আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

পরিবেশ

বটবৃক্ষ বাংলার ইতিহাস-ঐতিহ্যের অংশ

বট, বটগাছ, বটবৃক্ষ। বটকে শুধু বৃক্ষ বললে তার অস্তিত্বকে খাটো করা হবে। বরং বটগাছ বৃক্ষরাজ তথা মহিরুহ। আমাদের উপমহাদেশ তথা বাংলাভাষী অঞ্চলের প্রাচীনতম বৃক্ষ। বট বিশ্বেরও একটি প্রাচীনতম বৃক্ষ। আবার বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ বৃক্ষও। এই চিরহরিৎ সাইকাস বহুবর্ষজীবী তথা পাঁচ থেকে ছয়শ বর্ষী গাছটি নিয়ে এ উপমহাদেশে কত শতসহস্র কাব্য, উপন্যাস, গল্প, নাটক, লোকগাথা, পৌরাণিক কাহিনি ও গান রচিত হয়েছে তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই।

একটা সময় ছিল আমাদের উপমহাদেশে জনপদ মানেই সেখানে একটি বটগাছ থাকবে। আধুনিককালে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হল, কনভেনশন হল ও কনফারেন্স সেন্টার সংস্কৃতি চালু হওয়ায় বটগাছের নিচে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, জনসভা ও জনমিলন আজ ইতিহাস। আমাদের দেশের বেশিরভাগ গ্রাম্যবাজার ও মেলা বটগাছ তথা বটতলাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। আজও অনেক এলাকায় বটতলায় হাট-বাজার বসে, মেলা বসে, নাচ-গান হয়, লোকগানের আসর বসে, জনসভাও হয়। সনাতন ধর্মাবলম্বী ও ভারতীয় উপমহাদেশের অনেক সম্প্রদায়ের কাছে বটগাছকে পবিত্র গাছ বলে মনে করা হয়। ভারত ও বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় বটগাছের নিচে অনেক মন্দির ও মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে।


ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ ও ইতিহাস-ঐতিহ্য তথা কালের সাক্ষী হিসেবে দক্ষিণ এশিয়ার অনেক এলাকায় বটগাছ কাটা নিষিদ্ধ। সীমাহীন উপকারিতা ও ধর্মীয় গুরুত্ব বিবেচনায় বটগাছ ভারতের জাতীয় বৃক্ষ। সনাতন ধর্মে বটগাছের পাতাকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের রেস্টিং পেল্গস হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। বৌদ্ধ ধর্মমতেও বটগাছের আধ্যাত্মিক গুরুত্ব রয়েছে। গৌতম বুদ্ধ বটগাছের নিচে বসে ঈশ্বরের ধ্যানে মগ্ন থাকতেন। আমাদের উপমহাদেশেও অনেক ঋষি-সন্ন্যাসীও বটগাছের নিচে সাধনা করেছেন। অনেক পীর-দরবেশও বটগাছের নিচে আস্তানা গেড়েছেন। বাংলাদেশে অনেক ওলি-আউলিয়ার মাজার রয়েছে বটগাছের ছায়ায়।

প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের বিভিন্ন দেশে বটগাছকে নিয়ে গড়ে উঠেছে নানা রূপকথা। বটগাছকে একটি আগ্রাসী গাছ হিসেবেও বর্ণনা করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে উপগাছা হিসেবে বটগাছ বেড়ে ওঠে। কিছুদিন পরেই তার আশ্রয়দাতা গাছকে গিলে ফেলে। বটগাছের নিচে অন্য কোনো গাছ কেন, ঘাসও জন্মাতে পারে না; অর্থাৎ বটবৃক্ষের ছায়াতলে আরেকটা বৃক্ষ বেড়ে উঠতে পারে না। এমনকি সে তার নিজ গোত্রীয় আরেকটি বটগাছকেও সে তার ছায়াতলে জন্মাতে দেয় না। আমাদের আগ্রাসনে দেশের কত শত সহস্র বটবৃক্ষ ইতোমধ্যে বিলীন হয়েছে তার সঠিক হিসাব নেই।


বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ বটগাছটি ভারতের অল্প্রব্দ প্রদেশে অবস্থিত। প্রায় পাঁচ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত বটগাছটির বয়স সাড়ে পাঁচশ’ বছরেরও বেশি। বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরোনো ও বৃহৎ বটগাছটি প্রায় আড়াই একর ভূমি জুড়ে বিস্তৃত ও আড়াইশ’ বছরের পুরোনো। ঝিনাইদহের কালিগঞ্জ উপজেলার পূর্ব মালিয়াট ইউনিয়নের মল্লিকপুরে অবস্থিত বটগাছটির সৌন্দর্য দেখতে দেশ-বিদেশ থেকে প্রতিদিন পর্যটকরা ছুটে আসেন। একটি এলাকার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এনে দিয়েছে বটবৃক্ষটি। বিশ্বের কোথায় নেই বাংলাভাষী অঞ্চলের আদি বৃক্ষ বটগাছ? যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কোরাল গ্যাবেল্‌সের বটবৃক্ষটি পুরো এলাকার সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও সুনাম এনে দিয়েছে। অনেকে বটগাছকে বনসাই বা বামন করে ঘরে রাখেন শখের বসে, সৌন্দর্যের জন্য। বটগাছের বনসাই সবচেয়ে কষ্টসাধ্য ও মূল্যবান। ভিয়েতনামে রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক বনসাই করা বটগাছটি; যার বয়স আড়াইশ’ বছরের ওপরে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ইতিহাস ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে আছে বটবৃক্ষ। ইন্দোনেশিয়ার কোর্ট অব আর্মস বা জাতীয় প্রতীকে বটবৃক্ষ স্থান পেয়েছে। আমি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করেছি, সেই লন্ডন স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজের লগোতে বিশ্বের সকল দেশ ও মহাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে- এমন দশটি গাছের পাতা স্থান পেয়েছে। যেখানে এশিয়া মহাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করছে বটগাছের পাতা।



মূলত বটবৃক্ষ হলো বিশালতার, ঐশ্বর্যের, সম্মোহনীর, আশ্রয়দাতার, অদম্য শক্তির, কঠিনের বিপরীতে সহজ-সরলতার, ঝড়-ঝাপটায় অদম্য শক্তি নিয়ে টিকে থাকার প্রতীক। আমরা প্রায়শই বলি তিনি আমাকে আগলে রেখেছেন বটবৃক্ষের মতো। এছাড়াও বলি, তার স্নেহচ্ছায়া আমার কাছে বটবৃক্ষের মতো। অন্যদিকে, বটবৃক্ষ আমাদের গ্রামীণ বাংলায় গভীর রাতে চোর-ডাকাতের আশ্রয়স্থল হিসেবেও কাজ করে। বটগাছে অনেক আক্রমণাত্মক সরীসৃপও বসবাস করে। এরা মানুষজনকে তাদের আশ্রয়স্থলের কাছে ভিড়তে দেয় না বলে অনেক সময় সুযোগ পেলেই কামড়ে দেয়। আর এটিই এলাকায় চাউর হয়। একসময় হয়ে যায় লোককথা বা মিথ। অপবাদ দেওয়া হয় ‘ দোষী বটগাছ’ বলে।

একটি পরিপূর্ণ বটগাছ অন্তত সাড়ে তিনশ প্রজাতির পাখি ও কীটপতঙ্গের আশ্রয়স্থল। বটের ফল হলো কাক, শালিক, বাদুড়ের প্রিয় খাদ্য। বটগাছ হলো শকুনসহ নানা রকম পাখির নিরাপদ আশ্রয়স্থল। বাংলাদেশে শকুন বিলুপ্তির সঙ্গে বটগাছ ধ্বংসের কার্যকারণ সম্পর্ক রয়েছে। এছাড়া একটি এলাকার আবহাওয়া ও জলবায়ু তথা সার্বিকভাবে ভূপ্রকৃতির ওপর ব্যাপক প্রভাব রাখে বটবৃক্ষ। অন্য গাছ থেকে বটগাছের তুলনামূলক অনেক বেশি পাতা থাকায় সালোক সংশ্নেষণকালে অন্য গাছ থেকে বটগাছ কয়েকগুণ বেশি অপিজেন ত্যাগ করে ও বহুগুণ কার্বন ডাই-অপাইড পরিবেশ থেকে শুষে নেয়। এভাবে পৃথিবীকে প্রাণিকুলের জন্য বসবাসযোগ্য করতে অন্যান্য গাছ থেকে বটগাছের ভূমিকা তুলনামূলক বেশি। এছাড়া একটি পরিপূর্ণ বটগাছ গড়ে প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭০ গ্যালন জলীয়বাষ্প ত্যাগ করে, যা একটি এলাকার আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা রাখে।

একেকটি বটগাছ যেন একেকটি প্রাকৃতিক শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র। যেহেতু এর শিকড় বিশাল এলাকা ও গভীরে প্রোথিত, তাই ভূমিক্ষয় রোধেও বটগাছের রয়েছে বিশেষ ভূমিকা। আমাদের দেশের নদীভাঙন এলাকায় দেখা যায় যেখানে বটগাছ রয়েছে, সেখানে ভূমি নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ার ঘটনা সাধারণত কম। এছাড়া বটগাছের ছাল, পাতা, ফল, মূল ও আঠার ঔষধি গুণ আয়ুর্বেদীয় চিকিৎসার এক অমূল্য সম্পদ।

আমরা বলি ছায়া-সুনিবিড় সবুজে ঘেরা বাংলাদেশ। বাংলাদেশকে বটবৃক্ষ যতটুকু ছায়া-সুনিবিড়তা দান করেছে, তা অন্য গাছের সঙ্গে অতুলনীয়। আমরা বটগাছের ছায়ার বিশালতাকে বিভিন্ন উপমা ও গানে ব্যবহার হতে দেখি। আমাদের দেশের একটি লোকগানে রয়েছে ‘বটবৃক্ষের ছায়া যেমন রে, মোর বন্ধুর মায়া তেমন রে…।’ সবকিছু ছাড়িয়ে আমাদের জাতীয় সংগীতেও বটগাছ স্থান পেয়েছে। যেমন- ‘কী শোভা, কী ছায়া গো, কী স্নেহ, কী মায়া গো, কী আঁচল বিছায়েছ বটের মূলে, নদীর কূলে কূলে।’ বাঙালির সর্বজনীন উৎসব পহেলা বৈশাখ উদযাপনের যাত্রার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে রমনা বটমূলে ছায়ানটের শিল্পীদের পরিবেশনা। অন্যদিকে কলকাতার শোভাবাজার-চিৎপুর এলাকার একটি বিশাল বটগাছকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে বাংলা সাহিত্যকর্ম মুদ্রণ ও প্রকাশনা শিল্প। সেখান থেকে প্রকাশিত সাহিত্যকর্মগুলো ‘বটতলার পুথি’ বা ‘বটতলার সাহিত্য’ নামে পরিচিত।


