আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

বাংলাদেশ

ঝিনুক থেকে মুক্তা চাষ

ঝিনুক শিল্প আমাদের দেশে একটি সম্ভাবনাময় শিল্পের নাম। মাছ চাষের পাশাপাশি ঝিনুক চাষ করে আমরা পেতে পারি মহামূল্যবান বস্তু ‘মুক্তা’। এতে জলাশয়ের সর্বোচ্চ ব্যবহার সম্ভব। সৌখিনতা ও আভিজাত্যের প্রতীক হলেও মুক্তা কিছুু জটিল রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।

মুক্তা অতি প্রাচীন পৃথিবীখ্যাত মূল্যবান রত্ন। যা জীবন্ত প্রাণি ঝিনুক থেকে পাওয়া যায়। মুক্তা জীবন্ত ঝিনুকের দেহের ভেতরে জৈবিক প্রক্রিয়ায় তৈরি এক ধরনের বস্তু। কোন বাহিরের বস্তু ঝিনুকের দেহের ভেতরে ঢুকে নরম অংশে আটকে গেলে আঘাতের সৃষ্টি হয়। ঝিনুক এই আঘাতের অনুভূতি থেকে উপশম পেতে বাহির থেকে প্রবেশকৃত বস্তুটির চারদিকে একধরনের লালা নিঃসরণ করতে থাকে। ক্রমাগত নিঃসৃত এই লালা বস্তুটির চারদিকে ক্রমান্বয়ে জমাট বেঁধে মুক্তায় পরিণত হয়।

আমাদের দেশে আগে প্রাকৃতিকভাবে প্রচুর পরিমাণ মুক্তা উৎপাদিত হতো। পৃথিবীর ইতিহাসে ১৮৯০ সালে জাপানি বিজ্ঞানি কোকিচি মিকিমোতো সর্বপ্রথম প্রণোদিত উপায়ে মুক্তা চাষে সফল হন। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট ১৯৯৯ সালে স্বাদু পানিতে মুক্তা চাষের পরীক্ষামূলক গবেষণা শুরু করে।

চূর্ণ মুক্তা আয়ুবের্দিক ঔষধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া মুক্তা উৎপাদনকারী ঝিনুকের খোলস অলংকার ও সৌখিন দ্রব্যাদির পাশাপাশি হাঁস-মুরগি, মাছ ও চিংড়ির খাদ্যের প্রয়োজনীয় উপাদান ক্যালসিয়ামের একটি প্রধান উৎস। উন্নত বিশ্বে ঝিনুকের মাংস মানুষের খাদ্য হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট

(বিএফআরআই) দেশে প্রথমবারের মত ইমেজ (প্রতিচ্ছবি) মুক্তা চাষে সফলতা পেয়েছেন। মিঠাপানির ঝিনুক থেকে পাখি, মাছ, নৌকাসহ বিভিন্ন বস্তুর নকশার দৃষ্টিনন্দন ইমেজ মুক্তা উৎপাদনে তারা এই সফলতা পান। উদ্যোক্তা ও গ্রামীণ পর্যায়ে এ প্রযুক্তি ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হলে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি রপ্তানি খাতেও ব্যাপক সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে।

প্রণোদিত উপায়ে ঝিনুক থেকে মুক্তা চাষ প্রযুক্তি অনেকটা সূঁচি শিল্পের মত, যা গ্রামীণ নারীরা সহজে আয়ত্ত করতে পারে। দেখা গেছে গ্রামীণ নারীরা মাত্র ৩-৪ দিনের প্রশিক্ষণে ঝিনুক অপারেশনে দক্ষ হয়ে ওঠে। তাই মুক্তা চাষে নারীদের নিয়োজিত করা গেলে জলাশয়ের সর্বোচ্চ ব্যবহারের পাশাপাশি গ্রামীণ নারীদের দারিদ্র বিমোচনের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন সম্ভব। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট ২০১২ সালে মুক্তা চাষ প্রযুক্তি উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ নামক একটি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু করে। এই প্রকল্পের আওতায় স্বাদু পানির ঝিনুকের উপর মুক্তা বিষয়ক বিভিন্ন ধরনের গবেষণা কাজ পরিচালিত হচ্ছে। তিন ধরনের পদ্ধতি অনুসরণ করে আমরা মুক্তা পেতে পারি।

ম্যান্টল টিস্যু অপারেশন পদ্ধতি: ঝিনুক থেকে মুক্তা তৈরির জন্য ঝিনুকের দেহের ভেতরে ম্যান্টল টিস্যু প্রবেশ করানো হয়। বর্তমানে বিজ্ঞানসম্মতভাবে ঝিনুক থেকে মুক্তা তৈরিতে ম্যান্টল টিস্যু অপারেশন একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি। সুন্দর ও আকর্ষণীয় মুক্তা তৈরির জন্য ঝিনুকে স্বল্প সময়ের মধ্যে নির্ধারিত আকারের ম্যান্টল টিস্যু প্রবেশ করাতে হবে। একটি ঝিনুকে মুক্তা তৈরি করতে অপর একটি ঝিনুককে কেটে ফেলতে হয়। প্রথমে একটি ঝিনুককে কেটে ম্যান্টল টিস্যুর বহিঃত্বক লম্বা করে কেটে বিচ্ছিন্ন করতে হয়। বিচ্ছিন্ন করা টিস্যুটিকে লম্বা করে একটি গ্লাস বোর্ডে রাখতে হয়। লম্বা টিস্যুকে পরে (২-৩*২-৩) মি.মি আকারে টুুকরো করে কাটতে হয়। এরপর টুকরো করা ম্যান্টল টিস্যু অন্য একটি জীবিত ঝিনুকে স্থাপন করতে হয়। এভাবে অপারেশন প্রক্রিয়া সমাপ্ত হয়।

