আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

এগ্রোবিজ

দুর্যোগে সর্বস্বান্ত পদকপ্রাপ্ত কৃষকরাও, মেলেনি প্রণোদনা

>> একের পর এক দুর্যোগে সর্বস্বান্ত কৃষকরা
>> ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকায় জাতীয় কৃষি পুরস্কারপ্রাপ্ত কৃষকরাও রয়েছেন
>> কৃষি অধিদফতরের কর্মকর্তারা খোঁজ নিচ্ছেন না বলে অভিযোগ কৃষকদের
>> সরকারের প্রণোদনা এখনই কৃষকদের হাতে পৌঁছানো দরকার : আতিউর রহমান

বৈশ্বিক দুর্যোগ ও মহামারি করোনাভাইরাস, সুপার সাইক্লোন আম্ফান ও কালবৈশাখীর ঝড়ে কুপোকাত হয়ে গেছেন বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কারপ্রাপ্ত ও সরকারের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত কৃষকরা। এদের মধ্যে এমন কৃষক আছেন যারা বলছেন, এবার যে ক্ষতি হয়েছে, তা সামাল দিয়ে ওঠা খুব কঠিন কাজ। পরবর্তী আবাদ করার মতো টাকাও অনেকের নেই। তারা বলছেন, একের পর এক দুর্যোগে কোটি কোটি টাকার সবজি খেতে নষ্ট হয়ে গেছে। করোনার সময় অনেকে সবজি ত্রাণ হিসেবে দিয়েছেন সাধারণ মানুষকে। তাই সরকার যদি এই মুহূর্তে তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা না নেয় তাহলে অনেক কৃষক চাষাবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন।

চলতি বছরের মার্চ মাসে কৃষকের খেতে যখন সবজি ভরপুর তখনই বৈশ্বিক দুর্যোগ ও মহামারি করোনাভাইরাস দেখা দেয়। এই ভাইরাসের কারণে গত ২৬ মার্চ থেকে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে এবং সকলকে ঘরে থাকার অনেুরোধ করে। বিভিন্ন জেলায় শুরু হয় লকডাউন। এতে গাড়ি চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে কৃষক যে সবজি আবাদ করেছিলেন তা খেতেই পচতে শুরু করে। বাজারে নিয়েও কোনো ফল হয়নি। কারণ বাজারে কোন ব্যাপারী ছিল না।

বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কারপ্রাপ্ত ও সরকারের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর থেকে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা হয় জাগো নিউজের। আলাপকালে তারা বলেন, করোনা, আম্ফান এবং কালবৈশাখীর ঝড় ও বৈশাখ থেকে জ্যৈষ্ঠ পর্যন্ত টানা বৃষ্টিতে এ দেশের সবজি চাষিসহ সকল কৃষকরাই চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তারা বলছেন, এসব কারণে অনেক কৃষকেরই আর ঘুরে দাঁড়ানোর মতো সামর্থ্য নেই।

কথা হয় কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ নারী উদ্যোক্তা হিসেবে ১৪২১ সালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার (স্বর্ণপদক) প্রাপ্ত কিষানি মোছা. বেলি বেগমের সঙ্গে। পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার ছলিমপুর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চল জগন্নাথপুর গ্রামে বাংলাদেশ কৃষক উন্নয়ন সোসাইটির মহিলা সম্পাদক বেলি বেগম। ৪০ বিঘা জমিতে সবজি চাষের কারণে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেন তিনি। সম্প্রতি কথা হয় তার সঙ্গে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি সর্বস্বান্ত হয়ে গেছি ভাই। একের পর এক দুর্যোগে আমি শেষ হয়ে গেছি। প্রথম ধাক্কা খেলাম করোনাভাইরাসে, পরবর্তী ধাক্কা আম্ফানে এবং তৃতীয় ধাক্কা কালবৈশাখীর ঝড়ে ও টানা বৃষ্টিতে। আবাদের ফসল ফুলকপি, বাঁধাকপি, শসা, চিচিংগা, ঝিঙে, বরবটি, মিষ্টি কুমড়া, লাউসহ অনেক রকম সবজি করোনার সময় বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে পারিনি। পরে ডিসি এবং ইউএনওকে ত্রাণ হিসেবে বিলি করা জন্য এসব সবজি দিয়ে দিয়েছি। গত তিন মাসে সবজি আবাদ থেকে আমার প্রায় ২৭ থেকে ২৮ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি জীবনে কোনোদিন লোন পাইনি। যতদূর এসেছি নিজের চেষ্টায়। আমার কোনো মামা-খালু নেই প্রশাসনে। কোন কৃষক লোন পেয়েছে এটা আমার জানা নেই। তবে যারা কৃষির জন্য লোন পায় তারা জীবনে কখনও কোনো জমিতে যায় না।’

