লাইভস্টক
ঝিনুক থেকে মুক্তা চাষ
লেখক
নিজস্ব প্রতিনিধিঝিনুক শিল্প আমাদের দেশে একটি সম্ভাবনাময় শিল্পের নাম। মাছ চাষের পাশাপাশি ঝিনুক চাষ করে আমরা পেতে পারি মহামূল্যবান বস্তু ‘মুক্তা’। এতে জলাশয়ের সর্বোচ্চ ব্যবহার সম্ভব। সৌখিনতা ও আভিজাত্যের প্রতীক হলেও মুক্তা কিছুু জটিল রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
মুক্তা অতি প্রাচীন পৃথিবীখ্যাত মূল্যবান রত্ন। যা জীবন্ত প্রাণি ঝিনুক থেকে পাওয়া যায়। মুক্তা জীবন্ত ঝিনুকের দেহের ভেতরে জৈবিক প্রক্রিয়ায় তৈরি এক ধরনের বস্তু। কোন বাহিরের বস্তু ঝিনুকের দেহের ভেতরে ঢুকে নরম অংশে আটকে গেলে আঘাতের সৃষ্টি হয়। ঝিনুক এই আঘাতের অনুভূতি থেকে উপশম পেতে বাহির থেকে প্রবেশকৃত বস্তুটির চারদিকে একধরনের লালা নিঃসরণ করতে থাকে। ক্রমাগত নিঃসৃত এই লালা বস্তুটির চারদিকে ক্রমান্বয়ে জমাট বেঁধে মুক্তায় পরিণত হয়।
আমাদের দেশে আগে প্রাকৃতিকভাবে প্রচুর পরিমাণ মুক্তা উৎপাদিত হতো। পৃথিবীর ইতিহাসে ১৮৯০ সালে জাপানি বিজ্ঞানি কোকিচি মিকিমোতো সর্বপ্রথম প্রণোদিত উপায়ে মুক্তা চাষে সফল হন। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট ১৯৯৯ সালে স্বাদু পানিতে মুক্তা চাষের পরীক্ষামূলক গবেষণা শুরু করে।
চূর্ণ মুক্তা আয়ুবের্দিক ঔষধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া মুক্তা উৎপাদনকারী ঝিনুকের খোলস অলংকার ও সৌখিন দ্রব্যাদির পাশাপাশি হাঁস-মুরগি, মাছ ও চিংড়ির খাদ্যের প্রয়োজনীয় উপাদান ক্যালসিয়ামের একটি প্রধান উৎস। উন্নত বিশ্বে ঝিনুকের মাংস মানুষের খাদ্য হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট
(বিএফআরআই) দেশে প্রথমবারের মত ইমেজ (প্রতিচ্ছবি) মুক্তা চাষে সফলতা পেয়েছেন। মিঠাপানির ঝিনুক থেকে পাখি, মাছ, নৌকাসহ বিভিন্ন বস্তুর নকশার দৃষ্টিনন্দন ইমেজ মুক্তা উৎপাদনে তারা এই সফলতা পান। উদ্যোক্তা ও গ্রামীণ পর্যায়ে এ প্রযুক্তি ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হলে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি রপ্তানি খাতেও ব্যাপক সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে।
প্রণোদিত উপায়ে ঝিনুক থেকে মুক্তা চাষ প্রযুক্তি অনেকটা সূঁচি শিল্পের মত, যা গ্রামীণ নারীরা সহজে আয়ত্ত করতে পারে। দেখা গেছে গ্রামীণ নারীরা মাত্র ৩-৪ দিনের প্রশিক্ষণে ঝিনুক অপারেশনে দক্ষ হয়ে ওঠে। তাই মুক্তা চাষে নারীদের নিয়োজিত করা গেলে জলাশয়ের সর্বোচ্চ ব্যবহারের পাশাপাশি গ্রামীণ নারীদের দারিদ্র বিমোচনের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন সম্ভব। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট ২০১২ সালে মুক্তা চাষ প্রযুক্তি উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ নামক একটি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু করে। এই প্রকল্পের আওতায় স্বাদু পানির ঝিনুকের উপর মুক্তা বিষয়ক বিভিন্ন ধরনের গবেষণা কাজ পরিচালিত হচ্ছে। তিন ধরনের পদ্ধতি অনুসরণ করে আমরা মুক্তা পেতে পারি।
ম্যান্টল টিস্যু অপারেশন পদ্ধতি: ঝিনুক থেকে মুক্তা তৈরির জন্য ঝিনুকের দেহের ভেতরে ম্যান্টল টিস্যু প্রবেশ করানো হয়। বর্তমানে বিজ্ঞানসম্মতভাবে ঝিনুক থেকে মুক্তা তৈরিতে ম্যান্টল টিস্যু অপারেশন একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি। সুন্দর ও আকর্ষণীয় মুক্তা তৈরির জন্য ঝিনুকে স্বল্প সময়ের মধ্যে নির্ধারিত আকারের ম্যান্টল টিস্যু প্রবেশ করাতে হবে। একটি ঝিনুকে মুক্তা তৈরি করতে অপর একটি ঝিনুককে কেটে ফেলতে হয়। প্রথমে একটি ঝিনুককে কেটে ম্যান্টল টিস্যুর বহিঃত্বক লম্বা করে কেটে বিচ্ছিন্ন করতে হয়। বিচ্ছিন্ন করা টিস্যুটিকে লম্বা করে একটি গ্লাস বোর্ডে রাখতে হয়। লম্বা টিস্যুকে পরে (২-৩*২-৩) মি.মি আকারে টুুকরো করে কাটতে হয়। এরপর টুকরো করা ম্যান্টল টিস্যু অন্য একটি জীবিত ঝিনুকে স্থাপন করতে হয়। এভাবে অপারেশন প্রক্রিয়া সমাপ্ত হয়।
নিউক্লিয়াস অপারেশন পদ্ধতি: নিউক্লিয়াস অপারেশন পদ্ধতি এবং ম্যান্টল টিস্যু অপারেশন পদ্ধতি মোটামুটি একই রকম। এই পদ্ধতিতে ঝিনুকের ভেতর একসাথে ম্যান্টল টিস্যু ও নিউক্লিয়াস প্রবেশ করানো হয়। নিউক্লিয়াসের উপর মুক্তার প্রলেপ পড়ে এবং নিউক্লিয়াসকে ঘিরে মুক্তা তৈরি হয়।
ইমেজ মুক্তা অপারেশন পদ্ধতি: মুক্তা ইমেজ আকারেও উৎপাদন করা সম্ভব। কোন মানুষ, প্রাণি বা বস্তুর ইমেজ আকারে মুক্তা উৎপাদন করা সম্ভব। মোম, ঝিনুকের খোলস, প্লাস্টিক, স্টিল ইত্যাদি পদার্থ দিয়ে ইমেজ তৈরি করা যেতে পারে। এজন্য প্রথমে ইমেজগুলোকে পানিতে ভেজাতে হবে। ঝিনুকের খোলস ৮-১০ মি.মি খুলতে হবে এবং কাঁদা, বালি ইত্যাদি পরিষ্কার করতে হবে। একটি পাতলা পাত দিয়ে খোলসের কিছু অংশ থেকে ম্যান্টল আলাদা করতে হবে। সাবধানতার সাথে ইমেজ ঢুকিয়ে ম্যান্টল গর্ত থেকে বাতাস ও পানি বের করে দিতে হবে।
অপারেশনকৃত ঝিনুকের চাষকৌশল: অপারেশনকৃত ঝিনুককে মাছের সাথে পুকুরে একত্রে চাষ করা সম্ভব। এক্ষেত্রে ঝিনুকগুলো নেট ব্যাগে রেখে দড়ির সাহায্যে পুকুরে ১-১.৫ ফুট গভীরতায় ঝুলিয়ে চাষ করা হয় অথবা সরাসরি জলাশয়ের নিচে ছেড়ে দিয়ে চাষ করা হয়। এরপর মাছ চাষের যে ব্যবস্থাপনা ঠিক সেই ব্যবস্থাপনাতেই মুক্তা চাষ করা হয়। মুক্তা চাষে বাড়তি কোন খাবারের প্রয়োজন নেই। পুকুরে কেবল নিয়মিত চুন ও সার প্রয়োগ করতে হবে। ১৫ দিন অন্তর অন্তর অপারেশনকৃত ঝিনুকগুলো পরিষ্কার করতে হবে।
পুকুরে অপারেশনকৃত ঝিনুকের চাষ পদ্ধতি: বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মুক্তা শিল্পের ভবিষ্যত সম্ভাবনা উজ্বল। কারণ বাংলাদেশে রয়েছে মুক্তা চাষ উপযোগী আবহাওয়া। মুক্তা উৎপাদনের জন্য প্রয়োজন উষ্ণ আবহাওয়া। আমাদের দেশে প্রায় দশ মাসই উষ্ণ আবহাওয়া থাকে যা মুক্তা উৎপাদনে অনুকূল। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বিশেষ করে জাপান, চীন, ভারত প্রণোদিত উপায়ে মুক্তা চাষ করে প্রচুর বৈদিশিক মুদ্রা অর্জন করছে। মুক্তা চাষে পানির অনুকূল তাপমাত্রা হবে ২২-৩০ ডিগ্রি সেন্ট্রিগ্রেড। পুকুরের পানিতে সামান্য প্রবাহ সৃষ্টি করা গেলে ঝিনুকের বৃদ্ধি সাধনে এবং মুক্তা উৎপাদনে সহায়ক হয়। ঝিনুকের খাদ্য গ্রহণ মূলত পরোক্ষ ফুলকার মাধ্যমে। এরা পানিতে বিদ্যমান এলজি, ক্ষুদ্রাকার জুপ্লাংকটন, অণুজীব অর্থাৎ ফাইটোপ্লাংকটন ইত্যাদি জৈব দ্রব্য ছেঁকে খায়। ডায়াটম, গোল্ড এলজি, গ্রিন এলজি, ইউগ্লেনা ইত্যাদি ঝিনুকের উপযোগী প্রাকৃতিক খাদ্য। ঝিনুক চাষের জন্য পানির উপযুক্ত রং হলো হলুদাভ সবুজ এবং স্বচ্ছতা ৩০ সে.মি। ঝিনুক রাখার জন্য আড়াআড়িভাবে পুকুরে নাইলনের মোটা রশি টানাতে হবে। রশির দুইপ্রান্ত বাঁশের খুঁটির সাথে বাঁধতে হবে। পরিমাণমত ফ্লোট বা ভাসান যুক্ত করে রশিটিকে ভাসমান রাখতে হবে। ঝিনুক নেটের ব্যাগে রেখে দড়ির সাহায্যে নাইলনের সুতা দিয়ে ঝুলিয়ে দিতে হবে। শরৎ, হেমন্ত ও বসন্তে নেট ব্যাগ স্থাপনের গভীরতা হবে ২০ সে.মি এবং গ্রীষ্মকালে হবে ৩০-৩২ সে.মি। প্রতিটি নেট ব্যাগে চারটি করে ঝিনুক রাখতে হবে। অপারেশনকৃত ঝিনুক পর্যবেক্ষণে রাখার পর পুকুরে ছাড়তে হবে। পুকুরে প্লাংকটন জন্মাবার পরপরই রুই, গ্রাসকার্প, মৃগেল ইত্যাদি মাছের পোনা পুকুরে ছাড়তে হবে। অপারেশনকৃত ঝিনুকগুলো ১৫ দিন অন্তর অন্তর পরিষ্কার করতে হবে।
একদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে যেমন মুক্তার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে, তেমনি অভ্যন্তরীণ বাজারেও মুক্তার চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে চীন, জাপান, ভিয়েতনামসহ কয়েকটি দেশ প্রণোদিত উপায়ে মুক্তা উত্পাদন করে ব্যাপক অর্থনৈতিক সফলতা লাভ করেছে। বাংলাদেশেও মুক্তা চাষের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের এক হিসেবে ১০ শতাংশের এক পুকুরে মুক্তা চাষে মোট ব্যয় হবে ২৩ হাজার ৬২৪ টাকা। আয় হবে ৬৫ হাজার টাকা। খরচ বাদে মুনাফা ৪১ হাজার ৩৭৬ টাকা। সেইসাথে মাছ চাষ থেকে আয় তো রয়েছেই।
দেশের অভ্যন্তরীণ জলাশয়ের পরিমাণ প্রায় ৪৩.৩৭ লাখ হেক্টর। এরমধ্যে প্লাবন ভূমিসহ মুক্ত জলাশয় ৪০.৪৭ লাখ হেক্টর। উপকূলীয় চিংড়ি খামারসহ বদ্ধ জলাশয় ২.৯০ লাখ হেক্টর। দেশের ৭১০ কি.মি. তটরেখার কাছাকাছি বেইজ লাইন থেকে সাগরের ২০০ ন্যাটিক্যাল মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত আমাদের অভ্যন্তরীণ জলসীমা। এর প্রায় ১,৬৪,০০০ বর্গ কি.মি এলাকা দেশের সামুদ্রিক জলসীমা। যা দেশের মূল ভূ-খণ্ডের আয়তনের চেয়েও বড়। এ জলসীমার মাত্র ৫০ ভাগ এলাকায় প্রণোদিত উপায়ে মুক্তা চাষ করতে পারলে এক বিপুল সম্ভাবনার দ্বার খুলে যাবে।
বিএফআরআই-এর মুক্তা বিজ্ঞানী ড. মোহসেনা বেগম তনু জানান, আমাদের দেশে মুক্তা উৎপাদনকারী ৫ প্রজাতির মিঠাপানির ঝিনুকের মধ্যে ২ প্রজাতির ঝিনুক ইমেজ মুক্তা উৎপাদনে অধিকতর উপযোগী। কৃত্রিম মুক্তা চাষ ব্যয়বহুল নয়। এছাড়া মাছ চাষের সাথে সম্পূরক খাদ্যের প্রয়োজন হয় না। ইমেজ মুক্তা উৎপাদনের ক্ষেত্রে বড় আকৃতির স্বাস্থ্যবান ঝিনুক বাছাই করা হয়। পরে চ্যাপ্টা আকৃতির বস্তুর (মোম, প্লাস্টিক, স্টিল) প্রতিচ্ছবি ঝিনুকে স্থাপন করে ঝিনুক পুকুরে ছেড়ে দেওয়া হয়। ঝিনুক পুকুরে ছাড়ার পর থেকে ৭-৮ মাস পরই ওই নকশার উপর ঝিনুকের আঠালো রস পড়ে হুবহু ওই আকৃতির ইমেজ মুক্তা উৎপাদিত হয়। প্রতি শতাংশে ৮০-১০০টি ঝিনুক মজুদ করে ইমেজ মুক্তার উৎপাদন ও বৃদ্ধি সর্বোচ্চ পাওয়া গেছে। অপারেশনকৃত ঝিনুকের বেঁচে থাকার হার ৮০ শতাংশ পাওয়া গেছে। অপারেশনের পর প্রথম মাসে ঝিনুক থেকে ইমেজ বের হয়ে যেতে পারে। তাই অপারেশনের পর ১ম একমাস ঝিনুক ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। ইমেজ মুক্তা আহরণের আগে পুকুরে পরিমিত পরিমাণে সার প্রয়োগ করতে হবে এবং পানির গুণাগুণ নিয়মিত পরীক্ষা করতে হবে। এতে ইমেজ মুক্তার ঔজ্জ্বল্য ও গুণগতমান ভালো হয়। একটি ঝিনুক থেকে সর্বোচ্চ ১২টি মুক্তা তৈরি সম্ভব। চারটি রঙের (কমলা, গোলাপি, সাদা, ছাই) এবং তিন আকারের (গোল, রাইস, আঁকাবাঁকা) মুক্তা পাওয়া গেছে।
‘ইনস্টিটিউট সফলভাবে ইমেজ মুক্তা উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছে। এখন এটি ছড়িয়ে দিতে হবে। দেশে-বিদেশে ইমেজ মুক্তার ব্যাপক কদর রয়েছে। স্বল্প পুঁজিতে গ্রামীণ বেকার নারীরা ইমেজ মুক্তা উৎপাদনে সহজেই সম্পৃক্ত হতে পারবে। তারা অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী হতে পারবে। বিদেশে রফতানি করেও প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে বলে জানান মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ।
আপনার জন্য নির্বাচিত সংবাদ
-
কৃত্রিম মাংসের বার্গার, যা থেকে ‘রক্ত’ও ঝরে – আর বেশি দূরে নয়
-
কোয়েল পালনে গবি শিক্ষার্থীর মাসিক আয় ২০ হাজার
-
কোয়েল পাখি পালনে স্বাবলম্বী তরুণরা
-
কোয়েল পাখি পালনে দ্বিগুন অর্থ লাভ করুন
-
গর্ভবতী মায়ের পুষ্টি নিশ্চিত করে কোয়েলের মাংস
-
মুরগি পালন ও খামার স্থাপনা
-
দেশি (ব্ল্যাক বেঙ্গল) ছাগল খামার
-
হাঁসের জাত পরিচিতি
-
বাড়ির ছাদেও ছাগল পালন করে আয় করতে পারেন প্রচুর অর্থ
-
সহজে শিখে নিন শুঁটকি প্রস্তুতকরণ পদ্ধতি
সেই দিন কি তাহলে প্রায় এসে গেল, যখন এমন খাবার বিক্রি হবে দোকানে – যা তৈরি কৃত্রিম মাংস দিয়ে, কিন্তু তা থেকে আসল মাংসের মতোই ‘রক্ত’ বেরোয়?
সম্প্রতি কিছু কিছু দেশে ‘মিট-ফ্রি’ খাবার সহজলভ্য হয়ে ওঠায় বিশেষজ্ঞরা এমন কথাই বলছেন।
মানুষের খাদ্য কিভাবে পরিবেশ এবং স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলছে – তা নিয়ে একদিকে যেমন উদ্বেগ বাড়ছে, অন্যদিকে নিরামিষভোজী হবার প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ছে।
এই ভেজিটেরিয়ানরা যে খাবার খান তাকে বলে ভেগান ফুড। বিভিন্ন মাংস-জাত খাবারের ভেগান সংস্করণ বের হতে যাচ্ছে এখন। যেমন: ভেগান সসেজ-রোল বা ভেগান বার্গার।
এতে যে মাংস ব্যবহৃত হবে – তা দেখতে চিরাচরিত মাংসের মতোই। এই ‘নিরামিষ মাংসের’ গন্ধ ও স্বাদও আসল মাংসের মতো। এ থেকে আসল মাংসের মতো ‘রক্ত’ও বেরোয়।
এগুলো তৈরি হচ্ছে উদ্ভিদজাত প্রোটিন থেকে। সাধারণত এ কাজে ব্যবহার হচ্ছে গম, মটরশুঁটি বা আলু থেকে। আর এই মাংসের ‘রক্ত’ তৈরি হচ্ছে বীটের রস দিয়ে।
গরুর মাংসের রঙ এবং স্বাদ তৈরি হয় যে প্রাণীজ উপাদানটি থেকে তার নাম হচ্ছে ‘হেম’। ইম্পসিবল ফুডস নামে একটি আমেরিকান ফার্ম সম্প্রতি উদ্ভিজ্জ ‘হেম’ তৈরি করেছে – যা কৃত্রিম মাংসকে আসলের চেহারা এনে দেবে বলেই তারা মনে করছেন।
বিজ্ঞানীরা এখন ল্যাবরেটরিতেও কৃত্রিম মাংস তৈরি করছেন। এটা তৈরি হচ্ছে প্রাণীর স্টেম সেল দিয়ে। তাদের লক্ষ্য হচ্ছে এমন স্তরের কৃত্রিম মাংস তৈরি করা যা রান্না করা বা খাওয়ার অভিজ্ঞতা হবে একেবারেই আসল মাংসের মতো – এর পার্থক্য ধরাই প্রায় অসম্ভব হবে।
এখন পাশ্চাত্যের কিছু সুপারস্টোরে একটা মাংস-মুক্ত শাখাও দেখা যাচ্ছে।
তবে কৃত্রিম মাংস দিয়ে তৈরি খাদ্য পণ্য এখনো বাজারে বা রেস্তোরাঁয় না এলেও কয়েক বছরের মধ্যেই তা পাওয়া যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
‘জাস্ট’ নামে একটি ফার্ম বলছে, ২০১৯ সাল শেষ হবার আগেই তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুপার স্টোরগুলোতে ল্যাবরেটরিতে তৈরি করা চিকেন বা ‘মুরগির মাংস’ আনতে পারবে বলে তারা আশা করছে।
অবশ্য এ জন্য আমেরিকার ফুড এ্যান্ড ড্রাগ এ্যাডমিনিস্ট্রেশনের অনুমতি লাগবে।
তা ছাড়া সে অনুমতি পাওয়া গেলেও ল্যাবরেটরিতে তৈরি মাংস সম্পর্কে মানুষের যে বিরূপ ধারণা বা ‘ছি ছি’ করে ওঠার প্রবণতা – তা একটি বড় বাধা হবে, এমনটাই অনেকের ধারণা।
করোনা মহামারিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা বাসায় অলস সময় পার করছেন। দীর্ঘ ছুটির এ সময়কে কাজে লাগিয়ে নিজ জেলা নরসিংদীর শিবপুরে কোয়েল পালন করে সফল হয়েছেন সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের (গবি) ছাত্র মো. সাকিকুল ইসলাম নাদিম। বর্তমানে কোয়েল খামার থেকে প্রতিমাসে তার আয় প্রায় ২০ হাজার টাকা।
উদ্যোক্তা নাদিম জাগো নিউজকে এ সফলতার গল্প শোনান। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল অনুষদের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী।
নাদিমের কোয়েল খামারের যাত্রা শুরু গত বছরের ৩ আগস্ট। স্কুলে পড়াকালীন সিলেটে আত্মীয়ের বাড়িতে কোয়েল পালন দেখে আগ্রহ জন্মে। এরপর খোঁজখবর নিতে থাকেন। কিন্তু পর্যাপ্ত জ্ঞান ও সময়ের অভাবে এতদিন শুরু করা সম্ভব হয়নি। চলতি বছরের মার্চে ক্যাম্পাস বন্ধ হওয়ার পর সুযোগটা হাতে চলে আসে। তবে করোনায় ডিমের চাহিদার কথা বিবেচনা করে তখন শুরু করতে পারেননি।
করোনা সংক্রমণ কিছুটা কমলে নিজের বাড়িতেই শেড নির্মাণ করে সাত হাজারের বেশি একদিনের বাচ্চা তোলেন। এতে তার খরচ হয় প্রায় ৫০ হাজার টাকা। শেড নির্মাণ ও কোয়েল পালনের যন্ত্রপাতি ক্রয়ে ব্যয় হয় আরও ৭০ হাজার টাকা। কোয়েলের বয়স এক মাস পার হওয়ার পর ডিম দেয়া শুরু করে। এর মাঝে ৩০ দিন বয়সী প্রায় সাড়ে তিন হাজার পুরুষ কোয়েল বিক্রি করে নাদিমের উপার্জন প্রায় ৬০ হাজার টাকা।
কোয়েল পালনে মূলত ডিম থেকেই লাভ আসে। নাদিমের খামারে বর্তমানে তিন হাজারের বেশি ফিমেল (নারী) কোয়েল পাখি আছে। প্রতিদিন এখান থেকে গড়ে প্রায় ২২৫০টি ডিম পাচ্ছেন। প্রতি ১০০ ডিম গড়ে ১৫০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। অনলাইন ক্লাস চলমান থাকায় কাজের সুবিধার্থে খামারে একজন লোক নিয়োগ করেছেন নাদিম। সব খরচ বাদ দিয়ে গড়ে প্রতিমাসে ২০ হাজার টাকা উপার্জন হচ্ছে বলে জানান গণবিশ্ববিদ্যালয়ের এই ছাত্র।
নিজে ভেটেরিনারি শিক্ষার্থী হওয়ায় এবং শিক্ষকদের পরামর্শে নাদিমের খামারের ব্যবস্থাপনা বেশ ভালো। অন্যান্য খামারগুলোর তুলনায় তার খামারে বাচ্চা মৃত্যুহার অত্যন্ত নগণ্য। তবে করোনার কারণে নানামুখী সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
নাদিম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আশানুরুপ ডিম উৎপাদন হলেও দাম বেশ কম। স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় ডিমের চাহিদা কমেছে। যে কারণে অন্যান্য সময়ে ১০০ ডিম ১৭০-১৯০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হলেও এখন সেটা গড়ে মাত্র দেড়শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজার ভালো হলে মাসে আরও ১০ হাজার টাকা বেশি ইনকাম হতো।’
কুমিল্লায় কোয়েল পাখি পালনে স্বাবলম্বী হচ্ছেন তরুণরা। দিন দিন এ সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মতে, কোয়েল পাখি পালনে মনোযোগী হলে তরুণরা বেকারত্ব ঘোচাতে পারে। এখানকার অনেকে নিজেদের পরিবারের ডিম ও মাংসের চাহিদা মেটাতে ক্ষুদ্র আকারে কোয়েল পাখি পালন করছেন। বড় খামারি রয়েছেন কুমিল্লা সদর, সদর দক্ষিণ, লালমাই, বরুড়া, বুড়িচং ও চান্দিনাসহ বিভিন্ন উপজেলায়। জেলায় খামারির সংখ্যা ৫০-এর বেশি হবে বলে জানিয়েছেন খামারিরা।
কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার কুন্দারঘোড়া গ্রাম। এ গ্রামে তরুণ আনোয়ার উল্লাহ কোয়েল পাখি পালন করছেন। তিন বছর ধরে তিনি পালন করছেন। ঘরসহ পুঁজি লেগেছে আড়াই লাখ টাকা। প্রথম বছরে তার পুঁজি উঠে গেছে। তার বর্তমানে ২০০০ কোয়েল পাখি রয়েছে। তিনি তা থেকে প্রতিদিন ১৫০০ ডিম সংগ্রহ করেন। স্থানীয় তরুণরা পরামর্শ চাইলেও তিনি সহযোগিতা করেন। কোয়েল পালনে তার পরিবারে সচ্ছলতা এসেছে। মনোযোগী হলে কোয়েল পালনে যে কেউ সফলতা পেতে পারে বলে তার দাবি। জেলার বড় খামারি চান্দিনার রূপসী বাংলা এগ্রো ফার্মের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. তাজুল ইসলাম বলেন, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ করলে সফলতা আসবে। তাছাড়া স্থানীয়ভাবে বাজার তৈরির কাজও করতে হবে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, কোয়েল পাখির মাংস ও ডিম পুষ্টিকর খাবার। জেলায় কোয়েল পাখির মাংস ও ডিমের চাহিদা বাড়ছে। কোয়েল পাখি পালনে স্বাবলম্বী হচ্ছে তরুণরা। জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতর তাদের পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছে। কোয়েল পাখি চাষে তরুণরা বেকারত্ব ঘোচাতে পারে।
কোয়েল পালন খুবই লাভজনক। প্রায় সব ধরণের আবহাওয়া কোয়েল পাখি পালনের উপযুক্ত | পোল্ট্রির প্রায় ১১ রকম প্রজাতির মধ্যে কোয়েল এক ছোট গৃহপালিত পাখি, যা খুব সহজেই পালন (Quail rearing) করে যায় | স্বল্প মূল্যে, অল্প জায়গায়, অল্প খাদ্যে কোয়েল পালন কৃষকবন্ধুদের জন্য বেশ লাভজনক ব্যবসা | কোয়েলের ডিমে কোলেস্টেরল কম এবং আমিষ বেশি | সর্বোপরি, কোয়েলের মাংস বেশ সুস্বাদু, তাই বাজারে এর চাহিদা সারাবছর বেশ থাকে |
কোয়েল পালনের সুবিধা(Benefits of bater farming):
১) কোয়েল দ্রুত বাড়ে, ৬-৭ সপ্তাহে ডিম পাড়া শুরু করে এবং বছরে ২৫০-২৬০ টি ডিম পাড়ে |
২) ডিমে কোলেস্টেরল কম এবং প্রোটিনের ভাগ বেশি |
৩) কোয়েলের দৈহিক ওজনের তুলনায় ডিমের শতকরা ওজন বেশি |
৪) ৮-১০টা কোয়েল একটি মুরগির জায়গায় পালন করা যায় এবং ১৭-১৮ দিনে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয় |
৫) কোয়েলের রোগবালাই খুব কম এবং খাবার খুবই কম লাগে |
৬) অল্প পুঁজি বিনিয়োগ করে অল্প দিনে বেশি লাভ করা যায়।
জাত:
পৃথিবীতে বর্তমানে ১৭-১৮ জাতের কোয়েল আছে। অন্যান্য পোলট্রির মতো কোয়েলের মাংস এবং ডিম উৎপাদনের জন্য পৃথক পৃথক জাত আছে। কোয়েলের বিভিন্ন জাতের মধ্যে ‘জাপানিজ কোয়েল’ অন্যতম।
প্রজনন(Breeding):
শুধুমাত্র ডিম ফুটাতে চাইলে স্ত্রী এবং পুরুষ কোয়েল একত্রে রাখার প্রয়োজন। স্ত্রী কোয়েল প্রতিপালন অধিক লাভজনক। আশানুরূপ ডিমের উর্বরতা পেতে হলে ৩টি স্ত্রী কোয়েলের সাথে ১টি পুরুষ কোয়েল রাখার ৪ দিন পর থেকে বাচ্চা ফুটানোর জন্য ডিম সংগ্রহ করা উচিৎ। স্ত্রী কোয়েল থেকে পুরুষ কোয়েল আলাদা করার পর ৩ দিন পর্যন্ত ফুটানোর ডিম সংগ্রহ করা যায়। উপযুক্ত পরিবেশে প্রথম বছর গড়ে ২৫০-৩০০টি ডিম পাড়ে। কোয়েলের ডিমের গড় ওজন ১০-১২ গ্রাম।
বাচ্চার যত্ন:
সদ্য জন্মানো কোয়েলের বাচ্চা খুবই ছোট থাকে, ওজন মাত্র ৫-৭ গ্রাম। এ সময় যে কোনো রকম ত্রুটিপূর্ণ ব্যবস্থাপনার প্রভাব স্বাভাবিক দৈহিক বৃদ্ধি, ডিম উৎপাদন এবং বেঁচে থাকার ওপর পড়ে। এঅবস্থায় খাদ্যে প্রয়োজনীয় পুষ্টিমান এবং কাম্য তাপমাত্রা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে বজায় রাখতে হবে। বাচ্চা হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ব্রুডিং ঘরে এনে প্রথমে গ্লুকোজ এবং এমবাভিট ডলিউ এস জলের সাথে মিশিয়ে পরপর ৩ দিন খেতে দিতে হবে এবং পরে খাদ্য দিতে হবে। প্রথম সপ্তাহ খবরের কাগজ বিছিয়ে তার ওপর খাবার ছিটিয়ে দিতে হবে এবং প্রতিদিন খবরের কাগজ পরিবর্তন করতে হবে। এক সপ্তাহ পর ছোট খাবার পাত্র বা ফ্লাট ট্রে ব্যবহার করতে হবে।
খাঁচায় কোয়েল পালন:
খাঁচায় ৬০টি বয়স্ক কোয়েলের জন্য ১২০ সেমি. দৈর্ঘ্য, ৬০ সেমি. প্রস্থ এবং ৩০ সেমি. উচ্চতা বিশিষ্ট একটি খাঁচার প্রয়োজন। খাঁচার মেঝের জালিটি হবে ১৬-১৮ গেজি | ৩ সপ্তাহ পর্যন্ত বাচ্চার খাচার মেঝের জালের ফাঁক হবে ৩ মিলিমিটার এবং বয়স্ক কোয়েলের খাঁচায় মেঝের জালের ফাঁক হবে ৫ মিলিমিটার। খাঁচার দুই পার্শ্বে একদিকে খাবার পাত্র অন্যদিকে জলের পাত্র সংযুক্ত করে দিতে হবে। খাঁচায় ৬০টি কোয়েলের জন্য ৩ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত ২৫ সেন্টিমিটার বা ১০ ইঞ্চি উচ্চতা বিশিষ্ট ২৮ বর্গ সেন্টিমিটার বা ৩ বর্গফুট জায়গার প্রয়োজন।
খাদ্য(Food):
ডিম পাড়া কোয়েলের প্রতি কেজি খাবারে ২.৫-৩.০% ক্যালসিয়াম থাকতে হবে। ডিমের উৎপাদন ধরে রাখার জন্য গরমের সময় ৩.৫% ক্যালসিয়াম প্রয়োজন। সকালে এবং বিকালে খাবার পাত্র ভালো করে পরিষ্কার সাপেক্ষে মাথাপিছু দৈনিক ২০-২৫ গ্রাম খাবার দিতে হবে। উল্লেখ্য যে, প্রথম সপ্তাহ থেকে ৫ গ্রাম দিয়ে শুরু করে প্রতি সপ্তাহে ৫ গ্রাম করে বাড়িয়ে ২০-২৫ গ্রাম পর্যন্ত উঠিয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। প্রতিটি বয়স্ক কোয়েলের জন্য ১.২৫-২.৫ সেন্টিমিটার (১/২ থেকে ১ ইঞ্চি) খাবার পাত্রের জায়গা দিতে হবে। খাবার জল সবসময় পরিষ্কার দিতে হবে এবং যে পাত্রে দেওয়া হবে সেটিকে প্রতিদিন পরিষ্কার করতে হবে |
লিটার ব্যবস্থাপনা:
তুষ, বালি, ছাই, কাঠের গুড়া প্রভৃতি দ্রব্যাদি কোয়েলের লিটার হিসাবে মেঝেতে ব্যবহার করা যায়। অবস্থাভেদে লিটার পরিবর্তন আবশ্যক যেন কোনো রকম অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের সৃষ্টি না হয়। মেঝেতে ডিপ লিটার পদ্ধতি অবলম্বন করা ভালো। প্রথমেই ৫-৬ ইঞ্চি পুরু তুষ বিছিয়ে দিতে হবে এবং লক্ষ্য রাখতে হবে যেন লিটার ভিজে না যায়। স্বাভাবিকভাবে শীতকালে লিটার পরিবর্তন এবং স্থাপন করতে হবে, অন্য ঋতুতে লিটার পরিবর্তন এবং স্থাপন করলে লিটারের শতকরা ১-২ ভাগ কলি চুন মিশিয়ে দিতে হবে যেন লিটার শুষ্ক এবং জীবাণুমুক্ত হয়।
কোয়েল পাখি পালনের গুরুত্ব
কোয়েল পাখি পালন বাংলাদেশের পশুপালন খাতের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। এটি স্বল্প জায়গা, কম খরচ এবং দ্রুত উৎপাদনের কারণে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।
কোয়েল পাখি পালনের গুরুত্ব
স্বল্প জায়গায় পালন: কোয়েল পাখি পালনে খুব বেশি জায়গার প্রয়োজন হয় না। ছোট খামার বা বাড়ির আঙিনায়ও সহজে পালন করা যায়।
খরচ কম: অন্যান্য পোলট্রির তুলনায় কোয়েল পাখি পালনের খরচ অনেক কম। খাদ্য এবং ব্যবস্থাপনা সহজ ও সাশ্রয়ী।
দ্রুত উৎপাদন: কোয়েল পাখি মাত্র ৬-৭ সপ্তাহে ডিম পাড়া শুরু করে। এর বাচ্চাগুলোও দ্রুত বেড়ে ওঠে।
উচ্চ উৎপাদন হার: একটি কোয়েল পাখি বছরে প্রায় ২৫০-৩০০ টি ডিম পাড়ে।
আয়ের সুযোগ: কোয়েলের মাংস এবং ডিমের চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে, যা কৃষকদের জন্য একটি লাভজনক ব্যবসা হতে পারে।
প্রতিকূল আবহাওয়ায় টিকে থাকার ক্ষমতা: কোয়েল পাখি বিভিন্ন প্রাকৃতিক প্রতিকূলতায় সহজেই মানিয়ে নিতে পারে।
কোয়েল পাখি পালন শুধু একটি লাভজনক উদ্যোগ নয়, বরং এর ডিম এবং মাংস মানুষের পুষ্টি ও স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি বাংলাদেশের কৃষি অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে।
মাংসের পুষ্টিগুণ
প্রোটিনে সমৃদ্ধ: কোয়েল পাখির মাংস উচ্চমানের প্রোটিনের একটি উৎস, যা শরীরের পেশি গঠনে সহায়তা করে।
লো ফ্যাট ও ক্যালরি: এর মাংসে ফ্যাট এবং ক্যালরির পরিমাণ কম, যা ডায়াবেটিস ও হৃদরোগীদের জন্য নিরাপদ।
ভিটামিন ও মিনারেল: কোয়েল পাখির মাংসে ভিটামিন বি৬, বি১২, জিঙ্ক, সেলেনিয়াম এবং আয়রন প্রচুর পরিমাণে থাকে।
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ: এটি কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।
স্বাস্থ্য উপকারিতা
ইমিউন সিস্টেম উন্নত করে: এর মাংসে থাকা ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
হাড় মজবুত করে: ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের উপস্থিতি হাড় শক্তিশালী করতে সহায়তা করে।
হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক: ফ্যাটের পরিমাণ কম থাকায় এটি হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
শক্তি বৃদ্ধি: প্রোটিন ও ভিটামিন সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি শরীরে শক্তি জোগায় এবং ক্লান্তি দূর করে।
ত্বকের জন্য ভালো: কোয়েলের মাংসের পুষ্টি উপাদান ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে।
কোয়েল পাখি পালন শুধু একটি লাভজনক উদ্যোগ নয়, বরং এর ডিম এবং মাংস মানুষের পুষ্টি ও স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি বাংলাদেশের কৃষি অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে।
কোয়েলের মাংস। মানবদেহের রোগ প্রতিরোধী গুণ থাকায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আছে এর জনপ্রিয়তা। গবেষণা বলছে, বিটা ক্যারোটিন ও ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ছাড়াও এতে আছে আয়রন ও ক্যালসিয়াম।
কোয়েল পাখির মাংসের উপকারিতা
কোয়েল পাখির মাংস স্বাস্থ্যগুণ সম্পন্ন এবং অনেক উপকারী। এটি পুষ্টিগুণে ভরপুর, সহজপাচ্য এবং বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়।
মাংসের পুষ্টিগুণ
প্রোটিনে সমৃদ্ধ: কোয়েল পাখির মাংস উচ্চমানের প্রোটিনের একটি উৎস, যা শরীরের পেশি গঠনে সহায়তা করে।
লো ফ্যাট ও ক্যালরি: এর মাংসে ফ্যাট এবং ক্যালরির পরিমাণ কম, যা ডায়াবেটিস ও হৃদরোগীদের জন্য নিরাপদ।
ভিটামিন ও মিনারেল: কোয়েল পাখির মাংসে ভিটামিন বি৬, বি১২, জিঙ্ক, সেলেনিয়াম এবং আয়রন প্রচুর পরিমাণে থাকে।
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ: এটি কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।
স্বাস্থ্য উপকারিতা
ইমিউন সিস্টেম উন্নত করে: এর মাংসে থাকা ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
হাড় মজবুত করে: ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের উপস্থিতি হাড় শক্তিশালী করতে সহায়তা করে।
হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক: ফ্যাটের পরিমাণ কম থাকায় এটি হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
শক্তি বৃদ্ধি: প্রোটিন ও ভিটামিন সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি শরীরে শক্তি জোগায় এবং ক্লান্তি দূর করে।
ত্বকের জন্য ভালো: কোয়েলের মাংসের পুষ্টি উপাদান ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে।
কোয়েল পাখি পালন শুধু একটি লাভজনক উদ্যোগ নয়, বরং এর ডিম এবং মাংস মানুষের পুষ্টি ও স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি বাংলাদেশের কৃষি অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন