আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

ফল

ফাগুনে আমের বাগানের পরিচর্যায় করণীয়

ফলের রাজা আম। দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বিঘার পর বিঘা জমিতে যেমন আম চাষ হয়, তেমনই গ্রামবাংলার গৃহস্থ বাড়িতে কয়েকটা আমগাছ থাকেই। কিন্তু এর পরিচর্যা সম্পর্কে জ্ঞান না থাকায় কারও গাছে মুকুল আসে তো ফল হয় না, কারও আবার ফল পাকার আগেই ঝরে পড়ে যায়। আসলে ভালো আম পেতে যত্ন নিতে হবে বছরভর। অন্যান্য ফলের মতো আম বাগানেও নানা সমস্যা দেখা যায়। এসব সমস্যার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণই প্রধান। সঠিক সময়ে রোগ ও পোকামাকড় দমন করতে ব্যর্থ হলে আমের ফলন অনেক কমে যায়। তবে এসব রোগ ও পোকামাকড় দমনের জন্য সঠিক বালাইনাশক বা ছত্রাকনাশক সঠিক মাত্রায়, সঠিক সময়ে, সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করে ব্যবহার করলে আমের ফলন কমে যাওয়ার আশঙ্কা অনেকটাই কমে যায়।

আমের হপার পোকা ও দমনব্যবস্থা:
আমের ভালো ফলন পাওয়ার জন্য পরিচর্যা শুরু করতে হবে আমবাগানে মুকুল বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই। গাছে মুকুল আসার কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ দিন আগে পুরো গাছ সাইপারমেথ্রিন বা কার্বারিল গ্রুপের যে কোনো কীটনাশক দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে দিলে ভালো মুকুল আসবে। এতে গাছে বাস করা হপার বা শোষকজাতীয় পোকাসহ অন্যান্য পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। আশঙ্কার ব্যাপার হলো, একটি হপার পোকা দৈনিক তার দেহের ওজনের ২০ গুণ রস শোষণ করে খায় এবং দেহের অতিরিক্ত আঠালো রস মলদ্বার দিয়ে বের করে দেয়, যা মধুরস বা হানিডিউ নামে পরিচিত। এ মধুরস মুকুলের ফুল ও গাছের পাতায় জমা হতে থাকে। মধুরসে এক প্রকার ছত্রাক জন্মায়। এই ছত্রাক জন্মানোর কারণে মুকুল, ফুল ও পাতার ওপর কালো রঙের স্তর পড়ে যায়; যা সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে। এই পোকার আক্রমণে শুধু আমের উৎপাদনই কমে যায় না, গাছের বৃদ্ধিও কমে যেতে পারে। হপার পোকা অন্ধকার বা বেশি ছায়াযুক্ত স্থান পছন্দ করে। তাই নিয়মিতভাবে গাছের ডালপালা ছাঁটাই করতে হবে, যাতে গাছের মধ্যে আলো-বাতাস প্রবেশ করতে পারে।
আমের মুকুল যখন ৩ থেকে ৪ সেন্টিমিটার লম্বা হয় তখন একবার এবং আম যখন মটর দানার মতো আকার ধারণ করে তখন আরেকবার প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলিলিটার হারে সাইপারমেথ্রিন (রিপকর্ড বা সিমবুস বা ফেনম বা এরিভো) ১০ ইসি পানিতে মিশিয়ে পুরো গাছে স্প্রে করতে হবে। আমের হপার পোকার কারণে যেহেতু সুটিমোল্ড বা ঝুল রোগের আক্রমণ ঘটে তাই রোগ দমনের জন্য প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে সালফারজাতীয় ছত্রাকনাশক কীটনাশকের সঙ্গে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

