আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

ইসলাম

পরিবারের নারীদের সঙ্গে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ব্যবহার

মানবজাতির জন্য রহমতস্বরূপ মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনাচরণ অনুসরণ করা সুন্নত। তাই তাঁর প্রতিটি আচরণই গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামে নারীর মর্যাদা সুউচ্চ, তবু এ ভুল ধারণাই বদ্ধমূল যে ইসলামে নারীরা সব দিক থেকে বঞ্চিত বা অসম্মানিত। নারীর প্রকৃত সম্মান বোঝার জন্য রাসুল (সা.) নারীদের সঙ্গে কেমন ব্যবহার করেছেন, সেটা জানা খুবই জরুরি।

মা, স্ত্রী বা কন্যা যেকোনোরূপেই নারী সম্মানিত। রাসুল (সা.) মা আমিনাকে হারিয়েছেন শৈশবে। দুধমা হালিমাকে তিনি আজীবন মায়ের মতোই সম্মান করেছেন। নিজের চাদর খুলে তাঁকে বসতে দিতেন। সাধ্যমতো সাহায্য করেছেন এবং উপঢৌকন পাঠিয়েছেন সন্তানের মতোই।বিজ্ঞাপন

রাসুল (সা.)-এর জীবনের আরেক শ্রদ্ধেয় নারী উম্মু আইমান (রা.)। ক্রীতদাস ছিলেন এই সাহাবি। রাসুল (সা.) তাঁকে উম্মু বা মা বলে ডাকতেন এবং মায়ের মতোই ভালোবাসতেন। রাসুলের জন্মের পর তিনিই প্রথম তাঁকে কোলে নেন। রাসুল (সা.) তাঁকে মুক্ত করে দিয়েছিলেন কিন্তু তিনি তাঁকে ছেড়ে যাননি। রাসুল (সা.) ও খাদিজা (রা.) তাঁকে বিয়ে দেন মধ্যবয়সেই। প্রথম স্বামীর মৃত্যুর পর রাসুল (সা.) সাহাবিদের বলেছিলেন, তোমাদের মধ্যে কে এই বেহেশতি নারীকে বিয়ে করতে চাও, তখন জায়েদ বিন হারিসা (রা.) তাঁকে বিয়ে করেন।

আল্লাহ স্বামী-স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন পরস্পরের সুখ আর প্রশান্তির জন্য। যেমন সুরা রুমে আল্লাহ বলেন, ‘আর তাঁর একটি নিদর্শন হলো, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকেই সঙ্গী সৃষ্টি করেছেন যাদের মধ্যে রয়েছে তোমাদের জন্য প্রশান্তি।

তোমাদের মধ্যে তিনি সৃষ্টি করেছেন ভালোবাসা ও মায়া।’ রাসুল (সা.)-এর ১১ জন স্ত্রী ছিলেন। প্রথম স্ত্রী খাদিজা (রা.)-এর জীবৎকালে তিনি আর কোনো বিয়ে করেননি। এরপর আল্লাহর হুকুমে বিভিন্ন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে মোট ১১টি বিয়ে করেন। বিভিন্ন বয়সের নারী ছিলেন রাসুলের স্ত্রী। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ ছিলেন তাঁর চেয়ে বয়সে অনেক বড় আবার কেউ অনেক ছোট। অথচ বিভিন্ন বয়সী সব স্ত্রীর সঙ্গেই রাসুল (সা.)-এর ছিল ভালোবাসার ও মধুর সম্পর্ক। বয়সে বড় খাদিজা (রা.)-কে রাসুল (সা.) এতটাই ভালোবাসতেন যে যখনই তাঁর স্মৃতিচারণা করতেন, তিনি অশ্রুভারাক্রান্ত হতেন। খাদিজা (রা.) রাসুল (সা.)-কে আগলে রেখেছিলেন আর্থিক ও মানসিকভাবে। প্রথম ইমান এনে পাশে থেকেছেন নবুওয়াতের সূচনা থেকেই। রাসুল (সা.) নির্ভার আর নিশ্চিন্ত ছিলেন খাদিজার ভালোবাসার সান্নিধ্যে।