প্রণোদনা এবং তালিকার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বেলি বেগম বলেন, ‘প্রণোদনার কথা টেলিভিশনের খবরে শুনেছি। তবে এখন পর্যন্ত উপজেলা অফিস থেকে আমার কাছে সরকারের কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী আসেনি।’

তিনি বলেন, ‘এক লাখ ২০ হাজার টাকা শ্রমিকের মজুরি বাবদ বাকি আছে। আমি সেটাও দিতে পারিনি। কলার বাগানে কলাগাছ ভেঙে যে ক্ষতি হয়েছে সেটা সাফ (পরিষ্কার) করতেও আমার লাখ টাকা খরচ হবে। পরবর্তী ফসল করার মতো কোনো টাকা আমার হাতে নেই।’

পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার আরেক কৃষক মো. জাহিদুল ইসলাম (গাজর জাহিদ) বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কৃষি খামার স্থাপন করে ১৪১৮ সালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার ব্রোঞ্জপদকে ভূষিত হন। মোট ২৫০ বিঘা জমিতে তিনি সবজি চাষ করেন। তবে ১০০ বিঘা জমিতে তিনি প্রতিবছরই গাজর চাষ করেন। তার গাজর নিজের ট্রাকে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম ও বরিশাল বাজারজাতকরণ করা হয়। এই গাজর চাষের মাধ্যমেই তিনি তিন বিঘা জমি থেকে আজ এত বড় কৃষক হতে পেরেছেন বলে তাকে এলাকার লোকজন ‘গাজর জাহিদ’ বলে ডাকেন। নিজের ৪০ বিঘা জমি ছাড়াও তিনি ২১০ বিঘা জমি লিজ নিয়ে সবজি চাষ করছেন।

কথা হয় গাজর জাহিদের সঙ্গে। টেলিফোনে কেমন আছেন জিজ্ঞেস করতেই তিনি বলেন, ভালো নেইরে ভাই। একজন কৃষকের কোটি টাকা ক্ষতি হওয়ার পরে কি কেউ ভালো থাকতে পারে? উল্টো প্রশ্ন ছুড়ে দেন। তিনি বলেন, প্রথম সর্বনাশ করেছে করোনা। সবজি বিক্রির কোনো পথ ছিল না। খেতেই পচে গেছে লাখ লাখ টাকার সবজি।

কৃষক জাহিদুল ইসলাম বলেন, এবার সবজি চাষে আমার এক কোটি টাকার ওপরে ক্ষতি হয়েছে। এবারও ১০০ বিঘা জমিতে গাজর ছিল। এ গাজর মানুষ তুলে তুলে খেয়েছে আর গরু খেয়েছে। ৩০ বিঘা জমিতে টমেটো করেছিলাম। কিছুদিন বিক্রির পরেই গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে গেল। এছাড়া ১২০ বিঘা জমিতে মুলা, করলা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শসা, চিচিংগা, ঝিঙে, বরবটি, মিষ্টি কুমড়া, লাউ, শালগমসহ বিভিন্ন প্রকার সবজির আবাদ করেছিলেন তিনি। প্রণোদনা বা তালিকা তৈরি সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে এই কৃষক বলেন, ‘আমার কাছে এখন পর্যন্ত কোনো সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী আসেনি। তবে আমার স্ত্রীর গরুর খামার দেখার জন্য একজন কর্মচারী এসেছিল। তার কাছ থেকে বিস্তারিত তথ্য নিয়ে গেছে।’

কথা হয় কৃষক আব্দুল কাদের ব্যাপারীর (কলা কাদের) সঙ্গে। চুয়াডাঙ্গা জেলার ডিগ্রি গ্রামের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা তিনি। জৈবপ্রযুক্তিতে কলা চাষ করে আব্দুল কাদের ‘জাতীয় ফল মেলা ২০১০’-এ দ্বিতীয় ও ‘জাতীয় ফল মেলা-২০১১’-তে তৃতীয়স্থান লাভ করে পুরস্কৃত হন। রাজধানীর খামারবাড়ীতে এ মেলার আয়োজন করা হয়। এছাড়া ২০১৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘স্বনির্ভর বাংলাদেশ বিনির্মাণে কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে আদর্শ কৃষক হিসেবে আব্দুল কাদেরকে সম্মাননা দেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী। তিনি ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্প বাস্তবায়নে ১০০০টি বাড়িকে নিজের অর্থায়নে উন্নয়ন করেন।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, “পদক দিয়ে পরস্কৃত করা হয়েছে কিন্তু কৃষকের সঙ্গে যে ব্যবহার করা হচ্ছে তাতে এখন মনে হচ্ছে, পুরস্কার নয় ‘তিরস্কার’ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে বলেন যে, এক ইঞ্চি জায়গা ফেলে বা খালি রাখা যাবে না। উনি এ কথা বোঝেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যারা থাকেন এবং যারা এটা বাস্তবায়ন করবেন তারা তো বোঝে না। কৃষক মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ফসল করে দাম পায় না।”