আবার আমাদের এপার-ওপার বাংলার সভা-সমিতি ও বহু রাজনৈতিক আন্দোলনের সঙ্গে বটগাছ বিশেষত বটতলা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ব্রিটিশ ঔপনিবেশমুক্ত হয়ে পাকিস্তান রাষ্ট্রের শুরুতে পূর্ব বাংলার রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উর্দু চাপিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে বাঙালির প্রতিবাদের সঙ্গে বটতলা জড়িয়ে আছে। ১৯৪৮ সালের ১৬ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় অনুষ্ঠিত সাধারণ ছাত্রসভা থেকেই ভাষা আন্দোলন বেগবান হয়। ওই সভায় সদ্য কারামুক্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সভাপতিত্ব করেন। পরে সেই আন্দোলন ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির প্রতিবাদের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে। বাঙালির প্রথম সফল প্রতিবাদ এটি। বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত গড়ে দেয় এ আন্দোলন। বাঙালির অন্য সফল আন্দোলন উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানেরও সূত্রপাত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা থেকে। যার নেতৃত্বে ছিলেন ডাকসুর তৎকালীন ভিপি তোফায়েল আহমেদ; যা বাঙালির স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন থেকে স্বাধীনতার আন্দোলনের পথ প্রশস্ত করে।


গত ৯ জানুয়ারি হবিগঞ্জের লাখাইর রুহিতনসীর অপরূপ সৌন্দর্যের বটগাছটি দেখে আসি। এই গুরুত্বপূর্ণ বাজারটি বটগাছকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে। আর সে জন্যই এর নাম বটতলী বাজার। এভাবে বাংলার বিভিন্ন এলাকায় বটতলী বাজার বা বটতলা নামে নামকরণ হয়েছে। বটগাছ হলো বাংলার ইতিহাস ঐতিহ্যের অংশ।

পরিবেশ

ছাদ বাগানের জন্য কয়েকটি টিপস

ছাদ বাগানীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। টবে, ড্রামে গাছ লাগানো হয়। কেউ ফল, কেউবা সবজির গাছ লাগান। কেউ সফল হন। কেউ সফল হন না। ছোট ছোট কিছু ভুল বাগানীরা করে থাকেন। সে কারণে যত্ন নিলেও ফল আসে না। এখানে ছাদ বাগানীদের জন্য কিছু টিপস দেয়া হলো, যা মানলে সফলতা পাওয়া সহজ হতে পারে।

প্রথমেই মনে রাখতে হবে, টবে বা ড্রামে গাছ লাগালে তাকে খাবার দিতে হবে। প্রকৃতিতে বিদ্যমান গাছের মতো সে খাবার সংগ্রহ করতে পারে না। রোগ-বালাই হলো কিনা সেটাও বুঝে ব্যবস্থা নিতে হবে। ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে।

১. মাটির সাথে অবশ্যই কিছু কোকোপিট মেশাবেন। গাছের গোড়া স্যাতস্যাতে হতে দিবেন না। স্যাতস্যাতে হলে অসংখ্য রোগ হবে। মাটি ভেজা থাকবে তবে স্যাতস্যাতে না। কেকোপিট মেশালে পানি কম দিলেও হবে। কোকোপিট (নারকেলের ছোবলার গুড়া) পানি ধরে রাখে। অতি বৃষ্টি হলে গোড়ায় পানি জমতে দেয় না। হালকা হওয়ায় ছাদে ওজনের চাপ পড়ে না। এছাড়া কোকোপিটে কিছু পুষ্টি উপাদান আছে। যা গাছের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। কোকোপিটে চারা দ্রুত গজায়, বড় হয়। মাটির চেয়ে কোকোপিটে চারা ভালো হয়।

২. গাছের জন্য বিরিয়ানি হলো সরিষার খৈল-পচা পানি। মাটির হাড়িতে খৈল পচাতে হবে। কমপক্ষে ৫ দিন। ৭ দিন কিংবা বা ১৫ দিন হলে উত্তম। অল্প পানিতে পচিয়ে তার সাথে আরো পানি মিশিয়ে দিতে হবে। এটি গাছের জন্য অত্যন্ত উপকারী। একটু গন্ধ হয়, তাই অল্প একটু গুড় দিতে পারেন। ছাদে হাড়িতে পচালে বাসায় গন্ধ আসবে না। বৃষ্টির সময় খৈল-পচা পানি দেবেন না। পুকুরের নিচে থাকা পাক কাদা গাছের জন্য খুব উপকারী।

