আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

বিশ্ব

জো বাইডেন: আমেরিকার নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের রাজনৈতিক জীবন

জো বাইডেন: আমেরিকার নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের রাজনৈতিক জীবন
জো বাইডেন: আমেরিকার নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের রাজনৈতিক জীবন

শুরুটা কঠিনই হয়েছিল জো বাইডেনের জন্য। ফেব্রুয়ারির শীতে আইওয়া ককাসের ভোটের ফলাফল দেখে মুষড়ে পড়েছিলেন। ২০২০-র প্রেসিডেন্ট পদে তার প্রার্থী হবার সম্ভাবনা শেষ পর্যন্ত টিকবে কিনা তা নিয়েই বড় রকম সংশয় দেখা দিয়েছিল।

এক কথায়, গত ফেব্রুয়ারিতেও তিনি ছিলেন হোয়াইট হাউসের দৌড়ে একজন পরাজিত ব্যক্তি।

দীর্ঘ প্রায় ৫০ বছরের রাজনৈতিক জীবনে হোয়াইট হাউসে যাবার যে স্বপ্ন জো বাইডেন বহুদিন থেকে লালন করে আসছেন, তা পূরণ হবার জন্য এটাই ছিল সম্ভবত তার শেষ চেষ্টা।

প্রেসিডেন্ট পদের জন্য দলের পূর্ব-বাছাই প্রক্রিয়া – যাকে বলা হয় প্রাইমারি নির্বাচন – তার শুরুর পর্যায়ে প্রচারণার সময় মি.বাইডেনকে এবার দেখা গেছে আবেগপূর্ণ কথাবার্তা বলতে। তিনি প্রায় পাঁচ বছর আগে তার ছেলের মৃত্যুর কথা বলেছেন, বলেছেন তার ছেলেবেলার কথা, অভাব অনটনের পরিবারে তার বেড়ে ওঠার কথা। তবে জনগণকে তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেছিলেন: “সবসময়ই আশা আছে।” এটাই তার বিশ্বাস।

বিভিন্ন পর্যায়ের প্রাইমারিতে প্রার্থী বাছাইয়ের প্রতিদ্বন্দ্বিতাতেও তাকে রীতিমত বেগ পেতে হয়েছে। তবে তার ব্যক্তিসত্ত্বার পরিচয় উঠে এসেছে বিভিন্ন প্রচারণা সভায় তার আবেগপূর্ণ আবেদন থেকে। তার মনমানসিকতা, তার রাজনৈতিক জীবনে ব্যক্তিগত ও পেশাগত ক্ষেত্রে মানসিক আঘাতের জায়গাগুলো এবং যেসব রাজনৈতিক প্রতিকূলতার মুখোমুখি তাকে হতে হয়েছে তার একটা ছবি পরিষ্কার হয়েছে এসব প্রচারণায়।

২০২০র প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর দৌড়ে নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক জীবনের উত্থান পতনের আবেগময় মুহূর্তের কথা তুলে ধরেছেন মি. বাইডেন
২০২০র প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর দৌড়ে নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক জীবনের উত্থান পতনের আবেগময় মুহূর্তের কথা তুলে ধরেছেন মি. বাইডেন

“আমি ভাগ্য মানি – ভাগ্যের ওপর আমার অগাধ বিশ্বাস,” মি. বাইডেন ১৯৮৯ সালে বলেছিলেন ন্যাশানাল জার্নাল নামে সরকারের একটি উপদেষ্টা সংস্থাকে। “আমার ব্যক্তিগত জীবন কখনই আমার পরিকল্পনা অনুযায়ী চলেনি। কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনে আমি যেটা চেয়েছি, সেটা কীভাবে যেন হয়ে গেছে- একটা অদৃশ্য হাত সেটা ঘটিয়ে দিয়েছে।”

লড়াকু

ঘনিষ্ঠ প্রিয়জনদের অকালমৃত্যুর অভিজ্ঞতা হয়েছে মি. বাইডেনের জীবনে একাধিকবার। রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা অর্জনে উপরে ওঠার সিঁড়ি যখন তিনি তৈরি করেছেন, সেগুলো ভেঙে পড়েছে। আবার তাকে নতুন করে সেগুলো গড়তে হয়েছে।

বাকপটু হবার জন্য তাকে অনেক খাটতে হয়েছে। কারণ উল্টোপাল্টা ও অপ্রাসঙ্গিক শব্দ ব্যবহারের যে প্রবণতা একসময় তার ছিল, তার জন্য তাকে অনেক ব্যঙ্গবিদ্রূপ সহ্য করতে হয়েছে।

জো বাইডেন প্রায়ই একটা কথা বলেন, “বাবার একটা কথা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় শিক্ষা – কে তোমাকে কতবার ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল, সেটা বড় কথা নয়, কত দ্রুত তুমি উঠে দাঁড়াতে পারলে, মানুষ হিসাবে সেটাই হবে তোমার সাফল্যের পরিচয়।”

প্রেসিডেন্ট পদের জন্য লড়াইয়ে হেরে গিয়েও লড়ে গেছেন মি. বাইডেন। প্রতিটা পরাজয়ের পর উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছেন।

সিনেটার বব কেরি, ১৯৯০এর দশকে কংগ্রেসে মি. বাইডেনের সহকর্মী বলেছেন, “জো কখনও হাল ছাড়ে না। দরকার না হলেও তার কাজ সে করেই যায়।”

অনেকের মতে মি. বাইডেন অনেক প্রতিকূলতা কাটিয়ে টিকে থাকা একজন ব্যক্তি।

ডেলাওয়ারে ১৮ই ডিসেম্বর ১৯৭২ মর্মান্তিক এক গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান জো বাইডেনের স্ত্রী নেইলিয়া ও শিশু সন্তান এমি
ডেলাওয়ারে ১৮ই ডিসেম্বর ১৯৭২ মর্মান্তিক এক গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান জো বাইডেনের স্ত্রী নেইলিয়া ও শিশু সন্তান এমি

ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি

ডিসেম্বর ১৮, ১৯৭২ – মি. বাইডেন ছিলেন ওয়াশিংটনে। টেলিফোন বাজল, তার ভাই জিমি বাইডেন ডেলাওয়ার থেকে ফোন করেছেন। বোন ভ্যালেরির সাথে কথা বলতে চাইলেন।

বোন বললেন, “একটা ছোট দুঘর্টনা ঘটেছে। কিন্তু চিন্তা করার কিছু নেই।”

সেদিনই আরও পরের দিকে মি. বাইডেন জেনেছিলেন ওই দুর্ঘটনায় তার স্ত্রী নেইলিয়া এবং শিশুসন্তান নেওমি মারা গেছেন। তার স্ত্রী গাড়ি চালাচ্ছিলেন। একটা লরি গাড়িতে ধাক্কা মারে। গাড়িতে থাকা তার দুই ছেলে বোও আর হান্টারও গুরুতরভাবে আহত হয়েছে।

তারা ক্রিসমাস উৎসবের জন্য ক্রিসমাস ট্রি কিনতে গিয়েছিলেন। মি. বাইডেন তখন সবে সেনেটার নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি তার কংগ্রেস অফিসের কর্মী নিয়োগের জন্য সেদিন ইন্টারভিউ নিতে ব্যস্ত ছিলেন। এছাড়াও পরিবারের থাকার জন্য একটা বাসা কেনার বিষয়টি সেদিন তিনি চূড়ান্ত করতে গিয়েছিলেন।

ওই ঘটনায় তিনি একেবারেই বিধ্বস্ত হয়ে পড়েন।

“আমি কথা বলতে পারতাম না, বুকের ভেতরে একটা বিশাল শূণ্যতা অনুভব করতাম, মনে হতো একটা কালো গহ্বর আমাকে ভেতরে টেনে নিচ্ছে,” তার স্মৃতিকথায় লিখেছেন মি. বাইডেন।

তিনি রাজনীতি ছেড়ে দেবার কথা ভেবেছিলেন, ঠিক করেছিলেন যাজক হবেন, দুই ছেলেকে মানুষ করবেন। তিনি লিখেছেন, যেসব এলাকায় খুব গুণ্ডামি হতো, সেসব এলাকায় তিনি সন্ধ্যেবেলা ঘুরে বেড়াতেন। মারপিট করতে তার ইচ্ছা হতো।

“আমার ভেতরে একটা বিরাট ক্রোধ তৈরি হয়েছিল। আমার মনে হয়েছিল, ঈশ্বর আমার সাথে একটা নিষ্ঠুর খেলা খেলছেন। আমার রাগ হতো।”

জো বাইডেনের রাজনৈতিক জীবনে ৩০ বছরের জন্মদিন ছিল গুরুত্বপূর্ণ, কারণ যুক্তরাষ্ট্রে ৩০ বছর না হলে সেনেটারের দায়িত্ব পালন সাংবিধানিক নিয়ম বহির্ভূত। ৩০ বছরের জন্মদিনের পার্টিতে স্ত্রী ও দুই শিশু পুত্রকে নিয়ে কেক কাটছেন মি. বাইডেন
জো বাইডেনের রাজনৈতিক জীবনে ৩০ বছরের জন্মদিন ছিল গুরুত্বপূর্ণ, কারণ যুক্তরাষ্ট্রে ৩০ বছর না হলে সেনেটারের দায়িত্ব পালন সাংবিধানিক নিয়ম বহির্ভূত। ৩০ বছরের জন্মদিনের পার্টিতে স্ত্রী ও দুই শিশু পুত্রকে নিয়ে কেক কাটছেন মি. বাইডেন

কৈশোর ও যৌবন

জো বাইডেনের বাবা ছিলেন ব্যবসায়ী। মি. বাইডেনের জন্মের আগে তিনি ব্যবসায় সাফল্য পেয়েছিলেন। কিন্তু জো-র জন্মের পর তার ব্যবসা পড়ে যায়। জো বাইডেনের কৈশোর কেটেছে পারিবারিক অভাব অনটনের মধ্যে দিয়ে।

পেনসিলভেনিয়ায় খুবই সাদামাটা এক বাসায় যৌথ পরিবারে বড় হয়েছেন তিনি। তার পরিবার ছিল খুব ধার্মিক। ক্যাথলিক মূল্যবোধ ও তার ধর্মবিশ্বাস গড়ে উঠেছিল পারিবারিক ধর্মচর্চ্চার সুবাদে।

ছেলেবেলায় তার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল তোতলামি কাটিয়ে ওঠা। স্কুলের উঁচু ক্লাস পর্যন্ত এই সমস্যা তিনি কাটিয়ে উঠতে পারেননি।

পড়তে গিয়ে তার তোতলামির জন্য সহপাঠীরা তো বটেই, এমনকী শিক্ষকরাও তাকে নিয়ে ঠাট্টা মস্করা করতেন।

“এখনও আমার মনে আছে সেই যন্ত্রণার কথা, লজ্জা রাগ আর অপমানের দিনগুলোর কথা,” মি. বাইডেন লিখেছেন তার স্মৃতিকথায়।

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শান্তভাবে কবিতা আবৃত্তি ও সংযতভাবে কথা বলা আয়ত্ত করতে করতে, হাই স্কুল পার হবার পর তোতলামো কাটিয়ে ওঠেন তিনি।

হাই স্কুল শেষ করে তিনি পড়তে যান ডেলাওয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে, সেখান থেকে সিরাকিউজ বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন পড়তে।

মাত্র ৩০ বছর বয়সে তিনি ছিলেন দ্বিতীয় সবচেয়ে কনিষ্ঠ আমেরিকান সেনেটার।
মাত্র ৩০ বছর বয়সে তিনি ছিলেন দ্বিতীয় সবচেয়ে কনিষ্ঠ আমেরিকান সেনেটার।

রাজনৈতিক উত্থান

কলেজেই পরিচয় হয়েছিল নেইলিয়া হান্টারের সাথে। লেখাপড়া শেষে ফিরে যান ডেলাওয়ারের উইলমিংটন শহরে। বিয়ে করেন নেইলিয়াকে। উইলমিংটনেই শুরু হয় তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার।

একটি বড় আইনী প্রতিষ্ঠানে তিনি আইনজীবী হিসাবে কাজ শুরু করেছিলেন। কিন্তু ধনী ও ক্ষমতাশালীদের প্রতিনিধিত্ব করতে গিয়ে তিনি অল্পদিনেই হাঁপিয়ে ওঠেন।

সাধারণ মানুষের হয়ে বিবাদী পক্ষে আইন লড়ার কাজ নেন তিনি। নগর পরিষদের একটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জেতার মধ্যে দিয়ে শুরু হয় রাজনীতিতে তার পথচলা।

এরপর আসে সিনেটে তার বিজয় ১৯৭২ সলে। অনেকদিন ওই আসনে থাকা রিপাবলিকান সিনেটারকে হারিয়ে তিনি সবার দৃষ্টি কাড়েন।

রাজনৈতিক জীবনে জো বাইডেন তখন সফল তরুণ। মাত্র ৩০ বছর বয়সে দুই মেয়াদে সিনেটার থাকা রিপাবলিকান প্রার্থীকে হারিয়ে তিনি সিনেটে আসন জয় করেছেন। ওই নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের যেখানে ভরাডুবি হয়েছে, সেখানে তার এই অভাবনীয় জয়ের পর রাজনীতির অঙ্গনে তিনি তখন হয়ে উঠেছেন ডেমোক্র্যাটিক দলের সম্ভাবনাময় তরুণ।

ছেলে বো বাইডেনের সাথে জো বাইডেন ২০০৮ সালে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির জাতীয় কনভেনশানে
ছেলে বো বাইডেনের সাথে জো বাইডেন ২০০৮ সালে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির জাতীয় কনভেনশানে

আবার আঘাত

তিনি বড় ছেলে বো বাইডেনকে হারান ২০১৫ সালে। বো মারা যান মস্তিষ্কের ক্যান্সারে। বাবার মত তিনিও রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন। ডেলাওয়ারের অ্যাটর্নি জেনারেল হিসাবে কাজ করতেন।

দু’হাজার সতের সালে লেখা তার আত্মজীবনীতে মি. বাইডেন তার ছেলের অসুস্থতা প্রসঙ্গে লিখেছেন, ২০১৬-র নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর লড়াইয়ে নামার ইচ্ছা ঘোষণার তোড়জোড় যখন তিনি নিচ্ছেন ২০১৫তে, তখন তার ছেলের অকালমৃত্যু আবার তাকে বিধ্বস্ত করে দেয়। তিনি সিদ্ধান্ত পাল্টান।

“মানসিকভাবে যথেষ্ট উৎসাহ পাবো কিনা আমি নিশ্চিত ছিলাম না। আগের অভিজ্ঞতায় দেখেছি শোক এমন একটা মানসিক চাপ, যা কোন সময়সূচি বা কাজের সময়ের তোয়াক্কা করে না,” তিনি লিখেছেন।

ব্যক্তিগত জীবনে শোক ও আঘাতের পাশাপাশি তিনি তার রাজনৈতিক জীবন গড়ে তুলেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে ২৩শে সেপ্টেম্বর ১৯৮৭ জো বাইডেন ঘোষণা করেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মনোনয়ন পাবার লড়াই থেকে তিনি নিজেকে প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন। পাশে স্ত্রী জিল বাইডেন।
সংবাদ সম্মেলনে ২৩শে সেপ্টেম্বর ১৯৮৭ জো বাইডেন ঘোষণা করেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মনোনয়ন পাবার লড়াই থেকে তিনি নিজেকে প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন। পাশে স্ত্রী জিল বাইডেন।

হোয়াইট হাউসের দৌড়ে প্রথম হোঁচট

এক ঝাঁক সাংবাদিকের সামনে ১৯৮৭ সালের ২৩শে সেপ্টেম্বর জো বাইডেনকে ঘোষণা করতে হয়েছিল প্রেসিডেন্ট পদের জন্য ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মনোনয়ন পাবার দৌড় থেকে তিনি সরে দাঁড়াচ্ছেন। মাত্র তিন মাস আগে তিনি প্রার্থিতার লড়াইয়ে নেমেছিলেন।

“এর জন্য দায়ী আমি নিজে। নিজের ওপর রাগ আর হতাশায় ভুগছি। আমেরিকার মানুষকে আমি কীভাবে বোঝাবো এটাই জো বাইডেনের আসল পরিচয় নয়। এটা শুধু আমার মস্ত একটা ভুল,” লিখেছেন মি. বাইডেন।

সেটা ছিল ১৯৮৮র প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য লড়াই। মি. বাইডেনের প্রথমবার প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হবার উদ্যোগ লজ্জাজনক ঘটনার কারণে হোঁচট খায়। তার বিরুদ্ধে অন্যের লেখা চুরির ও অসততার অভিযোগ আনা হলে তিনি প্রচারণা থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন।

