আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

শাকসবজি

পাহাড়-সমতলে সবজি বিপ্লব, মিশ্র বাগানে ফলছে হরেক সুমিষ্ট ফল

নিউজ ডেস্ক: কঠোর শ্রম-ঘামের বিনিময়ে জমিতে ফল-ফসল, শাক-সবজি চাষাবাদের মাধ্যমে জনগণকে খাদ্য জোগান দেন দেশের কর্মবীর কৃষক। প্রধান ফসল উঠতি আমনের পরিচর্যা চলছে। এর পাশাপাশি বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে হরেক জাতের শীতকালীন শাক-সবজির চাষের ধুম পড়ে গেছে। শীতের সবজি আগাম বাজারে বিকিকিনি শুরু হয়েছে। বেশি দাম হাতে পেয়ে খুশি চাষী। ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, শিম, টমেটো, বরবটি, ঢেঁড়শ, বেগুন, ঝিঙে, পটল, কাকরোল, শশা, চিচিঙ্গা, গাজর, ক্ষীরা, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, কচুমুখী, পালং শাক, কপিশাক, সজনে, ডাটা, কাঁচামরিচ, ধনেপাতা, ব্রুকলি, লেটুস পাতা প্রভৃতি এখন মিলছে হাট-বাজারে। কৃষিবিদ ও চাষিরা জানান, গ্রীষ্ম বা বর্ষাকালীন ও শরৎকালীন সবজির সমারোহ থাকতেই শীতকালীন শাক-সবজি বাজারে আগাম এসে গেছে।

পাহাড়ি, টিলাময়, উপত্যকা, ঢালু, উঁচু-নিচু, সমতল, বেলে দো-আঁশ, লবণাক্ত চট্টগ্রাম অঞ্চলের মাটির বৈশিষ্ট্য দেশের অন্যান্য এলাকার তুলনায় বৈচিত্র্যে ভরা এবং উর্বর। ভূমিরূপ বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী হরেক ধরনের ফল-ফসল, শাক-সবজি আবাদ ও উৎপাদন হচ্ছে। সব মিলিয়ে শীতকালীন আগাম সবজি বিপ্লব চলছে এ অঞ্চলের বিস্তীর্ণ পাহাড়-সমতলে। কোথাও পুষ্ট-পরিপক্ক শাক-সবজি ক্ষেত থেকে তুলে এনে হাট-বাজারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কোথাও পানি, সার দেয়া, আগাছামুক্ত করাসহ যত্ন হাতে উঠতি সবজি মাঠের পরিচর্যা করছেন কৃষক। আবার কোথাও বীজ বা চারা রোপণ করা হচ্ছে। এ মুহূর্তে কৃষকের দম ফেলার ফুরসৎ নেই।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের চট্টগ্রাম অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মো. মনজুরুল হুদা গতকাল শুক্রবার দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, ভালো বাজারদরের আশায় আগাম শীতকালীন সবজি চাষাবাদ ব্যাপক আকারে হচ্ছে। চট্টগ্রাম অঞ্চলের আওতায় ৫টি জেলায় (চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর) গত বছর ২৮ হাজার হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়। এবার ৩০ হাজার হেক্টরেরও বেশি জমিতে শীতকালীন সবজি চাষাবাদ হচ্ছে। এতে ৫ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টনেরও বেশি সবজি উৎপাদনের টার্গেট রয়েছে। তিনি জানান, নভেম্বর মাস পর্যন্ত চলবে সবজি চাষাবাদ। বিষমুক্ত সবজি চাষে আগ্রহ বাড়ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের রাঙ্গামাটিস্থ পার্বত্য অঞ্চলের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ নাসিম জানান, পার্বত্য অঞ্চলের তিনটি জেলায় (রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি) ৯ হাজার ৬৬৪ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি চাষ হচ্ছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ ৪৫ হাজার মেট্রিক টন। সব মিলে বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে ৭ লাখ টন সবজি উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। যার মূল্য কয়েক শ’ কোটি টাকা।
মধ্যপ্রাচ্যে চট্টগ্রামের বিষমুক্ত অর্গানিক তাজা শাক-সবজি, ফল-মূল রফতানি নানা সীমাবদ্ধতার মাঝেও বাড়ছে। ইউরোপ, আমেরিকার বিভিন্ন দেশেও আছে চাহিদা। মধ্যপ্রাচ্যে সবজি রফতানিতে আয় আসছে বার্ষিক প্রায় ৩০ কোটি টাকা। চট্টগ্রাম ফ্রেশ ভেজিটেবলস অ্যান্ড ফ্রুটস এক্সপোর্টাস অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি মাহবুব রানা জানান, চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফ্রেইট চার্জ, ভাড়া-মাসুল হ্রাস এবং কার্গো বিমান সুবিধা বাড়ানো হলে তাজা ফল ও সবজি রফতানির বাজার আরো প্রসারিত হবে।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, শাক-সবজি উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে বাংলাদেশ। সবজি উৎপাদনে চট্টগ্রামের প্রবৃদ্ধি ২০ শতাংশ, যা জাতীয় প্রবৃদ্ধির চেয়ে প্রায় তিনগুণ বেশি। সবজি উৎপাদনে চট্টগ্রামে বিপ্লব ঘটছে। করোনা মহামারীকালে কারো সাহায্য ছাড়াই কৃষকেরা নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে আত্মবিশ^সে বলীয়ান হয়ে বৃদ্ধি-কৌশল-অভিজ্ঞতাগুলোকে কাজে লাগিয়ে ফলমূল, সবজি ফলাচ্ছেন। আবহাওয়া স্বাভাবিক থাকায় এবং ভেজা ও উর্বর জমিতে বাম্পার ফলনে কৃষি বিভাগ আশাবাদী। পাহাড়-সমতলে মিশ্র বাগানে উৎপাদিত শাক-সবজির পাশাপাশি পেঁপে, কলা, আনারস, সফেদা, বাদাম, কাজু বাদাম, কাঠ বাদাম, জলপাই, লেবু, বারি জাতের মাল্টা, কমলা, আতা, বিদেশি ড্রাগন ফল, স্ট্রবেরি ইত্যাদি সুমিষ্ট ফল সুবাস ছড়াচ্ছে সারাবছর। ভালো দাম পেয়ে চাষির মুখে হাসি।

তবে অনেক এলাকা থেকে জানা যায়, কৃষক ও ক্রেতার মাঝখানে একটি মধ্যস্বত্ত্বভোগী, ফড়িয়া চক্র যথেচ্ছ মুনাফা হাতিয়ে নিচ্ছে। এরফলে কৃষক ও ক্রেতা উভয়ে ন্যায্য দামে বেচাকেনা থেকে বঞ্চিত হয়ে ঠকছেন। আজ শনিবার আশি^ন মাস শেষ হচ্ছে। কার্তিক অর্থাৎ হেমন্ত ঋতু শুরু আগামীকাল রোববার। বিশেষত জুম ফল-ফসলের সঙ্গে শীতের আগাম সবজি তোলার বাড়তি আনন্দে পাহাড়ে পাহাড়ে কৃষক-কিষাণীর মাঝে নবান্নের প্রস্তুতি চলছে। আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো প্রতিবেদন তুলে ধরা হলো।

