আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

এগ্রোবিজ

দুধের উৎপাদক-ভোক্তা উভয়েই ঠকছেন বাজার অব্যবস্থাপনায়

দেশে গত এক দশকের ব্যবধানে দুধ উৎপাদন বেড়েছে প্রায় সাড়ে তিন গুণ। তবে এখনো চাহিদার তুলনায় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ দুধ কম উৎপাদন হচ্ছে। প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দুধের উৎপাদন ছিল ৯৪ লাখ মেট্রিক টন। তার পরের অর্থবছর অর্থাৎ ২০১৮-১৯-এ ছিল ৯৯ লাখ মেট্রিক টন, যা চাহিদার ৬৫ শতাংশ। আর ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশে প্রায় এক কোটি ৭ লাখ টন দুধ উৎপাদিত হয়। ঘাটতি ছিল প্রায় ৪৫ লাখ টন।

খামারিদের অভিযোগ, দুধ সংগ্রহ ও বিপণনের ক্ষেত্রে উদ্যোগ অনেকটাই সীমিত। এতে ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দুধ উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি খরচ কমাতে হবে। পাশাপাশি ভোক্তা পর্যায়ে চাহিদা বৃদ্ধিতে দুধের সরবরাহ পরিস্থিতি আরও উন্নত করা এবং মানসম্পন্ন দুধ সরবরাহ নিশ্চিতে উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।

দুগ্ধশিল্পের নানা সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ) সাধারণ সম্পাদক শাহ ইমরান, আড়ং ডেইরির পরিচালক আনিসুর রহমান ও আকিজ ডেইরির প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) মোহাম্মদ মোসলেহ উদ্দিন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক সাইফুল ইসলাম মিঠু

‘উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় গুঁড়া দুধ আমদানি’

জাগো নিউজ: সুস্থ থাকতে প্রতিদিন ২৫০ গ্রাম করে দুধ খেতে বলা হলেও দাম বেশির কারণে দুধ কিনতে চায় না মানুষ। দুধের বাড়তি দামের কারণ কী?

আনিসুর রহমান: আমাদের এখানে প্রান্তিক পর্যায়ে দুধ উৎপাদন খরচ বেশি। এটা কীভাবে কমানো যায় তা সরকারের দেখা উচিত। উৎপাদন খরচ বেশি বলে বাজারমূল্যও বেশি। কৃষকের কাছ থেকে আমাদের ফ্যাক্টরিতে দুধ আনতে লিটারে ৪৩-৪৫ টাকা খরচ পড়ে যায়। মানে কেনার পর থেকে ট্যাংকারে করে ফ্যাক্টরিতে আনতে দুধের দাম পড়ে ৪৫ টাকা। এটা যদি ডলারে কনভার্ট করি, তাহলে সেটা ৫০ সেন্টের ওপরে পড়ে যায়। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে দুধের খরচ পড়ছে ২২-২৮ সেন্ট। মানে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে এক লিটার দুধ উৎপাদনে ৩০ সেন্টের নিচে খরচ পড়ে। যদি আমাদের কেনা দামই হয় অন্যান্য দেশের তুলনায় দ্বিগুণ, তাহলে আমরা স্বল্পমূল্যে কীভাবে দুধ দেব? আন্তর্জাতিক উৎপাদন খরচের সঙ্গে আমাদের উৎপাদন খরচে সামঞ্জস্য না করা হলে দুধের দাম কমানো সম্ভব না।

Milk-4.jpg

খামারির কাছ থেকে বাজারে পৌঁছানোর পর দ্বিগুণ হয়ে যায় দুধের দাম

অন্যদিকে নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও আয়ারল্যান্ড থেকে পাউডার দুধ আমদানি করলে সব ভ্যাট-ট্যাক্স দিয়ে যে দাম পড়ে, সেটা স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত দুধের চেয়ে অন্তত ৩০ শতাংশ কম। বাইরে থেকে কিনে আনলে যদি আমার দাম কম পড়ে, তাহলে দেশীয় প্রক্রিয়াজাত শিল্প হিসেবে আমরা এগোতে পারবো না।

জাগো নিউজ: অবকাঠামোগত সমস্যা কেমন দেখছেন?

আনিসুর রহমান: আমাদের দেশে দুধ উৎপাদন বাড়ছে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে না প্রক্রিয়াজাত কারখানা। এ কারণে প্রক্রিয়াজাতকরণ বাড়ছে না। এর ফলে দুধ আমদানি বাড়ছে। দেশে দুধের উৎপাদন খরচ বেশি বলে, প্রতিবছর প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার দুধ আমদানি করছি। এটা সমন্বয় করা না গেলে খামারি ও প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রতিষ্ঠান কিংবা ভোক্তা কেউই উপকৃত হবেন না।

জাগো নিউজ: ডেইরি শিল্পে আর কী কী সমস্যা আছে?

আনিসুর রহমান: গো-খাদ্যের দাম বেশি এবং জেলা পর্যায়ে প্রসেসিং প্লান্টের অভাব আছে। খামারিদের প্রণোদনা দিয়ে, যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে ডেইরিশিল্প সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।

‘নজরদারি বাড়িয়ে গো-খাদ্যের সিন্ডিকেট বাণিজ্য ভেঙে দিতে হবে’

জাগো নিউজ: কৃষিপণ্য হওয়া সত্ত্বেও প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকদের বাণিজ্যিক হারে বিদ্যুৎ বিল দিতে হয়। এ কারণে কি দুধ উৎপাদনে খরচ বাড়ছে?

শাহ ইমরান: ধান, চাল ও ডালের মত দুধও কৃষিপণ্য। ধান ও চাল উৎপাদনের বিদ্যুৎ বিল কৃষির আওতায় রাখা হয়েছে। অন্যদিকে দুগ্ধ খামারকে বাণিজ্যিক আওতায় রাখা ঠিক হয়নি। এ কারণে কৃষকদের দুধ উৎপাদনে খরচ বেশি।

Milk-4.jpg

দেশে পর্যাপ্ত দুধ প্রক্রিয়াজাত কারখানা নেই

জাগো নিউজ: গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধি খামারিদের কেমন ভোগাচ্ছে?

শাহ ইমরান: গো-খাদ্যের দামও এখানে বেশি। এই বিষয়টাকে সরকারের মনিটরিং করা দরকার। গমের দাম ২২ টাকা, অথচ গমের ভুসির দাম ৪০ টাকা। গো-খাদ্যে বিদ্যমান ভ্যাট-ট্যাক্স আছে, সেটা বাদ দিতে হবে। বাজার নজরদারি বাড়িয়ে গো-খাদ্যের সিন্ডিকেট বাণিজ্য ভেঙে দিতে হবে। গো-খাদ্য আমদানি শুল্ক বাদ দিতে হবে। আবার অনেকেই কম শুল্কে গো-খাদ্য এনে দাম কমাচ্ছেন না। তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে।

জাগো নিউজ: অবকাঠামোগত সংকট কেমন?

শাহ ইমরান: দুধ সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে প্রচুর অবকাঠামোগত সংকট আছে। দুধকে লংটার্ম (দীর্ঘমেয়াদি) সংরক্ষণ করার জন্য যেসব যন্ত্র দরকার, সেগুলো প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকদের পক্ষে কেনা সম্ভব না। প্রত্যেকটা উপজেলায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আছে, যারা কৃষকদের কাছ থেকে দুধ সংগ্রহ করে। তাদেরকেও চিলিং প্লান্ট দিতে হবে। মিল্ক ভিটা এটা করে দিতে পারে, কিংবা খামারিদের সংগঠনগুলোকে এই মেশিনারিজ কিনে দিতে পারে।

জাগো নিউজ: খামারিরা ন্যায্যমূল্যে দুধ বিক্রি করতে পারেন না কেন?

শাহ ইমরান: ঢাকায় বসে প্রতিলিটার দুধ ৮০ থেকে ১০০ টাকায় কিনে খেতে হয়। কিন্তু কৃষককে দুধ বিক্রি করতে হয় ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়। উৎপাদক ও ভোক্তার মধ্যে ব্যাপক গ্যাপ আছে। ভোক্তার কাছে পৌঁছানোর পর দুধের দাম দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে। এতে উৎপাদক ও ভোক্তা উভয়ই ঠকছে। বাজার অব্যবস্থাপনা ও অদক্ষতার কারণে মধ্যস্থতাকারীরা বড় অংকের টাকা নিয়ে যাচ্ছে। এটার দিকে নজর দিতে হবে।

জাগো নিউজ: গুঁড়া দুধ আমদানি করতে হয় কেন?

শাহ ইমরান: চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন করতে না পারায় গুঁড়া দুধ আমদানি করতে হয়। আমাদের এখানে দুধের ঘাটতি আছে প্রায় ৩৫ শতাংশের মতো। আমাদের দুধ উৎপাদন বাড়াতে হবে। অন্য সময়ে উৎপাদন প্রতিবছর ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বাড়ে। তবে করোনার কারণে এটা থমকে আছে। আমদানিনির্ভরতা কমাতে সরকারের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করতে হবে।

Milk-4.jpg

প্রান্তিক পর্যায়ে দুধ উৎপাদন খরচ বেশি

‘গুঁড়ো দুধের প্লান্ট নির্মাণে বিনা সুদে ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে’

জাগো নিউজ: এখন মাত্র কয়েকটি জেলায় দুধ উৎপাদন হচ্ছে। অন্য জেলায় উৎপাদন বাড়াতে কী করা যেতে পারে?