আইওয়ায় এক বিতর্কসভায় সমাপনী বিবৃতিতে মি. বাইডেন যে কথাগুলো বলেছিলেন তা ছিল ব্রিটিশ লেবার পার্টির নেতা নিল কিনকের একটি ভাষণের প্রতিটি শব্দের হুবহু উচ্চারণ। মি. কিনক তার শ্রমিক পরিবারে বড় হয়ে ওঠা নিয়ে তার ভাষণে যা বলেছিলেন তা প্রায় হুবহু আওড়ে যান মি. বাইডেন। এর আগের এক ভাষণে একই বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি মি. কিনকের নাম উল্লেখ করলেও আইওয়ার সভায় সে কথা বলেননি। তারই এক ডেমোক্র্যাট প্রতিপক্ষ বিষয়টি সামনে আনেন।

এই অভিযোগের সূত্র ধরে সামনে আনা হয় তার ছাত্র জীবনের একটি ঘটনা, যখন তিনি আইনের ছাত্র হিসাবে তার সাইটেশন পেপারে আরেকজনের লেখা হুবহু ব্যবহার করেছিলেন। তিনি তখন বলেছিলেন সেটা যে নিয়ম বহির্ভূত তা তিনি জানতেন না।

এই ঘটনা মি. বাইডেনের সততা ও বিশ্বাসযোগ্যতা বড়রকমের ধাক্কা খায়।

পরে তার এক জীবনীকারকে মি. বাইডেন বলেছিলেন, ওই ঘটনা তাকে “কুরে কুরে খেয়েছে। নিজেকে আমি চিরকাল একজন সৎ মানুষ হিসাবে মনে করেছি। সেই জায়গাটা বিরাট ধাক্কা খেয়েছে।”

মি. বাইডেন সেনেটের বিচার কমিটিতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন এবং জাতীয় পর্যায়ের রাজনীতিতে নিজেকে আরও তুলে ধরতে শুরু করেন।
মি. বাইডেন সেনেটের বিচার কমিটিতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন এবং জাতীয় পর্যায়ের রাজনীতিতে নিজেকে আরও তুলে ধরতে শুরু করেন।

জাতীয় রাজনীতিতে

তার স্ত্রী ও শিশু কন্যার মৃত্যুর পর মি. বাইডেন তার জীবনে স্থিতিশীলতা আনার চেষ্টা করেন। তার দুই ছেলেকে স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠার জন্য ঘরে অনেক সময় দেন। প্রথম ১৪ বছর তিনি ডেলাওয়্যার থেকে ওয়াশিংটন দৈনন্দিন যাতায়াত করতেন।

পরে তিনি দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন জিল জেকবস নামে এক স্কুল শিক্ষয়িত্রীকে। তাদের একটি ছেলে হয়- অ্যাশলি। মি. বাইডেন সিনেটের বিচার কমিটিতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন এবং জাতীয় পর্যায়ের রাজনীতিতে নিজেকে আরও তুলে ধরতে শুরু করেন।

প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হবার জন্য তার প্রথম প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবার পেছনে ওই লেখাচুরির কলঙ্ক তাকে অনেকদিন তাড়া করে বেড়িয়েছে।

তবে ১৯৮৮ সালের ওই নির্বাচন থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেবার ঘটনা অনেকে বলেন তার জন্য শাপে বর হয়েছিল।

লড়াই থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত ঘোষণার কয়েক মাসের মাথায় নিউ ইয়র্কে এক হোটেল ঘরে হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়েন জো বাইডেন। মস্তিষ্কের রক্তনালী ফুলে ওঠার এক সম্ভাব্য প্রাণঘাতী অসুখে তিনি আক্রান্ত হন। এর পরের ছয় মাস তাকে বহুবার হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে।

সবাইকে চমকে দিয়ে বারাক ওবামা তার ভাইস প্রেসিডেন্ট রানিং মেট হিসাবে বেছে নেন জো বাইডেনকে।
সবাইকে চমকে দিয়ে বারাক ওবামা তার ভাইস প্রেসিডেন্ট রানিং মেট হিসাবে বেছে নেন জো বাইডেনকে।

প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হতে আবার লড়াই

বিশ বছর পর আবার নতুন করে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হবার লড়াইয়ে নেমেছিলেন মি. বাইডেন ২০০৮এর নির্বাচনের জন্য। তখন তিনি রাজনীতিতে আর নতুন মুখ নন, তিনি একজন প্রবীণ রাজনীতিক।

তিনি বলেন ১৯৮৭ সালে তার প্রচারণা ছিল বড় বড় বুলি আর ছবিতে ভরা। বিশ বছর পর তিনি তার প্রচারণার ভাষা বদলে ফেলেন।

“গত বিশ বছর আমার জীবনযাত্রা দেখে আপনাদের নিশ্চয়ই বিশ্বাস জন্মেছে যে আমি একজন বিশ্বাসযোগ্য মানুষ,” ২০০৮য়ে আইওয়ার প্রচারণা সমাবেশে তিনি একথা বলেন। “আর সে কারণেই আবার এই পদে প্রার্থী হবার লড়াইয়ে আমি ফিরে এসেছি।”

তবে সেই লড়াইয়ে তিনি সফল হননি। বারাক ওবামা ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মনোনয়ন পান প্রেসিডেন্ট পদে লড়ার জন্য।

কিন্তু সবাইকে চমকে দিয়ে বারাক ওবামা তার ভাইস প্রেসিডেন্ট রানিং মেট হিসাবে বেছে নেন জো বাইডেনকে।

“তারা দুজনে খুবই আলাদা প্রকৃতির মানুষ,” বলেছেন সাংবাদিক ও ভাইস-প্রেসিডেন্সি বইয়ের লেখিকা কেট অ্যান্ডারসন ব্রাওয়ার। “ওবামা খুব সতর্কতার সাথে কথা বলেন, খুব ভাবনা চিন্তা করে মন্তব্য করেন। কিন্তু বাইডেন একেবারে উল্টো। না ভেবেই হুটহাট কথা বলা তার স্বভাব, যে কারণে অনেকবার তাকে অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে। বাইডেন ওবামাকে বলেছিলেন, তিনি বদলাবেন না ‘আমি যেমন আমি তেমনই থাকব’,” বলেছেন কেট অ্যান্ডারসন ব্রাওয়ার।

বারাক ওবামা ও জো বাইডেন নির্বাচনী প্রচারে
বারাক ওবামা ও জো বাইডেন নির্বাচনী প্রচারে

ওই নির্বাচনে মি.বাইডেনের একজন প্রতিদ্বন্দ্বী নিউ মেক্সিকোর সাবেক গভর্নর বিল রিচার্ডসন বলেন, ডেমাক্র্যাটিক পার্টির প্রাইমারি নির্বাচন পর্বের প্রচারণার সময় ওবামা আর বাইডেনের মধ্যে একটা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল।

“ওবামা তার প্রশাসনে পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ে একজন ঝানু রাজনীতিককে চাইছিলেন,” তিনি বলেন।

ইলিনয়ের জন সমাবেশে মি. বাইডেনকে তার রানিং মেট ঘোষণা করে মি. ওবামা বলেছিলেন, “জো বাইডেন একজন বিরল মানুষ- কয়েক দশক ধরে তিনি ওয়াশিংটনে নানা পরিবর্তন এনেছেন, কিন্তু ওয়াশিংটন তার মধ্যে কোন পরিবর্তন আনতে পারেনি। আমি মনে করি আমার পার্টনার হিসাবে, দেশকে সঠিক পথে পরিচালনা করতে তিনিই সবচেয়ে উপযুক্ত।”

ইরাক যুদ্ধ ও পররাষ্ট্র নীতি

মি. বাইডেন পররাষ্ট্র সম্পর্ক বিষয়ক আমেরিকান সিনেট কমিটিতে কাজ করেছেন দীর্ঘ দিন।

সিনেটের এই কমিটির সভাপতি হিসাবে ২০১২ সালের অক্টোবরে আমেরিকার রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টের ইরাক যুদ্ধে যাবার বিষয়টিকে অনুমোদন দেবার সিদ্ধান্ত ছিল তার ওপর।

এর ১১ বছর আগে উপসাগরীয় যুদ্ধের প্রাক্কালে প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচ ডাব্লিউ বুশকে সাদ্দাম হুসেনের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অনুমোদনের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিলেন মি. বাইডেন ।

“কুয়েতের মুক্তির জন্য আমেরিকানদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেবার আগে আমাদের উচিত দেখা কোনরকম বিকল্প পথ আমরা চেষ্টা করেছি কিনা, “সিনেট কমিটির শুনানিতে বলেছিলেন মি. বাইডেন। “আমরা করিনি।”

১৯৯০এ উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় জর্জ এইচ ডাব্লিউ বুশ সৌদি আরবে আমেরিকান নৌ সেনাদের সাথে
১৯৯০এ উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় জর্জ এইচ ডাব্লিউ বুশ সৌদি আরবে আমেরিকান নৌ সেনাদের সাথে

মি. বাইডেনের হুঁশিয়ারি স্বত্ত্বেও উপসাগরীয় যুদ্ধের পক্ষে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় এবং ওই যুদ্ধে আমেরিকান মারা যায় অল্প সংখ্যক।

এরপর থেকে বাইডেনকে পররাষ্ট্র ও জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতির ক্ষেত্রে দুর্বলচিত্ত বলে তুলে ধরা শুরু হয়।

ওই ভোট নিয়ে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হবার পরবর্তী কয়েক বছর মি. বাইডেন আন্তর্জাতিক বিষয়ে কট্টর অবস্থান দেখাতে শুরু করেন, যেমন বলকান গৃহযুদ্ধে আমেরিকান অবস্থান, ইরাকে বোমা হামলা এবং আফগানিস্তানে দখলদারিত্ব কায়েমের প্রতি তার সমর্থন প্রকাশ করে।

প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশ ইরাকের কাছে ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্র আছে এই অভিযোগে যখন ইরাকে নতুন করে যুদ্ধ শুরুর প্রস্তাব করেন, তখন মি. বাইডেন তাতে জোরালো সমর্থন দিয়েছিলেন।

“আমি মনে করি না এটা যুদ্ধ করার জন্য একটা হুজুগ, আমার বিশ্বাস এটা শান্তি ও নিরাপত্তার লক্ষ্যে অভিযান,” তিনি বলেন।

বাইডেনের ইরাক যুদ্ধে সমর্থন নিয়ে তথ্যচিত্র নির্মাতা মার্ক ওয়েসব্রট বলেছেন, “যেসব ডেমোক্র্যাট এই যুদ্ধ সমর্থন করেছিলেন, তাদের মনে হয়েছিল এই যুদ্ধ সমর্থন না করার ঝুঁকিটা হল, যুদ্ধটা যদি সফল হয়ে যায়, তাহলে তার থেকে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার ক্ষেত্রে তারা পেছিয়ে পড়বেন। “

তবে তার ওই সমর্থনের কারণে অনেক ডেমোক্র্যাট সমর্থকের সমালোচনার মুখে তিনি পড়েন।

তার আত্মকথায় ২০০৭ সালে ইরাক যুদ্ধ নিয়ে অধ্যায়ের শিরোনাম তিনি দেন – “আমার ভুল” । তিনি লেখেন: “তাদের আন্তরিকতা ও দক্ষতা আমি বুঝতে ভুল করেছিলাম।”

২০০৩এর এপ্রিলে আমেরিকান নৌ সেনারা বাগদাদে সাদ্দাম হুসেনের মূর্তি টেনে নামায়
২০০৩এর এপ্রিলে আমেরিকান নৌ সেনারা বাগদাদে সাদ্দাম হুসেনের মূর্তি টেনে নামায়

ইরাক যুদ্ধের পর তিনি বামপন্থার দিকে ঝোঁকেন। তিনি ইরাকে আমেরিকান সৈন্য সংখ্যা বৃদ্ধির বিরোধিতা করেন এবং সেখান থেকে সেনা প্রত্যাহারের আহ্বান জানান।

ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসাবে আফগানিস্তানে মার্কিন বাহিনী জোরদার করার এবং ওসামা বিন লাদেনের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর বিপক্ষে পরামর্শ দেন।

আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হবার লড়াইয়ে নামার ঘোষণা দেবার পর তিনি ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধে সৌদি আরবের প্রতি আমেরিকার সমর্থন বন্ধ করার পক্ষে মত তুলে ধরেন।

ইরানের সাথে পরমাণবিক কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা অব্যাহত রাখা, জলবায়ু নিয়ে প্যারিস চুক্তি সমর্থন, চীনে মার্কিন স্বার্থ বজায় রাখা এবং ইউক্রেনের গণতান্ত্রিক সংস্কার উৎসাহিত করা সহ নানা বিষয়ে তিনি গত কয়েক বছর কংগ্রেসের ওপর চাপ দিয়েছেন।

তবে চীন ও ইউক্রেন নিয়ে মি. বাইডেনের অবস্থানকে বিভিন্ন প্রচারণায় কড়া ভাষায় আঘাত করেছেন মি. ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, মি. বাইডেন চীনের বেশি ঘনিষ্ঠ এবং ইউক্রেন নিয়ে তার আগ্রহ মূলত ইউক্রেনে তার ছেলে হান্টারের ব্যবসায়িক স্বার্থ রক্ষার খাতিরে।

জো বাইডেন ও তার রানিং মেট কমালা হ্যারিস
জো বাইডেন ও তার রানিং মেট কমালা হ্যারিস

লড়াইয়ের চূড়ান্ত ধাপ

কিছুটা অনিশ্চয়তার মধ্যে দিয়ে শুরু হলেও, আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট দলের মনোনীত প্রার্থী হবার লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত জয়ী হয়েছেন জো বাইডেন। তার প্রতিপক্ষ বার্নি স্যান্ডার্সকে হারিয়ে প্রেসিডেন্ট পদের প্রার্থী হবার টিকেট পান মি. বাইডেন।

অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলছেন, তার এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে দীর্ঘ আট বছর বারাক ওবামার ডেপুটি হিসাবে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্বপালন। এর সুবাদে তিনি কৃষ্ণাঙ্গ ডেমোক্র্যাটদের বিপুল সমর্থন পেয়েছেন।

একজন কৃষ্ণাঙ্গ-ভারতীয় বংশোদ্ভুত নারী কমালা হ্যারিসকে তিনি বেছে নিয়েছেন তার ভাইস প্রেসিডেন্ট রানিং মেট হিসাবে।

প্রায় ৫০ বছরের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য তার তৃতীয় প্রচেষ্টা এবং দীর্ঘ ৪০ বছরের স্বপ্ন তার শেষ পর্যন্ত পূরণ হলো। আমেরিকার ৪৬তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রেকর্ড সংখ্যক পপুলার ভোট আর ২৭০টিরও বেশি ইলেকটোরাল ভোট পেয়ে বিজয়ী হলেন জো বাইডেন।

  • জো বাইডেন ও তার রানিং মেট কমালা হ্যারিস

    জো বাইডেন ও তার রানিং মেট কমালা হ্যারিস

  • ২০০৩এর এপ্রিলে আমেরিকান নৌ সেনারা বাগদাদে সাদ্দাম হুসেনের মূর্তি টেনে নামায়

    ২০০৩এর এপ্রিলে আমেরিকান নৌ সেনারা বাগদাদে সাদ্দাম হুসেনের মূর্তি টেনে নামায়

  • ১৯৯০এ উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় জর্জ এইচ ডাব্লিউ বুশ সৌদি আরবে আমেরিকান নৌ সেনাদের সাথে

    ১৯৯০এ উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় জর্জ এইচ ডাব্লিউ বুশ সৌদি আরবে আমেরিকান নৌ সেনাদের সাথে

  • বারাক ওবামা ও জো বাইডেন নির্বাচনী প্রচারে

    বারাক ওবামা ও জো বাইডেন নির্বাচনী প্রচারে

  • সবাইকে চমকে দিয়ে বারাক ওবামা তার ভাইস প্রেসিডেন্ট রানিং মেট হিসাবে বেছে নেন জো বাইডেনকে।

    সবাইকে চমকে দিয়ে বারাক ওবামা তার ভাইস প্রেসিডেন্ট রানিং মেট হিসাবে বেছে নেন জো বাইডেনকে।

  • মি. বাইডেন সেনেটের বিচার কমিটিতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন এবং জাতীয় পর্যায়ের রাজনীতিতে নিজেকে আরও তুলে ধরতে শুরু করেন।

    মি. বাইডেন সেনেটের বিচার কমিটিতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন এবং জাতীয় পর্যায়ের রাজনীতিতে নিজেকে আরও তুলে ধরতে শুরু করেন।

  • সংবাদ সম্মেলনে ২৩শে সেপ্টেম্বর ১৯৮৭ জো বাইডেন ঘোষণা করেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মনোনয়ন পাবার লড়াই থেকে তিনি নিজেকে প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন। পাশে স্ত্রী জিল বাইডেন।

    সংবাদ সম্মেলনে ২৩শে সেপ্টেম্বর ১৯৮৭ জো বাইডেন ঘোষণা করেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মনোনয়ন পাবার লড়াই থেকে তিনি নিজেকে প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন। পাশে স্ত্রী জিল বাইডেন।

  • ছেলে বো বাইডেনের সাথে জো বাইডেন ২০০৮ সালে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির জাতীয় কনভেনশানে

    ছেলে বো বাইডেনের সাথে জো বাইডেন ২০০৮ সালে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির জাতীয় কনভেনশানে

  • মাত্র ৩০ বছর বয়সে তিনি ছিলেন দ্বিতীয় সবচেয়ে কনিষ্ঠ আমেরিকান সেনেটার।

    মাত্র ৩০ বছর বয়সে তিনি ছিলেন দ্বিতীয় সবচেয়ে কনিষ্ঠ আমেরিকান সেনেটার।

  • জো বাইডেনের রাজনৈতিক জীবনে ৩০ বছরের জন্মদিন ছিল গুরুত্বপূর্ণ, কারণ যুক্তরাষ্ট্রে ৩০ বছর না হলে সেনেটারের দায়িত্ব পালন সাংবিধানিক নিয়ম বহির্ভূত। ৩০ বছরের জন্মদিনের পার্টিতে স্ত্রী ও দুই শিশু পুত্রকে নিয়ে কেক কাটছেন মি. বাইডেন

    জো বাইডেনের রাজনৈতিক জীবনে ৩০ বছরের জন্মদিন ছিল গুরুত্বপূর্ণ, কারণ যুক্তরাষ্ট্রে ৩০ বছর না হলে সেনেটারের দায়িত্ব পালন সাংবিধানিক নিয়ম বহির্ভূত। ৩০ বছরের জন্মদিনের পার্টিতে স্ত্রী ও দুই শিশু পুত্রকে নিয়ে কেক কাটছেন মি. বাইডেন

  • ডেলাওয়ারে ১৮ই ডিসেম্বর ১৯৭২ মর্মান্তিক এক গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান জো বাইডেনের স্ত্রী নেইলিয়া ও শিশু সন্তান এমি

    ডেলাওয়ারে ১৮ই ডিসেম্বর ১৯৭২ মর্মান্তিক এক গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান জো বাইডেনের স্ত্রী নেইলিয়া ও শিশু সন্তান এমি

  • ২০২০র প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর দৌড়ে নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক জীবনের উত্থান পতনের আবেগময় মুহূর্তের কথা তুলে ধরেছেন মি. বাইডেন

    ২০২০র প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর দৌড়ে নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক জীবনের উত্থান পতনের আবেগময় মুহূর্তের কথা তুলে ধরেছেন মি. বাইডেন

  • জো বাইডেন: আমেরিকার নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের রাজনৈতিক জীবন

    জো বাইডেন: আমেরিকার নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের রাজনৈতিক জীবন

  • জো বাইডেন ও তার রানিং মেট কমালা হ্যারিস
  • ২০০৩এর এপ্রিলে আমেরিকান নৌ সেনারা বাগদাদে সাদ্দাম হুসেনের মূর্তি টেনে নামায়
  • ১৯৯০এ উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় জর্জ এইচ ডাব্লিউ বুশ সৌদি আরবে আমেরিকান নৌ সেনাদের সাথে
  • বারাক ওবামা ও জো বাইডেন নির্বাচনী প্রচারে
  • সবাইকে চমকে দিয়ে বারাক ওবামা তার ভাইস প্রেসিডেন্ট রানিং মেট হিসাবে বেছে নেন জো বাইডেনকে।
  • মি. বাইডেন সেনেটের বিচার কমিটিতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন এবং জাতীয় পর্যায়ের রাজনীতিতে নিজেকে আরও তুলে ধরতে শুরু করেন।
  • সংবাদ সম্মেলনে ২৩শে সেপ্টেম্বর ১৯৮৭ জো বাইডেন ঘোষণা করেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মনোনয়ন পাবার লড়াই থেকে তিনি নিজেকে প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন। পাশে স্ত্রী জিল বাইডেন।
  • ছেলে বো বাইডেনের সাথে জো বাইডেন ২০০৮ সালে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির জাতীয় কনভেনশানে
  • মাত্র ৩০ বছর বয়সে তিনি ছিলেন দ্বিতীয় সবচেয়ে কনিষ্ঠ আমেরিকান সেনেটার।
  • জো বাইডেনের রাজনৈতিক জীবনে ৩০ বছরের জন্মদিন ছিল গুরুত্বপূর্ণ, কারণ যুক্তরাষ্ট্রে ৩০ বছর না হলে সেনেটারের দায়িত্ব পালন সাংবিধানিক নিয়ম বহির্ভূত। ৩০ বছরের জন্মদিনের পার্টিতে স্ত্রী ও দুই শিশু পুত্রকে নিয়ে কেক কাটছেন মি. বাইডেন
  • ডেলাওয়ারে ১৮ই ডিসেম্বর ১৯৭২ মর্মান্তিক এক গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান জো বাইডেনের স্ত্রী নেইলিয়া ও শিশু সন্তান এমি
  • ২০২০র প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর দৌড়ে নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক জীবনের উত্থান পতনের আবেগময় মুহূর্তের কথা তুলে ধরেছেন মি. বাইডেন
  • জো বাইডেন: আমেরিকার নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের রাজনৈতিক জীবন
বিজ্ঞাপন
মন্তব্য করুন

অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন

Leave a Reply

ফসল

লাভজনক সবজি চাষ পদ্ধতি

সবজি একটি গুরুত্বপূর্ণ ফসল। কৃষি বিজ্ঞানের ভাষায় সবজিকে উদ্যানতাত্বিক ফসল (Horticultural crops) বলা হয়ে থাকে। পুষ্টিমানের দিক থেকে সবজি ফসল যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি বাণিজ্যিকভাবেও এর গুরুত্ব অপরিসীম। সেজন্য সবজি চাষের আধুনিক কলাকৌশল জানা জরুরি।

আর আধুনিক কলাকৌশল বলতে বৈজ্ঞানিক উপায়ে চাষাবাদকেই বোঝানো হয়ে থাকে। বাংলাদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু সবজি চাষের জন্য খুবই উপযোগী। তবে সারাদেশে যেমন সব ধরনের সবজি উৎপাদিত হয়না ঠিক তেমনি সকল সবজিই আবার সারাবছর উৎপাদিত হয়না। একেক অঞ্চলে একেক ধরনের শাকসবজি উৎপাদিত হয়ে থাকে। আবার বছরের বিশেষ বিশেষ সময়ে বিশেষ বিশেষ সবজির জাত উৎপাদন করা যায়।

সারাদেশে সারাবছরই যেসকল সবজি সহজে উৎপাদিত হয়ে থাকে তাদের কিছু শাকসবজির কথা এখানে তুলে ধরছি। লালশাক, ডাটাশাক, পুইশাক, কলমিশাক, মিষ্টিআলু শাক, ঢেড়শ, গাজর, বরবটি, টমেটো, লাউ ও লাউশাক, পাটশাক, শশা, কাঁচকলা, বেগুন, পেপে, করলা, কচুশাক, কচুর লতি, ধনে পাতা, পুদিনা পাতা ইত্যাদি পরিচিত শাকসবজি। তাছাড়া অপরিচিত বিশেষ কিছু সবজি বিশেষ বিশেষ এলাকার বিশেষত্ব হিসেবে উৎপাদিত হয়ে থাকে। উপরোক্ত ফসলগুলোর মধ্যে কিছু শুধু শাক আর বাকীগুলো শাক এবং সবজি উভয় হিসেবেই প্রচলিত রয়েছে।

কৃষিতাত্বিকভাবে রবি (শীতকাল) ও খরিপ (গ্রীষ্মকাল)- এ দুধরনের মৌসুম রয়েছে। খরিপের আবার দুটি ভাগ, যথা- খরিপ-১ (আগাম গ্রীষ্ম) এবং খরিপ-২ (বর্ষাকাল)। তবে শীতকালীন শাকসবজির মধ্যে বাহারি ও রকমারি বৈচিত্র একটু বেশি। শুধুমাত্র শীতকালে উৎপাদিত হয় এমন ফসলগুলোর মধ্যে রয়েছে- টমেটো, শীতলাউ, ফুলকপি, বাধাকপি, গাজর, সীম, মূলা, ব্রকলি, বাটিশাক, ওলকপি, শালগম, বেগুন, গোল আলু ইত্যাদিই প্রধান। অপরদিকে শুধুমাত্র গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে উৎপাদিত হয় এমন ফসলের মধ্যে রয়েছে- বিভিন্ন ধরনের কচু, ওলকচু, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, কাকরোল, পটোল, করলা, মিষ্টি কুমড়া, চাল কুমড়া ইত্যাদিই প্রধান।

সবজি ফসল উৎপাদন অন্যান্য ফসলের মতো নয়। সবজি ফসল উৎপাদনের জন্য বিশেষ ধরনের যত্নের প্রয়োজন হয়। আর বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আবাদ করতে গেলে অল্প পরিমাণ জায়গায় অধিক পরিমাণ ফসল ফলিয়ে লাভবান হওয়া সম্ভব। সবজি আবাদেও জন্য বাড়ির আঙ্গিনায় অথবা অপেক্ষাকৃত উঁচু জায়গা বেছে নিতে হবে। সেখানে ভালোভাবে চাষ-মই দিয়ে জমির মাটি জো অবস্থায় ঝুরঝুরে করে সেখানে এক মিটার প্রশস্ত এবং প্রয়োজনমত জমির আকার-আকৃতির সাথে সঙ্গতি রেখে লম্বা বেড তৈরী করে নিতে হবে। প্রতিটি বেডের মাঝখানে ৬ থেকে ৮ ইঞ্চি পরিমাণ গর্ত করে নালা সৃষ্টি করতে হবে। অর্থাৎ নালার মাটি তুলেই দুইপাশে বেড প্রয়োজনমত উঁচু করতে হবে।

এভাবে বেড তৈরীর একটি বিশেষত্ব হলো শাকসবজি চাষাবাদ অন্য সাধারণ ফসল আবাদের চেয়ে একটু ভিন্ন। এর জন্য প্রয়োজন হয় বাড়তি সতর্কতা ও যত্নের। শাকসবজির চাষাবাদে যেমন শুষ্ক মৌসুমে সেচের চাহিদা থাকে অপরদিকে বর্ষাকালে অতিরিক্ত বৃষ্টির পানি বের করে দেওয়ার প্রয়োজন হয়। সেজন্যই বেড তৈরী করে মাটি কিছুটা উঁচু করা হয় সেখানে আবার নালা তৈরী করে নিষ্কাষনের ব্যবস্থাও রাখা হয়। কিন্তু বেড এবং নালা তৈরী না করলে সেটা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আবাদ হয়না। সেঠা হয় সাধারণ শাকসবজি চাষ। এতে ফলন অনেক কমে যায়।

পেপে, কাঁচকলা- এ জাতীয় সবজি বসতবাড়ির আঙ্গিনায়, রাস্তা বা পুকুরের ধারে সহজেই আবাদ করা যায়। লালশাক, ডাটা শাক, পাটশাক, মূলাশাক, গাজর, শালগম ইত্যাদি সবজি তৈরীকৃত বেডে ছিটিয়ে বীজ বুনে দিলেই ভালো ফলন পাওয়া যায়। তাছাড়া টমেটো, বেগুন, ফুলকপি, বাধাকপি, ঢেড়শ, কচু, ওলকচু ইত্যাদি সবজি এক মিটারের বেডে দুই সারি করে নির্ধারিত দূরত্বে চারা লাগিয়ে আবাদ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। সেজন্য এসব সবজি উৎপাদনের জন্য আলাদাভাবে নার্সারিতে চারা তৈরী করে নিতে হয়। অপরদিকে লাউ, মিষ্টি কুমড়া, শশা, চাল কুমড়া, পটোল, কাকরোল, করলা, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, সীম, বরবটি ইত্যাদি লতাজাতীয় সবজি চাষের জন্য উক্ত বেডে দুইটি সারি করে সেখানে জাংলা দিয়ে দিতে হয়। সাধারণত বেডের দুইপাশে খুটি দিয়ে পরে তা ইংরেজি অক্ষর ‘এক্স’ আকৃতিতে বা ‘ভি’ আকৃতিতে বাঁকিয়ে বেঁধে দিতে হয়।

বেড ছাড়াও লতাজাতীয় এসব সবজি অতি সহজেই ক্ষেতের আইলে, রাস্তার ধারে, পুকুরের পাড়ে বিশেষ ব্যবস্থায় আবাদ করে ভালো ফলন পাওয়া যায়। তবে অন্যান্য যেকোন ফসলের তুলনায় এসব সবজি ফসলের একটু বেশি যত্নের প্রয়োজন হয়। বিনা আবাদেই এসব সবজি চাষ করা যেতে পারে। সেজন্য বন্যা পরবর্তীতে পুনর্বাসনের সময় বিনাচাষে এসব আবাদের পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। সম্পূর্ণ জৈবভাবেই এসব সবজি ফসল উৎপাদন সম্ভব। আবাদের পূর্বে সামান্য পরিমাণ প্রয়োজনীয় রাসায়নিক সার ব্যবহার করে বাকীটা মেটাতে হবে বাড়িতে উৎপাদিত জৈব সারের মাধ্যমে। তারপর আন্তপরিচর্যা এবং পোকামাকড়ের আক্রমণ ঠেকাতেও জৈব পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে। তখন এসব উৎপাদিত ফসল সকলের জন্য নিরাপদ খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।

কাজেই এভাবেই সারাবছর নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় স্বষ্পপরিসরে শাকসবজি উৎপাদন করে নিজের চাহিদা মিটিয়ে তা বাণিজ্যিকভাবেও লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে। আমাদের শারীরিক পুষ্টি চাহিদার একটি বিরাট অংশ শাকসবজি থেকে আসা দরকার। দৈনিক একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের গড়ে কমপক্ষে আড়াইশ গ্রাম শাকসবজি খাওয়া প্রয়োজন। আর সেটা নিবিড়ভাবে এবং নিরাপদভাবে খেতে হলে নিজের উৎপাদিত শাকসবজি খাওয়াই সবচেয়ে উত্তম। কাজেই আমাদের সারাবছর অলস সময়টাকে কাজে লাগিয়ে আসুন নিজের বাড়ির আঙ্গিনায় সবজির বাগান গড়ে তুলি।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

বাংলাদেশ

কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ

একজন টেলিভিশন তারকা, কৃষি উন্নয়ন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজের জন্মদিন আজ। তিনি ১৯৫৪ সালের এদিনে জন্মগ্রহণ করেন চাঁদপুরে (সার্টিফিকেট অনুযায়ী তার জন্মতারিখ ২৮শে জুন ১৯৫৬)। শাইখ সিরাজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন ভূগোলে। ছাত্রজীবনেই সম্পৃক্ত হন বাংলাদেশ টেলিভিশন, বেতার ও সংবাদপত্রের সঙ্গে।

কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ

শাইখ সিরাজ ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিমিটেড, চ্যানেল আই-এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও বার্তা প্রধান। টানা সাড়ে চার দশক ধরে তিনি গণমাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে দেশের কৃষি ও কৃষক তথা উৎপাদন-অর্থনৈতিক খাতে অপরিসীম ভূমিকা রেখে চলেছেন।

বাংলাদেশ টেলিভিশনের মাটি ও মানুষ অনুষ্ঠান উপস্থাপনার মধ্য দিয়ে সকল শ্রেণিপেশার মানুষের মধ্যে বিপুল গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেন তিনি। পরে তার নিজস্ব পরিচালনাধীন টেলিভিশন ‘চ্যানেল আই’তে শুরু করেন কৃষি কার্যক্রম হৃদয়ে মাটি ও মানুষ। উন্নয়ন সাংবাদিকতার জন্য তিনি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দু’টি রাষ্ট্রীয় সম্মান স্বাধীনতা পুরস্কার (২০১৮) ও একুশে পদক (১৯৯৫) লাভ করেন।

কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৬৮তম জন্মদিন আজ
কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ

টেলিভিশনসহ গণমাধ্যমের সঙ্গে প্রায় চার দশকের একনিষ্ঠ পথচলার মধ্য দিয়ে শাইখ সিরাজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন উন্নয়ন সাংবাদিকতার এক অগ্রপথিক হিসাবে। গণমাধ্যমে তার উদ্বুদ্ধকরণ প্রচারণায় আমূল পরিবর্তন এসেছে বাংলাদেশের কৃষিতে। বাংলাদেশে খাদ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে সূচিত হয়েছে বৈপ্লবিক সাফল্য।

গ্রামীণ জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এসেছে ইতিবাচক পরিবর্তন। একইসঙ্গে শহর-নগরের মানুষকে করেছেন কৃষিমুখি। ফলে দেশের অর্থনীতিতে কৃষির বহুমুখি অবদান সূচিত হয়েছে।

‘মাটি ও মানুষ’

বাংলাদেশের কৃষিতে গত কয়েক দশকে যে বিরাট পরিবর্তন ঘটেছে, শাইখ সিরাজকে বর্ণনা করা হয় সেই পরিবর্তনের পেছনে অন্যতম প্রধান এক চরিত্র হিসেবে।

বাংলাদেশে যখন বিজ্ঞানীরা একের পর এক নতুন উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান উদ্ভাবন করে চলেছেন, কৃষিতে নতুন ধ্যান ধারণা এবং কৌশল চালুর জন্য সরকারের নানা পর্যায় থেকে চেষ্টা চলছে, সেগুলো সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে বিরাট ভূমিকা রাখে তার কৃষি বিষয়ক অনুষ্ঠান, ‘মাটি ও মানুষ।’

“শুরুতে এই অনুষ্ঠানটা হতো আমার দেশ নামে। তখন এটি ৫০ মিনিটের পাক্ষিক অনুষ্ঠান। পরে এটিকেই ‘মাটি ও মানুষ’ নামে সাপ্তাহিক অনুষ্ঠানে রূপান্তরিত করি। আমার মনে হয়েছিল বাংলাদেশের মানুষের বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানের চেয়ে বেশি দরকার শিক্ষামূলক মোটিভেশনাল অনুষ্ঠান। কৃষকদের যদি নতুন বীজ, নতুন প্রযুক্তি, নতুন কৌশল, এসব ঠিকমত বোঝানো যায়, তাহলে কৃষিতে বিরাট পরিবর্তন নিয়ে আসা সম্ভব।”

গত চার দশক ধরে শাইখ সিরাজ হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশের কৃষকদের কাছে কৃষি বিষয়ক তথ্যের প্রধান উৎস। উনিশ’শ আশির দশকে, যখনো টেলিভিশন ঘরে ঘরে পৌঁছায়নি, তখনো গ্রামের হাটেবাজারে, কমিউনিটি সেন্টারে প্রতি শনিবার সন্ধ্যায় ‘মাটি ও মানুষ’ দেখার জন্য ভিড় করতো মানুষ।

কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৬৮তম জন্মদিন আজ
কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ

তবে কৃষকদের নতুন ধরণের কৃষিতে উৎসাহিত করার কাজটা সহজ ছিল না।

“আজকের কৃষক এবং তিরিশ বছর আগের কৃষকের মধ্যে তফাৎ আকাশ আর পাতাল। তখন কৃষকের কাছে একজন কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা যে কথা বলতেন, একজন টেলিভিশন উপস্থাপক হিসেবে আমি যেকথা বলতাম, সেটা তারা মানতে চাইতো না। তারা ভাবতো, আমরা যেধরণের কৃষির কথা বলছি, যদি সেটাতে ভালো ফসল না হয়? এ কারণে সে সহজে মোটিভেট হতে চাইতো না। সহজে নতুন প্রযুক্তি নিতে চাইতো না।”

“আমি যখন আশির দশকে উচ্চফলনশীল নতুন জাতের ধানের কথা বলছি, গমের কথা বলছি, তখন পরিস্কার তারা আমাকে বলতো এই রাবার ভাত খাবো না। তখন পর্যন্ত উদ্ভাবিত নতুন জাতের ধানের মান তেমন ভালো ছিল না। ভাতটা ছিল রাবারের মতো, ভাতের দানা উপর থেকে থালার উপর ফেললে সেটি রাবারের মতো ড্রপ করতো।”

কিন্তু বিজ্ঞানীরা যখন তাদের গবেষণায় নতুন নতুন সাফল্য পাচ্ছিলেন, আর সেই সঙ্গে শাইখ সিরাজও তার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কৃষকদের মন জয় করার জন্য নতুন কৌশল নিচ্ছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের অশোকা ফেলো শাইখ সিরাজ খাদ্য নিরাপত্তা ও দারিদ্র বিমোচন বিষয়ে সাংবাদিকতায় অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসাবে তিনি ২০০৯ সালে অর্জন করেন জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার এ এইচ বুর্মা এ্যাওয়ার্ড। এ ছাড়া তিনি পেয়েছেন এশিয়ার মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার গুসি পিস প্রাইজ, বৃটেনের বিসিএ গোল্ডেন জুবিলি অনার এ্যাওয়ার্ডস। বৃটিশ হাউজ অব কমন্স তাকে প্রদান করেছে বিশেষ সম্মাননা, বৃটিশ-বাংলাদেশ ব্যবসায়ী সংগঠন তাকে দিয়েছে গ্রীন এ্যাওয়ার্ড। এ ছাড়া পেয়েছেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির স্বর্ণপদক, ডা. ইব্রাহিম মেমোরিয়াল স্বর্ণপদক, রণদা প্রসাদ সাহা স্বর্ণপদকসহ অর্ধশত দেশি-বিদেশি পুরস্কার ও সম্মাননা।

কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ
কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ

চ্যানেল আই ও বাংলাদেশ টেলিভিশনে কৃষি বিষয়ক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত লিখে থাকেন। তিনি এদেশে কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে নিরস বিষয় হিসাবে উপেক্ষিত কৃষিতে জাতীয় সংবাদের প্রধান খবরের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন। শাইখ সিরাজের প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- মৎস্য ম্যানুয়েল, মাটি ও মানুষের চাষবাস, ফার্মার্স ফাইল, মাটির কাছে মানুষের কাছে, বাংলাদেশের কৃষি: প্রেক্ষাপট ২০০৮, কৃষি ও গণমাধ্যম, কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট (সম্পাদিত), আমার স্বপ্নের কৃষি, কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট (২০১১), সমকালীন কৃষি ও অন্যান্য প্রসঙ্গ (২০১১), কৃষি ও উন্নয়ন চিন্তা (২০১৩) ইত্যাদি।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশে হতে পারে সারের সংকট

সারের সংকট
সারের সংকট
সারের সংকট

চলতি বোরো মৌসুমে সার কিনতে কৃষকদের সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা করে বেশি দিতে হয়েছে। আর সরকারকেও সার বাবদ ভর্তুকি দিতে হচ্ছে বাজেটে বরাদ্দের তিন গুণের বেশি—প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশ এখন মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) সার আমদানি নিয়ে বিপাকে পড়েছে।

ধান, আলু ও সবজি চাষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এমওপি সারের ৬০ শতাংশ আনা হতো রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে। ওই দুই দেশ নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়ায় এখন বাংলাদেশকে এমওপি কিনতে হচ্ছে কানাডা থেকে। বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়া ও আমদানিতে অনিশ্চয়তার কারণে বাংলাদেশে সারের সংকট হতে পারে। ভর্তুকির চাপ সামলাতে বাংলাদেশকে সব ধরনের সারের খুচরা মূল্য বাড়াতে হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিবিষয়ক সংস্থা ইউএসডিএর চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ‘বাংলাদেশে সার সরবরাহ ও ব্যবহারে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের এমওপি সারের ২০ শতাংশ সরবরাহ কমানো হলে সামনের বোরো মৌসুমে ধান, গম ও রবি মৌসুমের অন্যান্য ফসলের উৎপাদন ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কমতে পারে। এতে বাংলাদেশের খাদ্য উৎপাদন ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে।

এমনিতেই এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমাদের ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সারের কারণে নতুন করে যাতে আর সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।

এ এম এম শওকত আলী, সাবেক কৃষিসচিব

তবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, দেশে চলতি বোরো মৌসুমে নতুন করে আর সারের দরকার হবে না। সামনে আলুর মৌসুমে ইউরিয়া, এমওপিসহ অন্যান্য সারের চাহিদা বাড়বে। ওই সময়ের জন্য সার সরবরাহ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ কানাডা ও মধ্যপ্রাচ্যের সার সরবরাহকারী দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে।

জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কানাডা থেকে মোট আট লাখ টন এমওপি সার আমদানির উদ্যোগ নিয়েছি। এ ব্যাপারে ওই দেশের সঙ্গে আমাদের সমঝোতা স্মারক হয়েছে। ফলে এই সার নিয়ে সরকারের কোনো দুশ্চিন্তা নেই। তবে সার বাবদ সরকারের বিপুল পরিমাণে ভর্তুকি বাড়ছে। এই চাপ নিয়েও সরকার ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ওই ভর্তুকি দিয়ে যাবে।’

কমানো হয়েছে চাহিদা

বাংলাদেশে চলতি অর্থবছরে ৬৯ লাখ টন রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয়েছে। এর মধ্যে ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি—এই চার ধরনের সার ব্যবহার হয় ৫৭ লাখ টন। আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের ওই চার ধরনের সারের চাহিদা কমিয়ে ৫৫ লাখ ৫০ হাজার টনে নামিয়ে আনা হয়েছে।

দেশে প্রয়োজনীয় সারের ৮০ শতাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এর মধ্যে এমওপি সারের বড় অংশ আসে রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে।

প্রসঙ্গত, ওই চারটি প্রধান সার কৃষকদের কাছে বিক্রির ক্ষেত্রে সরকার ভর্তুকি দিয়ে থাকে। চলতি অর্থবছরে সরকার প্রাথমিকভাবে সারে ভর্তুকি বাবদ ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে গত ছয় মাসে সারের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। বেশির ভাগ সারের দাম তিন থেকে চার গুণ বেড়ে যাওয়ায় সরকারকে ভর্তুকির পরিমাণ ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা করতে হয়। কিন্তু অর্থবছরের শেষের দিকে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে হিসাব করে দেখা হয়েছে, ভর্তুকির পরিমাণ এবার বেড়ে কমপক্ষে ৩০ হাজার কোটি টাকা গিয়ে দাঁড়াবে।

জিপসাম, জিংক সালফেট ও অ্যামোনিয়াম সালফেট ও ম্যাগনেসিয়াম সালফেট সারে সরকার কোনো ভর্তুকি দেয় না। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কিনে ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কাছে তা বিক্রি করে থাকেন। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষককেও বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে।

সাবেক কৃষিসচিব এ এম এম শওকত আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমনিতেই এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমাদের ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সারের কারণে নতুন করে যাতে আর সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। আর সরকারের অন্যান্য খাতের ভর্তুকি কমিয়ে প্রয়োজনে সারে ভর্তুকি বাড়াতে হবে, যাতে সারের দাম কম থাকে। কারণ, কৃষকের হাতে এখন টাকা কম। বিশ্ববাজার থেকেও খাদ্য আমদানি করা সামনের দিনে আরও কঠিন হতে পারে। ফলে দেশের উৎপাদন ঠিক রাখতে সারের দাম ও জোগান ঠিক রাখা উচিত।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোটেক

কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তারা এক সঙ্গে কাজ করতে রাজি

ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকেরাফাইল ছবি
ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকেরাফাইল ছবি

ডাচ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে দুই দেশের বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা একসঙ্গে কাজ করতে রাজি হয়েছেন।

গতকাল সোমবার নেদারল্যান্ডসের রাজধানী হেগে অনুষ্ঠিত কৃষি খাতের ব্যবসাবিষয়ক এক সম্মেলনে দুই দেশের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা সহযোগিতার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।

নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম রিয়াজ হামিদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত এগ্রি বিজনেস কনক্লেভে বাংলাদেশের প্রায় ৪০জন উদ্যোক্তা ডাচ কৃষি খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি প্রযুক্তি সহযোগিতা ও ব্যবসায়িক সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। দিনব্যাপী আয়োজিত অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেছে ওয়েগেনিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়।

আলোচনায় বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা প্রযুক্তি কিনতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দিলে নেদারল্যান্ডসের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা প্রযুক্তি সহযোগিতা দিতে রাজি থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।

রিয়াজ হামিদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে ডাচরা প্রস্তুত এবং বাংলাদেশি উদ্যোক্তারাও তাদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। এ ছাড়া ডাচ সরকার ইতিমধ্যে বাংলাদেশের বীজ, পশু খাদ্য, পোলট্রি, হর্টিকালচার ও এ্যাকুয়াকালচার বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম সম্পাদন করেছে, যা ওই দেশের বেসরকারি খাতকে আরও উৎসাহিত করেছে।

আলোচনায় কৃষি সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করতে তৈরি আছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্কয়ার, ইস্পাহানি এগ্রো, একে খান অ্যান্ড কোম্পানি, প্যারাগন গ্রুপ, এসিআই, জেমকন গ্রুপসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তিনি জানান, মঙ্গলবার বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা ডাচ প্রযুক্তির প্রয়োগ সরেজমিনে দেখতে যাবেন।

বাংলাদেশের সঙ্গে নেদারল্যান্ডসের পোল্ট্রিখাতে সহযোগিতার আলোচনা অনেকটা এগিয়েছে উল্লেখ করে মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, দুই দেশের মধ্যে মৎস্য, পশুপালন ও হর্টিকালচারে সহযোগিতার বিপুল সম্ভাবনা আছে।

কনক্লেভ আয়োজনে প্রথমবারের মতো দূতাবাসের সঙ্গে অংশীদার হয়েছে নেদারল্যান্ডসের কৃষি মন্ত্রণালয়, নেদারল্যান্ডস এন্টারপ্রাইজ এজেন্সি, নেদারল্যান্ডস ফুড পার্টনারশিপ, ডাচ-গ্রিন-হাইজডেল্টা, লারিভ ইন্টারন্যাশনাল, স্টান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ।

কৃষিজাত পণ্য রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থানকারী নেদারল্যান্ডসের আয়তন বাংলাদেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের কম। ২০২১-এ কৃষিপণ্য ও খাদ্য রপ্তানি করে নেদারল্যান্ডস ১১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি আয় করেছে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

পতিত জমিতে চিনাবাদাম চাষে লাভবান হচ্ছেন কৃষক

মেহেরপুর: পতিত ও অনুর্বর বেলে মাটির জমিতে চিনাবাদাম চাষ করে লাভবান হচ্ছেন মেহেরপুরের চাষিরা। ফলন ও বাজার দর ভালো এবং কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় দিন দিন এই এলাকায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বাদামের চাষ। 

সদর উপজেলার মদনাডাঙ্গা, শ্যামপুর, টেংগারমাঠ ও গোপালপুর গ্রামের অধিকাংশ জমির মাটি বেলে। ফলে এই এলাকার চাষিরা ধান, গম, পাটসহ অন্যান্য ফসল আবাদ করে খুব একটা লাভবান হতে পারেন না।

ধান কাটার পর এ সব জমি সাধারণত পতিত থাকে। এজন্য ৯০ দিনের ফসল হিসেবে অল্প খরচে বাদাম চাষ করছেন এলাকার চাষিরা।  

মেহেরপুর জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, জেলায় এবার বাদাম চাষ হয়েছে ১৫ হেক্টর জমিতে। এবার এক বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করতে চাষিদের খরচ হয়েছে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা সেক্ষেত্রে বাদামের ফলন হয়েছে ৬ থেকে ৭ মণ। আর এ  ফলনে প্রায় ২০ হাজার টাকা ঘরে তুলছেন তারা। বাজারে প্রতিমণ বাদাম বিক্রি হচ্ছে ২৭শ’ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত।  সদর উপজেলার মদনাডাঙ্গা গ্রামের বাদাম চাষি খাঁজা আহমেদ, কাওছার আলী ও ফিরোজ হোসেন বাংলানিউজকে জানান, এলাকার মাটি বেলে হওয়ায় সাধারণত সবজি, আলু ও অন্যান্য ফসল চাষ করার পর জমি পতিত থাকে। সে সময়ে চিনা বাদামের চাষ করা হয়। বাদাম চাষে খরচ কম এবং উৎপাদন ও বাজার দর ভাল। তাই দিন দিন চাষিরা তাদের পতিত জমিতে চিনা বাদামের চাষ শুরু করছেন।  

এছাড়া বাদাম ছাড়ানো, শুকানোসহ যাবতীয় কাজ করে থাকেন এখানকার নারীরা। বাদামের গাছ আবার শুকিয়ে জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করছেন গৃহিণীরা।  

নারী শ্রমিক সাহানা খাতুন ও জরিমন নেছা বাংলানিউজকে বলেন, আমরা বাদাম ছাড়ানো ও শুকানোর কাজ করে থাকি। এলাকার ২৫/৩০ জন নারী শ্রমিক এ কাজ করে আসছেন।  
গৃহিণী সাজেদা খাতুন ও জামেলা খাতুন জানান, বাদামের লতা জালানি হিসেবে বেশ ভাল। তাই লতাও বিক্রি হচ্ছে।

মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. আক্তারুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, চিনা বাদামের চাষ সাধারণত পতিত জমিতে হয়ে থাকে। এলাকার চাষিরা এই জমিতে বাদামের চাষ করে বাড়তি আয় করছেন। তাই বাদাম চাষ যাতে আরও সম্প্রসারিত হয় সেজন্য কৃষি বিভাগ চাষিদের বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছে।  

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশক: শাইখ সিরাজ
© ২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। দা এগ্রো নিউজ, ফিশ এক্সপার্ট লিমিটেডের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। ৫১/এ/৩ পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থাপথ, ঢাকা -১২০৫
ফোন: ০১৭১২-৭৪২২১৭
ইমেইল: info@agronewstoday.com, theagronewsbd@gmail.com