‘শাকসবজি আবাদ করে সেগুলো বাজারে বিক্রি করা যায় না। করোনা, আম্ফান, বন্যা, ঝড়ে ফসলের ক্ষতি হলে সেগুলো দেখার কেউ থাকে না।’

তিনি বলেন, ‘কৃষক আবাদ করেছিল কিন্তু কীভাবে তরমুজ, বাঙ্গী, সবজি নষ্ট হয়ে গেল! আমার খেতে সবজি ছাড়াও লিচু গাছের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এমনিভাবে হাজার হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এখন কষ্টে জীবনযাপন করছেন। কিন্তু প্রশাসনের একটি লোকও তাদের খবর নেয় না।’ তিনি বলেন, বাংলাদেশের কৃষকের কোনো অভিভাবক নেই।

করোনা, আম্ফান ও ঝড়ে কৃষকদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়ে কথা হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. আতিউর রহমানের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘করোনা, আম্ফান ও ঘূণিঝড়ের কারণে অনেক কৃষক তাদের পুঁজি হারিয়েছেন। সরকার তাদের জন্য যে প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন তা এখনই তাদের হাতে পৌঁছানো দরকার। টাকাটা হাতে পেলেই তারা এখনই আবার উৎপাদন শুরু করতে পারেন।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাসের আক্রমণের কারণে সারাদেশে লকডাউন অবস্থা শুরু হয়। পুরোদেশ স্থবির হয়ে পড়ে। এসব কারণেই কৃষক তাদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে না পেরে ক্ষতিগ্রস্ত হন। তবে (পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে) আর কিছুদিন সময় লাগবে। (তখন) কৃষক আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন।’

এ বিষয়ে কথা হয় ইমেরিটাস প্রফেসর ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের সদস্য (বিশেষজ্ঞ পুল, বার্ষিক কর্মসম্পাদন ব্যবস্থাপনা) ড. এম এ সাত্তার মণ্ডলের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘করোনা, আম্ফান, ঝড় ও টানা বৃষ্টির কারণে কৃষক এবার ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অনেক কৃষক আছেন যারা ধার দেনা করে আবাদ করেছিলেন। তাদের ফসল নষ্ট হয়ে গেছে।’

তিনি বলেন, ‘করোনার ভয়ে বসে থাকলে চলবে না, এখনই কাজে নামতে হবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে খেত-খামারে উৎপাদন অব্যাহত রাখতে হবে। সরকার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের যে প্রণোদনা দিতে চেয়েছে তা এখনই দিয়ে দেয়া দরকার। কৃষক যেন টাকার অভাবে তার উৎপাদন বন্ধ না রাখে। দেশে যে অবস্থা চলছে তাতে কৃষকের পণ্য বাজারজাতকরণের বিষয়ে সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে

এগ্রোবিজ

যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশে হতে পারে সারের সংকট

সারের সংকট
সারের সংকট
সারের সংকট

চলতি বোরো মৌসুমে সার কিনতে কৃষকদের সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা করে বেশি দিতে হয়েছে। আর সরকারকেও সার বাবদ ভর্তুকি দিতে হচ্ছে বাজেটে বরাদ্দের তিন গুণের বেশি—প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশ এখন মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) সার আমদানি নিয়ে বিপাকে পড়েছে।

ধান, আলু ও সবজি চাষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এমওপি সারের ৬০ শতাংশ আনা হতো রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে। ওই দুই দেশ নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়ায় এখন বাংলাদেশকে এমওপি কিনতে হচ্ছে কানাডা থেকে। বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়া ও আমদানিতে অনিশ্চয়তার কারণে বাংলাদেশে সারের সংকট হতে পারে। ভর্তুকির চাপ সামলাতে বাংলাদেশকে সব ধরনের সারের খুচরা মূল্য বাড়াতে হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিবিষয়ক সংস্থা ইউএসডিএর চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ‘বাংলাদেশে সার সরবরাহ ও ব্যবহারে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের এমওপি সারের ২০ শতাংশ সরবরাহ কমানো হলে সামনের বোরো মৌসুমে ধান, গম ও রবি মৌসুমের অন্যান্য ফসলের উৎপাদন ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কমতে পারে। এতে বাংলাদেশের খাদ্য উৎপাদন ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে।