৩. আমরা জানি, মাটিতে অসংখ্য ক্ষতিকর ছত্রাক থাকে। যা গাছকে মেরে ফেলার জন্য যথেস্ট। তাই মাটি রেডি করার সময় কিছুটা বায়োডামা সলিট দিবেন। এটি উপকারী ছত্রাক। মাটিতে ক্ষতিকারক উপাদানগুলো মেরে ফেলে। আবার জৈব সারের কাজও করে। গাছের জন্য মাটি হবে ঝুরঝুরে, হালকা।

৪. যাই লাগান না কেন, ভালো জাতের বীজ কিনা নিশ্চিত হয়ে নেবেন। ভালো বীজে ভালো ফসল হবে। নতুবা যতই যত্ন নেন না কেন, সব পরিশ্রম বেলাশেষে জলে যাবে। বীজ থেকে নিজে চারা করা উত্তম। কারণ বাজার থেকে যে চারা কিনবেন সেটার জাত ভালো হবে সে নিশ্চয়তা কোথায়? ছত্রাকনাশক দিয়ে বীজ শোধন করে নেয়া উত্তম। পদ্ধতি হলো- ছত্রাকনাশক দেয়া পানিতে কিছুটা সময় বীজ ভিজিয়ে রাখতে হবে। ম্যানসার, মেটারিল দুটি ছত্রাকনাশক।

৫. গাছ বেশি তো ফলন বেশি- এটি ভুল ধারণা। অল্প জায়গায় বেশি গাছ লাগানো যাবে না। গাছ পাতলা করে লাগাতে হবে। বেশি লাগালে গাছ প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাবে না। একটি ফলের ক্রেটে মাত্র দুটি গাছ। একটি টবে একটি গাছ। ক্রেট বা টবে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।

৬. ছাদে মাচা দেয়া সমস্যা। কারণ ঘুঁটি থাকে না। এ জন্য ফলের ক্রেটের চারপাশে লাঠি বেঁধে সহজে মাচা দেয়া যায়। লতাপাতা জাতীয় গাছ লাগানোর পাত্র একটু গভীর হলে উত্তম। গাছের জন্য সবচেয়ে বেশি ভালো জৈব সার হলো পাতা-পচা সার, তারপর ভার্মি কম্পোস্ট, তারপর গোবর সার। পাতা-পচা সার সহজলভ্য নয়। দাম বেশি। কিন্তু ভার্মি কম্পোস্ট সহজলভ্য। মাটির সঙ্গে মিনিমাম ৪০% জৈব সার দেয়া উত্তম।
৭. নিম কীটনাশককে ক্ষতিকারক পোকা-মাকড় খুব অপছন্দ করে। এটি দিলে তারা বিরক্ত বোধ করে। গাছে বাসা বাঁধতে পারে না। প্রতি সাত দিনে একবার সব গাছের পাতায় নিম কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। মাসে একবার ইপসম সল্ট স্প্রে করে দেয়া উত্তম। একইভাবে মাসে একবার পানির সঙ্গে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড মিশিয়ে স্প্রে করা ভালো।

৮. ডাটা, পুইশাক, লালশাক, ধনেপাতা এসব লাগাতে পারেন। মাত্র ২৫ দিনে খেতে পারবেন। লালশাক লাগালে নেট দিয়ে ঘিরে দেবেন। শাকপাতা লাগালে দ্রুত আউটপুট পাবেন। যা আপনাকে প্রেরণা দেবে। পুইশাক গাছের পাতায় দাগ হলে পাতা কেটে দিন। অথবা ছত্রাকনাশক স্প্রে করেন। অথবা গাছ উঠিয়ে আবার লাগান। ইউরিয়া সার দিলে পুইশাক দ্রুত বাড়বে। শশা গাছের বৃদ্বির জন্য ডিএপি সার দিলে ভালো হবে। শশা গাছে ছাড়া ছাড়া ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হয়। খুব রোদ, গাছের গোড়ায় মালচিং করে দিয়ে উত্তম ফল মিলবে। মালচিং হলো গাছের গোড়ায় বিশেষ পলিথিন কিংবা শুকনো পাতা, খড় দিয়ে ঢেকে দেয়া।

৯. ফুল আসার পরে প্রানোফিক্স অথবা মিরাকুরান গাছের পাতায় শেষ বিকালে স্প্রে করবেন। বাসায় দুইটি গ্রুপের ছত্রাকনাশক রাখা ভালো। যেমন- ম্যানসার, মেটারিল। ১৫ দিনে একবার স্প্রে করবেন। এগরোমিন্ড গোল্ড অনুখাদ্য বা অন্য কোনো অনুখাদ্য বাসায় রাখতে হবে। মাসে কমপক্ষে একবার স্প্রে করবেন। অতিরিক্ত গরম, বৃষ্টি, খাদ্যের অভাব, গাছ রোগাক্রান্ত, আবহাওয়া দ্রুত আপডাউন করা ইত্যাদি কারণে ফুল ঝরে পড়তে পারে। আবার পরাগায়ন না হলে ঝরে পড়তে পারে। এ জন্য হাতের মাধ্যমে পরাগায়ন করতে হবে। পুরুষ ফুলের পরাগদণ্ড নারী ফুলে গর্ভে ঘষে দিতে হবে।

১০. ছাদ বাগানে গাছ মারা যাওয়ার অন্যতম কারণ পানি বেশি বা কম দেয়া। যতটুকু লাগে ঠিক ততটুকু পানি দিতে হবে। কোন গাছের কি চাহিদা, রোগ একটু স্টাডি করলে সহজে সফল হতে পারবেন।