আবার প্রায় ৪৫ বছরের ছোট স্ত্রী আয়েশা (রা.)-এর সঙ্গেও ছিল তাঁর প্রেমময় দাম্পত্য জীবন। আয়েশা (রা.)-এর সঙ্গে তিনি সমবয়সী স্বামীর মতোই আচরণ করেছেন। ছোট্ট আয়েশা (রা.) খেলাধুলা করেছেন, হাস্যকৌতুকে মেতেছেন। খেলাচ্ছলে কখনো দৌড়িয়েছেন, এক পাত্রে খেয়েছেন, পান করেছেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘আমি রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে একবার দৌড় প্রতিযোগিতায় আগে চলে গিয়েছিলাম, পরে আমি স্বাস্থ্যবান হয়ে যাওয়ার পর দৌড়ে তিনিই বিজয়ী হলেন। রাসুল (সা.) তখন বলেন, এ বিজয় সেই পরাজয়ের বদলা।’ (আবু দাউদ: ২৫৭৮) আরেক হাদিস থেকে জানা যায়, একবার হাবসি ছেলেরা যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে প্রতিযোগিতা করছিল। রাসুলের আড়ালে দাঁড়িয়ে দীর্ঘক্ষণ সেই খেলা দেখেন আয়েশা (রা.)। রাসুল তাঁকে সঙ্গ দিয়েছেন সামান্য বিরক্তি প্রকাশ না করেই।

স্ত্রীদের সঙ্গে রাসুল (সা.) একসঙ্গে খাবার খেতেন এবং তাহাজ্জুদ নামাজেও তাঁদের ডেকে নিতেন। প্রতিনিয়ত তাঁদের শিক্ষা দিতেন যেন তাঁদের মাধ্যমে ইসলামের শিক্ষা ছড়িয়ে পড়ে। হজরত আয়েশা (রা.) রাসুলের সার্বক্ষণিক সঙ্গী ছিলেন। তাই তিনি বর্ণনা করেছেন দুই হাজারের বেশি হাদিস। রাসুল (সা.)-এর মৃত্যুর পর তিনি ধর্মীয় শিক্ষার বিস্তারে অবদান রেখেছেন। আয়েশা (রা.)-কে একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছিলেন, ‘তুমি কখন সন্তুষ্ট থাকো আর কখন আমার প্রতি অসন্তুষ্ট হও, আমি বুঝতে পারি। যখন তুমি বলো “মুহাম্মদের প্রভুর শপথ!” তখন তুমি খুশি থাকো আর যখন বলো “ইব্রাহিমের প্রভুর শপথ!” তখন তুমি রেগে থাকো।’ নবীজি (সা.) আদর করে হুমাইরা বলে ডাকতেন আয়েশা (রা.)-কে। নিজের কাজ নিজে করতেন এবং ঘরের কাজে স্ত্রীদের সাহায্য করতেন। স্ত্রীদের নারীসুলভ দোষত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখেছেন এবং সুন্দর ভাষায় সংশোধন করে দিয়েছেন। তাঁদের আচরণে কষ্ট পেলে কথা কম বলতেন বা দূরত্ব রাখতেন, তবু কাউকে বকাঝকা বা প্রহার করেননি। প্রত্যেক স্ত্রীর মধ্যে সমতা বিধান করতেন। তাঁদের কথাকে গুরুত্ব দিতেন।বিজ্ঞাপন

‘তোমাদের মধ্যে সেই উত্তম যে স্ত্রীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে’—এই হাদিস থেকে বোঝা যায় নবীজির শিক্ষা। স্ত্রীদের সঙ্গে কখনোই প্রভুসুলভ ব্যবহার করেননি নবীজি (সা.), বরং বন্ধুর মতো ছিলেন। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা নারীদের প্রতি ভালো আচরণের উপদেশ দাও।’ (বুখারি: ৫১৮৪) ‘আর তোমরা স্ত্রীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো।’ (মুসলিম: ১২১৮)

সন্তান আল্লাহর নিয়ামত; তা পুত্র হোক বা কন্যা। কিন্তু মানুষ আদিকাল থেকেই পুত্রকে সৌভাগ্য আর কন্যাকে দুর্ভাগ্যের প্রতীক মনে করে আসছে। জাহেলি যুগ থেকে আজকের তথাকথিত আধুনিক যুগেও কন্যাসন্তানের জন্মকে দুঃসংবাদ মনে করা হয় অথচ পবিত্র কোরআনে আল্লাহ কন্যাসন্তানের জন্মকে সুসংবাদ (সুরা আন-নাহল, আয়াত: ১৬) বলেছেন। তাই অসংখ্য হাদিসে কন্যাসন্তান লালন-পালনের অপরিসীম ফজিলতের কথা বর্ণনা করেছেন রাসুলুল্লাহ (সা.)। ইসলামে কন্যাসন্তানের প্রতিপালন জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তির উপায়। রাসুল (সা.)-এর চার কন্যা ফাতেমা (রা.), জয়নব (রা.), উম্মু কুলসুম (রা.) এবং রুকাইয়া (রা.)। রাসুলের জীবদ্দশাতে ফাতেমা (রা.) ছাড়া বাকি তিন কন্যার মৃত্যু হয়। ফাতেমা (রা.) রাসুল (সা.)-এর ইন্তেকালের মাত্র ছয় মাস পর ইন্তেকাল করেন। কোনো সফরে যাওয়ার সময় মেয়ে ফাতেমা (রা.)-এর কাছে যেতেন সবার পরে আবার ফেরার পর প্রথমেই দেখা করতেন ফাতেমা (রা.)-এর সঙ্গে। ফাতেমা (রা.) যখনই রাসুল (সা.)-এর কাছে আসতেন, তিনি মেয়ের জন্য দাঁড়িয়ে যেতেন। চুমু দিয়ে হাত ধরে তাঁকে পাশে বসাতেন। মিশওয়ার বিন মাখরামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘ফাতেমা আমার অংশ, যে ফাতেমাকে রাগান্বিত করল, সে যেন আমাকেই রাগান্বিত করল।’ (সহিহ বুখারি)

যে নারীদের জাহিলি যুগে মানুষ বলেই গণ্য করা হতো না, ইসলাম সেই নারীকে দিয়েছে অপরিসীম মর্যাদা। রাসুল (সা.)-এর যুগে নারীদের পদচারণ ছিল সর্বত্র। নারীরা যুদ্ধে গেছেন, মসজিদে জামাতে নামাজ পড়েছেন আবার অকপটে রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করেছেন প্রয়োজনীয় মাসআলা। জানতে চেয়েছেন নিজেদের অধিকার সম্পর্কে।

বিজ্ঞাপন
মন্তব্য করুন

অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন

Leave a Reply

ইসলাম

পবিত্র ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম ১৭ নভেম্ব

দেশের আকাশে ১৪৪৩ হিজরি সালের পবিত্র রবিউস সানি মাসের চাঁদ দেখা গিয়েছে। ফলে রবিবার থেকে পবিত্র রবিউস সানি মাস গণনা করা হবে।

সেই হিসেবে দেশে আগামী ১১ রবিউস সানি ১৪৪৩ হিজরি (১৭ নভেম্বর, বুধবার) পবিত্র ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম পালিত হবে।

শনিবার ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এদিন সন্ধ্যায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পূর্ব সাহানে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী এনামুল হাসান। 

সভায় সব জেলা প্রশাসন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রধান কার্যালয়, বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর এবং মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করে পবিত্র রবিউস সানি মাসের চাঁদ দেখার ব্যাপারে নিশ্চিত হয় চাঁদ দেখা কমিটি।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

ইসলাম

নামাজের রাকাতসংখ্যায় সন্দেহ হলে কী করবেন?

নামাজে থাকাকালীন কারও মনে সংশয় জাগে কত রাকাত হলো, রাকাত ভুলে ছুটে যায়নি তো? কিংবা নামাজের পরেও সন্দেহ জাগতে পারে রাকাত পূর্ণ হয়েছে নাকি হয়নি। নামাজের রাকাতসংখ্যায় সন্দেহ হলে কী করবেন- সে সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত নির্দেশনা:

নামাজ পড়ার সময়ে রাকাতসংখ্যা নিয়ে সন্দেহ হলে এবং এই সন্দেহ প্রথমবারের মতো হলে ওই নামাজ বাতিল হয়ে যাবে। নামাজ পুনরায় পড়া আবশ্যক। (ইবনে আবি শায়বা, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ২৮)

নামাজের সালাম ফেরানোর পর যদি রাকাতসংখ্যা নিয়ে সন্দেহ হয়, তবে তার নামাজ বাতিল হয়ে যাবে। (ইবনে আবি শায়বা, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ২৮)

কারও যদি নামাজের পর দৃঢ়বিশ্বাস হয় যে কিছু রাকাত পড়া হয়নি এবং যদি নামাজ পরিপন্থী কোনো কাজ না হয়ে থাকে, তাহলে ছুটে যাওয়া রাকাত পড়ে নেবে। যদি নামাজ পরিপন্থী কোনো কাজ হয়ে যায়, তাহলে ওই নামাজ পুনরায় পড়বে। (ইবনে আবি শায়বা, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ২৪)

যে ব্যক্তির প্রায় সময় সন্দেহ হয় এবং সন্দেহ তার অভ্যাসে পরিণত হয়, তবে যেদিকে তার মন বেশি যায়, সেটার ওপর আমল করবে। যদি সব বিষয়ে ধারণা সমান হয়, তবে কমটির ওপর আমল করবে এবং প্রতি রাকাতকে নামাজের শেষ মনে করে বসবে এবং শেষে সিজদায়ে সাহু করবে। (মুসলিম, হাদিস: ৮৮৮)

তিন রাকাত পড়া হয়েছে নাকি চার রাকাত- সে ব্যাপারে সন্দেহ হলে তিন রাকাত মনে করে চতুর্থ রাকাত পড়বে। এরপর শেষে সিজদায়ে সাহু করবে। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ১৬৭৭)

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

ইসলাম

আজান শোনার পর প্রিয় নবি (সা.)-এর সুন্নাত কী?

প্রিয় নবির ঘর সুমহান আদর্শের কেন্দ্রবিন্দু। এ ঘর থেকে বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়েছিল উত্তম আদর্শ, পরিপূর্ণ আদব, অতুলনীয় শিষ্টাচার ও স্বাধীন সমাজ ব্যবস্থা। নবিজীর যুগে এমন সমাজ ব্যবস্থা প্রবতির্তত হয়েছিল যে, পরিবারের সবাই সমভাবে কাজ করতেন। পুরুষরা স্ত্রীদের কাজে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতেন। আর একটি সময় হলেই সবাই একত্রিত হতেন। তা ছিল নামাজের আজান। আজান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মুহূর্তের মধ্যে সবাই কাজ রেখে নামাজ পড়তে মসজিদে একত্রিত হতেন।

স্বয়ং বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরিবারিক কাজে সময় দিতেন। স্ত্রীদের কাজে সহযোগিতা করতেন। নামাজের আজান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কাজ ছেড়ে দিতেন। হাদিসে পাকের একাধিক বর্ণনা থেকে প্রমাণিত যে-

১. হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ঘরে কী কী কাজ করতেন? তিনি উত্তর দেন-

كان بشرًا من البشر: يفلي ثوبه ويحلب شاته، ويخدم نفسه

‘তিনি একজন মানুষ ছিলেন, তিনি তাঁর কাপড় সেলাই করতেন, ছাগলের দুধ দহন করতেন এবং নিজের কাজ নিজেই করতেন।’ (মুসনাদে আহমাদ)

তিনি কি শুধু সাধারণ মানুষের মতো মানুষ ছিলেন? না তিনি ছিলেন চারিত্রিক মাদুর্য ও বিনয়ের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। কোনো গুণেই কেউ তার সমকক্ষ ছিল না। তিনি যেমন বিনয়ী ছিলেন, তেমনি ছিলেন অহংকারমুক্ত মানুষ।

প্রিয় নবি কেমন মানুষ ছিলেন? তিনি কোনো দিন কাউকে কষ্ট দেননি। তিনি ছিলেন প্রতিটি কাজে অংশগ্রহণকারী সেরা মানুষ। অন্যকে সেরা সাহায্যকারী ও শ্রেষ্ঠ মানুষ। ইবাদত-বন্দেগি ও আল্লাহর হুকুম পালনে তিনি ছিলেন অনুকরণীয় আদর্শ। তাঁর প্রতি নাজিল হয়েছে এ আয়াত-

لَقَدۡ کَانَ لَکُمۡ فِیۡ رَسُوۡلِ اللّٰهِ اُسۡوَۃٌ حَسَنَۃٌ لِّمَنۡ کَانَ یَرۡجُوا اللّٰهَ وَ الۡیَوۡمَ الۡاٰخِرَ وَ ذَکَرَ اللّٰهَ کَثِیۡرًا

‘তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও পরকালকে ভয় করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে তাদের জন্য রাসুলুল্লাহর (চরিত্রের) মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে।’ (সুরা আহজাব : আয়াত ২১)

আজান শোনার পর প্রিয় নবির সুন্নাত

কোরআনের ঘোষণার পরও তিনি আল্লাহর ইবাদাত ও তার অনুসরণ থেকে কখনো বিরত হতেন না। বরং মসজিদে আজান হওয়ার ধ্বনি শোনার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি তাতে সাড়া দিয়ে সব কাজ রেখে মসজিদে ছুটে যেতেন। হাদিসের বর্ণনায় এসেছে-

হজরত আসওয়াদ বিন ইয়াজিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘আমি হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে জিজ্ঞাসা করলাম যে, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাড়ীতে কি কি ধরনের কাজ করতেন? উত্তরে তিনি বললেন-

كان يكون في مهن أهله، فإذا سمع بالأذان خرج

‘তিনি তার পরিবারের সব কাজে নিয়োজিত থাকতেনতবে আজান শোনার সঙ্গে সঙ্গেই বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতেন।’ (বুখারি)

ফরজ নামাজ মসজিদে পড়ার গুরুত্ব

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি যে, তিনি বাড়িতে ফরজ নামাজ পড়েছেন। তবে তিনি মৃত্যুর আগ মুহূর্তে যখন প্রচণ্ড রোগাক্রান্ত; শোয়া থেকে উঠতে পারছিলেন না; যখন মসজিদে যেতে অপরাগ ছিলেন তখন বাড়িতে নামাজ আদায় করেছেন। কিন্তু তিনি দরজা দিয়ে মসজিদে নামাজ পড়ার দৃশ্য অস্রুসিক্ত নয়নে অবলোকন করতেন।

প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতের প্রতি খুবই দয়াশীল ছিলেন। কিন্তু নামাজের জামাতের অংশগ্রহণের ব্যাপারে তাঁর মতো এতো কঠোর দ্বিতীয় আর কেউ ছিল না। তিনি জামাতে অনুপস্থিত ব্যক্তিদের ব্যাপারে এভাবে কঠোর শাস্তি দেওয়ার কথা ঘোষণা দিয়েছিলেন যে-

لقد هممت أن آمر بالصلاة فتقام ثم آمر رجلاً أن يصلي بالناس ثم أنطلق معي برجال معهم حزم من حطب إلى قوم لا يشهدون الصلاة فأحرق عليهم بيوتهم

‘আমার ইচ্ছা হয় যে, আমি কাউকে নামাজের ইমামতি করার আদেশ দেই আর আমি কাঠসহ কিছু লোককে সঙ্গে নিয়ে ঐ সব লোকদের বাড়িতে যাই; যারা জামাতের সঙ্গে নামাজ পড়ার জন্য উপস্থিত হয়নি। এরপর তারাসহ তাদের বাড়ি-ঘরকে জালিয়ে দেই।’ (বুখারি ও মুসলিম)

মসজিদে না গেলে নামাজ কবুল হবে না!

মসজিদে গিয়ে জামাতে নামাজ পড়ার প্রতি ছিল নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিশেষ গুরুত্ব। শরিয়তের ওজর ছাড়া আজান শোনার পর মসজিদে না গেলে নামাজ কবুল হবে মর্মেও প্রিয় নবি ঘোষণা করেছেন-

من سمع النداء فلم يجب فلا صلاة له إلا من عذر، والعذر خوف أو مرض

‘শরিয়তের ওজর ব্যতিত যে ব্যক্তি আজান শোনার পর জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করলো নাতার নামাজ কবুল হবে না।’ (তিরমিজি) আর ওজর বলতে: শত্রুর ভয় অথবা রোগকে বুঝানো হয়েছে।

প্রিয় নবির যুগের সে দৃশ্য আজ কোথায়? কোথায় সেই নামাজি? মসজিদে আজান হয় ঠিকই কিন্তু মসজিদের কাতারপূর্ণ হয় না। অথচ বর্তমান সময়ে মসজিদে নামাজ পড়তে না যাওয়ার পেছনে নেই কোনো শরিয়তের ওজর। না কোনো শত্রুর ভয় কিংবা বিপদের ভয়।

মুমিন মুসলমান মাত্রই উচিত, আজান হলে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সোনালী যুগের মতো কাজ রেখে মসজিদে উপস্থিত হওয়া। একত্রে নামাজ আদায় করা। প্রিয় নবির প্রিয় সুন্নাতকে জাগ্রত করা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। হাদিসের উপর আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

ইসলাম

হিজরতের কঠিন বিপদে যে দোয়া নাজিল হয়েছি

মানসিক চাপ, বিষন্নতা ও জীবনের নানা কষ্ট থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর সাহায্যের বিকল্প নেই। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জীবনের ঝুঁকির মুহূর্তে আল্লাহর নির্দেশে মক্কা থেকে মদিনার উদ্দেশ্যে বের হওয়ার সময় চরম বিপদের মুহূর্তে প্রশান্তি স্বরূপ এ আয়াতটি নাজিল হয়। যা সত্যিই প্রশান্তির। এ আয়াতটি পড়লে এমনিতেই কঠিন বিপদে মিলে প্রশান্তি ও নিরাপত্তা। তাহলো-

رَّبِّ اَدۡخِلۡنِیۡ مُدۡخَلَ صِدۡقٍ وَّ اَخۡرِجۡنِیۡ مُخۡرَجَ صِدۡقٍ وَّ اجۡعَلۡ لِّیۡ مِنۡ لَّدُنۡکَ سُلۡطٰنًا نَّصِیۡرًا

উচ্চারণ : রাব্বি আদ্খিলনি মুদ্খালা সিদ্ক্বিও ওয়া আখরিঝ্নি মুখরাঝা সিদ্ক্বিও ওয়াঝ্আললি মিল্লাদুংকা সুলত্বানান নাছিরা

অর্থ : ‘হে আমার প্রভু! তুমি আমাকে কল্যাণসহ প্রবেশ করাও এবং কল্যাণসহ বের কর। আর তোমার কাছ থেকে আমাকে দান কর সাহায্যকারী শক্তি।’ (সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ৮০)

উল্লেখ্য, এ আয়াতটি প্রিয় নবির হিজরতের সময় নাজিল হয়েছিল। যখন নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা থেকে বের হওয়ার এবং মদিনাতে প্রবেশ করার সময় উপস্থিত হয়েছিল।

কেউ কেউ বলেন, এ প্রার্থনামূলক আয়াতের মর্মার্থ হলো- সত্যের উপর আমার মৃত্যু দিও এবং সত্যের উপর আমাকে কেয়ামতের দিন উত্থিত করো।

আবার কেউ কেউ বলেন, সত্যতার সঙ্গে আমাকে কবরে প্রবিষ্ট করো এবং কেয়ামতের দিন সত্যতার সঙ্গে আমাকে কবর থেকে বের করো ইত্যাদি।

ইমাম শাওকানি বলেন, এ আয়াতটি যেহেতু দোয়া; বিধায় এর ব্যাপকতায় উল্লিখিত সব কথাই এসে যায়।

কেউ কেউ বলেন, যারা বিভিন্ন কষ্ট ভোগ করেন, তারাও এ দোয়াটি প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত নামাজের পর পড়তে পারেন। আশা করা যায়, এতে তার উল্লেখিত রোগ ও সমস্যাগুলো সমাধান হয়ে যাবে।

আবার কেউ কেউ বলেছেন, যদি কারো ডায়বেটিস রোগ হয়; তবে এ রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম ও শৃঙ্ক্ষলাবদ্ধ জীবনের পাশাপাশি এ দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা। এ রোগ থেকে মুক্ত থাকতে এটিকে কোরআনি আমল মনে করা হয়।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বিভিন্ন রোগ মুক্তিতে কোরআনের এ আয়াতের আমলটি বেশি বেশি করার তাওফিক দান করুন। দুনিয়ার ও পরকালের সব বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

ইসলাম

কেয়ামতের দিনের মুক্তিতে মুমিনের করণীয় কী?

শিরকমুক্ত ঈমান এবং নেক আমল ছাড়া কেয়ামতের দিন মুক্তির বিকল্প নেই। কেয়ামতের ময়দানে সব মানুষ আল্লাহর ভয়ে ভীত থাকবে। এমনকি নবি-রাসুলগণও আল্লাহর ভয়ে ভীত থাকবেন। কারণ কেউ জানেন না আল্লাহ তাআলা সে দিন কার সঙ্গে কীরূপ ব্যবহার করবেন।

হাদিসের বর্ণনায় যদিও কেয়ামতের দিনের ভয়বাহতার বর্ণনা দিয়েছেন প্রিয়নবি। তিনি সেদিন সেজদায় থাকবেন। স্বয়ং আল্লাহ তাআলা তাকে সেজদা থেকে উঠতে বলবেন। তিনি সেজদা থেকে মাথা উঠিয়ে বিচার কাজ শুরু করার জন্য সুপারিশ করবেন। তারপরই শুরু হবে পরকালের বিচারকার্য।