এমনিতেই এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমাদের ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সারের কারণে নতুন করে যাতে আর সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।

এ এম এম শওকত আলী, সাবেক কৃষিসচিব

তবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, দেশে চলতি বোরো মৌসুমে নতুন করে আর সারের দরকার হবে না। সামনে আলুর মৌসুমে ইউরিয়া, এমওপিসহ অন্যান্য সারের চাহিদা বাড়বে। ওই সময়ের জন্য সার সরবরাহ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ কানাডা ও মধ্যপ্রাচ্যের সার সরবরাহকারী দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে।

জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কানাডা থেকে মোট আট লাখ টন এমওপি সার আমদানির উদ্যোগ নিয়েছি। এ ব্যাপারে ওই দেশের সঙ্গে আমাদের সমঝোতা স্মারক হয়েছে। ফলে এই সার নিয়ে সরকারের কোনো দুশ্চিন্তা নেই। তবে সার বাবদ সরকারের বিপুল পরিমাণে ভর্তুকি বাড়ছে। এই চাপ নিয়েও সরকার ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ওই ভর্তুকি দিয়ে যাবে।’

কমানো হয়েছে চাহিদা

বাংলাদেশে চলতি অর্থবছরে ৬৯ লাখ টন রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয়েছে। এর মধ্যে ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি—এই চার ধরনের সার ব্যবহার হয় ৫৭ লাখ টন। আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের ওই চার ধরনের সারের চাহিদা কমিয়ে ৫৫ লাখ ৫০ হাজার টনে নামিয়ে আনা হয়েছে।

দেশে প্রয়োজনীয় সারের ৮০ শতাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এর মধ্যে এমওপি সারের বড় অংশ আসে রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে।

প্রসঙ্গত, ওই চারটি প্রধান সার কৃষকদের কাছে বিক্রির ক্ষেত্রে সরকার ভর্তুকি দিয়ে থাকে। চলতি অর্থবছরে সরকার প্রাথমিকভাবে সারে ভর্তুকি বাবদ ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে গত ছয় মাসে সারের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। বেশির ভাগ সারের দাম তিন থেকে চার গুণ বেড়ে যাওয়ায় সরকারকে ভর্তুকির পরিমাণ ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা করতে হয়। কিন্তু অর্থবছরের শেষের দিকে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে হিসাব করে দেখা হয়েছে, ভর্তুকির পরিমাণ এবার বেড়ে কমপক্ষে ৩০ হাজার কোটি টাকা গিয়ে দাঁড়াবে।

জিপসাম, জিংক সালফেট ও অ্যামোনিয়াম সালফেট ও ম্যাগনেসিয়াম সালফেট সারে সরকার কোনো ভর্তুকি দেয় না। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কিনে ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কাছে তা বিক্রি করে থাকেন। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষককেও বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে।

সাবেক কৃষিসচিব এ এম এম শওকত আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমনিতেই এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমাদের ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সারের কারণে নতুন করে যাতে আর সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। আর সরকারের অন্যান্য খাতের ভর্তুকি কমিয়ে প্রয়োজনে সারে ভর্তুকি বাড়াতে হবে, যাতে সারের দাম কম থাকে। কারণ, কৃষকের হাতে এখন টাকা কম। বিশ্ববাজার থেকেও খাদ্য আমদানি করা সামনের দিনে আরও কঠিন হতে পারে। ফলে দেশের উৎপাদন ঠিক রাখতে সারের দাম ও জোগান ঠিক রাখা উচিত।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

বিদেশ থেকে খালি হাতে ফিরে ড্রাগন চাষে সাফল্য

বাগানে চাষ করা ড্রাগন হাতে মিরাজুল ইসলাম
বাগানে চাষ করা ড্রাগন হাতে মিরাজুল ইসলাম

মিরাজুল ইসলাম (৩৩)। ১০ বছর সৌদি আরবে ছিলেন। আকামা জটিলতায় খালি হাতে দেশে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। এক বছর বেকার থাকার পর ইউটিউবে পতিত জমিতে ড্রাগন চাষের ভিডিও দেখেন। বাবার কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে নেমে পড়েন ড্রাগন চাষে। দেড় বছরের ব্যবধানে এখন উপজেলার সবচেয়ে বড় ড্রাগন বাগান তাঁর। এ বছর খরচ বাদে আট থেকে নয় লাখ টাকা লাভের আশা করছেন তিনি।

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার ইন্দুরকানি গ্রামের বাসিন্দা মিরাজুল। উপজেলার টগরা গ্রামে দেড় একর জমিতে তিনি ড্রাগনের বাগান তৈরি করেছেন। তাঁর বাগানে এখন সাড়ে তিন হাজার ড্রাগন ফলের গাছ আছে।

মিরাজুল ইসলাম বলেন, শ্রমিক হিসেবে ১০ বছর সৌদিতে কাজ করে ২০১৯ সালে দেশে ফেরেন তিনি। আকামা সমস্যার কারণে শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। কিছু একটা করবেন বলে ভাবছিলেন। একদিন ইউটিউবে ড্রাগন চাষের ভিডিও দেখতে পান। সেই থেকে ড্রাগন চাষে আগ্রহ জন্মে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে দেড় একর পতিত জমি ড্রাগন চাষের উপযোগী করেন। গাজীপুর থেকে ৬০ টাকা দরে ৬০০ চারা নিয়ে আসেন। বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে শুরু করেন চাষাবাদ। পরের বছর জুনে ফল পাওয়া শুরু করেন।

ড্রাগনের বাগান করতে মিরাজুলের খরচ হয়েছিল ছয় থেকে সাত লাখ টাকা। ইতিমধ্যে ফল বিক্রি করে তাঁর খরচ উঠে গেছে। সাধারণত মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত গাছে ফল আসে। বছরে ছয় থেকে সাতবার পাকা ড্রাগন সংগ্রহ করা যায়। এখন পরিপক্ব ও রোগমুক্ত গাছের শাখা কেটে নিজেই চারা তৈরি করেন। ড্রাগন চাষের পাশাপাশি বাগানে চুইঝাল, এলাচ, চায়না লেবুসহ মৌসুমি সবজি চাষ করেন। এ ছাড়া ড্রাগনের চারাও উৎপাদন করে বিক্রি করেন তিনি।

মিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বাগানের বেশির ভাগ গাছে এ বছর ফল ধরেছে। গত মঙ্গলবার বাগান থেকে দেড় টন ফল সংগ্রহ করেছেন। ২৫০ টাকা কেজি দরে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পাইকারদের কাছে বিক্রি করেছেন। স্থানীয় বাজারে ৩০০ টাকা কেজি দরে ড্রাগন বিক্রি হয়। নভেম্বর পর্যন্ত আরও পাঁচ–ছয়বার বাগান থেকে ফল তোলা যাবে। আশা করছেন, খরচ বাদে এবার আট থেকে নয় লাখ টাকা লাভ থাকবে।

মিরাজুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমার বাগান থেকে চারা নিয়ে অনেকে বাড়িতে ও ছাদে ছোট পরিসরে ড্রাগনের বাগান করেছেন। আমি এ পর্যন্ত ৪০ টাকায় দেড় হাজার চারা বিক্রি করেছি।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পূর্ণ বয়সের একটি ড্রাগনের চারা রোপণের পর ২৫ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। এর মৃত্যুঝুঁকি নেই বললেই চলে। তবে কয়েক দিন পরপর সেচ দিতে হয়। বৃষ্টির পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হয়। ড্রাগন ফল চাষে রাসায়নিক সার দিতে হয় না।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইশরাতুন্নেছা বলেন, মিরাজুল ইসলামকে ড্রাগন চাষে নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে আসছে কৃষি বিভাগ। উপজেলায় তাঁর বাগানটি সবচেয়ে বড়। তিনি নিরলস পরিশ্রম করে ছোট থেকে বাগানটি বড় করেছেন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

নাসিরনগরে বন্যায় তলিয়ে গেল কৃষকের বাদামখেত

নাসিরনগরের গোয়ালনগর ইউনিয়নে অতিবৃষ্টি ও আগাম বন্যায় তলিয়ে গেছে কৃষকদের বাদামখেত। আজ মঙ্গলবার ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রামে
নাসিরনগরের গোয়ালনগর ইউনিয়নে অতিবৃষ্টি ও আগাম বন্যায় তলিয়ে গেছে কৃষকদের বাদামখেত। আজ মঙ্গলবার ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রামে

