আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

পরিবেশ

ডিজিটাল কৃষি বদলে দিচ্ছে কৃষকদের জীবন


প্রযুক্তিগত ব্যবহারে কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক সাফল্য এসেছে। দেশের শিক্ষিত ও তরুণ সমাজও এখন নতুন করে কৃষি কাজের দিকে ঝুঁকে পড়ছে  

মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর উপজেলার মোনাখালী গ্রামের ইসলাম জোয়ার্দার (৫৭) বিরি ধান যা জিংক ধান নামে পরিচিত সেই ধান উৎপাদন করে বদলে ফেলেছেন নিজের জীবন এবং তার চিন্তাধারাকে। তিনি বলেন, “পয়সার জন্য মালেয়শিয়ায় কাজ করেছি। সেখান থেকে যা আয় করতে পারিনি এখন সেই আয় জিংক ধান থেকে করতে পারছি। কয়েক বছর আগে আমি প্রচলিত পদ্ধতিতে আমাদের এলাকায় যে ধান আবাদ হয় সেই ধান উৎপাদন করতাম। কিন্তু অনেক পরিশ্রম করেও ভালো আয় হতো না। এখন জিংক ধান উৎপাদন করে এর তিনগুনের বেশি আয় করতে পারছি। সব খরচ বাদ দিয়ে বছরে আমি ১০-১৫ লাখ টাকা আয় করি।” 

তিনি আর বলেন, “আমাদের দেশের গবেষকরা বিরি জাতের ৫টি জিংক ধান উৎপাদন করেছেন। এ ধানের জন্য উন্নত চাষাবাদ পদ্ধতি এবং যত্ন প্রয়োজন। কৃষিক্ষেত্র ডিজিটাল হওয়ায় এ ধান চাষ করতে তাই কোনো অসুবিধা হচ্ছে না এবং আমরা কৃষি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ব্যাপক সাহায্য সহযোগিতা পাচ্ছি। ” 

একই উপজেলার জটারপুর গ্রামের জিয়াউর রহমান (৩০) আইএ পাসের পর আরো পড়ালেখার ইচ্ছে থাকলেও দরিদ্র বাবাকে সাহায্য করার জন্য পড়ালেখা ছেড়ে চাষাবাদে মনযোগ দেন। জিয়াউর বলেন, “কৃষির বহু বিষয় ডিজিটাল হওয়ায় চাষাবাদ এখন কষ্টকর বা অবহেলিত পেশা নয়। বরং তরুণরা দিন দিন এ পেশায় এগিয়ে আসছে। এখন আমরা কৃষি বিষয়ক নানা ধরনের অ্যাপস ব্যবহার করে অনেক কিছু সহজে ও দ্রুত জানতে পারছি এবং সে অনুযায়ী কাজ করছি। আগে এক বিঘা জমিতে ২১-২২ মণ ধান উৎপাদন হতো, এ বছর আমি একই জায়গায় ৩১ মণ ধান পেয়েছি। আগে জানতাম না কীভাবে সারি করে কত দূরত্ব রেখে চারাগাছ লাগাতে হয় কিংবা বিভিন্ন পোকামাকড়ের আক্রমণ ও রোগব্যাধি হলে সঠিকভাবে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারতাম না। এখন এসব জেনে বুঝে তা প্রয়োগ করতে পারছি।” 

ইসলাম বা জিয়াউরের কথার মাধ্যমে বোঝা যায় কৃষকরা ডিজিটাল হচ্ছেন। কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালে “এটুআই”য়ের প্রযুক্তিগত সাহায্য নিয়ে কৃষিকাজ এবং কৃষকদেরকে ডিজিটাল করার লক্ষ্য নিয়ে কৃষি মন্ত্রণালয় বেশকিছু উদ্যোগ ও পদক্ষেপ নেয়। কৃষিক্ষেত্র ডিজিটাল হওয়ার জন্য তারা এটুআইকে পাইওনিয়র বলে উল্লেখ করেন। প্রযুক্তিগত পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়ে কৃষকের পরিশ্রম কমিয়ে কৃষি কাজকে সহজসাধ্য করার লক্ষ্যে সরকার ডিজিটাল মাধ্যমে নানা উদ্যোগ নিয়েছেন। ই-কৃষি বা উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। কিছু কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে এবং আরো নতুন কিছু করার পরিকল্পনাও রয়েছে সরকারের। এতে কৃষি এবং কৃষকরা অনেক উপকৃত হচ্ছেন বলে কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন।

কৃষকের জানালা 

যে কোনো ফসলের পোকামাকড়জনিত রোগ, সারের ঘাটতিজনিত বা অন্যান্য রোগ হলে এর সমাধান বা পরামর্শের জন্য কৃষি কর্মকর্তাকে রোগাক্রান্ত ফসলের নমুনা দেখিয়ে রোগের লক্ষণের বিবরণ ব্যাখ্যা করে বোঝাতে হয়। এ পরিস্থিতির সহজ সমাধানের জন্য প্রধান ফসলগুলোর সমস্যার ছবি সংগ্রহ করে বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে তা ডাটাবেজে সাজানো হয়েছে। এখানে ছবি দেখে কৃষক বা কৃষি সেবাদানকারী কর্মকর্তা ফসলের সমস্যা চিহ্নিত করতে পারেন এবং ছবিতে ক্লিক করে সমস্যার বিবরণসহ সমাধান পান। এখানে ১২০টির বেশি ফসলের ১,০০০-এর বেশি সমাধান রয়েছে। যা অনলাইন বা অফলাইনের মাধ্যমে ব্যবহার করা যায়। কৃষকের জানালা উদ্যোগটি জাতিসংঘের তথ্যপ্রযুক্তি সংক্রান্ত বিশেষায়িত সংস্থা আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন (আইটিইউ) কর্তৃক ২০১৬ সালে ডব্লিউএসআইএস পুরুস্কার লাভ করেছে। 

বালাইনাশক নির্দেশিকা 

কোনো ফসল কোনো রোগ বা পোকামাকড়ে আক্রান্ত হলে কৃষকরা সাধারণত কীটনাশকের দোকানে গিয়ে দোকানদারের পরামর্শে কীটনাশক কেনেন। এতে তারা সঠিক কীটনাশক বাছাই করতে পারেন না এবং এর সঠিক মাত্রা সম্পর্কেও জানেন না। এজন্য তৈরি হয়েছে “বালাইনাশক নির্দেশিকা”। যার মাধ্যমে একজন কৃষক নিজে বা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মীর সাহায্যে তৎক্ষণাৎ ইন্টারনেটে ভিজিট করে সঠিক বালাইনাশকটি গ্রহণ করতে পারেন। এ অ্যাপ্লিকেশনটি বাংলা ও ইংরেজি দুই ভাষাতেই রয়েছে। এই অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে দেশে অনুমোদিত বালাইনাশকের পাশাপাশি কোন কোম্পানির কি কি বালাইনাশক বাজারে আছে এবং একটি গ্রুপের বালাইনাশক কোন কোন নামে ভিন্ন ভিন্ন কোম্পানি বাজারজাত করেছে তাও জানা যাবে। 

কৃষি বাতায়ন

কৃষি বাতায়ন মূলত ই-কৃষি- যার মাধ্যমে দেশব্যাপী দ্রুত এবং সহজে কৃষি বিষয়ক যে কোনো তথ্য, পরামর্শ বা সেবা প্রদান করা হয়। এটি একটি চলমান প্রকল্প। এতে ইতোমধ্যে ৮২ লাখ কৃষকের ডাটা সংরক্ষণ করা হয়েছে। এটি কৃষক ও কৃষি বিষয়ক একটি সেন্ট্রাল ডাটাবেজ। সারা দেশের কোথায় কোথায় সার ও বালাইনাশকের দোকান রয়েছে এবং সেগুলোর নাম-ঠিকানা, ফোন নম্বরও এখানে রয়েছে। এখানে ৫,৫০০টি হাট-বাজারের তথ্য রয়েছে। এখান থেকে একজন কৃষক জানতে পারবেন তার আশেপাশে কোন কোন বাজার বা হাট রয়েছে এবং আজকে কোথায় কি বাজার বসবে তাও জানা যাবে। 

এখানে সারা দেশের কৃষিজমি, কোন এলাকায় কি ফসল উৎপাদন হয় এবং এসব ফসল কারা উৎপাদন করেন, কারা এসব কাজে কর্মরত তাদের ফোন নম্বরও আছে। জেলা, উপজেলা এবং কেন্দ্রীয়ভাবে বিভিন্ন কৃষি সংগঠনের নাম এবং কারা এর সাথে যুক্ত তাদের নাম ও ফোননম্বর রয়েছে। সরকার কৃষককে কোন সময় কেমন ভর্তুকি দিচ্ছে সেসব তথ্যও রয়েছে। নতুন যে সব রোগ আসছে সে সব সম্পর্কেও এখানে তথ্য থাকবে। এর আগে সরকার যে সব কৃষি পণ্য উৎপাদন করেছে সে বিষয়ে উৎপাদন পদ্ধতিসহ প্রয়োজনীয় সব কিছু রয়েছে। কৃষকরা কি কি প্রশিক্ষণ পেয়েছে, তাদের মোবাইল নম্বরসহ সবকিছু অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। থাকবে কৃষি বিষয়ক নানা তথ্য ও গল্প।   

কৃষকবন্ধু ফোন সেবা (৩৩৩১)

কৃষি বিষয়ক যে কোনো সেবা ও পরামর্শের জন্য সরকার কৃষকবন্ধু ফোনসেবার ব্যবস্থা করেছে। এলাকাভিত্তিকভাবে কৃষকগ্রুপ করা হয়েছে। এতে একজন কৃষক যখন ৩৩৩১ নম্বরে ফোন করেন তখন ঐ এলাকার কৃষি কর্মকর্তার কাছে কলটি দেয়া হয়। যাতে এলাকাভিত্তিক ভাষা কিংবা ফসল বা পোকামাকড়ের নাম ও সমস্যাগুলো তারা সহজে আলোচনা করে সমাধানে আসতে পারেন। এভাবে কৃষি উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি) এবং বিভিন্ন কৃষিপণ্যের বাজারদরও জানা যাবে। ১৫ হাজার কর্মী প্রায় ২ কোটি কৃষককে সহজে এবং দ্রুত এ সেবা দিতে পারছে। 

কৃষি কল সেন্টার (১৬১২৩)

কৃষি কল সেন্টারের ১৬১২৩-এ ফোন করে বিনামূল্যে কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ (গবাদিপশু ইত্যাদি) বিষয়ে সমস্যার তাৎক্ষণিক বিশেষজ্ঞ সমাধান পাওয়া যাবে। 

কৃষি তথ্য ও যোগাযোগ কেন্দ্র (এআইসিসি) স্থাপন

এটি তৃণমূল পর্যায়ে স্থাপিত কৃষকদের মাধ্যমে পরিচালিত একটি আইসিটিভিত্তিক তথ্যসেবা কেন্দ্র। যার মাধ্যমে কৃষকরা নিজেরা নিজেদের মধ্যে তথ্যসেবা গ্রহণ ও বিতরণ করছে। এর মাধ্যমে কৃষি বিষয়ক পরামর্শ অনলাইনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিশেষজ্ঞ দ্বারা দেয়া হচ্ছে। দেশব্যাপী ৪৯৯টি তথ্যকেন্দ্র রয়েছে। 

কৃষি ও পল্লীঋণ সহজীকরণ

এটি একটি চলমান প্রকল্প। চট্রগ্রামে এটি পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হয়েছে। প্রান্তিক চাষীদের কৃষিঋণে ভোগান্তি দূর করার জন্য কৃষি ও পল্লীঋণের প্রক্রিয়াকে অনলাইনের আওতায় আনা হয়েছে। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে বিভিন্ন জায়গায় প্রশিক্ষণও চলছে। এতে কৃষকদের আবেদন করা থেকে শুরু করে ঋণ বিতরণ কার্যক্রমকে অটোমেশনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। এতে কৃষকরা ঋণের সুদের হারও জানতে পারবেন। এতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিল করতে এবং ঋণ অনুমোদিত হলে তারা এসএমএসের মাধ্যমে জানতে পারবেন। পাশাপাশি তারা ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার থেকে সহজেই কৃষিঋণের জন্য অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন। 

এসব অ্যাপস, ওয়েবসাইট, কল সেন্টার ইত্যাদি বাস্তবে কৃষকদের কতটা কাজে লাগছে এবং তারা কি তা ব্যবহার করছে জানতে চাইলে মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আনিসুজ্জামান খান বলেন, “দুই-তিন বছর আগেও কৃষকরা ই-কৃষি বিষয়ে এতটা জানতো না। এখন তারা বিভিন্ন প্রযুক্তি এবং অ্যাপস ব্যবহার করে চাষাবাদ করছেন। যারা এ বিষয়ে জানেন না তারা অন্যদের কাছে বুঝিয়ে নেন। তারা ইউটিউব দেখেও অনেক কিছু শিখছেন। অনেকে জমিতে গিয়ে আমাদের ভিডিও কল দেন। ফসলের সমস্যাগুলো দেখান এবং পরামর্শ নেন।” 

তিনি আরো বলেন, “এখন আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বৃষ্টির সম্ভাবনার থাকলে আমরা কৃষকদের তা জানিয়ে দেই এবং ধান নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে তা কেটে ফেলতে বলি। আবার তাপমাত্রা বেশি হওয়ার সম্ভাবনার থাকলে তাদেরকে জমিতে পানি রাখতে বা সেচ দিতে বলি। এমনকি দু’একদিনের মধ্যে যদি ঝড়ো হাওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাহলে তাদেরকে ফসলে সার প্রয়োগ বা কীটনাশক প্রয়োগ করতে নিষেধ করি। কেননা এ সময় তা কোনো কাজে আসবে না।”  

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক জনাব আজম উদ্দীনের কাছেও এ বিষয়ে আরো বড় কিছু জানা যায়। তিনি বলেন, “বর্ষা মৌসুমে হাওর অঞ্চলে ভারতের মেঘালয় থেকে হঠাৎ পানির ঢল এসে সবকিছু ডুবিয়ে দিত। এতে সেখানকার ফসল ব্যাপকভাবে নষ্ট হতো। কিন্তু গত বছর ‘বাংলাদেশ কৃষি আবহাওয়া তথ্য পোর্টাল’ থেকে এ ঢলের বিষয়ে আগাম খবর জানতে পারি এবং ঘটনার ৯দিন আগে কৃষকদের ধান কাটতে বলি। এভাবে তারা বিরাট ক্ষতির হাত থেকে রেহাই পায়।” 

তিনি আরও বলেন, “ব্যাংকে যেমন প্রত্যেক গ্রাহককে আলাদাভাবে চেনা যায় তেমনি আমরাও উদ্যোগ নিয়েছি যাতে প্রত্যেক কৃষককে আলাদাভাবে চেনা যায় এবং তাদের কী ধরনের চাহিদা বা প্রয়োজন রয়েছে তা যেনো আমরা জানতে পারি এবং সে অনুযায়ী তাদেরকে সেবা দিতে পারি। এ ধরনের লক্ষ্য নিয়ে সরকার কাজ করছে। আগামীতে কৃষি জমির ম্যাপিং, ক্রপ ইন্সুরেন্স ইত্যাদি বিষয়ে কাজ করার কথাও সরকার ভাবছে।”                             

কৃষির এই প্রযুক্তিগত ব্যবহারে কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক সাফল্য এসেছে বলে জানান সাবেক তত্ত্বাবধায়ক  উপদেষ্ঠা এবং পিপিআরসি’র নির্বাহী পরিচালক হোসেন জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, “গত কয়েক বছর দেশ কৃষিতে অনেক এগিয়েছে। ইদানিং কৃষিক্ষেত্রে সরকার যেভাবে ডিজিটাল সেবার ব্যবস্থা করেছেন তাতে কৃষি আরও এগিয়ে যাবে বহুদূর। আমাদের আভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতেও কৃষির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তাই কৃষিক্ষেত্রে আরও বিনিয়োগ বাড়াতে হবে এবং কৃষকদের জন্য ডিজিটাল সেবা আরও সহজ এবং সময়োপযোগী করতে হবে।”

পরিবেশ

ছাদ বাগানের জন্য কয়েকটি টিপস

ছাদ বাগানীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। টবে, ড্রামে গাছ লাগানো হয়। কেউ ফল, কেউবা সবজির গাছ লাগান। কেউ সফল হন। কেউ সফল হন না। ছোট ছোট কিছু ভুল বাগানীরা করে থাকেন। সে কারণে যত্ন নিলেও ফল আসে না। এখানে ছাদ বাগানীদের জন্য কিছু টিপস দেয়া হলো, যা মানলে সফলতা পাওয়া সহজ হতে পারে।

প্রথমেই মনে রাখতে হবে, টবে বা ড্রামে গাছ লাগালে তাকে খাবার দিতে হবে। প্রকৃতিতে বিদ্যমান গাছের মতো সে খাবার সংগ্রহ করতে পারে না। রোগ-বালাই হলো কিনা সেটাও বুঝে ব্যবস্থা নিতে হবে। ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে।

১. মাটির সাথে অবশ্যই কিছু কোকোপিট মেশাবেন। গাছের গোড়া স্যাতস্যাতে হতে দিবেন না। স্যাতস্যাতে হলে অসংখ্য রোগ হবে। মাটি ভেজা থাকবে তবে স্যাতস্যাতে না। কেকোপিট মেশালে পানি কম দিলেও হবে। কোকোপিট (নারকেলের ছোবলার গুড়া) পানি ধরে রাখে। অতি বৃষ্টি হলে গোড়ায় পানি জমতে দেয় না। হালকা হওয়ায় ছাদে ওজনের চাপ পড়ে না। এছাড়া কোকোপিটে কিছু পুষ্টি উপাদান আছে। যা গাছের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। কোকোপিটে চারা দ্রুত গজায়, বড় হয়। মাটির চেয়ে কোকোপিটে চারা ভালো হয়।

২. গাছের জন্য বিরিয়ানি হলো সরিষার খৈল-পচা পানি। মাটির হাড়িতে খৈল পচাতে হবে। কমপক্ষে ৫ দিন। ৭ দিন কিংবা বা ১৫ দিন হলে উত্তম। অল্প পানিতে পচিয়ে তার সাথে আরো পানি মিশিয়ে দিতে হবে। এটি গাছের জন্য অত্যন্ত উপকারী। একটু গন্ধ হয়, তাই অল্প একটু গুড় দিতে পারেন। ছাদে হাড়িতে পচালে বাসায় গন্ধ আসবে না। বৃষ্টির সময় খৈল-পচা পানি দেবেন না। পুকুরের নিচে থাকা পাক কাদা গাছের জন্য খুব উপকারী।

৩. আমরা জানি, মাটিতে অসংখ্য ক্ষতিকর ছত্রাক থাকে। যা গাছকে মেরে ফেলার জন্য যথেস্ট। তাই মাটি রেডি করার সময় কিছুটা বায়োডামা সলিট দিবেন। এটি উপকারী ছত্রাক। মাটিতে ক্ষতিকারক উপাদানগুলো মেরে ফেলে। আবার জৈব সারের কাজও করে। গাছের জন্য মাটি হবে ঝুরঝুরে, হালকা।

৪. যাই লাগান না কেন, ভালো জাতের বীজ কিনা নিশ্চিত হয়ে নেবেন। ভালো বীজে ভালো ফসল হবে। নতুবা যতই যত্ন নেন না কেন, সব পরিশ্রম বেলাশেষে জলে যাবে। বীজ থেকে নিজে চারা করা উত্তম। কারণ বাজার থেকে যে চারা কিনবেন সেটার জাত ভালো হবে সে নিশ্চয়তা কোথায়? ছত্রাকনাশক দিয়ে বীজ শোধন করে নেয়া উত্তম। পদ্ধতি হলো- ছত্রাকনাশক দেয়া পানিতে কিছুটা সময় বীজ ভিজিয়ে রাখতে হবে। ম্যানসার, মেটারিল দুটি ছত্রাকনাশক।

৫. গাছ বেশি তো ফলন বেশি- এটি ভুল ধারণা। অল্প জায়গায় বেশি গাছ লাগানো যাবে না। গাছ পাতলা করে লাগাতে হবে। বেশি লাগালে গাছ প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাবে না। একটি ফলের ক্রেটে মাত্র দুটি গাছ। একটি টবে একটি গাছ। ক্রেট বা টবে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।

৬. ছাদে মাচা দেয়া সমস্যা। কারণ ঘুঁটি থাকে না। এ জন্য ফলের ক্রেটের চারপাশে লাঠি বেঁধে সহজে মাচা দেয়া যায়। লতাপাতা জাতীয় গাছ লাগানোর পাত্র একটু গভীর হলে উত্তম। গাছের জন্য সবচেয়ে বেশি ভালো জৈব সার হলো পাতা-পচা সার, তারপর ভার্মি কম্পোস্ট, তারপর গোবর সার। পাতা-পচা সার সহজলভ্য নয়। দাম বেশি। কিন্তু ভার্মি কম্পোস্ট সহজলভ্য। মাটির সঙ্গে মিনিমাম ৪০% জৈব সার দেয়া উত্তম।
৭. নিম কীটনাশককে ক্ষতিকারক পোকা-মাকড় খুব অপছন্দ করে। এটি দিলে তারা বিরক্ত বোধ করে। গাছে বাসা বাঁধতে পারে না। প্রতি সাত দিনে একবার সব গাছের পাতায় নিম কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। মাসে একবার ইপসম সল্ট স্প্রে করে দেয়া উত্তম। একইভাবে মাসে একবার পানির সঙ্গে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড মিশিয়ে স্প্রে করা ভালো।

৮. ডাটা, পুইশাক, লালশাক, ধনেপাতা এসব লাগাতে পারেন। মাত্র ২৫ দিনে খেতে পারবেন। লালশাক লাগালে নেট দিয়ে ঘিরে দেবেন। শাকপাতা লাগালে দ্রুত আউটপুট পাবেন। যা আপনাকে প্রেরণা দেবে। পুইশাক গাছের পাতায় দাগ হলে পাতা কেটে দিন। অথবা ছত্রাকনাশক স্প্রে করেন। অথবা গাছ উঠিয়ে আবার লাগান। ইউরিয়া সার দিলে পুইশাক দ্রুত বাড়বে। শশা গাছের বৃদ্বির জন্য ডিএপি সার দিলে ভালো হবে। শশা গাছে ছাড়া ছাড়া ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হয়। খুব রোদ, গাছের গোড়ায় মালচিং করে দিয়ে উত্তম ফল মিলবে। মালচিং হলো গাছের গোড়ায় বিশেষ পলিথিন কিংবা শুকনো পাতা, খড় দিয়ে ঢেকে দেয়া।

৯. ফুল আসার পরে প্রানোফিক্স অথবা মিরাকুরান গাছের পাতায় শেষ বিকালে স্প্রে করবেন। বাসায় দুইটি গ্রুপের ছত্রাকনাশক রাখা ভালো। যেমন- ম্যানসার, মেটারিল। ১৫ দিনে একবার স্প্রে করবেন। এগরোমিন্ড গোল্ড অনুখাদ্য বা অন্য কোনো অনুখাদ্য বাসায় রাখতে হবে। মাসে কমপক্ষে একবার স্প্রে করবেন। অতিরিক্ত গরম, বৃষ্টি, খাদ্যের অভাব, গাছ রোগাক্রান্ত, আবহাওয়া দ্রুত আপডাউন করা ইত্যাদি কারণে ফুল ঝরে পড়তে পারে। আবার পরাগায়ন না হলে ঝরে পড়তে পারে। এ জন্য হাতের মাধ্যমে পরাগায়ন করতে হবে। পুরুষ ফুলের পরাগদণ্ড নারী ফুলে গর্ভে ঘষে দিতে হবে।

১০. ছাদ বাগানে গাছ মারা যাওয়ার অন্যতম কারণ পানি বেশি বা কম দেয়া। যতটুকু লাগে ঠিক ততটুকু পানি দিতে হবে। কোন গাছের কি চাহিদা, রোগ একটু স্টাডি করলে সহজে সফল হতে পারবেন।

১১. গাছের পাতার নিচে খেয়াল করবেন। বেগুন গাছের পোকা মারার জন্য সেক্স ফোরেমান ফাঁদ লাগাবেন। ডগা ছিদ্র বা ফল ছিদ্র হলে সাইপারমেত্রিন গ্রুপের কীটনাশক দিতে হবে। একটি বেগুন গাছ অনেক দিন ফল দেয়। ঢেড়স গাছ বেশি রোদ পড়ে এমন জায়গায় লাগাবেন। বেগুন, ঢেড়স, লালশাক, পুইশাক, ধনেপাতা, ডাটা শাক- এসব গাছের খুব যত্ন করতে হয় না।

১২. রসুন আর লবঙ্গ বেটে সেই পানি গাছে স্প্রে করলে পোকা কম আসবে। মরিচ গাছে নেপথলিন বেঁধে দিন, পোকা কম আসবে। পাতা কোকড়ালে ভার্মিটেক কিংবা এবোম কীটনাশক দিন। কোকড়ানো পাতা ফেলে দিন। মরিচ গাছে দশ দিন পর পর ডায়মেথট গ্রুপের (যেমন টাফগর) কীটনাশক দিলে উপকার হবে। সবকিছু করছেন, তারপরও কাজ হচ্ছে না। এক্ষেত্রে গাছের জায়গা বদল করেন, উঠিয়ে অন্যত্র লাগান।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

দৈনন্দিন

নিপাহ্‌ ভাইরাসঃ খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়

নিপাহ্‌ ভাইরাস খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়
নিপাহ্‌ ভাইরাস খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়
খেজুরের রস সংগ্রহের প্রক্রিয়া।

শীতকাল এলেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে খেজুরের রস খাওয়ার চল বেড়ে যায়। অনেকে গাছ থেকে খেজুরের কলসি নামিয়ে সরাসরি কাঁচা রস খেয়ে থাকেন।

আবার অনেকে এই রস চুলায় ফুটিয়ে সিরাপ, পায়েস বা ক্ষীর বানিয়ে খান। এছাড়া রসের তৈরি ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়, ভেলি গুড়, বালুয়া গুড়, মিছরি গুড়সহ নানা ধরণের পিঠার বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।

নিপাহ্‌ ভাইরাস আতঙ্ক

খেজুর আরব দেশের প্রচলিত ফল হলেও ওইসব দেশে খেজুর, মূলত ফল উৎপাদননির্ভর, যেখানে কিনা বাংলাদেশের খেজুর গাছ রস উৎপাদননির্ভর।

কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, বাংলাদেশে সাধারণত কার্তিক থেকে মাঘ অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ হয়ে থাকে।

দেশটির সবচেয়ে বেশি রস সংগ্রহ হয় যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে।

মূলত খেজুর গাছের ডালপালা পরিষ্কার করে, ডগার দিকের কাণ্ড চেঁছে তাতে একটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি চোঙ বসিয়ে দেয়া হয়। চোঙের শেষ প্রান্তে ঝুলিয়ে দেয়া হয় একটি মাটির হাড়ি বা কলসি।

সেই চোঙ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রস এসে জমা হতে থাকে মাটির হাড়ি বা কলসিতে। এভাবে একটি গাছ থেকে দৈনিক গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লিটার রস সংগ্রহ করা যায় বলে কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গিয়েছে।

কিন্তু গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে নিপাহ্‌ ভাইরাস আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

পরিবেশ

জেনে নিন এই মরসুমে কোন কোন ঔষধি উদ্ভিদের চাষ আপনার জন্য সেরা

দেশের বিভিন্ন রাজ্যেই বর্ষার (Monsoon 2021) প্রভাবে চলছে বৃষ্টিপাত। এসময় কৃষকেরা খারিফ শস্য (Kharif Crops) বপনে তৎপর হয়ে ওঠেন। এই খরিফ মরসুমে কৃষকভাইরা সাধারণত অঞ্চলভেদে ধান, অড়হর, সোয়াবিন সহ বিভিন্ন চাষে মনযোগ দিয়ে থাকেন ৷ তবে এসব ছাড়াও, ঔষধি গুন সমৃদ্ধ (Medicinal Crops) গাছ চাষে বর্ষায় যে কতটা লাভ হতে পারে সে সম্পর্কে অনেকেই হয়তো জানেন না৷

বিশেষ করে বর্ষাকালেই এমন বহু ঔষধি গুন সম্পন্ন গাছ রয়েছে যাদের চাষ হতে পারে লাভজনক৷

বর্ষাকালে কোন কোন ঔষধি উদ্ভিদের চাষ করা যেতে পারে অথবা এই চাষ কীভাবেই বা করা যাবে সে বিষয়ে সঠিক তথ্য না পাওয়ার কারণেই অনেকের কাছে বিষয়টি অধরা৷ চলুন এই প্রতিবেদনে এমনই কিছু গাছ নিয়ে আলোচনা করা যাক যা কৃষকদের জন্য হতে পারে লাভদায়ক৷ তবে সঠিক সময়ে, সঠিক রোপন, সেচ, কীটনাশক দেওয়ার প্রয়োজন এগুলিতে, না হলে এর ওপর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে৷

অশ্বগন্ধা –

বর্ষায় এর চাষ ভালো৷ জুন থেকে অগস্ট পর্যন্ত এর চাষ করতে পারেন৷ এর বিভিন্ন জাত রয়েছে৷ উন্নত মানের গাছের চাষে কৃষকের লাভের পরিমাণও বৃদ্ধি পেতে পারে৷ উল্লেখ্য, প্রতি হেক্টরে ৫ কিলোগ্রাম বীজ ব্যবস্থা করতে হবে৷ যদি কেউ ১ হেক্টর জমিতে অশ্বগন্ধার চাষ করতে চায় তাহলে তাকে প্রায় ৫০০ বর্গমিটারে নার্সারি তৈরি করতে হবে৷ প্রায় ১ সেন্টিমিটার গভীরে বীজ বপন করতে হবে৷

শতমূলী –

শীত বাদ দিয়ে বছরের যে কোনও সময়ে এই গাছের চাষ করতে পারেন৷ বর্ষাকালে এই চারা রোপন করলে সহজেই তা বেড়ে উঠতে থাকে৷ তবে বীজ বপনের আগে বীজ ১ দিন পর্যন্ত হালকা গরম জলে ভিজিয়ে রাখতে হয়৷

যষ্টিমধু –

জুলাই থেকে অগস্ট পর্যন্ত এর চাষ করা হয়৷ আর তাই জুন থেকেই এর প্রস্তুতি শুরু করে দেন কৃষকেরা৷ জলনিকাশি ব্যবস্থা উচ্চমানের হওয়া প্রয়োজন এই গাছ চাষের জন্য৷ মনে রাখতে হবে এর চাষের আগে জমিতে কমপক্ষে ১৫ টন গোবর সার দেওয়া প্রয়োজন, এরপরেই এটি চাষ করা উচিত৷

ঘৃতকুমারী –

এর ভালো উৎপাদনের জন্য জলনিকাশি ব্যবস্থা ঠিক রাখতে হবে৷ এই ধরনের ঔষধি গুনসম্পন্ন গাছ শীতকাল বাদ দিয়ে যে কোনও সময় চাষ করতে পারেন৷ বর্ষাকালে দূরত্ব রেখে বীজ বপন করতে হবে৷ কম সময়ের মধ্যেই ব্যবহারোপযোগী হয়ে ওঠে এগুলি৷

অগ্নিশিখা বা কলিহারি –

এটি চাষের জন্য কৃষকেরা জুন মাসেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন৷ জুলাইয়ে ভালো বৃষ্টিতে এর চাষ শুরু করা যেতে পারে৷ উল্লেখ্য, ১ হেক্টর জমির জন্য প্রায় ১০ ক্যুইন্টাল কন্দের প্রয়োজন৷ এটি চাষের আগেও জমিতে গোবর সার প্রয়োগ করে তা প্রস্তুত করে নিতে হবে৷

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

পরিবেশ

শিখে নিন টবে দারুচিনির চাষের কৌশল

পৃথিবীতে ভোজ্য মসলা যতরকম আছে তারমধ্যে দারুচিনি সবথেকে উল্লেখযোগ্য। এই প্রাচীনতম মসলা বহুদিন ধরে ওষধি হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে চলেছে। এছাড়াও খাবারে স্বাদ বাড়ানো থেকে শুরু করে, পানীয় এবং তরল মশলাদার খাবারে স্বাদ বাড়ানোর জন্যও এই দারচিনির ব্যবহার হয়। এলাচ, গোলমরিচ, লবঙ্গের সাথে সাথে দারুচিনির নামও মসলা হিসেবে একই পংক্তিতে উচ্চারিত হয়। বহু কৃষক দারুচিনির চাষ করে ভীষণভাবে উপকৃত হয়েছেন। বাজারে এই দারুচিনির চাহিদা প্রচুর পরিমানে থাকায়, এই চাষে ভালো লাভ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও সৌখিন মানুষেরাও ভালোবেসে দারুচিনির চাষ বাড়িতে করে থাকেন। দারুচিনি গাছের বাকল, ফুল, কুঁড়ি, পাতা, ফল, শেকড় সবকিছুই কাজে লেগে যায়। দারুচিনি গাছ বাড়িতে চাষ করতে গেলে ঘরে ছাদে দুই জায়গাতেই চাষ করা যায়।

মনে রাখতে হবে এই চাষ করতে গেলে উপযুক্ত পরিমানে রোদ দরকার। বাংলার জলবায়ুতে মূলত শীতকালে এই চাষ করা সবথেকে ভালো। জানুয়ারি মাসে দারুচিনি গাছে ফুল ফোটা আরম্ভ করে, এবং এই গাছের ফল পাকতে আরম্ভ করে জুলাইয়ে। সেইসময়ই ফল থেকে বীজ সংগ্রহ করে নিয়ে এসে বাগানে বা টবে রোপন করে দেওয়া উচিত।

প্রয়োজনীয় রোদ (Sunlight)

কড়া সূর্যালোক দারুচিনি জন্য প্রয়োজনীয়, তাই এটি পর্যাপ্ত রোদ পাওয়া যায় এমন জায়গায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দারুচিনি রোপন করতে গেলে রৌদ্রোজ্জ্বল স্থান যেমন জানালার ধারে, ব্যালকনি কিংবা ছাদের খালি স্থান ব্যবহার করতে হবে।

উপযুক্ত মাটি (Soil)

দারুচিনি চাষের জন্য ভাল মানের মাটি ব্যবহার করা আবশ্যক। বাগানের মাটি ব্যবহার না করাই ভালো, কেননা এতে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। অনে সময় আমরা আশেপাশ থেকে মাটি নিয়েই টব ভরে গাছ লাগানো হয়।  বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সংবেদনশীল গাছগুলোতে এই উপায় কার্যকরী হয় না। নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভাল এমন মাটি ব্যবহার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে উত্তম নিষ্কাশনযুক্ত বেলে দোআঁশ মাটি ব্যবহার করা সবথেকে উত্তম। জেনে রাখা ভালো দারুচিনি খরা একদমই সহ্য করতে পারে না। মাটির বিকল্প হিসেবে ১৫% ট্রাইকোকমপোস্টযুক্ত কোকোডাস্ট ব্যবহার করা যেতে পারে।

বাইরে চাষ করার জন্য এক মিটার (৩০ সেন্টিমিটার গভীর) পর্যন্ত গর্ত করে মাটি দিয়ে পূরণ করে নিতে হবে। ঘরের ভিতরে বা ছাদবাগানের দারুচিনি চাষের জন্য একটি বড় পাত্র প্রয়োজন হবে।

রোপন (Planting)

দারুচিনির বীজ সংগ্রহও করা যায় অথবা নার্সারি থেকে দারুচিনির গাছ কিনেও আনা যায়।

বাইরে চাষের ক্ষেত্রে

দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে ১ মিটার x ১ মিটার এবং ৩০ সেমি গভীরতায় খনন করে মাটি দিয়ে গর্তটি পূরণ করতে হবে।

ঘরের মধ্যে টবে রোপনের ক্ষেত্রে

নিচে গর্ত সহ বড় সিরামিক পাত্র (৬০ x ৫০ সেমি) ব্যবহার করতে হবে। পাত্রটি মাটি বা কোকোডাস্ট দিয়ে পূরণ করে নিতে হবে। ৩০ সেন্টিমিটার গভীরতা এবং ৩০ সেন্টিমিটার প্রস্থের একটি গর্ত তৈরি করতে একটি বাগান ট্রোয়েল ব্যবহার করে নেওয়া ভালো। বীজ ব্যবহার করলে  ১.৫ সেন্টিমিটার গভীর গর্ত তৈরি করে নেওয়া উচিত। এবার গাছটি গর্তের মধ্যে রেখে মাটি দিয়ে চাপা দিতে হবে। বীজ ব্যবহার করলে প্রতি ১.৫ সেমি গর্তে একটি করে বীজ পুঁততে হবে এবং মাটি দিয়ে বীজটি ঢেকে দিতে হবে।

মাটি সবসময় ভেজা রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণ জল দিতে হবে। দারুচিনি গাছ পাত্রে রোপন করার পর, টবের নিচের গর্ত থেকে জল বের না হওয়া পর্যন্ত জল দিতে হবে। টবের উপরের ৫ সেন্টিমিটার শুকিয়ে গেলেই আবার গাছটিকে জল দিতে হবে।

গাছের পরিচর্যা (Caring)

দারুচিনি গাছে নিয়মিত সার প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম বছর ৫০ গ্রাম টিএসপি, ৭৫ গ্রাম এমওপি ও ৫০ গ্রাম ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে। প্রতিবছর ২-৩ কেজি ট্রাইকোকম্পোস্ট ও সার প্রয়োগ শেষে একই হারে টিএসপি, এমওপি ও ইউরিয়া দিতে হবে।

দারুচিনি প্রথম ধরতে দুই থেকে তিন বছর সময় নেয় এবং তার পরে প্রতি দুই বছর পরপরই ফসল দিতে থাকে। দারুচিনি গাছ কম করে ১০-১৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। তাই একে নিয়মিত করে ছোট রাখতে হবে। পাঁচ বছর বয়সী দারুচিনি গাছ থেকে নিয়মিত দারুচিনি সংগ্রহের ডাল পাওয়া সম্ভব। দারুচিনি ব্যবহার করার জন্য যে শাখাগুলি কাটা হবে সেগুলি থেকে বাকল তুলে নিতে হবে, বাকলগুলি ব্যবহার করার আগে জলে ভালোভাবে ভিজিয়ে নেওয়া উচিত।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

আঙিনা কৃষি

টবে লাগান মিষ্টি তেঁতুল গাছ

পৃথিবীতে জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, হারিয়ে যাচ্ছে বহু প্রাণী ও উদ্ভিদ বৈচিত্র। চাষবাসের জমিরও সংকুলান ঘটছে সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে। গগনচুম্বী বাড়ি ঘিরে ফেলছে সমস্ত ফাঁকা জমিন। শখ করে মানুষ খোলা জায়গায় যে গাছ লাগবে অথবা ফল-ফুলের চারা সেই উপায়ও আর নেই। গাছ লাগানোর জন্য সামান্য জায়গাও ফাঁকা থাকছে না আর। তবে আমাদের করণীয় কী? বৃক্ষরোপন কি তবে অচিরেই বন্ধ হয়ে যাবে। বেঁচে থাকার জন্য তো গাছ লাগাতে হবেই। বাড়ির একটুকরো বারান্দা অথবা ব্যালকনিতেও সুন্দর ভাবে ইচ্ছা করলে গাছ লাগানো যায়। বাড়ির ছাদেও বানানো যায় সুন্দর বাগিচা। শহরের মানুষদের জন্য ছাদ বাগানের কোনও বিকল্পও নেই। বাড়ির মধ্যেকার ব্যালকনি অথবা ছাদের একটুকরো জমিতেও, ইচ্ছা করলে টবে চাষ করা যায় বিভিন্ন ফুলের ও ফলের গাছ।

শাকসবজি, পেয়ারা, লেবু প্রভৃতি দেশীয় গাছ টবে বাড়তে দেওয়া থেকে শুরু করে বর্তমানে বহু বিদেশী গাছের চারাও মানুষ ব্যালকনি অথবা ছাদে চাষ করছেন। তার মধ্যে থাই মিষ্টি তেঁতুল টবের চাষ পদ্ধতি হিসাবে অত্যন্ত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। প্রথমত মিষ্টি তেঁতুলের চাষ করতে গেলে, নার্সারি থেকে এই বিশেষ তেঁতুলের সঠিক বীজ নিয়ে আনতে হবে। তবে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কলম পাওয়া একটু দুষ্কর কাজ। বুঝে সঠিক চারা নিয়ে আসা বাগান মালিকের উপরেই বর্তায়।

থাই মিষ্টি তেঁতুলের ফুল থেকে ফল ধরতে প্রায় ৭ মাস সময় লাগে। বছরে দু’বার থাই মিষ্টি তেঁতুলের গাছে ফল ধরে। প্রথমবার বর্ষাকালে এবং দ্বিতীয়বার শীতকালে। এই গাছের পরিচর্যা আলাদা করে করার কোনও দরকার পড়ে না। গাছের যত্নআত্তি নিতে হয় ঠিকই, কিন্তু তা বলে, আলাদা করে কোনও বিশেষ যত্ন নিতে হয় না।

গাছ লাগানোর পদ্ধতি (Planting):

থাই মিষ্টি তেঁতুল চাষের জন্য আদর্শ মাটি হল, দো-আঁশ বা বেলে দো-আঁশ মাটি। এই দু’টি মৃত্তিকার মধ্যে যে কোনও একটি বেছে নিন। তারপর বেছে নেওয়া মাটির দুই ভাগ অংশের সাথে গোবর, ১০০ গ্রাম, টিএসপি ১০০ গ্রাম, পটাশ, ২৫০ গ্রাম, হাড়ের গুঁড়ো এবং ৫০ গ্রাম সরিষার খোল একসঙ্গে মিশিয়ে ২০ ইঞ্চি মাপের বড় টবে জল মিশিয়ে রেখে দিতে হবে। ১০ থেকে ১২ দিন পর টবের মাটি ভালো করে খুঁচিয়ে দিয়ে আরও ৪-৫ দিন রেখে দিতে হবে। ৪ থেকে ৫ দিন বাদে মিষ্টি তেঁতুলের একটি ভালো চারা ওই টবে লাগান।

পরিচর্যা(Caring):

চারা লাগানোর প্রথম কয়েক মাস তেমন যত্নের দরকার পড়বে না। অবশ্যই গাছে এই সময়টুকু পর্যাপ্ত জলের যোগান, এবং আগাছা পরিষ্কারের কাজ করতে হবে।  ছয় মাস চারা লাগানোর সময়সীমা ফুরোলেই ১ মাস বাদে বাদে গাছে সরষের খোল মিশ্রিত পচা জল দিতে হবে। মনে রাখতে  হবে খোল দেওয়ার আগে গাছের মাটি খুঁচিয়ে নিতে হবে।

রোগ দমন (Disease management):

সাধারণত থাই মিষ্টি তেঁতুল গাছে পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখা যায় না। কিন্তু বর্ষাকালে অনেক সময় তেঁতুল গাছে ছত্রাক হানা দেয়। এর ফলে তেঁতুল ফেটে যায়। এই অসুবিধার থেকে গাছকে বাঁচাতে হলে, বর্ষাকাল আসার আগেই ভালো ছত্রাকনাশক ওষুধ ১০ দিন অন্তর গাছে স্প্রে করে ছড়িয়ে দিতে হবে।

বাংলার বেজায় টক তেঁতুলের সঙ্গে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কোনও তুলনাই চলে না। অত্যন্ত মিষ্টি খেতে এই তেঁতুল থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়ায় চাষ প্রভূত পরিমাণে হলেও, আমাদের রাজ্য এই ফলের চাষ এখনও ততটা গতি পায়নি। কিন্তু আপনি আপনার ব্যালকনি অথবা ছাদে সহজেই এই থাই তেঁতুলের গাছ লাগাতে পারেন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশক: শাইখ সিরাজ
© ২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। দা এগ্রো নিউজ, ফিশ এক্সপার্ট লিমিটেডের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। ৫১/এ/৩ পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থাপথ, ঢাকা -১২০৫
ফোন: ০১৭১২-৭৪২২১৭
ইমেইল: info@agronewstoday.com, theagronewsbd@gmail.com