মোসলেহ উদ্দিন: এখন পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও মানিকগঞ্জসহ কয়েকটি জেলায় দুধ উৎপাদন হচ্ছে। এটা বাড়াতে হবে। এ জন্য প্রথমে কৃষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের ঋণের ব্যবস্থাও করে দিতে হবে। গাভীর জাতের উন্নয়ন করতে হবে। বিদেশ থেকে উন্নত জাতের গাভী বা সিমেন আমদানিতে ভর্তুকি দিতে হবে। প্রত্যেক বিভাগে অন্তত একটি করে পাউডার প্লান্ট করতে হবে। পাশাপাশি অন্য এলাকায় উৎপাদন বাড়িয়ে দুধ ক্রয় কেন্দ্র করতে হবে। দুধ বিপণন ব্যবস্থাও সহজ করতে হবে।

জাগো নিউজ: দুধ উৎপাদনে এত খরচ কেন হচ্ছে?

মোসলেহ উদ্দিন: দেশীয় এই শিল্পে সরকারের যে ধরনের সাহায্য দরকার তা খামারিরা পাচ্ছেন না। গো-খাদ্যের দাম তাদের ভোগাচ্ছে। গো-খাদ্য আমদানিতে তাদের ভ্যাট-ট্যাক্স দিতে হচ্ছে। তার ওপর গবাদিপশুর রোগবালাই ও ভ্যাকসিনেশন আছে। এতকিছু সমন্বয় করে তাদের বাড়তি দামে দুধ বিক্রি করতে হচ্ছে।

জাগো নিউজ: আকিজ ডেইরি কী পরিমাণ দুধ সংগ্রহ করতে পারছে?

মোসলেহ উদ্দিন: বাজারে দুধের চাহিদা মোতাবেক দেশীয় সোর্স থেকে আমরা তা পূরণ করতে পারছি না। আমরা প্রসেসররা (প্রক্রিয়াজাতকারী) মাত্র ১০ থেকে ১৫ শতাংশ দুধ পাই। বাকি ৮৫-৯০ শতাংশ দুধ লোকাল মার্কেটে বিক্রি হয়। এটাকে যদি অর্গানাইজ ওয়েতে (সমন্বিত উপায়ে) বিক্রি করা হয় এবং বলা হয় পাস্তুরাইজড বা ইউএইচটি ব্যতীত কোনো দুধ বিক্রি হবে না, তাহলে ভোক্তা দুধ পাবে স্বল্পমূল্যে। খোলা দুধ বিক্রি ঠিক নয়। এতে অনেক রোগ ছড়ায়। আমরা দুধ পাওয়ার পর সেটার বৈজ্ঞানিক উপায়ে সংরক্ষণ করি, প্রক্রিয়াজাত করি। উন্নত দেশে কোথাও খোলা দুধ বিপণন হয় না।

Milk-4.jpg

দুধের উৎপাদন খরচ বেশি বলে বাজারমূল্যও বেশি

জাগো নিউজ: প্রক্রিয়াজাতকরণে কী ধরনের অবকাঠামোগত সমস্যা আছে?

মোসলেহ উদ্দিন: খামারি পর্যায়ে মেশিনারিজের অভাবে অনেক সময় দুধটা আমাদের কাছে পৌঁছায় না। প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য প্রত্যেক বিভাগে উন্নত পাউডার প্লান্ট ও চিলিং প্লান্টের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতিটি বিভাগে অন্তত একটি করে পাউডার প্লান্ট করা দরকার। উৎপাদন বাড়াতে যদি সরকার এই ব্যবস্থাগুলো নেয়, তাহলে দুগ্ধ উৎপাদন কয়েকটি জেলার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না।

জাগো নিউজ: কী পরিমাণ গুঁড়ো দুধ আমদানি করতে হয়?

মোসলেহ উদ্দিন: দেশে গুঁড়ো দুধের বিশাল চাহিদা আছে। বছরে দুই হাজার ৮০০ থেকে তিন হাজার কোটি টাকার গুঁড়ো দুধ বাংলাদেশে আসে। প্রত্যেক জেলায় যদি প্লান্ট হয়, তরল দুধের পরিমাণ বাড়বে এবং গুঁড়ো দুধের আমদানি নির্ভরতা কমে আসবে। আর যারা প্লান্ট করতে চায় তাদের বিনা সুদে ঋণের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। এসব করা গেলে অল্প সময়েই দুধ উৎপাদনে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ হবো।