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নে অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে কৃষকের প্রায় ৩০ হেক্টর বাদাম চাষের জমি। কয়েক দিন আগে উজানের পানিতে তাঁদের পাকা ধানের জমি তলিয়ে গিয়েছিল। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষকেরা বাদাম চাষ করেছিলেন। আবারও ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ার বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হলেন চাষিরা।

উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১১ এপ্রিল উপজেলায় শিলাবৃষ্টি এবং ১৪ থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত উজানের পানিতে কৃষকের পাকা ধানের জমি তলিয়ে যায়। কৃষকেরা সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ২০০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করেছিলেন। এর মধ্যে উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নে ৩০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করা হয়। উপজেলায় এবার প্রায় ৫০ হাজার মণ বাদাম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। কিন্তু উজানের পানিতে হঠাৎ বন্যায় সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

গোয়ালনগর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আজহারুল হক বলেন, ‘নাসিরনগর উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাদাম চাষ করা হয় আমাদের ইউনিয়নে। কিন্তু এ বছর আগাম বন্যার কারণে কৃষকেরা তাঁদের ফসল ঘরে তুলতে পারেননি। তাঁদের সব ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।’

ওই এলাকার বাদামচাষি মেরাজ মিয়া বলেন, তিনি ছয় বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করেন। দু-এক দিনের মধ্যে বাদাম তুলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু খেতে গিয়ে দেখেন সব বাদাম পানির নিচে। এখন এই বাদাম তুলে কোনো লাভ নেই। এগুলো গরুও খাবে না।

মো. রজব আলী নামের এক কৃষক বলেন, ‘আমাদের ইউনিয়নের জামারবালি, সোনাতলা ও মাইজখোলা গ্রামে বাদামখেত আছে। গত তিন দিনে পাঁচ-ছয় ফুট পানি বাড়ায় সব তলিয়ে গেছে। এখন বাদাম তুলতে কাজের লোকও পাওয়া যাচ্ছে না।’

কৃষক ফতু মিয়া বলেন, গোয়ালনগর ইউনিয়নের বাদাম চাষের জমিগুলো হঠাৎ পানি আসায় তলিয়ে গেছে। ফসল তলিয়ে তাঁদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেল। কয়েক দিন আগেও পাকা ধান পানির নিচে তলিয়ে গিয়েছিল। কৃষকদের দাবি, গোয়ালনগরে বাদাম চাষের জমি তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকদের প্রায় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আবু সাইদ প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলার কয়েকটি চরাঞ্চলে বাদাম চাষ করা হয়। চরাঞ্চলের উঁচু জমিতে প্রথমে আলু চাষের পর বাদাম চাষ করা হয়। আগাম বন্যার কারণে নিচু এলাকার কিছু বাদামখেত পানিতে তলিয়ে গেছে।

আবু সাইদ আরও বলেন, ১৫-২০ দিন আগে উপজেলার প্রায় সব বাদাম উঠে গেছে। গোয়ালনগর ইউনিয়নে ৩০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করা হয়েছিল। এর মধ্যে এক হেক্টর জমির বাদাম তলিয়ে গেছে। সব মিলিয়ে ৭০ হাজার টাকার মতো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সিলেটে বন্যা হওয়ায় এমনটি হয়েছে বলে তিনি জানান।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

পানি দিতে অতিরিক্ত টাকা

পানি দিতে অতিরিক্ত টাকা
পানি দিতে অতিরিক্ত টাকা

ঠাকুরগাঁওয়ে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) একটি গভীর নলকূপের সেচের পানি সরবরাহে কৃষকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হচ্ছে। ভুক্তভোগী কৃষকদের কাছ থেকে পাওয়া এমন অভিযোগের তদন্ত করে সত্যতা পেয়েছে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষ। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বড় বালিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে।

ভুক্তভোগী কৃষকেরা বলছেন, সেচের পানির জন্য প্রিপেইড কার্ডের বাইরে কোনো টাকা দেওয়ার নিয়ম নেই। কিন্তু বিএমডিএর ১০৮ নম্বর গভীর নলকূপের অপারেটরের দায়িত্বে থাকা বিউটি বেগমের স্বামী আকতারুজ্জামান বোরো ধান চাষের জন্য প্রতি বিঘার জন্য ১ হাজার ২০০ টাকা ও অন্য মৌসুমে ৩০০ টাকা নেন। ১০ বছর ধরে তিনি এভাবেই বাণিজ্য করে আসছেন।

সম্প্রতি রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে বিএমডিএর গভীর নলকূপ থেকে খেতে সেচের পানি পেতে হয়রানির শিকার দুই কৃষকের মৃত্যুর ঘটনা দেশজুড়ে আলোচিত হয়।