১১. গাছের পাতার নিচে খেয়াল করবেন। বেগুন গাছের পোকা মারার জন্য সেক্স ফোরেমান ফাঁদ লাগাবেন। ডগা ছিদ্র বা ফল ছিদ্র হলে সাইপারমেত্রিন গ্রুপের কীটনাশক দিতে হবে। একটি বেগুন গাছ অনেক দিন ফল দেয়। ঢেড়স গাছ বেশি রোদ পড়ে এমন জায়গায় লাগাবেন। বেগুন, ঢেড়স, লালশাক, পুইশাক, ধনেপাতা, ডাটা শাক- এসব গাছের খুব যত্ন করতে হয় না।

১২. রসুন আর লবঙ্গ বেটে সেই পানি গাছে স্প্রে করলে পোকা কম আসবে। মরিচ গাছে নেপথলিন বেঁধে দিন, পোকা কম আসবে। পাতা কোকড়ালে ভার্মিটেক কিংবা এবোম কীটনাশক দিন। কোকড়ানো পাতা ফেলে দিন। মরিচ গাছে দশ দিন পর পর ডায়মেথট গ্রুপের (যেমন টাফগর) কীটনাশক দিলে উপকার হবে। সবকিছু করছেন, তারপরও কাজ হচ্ছে না। এক্ষেত্রে গাছের জায়গা বদল করেন, উঠিয়ে অন্যত্র লাগান।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

দৈনন্দিন

নিপাহ্‌ ভাইরাসঃ খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়

নিপাহ্‌ ভাইরাস খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়
নিপাহ্‌ ভাইরাস খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়
খেজুরের রস সংগ্রহের প্রক্রিয়া।

শীতকাল এলেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে খেজুরের রস খাওয়ার চল বেড়ে যায়। অনেকে গাছ থেকে খেজুরের কলসি নামিয়ে সরাসরি কাঁচা রস খেয়ে থাকেন।

আবার অনেকে এই রস চুলায় ফুটিয়ে সিরাপ, পায়েস বা ক্ষীর বানিয়ে খান। এছাড়া রসের তৈরি ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়, ভেলি গুড়, বালুয়া গুড়, মিছরি গুড়সহ নানা ধরণের পিঠার বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।

নিপাহ্‌ ভাইরাস আতঙ্ক

খেজুর আরব দেশের প্রচলিত ফল হলেও ওইসব দেশে খেজুর, মূলত ফল উৎপাদননির্ভর, যেখানে কিনা বাংলাদেশের খেজুর গাছ রস উৎপাদননির্ভর।

কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, বাংলাদেশে সাধারণত কার্তিক থেকে মাঘ অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ হয়ে থাকে।

দেশটির সবচেয়ে বেশি রস সংগ্রহ হয় যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে।

মূলত খেজুর গাছের ডালপালা পরিষ্কার করে, ডগার দিকের কাণ্ড চেঁছে তাতে একটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি চোঙ বসিয়ে দেয়া হয়। চোঙের শেষ প্রান্তে ঝুলিয়ে দেয়া হয় একটি মাটির হাড়ি বা কলসি।

সেই চোঙ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রস এসে জমা হতে থাকে মাটির হাড়ি বা কলসিতে। এভাবে একটি গাছ থেকে দৈনিক গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লিটার রস সংগ্রহ করা যায় বলে কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গিয়েছে।

কিন্তু গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে নিপাহ্‌ ভাইরাস আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

পরিবেশ

জেনে নিন এই মরসুমে কোন কোন ঔষধি উদ্ভিদের চাষ আপনার জন্য সেরা

দেশের বিভিন্ন রাজ্যেই বর্ষার (Monsoon 2021) প্রভাবে চলছে বৃষ্টিপাত। এসময় কৃষকেরা খারিফ শস্য (Kharif Crops) বপনে তৎপর হয়ে ওঠেন। এই খরিফ মরসুমে কৃষকভাইরা সাধারণত অঞ্চলভেদে ধান, অড়হর, সোয়াবিন সহ বিভিন্ন চাষে মনযোগ দিয়ে থাকেন ৷ তবে এসব ছাড়াও, ঔষধি গুন সমৃদ্ধ (Medicinal Crops) গাছ চাষে বর্ষায় যে কতটা লাভ হতে পারে সে সম্পর্কে অনেকেই হয়তো জানেন না৷

বিশেষ করে বর্ষাকালেই এমন বহু ঔষধি গুন সম্পন্ন গাছ রয়েছে যাদের চাষ হতে পারে লাভজনক৷

বর্ষাকালে কোন কোন ঔষধি উদ্ভিদের চাষ করা যেতে পারে অথবা এই চাষ কীভাবেই বা করা যাবে সে বিষয়ে সঠিক তথ্য না পাওয়ার কারণেই অনেকের কাছে বিষয়টি অধরা৷ চলুন এই প্রতিবেদনে এমনই কিছু গাছ নিয়ে আলোচনা করা যাক যা কৃষকদের জন্য হতে পারে লাভদায়ক৷ তবে সঠিক সময়ে, সঠিক রোপন, সেচ, কীটনাশক দেওয়ার প্রয়োজন এগুলিতে, না হলে এর ওপর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে৷