সেদিন যার আমলনামা ভালো হবে সে সফল হবে। শুধু মানুষ নয়, সেদিন নবি-রাসুলরা কতটা ভয়াবহ সময় কাটাবেন তা হাদিসের একটি বর্ণনা থেকেই সুস্পষ্ট-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, যখন এ আয়াত নাজিল হয়-
وَأَنذِرْ عَشِيرَتَكَ الْأَقْرَبِينَ
(হে রাসুল!) আপনি আপনার নিকটাত্মীয়দেরকে সতর্ক করুন।’ (সুরা শুআরা : আয়াত ২১৪)
তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাঁড়িয়ে ঘোষণা করলেন-
> হে কুরাইশ দল! (তোমরা আল্লাহর একত্ববাদ ও ইবাদতের ধারায়) নিজেদের আত্মাকে প্রস্তুত কর। আমি আল্লাহর কাছে তোমাদের কোনো কাজে আসতে পারব না।
> হে বনি আবদে মানাফ! আমি আল্লাহর কাছে তোমাদের কোনো উপকার করতে পারব না।
> হে আব্দুল মুত্তালিবের পুত্র আব্বাস! আমি আল্লাহর কাছে তোমার কোনো উপকার করতে পারব না।
> হে রাসুলের ফুফু সাফিয়্যাহ! আমি আল্লাহর কাছে আপনার কোনো কাজে আসব না।
> হে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কন্যা ফাতেমা! তুমি আমার সম্পদ থেকে যা ইচ্ছা চেয়ে নাও। আমি আল্লাহর কাছে তোমার কোনো কাজে আসব না।’ (বুখারি)

সুতরাং মুমিন মুসলমানের করণীয়-
এ সতর্কবার্তা ঘোষণার পরপরই মহান আল্লাহ তাআলা পরবর্তী আয়াতে প্রিয়নবিকে অনুসরণ ও অনুকরণ করার যে ঘোষণাগুলো দিয়েছেন, সে অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা। আর তাহলো-
‘আর মুমিনদের মধ্যে যারা তোমার অনুসরণ করে, তাদের প্রতি তোমার বাহুকে অবনত কর। তারপর যদি তারা তোমার অবাধ্য হয়, তাহলে বল, তোমরা যা কর, নিশ্চয় আমি তা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। আর তুমি মহাপরাক্রমশালী পরম দয়ালু (আল্লাহর) উপর তাওয়াক্কুল কর। যিনি তোমাকে দেখেন যখন তুমি (নামাজে) দণ্ডায়মান হও এবং সেজদাকারীদের মধ্যে তোমার ওঠা-বসা। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা মহাজ্ঞানী।’ (সুরা শুআরা : আয়াত ২১৫-২২০)

আল্লাহর একত্ববাদ ও ইবাদতে যদি প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার নিজ বংশধর, চাচা, ফুফু ও কন্যার ব্যাপারে এমন ঘোষণা দেন তবে অন্যান্য মুসলমান কিভাবে আল্লাহর নাফরমানি করে প্রিয়নবির শাফায়াত লাভের আশা করতে পারে!

কোরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনা থেকে এ কথা প্রমাণিত যে, শিরক মুক্ত ঈমান ও নেক আমল ছাড়া কোনো আদম সন্তানই পরকালে মুক্তি পাবে না। যারাই প্রিয় নবির অনুসরণ ও অনুকরণ করবে তাদের মুক্তি হবে নিরাপদ ও সহজ।

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, শিরকমুক্ত ঈমান ও নেক আমলে নিজেদের জীবন সাজানো। কোরআন-সুন্নাহর আলোকে জীবন পরিচালনা করা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে শিরকমুক্ত ঈমান লাভ ও তার ইবাদত-বন্দেগিতে নিজেদের নিয়োজিত করার তাওফিক দান করুন। হাশরের ময়দানে হাদিসে ঘোষিত সব ধরনের শাফায়াত লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশক: শাইখ সিরাজ
© ২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। দা এগ্রো নিউজ, ফিশ এক্সপার্ট লিমিটেডের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। ৫১/এ/৩ পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থাপথ, ঢাকা -১২০৫
ফোন: ০১৭১২-৭৪২২১৭
ইমেইল: info@agronewstoday.com, theagronewsbd@gmail.com