এগ্রোবিজ
চিনির দাম নিয়ে ত্রিমুখী তেলেসমাতি!
লেখক
বাংলা নিউজ ২৪চিনির দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের কোনো প্রভাব পড়েনি বাজারে। এখনও আগের উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের চিনি।
মিলাররা বলছেন সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই। তারা দামও কমিয়েছেন। কিন্তু ব্যবসায়ীরা বলছেন, পর্যাপ্ত চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। আগের দামেই কিনতে হচ্ছে। তাই খুচরা পর্যায়ে দাম কমানো যাচ্ছে না।
অন্যদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, তারা বাজার মনিটরিং করে দেখেছেন, সরকারের বেঁধে দেওয়া দামেই চিনি বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে ৭৮ থেকে ৮০ টাকায় খোলা আর প্যাকেটের চিনি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮২ টাকা কেজি দরে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, মিল গেটে দাম না কমলে পাইকারি ও খুচরা বাজারে চিনির দাম কমবে না। পাশাপাশি বাজারে চিনির সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে। পর্যাপ্ত চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। এ জন্য সরকারের মিনিটরিং ব্যবস্থায় আরও কঠোর হতে হবে।
মিলের মালিকরা বলছেন, সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই। চিনির দাম অনেক আগেই কেজিতে ৫ টাকা কমানো হয়েছে। আর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, বাজারে নির্ধারিত নতুন দামে চিনি পাওয়া যাচ্ছে। নতুন দাম কার্যকরে মনিটরিং টিম কাজ করছে।
প্রসঙ্গত, দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রথমবারের মতো চিনির দাম বেধে দিয়েছে সরকার। এখন থেকে প্রতি কেজি খোলা চিনির দাম ৭৪ টাকা এবং প্যাকেট চিনির দাম ৭৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত ১০ সেপ্টেম্বর থেকে নতুন দাম কার্যকর করা হয়েছে।
শনিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর পাইকারি বাজার ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দেশের বাজারে হঠাৎ করেই লাফিয়ে উঠেছে চিনির দাম। মৌলভিবাজারে প্রতিবস্তা (৫০ কেজি) চিনি বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৭৫০ থেকে ৩ হাজার ৭৬০ টাকা, প্রতি কেজি ৭৫ টাকা থেকে ৭৫ টাকা ২০ পয়সা।
চিনির দাম দুই মাস আগেও ছিল ৩ হাজার ১০০ টাকা বস্তা, প্রতি কেজি ৬২ টাকা। সে হিসেবে তিন মাসের ব্যবধানে চিনির দাম বস্তায় বেড়েছে ৬৫০ টাকা এবং কেজিতে বেড়েছে ১৩ টাকা। আর খুচরা পর্যায়ে গত দুই তিন মাসে কেজি প্রতি চিনির দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১২ টাকা।
তিন মাস আগেও প্রতি কেজি চিনির দাম ছিল ৭০ টাকার নিচে। এখন খোলা চিনি খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৭৮ থেকে ৮০ টাকা। প্যাকেটজাত চিনি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮২ টাকার মধ্যে।
এ বিষয়ে মৌলভিবাজারের পাইকারি চিনি ব্যবসায়ী সোনালী ট্রেডার্সের ম্যানেজার অরুণ কুন্ড বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমানে আমরা মিল গেট থেকে ৩৭৫০ থেকে ৩৭৫২ টাকায় এক বস্তা (৫০ কেজি) চিনি কিনে থাকি। আর বিক্রি করছি ৩৭৬০ টাকা। সেই হিসেবে প্রতি কেজি চিনি কিনছি ৭৫ টাকা আর বিক্রি করি ৭৫ টাকা ২০ পয়সা। তাহলে এর থেকে কম দামে আমরা কিভাবে বিক্রি করব।
তিনি বলেন, সরকার নির্ধারিত দামে আমরাই চিনি পাই না আর সাধারণ ভোক্তা কোথা থেকে পাবে। গত বৃহস্পতিবার মিল গেট থেকে ট্রাক ফেরত এসেছে। বলেছে, এক সপ্তাহ পর যোগাযোগ করতে। কারণ জানতে চাইলে বলে, সরবরাহ কমে গেছে চিনি নাই। চিনি আসলে আবার দেওয়া হবে। তাহলে আমরা কোথায় যাব বলেন।
