আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

পরিবেশ

দরকার টিআরএম, পাউবোর পছন্দ নদী খনন

টিআরএম বন্ধ ৬ বছর। এ বছর বৃষ্টিও বেশি। যশোর–সাতক্ষীরায় জলাবদ্ধ এলাকার পরিমাণ বেড়েছে দুই থেকে তিন গুণ।

বর্ষা বিদায় নিয়েছে। কিন্তু বর্ষার রেখে যাওয়া বিপদ থেকে এখনো মুক্ত হননি দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলের ছয়টি উপজেলা। সেখানকার প্রায় ১০ লাখ মানুষ এখনো পানিবন্দী। জলাবদ্ধতা ও জোয়ারের পানিতে তাদের বসতভিটা, ফসলের জমি—সব মিলিয়ে জীবনটাই যেন ভাসছে। প্রশ্ন হচ্ছে, উপকূলের ওই জনপদে মানুষ টিকতে পারবে, নাকি সর্বস্বান্ত হয়ে এলাকা ছাড়বে?

স্থানীয় ব্যক্তিদের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান, সরকারি সংস্থা পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশ, দেশের শীর্ষস্থানীয় পানি বিশেষজ্ঞদের মতামত এবং আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের গবেষণা বলছে, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধানের পথ হিসেবে টেকসই বাঁধ নির্মাণ এবং নদীতে অবাধ জোয়ার–ভাটার ব্যবস্থাকে (টিআরএম) কার্যকর পন্থা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু সরকার সে পথে হাঁটছে না, তারা জোর দিচ্ছে নদী খননের দিকে।

যশোরের অভয়নগরের ডুমুরতলা গ্রামের শিবপদ বিশ্বাস। তাঁর পৈতৃক বাড়ি আর ফসলের জমি পানির নিচে। তিনি বলছিলেন, টিআরএম (টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট) করায় ২০১২ সাল পর্যন্ত এখানে পানি ওঠেনি। পাশে থাকা মুক্তেশ্বরী নদীও গভীর হয়েছিল, পানি নেমে গিয়ে এলাকায় যাতায়াত, কৃষিকাজ ও ব্যবসা–বাণিজ্য বেড়েছিল। কিন্তু পাঁচ–ছয় বছর ধরে টিআরএম বন্ধ থাকায় এই এলাকার প্রায় ১০০ গ্রাম থেকে আর পানি নামছে না। তাঁর অভিযোগ, ‘সরকার শত শত কোটি টাকা শুধু নদীর মইধ্যে ঢালতেছে (নদী খনন), কিন্তু তাতে কোনো উপকার হচ্ছে না, উল্টো নদী আরও মরতেছে।’

খুলনার কয়রার বাঁধ ভেঙেছে সেই এপ্রিলে, কিন্তু এখনো তা মেরামত হয়নি। আর জলাবদ্ধতা দূর করার জন্য টিআরএম করতে হবে, এটাই সবচেয়ে সফল উপায়। সেটা তো সবাই বলে, কিন্তু সরকারের জলাবদ্ধতা দূর করার নতুন প্রকল্পে টিআরএম নেই। ভবদহ জলাবদ্ধতা দূর করতে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) যে ৫৫০ কোটি টাকার প্রকল্প নিয়েছে, তার বড় অংশজুড়ে রয়েছে শুধু নদী খনন আর নানা অবকাঠামো নির্মাণ। সাতক্ষীরা সদর, আশাশুনি আর তালার জন্য নেওয়া প্রকল্পেও টিআরএম নেই। যদিও সেখানে এর বাস্তবায়ন কতটা হবে, তা নিয়ে স্থানীয় ব্যক্তিদের সন্দেহ আছে।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আইনুন নিশাত প্রথম আলোকে বলেন, টিআরএম ছাড়া দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলের জলাবদ্ধতা দূর হবে না। একসময় ওই এলাকায় যে অষ্টমাসি বাঁধের মাধ্যমে পলি ও পানি ব্যবস্থাপনা করা হতো, তার বৈজ্ঞানিক ও পরিকল্পিত রূপ হচ্ছে এই টিআরএম। এটি না করে শুধু নদী খননের কাজ করলে খনন কোম্পানি ও ঠিকাদারদের লাভ হবে, কিন্তু এই জনপদের মানুষ জলাবদ্ধতা থেকে মুক্ত হবে না।বিজ্ঞাপন

জলাবদ্ধতা কেন

দেশের দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলের প্রাকৃতিক ও ভূতাত্তিক গঠনকে আমলে না নিয়ে সেখানকার নদীগুলোতে অবকাঠামো নির্মাণ করার ফলেই মূলত জলাবদ্ধতার সৃষ্টি। ষাটের দশকে সবুজ বিপ্লবের জন্য, অর্থাৎ জোয়ার–ভাটার জমিতে বাঁধ দিয়ে সেখানে ধান ফলাতে গিয়ে তৈরি করা হয় স্থায়ী বাঁধ। কিন্তু এখানকার নদ–নদীগুলো মূলত জোয়ার–ভাটা দ্বারা প্রভাবিত; অর্থাৎ সমুদ্রের মতো জোয়ারে পানি বাড়ে, ভাটায় কমে। স্থায়ী বাঁধ দেওয়ায় ওই জোয়ার–ভাটা থেকে নদীগুলো বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ফলে পানির সঙ্গে আসা পলি মূল ভূখণ্ডে বা বিলের মধ্যে প্রবেশ করতে পারে না। সেগুলো জমা হতে থাকে নদীর বুকে।