এগ্রোবিজ

যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশে হতে পারে সারের সংকট

সারের সংকট
সারের সংকট
সারের সংকট

চলতি বোরো মৌসুমে সার কিনতে কৃষকদের সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা করে বেশি দিতে হয়েছে। আর সরকারকেও সার বাবদ ভর্তুকি দিতে হচ্ছে বাজেটে বরাদ্দের তিন গুণের বেশি—প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশ এখন মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) সার আমদানি নিয়ে বিপাকে পড়েছে।

ধান, আলু ও সবজি চাষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এমওপি সারের ৬০ শতাংশ আনা হতো রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে। ওই দুই দেশ নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়ায় এখন বাংলাদেশকে এমওপি কিনতে হচ্ছে কানাডা থেকে। বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়া ও আমদানিতে অনিশ্চয়তার কারণে বাংলাদেশে সারের সংকট হতে পারে। ভর্তুকির চাপ সামলাতে বাংলাদেশকে সব ধরনের সারের খুচরা মূল্য বাড়াতে হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিবিষয়ক সংস্থা ইউএসডিএর চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ‘বাংলাদেশে সার সরবরাহ ও ব্যবহারে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের এমওপি সারের ২০ শতাংশ সরবরাহ কমানো হলে সামনের বোরো মৌসুমে ধান, গম ও রবি মৌসুমের অন্যান্য ফসলের উৎপাদন ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কমতে পারে। এতে বাংলাদেশের খাদ্য উৎপাদন ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে।

এমনিতেই এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমাদের ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সারের কারণে নতুন করে যাতে আর সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।

এ এম এম শওকত আলী, সাবেক কৃষিসচিব

তবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, দেশে চলতি বোরো মৌসুমে নতুন করে আর সারের দরকার হবে না। সামনে আলুর মৌসুমে ইউরিয়া, এমওপিসহ অন্যান্য সারের চাহিদা বাড়বে। ওই সময়ের জন্য সার সরবরাহ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ কানাডা ও মধ্যপ্রাচ্যের সার সরবরাহকারী দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে।

জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কানাডা থেকে মোট আট লাখ টন এমওপি সার আমদানির উদ্যোগ নিয়েছি। এ ব্যাপারে ওই দেশের সঙ্গে আমাদের সমঝোতা স্মারক হয়েছে। ফলে এই সার নিয়ে সরকারের কোনো দুশ্চিন্তা নেই। তবে সার বাবদ সরকারের বিপুল পরিমাণে ভর্তুকি বাড়ছে। এই চাপ নিয়েও সরকার ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ওই ভর্তুকি দিয়ে যাবে।’

কমানো হয়েছে চাহিদা

বাংলাদেশে চলতি অর্থবছরে ৬৯ লাখ টন রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয়েছে। এর মধ্যে ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি—এই চার ধরনের সার ব্যবহার হয় ৫৭ লাখ টন। আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের ওই চার ধরনের সারের চাহিদা কমিয়ে ৫৫ লাখ ৫০ হাজার টনে নামিয়ে আনা হয়েছে।

দেশে প্রয়োজনীয় সারের ৮০ শতাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এর মধ্যে এমওপি সারের বড় অংশ আসে রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে।

প্রসঙ্গত, ওই চারটি প্রধান সার কৃষকদের কাছে বিক্রির ক্ষেত্রে সরকার ভর্তুকি দিয়ে থাকে। চলতি অর্থবছরে সরকার প্রাথমিকভাবে সারে ভর্তুকি বাবদ ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে গত ছয় মাসে সারের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। বেশির ভাগ সারের দাম তিন থেকে চার গুণ বেড়ে যাওয়ায় সরকারকে ভর্তুকির পরিমাণ ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা করতে হয়। কিন্তু অর্থবছরের শেষের দিকে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে হিসাব করে দেখা হয়েছে, ভর্তুকির পরিমাণ এবার বেড়ে কমপক্ষে ৩০ হাজার কোটি টাকা গিয়ে দাঁড়াবে।

জিপসাম, জিংক সালফেট ও অ্যামোনিয়াম সালফেট ও ম্যাগনেসিয়াম সালফেট সারে সরকার কোনো ভর্তুকি দেয় না। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কিনে ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কাছে তা বিক্রি করে থাকেন। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষককেও বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে।

সাবেক কৃষিসচিব এ এম এম শওকত আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমনিতেই এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমাদের ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সারের কারণে নতুন করে যাতে আর সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। আর সরকারের অন্যান্য খাতের ভর্তুকি কমিয়ে প্রয়োজনে সারে ভর্তুকি বাড়াতে হবে, যাতে সারের দাম কম থাকে। কারণ, কৃষকের হাতে এখন টাকা কম। বিশ্ববাজার থেকেও খাদ্য আমদানি করা সামনের দিনে আরও কঠিন হতে পারে। ফলে দেশের উৎপাদন ঠিক রাখতে সারের দাম ও জোগান ঠিক রাখা উচিত।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