সূত্রাপুর বাজারের খুচরা বিক্রেতা মেসার্স বিসমিল্লাহ স্টোরের মালিক মো. রিপন বাংলানিউজকে বলেন, আমরা প্রতি বস্তা চিনির দাম পড়ে ৩৭৬০ টাকা। এর সঙ্গে ইউটিলিটি চার্জ ৩০ টাকা যোগ হয়। সে হিসেবে প্রতি কেজি চিনির দাম হয় ৭৫ টাকা ৮০ পয়সা। তারপর দোকান ভাড়া কর্মচারী ও বিদ্যুৎবিল প্রতি বস্তায় ১ কেজি ঘাটতি যোগ হবে। সব মিলিয়ে আমাদের খরচ পড়ে ৭৭ টাকার ওপরে। এরপর ২ থেকে ৩ টাকা লাভ ধরে আমরা ৭৮ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি করি। এবার বলেন সরকারের নির্ধারিত দামে কীভাবে বিক্রি করব। যদি সরকারের নির্ধারিত দামে বিক্রি করি, তাহলে কেজিতে ৫ টাকা লোকসান দিতে হবে। এমন হলে চিনি বিক্রি বন্ধ করে দেব।
খুচরা চিনি বিক্রেতা ফজলু স্টোরের মালিক মো. ফজলুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, এখন চিনি বিক্রি করে কোনো লাভ নেই। তাই চিনি কম আনছি। লোকসান দিয়ে ভোক্তাদের খাইয়ে আমার কী লাভ। তাছাড়া মার্কেটে চিনি কম। ৫০ বস্তা চাইলে দেয় ১০ বস্তা। সরকার যে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে, সে দাম আমরা বিক্রি করতে পারব যদি সরকার আমাদের মিলারদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারে তাহলে। মিলাররা যে দাম দেয়, তার ওপর নির্ভর করে পাইকারি বাজার। আর পাইকারি বাজারের ওপর নির্ভর করে খুচরা বাজার।
এ বিষয়ে সিটি গ্রুপের পরিচালক (করপোরেট ও রেগুলেশন অ্যাফেয়ার্স) বিশ্বজিৎ সাহা বাংলানিউজকে বলেন, আমরা নতুন দামের চিনি বাজারে ছেড়ে দিয়েছি। অনেক আগেই খোলা চিনির দাম কেজিতে ৫ টাকা কমে যাওয়ার কথা। আর প্যাকেটজাত চিনির দামের ক্ষেত্রেও আমরা ডিলারদের বলে দিয়েছি, খুচরায় ৭৫ টাকা করে বিক্রি করতে। কিন্তু দাম কমছে সে বিষয়ে মনিটরিং বাড়াতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বাজারে কোনো চিনির ঘাটতি নেই। গতকালও আমরা ২ হাজার ৮০০ টন চিনি বাজারে ছেড়েছি। আমরা লোকসান দিচ্ছি। অথচ ভোক্তা সে সুবিধা পাচ্ছে না কেন, সেটা সরকার ভালো করে মনিটরিং করলে বেরিয়ে আসবে।
এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আমদানি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, গত দুই তিন-মাস ধরে বাজারে চিনির দাম বাড়িয়ে দিয়েছে ব্যবসায়ীরা। চিনির দাম বেড়ে ৮০ টাকায় উঠেছিল। আমরা কেজিতে ৫ টাকা করে দাম কমিয়েছি। প্রতি কেজি খোলা চিনি ৭৪ টাকা এবং প্যাকেট চিনি ৭৫ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছি। রিফাইনারি কোম্পানিগুলো আমাদের নির্ধারিত নতুন দামে চিনি বাজারে ছেড়েছে। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রতিনিয়ত মনিটরিং করা হচ্ছে। আজও আমাদের দুটি টিম বের হয়েছে বাজার মনিটরিং করার জন্য। তারা তো বলল, সেখানে নির্ধারিত দামে প্রতি কেজি খোলা চিনি ৭৪ টাকা ও প্যাকেট ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তিনি বলেন, আপনাদের কাছে যদি এমন কোনো তথ্য থাকে আমাদের দেন, তাহলে আমরা টিম পাঠিয়ে ব্যবস্থা নেব। এছাড়া মিল মালিকরা নতুন দামে চিনি বাজারে ছেড়েছে, তা আসতে দুই-একদিন সময় লাগতে পারে। তবে তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা বলেছে, তাদের নতুন দামের চিনি বাজারে চলে গেছে। তাহলে তো বাজারে দাম বেশি থাকার কথা নয়।
তিনি আরও বলেন, মিলার বা হোলসেলাররা কোনো কারসাজি করছে কি না, তা বের করার জন্য আমাদের মনিটরিং টিম কাজ করছে। ঢাকা সিটিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দুটি ও ভোক্তা অধিকারের দুটি টিম এবং দেশের সব জেলায় ভোক্তা অধিকারের একটি করে টিম নিয়মিত বাজার মনিটরিং করছে।
