আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

পরিবেশ

পৃথিবীর প্রথম টিকা আর তিন ভারতীয় রানির রহস্যময় ছবি

১৭৯৯ সালে ব্রিটিশ চিকিৎসক এডওয়ার্ড জেনার আবিস্কার করেন গুটিবসন্তের টিকা
এই ছবি আঁকা হয়েছিল দেভাজাম্মানিকে ছবির মূল বিষয় করে -বলছেন ঐতিহাসিক নাইজেল চান্সেলার
এই ছবি আঁকা হয়েছিল দেভাজাম্মানিকে ছবির মূল বিষয় করে -বলছেন ঐতিহাসিক নাইজেল চান্সেলার

মাত্র ১২ বছর বয়সে দেভাজাম্মানি মহীশূরের রাজপরিবারে বৌ হয়ে আসেন ১৮০৫ সালে। তার সাথে বিয়ে হয়েছিল ১২ বছর বয়সী ওয়াদিয়ারের তৃতীয় রাজ বংশধর কৃষ্ণরাজার।

দক্ষিণ ভারতের নতুন রাজা হিসাবে তখন সিংহাসনে বসেছেন কিশোর কৃষ্ণরাজা।

আর তার স্ত্রী দেভাজাম্মানি নিজের অজান্তেই বিয়ের অল্প দিনের মধ্যে হয়ে উঠেছেন ছবির মডেল। গুটিবসন্তের নতুন টিকার প্রচারণার জন্য কাজে লাগানো হয়েছে তাকে। তাকে টিকার ‘মডেল’ করে একটি ছবি আঁকানোর উদ্যোগ নিয়েছে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি।

তখন গুটিবসন্তের চিকিৎসা খুবই নতুন। মাত্র ছয় বছর আগে ব্রিটিশ ডাক্তার এডওয়ার্ড জেনার এই রোগের চিকিৎসা আবিষ্কার করেছেন।

কিন্তু তার চিকিৎসা নিয়ে ভারতে তখন তৈরি হয়েছে রীতিমত সন্দেহ আর বিরোধিতা। এর একটা বড় কারণ, তখন উনবিংশ শতাব্দীতে উপমহাদেশে ব্রিটিশরা তাদের শাসনক্ষমতা কায়েম করতে শুরু করেছে।

কিন্তু ব্রিটিশরা তখন ভারতীয়দের গুটিবসন্তের টিকা দিতে মরীয়া। তারা বিশাল অর্থব্যয়ে ভারতে বিরাট টিকাদান কর্মসূচি নিয়েছিল। তার সাফল্য কোনভাবে বাধাগ্রস্ত হোক তা তারা চায় না।

ভারতের মত বিশাল জনসংখ্যার দেশে “অসংখ্য জীবন” বাঁচানোর যুক্তি দিয়ে তারা এই ব্যয়বরাদ্দ পেয়েছিল, তাদের যুক্তি ছিল ভারতের বিশাল জনসংখ্যা ঔপনিবেশিক শক্তির জন্য “বড় সম্পদ”।

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি রাজনীতি, ক্ষমতা আর যুক্তি খুবই সুদক্ষভাবে চতুরতার সাথে কাজে লাগিয়ে পৃথিবীর প্রথম টিকাদান কর্মসূচি চালু করতে সক্ষম হয় তাদের সবচেয়ে বড় উপনিবেশ ভারতে। এতে জড়িত হন ব্রিটিশ চিকিৎসকরা, ভারতীয় টিকাদানকারীরা, প্রকল্পে যুক্ত বিভিন্ন কোম্পানির মালিক এবং ভারতে ব্রিটিশদের বন্ধু রাজারাজড়ারা।

ওয়াদিয়ার রাজারা তখন ব্রিটিশদের প্রতি খুবই কৃতজ্ঞ, কারণ তিরিশ বছরের বেশি নির্বাসিত থাকার পর ওয়াদিরাররা আবার মহীশূরের রাজ সিংহাসন ফিরে পেয়েছেন ব্রিটিশদের সহায়তায়।

রহস্যময় ছবির নারীরা

কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাসের অধ্যাপক ড. নাইজেল চান্সেলার বলছেন ১৮০৫ সালের এই ছবি ভারতীয় এক রানির ব্রিটিশদের টিকাদান কর্মসূচির প্রচারণায় জড়িয়ে পড়ার রেকর্ড তো বটেই, পাশাপাশি সেসময় কীভাবে গুটিবসন্তের টিকা দেবার কাজ শুরু হয়েছিল তা জানার ক্ষেত্রে এই ছবির একটা বিশাল ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে।

এই ছবি আঁকা হয়েছিল দেভাজাম্মানিকে ছবির মূল বিষয় করে -বলছেন ঐতিহাসিক নাইজেল চান্সেলার
এই ছবি আঁকা হয়েছিল দেভাজাম্মানিকে ছবির মূল বিষয় করে -বলছেন ঐতিহাসিক নাইজেল চান্সেলার

তেল রংয়ে আঁকা এই ছবি যখন ২০০৭ সালে নীলামঘর সদাবিতে বিক্রি হয়, তখন ধারণা করা হয়েছিল এটা ভারতীয় তিন নতর্কীর ছবি। পরে ড. চান্সেলার তার গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণ করেন এটি ওয়াদিয়ারের রানি দেভাজাম্মানির গুটিবসন্তের টিকা প্রচারণার ছবি।

ড. চান্সেলার বলেন ছবির একদম ডানে দাঁড়িয়ে কনিষ্ঠ রানি দেভাজাম্মানি তার বাম হাতে যেখানে টিকা দেয়া হয়েছে সেদিকে ইঙ্গিত করছেন।

ছবির একদম বামে যে নারী, ড. চান্সেলারের ধারণা তিনি ছিলেন ওয়াদিয়ারের রাজার প্রথম স্ত্রী। তার নামও ছিল দেভাজাম্মানি। প্রথম স্ত্রীর নাকের নিচে এবং ঠোঁটের চারপাশে হালকা হয়ে যাওয়া চামড়ার রং থেকে বোঝা যায় তার ওপর গুটিবসন্তের প্রতিষেধক পরীক্ষা করা হয়েছিল।

তিনি বলছেন, সেসময় এই মারণব্যাধি প্রতিরোধের একটা চালু প্রথা ছিল এরকম – গুটিবসন্ত থেকে সেরে ওঠা রোগীর গুটি থেকে পুঁজ সংগ্রহ করা হতো। তারপর সেই পুঁজ শুকিয়ে, গুঁড়ো করে সেই কণাগুলো সুস্থ মানুষকে নাক দিয়ে টানতে বলা হতো। এতে সুস্থ মানুষ হালকাভাবে রোগাক্রান্ত হতো। এটা ছিল নিয়ন্ত্রিতভাবে সংক্রমণ ঘটিয়ে রোগ ঠেকানোর চিকিৎসা। প্রথম নারীর ঠোঁটের চারপাশে তারই চিহ্ণ।

১৭৯৯ সালে ব্রিটিশ চিকিৎসক এডওয়ার্ড জেনার আবিস্কার করেন গুটিবসন্তের টিকা
১৭৯৯ সালে ব্রিটিশ চিকিৎসক এডওয়ার্ড জেনার আবিস্কার করেন গুটিবসন্তের টিকা

তথ্যপ্রমাণ

ড. চান্সেলার তার এই তত্ত্বের সমর্থনে ২০০১ সালে প্রথম প্রকাশিত একটি নিবন্ধেরও উল্লেখ করেছেন, যাতে প্রতিষেধকের এই প্রথার উল্লেখ আছে।

এছাড়াও আঁকা এই ছবির তারিখের সাথে ওয়াদিয়ারের রাজার বিয়ের তারিখের সামঞ্জস্য রয়েছে। রাজপরিবারের দলিলেও নথিভুক্ত আছে, দেভাজাম্মানির টিকা নেবার ওই ছবি ভারতীয়দের কতটা গভীরভাবে উদ্বুদ্ধ করেছিল গুটিবসন্তের টিকা নিতে। ১৮০৬ সালের জুলাই থেকে মানুষ টিকা নিতে এগিয়ে আসে।

মহীশূরের ইতিহাস বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ড. চান্সেলার বলছেন, ছবিতে রানিদের যেধরনের পোশাক আশাক, ও গহনাগাটি দেখা যাচ্ছে তা সেসময় ওয়াদিয়ারের রানিদেরই বিশেষত্ব ছিল।

আর এই ছবির শিল্পী টমাস হিকি যদিও আগেও ওয়াদিয়ারের রাজপরিবারের সদস্যদের ছবি এঁকেছেন, কিন্তু সেসময় রাজপরিবারের নারী সদস্যরা সচরাচর ছবির জন্য বিদেশীদের সামনে পোজ দিতেন না। তাই এই ছবি যে বিশেষ কারণে আঁকানো হয়েছিল তা স্পষ্ট।

ওয়াদিয়ারের রাজপরিবার ব্রিটিশদের প্রতি তখন গভীরভাবে কৃতজ্ঞ। ব্রিটিশরা তাদের বড় শত্রু মহীশূরের শাসক টিপু সুলতানকে পরাজিত করে সিংহাসনে বসিয়েছিল ওয়াদিয়ারের রাজাকে। রাজপরিবার তাই তাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে তখন একপায়ে খাড়া ছিল।

তখন ভারতে যেসব ব্রিটিশ থাকতেন, তাদের গুটিবসন্তের সংক্রমণ থেকে বাঁচাতে ব্রিটিশরা সেখানে টিকাদান কর্মসূচি চালু করতে মরীয়া হয়ে উঠেছিল বলে লিখেছেন ঐতিহাসিক মাইকেল বেনেট তার বই ওয়ার এগেনস্ট স্মলপক্সে।

ভারতে তখন গুটিবসন্তের সংক্রমণ খুবই বেশি ছিল এবং মৃত্যুহারও ছিল খুব বেশি। রোগের উপসর্গ ছিল জ্বর, গা ব্যথা এবং মুখ ও শরীরে গুটিগুলো যখন ফেটে যেতো তখন অসম্ভব যন্ত্রণা। যারা বেঁচে যেত তাদের সারা মুখ ও শরীরে থেকে যেত ভয়ানক ক্ষতচিহ্ণ- অনেকের চেহারা ক্ষতে এতটাই বদলে যেত যে তার মানসিক যন্ত্রণাও ছিল প্রবল।

কয়েক শতাব্দী ধরে এই রোগ থেকে বাঁচার জন্য একটাই পথ ব্যবহৃত হতো- রোগীর পুঁজ শুকিয়ে, পাউডার বানিয়ে তা নাক দিয়ে টেনে অল্প মাত্রায় রোগজীবাণু শরীরে ঢোকানো। এটা করা হতো হিন্দু পূজার অংশ হিসাবে। হিন্দুরা বসন্ত রোগ সংহারের দেবী হিসাবে শীতলা দেবীর পূজা করতো। শীতলাকে তুষ্ট করে দেবীর প্রসাদ প্রার্থনা করতো এবং ব্রাহ্মণ পুরোহিতরা ওই রোগ জীবাণু সুস্থ মানুষের নাক দিয়ে ঢোকানোর কাজ করতেন।

হিন্দুরা গুটিবসন্ত রোগ বিনাশ করার জন্য দেবী শীতলার পূজা করত।
হিন্দুরা গুটিবসন্ত রোগ বিনাশ করার জন্য দেবী শীতলার পূজা করত।

গরুর বসন্ত দিয়ে টিকা

গুটিবসন্তের প্রতিষেধক টিকা তৈরি হয়েছিল গরুর বসন্ত রোগের জীবাণু দিয়ে। মানুষ পশুর শরীরের রোগজীবাণু নিজের শরীরে নিতে চায়নি। আর যেসব ব্রাহ্মণ বসন্তের রোগজীবাণু সুস্থ মানুষের শরীরের ঢোকাতো তারাও ড. জেনারের টিকার বিরোধী ছিলেন কারণ তারা বুঝেছিলেন এতে তাদের রুজিরোজগার হুমকির মুখে পড়বে।

“উদ্বেগের সবচেয়ে বড় জায়গাটা ছিল গরুর দেহের রোগজীবাণু মানুষের শরীরে ঢোকানো,” বলছেন অধ্যাপক বেনেট।

আরেকটা বড় সমস্যা ছিল টিকাদান পদ্ধতি নিয়ে। এই টিকা সবচেয়ে কার্যকরভাবে দেবার পদ্ধতি ছিল একজনের শরীর থেকে জীবাণু নিয়ে আরেকজনের শরীরে ঢোকানো। অর্থাৎ একজনের বাহুতে প্রথম এই টিকা দেয়া হবে। এর এক সপ্তাহ পর যখন সেখানে গরুর গুটিবসন্তে পুঁজ তৈরি হবে, তখন ডাক্তার ওই গুটি কেটে পুঁজ সংগ্রহ করে আরেকজনের শরীরে সেটা স্থানান্তর করবেন। এটাও মানুষের জন্য গভীর উদ্বেগ তৈরি করেছিল।

গরুর থেকে জীবাণু নিয়ে গুটি বসন্তের টিকা দেবার জন্য উনিশ শতকে যেসব সরঞ্জাম ব্যবহার করা হতো
গরুর থেকে জীবাণু নিয়ে গুটি বসন্তের টিকা দেবার জন্য উনিশ শতকে যেসব সরঞ্জাম ব্যবহার করা হতো

এই পদ্ধতিতে বিভিন্ন ধর্ম, বর্ণ, ও জাতপাতের নারী পুরুষ নির্বিশেষে একজনের শরীর থেকে আরেকজনের শরীরে জীবাণু ঢোকানোর ব্যাপারটা হিন্দুরা মেনে নিতে পারেনি। তারা মনে করেছিল এতে হিন্দুদের পবিত্রতা নষ্ট হবে। তাই ওয়াদিয়ারের রানি যখন এই টিকা নিলেন, তখন হিন্দু সম্প্রদায় আশ্বস্ত হয়েছিল এই ভেবে যে এতে হিন্দু রাজপরিবারের রক্ত যদি কলুষিত না হয়, আমারও তাহলে ভয়ের কারণ থাকবে না।

ধারণা করা হয়, ওয়াদিয়ারের রানিকে প্রথম যে গুটিবসন্তের টিকা দেয়া হয়েছিল তা শুরু হয়েছিল ভারতে কর্মরত এক ব্রিটিশ নারীর তিন বছরের কন্যা অ্যানা ডাস্টহল-এর শরীর থেকে নেয়া গুটিবসন্তের জীবাণু দিয়ে।

১৮০০ সালের বসন্তকালে ব্রিটেন থেকে জাহাজে করে গুটিবসন্তের পুঁজ প্রথম পাঠানো হয় ভারতে। জাহাজে ওই জীবাণু সক্রিয় রাখতে পুরো যাত্রাপথে একজনের বাহু থেকে আরেকজনের বাহুতে তা প্রবেশ করানো হয়।

কিন্তু ভারতে পৌঁছনর পর ওই মানব চেইন-এ ছেদ পড়ে কারণ ভারতে তখন কেউ টিকা নিতে রাজি হয়নি।

এরপর ভিন্ন উপায়ে টিকা পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হয়। কাঁচের আধারে সক্রিয় জীবাণু শুষ্ক অবস্থায় পাঠানো হয় ভিয়েনা থেকে বাগদাদে ১৮০২ সালের মার্চ মাসে। এরপর ওই জীবাণু টিকা হিসাবে দেয়া হয় বাগদাদে আর্মেনীয় এক শিশুকে। এরপর ওই শিশুর বাহুতে পেকে ওঠা গুটি থেকে পুঁজ নিয়ে যাওয়া হয় ইরাকের বাসরায়। সেখান থেকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একজন চিকিৎসক গুটি বসন্তের পুঁজ পাঠান ভারতের বম্বেতে (বর্তমান মুম্বাই)।

উনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে ইউরোপেও গুটিবসন্তের টিকা নিয়ে ছিল বিরোধিতা
উনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে ইউরোপেও গুটিবসন্তের টিকা নিয়ে ছিল বিরোধিতা

১৮০২ সালের ১৪ই জুন ভারতে গুটিবসন্তের টিকা প্রথম সফলভাবে দেয়া হয় অ্যানা ডাস্টহল নামে এক শিশুকে। তার সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায় না। যে ডাক্তার তাকে টিকা দিয়েছিলেন তার নোটবইতে শুধু লেখা ছিল অ্যানা ডাস্টহল “খুবই ঠাণ্ডা মেজাজের” মেয়ে। তার বাবা ছিলেন ইউরোপীয়ান, কিন্তু মা কোন্ দেশের তা জানা যায় না।

অধ্যাপক বেনেট বলছেন, “আমরা জানি, ভারতীয় উপমহাদেশে গুটিবসন্তের যত টিকা দেয়া হয়েছে তার সবগুলোর উৎস ছিল অ্যানার শরীর।”

অ্যানাকে টিকা দেবার পরের সপ্তাহে, তার পেকে ওঠা গুটির পুঁজ থেকে বম্বের আরও পাঁচজন শিশুকে টিকা দেয়া হয়। সেখান থেকে ওই টিকার জীবাণু বাহু থেকে বাহুতে যায় ভারতের বিভিন্ন শহরে যেখানে ব্রিটিশরা কর্মরত ছিলেন সেখানে। যেমন হায়দরাবাদ, কোচিন, তেল্লিচেরি, চিঙ্গলপুত, মাদ্রাজ এবং মহীশূরের রাজপরিবারে।

টিকাদান চেইনে কারা ছিলেন, অর্থাৎ কার বাহু থেকে কার বাহুতে বসন্তের টিকা গিয়ে পৌঁছেছে তার রেকর্ড কোথাও রাখা নেই। তবে টিকার জীবাণু বাঁচিয়ে রাখতে মাদ্রাজে “মিশ্র জাতের” তিনজন শিশুর শরীরে জীবাণু ঢোকানোর বিষয় এবং কলকাতায় এই টিকা নিয়ে যাবার সময় তা জীবিত রাখতে টিকার বাহক হিসেবে মালয় এক কিশোরকে টিকা দেবার বিষয় নথিভুক্ত রয়েছে।

কিশোরী রানি দেভাজাম্মানিকে যখন এই টিকা দেয়া হয় তখন অন্য কারো শরীর থেকে নেয়া পুঁজ তার বাহুতে ঢোকানো হয়েছিল, না কী শুকানো অবস্থায় রাখা জীবাণু তাকে ইনজেক্ট করা হয়েছিল তা জানা যায় না। তবে ড. চান্সেলার বলছেন, মহীশূরের রাজপরিবারে একমাত্র তাকেই টিকা দেয়া হয়েছিল বলে জানা যায়।

১৭৯৯ সালে ব্রিটিশ মহীশূর যুদ্ধে টিপু সুলতান পরাজিত হবার পর ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশরা দ্রুত পরাক্রমশালী হয়ে উঠতে শুরু করে
১৭৯৯ সালে ব্রিটিশ মহীশূর যুদ্ধে টিপু সুলতান পরাজিত হবার পর ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশরা দ্রুত পরাক্রমশালী হয়ে উঠতে শুরু করে

মহীশূরের রাজার মাতামহ লাকশ্মী আম্মানির স্বামী গুটিবসন্তে মারা গিয়েছিলেন। কেম্ব্রিজের ইতিহাসবিদ ড. চান্সেলার মনে করেন টমাস হিকির আঁকা ছবিতে যে তিনজন নারী আছেন তাতে মাঝেরজন হলেন লাকশ্মী আম্মানি।

তার মতে, ওই ছবিতে রাজ মাতামহের উপস্থিতিও তাৎপর্যপূর্ণ এই কারণে যে, গুটিবসন্তের টিকা যে নিরাপদ এবং তা নিলে ভয়ের কারণ নেই, জনসাধারণকে সেই বার্তা দিতেই ছবিতে ওয়াদিয়ার রাজপরিবারের মাতামহকেও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি হাজির করেছিল সফল প্রচারের কৌশল হিসাবে।

এই ছবির কাজ সম্ভব হয়েছিল রাজপরিবারের শীর্ষপর্যায়ের এই নারীর উপস্থিতির কারণে। রাজা তখন নাবালক, তার আপত্তির কোন সুযোগ ছিল না, আর দুই রানিরও মাতামহের নির্দেশ অমান্য করার প্রশ্নই ছিল না।

অধ্যাপক বেনেট বলছেন ভারতের মানুষ ক্রমশ বুঝতে পেরেছিল টিকার উপকারিতা। এবং ঐ ছবির মাধ্যমে প্রচার চালিয়ে ১৮০৭ সাল নাগাদ ভারতে দশ লাখ মানুষকে গুটিবসন্তের টিকা দেয়া সম্ভব হয়েছিল।

আর কালের চক্রে একসময় হারিয়ে যাওয়া এই ছবি উদ্ধারের পর এই তিন রহস্যময়ী নারীকে এবং পৃথিবীতে প্রথম প্রতিষেধক টিকাদানের ইতিহাসে এই ছবির মূল্য যে কতটা তা উদঘাটন করেছিলেন ঐতিহাসিক ড. নাইজেল চান্সেলার।

সফল টিকাদানের কারণে বিশ্বে গুটিবসন্ত নির্মূল সম্ভব হয়েছে।

বিজ্ঞাপন
মন্তব্য করুন

অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন

Leave a Reply

পরিবেশ

ছাদ বাগানের জন্য কয়েকটি টিপস

ছাদ বাগানীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। টবে, ড্রামে গাছ লাগানো হয়। কেউ ফল, কেউবা সবজির গাছ লাগান। কেউ সফল হন। কেউ সফল হন না। ছোট ছোট কিছু ভুল বাগানীরা করে থাকেন। সে কারণে যত্ন নিলেও ফল আসে না। এখানে ছাদ বাগানীদের জন্য কিছু টিপস দেয়া হলো, যা মানলে সফলতা পাওয়া সহজ হতে পারে।

প্রথমেই মনে রাখতে হবে, টবে বা ড্রামে গাছ লাগালে তাকে খাবার দিতে হবে। প্রকৃতিতে বিদ্যমান গাছের মতো সে খাবার সংগ্রহ করতে পারে না। রোগ-বালাই হলো কিনা সেটাও বুঝে ব্যবস্থা নিতে হবে। ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে।

১. মাটির সাথে অবশ্যই কিছু কোকোপিট মেশাবেন। গাছের গোড়া স্যাতস্যাতে হতে দিবেন না। স্যাতস্যাতে হলে অসংখ্য রোগ হবে। মাটি ভেজা থাকবে তবে স্যাতস্যাতে না। কেকোপিট মেশালে পানি কম দিলেও হবে। কোকোপিট (নারকেলের ছোবলার গুড়া) পানি ধরে রাখে। অতি বৃষ্টি হলে গোড়ায় পানি জমতে দেয় না। হালকা হওয়ায় ছাদে ওজনের চাপ পড়ে না। এছাড়া কোকোপিটে কিছু পুষ্টি উপাদান আছে। যা গাছের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। কোকোপিটে চারা দ্রুত গজায়, বড় হয়। মাটির চেয়ে কোকোপিটে চারা ভালো হয়।

২. গাছের জন্য বিরিয়ানি হলো সরিষার খৈল-পচা পানি। মাটির হাড়িতে খৈল পচাতে হবে। কমপক্ষে ৫ দিন। ৭ দিন কিংবা বা ১৫ দিন হলে উত্তম। অল্প পানিতে পচিয়ে তার সাথে আরো পানি মিশিয়ে দিতে হবে। এটি গাছের জন্য অত্যন্ত উপকারী। একটু গন্ধ হয়, তাই অল্প একটু গুড় দিতে পারেন। ছাদে হাড়িতে পচালে বাসায় গন্ধ আসবে না। বৃষ্টির সময় খৈল-পচা পানি দেবেন না। পুকুরের নিচে থাকা পাক কাদা গাছের জন্য খুব উপকারী।

৩. আমরা জানি, মাটিতে অসংখ্য ক্ষতিকর ছত্রাক থাকে। যা গাছকে মেরে ফেলার জন্য যথেস্ট। তাই মাটি রেডি করার সময় কিছুটা বায়োডামা সলিট দিবেন। এটি উপকারী ছত্রাক। মাটিতে ক্ষতিকারক উপাদানগুলো মেরে ফেলে। আবার জৈব সারের কাজও করে। গাছের জন্য মাটি হবে ঝুরঝুরে, হালকা।

৪. যাই লাগান না কেন, ভালো জাতের বীজ কিনা নিশ্চিত হয়ে নেবেন। ভালো বীজে ভালো ফসল হবে। নতুবা যতই যত্ন নেন না কেন, সব পরিশ্রম বেলাশেষে জলে যাবে। বীজ থেকে নিজে চারা করা উত্তম। কারণ বাজার থেকে যে চারা কিনবেন সেটার জাত ভালো হবে সে নিশ্চয়তা কোথায়? ছত্রাকনাশক দিয়ে বীজ শোধন করে নেয়া উত্তম। পদ্ধতি হলো- ছত্রাকনাশক দেয়া পানিতে কিছুটা সময় বীজ ভিজিয়ে রাখতে হবে। ম্যানসার, মেটারিল দুটি ছত্রাকনাশক।

৫. গাছ বেশি তো ফলন বেশি- এটি ভুল ধারণা। অল্প জায়গায় বেশি গাছ লাগানো যাবে না। গাছ পাতলা করে লাগাতে হবে। বেশি লাগালে গাছ প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাবে না। একটি ফলের ক্রেটে মাত্র দুটি গাছ। একটি টবে একটি গাছ। ক্রেট বা টবে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।

৬. ছাদে মাচা দেয়া সমস্যা। কারণ ঘুঁটি থাকে না। এ জন্য ফলের ক্রেটের চারপাশে লাঠি বেঁধে সহজে মাচা দেয়া যায়। লতাপাতা জাতীয় গাছ লাগানোর পাত্র একটু গভীর হলে উত্তম। গাছের জন্য সবচেয়ে বেশি ভালো জৈব সার হলো পাতা-পচা সার, তারপর ভার্মি কম্পোস্ট, তারপর গোবর সার। পাতা-পচা সার সহজলভ্য নয়। দাম বেশি। কিন্তু ভার্মি কম্পোস্ট সহজলভ্য। মাটির সঙ্গে মিনিমাম ৪০% জৈব সার দেয়া উত্তম।
৭. নিম কীটনাশককে ক্ষতিকারক পোকা-মাকড় খুব অপছন্দ করে। এটি দিলে তারা বিরক্ত বোধ করে। গাছে বাসা বাঁধতে পারে না। প্রতি সাত দিনে একবার সব গাছের পাতায় নিম কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। মাসে একবার ইপসম সল্ট স্প্রে করে দেয়া উত্তম। একইভাবে মাসে একবার পানির সঙ্গে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড মিশিয়ে স্প্রে করা ভালো।

৮. ডাটা, পুইশাক, লালশাক, ধনেপাতা এসব লাগাতে পারেন। মাত্র ২৫ দিনে খেতে পারবেন। লালশাক লাগালে নেট দিয়ে ঘিরে দেবেন। শাকপাতা লাগালে দ্রুত আউটপুট পাবেন। যা আপনাকে প্রেরণা দেবে। পুইশাক গাছের পাতায় দাগ হলে পাতা কেটে দিন। অথবা ছত্রাকনাশক স্প্রে করেন। অথবা গাছ উঠিয়ে আবার লাগান। ইউরিয়া সার দিলে পুইশাক দ্রুত বাড়বে। শশা গাছের বৃদ্বির জন্য ডিএপি সার দিলে ভালো হবে। শশা গাছে ছাড়া ছাড়া ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হয়। খুব রোদ, গাছের গোড়ায় মালচিং করে দিয়ে উত্তম ফল মিলবে। মালচিং হলো গাছের গোড়ায় বিশেষ পলিথিন কিংবা শুকনো পাতা, খড় দিয়ে ঢেকে দেয়া।

৯. ফুল আসার পরে প্রানোফিক্স অথবা মিরাকুরান গাছের পাতায় শেষ বিকালে স্প্রে করবেন। বাসায় দুইটি গ্রুপের ছত্রাকনাশক রাখা ভালো। যেমন- ম্যানসার, মেটারিল। ১৫ দিনে একবার স্প্রে করবেন। এগরোমিন্ড গোল্ড অনুখাদ্য বা অন্য কোনো অনুখাদ্য বাসায় রাখতে হবে। মাসে কমপক্ষে একবার স্প্রে করবেন। অতিরিক্ত গরম, বৃষ্টি, খাদ্যের অভাব, গাছ রোগাক্রান্ত, আবহাওয়া দ্রুত আপডাউন করা ইত্যাদি কারণে ফুল ঝরে পড়তে পারে। আবার পরাগায়ন না হলে ঝরে পড়তে পারে। এ জন্য হাতের মাধ্যমে পরাগায়ন করতে হবে। পুরুষ ফুলের পরাগদণ্ড নারী ফুলে গর্ভে ঘষে দিতে হবে।

১০. ছাদ বাগানে গাছ মারা যাওয়ার অন্যতম কারণ পানি বেশি বা কম দেয়া। যতটুকু লাগে ঠিক ততটুকু পানি দিতে হবে। কোন গাছের কি চাহিদা, রোগ একটু স্টাডি করলে সহজে সফল হতে পারবেন।

১১. গাছের পাতার নিচে খেয়াল করবেন। বেগুন গাছের পোকা মারার জন্য সেক্স ফোরেমান ফাঁদ লাগাবেন। ডগা ছিদ্র বা ফল ছিদ্র হলে সাইপারমেত্রিন গ্রুপের কীটনাশক দিতে হবে। একটি বেগুন গাছ অনেক দিন ফল দেয়। ঢেড়স গাছ বেশি রোদ পড়ে এমন জায়গায় লাগাবেন। বেগুন, ঢেড়স, লালশাক, পুইশাক, ধনেপাতা, ডাটা শাক- এসব গাছের খুব যত্ন করতে হয় না।

১২. রসুন আর লবঙ্গ বেটে সেই পানি গাছে স্প্রে করলে পোকা কম আসবে। মরিচ গাছে নেপথলিন বেঁধে দিন, পোকা কম আসবে। পাতা কোকড়ালে ভার্মিটেক কিংবা এবোম কীটনাশক দিন। কোকড়ানো পাতা ফেলে দিন। মরিচ গাছে দশ দিন পর পর ডায়মেথট গ্রুপের (যেমন টাফগর) কীটনাশক দিলে উপকার হবে। সবকিছু করছেন, তারপরও কাজ হচ্ছে না। এক্ষেত্রে গাছের জায়গা বদল করেন, উঠিয়ে অন্যত্র লাগান।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

দৈনন্দিন

নিপাহ্‌ ভাইরাসঃ খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়

নিপাহ্‌ ভাইরাস খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়
নিপাহ্‌ ভাইরাস খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়
খেজুরের রস সংগ্রহের প্রক্রিয়া।

শীতকাল এলেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে খেজুরের রস খাওয়ার চল বেড়ে যায়। অনেকে গাছ থেকে খেজুরের কলসি নামিয়ে সরাসরি কাঁচা রস খেয়ে থাকেন।

আবার অনেকে এই রস চুলায় ফুটিয়ে সিরাপ, পায়েস বা ক্ষীর বানিয়ে খান। এছাড়া রসের তৈরি ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়, ভেলি গুড়, বালুয়া গুড়, মিছরি গুড়সহ নানা ধরণের পিঠার বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।

নিপাহ্‌ ভাইরাস আতঙ্ক

খেজুর আরব দেশের প্রচলিত ফল হলেও ওইসব দেশে খেজুর, মূলত ফল উৎপাদননির্ভর, যেখানে কিনা বাংলাদেশের খেজুর গাছ রস উৎপাদননির্ভর।

কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, বাংলাদেশে সাধারণত কার্তিক থেকে মাঘ অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ হয়ে থাকে।

দেশটির সবচেয়ে বেশি রস সংগ্রহ হয় যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে।

মূলত খেজুর গাছের ডালপালা পরিষ্কার করে, ডগার দিকের কাণ্ড চেঁছে তাতে একটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি চোঙ বসিয়ে দেয়া হয়। চোঙের শেষ প্রান্তে ঝুলিয়ে দেয়া হয় একটি মাটির হাড়ি বা কলসি।

সেই চোঙ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রস এসে জমা হতে থাকে মাটির হাড়ি বা কলসিতে। এভাবে একটি গাছ থেকে দৈনিক গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লিটার রস সংগ্রহ করা যায় বলে কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গিয়েছে।

কিন্তু গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে নিপাহ্‌ ভাইরাস আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

পরিবেশ

জেনে নিন এই মরসুমে কোন কোন ঔষধি উদ্ভিদের চাষ আপনার জন্য সেরা

দেশের বিভিন্ন রাজ্যেই বর্ষার (Monsoon 2021) প্রভাবে চলছে বৃষ্টিপাত। এসময় কৃষকেরা খারিফ শস্য (Kharif Crops) বপনে তৎপর হয়ে ওঠেন। এই খরিফ মরসুমে কৃষকভাইরা সাধারণত অঞ্চলভেদে ধান, অড়হর, সোয়াবিন সহ বিভিন্ন চাষে মনযোগ দিয়ে থাকেন ৷ তবে এসব ছাড়াও, ঔষধি গুন সমৃদ্ধ (Medicinal Crops) গাছ চাষে বর্ষায় যে কতটা লাভ হতে পারে সে সম্পর্কে অনেকেই হয়তো জানেন না৷

বিশেষ করে বর্ষাকালেই এমন বহু ঔষধি গুন সম্পন্ন গাছ রয়েছে যাদের চাষ হতে পারে লাভজনক৷

বর্ষাকালে কোন কোন ঔষধি উদ্ভিদের চাষ করা যেতে পারে অথবা এই চাষ কীভাবেই বা করা যাবে সে বিষয়ে সঠিক তথ্য না পাওয়ার কারণেই অনেকের কাছে বিষয়টি অধরা৷ চলুন এই প্রতিবেদনে এমনই কিছু গাছ নিয়ে আলোচনা করা যাক যা কৃষকদের জন্য হতে পারে লাভদায়ক৷ তবে সঠিক সময়ে, সঠিক রোপন, সেচ, কীটনাশক দেওয়ার প্রয়োজন এগুলিতে, না হলে এর ওপর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে৷

অশ্বগন্ধা –

বর্ষায় এর চাষ ভালো৷ জুন থেকে অগস্ট পর্যন্ত এর চাষ করতে পারেন৷ এর বিভিন্ন জাত রয়েছে৷ উন্নত মানের গাছের চাষে কৃষকের লাভের পরিমাণও বৃদ্ধি পেতে পারে৷ উল্লেখ্য, প্রতি হেক্টরে ৫ কিলোগ্রাম বীজ ব্যবস্থা করতে হবে৷ যদি কেউ ১ হেক্টর জমিতে অশ্বগন্ধার চাষ করতে চায় তাহলে তাকে প্রায় ৫০০ বর্গমিটারে নার্সারি তৈরি করতে হবে৷ প্রায় ১ সেন্টিমিটার গভীরে বীজ বপন করতে হবে৷

শতমূলী –

শীত বাদ দিয়ে বছরের যে কোনও সময়ে এই গাছের চাষ করতে পারেন৷ বর্ষাকালে এই চারা রোপন করলে সহজেই তা বেড়ে উঠতে থাকে৷ তবে বীজ বপনের আগে বীজ ১ দিন পর্যন্ত হালকা গরম জলে ভিজিয়ে রাখতে হয়৷

যষ্টিমধু –

জুলাই থেকে অগস্ট পর্যন্ত এর চাষ করা হয়৷ আর তাই জুন থেকেই এর প্রস্তুতি শুরু করে দেন কৃষকেরা৷ জলনিকাশি ব্যবস্থা উচ্চমানের হওয়া প্রয়োজন এই গাছ চাষের জন্য৷ মনে রাখতে হবে এর চাষের আগে জমিতে কমপক্ষে ১৫ টন গোবর সার দেওয়া প্রয়োজন, এরপরেই এটি চাষ করা উচিত৷

ঘৃতকুমারী –

এর ভালো উৎপাদনের জন্য জলনিকাশি ব্যবস্থা ঠিক রাখতে হবে৷ এই ধরনের ঔষধি গুনসম্পন্ন গাছ শীতকাল বাদ দিয়ে যে কোনও সময় চাষ করতে পারেন৷ বর্ষাকালে দূরত্ব রেখে বীজ বপন করতে হবে৷ কম সময়ের মধ্যেই ব্যবহারোপযোগী হয়ে ওঠে এগুলি৷

অগ্নিশিখা বা কলিহারি –

এটি চাষের জন্য কৃষকেরা জুন মাসেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন৷ জুলাইয়ে ভালো বৃষ্টিতে এর চাষ শুরু করা যেতে পারে৷ উল্লেখ্য, ১ হেক্টর জমির জন্য প্রায় ১০ ক্যুইন্টাল কন্দের প্রয়োজন৷ এটি চাষের আগেও জমিতে গোবর সার প্রয়োগ করে তা প্রস্তুত করে নিতে হবে৷

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

পরিবেশ

শিখে নিন টবে দারুচিনির চাষের কৌশল

পৃথিবীতে ভোজ্য মসলা যতরকম আছে তারমধ্যে দারুচিনি সবথেকে উল্লেখযোগ্য। এই প্রাচীনতম মসলা বহুদিন ধরে ওষধি হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে চলেছে। এছাড়াও খাবারে স্বাদ বাড়ানো থেকে শুরু করে, পানীয় এবং তরল মশলাদার খাবারে স্বাদ বাড়ানোর জন্যও এই দারচিনির ব্যবহার হয়। এলাচ, গোলমরিচ, লবঙ্গের সাথে সাথে দারুচিনির নামও মসলা হিসেবে একই পংক্তিতে উচ্চারিত হয়। বহু কৃষক দারুচিনির চাষ করে ভীষণভাবে উপকৃত হয়েছেন। বাজারে এই দারুচিনির চাহিদা প্রচুর পরিমানে থাকায়, এই চাষে ভালো লাভ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও সৌখিন মানুষেরাও ভালোবেসে দারুচিনির চাষ বাড়িতে করে থাকেন। দারুচিনি গাছের বাকল, ফুল, কুঁড়ি, পাতা, ফল, শেকড় সবকিছুই কাজে লেগে যায়। দারুচিনি গাছ বাড়িতে চাষ করতে গেলে ঘরে ছাদে দুই জায়গাতেই চাষ করা যায়।

মনে রাখতে হবে এই চাষ করতে গেলে উপযুক্ত পরিমানে রোদ দরকার। বাংলার জলবায়ুতে মূলত শীতকালে এই চাষ করা সবথেকে ভালো। জানুয়ারি মাসে দারুচিনি গাছে ফুল ফোটা আরম্ভ করে, এবং এই গাছের ফল পাকতে আরম্ভ করে জুলাইয়ে। সেইসময়ই ফল থেকে বীজ সংগ্রহ করে নিয়ে এসে বাগানে বা টবে রোপন করে দেওয়া উচিত।

প্রয়োজনীয় রোদ (Sunlight)

কড়া সূর্যালোক দারুচিনি জন্য প্রয়োজনীয়, তাই এটি পর্যাপ্ত রোদ পাওয়া যায় এমন জায়গায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দারুচিনি রোপন করতে গেলে রৌদ্রোজ্জ্বল স্থান যেমন জানালার ধারে, ব্যালকনি কিংবা ছাদের খালি স্থান ব্যবহার করতে হবে।

উপযুক্ত মাটি (Soil)

দারুচিনি চাষের জন্য ভাল মানের মাটি ব্যবহার করা আবশ্যক। বাগানের মাটি ব্যবহার না করাই ভালো, কেননা এতে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। অনে সময় আমরা আশেপাশ থেকে মাটি নিয়েই টব ভরে গাছ লাগানো হয়।  বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সংবেদনশীল গাছগুলোতে এই উপায় কার্যকরী হয় না। নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভাল এমন মাটি ব্যবহার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে উত্তম নিষ্কাশনযুক্ত বেলে দোআঁশ মাটি ব্যবহার করা সবথেকে উত্তম। জেনে রাখা ভালো দারুচিনি খরা একদমই সহ্য করতে পারে না। মাটির বিকল্প হিসেবে ১৫% ট্রাইকোকমপোস্টযুক্ত কোকোডাস্ট ব্যবহার করা যেতে পারে।

বাইরে চাষ করার জন্য এক মিটার (৩০ সেন্টিমিটার গভীর) পর্যন্ত গর্ত করে মাটি দিয়ে পূরণ করে নিতে হবে। ঘরের ভিতরে বা ছাদবাগানের দারুচিনি চাষের জন্য একটি বড় পাত্র প্রয়োজন হবে।

রোপন (Planting)

দারুচিনির বীজ সংগ্রহও করা যায় অথবা নার্সারি থেকে দারুচিনির গাছ কিনেও আনা যায়।

বাইরে চাষের ক্ষেত্রে

দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে ১ মিটার x ১ মিটার এবং ৩০ সেমি গভীরতায় খনন করে মাটি দিয়ে গর্তটি পূরণ করতে হবে।

ঘরের মধ্যে টবে রোপনের ক্ষেত্রে

নিচে গর্ত সহ বড় সিরামিক পাত্র (৬০ x ৫০ সেমি) ব্যবহার করতে হবে। পাত্রটি মাটি বা কোকোডাস্ট দিয়ে পূরণ করে নিতে হবে। ৩০ সেন্টিমিটার গভীরতা এবং ৩০ সেন্টিমিটার প্রস্থের একটি গর্ত তৈরি করতে একটি বাগান ট্রোয়েল ব্যবহার করে নেওয়া ভালো। বীজ ব্যবহার করলে  ১.৫ সেন্টিমিটার গভীর গর্ত তৈরি করে নেওয়া উচিত। এবার গাছটি গর্তের মধ্যে রেখে মাটি দিয়ে চাপা দিতে হবে। বীজ ব্যবহার করলে প্রতি ১.৫ সেমি গর্তে একটি করে বীজ পুঁততে হবে এবং মাটি দিয়ে বীজটি ঢেকে দিতে হবে।

মাটি সবসময় ভেজা রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণ জল দিতে হবে। দারুচিনি গাছ পাত্রে রোপন করার পর, টবের নিচের গর্ত থেকে জল বের না হওয়া পর্যন্ত জল দিতে হবে। টবের উপরের ৫ সেন্টিমিটার শুকিয়ে গেলেই আবার গাছটিকে জল দিতে হবে।

গাছের পরিচর্যা (Caring)

দারুচিনি গাছে নিয়মিত সার প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম বছর ৫০ গ্রাম টিএসপি, ৭৫ গ্রাম এমওপি ও ৫০ গ্রাম ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে। প্রতিবছর ২-৩ কেজি ট্রাইকোকম্পোস্ট ও সার প্রয়োগ শেষে একই হারে টিএসপি, এমওপি ও ইউরিয়া দিতে হবে।

দারুচিনি প্রথম ধরতে দুই থেকে তিন বছর সময় নেয় এবং তার পরে প্রতি দুই বছর পরপরই ফসল দিতে থাকে। দারুচিনি গাছ কম করে ১০-১৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। তাই একে নিয়মিত করে ছোট রাখতে হবে। পাঁচ বছর বয়সী দারুচিনি গাছ থেকে নিয়মিত দারুচিনি সংগ্রহের ডাল পাওয়া সম্ভব। দারুচিনি ব্যবহার করার জন্য যে শাখাগুলি কাটা হবে সেগুলি থেকে বাকল তুলে নিতে হবে, বাকলগুলি ব্যবহার করার আগে জলে ভালোভাবে ভিজিয়ে নেওয়া উচিত।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

আঙিনা কৃষি

টবে লাগান মিষ্টি তেঁতুল গাছ

পৃথিবীতে জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, হারিয়ে যাচ্ছে বহু প্রাণী ও উদ্ভিদ বৈচিত্র। চাষবাসের জমিরও সংকুলান ঘটছে সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে। গগনচুম্বী বাড়ি ঘিরে ফেলছে সমস্ত ফাঁকা জমিন। শখ করে মানুষ খোলা জায়গায় যে গাছ লাগবে অথবা ফল-ফুলের চারা সেই উপায়ও আর নেই। গাছ লাগানোর জন্য সামান্য জায়গাও ফাঁকা থাকছে না আর। তবে আমাদের করণীয় কী? বৃক্ষরোপন কি তবে অচিরেই বন্ধ হয়ে যাবে। বেঁচে থাকার জন্য তো গাছ লাগাতে হবেই। বাড়ির একটুকরো বারান্দা অথবা ব্যালকনিতেও সুন্দর ভাবে ইচ্ছা করলে গাছ লাগানো যায়। বাড়ির ছাদেও বানানো যায় সুন্দর বাগিচা। শহরের মানুষদের জন্য ছাদ বাগানের কোনও বিকল্পও নেই। বাড়ির মধ্যেকার ব্যালকনি অথবা ছাদের একটুকরো জমিতেও, ইচ্ছা করলে টবে চাষ করা যায় বিভিন্ন ফুলের ও ফলের গাছ।

শাকসবজি, পেয়ারা, লেবু প্রভৃতি দেশীয় গাছ টবে বাড়তে দেওয়া থেকে শুরু করে বর্তমানে বহু বিদেশী গাছের চারাও মানুষ ব্যালকনি অথবা ছাদে চাষ করছেন। তার মধ্যে থাই মিষ্টি তেঁতুল টবের চাষ পদ্ধতি হিসাবে অত্যন্ত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। প্রথমত মিষ্টি তেঁতুলের চাষ করতে গেলে, নার্সারি থেকে এই বিশেষ তেঁতুলের সঠিক বীজ নিয়ে আনতে হবে। তবে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কলম পাওয়া একটু দুষ্কর কাজ। বুঝে সঠিক চারা নিয়ে আসা বাগান মালিকের উপরেই বর্তায়।

থাই মিষ্টি তেঁতুলের ফুল থেকে ফল ধরতে প্রায় ৭ মাস সময় লাগে। বছরে দু’বার থাই মিষ্টি তেঁতুলের গাছে ফল ধরে। প্রথমবার বর্ষাকালে এবং দ্বিতীয়বার শীতকালে। এই গাছের পরিচর্যা আলাদা করে করার কোনও দরকার পড়ে না। গাছের যত্নআত্তি নিতে হয় ঠিকই, কিন্তু তা বলে, আলাদা করে কোনও বিশেষ যত্ন নিতে হয় না।

গাছ লাগানোর পদ্ধতি (Planting):

থাই মিষ্টি তেঁতুল চাষের জন্য আদর্শ মাটি হল, দো-আঁশ বা বেলে দো-আঁশ মাটি। এই দু’টি মৃত্তিকার মধ্যে যে কোনও একটি বেছে নিন। তারপর বেছে নেওয়া মাটির দুই ভাগ অংশের সাথে গোবর, ১০০ গ্রাম, টিএসপি ১০০ গ্রাম, পটাশ, ২৫০ গ্রাম, হাড়ের গুঁড়ো এবং ৫০ গ্রাম সরিষার খোল একসঙ্গে মিশিয়ে ২০ ইঞ্চি মাপের বড় টবে জল মিশিয়ে রেখে দিতে হবে। ১০ থেকে ১২ দিন পর টবের মাটি ভালো করে খুঁচিয়ে দিয়ে আরও ৪-৫ দিন রেখে দিতে হবে। ৪ থেকে ৫ দিন বাদে মিষ্টি তেঁতুলের একটি ভালো চারা ওই টবে লাগান।

পরিচর্যা(Caring):

চারা লাগানোর প্রথম কয়েক মাস তেমন যত্নের দরকার পড়বে না। অবশ্যই গাছে এই সময়টুকু পর্যাপ্ত জলের যোগান, এবং আগাছা পরিষ্কারের কাজ করতে হবে।  ছয় মাস চারা লাগানোর সময়সীমা ফুরোলেই ১ মাস বাদে বাদে গাছে সরষের খোল মিশ্রিত পচা জল দিতে হবে। মনে রাখতে  হবে খোল দেওয়ার আগে গাছের মাটি খুঁচিয়ে নিতে হবে।

রোগ দমন (Disease management):

সাধারণত থাই মিষ্টি তেঁতুল গাছে পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখা যায় না। কিন্তু বর্ষাকালে অনেক সময় তেঁতুল গাছে ছত্রাক হানা দেয়। এর ফলে তেঁতুল ফেটে যায়। এই অসুবিধার থেকে গাছকে বাঁচাতে হলে, বর্ষাকাল আসার আগেই ভালো ছত্রাকনাশক ওষুধ ১০ দিন অন্তর গাছে স্প্রে করে ছড়িয়ে দিতে হবে।

বাংলার বেজায় টক তেঁতুলের সঙ্গে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কোনও তুলনাই চলে না। অত্যন্ত মিষ্টি খেতে এই তেঁতুল থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়ায় চাষ প্রভূত পরিমাণে হলেও, আমাদের রাজ্য এই ফলের চাষ এখনও ততটা গতি পায়নি। কিন্তু আপনি আপনার ব্যালকনি অথবা ছাদে সহজেই এই থাই তেঁতুলের গাছ লাগাতে পারেন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশক: শাইখ সিরাজ
© ২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। দা এগ্রো নিউজ, ফিশ এক্সপার্ট লিমিটেডের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। ৫১/এ/৩ পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থাপথ, ঢাকা -১২০৫
ফোন: ০১৭১২-৭৪২২১৭
ইমেইল: info@agronewstoday.com, theagronewsbd@gmail.com