আমের মাছি পোকা ও দমনব্যবস্থা:
এখন দেশের সব এলাকার আমগাছে থোকা থোকা মুকুল শোভা পাচ্ছে। সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে এমন মুকুল দেখে চাষি ভাইদের সুখের ঢেঁকুর তোলার সুযোগ নেই। কারণ আম ঘরে আসতে এখনো অনেক প্রতিকূল পরিবেশ পার করতে হবে। এর মধ্যে অন্যতম হলো মাছিপোকা। হ্যাঁ, আমের মাছি পোকাই মকুল ধরা থেকে আম সংগ্রহ করা পর্যন্ত আমের ব্যাপক ক্ষতি করে থাকে। যারা ব্যাপক আকারে আম চাষ করেন তাদের জন্য এটা আরও বড় সমস্যা। কারণ তারা উৎপাদিত আমের বেশির ভাগই রপ্তানি করেন। পোকায় ধরা আম দেশেই বিক্রি করা কঠিন, রপ্তানি করা তো দূরের কথা। মাছিপোকা আক্রমণের প্রাথমিক অবস্থায় বাইরে থেকে বোঝা যায় না। আম গুটি বাঁধার ৫০ থেকে ৫৫ দিন পর প্রতিটি আম কাগজ (ব্রাউন পেপার) দিয়ে মুড়িয়ে দিলে আমকে এ পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা করা যায়। ছোট গাছের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি সহজেই ব্যবহার করা যায়। আমকে এ পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য আমবাগানে ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করা যেতে পারে।

ম্যাঙ্গো উইভিল ও দমনব্যবস্থা:
আমের বাইরে খোসা দেখে মনে হয় ভেতরে কোনো সমস্যা নেই। অথচ আম পাকার পর তা কাটলে তার ভেতরে দেখা যায় পোকা কিলবিল করছে। এ পোকা একবার আমের ভেতরে ঢুকে গেলে কোনোভাবেই দমন করা সম্ভব নয়। তাই মুকুল আসার সময় এ পোকা দমন করতে হবে। যে আমগাছে একবার ওই পোকা দেখা যাবে সে গাছে প্রতিবছরই এ পোকার আক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। পাশাপাশি আশপাশের আরও আমগাছে এ পোকার আক্রমণ দেখা দিতে পারে। এ পোকা দমন করতে হবে মুকুল ধরার আগে কিংবা মুকুল ধরার সময়।
আশ্চর্যের বিষয় হলো_ আমের ত্বকে কোনো ছিদ্র থাকে না। এত বড় পোকা কীভাবে আমের ভেতর ঢোকে এবং বেঁচে থাকে তা সত্যিই অবাক করার মতো। আমের যখন মুকুল আসে, তখন এ পোকা মুকুলে ডিম পাড়ে। মুকুল থেকে কচি আম হওয়ার সময় ফুলের ভেতরই ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়ে কচি আমের ভেতর আস্তে আস্তে ঢাকা পড়ে। আমের বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এর ভেতরের পোকাও বড় হতে থাকে। পোকাগুলো দিন দিন বেড়ে ওঠে আম খেয়ে। সাধারণত মুকুল ধরার সময় তাপমাত্রা ২৫ থেকে ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস অথবা একটু বেশি এবং উচ্চ আর্দ্রতা থাকলে এ পোকা আক্রমণ করার আশঙ্কা বেশি থাকে। আমের ভেতর পোকা ঢুকে গেলে দমনের কোনো ব্যবস্থা নেই। এটি দমনের জন্য প্রতি ১০ লিটার পানিতে ১৫ মিলিলিটার ম্যালাথিয়ন বা সুমিথিয়ন মিশিয়ে মুকুল ধরার সময় মুকুলে স্প্রে করতে হবে। অথবা ৩০ মিলিলিটার ডায়াজিনন বা ১৫ মিলিলিটার ডাইমেক্রন প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে মুকুলে স্প্রে করতে হবে। এ ছাড়া আমগাছের নিচে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ডিমের গাদা নষ্ট করতে হবে। আক্রান্ত আমগাছের নিচে পড়ে থাকা পাতা ও মুকুল পুড়িয়ে ফেলতে হবে। মুকুল ধরার সময় এলাকার সব আক্রান্ত গাছে একসঙ্গে কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। অন্যথায় যে গাছে স্প্রে করা হবে না, সেই গাছে অন্যগাছ থেকে পোকা আক্রমণ করবে।

পাউডারি মিলডিউ রোগ ও দমনব্যবস্থা:
পাউডারি মিলডিউ এক ধরনের মারাত্মক রোগ। আমাদের দেশে এ রোগের আক্রমণ প্রতিবছর দেখা না গেলেও কোনো কোনো বছর অনুকূল আবহাওয়া বিরাজ করলে রোগটি মারাত্মক আকার ধারণ করে। এটির আক্রমণ প্রধানত আমের মুকুল ও কচি আমে প্রকাশ পায়। প্রথমে আমের মুকুলের শীর্ষ প্রান্তে সাদা বা ধূসর বর্ণের পাউডারের আবরণ দেখা যায় এবং পরে কচি পাতাতেও রোগের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এই পাউডার হচ্ছে ছত্রাক ও তার বীজকণার সমষ্টি। হালকা বৃষ্টি, মেঘলা আকাশ এ রোগের জীবাণুর ব্যাপক উৎপাদনে সহায়তা করে। প্রতিকারের জন্য মুকুল আসার সময় প্রতিদিন (বিশেষ করে মেঘলা আবহাওয়াযুক্ত দিনে) আমগাছ পর্যবেক্ষণ করতে হবে মুকুলে পাউডারি মিলডিউ রোগ দেখা দিয়েছে কিনা। রোগের লক্ষণ দেখা দিলেই সালফারযুক্ত যে কোনো ছত্রাকনাশক প্রতি লিটার পানিতে দুই গ্রাম হারে ভালোভাবে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

আমের আনথ্রাকনোজ রোগ ও দমনব্যবস্থা:
আমের পাতা, কা-, মুকুলে ও ফলে এই রোগ দেখা যায়। পাতায় অনিয়মিত দাগ দেখা যায় যেগুলো পরে বাদামি থেকে কালো হয়ে বড় বড় দাগের সৃষ্টি করে এবং পাতা ঝরে যায়। মুকুলে আক্রমণ হলে মুকুল কালো হয়ে যায় এবং গুটিগুলো ঝরে পড়ে। এই রোগ দমনে মুকুল আসার আগে টিল্ট ২৫০ ইসি-০.৫ মিলিলিটার/লিটার বা ডায়থান এম ৪৫ -২ গ্রাম/লিটার স্প্রে করতে হবে। বোরডোয়াক্স মিশ্রণের ১% দ্রবণ ১০-১২ দিন পর পর ৩-৪ বার স্প্রে করতে হবে।

আমের বোঁটা পচা রোগ ও দমনব্যবস্থা:
এটি গুটি আসার পরে হয়ে থাকে। প্রথমে বোঁটার দিকে পচন ধরে পরে পুরো ফলটি পচে গিয়ে কালো বর্ণ ধারণ করে। গাছে থাকা অবস্থায় জীবাণুটি মুক্ত অবস্থায় থাকে পরে আম সংগ্রহের পরে উচ্চ তাপমাত্রা ও আর্দ্রতায় রাখা হলে আক্রান্ত আমের পাল্পগুলো বাদামি হয়ে যায়, যা আর খাওয়ার উপযোগী থাকে না। দমনব্যবস্থা হিসেবে ডায়থান এম ৪৫ অথবা বেভিসটিন (০.২%) গুটি অবস্থায় স্প্রে করতে হবে।
রোগ পোকা-মাকড় ছাড়াও নিয়মিত পরিচর্যার হিসেবে আমের ফলন বাড়াতে হলে বছরে অন্তত দুবার সুষম মাত্রায় সার দিতে হবে। সেচ দিতে হবে প্রতি মাসে একবার। অপ্রয়োজনীয় ডালপালা ছেঁটে দিতে ধরা। আমগাছের স্বভাব হচ্ছে প্রতি ডালে এক বছর পর পর আম ধরে। এজন্য কোনো গাছে এক বছর ফলন ভালো হলে অন্য বছর ফলন কম হয় অথবা হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।

