আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

ফল

তামাক ছেড়ে তরমুজে ঝুঁকেছেন চাষিরা

কুষ্টিয়া: কুষ্টিয়ার মিরপুরে গত ১০ বছর ধরেই যেসব জমিতে তামাকের দাপট দেখা গেছে, সেসব জমিতে আজ নেই তামাকের অস্তিত্ব। তামাকের পরিবর্তে মাটির বুক চিরে উঁকি দিচ্ছে রসালো তরমুজের চারা। একসময় আখের দখলে থাকা যেসব জমিতে দখল নেয় তামাক সেই জমিতে এখন নতুন ফসল তরমুজ। বিভিন্ন তামাক কোম্পানির প্রণোদরার ফলে বিগত দিনে তামাক চাষে ঝুঁকতো কৃষক।

তবে এবছর তামাক চাষ থেকে অনেকটা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন কৃষক। বিগত দিনে তামাক চাষের কারণ হিসেবে কোম্পানির প্রলোভন ও কৃষকদের অসচেতনতাকে দায়ী করছেন।

এলাকায় একেবারেই নতুন হলেও তরজুম চাষে বেশ আগ্রহ দেখিয়েছেন কৃষকরা। কৃষকরা বলছেন যেকোনো আবাদ করেই তামাককে নীল চাষের মতো বিতাড়িত করার পরিকল্পনা করছেন তারা।

কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার সদরপুর ইউনিয়নের কাকিলাদহ এলাকার কৃষক শেরেগুল ইসলাম। লেখাপড়া শেষে চাকরি করতেন একটি এনজিও প্রতিষ্ঠানে। পাশাপাশি ৫ বছর ধরে তামাক চাষ করে আসছিলেন তিনি। গত বছর চাষ করেছিলেন ৩ বিঘা জমিতে তামাক। তবে এবছর কোনো তামাক চাষ করেননি।

শেরেগুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, তামাকে মূলত লাভ হয় না। নিজে কাজ করতে পারলে একসঙ্গে কিছু টাকা পাওয়া যায়। তবে লেবার নিলে কিছুই পাওয়া যায় না। পরিবারের সবাই মিলে পরিশ্রম করা লাগে। বাড়িতে রোগ-জীবাণুর উপদ্রব বেশি হয়।

তিনি বলেন, তামাক কোম্পানি আমাদের সার, বীজ, কীটনাশক ও পরামর্শ দিয়ে তামাক চাষে উৎসাহী করেছিলো। তবে গতবার আমার তিন বিঘা জমির তামাক শিলা বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু কোম্পানি সেই তামাক আর কিনেনি। তাই এবছর রাগ করে আর তামাক লাগাইনি।

যতদিন বাঁচবেন এই তামাক চাষ করবেন না উল্লেখ করে বলেন, কোনোদিন আর এই তামাক করবো না। আমি এবছর তামাকের পরিবর্তে দেড় বিঘা জমিতে তরমুজের চাষ করেছি। আর এক বিঘা জমিতে বেগুন ও ১০ কাঠা জমিতে ফুলকপির চাষ করেছি। নতুন হলেও তরমুজ গাছ বেশ ভালোই হয়েছ। কৃষি অফিসের পরামর্শে আমি তরমুজের সাথী ফসল হিসেবে একই জমিতে টমেটো চাষ করেছি।

শেরেগুলকে দেখে তামাকের পরিবর্তে একই মাঠে ২০ বিঘা জমিতে তরমুজের চাষ করেছেন কৃষকরা। এ এলাকায় নতুন ফসল তরমুজ হওয়ায় কৃষকদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিচ্ছেন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নাঈম উদ্দিন।

কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার সদরপুর ইউনিয়নের পুরাতন আজমপুর মাঠে গিয়ে দেখা যায়, যেসব জমিতে গতবছর তামাক চাষ হয়েছিলো, সেসব জমিতে এখন তরমুজের চারা।

কৃষক বাবলু বাংলানিউজকে বলেন, আমি তামাকের একজন পাক্কা চাষি। গত বছরও আমার ৫ বিঘা জমিতে তামাক ছিলো। শিলা বৃষ্টির কারণে আমার সব শেষ। প্রায় প্রতিবছরই শিলা বৃষ্টিতে ক্ষতি হয় আমাদের। কিন্তু তামাকের চাষ করি বলে কেউ কোনো সহায়তা করে না। তামাকের ক্ষতি হলে তামাক কোম্পানিরাও মুখ ফিরিয়ে নেই। তাই এবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি তামাক করবো না। তামাকের পরিবর্তে এবছর তরমুজ চাষ করেছি। দেখি শুনেছি ভালো লাভ হয় তরমুজে। দেখি কি হয়। শিল পড়ে তো আর তামাকের মতো নষ্ট হওয়ার নেই।

আরেকজন কৃষক হোসেন আলী বাংলানিউজকে বলেন, গতবছর শিলে আমরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। ঋণ নিয়ে তামাক করি, কিন্তু কোম্পানিও আর পাশে থাকে না। তাই এবছর তরমুজ চাষ করছি। আর তরমুজের জমিতে আমরা অনান্য সবজিও করতে পারছি।

মাঠের মাঝেই দেখা যায় আলেয়া নামে এক কৃষাণী প্লাস্টিকের ঘটি/বদনা হাতে নিয়ে তরমুজের গাছের গোড়ায় গোড়ায় পানি দিচ্ছেন।

আলেয়া খাতুন বাংলানিউজকে বলেন, লোক করে গত বছর দুই বিঘা জমিতে তামাক করেছিলাম। সেখান থেকেই ঘটি সেচ দেওয়ার অভ্যাস রয়েছে। তবে শিলে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এবছর আর তামাক করিনি। এবছর নিজের ১০ কাঠায় পাশের জমির মালিকের দেখা দেখি তরমুজ লাগিয়েছি। তবে তরমুজে ঘটি দিয়ে সেচ দিলে ভালো হয়। তাই ঘটি দিয়ে সেচ দিচ্ছি।

এবছর ওই এলাকার সবচেয়ে বড় তরমুজ চাষি নিয়াত আলী লালু। বিগত বছর তিনি ছিলেন তামাক চাষি এবং তামাক ব্যবসায়ী। এলাকার কৃষকদের মাঝেও রয়েছে তার প্রভাব।

চাষি নিয়াত আলী লালু বাংলানিউজকে বলেন, আমরা মূলত এই অঞ্চলে আখের চাষ করতাম। আখ নিয়ে সুগারমিলের অনিয়ম আর হয়রানি কারণে আমরা আখ চাষ বন্ধ করে দিয়েছি। সেই সুযোগটা কাজে লাগায় তামাক কোম্পানিগুলো। তারা আমাদের বীজ, সার, কীটনাশক, পরামর্শ, চাষের জন্য লোনসহ নানা প্রলোভন দেখায়। আর কৃষকরা তামাকে ঝুঁকে পড়ে।

তিনি বলেন, আমরা কোম্পানির প্রলোভনে পড়ে তামাক চাষ শুরু করি। কিন্তু আমাদের দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়েছে কোম্পানিগুলো। তামাক কেনার ক্ষেত্রে কার্ড চালু রয়েছে। আমরা কোম্পানির বিরুদ্ধে কিছু বলতে গেলেই কার্ড কেটে যাবে এই ভয় থাকতাম আমরা।

তিনি বলেন, তামাক চাষ করে আমরা মাটির উর্বরতা নষ্ট করে ফেলেছি প্রায়। আমরা একটা বিষয় লক্ষ করেছি যে, তামাক কোম্পানিগুলো তাদের লাভের জন্য আমাদের প্রলোভন দেখায়। তবে, তাদের কথা মতো কৃষক তামাক চাষ করে, এক কথায় বলতে আমরা তাদের কাছে জিম্মি। কারণ তারা ছাড়া তো তামাক কেনার কেউ থাকে না।

তিনি বলেন, আমরা তরমুজের জমিতে সাথী ফসল হিসেবে ফুলকপি, পেঁয়াজ, টমেটো করেছি। এবছর আমি এক দাগেই ১৫ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে তরমুজের চাষ করেছি। আমার দেখা দেখি আমাদের এলাকার কৃষকরা প্রায় ৫০-৬০ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। যেগুলো বিগত দিনে তামাক চাষ হতো।

তিনি বলেন, বিঘা প্রতি তরমুজে প্রায় ১৮-২০ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। বিঘাতে প্রায় আশা করছি, আমরা তরমুজ চাষ করে বেশ লাভবান হবো। কারণ বাজারে তরমুজের দাম অনেক ভালো গেছে এবার। তবে তরমুজের বীজের সহজপ্রাপ্যতা হলে কৃষকরা আরো আগ্রহী হবে।

কাকিলাদহ এলাকার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নাঈম উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, এই অঞ্চলের কৃষকরা নতুনভাবে তরমুজ চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছে। আমি প্রতিনিয়ত কৃষকদের খোঁজখরব নিচ্ছি। আমরা তরমুজ চাষ সম্পর্কে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি। সেসঙ্গে চেষ্টা করছি, বিষমুক্ত উপয়ে কৃষকদের তরমুজ চাষ করাতে। আগামীতে ব্যপকভাবে এই এলাকায় তরমুজ চাষ হবে বলে আশা করছি।  

মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রমেশ চন্দ্র ঘোষ বাংলানিউজকে বলেন,  উপজেলার কৃষকরা এক সময় তামাক চাষের দিকে বেশি ঝুঁকতো। কিন্তু বর্তমানে কৃষি অফিসের পরামর্শে এবং তামাক চাষের কুফল সম্পকে সচেতনতা বাড়ার কারণে অনেকটাই তামাক চাষ থেকে বেরিয়ে আসছে। তামাকের বিকল্প ফসল চাষাবাদে ঝুঁকছেন।

তিনি বলেন, তরমুজ চাষ খুবই লাভজনক। আমরা তরমুজ চাষ সম্প্রসারণের জন্য কৃষকদের পরামর্শ ও উৎসাহ দিচ্ছি। এবছর মিরপুর উপজেলার সদরপুর ইউনিয়নের সদরপুর, আজমপুর, কাকিলাদহ, মল্লিকপাড়াসহ বেশ কিছু এলাকায় তামাকের পরিবর্তে তারা তরমুজ চাষ করেছেন। এলাকায় নতুন হওয়া সত্ত্বেও তরমুজ চাষ খুবই সাড়া ফেলেছে চাষিদের মধ্যে। আমরা চেষ্টা করছি, সার্বক্ষণিক তাদের পাশে সেবা দেওয়ার জন্য।

বিজ্ঞাপন
মন্তব্য করুন

অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন

Leave a Reply

এগ্রোবিজ

বিদেশ থেকে খালি হাতে ফিরে ড্রাগন চাষে সাফল্য

বাগানে চাষ করা ড্রাগন হাতে মিরাজুল ইসলাম
বাগানে চাষ করা ড্রাগন হাতে মিরাজুল ইসলাম

মিরাজুল ইসলাম (৩৩)। ১০ বছর সৌদি আরবে ছিলেন। আকামা জটিলতায় খালি হাতে দেশে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। এক বছর বেকার থাকার পর ইউটিউবে পতিত জমিতে ড্রাগন চাষের ভিডিও দেখেন। বাবার কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে নেমে পড়েন ড্রাগন চাষে। দেড় বছরের ব্যবধানে এখন উপজেলার সবচেয়ে বড় ড্রাগন বাগান তাঁর। এ বছর খরচ বাদে আট থেকে নয় লাখ টাকা লাভের আশা করছেন তিনি।

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার ইন্দুরকানি গ্রামের বাসিন্দা মিরাজুল। উপজেলার টগরা গ্রামে দেড় একর জমিতে তিনি ড্রাগনের বাগান তৈরি করেছেন। তাঁর বাগানে এখন সাড়ে তিন হাজার ড্রাগন ফলের গাছ আছে।

মিরাজুল ইসলাম বলেন, শ্রমিক হিসেবে ১০ বছর সৌদিতে কাজ করে ২০১৯ সালে দেশে ফেরেন তিনি। আকামা সমস্যার কারণে শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। কিছু একটা করবেন বলে ভাবছিলেন। একদিন ইউটিউবে ড্রাগন চাষের ভিডিও দেখতে পান। সেই থেকে ড্রাগন চাষে আগ্রহ জন্মে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে দেড় একর পতিত জমি ড্রাগন চাষের উপযোগী করেন। গাজীপুর থেকে ৬০ টাকা দরে ৬০০ চারা নিয়ে আসেন। বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে শুরু করেন চাষাবাদ। পরের বছর জুনে ফল পাওয়া শুরু করেন।

ড্রাগনের বাগান করতে মিরাজুলের খরচ হয়েছিল ছয় থেকে সাত লাখ টাকা। ইতিমধ্যে ফল বিক্রি করে তাঁর খরচ উঠে গেছে। সাধারণত মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত গাছে ফল আসে। বছরে ছয় থেকে সাতবার পাকা ড্রাগন সংগ্রহ করা যায়। এখন পরিপক্ব ও রোগমুক্ত গাছের শাখা কেটে নিজেই চারা তৈরি করেন। ড্রাগন চাষের পাশাপাশি বাগানে চুইঝাল, এলাচ, চায়না লেবুসহ মৌসুমি সবজি চাষ করেন। এ ছাড়া ড্রাগনের চারাও উৎপাদন করে বিক্রি করেন তিনি।

মিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বাগানের বেশির ভাগ গাছে এ বছর ফল ধরেছে। গত মঙ্গলবার বাগান থেকে দেড় টন ফল সংগ্রহ করেছেন। ২৫০ টাকা কেজি দরে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পাইকারদের কাছে বিক্রি করেছেন। স্থানীয় বাজারে ৩০০ টাকা কেজি দরে ড্রাগন বিক্রি হয়। নভেম্বর পর্যন্ত আরও পাঁচ–ছয়বার বাগান থেকে ফল তোলা যাবে। আশা করছেন, খরচ বাদে এবার আট থেকে নয় লাখ টাকা লাভ থাকবে।

মিরাজুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমার বাগান থেকে চারা নিয়ে অনেকে বাড়িতে ও ছাদে ছোট পরিসরে ড্রাগনের বাগান করেছেন। আমি এ পর্যন্ত ৪০ টাকায় দেড় হাজার চারা বিক্রি করেছি।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পূর্ণ বয়সের একটি ড্রাগনের চারা রোপণের পর ২৫ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। এর মৃত্যুঝুঁকি নেই বললেই চলে। তবে কয়েক দিন পরপর সেচ দিতে হয়। বৃষ্টির পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হয়। ড্রাগন ফল চাষে রাসায়নিক সার দিতে হয় না।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইশরাতুন্নেছা বলেন, মিরাজুল ইসলামকে ড্রাগন চাষে নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে আসছে কৃষি বিভাগ। উপজেলায় তাঁর বাগানটি সবচেয়ে বড়। তিনি নিরলস পরিশ্রম করে ছোট থেকে বাগানটি বড় করেছেন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোটেক

কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তারা এক সঙ্গে কাজ করতে রাজি

ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকেরাফাইল ছবি
ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকেরাফাইল ছবি

ডাচ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে দুই দেশের বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা একসঙ্গে কাজ করতে রাজি হয়েছেন।

গতকাল সোমবার নেদারল্যান্ডসের রাজধানী হেগে অনুষ্ঠিত কৃষি খাতের ব্যবসাবিষয়ক এক সম্মেলনে দুই দেশের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা সহযোগিতার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।

নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম রিয়াজ হামিদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত এগ্রি বিজনেস কনক্লেভে বাংলাদেশের প্রায় ৪০জন উদ্যোক্তা ডাচ কৃষি খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি প্রযুক্তি সহযোগিতা ও ব্যবসায়িক সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। দিনব্যাপী আয়োজিত অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেছে ওয়েগেনিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়।

আলোচনায় বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা প্রযুক্তি কিনতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দিলে নেদারল্যান্ডসের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা প্রযুক্তি সহযোগিতা দিতে রাজি থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।

রিয়াজ হামিদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে ডাচরা প্রস্তুত এবং বাংলাদেশি উদ্যোক্তারাও তাদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। এ ছাড়া ডাচ সরকার ইতিমধ্যে বাংলাদেশের বীজ, পশু খাদ্য, পোলট্রি, হর্টিকালচার ও এ্যাকুয়াকালচার বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম সম্পাদন করেছে, যা ওই দেশের বেসরকারি খাতকে আরও উৎসাহিত করেছে।

আলোচনায় কৃষি সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করতে তৈরি আছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্কয়ার, ইস্পাহানি এগ্রো, একে খান অ্যান্ড কোম্পানি, প্যারাগন গ্রুপ, এসিআই, জেমকন গ্রুপসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তিনি জানান, মঙ্গলবার বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা ডাচ প্রযুক্তির প্রয়োগ সরেজমিনে দেখতে যাবেন।

বাংলাদেশের সঙ্গে নেদারল্যান্ডসের পোল্ট্রিখাতে সহযোগিতার আলোচনা অনেকটা এগিয়েছে উল্লেখ করে মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, দুই দেশের মধ্যে মৎস্য, পশুপালন ও হর্টিকালচারে সহযোগিতার বিপুল সম্ভাবনা আছে।

কনক্লেভ আয়োজনে প্রথমবারের মতো দূতাবাসের সঙ্গে অংশীদার হয়েছে নেদারল্যান্ডসের কৃষি মন্ত্রণালয়, নেদারল্যান্ডস এন্টারপ্রাইজ এজেন্সি, নেদারল্যান্ডস ফুড পার্টনারশিপ, ডাচ-গ্রিন-হাইজডেল্টা, লারিভ ইন্টারন্যাশনাল, স্টান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ।

কৃষিজাত পণ্য রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থানকারী নেদারল্যান্ডসের আয়তন বাংলাদেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের কম। ২০২১-এ কৃষিপণ্য ও খাদ্য রপ্তানি করে নেদারল্যান্ডস ১১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি আয় করেছে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

পেঁয়াজের ক্ষতি পুষিয়ে দিচ্ছে সাথি ফসল বাঙ্গি

পেঁয়াজ তুলে নেওয়ার পর পুরো জমি ভরে গেছে বাঙ্গিগাছে। ফলন হয়েছে ভালো। পাবনার বেড়া উপজেলার বড়শিলা গ্রামে গত শুক্রবার
পেঁয়াজ তুলে নেওয়ার পর পুরো জমি ভরে গেছে বাঙ্গিগাছে। ফলন হয়েছে ভালো। পাবনার বেড়া উপজেলার বড়শিলা গ্রামে গত শুক্রবার

পাবনার বেড়া উপজেলার বড়শিলা গ্রামের কৃষক সাইদুল ইসলাম তাঁর দুই বিঘা জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করে এবার প্রায় ৪০ হাজার টাকা লোকসান দিয়েছেন। অথচ পেঁয়াজের জমিতেই সাথি ফসল হিসেবে লাগানো বাঙ্গি থেকে তিনি ৫০ হাজার টাকার মতো লাভ করবেন বলে আশা করছেন। এই বাঙ্গি আবাদে তাঁর কোনো খরচ হয়নি। ফলে পেঁয়াজ আবাদের ক্ষতি পুষিয়ে যাচ্ছে।

সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘বাঙ্গি আবাদ কইর‌্যা যে টাকা পাইল্যাম তা হলো আমাগরে ঈদের বোনাস। পেঁয়াজের দাম না পাওয়ায় আমরা (কৃষকেরা) যে ক্ষতির মধ্যে পড়িছিল্যাম, বাঙ্গিতে তা পুষায়া গেছে। এই কয়েক দিনে ১২ হাজার টাকার বাঙ্গি বেচছি। সব মিলায়া ৫০ হাজার টাকার বাঙ্গি বেচার আশা করতেছি।’

সাইদুল ইসলামের মতো পাবনার বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলার অনেক কৃষক এবার পেঁয়াজের সঙ্গে সাথি ফসল হিসেবে বাঙ্গির আবাদ করেন। কৃষকেরা পেঁয়াজ আবাদ করতে গিয়ে বিঘায় প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ করেছিলেন। সেই হিসাবে প্রতি মণ পেঁয়াজ উৎপাদনে তাঁদের খরচ হয়েছে ১ হাজার ২০০ টাকার বেশি। কিন্তু বাজারে সেই পেঁয়াজ কৃষকেরা বিক্রি করতে পেরেছেন প্রতি মণ ৬০০ থেকে ৮৫০ টাকায়। এতে প্রতি বিঘা জমিতে পেঁয়াজের আবাদে কৃষকদের এবার ২০ হাজার টাকার বেশি লোকসান হয়েছে।

কৃষকেরা বলেন, পেঁয়াজের জমিতে সাথি ফসল হিসেবে বাঙ্গি, মিষ্টিকুমড়া, কাঁচা মরিচসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। জমিতে পেঁয়াজ লাগানোর পর তা কিছুটা বড় হলে এর ফাঁকে ফাঁকে এসব সাথি ফসল লাগানো হয়। পেঁয়াজের জন্য যে সার, কীটনাশক, সেচ দেওয়া হয়, তা থেকেই সাথি ফসলের সব চাহিদা পূরণ হয়ে যায়। ফলে সাথি ফসলের জন্য বাড়তি কোনো খরচ হয় না।

কৃষকেরা বলেন, বাঙ্গিতেই কৃষকের লাভ হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। রমজান মাস হওয়ায় এখন বাঙ্গির চাহিদা ও দাম দুই-ই বেশি।

সাঁথিয়ার শহীদনগর গ্রামের কৃষক আজমত আলী জানান, তাঁর জমিসহ এই এলাকার জমি থেকে ৮ থেকে ১০ দিন হলো বাঙ্গি উঠতে শুরু করেছে। এবার বাঙ্গির ফলনও হয়েছে বেশ ভালো। বাজারে এসব বাঙ্গি আকারভেদে প্রতিটি ৬০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এমন দাম থাকলে এক বিঘা থেকে প্রায় ৩০ হাজার টাকার বাঙ্গি বিক্রি হবে।

সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জীব কুমার গোস্বামী বলেন, পেঁয়াজের সঙ্গে সাথি ফসলের আবাদ কৃষকদের মধ্যে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এ ব্যাপারে তাঁরাও কৃষকদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

কাঁঠালের আইসক্রিম জ্যাম ও চিপস

জাতীয় ফল কাঁঠালের জ্যাম, চাটনি ও চিপস উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএআরআই) শস্য সংগ্রহের প্রযুক্তি বিভাগের একদল গবেষক। তাঁরা কাঁঠাল প্রক্রিয়াজাত করে মোট ১২টি প্যাকেট ও বোতলজাত পণ্য তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন।

গত শনিবার বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) ক্যাম্পাসে অবস্থিত বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে (বিনা) ‘কাঁঠালের সংগ্রহত্তোর ক্ষতি প্রশমন ও বাজারজাতকরণ কৌশল’ শীর্ষক কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে এসব তথ্য জানান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. গোলাম ফেরদৌস চৌধুরী। কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের (কেজিএফ) অর্থায়নে এবং নিউভিশন সলিউশন্স লিমিটেডের সহযোগিতায় গবেষণা প্রকল্পটি পরিচালিত হয়।

কর্মশালায় ড. মো. গোলাম ফেরদৌস চৌধুরী বলেন, ‘এই প্রকল্পের আওতায় আমরা কাঁঠালের প্রক্রিয়াজাত করে মুখরোচক ১২টি প্যাকেট ও বোতলজাত পণ্য তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এসব পণ্য উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট। কাঁঠালের জ্যাম, আচার, চাটনি, চিপস, কাটলেট, আইসক্রিম, দই, ভর্তা, কাঁঠাল স্বত্ব, রেডি টু কুক কাঁঠাল, ফ্রেশ কাট পণ্যসহ আরও বিভিন্ন ধরনের প্যাকেটজাত পণ্য তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। প্রক্রিয়াজাত পণ্যগুলো ঘরে রেখে সারা বছর খাওয়া যাবে। কাঁঠাল থেকে এসব পণ্য উদ্ভাবনের মধ্য দিয়ে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকা কমানো সম্ভব বলে মনে করছেন গবেষক।’

কর্মশালায় নিউভিশন সলিউশন্স লিমিটেডের মুখ্য পরিদর্শক তারেক রাফি ভূঁইয়া বলেন, উদ্ভাবিত পণ্যগুলো বাজারজাত করার জন্য নিউভিশন কোম্পানি বিএআরআইয়ের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। ময়মনসিংহসহ বাংলাদেশের কয়েকটি জেলা ও উপজেলা শহরে পণ্যগুলো বিপণনের কাজ চলছে।

কর্মশালায় বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের শস্য সংগ্রহোত্তর প্রযুক্তি বিভাগের বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. হাফিজুল হক খানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি পরমাণু গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম। সম্মানিত অতিথি ছিলেন কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের সিনিয়র স্পেশালিস্ট (ফিল্ড ক্রপস) ড. নরেশ চন্দ্র দেব বর্মা। বিশেষ অতিথি ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মো. আবু হানিফ। উপস্থিত ছিলেন নিউভিশন সলিউশন্স লিমিটেডের প্রকল্প ম্যানেজার কায়সার আলম।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

ফল

কমলা চাষে সার ব্যবস্থাপনা, সেচ, আগাছা ব্যবস্থাপনা ও ফসল তোলা- দা এগ্রো নিউজ

কমলা

সার ব্যবস্থাপনা:  প্রতি গর্তে ১০০ গ্রাম ইউরিয়া সার, ১০০ গ্রাম টিএসপি সার ও এমওপি সার ১০০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হয়।

সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনা:  চারা গাছের গোড়ায় মাঝে মাঝে পানি সেচ দিতে হবে। বর্ষাকালে গাছের গোড়ায় যাতে পানি না জমে সেজন্য পানি নিকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তাছাড়া কমলা গাছের আগাছা দমন করতে হবে।

ফসল তোলা: মধ্য কার্তিক থেকে মধ্য পৌষ মাসে ফল সংগ্রহ করতে হয়।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশক: শাইখ সিরাজ
© ২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। দা এগ্রো নিউজ, ফিশ এক্সপার্ট লিমিটেডের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। ৫১/এ/৩ পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থাপথ, ঢাকা -১২০৫
ফোন: ০১৭১২-৭৪২২১৭
ইমেইল: info@agronewstoday.com, theagronewsbd@gmail.com