বাংলাদেশ খাদ্য ও চিনি শিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি) সূত্রে জানা গেছে, সরকার চলতি মৌসুমে ছয়টি চিনিকলের উৎপাদন বন্ধ রেখেছে। ১ মার্চ পর্যন্ত বাকি ৯টি চিনিকলে মোট উৎপাদন হয়েছে ৪১ হাজার ৬৪৮ দশমিক ৬০ টন চিনি। এছাড়া আগের মজুদ ছিল ৫৬ হাজার ৩০ দশমিক ৯১ টন। ১ মার্চ পর্যন্ত ফ্রি সেল, ডিলার ও সরকারি সংস্থার কাছে চিনি বিক্রি করা হয়েছে মোট ৪৮ হাজার ৮৮৩ টন।
সব মিলিয়ে সংস্থাটির কাছে বর্তমানে চিনি মজুদ আছে মাত্র ৪৮ হাজার ৭৯৬ দশমিক ৪ টন। এর মধ্যে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিজিবি, ফায়ার সার্ভিস ও মিলস রেশনের জন্য সংরক্ষিত আছে ১০ হাজার ৭৯৮ টন চিনি। সব মিলিয়ে চিনি শিল্প করপোরেশনের বিক্রয়যোগ্য চিনি মজুদ নেমে দাঁড়িয়েছে ৩৭ হাজার ৯৯৮ টনে, যা সার্বিকভাবে দেশের চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণে খুবই অপ্রতুল বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
বিএসএফআইসির প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, দেশে চিনির চাহিদা গড়ে ১৫-১৭ লাখ টন। এর মধ্যে সরকারি মিল ও সরকারি ব্যবস্থাপনায় আমদানি করা চিনিসহ দেড় আড়াই লাখ টন চিনি সরবরাহ করে বিএসএফআইসি। কিন্তু ছয়টি সরকারি মিল বন্ধ থাকার পাশাপাশি আমদানি না হওয়ায় দেশে চিনির চাহিদার প্রায় ৯০ শতাংশের বেশি বেসরকারি মিল মালিকদের নিয়ন্ত্রণে। তাছাড়া বিএসএফআইসির নিজস্ব প্রায় চার হাজার ডিলারের কাছে সরবরাহ কমে যাওয়ায় দেশের পাইকারি ও খোলা বাজারে দাম বাড়ছে।
আপনার জন্য নির্বাচিত সংবাদ
-
কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তারা এক সঙ্গে কাজ করতে রাজি
-
কাঁঠালের আইসক্রিম জ্যাম ও চিপস
-
পতিত জমিতে চিনাবাদাম চাষে লাভবান হচ্ছেন কৃষক
-
টি ব্যাগের ব্যবসা করে আয় করুন প্রচুর অর্থ
-
গো-বর্জ্য থেকে শুরু করুন এই চার ব্যবসা, আয় হবে লক্ষাধিক
-
ওষধি উদ্ভিদ কালমেঘ চাষে ব্যাপক আয়
-
নির্দিষ্ট পুঁজিতে মিশ্র চাষে কৃষকদের ব্যাপক আয়ের সুযোগ
-
কেমন হবে আগামীর কৃষি:
-
রাতে বিক্রি হচ্ছে পায়রা ও বিষখালী নদীর ইলিশ
-
সুদান ঘাস চাষ করবেন যেভাবে
চলতি বোরো মৌসুমে সার কিনতে কৃষকদের সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা করে বেশি দিতে হয়েছে। আর সরকারকেও সার বাবদ ভর্তুকি দিতে হচ্ছে বাজেটে বরাদ্দের তিন গুণের বেশি—প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশ এখন মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) সার আমদানি নিয়ে বিপাকে পড়েছে।
ধান, আলু ও সবজি চাষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এমওপি সারের ৬০ শতাংশ আনা হতো রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে। ওই দুই দেশ নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়ায় এখন বাংলাদেশকে এমওপি কিনতে হচ্ছে কানাডা থেকে। বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়া ও আমদানিতে অনিশ্চয়তার কারণে বাংলাদেশে সারের সংকট হতে পারে। ভর্তুকির চাপ সামলাতে বাংলাদেশকে সব ধরনের সারের খুচরা মূল্য বাড়াতে হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিবিষয়ক সংস্থা ইউএসডিএর চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ‘বাংলাদেশে সার সরবরাহ ও ব্যবহারে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের এমওপি সারের ২০ শতাংশ সরবরাহ কমানো হলে সামনের বোরো মৌসুমে ধান, গম ও রবি মৌসুমের অন্যান্য ফসলের উৎপাদন ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কমতে পারে। এতে বাংলাদেশের খাদ্য উৎপাদন ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে।
এমনিতেই এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমাদের ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সারের কারণে নতুন করে যাতে আর সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
এ এম এম শওকত আলী, সাবেক কৃষিসচিব
তবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, দেশে চলতি বোরো মৌসুমে নতুন করে আর সারের দরকার হবে না। সামনে আলুর মৌসুমে ইউরিয়া, এমওপিসহ অন্যান্য সারের চাহিদা বাড়বে। ওই সময়ের জন্য সার সরবরাহ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ কানাডা ও মধ্যপ্রাচ্যের সার সরবরাহকারী দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে।
জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কানাডা থেকে মোট আট লাখ টন এমওপি সার আমদানির উদ্যোগ নিয়েছি। এ ব্যাপারে ওই দেশের সঙ্গে আমাদের সমঝোতা স্মারক হয়েছে। ফলে এই সার নিয়ে সরকারের কোনো দুশ্চিন্তা নেই। তবে সার বাবদ সরকারের বিপুল পরিমাণে ভর্তুকি বাড়ছে। এই চাপ নিয়েও সরকার ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ওই ভর্তুকি দিয়ে যাবে।’
কমানো হয়েছে চাহিদা
বাংলাদেশে চলতি অর্থবছরে ৬৯ লাখ টন রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয়েছে। এর মধ্যে ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি—এই চার ধরনের সার ব্যবহার হয় ৫৭ লাখ টন। আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের ওই চার ধরনের সারের চাহিদা কমিয়ে ৫৫ লাখ ৫০ হাজার টনে নামিয়ে আনা হয়েছে।
দেশে প্রয়োজনীয় সারের ৮০ শতাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এর মধ্যে এমওপি সারের বড় অংশ আসে রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে।
প্রসঙ্গত, ওই চারটি প্রধান সার কৃষকদের কাছে বিক্রির ক্ষেত্রে সরকার ভর্তুকি দিয়ে থাকে। চলতি অর্থবছরে সরকার প্রাথমিকভাবে সারে ভর্তুকি বাবদ ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে গত ছয় মাসে সারের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। বেশির ভাগ সারের দাম তিন থেকে চার গুণ বেড়ে যাওয়ায় সরকারকে ভর্তুকির পরিমাণ ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা করতে হয়। কিন্তু অর্থবছরের শেষের দিকে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে হিসাব করে দেখা হয়েছে, ভর্তুকির পরিমাণ এবার বেড়ে কমপক্ষে ৩০ হাজার কোটি টাকা গিয়ে দাঁড়াবে।
জিপসাম, জিংক সালফেট ও অ্যামোনিয়াম সালফেট ও ম্যাগনেসিয়াম সালফেট সারে সরকার কোনো ভর্তুকি দেয় না। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কিনে ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কাছে তা বিক্রি করে থাকেন। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষককেও বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে।
সাবেক কৃষিসচিব এ এম এম শওকত আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমনিতেই এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমাদের ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সারের কারণে নতুন করে যাতে আর সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। আর সরকারের অন্যান্য খাতের ভর্তুকি কমিয়ে প্রয়োজনে সারে ভর্তুকি বাড়াতে হবে, যাতে সারের দাম কম থাকে। কারণ, কৃষকের হাতে এখন টাকা কম। বিশ্ববাজার থেকেও খাদ্য আমদানি করা সামনের দিনে আরও কঠিন হতে পারে। ফলে দেশের উৎপাদন ঠিক রাখতে সারের দাম ও জোগান ঠিক রাখা উচিত।
মিরাজুল ইসলাম (৩৩)। ১০ বছর সৌদি আরবে ছিলেন। আকামা জটিলতায় খালি হাতে দেশে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। এক বছর বেকার থাকার পর ইউটিউবে পতিত জমিতে ড্রাগন চাষের ভিডিও দেখেন। বাবার কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে নেমে পড়েন ড্রাগন চাষে। দেড় বছরের ব্যবধানে এখন উপজেলার সবচেয়ে বড় ড্রাগন বাগান তাঁর। এ বছর খরচ বাদে আট থেকে নয় লাখ টাকা লাভের আশা করছেন তিনি।
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার ইন্দুরকানি গ্রামের বাসিন্দা মিরাজুল। উপজেলার টগরা গ্রামে দেড় একর জমিতে তিনি ড্রাগনের বাগান তৈরি করেছেন। তাঁর বাগানে এখন সাড়ে তিন হাজার ড্রাগন ফলের গাছ আছে।
মিরাজুল ইসলাম বলেন, শ্রমিক হিসেবে ১০ বছর সৌদিতে কাজ করে ২০১৯ সালে দেশে ফেরেন তিনি। আকামা সমস্যার কারণে শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। কিছু একটা করবেন বলে ভাবছিলেন। একদিন ইউটিউবে ড্রাগন চাষের ভিডিও দেখতে পান। সেই থেকে ড্রাগন চাষে আগ্রহ জন্মে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে দেড় একর পতিত জমি ড্রাগন চাষের উপযোগী করেন। গাজীপুর থেকে ৬০ টাকা দরে ৬০০ চারা নিয়ে আসেন। বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে শুরু করেন চাষাবাদ। পরের বছর জুনে ফল পাওয়া শুরু করেন।
ড্রাগনের বাগান করতে মিরাজুলের খরচ হয়েছিল ছয় থেকে সাত লাখ টাকা। ইতিমধ্যে ফল বিক্রি করে তাঁর খরচ উঠে গেছে। সাধারণত মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত গাছে ফল আসে। বছরে ছয় থেকে সাতবার পাকা ড্রাগন সংগ্রহ করা যায়। এখন পরিপক্ব ও রোগমুক্ত গাছের শাখা কেটে নিজেই চারা তৈরি করেন। ড্রাগন চাষের পাশাপাশি বাগানে চুইঝাল, এলাচ, চায়না লেবুসহ মৌসুমি সবজি চাষ করেন। এ ছাড়া ড্রাগনের চারাও উৎপাদন করে বিক্রি করেন তিনি।
মিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বাগানের বেশির ভাগ গাছে এ বছর ফল ধরেছে। গত মঙ্গলবার বাগান থেকে দেড় টন ফল সংগ্রহ করেছেন। ২৫০ টাকা কেজি দরে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পাইকারদের কাছে বিক্রি করেছেন। স্থানীয় বাজারে ৩০০ টাকা কেজি দরে ড্রাগন বিক্রি হয়। নভেম্বর পর্যন্ত আরও পাঁচ–ছয়বার বাগান থেকে ফল তোলা যাবে। আশা করছেন, খরচ বাদে এবার আট থেকে নয় লাখ টাকা লাভ থাকবে।
মিরাজুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমার বাগান থেকে চারা নিয়ে অনেকে বাড়িতে ও ছাদে ছোট পরিসরে ড্রাগনের বাগান করেছেন। আমি এ পর্যন্ত ৪০ টাকায় দেড় হাজার চারা বিক্রি করেছি।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পূর্ণ বয়সের একটি ড্রাগনের চারা রোপণের পর ২৫ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। এর মৃত্যুঝুঁকি নেই বললেই চলে। তবে কয়েক দিন পরপর সেচ দিতে হয়। বৃষ্টির পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হয়। ড্রাগন ফল চাষে রাসায়নিক সার দিতে হয় না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইশরাতুন্নেছা বলেন, মিরাজুল ইসলামকে ড্রাগন চাষে নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে আসছে কৃষি বিভাগ। উপজেলায় তাঁর বাগানটি সবচেয়ে বড়। তিনি নিরলস পরিশ্রম করে ছোট থেকে বাগানটি বড় করেছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নে অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে কৃষকের প্রায় ৩০ হেক্টর বাদাম চাষের জমি। কয়েক দিন আগে উজানের পানিতে তাঁদের পাকা ধানের জমি তলিয়ে গিয়েছিল। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষকেরা বাদাম চাষ করেছিলেন। আবারও ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ার বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হলেন চাষিরা।
উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১১ এপ্রিল উপজেলায় শিলাবৃষ্টি এবং ১৪ থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত উজানের পানিতে কৃষকের পাকা ধানের জমি তলিয়ে যায়। কৃষকেরা সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ২০০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করেছিলেন। এর মধ্যে উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নে ৩০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করা হয়। উপজেলায় এবার প্রায় ৫০ হাজার মণ বাদাম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। কিন্তু উজানের পানিতে হঠাৎ বন্যায় সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
গোয়ালনগর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আজহারুল হক বলেন, ‘নাসিরনগর উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাদাম চাষ করা হয় আমাদের ইউনিয়নে। কিন্তু এ বছর আগাম বন্যার কারণে কৃষকেরা তাঁদের ফসল ঘরে তুলতে পারেননি। তাঁদের সব ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।’
ওই এলাকার বাদামচাষি মেরাজ মিয়া বলেন, তিনি ছয় বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করেন। দু-এক দিনের মধ্যে বাদাম তুলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু খেতে গিয়ে দেখেন সব বাদাম পানির নিচে। এখন এই বাদাম তুলে কোনো লাভ নেই। এগুলো গরুও খাবে না।
মো. রজব আলী নামের এক কৃষক বলেন, ‘আমাদের ইউনিয়নের জামারবালি, সোনাতলা ও মাইজখোলা গ্রামে বাদামখেত আছে। গত তিন দিনে পাঁচ-ছয় ফুট পানি বাড়ায় সব তলিয়ে গেছে। এখন বাদাম তুলতে কাজের লোকও পাওয়া যাচ্ছে না।’
কৃষক ফতু মিয়া বলেন, গোয়ালনগর ইউনিয়নের বাদাম চাষের জমিগুলো হঠাৎ পানি আসায় তলিয়ে গেছে। ফসল তলিয়ে তাঁদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেল। কয়েক দিন আগেও পাকা ধান পানির নিচে তলিয়ে গিয়েছিল। কৃষকদের দাবি, গোয়ালনগরে বাদাম চাষের জমি তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকদের প্রায় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আবু সাইদ প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলার কয়েকটি চরাঞ্চলে বাদাম চাষ করা হয়। চরাঞ্চলের উঁচু জমিতে প্রথমে আলু চাষের পর বাদাম চাষ করা হয়। আগাম বন্যার কারণে নিচু এলাকার কিছু বাদামখেত পানিতে তলিয়ে গেছে।
আবু সাইদ আরও বলেন, ১৫-২০ দিন আগে উপজেলার প্রায় সব বাদাম উঠে গেছে। গোয়ালনগর ইউনিয়নে ৩০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করা হয়েছিল। এর মধ্যে এক হেক্টর জমির বাদাম তলিয়ে গেছে। সব মিলিয়ে ৭০ হাজার টাকার মতো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সিলেটে বন্যা হওয়ায় এমনটি হয়েছে বলে তিনি জানান।
ঠাকুরগাঁওয়ে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) একটি গভীর নলকূপের সেচের পানি সরবরাহে কৃষকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হচ্ছে। ভুক্তভোগী কৃষকদের কাছ থেকে পাওয়া এমন অভিযোগের তদন্ত করে সত্যতা পেয়েছে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষ। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বড় বালিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে।
ভুক্তভোগী কৃষকেরা বলছেন, সেচের পানির জন্য প্রিপেইড কার্ডের বাইরে কোনো টাকা দেওয়ার নিয়ম নেই। কিন্তু বিএমডিএর ১০৮ নম্বর গভীর নলকূপের অপারেটরের দায়িত্বে থাকা বিউটি বেগমের স্বামী আকতারুজ্জামান বোরো ধান চাষের জন্য প্রতি বিঘার জন্য ১ হাজার ২০০ টাকা ও অন্য মৌসুমে ৩০০ টাকা নেন। ১০ বছর ধরে তিনি এভাবেই বাণিজ্য করে আসছেন।
