ফুলকপিতে আছে ওজন কমানো ও হজমশক্তি বাড়ানোর জন্য ফাইবার; আছে কোলাইন, যা স্মৃতিশক্তির জন্য প্রয়োজন। এ ছাড়া অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদানে পূর্ণ এই ফুলকপি। এতে রয়েছে ক্যানসার প্রতিরোধী গুণ। ফলে প্রতিদিনের খাবারে শীতকালীন এই সবজির গুরুত্ব আছে অনেক।
বিভিন্নভাবে ফুলকপি খাওয়া যায়। শুধু একটু উদ্ভাবনী চিন্তার প্রয়োগেই ফুলকপি দিয়ে বানানো যায় সুস্বাদু সব খাবার। ফুলকপি দিয়ে বানানো খাবার একই সঙ্গে সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণে পরিপূর্ণ।
রেসিপি দিয়েছেন জিনাত নাজিয়া, সেলিনা আক্তার ও শুভাগতা গুহরায়।বিজ্ঞাপন
ফুলকপির ভাজা ভাত
উপকরণ
ফুলকপি ১টি (মাঝারি), ডিম ৩টি (তেলে দিয়ে ঝুরি করে নিন), মুরগির বুকের মাংস ১ কাপ (কিউব করে কাটা), বরবটি ১ কাপ, গাজর ১ কাপ, ময়দা ২ টেবিল চামচ, সাদা গোলমরিচের গুঁড়া ১ চা-চামচ, পেঁয়াজপাতা পরিমাণমতো, লবণ পরিমাণমতো, তেল/ঘি/বাটার অয়েল ৩ টেবিল চামচ, ম্যাগি সস ২ চা-চামচ।
প্রণালি
ফুলকপি পরিষ্কার করে ধুয়ে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। প্যানে তেল দিয়ে মুরগির মাংস দিয়ে কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করুন। গাজর ও বরবটি দিতে হবে। সয়া সস, গোলমরিচের গুঁড়া দিয়ে লবণ দিন। ভালো করে মেশাতে হবে। তারপর ব্লেন্ড করা ফুলকপি দিয়ে আরও কিছুক্ষণ নাড়ুন। ভালো করে মিশিয়ে পেঁয়াজপাতা ছড়িয়ে পরিবেশন করতে হবে।
বেকড ফুলকপির রোস্ট
উপকরণ
আস্ত ফুলকপি ১টি, মিহি থেঁতলানো রসুন ১ টেবিল চামচ, জলপাইয়ের তেল সিকি কাপ, শর্ষে পেস্ট ২ টেবিল চামচ, লেবুর মিহি খোসা ১ চা-চামচ, গোলমরিচের গুঁড়া ১ চা-চামচ, পাপরিকা আধা চা-চামচ, মেশানো হার্বস ১ চা-চামচ, লেবুর রস ২ চা-চামচ, মধু দেড় টেবিল চামচ, গ্রেট করা পনির সিকি কাপ, লবণ সিকি চা-চামচ।
প্রণালি
আস্ত ফুলকপির পাশের ডাঁটাগুলো কেটে ধুয়ে রাখুন। একটি বড় হাঁড়িতে অনেকটা পানি দিয়ে চুলায় বসান। ২ টেবিল চামচ লবণ দিন এবং পানি ফুটে উঠলে আস্ত ফুলকপি দিয়ে দিন। ২ মিনিট রেখে তুলে নিন। কিচেন টাওয়েল দিয়ে খুব ভালো করে মুছে নিন। ওভেন ২২০ ডিগ্রিতে ১০ মিনিটের জন্য প্রিহিটে দিন। একটি বাটিতে থেঁতলানো রসুন, জলপাইয়ের তেল, শর্ষে পেস্ট, গোলমরিচগুঁড়া, মেশানো হার্বস, লেবুর রস, মধু, পাপরিকা, লেবুর খোসা, লবণ একসঙ্গে খুবভালো করে মিশিয়ে ড্রেসিং তৈরি করে নিন। ফুলকপির ওপর ড্রেসিং ব্রাশ করে ১ ঘণ্টা রেখে দিন। এবার ফুলকপির ওপর গ্রেট করা চিজ ছড়িয়ে প্রিহিটেড ওভেনে বেক করুন ৪০ মিনিট। ওভেন থেকে বের করে ওপরে ড্রেসিং ছড়িয়ে গরম-গরম পরিবেশন করুন।বিজ্ঞাপন