অশ্বগন্ধা –

বর্ষায় এর চাষ ভালো৷ জুন থেকে অগস্ট পর্যন্ত এর চাষ করতে পারেন৷ এর বিভিন্ন জাত রয়েছে৷ উন্নত মানের গাছের চাষে কৃষকের লাভের পরিমাণও বৃদ্ধি পেতে পারে৷ উল্লেখ্য, প্রতি হেক্টরে ৫ কিলোগ্রাম বীজ ব্যবস্থা করতে হবে৷ যদি কেউ ১ হেক্টর জমিতে অশ্বগন্ধার চাষ করতে চায় তাহলে তাকে প্রায় ৫০০ বর্গমিটারে নার্সারি তৈরি করতে হবে৷ প্রায় ১ সেন্টিমিটার গভীরে বীজ বপন করতে হবে৷

শতমূলী –

শীত বাদ দিয়ে বছরের যে কোনও সময়ে এই গাছের চাষ করতে পারেন৷ বর্ষাকালে এই চারা রোপন করলে সহজেই তা বেড়ে উঠতে থাকে৷ তবে বীজ বপনের আগে বীজ ১ দিন পর্যন্ত হালকা গরম জলে ভিজিয়ে রাখতে হয়৷

যষ্টিমধু –

জুলাই থেকে অগস্ট পর্যন্ত এর চাষ করা হয়৷ আর তাই জুন থেকেই এর প্রস্তুতি শুরু করে দেন কৃষকেরা৷ জলনিকাশি ব্যবস্থা উচ্চমানের হওয়া প্রয়োজন এই গাছ চাষের জন্য৷ মনে রাখতে হবে এর চাষের আগে জমিতে কমপক্ষে ১৫ টন গোবর সার দেওয়া প্রয়োজন, এরপরেই এটি চাষ করা উচিত৷

ঘৃতকুমারী –

এর ভালো উৎপাদনের জন্য জলনিকাশি ব্যবস্থা ঠিক রাখতে হবে৷ এই ধরনের ঔষধি গুনসম্পন্ন গাছ শীতকাল বাদ দিয়ে যে কোনও সময় চাষ করতে পারেন৷ বর্ষাকালে দূরত্ব রেখে বীজ বপন করতে হবে৷ কম সময়ের মধ্যেই ব্যবহারোপযোগী হয়ে ওঠে এগুলি৷

অগ্নিশিখা বা কলিহারি –

এটি চাষের জন্য কৃষকেরা জুন মাসেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন৷ জুলাইয়ে ভালো বৃষ্টিতে এর চাষ শুরু করা যেতে পারে৷ উল্লেখ্য, ১ হেক্টর জমির জন্য প্রায় ১০ ক্যুইন্টাল কন্দের প্রয়োজন৷ এটি চাষের আগেও জমিতে গোবর সার প্রয়োগ করে তা প্রস্তুত করে নিতে হবে৷

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

পরিবেশ

শিখে নিন টবে দারুচিনির চাষের কৌশল

পৃথিবীতে ভোজ্য মসলা যতরকম আছে তারমধ্যে দারুচিনি সবথেকে উল্লেখযোগ্য। এই প্রাচীনতম মসলা বহুদিন ধরে ওষধি হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে চলেছে। এছাড়াও খাবারে স্বাদ বাড়ানো থেকে শুরু করে, পানীয় এবং তরল মশলাদার খাবারে স্বাদ বাড়ানোর জন্যও এই দারচিনির ব্যবহার হয়। এলাচ, গোলমরিচ, লবঙ্গের সাথে সাথে দারুচিনির নামও মসলা হিসেবে একই পংক্তিতে উচ্চারিত হয়। বহু কৃষক দারুচিনির চাষ করে ভীষণভাবে উপকৃত হয়েছেন। বাজারে এই দারুচিনির চাহিদা প্রচুর পরিমানে থাকায়, এই চাষে ভালো লাভ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও সৌখিন মানুষেরাও ভালোবেসে দারুচিনির চাষ বাড়িতে করে থাকেন। দারুচিনি গাছের বাকল, ফুল, কুঁড়ি, পাতা, ফল, শেকড় সবকিছুই কাজে লেগে যায়। দারুচিনি গাছ বাড়িতে চাষ করতে গেলে ঘরে ছাদে দুই জায়গাতেই চাষ করা যায়।

মনে রাখতে হবে এই চাষ করতে গেলে উপযুক্ত পরিমানে রোদ দরকার। বাংলার জলবায়ুতে মূলত শীতকালে এই চাষ করা সবথেকে ভালো। জানুয়ারি মাসে দারুচিনি গাছে ফুল ফোটা আরম্ভ করে, এবং এই গাছের ফল পাকতে আরম্ভ করে জুলাইয়ে। সেইসময়ই ফল থেকে বীজ সংগ্রহ করে নিয়ে এসে বাগানে বা টবে রোপন করে দেওয়া উচিত।

প্রয়োজনীয় রোদ (Sunlight)

কড়া সূর্যালোক দারুচিনি জন্য প্রয়োজনীয়, তাই এটি পর্যাপ্ত রোদ পাওয়া যায় এমন জায়গায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দারুচিনি রোপন করতে গেলে রৌদ্রোজ্জ্বল স্থান যেমন জানালার ধারে, ব্যালকনি কিংবা ছাদের খালি স্থান ব্যবহার করতে হবে।

