আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

লাইভস্টক

ছাড় পাবে না সিন্ডিকেট: রমজানে দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক রাখতে কঠোর অবস্থান

দরজায় কড়া নাড়ছে পবিত্র রমজান মাস। এই রমজানে দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক রাখতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে সরকার। ভোগ্যপণ্য নিয়ে কোন ধরনের কারসাজি করতে পারবে না অসাধু ব্যবসায়ীরা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ বাজার তদারকি করবে সরকারের ছয় সংস্থা। নিত্যপণ্যের বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে চলমান লকডাউনের মধ্যেও পণ্যবাহী ট্রাক, লরি ও ভ্যানসহ অন্যান্য যানবাহন চলবে আগের মতো। এতে করে বাজারে পণ্যের কোন সঙ্কট তৈরি হবে না। শুধু রমজানকে কেন্দ্র করে চাহিদার দ্বিগুণ পরিমাণ পণ্য আমদানি হয়েছে গত কয়েক মাসে। রমজান উপলক্ষে আমদানি করা অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেলের ওপর ৪ শতাংশ অগ্রিম কর প্রত্যাহার করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড,এনবিআর। এতে করে বাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমে আসবে। আর মাত্র একদিন পর থেকে শুরু হচ্ছে পবিত্র রমজান মাস। এ কারণে ইফতারিতে বেশি ব্যবহার হয় এমন ছয় নিত্যপণ্য ভোজ্যতেল, চিনি, ছোলা, পেঁয়াজ, ডাল ও খেজুর ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করার ওপর সর্বোচ্চ জোর দেয়া হচ্ছে।

জানা গেছে, পবিত্র রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক রাখতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। সরকারী বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা-টিসিবি প্রথমবারের মতো দ্বিগুণ পরিমাণ নিত্যপণ্য বিক্রি কার্যক্রম শুরু করেছে সারাদেশে। সংস্থাটির মূল লক্ষ্য, রোজায় স্বল্প আয়ের মানুষের কাছে সস্তায় ভোজ্যতেল, চিনি, ডাল, ছোলা, পেঁয়াজ এবং খেজুরের মতো ভোগ্যপণ্য পৌঁছে দেয়া। পণ্য নিয়ে কারসাজি বন্ধে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে পুরো রমজান মাস বাজার মনিটরিং করা হবে। জেলা পর্যায়ে বাজার তদারকির ব্যবস্থা করবেন জেলা প্রশাসক। জেলা প্রশাসকের নির্দেশে থানা নির্বাহী অফিসার উপজেলা পর্যায়ে ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ ও ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করবেন। রমজানে বাজার তদারকির জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে জেলা প্রশাসকদের কাছে এ সংক্রান্ত চিঠি দেয়া হয়েছে। এছাড়া খাদ্যে ভেজালরোধে নিরাপদ খাদ্য অধিদফরের বিশেষ টিম বাজার মনিটরিং করবে। ন্যায্যমূল্য ও সঠিক পণ্য বিক্রি হচ্ছে কিনা তা দেখতে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতর বাজারে থাকবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বাজার তদারকি করবে র্যা ব ও পুলিশের বিশেষ টিম। এছাড়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৯ সদস্য বিশিষ্ট ‘বাজার মূল্য পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ’ বিষয়ক স্থায়ী কমিটি কাজ শুরু করবে। এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, পণ্য পরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধে সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যথেষ্ট সচেতনভাবে কাজ করছে। অসাধু ব্যবসায়ীরা যেন সুযোগ নিতে না পারে সে ব্যাপারে বিএসটিআইসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও তৎপর হতে হবে।

ভোগ্যপণ্য নিয়ে ক্রেতাদের আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ও বাণিজ্য সচিব ড. মোঃ জাফর উদ্দীন। তাঁরা বলছেন, দেশে ভোগ্যপণ্যের কোন সঙ্কট নেই। সরবরাহ নিশ্চিত করা ও ন্যায্যমূল্যে ভোক্তাদের কাছে পণ্য পৌঁছে দিতে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার বাজার মনিটরিং টিম কাজ করবে। পণ্যমূল্য নিয়ে কারসাজি করা হলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রেতা-বিক্রেতারা স্বাচ্ছন্দ্যে কেনাকাটা করতে পারবেন। এজন্য সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে সরকারী- বেসরকারী খাতে।

জানা গেছে, রমজানে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সম্প্রতি পাঁচ নির্দেশনা দেয়া হয়। অতি প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্যের দাম ভোক্তাদের নাগালের মধ্যে রাখতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, অধিদফতর ও সংস্থাগুলো কাজ করবে। চাল, আটা, ভোজ্যতেল, চিনি, পেঁয়াজ এবং ডালের দাম স্থিতিশীল রাখা এবং পর্যাপ্ত সরবরাহ বাড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সরকারী বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা টিসিবির কার্যক্রম শক্তিশালী করার কথা বলা হয়েছে। এ কারণে রমজানে সারাদেশে টিসিবির বিশেষ ট্রাকসেল কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে । এর পাশাপাশি এবার রমজানে খাদ্য সহায়তা হিসেবে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। এতে করে স্বল্প আয়ের খেটেখাওয়া সাধারণ মানুষ বিনামূল্যে খাদ্য সহায়তা পাবেন। দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার স্বার্থে সরকারের পক্ষ থেকে এসব উদ্যোগ গ্রহণ ও তা বাস্তবায়ন করার কথা বলা হয়েছে।

রমজানের সময় দ্রব্যমূল্য কিভাবে স্থিতিশীল থাকবে সে বিষয়ে করুণীয় নির্ধারণে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সম্প্রতি এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সচিব মোঃ তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। এছাড়া সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও উর্ধতন কর্মকর্তারা বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সচিবদের উদ্দেশেবলা হয়-রমজানে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে হবে। কোন নিত্যপণ্যের দাম যাতে না বাড়ে সেজন্য স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা রয়েছে। চাল, ভোজ্যতেল, চিনি, পেঁয়াজ, আটা, ডালের দাম স্থিতিশীল রাখা এবং পর্যাপ্ত সরবরাহ বাড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া মুরগির দাম হঠাৎ করে কেজিপ্রতি ১০০-১৫০ টাকা বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। দ্রুত মুরগি, মাছ, মাংস এবং ডিমের সরবরাহ বাড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

জানা গেছে, অসাধু সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের দিকে এখন থেকে নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তাদের শাস্তি পেতেই হবে। ভোগ্যপণ্য নিয়ে যারা কারসাজির আশ্রয় নেবে তাদের এবার আর ছাড় দেয়া হবে না। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। বৈঠকে প্রধামন্ত্রীর সচিব বলেন, রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা, প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সহজলভ্য করা এবং বিভিন্ন পণ্যের মজুদ কি সেটাই এখন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার স্বার্থে ভারতের পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন উৎস থেকে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ভারত, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনাম থেকে সরকার দ্রুত জিটুজি পদ্ধতিতে সরাসরি চাল আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। ইতোমধ্যে সরকারী পর্যায়ে বিভিন্ন থেকে দশ লাখ টন চাল আনার যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। এর পাশাপাশি বেসরকারী খাত চাল আমদানি করবে। চালের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারী ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি সম্প্রতি দ্রুত আমদানির স্বার্থে আইন সংশোধন করে। এছাড়া বিকল্প উৎস থেকেও চাল আমদানির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সম্প্রতি জানান, চাল সহজলভ্য ও দাম কমাতে ভারতের পাশাপাশি অন্যদেশগুলো থেকেও আমদানি করা হচ্ছে। যত দ্রুত চাল আমদানি করা হবে, তাতে দাম বাড়ার আর কোন সুযোগ নেই।