ফুলকপির ক্রিম স্যুপ
উপকরণ
চিকেন স্টক ৩ কাপ, ফুলকপির টুকরা ২ কাপ, মাশরুমকুচি ২ টেবিল চামচ, রসুনকুচি ১ টেবিল চামচ, পেঁয়াজকুচি ৩ টেবিল চামচ, দুধ আধা কাপ, ময়দা ২ টেবিল চামচ, মাখন ৫০ গ্রাম, কুকিং ক্রিম এক কাপের ৩ ভাগের ১ ভাগ, সাদা গোলমরিচের গুঁড়া ১ চা-চামচ, লেবুর রস সামান্য ও পার্সলেকুচি ১ টেবিল চামচ।
প্রণালি
প্রথমে চুলায় অর্ধেক মাখন দিয়ে রসুন সামান্য ভেজে নিন। পেঁয়াজকুচি দিয়ে একটু ভেজে ফুলকপির টুকরাগুলো দিয়ে দিতে হবে। ফুলকপি খুব ভালো করে ভেজে নিন। ভালো করে ভাজা হলে ১ কাপ চিকেন স্টক দিয়ে দিন। ফুলকপি নরম হয়ে এলে নামিয়ে একটু ঠান্ডা করে ব্লেন্ড করে পেস্ট করে রাখুন। আবার প্যান দিয়ে বাকি মাখন ও মাশরুম দিয়ে একটু ভেজে নিন। ময়দা দিয়ে ভেজে নিন। ময়দার রং পরিবর্তন হলে দুধ দিয়ে খুব ঘন ঘন নাড়তে থাকুন। এরপর একে একে চিকেন স্টক, ফুলকপির পেস্ট দিয়ে দ্রুত নাড়তে থাকুন। ফুটে উঠলে ক্রিম ও গোলমরিচের গুঁড়া দিন। হয়ে এলে নামানোর আগে পার্সলেকুচি ও লেবুর রস দিয়ে নামিয়ে নিন। পরিবেশন করুন গরম-গরম।
মচমচে ফুলকপি
উপকরণ
ফুলকপির ফুল ১০-১২টি, সবুজ ক্যাপসিকাম ১টি, গাজর ১টি, আলু ১টি, ডিম ২টি, কর্নফ্লাওয়ার ও চালের গুঁড়া আধা কাপ করে, গোলমরিচের গুঁড়া ১ টেবিল চামচ, চাট মসলার গুঁড়া ১ টেবিল চামচ, লবণ, পানি, কাঁচা মরিচকুচি পরিমাণমতো, আদা ও রসুনকুচি ১ চা-চামচ করে, টমেটো, চিলি ও সয়া সস ২ টেবিল চামচ করে, মাখন আধা কাপ, ভাজার জন্য তেল পরিমাণমতো।
প্রণালি
ফুটানো লবণপানিতে ফুলকপিগুলো এক মিনিট ফুটিয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। একইভাবে লম্বা করে কেটে আলু, ক্যাপসিকাম ও গাজর অল্প সেদ্ধ করে নিন। এবার ফুলকপিতে ডিম, কর্নফ্লাওয়ার, চালের গুঁড়া, গোলমরিচ ও চাট মসলা দিয়ে ভালোভাবে মেখে ডুবোতেলে ফুলগুলো ভেজে তুলে রাখুন। এবার ওই প্যানে মাখন গরম করে আদা ও রসুন ফোড়ন দিয়ে সস ও কাঁচা মরিচকুচি দিয়ে অল্প পানি দিয়ে কষান। কষানো হলে সেদ্ধ সবজি দিয়ে কিছুক্ষণ ঢেকে রেখে ভাজা ফুলকপি দিয়ে হালকা হাতে নেড়ে নিন। নামিয়ে পরিবেশন করুন।
ফুলকপির ফুলগুলো একটা একটা করে খুলে নিন এবং লবণপানিতে ভাপিয়ে নিন। একটা চালনিতে ফুলকপির টুকরাগুলো ঢেলে পানি ঝরতে দিন। এবার একটা পাত্রে সব মসলা, চালের গুঁড়া ও বেসন নিয়ে আন্দাজমতো পানি মিশিয়ে ঘন মিশ্রণ তৈরি করুন। ফুলকপিগুলো চালের মিশ্রণে ভালো করে মেখে নিন। এবার বিস্কুটের গুঁড়া দিয়ে মাখিয়ে নিন। একটা কড়াইয়ে তেল গরম করে ফুলকপির টুকরাগুলো ভাজুন। গাঢ় বাদামি রং হলে তেল থেকে তুলে নিন এবং সসের সঙ্গে গরম-গরম পরিবেশন করুন।
শীতকাল এলেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে খেজুরের রস খাওয়ার চল বেড়ে যায়। অনেকে গাছ থেকে খেজুরের কলসি নামিয়ে সরাসরি কাঁচা রস খেয়ে থাকেন।
আবার অনেকে এই রস চুলায় ফুটিয়ে সিরাপ, পায়েস বা ক্ষীর বানিয়ে খান। এছাড়া রসের তৈরি ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়, ভেলি গুড়, বালুয়া গুড়, মিছরি গুড়সহ নানা ধরণের পিঠার বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।
নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক
খেজুর আরব দেশের প্রচলিত ফল হলেও ওইসব দেশে খেজুর, মূলত ফল উৎপাদননির্ভর, যেখানে কিনা বাংলাদেশের খেজুর গাছ রস উৎপাদননির্ভর।
কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, বাংলাদেশে সাধারণত কার্তিক থেকে মাঘ অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ হয়ে থাকে।
দেশটির সবচেয়ে বেশি রস সংগ্রহ হয় যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে।
মূলত খেজুর গাছের ডালপালা পরিষ্কার করে, ডগার দিকের কাণ্ড চেঁছে তাতে একটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি চোঙ বসিয়ে দেয়া হয়। চোঙের শেষ প্রান্তে ঝুলিয়ে দেয়া হয় একটি মাটির হাড়ি বা কলসি।
সেই চোঙ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রস এসে জমা হতে থাকে মাটির হাড়ি বা কলসিতে। এভাবে একটি গাছ থেকে দৈনিক গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লিটার রস সংগ্রহ করা যায় বলে কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গিয়েছে।
কিন্তু গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
উপকরণ: বাঁধাকপির কুচি ৪ কাপ, কই মাছের টুকরো ৬টি, তেজপাতা ১টি, শুকনো মরিচ ২টি, মেথি অল্প পরিমাণ, মরিচবাটা ১ চা-চামচ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, লবণ পরিমাণমতো, নারকেল কোরানো স্বল্প পরিমাণে, হলুদ পরিমাণমতো ও সরিষার তেল পরিমাণমতো।
প্রণালি: তেলে শুকনো মরিচ ও মেথি ফোড়ন দিতে হবে। ফোড়ন হয়ে এলে হালকা করে ভেজে উঠিয়ে রাখতে হবে। ওই তেলেই বাঁধাকপির কুচি ও পেঁয়াজ কুচি দিয়ে ভালো করে কষে নিতে হবে। তারপর লবণ, মরিচ ও হলুদবাটা দিয়ে আরও কিছুক্ষণ বসাতে হবে। সেদ্ধ হয়ে এলে অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে ভাজা মাছগুলো দিয়ে ঢাকা দিতে হবে। পানি শুকিয়ে গেলে এবং মাছ সেদ্ধ হয়ে এলে অল্প পরিমাণ নারকেল কোরানো দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।