বান্দরবান থেকে মো. সাদাত উল্লাহ জানান, এ বনভূমির কৃষি-খামারে ব্যাপক সফলতা আসছে। কম খরচে স্বল্প সময়ে কৃষিপণ্য আবাদ ও ফলন অধিক লাভজনক হওয়ায় আগাম শীতকালীন সবজি উৎপাদনের ‘কারখানা’ বলা যায় বান্দরবান জেলাকে। সাঙ্গু, মাতামুহুরী নদীপাড়ের চর ও পলিমাটির উর্বর জমিতে ব্যাপকহারে শীতকালীন সবজির চাষাবাদ হচ্ছে। থানচি, রুমা, আলীকদম, লামা ও বান্দরবান সদরে হরেক জাতের শাক-সবজির চাষ হচ্ছে। ঢালু, উঁচু-নিচু জমিতে এবং পাহাড়ের জুম চাষের সাথেও মিশ্র সবজি চাষ হচ্ছে। বান্দরবান বাজারের সবজি বিক্রেতা এনামুল হক জানান, শীতকালীন সবজি ব্যাপকভাবে বাজারে না আসার কারণে দাম একটু বেশি। বান্দরবান কৃষি বিভাগ জানায়, জেলায় সবজিসহ কৃষিখাতে বিপ্লব সৃষ্টির লক্ষ্যে মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচি চলমান। জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভিন তিবরিজী ইনকিলাবকে জানান, বান্দরবান কৃষি বিভাগকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। যাতে বান্দরবান জেলাকে কৃষিতে আধুনিক জেলায় উন্নীত করা যায়।

খাগড়াছড়ি থেকে মো. ইব্রাহিম শেখ জানান, এ জেলার ৯টি উপজেলায় পুরোদমে আগাম শীতকালীন শাক-সবজি চাষে ব্যস্ত চাষিরা। সবজি ক্ষেতের সযত্নে পরিচর্যার সাথে পাহাড়ি পল্লীগুলোতে হেমন্তের নবান্ন উৎসবের প্রস্তুতিও চলছে। আগাম শীতকালীন সবজি চাষাবাদ করছেন বেশি লাভের আশায়। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে সবজি চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ঢাকায়ও ক্রেতাদের চাহিদা মেটাবে। পাহাড়ের বিষমুক্ত সবজি যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যেও। খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার ভাইবোনছড়া, পানছড়ি, তবলছড়ি, তাইদং, মোল্লা বাজার, বেলছড়ি, সুকনাছড়ি, মাইসছড়িসহ কয়েকটিগ্রামে ঘুরে দেখা গেছে দিনমজুরদের সাথে সবজি চাষিরা ক্ষেত পরিচর্যা, রোগ-বালাই দমন করে অধিক ফলনের আশায় হাড়ভাঙা পরিশ্রম করছেন। মাটিরাঙ্গার গোমতি এলাকার জুমচাষি অনন্ত ত্রিপুরা জানান, গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার পাহাড়ে জুমের ফলন ভালো হয়েছে। জুমে হলুদ, মারফা, আদা, মরিচ, কচু, মিষ্টি কুমড়া, তিল, ভুট্টা, শিম, বরবটিসহ প্রায় ৪০ জাতের শাক-সবজি চাষাবাদ হয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. মুর্ত্তুজা আলী জানান, জুমচাষিদের আধুনিক পদ্ধতিতে শাক-সবজি চাষে উৎসাহিত করছি। সবজি সংরক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন, সহজ শর্তে ব্যাংকঋণ পেলে কৃষকরা আরও বেশি ভূমিকা রাখবেন।

কাপ্তাই (রাঙ্গামাটি) থেকে কবির হোসেন জানান, রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাইয়ের উঁচু ও পাহাড়ের ঢালুতে জমিতে শীতকালীন বিভিন্ন জাতের সবজি চারা, বীজ রোপন ও পরিচার্যায় কৃষক পরিবারগুলো ব্যস্ত। বাণিজ্যিক চাষ হচ্ছে শাক-সবজির। কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, যে কোন ফল-ফসল বা সবজি আগাম চাষাাবাদে ফলন এলে বাজারে চাহিদা বেশি থাকে। মুনাফাও আসে বেশি। ওয়াগ্গা এলাকার এনামুল হক বাচ্চু জানান তিনি পাহাড়ি জমিতে বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ করেছেন। সকাল-বিকাল খাটছেন। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা থোয়াইনু চিং মারমা জানান, নভেম্বর মাসে আবহাওয়া ভালো থাকলে সবজির উৎপাদন ভালো হবে।

পটিয়া (চট্টগ্রাম) থেকে এস কে এম নুর হোসেন জানান, উপজেলার খরনা, কচুয়াই, হাইদগাঁও, কেলিশহর ইউনিয়নে বিভিন্ন শীতকালীন সবজি আবাদ চলছে। বাজারে আগাম বিক্রয়ও শুরু হয়ে গেছে। কমলমুন্সির হাট পাইকারি সবজি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, আগাম শীতকালীন সবজি বাজারে উঠলেও চাষীরা ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না। কচুয়াই এলাকার চাষী আহম্মদ নূর জানান, খুচরা ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে সবজি কম দামে কিনে নিচ্ছেন। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পাশে অবস্থিত পটিয়ায় শাকসবজির প্রধান পাইকারি আড়ত কমলমুন্সির হাটে ভোর ৬টা থেকে বিকিকিনি শুরু হয়। হাটের ইজারাদার রফিক আহম্মদ জানান, প্রতিদিন প্রায় ৫ লাখ টাকার শাক-সবজি এখানে ক্রয়-বিক্রয় হয়। পটিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কল্পনা রহমান জানান, সবজি চাষের উপযোগী এলাকাগুলোতে চাষীদের নতুন উন্নত জাতের সবজি উৎপাদনে সহযোগিতা ও প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।

হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) থেকে আসলাম পারভেজ জানান, আগাম শীতকালীন সবজি আবাদ ও উৎপাদনে কৃষকদের এখন নাওয়া-খাওয়ার যেন সময় নেই। হালদার নদীপাড়ে ও চরসমূহ শীতের সবজি উৎপাদনের উর্বর এলাকা। হালদার বালুচরের মরিচ, পুতি বেগুন, ঢাউস বড় মুলার সুনাম দেশ জোড়া। উপজেলার পশ্চিমে পাহাড়ের পাদদেশে প্রচুর সবজি উৎপন্ন হয়। উৎপাদিত আগাম সবজি হাটবাজারে বিক্রি শুরু হয়েছে। দামও ভাল পাচ্ছেন। দেওয়ান নগরের প্রবীণ কৃষক মো. আলতাফ হোসেন জানান তার মোট চার কানি ফসলি জমির মধ্যে দুই কানিতে আগাম শীতকালীন সবজির চাষ করেছেন।

ফটিকছড়ি (চট্টগ্রাম) থেকে সৈয়দ জাহেদুল্লাহ কুরাইশী জানান, শীতের আগাম সবজি চাষে ঝুঁকছেন কৃষকেরা। কারণ বাজারে যত আগে তোলা যায় ততই বেশি টাকা আয় আসছে। এ বছর বৈরি আবহাওয়া, করোনা পরিস্থিতিতেও আগাম সবজি চাষে পিছপা হননি এলাকার কৃষকগণ। উপজেলার মধ্যদিয়ে বয়ে যাওয়া হালদা ও ধুরুং নদী এবং ফটিকছড়ি, সর্ত্তা ও গজারিয়া খালের দুই কূল জুড়ে বাগানবাজার, নারায়ণহাট, ভূজপুর, হারুয়ালছড়ি, পাইন্দং, কাঞ্চননগর, ফটিকছড়ি পৌর এলাকার চেউঙ্গারকূল, উত্তর ধুরুং, সুন্দরপুর, সুয়াবিল, কুম্বারপাড়া, চরগাঁপাড়া, রোসাংগিরি, খিরাম, ধর্মপুরসহ প্রায় প্রতিটি এলাকার মাঠ আগাম শীতের সবজিতে ভরে গেছে। উপজেলা কৃষি অফিসার মো. হাসানুজ্জামান বলেন, এখানকার কৃষকরা আগাম শীতকালীন সবজি চাষে এগিয়ে। কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার কেবিএম ওমর ফারুক তুহিন জানান, উপজেলায় এবার ৩ হাজার হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।