উপযুক্ত মাটি (Soil)

দারুচিনি চাষের জন্য ভাল মানের মাটি ব্যবহার করা আবশ্যক। বাগানের মাটি ব্যবহার না করাই ভালো, কেননা এতে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। অনে সময় আমরা আশেপাশ থেকে মাটি নিয়েই টব ভরে গাছ লাগানো হয়।  বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সংবেদনশীল গাছগুলোতে এই উপায় কার্যকরী হয় না। নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভাল এমন মাটি ব্যবহার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে উত্তম নিষ্কাশনযুক্ত বেলে দোআঁশ মাটি ব্যবহার করা সবথেকে উত্তম। জেনে রাখা ভালো দারুচিনি খরা একদমই সহ্য করতে পারে না। মাটির বিকল্প হিসেবে ১৫% ট্রাইকোকমপোস্টযুক্ত কোকোডাস্ট ব্যবহার করা যেতে পারে।

বাইরে চাষ করার জন্য এক মিটার (৩০ সেন্টিমিটার গভীর) পর্যন্ত গর্ত করে মাটি দিয়ে পূরণ করে নিতে হবে। ঘরের ভিতরে বা ছাদবাগানের দারুচিনি চাষের জন্য একটি বড় পাত্র প্রয়োজন হবে।

রোপন (Planting)

দারুচিনির বীজ সংগ্রহও করা যায় অথবা নার্সারি থেকে দারুচিনির গাছ কিনেও আনা যায়।

বাইরে চাষের ক্ষেত্রে

দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে ১ মিটার x ১ মিটার এবং ৩০ সেমি গভীরতায় খনন করে মাটি দিয়ে গর্তটি পূরণ করতে হবে।

ঘরের মধ্যে টবে রোপনের ক্ষেত্রে

নিচে গর্ত সহ বড় সিরামিক পাত্র (৬০ x ৫০ সেমি) ব্যবহার করতে হবে। পাত্রটি মাটি বা কোকোডাস্ট দিয়ে পূরণ করে নিতে হবে। ৩০ সেন্টিমিটার গভীরতা এবং ৩০ সেন্টিমিটার প্রস্থের একটি গর্ত তৈরি করতে একটি বাগান ট্রোয়েল ব্যবহার করে নেওয়া ভালো। বীজ ব্যবহার করলে  ১.৫ সেন্টিমিটার গভীর গর্ত তৈরি করে নেওয়া উচিত। এবার গাছটি গর্তের মধ্যে রেখে মাটি দিয়ে চাপা দিতে হবে। বীজ ব্যবহার করলে প্রতি ১.৫ সেমি গর্তে একটি করে বীজ পুঁততে হবে এবং মাটি দিয়ে বীজটি ঢেকে দিতে হবে।

মাটি সবসময় ভেজা রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণ জল দিতে হবে। দারুচিনি গাছ পাত্রে রোপন করার পর, টবের নিচের গর্ত থেকে জল বের না হওয়া পর্যন্ত জল দিতে হবে। টবের উপরের ৫ সেন্টিমিটার শুকিয়ে গেলেই আবার গাছটিকে জল দিতে হবে।

গাছের পরিচর্যা (Caring)

দারুচিনি গাছে নিয়মিত সার প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম বছর ৫০ গ্রাম টিএসপি, ৭৫ গ্রাম এমওপি ও ৫০ গ্রাম ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে। প্রতিবছর ২-৩ কেজি ট্রাইকোকম্পোস্ট ও সার প্রয়োগ শেষে একই হারে টিএসপি, এমওপি ও ইউরিয়া দিতে হবে।

দারুচিনি প্রথম ধরতে দুই থেকে তিন বছর সময় নেয় এবং তার পরে প্রতি দুই বছর পরপরই ফসল দিতে থাকে। দারুচিনি গাছ কম করে ১০-১৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। তাই একে নিয়মিত করে ছোট রাখতে হবে। পাঁচ বছর বয়সী দারুচিনি গাছ থেকে নিয়মিত দারুচিনি সংগ্রহের ডাল পাওয়া সম্ভব। দারুচিনি ব্যবহার করার জন্য যে শাখাগুলি কাটা হবে সেগুলি থেকে বাকল তুলে নিতে হবে, বাকলগুলি ব্যবহার করার আগে জলে ভালোভাবে ভিজিয়ে নেওয়া উচিত।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

আঙিনা কৃষি

টবে লাগান মিষ্টি তেঁতুল গাছ

পৃথিবীতে জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, হারিয়ে যাচ্ছে বহু প্রাণী ও উদ্ভিদ বৈচিত্র। চাষবাসের জমিরও সংকুলান ঘটছে সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে। গগনচুম্বী বাড়ি ঘিরে ফেলছে সমস্ত ফাঁকা জমিন। শখ করে মানুষ খোলা জায়গায় যে গাছ লাগবে অথবা ফল-ফুলের চারা সেই উপায়ও আর নেই। গাছ লাগানোর জন্য সামান্য জায়গাও ফাঁকা থাকছে না আর। তবে আমাদের করণীয় কী? বৃক্ষরোপন কি তবে অচিরেই বন্ধ হয়ে যাবে। বেঁচে থাকার জন্য তো গাছ লাগাতে হবেই। বাড়ির একটুকরো বারান্দা অথবা ব্যালকনিতেও সুন্দর ভাবে ইচ্ছা করলে গাছ লাগানো যায়। বাড়ির ছাদেও বানানো যায় সুন্দর বাগিচা। শহরের মানুষদের জন্য ছাদ বাগানের কোনও বিকল্পও নেই। বাড়ির মধ্যেকার ব্যালকনি অথবা ছাদের একটুকরো জমিতেও, ইচ্ছা করলে টবে চাষ করা যায় বিভিন্ন ফুলের ও ফলের গাছ।