অন্যদিকে দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলের ভূমি দেশের অন্য এলাকাগুলো থেকে এমতেই নতুন। ফলে সেটি দ্রুত সংকুচিত হয়ে নিচের দিকে চলে যাচ্ছে। আর নদীর বুকে পলি জমা হওয়ায় এটি উঁচু হয়ে উঠছে। যে কারণে যশোরের মনিরামপুর, অভয়নগর, চৌগাছা, ঝিকরগাছা, কেশবপুর; খুলনার ডুমুরিয়া, পাইকগাছা, কয়রা এবং সাতক্ষীরা সদর, তালা, আশাশুনি ও শ্যামনগরের প্রায় ৩০ লাখ মানুষ পর্যায়ক্রমে জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে।

টিআরএম কীভাবে জলাবদ্ধতা দূর করে

আশির দশকে দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলের জলাবদ্ধতা দূর করতে স্থানীয় ব্যক্তিরা বিল ডাকাতিয়ায় বেড়িবাঁধ কেটে দেয়। ওই বাঁধ কেটে দেওয়ার পর জমে থাকা পানি বেরিয়ে যায়। প্রায় ৩০ হাজার হেক্টর আয়তনের দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ওই বিলের পাশের কৃষিজমি জলাবদ্ধতা থেকে মুক্ত হয়। একই সঙ্গে সোলমারি, হামকুড়া ও হরি নদীর নাব্যতা বেড়ে যায়। জমে থাকা পানি নামার সময় প্রাকৃতিক স্রোতের শক্তিতেই এর বুকে জমে থাকা পলি সরে যায়।

বিল ডাকাতিয়ার ওই অভিজ্ঞতা থেকে দেশ–বিদেশের গবেষকেরা জলাবদ্ধতা দূর করার জন্য কার্যকর উপায় হিসেবে বাঁধের নির্দিষ্ট কিছু এলাকা কেটে দিয়ে পানি ও পলি ঢুকতে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। এর ফলে বিলের মধ্যে পলি পড়ে জমি উঁচু হয়, জলাবদ্ধতা দূর হয় এবং নদীর গভীরতা বাড়তে থাকে। একই উপায়ে যশোরের চৌগাছা, ঝিকরগাছা, মনিরামপুর, কেশবপুর ও অভয়নগরের জলাবদ্ধতা দূর করা হয়।

২০০৭ সাল থেকে যশোর ও সাতক্ষীরার কপোতাক্ষ অববাহিকাতেও জলাবদ্ধতা শুরু হয়। সেখানেও বিল ভায়না, পাখিমারা বিল, বিল কেদারিয়াসহ বেশ কয়েকটি স্থানে টিআরএম শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এতে সফলতাও পাওয়া যায়। সাতক্ষীরার তালা ও আশাশুনি এবং খুলনার পাইকগাছার বড় অংশ জলাবদ্ধতা থেকে মুক্ত হয়।

দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলের জলাবদ্ধতা দূর করার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত বেসরকারি সংস্থা উত্তরণের পরিচালক শহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলের জলাবদ্ধতা দূর করার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হিসেবে টিআরএম বহুভাবে পরীক্ষিত। এর আগে যতবারই টিআরএম বন্ধ করা হয়েছে, জলাবদ্ধতা ততবারই বেড়েছে।

পানিসম্পদবিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিংয়ের (আইডব্লিউএম) হিসাবে পুরো দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলে এ পর্যন্ত প্রায় দেড় লাখ হেক্টর জমি টিআরএমের মাধ্যমে জলাবদ্ধতামুক্ত হয়েছে। একই সঙ্গে পলি পড়ে প্রায় এক লাখ হেক্টর জমি দুই থেকে তিন ফুট উঁচু হয়েছে। ওই অঞ্চলের মুক্তেশ্বরী, ভদ্রা, মরিচ্ছাপি, কপোতাক্ষ, ভৈরবসহ অন্তত আটটি নদীর বিভিন্ন অংশে গভীরতা বেড়েছে।

এ বছর জলাবদ্ধতা কেন বাড়ল

আগের দুই বছরের তুলনায় এ বছর (২০২০) দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলের জলাবদ্ধতা তুলনামূলক বেশি। অন্য বছরগুলোতে জুনে মনিরামপুর ও অভয়নগরের ৪০–৫০টি গ্রামে জলাবদ্ধ থাকে। এ বছর তা বেড়ে ১৫০টি গ্রাম হয়েছে। শুধু তা–ই নয়, সাতক্ষীরা সদর, আশাশুনি ও খুলনার পাইকগাছার বড় অংশজুড়ে গত চার মাস জলাবদ্ধতা ছিল। সম্প্রতি সাতক্ষীরার বেশির ভাগ এলাকা থেকে পানি নেমে গেলেও তা আগামী বছরের এপ্রিল–মে মাসের দিকে তা আবার শুরু হতে পারে বলে স্থানীয় ব্যক্তিদের আশঙ্কা।

স্থানীয় পানি বিশেষজ্ঞ ও বেসরকারি সংস্থাগুলো টিআরএম চালু না থাকাকে দায়ী করছেন। তবে একই সঙ্গে এ বছর স্বাভাবিকের চেয়ে বৃষ্টি বেশি হওয়া এবং ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে বিভিন্ন স্থানে বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করাকে দায়ী করা হয়েছে। টিআরএম চালু না থাকায় পানি যেমন একদিকে নামতে পারেনি, আবার বৃষ্টি বেশি হওয়ায় বেশি এলাকাজুড়ে তা জমে ছিল।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবে চলতি বছর সারা দেশে ৪৫ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। আর বরিশাল ও খুলনা বিভাগে বৃষ্টি হয়েছে স্বাভাবিকের চেয়ে ২০০ শতাংশ বেশি। গত অক্টোবরেই বরিশালে স্বাভাবিকের চেয়ে ১৩৯ ও খুলনায় ২৩ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। এই বৃষ্টির কারণেও এবার জলাবদ্ধতা বেশি হয়েছে।