উপকরণ: বড় শোল মাছ ৫০০ গ্রাম, টমেটো টুকরো আধা কাপ, সরিষার তেল ৩ টেবিল চামচ, টমেটোবাটা আধা কাপ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, আদাবাটা ১ চা-চামচ, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, হলুদ গুঁড়া ১ চা-চামচ, ধনেপাতা আধা কাপ, শুকনো মরিচের গুঁড়া ১ চা-চামচ, লবণ স্বাদ অনুসারে ও কাঁচা মরিচ ৭-৮টি (চেরা)।
প্রণালি: শোল মাছ লবণ, হলুদ ও সরিষার তেল মাখিয়ে ভেজে তুলে রাখতে হবে। আর ওই তেলেই পেঁয়াজ কুচি দিতে হবে। পেঁয়াজ বাদামি রং হলে রসুন, আদা, মরিচের গুঁড়া, হলুদ ও লবণ দিয়ে ভালোভাবে কষাতে হবে। টমেটোবাটা দিতে হবে, কিছুক্ষণ কষানোর পর প্রয়োজনমতো গরম পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে ভেজে রাখা মাছগুলো দিতে হবে। ঝোল মাখা-মাখা হলে টমেটোর টুকরো আর ধনেপাতা দিয়ে কিছুক্ষণ পর নামিয়ে ফেলতে হবে। নামানোর আগে কাঁচা মরিচ দিতে হবে।
উপকরণ: ছোট টুকরো করে কাটা টাকি মাছ ২ কাপ, ডুমো ডুমো করে কাটা লাউ ৪ কাপ, হলুদ সিকি চা-চামচ, লবণ পরিমাণমতো, পেঁয়াজ ১ কাপ, ধনেপাতা কুচি পরিমাণমতো, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, কাঁচা মরিচ ১০-১২টি, আদাবাটা আধা চা-চামচ ও রাঁধুনি বাটা সিকি চা-চামচ।
প্রণালি: তেলে পেঁয়াজ দিয়ে হালকা করে ভেজে নিতে হবে। তারপর একে একে রসুনবাটা, আদাবাটা ও রাধুনি (গুঁড়া সজ) বাটা ও হলুদের গুঁড়া দিয়ে ভালো করে কষাতে হবে। কষানো হলে লাউ দিতে হবে। লাউ দিয়ে কিছুক্ষণ কষিয়ে অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে আগে থেকে হালকা করে ভেজে রাখা টাকি মাছ দিতে হবে। পানি শুকিয়ে এলে কাঁচা মরিচের ফালি ও সবশেষে ধনেপাতা দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।
উপকরণ: চিংড়ি মাছ ২০০ গ্রাম, সয়াবিন তেল পরিমাণমতো, বাঁধাকপি কুচি ১ কাপ, ক্যাপসিকাম কুচি ১ কাপ, টমেটো কুচি আধা কাপ, পেঁয়াজপাতা কুচি ১ কাপ, কাঁচা মরিচবাটা ১ চা-চামচ, ধনেপাতাবাটা ১ চা-চামচ, হলুদের গুঁড়া পরিমাণমতো, চিলি সস ২ চা-চামচ, টমেটো সস ২ চা-চামচ, বাঁধাকপির ভেতরের পাতা ৪টি, ভিনেগার ২ চা-চামচ, রসুন ১ চা-চামচ ও লবণ স্বাদমতো।
প্রণালি: বাঁধাকপির শক্ত অংশ ফেলে দিন। পাতার ভেতরের অংশ একটু ভাপিয়ে রাখুন। মাছ ধুয়ে ভিনেগার মাখিয়ে রাখুন। এবার কড়াইয়ে সয়াবিন তেল গরম হলে তাতে রসুন কুচি দিয়ে মাছগুলো দিন। একে একে কোঁচানো বাঁধাকপি, ক্যাপসিকাম, টমেটো ও পেঁয়াজপাতা দিয়ে নেড়েচেড়ে নিন। এরপর কাঁচা মরিচবাটা, ধনেপাতাবাটা, চিলি সস ও টমেটো সস দিয়ে নেড়ে নিন। পানি শুকিয়ে এলে নামিয়ে বাঁধাকপির পাতায় অল্প করে চিংড়ি মাছ সুতা দিয়ে বেঁধে স্টিমারে ভাপিয়ে নিন। সুতো কেটে পাতা খুলে পরিবেশন করুন।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন