আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

পরিবেশ

পুষ্টির চাহিদা মেটাবে জিংক সমৃদ্ধ চাল

মতিনুজ্জামান মিটু: [২] দানাদার শস্যে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও অপুষ্টিজনিত অদৃশ্য ক্ষুধায় ভুগছে দেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক জনগোষ্ঠী। সুষম খাবারের ঘাটতি রয়েছে শতকরা ৫০ ভাগেরও বেশি জনসংখ্যার। বিভিন্ন সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে কৃষি তথ্য সার্ভিসের ড. সুরজিত সাহা রায় জানান, বাংলাদেশ একটি ঘনবসতি দেশ। ছোট এ দেশটির জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে ১৬ কোটি।

[৩] ২০১৮ সালের জরিপে দেখা যায়, বাংলাদেশের দারিদ্র্যের হার ২১.৮ শতাংশ এবং হতদরিদ্রের হার ১২.৯ শতাংশ। পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুদের মধ্যে খর্বতার হার ৩১ শতাংশ (বিডিএইচএস, ২০১৯)। দানাদার শস্যে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও অপুষ্টিজনিত অদৃশ্য ক্ষুধায় বা হিডেন হাঙ্গারে ভুগছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক জনগোষ্ঠী। শতকরা ৫০ ভাগেরও বেশি জনসংখ্যার সুষম খাবারের ঘাটতি রয়েছে। ভিটামিন ‘এ’, ক্যালসিয়াম, জিঙ্ক এবং আয়রনের অভাব উল্লেখযোগ্য। পাঁচ বছরের কম বয়সি শতকরা ৪১ ভাগ শিশু জিঙ্কের অভাবে ভুগছে, শতকরা প্রায় ৩৬.৪ ভাগ শিশু খর্বকায়। ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সি মেয়েদের শতকরা প্রায় ৪৪ ভাগ অপুষ্টির কারণে বেটে বা লম্বায় কম। অপুষ্টির ঘাটতি মেটাতে না পারলে স্থূলতা এবং অসংক্রামক রোগের প্রবণতা বাড়তে পারে। বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ও লক্ষ্যসমূহের সাথে মিল রেখে ২০৩০ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের অবসান, ক্ষুধার অবসান ও উন্নত পুষ্টিঅর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

 ভাত আমাদের প্রধান খাদ্য। এ দেশের মানুষের ৭৭ শতাংশ ক্যালরি ও ৫০ শতাংশ প্রোটিন আসে ভাত থেকে। প্রতিদিন গড়ে মাথাপিছু ৩৬৭ গ্রাম চালের ভাত আমরা খেয়ে থাকি। ভাত বা দানাদার খাদ্য মোট খাদ্যশক্তির ৬০ শতাংশের বেশি দখল করে আছে। অর্থাৎ, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পুষ্টির অধিকাংশ ক্যালরি, প্রোটিন ও খনিজ উপাদান আসে ভাত থেকে। চালে মোটামুটি ৮০ শতাংশ শর্করা, ৭.১ শতাংশ প্রোটিন, ০.৬৬ শতাংশ চর্বি, ০.১২ শতাংশ চিনি, শতকরা ১.৩ ভাগ আঁশ থাকে। প্রতি ১০০ গ্রাম চালে ১১৫ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম, ১১৫ মিলিগ্রাম ফসফরাস, ২৫ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম, ২৮ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ৪.৩১ মিলিগ্রাম আয়রন পাওয়া যায় (ইউএসডিএ, ২০১২)।

[৫] মানবদেহের জন্য জিঙ্ক খুব প্রয়োজনীয় একটি খনিজ উপাদান। মানবদেহের ৩০০টি এনজাইমের সাথে জিঙ্ক সরাসরি অংশগ্রহণ করে যেগুলো দেহের অনেক বিপাকীয় কাজে অংশ নেয়। জিঙ্কের অভাবে মুখের রুচি নষ্ট হয়, স্বাদ ও গন্ধ নষ্ট হয়, ওজন কমে যায় অথবা মুটিয়ে যায়, চুল পড়ে যায়, হজমে সমস্যা হয়, জটিল ধরনের অবসাদগ্রস্ততা দেখা দেয়, বন্ধ্যাত্ব দেখা দেয়, হরমোনের সমস্যা হয়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, মনোযোগ ও স্মরণশক্তি কমে যায়, ত্বকের ক্ষত সারতে দেরি হয় এবং স্নায়ুবিক দুর্বলতা দেখা দেয়। মানব শরীর জিঙ্ক সংরক্ষণ করে রাখতে পারে না বিধায় প্রতিদিনই একজন পূর্ণবয়স্ক পুরুষের ১১ মিলিগ্রাম এবং নারীদের ৮ মিলিগ্রাম জিঙ্ক গ্রহণ করতে হয়। গর্ভবতী মায়েদের দৈনিক ১১ মিলিগ্রাম, দুগ্ধদানকারী মায়েদের ১২ মিলিগ্রাম জিঙ্ক প্রয়োজন এবং শিশুদের দৈনিক চাহিদা ৩-৫ মিলিগ্রাম জিঙ্ক।

[৬] লাল মাংস জিঙ্কের ভালো উৎস। ১০০ গ্রাম গরুর মাংসে ৪.৮ মিলিগ্রাম জিঙ্ক থাকে, যা দৈনিক চাহিদার শতকরা ৪৪ ভাগ মেটায়। ১০০ গ্রাম ছোট চিংড়ি দৈনিক চাহিদার শতকরা ১৪ ভাগ মেটায়। ১০০ গ্রাম রান্না করা ডাল মেটাতে পারে চাহিদার মাত্র ১২শতাংশ। বাদামে প্রচুর জিঙ্ক আছে। ২৮ গ্রাম বাদাম চাহিদার ১৫শতাংশ, পনির ২৮শতাংশ, এক কাপ দুধ ৯ শতাংশ এবং একটি ডিম শতকরা ৫ ভাগ জিঙ্কের চাহিদা মেটাতে পারে। মাংস, ডিম, দুধ, পনির, বাদাম, চিংড়ি দামি খাবার হওয়ায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর নাগালের বাইরে। লাল মাংস ও চিংড়িতে কোলেস্টেরল বেশি থাকায় বয়স্ক জনগণ সাধারণত ডাক্তারের পরামর্শে এসব খাবার এড়িয়ে চলেন।

৭] প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার খাদ্যের মাধ্যমে পুষ্টির জোগান শ্লোগানকে সামনে রেখে আমাদের বিজ্ঞানীরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। যার ফলে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ৬টি জিঙ্ক সমৃদ্ধ ধানের জাত, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ১টি ধানের জাত এবং বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ১টি জিঙ্কসমৃদ্ধ গমের জাত উদ্ভাবন করেছে। উদ্ভাবিত জিঙ্কসমৃদ্ধ জাতগুলোতে প্রতি কেজি চালে ২২ থেকে ২৭ মিলোগ্রাম জিঙ্ক থাকে যেখানে সাধারণ চালে থাকে মাত্র ১৫ মিলিগ্রাম জিঙ্ক। প্রতিদিন ৪০০ গ্রাম জিঙ্কসমৃদ্ধ চালের ভাত খেলে একজন ভোক্তা প্রতিদিন ৯ থেকে ১০ মিলিগ্রাম জিঙ্ক পেতে পারে, যা দৈনিক চাহিদার প্রায় সমান।

[৮] বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ২০১৩ সালে বিশে^ সর্বপ্রথম জিঙ্কসমৃদ্ধ ধানের জাত ব্রি ধান৬২ উদ্ভাবন করে। এরপর একে একে ব্রি ধান৬৪, ব্রি ধান৭২, ব্রি ধান৭৪, ব্রি ধান৮৪ এবং সর্বশেষ ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে উচ্চ জিঙ্কসমৃদ্ধ ব্রি ধান১০০ অবমুক্ত করে। বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট জিঙ্কসমৃদ্ধ বিনাধান-২২ নামের ধানের জাত এবং বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ২০১৭ সনে বারি গম৩৩ উদ্ভাবন করেছে।

[৯] আমন মৌসুমে আবাদের জন্য তিনটি জিঙ্কসমৃদ্ধ ধানের জাত উদ্ভাবিত হয়েছে। ব্রি ধান৬২ জিংক এর পরিমাণ প্রতি কেজি চালে ১৯ মিলিগ্রাম। হেক্টরপ্রতি গড় ফলন ৩.৫-৪.৫ টন। ব্রি ধান ৭২ জিঙ্কের পরিমাণ প্রতি কেজিতে ২২.৮ মিলিগ্রাম। গড় ফলন প্রতি হেক্টরে ৫.৭ টন হলেও উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে এর ফলন হেক্টরপ্রতি ৭.৫ টন হতে পারে। বিনাধান-২২ জিঙ্কের পরিমাণ প্রতি কেজিতে ২৬ মিলিগ্রাম। গড় ফলন প্রতি হেক্টরে ৬.১ টন হলেও ৬.৫ টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম।

[১০] বোরো মৌসুমে আবাদের জন্য জিঙ্কসমৃদ্ধ চারটি জাত উদ্ভাবিত হয়েছে। প্রতি কেজিতে ২৪ মিলিগ্রাম জিঙ্কসমৃদ্ধ ব্রি ধান৬৪ হেক্টরপ্রতি ৬.০ থেকে ৬.৫ টন ফলন দিতে পারে। ব্রি ধান৭৪ জাতটির প্রতি কেজিতে জিঙ্কের পরিমাণ ২৪.২ মিলিগ্রাম আছে। গড় ফলন হেক্টরপ্রতি ৭.১ টন হলেও উপযুক্ত পরিচর্যায় ৮.৩ টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম। ব্রি ধান৮৪ জাতটি প্রতি কেজি চালে জিঙ্ক আছে ২৭.৬ মিলিগ্রাম, ১০.১ মিলিগ্রাম আয়রন ও শতকরা ৯.৭ ভাগ প্রোটিন আছে। হেক্টরপ্রতি ফলন ৬.০-৬.৫ টন হলেও উপযুক্ত পরিবেশে ৮ টন ফলন দিতে সক্ষম। নাজিরশাইল চালের ন্যায় দানাবিশিষ্ট ব্রি ধান ১০০ জাতটির প্রতি কেজি চালে জিঙ্কের পরিমাণ ২৫.৭ মিলিগ্রাম। গড় ফলন হেক্টরপ্রতি ৭.৭ টন হলেও উপযুক্ত পরিবেশে ৮.৮ টন ফলন দিতে সক্ষম। বারি গম৩৩ গড় ফলন হেক্টরপ্রতি ৩.৯৫ টন। ধানের চেয়ে প্রায় তিন গুণ বেশি জিংকসমৃদ্ধ অর্থাৎ, প্রতি কেজি গমে ৫০ থেকে ৫৫ মিলিগ্রাম জিঙ্ক আছে।

[১১] বাংলাদেশে গত বছর অর্থাৎ ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে বোরো মৌসুমে ব্রি ধান৭৪ ও ব্রি ধান৮৪ এর আবাদ হয়েছে যথাক্রমে ৫৭,২৪৫ ও ২,৮২৯ হেক্টর জমিতে। এ বছর এ জাত দুটির আবাদ আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। বৃহত্তর বরিশাল জেলার লোকেরা মোটা চাল পছন্দ করে বিধায় ওই অঞ্চলে ব্রি ধান৭৪ এর আবাদ বাড়ছে। অন্যান্য জেলায় অধিক ফলন, রোগবালাই কম ও জীবনকাল তুলনামূলক কম হওয়ায় কৃষকদের মাঝে এ জাতটি আবাদে আগ্রহ বাড়ছে। জিঙ্কসমৃদ্ধ হওয়ায় এ জাতের চালের ভাত খাওয়ার ব্যাপারে কুমিল্লাসহ বিভিন্ন জেলার কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। কৃষক তার নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ধান সিদ্ধ করে ভ্যানচালিত কলে চাল করে নিজেরা খায় এবং অতিরিক্ত চাল স্থানীয় বাজারে চাল বিক্রি করে। কিন্তু বাজারে জিঙ্কসমৃদ্ধ কোন জাতের চাল পাওয়া যায় না।

[১২] চালের বাজার মোটামুটি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে চালকলের মালিকরা। চালকল বলতে বুঝানো হচ্ছে অটো রাইস মিলকে। কৃষকের উৎপাদিত ধানকে মোটা ও চিকন দুটো গ্রেড করে তারা চাল করে। শহরের বাজারে যেসব চাল পাওয়া যায় তা মিনিকেট, নাজির, আটাশ মিনিকেট, চিনিগুঁড়া, বাসমতি, জিরা, স্বর্ণা, ইত্যাদি নামে পরিচিত। মিনিকেট ও নাজির চালের বাজারমূল্য বেশি। চিনিগুঁড়া চাল পোলাওয়ের চাল। প্রকৃতপক্ষে, মিনিকেট নামের কোনো ধানের জাত নেই। নাজিরশাইল আমন মৌসুমে খুব সামান্য চাষ হয় এর ফলন কম হওয়ার কারণে ব্রি ধান২৮ বা মাঝারি মোটা জাতের চালকে পলিশ করে তথা ছেঁটে মিনিকেট করা হয়। ব্রি ধান৪৯ জাতের চালকে পলিশ করে নাজির নামে বিক্রি করা হয়। একইভাবে ব্রি ধান৩৪ কে চিনিগুঁড়া এবং ব্রি ধান৫০ কে বাসমতি চাল নামে বাজারে বিক্রি করা হয়।

[১৩] বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এ পর্যন্ত শতাধিক উচ্চফলনশীল ধানের জাত ও বেশ কয়েকটি হাইব্রিড ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি)সহ বিভিন্ন বেসরকারি বীজ কোম্পানি বেশ কয়েকটি হাইব্রিড ধানের জাত বাজারজাত করে এবং কিছু হাইব্রিড জাতের বীজ এদেশেই উৎপাদন করে। কৃষকরা বিভিন্ন নামের স্থানীয় জাত এবং ভারত থেকে আসা বিভিন্ন জাত চাষ করে থাকে। সবমিলিয়ে এদেশে কয়েক শত জাতের ধানের আবাদ হয়ে থাকে। একেকটা জাতের একেক রকম স্বাদ, বর্ণ ও বৈশিষ্ট্য। উৎপাদনকারী কৃষক নিজেরা এসব আবাদ করে এবং নিজের পছন্দের জাতের চাল খেতে পারলেও বাজারের সাধারণ ভোক্তারা এ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

[১৪] যখন ঢেঁকিছাঁটা চাল এবং ছোট ছোট বয়লারের চাল বাজারে আসতো তখন চালের জাতের বৈচিত্র্য ছিল। এখন অটো রাইস মিল হওয়ায় সেটা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ একটা বড় অটো রাইস মিলে প্রতিদিন প্রায় ৯৬ টন ধান প্রয়োজন। চক্র পূরণের জন্য কমপক্ষে ৭০০ টন ধান না হলে মিলারদের পক্ষে সেই জাতের চাল করা সম্ভব না। মিলাররা ফড়িয়া বা সরবরাহকারী ব্যবসায়ীদের থেকে ধান সংগ্রহ করেন। ফড়িয়াদের দ্রুত ধান সংগ্রহ করে মিলারদের সরবরাহ করতে হয় বলে তারা এতো জাত না বেছে সহজভাবে মোটা, মাঝারি মোটা, চিকন, ইত্যাদিতে গ্রেড করে মিলারদের সরবরাহ করে। এরপর এসব জাত পলিশ করা, সাদা করা, সর্টিং করা ইত্যাদি করে মিনিকেট বা নাজির নামে বাজারে বিক্রি করা হয়।

[১৫] ভোক্তারাও এসব জাতের চাল বেশি দামে কিনে দুইভাবে প্রতারিত হচ্ছেন। প্রথমত বেশি দাম ও দ্বিতীয়ত ভিটামিন ও খনিজহীন শর্করা বিশিষ্ট চাল। চাল ছাটাই ও পলিশ করলে এর ভিটামিন ও খনিজ উপাদান প্রায় সবটাই নষ্ট হয়ে যায়। মিলাররা ছাঁটাইকরা চাল বেশি দামে বিক্রি করতে পারে এবং উপজাত হিসেবে যে কুঁড়া পায় সেটাও মাছের খাদ্য হিসেবে বাজারে ভালো দামে বিক্রি হয়। ভোক্তারা না বুঝে বা নিরুপায় হয়ে অধিক দামে এসব চালের নামে আবর্জনা কিনে খাচ্ছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের জাতের চাল বাজারে ভিন্ন নামে বিক্রি হওয়ায় তাদের পরিশ্রমের স্বীকৃতিও পাচ্ছে না। সচেতন ভোক্তারা বাজারে তাদের চাহিদা মতো পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ চাল খেতে পারছে না।

[১৬] এ সব সমস্যার আশু সমাধান দরকার। মিলার ও ভোক্তা উভয়ের এ ব্যাপারে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। তাই সবার আগে ভোক্তাদের ধানের জাত ও খাদ্যপুষ্টি সম্বন্ধে সচেতন হতে হবে এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচার চালাতে হবে। এ ছাড়াও, ভিন্ন নামে চাল বাজারে বিক্রি করাকে প্রতারণার দায়ে দোষী করে অসাধু ব্যবসায়ীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। ফড়িয়াদের সততার সঙ্গে নির্দিষ্ট জাতের ধান ক্রয় করে মিলারদের সরবরাহ করতে হবে। কৃষকদেরও যেসব জাতের ফলন ও বাজারমূল্য বেশি সেসব জাতের আবাদ বাড়াতে হবে অর্থাৎ বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ করতে হবে। কৃষি শ্রমিকের খরচ সাশ্রয় ও দ্রুততার সঙ্গে কম সময়ে আবাদ ও কর্তন কাজে কৃষি যন্ত্রের ব্যবহার বাড়াতে হবে। সমকালীন চাষাবাদ ও সমবায়ের মাধ্যমে আবাদ করতে হবে। এর ফলে, ধানের ফলন বাড়ানো, সফলতার সঙ্গে রোগবালাই-পোকামাকড় দমন, কৃষকের প্রযুক্তি জ্ঞান বাড়ানো, বাজারমূল প্রাপ্তিসহ নানা বিষয়ে কৃষক লাভবান হতে পারবে।

[১৭] যেমন : কোন উপজেলায় ৫০০ হেক্টর জমিতে ব্রি ধান৭৪ এর আবাদ হলে ৩০০০ টন ধান উৎপাদন হবে; ফড়িয়া বা মিলাররা এসব কৃষক থেকে খুব সহজেই ২০০০ টন ব্রি ধান৭৪ ধান সংগ্রহ করতে পারবে এবং সেই চালটা ব্রি ধান৭৪ নামে বাজারে বিক্রি করতে পারবে। সেক্ষেত্রে, ফড়িয়াকে ধানের জাত ও ওই আবাদকারী কৃষককে চিনতে হবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে কর্মরত উপসহকারী কৃষি অফিসাররা এ ব্যাপারে সহযোগিতা করতে পারে। সাধারণ ভোক্তারা জিঙ্কসমৃদ্ধ ধানের চাল খেয়ে জিঙ্কের অপুষ্টি দূর করতে পারবে। বরিশাল বিভাগের জনগণ মোটা চাল খেতে পছন্দ করে, তারা ব্রি ধান৭৪ এর চাল খেতে পারবে এবং যারা চিকন ও লাল চালের ভাত খেতে পছন্দ করে তারা ব্রি ধান৮৪ অথবা ব্রি ধান১০০ জাতের চাল খেয়ে দেহের জিঙ্কের চাহিদা অনেকটাই মেটাতে পারবে।

বিজ্ঞাপন
মন্তব্য করুন

অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন

Leave a Reply

দৈনন্দিন

নিপাহ্‌ ভাইরাসঃ খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়

নিপাহ্‌ ভাইরাস খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়
নিপাহ্‌ ভাইরাস খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়
খেজুরের রস সংগ্রহের প্রক্রিয়া।

শীতকাল এলেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে খেজুরের রস খাওয়ার চল বেড়ে যায়। অনেকে গাছ থেকে খেজুরের কলসি নামিয়ে সরাসরি কাঁচা রস খেয়ে থাকেন।

আবার অনেকে এই রস চুলায় ফুটিয়ে সিরাপ, পায়েস বা ক্ষীর বানিয়ে খান। এছাড়া রসের তৈরি ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়, ভেলি গুড়, বালুয়া গুড়, মিছরি গুড়সহ নানা ধরণের পিঠার বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।

নিপাহ্‌ ভাইরাস আতঙ্ক

খেজুর আরব দেশের প্রচলিত ফল হলেও ওইসব দেশে খেজুর, মূলত ফল উৎপাদননির্ভর, যেখানে কিনা বাংলাদেশের খেজুর গাছ রস উৎপাদননির্ভর।

কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, বাংলাদেশে সাধারণত কার্তিক থেকে মাঘ অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ হয়ে থাকে।

দেশটির সবচেয়ে বেশি রস সংগ্রহ হয় যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে।

মূলত খেজুর গাছের ডালপালা পরিষ্কার করে, ডগার দিকের কাণ্ড চেঁছে তাতে একটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি চোঙ বসিয়ে দেয়া হয়। চোঙের শেষ প্রান্তে ঝুলিয়ে দেয়া হয় একটি মাটির হাড়ি বা কলসি।

সেই চোঙ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রস এসে জমা হতে থাকে মাটির হাড়ি বা কলসিতে। এভাবে একটি গাছ থেকে দৈনিক গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লিটার রস সংগ্রহ করা যায় বলে কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গিয়েছে।

কিন্তু গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে নিপাহ্‌ ভাইরাস আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

পরিবেশ

জেনে নিন এই মরসুমে কোন কোন ঔষধি উদ্ভিদের চাষ আপনার জন্য সেরা

দেশের বিভিন্ন রাজ্যেই বর্ষার (Monsoon 2021) প্রভাবে চলছে বৃষ্টিপাত। এসময় কৃষকেরা খারিফ শস্য (Kharif Crops) বপনে তৎপর হয়ে ওঠেন। এই খরিফ মরসুমে কৃষকভাইরা সাধারণত অঞ্চলভেদে ধান, অড়হর, সোয়াবিন সহ বিভিন্ন চাষে মনযোগ দিয়ে থাকেন ৷ তবে এসব ছাড়াও, ঔষধি গুন সমৃদ্ধ (Medicinal Crops) গাছ চাষে বর্ষায় যে কতটা লাভ হতে পারে সে সম্পর্কে অনেকেই হয়তো জানেন না৷

বিশেষ করে বর্ষাকালেই এমন বহু ঔষধি গুন সম্পন্ন গাছ রয়েছে যাদের চাষ হতে পারে লাভজনক৷

বর্ষাকালে কোন কোন ঔষধি উদ্ভিদের চাষ করা যেতে পারে অথবা এই চাষ কীভাবেই বা করা যাবে সে বিষয়ে সঠিক তথ্য না পাওয়ার কারণেই অনেকের কাছে বিষয়টি অধরা৷ চলুন এই প্রতিবেদনে এমনই কিছু গাছ নিয়ে আলোচনা করা যাক যা কৃষকদের জন্য হতে পারে লাভদায়ক৷ তবে সঠিক সময়ে, সঠিক রোপন, সেচ, কীটনাশক দেওয়ার প্রয়োজন এগুলিতে, না হলে এর ওপর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে৷

অশ্বগন্ধা –

বর্ষায় এর চাষ ভালো৷ জুন থেকে অগস্ট পর্যন্ত এর চাষ করতে পারেন৷ এর বিভিন্ন জাত রয়েছে৷ উন্নত মানের গাছের চাষে কৃষকের লাভের পরিমাণও বৃদ্ধি পেতে পারে৷ উল্লেখ্য, প্রতি হেক্টরে ৫ কিলোগ্রাম বীজ ব্যবস্থা করতে হবে৷ যদি কেউ ১ হেক্টর জমিতে অশ্বগন্ধার চাষ করতে চায় তাহলে তাকে প্রায় ৫০০ বর্গমিটারে নার্সারি তৈরি করতে হবে৷ প্রায় ১ সেন্টিমিটার গভীরে বীজ বপন করতে হবে৷

শতমূলী –

শীত বাদ দিয়ে বছরের যে কোনও সময়ে এই গাছের চাষ করতে পারেন৷ বর্ষাকালে এই চারা রোপন করলে সহজেই তা বেড়ে উঠতে থাকে৷ তবে বীজ বপনের আগে বীজ ১ দিন পর্যন্ত হালকা গরম জলে ভিজিয়ে রাখতে হয়৷

যষ্টিমধু –

জুলাই থেকে অগস্ট পর্যন্ত এর চাষ করা হয়৷ আর তাই জুন থেকেই এর প্রস্তুতি শুরু করে দেন কৃষকেরা৷ জলনিকাশি ব্যবস্থা উচ্চমানের হওয়া প্রয়োজন এই গাছ চাষের জন্য৷ মনে রাখতে হবে এর চাষের আগে জমিতে কমপক্ষে ১৫ টন গোবর সার দেওয়া প্রয়োজন, এরপরেই এটি চাষ করা উচিত৷

ঘৃতকুমারী –

এর ভালো উৎপাদনের জন্য জলনিকাশি ব্যবস্থা ঠিক রাখতে হবে৷ এই ধরনের ঔষধি গুনসম্পন্ন গাছ শীতকাল বাদ দিয়ে যে কোনও সময় চাষ করতে পারেন৷ বর্ষাকালে দূরত্ব রেখে বীজ বপন করতে হবে৷ কম সময়ের মধ্যেই ব্যবহারোপযোগী হয়ে ওঠে এগুলি৷

অগ্নিশিখা বা কলিহারি –

এটি চাষের জন্য কৃষকেরা জুন মাসেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন৷ জুলাইয়ে ভালো বৃষ্টিতে এর চাষ শুরু করা যেতে পারে৷ উল্লেখ্য, ১ হেক্টর জমির জন্য প্রায় ১০ ক্যুইন্টাল কন্দের প্রয়োজন৷ এটি চাষের আগেও জমিতে গোবর সার প্রয়োগ করে তা প্রস্তুত করে নিতে হবে৷

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

পরিবেশ

শিখে নিন টবে দারুচিনির চাষের কৌশল

পৃথিবীতে ভোজ্য মসলা যতরকম আছে তারমধ্যে দারুচিনি সবথেকে উল্লেখযোগ্য। এই প্রাচীনতম মসলা বহুদিন ধরে ওষধি হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে চলেছে। এছাড়াও খাবারে স্বাদ বাড়ানো থেকে শুরু করে, পানীয় এবং তরল মশলাদার খাবারে স্বাদ বাড়ানোর জন্যও এই দারচিনির ব্যবহার হয়। এলাচ, গোলমরিচ, লবঙ্গের সাথে সাথে দারুচিনির নামও মসলা হিসেবে একই পংক্তিতে উচ্চারিত হয়। বহু কৃষক দারুচিনির চাষ করে ভীষণভাবে উপকৃত হয়েছেন। বাজারে এই দারুচিনির চাহিদা প্রচুর পরিমানে থাকায়, এই চাষে ভালো লাভ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও সৌখিন মানুষেরাও ভালোবেসে দারুচিনির চাষ বাড়িতে করে থাকেন। দারুচিনি গাছের বাকল, ফুল, কুঁড়ি, পাতা, ফল, শেকড় সবকিছুই কাজে লেগে যায়। দারুচিনি গাছ বাড়িতে চাষ করতে গেলে ঘরে ছাদে দুই জায়গাতেই চাষ করা যায়।

মনে রাখতে হবে এই চাষ করতে গেলে উপযুক্ত পরিমানে রোদ দরকার। বাংলার জলবায়ুতে মূলত শীতকালে এই চাষ করা সবথেকে ভালো। জানুয়ারি মাসে দারুচিনি গাছে ফুল ফোটা আরম্ভ করে, এবং এই গাছের ফল পাকতে আরম্ভ করে জুলাইয়ে। সেইসময়ই ফল থেকে বীজ সংগ্রহ করে নিয়ে এসে বাগানে বা টবে রোপন করে দেওয়া উচিত।

প্রয়োজনীয় রোদ (Sunlight)

কড়া সূর্যালোক দারুচিনি জন্য প্রয়োজনীয়, তাই এটি পর্যাপ্ত রোদ পাওয়া যায় এমন জায়গায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দারুচিনি রোপন করতে গেলে রৌদ্রোজ্জ্বল স্থান যেমন জানালার ধারে, ব্যালকনি কিংবা ছাদের খালি স্থান ব্যবহার করতে হবে।

উপযুক্ত মাটি (Soil)

দারুচিনি চাষের জন্য ভাল মানের মাটি ব্যবহার করা আবশ্যক। বাগানের মাটি ব্যবহার না করাই ভালো, কেননা এতে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। অনে সময় আমরা আশেপাশ থেকে মাটি নিয়েই টব ভরে গাছ লাগানো হয়।  বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সংবেদনশীল গাছগুলোতে এই উপায় কার্যকরী হয় না। নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভাল এমন মাটি ব্যবহার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে উত্তম নিষ্কাশনযুক্ত বেলে দোআঁশ মাটি ব্যবহার করা সবথেকে উত্তম। জেনে রাখা ভালো দারুচিনি খরা একদমই সহ্য করতে পারে না। মাটির বিকল্প হিসেবে ১৫% ট্রাইকোকমপোস্টযুক্ত কোকোডাস্ট ব্যবহার করা যেতে পারে।

বাইরে চাষ করার জন্য এক মিটার (৩০ সেন্টিমিটার গভীর) পর্যন্ত গর্ত করে মাটি দিয়ে পূরণ করে নিতে হবে। ঘরের ভিতরে বা ছাদবাগানের দারুচিনি চাষের জন্য একটি বড় পাত্র প্রয়োজন হবে।

রোপন (Planting)

দারুচিনির বীজ সংগ্রহও করা যায় অথবা নার্সারি থেকে দারুচিনির গাছ কিনেও আনা যায়।

বাইরে চাষের ক্ষেত্রে

দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে ১ মিটার x ১ মিটার এবং ৩০ সেমি গভীরতায় খনন করে মাটি দিয়ে গর্তটি পূরণ করতে হবে।

ঘরের মধ্যে টবে রোপনের ক্ষেত্রে

নিচে গর্ত সহ বড় সিরামিক পাত্র (৬০ x ৫০ সেমি) ব্যবহার করতে হবে। পাত্রটি মাটি বা কোকোডাস্ট দিয়ে পূরণ করে নিতে হবে। ৩০ সেন্টিমিটার গভীরতা এবং ৩০ সেন্টিমিটার প্রস্থের একটি গর্ত তৈরি করতে একটি বাগান ট্রোয়েল ব্যবহার করে নেওয়া ভালো। বীজ ব্যবহার করলে  ১.৫ সেন্টিমিটার গভীর গর্ত তৈরি করে নেওয়া উচিত। এবার গাছটি গর্তের মধ্যে রেখে মাটি দিয়ে চাপা দিতে হবে। বীজ ব্যবহার করলে প্রতি ১.৫ সেমি গর্তে একটি করে বীজ পুঁততে হবে এবং মাটি দিয়ে বীজটি ঢেকে দিতে হবে।

মাটি সবসময় ভেজা রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণ জল দিতে হবে। দারুচিনি গাছ পাত্রে রোপন করার পর, টবের নিচের গর্ত থেকে জল বের না হওয়া পর্যন্ত জল দিতে হবে। টবের উপরের ৫ সেন্টিমিটার শুকিয়ে গেলেই আবার গাছটিকে জল দিতে হবে।

গাছের পরিচর্যা (Caring)

দারুচিনি গাছে নিয়মিত সার প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম বছর ৫০ গ্রাম টিএসপি, ৭৫ গ্রাম এমওপি ও ৫০ গ্রাম ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে। প্রতিবছর ২-৩ কেজি ট্রাইকোকম্পোস্ট ও সার প্রয়োগ শেষে একই হারে টিএসপি, এমওপি ও ইউরিয়া দিতে হবে।

দারুচিনি প্রথম ধরতে দুই থেকে তিন বছর সময় নেয় এবং তার পরে প্রতি দুই বছর পরপরই ফসল দিতে থাকে। দারুচিনি গাছ কম করে ১০-১৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। তাই একে নিয়মিত করে ছোট রাখতে হবে। পাঁচ বছর বয়সী দারুচিনি গাছ থেকে নিয়মিত দারুচিনি সংগ্রহের ডাল পাওয়া সম্ভব। দারুচিনি ব্যবহার করার জন্য যে শাখাগুলি কাটা হবে সেগুলি থেকে বাকল তুলে নিতে হবে, বাকলগুলি ব্যবহার করার আগে জলে ভালোভাবে ভিজিয়ে নেওয়া উচিত।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

আঙিনা কৃষি

টবে লাগান মিষ্টি তেঁতুল গাছ

পৃথিবীতে জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, হারিয়ে যাচ্ছে বহু প্রাণী ও উদ্ভিদ বৈচিত্র। চাষবাসের জমিরও সংকুলান ঘটছে সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে। গগনচুম্বী বাড়ি ঘিরে ফেলছে সমস্ত ফাঁকা জমিন। শখ করে মানুষ খোলা জায়গায় যে গাছ লাগবে অথবা ফল-ফুলের চারা সেই উপায়ও আর নেই। গাছ লাগানোর জন্য সামান্য জায়গাও ফাঁকা থাকছে না আর। তবে আমাদের করণীয় কী? বৃক্ষরোপন কি তবে অচিরেই বন্ধ হয়ে যাবে। বেঁচে থাকার জন্য তো গাছ লাগাতে হবেই। বাড়ির একটুকরো বারান্দা অথবা ব্যালকনিতেও সুন্দর ভাবে ইচ্ছা করলে গাছ লাগানো যায়। বাড়ির ছাদেও বানানো যায় সুন্দর বাগিচা। শহরের মানুষদের জন্য ছাদ বাগানের কোনও বিকল্পও নেই। বাড়ির মধ্যেকার ব্যালকনি অথবা ছাদের একটুকরো জমিতেও, ইচ্ছা করলে টবে চাষ করা যায় বিভিন্ন ফুলের ও ফলের গাছ।

শাকসবজি, পেয়ারা, লেবু প্রভৃতি দেশীয় গাছ টবে বাড়তে দেওয়া থেকে শুরু করে বর্তমানে বহু বিদেশী গাছের চারাও মানুষ ব্যালকনি অথবা ছাদে চাষ করছেন। তার মধ্যে থাই মিষ্টি তেঁতুল টবের চাষ পদ্ধতি হিসাবে অত্যন্ত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। প্রথমত মিষ্টি তেঁতুলের চাষ করতে গেলে, নার্সারি থেকে এই বিশেষ তেঁতুলের সঠিক বীজ নিয়ে আনতে হবে। তবে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কলম পাওয়া একটু দুষ্কর কাজ। বুঝে সঠিক চারা নিয়ে আসা বাগান মালিকের উপরেই বর্তায়।

থাই মিষ্টি তেঁতুলের ফুল থেকে ফল ধরতে প্রায় ৭ মাস সময় লাগে। বছরে দু’বার থাই মিষ্টি তেঁতুলের গাছে ফল ধরে। প্রথমবার বর্ষাকালে এবং দ্বিতীয়বার শীতকালে। এই গাছের পরিচর্যা আলাদা করে করার কোনও দরকার পড়ে না। গাছের যত্নআত্তি নিতে হয় ঠিকই, কিন্তু তা বলে, আলাদা করে কোনও বিশেষ যত্ন নিতে হয় না।

গাছ লাগানোর পদ্ধতি (Planting):

থাই মিষ্টি তেঁতুল চাষের জন্য আদর্শ মাটি হল, দো-আঁশ বা বেলে দো-আঁশ মাটি। এই দু’টি মৃত্তিকার মধ্যে যে কোনও একটি বেছে নিন। তারপর বেছে নেওয়া মাটির দুই ভাগ অংশের সাথে গোবর, ১০০ গ্রাম, টিএসপি ১০০ গ্রাম, পটাশ, ২৫০ গ্রাম, হাড়ের গুঁড়ো এবং ৫০ গ্রাম সরিষার খোল একসঙ্গে মিশিয়ে ২০ ইঞ্চি মাপের বড় টবে জল মিশিয়ে রেখে দিতে হবে। ১০ থেকে ১২ দিন পর টবের মাটি ভালো করে খুঁচিয়ে দিয়ে আরও ৪-৫ দিন রেখে দিতে হবে। ৪ থেকে ৫ দিন বাদে মিষ্টি তেঁতুলের একটি ভালো চারা ওই টবে লাগান।

পরিচর্যা(Caring):

চারা লাগানোর প্রথম কয়েক মাস তেমন যত্নের দরকার পড়বে না। অবশ্যই গাছে এই সময়টুকু পর্যাপ্ত জলের যোগান, এবং আগাছা পরিষ্কারের কাজ করতে হবে।  ছয় মাস চারা লাগানোর সময়সীমা ফুরোলেই ১ মাস বাদে বাদে গাছে সরষের খোল মিশ্রিত পচা জল দিতে হবে। মনে রাখতে  হবে খোল দেওয়ার আগে গাছের মাটি খুঁচিয়ে নিতে হবে।

রোগ দমন (Disease management):

সাধারণত থাই মিষ্টি তেঁতুল গাছে পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখা যায় না। কিন্তু বর্ষাকালে অনেক সময় তেঁতুল গাছে ছত্রাক হানা দেয়। এর ফলে তেঁতুল ফেটে যায়। এই অসুবিধার থেকে গাছকে বাঁচাতে হলে, বর্ষাকাল আসার আগেই ভালো ছত্রাকনাশক ওষুধ ১০ দিন অন্তর গাছে স্প্রে করে ছড়িয়ে দিতে হবে।

বাংলার বেজায় টক তেঁতুলের সঙ্গে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কোনও তুলনাই চলে না। অত্যন্ত মিষ্টি খেতে এই তেঁতুল থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়ায় চাষ প্রভূত পরিমাণে হলেও, আমাদের রাজ্য এই ফলের চাষ এখনও ততটা গতি পায়নি। কিন্তু আপনি আপনার ব্যালকনি অথবা ছাদে সহজেই এই থাই তেঁতুলের গাছ লাগাতে পারেন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

ছাদকৃষি

ছাদে বেদানা চাষের সহজতম পদ্ধতি

বেদানা খেতে কার না ভালো লাগে। ছোট থেকে বড় বেদনার প্রতি আকর্ষণ সব্বার। দানাদার এই ফলের বীজ মুখের মধ্যে দিলেই, সুমিষ্ট রোষে মন উতলা হয়ে ওঠে। স্বাস্থ্যসম্মত ভাবে অত্যন্ত বলবর্ধক এই ফল, রুগীদের পথ্য হিসাবে আদর্শ। বাজারেও এর চাহিদা থাকায়, এই ফলের চাষ বহুল পরিমাণে আমাদের রাজ্যে হয়। তবে বাড়ির ছাদে এই ফলের চাষ নিয়ে অনেকেই ওয়াকিবহাল নন। সহজে, বুদ্ধিমত্ততার প্রয়োগে এই ফলের চাষ বাড়িতেও করা যায়। অনেকেই বাড়ির ছাদে ইদানিং এই ফলের চাষ নিয়ে মেতে উঠেছেন। আসুন জেনে নেওয়া যাক, বাড়ির ছাদে বেদনা চাষের সহজতম পদ্ধতি। যা শিখে আপনি আপনার পাড়া-পড়শীকেও তাক লাগিয়ে দিতে পারবেন।

script data-ad-client=”ca-pub-3140114751019908″ async=”” src=”https://pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js”>

ছাদে বেদানার চারা লাগানোর জন্য প্রথমে ভালো মানের টব সংগ্রহ করতে হবে। গাছের গোড়ায় যাতে জল না জমতে পারে, তারজন্য টবের তলায় তিন থেকে চারটি ফুটো করে নিয়ে সেগুলি স্টোন চিপস দিয়ে ভালোভাবে বুজিয়ে দিতে হবে। ছাদে রোদ পড়ে এমন জায়গায় ডালিমের টবটিকে রাখতে হবে।

প্রস্তুতি কালে বেলে দোআঁশ মাটি ২ ভাগ, গোবর ১ ভাগ, টিএসপি ৪০-৫০ গ্রাম, পটাশ ৪০-৫০ গ্রাম এবং ২০০ গ্রাম হাড়ের চূর্ণ ভালো করে মিশিয়ে টবে জল দিয়ে প্রায় ১৫ দিন রেখে দিতে হবে। পনেরটা দিন কাটলে টবের মাটি খুঁচিয়ে আলগা করে দিতে হবে। এরপর ৫ থেকে ৬ এরকম আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। এরপরেই লক্ষ্য করা যাবে টবের মাটি ঝুরঝুরে হয়ে আসবে। ঠিক সেইসময় বেদানার কলমের চারা টবে পুঁততে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, সোজা করে বসিয়ে যেন বেদানার চারা রোপণ করা হয়। সরু লাঠি দিয়ে চারাটিকে এরপর বেঁধে দেওয়া উচিত। চারা রোপণের শুরুর দিকে জল অল্প দিলেই চলবে। পরবর্তী কালে জল দেওয়ার পরিমাণ চারাতে বাড়াতে হবে। গাছের গোড়ায় কখনোই যাতে জল না জমে তাতে নজর রাখা উচিত।

বেদানা গাছের চারা লাগানোর ৪-৫ মাস হয়ে গেলে, এক মাস অন্তর সরিষার খোল পচা জল গাছে দেওয়া উচিত। সরিষার খোল ১০ দিন ভালো রূপে জলে ভিজিয়ে নিয়ে সেই পচা খোলের জল হালকা ভাবে গাছের গোড়ায় প্রয়োগ করে নিতে হবে। টবের কিছুটা মাটি ১ বছর হয়ে গেলে বদলে দিতে হবে। মাটি যখন বদলাতে হবে সেই সময়কাল বর্ষার শেষ ও শীতের আগে যাতে হয় তাতে খেয়াল রাখা উচিত। মাঝে মধ্যেই টবের মাটি খুঁচিয়ে উল্টে পাল্টে দেওয়া উচিত।

script data-ad-client=”ca-pub-3140114751019908″ async=”” src=”https://pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js”>

সার প্রয়োগ (Fertilizer)


বেদানার চারা বসানোর আগেই টবে দেওয়া মাটির গর্তে সার দিয়ে নিতে হবে। প্রত্যেক বছর নিয়ম করে এই । গর্ত করার ৮-১০ র প্রয়োগ করা উচিত, এতে গাছের ফলনের মান উন্নত হবে। নিম্নলিখিত পদ্ধতিতে সার প্রয়োগ করলে বেদনা গাছের বৃদ্ধি দ্রুত হবে।

সারের নাম সারের পরিমাণ/গর্ত
কম্পস্টের গুঁড়া ৫০০ গ্রাম
ইউরিয়া ১৫০ গ্রাম
টিএসপি ১০০ গ্রাম
এমওপি ১০০ গ্রাম
জিপসাম ৭০ গ্রাম
১ বছর বয়সের প্রতিটি গাছে গোবর ১০ কেজি, ইউরিয়া ১২৫ গ্রাম, টিএসপি ১২৫ গ্রাম এবং পটাশ সার ১২৫ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে। প্রতি বছর সারের মাত্রা একটু করে বাড়াতে হবে। পূর্ণ বয়স্ক ১ টি গাছে ৬০ কেজি গোবর, ১.৫ কেজি ইউরিয়া, ১.৫ কেজি টিএসপি এবং ১.৫ কেজি এমওপি (মিউরেট অব পটাশ) সার প্রয়োগ করতে হবে। ওই পরিমাণ সার ২ বারে গাছে প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম বারে মে- জুন মাসে এবং দ্বিতীয় বারে সেপ্টেম্বর- অক্টোবর মাসে গাছের গোড়ায় সারগুলি প্রয়োগ করতে হবে।

script data-ad-client=”ca-pub-3140114751019908″ async=”” src=”https://pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js”>

ফল সংগ্রহ: (Harvest)

৩-৪ বছর বয়স থেকেই বেদনা গাছে ফল আসতে শুরু করে। ফল পাকতে প্রায় ৬ মাসের মতো সময় লাগে। পরিপুষ্ট ফলের খোসার রঙ হলদে বাদামি বর্ণ নিলেই ফল পেড়ে নিতে হবে। ফল গাছে বেশিদিন থাকলেই তা ফেটে যেতে পারে। বেদনার খোসা অত্যন্ত শক্ত হওয়ার জন্য এই ফল অনেকদিন জমিয়ে রাখা যায়।

ফলন:(Yield)


চার-পাঁচ বছর বয়স হয়ে গেলেই ডালিম গাছ ফল দিতে শুরু করে। তবে জেনে রাখা ভালো প্রথম দিকে এই গাছ ভালো ফলন দেয় না। গাছের বয়স ৮ থেকে১০ বছর হয়ে গেলেই পরিপুষ্ট ডালিম গাছে আসতে থাকে। বয়স বাড়ার সঙ্গে ডালিম গাছের ফলনও বেড়ে যায়। সঠিক ভাবে পরিচর্যা করলে একটা বেদনা গাছ কম করে ২০০ টির মতন ফল দিতে পারে। কম করে ৩০ বছর বেদনা গাছ অত্যন্ত ভালো মানের ফলন দিতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশক: শাইখ সিরাজ
© ২০২৪ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। দা এগ্রো নিউজ, ফিশ এক্সপার্ট লিমিটেডের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। ৫১/এ/৩ পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থাপথ, ঢাকা -১২০৫
ফোন: ০১৭১২-৭৪২২১৭
ইমেইল: info@agronewstoday.com, theagronewsbd@gmail.com