সীতাকুণ্ড চট্টগ্রাম থেকে শেখ সালাউদ্দিন জানান, সীতাকুণ্ড দেশের অন্যতম প্রধান সবজি উৎপাদন এলাকা। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা এমনকি বিদেশেও রফতানি হচ্ছে। সাপ্তাহিক হাটে শত শত পাইকার আসছেন। পৌর এলাকার মোহন্তের হাটে সবজি ক্রেতা মোহাম্মদ আলী বলেন, শীতকালীন নতুন সবজির দাম একটু বেশি। বড় দারোগারহাট থেকে ভাটিয়ারী, সলিমপুর পর্যন্ত সারি সারি সবজি ক্ষেতের সমারোহ। গুলিয়াখালীর প্রবীণ কৃষক মো. আবু তাহের জানান, চলতি মৌসুমে তিন একর জমিতে শীতকালীন সবজি চাষ করেছেন। সীতাকুণ্ড উপজেলা কৃষি অফিসার মো. হাবিবুল্লাহ জানান, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৫ হাজার ৩ শত হেক্টর জমিতে ১৮ হাজার ৬৫০ জন কৃষক শীতকালীন বিভিন্ন রকম সবজির আবাদ করেছেন। সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৯৮ হাজার ৯৮০ টন।

মীরসরাই থেকে ইমাম হোসেন জানান, আগাম শীতের সবজি চাষে কৃষক যেমনি লাভবান হচ্ছেন তেমনি ক্রেতারা পাচ্ছেন আগাম স্বাদ। উঁচু জমিতে শীতকালীন বিভিন্ন জাতের সবজি আবাদে কৃষক পরিবারগুলোর ভাগ্য খুলে গেছে। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে আগাম সবজি চাষের দেখা মিলেছে উপজেলার দুর্গাপুর, চৈতন্যহাট, করেরহাট, খৈয়াছরা, কমলদহ, আবুরহাট, আবুতোরাব, মঘাদিয়া, তালবাড়িয়া, মস্তাননগর, আমবাড়িয়া, ওয়াহেদপুর, হিঙ্গুলীসহ বিভিন্ন এলাকায়। নয়দুয়ারিয়া গ্রামের কৃষক এমরান হোসেন জানান, শীতকালীন সবজির আগাম চাষে বেশি মুনাফা পাওয়া যায়। আধুনিক পদ্ধতিতে কীটনাশক তথা বিষমুক্ত সবজি চাষ সম্ভব। উপজেলা কৃষি সুপারভাইজার কাজী নুরুল আলম বলেন, শীতের সবজির আগাম চাষাবাদে কৃষক সবচেয়ে বেশি লাভবান হন।

বিজ্ঞাপন
মন্তব্য করুন

অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন

Leave a Reply

ফসল

লাভজনক সবজি চাষ পদ্ধতি

সবজি একটি গুরুত্বপূর্ণ ফসল। কৃষি বিজ্ঞানের ভাষায় সবজিকে উদ্যানতাত্বিক ফসল (Horticultural crops) বলা হয়ে থাকে। পুষ্টিমানের দিক থেকে সবজি ফসল যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি বাণিজ্যিকভাবেও এর গুরুত্ব অপরিসীম। সেজন্য সবজি চাষের আধুনিক কলাকৌশল জানা জরুরি।

আর আধুনিক কলাকৌশল বলতে বৈজ্ঞানিক উপায়ে চাষাবাদকেই বোঝানো হয়ে থাকে। বাংলাদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু সবজি চাষের জন্য খুবই উপযোগী। তবে সারাদেশে যেমন সব ধরনের সবজি উৎপাদিত হয়না ঠিক তেমনি সকল সবজিই আবার সারাবছর উৎপাদিত হয়না। একেক অঞ্চলে একেক ধরনের শাকসবজি উৎপাদিত হয়ে থাকে। আবার বছরের বিশেষ বিশেষ সময়ে বিশেষ বিশেষ সবজির জাত উৎপাদন করা যায়।

সারাদেশে সারাবছরই যেসকল সবজি সহজে উৎপাদিত হয়ে থাকে তাদের কিছু শাকসবজির কথা এখানে তুলে ধরছি। লালশাক, ডাটাশাক, পুইশাক, কলমিশাক, মিষ্টিআলু শাক, ঢেড়শ, গাজর, বরবটি, টমেটো, লাউ ও লাউশাক, পাটশাক, শশা, কাঁচকলা, বেগুন, পেপে, করলা, কচুশাক, কচুর লতি, ধনে পাতা, পুদিনা পাতা ইত্যাদি পরিচিত শাকসবজি। তাছাড়া অপরিচিত বিশেষ কিছু সবজি বিশেষ বিশেষ এলাকার বিশেষত্ব হিসেবে উৎপাদিত হয়ে থাকে। উপরোক্ত ফসলগুলোর মধ্যে কিছু শুধু শাক আর বাকীগুলো শাক এবং সবজি উভয় হিসেবেই প্রচলিত রয়েছে।

কৃষিতাত্বিকভাবে রবি (শীতকাল) ও খরিপ (গ্রীষ্মকাল)- এ দুধরনের মৌসুম রয়েছে। খরিপের আবার দুটি ভাগ, যথা- খরিপ-১ (আগাম গ্রীষ্ম) এবং খরিপ-২ (বর্ষাকাল)। তবে শীতকালীন শাকসবজির মধ্যে বাহারি ও রকমারি বৈচিত্র একটু বেশি। শুধুমাত্র শীতকালে উৎপাদিত হয় এমন ফসলগুলোর মধ্যে রয়েছে- টমেটো, শীতলাউ, ফুলকপি, বাধাকপি, গাজর, সীম, মূলা, ব্রকলি, বাটিশাক, ওলকপি, শালগম, বেগুন, গোল আলু ইত্যাদিই প্রধান। অপরদিকে শুধুমাত্র গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে উৎপাদিত হয় এমন ফসলের মধ্যে রয়েছে- বিভিন্ন ধরনের কচু, ওলকচু, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, কাকরোল, পটোল, করলা, মিষ্টি কুমড়া, চাল কুমড়া ইত্যাদিই প্রধান।

সবজি ফসল উৎপাদন অন্যান্য ফসলের মতো নয়। সবজি ফসল উৎপাদনের জন্য বিশেষ ধরনের যত্নের প্রয়োজন হয়। আর বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আবাদ করতে গেলে অল্প পরিমাণ জায়গায় অধিক পরিমাণ ফসল ফলিয়ে লাভবান হওয়া সম্ভব। সবজি আবাদেও জন্য বাড়ির আঙ্গিনায় অথবা অপেক্ষাকৃত উঁচু জায়গা বেছে নিতে হবে। সেখানে ভালোভাবে চাষ-মই দিয়ে জমির মাটি জো অবস্থায় ঝুরঝুরে করে সেখানে এক মিটার প্রশস্ত এবং প্রয়োজনমত জমির আকার-আকৃতির সাথে সঙ্গতি রেখে লম্বা বেড তৈরী করে নিতে হবে। প্রতিটি বেডের মাঝখানে ৬ থেকে ৮ ইঞ্চি পরিমাণ গর্ত করে নালা সৃষ্টি করতে হবে। অর্থাৎ নালার মাটি তুলেই দুইপাশে বেড প্রয়োজনমত উঁচু করতে হবে।

এভাবে বেড তৈরীর একটি বিশেষত্ব হলো শাকসবজি চাষাবাদ অন্য সাধারণ ফসল আবাদের চেয়ে একটু ভিন্ন। এর জন্য প্রয়োজন হয় বাড়তি সতর্কতা ও যত্নের। শাকসবজির চাষাবাদে যেমন শুষ্ক মৌসুমে সেচের চাহিদা থাকে অপরদিকে বর্ষাকালে অতিরিক্ত বৃষ্টির পানি বের করে দেওয়ার প্রয়োজন হয়। সেজন্যই বেড তৈরী করে মাটি কিছুটা উঁচু করা হয় সেখানে আবার নালা তৈরী করে নিষ্কাষনের ব্যবস্থাও রাখা হয়। কিন্তু বেড এবং নালা তৈরী না করলে সেটা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আবাদ হয়না। সেঠা হয় সাধারণ শাকসবজি চাষ। এতে ফলন অনেক কমে যায়।

পেপে, কাঁচকলা- এ জাতীয় সবজি বসতবাড়ির আঙ্গিনায়, রাস্তা বা পুকুরের ধারে সহজেই আবাদ করা যায়। লালশাক, ডাটা শাক, পাটশাক, মূলাশাক, গাজর, শালগম ইত্যাদি সবজি তৈরীকৃত বেডে ছিটিয়ে বীজ বুনে দিলেই ভালো ফলন পাওয়া যায়। তাছাড়া টমেটো, বেগুন, ফুলকপি, বাধাকপি, ঢেড়শ, কচু, ওলকচু ইত্যাদি সবজি এক মিটারের বেডে দুই সারি করে নির্ধারিত দূরত্বে চারা লাগিয়ে আবাদ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। সেজন্য এসব সবজি উৎপাদনের জন্য আলাদাভাবে নার্সারিতে চারা তৈরী করে নিতে হয়। অপরদিকে লাউ, মিষ্টি কুমড়া, শশা, চাল কুমড়া, পটোল, কাকরোল, করলা, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, সীম, বরবটি ইত্যাদি লতাজাতীয় সবজি চাষের জন্য উক্ত বেডে দুইটি সারি করে সেখানে জাংলা দিয়ে দিতে হয়। সাধারণত বেডের দুইপাশে খুটি দিয়ে পরে তা ইংরেজি অক্ষর ‘এক্স’ আকৃতিতে বা ‘ভি’ আকৃতিতে বাঁকিয়ে বেঁধে দিতে হয়।

বেড ছাড়াও লতাজাতীয় এসব সবজি অতি সহজেই ক্ষেতের আইলে, রাস্তার ধারে, পুকুরের পাড়ে বিশেষ ব্যবস্থায় আবাদ করে ভালো ফলন পাওয়া যায়। তবে অন্যান্য যেকোন ফসলের তুলনায় এসব সবজি ফসলের একটু বেশি যত্নের প্রয়োজন হয়। বিনা আবাদেই এসব সবজি চাষ করা যেতে পারে। সেজন্য বন্যা পরবর্তীতে পুনর্বাসনের সময় বিনাচাষে এসব আবাদের পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। সম্পূর্ণ জৈবভাবেই এসব সবজি ফসল উৎপাদন সম্ভব। আবাদের পূর্বে সামান্য পরিমাণ প্রয়োজনীয় রাসায়নিক সার ব্যবহার করে বাকীটা মেটাতে হবে বাড়িতে উৎপাদিত জৈব সারের মাধ্যমে। তারপর আন্তপরিচর্যা এবং পোকামাকড়ের আক্রমণ ঠেকাতেও জৈব পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে। তখন এসব উৎপাদিত ফসল সকলের জন্য নিরাপদ খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।

কাজেই এভাবেই সারাবছর নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় স্বষ্পপরিসরে শাকসবজি উৎপাদন করে নিজের চাহিদা মিটিয়ে তা বাণিজ্যিকভাবেও লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে। আমাদের শারীরিক পুষ্টি চাহিদার একটি বিরাট অংশ শাকসবজি থেকে আসা দরকার। দৈনিক একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের গড়ে কমপক্ষে আড়াইশ গ্রাম শাকসবজি খাওয়া প্রয়োজন। আর সেটা নিবিড়ভাবে এবং নিরাপদভাবে খেতে হলে নিজের উৎপাদিত শাকসবজি খাওয়াই সবচেয়ে উত্তম। কাজেই আমাদের সারাবছর অলস সময়টাকে কাজে লাগিয়ে আসুন নিজের বাড়ির আঙ্গিনায় সবজির বাগান গড়ে তুলি।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

শাকসবজি

পুইশাক চাষ পদ্ধতি

পুঁইশাক চাষে কিভাবে চারা তৈরি করবেনঃ
সারিতে বুনলে
প্রতি শতকে ৮-১০ গ্রাম বীজ লাগবে।
আর ছিটিয়ে বুনলে বীজের পরিমাণ বেশী লাগবে। পুঁইশাকের বীজ বপনের জন্য ১৮ থেকে ২০ সেন্টিগ্রেড তামপাত্রা প্রয়োজন। তাই শীতে সময় যখন তাপমাত্রা কম থাকে সেই সময় বীজ বপনকরা ভাল। সাধারণতঃ গ্রীষ্মকালে বর্ষায় এর চাষ ভাল হয়। বীজ ২৪ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরে জমিতে বুনতে হয়। কখনও কখনও বেডে চারা তৈরি করা হয়। ফেব্রুয়ারী থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত চারা তৈরির জন্য বেডে বা পলিব্যাগে বীজ বোনা হয়। চারা দু সপ্তাহের হলে সেগুলো তুলে মূল জমিতে লাগানো যায় বা ফাঁকা জায়গা পূরণ করা যায়। সারিতে বুনলে প্রতি শতকে ৮-১০ গ্রাম ও হেক্টর প্রতি ১.৫-২.৫ কেজি বীজ লাগবে।


উপযুক্ত জমি তৈরি ও চারা রোপনঃ
জমির আগাছা পরিস্কারের পর ৫ থেকে ৬টি চাষ ও মই দিয়ে জমির মাটির উত্তমরূপে তৈরি করতে হবে। চারা উৎপাদন করে ১৫-২০ দিনের চারা লাগানো যায়। পুঁই শাকের চারা রোপণের জন্য সারি থেকে সারি ১ মিটার এবং প্রতি সারিতে ৫০ সেন্টি মিটার দূরে দূরে চারা রোপণ করতে হয়।
পুঁইশাক চাষে সার প্রয়োগ/ব্যবস্থাপনাঃ


ইউরিয়া ছাড়া সব সারই জমি তৈরির সময় প্রয়োগ করতে হবে। চারার বয়স ১০-১২ দিন হলে ইউরিয়া সার প্রথম কিস্তি ৩০-৪০ দিন পর এবং প্রথমবার ফলন তোলার পর বাকি দুই কিস্তি এই মোট তিন কিস্তিতে উপরি প্রয়োগ করতে হবে। গোবর ও টিএসপির অর্ধেক জমি তৈরীর সময় এবং বাকি অর্ধেক চারা রোপণের সময় গর্তে প্রয়োগ করতে হবে। পুঁইশাক চাষে শতক প্রতি সারের মাত্রা হল গোবর ৬০ কেজি, সরিষার খৈল ৫০০ গ্রাম, ইউরিয়া ৮০০ গ্রাম টিএসপি ৪০০ গ্রাম এবং এমওপি ৪০০ গ্রাম।


পুঁইশাক চাষে সেচ ও পানি নিষ্কাশনঃ
বর্ষায় সাধারনত সেচ দেয়ার প্রয়োজন পড়ে না। মাটিতে রস না থাকলে অবশ্যই সেচ দিতে হবে। প্রায়ই মাটি আলগা করে দিতে হবে।
পুঁইশাক চাষে আগাছা ও নিড়ানিঃ
আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। ফলন বেশি পেতে হলে বাউনি দিতে হবে। পুঁইশাক গাছের গোড়ায় কখনই পানি জমতে দেয়া যাবে না। তাহলে গাছের গোড়া পচে যেতে পারে। আবার অনেক বৃষ্টিপাত হলে দেখা যায় যে গোড়ার মাটি ধুয়ে যায়। তাই বৃষ্টির পর গাছের গোড়ায় মাটি দিয়ে চেপে দিতে হবে। চারা ২৫-৩০ সেন্টিমিটার উঁচু হলে আগা কেটে দিতে হবে, এতে গাছ ঝোপালো হয়।


পোকামাকড় ও রোগদমনঃ
পুঁইশাকে পাতার বিটল বা ফ্লি বিটল ছাড়া আর কোনো পোকা তেমন ক্ষতি করে না। এই পোকা পুঁইশাকের পাতা ছোট ছোট ছিদ্র করে ফেলে। সারকোস্পোরা পাতার দাগ পুঁইশাকের একটি মারাত্মক রোগ। এছাড়াও আরও কয়েকধরনের রোগ পুঁইশাক গাছে দেখা দিতে পারে। ছত্রাকনাশক স্প্রে করে এসব রোগ নিয়ন্ত্রন করা যায়।
পুঁইশাক গাছের ডগা মাঝে মাঝে কেটে দিতে হবে। এতে শাক খাওয়াও হয় আবার গাছে নতুন ডগাও বের হয়।
পুঁইশাকের ফলন প্রতি শতকে ২০০ থেকে ২৮০ কেজি এবং হেক্টোর প্রতি ৫০ থেকে ৭০ টন ।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোটেক

কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তারা এক সঙ্গে কাজ করতে রাজি

ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকেরাফাইল ছবি
ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকেরাফাইল ছবি

ডাচ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে দুই দেশের বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা একসঙ্গে কাজ করতে রাজি হয়েছেন।

গতকাল সোমবার নেদারল্যান্ডসের রাজধানী হেগে অনুষ্ঠিত কৃষি খাতের ব্যবসাবিষয়ক এক সম্মেলনে দুই দেশের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা সহযোগিতার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।

নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম রিয়াজ হামিদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত এগ্রি বিজনেস কনক্লেভে বাংলাদেশের প্রায় ৪০জন উদ্যোক্তা ডাচ কৃষি খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি প্রযুক্তি সহযোগিতা ও ব্যবসায়িক সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। দিনব্যাপী আয়োজিত অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেছে ওয়েগেনিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়।

আলোচনায় বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা প্রযুক্তি কিনতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দিলে নেদারল্যান্ডসের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা প্রযুক্তি সহযোগিতা দিতে রাজি থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।

রিয়াজ হামিদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে ডাচরা প্রস্তুত এবং বাংলাদেশি উদ্যোক্তারাও তাদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। এ ছাড়া ডাচ সরকার ইতিমধ্যে বাংলাদেশের বীজ, পশু খাদ্য, পোলট্রি, হর্টিকালচার ও এ্যাকুয়াকালচার বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম সম্পাদন করেছে, যা ওই দেশের বেসরকারি খাতকে আরও উৎসাহিত করেছে।

আলোচনায় কৃষি সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করতে তৈরি আছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্কয়ার, ইস্পাহানি এগ্রো, একে খান অ্যান্ড কোম্পানি, প্যারাগন গ্রুপ, এসিআই, জেমকন গ্রুপসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তিনি জানান, মঙ্গলবার বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা ডাচ প্রযুক্তির প্রয়োগ সরেজমিনে দেখতে যাবেন।

বাংলাদেশের সঙ্গে নেদারল্যান্ডসের পোল্ট্রিখাতে সহযোগিতার আলোচনা অনেকটা এগিয়েছে উল্লেখ করে মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, দুই দেশের মধ্যে মৎস্য, পশুপালন ও হর্টিকালচারে সহযোগিতার বিপুল সম্ভাবনা আছে।

কনক্লেভ আয়োজনে প্রথমবারের মতো দূতাবাসের সঙ্গে অংশীদার হয়েছে নেদারল্যান্ডসের কৃষি মন্ত্রণালয়, নেদারল্যান্ডস এন্টারপ্রাইজ এজেন্সি, নেদারল্যান্ডস ফুড পার্টনারশিপ, ডাচ-গ্রিন-হাইজডেল্টা, লারিভ ইন্টারন্যাশনাল, স্টান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ।

কৃষিজাত পণ্য রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থানকারী নেদারল্যান্ডসের আয়তন বাংলাদেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের কম। ২০২১-এ কৃষিপণ্য ও খাদ্য রপ্তানি করে নেদারল্যান্ডস ১১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি আয় করেছে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

‘শিক্ষিত কৃষক’ বলেই তাঁকে নিয়ে মানুষের আগ্রহটা বেশি

গ্রামের বাজারে কচুর লতি বিক্রি করছিলেন আবু বকর সিদ্দিক, তাঁর এই ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে
গ্রামের বাজারে কচুর লতি বিক্রি করছিলেন আবু বকর সিদ্দিক, তাঁর এই ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে

রামের বাজারে প্লাস্টিকের টুলে বসে কচুর লতি বিক্রি করছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আবু বকর সিদ্দিক (প্রিন্স)। তাঁর এই ছবি একজন ফেসবুকে পোস্ট করলে তা ভাইরাল হয়েছিল। তাঁকে নিয়ে আলোচনা–সমালোচনায় যোগ দিয়েছিলেন বহু মানুষ। তবে এ ধরনের ঘটনা এটাই প্রথম নয় বলে জানালেন বাংলাদেশ অ্যাগ্রিকালচারাল রিসার্চ কাউন্সিলের পরিচালনা পর্ষদের এই সদস্য।

নিজের বৌভাতের জন্য জমানো এক লাখ টাকা দিয়ে ২০০৬ সালে শ্বশুরবাড়ির এলাকা ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার রাঙ্গামাটিয়া ইউনিয়নে খামারের জন্য জমি কিনেছিলেন। পরে ধারদেনাসহ নানাভাবে অর্থ সংগ্রহ করে ২০১৪ সালে সেখানে ‘কৃষাণ সমন্বিত কৃষি উদ্যোগ’ নামে খামার চালু করেন তিনি। এই কাজ করতে গিয়ে বর্তমানে ব্যাংক এবং বিভিন্ন এনজিও থেকে নেওয়া তাঁর ঋণের পরিমাণ ২৫ লাখ টাকার মতো।

আবু বকরের কৃষিকাজের জন্য মোট জমির পরিমাণ প্রায় ৮ একর। এর মধ্যে ৩ একর দীর্ঘ মেয়াদে ইজারা নেওয়া। বিভিন্ন জাতের ছয় হাজার ড্রাগনগাছ রয়েছে তাঁর খামারে। নয়জন স্থায়ী শ্রমিকের পাশাপাশি সেখানে কাজ করছেন অনেক অস্থায়ী শ্রমিক। আবু বকর সিদ্দিক তাঁর নামের আগে ডক্টরেট বা শিক্ষক এসবের চেয়ে ‘শিক্ষিত কৃষক’ বলতেই বেশি পছন্দ করেন। ড্রাগন চাষের জন্য এলাকাবাসীর পক্ষ থেকেই পেয়েছেন ‘ড্রাগন প্রিন্স’ উপাধি।

কৃষি–অন্তঃপ্রাণ আবু বকর সিদ্দিকের ফেসবুকের বেশির ভাগ পোস্টই কৃষিসংক্রান্ত। কালবৈশাখীর তাণ্ডবের পর গত শনিবার ভোরে এক ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘কেমনে সম্ভব এইভাবে কৃষিকাজ করা?’

নিজের খামারে আবু বকর সিদ্দিক
নিজের খামারে আবু বকর সিদ্দিক

ওই ঝড়ের আগের দিন শুক্রবার মুঠোফোনে কথা হয় আবু বকরের সঙ্গে। ছবি ভাইরাল হওয়া প্রসঙ্গে হাসতে হাসতেই বলেন, ‘আমি তো আর আজ নতুন করে কাজ করছি না। এর আগেও বিভিন্ন সময় আমার কাজ ও ছবি নিয়ে ফেসবুকে আলোচনা হয়েছে। ২০১৬ সালেও একবার রাস্তায় দাঁড়িয়ে ড্রাগন ফল বিক্রি করার সময় এমন আলোচনা হয়েছে।’

১৪ মে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার রাঙ্গামাটিয়া ইউনিয়নে বাবুলের বাজারে প্লাস্টিকের একটি টুলে বসে নিজের খামারে উৎপাদিত কচুর লতি বিক্রি করছিলেন আবু বকর সিদ্দিক। সেই ছবি তুলেছিলেন বেশ কয়েকজন। তাঁদেরই একজন ছবিটি ফেসবুকে দেন। এর দুই ঘণ্টা পর আবু বকর যখন ফেসবুকে ঢুকলেন, তখন দেখেন, তাঁকে ঘিরে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে।

আবু বকর সিদ্দিকের খামার থেকে সংগৃহীত ড্রাগন ফল বিক্রির জন্য বাজারে নেওয়া হয়েছে
আবু বকর সিদ্দিকের খামার থেকে সংগৃহীত ড্রাগন ফল বিক্রির জন্য বাজারে নেওয়া হয়েছে

আবু বকর জানান, কচুর লতি বিক্রির ঘটনার দিন খামারের শ্রমিকদের খাবারের জন্য বাজার করার কথা ছিল। সেই সময় হাতে বাজার করার মতো টাকা ছিল না। যে লোকের কচুর লতি বিক্রি করতে যাওয়ার কথা ছিল, তখন তিনি উপস্থিত ছিলেন না। তাই আবু বকর নিজেই স্থানীয় বাজারে তা বিক্রি করার জন্য যান।

তিনি বলেন, ‘আমি বসে থাকলে তো আর কেউ লতি বিক্রি করে দিত না। আমার প্রয়োজনেই আমাকে আমার উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে হয়েছে। ৫০ টাকা কেজি দরে ১৬ কেজি লতি বিক্রি করে বাজার করে ফিরেছি। কৃষকের জন্য যা স্বাভাবিক কাজ, শিক্ষিত বা নামের আগে ডক্টরেট থাকায় তা যখন আমি করতে গিয়েছি, তখন মানুষের মধ্যে আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে।’

আবু বকরের পৈতৃক বাড়ি ঝালকাঠি। বাবার চাকরি সূত্রে থেকেছেন ঢাকায়। বাবা মারা যাওয়ার আগে গাজীপুরে জমি কিনে বাড়ি করেছেন। ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার হাতিলেইট গ্রামে বিয়ে করে শ্বশুরবাড়ির এলাকাতেই খামার গড়েছেন। আবু বকর ফুলবাড়িয়া ও ঢাকা—দুই জায়গায় যাতায়াতের মধ্যে থাকেন।

আবু বকরের বাবা ছিলেন সেনা কর্মকর্তা। তিনি বললেন, ‘চাচা–মামারাও কৃষির সঙ্গে সরাসরি জড়িত নন, তাঁরা চাকরি, না হয় ব্যবসা করছেন। বলতে গেলে আমিই প্রথম কৃষিকাজ বেছে নিয়েছি। এ নিয়ে শুরুতে ঝামেলাও পোহাতে হয়েছে। তবে এখন পরিবারের সদস্যরা, বিশেষ করে ঢাকার উত্তরায় থাকা স্ত্রী মাকসুদা রুমি ও তিন ছেলেমেয়ে এখন আর কোনো আপত্তি করে না।’

এখন খামারের আয় থেকেই ঋণের কিস্তি পরিশোধের পাশাপাশি ঢাকায় ভালো স্কুলে ছেলেমেয়েদের পড়ানোসহ সংসারের অন্যান্য খরচ বেশ ভালোভাবেই মেটাতে পারছেন বলে জানান আবু বকর। গত বছর বরিশালের ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটিতে সহকারী অধ্যাপক ও মার্কেটিং বিভাগের প্রধান হিসেবে যোগ দিয়েছেন তিনি। তবে এখানেও তাঁর কৃষি ও খামার প্রাধান্য পেয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির মালিকের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকার সুবাদে শুরুতেই বলে নিয়েছেন খামারে যে ছয় মাস কাজ বেশি থাকবে, সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে (দুই সেমিস্টার) তিনি ক্লাস নেবেন না। আবু বকর জানালেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাওয়া সম্মানী ভাতা তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কল্যাণ তহবিলে জমা দিয়ে দেন।

ধানখেতে কৃষকদের সঙ্গে আবু বকর সিদ্দিক
ধানখেতে কৃষকদের সঙ্গে আবু বকর সিদ্দিক

আবু বকর বললেন, কৃষিকাজ পুরোপুরি বিজ্ঞাননির্ভর। কৃষিতে সফল হতে হলে বুদ্ধি ও পরিশ্রম—এ দুটোকে সমান গুরুত্ব দিতে হবে।

২০০২ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ব্যবস্থাপনায় এমএ করেছেন আবু বকর। ২০০৮ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ থেকে কৃষি ব্যবসায় এমবিএ করেন। ২০১৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমফিল, ২০১৮ সালে কৃষি সাপ্লাই চেইন এবং বাজারজাতকরণ বিষয়ে পিএইচডি করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগ থেকে। তাঁর মতে, কৃষক শিক্ষিত হলে অসুবিধার চেয়ে সুবিধাই বেশি।

তবে ওই শিক্ষিত কৃষককে লজ্জাটা ঝেড়ে ফেলতে হবে। কৃষিতে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করে এগোতে হয়। তাঁর মতে, এই পরিকল্পনাই হলো আধুনিক টেকসই কৃষির মূলমন্ত্র।

আবু বকর জানালেন, গত বছর বিভিন্ন জাতের ধান, মাছ, গরুর মাংস, আম, ড্রাগন, মাল্টা, লটকন, লেবু, আনারসসহ প্রায় ২০০ টন কৃষিপণ্য বিক্রি করেছেন। আয় হয়েছিল ৫২ লাখ টাকা। এর বাইরে জৈব সার বিক্রি এবং খামারের মধ্যে ১২ শতাংশ জমিতে নিজস্ব নার্সারি থেকে ফলের গাছ বিক্রি হয়েছিল পাঁচ লাখ টাকার মতো। তবে আবহাওয়া, জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন জটিলতায় আগের তুলনায় কৃষির উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে যাওয়ায় বছরটিতে খামারের মোট খরচ ছিল ৪৭ লাখ টাকা। আস্তে আস্তে উৎপাদন খরচ কমিয়ে আনা গেলে লাভের পরিমাণ বাড়বে বলেই আশাবাদী এ কৃষক।

পুরো খামারের কৃষি উৎপাদনে ৮০ শতাংশই জৈব সার ব্যবহার করছেন, আর এ সার নিজেই তৈরি করছেন। তাঁর সহজ স্বীকারোক্তি, ‘প্রথমে শতভাগ জৈব সার দিয়েই উৎপাদন শুরু করেছিলাম। কিন্তু এতে করে গাছগুলো ঠিকভাবে পুষ্টি পাচ্ছিল না। তাই সহনীয় মাত্রায় রাসায়নিক ও জৈব সারের সমন্বয়ে সবজি উৎপাদন করা হচ্ছে। তবে সব পুষ্টিমান ঠিক রেখে কীভাবে শুধু জৈব সার দিয়ে উৎপাদন করা যায়, তার গবেষণা নিজেই করছি।’ তিনি জানালেন, তাঁর ছোট একটা গবেষণাগারে চারটি জৈব জীবাণু কালচার করছেন। ২০টির বেশি উপাদান দিয়ে উন্নত জৈব সার বানানোর নানা পরীক্ষা চালাচ্ছেন।

আবু বকরের আফসোস, কৃষিকাজে আগে থেকেই অভিজ্ঞতা থাকলে তাঁর সময় কম নষ্ট হতো। এখন তাঁকে ঠেকে ঠেকে শিখতে হচ্ছে। আর এই শিখতে আর বুঝতে গিয়েই তাঁর অতিরিক্ত সময় নষ্ট হচ্ছে, টাকা খরচ হচ্ছে। এমবিএ করার পর ভারতের পাঞ্জাবে ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রাম করার সুযোগ পেয়েছিলেন আবু বকর। তখন সেখানকার কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি বিশেষজ্ঞ-ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপের সূত্রে কৃষির প্রতি আগ্রহটা বাড়ে। দেশের বিভিন্ন জেলায় ২০০টি বাণিজ্যিক বাগানের ২০০ জন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করেছেন আবু বকর। এই উদ্যোক্তারা আবু বকরের কাছ থেকে পরামর্শ নিচ্ছেন, তাঁর কাছ থেকে চারা নিচ্ছেন। আবু বকরের ভাষায়, এই বাগানমালিকদের অনেকেই তাঁর চেয়ে ভালো অবস্থানে পৌঁছে গেছেন। এই নতুন উদ্যোক্তা তৈরির বিষয়টিতেই তিনি বেশি তৃপ্তি পান।

খামারে গরুর পরিচর্যায় আবু বকর সিদ্দিক
খামারে গরুর পরিচর্যায় আবু বকর সিদ্দিক

নতুন কৃষি উদ্যোক্তার জন্য স্বল্প পুঁজির বিষয়টি অনেক বড় প্রতিবন্ধকতা বলে উল্লেখ করলেন আবু বকর।

তিনি জানান, শুরুতে কারও কাছে ২০০ টাকা চাইলেও পাওয়া যেত না। আর এখন ওই ব্যক্তিদের কাছে ১০ হাজার টাকা চাইলেও মুহূর্তের মধ্যে দিয়ে দিচ্ছেন। এ পর্যায়ে আসতে তাঁকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। নিজের আরাম–আয়েশ বাদ দিতে হয়েছে। পরিবারের জন্য বরাদ্দ করা সময়টুকু খামারের পেছনে দিতে হয়েছে।

উত্তরার বাসার বাজারের চেয়ে খামারের প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দিতে হয়েছে। ১৫ বছর বয়সী মেয়ে মুনিবা সিদ্দিক, ১১ বছর বয়সী ছেলে ইয়াফি আবদুল্লাহ সিদ্দিক আর ৫ বছরের ছেলে আদিব আবদুল্লাহকে সামলাচ্ছেন স্ত্রী মাকসুদা।

ধানখেতে কাজ করছেন আবু বকর সিদ্দিক
ধানখেতে কাজ করছেন আবু বকর সিদ্দিক

আবু বকর বললেন, তাঁর ইচ্ছা আছে, ভবিষ্যতে উৎপাদিত পণ্যের লাভের অংশ থেকে একটি তহবিল গঠন করবেন, যা থেকে নতুন উদ্যোক্তাদের সহায়তা করা হবে।

তিনি বলেন, কৃষক উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য দাম পান না বলেই অনিশ্চিত কাজে নিজের সন্তানদের তাঁরা কৃষি থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে চান।

আবু বকর জানালেন, গ্রাম্য রাজনীতি মোকাবিলা করেই তাঁকে সামনের দিকে অগ্রসর হতে হচ্ছে। গ্রামের অনেকেই চাননি বা চান না তিনি সেখানে খামার করেন। তবে অনেক নতুন কৃষক তাঁকে দেখে উৎসাহিত হচ্ছেন।

আবু বকর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিনা মূল্যে গাছ দেন। নিজের ও বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে সহায়তা নিয়ে এলাকার মসজিদ, মাদ্রাসা বা যে পরিবারের প্রয়োজন, তাঁর পাশে দাঁড়াচ্ছেন। ভবিষ্যৎ খামারে মা ও শিশুদের জন্য একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র চালু করতে চান। আবু বকরের মতে, এই ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকলে ছেলেমেয়েরা বিপথে চলে যাবে, এ ভয় কম থাকে।

জীবনের এই পর্যন্ত আসার পেছনে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক অধ্যক্ষ মরহুম চিকিৎসক কবির উদ্দিন ও তাঁর স্ত্রী তাসলিমা কবিরের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানালেন। এই পরিবার তাঁকে আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি মানসিকভাবে বুদ্ধি পরামর্শ দিয়ে সব সময় পাশে থেকেছে। এই দম্পতির ছেলের বিজ্ঞাপনী ফার্মে আবু বকর কাজ করেছেন। এই পরিবারের বিভিন্ন সদস্যদের কাছ থেকে পাওয়া এক লাখ টাকা জমিয়ে রেখেছিলেন বিয়ের পর বউভাতের খরচের জন্য। তবে বউভাতের অনুষ্ঠান বাদ দিয়ে তখন ওই এক লাখ টাকা এবং শ্বশুরের সহায়তায় জমি কিনে কৃষি নিয়ে স্বপ্নের যাত্রা শুরু করেছিলেন। এক বছর পর স্বল্প পরিসরে বউভাতের আনুষ্ঠানিকতা পালন করেছিলেন। তখন স্ত্রী ছিলেন পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

শাকসবজি

ফুলকপি চাষ

 ফুলকপি

ফুলকপি শীতের এক প্রধান জনপ্রিয় সবজি। তরকারি বা কারি ও স্যুপ তৈরি করে, বড়া ভেজে ফুলকপি খাওয়া হয়। তবে শীতের সবজি হলেও ফুলকপি এখন গ্রীষ্মকালেও উৎপাদিত হচ্ছে। 

পুষ্টি মূল্য ও ব্যবহার

ফুলকপিতে যথেষ্ট পরিমাণে সালফার, পটাশিয়াম ও ফসফরাস খনিজ উপাদান আছে। এ ছাড়াএর প্রতি ১০০ গ্রাম ভক্ষণযোগ্য অংশে আছে পানি ৯০.৮ গ্রাম, আমিষ ২.৬ গ্রাম, চর্বি ০.৪ গ্রাম, শ্বেতসার ৪.০ গ্রাম, খনিজ লবণ ১.৯ গ্রাম ইত্যাদি।


উপযুক্ত জমি ও মাটি

ফুলকপি চাষের জন্য সুনিকাশযুক্ত উর্বর দোয়াশ ও এটেল মাটি সবচেয়ে ভাল।


জাত পরিচিতি

এ দেশে এখন ফুলকপির পঞ্চাশটিরও বেশি জাত পাওয়া যাচ্ছে। শীতকালেই আগাম, মধ্যম ও নাবী মৌসুমে বিভিন্ন জাতের ফুলকপি আবাদ করা যায়। এ ছাড়া গ্রীষ্মকালে চাষের উপযোগী জাতও আছে।

 ফুলকপি

চারা তৈরি

ফুলকপির চারা বীজতলায় উৎপাদন করে জমিতে লাগানো হয়। বীজতলার আকার ১ মিটার পাশে ও লম্বায় ৩ মিটার হওয়া উচিত। সমপরিমাণ বালি, মাটি ও জৈবসার মিশিয়ে ঝুরাঝুরা করে বীজতলা তৈরি করতে হয়। দ্বিতীয় বীজতলায় চারা রোপণের আগে ৭/৮ দিন পূর্বে প্রতি বীজতলায় ১০০ গ্রাম ইউরিয়া, ১৫০ গ্রাম টিএসপি ও ১০০ গ্রাম এমওপি সার ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। পরে চারা ঠিকমত না বাড়লে প্রতি বীজতলায় প্রায় ১০০ গ্রাম পরিমাণ ইউরিয়া সার ছিটিয়ে দেয়া ভাল।


চারা রোপণ

বীজ গজানোর ১০-১২ দিন পর গজানো চারা দ্বিতীয় বীজতলায় স্থানান্তর করতে হয়। চারায় ৫-৬টি পাতা হলেই তা রোপণের উপযুক্ত হয়। সাধারণত ৩০-৩৫ দিন বয়সের চারা রোণ করা হয়। সারি থেকে সারির দূরত্ব দেয়া লাগে ৬০ সেন্টিমিটার বা ২ ফুট এবং প্রতি সারিতে চারা থেকে চারার দূরত্ব দিতে হবে ৪৫ সেন্টিমিটার বা দেড় ফুট। চারা রোপণের সময় সতর্ক থাকতে হবে যেন শিকড় মুচড়ে বা বেঁকে না যায়। এতে চারার মাটিতে প্রতিষ্ঠা পেতে দেরী হয় ও বৃদ্ধি কমে যায়।

ফুলকপি

সারের মাত্রা

সারের নামসারের পরিমাণ/প্রতি শতকেপ্রতি হেক্টরে
ইউরিয়া১.০-১.২ কেজি২৫০-৩০০ কেজি
টি এস পি০.৬-০.৮ কেজি১৫০-২০০  কেজি
এমওপি০.৮-১.০ কেজি২০০-২৫০ কেজি
বোরাক্স২৮-৪০ গ্রাম৭.০-১০.০ কেজি
গোবর৬০-৮০ কেজি১৫-২০ টন
সারের মাত্রা

সার প্রয়োগ পদ্ধতি

জমি তৈরির সময় অর্ধেক গোবর সার, পুরো টিএসপি, অর্ধেক এমওপি এবং বোরন সার প্রয়োগ করতে হবে। বাকি অর্ধেক গোবর সার চারা রোপণের ১ সপ্তাহ আগে মাদায় দিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। এরপর চারা রোপণ করে সেচ দিতে হবে। ইউরিয়া এবং বাকি অর্ধেক এমওপি ও বোরন সার ৩ কিসি-তে প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম কিসি-র সার দিতে হবে চারা রোপণের ৮-১০ দিন পর, দ্বিতীয় কিসি-র সার দিতে হবে চারা রোপণের ৩০ দিন পর এবং শেষ কিসি-র সার দিতে হবে ৫০ দিন পর। তবে পুরো বোরাক্স বা বোরন সার জমি তৈরির সময় দিয়ে দিলেও অসুবিধে নেই। আর সে সময় দিতে না পারলে পরবর্তীতে ১ম ও ২য় কিস-ও সার দেয়ার সময় প্রতি ১০ লিটার পানিতে ১০-১৫ গ্রাম বোরিক পাউডার গুলে পাতায় স্পে করে দেয়া যায়। তবে সকালে শিশির ভেজা পাতায় যেন দানা সার না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

ফুলকপি

সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনা

সার দেয়ার পরপরই সেচ দিতে হবে। এছাড়া জমি শুকিয়ে গেলে সেচ দিতে হবে। জমিতে পানি বেশি সময় ধরে যেন জমে না থাকে সেটাও খেয়াল করতে হবে। সার দেয়ার আগে মাটির আস্তর ভেঙ্গে দিয়ে নিড়ানী দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হবে।

বিশেষ পরিচর্যা

ফুলকপি গাছের সারি মাঝে সার দেয়ার পর সারির মাঝখানের মাটি তুলে দুপাশ থেকে গাছের গোড়ায় টেনে দেয়া যায়। এতে সেচ ও নিকাশের সুবিধা হয়। তবে ফুলকপির ফুল সাদা রাখার জন্য কচি অবস্থায় চারদিক থেকে পাতা টেনে বেঁধে ফুল ঢেকে দিতে হবে। সূর্যের আলো সরাসরি ফুলে পড়লে ফুলের রঙ তথা ফুলকপির রঙ হলুদাভ হয়ে যাবে। 


পোকা মাকড় ব্যবস্থাপনা

এদেশে ফুলকপির সবচে ক্ষতিকর পোকা হল মাথা খেকো লেদা পোকা। নাবী করে লাগালে সরুই পোকা বা ডায়মন্ড ব্যাক মথ বেশি ক্ষতি করে। বীজ উৎপাদনের জন্য চাষ করলে পুষ্পমঞ্জরীকে জাব পোকার হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। অন্যান্য পোকার মধ্যে ক্রসোডলমিয়া লেদা পোকা, কালো ও হলুদ বিছা পোকা, ঘোড়া পোকা ইত্যাদি মাঝে মাঝে ক্ষতি করে থাকে।

ফুলকপি

রোগ ব্যবস্থাপনা

ফুলকপির পাতায় দাগ ও কালো পচা রোগ প্রধান সমস্যা। এছাড়া চারা ধ্বসা বা ড্যাম্পিং অফ, ক্লাব রুট বা গদাই মূল, মোজেইক, পাতার আগা পোড়া ইত্যাদি রোগও হয়ে থাকে। বোরন সারের অভাবে ফুলে বাদামী দাগ পড়ে ও কান্ড ফাঁপা হয়ে যায়।


ফসল তোলা ও ফলন

সাদা রঙ ও আঁটো সাঁটো থাকতে থাকতেই ফুলকপি তুলে ফেলা উচিত। মাথা ঢিলা ও রঙ হলদে ভাব ধরলে দাম কমে যায়। একর প্রতি ফলন ১৫-২৫ টন, হেক্টরে ৩৫-৬০ টন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশক: শাইখ সিরাজ
© ২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। দা এগ্রো নিউজ, ফিশ এক্সপার্ট লিমিটেডের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। ৫১/এ/৩ পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থাপথ, ঢাকা -১২০৫
ফোন: ০১৭১২-৭৪২২১৭
ইমেইল: info@agronewstoday.com, theagronewsbd@gmail.com