এ ব্যাপারে পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা পুরো উপকূলীয় এলাকাকে সামগ্রিকভাবে রক্ষায় টেকসই বাঁধ নির্মাণ, নদী খনন ও টিআরএম—সবই করছি।’ কোথাও কোনো ঘাটতি হলে বা সমস্যা বাধলে তা শুধরে নিয়ে কাজ করা হবে বলে তিনি জানান।

পানি উন্নয়ন বোর্ড কী করছে

জলাবদ্ধতা দূর করতে ২০২০ সাল থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ড মোট দুটি প্রকল্পের কাজ শুরু করেছে। একটি সাতক্ষীরার জন্য ৫৬৫ কোটি টাকার
এবং যশোরের ভবদহ এলাকার জন্য ৪৩০ কোটি টাকার আরেকটি প্রকল্প নিয়েছে। এ ছাড়া ৬৬৫ কোটি টাকার অন্য একটি প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। এর মধ্যে কোনো প্রকল্পে টিআরএমকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। কিন্তু অন্য দুটিতে টিআরএম নেই।

ওই তিন প্রকল্পের নথি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, মূলত নদী–খাল খনন, বাঁধ নির্মাণ, জলকপাট নির্মাণ ও মেরামতেই বেশির ভাগ অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে। বিশেষ করে নদী খননে প্রকল্পের সবচেয়ে বেশি অর্থের বরাদ্দ রাখা হয়েছে।বিজ্ঞাপন

কী করা উচিত

সরকারের বদ্বীপ মহাপরিকল্পনাতেও বলা হয়েছে, দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলের জলাবদ্ধতা দূর করার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হচ্ছে টিআরএম। এটি বাস্তবায়িত হলে ওই অঞ্চলে জলাবদ্ধতা দূর হয়ে বিনিয়োগ বাড়বে। বর্তমানে সেখানে বছরে একটি ফসল হয়, পানি সরে গেলে কমপক্ষে দুটি ফসল করা যাবে।

বৈরী আবহাওয়া ও জলাবদ্ধতার কারণে সেখানে তেমন কোনো বিনিয়োগও নেই। বাগেরহাটের দিকে মোংলা বন্দরকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু শিল্পকারখানা গড়ে উঠলেও যশোর–সাতক্ষীরা প্রায় শিল্পশূন্য হয়ে পড়েছে। অথচ জলাবদ্ধতা না থাকায় যশোরের নোয়াপাড়া রীতিমতো শিল্প ও বাণিজ্যের বড় কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।

বেসরকারি সংস্থা উত্তরণ ও পানি কমিটি থেকে দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলের জলাবদ্ধতা পরিস্থিতি নিয়ে গত অক্টোবরে একটি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিংস প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। সেখানে জলাবদ্ধতা দূর করতে বিল কাপালিয়ায় টিআরএম বাস্তবায়ন করা, আমডাঙ্গা খাল সংস্কার করা হলে জলাবদ্ধতা দূর হবে। এ ছাড়া টেকা ও মুক্তেশ্বরী নদীর সঙ্গে হরি নদীর অবাধ সংযোগ স্থাপনের দাবি করা হয়েছে। একই সঙ্গে পোল্ডারের ভেতরের আবদ্ধ নদীগুলো উন্মুক্ত করে ভৈরব, কপোতাক্ষ ও বিল ডাকাতিয়ার সঙ্গে সংযোগ করে দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।

জানতে চাইলে ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক অনিল বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলকে বিরান হওয়া থেকে রক্ষা করতে হলে টেকসই বাঁধ ও টিআরএম বাস্তবায়ন করতে হবে। এটা না করে বড় বড় প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে, নদী খননের নামে অর্থ লুটপাটের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। জনগণের দাবি মেনে এবং জনগণকে সঙ্গে নিয়ে কাজ না করলে এই এলাকা জলাবদ্ধতামুক্ত এবং বিরান হওয়া থেকে রক্ষা পাবে না।

বিজ্ঞাপন
মন্তব্য করুন

অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন

Leave a Reply

পরিবেশ

ছাদ বাগানের জন্য কয়েকটি টিপস

ছাদ বাগানীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। টবে, ড্রামে গাছ লাগানো হয়। কেউ ফল, কেউবা সবজির গাছ লাগান। কেউ সফল হন। কেউ সফল হন না। ছোট ছোট কিছু ভুল বাগানীরা করে থাকেন। সে কারণে যত্ন নিলেও ফল আসে না। এখানে ছাদ বাগানীদের জন্য কিছু টিপস দেয়া হলো, যা মানলে সফলতা পাওয়া সহজ হতে পারে।

প্রথমেই মনে রাখতে হবে, টবে বা ড্রামে গাছ লাগালে তাকে খাবার দিতে হবে। প্রকৃতিতে বিদ্যমান গাছের মতো সে খাবার সংগ্রহ করতে পারে না। রোগ-বালাই হলো কিনা সেটাও বুঝে ব্যবস্থা নিতে হবে। ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে।