বিদেশ থেকে খালি হাতে ফিরে ড্রাগন চাষে সাফল্য

বাগানে চাষ করা ড্রাগন হাতে মিরাজুল ইসলাম
বাগানে চাষ করা ড্রাগন হাতে মিরাজুল ইসলাম

মিরাজুল ইসলাম (৩৩)। ১০ বছর সৌদি আরবে ছিলেন। আকামা জটিলতায় খালি হাতে দেশে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। এক বছর বেকার থাকার পর ইউটিউবে পতিত জমিতে ড্রাগন চাষের ভিডিও দেখেন। বাবার কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে নেমে পড়েন ড্রাগন চাষে। দেড় বছরের ব্যবধানে এখন উপজেলার সবচেয়ে বড় ড্রাগন বাগান তাঁর। এ বছর খরচ বাদে আট থেকে নয় লাখ টাকা লাভের আশা করছেন তিনি।

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার ইন্দুরকানি গ্রামের বাসিন্দা মিরাজুল। উপজেলার টগরা গ্রামে দেড় একর জমিতে তিনি ড্রাগনের বাগান তৈরি করেছেন। তাঁর বাগানে এখন সাড়ে তিন হাজার ড্রাগন ফলের গাছ আছে।

মিরাজুল ইসলাম বলেন, শ্রমিক হিসেবে ১০ বছর সৌদিতে কাজ করে ২০১৯ সালে দেশে ফেরেন তিনি। আকামা সমস্যার কারণে শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। কিছু একটা করবেন বলে ভাবছিলেন। একদিন ইউটিউবে ড্রাগন চাষের ভিডিও দেখতে পান। সেই থেকে ড্রাগন চাষে আগ্রহ জন্মে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে দেড় একর পতিত জমি ড্রাগন চাষের উপযোগী করেন। গাজীপুর থেকে ৬০ টাকা দরে ৬০০ চারা নিয়ে আসেন। বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে শুরু করেন চাষাবাদ। পরের বছর জুনে ফল পাওয়া শুরু করেন।

ড্রাগনের বাগান করতে মিরাজুলের খরচ হয়েছিল ছয় থেকে সাত লাখ টাকা। ইতিমধ্যে ফল বিক্রি করে তাঁর খরচ উঠে গেছে। সাধারণত মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত গাছে ফল আসে। বছরে ছয় থেকে সাতবার পাকা ড্রাগন সংগ্রহ করা যায়। এখন পরিপক্ব ও রোগমুক্ত গাছের শাখা কেটে নিজেই চারা তৈরি করেন। ড্রাগন চাষের পাশাপাশি বাগানে চুইঝাল, এলাচ, চায়না লেবুসহ মৌসুমি সবজি চাষ করেন। এ ছাড়া ড্রাগনের চারাও উৎপাদন করে বিক্রি করেন তিনি।

মিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বাগানের বেশির ভাগ গাছে এ বছর ফল ধরেছে। গত মঙ্গলবার বাগান থেকে দেড় টন ফল সংগ্রহ করেছেন। ২৫০ টাকা কেজি দরে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পাইকারদের কাছে বিক্রি করেছেন। স্থানীয় বাজারে ৩০০ টাকা কেজি দরে ড্রাগন বিক্রি হয়। নভেম্বর পর্যন্ত আরও পাঁচ–ছয়বার বাগান থেকে ফল তোলা যাবে। আশা করছেন, খরচ বাদে এবার আট থেকে নয় লাখ টাকা লাভ থাকবে।

মিরাজুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমার বাগান থেকে চারা নিয়ে অনেকে বাড়িতে ও ছাদে ছোট পরিসরে ড্রাগনের বাগান করেছেন। আমি এ পর্যন্ত ৪০ টাকায় দেড় হাজার চারা বিক্রি করেছি।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পূর্ণ বয়সের একটি ড্রাগনের চারা রোপণের পর ২৫ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। এর মৃত্যুঝুঁকি নেই বললেই চলে। তবে কয়েক দিন পরপর সেচ দিতে হয়। বৃষ্টির পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হয়। ড্রাগন ফল চাষে রাসায়নিক সার দিতে হয় না।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইশরাতুন্নেছা বলেন, মিরাজুল ইসলামকে ড্রাগন চাষে নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে আসছে কৃষি বিভাগ। উপজেলায় তাঁর বাগানটি সবচেয়ে বড়। তিনি নিরলস পরিশ্রম করে ছোট থেকে বাগানটি বড় করেছেন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

