আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

পরিবেশ

প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় ব্যয় বাড়ছে সরকারের

চলতি বছর দুর্যোগ পিছু ছাড়েনি। এ বছর একুশ শতাব্দীর মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি বন্যার মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ। বাড়ছে রোগব্যাধী। নদী ভাঙন বাড়ছে, কমছে নদ-নদীর নাব্যতা। ঘন ঘন ঘূর্ণিঝড়ের হানা। ভূমিকম্পেরও ঝুঁকিও রয়েছে। এবার দিনের পর দিন সাগরের পানির নিচে ছিল উপকূলীয় বিভিন্ন অঞ্চল। বাড়ছে লবণাক্ততা। বেড়েছে বৃষ্টিপাতের অনিয়মি। বজ্রপাতও বেশি হচ্ছে। তাপমাত্রা বাড়াসহ নানান প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বিধ্বস্ত এ জনপদ। এসব দুর্যোগে ঘরবাড়ি হারিয়ে উদ্বাস্তু হচ্ছে, রাস্তাঘাট বিভিন্ন স্থাপনার ক্ষতি হচ্ছে, ফসল নষ্ট হচ্ছে, মৃত্যুসহ নানামুখী বিপদে বাংলার মানুষ। সেইসাথে প্রাকৃতিক দুর্যোগের এসব প্রভাব মোকাবিলায় সরকারের ব্যয়ও বাড়ছে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বিভিন্ন প্রকল্পের অনুমোদন দিচ্ছে। তার মধ্যে গত ৩ থেকে ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত তিনটি একনেক সভায় মোট চারটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও এর ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় এই চার প্রকল্পে সরকার খরচ করবে মোট ৮ হাজার ৫৯৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা। যার পুরো অর্থ বহন করতে হবে বাংলাদেশ সরকারকে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদি প্রচুর কার্বন নিঃসরণের মাধ্যমে জলবায়ুর ক্ষয়ক্ষতি করেছে শিল্পোন্নত দেশগুলো। তার নানান নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর ওপর। প্যারিস জলবায়ু চুক্তি অনুযায়ী, এসব দুর্যোগ মোকাবেলার খরচ উন্নত দেশগুলোর দেয়ার কথা। কিন্তু বাংলাদেশের জলবায়ু মোকাবিলায় সুনির্দিষ্ট দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা না থাকায় তা পাওয়া যাচ্ছে না। নিজেদের সীমিত অর্থ প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় খরচ করছে সরকার।

সরকারের সংশ্লিষ্টরাও প্যারিস জলবায়ু চুক্তি অনুযায়ী জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় অর্থ সংগ্রহের ক্ষেত্রে তেমন কিছু বলতে পারছেন না। তবে তারা বলছেন, জলবায়ুর নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় এখন বেশি অর্থ খরচের পরিকল্পনা সরকারের আছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশে আগামী ১০ থেকে ২০ বছরে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে, তার একটা চিত্র গবেষণার মাধ্যমে তুলে ধরতে হবে। বিচ্ছিন্নভাবে না নিয়ে সেসব ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় সুনির্দিষ্ট প্রকল্প নিলে প্রাপ্য সেই অর্থ বিদেশ থেকে বাংলাদেশ পাবে। এ ক্ষেত্রে স্বচ্ছতাও নিশ্চিত করতে হবে।

পরিকল্পনা কমিশনের তথ্যমতে, সর্বশেষ তিনটির মধ্যে ৩ নভেম্বরের একনেকে সভায় ‘যমুনা নদীর ডানতীর ভাঙন থেকে সিরাজগঞ্জ জেলার কাজিপুর উপজেলাধীন সিংড়াবাড়ী, পাটাগ্রাম ও বাঐখোলা এলাকা সংরক্ষণ’ প্রকল্পে ৫৬০ কোটি ৭ লাখ টাকা। ১৭ নভেম্বর একনেকে ‘যমুনা নদীর ডানতীরের ভাঙন হতে গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি উপজেলাধীন কাতলামারী ও সাঘাটা উপজেলাধীন গোবিন্দি এবং হলদিয়া এলাকা রক্ষা’ প্রকল্পে ৭৯৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকা এবং ‘ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পল্লী সড়ক অবকাঠামো পুনর্বাসন’ প্রকল্প বাস্তবায়নে ৫ হাজার ৯০৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ ২৪ নভেম্বর একনেক সভায় জলবায়ু উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের জন্য ‘খুরুশকুল বিশেষ আশ্রয়ণ’ প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে, এতে খরচ হবে ১ হাজার ৩৩৩ কোটি ৬১ লাখ টাকা।

এ বিষয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় ব্যয় বাড়ছে। কারণ বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনার লক্ষ্য অর্জনে এগুলো বাস্তবায়িত হচ্ছে। দুর্যোগ, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলার জন্যই বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। সেই লক্ষ্যে এই রাস্তাগুলোর পূর্ণ আকৃতি করা হচ্ছে, পুনর্বাসন করা হচ্ছে, খাল-নদীগুলোকে ড্রেজিং করা হচ্ছে, নতুন জলাধার নির্মাণ করা হচ্ছে, প্রায় সাড়ে ৪ হাজার পুকুর খনন করা হচ্ছে, জলাশয়গুলোকে পুনরুদ্ধার করা হচ্ছে। এগুলো আমাদের ব-দ্বীপ পরিকল্পনার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।’

তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু উষ্ণতা বাড়ছে, বৃষ্টিপাতের অনিয়ম বেড়েছে। কাজেই আমাদেরকে কিছু কার্যক্রম নিতে হচ্ছে। আমাদের সক্ষমতাও বেড়েছে। সড়ক ও জনপথ নতুন করে আর তৈরির প্রয়োজন নেই। যথেষ্ট সড়ক ও জনপথ হয়েছে। এখন এগুলোকে আমরা প্রশস্ত করছি, ভালোভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করছি। সেই সড়ক ও জনপথের যে বিপুল ব্যয়, সেগুলো তো এখন লাগছে না। অনেক ব্রিজ হয়ে গেছে, সেগুলোও আর লাগছে না। এখন ক্রমান্বয়ে জলবায়ুর প্রভাব মোকাবিলার কর্মসূচিগুলো প্রধান্য পাবে।’

বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরীকে ফোন করা হালে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি সদস্য ও বগুড়া-৭ আসনের সংসদ সদস্য মো. রেজাউল করিম বাবলু জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি কমিটিতে আসার পর জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ইতোমধ্যে কী পরিমাণ ব্যয় হয়েছে, সেই চিত্র এখনও হাতে পুরোপুরি পাইনি। কারণ যখন আমরা সভার কার্যক্রম শুরু করছিলাম, তার পরপরই করোনার আর্বিভাব ঘটার কারণে আমাদের প্রায় সব কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছিল। তাই পরিপূর্ণ চিত্র পাইনি।’

তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশে যে বিরূপ প্রভাব পড়েছে, এটা নিয়ে আমরা স্থায়ী কমিটিতে বিশদভাবে আলোচনা ও পর্যবেক্ষণ করে চলেছি। বজ্রপাত, দীর্ঘমেয়াদী বন্যা, নদী ভাঙন, ঘূর্ণিঝড় – সকল প্রকার যে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আছে এগুলোর ওপর আমাদের সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা আছে এবং আমরা গভীর পর্যবেক্ষণের মধ্যে রেখেছি যে, প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য চেষ্টা ও চিন্তাভাবনা আছে। যাতে আমরা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করে আমরা টিকে থাকতে পারি, বাংলাদেশকে নিরাপদ রাখা যায়। সম্প্রতি করোনার প্রভাবে সব পরিকল্পনাও স্থবির হওয়ার মতো।’

ঠিক কী কী পরিকল্পনা নিয়েছেন জানতে চাইলে রেজাউল করিম বাবলু বলেন, ‘যে সমস্যা যেভাবে আসে, আমরা তাৎক্ষণিকভাবে সেটাকে মোকাবিলা করি। যদি বিস্তারিত জানতে চান তাহলে আমাকে সময় দিতে হবে এবং আমার অফিসে আসতে হবে।’

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ও সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি খোদেজা নাসরিন আক্তার হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাড়ার বিষয়টি সবাই ওয়াকিবহাল আছে। সাম্প্রতিক সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেড়েছে। এতে ক্ষয়ক্ষতিও বেড়েছে। আম্পান, মহামারি, বন্যা তো ওভারকাম করতেই হচ্ছে। আমরা একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যেই আছি। এগুলো মোকাবিলা করার জন্য ফান্ড লাগে। আমরা চাই ফান্ডটা যেন জনস্বার্থে লাগে। মাঠের পর মাঠ ফসল নষ্ট হয়ে গেল। কৃষকরা কোথায় পড়লেন! প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে খুবই আন্তরিক। তিনি সেটাকে মোকাবিলা করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর খেয়ালে কোনো কার্পণ্য নেই। তিনি অনেক সচেতন। বাস্তবায়নের জন্য তৎপতর।’

বিশেষজ্ঞের অভিমত
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনাসহ বেশকিছু পরিকল্পনা/পরামর্শ তুলে ধরেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) জলবায়ু অর্থায়নে সুশাসন ইউনিটের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার এম. জাকির হোসাইন খান।

তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘গত ১০ বছরের সঙ্গে তার আগের ১০ বছরের তুলনা করলে দেখা যাবে ঘূর্ণিঝড়ের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। এমনকি বছরে একাধিকবার আসছে। এটা জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম উপসর্গ। সামনের দিনগুলোতে এটা আরও বাড়বে। কারণ আজকে সারা পৃথিবীতে কার্বন নিঃস্বরণ বন্ধ করে দিলাম। তারপরও যে ক্ষতি ইতোমধ্যে হয়ে গেছে, তাতে এটা বাড়বে। দুর্যোগ আরও বাড়বে সেটা ধরে নিয়েই এখন থেকে আমাদেরকে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। প্রকল্পগুলো নেয়ার ক্ষেত্রে আগে যথার্থভাবে জানা দরকার আগামীতে আমাদের দুর্যোগের পরিমাণ কতটা বাড়বে। এটা সম্পর্কে আমাদের কাছে যথেষ্ট তথ্য আছে কি না। যদি বিনিয়োগ করতে যান, আগে দেখতে হবে না এখানে যথার্থভাবে কী ধরনের ঝুঁকি আছে। ঝুঁকি অনুযায়ী পরিকল্পনা নিতে হবে। যদিও জলবায়ু পরিবর্তনে যে প্রকল্পগুলো নেয়া হচ্ছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে যথার্থ ঝুঁকি যাচাই করা হচ্ছে না।’

যেকোনো প্রকল্পের পরিবেশগত, সাংস্কৃতিক, সামাজিক একটা প্রভাব আছে উল্লেখ করে জাকির হোসাইন খান বলেন, ‘প্যারিস জলবায়ু চুক্তির ৭ দশমিক ৫ নম্বর ধারায় বলা আছে, যেকোনো অভিযোজন স্থানীয় নাগরিক বান্ধব হতে হবে। স্থানীয় লুকায়িত জ্ঞান নিতে হবে। স্থানীয় প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশকে অবশ্যই মর্যাদা দিতে হবে। এটা মানার ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা আছে। বাংলাদেশের সংবিধানের ১৮ এর ‘ক’ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, পরিবেশ সুরক্ষার অঙ্গীকার রয়েছে। যেকোনো প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে এই সবগুলো বিষয় আমরা পরিমাপ করছি কি না। আজকে আম্পানে যে ক্ষতি হয়েছে, সেটা তো হওয়ার কথাই। আমরা জানতাম না যে, বাঁধগুলো যদি ভালোভাবে না করা হয়, বাঁধে যদি দুর্নীতি করা হয় বা বাঁধ যদি যথাযথভাবে উঁচু না করা হয়, তাহলে লবণাক্ত পানি প্রবেশ করবে। তাহলে কেন পদক্ষেপ নেইনি? গত ১০ বছরে দেখা গেছে জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলগুলোতে সবচেয়ে কম অর্থ গেছে। সবচেয়ে বেশি অর্থ গেছে যেসব অঞ্চলে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী মন্ত্রী/এমপিরা আছেন। তাহলে সেটা কেন গেল? আম্পানে ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর জন্য যে প্রকল্প নিয়েছে, এখানে যে যথাযথভাবে ঝুঁকি এসেসমেন্ট করে প্রকল্প গ্রহণ এবং যারা ক্ষতিগ্রস্ত তাদেরকে টার্গেট করে অর্থায়ন করছে, সেটার নিশ্চয়তা কোথায়?’

জলবায়ুর ঝুঁকি মোকাবিলায় কমিউনিটি নেতৃত্বাধীন অভিযোজন প্রকল্প নেয়ার পক্ষে মত দেন টিআইবির জলবায়ু অর্থায়নে সুশাসন ইউনিটের সিনিয়র এ প্রোগ্রাম ম্যানেজার। তিনি বলেন, ‘ঝুঁকি অনুযায়ী প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যে বিষয়টা জরুরি সেটা হলো যেসব বড় বড় অবকাঠামো তৈরি করা হয়, সেগুলোর জন্য হয়তো দক্ষ জনবল লাগে। কিন্তু সাইক্লোন সেন্টার নির্মাণ, বাঁধ নির্মাণ, একটা বনায়ন করা – এগুলো কিন্তু স্থানীয় লোকজন দিয়ে করানো সম্ভব। তাহলে কেন স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানকে সম্পৃক্ত করে কমিউনিটি নেতৃত্বাধীন অভিযোজন প্রকল্প কেন নেয়া হচ্ছে না? আজকে যে বাঁধটা তৈরি করতে দুর্নীতি হচ্ছে, সেই বাঁধটা তিনভাগের একভাগ টাকা দিয়ে কমিউনিটি তৈরি করে ফেলতে পারতো। তাদেরকে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দিয়ে দিলে, বিভিন্ন বাঁধের ওপর বনায়ন করার সুযোগ দিলে বা অন্যান্য কিছু করার সুযোগ দিলে; তখন তারাই বাঁধ রক্ষা করবে। আমরা সেটা করতে চাচ্ছি না কেন? মানে এখানে দুর্নীতি একটা ফ্যাক্টর। মুশকিলটা হলো এই যে পরিকল্পনাগুলো নেয়া হচ্ছে উপর থেকে, কিন্তু স্থানীয় পর্যায়ে অর্থগুলো যথাযথভাবে এসেস করার জন্য স্থানীয় নাগরিকদেরকে অন্তর্ভুক্ত করা এবং স্থানীয় পর্যায়ে কমিউনিটিকে নেতৃত্ব দিয়ে অভিযোজন কার্যক্রম নেয়ার ব্যাপারে সরকারের এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখছি না।’

যারা ক্ষতি করেছে বা শিল্পোন্নত দেশগুলোর কাছ থেকে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে বাংলাদেশের ক্ষতিপূরণ/অনুদানের অর্থ পাওয়ার অধিকার বলেও জানান জাকির হোসাইন খান। তিনি মনে করেন, আগামী ১০ বছরের পরিকল্পনা হাতে নিতে পারলে বিদেশি উৎস সবুজ জলবায়ু তহবিল কিংবা অন্যান্য তহবিল থেকে অর্থটা পাওয়া যাবে।

জাকির হোসাইন বলেন, ‘প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী, এই জাতীয় অর্থ দেবে শিল্পোন্নত রাষ্ট্রগুলো। কেন আমাদের সীমিত অর্থ ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় খরচ করবো? যারা ক্ষয়ক্ষতি করেছে, তারা দেবে অর্থ। অথচ সেই জায়গায় আমরা কেন বড় ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছি না। সপ্তম পঞ্চমবার্ষিকী পরিকল্পনায় জলবায়ু অর্থায়ন কৌশল হওয়ার কথা ছিল, সেটা হয় নাই।’

‘প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী, তারা অর্থ দিতে বাধ্য। এখন যদি সরকার অর্থ পেতে চায়, তাহলে তো যথার্থভাবে পরিমাপ করে দেখাতে হবে যে, এই পরিমাণ ঝুঁকি আমাদের আছে, এই পরিমাণ মানুষ আমাদের বাস্তুচ্যুত হবে, এই পরিমাণ কৃষির ক্ষতি হবে। সেই এসেসমেন্ট করে প্রকল্প করে জমা দিতে হবে। তাহলে দেখা যাবে, তারা সেই প্রকল্পগুলোয় অর্থায়ন করবে। অর্থায়নের ক্ষেত্রে সরকারকে প্রস্তুতি নিতে হবে। অর্থের যথাযথ ব্যবহারও প্রমাণ করতে হবে যে, দুর্নীতিমুক্ত উপায়ে স্বচ্ছতার সাথে অর্থ ব্যবহারে আশ্বস্ত করতে হবে। সেই ব্যবস্থা সরকার নিচ্ছে না কেন? মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার অনুদানভিত্তিক নেয়ার সুযোগ আছে, কেন আমরা সেই ব্যবস্থা নিচ্ছি না?’ প্রশ্ন জাকির হোসাইনের।

এ ধরনের কোনো পরিকল্পনার বিষয়ে স্পষ্ট কিছু বলতে পারেননি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য খোদেজা নাসরিন আক্তার হোসেন ও মো. রেজাউল করিম বাবলু। তবে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম বলেছেন, জলবায়ু মোকাবিলাকে কেন্দ্র করেই ব-দ্বীপ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার।

বিজ্ঞাপন
মন্তব্য করুন

অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন

Leave a Reply

পরিবেশ

ছাদ বাগানের জন্য কয়েকটি টিপস

ছাদ বাগানীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। টবে, ড্রামে গাছ লাগানো হয়। কেউ ফল, কেউবা সবজির গাছ লাগান। কেউ সফল হন। কেউ সফল হন না। ছোট ছোট কিছু ভুল বাগানীরা করে থাকেন। সে কারণে যত্ন নিলেও ফল আসে না। এখানে ছাদ বাগানীদের জন্য কিছু টিপস দেয়া হলো, যা মানলে সফলতা পাওয়া সহজ হতে পারে।

প্রথমেই মনে রাখতে হবে, টবে বা ড্রামে গাছ লাগালে তাকে খাবার দিতে হবে। প্রকৃতিতে বিদ্যমান গাছের মতো সে খাবার সংগ্রহ করতে পারে না। রোগ-বালাই হলো কিনা সেটাও বুঝে ব্যবস্থা নিতে হবে। ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে।

১. মাটির সাথে অবশ্যই কিছু কোকোপিট মেশাবেন। গাছের গোড়া স্যাতস্যাতে হতে দিবেন না। স্যাতস্যাতে হলে অসংখ্য রোগ হবে। মাটি ভেজা থাকবে তবে স্যাতস্যাতে না। কেকোপিট মেশালে পানি কম দিলেও হবে। কোকোপিট (নারকেলের ছোবলার গুড়া) পানি ধরে রাখে। অতি বৃষ্টি হলে গোড়ায় পানি জমতে দেয় না। হালকা হওয়ায় ছাদে ওজনের চাপ পড়ে না। এছাড়া কোকোপিটে কিছু পুষ্টি উপাদান আছে। যা গাছের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। কোকোপিটে চারা দ্রুত গজায়, বড় হয়। মাটির চেয়ে কোকোপিটে চারা ভালো হয়।

২. গাছের জন্য বিরিয়ানি হলো সরিষার খৈল-পচা পানি। মাটির হাড়িতে খৈল পচাতে হবে। কমপক্ষে ৫ দিন। ৭ দিন কিংবা বা ১৫ দিন হলে উত্তম। অল্প পানিতে পচিয়ে তার সাথে আরো পানি মিশিয়ে দিতে হবে। এটি গাছের জন্য অত্যন্ত উপকারী। একটু গন্ধ হয়, তাই অল্প একটু গুড় দিতে পারেন। ছাদে হাড়িতে পচালে বাসায় গন্ধ আসবে না। বৃষ্টির সময় খৈল-পচা পানি দেবেন না। পুকুরের নিচে থাকা পাক কাদা গাছের জন্য খুব উপকারী।

৩. আমরা জানি, মাটিতে অসংখ্য ক্ষতিকর ছত্রাক থাকে। যা গাছকে মেরে ফেলার জন্য যথেস্ট। তাই মাটি রেডি করার সময় কিছুটা বায়োডামা সলিট দিবেন। এটি উপকারী ছত্রাক। মাটিতে ক্ষতিকারক উপাদানগুলো মেরে ফেলে। আবার জৈব সারের কাজও করে। গাছের জন্য মাটি হবে ঝুরঝুরে, হালকা।

৪. যাই লাগান না কেন, ভালো জাতের বীজ কিনা নিশ্চিত হয়ে নেবেন। ভালো বীজে ভালো ফসল হবে। নতুবা যতই যত্ন নেন না কেন, সব পরিশ্রম বেলাশেষে জলে যাবে। বীজ থেকে নিজে চারা করা উত্তম। কারণ বাজার থেকে যে চারা কিনবেন সেটার জাত ভালো হবে সে নিশ্চয়তা কোথায়? ছত্রাকনাশক দিয়ে বীজ শোধন করে নেয়া উত্তম। পদ্ধতি হলো- ছত্রাকনাশক দেয়া পানিতে কিছুটা সময় বীজ ভিজিয়ে রাখতে হবে। ম্যানসার, মেটারিল দুটি ছত্রাকনাশক।

৫. গাছ বেশি তো ফলন বেশি- এটি ভুল ধারণা। অল্প জায়গায় বেশি গাছ লাগানো যাবে না। গাছ পাতলা করে লাগাতে হবে। বেশি লাগালে গাছ প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাবে না। একটি ফলের ক্রেটে মাত্র দুটি গাছ। একটি টবে একটি গাছ। ক্রেট বা টবে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।

৬. ছাদে মাচা দেয়া সমস্যা। কারণ ঘুঁটি থাকে না। এ জন্য ফলের ক্রেটের চারপাশে লাঠি বেঁধে সহজে মাচা দেয়া যায়। লতাপাতা জাতীয় গাছ লাগানোর পাত্র একটু গভীর হলে উত্তম। গাছের জন্য সবচেয়ে বেশি ভালো জৈব সার হলো পাতা-পচা সার, তারপর ভার্মি কম্পোস্ট, তারপর গোবর সার। পাতা-পচা সার সহজলভ্য নয়। দাম বেশি। কিন্তু ভার্মি কম্পোস্ট সহজলভ্য। মাটির সঙ্গে মিনিমাম ৪০% জৈব সার দেয়া উত্তম।
৭. নিম কীটনাশককে ক্ষতিকারক পোকা-মাকড় খুব অপছন্দ করে। এটি দিলে তারা বিরক্ত বোধ করে। গাছে বাসা বাঁধতে পারে না। প্রতি সাত দিনে একবার সব গাছের পাতায় নিম কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। মাসে একবার ইপসম সল্ট স্প্রে করে দেয়া উত্তম। একইভাবে মাসে একবার পানির সঙ্গে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড মিশিয়ে স্প্রে করা ভালো।

৮. ডাটা, পুইশাক, লালশাক, ধনেপাতা এসব লাগাতে পারেন। মাত্র ২৫ দিনে খেতে পারবেন। লালশাক লাগালে নেট দিয়ে ঘিরে দেবেন। শাকপাতা লাগালে দ্রুত আউটপুট পাবেন। যা আপনাকে প্রেরণা দেবে। পুইশাক গাছের পাতায় দাগ হলে পাতা কেটে দিন। অথবা ছত্রাকনাশক স্প্রে করেন। অথবা গাছ উঠিয়ে আবার লাগান। ইউরিয়া সার দিলে পুইশাক দ্রুত বাড়বে। শশা গাছের বৃদ্বির জন্য ডিএপি সার দিলে ভালো হবে। শশা গাছে ছাড়া ছাড়া ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হয়। খুব রোদ, গাছের গোড়ায় মালচিং করে দিয়ে উত্তম ফল মিলবে। মালচিং হলো গাছের গোড়ায় বিশেষ পলিথিন কিংবা শুকনো পাতা, খড় দিয়ে ঢেকে দেয়া।

৯. ফুল আসার পরে প্রানোফিক্স অথবা মিরাকুরান গাছের পাতায় শেষ বিকালে স্প্রে করবেন। বাসায় দুইটি গ্রুপের ছত্রাকনাশক রাখা ভালো। যেমন- ম্যানসার, মেটারিল। ১৫ দিনে একবার স্প্রে করবেন। এগরোমিন্ড গোল্ড অনুখাদ্য বা অন্য কোনো অনুখাদ্য বাসায় রাখতে হবে। মাসে কমপক্ষে একবার স্প্রে করবেন। অতিরিক্ত গরম, বৃষ্টি, খাদ্যের অভাব, গাছ রোগাক্রান্ত, আবহাওয়া দ্রুত আপডাউন করা ইত্যাদি কারণে ফুল ঝরে পড়তে পারে। আবার পরাগায়ন না হলে ঝরে পড়তে পারে। এ জন্য হাতের মাধ্যমে পরাগায়ন করতে হবে। পুরুষ ফুলের পরাগদণ্ড নারী ফুলে গর্ভে ঘষে দিতে হবে।

১০. ছাদ বাগানে গাছ মারা যাওয়ার অন্যতম কারণ পানি বেশি বা কম দেয়া। যতটুকু লাগে ঠিক ততটুকু পানি দিতে হবে। কোন গাছের কি চাহিদা, রোগ একটু স্টাডি করলে সহজে সফল হতে পারবেন।

১১. গাছের পাতার নিচে খেয়াল করবেন। বেগুন গাছের পোকা মারার জন্য সেক্স ফোরেমান ফাঁদ লাগাবেন। ডগা ছিদ্র বা ফল ছিদ্র হলে সাইপারমেত্রিন গ্রুপের কীটনাশক দিতে হবে। একটি বেগুন গাছ অনেক দিন ফল দেয়। ঢেড়স গাছ বেশি রোদ পড়ে এমন জায়গায় লাগাবেন। বেগুন, ঢেড়স, লালশাক, পুইশাক, ধনেপাতা, ডাটা শাক- এসব গাছের খুব যত্ন করতে হয় না।

১২. রসুন আর লবঙ্গ বেটে সেই পানি গাছে স্প্রে করলে পোকা কম আসবে। মরিচ গাছে নেপথলিন বেঁধে দিন, পোকা কম আসবে। পাতা কোকড়ালে ভার্মিটেক কিংবা এবোম কীটনাশক দিন। কোকড়ানো পাতা ফেলে দিন। মরিচ গাছে দশ দিন পর পর ডায়মেথট গ্রুপের (যেমন টাফগর) কীটনাশক দিলে উপকার হবে। সবকিছু করছেন, তারপরও কাজ হচ্ছে না। এক্ষেত্রে গাছের জায়গা বদল করেন, উঠিয়ে অন্যত্র লাগান।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

দৈনন্দিন

নিপাহ্‌ ভাইরাসঃ খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়

নিপাহ্‌ ভাইরাস খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়
নিপাহ্‌ ভাইরাস খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়
খেজুরের রস সংগ্রহের প্রক্রিয়া।

শীতকাল এলেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে খেজুরের রস খাওয়ার চল বেড়ে যায়। অনেকে গাছ থেকে খেজুরের কলসি নামিয়ে সরাসরি কাঁচা রস খেয়ে থাকেন।

আবার অনেকে এই রস চুলায় ফুটিয়ে সিরাপ, পায়েস বা ক্ষীর বানিয়ে খান। এছাড়া রসের তৈরি ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়, ভেলি গুড়, বালুয়া গুড়, মিছরি গুড়সহ নানা ধরণের পিঠার বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।

নিপাহ্‌ ভাইরাস আতঙ্ক

খেজুর আরব দেশের প্রচলিত ফল হলেও ওইসব দেশে খেজুর, মূলত ফল উৎপাদননির্ভর, যেখানে কিনা বাংলাদেশের খেজুর গাছ রস উৎপাদননির্ভর।

কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, বাংলাদেশে সাধারণত কার্তিক থেকে মাঘ অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ হয়ে থাকে।

দেশটির সবচেয়ে বেশি রস সংগ্রহ হয় যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে।

মূলত খেজুর গাছের ডালপালা পরিষ্কার করে, ডগার দিকের কাণ্ড চেঁছে তাতে একটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি চোঙ বসিয়ে দেয়া হয়। চোঙের শেষ প্রান্তে ঝুলিয়ে দেয়া হয় একটি মাটির হাড়ি বা কলসি।

সেই চোঙ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রস এসে জমা হতে থাকে মাটির হাড়ি বা কলসিতে। এভাবে একটি গাছ থেকে দৈনিক গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লিটার রস সংগ্রহ করা যায় বলে কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গিয়েছে।

কিন্তু গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে নিপাহ্‌ ভাইরাস আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

পরিবেশ

জেনে নিন এই মরসুমে কোন কোন ঔষধি উদ্ভিদের চাষ আপনার জন্য সেরা

দেশের বিভিন্ন রাজ্যেই বর্ষার (Monsoon 2021) প্রভাবে চলছে বৃষ্টিপাত। এসময় কৃষকেরা খারিফ শস্য (Kharif Crops) বপনে তৎপর হয়ে ওঠেন। এই খরিফ মরসুমে কৃষকভাইরা সাধারণত অঞ্চলভেদে ধান, অড়হর, সোয়াবিন সহ বিভিন্ন চাষে মনযোগ দিয়ে থাকেন ৷ তবে এসব ছাড়াও, ঔষধি গুন সমৃদ্ধ (Medicinal Crops) গাছ চাষে বর্ষায় যে কতটা লাভ হতে পারে সে সম্পর্কে অনেকেই হয়তো জানেন না৷

বিশেষ করে বর্ষাকালেই এমন বহু ঔষধি গুন সম্পন্ন গাছ রয়েছে যাদের চাষ হতে পারে লাভজনক৷

বর্ষাকালে কোন কোন ঔষধি উদ্ভিদের চাষ করা যেতে পারে অথবা এই চাষ কীভাবেই বা করা যাবে সে বিষয়ে সঠিক তথ্য না পাওয়ার কারণেই অনেকের কাছে বিষয়টি অধরা৷ চলুন এই প্রতিবেদনে এমনই কিছু গাছ নিয়ে আলোচনা করা যাক যা কৃষকদের জন্য হতে পারে লাভদায়ক৷ তবে সঠিক সময়ে, সঠিক রোপন, সেচ, কীটনাশক দেওয়ার প্রয়োজন এগুলিতে, না হলে এর ওপর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে৷

অশ্বগন্ধা –

বর্ষায় এর চাষ ভালো৷ জুন থেকে অগস্ট পর্যন্ত এর চাষ করতে পারেন৷ এর বিভিন্ন জাত রয়েছে৷ উন্নত মানের গাছের চাষে কৃষকের লাভের পরিমাণও বৃদ্ধি পেতে পারে৷ উল্লেখ্য, প্রতি হেক্টরে ৫ কিলোগ্রাম বীজ ব্যবস্থা করতে হবে৷ যদি কেউ ১ হেক্টর জমিতে অশ্বগন্ধার চাষ করতে চায় তাহলে তাকে প্রায় ৫০০ বর্গমিটারে নার্সারি তৈরি করতে হবে৷ প্রায় ১ সেন্টিমিটার গভীরে বীজ বপন করতে হবে৷

শতমূলী –

শীত বাদ দিয়ে বছরের যে কোনও সময়ে এই গাছের চাষ করতে পারেন৷ বর্ষাকালে এই চারা রোপন করলে সহজেই তা বেড়ে উঠতে থাকে৷ তবে বীজ বপনের আগে বীজ ১ দিন পর্যন্ত হালকা গরম জলে ভিজিয়ে রাখতে হয়৷

যষ্টিমধু –

জুলাই থেকে অগস্ট পর্যন্ত এর চাষ করা হয়৷ আর তাই জুন থেকেই এর প্রস্তুতি শুরু করে দেন কৃষকেরা৷ জলনিকাশি ব্যবস্থা উচ্চমানের হওয়া প্রয়োজন এই গাছ চাষের জন্য৷ মনে রাখতে হবে এর চাষের আগে জমিতে কমপক্ষে ১৫ টন গোবর সার দেওয়া প্রয়োজন, এরপরেই এটি চাষ করা উচিত৷

ঘৃতকুমারী –

এর ভালো উৎপাদনের জন্য জলনিকাশি ব্যবস্থা ঠিক রাখতে হবে৷ এই ধরনের ঔষধি গুনসম্পন্ন গাছ শীতকাল বাদ দিয়ে যে কোনও সময় চাষ করতে পারেন৷ বর্ষাকালে দূরত্ব রেখে বীজ বপন করতে হবে৷ কম সময়ের মধ্যেই ব্যবহারোপযোগী হয়ে ওঠে এগুলি৷

অগ্নিশিখা বা কলিহারি –

এটি চাষের জন্য কৃষকেরা জুন মাসেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন৷ জুলাইয়ে ভালো বৃষ্টিতে এর চাষ শুরু করা যেতে পারে৷ উল্লেখ্য, ১ হেক্টর জমির জন্য প্রায় ১০ ক্যুইন্টাল কন্দের প্রয়োজন৷ এটি চাষের আগেও জমিতে গোবর সার প্রয়োগ করে তা প্রস্তুত করে নিতে হবে৷

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

পরিবেশ

শিখে নিন টবে দারুচিনির চাষের কৌশল

পৃথিবীতে ভোজ্য মসলা যতরকম আছে তারমধ্যে দারুচিনি সবথেকে উল্লেখযোগ্য। এই প্রাচীনতম মসলা বহুদিন ধরে ওষধি হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে চলেছে। এছাড়াও খাবারে স্বাদ বাড়ানো থেকে শুরু করে, পানীয় এবং তরল মশলাদার খাবারে স্বাদ বাড়ানোর জন্যও এই দারচিনির ব্যবহার হয়। এলাচ, গোলমরিচ, লবঙ্গের সাথে সাথে দারুচিনির নামও মসলা হিসেবে একই পংক্তিতে উচ্চারিত হয়। বহু কৃষক দারুচিনির চাষ করে ভীষণভাবে উপকৃত হয়েছেন। বাজারে এই দারুচিনির চাহিদা প্রচুর পরিমানে থাকায়, এই চাষে ভালো লাভ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও সৌখিন মানুষেরাও ভালোবেসে দারুচিনির চাষ বাড়িতে করে থাকেন। দারুচিনি গাছের বাকল, ফুল, কুঁড়ি, পাতা, ফল, শেকড় সবকিছুই কাজে লেগে যায়। দারুচিনি গাছ বাড়িতে চাষ করতে গেলে ঘরে ছাদে দুই জায়গাতেই চাষ করা যায়।

মনে রাখতে হবে এই চাষ করতে গেলে উপযুক্ত পরিমানে রোদ দরকার। বাংলার জলবায়ুতে মূলত শীতকালে এই চাষ করা সবথেকে ভালো। জানুয়ারি মাসে দারুচিনি গাছে ফুল ফোটা আরম্ভ করে, এবং এই গাছের ফল পাকতে আরম্ভ করে জুলাইয়ে। সেইসময়ই ফল থেকে বীজ সংগ্রহ করে নিয়ে এসে বাগানে বা টবে রোপন করে দেওয়া উচিত।

প্রয়োজনীয় রোদ (Sunlight)

কড়া সূর্যালোক দারুচিনি জন্য প্রয়োজনীয়, তাই এটি পর্যাপ্ত রোদ পাওয়া যায় এমন জায়গায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দারুচিনি রোপন করতে গেলে রৌদ্রোজ্জ্বল স্থান যেমন জানালার ধারে, ব্যালকনি কিংবা ছাদের খালি স্থান ব্যবহার করতে হবে।

উপযুক্ত মাটি (Soil)

দারুচিনি চাষের জন্য ভাল মানের মাটি ব্যবহার করা আবশ্যক। বাগানের মাটি ব্যবহার না করাই ভালো, কেননা এতে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। অনে সময় আমরা আশেপাশ থেকে মাটি নিয়েই টব ভরে গাছ লাগানো হয়।  বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সংবেদনশীল গাছগুলোতে এই উপায় কার্যকরী হয় না। নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভাল এমন মাটি ব্যবহার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে উত্তম নিষ্কাশনযুক্ত বেলে দোআঁশ মাটি ব্যবহার করা সবথেকে উত্তম। জেনে রাখা ভালো দারুচিনি খরা একদমই সহ্য করতে পারে না। মাটির বিকল্প হিসেবে ১৫% ট্রাইকোকমপোস্টযুক্ত কোকোডাস্ট ব্যবহার করা যেতে পারে।

বাইরে চাষ করার জন্য এক মিটার (৩০ সেন্টিমিটার গভীর) পর্যন্ত গর্ত করে মাটি দিয়ে পূরণ করে নিতে হবে। ঘরের ভিতরে বা ছাদবাগানের দারুচিনি চাষের জন্য একটি বড় পাত্র প্রয়োজন হবে।

রোপন (Planting)

দারুচিনির বীজ সংগ্রহও করা যায় অথবা নার্সারি থেকে দারুচিনির গাছ কিনেও আনা যায়।

বাইরে চাষের ক্ষেত্রে

দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে ১ মিটার x ১ মিটার এবং ৩০ সেমি গভীরতায় খনন করে মাটি দিয়ে গর্তটি পূরণ করতে হবে।

ঘরের মধ্যে টবে রোপনের ক্ষেত্রে

নিচে গর্ত সহ বড় সিরামিক পাত্র (৬০ x ৫০ সেমি) ব্যবহার করতে হবে। পাত্রটি মাটি বা কোকোডাস্ট দিয়ে পূরণ করে নিতে হবে। ৩০ সেন্টিমিটার গভীরতা এবং ৩০ সেন্টিমিটার প্রস্থের একটি গর্ত তৈরি করতে একটি বাগান ট্রোয়েল ব্যবহার করে নেওয়া ভালো। বীজ ব্যবহার করলে  ১.৫ সেন্টিমিটার গভীর গর্ত তৈরি করে নেওয়া উচিত। এবার গাছটি গর্তের মধ্যে রেখে মাটি দিয়ে চাপা দিতে হবে। বীজ ব্যবহার করলে প্রতি ১.৫ সেমি গর্তে একটি করে বীজ পুঁততে হবে এবং মাটি দিয়ে বীজটি ঢেকে দিতে হবে।

মাটি সবসময় ভেজা রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণ জল দিতে হবে। দারুচিনি গাছ পাত্রে রোপন করার পর, টবের নিচের গর্ত থেকে জল বের না হওয়া পর্যন্ত জল দিতে হবে। টবের উপরের ৫ সেন্টিমিটার শুকিয়ে গেলেই আবার গাছটিকে জল দিতে হবে।

গাছের পরিচর্যা (Caring)

দারুচিনি গাছে নিয়মিত সার প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম বছর ৫০ গ্রাম টিএসপি, ৭৫ গ্রাম এমওপি ও ৫০ গ্রাম ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে। প্রতিবছর ২-৩ কেজি ট্রাইকোকম্পোস্ট ও সার প্রয়োগ শেষে একই হারে টিএসপি, এমওপি ও ইউরিয়া দিতে হবে।

দারুচিনি প্রথম ধরতে দুই থেকে তিন বছর সময় নেয় এবং তার পরে প্রতি দুই বছর পরপরই ফসল দিতে থাকে। দারুচিনি গাছ কম করে ১০-১৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। তাই একে নিয়মিত করে ছোট রাখতে হবে। পাঁচ বছর বয়সী দারুচিনি গাছ থেকে নিয়মিত দারুচিনি সংগ্রহের ডাল পাওয়া সম্ভব। দারুচিনি ব্যবহার করার জন্য যে শাখাগুলি কাটা হবে সেগুলি থেকে বাকল তুলে নিতে হবে, বাকলগুলি ব্যবহার করার আগে জলে ভালোভাবে ভিজিয়ে নেওয়া উচিত।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

আঙিনা কৃষি

টবে লাগান মিষ্টি তেঁতুল গাছ

পৃথিবীতে জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, হারিয়ে যাচ্ছে বহু প্রাণী ও উদ্ভিদ বৈচিত্র। চাষবাসের জমিরও সংকুলান ঘটছে সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে। গগনচুম্বী বাড়ি ঘিরে ফেলছে সমস্ত ফাঁকা জমিন। শখ করে মানুষ খোলা জায়গায় যে গাছ লাগবে অথবা ফল-ফুলের চারা সেই উপায়ও আর নেই। গাছ লাগানোর জন্য সামান্য জায়গাও ফাঁকা থাকছে না আর। তবে আমাদের করণীয় কী? বৃক্ষরোপন কি তবে অচিরেই বন্ধ হয়ে যাবে। বেঁচে থাকার জন্য তো গাছ লাগাতে হবেই। বাড়ির একটুকরো বারান্দা অথবা ব্যালকনিতেও সুন্দর ভাবে ইচ্ছা করলে গাছ লাগানো যায়। বাড়ির ছাদেও বানানো যায় সুন্দর বাগিচা। শহরের মানুষদের জন্য ছাদ বাগানের কোনও বিকল্পও নেই। বাড়ির মধ্যেকার ব্যালকনি অথবা ছাদের একটুকরো জমিতেও, ইচ্ছা করলে টবে চাষ করা যায় বিভিন্ন ফুলের ও ফলের গাছ।

শাকসবজি, পেয়ারা, লেবু প্রভৃতি দেশীয় গাছ টবে বাড়তে দেওয়া থেকে শুরু করে বর্তমানে বহু বিদেশী গাছের চারাও মানুষ ব্যালকনি অথবা ছাদে চাষ করছেন। তার মধ্যে থাই মিষ্টি তেঁতুল টবের চাষ পদ্ধতি হিসাবে অত্যন্ত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। প্রথমত মিষ্টি তেঁতুলের চাষ করতে গেলে, নার্সারি থেকে এই বিশেষ তেঁতুলের সঠিক বীজ নিয়ে আনতে হবে। তবে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কলম পাওয়া একটু দুষ্কর কাজ। বুঝে সঠিক চারা নিয়ে আসা বাগান মালিকের উপরেই বর্তায়।

থাই মিষ্টি তেঁতুলের ফুল থেকে ফল ধরতে প্রায় ৭ মাস সময় লাগে। বছরে দু’বার থাই মিষ্টি তেঁতুলের গাছে ফল ধরে। প্রথমবার বর্ষাকালে এবং দ্বিতীয়বার শীতকালে। এই গাছের পরিচর্যা আলাদা করে করার কোনও দরকার পড়ে না। গাছের যত্নআত্তি নিতে হয় ঠিকই, কিন্তু তা বলে, আলাদা করে কোনও বিশেষ যত্ন নিতে হয় না।

গাছ লাগানোর পদ্ধতি (Planting):

থাই মিষ্টি তেঁতুল চাষের জন্য আদর্শ মাটি হল, দো-আঁশ বা বেলে দো-আঁশ মাটি। এই দু’টি মৃত্তিকার মধ্যে যে কোনও একটি বেছে নিন। তারপর বেছে নেওয়া মাটির দুই ভাগ অংশের সাথে গোবর, ১০০ গ্রাম, টিএসপি ১০০ গ্রাম, পটাশ, ২৫০ গ্রাম, হাড়ের গুঁড়ো এবং ৫০ গ্রাম সরিষার খোল একসঙ্গে মিশিয়ে ২০ ইঞ্চি মাপের বড় টবে জল মিশিয়ে রেখে দিতে হবে। ১০ থেকে ১২ দিন পর টবের মাটি ভালো করে খুঁচিয়ে দিয়ে আরও ৪-৫ দিন রেখে দিতে হবে। ৪ থেকে ৫ দিন বাদে মিষ্টি তেঁতুলের একটি ভালো চারা ওই টবে লাগান।

পরিচর্যা(Caring):

চারা লাগানোর প্রথম কয়েক মাস তেমন যত্নের দরকার পড়বে না। অবশ্যই গাছে এই সময়টুকু পর্যাপ্ত জলের যোগান, এবং আগাছা পরিষ্কারের কাজ করতে হবে।  ছয় মাস চারা লাগানোর সময়সীমা ফুরোলেই ১ মাস বাদে বাদে গাছে সরষের খোল মিশ্রিত পচা জল দিতে হবে। মনে রাখতে  হবে খোল দেওয়ার আগে গাছের মাটি খুঁচিয়ে নিতে হবে।

রোগ দমন (Disease management):

সাধারণত থাই মিষ্টি তেঁতুল গাছে পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখা যায় না। কিন্তু বর্ষাকালে অনেক সময় তেঁতুল গাছে ছত্রাক হানা দেয়। এর ফলে তেঁতুল ফেটে যায়। এই অসুবিধার থেকে গাছকে বাঁচাতে হলে, বর্ষাকাল আসার আগেই ভালো ছত্রাকনাশক ওষুধ ১০ দিন অন্তর গাছে স্প্রে করে ছড়িয়ে দিতে হবে।

বাংলার বেজায় টক তেঁতুলের সঙ্গে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কোনও তুলনাই চলে না। অত্যন্ত মিষ্টি খেতে এই তেঁতুল থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়ায় চাষ প্রভূত পরিমাণে হলেও, আমাদের রাজ্য এই ফলের চাষ এখনও ততটা গতি পায়নি। কিন্তু আপনি আপনার ব্যালকনি অথবা ছাদে সহজেই এই থাই তেঁতুলের গাছ লাগাতে পারেন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশক: শাইখ সিরাজ
© ২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। দা এগ্রো নিউজ, ফিশ এক্সপার্ট লিমিটেডের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। ৫১/এ/৩ পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থাপথ, ঢাকা -১২০৫
ফোন: ০১৭১২-৭৪২২১৭
ইমেইল: info@agronewstoday.com, theagronewsbd@gmail.com