১. মাটির সাথে অবশ্যই কিছু কোকোপিট মেশাবেন। গাছের গোড়া স্যাতস্যাতে হতে দিবেন না। স্যাতস্যাতে হলে অসংখ্য রোগ হবে। মাটি ভেজা থাকবে তবে স্যাতস্যাতে না। কেকোপিট মেশালে পানি কম দিলেও হবে। কোকোপিট (নারকেলের ছোবলার গুড়া) পানি ধরে রাখে। অতি বৃষ্টি হলে গোড়ায় পানি জমতে দেয় না। হালকা হওয়ায় ছাদে ওজনের চাপ পড়ে না। এছাড়া কোকোপিটে কিছু পুষ্টি উপাদান আছে। যা গাছের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। কোকোপিটে চারা দ্রুত গজায়, বড় হয়। মাটির চেয়ে কোকোপিটে চারা ভালো হয়।

২. গাছের জন্য বিরিয়ানি হলো সরিষার খৈল-পচা পানি। মাটির হাড়িতে খৈল পচাতে হবে। কমপক্ষে ৫ দিন। ৭ দিন কিংবা বা ১৫ দিন হলে উত্তম। অল্প পানিতে পচিয়ে তার সাথে আরো পানি মিশিয়ে দিতে হবে। এটি গাছের জন্য অত্যন্ত উপকারী। একটু গন্ধ হয়, তাই অল্প একটু গুড় দিতে পারেন। ছাদে হাড়িতে পচালে বাসায় গন্ধ আসবে না। বৃষ্টির সময় খৈল-পচা পানি দেবেন না। পুকুরের নিচে থাকা পাক কাদা গাছের জন্য খুব উপকারী।

৩. আমরা জানি, মাটিতে অসংখ্য ক্ষতিকর ছত্রাক থাকে। যা গাছকে মেরে ফেলার জন্য যথেস্ট। তাই মাটি রেডি করার সময় কিছুটা বায়োডামা সলিট দিবেন। এটি উপকারী ছত্রাক। মাটিতে ক্ষতিকারক উপাদানগুলো মেরে ফেলে। আবার জৈব সারের কাজও করে। গাছের জন্য মাটি হবে ঝুরঝুরে, হালকা।

৪. যাই লাগান না কেন, ভালো জাতের বীজ কিনা নিশ্চিত হয়ে নেবেন। ভালো বীজে ভালো ফসল হবে। নতুবা যতই যত্ন নেন না কেন, সব পরিশ্রম বেলাশেষে জলে যাবে। বীজ থেকে নিজে চারা করা উত্তম। কারণ বাজার থেকে যে চারা কিনবেন সেটার জাত ভালো হবে সে নিশ্চয়তা কোথায়? ছত্রাকনাশক দিয়ে বীজ শোধন করে নেয়া উত্তম। পদ্ধতি হলো- ছত্রাকনাশক দেয়া পানিতে কিছুটা সময় বীজ ভিজিয়ে রাখতে হবে। ম্যানসার, মেটারিল দুটি ছত্রাকনাশক।

৫. গাছ বেশি তো ফলন বেশি- এটি ভুল ধারণা। অল্প জায়গায় বেশি গাছ লাগানো যাবে না। গাছ পাতলা করে লাগাতে হবে। বেশি লাগালে গাছ প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাবে না। একটি ফলের ক্রেটে মাত্র দুটি গাছ। একটি টবে একটি গাছ। ক্রেট বা টবে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।

৬. ছাদে মাচা দেয়া সমস্যা। কারণ ঘুঁটি থাকে না। এ জন্য ফলের ক্রেটের চারপাশে লাঠি বেঁধে সহজে মাচা দেয়া যায়। লতাপাতা জাতীয় গাছ লাগানোর পাত্র একটু গভীর হলে উত্তম। গাছের জন্য সবচেয়ে বেশি ভালো জৈব সার হলো পাতা-পচা সার, তারপর ভার্মি কম্পোস্ট, তারপর গোবর সার। পাতা-পচা সার সহজলভ্য নয়। দাম বেশি। কিন্তু ভার্মি কম্পোস্ট সহজলভ্য। মাটির সঙ্গে মিনিমাম ৪০% জৈব সার দেয়া উত্তম।
৭. নিম কীটনাশককে ক্ষতিকারক পোকা-মাকড় খুব অপছন্দ করে। এটি দিলে তারা বিরক্ত বোধ করে। গাছে বাসা বাঁধতে পারে না। প্রতি সাত দিনে একবার সব গাছের পাতায় নিম কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। মাসে একবার ইপসম সল্ট স্প্রে করে দেয়া উত্তম। একইভাবে মাসে একবার পানির সঙ্গে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড মিশিয়ে স্প্রে করা ভালো।

৮. ডাটা, পুইশাক, লালশাক, ধনেপাতা এসব লাগাতে পারেন। মাত্র ২৫ দিনে খেতে পারবেন। লালশাক লাগালে নেট দিয়ে ঘিরে দেবেন। শাকপাতা লাগালে দ্রুত আউটপুট পাবেন। যা আপনাকে প্রেরণা দেবে। পুইশাক গাছের পাতায় দাগ হলে পাতা কেটে দিন। অথবা ছত্রাকনাশক স্প্রে করেন। অথবা গাছ উঠিয়ে আবার লাগান। ইউরিয়া সার দিলে পুইশাক দ্রুত বাড়বে। শশা গাছের বৃদ্বির জন্য ডিএপি সার দিলে ভালো হবে। শশা গাছে ছাড়া ছাড়া ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হয়। খুব রোদ, গাছের গোড়ায় মালচিং করে দিয়ে উত্তম ফল মিলবে। মালচিং হলো গাছের গোড়ায় বিশেষ পলিথিন কিংবা শুকনো পাতা, খড় দিয়ে ঢেকে দেয়া।

৯. ফুল আসার পরে প্রানোফিক্স অথবা মিরাকুরান গাছের পাতায় শেষ বিকালে স্প্রে করবেন। বাসায় দুইটি গ্রুপের ছত্রাকনাশক রাখা ভালো। যেমন- ম্যানসার, মেটারিল। ১৫ দিনে একবার স্প্রে করবেন। এগরোমিন্ড গোল্ড অনুখাদ্য বা অন্য কোনো অনুখাদ্য বাসায় রাখতে হবে। মাসে কমপক্ষে একবার স্প্রে করবেন। অতিরিক্ত গরম, বৃষ্টি, খাদ্যের অভাব, গাছ রোগাক্রান্ত, আবহাওয়া দ্রুত আপডাউন করা ইত্যাদি কারণে ফুল ঝরে পড়তে পারে। আবার পরাগায়ন না হলে ঝরে পড়তে পারে। এ জন্য হাতের মাধ্যমে পরাগায়ন করতে হবে। পুরুষ ফুলের পরাগদণ্ড নারী ফুলে গর্ভে ঘষে দিতে হবে।

১০. ছাদ বাগানে গাছ মারা যাওয়ার অন্যতম কারণ পানি বেশি বা কম দেয়া। যতটুকু লাগে ঠিক ততটুকু পানি দিতে হবে। কোন গাছের কি চাহিদা, রোগ একটু স্টাডি করলে সহজে সফল হতে পারবেন।

১১. গাছের পাতার নিচে খেয়াল করবেন। বেগুন গাছের পোকা মারার জন্য সেক্স ফোরেমান ফাঁদ লাগাবেন। ডগা ছিদ্র বা ফল ছিদ্র হলে সাইপারমেত্রিন গ্রুপের কীটনাশক দিতে হবে। একটি বেগুন গাছ অনেক দিন ফল দেয়। ঢেড়স গাছ বেশি রোদ পড়ে এমন জায়গায় লাগাবেন। বেগুন, ঢেড়স, লালশাক, পুইশাক, ধনেপাতা, ডাটা শাক- এসব গাছের খুব যত্ন করতে হয় না।

১২. রসুন আর লবঙ্গ বেটে সেই পানি গাছে স্প্রে করলে পোকা কম আসবে। মরিচ গাছে নেপথলিন বেঁধে দিন, পোকা কম আসবে। পাতা কোকড়ালে ভার্মিটেক কিংবা এবোম কীটনাশক দিন। কোকড়ানো পাতা ফেলে দিন। মরিচ গাছে দশ দিন পর পর ডায়মেথট গ্রুপের (যেমন টাফগর) কীটনাশক দিলে উপকার হবে। সবকিছু করছেন, তারপরও কাজ হচ্ছে না। এক্ষেত্রে গাছের জায়গা বদল করেন, উঠিয়ে অন্যত্র লাগান।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

দৈনন্দিন

নিপাহ্‌ ভাইরাসঃ খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়

নিপাহ্‌ ভাইরাস খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়
নিপাহ্‌ ভাইরাস খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়
খেজুরের রস সংগ্রহের প্রক্রিয়া।

শীতকাল এলেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে খেজুরের রস খাওয়ার চল বেড়ে যায়। অনেকে গাছ থেকে খেজুরের কলসি নামিয়ে সরাসরি কাঁচা রস খেয়ে থাকেন।

আবার অনেকে এই রস চুলায় ফুটিয়ে সিরাপ, পায়েস বা ক্ষীর বানিয়ে খান। এছাড়া রসের তৈরি ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়, ভেলি গুড়, বালুয়া গুড়, মিছরি গুড়সহ নানা ধরণের পিঠার বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।

নিপাহ্‌ ভাইরাস আতঙ্ক

খেজুর আরব দেশের প্রচলিত ফল হলেও ওইসব দেশে খেজুর, মূলত ফল উৎপাদননির্ভর, যেখানে কিনা বাংলাদেশের খেজুর গাছ রস উৎপাদননির্ভর।

কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, বাংলাদেশে সাধারণত কার্তিক থেকে মাঘ অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ হয়ে থাকে।

দেশটির সবচেয়ে বেশি রস সংগ্রহ হয় যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে।

মূলত খেজুর গাছের ডালপালা পরিষ্কার করে, ডগার দিকের কাণ্ড চেঁছে তাতে একটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি চোঙ বসিয়ে দেয়া হয়। চোঙের শেষ প্রান্তে ঝুলিয়ে দেয়া হয় একটি মাটির হাড়ি বা কলসি।

সেই চোঙ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রস এসে জমা হতে থাকে মাটির হাড়ি বা কলসিতে। এভাবে একটি গাছ থেকে দৈনিক গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লিটার রস সংগ্রহ করা যায় বলে কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গিয়েছে।

কিন্তু গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে নিপাহ্‌ ভাইরাস আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

পরিবেশ

জেনে নিন এই মরসুমে কোন কোন ঔষধি উদ্ভিদের চাষ আপনার জন্য সেরা

দেশের বিভিন্ন রাজ্যেই বর্ষার (Monsoon 2021) প্রভাবে চলছে বৃষ্টিপাত। এসময় কৃষকেরা খারিফ শস্য (Kharif Crops) বপনে তৎপর হয়ে ওঠেন। এই খরিফ মরসুমে কৃষকভাইরা সাধারণত অঞ্চলভেদে ধান, অড়হর, সোয়াবিন সহ বিভিন্ন চাষে মনযোগ দিয়ে থাকেন ৷ তবে এসব ছাড়াও, ঔষধি গুন সমৃদ্ধ (Medicinal Crops) গাছ চাষে বর্ষায় যে কতটা লাভ হতে পারে সে সম্পর্কে অনেকেই হয়তো জানেন না৷

বিশেষ করে বর্ষাকালেই এমন বহু ঔষধি গুন সম্পন্ন গাছ রয়েছে যাদের চাষ হতে পারে লাভজনক৷

বর্ষাকালে কোন কোন ঔষধি উদ্ভিদের চাষ করা যেতে পারে অথবা এই চাষ কীভাবেই বা করা যাবে সে বিষয়ে সঠিক তথ্য না পাওয়ার কারণেই অনেকের কাছে বিষয়টি অধরা৷ চলুন এই প্রতিবেদনে এমনই কিছু গাছ নিয়ে আলোচনা করা যাক যা কৃষকদের জন্য হতে পারে লাভদায়ক৷ তবে সঠিক সময়ে, সঠিক রোপন, সেচ, কীটনাশক দেওয়ার প্রয়োজন এগুলিতে, না হলে এর ওপর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে৷

অশ্বগন্ধা –

বর্ষায় এর চাষ ভালো৷ জুন থেকে অগস্ট পর্যন্ত এর চাষ করতে পারেন৷ এর বিভিন্ন জাত রয়েছে৷ উন্নত মানের গাছের চাষে কৃষকের লাভের পরিমাণও বৃদ্ধি পেতে পারে৷ উল্লেখ্য, প্রতি হেক্টরে ৫ কিলোগ্রাম বীজ ব্যবস্থা করতে হবে৷ যদি কেউ ১ হেক্টর জমিতে অশ্বগন্ধার চাষ করতে চায় তাহলে তাকে প্রায় ৫০০ বর্গমিটারে নার্সারি তৈরি করতে হবে৷ প্রায় ১ সেন্টিমিটার গভীরে বীজ বপন করতে হবে৷

শতমূলী –

শীত বাদ দিয়ে বছরের যে কোনও সময়ে এই গাছের চাষ করতে পারেন৷ বর্ষাকালে এই চারা রোপন করলে সহজেই তা বেড়ে উঠতে থাকে৷ তবে বীজ বপনের আগে বীজ ১ দিন পর্যন্ত হালকা গরম জলে ভিজিয়ে রাখতে হয়৷

যষ্টিমধু –

জুলাই থেকে অগস্ট পর্যন্ত এর চাষ করা হয়৷ আর তাই জুন থেকেই এর প্রস্তুতি শুরু করে দেন কৃষকেরা৷ জলনিকাশি ব্যবস্থা উচ্চমানের হওয়া প্রয়োজন এই গাছ চাষের জন্য৷ মনে রাখতে হবে এর চাষের আগে জমিতে কমপক্ষে ১৫ টন গোবর সার দেওয়া প্রয়োজন, এরপরেই এটি চাষ করা উচিত৷

ঘৃতকুমারী –

এর ভালো উৎপাদনের জন্য জলনিকাশি ব্যবস্থা ঠিক রাখতে হবে৷ এই ধরনের ঔষধি গুনসম্পন্ন গাছ শীতকাল বাদ দিয়ে যে কোনও সময় চাষ করতে পারেন৷ বর্ষাকালে দূরত্ব রেখে বীজ বপন করতে হবে৷ কম সময়ের মধ্যেই ব্যবহারোপযোগী হয়ে ওঠে এগুলি৷

অগ্নিশিখা বা কলিহারি –

এটি চাষের জন্য কৃষকেরা জুন মাসেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন৷ জুলাইয়ে ভালো বৃষ্টিতে এর চাষ শুরু করা যেতে পারে৷ উল্লেখ্য, ১ হেক্টর জমির জন্য প্রায় ১০ ক্যুইন্টাল কন্দের প্রয়োজন৷ এটি চাষের আগেও জমিতে গোবর সার প্রয়োগ করে তা প্রস্তুত করে নিতে হবে৷

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

পরিবেশ

শিখে নিন টবে দারুচিনির চাষের কৌশল

পৃথিবীতে ভোজ্য মসলা যতরকম আছে তারমধ্যে দারুচিনি সবথেকে উল্লেখযোগ্য। এই প্রাচীনতম মসলা বহুদিন ধরে ওষধি হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে চলেছে। এছাড়াও খাবারে স্বাদ বাড়ানো থেকে শুরু করে, পানীয় এবং তরল মশলাদার খাবারে স্বাদ বাড়ানোর জন্যও এই দারচিনির ব্যবহার হয়। এলাচ, গোলমরিচ, লবঙ্গের সাথে সাথে দারুচিনির নামও মসলা হিসেবে একই পংক্তিতে উচ্চারিত হয়। বহু কৃষক দারুচিনির চাষ করে ভীষণভাবে উপকৃত হয়েছেন। বাজারে এই দারুচিনির চাহিদা প্রচুর পরিমানে থাকায়, এই চাষে ভালো লাভ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও সৌখিন মানুষেরাও ভালোবেসে দারুচিনির চাষ বাড়িতে করে থাকেন। দারুচিনি গাছের বাকল, ফুল, কুঁড়ি, পাতা, ফল, শেকড় সবকিছুই কাজে লেগে যায়। দারুচিনি গাছ বাড়িতে চাষ করতে গেলে ঘরে ছাদে দুই জায়গাতেই চাষ করা যায়।

মনে রাখতে হবে এই চাষ করতে গেলে উপযুক্ত পরিমানে রোদ দরকার। বাংলার জলবায়ুতে মূলত শীতকালে এই চাষ করা সবথেকে ভালো। জানুয়ারি মাসে দারুচিনি গাছে ফুল ফোটা আরম্ভ করে, এবং এই গাছের ফল পাকতে আরম্ভ করে জুলাইয়ে। সেইসময়ই ফল থেকে বীজ সংগ্রহ করে নিয়ে এসে বাগানে বা টবে রোপন করে দেওয়া উচিত।

প্রয়োজনীয় রোদ (Sunlight)

কড়া সূর্যালোক দারুচিনি জন্য প্রয়োজনীয়, তাই এটি পর্যাপ্ত রোদ পাওয়া যায় এমন জায়গায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দারুচিনি রোপন করতে গেলে রৌদ্রোজ্জ্বল স্থান যেমন জানালার ধারে, ব্যালকনি কিংবা ছাদের খালি স্থান ব্যবহার করতে হবে।

উপযুক্ত মাটি (Soil)

দারুচিনি চাষের জন্য ভাল মানের মাটি ব্যবহার করা আবশ্যক। বাগানের মাটি ব্যবহার না করাই ভালো, কেননা এতে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। অনে সময় আমরা আশেপাশ থেকে মাটি নিয়েই টব ভরে গাছ লাগানো হয়।  বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সংবেদনশীল গাছগুলোতে এই উপায় কার্যকরী হয় না। নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভাল এমন মাটি ব্যবহার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে উত্তম নিষ্কাশনযুক্ত বেলে দোআঁশ মাটি ব্যবহার করা সবথেকে উত্তম। জেনে রাখা ভালো দারুচিনি খরা একদমই সহ্য করতে পারে না। মাটির বিকল্প হিসেবে ১৫% ট্রাইকোকমপোস্টযুক্ত কোকোডাস্ট ব্যবহার করা যেতে পারে।

বাইরে চাষ করার জন্য এক মিটার (৩০ সেন্টিমিটার গভীর) পর্যন্ত গর্ত করে মাটি দিয়ে পূরণ করে নিতে হবে। ঘরের ভিতরে বা ছাদবাগানের দারুচিনি চাষের জন্য একটি বড় পাত্র প্রয়োজন হবে।

রোপন (Planting)

দারুচিনির বীজ সংগ্রহও করা যায় অথবা নার্সারি থেকে দারুচিনির গাছ কিনেও আনা যায়।

বাইরে চাষের ক্ষেত্রে

দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে ১ মিটার x ১ মিটার এবং ৩০ সেমি গভীরতায় খনন করে মাটি দিয়ে গর্তটি পূরণ করতে হবে।

ঘরের মধ্যে টবে রোপনের ক্ষেত্রে

নিচে গর্ত সহ বড় সিরামিক পাত্র (৬০ x ৫০ সেমি) ব্যবহার করতে হবে। পাত্রটি মাটি বা কোকোডাস্ট দিয়ে পূরণ করে নিতে হবে। ৩০ সেন্টিমিটার গভীরতা এবং ৩০ সেন্টিমিটার প্রস্থের একটি গর্ত তৈরি করতে একটি বাগান ট্রোয়েল ব্যবহার করে নেওয়া ভালো। বীজ ব্যবহার করলে  ১.৫ সেন্টিমিটার গভীর গর্ত তৈরি করে নেওয়া উচিত। এবার গাছটি গর্তের মধ্যে রেখে মাটি দিয়ে চাপা দিতে হবে। বীজ ব্যবহার করলে প্রতি ১.৫ সেমি গর্তে একটি করে বীজ পুঁততে হবে এবং মাটি দিয়ে বীজটি ঢেকে দিতে হবে।

মাটি সবসময় ভেজা রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণ জল দিতে হবে। দারুচিনি গাছ পাত্রে রোপন করার পর, টবের নিচের গর্ত থেকে জল বের না হওয়া পর্যন্ত জল দিতে হবে। টবের উপরের ৫ সেন্টিমিটার শুকিয়ে গেলেই আবার গাছটিকে জল দিতে হবে।

গাছের পরিচর্যা (Caring)

দারুচিনি গাছে নিয়মিত সার প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম বছর ৫০ গ্রাম টিএসপি, ৭৫ গ্রাম এমওপি ও ৫০ গ্রাম ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে। প্রতিবছর ২-৩ কেজি ট্রাইকোকম্পোস্ট ও সার প্রয়োগ শেষে একই হারে টিএসপি, এমওপি ও ইউরিয়া দিতে হবে।

দারুচিনি প্রথম ধরতে দুই থেকে তিন বছর সময় নেয় এবং তার পরে প্রতি দুই বছর পরপরই ফসল দিতে থাকে। দারুচিনি গাছ কম করে ১০-১৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। তাই একে নিয়মিত করে ছোট রাখতে হবে। পাঁচ বছর বয়সী দারুচিনি গাছ থেকে নিয়মিত দারুচিনি সংগ্রহের ডাল পাওয়া সম্ভব। দারুচিনি ব্যবহার করার জন্য যে শাখাগুলি কাটা হবে সেগুলি থেকে বাকল তুলে নিতে হবে, বাকলগুলি ব্যবহার করার আগে জলে ভালোভাবে ভিজিয়ে নেওয়া উচিত।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

আঙিনা কৃষি

টবে লাগান মিষ্টি তেঁতুল গাছ

পৃথিবীতে জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, হারিয়ে যাচ্ছে বহু প্রাণী ও উদ্ভিদ বৈচিত্র। চাষবাসের জমিরও সংকুলান ঘটছে সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে। গগনচুম্বী বাড়ি ঘিরে ফেলছে সমস্ত ফাঁকা জমিন। শখ করে মানুষ খোলা জায়গায় যে গাছ লাগবে অথবা ফল-ফুলের চারা সেই উপায়ও আর নেই। গাছ লাগানোর জন্য সামান্য জায়গাও ফাঁকা থাকছে না আর। তবে আমাদের করণীয় কী? বৃক্ষরোপন কি তবে অচিরেই বন্ধ হয়ে যাবে। বেঁচে থাকার জন্য তো গাছ লাগাতে হবেই। বাড়ির একটুকরো বারান্দা অথবা ব্যালকনিতেও সুন্দর ভাবে ইচ্ছা করলে গাছ লাগানো যায়। বাড়ির ছাদেও বানানো যায় সুন্দর বাগিচা। শহরের মানুষদের জন্য ছাদ বাগানের কোনও বিকল্পও নেই। বাড়ির মধ্যেকার ব্যালকনি অথবা ছাদের একটুকরো জমিতেও, ইচ্ছা করলে টবে চাষ করা যায় বিভিন্ন ফুলের ও ফলের গাছ।

শাকসবজি, পেয়ারা, লেবু প্রভৃতি দেশীয় গাছ টবে বাড়তে দেওয়া থেকে শুরু করে বর্তমানে বহু বিদেশী গাছের চারাও মানুষ ব্যালকনি অথবা ছাদে চাষ করছেন। তার মধ্যে থাই মিষ্টি তেঁতুল টবের চাষ পদ্ধতি হিসাবে অত্যন্ত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। প্রথমত মিষ্টি তেঁতুলের চাষ করতে গেলে, নার্সারি থেকে এই বিশেষ তেঁতুলের সঠিক বীজ নিয়ে আনতে হবে। তবে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কলম পাওয়া একটু দুষ্কর কাজ। বুঝে সঠিক চারা নিয়ে আসা বাগান মালিকের উপরেই বর্তায়।

থাই মিষ্টি তেঁতুলের ফুল থেকে ফল ধরতে প্রায় ৭ মাস সময় লাগে। বছরে দু’বার থাই মিষ্টি তেঁতুলের গাছে ফল ধরে। প্রথমবার বর্ষাকালে এবং দ্বিতীয়বার শীতকালে। এই গাছের পরিচর্যা আলাদা করে করার কোনও দরকার পড়ে না। গাছের যত্নআত্তি নিতে হয় ঠিকই, কিন্তু তা বলে, আলাদা করে কোনও বিশেষ যত্ন নিতে হয় না।

গাছ লাগানোর পদ্ধতি (Planting):

থাই মিষ্টি তেঁতুল চাষের জন্য আদর্শ মাটি হল, দো-আঁশ বা বেলে দো-আঁশ মাটি। এই দু’টি মৃত্তিকার মধ্যে যে কোনও একটি বেছে নিন। তারপর বেছে নেওয়া মাটির দুই ভাগ অংশের সাথে গোবর, ১০০ গ্রাম, টিএসপি ১০০ গ্রাম, পটাশ, ২৫০ গ্রাম, হাড়ের গুঁড়ো এবং ৫০ গ্রাম সরিষার খোল একসঙ্গে মিশিয়ে ২০ ইঞ্চি মাপের বড় টবে জল মিশিয়ে রেখে দিতে হবে। ১০ থেকে ১২ দিন পর টবের মাটি ভালো করে খুঁচিয়ে দিয়ে আরও ৪-৫ দিন রেখে দিতে হবে। ৪ থেকে ৫ দিন বাদে মিষ্টি তেঁতুলের একটি ভালো চারা ওই টবে লাগান।

পরিচর্যা(Caring):

চারা লাগানোর প্রথম কয়েক মাস তেমন যত্নের দরকার পড়বে না। অবশ্যই গাছে এই সময়টুকু পর্যাপ্ত জলের যোগান, এবং আগাছা পরিষ্কারের কাজ করতে হবে।  ছয় মাস চারা লাগানোর সময়সীমা ফুরোলেই ১ মাস বাদে বাদে গাছে সরষের খোল মিশ্রিত পচা জল দিতে হবে। মনে রাখতে  হবে খোল দেওয়ার আগে গাছের মাটি খুঁচিয়ে নিতে হবে।

রোগ দমন (Disease management):

সাধারণত থাই মিষ্টি তেঁতুল গাছে পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখা যায় না। কিন্তু বর্ষাকালে অনেক সময় তেঁতুল গাছে ছত্রাক হানা দেয়। এর ফলে তেঁতুল ফেটে যায়। এই অসুবিধার থেকে গাছকে বাঁচাতে হলে, বর্ষাকাল আসার আগেই ভালো ছত্রাকনাশক ওষুধ ১০ দিন অন্তর গাছে স্প্রে করে ছড়িয়ে দিতে হবে।

বাংলার বেজায় টক তেঁতুলের সঙ্গে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কোনও তুলনাই চলে না। অত্যন্ত মিষ্টি খেতে এই তেঁতুল থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়ায় চাষ প্রভূত পরিমাণে হলেও, আমাদের রাজ্য এই ফলের চাষ এখনও ততটা গতি পায়নি। কিন্তু আপনি আপনার ব্যালকনি অথবা ছাদে সহজেই এই থাই তেঁতুলের গাছ লাগাতে পারেন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশক: শাইখ সিরাজ
© ২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। দা এগ্রো নিউজ, ফিশ এক্সপার্ট লিমিটেডের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। ৫১/এ/৩ পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থাপথ, ঢাকা -১২০৫
ফোন: ০১৭১২-৭৪২২১৭
ইমেইল: info@agronewstoday.com, theagronewsbd@gmail.com