শাকসবজি, পেয়ারা, লেবু প্রভৃতি দেশীয় গাছ টবে বাড়তে দেওয়া থেকে শুরু করে বর্তমানে বহু বিদেশী গাছের চারাও মানুষ ব্যালকনি অথবা ছাদে চাষ করছেন। তার মধ্যে থাই মিষ্টি তেঁতুল টবের চাষ পদ্ধতি হিসাবে অত্যন্ত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। প্রথমত মিষ্টি তেঁতুলের চাষ করতে গেলে, নার্সারি থেকে এই বিশেষ তেঁতুলের সঠিক বীজ নিয়ে আনতে হবে। তবে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কলম পাওয়া একটু দুষ্কর কাজ। বুঝে সঠিক চারা নিয়ে আসা বাগান মালিকের উপরেই বর্তায়।

থাই মিষ্টি তেঁতুলের ফুল থেকে ফল ধরতে প্রায় ৭ মাস সময় লাগে। বছরে দু’বার থাই মিষ্টি তেঁতুলের গাছে ফল ধরে। প্রথমবার বর্ষাকালে এবং দ্বিতীয়বার শীতকালে। এই গাছের পরিচর্যা আলাদা করে করার কোনও দরকার পড়ে না। গাছের যত্নআত্তি নিতে হয় ঠিকই, কিন্তু তা বলে, আলাদা করে কোনও বিশেষ যত্ন নিতে হয় না।

গাছ লাগানোর পদ্ধতি (Planting):

থাই মিষ্টি তেঁতুল চাষের জন্য আদর্শ মাটি হল, দো-আঁশ বা বেলে দো-আঁশ মাটি। এই দু’টি মৃত্তিকার মধ্যে যে কোনও একটি বেছে নিন। তারপর বেছে নেওয়া মাটির দুই ভাগ অংশের সাথে গোবর, ১০০ গ্রাম, টিএসপি ১০০ গ্রাম, পটাশ, ২৫০ গ্রাম, হাড়ের গুঁড়ো এবং ৫০ গ্রাম সরিষার খোল একসঙ্গে মিশিয়ে ২০ ইঞ্চি মাপের বড় টবে জল মিশিয়ে রেখে দিতে হবে। ১০ থেকে ১২ দিন পর টবের মাটি ভালো করে খুঁচিয়ে দিয়ে আরও ৪-৫ দিন রেখে দিতে হবে। ৪ থেকে ৫ দিন বাদে মিষ্টি তেঁতুলের একটি ভালো চারা ওই টবে লাগান।

পরিচর্যা(Caring):

চারা লাগানোর প্রথম কয়েক মাস তেমন যত্নের দরকার পড়বে না। অবশ্যই গাছে এই সময়টুকু পর্যাপ্ত জলের যোগান, এবং আগাছা পরিষ্কারের কাজ করতে হবে।  ছয় মাস চারা লাগানোর সময়সীমা ফুরোলেই ১ মাস বাদে বাদে গাছে সরষের খোল মিশ্রিত পচা জল দিতে হবে। মনে রাখতে  হবে খোল দেওয়ার আগে গাছের মাটি খুঁচিয়ে নিতে হবে।

রোগ দমন (Disease management):

সাধারণত থাই মিষ্টি তেঁতুল গাছে পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখা যায় না। কিন্তু বর্ষাকালে অনেক সময় তেঁতুল গাছে ছত্রাক হানা দেয়। এর ফলে তেঁতুল ফেটে যায়। এই অসুবিধার থেকে গাছকে বাঁচাতে হলে, বর্ষাকাল আসার আগেই ভালো ছত্রাকনাশক ওষুধ ১০ দিন অন্তর গাছে স্প্রে করে ছড়িয়ে দিতে হবে।

বাংলার বেজায় টক তেঁতুলের সঙ্গে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কোনও তুলনাই চলে না। অত্যন্ত মিষ্টি খেতে এই তেঁতুল থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়ায় চাষ প্রভূত পরিমাণে হলেও, আমাদের রাজ্য এই ফলের চাষ এখনও ততটা গতি পায়নি। কিন্তু আপনি আপনার ব্যালকনি অথবা ছাদে সহজেই এই থাই তেঁতুলের গাছ লাগাতে পারেন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশক: শাইখ সিরাজ
© ২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। দা এগ্রো নিউজ, ফিশ এক্সপার্ট লিমিটেডের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। ৫১/এ/৩ পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থাপথ, ঢাকা -১২০৫
ফোন: ০১৭১২-৭৪২২১৭
ইমেইল: info@agronewstoday.com, theagronewsbd@gmail.com