ঠাকুরগাঁও জেলায় বিএমডিএর ১ হাজার ৪৩১টি গভীর নলকূপ রয়েছে। এর মধ্যে সচল ১ হাজার ৪১৮টি। সেচের আওতায় ৭৬ হাজার ৫০০ পরিবারের জমি রয়েছে ৫৩ হাজার ৫০০ হেক্টর।

* সেচের পানির জন্য প্রিপেইড কার্ডের বাইরে কোনো টাকা দেওয়ার নিয়ম নেই। * সেচের আওতায় ৭৬ হাজার ৫০০ পরিবারের জমি আছে। * কৃষকদের নলকূপের আবেদন পেলে যাচাই করে স্কিম তৈরি করা হয়।

বিএমডিএ সূত্রে জানা গেছে, কৃষকদের নলকূপের আবেদন পেলে যাচাই করে স্কিম তৈরি করা হয়। এরপর সমবায়ের ভিত্তিতে অংশীদারি ফি বাবদ এক লাখ টাকা জমা দিতে হয়। এই নলকূপ পরিচালনার জন্য বিএমডিএ একজন অপারেটর নিয়োগ দেন। প্রিপেইড মিটারিং পদ্ধতিতে কৃষকের নিজ নামে প্রিপেইড কার্ড থাকতে হয়। সেই কার্ড থেকে প্রতি ঘণ্টায় সেচের পানির জন্য ন্যূনতম ১১০ টাকা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কেটে নেওয়া হয়। এর বাইরে অতিরিক্ত কোনো টাকা দেওয়ার নিয়ম নেই।

বড় বালিয়া এলাকার কৃষকেরা জানান, ২০১১ সালের দিকে বড় বালিয়া মণ্ডলপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. আকতারুজ্জামান এলাকায় গভীর নলকূপ স্থাপনের উদ্যোগ নেন। ফি হিসেবে এক লাখ জমা দেওয়ার নিয়ম থাকলেও কোনো কৃষক সেটা দিতে এগিয়ে আসেননি। ফলে আকতারুজ্জামান, দাউদুল ইসলাম ও জোবায়দুর রহমান মিলে অংশীদারি ফি দেন। আকতারুজ্জামানের ৮০ শতাংশ টাকা থাকায় গভীর নলকূপের নিয়ন্ত্রণ তিনিই পান। অপারেটর হিসেবে নিয়োগ পান তাঁর স্ত্রী বিউটি বেগম। যদিও কৃষকেরা আকতারুজ্জামানকেই অপারেটর হিসেবে জানতেন।

সেচের পানি পেতে হয়রানির শিকার হয়ে সদর উপজেলার বড় বালিয়া এলাকার ৫০ জন কৃষক গত ১৭ এপ্রিল বিএমডিএ সহকারী প্রকৌশলীর কাছে অভিযোগ দেন। সেখানে গিয়ে কৃষক ও অপারেটরের সঙ্গে কথা বলে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়।

ভুক্তভোগী কৃষকেরা বলেন, ২০১২ সালে নলকূপটি চালু হলে আওতাধীন কৃষকের কাছ থেকে আকতারুজ্জামান সেচের পানির জন্য প্রিপেইড কার্ডের অতিরিক্ত টাকা আদায় শুরু করেন। আর সেই টাকা থেকে তিনি মাঝেমধ্যে অন্য দুই অংশীদারকে কিছু টাকা ভাগ দেন।

ভুক্তভোগী কৃষক মো. শাহজাহান আলী বলেন, গভীর নলকূপটির আওতায় তাঁর ১০ বিঘা জমি রয়েছে। কার্ডের বাইরে টাকা দেওয়ার নিয়ম না থাকলেও আকতারুজ্জামানকে প্রতি বিঘায় সেচের জন্য ১ হাজার ২০০ টাকা দিতে হয়। এই টাকা না দিলে তিনি পানি দেন না।

ওই নলকূপের আওতায় চার বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করছেন কৃষক মো. হেলাল। তিনি অতিরিক্ত টাকা না দেওয়ায় অপারেটর খেতে পানি দেননি। এতে জমি ফেটে যায়। পরে তিনি শ্যালো ইঞ্জিন দিয়ে জমিতে সেচ দিয়ে খেত রক্ষা করেছেন।

আরেক ভুক্তভোগী মোকলেসুর রহমান বলেন, ১০ বছর ধরে সেচের পানির জন্য অতিরিক্ত টাকা দিয়ে আসছেন। এখন বিরক্ত হয়ে বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। এরপরও কোনো বিচার পাননি।