সম্প্রতি রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে বিএমডিএর গভীর নলকূপ থেকে খেতে সেচের পানি পেতে হয়রানির শিকার দুই কৃষকের মৃত্যুর ঘটনা দেশজুড়ে আলোচিত হয়।
ঠাকুরগাঁও জেলায় বিএমডিএর ১ হাজার ৪৩১টি গভীর নলকূপ রয়েছে। এর মধ্যে সচল ১ হাজার ৪১৮টি। সেচের আওতায় ৭৬ হাজার ৫০০ পরিবারের জমি রয়েছে ৫৩ হাজার ৫০০ হেক্টর।
* সেচের পানির জন্য প্রিপেইড কার্ডের বাইরে কোনো টাকা দেওয়ার নিয়ম নেই। * সেচের আওতায় ৭৬ হাজার ৫০০ পরিবারের জমি আছে। * কৃষকদের নলকূপের আবেদন পেলে যাচাই করে স্কিম তৈরি করা হয়।
বিএমডিএ সূত্রে জানা গেছে, কৃষকদের নলকূপের আবেদন পেলে যাচাই করে স্কিম তৈরি করা হয়। এরপর সমবায়ের ভিত্তিতে অংশীদারি ফি বাবদ এক লাখ টাকা জমা দিতে হয়। এই নলকূপ পরিচালনার জন্য বিএমডিএ একজন অপারেটর নিয়োগ দেন। প্রিপেইড মিটারিং পদ্ধতিতে কৃষকের নিজ নামে প্রিপেইড কার্ড থাকতে হয়। সেই কার্ড থেকে প্রতি ঘণ্টায় সেচের পানির জন্য ন্যূনতম ১১০ টাকা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কেটে নেওয়া হয়। এর বাইরে অতিরিক্ত কোনো টাকা দেওয়ার নিয়ম নেই।
বড় বালিয়া এলাকার কৃষকেরা জানান, ২০১১ সালের দিকে বড় বালিয়া মণ্ডলপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. আকতারুজ্জামান এলাকায় গভীর নলকূপ স্থাপনের উদ্যোগ নেন। ফি হিসেবে এক লাখ জমা দেওয়ার নিয়ম থাকলেও কোনো কৃষক সেটা দিতে এগিয়ে আসেননি। ফলে আকতারুজ্জামান, দাউদুল ইসলাম ও জোবায়দুর রহমান মিলে অংশীদারি ফি দেন। আকতারুজ্জামানের ৮০ শতাংশ টাকা থাকায় গভীর নলকূপের নিয়ন্ত্রণ তিনিই পান। অপারেটর হিসেবে নিয়োগ পান তাঁর স্ত্রী বিউটি বেগম। যদিও কৃষকেরা আকতারুজ্জামানকেই অপারেটর হিসেবে জানতেন।
সেচের পানি পেতে হয়রানির শিকার হয়ে সদর উপজেলার বড় বালিয়া এলাকার ৫০ জন কৃষক গত ১৭ এপ্রিল বিএমডিএ সহকারী প্রকৌশলীর কাছে অভিযোগ দেন। সেখানে গিয়ে কৃষক ও অপারেটরের সঙ্গে কথা বলে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়।
ভুক্তভোগী কৃষকেরা বলেন, ২০১২ সালে নলকূপটি চালু হলে আওতাধীন কৃষকের কাছ থেকে আকতারুজ্জামান সেচের পানির জন্য প্রিপেইড কার্ডের অতিরিক্ত টাকা আদায় শুরু করেন। আর সেই টাকা থেকে তিনি মাঝেমধ্যে অন্য দুই অংশীদারকে কিছু টাকা ভাগ দেন।
ভুক্তভোগী কৃষক মো. শাহজাহান আলী বলেন, গভীর নলকূপটির আওতায় তাঁর ১০ বিঘা জমি রয়েছে। কার্ডের বাইরে টাকা দেওয়ার নিয়ম না থাকলেও আকতারুজ্জামানকে প্রতি বিঘায় সেচের জন্য ১ হাজার ২০০ টাকা দিতে হয়। এই টাকা না দিলে তিনি পানি দেন না।
ওই নলকূপের আওতায় চার বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করছেন কৃষক মো. হেলাল। তিনি অতিরিক্ত টাকা না দেওয়ায় অপারেটর খেতে পানি দেননি। এতে জমি ফেটে যায়। পরে তিনি শ্যালো ইঞ্জিন দিয়ে জমিতে সেচ দিয়ে খেত রক্ষা করেছেন।
আরেক ভুক্তভোগী মোকলেসুর রহমান বলেন, ১০ বছর ধরে সেচের পানির জন্য অতিরিক্ত টাকা দিয়ে আসছেন। এখন বিরক্ত হয়ে বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। এরপরও কোনো বিচার পাননি।
এ বিষয়ে মো. আকতারুজ্জামান বলেন, তিনি সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেওয়ার পর দেখেন গ্রামে কোনো গভীর নলকূপ নেই। পরে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে নলকূপটি স্থাপন করেন। কৃষকেরা অংশীদারত্বের টাকা দিতে রাজি না হলে তিনি বিএমডিএকে জানান। সে সময় তাঁরা টাকা দিয়ে দিতে পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘পরে আপনি টাকাটা ধীরে ধীরে তুলে নেবেন।’ সেই পরামর্শেই সেচের পানি বাবদ প্রিপেইড কার্ডের অতিরিক্ত কিছু টাকা তিনি নিচ্ছেন। জোর করে কিছু নিচ্ছেন না।
বিএমডিএ ঠাকুরগাঁও কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, অভিযোগটি যাচাই করে সত্যতা পাওয়া গেছে। নলকূপটি সুষ্ঠুভাবে চালানোর জন্য সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ওই অপারেটরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এগ্রোটেক
কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তারা এক সঙ্গে কাজ করতে রাজি
লেখক
প্রথম আলোডাচ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে দুই দেশের বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা একসঙ্গে কাজ করতে রাজি হয়েছেন।
গতকাল সোমবার নেদারল্যান্ডসের রাজধানী হেগে অনুষ্ঠিত কৃষি খাতের ব্যবসাবিষয়ক এক সম্মেলনে দুই দেশের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা সহযোগিতার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।
নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম রিয়াজ হামিদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত এগ্রি বিজনেস কনক্লেভে বাংলাদেশের প্রায় ৪০জন উদ্যোক্তা ডাচ কৃষি খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি প্রযুক্তি সহযোগিতা ও ব্যবসায়িক সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। দিনব্যাপী আয়োজিত অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেছে ওয়েগেনিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়।
আলোচনায় বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা প্রযুক্তি কিনতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দিলে নেদারল্যান্ডসের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা প্রযুক্তি সহযোগিতা দিতে রাজি থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
রিয়াজ হামিদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে ডাচরা প্রস্তুত এবং বাংলাদেশি উদ্যোক্তারাও তাদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। এ ছাড়া ডাচ সরকার ইতিমধ্যে বাংলাদেশের বীজ, পশু খাদ্য, পোলট্রি, হর্টিকালচার ও এ্যাকুয়াকালচার বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম সম্পাদন করেছে, যা ওই দেশের বেসরকারি খাতকে আরও উৎসাহিত করেছে।
আলোচনায় কৃষি সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করতে তৈরি আছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্কয়ার, ইস্পাহানি এগ্রো, একে খান অ্যান্ড কোম্পানি, প্যারাগন গ্রুপ, এসিআই, জেমকন গ্রুপসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তিনি জানান, মঙ্গলবার বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা ডাচ প্রযুক্তির প্রয়োগ সরেজমিনে দেখতে যাবেন।
বাংলাদেশের সঙ্গে নেদারল্যান্ডসের পোল্ট্রিখাতে সহযোগিতার আলোচনা অনেকটা এগিয়েছে উল্লেখ করে মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, দুই দেশের মধ্যে মৎস্য, পশুপালন ও হর্টিকালচারে সহযোগিতার বিপুল সম্ভাবনা আছে।
কনক্লেভ আয়োজনে প্রথমবারের মতো দূতাবাসের সঙ্গে অংশীদার হয়েছে নেদারল্যান্ডসের কৃষি মন্ত্রণালয়, নেদারল্যান্ডস এন্টারপ্রাইজ এজেন্সি, নেদারল্যান্ডস ফুড পার্টনারশিপ, ডাচ-গ্রিন-হাইজডেল্টা, লারিভ ইন্টারন্যাশনাল, স্টান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ।
কৃষিজাত পণ্য রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থানকারী নেদারল্যান্ডসের আয়তন বাংলাদেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের কম। ২০২১-এ কৃষিপণ্য ও খাদ্য রপ্তানি করে নেদারল্যান্ডস ১১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি আয় করেছে।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন