আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

পরিবেশ

ঢাকা শহরকে কোথায় নিয়ে যাব

ঢাকা শহরকে আধুনিক, বিশ্বমানের এবং সব দিক থেকে মানবিক একটি শহর হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য আমাদের সবার। রাজউক প্রণীত ঢাকার বিশদ পরিকল্পনা (ড্যাপ, ২০১৬-৩৫) সেই লক্ষ্য অর্জনের ব্লু-প্রিন্ট। কঠিন বাধাগুলো পেরিয়ে আমাদের প্রাণের শহর ঢাকায় একটি উন্নত নগরজীবন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অভিনব চিন্তাভাবনা এবং এ নিয়ে আলোচনা, বিতর্ক বা আবেগপ্রবণ কথামালার চর্চা অবশ্যই হতে পারে।

ড্যাপের বিস্তারিত দলিলে অনেকগুলো নতুন ভাবনাচিন্তার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। খসড়া পরিকল্পনাটি নিয়ে বিভিন্ন পেশাজীবী এবং বিশেষজ্ঞ সমালোচনার ঝড় তুলছেন। এসব মতামত রাজউক ধৈর্যসহকারে দেখবে আশা করি। তবে চলমান আলোচনা-সমালোচনায় কতগুলো জরুরি বিষয় এখনো আসছে না।

আমরা শহর নামক বন্দোবস্তে বাস করছি বটে, তবে শহরকে এখনো সম্পূর্ণভাবে আপন করে নিতে পারিনি। দেশ নিয়ে আমরা যতটা আবেগের সঙ্গে কথা বলি, শহর নিয়ে বলি না। আমাদের মানসিকতায় এখনো কবি জসীমউদ্‌দীনের মায়া-মমতায় জড়ানো সেই গ্রামভাবনা। আর শহরে হাজারো নেকড়ের বাস, কবি শামসুর রাহমান যেমন বলেছিলেন।

ঢাকার মতো সমস্যাজর্জরিত ও জটিল শহর খুব কমই আছে, তবু এই শহরই বলে দিতে পারে আমরা কী করে একসঙ্গে বসবাস করব। নগর থেকে নাগরিক—কীভাবে সমষ্টিগত কল্যাণ ও এককের দায়িত্বের সমঝোতা হবে? নগরবিদ জেমি লার্নারের কথায় বলতে হয়, শহর কোনো সমস্যা নয়, বরং কী করে সবাই মিলে একসঙ্গে থাকব, তার সমাধান।

একটা শহরের পুঞ্জীভূত সমস্যা যখন পাহাড়সম হয়ে দাঁড়ায়, তখন যথারীতি আর গতানুগতিক পন্থাগুলোও প্রকৃত উন্নয়নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তখন প্রয়োজন বড় ধরনের ভাবনা, কিছু অভিনব প্রস্তাব। ঢাকা শহরকে ২০৩৫ সাল নাগাদ কোথায় নিয়ে যাওয়া যায়, নিয়ে যাওয়ার সম্ভাব্য পথগুলো কী হতে পারে, তার একটি সংক্ষিপ্ত চিত্রিত বর্ণনা তুলে ধরছি।বিজ্ঞাপন

ঢাকার বৃহত্তর বৃত্ত, অন্দর-বৃত্ত

ঢাকার যে নগরময়তা, সেটা রাজউকের আইনি ও প্রশাসনিক সীমানার মধ্যে আবদ্ধ নয়। যদিও ড্যাপের এই আইনি গণ্ডি ধরেই রচিত হবে ঢাকা শহরের আনুষ্ঠানিক পরিকল্পনা। আমাদের মনে হয়, প্রথম থেকেই ড্যাপ এলাকাকে একটি বৃহৎ অঞ্চলের ধারণার সঙ্গে যুক্ত হওয়া দরকার। অনানুষ্ঠানিকভাবে এই অঞ্চলকে আমরা রাজউক পরিচালিত ঢাকার ‘বৃহত্তর বৃত্ত’ বলতে পারি।

রাজউক পরিচালিত ঢাকার পরিসীমার ভেতরও এমন সব এলাকা আছে, যেগুলো মেট্রোপলিটন ঢাকার সাপেক্ষে অর্ধনগর বা গ্রাম হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। এসব জায়গাকে রাজউক পরিচালিত ঢাকার ‘অন্দর-বৃত্ত’ হিসেবে ধরে নিতে পারি। ঢাকার জন্য সামগ্রিক, সম্পূর্ণ ও সুষম পরিকল্পনা করতে হলে এই দুই বৃত্তের ধারণা নিয়েই এগোতে হবে।

আমরা ২০১২-তে ‘ঢাকা নেক্সাস’ নামে একটি আঞ্চলিক পরিকল্পনার ধারণা প্রকাশ করেছিলাম। ঢাকার কেন্দ্র থেকে দুই ঘণ্টা যাতায়াত পথের ব্যাসার্ধের ভেতর জনবসতিগুলোকে নতুন গণপরিবহনব্যবস্থার ভেতরে এনে এক নতুন নগরমণ্ডলের কথা ভাবা যায়। এ ভাবনার ঢাকা স্ট্রাকচার প্ল্যানের সঙ্গে বহুকেন্দ্রিক ঢাকা পরিকল্পনার মিল আছে। বিভিন্ন ধরনের ও বিভিন্ন ধাপে নগরায়ণ নিয়ে এই নগরমণ্ডল অনেকগুলো সুফল বয়ে আনতে পারে। যেমন মেট্রোপলিটন এলাকায় জনবহুল কেন্দ্রগুলোকে বিকেন্দ্রীকরণ, জনঘনত্বের নতুন বিন্যাস ও নাগরিক সুবিধার বহুমাত্রিক উন্নতি। নেক্সাস নামক ঢাকা নগরমণ্ডলের ভেতরে পুরোনো নগরবিন্দুগুলোর উন্নয়ন তো হতেই পারে, নতুন করে এখানে নগর গঠনও ভাবা সম্ভব।

প্রথমে সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার—বাজার অর্থনীতির চাপে আর ধাবমান অগ্রগতির নেশায় সব অঞ্চলের চিত্র কি একই রকম হবে, নাকি প্রতিটি এলাকার বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী প্রাকৃতিক ও সামাজিক প্রসারকে প্রাধান্য দিয়ে একটি পরিকল্পিত নগরায়ণ হবে?

রাজউক পরিচালিত ঢাকা ‘অন্দর-বৃত্ত’ বৈষম্যে পূর্ণ। ঢাকার ভবিষ্যৎ ও উন্নয়নের কথা যখন বলা হয়, তখন অজান্তেই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মূলত ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ—এই দুই সিটি করপোরেশনকে বোঝানো হয়। অথচ রাজউক পরিচালিত ঢাকার আওতায় আরও আছে আরও দুটি সিটি করপোরেশন, তিনটি পৌরসভা আর তাদের অন্তর্গত এলাকাসমূহ।

ঢাকার পরিকল্পনা চিন্তায় প্রথমেই থাকতে হবে এই মেট্রোপলিটন কোরের বাইরেও একটি বাড়ন্ত ঢাকা, যার মধ্যে পড়ছে বিভিন্ন নগর, বসতি, কৃষিজমি, নদী, জলাভূমি, বনাঞ্চল। প্রশ্ন হলো, এসব নিয়ে কী করা যায়? এ রকম একটা বিশাল ও বৈচিত্র্যময় ল্যান্ডস্কেপকে কি একতরফা ভূমি ব্যবহার নীতি দিয়ে বাঁধা যায়?

রাজউক পরিচালিত ঢাকার এই বিশাল ও বিভিন্নতায় ভরা অন্তর্বৃত্তীয় এলাকাকে চিন্তাধারায় না নিয়ে কীভাবে বিশদ পরিকল্পনা করা যায়? এই মিশ্র নগরায়ণকে কীভাবে কৌশলগত পরিকল্পনার আওতায় আনা যায়? ঢাকার পরিকল্পনা তৈরির ক্ষেত্রে এটাই প্রাথমিক চ্যালেঞ্জ।

প্রথমে সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার—বাজার অর্থনীতির চাপে আর ধাবমান অগ্রগতির নেশায় সব অঞ্চলের চিত্র কি একই রকম হবে, নাকি প্রতিটি এলাকার বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী প্রাকৃতিক ও সামাজিক প্রসারকে প্রাধান্য দিয়ে একটি পরিকল্পিত নগরায়ণ হবে?

উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি, রাজউক এলাকার কৃষি জায়গাগুলো এ ক্ষেত্রে একটি বড় কনসেপচুয়াল চ্যালেঞ্জ। ড্যাপের প্রস্তাবিত মেট্রোপলিটন এলাকার কৃষিজমি প্রায় ৩০ শতাংশ। ঢাকার নগরময়তার সঙ্গে এই কৃষিজমির বোঝাপড়া কীভাবে হবে? এই কৃষিপ্রধান এলাকার সঙ্গে মেট্রোপলিটনের যে সম্পর্ক, এই দুইয়ের মধ্যে নতুন ও অভিনব ঐক্য সৃষ্টি করা দরকার। এর জন্য প্রয়োজন নগরতত্ত্বের নতুন ধ্যানধারণা।

পানি প্রবাহভিত্তিক নগরকাঠামো

আমরা জলজ জাতি। তবে শহরের বেলায় পানি নিয়ে ভাবতে আমাদের কুণ্ঠা। রাজউক ঢাকা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সেখানে একটা বিরাট অংশ পানিপ্রবাহের আওতায়। এর ভেতর রয়েছে নদী, খাল, জলাভূমি, রিটেনশন এলাকা, বন্যাপ্রবণ এলাকা। আগে আলোচিত কৃষিজমিও মূলত প্লাবন প্রভাবিত এলাকার অন্তর্ভুক্ত। ঢাকার একটি বড় অংশ প্লাবনভূমি এবং সক্রিয় জলস্রোতের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাই নিঃসন্দেহে বলা যায়, এখানকার জনজীবন, খাদ্যনিরাপত্তা, জীববৈচিত্র্য ও প্রাণ-পরিবেশ সবকিছুই এই জলপ্রবাহের সঙ্গে জড়িত।

নতুন ড্যাপে প্লাবন এলাকা নিয়ে আলোচনা আছে। কীভাবে ইমারত নির্মাণ করা যাবে বা যাবে না, এ বিষয়ে নির্দেশনা আছে। তবে প্লাবন এলাকাগুলো যে কোনো বিচ্ছিন্ন জায়গা নয়, বরং সামগ্রিক জলপ্রবাহের ফলাফল—এ রকম উপলব্ধি কম। এই জলস্রোতগুলোর উৎস ও ক্ষেত্র ড্যাপ এলাকার বাইরে পড়লেও এ নিয়ে কোনো গবেষণা ছাড়া পরিকল্পনা অকার্যকর হয়ে যেতে পারে।

আমরা জোরালোভাবে বলতে চাই, মৌসুমি অঞ্চল ও গাঙ্গেয় বদ্বীপ অঞ্চলের শহরগুলোর জন্য নতুন আঙ্গিকের জল-স্থল পরিকল্পনার চর্চা হওয়া উচিত। যেকোনো বড় ধরনের উন্নয়ন সঞ্চালিত হবে জল-স্থল ভাবনার আদর্শ থেকে। এ রকম পন্থায় কতগুলো বদ্ধমূল ও গতানুগতিক ধারণা পাল্টে দেখা দরকার। যেমন বন্যাকে শুধু দুর্যোগ না ভেবে পানির প্রবাহের বিভিন্ন ধাপ ভাবা যেতে পারে। ‘ল্যান্ড-ইউজ’ বা ভূমি ব্যবহার না বলে জল পরিব্যাপ্ত জায়গার জন্য ‘জল-স্থল ব্যবহারের’ কথা সূচনা করা যায়।

এই কথাগুলো নিছক কল্পনা নয়। পৃথিবীর বিভিন্ন শহরে পানিপ্রবাহভিত্তিক উদ্ভাবনী ধারণা পরে পরিণত রূপ পেয়েছে। চীনের খ্যাতিমান ইকোলজিক্যাল ডিজাইনার ও পরিকল্পনাবিদ কঞ্জিয়ান ইউর ‘স্পঞ্জ সিটি’ ধারণার ওপর ভিত্তি করে অনেকগুলো শহর নতুন আঙ্গিকে রচিত হয়েছে, যেখানে পানিপ্রবাহ, ইকোলজিক্যাল গুরুত্ব ও সিভিক স্পেসের মিলন ঘটেছে।

ঢাকার জলাভূমি ও প্লাবনভূমি ঘিরে তৈরি হতে পারে বিশেষ ধরনের বসতি
ঢাকার জলাভূমি ও প্লাবনভূমি ঘিরে তৈরি হতে পারে বিশেষ ধরনের বসতি

বন্যা বন্ধু হতে পারে, পানির প্রবাহকে বাঁধ দিয়ে বাধা দিয়ো না—এমন চিন্তাভাবনা থেকে ইউ তাঁর ‘স্পঞ্জ সিটি’ রচনা করেছেন, যা কিনা এখন চীন সরকারের নগরনীতির একটি অংশ।

বৃহৎ ঢাকার পানির প্রবাহ অনুসন্ধান করে বেঙ্গল ইনস্টিটিউটের গবেষক আরফার রাজি দেখিয়েছেন, প্রধান নদীগুলো চারটা ওয়াটার-শেড এলাকা সৃষ্টি করে। পানির আধার, ছোট-বড় ধারা, স্রোতের গতি-প্রকৃতি—সবই নির্ভর করছে এই ওয়াটার-শেডের ওপর। এই ওয়াটার-শেডের ধরনটা বোঝা জরুরি এবং এই ধারণা থেকেই রাজউক পরিচালিত ঢাকার ভেতরে যেকোনো অবকাঠামোগত উন্নয়ন বা বড় মাপের নির্মাণ নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। জলনিষ্কাশন তো বটেই, একবিংশ শতাব্দীতে একটি সুপরিকল্পিত শহর তৈরি করতে আমরা এ রকম কৌশলই আশা করি।

প্লাবন এলাকায় অবকাঠামো ও ইমারত নির্মাণের ব্যাপারে ড্যাপে নির্দেশনা আছে, তবে পানিপ্রবাহভিত্তিক বিশদ আলোচনা দরকার। তা ছাড়া বড় ধরনের বসতি নির্মাণের গঠননীতি, চালিকা কৌশল ও রূপকল্প দরকার। বেঙ্গল ইনস্টিটিউট সে রকম রূপচিত্র রচনা করেছে, যেখানে পানিপ্রবাহের অঞ্চল অক্ষুণ্ন রেখে তার পাড় ধরে নতুন ধাঁচের বাড়িঘর তৈরি করা যায়। বাড়িঘরগুলোর বৈশিষ্ট্য এমন হবে যে তা প্রবাহ অঞ্চলকে ঘিরে রাখবে এবং সংরক্ষণ করবে।

আমাদের শহরগুলোর উন্নয়নের জন্য আমাদের নিজস্ব নগরতত্ত্ব দরকার। তেমনি পানি নিয়ে বা পানি ঘিরে নতুন ধরনের কাঠামোগত উদ্ভাবন দরকার।

নদীর পাড় ও খালের পাড় খুবই সংবেদনশীল জায়গা। সুযোগ পেলেই আমরা নদী, খালের পাড় তছনছ করছি, দখল করছি, ভরাট করছি বা আবর্জনায় ভাগাড় বানাচ্ছি। পানির দেশে পানির মহত্ত্ব অগ্রাহ্য করছি। এই অঘটনটা ঘটছে, কারণ, ঢাকাবাসী জানে না শহর-নগরের ভেতরে নদী বা খাল ধরে কী হবে, কোন ধরনের উন্নয়ন সবার জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে।

আমরা মনে করি, এর জন্য কতগুলো চাক্ষুষ দ্রষ্টব্য বা নমুনা স্থাপন করা দরকার, যেগুলো সর্বসাধারণের মধ্যে আশা ও অনুপ্রেরণা জোগাবে।বিজ্ঞাপন

সাশ্রয়ী গণযোগাযোগব্যবস্থা

বলার অপেক্ষা রাখে না, যেকোনো আধুনিক শহরের বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি করতে উন্নত গণযোগাযোগব্যবস্থা প্রয়োজন। ড্যাপের বিশাল এলাকার আওতায় প্রায় দুই কোটি মানুষের সমাগম ও চলাচল। এই মহামণ্ডলকে সচল রাখতে আধুনিক গণযোগাযোগব্যবস্থা একেবারে জরুরি।

সরকার ইতিমধ্যে বিভিন্ন ধরনের যোগাযোগব্যবস্থায় জোর দিচ্ছে এবং নির্মাণে ব্রত হয়েছে। এর ভেতর এমআরটি বা চক্রাকার রেলপথ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ঢাকাবাসী অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে কখন এই ব্যবস্থা চালু হবে। এর মতো আধুনিক যোগাযোগব্যবস্থা শুধু মানুষের চলাচলের বাহন নয়, এগুলো শহরের গুণগত বিকাশ ও অঞ্চলগত উন্নয়নের প্রভাবক।

নদীর পাড় ও খালের পাড় খুবই সংবেদনশীল জায়গা। সুযোগ পেলেই আমরা নদী, খালের পাড় তছনছ করছি, দখল করছি, ভরাট করছি বা আবর্জনায় ভাগাড় বানাচ্ছি। পানির দেশে পানির মহত্ত্ব অগ্রাহ্য করছি। এই অঘটনটা ঘটছে, কারণ, ঢাকাবাসী জানে না শহর-নগরের ভেতরে নদী বা খাল ধরে কী হবে, কোন ধরনের উন্নয়ন সবার জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে।

এমআরটির মতো রেলপথে স্টেশন ও স্টেশন এলাকার বিকাশ একটি সাধারণ স্বীকৃত কৌশল। তবে এ ব্যাপারে ড্যাপ খসড়ায় বিশদ আলোচনা পাই না। টোকিও শহর সেই ষাটের দশকে এবং সম্প্রতি সিঙ্গাপুর ও ব্যাংকক প্রতিটি শহর নতুনভাবে বিকশিত হয়েছে গণযোগাযোগ লাইনের স্টেশন ধরে।

ব্যাংকক প্ল্যানে স্টেশনভিত্তিক এলাকা বা পাড়ার উন্নয়ন পরিকল্পনার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। যত্রতত্র দালানকোঠা নির্মাণ ঠেকাতে স্টেশন এলাকায় কী ধরনের বাড়িঘর হবে, কোথায় হবে, তা ছাড়া এলাকার মানুষ কীভাবে যুক্ত হবে, তার স্পষ্ট পরিকল্পনা দরকার।

ব্যবহারের দিক থেকে সফল এমআরটির জন্য প্রয়োজন স্টেশনে যাত্রীদের আসার সুবিধাজনক পথ। শুধু রেলপথ ও স্টেশন তৈরি যথেষ্ট নয়, এলাকার মানুষজন যাতে অনায়াসে স্টেশনে আসা-যাওয়া করতে পারে, তার জন্য প্রয়োজন সুষ্ঠু পদচারী ব্যবস্থা। তা ছাড়া স্টেশনে আসা-যাওয়ার জন্য সংলগ্ন পাড়া-এলাকাজুড়ে দরকার পরিকল্পিত এলাকাভিত্তিক পরিবহন লুপ।

হাউজিংই শহরের গঠন

হাউজিং অবশ্যই শহরের প্রাথমিক প্রয়োজন। তবে ঢাকা শহরের হাউজিং বড় হতাশাব্যঞ্জক। সমতা, সামাজিকতা ও গোষ্ঠীবদ্ধ হওয়া বলতে যা বোঝায়, তা হাউজিংয়ের গঠন দিয়েই পরিচালিত হয়। হতাশার ব্যাপার এই যে ঢাকার তথাকথিত হাউজিংগুলোতে এই চরিত্রগুলোর খুবই অভাব। যা আছে, তা প্লটভিত্তিক স্বতন্ত্র বাড়িঘরের নিজস্বতার বাহার।

আমরা বহু দিন ধরে বলে আসছি, প্লটভিত্তিক পরিকল্পনা করে একটা সিভিক ও সামাজিক শহর তৈরি করা যায় না। প্লট, প্রাচীরঘেরা নিজ নিজ বাড়ি দিয়ে সমাজ বা পাড়া গঠন হয় না। এখন পর্যন্ত আমরা এই প্লটের বাইরে আবাসন বা গৃহায়ণ নকশা ভাবতে পারি না। এই প্রথা চালু রাখার দাবিদার অবশ্যই রাজউক। ড্যাপের খসড়ায় তাই ব্লক হাউজিংয়ের প্রস্তাব বেশ আশাব্যঞ্জক।

তবে ব্লক হাউজিং ব্যাপারটা কী? এর ধরনধারণ কেমন, কত রকম হতে পারে, সুবিধাগুলো কী কী? এটা সাধারণ মানুষকে বোঝানোর প্রয়োজন আছে। তা ছাড়া একটি বড় রকমের চ্যালেঞ্জ হলো, ঢাকা শহরে পরিকল্পিত গৃহায়ণ এখনো রাজউকের প্লট প্রথায় বন্দী। সেখান থেকে বের হয়ে আসার পথ কে দেখাবে? শুরুটা রাজউককেই করতে হবে।

এমআরটির মতো রেলপথে স্টেশন ও স্টেশন এলাকার বিকাশ একটি সাধারণ স্বীকৃত কৌশল। তবে এ ব্যাপারে ড্যাপ খসড়ায় বিশদ আলোচনা পাই না। টোকিও শহর সেই ষাটের দশকে এবং সম্প্রতি সিঙ্গাপুর ও ব্যাংকক প্রতিটি শহর নতুনভাবে বিকশিত হয়েছে গণযোগাযোগ লাইনের স্টেশন ধরে।

ব্লক হাউজিংকে অন্যভাবে বোঝার উপায় হচ্ছে আরবান ফরম। অর্থাৎ একটা ছোট এলাকা ধরে বাড়িঘরের বিন্যাস দিয়ে মানুষ কীভাবে একত্র হবে। ব্লক হাউজিং বা আরবান ফরমের ধরন দিয়ে নির্ধারিত হতে পারে জনঘনত্ব, সর্বজনীন সাধারণ পরিসরের ব্যবহার, নাগরিক সুবিধাসংবলিত বাসস্থান ব্যবস্থা ও পরিবেশগত উৎকর্ষ।

তবে এ ক্ষেত্রে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো, গৃহায়ণের এই ধরন কীভাবে ঘনবসতিপূর্ণ ও বর্তমানে নির্মিত এলাকায় প্রয়োগ করা যাবে। জুরাইন, বাসাবো বা শেওড়াপাড়ার মতো জায়গায় যেখানে জমির মালিকানার প্রকৃতি বেশ জটিল, সেসব এলাকায় কীভাবে ব্লক হাউজিংয়ের ধারণা প্রবর্তন করা যায়? জটিল হলেও নগরকে বাসযোগ্য করতে নতুন ভাবনা ভাবতে হবে। যেমন মালিকানার অংশের ওপর ভিত্তি করে জমিগুলোকে একত্র করে গুচ্ছ আবাসন তৈরি করা যেতে পারে।

পাবলিক স্পেস শহরের জীবন

বাড়িঘর, দালানকোঠা যতই জাঁকজমকপূর্ণ হোক না কেন, সেগুলোর সমষ্টিকে কখনোই একটি সফল শহর বলা যায় না। আদর্শ শহর মানে বাড়িঘর আর জনপরিসর বা পাবলিক প্লেসের বুনন।

যেকোনো মানবিক ও সিভিক শহরের প্রতীক হলো শহরের জনপরিসর। দুর্ভাগ্যবশত, পাবলিক স্পেস বা জনপরিসরের কথা শহর নিয়ে তর্ক-বিতর্কেও অবর্তমান। ড্যাপ খসড়াতেও এর বিশেষ আলোচনা নেই।

ইরানের ইস্পাহান শহরের ময়দান-ই-শাহ, ভারতের কলকাতার গড়ের মাঠ, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের সেন্ট্রাল পার্ক বা ইতালির ভেনিসের সেন্ট মার্কস স্কয়ার—এ রকম মাপের জনপরিসর ঢাকা শহরে নেই। এমনকি পাড়াভিত্তিক জনপরিসরেরও বড় অভাব। যতটুকু ছিল, যেমন সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা, সেখানেও এখন জনগণের প্রবেশ নিষিদ্ধ। শাহবাগ প্রতিবাদ বা জটলা করার জায়গা হতে পারে, তবে চার রাস্তার ক্রসিং কোনোভাবেই জনপরিসর নয়। একে বড়জোর গণপরিসর বলতে পারি।

জনপরিসর পরিকল্পিতভাবে তৈরি করতে হয়, সাধারণ মানুষের ব্যবহারোপযোগী করে তুলতে হয়। ড্যাপ খসড়ায় খোলা জায়গার কথা বলা আছে, কোথায় সেই খোলা জায়গা হবে, সেটার নির্দেশনা আছে। তবে খোলা জায়গা মানেই জনপরিসর নয়। বন এলাকা জনপরিসর নয়, দুটো বাড়ির মধ্যে সেট ব্যাক জনপরিসর নয়। আবার অন্যদিকে ফুটপাত হলো সত্যিকার জনপরিসর।

আমরা মনে করি, সামাজিকভাবে কার্যকর ও মানবিক শহর তৈরি করতে হলে জনপরিসর নিয়ে আরও নিষ্ঠার সঙ্গে ভাবনাচিন্তা এবং যথাযথ প্রস্তাব তৈরি করা দরকার। এ জন্য চাই জনপরিসর ধারণাটির প্রাতিষ্ঠানিক ও আইনি স্বীকৃতি। এর সঙ্গে চাই জনপরিসর তৈরি ও ব্যবহারের বিশেষ বিধিমালা। তবেই ঢাকা শহর সবার জন্য হয়ে উঠবে প্রাণোচ্ছল ও মানবিক।

বিজ্ঞাপন
মন্তব্য করুন

অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন

Leave a Reply

পরিবেশ

ছাদ বাগানের জন্য কয়েকটি টিপস

ছাদ বাগানীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। টবে, ড্রামে গাছ লাগানো হয়। কেউ ফল, কেউবা সবজির গাছ লাগান। কেউ সফল হন। কেউ সফল হন না। ছোট ছোট কিছু ভুল বাগানীরা করে থাকেন। সে কারণে যত্ন নিলেও ফল আসে না। এখানে ছাদ বাগানীদের জন্য কিছু টিপস দেয়া হলো, যা মানলে সফলতা পাওয়া সহজ হতে পারে।

প্রথমেই মনে রাখতে হবে, টবে বা ড্রামে গাছ লাগালে তাকে খাবার দিতে হবে। প্রকৃতিতে বিদ্যমান গাছের মতো সে খাবার সংগ্রহ করতে পারে না। রোগ-বালাই হলো কিনা সেটাও বুঝে ব্যবস্থা নিতে হবে। ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে।

১. মাটির সাথে অবশ্যই কিছু কোকোপিট মেশাবেন। গাছের গোড়া স্যাতস্যাতে হতে দিবেন না। স্যাতস্যাতে হলে অসংখ্য রোগ হবে। মাটি ভেজা থাকবে তবে স্যাতস্যাতে না। কেকোপিট মেশালে পানি কম দিলেও হবে। কোকোপিট (নারকেলের ছোবলার গুড়া) পানি ধরে রাখে। অতি বৃষ্টি হলে গোড়ায় পানি জমতে দেয় না। হালকা হওয়ায় ছাদে ওজনের চাপ পড়ে না। এছাড়া কোকোপিটে কিছু পুষ্টি উপাদান আছে। যা গাছের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। কোকোপিটে চারা দ্রুত গজায়, বড় হয়। মাটির চেয়ে কোকোপিটে চারা ভালো হয়।

২. গাছের জন্য বিরিয়ানি হলো সরিষার খৈল-পচা পানি। মাটির হাড়িতে খৈল পচাতে হবে। কমপক্ষে ৫ দিন। ৭ দিন কিংবা বা ১৫ দিন হলে উত্তম। অল্প পানিতে পচিয়ে তার সাথে আরো পানি মিশিয়ে দিতে হবে। এটি গাছের জন্য অত্যন্ত উপকারী। একটু গন্ধ হয়, তাই অল্প একটু গুড় দিতে পারেন। ছাদে হাড়িতে পচালে বাসায় গন্ধ আসবে না। বৃষ্টির সময় খৈল-পচা পানি দেবেন না। পুকুরের নিচে থাকা পাক কাদা গাছের জন্য খুব উপকারী।

৩. আমরা জানি, মাটিতে অসংখ্য ক্ষতিকর ছত্রাক থাকে। যা গাছকে মেরে ফেলার জন্য যথেস্ট। তাই মাটি রেডি করার সময় কিছুটা বায়োডামা সলিট দিবেন। এটি উপকারী ছত্রাক। মাটিতে ক্ষতিকারক উপাদানগুলো মেরে ফেলে। আবার জৈব সারের কাজও করে। গাছের জন্য মাটি হবে ঝুরঝুরে, হালকা।

৪. যাই লাগান না কেন, ভালো জাতের বীজ কিনা নিশ্চিত হয়ে নেবেন। ভালো বীজে ভালো ফসল হবে। নতুবা যতই যত্ন নেন না কেন, সব পরিশ্রম বেলাশেষে জলে যাবে। বীজ থেকে নিজে চারা করা উত্তম। কারণ বাজার থেকে যে চারা কিনবেন সেটার জাত ভালো হবে সে নিশ্চয়তা কোথায়? ছত্রাকনাশক দিয়ে বীজ শোধন করে নেয়া উত্তম। পদ্ধতি হলো- ছত্রাকনাশক দেয়া পানিতে কিছুটা সময় বীজ ভিজিয়ে রাখতে হবে। ম্যানসার, মেটারিল দুটি ছত্রাকনাশক।

৫. গাছ বেশি তো ফলন বেশি- এটি ভুল ধারণা। অল্প জায়গায় বেশি গাছ লাগানো যাবে না। গাছ পাতলা করে লাগাতে হবে। বেশি লাগালে গাছ প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাবে না। একটি ফলের ক্রেটে মাত্র দুটি গাছ। একটি টবে একটি গাছ। ক্রেট বা টবে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।

৬. ছাদে মাচা দেয়া সমস্যা। কারণ ঘুঁটি থাকে না। এ জন্য ফলের ক্রেটের চারপাশে লাঠি বেঁধে সহজে মাচা দেয়া যায়। লতাপাতা জাতীয় গাছ লাগানোর পাত্র একটু গভীর হলে উত্তম। গাছের জন্য সবচেয়ে বেশি ভালো জৈব সার হলো পাতা-পচা সার, তারপর ভার্মি কম্পোস্ট, তারপর গোবর সার। পাতা-পচা সার সহজলভ্য নয়। দাম বেশি। কিন্তু ভার্মি কম্পোস্ট সহজলভ্য। মাটির সঙ্গে মিনিমাম ৪০% জৈব সার দেয়া উত্তম।
৭. নিম কীটনাশককে ক্ষতিকারক পোকা-মাকড় খুব অপছন্দ করে। এটি দিলে তারা বিরক্ত বোধ করে। গাছে বাসা বাঁধতে পারে না। প্রতি সাত দিনে একবার সব গাছের পাতায় নিম কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। মাসে একবার ইপসম সল্ট স্প্রে করে দেয়া উত্তম। একইভাবে মাসে একবার পানির সঙ্গে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড মিশিয়ে স্প্রে করা ভালো।

৮. ডাটা, পুইশাক, লালশাক, ধনেপাতা এসব লাগাতে পারেন। মাত্র ২৫ দিনে খেতে পারবেন। লালশাক লাগালে নেট দিয়ে ঘিরে দেবেন। শাকপাতা লাগালে দ্রুত আউটপুট পাবেন। যা আপনাকে প্রেরণা দেবে। পুইশাক গাছের পাতায় দাগ হলে পাতা কেটে দিন। অথবা ছত্রাকনাশক স্প্রে করেন। অথবা গাছ উঠিয়ে আবার লাগান। ইউরিয়া সার দিলে পুইশাক দ্রুত বাড়বে। শশা গাছের বৃদ্বির জন্য ডিএপি সার দিলে ভালো হবে। শশা গাছে ছাড়া ছাড়া ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হয়। খুব রোদ, গাছের গোড়ায় মালচিং করে দিয়ে উত্তম ফল মিলবে। মালচিং হলো গাছের গোড়ায় বিশেষ পলিথিন কিংবা শুকনো পাতা, খড় দিয়ে ঢেকে দেয়া।

৯. ফুল আসার পরে প্রানোফিক্স অথবা মিরাকুরান গাছের পাতায় শেষ বিকালে স্প্রে করবেন। বাসায় দুইটি গ্রুপের ছত্রাকনাশক রাখা ভালো। যেমন- ম্যানসার, মেটারিল। ১৫ দিনে একবার স্প্রে করবেন। এগরোমিন্ড গোল্ড অনুখাদ্য বা অন্য কোনো অনুখাদ্য বাসায় রাখতে হবে। মাসে কমপক্ষে একবার স্প্রে করবেন। অতিরিক্ত গরম, বৃষ্টি, খাদ্যের অভাব, গাছ রোগাক্রান্ত, আবহাওয়া দ্রুত আপডাউন করা ইত্যাদি কারণে ফুল ঝরে পড়তে পারে। আবার পরাগায়ন না হলে ঝরে পড়তে পারে। এ জন্য হাতের মাধ্যমে পরাগায়ন করতে হবে। পুরুষ ফুলের পরাগদণ্ড নারী ফুলে গর্ভে ঘষে দিতে হবে।

১০. ছাদ বাগানে গাছ মারা যাওয়ার অন্যতম কারণ পানি বেশি বা কম দেয়া। যতটুকু লাগে ঠিক ততটুকু পানি দিতে হবে। কোন গাছের কি চাহিদা, রোগ একটু স্টাডি করলে সহজে সফল হতে পারবেন।

১১. গাছের পাতার নিচে খেয়াল করবেন। বেগুন গাছের পোকা মারার জন্য সেক্স ফোরেমান ফাঁদ লাগাবেন। ডগা ছিদ্র বা ফল ছিদ্র হলে সাইপারমেত্রিন গ্রুপের কীটনাশক দিতে হবে। একটি বেগুন গাছ অনেক দিন ফল দেয়। ঢেড়স গাছ বেশি রোদ পড়ে এমন জায়গায় লাগাবেন। বেগুন, ঢেড়স, লালশাক, পুইশাক, ধনেপাতা, ডাটা শাক- এসব গাছের খুব যত্ন করতে হয় না।

১২. রসুন আর লবঙ্গ বেটে সেই পানি গাছে স্প্রে করলে পোকা কম আসবে। মরিচ গাছে নেপথলিন বেঁধে দিন, পোকা কম আসবে। পাতা কোকড়ালে ভার্মিটেক কিংবা এবোম কীটনাশক দিন। কোকড়ানো পাতা ফেলে দিন। মরিচ গাছে দশ দিন পর পর ডায়মেথট গ্রুপের (যেমন টাফগর) কীটনাশক দিলে উপকার হবে। সবকিছু করছেন, তারপরও কাজ হচ্ছে না। এক্ষেত্রে গাছের জায়গা বদল করেন, উঠিয়ে অন্যত্র লাগান।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

দৈনন্দিন

নিপাহ্‌ ভাইরাসঃ খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়

নিপাহ্‌ ভাইরাস খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়
নিপাহ্‌ ভাইরাস খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়
খেজুরের রস সংগ্রহের প্রক্রিয়া।

শীতকাল এলেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে খেজুরের রস খাওয়ার চল বেড়ে যায়। অনেকে গাছ থেকে খেজুরের কলসি নামিয়ে সরাসরি কাঁচা রস খেয়ে থাকেন।

আবার অনেকে এই রস চুলায় ফুটিয়ে সিরাপ, পায়েস বা ক্ষীর বানিয়ে খান। এছাড়া রসের তৈরি ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়, ভেলি গুড়, বালুয়া গুড়, মিছরি গুড়সহ নানা ধরণের পিঠার বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।

নিপাহ্‌ ভাইরাস আতঙ্ক

খেজুর আরব দেশের প্রচলিত ফল হলেও ওইসব দেশে খেজুর, মূলত ফল উৎপাদননির্ভর, যেখানে কিনা বাংলাদেশের খেজুর গাছ রস উৎপাদননির্ভর।

কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, বাংলাদেশে সাধারণত কার্তিক থেকে মাঘ অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ হয়ে থাকে।

দেশটির সবচেয়ে বেশি রস সংগ্রহ হয় যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে।

মূলত খেজুর গাছের ডালপালা পরিষ্কার করে, ডগার দিকের কাণ্ড চেঁছে তাতে একটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি চোঙ বসিয়ে দেয়া হয়। চোঙের শেষ প্রান্তে ঝুলিয়ে দেয়া হয় একটি মাটির হাড়ি বা কলসি।

সেই চোঙ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রস এসে জমা হতে থাকে মাটির হাড়ি বা কলসিতে। এভাবে একটি গাছ থেকে দৈনিক গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লিটার রস সংগ্রহ করা যায় বলে কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গিয়েছে।

কিন্তু গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে নিপাহ্‌ ভাইরাস আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

পরিবেশ

জেনে নিন এই মরসুমে কোন কোন ঔষধি উদ্ভিদের চাষ আপনার জন্য সেরা

দেশের বিভিন্ন রাজ্যেই বর্ষার (Monsoon 2021) প্রভাবে চলছে বৃষ্টিপাত। এসময় কৃষকেরা খারিফ শস্য (Kharif Crops) বপনে তৎপর হয়ে ওঠেন। এই খরিফ মরসুমে কৃষকভাইরা সাধারণত অঞ্চলভেদে ধান, অড়হর, সোয়াবিন সহ বিভিন্ন চাষে মনযোগ দিয়ে থাকেন ৷ তবে এসব ছাড়াও, ঔষধি গুন সমৃদ্ধ (Medicinal Crops) গাছ চাষে বর্ষায় যে কতটা লাভ হতে পারে সে সম্পর্কে অনেকেই হয়তো জানেন না৷

বিশেষ করে বর্ষাকালেই এমন বহু ঔষধি গুন সম্পন্ন গাছ রয়েছে যাদের চাষ হতে পারে লাভজনক৷

বর্ষাকালে কোন কোন ঔষধি উদ্ভিদের চাষ করা যেতে পারে অথবা এই চাষ কীভাবেই বা করা যাবে সে বিষয়ে সঠিক তথ্য না পাওয়ার কারণেই অনেকের কাছে বিষয়টি অধরা৷ চলুন এই প্রতিবেদনে এমনই কিছু গাছ নিয়ে আলোচনা করা যাক যা কৃষকদের জন্য হতে পারে লাভদায়ক৷ তবে সঠিক সময়ে, সঠিক রোপন, সেচ, কীটনাশক দেওয়ার প্রয়োজন এগুলিতে, না হলে এর ওপর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে৷

অশ্বগন্ধা –

বর্ষায় এর চাষ ভালো৷ জুন থেকে অগস্ট পর্যন্ত এর চাষ করতে পারেন৷ এর বিভিন্ন জাত রয়েছে৷ উন্নত মানের গাছের চাষে কৃষকের লাভের পরিমাণও বৃদ্ধি পেতে পারে৷ উল্লেখ্য, প্রতি হেক্টরে ৫ কিলোগ্রাম বীজ ব্যবস্থা করতে হবে৷ যদি কেউ ১ হেক্টর জমিতে অশ্বগন্ধার চাষ করতে চায় তাহলে তাকে প্রায় ৫০০ বর্গমিটারে নার্সারি তৈরি করতে হবে৷ প্রায় ১ সেন্টিমিটার গভীরে বীজ বপন করতে হবে৷

শতমূলী –

শীত বাদ দিয়ে বছরের যে কোনও সময়ে এই গাছের চাষ করতে পারেন৷ বর্ষাকালে এই চারা রোপন করলে সহজেই তা বেড়ে উঠতে থাকে৷ তবে বীজ বপনের আগে বীজ ১ দিন পর্যন্ত হালকা গরম জলে ভিজিয়ে রাখতে হয়৷

যষ্টিমধু –

জুলাই থেকে অগস্ট পর্যন্ত এর চাষ করা হয়৷ আর তাই জুন থেকেই এর প্রস্তুতি শুরু করে দেন কৃষকেরা৷ জলনিকাশি ব্যবস্থা উচ্চমানের হওয়া প্রয়োজন এই গাছ চাষের জন্য৷ মনে রাখতে হবে এর চাষের আগে জমিতে কমপক্ষে ১৫ টন গোবর সার দেওয়া প্রয়োজন, এরপরেই এটি চাষ করা উচিত৷

ঘৃতকুমারী –

এর ভালো উৎপাদনের জন্য জলনিকাশি ব্যবস্থা ঠিক রাখতে হবে৷ এই ধরনের ঔষধি গুনসম্পন্ন গাছ শীতকাল বাদ দিয়ে যে কোনও সময় চাষ করতে পারেন৷ বর্ষাকালে দূরত্ব রেখে বীজ বপন করতে হবে৷ কম সময়ের মধ্যেই ব্যবহারোপযোগী হয়ে ওঠে এগুলি৷

অগ্নিশিখা বা কলিহারি –

এটি চাষের জন্য কৃষকেরা জুন মাসেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন৷ জুলাইয়ে ভালো বৃষ্টিতে এর চাষ শুরু করা যেতে পারে৷ উল্লেখ্য, ১ হেক্টর জমির জন্য প্রায় ১০ ক্যুইন্টাল কন্দের প্রয়োজন৷ এটি চাষের আগেও জমিতে গোবর সার প্রয়োগ করে তা প্রস্তুত করে নিতে হবে৷

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

পরিবেশ

শিখে নিন টবে দারুচিনির চাষের কৌশল

পৃথিবীতে ভোজ্য মসলা যতরকম আছে তারমধ্যে দারুচিনি সবথেকে উল্লেখযোগ্য। এই প্রাচীনতম মসলা বহুদিন ধরে ওষধি হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে চলেছে। এছাড়াও খাবারে স্বাদ বাড়ানো থেকে শুরু করে, পানীয় এবং তরল মশলাদার খাবারে স্বাদ বাড়ানোর জন্যও এই দারচিনির ব্যবহার হয়। এলাচ, গোলমরিচ, লবঙ্গের সাথে সাথে দারুচিনির নামও মসলা হিসেবে একই পংক্তিতে উচ্চারিত হয়। বহু কৃষক দারুচিনির চাষ করে ভীষণভাবে উপকৃত হয়েছেন। বাজারে এই দারুচিনির চাহিদা প্রচুর পরিমানে থাকায়, এই চাষে ভালো লাভ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও সৌখিন মানুষেরাও ভালোবেসে দারুচিনির চাষ বাড়িতে করে থাকেন। দারুচিনি গাছের বাকল, ফুল, কুঁড়ি, পাতা, ফল, শেকড় সবকিছুই কাজে লেগে যায়। দারুচিনি গাছ বাড়িতে চাষ করতে গেলে ঘরে ছাদে দুই জায়গাতেই চাষ করা যায়।

মনে রাখতে হবে এই চাষ করতে গেলে উপযুক্ত পরিমানে রোদ দরকার। বাংলার জলবায়ুতে মূলত শীতকালে এই চাষ করা সবথেকে ভালো। জানুয়ারি মাসে দারুচিনি গাছে ফুল ফোটা আরম্ভ করে, এবং এই গাছের ফল পাকতে আরম্ভ করে জুলাইয়ে। সেইসময়ই ফল থেকে বীজ সংগ্রহ করে নিয়ে এসে বাগানে বা টবে রোপন করে দেওয়া উচিত।

প্রয়োজনীয় রোদ (Sunlight)

কড়া সূর্যালোক দারুচিনি জন্য প্রয়োজনীয়, তাই এটি পর্যাপ্ত রোদ পাওয়া যায় এমন জায়গায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দারুচিনি রোপন করতে গেলে রৌদ্রোজ্জ্বল স্থান যেমন জানালার ধারে, ব্যালকনি কিংবা ছাদের খালি স্থান ব্যবহার করতে হবে।

উপযুক্ত মাটি (Soil)

দারুচিনি চাষের জন্য ভাল মানের মাটি ব্যবহার করা আবশ্যক। বাগানের মাটি ব্যবহার না করাই ভালো, কেননা এতে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। অনে সময় আমরা আশেপাশ থেকে মাটি নিয়েই টব ভরে গাছ লাগানো হয়।  বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সংবেদনশীল গাছগুলোতে এই উপায় কার্যকরী হয় না। নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভাল এমন মাটি ব্যবহার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে উত্তম নিষ্কাশনযুক্ত বেলে দোআঁশ মাটি ব্যবহার করা সবথেকে উত্তম। জেনে রাখা ভালো দারুচিনি খরা একদমই সহ্য করতে পারে না। মাটির বিকল্প হিসেবে ১৫% ট্রাইকোকমপোস্টযুক্ত কোকোডাস্ট ব্যবহার করা যেতে পারে।

বাইরে চাষ করার জন্য এক মিটার (৩০ সেন্টিমিটার গভীর) পর্যন্ত গর্ত করে মাটি দিয়ে পূরণ করে নিতে হবে। ঘরের ভিতরে বা ছাদবাগানের দারুচিনি চাষের জন্য একটি বড় পাত্র প্রয়োজন হবে।

রোপন (Planting)

দারুচিনির বীজ সংগ্রহও করা যায় অথবা নার্সারি থেকে দারুচিনির গাছ কিনেও আনা যায়।

বাইরে চাষের ক্ষেত্রে

দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে ১ মিটার x ১ মিটার এবং ৩০ সেমি গভীরতায় খনন করে মাটি দিয়ে গর্তটি পূরণ করতে হবে।

ঘরের মধ্যে টবে রোপনের ক্ষেত্রে

নিচে গর্ত সহ বড় সিরামিক পাত্র (৬০ x ৫০ সেমি) ব্যবহার করতে হবে। পাত্রটি মাটি বা কোকোডাস্ট দিয়ে পূরণ করে নিতে হবে। ৩০ সেন্টিমিটার গভীরতা এবং ৩০ সেন্টিমিটার প্রস্থের একটি গর্ত তৈরি করতে একটি বাগান ট্রোয়েল ব্যবহার করে নেওয়া ভালো। বীজ ব্যবহার করলে  ১.৫ সেন্টিমিটার গভীর গর্ত তৈরি করে নেওয়া উচিত। এবার গাছটি গর্তের মধ্যে রেখে মাটি দিয়ে চাপা দিতে হবে। বীজ ব্যবহার করলে প্রতি ১.৫ সেমি গর্তে একটি করে বীজ পুঁততে হবে এবং মাটি দিয়ে বীজটি ঢেকে দিতে হবে।

মাটি সবসময় ভেজা রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণ জল দিতে হবে। দারুচিনি গাছ পাত্রে রোপন করার পর, টবের নিচের গর্ত থেকে জল বের না হওয়া পর্যন্ত জল দিতে হবে। টবের উপরের ৫ সেন্টিমিটার শুকিয়ে গেলেই আবার গাছটিকে জল দিতে হবে।

গাছের পরিচর্যা (Caring)

দারুচিনি গাছে নিয়মিত সার প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম বছর ৫০ গ্রাম টিএসপি, ৭৫ গ্রাম এমওপি ও ৫০ গ্রাম ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে। প্রতিবছর ২-৩ কেজি ট্রাইকোকম্পোস্ট ও সার প্রয়োগ শেষে একই হারে টিএসপি, এমওপি ও ইউরিয়া দিতে হবে।

দারুচিনি প্রথম ধরতে দুই থেকে তিন বছর সময় নেয় এবং তার পরে প্রতি দুই বছর পরপরই ফসল দিতে থাকে। দারুচিনি গাছ কম করে ১০-১৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। তাই একে নিয়মিত করে ছোট রাখতে হবে। পাঁচ বছর বয়সী দারুচিনি গাছ থেকে নিয়মিত দারুচিনি সংগ্রহের ডাল পাওয়া সম্ভব। দারুচিনি ব্যবহার করার জন্য যে শাখাগুলি কাটা হবে সেগুলি থেকে বাকল তুলে নিতে হবে, বাকলগুলি ব্যবহার করার আগে জলে ভালোভাবে ভিজিয়ে নেওয়া উচিত।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

আঙিনা কৃষি

টবে লাগান মিষ্টি তেঁতুল গাছ

পৃথিবীতে জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, হারিয়ে যাচ্ছে বহু প্রাণী ও উদ্ভিদ বৈচিত্র। চাষবাসের জমিরও সংকুলান ঘটছে সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে। গগনচুম্বী বাড়ি ঘিরে ফেলছে সমস্ত ফাঁকা জমিন। শখ করে মানুষ খোলা জায়গায় যে গাছ লাগবে অথবা ফল-ফুলের চারা সেই উপায়ও আর নেই। গাছ লাগানোর জন্য সামান্য জায়গাও ফাঁকা থাকছে না আর। তবে আমাদের করণীয় কী? বৃক্ষরোপন কি তবে অচিরেই বন্ধ হয়ে যাবে। বেঁচে থাকার জন্য তো গাছ লাগাতে হবেই। বাড়ির একটুকরো বারান্দা অথবা ব্যালকনিতেও সুন্দর ভাবে ইচ্ছা করলে গাছ লাগানো যায়। বাড়ির ছাদেও বানানো যায় সুন্দর বাগিচা। শহরের মানুষদের জন্য ছাদ বাগানের কোনও বিকল্পও নেই। বাড়ির মধ্যেকার ব্যালকনি অথবা ছাদের একটুকরো জমিতেও, ইচ্ছা করলে টবে চাষ করা যায় বিভিন্ন ফুলের ও ফলের গাছ।

শাকসবজি, পেয়ারা, লেবু প্রভৃতি দেশীয় গাছ টবে বাড়তে দেওয়া থেকে শুরু করে বর্তমানে বহু বিদেশী গাছের চারাও মানুষ ব্যালকনি অথবা ছাদে চাষ করছেন। তার মধ্যে থাই মিষ্টি তেঁতুল টবের চাষ পদ্ধতি হিসাবে অত্যন্ত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। প্রথমত মিষ্টি তেঁতুলের চাষ করতে গেলে, নার্সারি থেকে এই বিশেষ তেঁতুলের সঠিক বীজ নিয়ে আনতে হবে। তবে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কলম পাওয়া একটু দুষ্কর কাজ। বুঝে সঠিক চারা নিয়ে আসা বাগান মালিকের উপরেই বর্তায়।

থাই মিষ্টি তেঁতুলের ফুল থেকে ফল ধরতে প্রায় ৭ মাস সময় লাগে। বছরে দু’বার থাই মিষ্টি তেঁতুলের গাছে ফল ধরে। প্রথমবার বর্ষাকালে এবং দ্বিতীয়বার শীতকালে। এই গাছের পরিচর্যা আলাদা করে করার কোনও দরকার পড়ে না। গাছের যত্নআত্তি নিতে হয় ঠিকই, কিন্তু তা বলে, আলাদা করে কোনও বিশেষ যত্ন নিতে হয় না।

গাছ লাগানোর পদ্ধতি (Planting):

থাই মিষ্টি তেঁতুল চাষের জন্য আদর্শ মাটি হল, দো-আঁশ বা বেলে দো-আঁশ মাটি। এই দু’টি মৃত্তিকার মধ্যে যে কোনও একটি বেছে নিন। তারপর বেছে নেওয়া মাটির দুই ভাগ অংশের সাথে গোবর, ১০০ গ্রাম, টিএসপি ১০০ গ্রাম, পটাশ, ২৫০ গ্রাম, হাড়ের গুঁড়ো এবং ৫০ গ্রাম সরিষার খোল একসঙ্গে মিশিয়ে ২০ ইঞ্চি মাপের বড় টবে জল মিশিয়ে রেখে দিতে হবে। ১০ থেকে ১২ দিন পর টবের মাটি ভালো করে খুঁচিয়ে দিয়ে আরও ৪-৫ দিন রেখে দিতে হবে। ৪ থেকে ৫ দিন বাদে মিষ্টি তেঁতুলের একটি ভালো চারা ওই টবে লাগান।

পরিচর্যা(Caring):

চারা লাগানোর প্রথম কয়েক মাস তেমন যত্নের দরকার পড়বে না। অবশ্যই গাছে এই সময়টুকু পর্যাপ্ত জলের যোগান, এবং আগাছা পরিষ্কারের কাজ করতে হবে।  ছয় মাস চারা লাগানোর সময়সীমা ফুরোলেই ১ মাস বাদে বাদে গাছে সরষের খোল মিশ্রিত পচা জল দিতে হবে। মনে রাখতে  হবে খোল দেওয়ার আগে গাছের মাটি খুঁচিয়ে নিতে হবে।

রোগ দমন (Disease management):

সাধারণত থাই মিষ্টি তেঁতুল গাছে পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখা যায় না। কিন্তু বর্ষাকালে অনেক সময় তেঁতুল গাছে ছত্রাক হানা দেয়। এর ফলে তেঁতুল ফেটে যায়। এই অসুবিধার থেকে গাছকে বাঁচাতে হলে, বর্ষাকাল আসার আগেই ভালো ছত্রাকনাশক ওষুধ ১০ দিন অন্তর গাছে স্প্রে করে ছড়িয়ে দিতে হবে।

বাংলার বেজায় টক তেঁতুলের সঙ্গে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কোনও তুলনাই চলে না। অত্যন্ত মিষ্টি খেতে এই তেঁতুল থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়ায় চাষ প্রভূত পরিমাণে হলেও, আমাদের রাজ্য এই ফলের চাষ এখনও ততটা গতি পায়নি। কিন্তু আপনি আপনার ব্যালকনি অথবা ছাদে সহজেই এই থাই তেঁতুলের গাছ লাগাতে পারেন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশক: শাইখ সিরাজ
© ২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। দা এগ্রো নিউজ, ফিশ এক্সপার্ট লিমিটেডের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। ৫১/এ/৩ পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থাপথ, ঢাকা -১২০৫
ফোন: ০১৭১২-৭৪২২১৭
ইমেইল: info@agronewstoday.com, theagronewsbd@gmail.com