নিউক্লিয়াস অপারেশন পদ্ধতি: নিউক্লিয়াস অপারেশন পদ্ধতি এবং ম্যান্টল টিস্যু অপারেশন পদ্ধতি মোটামুটি একই রকম। এই পদ্ধতিতে ঝিনুকের ভেতর একসাথে ম্যান্টল টিস্যু ও নিউক্লিয়াস প্রবেশ করানো হয়। নিউক্লিয়াসের উপর মুক্তার প্রলেপ পড়ে এবং নিউক্লিয়াসকে ঘিরে মুক্তা তৈরি হয়।

ইমেজ মুক্তা অপারেশন পদ্ধতি: মুক্তা ইমেজ আকারেও উৎপাদন করা সম্ভব। কোন মানুষ, প্রাণি বা বস্তুর ইমেজ আকারে মুক্তা উৎপাদন করা সম্ভব। মোম, ঝিনুকের খোলস, প্লাস্টিক, স্টিল ইত্যাদি পদার্থ দিয়ে ইমেজ তৈরি করা যেতে পারে। এজন্য প্রথমে ইমেজগুলোকে পানিতে ভেজাতে হবে। ঝিনুকের খোলস ৮-১০ মি.মি খুলতে হবে এবং কাঁদা, বালি ইত্যাদি পরিষ্কার করতে হবে। একটি পাতলা পাত দিয়ে খোলসের কিছু অংশ থেকে ম্যান্টল আলাদা করতে হবে। সাবধানতার সাথে ইমেজ ঢুকিয়ে ম্যান্টল গর্ত থেকে বাতাস ও পানি বের করে দিতে হবে।

অপারেশনকৃত ঝিনুকের চাষকৌশল: অপারেশনকৃত ঝিনুককে মাছের সাথে পুকুরে একত্রে চাষ করা সম্ভব। এক্ষেত্রে ঝিনুকগুলো নেট ব্যাগে রেখে দড়ির সাহায্যে পুকুরে ১-১.৫ ফুট গভীরতায় ঝুলিয়ে চাষ করা হয় অথবা সরাসরি জলাশয়ের নিচে ছেড়ে দিয়ে চাষ করা হয়। এরপর মাছ চাষের যে ব্যবস্থাপনা ঠিক সেই ব্যবস্থাপনাতেই মুক্তা চাষ করা হয়। মুক্তা চাষে বাড়তি কোন খাবারের প্রয়োজন নেই। পুকুরে কেবল নিয়মিত চুন ও সার প্রয়োগ করতে হবে। ১৫ দিন অন্তর অন্তর অপারেশনকৃত ঝিনুকগুলো পরিষ্কার করতে হবে।

পুকুরে অপারেশনকৃত ঝিনুকের চাষ পদ্ধতি: বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মুক্তা শিল্পের ভবিষ্যত সম্ভাবনা উজ্বল। কারণ বাংলাদেশে রয়েছে মুক্তা চাষ উপযোগী আবহাওয়া। মুক্তা উৎপাদনের জন্য প্রয়োজন উষ্ণ আবহাওয়া। আমাদের দেশে প্রায় দশ মাসই উষ্ণ আবহাওয়া থাকে যা মুক্তা উৎপাদনে অনুকূল। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বিশেষ করে জাপান, চীন, ভারত প্রণোদিত উপায়ে মুক্তা চাষ করে প্রচুর বৈদিশিক মুদ্রা অর্জন করছে। মুক্তা চাষে পানির অনুকূল তাপমাত্রা হবে ২২-৩০ ডিগ্রি সেন্ট্রিগ্রেড। পুকুরের পানিতে সামান্য প্রবাহ সৃষ্টি করা গেলে ঝিনুকের বৃদ্ধি সাধনে এবং মুক্তা উৎপাদনে সহায়ক হয়। ঝিনুকের খাদ্য গ্রহণ মূলত পরোক্ষ ফুলকার মাধ্যমে। এরা পানিতে বিদ্যমান এলজি, ক্ষুদ্রাকার জুপ্লাংকটন, অণুজীব অর্থাৎ ফাইটোপ্লাংকটন ইত্যাদি জৈব দ্রব্য ছেঁকে খায়। ডায়াটম, গোল্ড এলজি, গ্রিন এলজি, ইউগ্লেনা ইত্যাদি ঝিনুকের উপযোগী প্রাকৃতিক খাদ্য। ঝিনুক চাষের জন্য পানির উপযুক্ত রং হলো হলুদাভ সবুজ এবং স্বচ্ছতা ৩০ সে.মি। ঝিনুক রাখার জন্য আড়াআড়িভাবে পুকুরে নাইলনের মোটা রশি টানাতে হবে। রশির দুইপ্রান্ত বাঁশের খুঁটির সাথে বাঁধতে হবে। পরিমাণমত ফ্লোট বা ভাসান যুক্ত করে রশিটিকে ভাসমান রাখতে হবে। ঝিনুক নেটের ব্যাগে রেখে দড়ির সাহায্যে নাইলনের সুতা দিয়ে ঝুলিয়ে দিতে হবে। শরৎ, হেমন্ত ও বসন্তে নেট ব্যাগ স্থাপনের গভীরতা হবে ২০ সে.মি এবং গ্রীষ্মকালে হবে ৩০-৩২ সে.মি। প্রতিটি নেট ব্যাগে চারটি করে ঝিনুক রাখতে হবে। অপারেশনকৃত ঝিনুক পর্যবেক্ষণে রাখার পর পুকুরে ছাড়তে হবে। পুকুরে প্লাংকটন জন্মাবার পরপরই রুই, গ্রাসকার্প, মৃগেল ইত্যাদি মাছের পোনা পুকুরে ছাড়তে হবে। অপারেশনকৃত ঝিনুকগুলো ১৫ দিন অন্তর অন্তর পরিষ্কার করতে হবে।

একদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে যেমন মুক্তার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে, তেমনি অভ্যন্তরীণ বাজারেও মুক্তার চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে চীন, জাপান, ভিয়েতনামসহ কয়েকটি দেশ প্রণোদিত উপায়ে মুক্তা উত্পাদন করে ব্যাপক অর্থনৈতিক সফলতা লাভ করেছে। বাংলাদেশেও মুক্তা চাষের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের এক হিসেবে ১০ শতাংশের এক পুকুরে মুক্তা চাষে মোট ব্যয় হবে ২৩ হাজার ৬২৪ টাকা। আয় হবে ৬৫ হাজার টাকা। খরচ বাদে মুনাফা ৪১ হাজার ৩৭৬ টাকা। সেইসাথে মাছ চাষ থেকে আয় তো রয়েছেই।

দেশের অভ্যন্তরীণ জলাশয়ের পরিমাণ প্রায় ৪৩.৩৭ লাখ হেক্টর। এরমধ্যে প্লাবন ভূমিসহ মুক্ত জলাশয় ৪০.৪৭ লাখ হেক্টর। উপকূলীয় চিংড়ি খামারসহ বদ্ধ জলাশয় ২.৯০ লাখ হেক্টর। দেশের ৭১০ কি.মি. তটরেখার কাছাকাছি বেইজ লাইন থেকে সাগরের ২০০ ন্যাটিক্যাল মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত আমাদের অভ্যন্তরীণ জলসীমা। এর প্রায় ১,৬৪,০০০ বর্গ কি.মি এলাকা দেশের সামুদ্রিক জলসীমা। যা দেশের মূল ভূ-খণ্ডের আয়তনের চেয়েও বড়। এ জলসীমার মাত্র ৫০ ভাগ এলাকায় প্রণোদিত উপায়ে মুক্তা চাষ করতে পারলে এক বিপুল সম্ভাবনার দ্বার খুলে যাবে।

বিএফআরআই-এর মুক্তা বিজ্ঞানী ড. মোহসেনা বেগম তনু জানান, আমাদের দেশে মুক্তা উৎপাদনকারী ৫ প্রজাতির মিঠাপানির ঝিনুকের মধ্যে ২ প্রজাতির ঝিনুক ইমেজ মুক্তা উৎপাদনে অধিকতর উপযোগী। কৃত্রিম মুক্তা চাষ ব্যয়বহুল নয়। এছাড়া মাছ চাষের সাথে সম্পূরক খাদ্যের প্রয়োজন হয় না। ইমেজ মুক্তা উৎপাদনের ক্ষেত্রে বড় আকৃতির স্বাস্থ্যবান ঝিনুক বাছাই করা হয়। পরে চ্যাপ্টা আকৃতির বস্তুর (মোম, প্লাস্টিক, স্টিল) প্রতিচ্ছবি ঝিনুকে স্থাপন করে ঝিনুক পুকুরে ছেড়ে দেওয়া হয়। ঝিনুক পুকুরে ছাড়ার পর থেকে ৭-৮ মাস পরই ওই নকশার উপর ঝিনুকের আঠালো রস পড়ে হুবহু ওই আকৃতির ইমেজ মুক্তা উৎপাদিত হয়। প্রতি শতাংশে ৮০-১০০টি ঝিনুক মজুদ করে ইমেজ মুক্তার উৎপাদন ও বৃদ্ধি সর্বোচ্চ পাওয়া গেছে। অপারেশনকৃত ঝিনুকের বেঁচে থাকার হার ৮০ শতাংশ পাওয়া গেছে। অপারেশনের পর প্রথম মাসে ঝিনুক থেকে ইমেজ বের হয়ে যেতে পারে। তাই অপারেশনের পর ১ম একমাস ঝিনুক ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। ইমেজ মুক্তা আহরণের আগে পুকুরে পরিমিত পরিমাণে সার প্রয়োগ করতে হবে এবং পানির গুণাগুণ নিয়মিত পরীক্ষা করতে হবে। এতে ইমেজ মুক্তার ঔজ্জ্বল্য ও গুণগতমান ভালো হয়। একটি ঝিনুক থেকে সর্বোচ্চ ১২টি মুক্তা তৈরি সম্ভব। চারটি রঙের (কমলা, গোলাপি, সাদা, ছাই) এবং তিন আকারের (গোল, রাইস, আঁকাবাঁকা) মুক্তা পাওয়া গেছে।

‘ইনস্টিটিউট সফলভাবে ইমেজ মুক্তা উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছে। এখন এটি ছড়িয়ে দিতে হবে। দেশে-বিদেশে ইমেজ মুক্তার ব্যাপক কদর রয়েছে। স্বল্প পুঁজিতে গ্রামীণ বেকার নারীরা ইমেজ মুক্তা উৎপাদনে সহজেই সম্পৃক্ত হতে পারবে। তারা অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী হতে পারবে। বিদেশে রফতানি করেও প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে বলে জানান মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ।

বিজ্ঞাপন
মন্তব্য করুন

অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন

Leave a Reply

ফসল

লাভজনক সবজি চাষ পদ্ধতি

সবজি একটি গুরুত্বপূর্ণ ফসল। কৃষি বিজ্ঞানের ভাষায় সবজিকে উদ্যানতাত্বিক ফসল (Horticultural crops) বলা হয়ে থাকে। পুষ্টিমানের দিক থেকে সবজি ফসল যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি বাণিজ্যিকভাবেও এর গুরুত্ব অপরিসীম। সেজন্য সবজি চাষের আধুনিক কলাকৌশল জানা জরুরি।

আর আধুনিক কলাকৌশল বলতে বৈজ্ঞানিক উপায়ে চাষাবাদকেই বোঝানো হয়ে থাকে। বাংলাদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু সবজি চাষের জন্য খুবই উপযোগী। তবে সারাদেশে যেমন সব ধরনের সবজি উৎপাদিত হয়না ঠিক তেমনি সকল সবজিই আবার সারাবছর উৎপাদিত হয়না। একেক অঞ্চলে একেক ধরনের শাকসবজি উৎপাদিত হয়ে থাকে। আবার বছরের বিশেষ বিশেষ সময়ে বিশেষ বিশেষ সবজির জাত উৎপাদন করা যায়।

সারাদেশে সারাবছরই যেসকল সবজি সহজে উৎপাদিত হয়ে থাকে তাদের কিছু শাকসবজির কথা এখানে তুলে ধরছি। লালশাক, ডাটাশাক, পুইশাক, কলমিশাক, মিষ্টিআলু শাক, ঢেড়শ, গাজর, বরবটি, টমেটো, লাউ ও লাউশাক, পাটশাক, শশা, কাঁচকলা, বেগুন, পেপে, করলা, কচুশাক, কচুর লতি, ধনে পাতা, পুদিনা পাতা ইত্যাদি পরিচিত শাকসবজি। তাছাড়া অপরিচিত বিশেষ কিছু সবজি বিশেষ বিশেষ এলাকার বিশেষত্ব হিসেবে উৎপাদিত হয়ে থাকে। উপরোক্ত ফসলগুলোর মধ্যে কিছু শুধু শাক আর বাকীগুলো শাক এবং সবজি উভয় হিসেবেই প্রচলিত রয়েছে।

কৃষিতাত্বিকভাবে রবি (শীতকাল) ও খরিপ (গ্রীষ্মকাল)- এ দুধরনের মৌসুম রয়েছে। খরিপের আবার দুটি ভাগ, যথা- খরিপ-১ (আগাম গ্রীষ্ম) এবং খরিপ-২ (বর্ষাকাল)। তবে শীতকালীন শাকসবজির মধ্যে বাহারি ও রকমারি বৈচিত্র একটু বেশি। শুধুমাত্র শীতকালে উৎপাদিত হয় এমন ফসলগুলোর মধ্যে রয়েছে- টমেটো, শীতলাউ, ফুলকপি, বাধাকপি, গাজর, সীম, মূলা, ব্রকলি, বাটিশাক, ওলকপি, শালগম, বেগুন, গোল আলু ইত্যাদিই প্রধান। অপরদিকে শুধুমাত্র গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে উৎপাদিত হয় এমন ফসলের মধ্যে রয়েছে- বিভিন্ন ধরনের কচু, ওলকচু, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, কাকরোল, পটোল, করলা, মিষ্টি কুমড়া, চাল কুমড়া ইত্যাদিই প্রধান।

সবজি ফসল উৎপাদন অন্যান্য ফসলের মতো নয়। সবজি ফসল উৎপাদনের জন্য বিশেষ ধরনের যত্নের প্রয়োজন হয়। আর বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আবাদ করতে গেলে অল্প পরিমাণ জায়গায় অধিক পরিমাণ ফসল ফলিয়ে লাভবান হওয়া সম্ভব। সবজি আবাদেও জন্য বাড়ির আঙ্গিনায় অথবা অপেক্ষাকৃত উঁচু জায়গা বেছে নিতে হবে। সেখানে ভালোভাবে চাষ-মই দিয়ে জমির মাটি জো অবস্থায় ঝুরঝুরে করে সেখানে এক মিটার প্রশস্ত এবং প্রয়োজনমত জমির আকার-আকৃতির সাথে সঙ্গতি রেখে লম্বা বেড তৈরী করে নিতে হবে। প্রতিটি বেডের মাঝখানে ৬ থেকে ৮ ইঞ্চি পরিমাণ গর্ত করে নালা সৃষ্টি করতে হবে। অর্থাৎ নালার মাটি তুলেই দুইপাশে বেড প্রয়োজনমত উঁচু করতে হবে।

এভাবে বেড তৈরীর একটি বিশেষত্ব হলো শাকসবজি চাষাবাদ অন্য সাধারণ ফসল আবাদের চেয়ে একটু ভিন্ন। এর জন্য প্রয়োজন হয় বাড়তি সতর্কতা ও যত্নের। শাকসবজির চাষাবাদে যেমন শুষ্ক মৌসুমে সেচের চাহিদা থাকে অপরদিকে বর্ষাকালে অতিরিক্ত বৃষ্টির পানি বের করে দেওয়ার প্রয়োজন হয়। সেজন্যই বেড তৈরী করে মাটি কিছুটা উঁচু করা হয় সেখানে আবার নালা তৈরী করে নিষ্কাষনের ব্যবস্থাও রাখা হয়। কিন্তু বেড এবং নালা তৈরী না করলে সেটা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আবাদ হয়না। সেঠা হয় সাধারণ শাকসবজি চাষ। এতে ফলন অনেক কমে যায়।

পেপে, কাঁচকলা- এ জাতীয় সবজি বসতবাড়ির আঙ্গিনায়, রাস্তা বা পুকুরের ধারে সহজেই আবাদ করা যায়। লালশাক, ডাটা শাক, পাটশাক, মূলাশাক, গাজর, শালগম ইত্যাদি সবজি তৈরীকৃত বেডে ছিটিয়ে বীজ বুনে দিলেই ভালো ফলন পাওয়া যায়। তাছাড়া টমেটো, বেগুন, ফুলকপি, বাধাকপি, ঢেড়শ, কচু, ওলকচু ইত্যাদি সবজি এক মিটারের বেডে দুই সারি করে নির্ধারিত দূরত্বে চারা লাগিয়ে আবাদ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। সেজন্য এসব সবজি উৎপাদনের জন্য আলাদাভাবে নার্সারিতে চারা তৈরী করে নিতে হয়। অপরদিকে লাউ, মিষ্টি কুমড়া, শশা, চাল কুমড়া, পটোল, কাকরোল, করলা, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, সীম, বরবটি ইত্যাদি লতাজাতীয় সবজি চাষের জন্য উক্ত বেডে দুইটি সারি করে সেখানে জাংলা দিয়ে দিতে হয়। সাধারণত বেডের দুইপাশে খুটি দিয়ে পরে তা ইংরেজি অক্ষর ‘এক্স’ আকৃতিতে বা ‘ভি’ আকৃতিতে বাঁকিয়ে বেঁধে দিতে হয়।

বেড ছাড়াও লতাজাতীয় এসব সবজি অতি সহজেই ক্ষেতের আইলে, রাস্তার ধারে, পুকুরের পাড়ে বিশেষ ব্যবস্থায় আবাদ করে ভালো ফলন পাওয়া যায়। তবে অন্যান্য যেকোন ফসলের তুলনায় এসব সবজি ফসলের একটু বেশি যত্নের প্রয়োজন হয়। বিনা আবাদেই এসব সবজি চাষ করা যেতে পারে। সেজন্য বন্যা পরবর্তীতে পুনর্বাসনের সময় বিনাচাষে এসব আবাদের পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। সম্পূর্ণ জৈবভাবেই এসব সবজি ফসল উৎপাদন সম্ভব। আবাদের পূর্বে সামান্য পরিমাণ প্রয়োজনীয় রাসায়নিক সার ব্যবহার করে বাকীটা মেটাতে হবে বাড়িতে উৎপাদিত জৈব সারের মাধ্যমে। তারপর আন্তপরিচর্যা এবং পোকামাকড়ের আক্রমণ ঠেকাতেও জৈব পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে। তখন এসব উৎপাদিত ফসল সকলের জন্য নিরাপদ খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।

কাজেই এভাবেই সারাবছর নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় স্বষ্পপরিসরে শাকসবজি উৎপাদন করে নিজের চাহিদা মিটিয়ে তা বাণিজ্যিকভাবেও লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে। আমাদের শারীরিক পুষ্টি চাহিদার একটি বিরাট অংশ শাকসবজি থেকে আসা দরকার। দৈনিক একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের গড়ে কমপক্ষে আড়াইশ গ্রাম শাকসবজি খাওয়া প্রয়োজন। আর সেটা নিবিড়ভাবে এবং নিরাপদভাবে খেতে হলে নিজের উৎপাদিত শাকসবজি খাওয়াই সবচেয়ে উত্তম। কাজেই আমাদের সারাবছর অলস সময়টাকে কাজে লাগিয়ে আসুন নিজের বাড়ির আঙ্গিনায় সবজির বাগান গড়ে তুলি।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

বাংলাদেশ

কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ

একজন টেলিভিশন তারকা, কৃষি উন্নয়ন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজের জন্মদিন আজ। তিনি ১৯৫৪ সালের এদিনে জন্মগ্রহণ করেন চাঁদপুরে (সার্টিফিকেট অনুযায়ী তার জন্মতারিখ ২৮শে জুন ১৯৫৬)। শাইখ সিরাজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন ভূগোলে। ছাত্রজীবনেই সম্পৃক্ত হন বাংলাদেশ টেলিভিশন, বেতার ও সংবাদপত্রের সঙ্গে।

কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ

শাইখ সিরাজ ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিমিটেড, চ্যানেল আই-এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও বার্তা প্রধান। টানা সাড়ে চার দশক ধরে তিনি গণমাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে দেশের কৃষি ও কৃষক তথা উৎপাদন-অর্থনৈতিক খাতে অপরিসীম ভূমিকা রেখে চলেছেন।

বাংলাদেশ টেলিভিশনের মাটি ও মানুষ অনুষ্ঠান উপস্থাপনার মধ্য দিয়ে সকল শ্রেণিপেশার মানুষের মধ্যে বিপুল গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেন তিনি। পরে তার নিজস্ব পরিচালনাধীন টেলিভিশন ‘চ্যানেল আই’তে শুরু করেন কৃষি কার্যক্রম হৃদয়ে মাটি ও মানুষ। উন্নয়ন সাংবাদিকতার জন্য তিনি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দু’টি রাষ্ট্রীয় সম্মান স্বাধীনতা পুরস্কার (২০১৮) ও একুশে পদক (১৯৯৫) লাভ করেন।

কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৬৮তম জন্মদিন আজ
কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ

টেলিভিশনসহ গণমাধ্যমের সঙ্গে প্রায় চার দশকের একনিষ্ঠ পথচলার মধ্য দিয়ে শাইখ সিরাজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন উন্নয়ন সাংবাদিকতার এক অগ্রপথিক হিসাবে। গণমাধ্যমে তার উদ্বুদ্ধকরণ প্রচারণায় আমূল পরিবর্তন এসেছে বাংলাদেশের কৃষিতে। বাংলাদেশে খাদ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে সূচিত হয়েছে বৈপ্লবিক সাফল্য।

গ্রামীণ জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এসেছে ইতিবাচক পরিবর্তন। একইসঙ্গে শহর-নগরের মানুষকে করেছেন কৃষিমুখি। ফলে দেশের অর্থনীতিতে কৃষির বহুমুখি অবদান সূচিত হয়েছে।

‘মাটি ও মানুষ’

বাংলাদেশের কৃষিতে গত কয়েক দশকে যে বিরাট পরিবর্তন ঘটেছে, শাইখ সিরাজকে বর্ণনা করা হয় সেই পরিবর্তনের পেছনে অন্যতম প্রধান এক চরিত্র হিসেবে।

বাংলাদেশে যখন বিজ্ঞানীরা একের পর এক নতুন উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান উদ্ভাবন করে চলেছেন, কৃষিতে নতুন ধ্যান ধারণা এবং কৌশল চালুর জন্য সরকারের নানা পর্যায় থেকে চেষ্টা চলছে, সেগুলো সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে বিরাট ভূমিকা রাখে তার কৃষি বিষয়ক অনুষ্ঠান, ‘মাটি ও মানুষ।’

“শুরুতে এই অনুষ্ঠানটা হতো আমার দেশ নামে। তখন এটি ৫০ মিনিটের পাক্ষিক অনুষ্ঠান। পরে এটিকেই ‘মাটি ও মানুষ’ নামে সাপ্তাহিক অনুষ্ঠানে রূপান্তরিত করি। আমার মনে হয়েছিল বাংলাদেশের মানুষের বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানের চেয়ে বেশি দরকার শিক্ষামূলক মোটিভেশনাল অনুষ্ঠান। কৃষকদের যদি নতুন বীজ, নতুন প্রযুক্তি, নতুন কৌশল, এসব ঠিকমত বোঝানো যায়, তাহলে কৃষিতে বিরাট পরিবর্তন নিয়ে আসা সম্ভব।”

গত চার দশক ধরে শাইখ সিরাজ হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশের কৃষকদের কাছে কৃষি বিষয়ক তথ্যের প্রধান উৎস। উনিশ’শ আশির দশকে, যখনো টেলিভিশন ঘরে ঘরে পৌঁছায়নি, তখনো গ্রামের হাটেবাজারে, কমিউনিটি সেন্টারে প্রতি শনিবার সন্ধ্যায় ‘মাটি ও মানুষ’ দেখার জন্য ভিড় করতো মানুষ।

কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৬৮তম জন্মদিন আজ
কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ

তবে কৃষকদের নতুন ধরণের কৃষিতে উৎসাহিত করার কাজটা সহজ ছিল না।

“আজকের কৃষক এবং তিরিশ বছর আগের কৃষকের মধ্যে তফাৎ আকাশ আর পাতাল। তখন কৃষকের কাছে একজন কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা যে কথা বলতেন, একজন টেলিভিশন উপস্থাপক হিসেবে আমি যেকথা বলতাম, সেটা তারা মানতে চাইতো না। তারা ভাবতো, আমরা যেধরণের কৃষির কথা বলছি, যদি সেটাতে ভালো ফসল না হয়? এ কারণে সে সহজে মোটিভেট হতে চাইতো না। সহজে নতুন প্রযুক্তি নিতে চাইতো না।”

“আমি যখন আশির দশকে উচ্চফলনশীল নতুন জাতের ধানের কথা বলছি, গমের কথা বলছি, তখন পরিস্কার তারা আমাকে বলতো এই রাবার ভাত খাবো না। তখন পর্যন্ত উদ্ভাবিত নতুন জাতের ধানের মান তেমন ভালো ছিল না। ভাতটা ছিল রাবারের মতো, ভাতের দানা উপর থেকে থালার উপর ফেললে সেটি রাবারের মতো ড্রপ করতো।”

কিন্তু বিজ্ঞানীরা যখন তাদের গবেষণায় নতুন নতুন সাফল্য পাচ্ছিলেন, আর সেই সঙ্গে শাইখ সিরাজও তার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কৃষকদের মন জয় করার জন্য নতুন কৌশল নিচ্ছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের অশোকা ফেলো শাইখ সিরাজ খাদ্য নিরাপত্তা ও দারিদ্র বিমোচন বিষয়ে সাংবাদিকতায় অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসাবে তিনি ২০০৯ সালে অর্জন করেন জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার এ এইচ বুর্মা এ্যাওয়ার্ড। এ ছাড়া তিনি পেয়েছেন এশিয়ার মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার গুসি পিস প্রাইজ, বৃটেনের বিসিএ গোল্ডেন জুবিলি অনার এ্যাওয়ার্ডস। বৃটিশ হাউজ অব কমন্স তাকে প্রদান করেছে বিশেষ সম্মাননা, বৃটিশ-বাংলাদেশ ব্যবসায়ী সংগঠন তাকে দিয়েছে গ্রীন এ্যাওয়ার্ড। এ ছাড়া পেয়েছেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির স্বর্ণপদক, ডা. ইব্রাহিম মেমোরিয়াল স্বর্ণপদক, রণদা প্রসাদ সাহা স্বর্ণপদকসহ অর্ধশত দেশি-বিদেশি পুরস্কার ও সম্মাননা।

কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ
কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ

চ্যানেল আই ও বাংলাদেশ টেলিভিশনে কৃষি বিষয়ক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত লিখে থাকেন। তিনি এদেশে কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে নিরস বিষয় হিসাবে উপেক্ষিত কৃষিতে জাতীয় সংবাদের প্রধান খবরের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন। শাইখ সিরাজের প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- মৎস্য ম্যানুয়েল, মাটি ও মানুষের চাষবাস, ফার্মার্স ফাইল, মাটির কাছে মানুষের কাছে, বাংলাদেশের কৃষি: প্রেক্ষাপট ২০০৮, কৃষি ও গণমাধ্যম, কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট (সম্পাদিত), আমার স্বপ্নের কৃষি, কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট (২০১১), সমকালীন কৃষি ও অন্যান্য প্রসঙ্গ (২০১১), কৃষি ও উন্নয়ন চিন্তা (২০১৩) ইত্যাদি।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

পতিত জমিতে চিনাবাদাম চাষে লাভবান হচ্ছেন কৃষক

মেহেরপুর: পতিত ও অনুর্বর বেলে মাটির জমিতে চিনাবাদাম চাষ করে লাভবান হচ্ছেন মেহেরপুরের চাষিরা। ফলন ও বাজার দর ভালো এবং কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় দিন দিন এই এলাকায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বাদামের চাষ। 

সদর উপজেলার মদনাডাঙ্গা, শ্যামপুর, টেংগারমাঠ ও গোপালপুর গ্রামের অধিকাংশ জমির মাটি বেলে। ফলে এই এলাকার চাষিরা ধান, গম, পাটসহ অন্যান্য ফসল আবাদ করে খুব একটা লাভবান হতে পারেন না।

ধান কাটার পর এ সব জমি সাধারণত পতিত থাকে। এজন্য ৯০ দিনের ফসল হিসেবে অল্প খরচে বাদাম চাষ করছেন এলাকার চাষিরা।  

মেহেরপুর জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, জেলায় এবার বাদাম চাষ হয়েছে ১৫ হেক্টর জমিতে। এবার এক বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করতে চাষিদের খরচ হয়েছে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা সেক্ষেত্রে বাদামের ফলন হয়েছে ৬ থেকে ৭ মণ। আর এ  ফলনে প্রায় ২০ হাজার টাকা ঘরে তুলছেন তারা। বাজারে প্রতিমণ বাদাম বিক্রি হচ্ছে ২৭শ’ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত।  সদর উপজেলার মদনাডাঙ্গা গ্রামের বাদাম চাষি খাঁজা আহমেদ, কাওছার আলী ও ফিরোজ হোসেন বাংলানিউজকে জানান, এলাকার মাটি বেলে হওয়ায় সাধারণত সবজি, আলু ও অন্যান্য ফসল চাষ করার পর জমি পতিত থাকে। সে সময়ে চিনা বাদামের চাষ করা হয়। বাদাম চাষে খরচ কম এবং উৎপাদন ও বাজার দর ভাল। তাই দিন দিন চাষিরা তাদের পতিত জমিতে চিনা বাদামের চাষ শুরু করছেন।  

এছাড়া বাদাম ছাড়ানো, শুকানোসহ যাবতীয় কাজ করে থাকেন এখানকার নারীরা। বাদামের গাছ আবার শুকিয়ে জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করছেন গৃহিণীরা।  

নারী শ্রমিক সাহানা খাতুন ও জরিমন নেছা বাংলানিউজকে বলেন, আমরা বাদাম ছাড়ানো ও শুকানোর কাজ করে থাকি। এলাকার ২৫/৩০ জন নারী শ্রমিক এ কাজ করে আসছেন।  
গৃহিণী সাজেদা খাতুন ও জামেলা খাতুন জানান, বাদামের লতা জালানি হিসেবে বেশ ভাল। তাই লতাও বিক্রি হচ্ছে।

মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. আক্তারুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, চিনা বাদামের চাষ সাধারণত পতিত জমিতে হয়ে থাকে। এলাকার চাষিরা এই জমিতে বাদামের চাষ করে বাড়তি আয় করছেন। তাই বাদাম চাষ যাতে আরও সম্প্রসারিত হয় সেজন্য কৃষি বিভাগ চাষিদের বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছে।  

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

সিলেটে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষের সম্ভাবনা

সিলেট বিভাগের উচ্চমাত্রার অ্যাসিডিক জমিতে গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধাসহ বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষে ব্যাপক সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কৃষি বিজ্ঞানিরা মৌলভীবাজারের আকবরপুরে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে পরীক্ষামূলকভাবে ফুল চাষ করে সফল হয়েছেন। এ ফুল চাষ মাঠ পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে ১০০ চাষিকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে কৃষি গবেষণা কেন্দ্র।

কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের তথ্যমতে, যশোরে বাণিজ্যিকভাবে গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধাসহ বিভিন্ন ধরনের ফুল চাষ হয়। যার বাজার দর প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। যশোরের ফুল সারাদেশের পাশাপাশি সিলেটেও আসে প্রচুর। সিলেটে ফুলের বাজার শত কোটি টাকার উপরে। কিন্তু সিলেটে ফুলের চাষ বাণিজ্যিকভাবে হয় না।

সিলেট বিভাগের মাটি অ্যাসিডিক হওয়ায় ফুল চাষ করা যাবে না, সেটাই ছিল প্রচলিক ধারণা। কিন্তু এ ধারণাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যদিয়ে ভুল প্রমাণ করেছেন মৌলভীবাজার আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের একদল গবেষক। মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এস এম শরিফুজ্জামানের নেতৃত্বে উচ্চমাত্রার অ্যাসিডিটিক জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে ফুল চাষ করে সফল হয়েছেন তারা। এ পরীক্ষামূলক চাষে ফলনও হয়েছে ভালো। তাই সিলেট অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেট অঞ্চলে অনেক জায়গা অনাবাদি ও পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে। প্রবাসীরা দেশের বাইরে অবস্থান করায় তাদের অনেক জমি পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকে। এ জমিকে আবাদের আওতায় আনতে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষের উদ্যোগ নিয়ে আগ্রহী ১০০ চাষিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে আমন ধান কাটার পর এ অঞ্চলের অনেক জমি পতিত থাকে। ফলে ফুল চাষ করে অনাবাদি জমি থেকে কোটি টাকা উপার্জন সম্ভব।

বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মিরানা আক্তার সুমি জানান, চাষিরা প্রশিক্ষণ শেষে অনেক কিছু শিখেছেন। কী পদ্ধতিতে চাষাবাদ করতে হয়, তা জেনেছেন। ধানের চেয়ে যেহেতু ফুলের দাম বেশি, তাই ফুল চাষে তাদের আগ্রহ বাড়ছে।

ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. সরফ উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘ভালোভাবে জমি চাষ করে নির্দেশিত মাত্রায় জৈব ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হয়। অন্য ফসলের মতোই এর চাষ পদ্ধতি সহজ। বেড তৈরি করে ফুল চাষ করতে হয়। প্রতিটি বেডের দৈর্ঘ যে কোন মাপের হতে পারে। তবে প্রস্থে ১.২-১.৫ মিটার হলে ভালো।’

তিনি বলেন, ‘কলম (বীজ) লাগানো থেকে তিন মাস পর স্টিক সংগ্রহ শুরু হয়। সংগ্রহ করা যাবে পরবর্তী ২৫ দিন। গ্লাডিওলাস ৫টি জাতসহ মোট ১২টি প্রজাতির ফুলের পরীক্ষা করে আমরা সফল হয়েছি।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

জৈব

জৈব পদ্ধতিতে ফসলের রোগ পোকা নিয়ন্ত্রণ

সবুজ বিপ্লবের সময়ে পেস্টিসাইড ব্যবহারকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জীব বৈচিত্র্য, মাটির স্বাস্থ্য ও ফসলের গুণমানতা। এখন ভেবে দেখার সময় এসেছে, এত রাসায়নিক পেস্টিসাইড ব্যবহার করা কি ঠিক হচ্ছে? এ প্রশ্ন শুধু ভারতে নয়, সারাবিশ্বের কৃষকসমাজ ও শস্যবিজ্ঞানীদের কাছে। তাই মনে হয় জৈব নিয়ন্ত্রণকে গুরুত্ব দিয়ে সুসংহত রোগ পোকা নিয়ন্ত্রণ আগামী দিনে একমাত্র সমাধানের রাস্তা হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে।

চলমান খরিফ মরসুমে আমাদের রাজ্যে প্রধানত ধান, খরিফ পেঁয়াজ, জুট, ইক্ষু, তিল ইত্যাদি ফসলের চাষ হয়ে থাকে। এ রাজ্যে ধানে ঝলসা রোগের আক্রমণ একটি গুরুতর বিষয়।

জৈব পদ্ধতিতে এই রোগ দমন করার একটি সহজ উপায় রয়েছে। ৫০ মিলিলিটার কেরোসিন তেলে ৮৫ গ্রাম থেঁতলানো রসুন মিশিয়ে ২৪ ঘণ্টা রেখে দিতে হবে। এরপর ৯৫০ মিলি. জল ও ১০ মিলি. তরল সাবান মিশিয়ে ভালোভাবে নেড়ে নিয়ে বোতলে রেখে দিতে হবে। ১৯ লিটার জলের সাথে ১ ভাগ মিশ্রণ মিশিয়ে সকালে/বিকেলে স্প্রেয়ার দিয়ে আক্রান্ত গাছে স্প্রে করতে হবে।

এই মিশ্রণটি আমেরিকান বোল ওয়ার্ম, আর্মি ওয়ার্ম, পেঁয়াজ-এর চিরুনি পোকা, আলুর টিউবার মথ, রুট নট নিমাটোড (কৃমি), আখের কাণ্ড ছিদ্রকারী পোকা, ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগ, ডাউনি মিলডিউ ও ধানের ঝলসা রোগ প্রতিরোধে খুবই কার্যকরী।

এছাড়া বিভিন্ন ধরণের পাতা খেকো পোকা ও জাব পোকা নিয়ন্ত্রণে ১ কেজি পেঁয়াজ থেঁতো করে ১ লিটার জলের সাথে মিশিয়ে ২৪ ঘণ্টা রেখে দেবার পর কচলিয়ে রস নিংড়ে নিতে হবে। প্রাপ্ত নির্যাসের সাথে ১০ লিটার জল মিশিয়ে আক্রান্ত ফসলে স্প্রে করতে হবে।

জৈব সার প্রয়োগ ও জৈব কীটনাশক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফসলের উৎপাদন খরচ শতকরা ২৫-৩০ শতাংশ হ্রাস করা সম্ভব। উচ্চ পুষ্টিমানসম্পন্ন প্রযুক্তিতে উৎপাদিত জৈব সার, শাকসব্জী ও অন্যান্য ফসলের প্রয়োজনীয় নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশিয়াম-এর সাথে অণুখাদ্যের যোগান দেয়।

জৈব পদ্ধতিতে উৎপন্ন কীটনাশক ও ছত্রাকনাশকগুলি ফসলে কোনওরকম দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ব্যতিরেকে, পোকা ও রোগ দমনে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এতে মাটির স্বাস্থ্য ভালো থাকে ও উর্বরতা দীর্ঘমেয়াদী হয়। উৎপাদিত ফসল হয় স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ।

বন্ধুপোকা মাকড়ের (পরজীবি ও পরভোজী) সংরক্ষণের জন্য জমির পাশে অব্যবহৃত জায়গায় ত্রিধারা, উঁচুটি, শালিঞ্চে ইত্যাদি আগাছা জাতীয় গাছের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।

দূরদর্শী পদক্ষেপের মাধ্যমে রাসায়নিক কৃষি বর্জন করে প্রাণ বৈচিত্র্য নির্ভর জৈব কৃষির মাধ্যমে খাদ্যে সার্বভৌমত্ব আনা সম্ভব। তাই জৈব কৃষির পথে ধীরে ধীরে অগ্রসর হয়ে কৃষিবিষমুক্ত, স্বাস্থ্যসম্মত সমাজ গড়ে তোলাই বাঞ্ছনীয়।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশক: শাইখ সিরাজ
© ২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। দা এগ্রো নিউজ, ফিশ এক্সপার্ট লিমিটেডের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। ৫১/এ/৩ পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থাপথ, ঢাকা -১২০৫
ফোন: ০১৭১২-৭৪২২১৭
ইমেইল: info@agronewstoday.com, theagronewsbd@gmail.com