বিজ্ঞাপন
মন্তব্য করুন

অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন

Leave a Reply

এগ্রোবিজ

বিদেশ থেকে খালি হাতে ফিরে ড্রাগন চাষে সাফল্য

বাগানে চাষ করা ড্রাগন হাতে মিরাজুল ইসলাম
বাগানে চাষ করা ড্রাগন হাতে মিরাজুল ইসলাম

মিরাজুল ইসলাম (৩৩)। ১০ বছর সৌদি আরবে ছিলেন। আকামা জটিলতায় খালি হাতে দেশে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। এক বছর বেকার থাকার পর ইউটিউবে পতিত জমিতে ড্রাগন চাষের ভিডিও দেখেন। বাবার কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে নেমে পড়েন ড্রাগন চাষে। দেড় বছরের ব্যবধানে এখন উপজেলার সবচেয়ে বড় ড্রাগন বাগান তাঁর। এ বছর খরচ বাদে আট থেকে নয় লাখ টাকা লাভের আশা করছেন তিনি।

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার ইন্দুরকানি গ্রামের বাসিন্দা মিরাজুল। উপজেলার টগরা গ্রামে দেড় একর জমিতে তিনি ড্রাগনের বাগান তৈরি করেছেন। তাঁর বাগানে এখন সাড়ে তিন হাজার ড্রাগন ফলের গাছ আছে।

মিরাজুল ইসলাম বলেন, শ্রমিক হিসেবে ১০ বছর সৌদিতে কাজ করে ২০১৯ সালে দেশে ফেরেন তিনি। আকামা সমস্যার কারণে শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। কিছু একটা করবেন বলে ভাবছিলেন। একদিন ইউটিউবে ড্রাগন চাষের ভিডিও দেখতে পান। সেই থেকে ড্রাগন চাষে আগ্রহ জন্মে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে দেড় একর পতিত জমি ড্রাগন চাষের উপযোগী করেন। গাজীপুর থেকে ৬০ টাকা দরে ৬০০ চারা নিয়ে আসেন। বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে শুরু করেন চাষাবাদ। পরের বছর জুনে ফল পাওয়া শুরু করেন।

ড্রাগনের বাগান করতে মিরাজুলের খরচ হয়েছিল ছয় থেকে সাত লাখ টাকা। ইতিমধ্যে ফল বিক্রি করে তাঁর খরচ উঠে গেছে। সাধারণত মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত গাছে ফল আসে। বছরে ছয় থেকে সাতবার পাকা ড্রাগন সংগ্রহ করা যায়। এখন পরিপক্ব ও রোগমুক্ত গাছের শাখা কেটে নিজেই চারা তৈরি করেন। ড্রাগন চাষের পাশাপাশি বাগানে চুইঝাল, এলাচ, চায়না লেবুসহ মৌসুমি সবজি চাষ করেন। এ ছাড়া ড্রাগনের চারাও উৎপাদন করে বিক্রি করেন তিনি।

মিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বাগানের বেশির ভাগ গাছে এ বছর ফল ধরেছে। গত মঙ্গলবার বাগান থেকে দেড় টন ফল সংগ্রহ করেছেন। ২৫০ টাকা কেজি দরে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পাইকারদের কাছে বিক্রি করেছেন। স্থানীয় বাজারে ৩০০ টাকা কেজি দরে ড্রাগন বিক্রি হয়। নভেম্বর পর্যন্ত আরও পাঁচ–ছয়বার বাগান থেকে ফল তোলা যাবে। আশা করছেন, খরচ বাদে এবার আট থেকে নয় লাখ টাকা লাভ থাকবে।

মিরাজুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমার বাগান থেকে চারা নিয়ে অনেকে বাড়িতে ও ছাদে ছোট পরিসরে ড্রাগনের বাগান করেছেন। আমি এ পর্যন্ত ৪০ টাকায় দেড় হাজার চারা বিক্রি করেছি।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পূর্ণ বয়সের একটি ড্রাগনের চারা রোপণের পর ২৫ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। এর মৃত্যুঝুঁকি নেই বললেই চলে। তবে কয়েক দিন পরপর সেচ দিতে হয়। বৃষ্টির পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হয়। ড্রাগন ফল চাষে রাসায়নিক সার দিতে হয় না।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইশরাতুন্নেছা বলেন, মিরাজুল ইসলামকে ড্রাগন চাষে নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে আসছে কৃষি বিভাগ। উপজেলায় তাঁর বাগানটি সবচেয়ে বড়। তিনি নিরলস পরিশ্রম করে ছোট থেকে বাগানটি বড় করেছেন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোটেক

কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তারা এক সঙ্গে কাজ করতে রাজি

ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকেরাফাইল ছবি
ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকেরাফাইল ছবি

ডাচ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে দুই দেশের বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা একসঙ্গে কাজ করতে রাজি হয়েছেন।

গতকাল সোমবার নেদারল্যান্ডসের রাজধানী হেগে অনুষ্ঠিত কৃষি খাতের ব্যবসাবিষয়ক এক সম্মেলনে দুই দেশের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা সহযোগিতার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।

নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম রিয়াজ হামিদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত এগ্রি বিজনেস কনক্লেভে বাংলাদেশের প্রায় ৪০জন উদ্যোক্তা ডাচ কৃষি খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি প্রযুক্তি সহযোগিতা ও ব্যবসায়িক সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। দিনব্যাপী আয়োজিত অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেছে ওয়েগেনিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়।

আলোচনায় বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা প্রযুক্তি কিনতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দিলে নেদারল্যান্ডসের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা প্রযুক্তি সহযোগিতা দিতে রাজি থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।

রিয়াজ হামিদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে ডাচরা প্রস্তুত এবং বাংলাদেশি উদ্যোক্তারাও তাদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। এ ছাড়া ডাচ সরকার ইতিমধ্যে বাংলাদেশের বীজ, পশু খাদ্য, পোলট্রি, হর্টিকালচার ও এ্যাকুয়াকালচার বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম সম্পাদন করেছে, যা ওই দেশের বেসরকারি খাতকে আরও উৎসাহিত করেছে।

আলোচনায় কৃষি সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করতে তৈরি আছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্কয়ার, ইস্পাহানি এগ্রো, একে খান অ্যান্ড কোম্পানি, প্যারাগন গ্রুপ, এসিআই, জেমকন গ্রুপসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তিনি জানান, মঙ্গলবার বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা ডাচ প্রযুক্তির প্রয়োগ সরেজমিনে দেখতে যাবেন।

বাংলাদেশের সঙ্গে নেদারল্যান্ডসের পোল্ট্রিখাতে সহযোগিতার আলোচনা অনেকটা এগিয়েছে উল্লেখ করে মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, দুই দেশের মধ্যে মৎস্য, পশুপালন ও হর্টিকালচারে সহযোগিতার বিপুল সম্ভাবনা আছে।

কনক্লেভ আয়োজনে প্রথমবারের মতো দূতাবাসের সঙ্গে অংশীদার হয়েছে নেদারল্যান্ডসের কৃষি মন্ত্রণালয়, নেদারল্যান্ডস এন্টারপ্রাইজ এজেন্সি, নেদারল্যান্ডস ফুড পার্টনারশিপ, ডাচ-গ্রিন-হাইজডেল্টা, লারিভ ইন্টারন্যাশনাল, স্টান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ।

কৃষিজাত পণ্য রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থানকারী নেদারল্যান্ডসের আয়তন বাংলাদেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের কম। ২০২১-এ কৃষিপণ্য ও খাদ্য রপ্তানি করে নেদারল্যান্ডস ১১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি আয় করেছে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

পেঁয়াজের ক্ষতি পুষিয়ে দিচ্ছে সাথি ফসল বাঙ্গি

পেঁয়াজ তুলে নেওয়ার পর পুরো জমি ভরে গেছে বাঙ্গিগাছে। ফলন হয়েছে ভালো। পাবনার বেড়া উপজেলার বড়শিলা গ্রামে গত শুক্রবার
পেঁয়াজ তুলে নেওয়ার পর পুরো জমি ভরে গেছে বাঙ্গিগাছে। ফলন হয়েছে ভালো। পাবনার বেড়া উপজেলার বড়শিলা গ্রামে গত শুক্রবার

পাবনার বেড়া উপজেলার বড়শিলা গ্রামের কৃষক সাইদুল ইসলাম তাঁর দুই বিঘা জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করে এবার প্রায় ৪০ হাজার টাকা লোকসান দিয়েছেন। অথচ পেঁয়াজের জমিতেই সাথি ফসল হিসেবে লাগানো বাঙ্গি থেকে তিনি ৫০ হাজার টাকার মতো লাভ করবেন বলে আশা করছেন। এই বাঙ্গি আবাদে তাঁর কোনো খরচ হয়নি। ফলে পেঁয়াজ আবাদের ক্ষতি পুষিয়ে যাচ্ছে।

সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘বাঙ্গি আবাদ কইর‌্যা যে টাকা পাইল্যাম তা হলো আমাগরে ঈদের বোনাস। পেঁয়াজের দাম না পাওয়ায় আমরা (কৃষকেরা) যে ক্ষতির মধ্যে পড়িছিল্যাম, বাঙ্গিতে তা পুষায়া গেছে। এই কয়েক দিনে ১২ হাজার টাকার বাঙ্গি বেচছি। সব মিলায়া ৫০ হাজার টাকার বাঙ্গি বেচার আশা করতেছি।’

সাইদুল ইসলামের মতো পাবনার বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলার অনেক কৃষক এবার পেঁয়াজের সঙ্গে সাথি ফসল হিসেবে বাঙ্গির আবাদ করেন। কৃষকেরা পেঁয়াজ আবাদ করতে গিয়ে বিঘায় প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ করেছিলেন। সেই হিসাবে প্রতি মণ পেঁয়াজ উৎপাদনে তাঁদের খরচ হয়েছে ১ হাজার ২০০ টাকার বেশি। কিন্তু বাজারে সেই পেঁয়াজ কৃষকেরা বিক্রি করতে পেরেছেন প্রতি মণ ৬০০ থেকে ৮৫০ টাকায়। এতে প্রতি বিঘা জমিতে পেঁয়াজের আবাদে কৃষকদের এবার ২০ হাজার টাকার বেশি লোকসান হয়েছে।

কৃষকেরা বলেন, পেঁয়াজের জমিতে সাথি ফসল হিসেবে বাঙ্গি, মিষ্টিকুমড়া, কাঁচা মরিচসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। জমিতে পেঁয়াজ লাগানোর পর তা কিছুটা বড় হলে এর ফাঁকে ফাঁকে এসব সাথি ফসল লাগানো হয়। পেঁয়াজের জন্য যে সার, কীটনাশক, সেচ দেওয়া হয়, তা থেকেই সাথি ফসলের সব চাহিদা পূরণ হয়ে যায়। ফলে সাথি ফসলের জন্য বাড়তি কোনো খরচ হয় না।

কৃষকেরা বলেন, বাঙ্গিতেই কৃষকের লাভ হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। রমজান মাস হওয়ায় এখন বাঙ্গির চাহিদা ও দাম দুই-ই বেশি।

সাঁথিয়ার শহীদনগর গ্রামের কৃষক আজমত আলী জানান, তাঁর জমিসহ এই এলাকার জমি থেকে ৮ থেকে ১০ দিন হলো বাঙ্গি উঠতে শুরু করেছে। এবার বাঙ্গির ফলনও হয়েছে বেশ ভালো। বাজারে এসব বাঙ্গি আকারভেদে প্রতিটি ৬০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এমন দাম থাকলে এক বিঘা থেকে প্রায় ৩০ হাজার টাকার বাঙ্গি বিক্রি হবে।

সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জীব কুমার গোস্বামী বলেন, পেঁয়াজের সঙ্গে সাথি ফসলের আবাদ কৃষকদের মধ্যে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এ ব্যাপারে তাঁরাও কৃষকদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

কাঁঠালের আইসক্রিম জ্যাম ও চিপস

জাতীয় ফল কাঁঠালের জ্যাম, চাটনি ও চিপস উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএআরআই) শস্য সংগ্রহের প্রযুক্তি বিভাগের একদল গবেষক। তাঁরা কাঁঠাল প্রক্রিয়াজাত করে মোট ১২টি প্যাকেট ও বোতলজাত পণ্য তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন।

গত শনিবার বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) ক্যাম্পাসে অবস্থিত বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে (বিনা) ‘কাঁঠালের সংগ্রহত্তোর ক্ষতি প্রশমন ও বাজারজাতকরণ কৌশল’ শীর্ষক কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে এসব তথ্য জানান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. গোলাম ফেরদৌস চৌধুরী। কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের (কেজিএফ) অর্থায়নে এবং নিউভিশন সলিউশন্স লিমিটেডের সহযোগিতায় গবেষণা প্রকল্পটি পরিচালিত হয়।

কর্মশালায় ড. মো. গোলাম ফেরদৌস চৌধুরী বলেন, ‘এই প্রকল্পের আওতায় আমরা কাঁঠালের প্রক্রিয়াজাত করে মুখরোচক ১২টি প্যাকেট ও বোতলজাত পণ্য তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এসব পণ্য উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট। কাঁঠালের জ্যাম, আচার, চাটনি, চিপস, কাটলেট, আইসক্রিম, দই, ভর্তা, কাঁঠাল স্বত্ব, রেডি টু কুক কাঁঠাল, ফ্রেশ কাট পণ্যসহ আরও বিভিন্ন ধরনের প্যাকেটজাত পণ্য তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। প্রক্রিয়াজাত পণ্যগুলো ঘরে রেখে সারা বছর খাওয়া যাবে। কাঁঠাল থেকে এসব পণ্য উদ্ভাবনের মধ্য দিয়ে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকা কমানো সম্ভব বলে মনে করছেন গবেষক।’

কর্মশালায় নিউভিশন সলিউশন্স লিমিটেডের মুখ্য পরিদর্শক তারেক রাফি ভূঁইয়া বলেন, উদ্ভাবিত পণ্যগুলো বাজারজাত করার জন্য নিউভিশন কোম্পানি বিএআরআইয়ের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। ময়মনসিংহসহ বাংলাদেশের কয়েকটি জেলা ও উপজেলা শহরে পণ্যগুলো বিপণনের কাজ চলছে।

কর্মশালায় বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের শস্য সংগ্রহোত্তর প্রযুক্তি বিভাগের বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. হাফিজুল হক খানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি পরমাণু গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম। সম্মানিত অতিথি ছিলেন কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের সিনিয়র স্পেশালিস্ট (ফিল্ড ক্রপস) ড. নরেশ চন্দ্র দেব বর্মা। বিশেষ অতিথি ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মো. আবু হানিফ। উপস্থিত ছিলেন নিউভিশন সলিউশন্স লিমিটেডের প্রকল্প ম্যানেজার কায়সার আলম।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

ফল

কমলা চাষে সার ব্যবস্থাপনা, সেচ, আগাছা ব্যবস্থাপনা ও ফসল তোলা- দা এগ্রো নিউজ

কমলা

সার ব্যবস্থাপনা:  প্রতি গর্তে ১০০ গ্রাম ইউরিয়া সার, ১০০ গ্রাম টিএসপি সার ও এমওপি সার ১০০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হয়।

সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনা:  চারা গাছের গোড়ায় মাঝে মাঝে পানি সেচ দিতে হবে। বর্ষাকালে গাছের গোড়ায় যাতে পানি না জমে সেজন্য পানি নিকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তাছাড়া কমলা গাছের আগাছা দমন করতে হবে।

ফসল তোলা: মধ্য কার্তিক থেকে মধ্য পৌষ মাসে ফল সংগ্রহ করতে হয়।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশক: শাইখ সিরাজ
© ২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। দা এগ্রো নিউজ, ফিশ এক্সপার্ট লিমিটেডের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। ৫১/এ/৩ পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থাপথ, ঢাকা -১২০৫
ফোন: ০১৭১২-৭৪২২১৭
ইমেইল: info@agronewstoday.com, theagronewsbd@gmail.com