নাসিরনগরে বন্যায় তলিয়ে গেল কৃষকের বাদামখেত

নাসিরনগরের গোয়ালনগর ইউনিয়নে অতিবৃষ্টি ও আগাম বন্যায় তলিয়ে গেছে কৃষকদের বাদামখেত। আজ মঙ্গলবার ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রামে
নাসিরনগরের গোয়ালনগর ইউনিয়নে অতিবৃষ্টি ও আগাম বন্যায় তলিয়ে গেছে কৃষকদের বাদামখেত। আজ মঙ্গলবার ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রামে

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নে অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে কৃষকের প্রায় ৩০ হেক্টর বাদাম চাষের জমি। কয়েক দিন আগে উজানের পানিতে তাঁদের পাকা ধানের জমি তলিয়ে গিয়েছিল। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষকেরা বাদাম চাষ করেছিলেন। আবারও ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ার বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হলেন চাষিরা।

উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১১ এপ্রিল উপজেলায় শিলাবৃষ্টি এবং ১৪ থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত উজানের পানিতে কৃষকের পাকা ধানের জমি তলিয়ে যায়। কৃষকেরা সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ২০০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করেছিলেন। এর মধ্যে উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নে ৩০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করা হয়। উপজেলায় এবার প্রায় ৫০ হাজার মণ বাদাম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। কিন্তু উজানের পানিতে হঠাৎ বন্যায় সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

গোয়ালনগর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আজহারুল হক বলেন, ‘নাসিরনগর উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাদাম চাষ করা হয় আমাদের ইউনিয়নে। কিন্তু এ বছর আগাম বন্যার কারণে কৃষকেরা তাঁদের ফসল ঘরে তুলতে পারেননি। তাঁদের সব ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।’

ওই এলাকার বাদামচাষি মেরাজ মিয়া বলেন, তিনি ছয় বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করেন। দু-এক দিনের মধ্যে বাদাম তুলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু খেতে গিয়ে দেখেন সব বাদাম পানির নিচে। এখন এই বাদাম তুলে কোনো লাভ নেই। এগুলো গরুও খাবে না।

মো. রজব আলী নামের এক কৃষক বলেন, ‘আমাদের ইউনিয়নের জামারবালি, সোনাতলা ও মাইজখোলা গ্রামে বাদামখেত আছে। গত তিন দিনে পাঁচ-ছয় ফুট পানি বাড়ায় সব তলিয়ে গেছে। এখন বাদাম তুলতে কাজের লোকও পাওয়া যাচ্ছে না।’

কৃষক ফতু মিয়া বলেন, গোয়ালনগর ইউনিয়নের বাদাম চাষের জমিগুলো হঠাৎ পানি আসায় তলিয়ে গেছে। ফসল তলিয়ে তাঁদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেল। কয়েক দিন আগেও পাকা ধান পানির নিচে তলিয়ে গিয়েছিল। কৃষকদের দাবি, গোয়ালনগরে বাদাম চাষের জমি তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকদের প্রায় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আবু সাইদ প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলার কয়েকটি চরাঞ্চলে বাদাম চাষ করা হয়। চরাঞ্চলের উঁচু জমিতে প্রথমে আলু চাষের পর বাদাম চাষ করা হয়। আগাম বন্যার কারণে নিচু এলাকার কিছু বাদামখেত পানিতে তলিয়ে গেছে।

আবু সাইদ আরও বলেন, ১৫-২০ দিন আগে উপজেলার প্রায় সব বাদাম উঠে গেছে। গোয়ালনগর ইউনিয়নে ৩০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করা হয়েছিল। এর মধ্যে এক হেক্টর জমির বাদাম তলিয়ে গেছে। সব মিলিয়ে ৭০ হাজার টাকার মতো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সিলেটে বন্যা হওয়ায় এমনটি হয়েছে বলে তিনি জানান।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

পানি দিতে অতিরিক্ত টাকা

পানি দিতে অতিরিক্ত টাকা
পানি দিতে অতিরিক্ত টাকা

ঠাকুরগাঁওয়ে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) একটি গভীর নলকূপের সেচের পানি সরবরাহে কৃষকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হচ্ছে। ভুক্তভোগী কৃষকদের কাছ থেকে পাওয়া এমন অভিযোগের তদন্ত করে সত্যতা পেয়েছে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষ। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বড় বালিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে।

ভুক্তভোগী কৃষকেরা বলছেন, সেচের পানির জন্য প্রিপেইড কার্ডের বাইরে কোনো টাকা দেওয়ার নিয়ম নেই। কিন্তু বিএমডিএর ১০৮ নম্বর গভীর নলকূপের অপারেটরের দায়িত্বে থাকা বিউটি বেগমের স্বামী আকতারুজ্জামান বোরো ধান চাষের জন্য প্রতি বিঘার জন্য ১ হাজার ২০০ টাকা ও অন্য মৌসুমে ৩০০ টাকা নেন। ১০ বছর ধরে তিনি এভাবেই বাণিজ্য করে আসছেন।

সম্প্রতি রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে বিএমডিএর গভীর নলকূপ থেকে খেতে সেচের পানি পেতে হয়রানির শিকার দুই কৃষকের মৃত্যুর ঘটনা দেশজুড়ে আলোচিত হয়।

ঠাকুরগাঁও জেলায় বিএমডিএর ১ হাজার ৪৩১টি গভীর নলকূপ রয়েছে। এর মধ্যে সচল ১ হাজার ৪১৮টি। সেচের আওতায় ৭৬ হাজার ৫০০ পরিবারের জমি রয়েছে ৫৩ হাজার ৫০০ হেক্টর।

* সেচের পানির জন্য প্রিপেইড কার্ডের বাইরে কোনো টাকা দেওয়ার নিয়ম নেই। * সেচের আওতায় ৭৬ হাজার ৫০০ পরিবারের জমি আছে। * কৃষকদের নলকূপের আবেদন পেলে যাচাই করে স্কিম তৈরি করা হয়।

বিএমডিএ সূত্রে জানা গেছে, কৃষকদের নলকূপের আবেদন পেলে যাচাই করে স্কিম তৈরি করা হয়। এরপর সমবায়ের ভিত্তিতে অংশীদারি ফি বাবদ এক লাখ টাকা জমা দিতে হয়। এই নলকূপ পরিচালনার জন্য বিএমডিএ একজন অপারেটর নিয়োগ দেন। প্রিপেইড মিটারিং পদ্ধতিতে কৃষকের নিজ নামে প্রিপেইড কার্ড থাকতে হয়। সেই কার্ড থেকে প্রতি ঘণ্টায় সেচের পানির জন্য ন্যূনতম ১১০ টাকা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কেটে নেওয়া হয়। এর বাইরে অতিরিক্ত কোনো টাকা দেওয়ার নিয়ম নেই।

বড় বালিয়া এলাকার কৃষকেরা জানান, ২০১১ সালের দিকে বড় বালিয়া মণ্ডলপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. আকতারুজ্জামান এলাকায় গভীর নলকূপ স্থাপনের উদ্যোগ নেন। ফি হিসেবে এক লাখ জমা দেওয়ার নিয়ম থাকলেও কোনো কৃষক সেটা দিতে এগিয়ে আসেননি। ফলে আকতারুজ্জামান, দাউদুল ইসলাম ও জোবায়দুর রহমান মিলে অংশীদারি ফি দেন। আকতারুজ্জামানের ৮০ শতাংশ টাকা থাকায় গভীর নলকূপের নিয়ন্ত্রণ তিনিই পান। অপারেটর হিসেবে নিয়োগ পান তাঁর স্ত্রী বিউটি বেগম। যদিও কৃষকেরা আকতারুজ্জামানকেই অপারেটর হিসেবে জানতেন।

সেচের পানি পেতে হয়রানির শিকার হয়ে সদর উপজেলার বড় বালিয়া এলাকার ৫০ জন কৃষক গত ১৭ এপ্রিল বিএমডিএ সহকারী প্রকৌশলীর কাছে অভিযোগ দেন। সেখানে গিয়ে কৃষক ও অপারেটরের সঙ্গে কথা বলে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়।

ভুক্তভোগী কৃষকেরা বলেন, ২০১২ সালে নলকূপটি চালু হলে আওতাধীন কৃষকের কাছ থেকে আকতারুজ্জামান সেচের পানির জন্য প্রিপেইড কার্ডের অতিরিক্ত টাকা আদায় শুরু করেন। আর সেই টাকা থেকে তিনি মাঝেমধ্যে অন্য দুই অংশীদারকে কিছু টাকা ভাগ দেন।

ভুক্তভোগী কৃষক মো. শাহজাহান আলী বলেন, গভীর নলকূপটির আওতায় তাঁর ১০ বিঘা জমি রয়েছে। কার্ডের বাইরে টাকা দেওয়ার নিয়ম না থাকলেও আকতারুজ্জামানকে প্রতি বিঘায় সেচের জন্য ১ হাজার ২০০ টাকা দিতে হয়। এই টাকা না দিলে তিনি পানি দেন না।

ওই নলকূপের আওতায় চার বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করছেন কৃষক মো. হেলাল। তিনি অতিরিক্ত টাকা না দেওয়ায় অপারেটর খেতে পানি দেননি। এতে জমি ফেটে যায়। পরে তিনি শ্যালো ইঞ্জিন দিয়ে জমিতে সেচ দিয়ে খেত রক্ষা করেছেন।

আরেক ভুক্তভোগী মোকলেসুর রহমান বলেন, ১০ বছর ধরে সেচের পানির জন্য অতিরিক্ত টাকা দিয়ে আসছেন। এখন বিরক্ত হয়ে বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। এরপরও কোনো বিচার পাননি।

এ বিষয়ে মো. আকতারুজ্জামান বলেন, তিনি সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেওয়ার পর দেখেন গ্রামে কোনো গভীর নলকূপ নেই। পরে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে নলকূপটি স্থাপন করেন। কৃষকেরা অংশীদারত্বের টাকা দিতে রাজি না হলে তিনি বিএমডিএকে জানান। সে সময় তাঁরা টাকা দিয়ে দিতে পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘পরে আপনি টাকাটা ধীরে ধীরে তুলে নেবেন।’ সেই পরামর্শেই সেচের পানি বাবদ প্রিপেইড কার্ডের অতিরিক্ত কিছু টাকা তিনি নিচ্ছেন। জোর করে কিছু নিচ্ছেন না।

বিএমডিএ ঠাকুরগাঁও কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, অভিযোগটি যাচাই করে সত্যতা পাওয়া গেছে। নলকূপটি সুষ্ঠুভাবে চালানোর জন্য সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ওই অপারেটরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোটেক

কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তারা এক সঙ্গে কাজ করতে রাজি

ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকেরাফাইল ছবি
ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকেরাফাইল ছবি

ডাচ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে দুই দেশের বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা একসঙ্গে কাজ করতে রাজি হয়েছেন।

গতকাল সোমবার নেদারল্যান্ডসের রাজধানী হেগে অনুষ্ঠিত কৃষি খাতের ব্যবসাবিষয়ক এক সম্মেলনে দুই দেশের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা সহযোগিতার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।

নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম রিয়াজ হামিদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত এগ্রি বিজনেস কনক্লেভে বাংলাদেশের প্রায় ৪০জন উদ্যোক্তা ডাচ কৃষি খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি প্রযুক্তি সহযোগিতা ও ব্যবসায়িক সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। দিনব্যাপী আয়োজিত অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেছে ওয়েগেনিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়।

আলোচনায় বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা প্রযুক্তি কিনতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দিলে নেদারল্যান্ডসের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা প্রযুক্তি সহযোগিতা দিতে রাজি থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।

রিয়াজ হামিদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে ডাচরা প্রস্তুত এবং বাংলাদেশি উদ্যোক্তারাও তাদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। এ ছাড়া ডাচ সরকার ইতিমধ্যে বাংলাদেশের বীজ, পশু খাদ্য, পোলট্রি, হর্টিকালচার ও এ্যাকুয়াকালচার বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম সম্পাদন করেছে, যা ওই দেশের বেসরকারি খাতকে আরও উৎসাহিত করেছে।

আলোচনায় কৃষি সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করতে তৈরি আছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্কয়ার, ইস্পাহানি এগ্রো, একে খান অ্যান্ড কোম্পানি, প্যারাগন গ্রুপ, এসিআই, জেমকন গ্রুপসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তিনি জানান, মঙ্গলবার বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা ডাচ প্রযুক্তির প্রয়োগ সরেজমিনে দেখতে যাবেন।

বাংলাদেশের সঙ্গে নেদারল্যান্ডসের পোল্ট্রিখাতে সহযোগিতার আলোচনা অনেকটা এগিয়েছে উল্লেখ করে মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, দুই দেশের মধ্যে মৎস্য, পশুপালন ও হর্টিকালচারে সহযোগিতার বিপুল সম্ভাবনা আছে।

কনক্লেভ আয়োজনে প্রথমবারের মতো দূতাবাসের সঙ্গে অংশীদার হয়েছে নেদারল্যান্ডসের কৃষি মন্ত্রণালয়, নেদারল্যান্ডস এন্টারপ্রাইজ এজেন্সি, নেদারল্যান্ডস ফুড পার্টনারশিপ, ডাচ-গ্রিন-হাইজডেল্টা, লারিভ ইন্টারন্যাশনাল, স্টান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ।

কৃষিজাত পণ্য রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থানকারী নেদারল্যান্ডসের আয়তন বাংলাদেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের কম। ২০২১-এ কৃষিপণ্য ও খাদ্য রপ্তানি করে নেদারল্যান্ডস ১১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি আয় করেছে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশক: শাইখ সিরাজ
© ২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। দা এগ্রো নিউজ, ফিশ এক্সপার্ট লিমিটেডের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। ৫১/এ/৩ পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থাপথ, ঢাকা -১২০৫
ফোন: ০১৭১২-৭৪২২১৭
ইমেইল: info@agronewstoday.com, theagronewsbd@gmail.com