এ বিষয়ে মো. আকতারুজ্জামান বলেন, তিনি সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেওয়ার পর দেখেন গ্রামে কোনো গভীর নলকূপ নেই। পরে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে নলকূপটি স্থাপন করেন। কৃষকেরা অংশীদারত্বের টাকা দিতে রাজি না হলে তিনি বিএমডিএকে জানান। সে সময় তাঁরা টাকা দিয়ে দিতে পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘পরে আপনি টাকাটা ধীরে ধীরে তুলে নেবেন।’ সেই পরামর্শেই সেচের পানি বাবদ প্রিপেইড কার্ডের অতিরিক্ত কিছু টাকা তিনি নিচ্ছেন। জোর করে কিছু নিচ্ছেন না।

বিএমডিএ ঠাকুরগাঁও কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, অভিযোগটি যাচাই করে সত্যতা পাওয়া গেছে। নলকূপটি সুষ্ঠুভাবে চালানোর জন্য সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ওই অপারেটরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোটেক

কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তারা এক সঙ্গে কাজ করতে রাজি

ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকেরাফাইল ছবি
ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকেরাফাইল ছবি

ডাচ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে দুই দেশের বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা একসঙ্গে কাজ করতে রাজি হয়েছেন।

গতকাল সোমবার নেদারল্যান্ডসের রাজধানী হেগে অনুষ্ঠিত কৃষি খাতের ব্যবসাবিষয়ক এক সম্মেলনে দুই দেশের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা সহযোগিতার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।

নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম রিয়াজ হামিদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত এগ্রি বিজনেস কনক্লেভে বাংলাদেশের প্রায় ৪০জন উদ্যোক্তা ডাচ কৃষি খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি প্রযুক্তি সহযোগিতা ও ব্যবসায়িক সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। দিনব্যাপী আয়োজিত অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেছে ওয়েগেনিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়।

আলোচনায় বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা প্রযুক্তি কিনতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দিলে নেদারল্যান্ডসের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা প্রযুক্তি সহযোগিতা দিতে রাজি থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।

রিয়াজ হামিদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে ডাচরা প্রস্তুত এবং বাংলাদেশি উদ্যোক্তারাও তাদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। এ ছাড়া ডাচ সরকার ইতিমধ্যে বাংলাদেশের বীজ, পশু খাদ্য, পোলট্রি, হর্টিকালচার ও এ্যাকুয়াকালচার বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম সম্পাদন করেছে, যা ওই দেশের বেসরকারি খাতকে আরও উৎসাহিত করেছে।

আলোচনায় কৃষি সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করতে তৈরি আছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্কয়ার, ইস্পাহানি এগ্রো, একে খান অ্যান্ড কোম্পানি, প্যারাগন গ্রুপ, এসিআই, জেমকন গ্রুপসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তিনি জানান, মঙ্গলবার বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা ডাচ প্রযুক্তির প্রয়োগ সরেজমিনে দেখতে যাবেন।

বাংলাদেশের সঙ্গে নেদারল্যান্ডসের পোল্ট্রিখাতে সহযোগিতার আলোচনা অনেকটা এগিয়েছে উল্লেখ করে মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, দুই দেশের মধ্যে মৎস্য, পশুপালন ও হর্টিকালচারে সহযোগিতার বিপুল সম্ভাবনা আছে।

কনক্লেভ আয়োজনে প্রথমবারের মতো দূতাবাসের সঙ্গে অংশীদার হয়েছে নেদারল্যান্ডসের কৃষি মন্ত্রণালয়, নেদারল্যান্ডস এন্টারপ্রাইজ এজেন্সি, নেদারল্যান্ডস ফুড পার্টনারশিপ, ডাচ-গ্রিন-হাইজডেল্টা, লারিভ ইন্টারন্যাশনাল, স্টান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ।

কৃষিজাত পণ্য রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থানকারী নেদারল্যান্ডসের আয়তন বাংলাদেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের কম। ২০২১-এ কৃষিপণ্য ও খাদ্য রপ্তানি করে নেদারল্যান্ডস ১১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি আয় করেছে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশক: শাইখ সিরাজ
© ২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। দা এগ্রো নিউজ, ফিশ এক্সপার্ট লিমিটেডের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। ৫১/এ/৩ পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থাপথ, ঢাকা -১২০৫
ফোন: ০১৭১২-৭৪২২১৭
ইমেইল: info@agronewstoday.com, theagronewsbd@gmail.com