিপ, ডাচ-গ্রিন-হাইজডেল্টা, লারিভ ইন্টারন্যাশনাল, স্টান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ।

কৃষিজাত পণ্য রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থানকারী নেদারল্যান্ডসের আয়তন বাংলাদেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের কম। ২০২১-এ কৃষিপণ্য ও খাদ্য রপ্তানি করে নেদারল্যান্ডস ১১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি আয় করেছে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

পতিত জমিতে চিনাবাদাম চাষে লাভবান হচ্ছেন কৃষক

মেহেরপুর: পতিত ও অনুর্বর বেলে মাটির জমিতে চিনাবাদাম চাষ করে লাভবান হচ্ছেন মেহেরপুরের চাষিরা। ফলন ও বাজার দর ভালো এবং কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় দিন দিন এই এলাকায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বাদামের চাষ। 

সদর উপজেলার মদনাডাঙ্গা, শ্যামপুর, টেংগারমাঠ ও গোপালপুর গ্রামের অধিকাংশ জমির মাটি বেলে। ফলে এই এলাকার চাষিরা ধান, গম, পাটসহ অন্যান্য ফসল আবাদ করে খুব একটা লাভবান হতে পারেন না।

ধান কাটার পর এ সব জমি সাধারণত পতিত থাকে। এজন্য ৯০ দিনের ফসল হিসেবে অল্প খরচে বাদাম চাষ করছেন এলাকার চাষিরা।  

মেহেরপুর জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, জেলায় এবার বাদাম চাষ হয়েছে ১৫ হেক্টর জমিতে। এবার এক বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করতে চাষিদের খরচ হয়েছে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা সেক্ষেত্রে বাদামের ফলন হয়েছে ৬ থেকে ৭ মণ। আর এ  ফলনে প্রায় ২০ হাজার টাকা ঘরে তুলছেন তারা। বাজারে প্রতিমণ বাদাম বিক্রি হচ্ছে ২৭শ’ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত।  সদর উপজেলার মদনাডাঙ্গা গ্রামের বাদাম চাষি খাঁজা আহমেদ, কাওছার আলী ও ফিরোজ হোসেন বাংলানিউজকে জানান, এলাকার মাটি বেলে হওয়ায় সাধারণত সবজি, আলু ও অন্যান্য ফসল চাষ করার পর জমি পতিত থাকে। সে সময়ে চিনা বাদামের চাষ করা হয়। বাদাম চাষে খরচ কম এবং উৎপাদন ও বাজার দর ভাল। তাই দিন দিন চাষিরা তাদের পতিত জমিতে চিনা বাদামের চাষ শুরু করছেন।  

এছাড়া বাদাম ছাড়ানো, শুকানোসহ যাবতীয় কাজ করে থাকেন এখানকার নারীরা। বাদামের গাছ আবার শুকিয়ে জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করছেন গৃহিণীরা।  

নারী শ্রমিক সাহানা খাতুন ও জরিমন নেছা বাংলানিউজকে বলেন, আমরা বাদাম ছাড়ানো ও শুকানোর কাজ করে থাকি। এলাকার ২৫/৩০ জন নারী শ্রমিক এ কাজ করে আসছেন।  
গৃহিণী সাজেদা খাতুন ও জামেলা খাতুন জানান, বাদামের লতা জালানি হিসেবে বেশ ভাল। তাই লতাও বিক্রি হচ্ছে।

মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. আক্তারুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, চিনা বাদামের চাষ সাধারণত পতিত জমিতে হয়ে থাকে। এলাকার চাষিরা এই জমিতে বাদামের চাষ করে বাড়তি আয় করছেন। তাই বাদাম চাষ যাতে আরও সম্প্রসারিত হয় সেজন্য কৃষি বিভাগ চাষিদের বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছে।  

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশক: শাইখ সিরাজ
© ২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। দা এগ্রো নিউজ, ফিশ এক্সপার্ট লিমিটেডের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। ৫১/এ/৩ পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থাপথ, ঢাকা -১২০৫
ফোন: ০১৭১২-৭৪২২১৭
ইমেইল: info@agronewstoday.com, theagronewsbd@gmail.com