জানা গেছে, রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এরমধ্যে বাজারে ভোজ্যতেলের সরবরাহ বাড়ানো, পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে আমদানি এবং টিসিবির কার্যক্রম শক্তিশালী করা। টিসিবির মাধ্যমে এবার ২৫ হাজার টন ভোজ্যতেল বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি রমজানে ছোলা, চিনি, খেজুর, পেঁয়াজ এবং ডাল বিক্রি করা হবে। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব ড. মোঃ জাফর উদ্দীন বলেন, রমজানে দ্রব্যমূল্য বাড়বে না। সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। তিনি বলেন, দেশের আমদানি ও মজুদ পরিস্থিতি ভাল। এছাড়া টিসিবিও তাদের কার্যক্রম বাড়াচ্ছে। রমজানে বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

তিন মাস আগে থেকে প্রস্তুতি ॥ রমজান সামনে রেখে এবার তিনমাস আগে থেকে আমদানির প্রস্তুতি নিয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে গত বছরের ডিসেম্বর মাসের শুরুতে ভোগ্যপণ্যের আমদানি বাড়ানোর পরামর্শ দেয়া হয়। সরকারী সেই পরামর্শ গ্রহণ করে দেশে ভোগ্যপণ্যের আমদানি ও বাজারজাতকারী জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানগুলো বিপুল পরিমাণ চাল, ডাল, ছোলা, ভোজ্যতেল, চিনি, গম, পেঁয়াজ, মসলাপাতি এবং খেজুর আমদানি করে। ইতোমধ্যে আমদানিকৃত পণ্যের বড় অংশ চট্টগ্রাম বন্দর থেকে খালাস হয়ে পৌঁছে গেছে দেশের বড় বড় পাইকারি বাজারে। আমদানিকৃত পণ্যে ঠাসা এখন চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ এবং ঢাকার মৌলভীবাজার, বেগমবাজার, বাদামতলী, মোহাম্মদপুর এবং শ্যামপুর কৃষিপণ্যের মার্কেট। ভোগ্যপণ্যের জায়ান্ট গ্রুপ হিসেবে খ্যাত এস আলম গ্রুপ, নূরজাহান গ্রুপ, মোস্তফা গ্রুপ, বিএসএম গ্রুপ, এমইবি গ্রুপ, পিএইচপি ফ্যামিলি ও আবুল খায়ের গ্রুপ, সিটি গ্রুপ ও মেঘনা গ্রুপ রোজা সামনে রেখে বিপুল পরিমাণ ভোগ্যপণ্য আমদানি করেছে।

একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, শুধু রোজা সামনে রেখে ২৫ টি দেশ থেকে প্রায় ১০-১২ হাজার কোটি টাকার ভোগ্যপণ্য আমদানি হয়েছে। আমদানিকৃত এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে ছোলা, তেল, দুধ, চিনি, খেজুর, মটর, মসুরসহ বিভিন্ন ধরনের ডাল। সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আমদানিকারকদের সঙ্গে জরুরী বৈঠক করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। বৈঠক শেষে তিনি জানান, চাহিদার তুলনায় বেশি পণ্য আমদানি করা হয়েছে। এছাড়া ওই বৈঠকে পণ্যমূল্য বাড়বে না বলেও আমদানিকারকদের পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। যদিও এরই মধ্যে ভোজ্যতেল, চিনি, ছোলা, ডাল এবং খেজুরের মতো কয়েকটি পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। তবে কমেছে পেঁয়াজসহ কয়েকটি মসলাপাতির দাম। মুরগি ও মাছ-মাংস চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে রাজধানীর বাজারে। সরবরাহ কমায় বেড়ে গেছে সব ধরনের শাক-সবজির দাম। রোজার আগে সরকারী বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে বিশেষ বাজার মনিটরিং শুরু হবে যা চলবে পুরো মাস জুড়ে। এ ব্যাপারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, এসব উদ্যোগের পাশাপাশি ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ- টিসিবিও দ্বিগুণ পণ্য নিয়ে মাঠে রয়েছে। রমজানে বেশি ব্যবহার হয় এমন ছয়টি ভোগ্যপণ্য ভর্তুকি মূল্যে টিসিবি বিক্রি করছে।

রোজায় চাহিদা বাড়ে এমন ছয় পণ্য নিয়ে বিশেষ উদ্যোগ ॥ রোজায় চাহিদা বাড়ায় এমন ছয় পণ্যের সরবরাহ বৃদ্ধি এবং ন্যায্যমূল্যে বিক্রির বিশেষ উদ্যোগ রয়েছে। এই ছয় পণ্যের মধ্যে রয়েছে- ভোজ্যতেল, চিনি, ছোলা, পেঁয়াজ, ডাল ও খেজুর। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, দেশে সারাবছর ভোজ্যতেলের চাহিদা ২১ লাখ টন, যার ৯০ শতাংশই আমদানি করতে হয়। কেবল রোজার মাসে ভোজ্যতেলের চাহিদা থাকে ৪ লাখ টনের মতো। সারাবছরের জন্য প্রয়োজন হয় ১৮ লাখ টন চিনি, এর মধ্যে ৩ লাখ টনের চাহিদা থাকে কেবল রোজার সময়। সারাবছর যেখানে ৫ লাখ টন মসুর ডাল লাগে, সেখানে রোজায় চাহিদা থাকে ৮০ হাজার টনের মতো। ডালের চাহিদা মেটাতে ৫০ শতাংশ আমদানি করতে হয়। বছরে ৮০ হাজার টন ছোলার প্রয়োজন হয় দেশে, যার ৮০ শতাংশই ব্যবহার হয় রোজার মাসে। এ সময় সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয় পেঁয়াজের। ২৫ লাখ টন বার্ষিক চাহিদার ৫ লাখ টনই ব্যয় হয় রোজার সময়। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আমদানি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য অনুবিভাগ) এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, ১৭টি ভোগ্যপণ্যকে নিত্যপ্রয়োজনীয় মনে করা হলেও রোজা সামনে রেখে আপাতত ভোজ্যতেল, চিনি, ডাল, পেঁয়াজ, ছোলা ও খেজুরের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে কাজ শুরু হয়েছে। গত সপ্তাহে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ঢাকার মৌলভীবাজারে সারাদেশের ভোগ্যপণ্য আমদানিকারদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বসেছি। সব আমদানিকারকদের নিয়ে একটি এডহক কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছে। বাজারে ন্যায্যমূল্যে ভোগ্যপণ্য বিক্রির বিষয়টি নিয়ে এই কমিটি কাজ করবে। এছাড়া আমদানি পরিস্থিতির বিষয়েও সরকারকে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে এই কমিটি সহযোগিতা করবে।

দ্বিগুণ পণ্য নিয়ে মাঠে টিসিবি ॥ এবারই প্রথমবাবের মতো দ্বিগুণ পণ্য নিয়ে ট্রাকসেল বিক্রি কার্যক্রম শুরু করেছে টিসিবি। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে পবিত্র রোজা শুরু হতে পারে। তবে ক্রেতাদের দিক বিবেচনায় নিয়ে ১ এপ্রিল থেকে টিসিবি বিক্রি কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছে। সংস্থাটির এই কার্যক্রম শুক্রবারসহ রমজান মাসজুড়ে চলবে। এতে ক্রেতারা সস্তায় নিত্যপণ্য সামগ্রী কিনতে পারবেন। ঘরে বসে অনলাইনে অর্ডার দিয়ে টিসিবির পণ্যসামগ্রী কিনতে পারবেন নগরবাসী। রমজান সামনে রেখে ৬টি নিত্যপণ্যের নতুন মূল্য নির্ধারণ করেছে সরকারী বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা টিসিবি। নতুন দর অনুযায়ী একজন ক্রেতা দিনে ৫৫ টাকা কেজি দরে সর্বোচ্চ চার কেজি চিনি, ৫৫ টাকা কেজি দরে দুই কেজি মসুর ডাল, ১০০ টাকা দরে পাঁচ লিটার সয়াবিন তেল এবং ২০ টাকা দরে পাঁচ কেজি পেঁয়াজ কিনতে পারবেন। এছাড়া রমজান উপলক্ষে দুই কেজি ছোলা প্রতিকেজি ৫৫ টাকা দরে এবং এককেজি খেজুর ৮০ টাকা দরে পাবেন। এতে প্রতিকেজি তেলের দাম বেড়েছে ১০ টাকা, ডাল ও চিনির দাম বাড়ানো হয়েছে কেজিতে ৫ টাকা। বাজার পরিস্থিতির কারণে পণ্যের দাম বাড়িয়েছে টিসিবি। চলমান ৪০০ ট্রাকের মাধ্যমে ভোজ্যতেল, চিনি, মসুর ডাল ও পেঁয়াজ বিক্রি কার্যক্রম বাড়িয়ে রমজান উপলক্ষে দ্বিতীয় ধাপে ট্রাকের সংখ্যা হবে ৫০০টি। এর মধ্যে রাজধানীতে পণ্য বিক্রি করবে ১০০ ট্রাক। টিসিবি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোজা সামনে রেখে এ মুহূর্তে আড়াই কোটি লিটার ভোজ্য তেল, ১৭ হাজার টন ডাল, ৬০০ টন ছোলা, ১৩ হাজার টন চিনি ও অন্যান্য পণ্যের মজুদ নিয়ে সুলভ মূল্যের বাজার ব্যবস্থাপনার প্রস্তুতি নিয়েছে টিসিবি। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে ভোজ্যতেলসহ আরও কিছু পণ্য আমদানির প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এ প্রসঙ্গে টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আরিফুল হাসান সম্প্রতি বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার প্রায় দ্বিগুণ মজুদ সক্ষমতা নিয়ে রোজার আগে মাঠে থাকবে টিসিবি। আরও কিছু পণ্যের মজুদ বাড়াতে বিভিন্ন উৎস থেকে পণ্য সংগ্রহের চেষ্টা চলছে।

পেঁয়াজের দাম কমেছে ॥ দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর এবার রোজা সামনে রেখে ভারত থেকে বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি দেশীয় উৎপাদনও ভাল হয়েছে। ফলে কমে আসছে পেঁয়াজের দাম। দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরের খুচরা বাজারে এক সপ্তাহের ব্যবধানে আবার কমেছে ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম। প্রকারভেদে পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি আট থেকে ১০ টাকা কমেছে। আমদানি বেশি হওয়ায় দাম কমেছে বলে জানিয়েছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। খুচরা বাজারে ৩০-৩৫ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে পেঁয়াজ। রোজায় পেঁয়াজের চাহিদা অনেক বাড়বে। তবে আমদানি কার্যক্রম চালু থাকায় এ পণ্যটি নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

ভোজ্যতেলের দাম কমাতে এনবিআরের উদ্যোগ ॥ রমজান উপলক্ষে দ্রব্যমূল্য সহনশীল রাখার জন্য আমদানি করা অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেলের ওপর ৪ শতাংশ অগ্রিম কর প্রত্যাহার করা হয়েছে। রবিবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এ প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। রোজার মৌসুমে ভোজ্যতেলসহ বিভিন্ন ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যায়। নিম্ন আয়ের পাশাপাশি মধ্যবিত্তের বাজার হিসাবে টান লাগে। তাই সরকার আমদানি পর্যায়ে যাতে খরচ কমে যায়, সে জন্য অগ্রিম কর কমাল। এর আগে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি প্রথম দফায় দেশের বাজারে ভোজ্যতেলের দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকার। বলা হয়, খুচরা বাজারে খোলা সয়াবিন ১১৫ টাকা লিটারে বিক্রি হবে। বোতলজাত সয়াবিনের লিটার বিক্রি হবে ১৩৫ টাকায়। এ ছাড়া পাম সুপার বিক্রি হবে ১০৪ টাকা লিটার দরে। পরে আবার গত ১৫ মার্চ ভোজ্যতেলের দাম আরেক দফা বাড়িয়ে দাম নির্ধারণ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এক লিটারের এক বোতল সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ হয় ১৩৯ টাকা। চলতি বছরের শুরু থেকে অস্থির হয়ে পড়ে ভোজ্যতেলের বাজার। দফায় দফায় বাড়তে থাকে দাম। ফেব্রুয়ারি মাসে দাম বেড়ে ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে উঠে আসে। অপরিশোধিত তেল আমদানিতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ৪ শতাংশ অগ্রিম কর দিতে হয় ব্যবসায়ীদের। বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়লে ওই দামের ওপর ভিত্তি করে ভ্যাট ও কর আদায় করলে স্থানীয় বাজারেও দাম বাড়ে। আর এ পরিপ্রেক্ষিতেই এই অগ্রিম কর প্রত্যাহার করা হলো।

কেজিপ্রতি তিন টাকা বাড়ল চিনির দাম ॥ রমজান উপলক্ষে কেজিপ্রতি ৬৮ টাকা দরে প্যাকেটজাত চিনি বিক্রি করবে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন (বিএসএফআইসি)। যা আগে ছিল ৬৫ টাকা। পাশাপাশি মিল এলাকায় খোলা চিনি কেজিপ্রতি ৬০ থেকে বাড়িয়ে ৬৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। রবিবার শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের মাননিয়ন্ত্রণে বিএসএফআইসির চিনি বিক্রয় কার্যক্রম সম্পর্কে ভার্চুয়াল প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান। পরে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৬ এপ্রিল চিনির দাম প্রতিকেজি তিন টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করেছে বিএসএফআইসি। দেশে চিনির বার্ষিক চাহিদা ১৮ লাখ টন। এর তিন লাখ টনই লাগে রমজান মাসে। একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী প্রতিবছর রমজানকে সামনে রেখে নানা অজুহাতে চিনির দাম বাড়িয়ে দেন। এমন পরিস্থিতিতে সরকারী চিনির দাম বৃদ্ধিতে বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাজার মনিটরিংয়ে পুলিশকে তৎপর হতে বললেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ॥ রমজানে বাজার মনিটরিংয়ে পুলিশকে তৎপর হতে বললেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। রবিবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘পবিত্র রমজান মাসে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ’ শীর্ষক ওয়েবিনারে তিনি একথা বলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোজা এলেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার প্রবণতা পরিলক্ষিত হয় এবং অনেক সময় পণ্যের সাপ্লাই ও চাহিদার সমন্বয় থাকে না। তিনি বলেন, পণ্য পরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধে সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যথেষ্ট সচেতনভাবে কাজ করছে। অসাধু ব্যবসায়ীরা যেন সুযোগ নিতে না পারে সে ব্যাপারে বিএসটিআইসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও তৎপর হতে হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ব্যবসায়ী সমাজকে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসার আমন্ত্রণ এবং ব্যবসায়ীদের সজাগ থাকার আহ্বান জানান। মন্ত্রী বলেন, করোনা মহামারীর কারণে দেশবাসীকে বাঁচাতে সরকার আগামী ১ সপ্তাহের জন্য লকডাউনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে এবং সকলকে তা মানতে হবে।

ওই অনুষ্ঠানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, এটি একটি ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা, যার মাধ্যমে জনগণকে আসন্ন রমজান মাসে সুফল দেয়া যাবে। তিনি জানান, দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ইতোমধ্যে ৯ সদস্য বিশিষ্ট ‘বাজার মূল্য পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ’ বিষয়ক স্থায়ী কমিটি গঠন করেছে। যারা শিগগিরই তাদের কাজ শুরু“ করবে। মেয়র বলেন, ব্যবসায়ী সমাজের মতামত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে এবং সকলকে সঙ্গে নিয়ে রমজান মাসে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা যাবে। ওয়েবিনারে স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাবের পাশাপাশি অতিরিক্ত মজুদ করার মাধ্যমে বাজারে পণ্যদ্রব্যের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি, অপর্যাপ্ত ও সমন্বয়হীন বাজার মনিটরিং, পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি এবং অতিরিক্ত পরিবহন ব্যয় প্রভৃতি কারণে প্রতিবছর পবিত্র রমজান মাসের আগে দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি জনসাধারণের মাঝে উদ্বেগ সৃষ্টি করে। তিনি বলেন, মহামারীর ফলে গত বছরের শেষ ৯ মাসে আয় কমে যাওয়া ও কর্মচ্যুতির ফলে অধিকাংশ মানুষ ঋণ করে এবং সঞ্চয় ভেঙ্গে জীবন নির্বাহ করেছেন। এ পরিস্থিতিতে খাদ্যদ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পেলে দরিদ্ররা নিদারুণ কষ্টে পড়বে এবং খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা আরও প্রকট আকার ধারণ করবে।

ক্যাবের সহসভাপতি নাজের হোসেন বলেন, রমজানে ভোগ্যপণ্যের বাজার অসহনীয় হয়ে পড়ে এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যায়। এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে সকল সংস্থাকে সঙ্গে নিয়ে বাজার তদারকি বাড়ানোর প্রয়োজন। বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজী মোঃ গোলাম মওলা বলেন, পাইকারি পর্যায়ে করোনা পরিস্থিতিতে ভোগ্যপণ্যের মজুদের কোন ঘাটতি নেই, শুধুমাত্র ভোজ্যতেলের দাম আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাড়ায় সেটা স্থানীয় বাজারে বেড়েছে। 

এগ্রোটেক

কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তারা এক সঙ্গে কাজ করতে রাজি

ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকেরাফাইল ছবি
ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকেরাফাইল ছবি

ডাচ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে দুই দেশের বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা একসঙ্গে কাজ করতে রাজি হয়েছেন।

গতকাল সোমবার নেদারল্যান্ডসের রাজধানী হেগে অনুষ্ঠিত কৃষি খাতের ব্যবসাবিষয়ক এক সম্মেলনে দুই দেশের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা সহযোগিতার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।

নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম রিয়াজ হামিদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত এগ্রি বিজনেস কনক্লেভে বাংলাদেশের প্রায় ৪০জন উদ্যোক্তা ডাচ কৃষি খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি প্রযুক্তি সহযোগিতা ও ব্যবসায়িক সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। দিনব্যাপী আয়োজিত অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেছে ওয়েগেনিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়।

আলোচনায় বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা প্রযুক্তি কিনতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দিলে নেদারল্যান্ডসের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা প্রযুক্তি সহযোগিতা দিতে রাজি থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।

রিয়াজ হামিদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে ডাচরা প্রস্তুত এবং বাংলাদেশি উদ্যোক্তারাও তাদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। এ ছাড়া ডাচ সরকার ইতিমধ্যে বাংলাদেশের বীজ, পশু খাদ্য, পোলট্রি, হর্টিকালচার ও এ্যাকুয়াকালচার বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম সম্পাদন করেছে, যা ওই দেশের বেসরকারি খাতকে আরও উৎসাহিত করেছে।

আলোচনায় কৃষি সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করতে তৈরি আছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্কয়ার, ইস্পাহানি এগ্রো, একে খান অ্যান্ড কোম্পানি, প্যারাগন গ্রুপ, এসিআই, জেমকন গ্রুপসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তিনি জানান, মঙ্গলবার বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা ডাচ প্রযুক্তির প্রয়োগ সরেজমিনে দেখতে যাবেন।

বাংলাদেশের সঙ্গে নেদারল্যান্ডসের পোল্ট্রিখাতে সহযোগিতার আলোচনা অনেকটা এগিয়েছে উল্লেখ করে মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, দুই দেশের মধ্যে মৎস্য, পশুপালন ও হর্টিকালচারে সহযোগিতার বিপুল সম্ভাবনা আছে।

কনক্লেভ আয়োজনে প্রথমবারের মতো দূতাবাসের সঙ্গে অংশীদার হয়েছে নেদারল্যান্ডসের কৃষি মন্ত্রণালয়, নেদারল্যান্ডস এন্টারপ্রাইজ এজেন্সি, নেদারল্যান্ডস ফুড পার্টনারশিপ, ডাচ-গ্রিন-হাইজডেল্টা, লারিভ ইন্টারন্যাশনাল, স্টান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ।

কৃষিজাত পণ্য রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থানকারী নেদারল্যান্ডসের আয়তন বাংলাদেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের কম। ২০২১-এ কৃষিপণ্য ও খাদ্য রপ্তানি করে নেদারল্যান্ডস ১১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি আয় করেছে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

‘শিক্ষিত কৃষক’ বলেই তাঁকে নিয়ে মানুষের আগ্রহটা বেশি

গ্রামের বাজারে কচুর লতি বিক্রি করছিলেন আবু বকর সিদ্দিক, তাঁর এই ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে
গ্রামের বাজারে কচুর লতি বিক্রি করছিলেন আবু বকর সিদ্দিক, তাঁর এই ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে

রামের বাজারে প্লাস্টিকের টুলে বসে কচুর লতি বিক্রি করছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আবু বকর সিদ্দিক (প্রিন্স)। তাঁর এই ছবি একজন ফেসবুকে পোস্ট করলে তা ভাইরাল হয়েছিল। তাঁকে নিয়ে আলোচনা–সমালোচনায় যোগ দিয়েছিলেন বহু মানুষ। তবে এ ধরনের ঘটনা এটাই প্রথম নয় বলে জানালেন বাংলাদেশ অ্যাগ্রিকালচারাল রিসার্চ কাউন্সিলের পরিচালনা পর্ষদের এই সদস্য।

নিজের বৌভাতের জন্য জমানো এক লাখ টাকা দিয়ে ২০০৬ সালে শ্বশুরবাড়ির এলাকা ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার রাঙ্গামাটিয়া ইউনিয়নে খামারের জন্য জমি কিনেছিলেন। পরে ধারদেনাসহ নানাভাবে অর্থ সংগ্রহ করে ২০১৪ সালে সেখানে ‘কৃষাণ সমন্বিত কৃষি উদ্যোগ’ নামে খামার চালু করেন তিনি। এই কাজ করতে গিয়ে বর্তমানে ব্যাংক এবং বিভিন্ন এনজিও থেকে নেওয়া তাঁর ঋণের পরিমাণ ২৫ লাখ টাকার মতো।

আবু বকরের কৃষিকাজের জন্য মোট জমির পরিমাণ প্রায় ৮ একর। এর মধ্যে ৩ একর দীর্ঘ মেয়াদে ইজারা নেওয়া। বিভিন্ন জাতের ছয় হাজার ড্রাগনগাছ রয়েছে তাঁর খামারে। নয়জন স্থায়ী শ্রমিকের পাশাপাশি সেখানে কাজ করছেন অনেক অস্থায়ী শ্রমিক। আবু বকর সিদ্দিক তাঁর নামের আগে ডক্টরেট বা শিক্ষক এসবের চেয়ে ‘শিক্ষিত কৃষক’ বলতেই বেশি পছন্দ করেন। ড্রাগন চাষের জন্য এলাকাবাসীর পক্ষ থেকেই পেয়েছেন ‘ড্রাগন প্রিন্স’ উপাধি।

কৃষি–অন্তঃপ্রাণ আবু বকর সিদ্দিকের ফেসবুকের বেশির ভাগ পোস্টই কৃষিসংক্রান্ত। কালবৈশাখীর তাণ্ডবের পর গত শনিবার ভোরে এক ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘কেমনে সম্ভব এইভাবে কৃষিকাজ করা?’

নিজের খামারে আবু বকর সিদ্দিক
নিজের খামারে আবু বকর সিদ্দিক

ওই ঝড়ের আগের দিন শুক্রবার মুঠোফোনে কথা হয় আবু বকরের সঙ্গে। ছবি ভাইরাল হওয়া প্রসঙ্গে হাসতে হাসতেই বলেন, ‘আমি তো আর আজ নতুন করে কাজ করছি না। এর আগেও বিভিন্ন সময় আমার কাজ ও ছবি নিয়ে ফেসবুকে আলোচনা হয়েছে। ২০১৬ সালেও একবার রাস্তায় দাঁড়িয়ে ড্রাগন ফল বিক্রি করার সময় এমন আলোচনা হয়েছে।’

১৪ মে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার রাঙ্গামাটিয়া ইউনিয়নে বাবুলের বাজারে প্লাস্টিকের একটি টুলে বসে নিজের খামারে উৎপাদিত কচুর লতি বিক্রি করছিলেন আবু বকর সিদ্দিক। সেই ছবি তুলেছিলেন বেশ কয়েকজন। তাঁদেরই একজন ছবিটি ফেসবুকে দেন। এর দুই ঘণ্টা পর আবু বকর যখন ফেসবুকে ঢুকলেন, তখন দেখেন, তাঁকে ঘিরে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে।

আবু বকর সিদ্দিকের খামার থেকে সংগৃহীত ড্রাগন ফল বিক্রির জন্য বাজারে নেওয়া হয়েছে
আবু বকর সিদ্দিকের খামার থেকে সংগৃহীত ড্রাগন ফল বিক্রির জন্য বাজারে নেওয়া হয়েছে

আবু বকর জানান, কচুর লতি বিক্রির ঘটনার দিন খামারের শ্রমিকদের খাবারের জন্য বাজার করার কথা ছিল। সেই সময় হাতে বাজার করার মতো টাকা ছিল না। যে লোকের কচুর লতি বিক্রি করতে যাওয়ার কথা ছিল, তখন তিনি উপস্থিত ছিলেন না। তাই আবু বকর নিজেই স্থানীয় বাজারে তা বিক্রি করার জন্য যান।

তিনি বলেন, ‘আমি বসে থাকলে তো আর কেউ লতি বিক্রি করে দিত না। আমার প্রয়োজনেই আমাকে আমার উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে হয়েছে। ৫০ টাকা কেজি দরে ১৬ কেজি লতি বিক্রি করে বাজার করে ফিরেছি। কৃষকের জন্য যা স্বাভাবিক কাজ, শিক্ষিত বা নামের আগে ডক্টরেট থাকায় তা যখন আমি করতে গিয়েছি, তখন মানুষের মধ্যে আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে।’

আবু বকরের পৈতৃক বাড়ি ঝালকাঠি। বাবার চাকরি সূত্রে থেকেছেন ঢাকায়। বাবা মারা যাওয়ার আগে গাজীপুরে জমি কিনে বাড়ি করেছেন। ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার হাতিলেইট গ্রামে বিয়ে করে শ্বশুরবাড়ির এলাকাতেই খামার গড়েছেন। আবু বকর ফুলবাড়িয়া ও ঢাকা—দুই জায়গায় যাতায়াতের মধ্যে থাকেন।

আবু বকরের বাবা ছিলেন সেনা কর্মকর্তা। তিনি বললেন, ‘চাচা–মামারাও কৃষির সঙ্গে সরাসরি জড়িত নন, তাঁরা চাকরি, না হয় ব্যবসা করছেন। বলতে গেলে আমিই প্রথম কৃষিকাজ বেছে নিয়েছি। এ নিয়ে শুরুতে ঝামেলাও পোহাতে হয়েছে। তবে এখন পরিবারের সদস্যরা, বিশেষ করে ঢাকার উত্তরায় থাকা স্ত্রী মাকসুদা রুমি ও তিন ছেলেমেয়ে এখন আর কোনো আপত্তি করে না।’

এখন খামারের আয় থেকেই ঋণের কিস্তি পরিশোধের পাশাপাশি ঢাকায় ভালো স্কুলে ছেলেমেয়েদের পড়ানোসহ সংসারের অন্যান্য খরচ বেশ ভালোভাবেই মেটাতে পারছেন বলে জানান আবু বকর। গত বছর বরিশালের ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটিতে সহকারী অধ্যাপক ও মার্কেটিং বিভাগের প্রধান হিসেবে যোগ দিয়েছেন তিনি। তবে এখানেও তাঁর কৃষি ও খামার প্রাধান্য পেয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির মালিকের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকার সুবাদে শুরুতেই বলে নিয়েছেন খামারে যে ছয় মাস কাজ বেশি থাকবে, সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে (দুই সেমিস্টার) তিনি ক্লাস নেবেন না। আবু বকর জানালেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাওয়া সম্মানী ভাতা তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কল্যাণ তহবিলে জমা দিয়ে দেন।

ধানখেতে কৃষকদের সঙ্গে আবু বকর সিদ্দিক
ধানখেতে কৃষকদের সঙ্গে আবু বকর সিদ্দিক

আবু বকর বললেন, কৃষিকাজ পুরোপুরি বিজ্ঞাননির্ভর। কৃষিতে সফল হতে হলে বুদ্ধি ও পরিশ্রম—এ দুটোকে সমান গুরুত্ব দিতে হবে।

২০০২ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ব্যবস্থাপনায় এমএ করেছেন আবু বকর। ২০০৮ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ থেকে কৃষি ব্যবসায় এমবিএ করেন। ২০১৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমফিল, ২০১৮ সালে কৃষি সাপ্লাই চেইন এবং বাজারজাতকরণ বিষয়ে পিএইচডি করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগ থেকে। তাঁর মতে, কৃষক শিক্ষিত হলে অসুবিধার চেয়ে সুবিধাই বেশি।

তবে ওই শিক্ষিত কৃষককে লজ্জাটা ঝেড়ে ফেলতে হবে। কৃষিতে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করে এগোতে হয়। তাঁর মতে, এই পরিকল্পনাই হলো আধুনিক টেকসই কৃষির মূলমন্ত্র।

আবু বকর জানালেন, গত বছর বিভিন্ন জাতের ধান, মাছ, গরুর মাংস, আম, ড্রাগন, মাল্টা, লটকন, লেবু, আনারসসহ প্রায় ২০০ টন কৃষিপণ্য বিক্রি করেছেন। আয় হয়েছিল ৫২ লাখ টাকা। এর বাইরে জৈব সার বিক্রি এবং খামারের মধ্যে ১২ শতাংশ জমিতে নিজস্ব নার্সারি থেকে ফলের গাছ বিক্রি হয়েছিল পাঁচ লাখ টাকার মতো। তবে আবহাওয়া, জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন জটিলতায় আগের তুলনায় কৃষির উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে যাওয়ায় বছরটিতে খামারের মোট খরচ ছিল ৪৭ লাখ টাকা। আস্তে আস্তে উৎপাদন খরচ কমিয়ে আনা গেলে লাভের পরিমাণ বাড়বে বলেই আশাবাদী এ কৃষক।

পুরো খামারের কৃষি উৎপাদনে ৮০ শতাংশই জৈব সার ব্যবহার করছেন, আর এ সার নিজেই তৈরি করছেন। তাঁর সহজ স্বীকারোক্তি, ‘প্রথমে শতভাগ জৈব সার দিয়েই উৎপাদন শুরু করেছিলাম। কিন্তু এতে করে গাছগুলো ঠিকভাবে পুষ্টি পাচ্ছিল না। তাই সহনীয় মাত্রায় রাসায়নিক ও জৈব সারের সমন্বয়ে সবজি উৎপাদন করা হচ্ছে। তবে সব পুষ্টিমান ঠিক রেখে কীভাবে শুধু জৈব সার দিয়ে উৎপাদন করা যায়, তার গবেষণা নিজেই করছি।’ তিনি জানালেন, তাঁর ছোট একটা গবেষণাগারে চারটি জৈব জীবাণু কালচার করছেন। ২০টির বেশি উপাদান দিয়ে উন্নত জৈব সার বানানোর নানা পরীক্ষা চালাচ্ছেন।

আবু বকরের আফসোস, কৃষিকাজে আগে থেকেই অভিজ্ঞতা থাকলে তাঁর সময় কম নষ্ট হতো। এখন তাঁকে ঠেকে ঠেকে শিখতে হচ্ছে। আর এই শিখতে আর বুঝতে গিয়েই তাঁর অতিরিক্ত সময় নষ্ট হচ্ছে, টাকা খরচ হচ্ছে। এমবিএ করার পর ভারতের পাঞ্জাবে ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রাম করার সুযোগ পেয়েছিলেন আবু বকর। তখন সেখানকার কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি বিশেষজ্ঞ-ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপের সূত্রে কৃষির প্রতি আগ্রহটা বাড়ে। দেশের বিভিন্ন জেলায় ২০০টি বাণিজ্যিক বাগানের ২০০ জন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করেছেন আবু বকর। এই উদ্যোক্তারা আবু বকরের কাছ থেকে পরামর্শ নিচ্ছেন, তাঁর কাছ থেকে চারা নিচ্ছেন। আবু বকরের ভাষায়, এই বাগানমালিকদের অনেকেই তাঁর চেয়ে ভালো অবস্থানে পৌঁছে গেছেন। এই নতুন উদ্যোক্তা তৈরির বিষয়টিতেই তিনি বেশি তৃপ্তি পান।

খামারে গরুর পরিচর্যায় আবু বকর সিদ্দিক
খামারে গরুর পরিচর্যায় আবু বকর সিদ্দিক

নতুন কৃষি উদ্যোক্তার জন্য স্বল্প পুঁজির বিষয়টি অনেক বড় প্রতিবন্ধকতা বলে উল্লেখ করলেন আবু বকর।

তিনি জানান, শুরুতে কারও কাছে ২০০ টাকা চাইলেও পাওয়া যেত না। আর এখন ওই ব্যক্তিদের কাছে ১০ হাজার টাকা চাইলেও মুহূর্তের মধ্যে দিয়ে দিচ্ছেন। এ পর্যায়ে আসতে তাঁকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। নিজের আরাম–আয়েশ বাদ দিতে হয়েছে। পরিবারের জন্য বরাদ্দ করা সময়টুকু খামারের পেছনে দিতে হয়েছে।

উত্তরার বাসার বাজারের চেয়ে খামারের প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দিতে হয়েছে। ১৫ বছর বয়সী মেয়ে মুনিবা সিদ্দিক, ১১ বছর বয়সী ছেলে ইয়াফি আবদুল্লাহ সিদ্দিক আর ৫ বছরের ছেলে আদিব আবদুল্লাহকে সামলাচ্ছেন স্ত্রী মাকসুদা।

ধানখেতে কাজ করছেন আবু বকর সিদ্দিক
ধানখেতে কাজ করছেন আবু বকর সিদ্দিক

আবু বকর বললেন, তাঁর ইচ্ছা আছে, ভবিষ্যতে উৎপাদিত পণ্যের লাভের অংশ থেকে একটি তহবিল গঠন করবেন, যা থেকে নতুন উদ্যোক্তাদের সহায়তা করা হবে।

তিনি বলেন, কৃষক উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য দাম পান না বলেই অনিশ্চিত কাজে নিজের সন্তানদের তাঁরা কৃষি থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে চান।

আবু বকর জানালেন, গ্রাম্য রাজনীতি মোকাবিলা করেই তাঁকে সামনের দিকে অগ্রসর হতে হচ্ছে। গ্রামের অনেকেই চাননি বা চান না তিনি সেখানে খামার করেন। তবে অনেক নতুন কৃষক তাঁকে দেখে উৎসাহিত হচ্ছেন।

আবু বকর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিনা মূল্যে গাছ দেন। নিজের ও বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে সহায়তা নিয়ে এলাকার মসজিদ, মাদ্রাসা বা যে পরিবারের প্রয়োজন, তাঁর পাশে দাঁড়াচ্ছেন। ভবিষ্যৎ খামারে মা ও শিশুদের জন্য একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র চালু করতে চান। আবু বকরের মতে, এই ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকলে ছেলেমেয়েরা বিপথে চলে যাবে, এ ভয় কম থাকে।

জীবনের এই পর্যন্ত আসার পেছনে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক অধ্যক্ষ মরহুম চিকিৎসক কবির উদ্দিন ও তাঁর স্ত্রী তাসলিমা কবিরের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানালেন। এই পরিবার তাঁকে আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি মানসিকভাবে বুদ্ধি পরামর্শ দিয়ে সব সময় পাশে থেকেছে। এই দম্পতির ছেলের বিজ্ঞাপনী ফার্মে আবু বকর কাজ করেছেন। এই পরিবারের বিভিন্ন সদস্যদের কাছ থেকে পাওয়া এক লাখ টাকা জমিয়ে রেখেছিলেন বিয়ের পর বউভাতের খরচের জন্য। তবে বউভাতের অনুষ্ঠান বাদ দিয়ে তখন ওই এক লাখ টাকা এবং শ্বশুরের সহায়তায় জমি কিনে কৃষি নিয়ে স্বপ্নের যাত্রা শুরু করেছিলেন। এক বছর পর স্বল্প পরিসরে বউভাতের আনুষ্ঠানিকতা পালন করেছিলেন। তখন স্ত্রী ছিলেন পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

লাইভস্টক

বাংলাদেশে গরুর দুধে অ্যান্টিবায়োটিক আসে কীভাবে – দা এগ্রো নিউজ

শাহজাদপুরের একজন গরু খামারি
শাহজাদপুরের একজন গরু খামারি

শাহজাদপুরের একটি গ্রামে প্রাণ কোম্পানির জন্য খামারিদের কাছ থেকে দুধ সংগ্রহ করেন রাকিবুল মাহমুদ।

তিনি বলেন, ” আমি যখন দুধ এখানে রিসিভ করি তখন অনেক সময় দেখা যায় দুধে মাই আসছে। মাই এক ধরণের রোগ। এটা গরুর ওলান দিয়ে বের হয়। কৃমির ট্যাবলেট দিলে দুধে মাই আসে। তখন আমি খামারিদের বলে দিই যে মাই আসা দুধ আমি রিসিভ করবো না। “

” তাৎক্ষনিক ওরা অ্যান্টিবায়োটিক ডোজ দিয়ে দেয়। স্বাভাবিকভাবে মাই সারতে ১০-১৫দিন সময় লাগে। কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিক দিলে দেখা যায় ওটা পরের দিন থেকে ক্লিয়ার হয়ে যায়। ঐ অ্যান্টিবায়োটিকটা যাবে কই? অ্যান্টিবায়োটিকটা এভাবেই আসে,” বলছিলেন মি: মাহমুদ।

খামারিদের অনেকই মনে করেন, দানাদার গবাদি পশুর খাদ্যে অ্যান্টিবায়োটিক এবং সিসা থাকতে পারে। যদিও এটি শুধুই তাদের ধারণা।

শাহজাদপুর উপজেলায় পোতাজিয়া দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতির সভাপতি ওয়াজ আলী বলেন, অনেক কোম্পানি আছে যারা গবাদি পশুর খাদ্য বাজারজাত করার জন্য গরুর খামারিদের নানাভাবে প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করে। তারা খামারিদের বোঝানোর চেষ্টা করে যে তাদের কোম্পানির খাবার গরুকে দিলে দুধের উৎপাদন বাড়বে।

তিনি জানান, বর্ষা মৌসুমে গবাদি পশুর চারণভূমি কমে যায়। ফলে গবাদি পশুর খাদ্যের জন্য প্যাকেট-জাত দানাদার খাদ্যের উপর নির্ভর করতে হয়।

” ক্যাটেল ফিডের কোম্পানি বিভিন্ন অবস্থায় হয়তো হরমোন জাতীয় দ্রব্য দিয়া বলে আমার মালটা খাওয়াও দুধ বেশি হবে। সেই ক্ষেত্রে সরকারিভাবে ক্যাটল ফিড পরীক্ষা করুক,” বলছিলেন ওয়াজ আলী।

কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেল, ক্যাটল ফিডের বিভিন্ন কোম্পানি ভেদে দুধের উৎপাদন এক থেকে দুই কেজি হেরফের হয়।

ক্ষুদ্র খামারিরা গরু বাঁচাতে অনেক সময় চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ান
ক্ষুদ্র খামারিরা গরু বাঁচাতে অনেক সময় চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ান

তবে শাহজাদপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, দানাদার পশুখাদ্য থেকে ক্ষতিকর উপাদান গরুর শরীরে প্রবেশ করার সুযোগ নেই। তিনি দাবি করেন, পশু খাদ্যের নমুনা বাজার থেকে সংগ্রহ করে প্রায়ই পরীক্ষা করা হয়।

গবাদি পশুর অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ” আমরা খামারিদের বা সংশ্লিষ্ট সবাইকে বলবো, ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কখনো অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাবহার করবেন না।”

তিনি বলেন, গরুর শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা হলে সেটির প্রভাব ক্ষেত্র বিশেষ সাত থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত থাকে। এ সময়টুকু দুধ খাওয়া যাবেনা।

মি: রহমান জানান, এমন কিছু অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ আছে যেগুলো গবাদি পশু এবং মানুষ – উভয়ের শরীরের জন্য ব্যবহার হয়ে থাকে। তবে সেক্ষেত্রে শুধু প্রয়োগের মাত্রা হেরফের হতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

লাইভস্টক

ভারতের কঠোর পদক্ষেপ যেভাবে বাংলাদেশের গরু খামারিদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে গেল

ভারতের কঠোর পদক্ষেপ যেভাবে বাংলাদেশের গরু খামারিদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে গেল
ভারতের কঠোর পদক্ষেপ যেভাবে বাংলাদেশের গরু খামারিদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে গেল

বছর দেড়েক আগে ডেমরার আমুলিয়া মডেল টাউন এলাকায় ১২ থেকে ১৫টি গরু নিয়ে খামার শুরু করেছিলেন তাসনীম আহমেদ। বর্তমানে তার খামারে গরুর সংখ্যা ৪০টির মতো।

আগে তিনি অন্য ব্যবসা করতেন, এখনো করেন। তবে নতুন করে তিনি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন গরু পালনে।

ইদানীং কৃষি, বিশেষ করে পশুর খামারের ব্যবসাটি ‘বুমিং’ হওয়ার কারণেই এই খামারটি শুরু করেন তিনি, বিবিসি বাংলাকে জানালেন মিস্টার আহমেদ।

“গত বছর ৩৫টির মতো গরু কিনেছিলাম কোরবানির বাজারের জন্য। যার ২৯টি এরই মধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে। এখন বিক্রির জন্য আছে আর ৬টি।”

তাসনীম আহমেদের মতো এখন অনেকেই ঝুঁকছেন গরুর খামার করার দিকে। বিশেষ করে শিক্ষিত তরুণরা আসছেন এই ব্যবসায়। আর এর কারণ হলো বাজারে স্থানীয়ভাবে লালন-পালন করা পশুর বিপুল চাহিদা।

ঈদুল আযহার সময় বাংলাদেশে যত পশু কোরবানী হয়, এক সময় তার একটা বড় অংশ আসতো ভারত থেকে। কিন্তু ভারতে নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশে গরু চোরাচালান বন্ধ করতে ওই দেশের কর্তৃপক্ষ বেশ কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

শুরুতে বাংলাদেশের ভোক্তারা খানিকটা সমস্যায় পড়লেও অনেকে একটি সুযোগ হিসেবেও চিহ্নিত করেন। নতুন অনেক উদ্যোক্তা শুরু করেন গরুর খামার।

ফলে খুব দ্রুতই পাল্টে যায় বাংলাদেশে পশু পালনের চিত্রটি।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ডা. এ বি এম খালেদুজ্জামান বিবিসি বাংলাকে জানান, গত তিন চার বছর ধরে কোরবানির জন্য দেশীয়ভাবে উৎপাদিত পশু দিয়েই মূলত চাহিদা পূরণ করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, “ভারত থেকে একটা নির্দেশনা আছে যে, তাদের দেশ থেকে যাতে কোন পশু বাইরে না যায়। এটা আমাদের জন্যও খুবই ভালো। আমাদের ভেটেনারি মেডিকেল টিম রয়েছে যারা বাজার পর্যবেক্ষণ করছেন। তারাও বলেছে যে, ভারতীয় গরু এখনো তেমন চোখে পড়েনি।”

কী পরিমাণ গরু আসছে ভারত থেকে?

বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিজিবি’র দেয়া তথ্য উল্লেখ করে মিস্টার খালেদুজ্জামান বলেন, ২০১৩ সালে গরুর করিডোরের মাধ্যমে গরু আসে ২৩ লাখ, ২০১৪ সালে এসেছে ২১ লাখ। আর ২০১৫ সালে আসে ১৬ লাখ এবং ২০১৬ সালে ১১ লাখ।

তিনি জানান, এর পরের বছর সংখ্যাটা দশ লক্ষের নিচে নেমে আসে। ওই বছর গরু আসে ৯ লাখ। গত বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালে এই সংখ্যা ছিল সাত লক্ষ।

চলতি বছরে এই সংখ্যা লক্ষণীয়ভাবে কমে গেছে। মিস্টার খালেদুজ্জামান বলেন, এ বছর বৈধ পথে এসেছে মাত্র ৯২ হাজার গরু। “বছর শেষে আরো কিছু আসতে পারে, তবে আগের তুলনায় সংখ্যাটা বেশ কমে গেছে।”

তিনি বলেন, “এটা নির্দেশ করে যে, দেশীয় উৎস বাড়ছে, আমরা সরবরাহ করছি এবং বাইরে থেকে আসাও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।”

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিভাগ জানাচ্ছে যে এবারে কোরবানীর জন্য গরু-মহিষ পাওয়া যাবে সংখ্যা ৪৫ লাখ ৮২ হাজারটি, আর ছাগল-ভেড়ার সংখ্যা ৭১ লাখ। অর্থাৎ সব মিলিয়ে কোরবানির জন্য প্রস্তুত এক কোটি ১৭ লক্ষ পশু।

বাংলাদেশের হাটগুলোতে এখন দেশে উৎপাদিত গরুই বেশী
বাংলাদেশের হাটগুলোতে এখন দেশে উৎপাদিত গরুই বেশী

দেশীয় বাজারে চাহিদা নির্ধারণ করা হয় গত বছর যত পশু জবাই করা হয় তার সঙ্গে ৫ শতাংশ যোগ করে। সে হিসেবে, গত বছর জবাই করা এক কোটি পাঁচ লক্ষের সঙ্গে ৫ শতাংশ যোগ করে এবারে চাহিদা ধরা হয়েছে এক কোটি ১১ লক্ষ।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মিস্টার খালেদুজ্জামান জানান, দেশীয় উৎপাদন সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পর পরই আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠক করে বিজিবিকে অনুরোধ করে সীমান্ত বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

দাম কেমন হবে?

চাহিদার তুলনায় গরুর উৎপাদন বেশি থাকায় এটা দামের উপর কোন প্রভাব ফেলবে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, যেহেতু বাংলাদেশের বাইরে থেকে, বিশেষ করে ভারত থেকে পশু আসার তেমন কোন খবর পাওয়া যায়নি, আর উৎপাদন ও চাহিদায় যে পার্থক্য আছে সেটা তেমন বড় নয়, তাই আশা করা যায় যে এটা দামের উপর তেমন কোন প্রভাব ফেলবে না।

খামারিরা ভালো দাম পাবেন, মনে করছেন এই কর্মকর্তা।

মিস্টার খালেদুজ্জামান বলেন, বিদেশি গরু আসা ক্রমান্বয়ে কমে যাওয়ার বিষয়টি বাংলাদেশের খামারিদের ব্যবসায় বড় ধরণের ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

তিনি বলেন, অনেক তরুণ-তরুণী এই খামারের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন।

ঈদুল আযহার সময়ে চামড়া শিল্প বাদে শুধু গবাদি পশু খাতেই টার্ন ওভারের পরিমাণ প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা।

মিস্টার খালেদুজ্জামান বলেন, এটা খুবই ইতিবাচক, কারণ একদিকে যেমন দেশীয় উৎস থেকে দেশের মানুষকে নিরাপদ মাংস সরবরাহ করা যাচ্ছে, তেমনি বাইরে থেকে গরুর সাথে আসা নানা ধরণের রোগব্যাধিও কমে গেছে।

বিক্রির জন্য হাটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে গরু
বিক্রির জন্য হাটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে গরু

ট্রান্স-বাউন্ডারি অ্যানিম্যাল ডিজিজ অর্থাৎ পশুর মাধ্যমে যেসব রোগ এক দেশ থেকে অন্য দেশে স্থানান্তরিত হয় – যেমন গরুর খুরা রোগ, অ্যান্থ্রাক্স ইত্যাদি – সেগুলোও কম দেখা যাচ্ছে বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, নিরাপদ মাংস উৎপাদন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং দেশীয় বাজার সৃষ্টিতে স্থানীয়ভাবে গরুর উৎপাদন ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বলছে, প্রতিবছরই খামার নিবন্ধনের আওতায় খামারিদের সংখ্যা হিসাব করা হয়। এই হিসাব অনুযায়ী, এবছর খামারির সংখ্যা ৫ লাখ ৭৭ হাজার। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৪২ হাজার।

মিস্টার খালেদুজ্জামান বলেন, “এক বছরেই খামারির সংখ্যা এক লাখের উপরে বেড়ে গেছে। তবে এই খামারিদের মধ্যে ডেইরি খামারও রয়েছে।”

পশু খামারিদের ভবিষ্যৎ কী?

২০১৭ সালের হিসাবে, প্রোটিনের চাহিদা পূরণে মাছের পাশাপাশি জনপ্রতি প্রতিদিন ১২০ গ্রাম হারে মাংস খেলে সেটাকে মাংসে স্বয়ংসম্পূর্ণ বলে ধরা হয়। সে হিসেবে গত বছর চাহিদার ৭২ লক্ষ মেট্রিক টন চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হয়েছে। এবার এই চাহিদা ধরা হয়েছে ৭৫ লক্ষ মেট্রিক টন।

“তবে এই চাহিদা ভবিষ্যতে বেড়ে ১৫০ গ্রাম বা ২০০ গ্রাম পর্যন্ত হতে পারে। এটা হলো দেশীয় বাজারে বৃদ্ধি,” বলছেন এই কর্মকর্তা।

আর বিদেশি বাজার ধরতে এরই মধ্যে বেশ কিছু প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠান মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে মাংস রপ্তানি শুরু করেছে বলে তিনি জানান। তবে এর জন্য নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত মাংসের উৎপাদন বাড়াতে হবে বলেও তিনি মনে করেন।

গরুর হাট
গরুর হাট

অর্থনীতিতে কেমন প্রভাব পড়বে?

পশুপালনে এই পরিবর্তন বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এরই মধ্যে বেশ ইতিবাচক ভূমিকা রাখা শুরু করেছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক সায়মা হক বিদিশা বলেন, এই খাতটি অর্থনীতির জন্য একটি সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে, তবে সেজন্য যথাযথ ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

তিনি বলেন, “প্রায় সব সময়ই মাংসের চাহিদা পূরণের জন্য আমরা ভারতের উপর নির্ভরশীল ছিলাম। এখন যদি এক্ষেত্রে আত্মনির্ভরশীল হয়ে ওঠা যায়, সেটা অবশ্যই ইতিবাচক।”

সায়মা হক বিদিশা আরও বলেন, সরকার যদি একে একটা শিল্প এবং একটা বড় খাত ধরে চিন্তা করে পদক্ষেপ নেয়, তাহলে পশুপালন একদিকে দেশীয় চাহিদা পূরণের পাশাপাশি কর্মসংস্থানেরও সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে।

আর কী পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের?

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর জানায়, ডেইরি ও বিফ সেক্টরের উন্নয়নের জন্য বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় বাংলাদেশে চার হাজার ২০০ কোটি টাকার প্রকল্প রয়েছে।

এর মধ্যে রয়েছে আধুনিক জবাবইখানা নির্মাণ, যা নিরাপদ মাংসের জন্য প্রয়োজন। এছাড়া, গবাদি পশুর সুষম খাদ্য নিশ্চিতে এগুলোর আমদানি শুল্কমুক্ত করা, আধুনিক খামার ব্যবস্থাপনার প্রশিক্ষণ, কসাই প্রশিক্ষণ, গবাদি পশু বীমা, মাংসের গুণাগুণ নিশ্চিতে মান নিয়ন্ত্রণ, ল্যাবরেটরি নির্মাণ, খামারিদের পশুপালন ঋণ দেয়ার মতো পরিকল্পনা রয়েছে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

লাইভস্টক

বৈশ্বিক তাপমাত্রা কমাতে মাংস কম খেতে হবে?

বৈশ্বিক তাপমাত্রা কমাতে মাংস কম খেতে হবে?

বৈশ্বিক তাপমাত্রা কমাতে হলে মাংস খাওয়াও কমাতে হবে। এমন তথ্য দিয়েছেন জলবায়ু বিষয়ে কাজ করা জাতিসংঘের বিজ্ঞানীরা।

বৃহস্পতিবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভা থেকে এক বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করে ইন্টারন্যাশনাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ- আইপিসিসি।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পৃথিবীর গ্রিন হাউস গ্যাসের এক চতুর্থাংশ আসে জমির ব্যবহার থেকে। যার বেশিরভাগই হয় মাংস উৎপাদনকারী গবাদি পশুর খামারের কারণে।

মাংস জাতীয় খাবারের চাহিদা বাড়ার ফলে জমি থেকে বেশি মাত্রায় কার্বন বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে, যার ফলে বায়ুমণ্ডল আরও বেশি উষ্ণ হচ্ছে।

আর এ কারণেই গবাদি পশুর খামার কমাতে খাবার হিসেবে মাংস খাওয়া কমানোর পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

জাতিসংঘের বিজ্ঞানীরা বলছেন, মানুষ বেশি করে উদ্ভিদজাত খাদ্য গ্রহণ শুরু করলে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকারক প্রভাব কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।

তারা হুঁশিয়ার করেছেন, মাংস এবং দুগ্ধজাত খাদ্য তৈরির লক্ষ্যে নিবিড় চাষাবাদ বৈশ্বিক উষ্ণতাকে ক্রমশই বাড়িয়ে দিচ্ছে।

এ বিষয়ে বিজ্ঞানী ও আইপিসিসির একজন নেতৃস্থানীয় সদস্য সালিমুল হক বিবিসি বাংলাকে বলেন, “যেখানি পারি আমাদের গ্রিন হাউস গ্যাসটাকে কমানো প্রয়োজন। তা না হলে যে পরিমাণে তাপমাত্রা বেড়ে যাবে তা সহ্য করা যাবে না।”

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশক: শাইখ সিরাজ
© ২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। দা এগ্রো নিউজ, ফিশ এক্সপার্ট লিমিটেডের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। ৫১/এ/৩ পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থাপথ, ঢাকা -১২০৫
ফোন: ০১৭১২-৭৪২২১৭
ইমেইল: info@agronewstoday.com, theagronewsbd@gmail.com