আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

এগ্রোবিজ

চায়ের সাম্রাজ্যে এখন দেশীয়দের আধিপত্য

উপমহাদেশে চা চাষের শুরু ব্রিটিশদের হাতে। বাজার তৈরিতে তারা শুরুতে বিনা পয়সায় চা তুলে দিয়েছিল মানুষের মুখে। চাষ, বিপণন, রপ্তানি ও বাগানের মালিকানা—সবকিছুতেই ছিল তারা। একসময় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পতন হলেও চায়ের বাজারে আধিপত্য ঠিকই ধরে রেখেছিল। সেই আধিপত্যের গল্প এখন নতুন করে লেখা হচ্ছে দেশি শিল্প গ্রুপের হাত ধরে।

দুই দশকে ব্রিটিশ কোম্পানি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন বাগান ইজারা নিয়ে বিনিয়োগ করেছে দেশীয় শিল্প গ্রুপগুলো। এই তালিকায় আছে ১৮টি শিল্প গ্রুপ। আভিজাত্য ও অবকাশযাপনের কেন্দ্র হিসেবে না দেখে তাদের সিংহভাগই বাগান সংস্কার ও যন্ত্রপাতি আধুনিকায়নে বিনিয়োগ করেছে। তাতে কয়েক বছরে চায়ের উৎপাদন প্রত্যাশা ছাড়িয়েছে।

চা বোর্ডও দুই দশকে নতুন নতুন প্রকল্প নিয়েছে। চা চাষের আওতা বাড়াতে তদারকি বাড়িয়েছে। ক্ষুদ্র চাষি ও নতুন উদ্যোক্তাদের চা চাষে উদ্বুদ্ধ করেছে। তাতে দেড় শ বছরের বেশি সময় ধরে চা উৎপাদনের কেন্দ্রবিন্দু সিলেট–চট্টগ্রাম ছাড়িয়ে চা চাষের বিস্তার ঘটেছে উত্তরাঞ্চল ও পার্বত্য জেলায়।

চা উৎপাদনের এই সাফল্য জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার কয়েক বছর আগের অনুমানও ভেঙে দিয়েছে। সংস্থার একটি কমিটির আভাস ছিল, ২০২৭ সালে বাংলাদেশে চায়ের উৎপাদন দাঁড়াবে ৯ কোটি ৬৮ লাখ কেজিতে। গত বছরই দেশে চায়ের উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ৯ কোটি ৬০ লাখ কেজিতে। এই সাফল্য এসেছে মূলত দেশীয় বড় গ্রুপের হাতে।

শুধু ব্ল্যাক টি উৎপাদনে আটকে না থেকে বৈচিত্র্যপূর্ণ চা উৎপাদনে নজর দিতে হবে। একই সঙ্গে চা–শিল্পের শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে ও দক্ষতা বাড়াতে হবে, যেটি চায়ের উৎপাদনের স্বার্থেই জরুরি।

চা উৎপাদনের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, দুই দশক আগে ২০০০ সালে স্টারলিং কোম্পানি হিসেবে পরিচিত ইউরোপিয়ান কোম্পানিগুলোর হাত ধরে উৎপাদিত হয় মোট উৎপাদনের ৪৮ শতাংশ চা। গত বছর তা কমে দাঁড়ায় প্রায় ১৯ শতাংশ। আর ধারাবাহিকভাবে বেড়ে দেশীয় কোম্পানিগুলোর হাতে এখন উৎপাদিত হচ্ছে ৮১ শতাংশ চা।

চা বোর্ডও দুই দশকে নতুন নতুন প্রকল্প নিয়েছে। চা চাষের আওতা বাড়াতে তদারকি বাড়িয়েছে। ক্ষুদ্র চাষি ও নতুন উদ্যোক্তাদের চা চাষে উদ্বুদ্ধ করেছে। তাতে দেড় শ বছরের বেশি সময় ধরে চা উৎপাদনের কেন্দ্রবিন্দু সিলেট–চট্টগ্রাম ছাড়িয়ে চা চাষের বিস্তার ঘটেছে উত্তরাঞ্চল ও পার্বত্য জেলায়।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতির ইমেরিটাস অধ্যাপক ও সাবেক উপাচার্য এম এ সাত্তার মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, চায়ে উৎপাদন ও উৎকর্ষ বাড়াতে বিদেশি উদ্যোক্তাদের যে বিনিয়োগ দরকার ছিল, শেষ দিকে সেটি তারা করেনি। দেশীয় শিল্প গ্রুপগুলো চা চাষকে অর্থকরী ব্যবসা হিসেবে নিয়ে বিনিয়োগ করেছে। সনাতন পণ্যের মধ্যে আটকে না থেকে চা খাতে বিনিয়োগ অবশ্যই ইতিবাচক দিক। এখন যেটি প্রয়োজন, তা হলো পরিমাণ বৃদ্ধির সঙ্গে চায়ের গুণগত মান বাড়াতে বিনিয়োগ করতে হবে। শুধু ব্ল্যাক টি উৎপাদনে আটকে না থেকে বৈচিত্র্যপূর্ণ চা উৎপাদনে নজর দিতে হবে। একই সঙ্গে চা–শিল্পের শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে ও দক্ষতা বাড়াতে হবে, যেটি চায়ের উৎপাদনের স্বার্থেই জরুরি।বিজ্ঞাপন

পরিবর্তনের হাওয়া

দুই দশক আগে এই পরিবর্তন শুরু হলেও তাতে গতি পায় যুক্তরাজ্যের জেমস ফিনলে লিমিটেডের চা–বাগান হস্তান্তরের ঘটনার পর। যুক্তরাজ্যে নিবন্ধিত সোয়ার গ্রুপ ফিনলে লিমিটেডকে অধিগ্রহণ করে। তারা বাংলাদেশের ব্যবসায় মুনাফা না দেখে ২০০৫ সালে বিক্রির প্রক্রিয়া শুরু করে। ২০০৬ সালের মার্চে ব্রিটিশ এই কোম্পানির হাতে থাকা ৩৯ হাজার ১১২ একর বাগানের সব শেয়ার আনুষ্ঠানিকভাবে কিনে নেয় ছয়টি গ্রুপ ও দুই ব্যক্তি। ছয়টি গ্রুপ হলো ইস্পাহানি, উত্তরা গ্রুপ (উত্তরা মোটরস), পেডরোলো, ইস্টকোস্ট, এবিসি গ্রুপ এবং এমজিএইচ গ্রুপ। এর মধ্যে শেষ তিনটি প্রথমবার এই খাতে বিনিয়োগ করেছে।

ফিনলে ছাড়াও গত দুই দশকে চা–বাগান ইজারা নিয়ে যুক্ত হয়েছে এ কে খান, আকিজ, স্কয়ার, সিটি, টিকে, ওরিয়ন, কাজী অ্যান্ড কাজী (জেমকন), ইউনাইটেড গ্রুপ, মোস্তফা গ্রুপ এবং প্যারাগন গ্রুপের মতো শিল্প গ্রুপ। এ ছাড়া বৈশ্বিক পারফিউম ব্র্যান্ড আল হারামাইন পারফিউমস গ্রুপ, পোশাক খাতের প্রতিষ্ঠান হা–মীম ও ভিয়েলাটেক্স গ্রুপও আছে এই তালিকায়। এ ছাড়া বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘ব্র্যাক’ও বিনিয়োগ করেছে চা খাতে।

চা খাতে বিনিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে ফিনলে টি কোম্পানির চেয়ারম্যান আজম জে চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, সে সময় চায়ের চাহিদা বাড়লেও উৎপাদন সেভাবে বাড়ছিল না। তাতে চায়ের দামও নাগালের বাইরে যাওয়ার শঙ্কা ছিল। পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে তখন চা খাতে বিনিয়োগ করেছি। আগেকার দিনের মতো অবকাশযাপনের কেন্দ্র হিসেবে না রেখে শিল্প হিসেবে এই খাতে বিনিয়োগ হয়েছে। বাগান সংস্কার, যন্ত্রপাতি আধুনিকায়ন ও স্কুল, হাসপাতাল সংস্কারসহ শ্রমিকের জীবনমান উন্নয়নের জন্যও বিনিয়োগ শুরু হয়েছে। নতুন যেসব শিল্প গ্রুপ এসেছে, সবাই কমবেশি বিনিয়োগ করায় চা খাতে বাংলাদেশ সফলতা দেখিয়েছে।

বিশ্বব্যাংক গ্রুপের ইন্টরন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশনের এ বছর আয়ের দিক থেকে শীর্ষ ২৩ কোম্পানির তালিকা প্রকাশ করেছে। এই তালিকার শীর্ষ ১০টি গ্রুপের ৭টিরই ব্যবসা রয়েছে চা খাতে, যারা গত দুই দশকে যুক্ত হয়েছে।

চা–বাগান না থাকলেও লাইসেন্স নিয়ে চা বিপণনে যুক্ত হয়েছে আবুল খায়ের, মেঘনা, পারটেক্স স্টার ও এসিআই গ্রুপ। শুধু যুক্ত নয়, চা বিপণনে এখন আবুল খায়ের দ্বিতীয় এবং মেঘনা তৃতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে।

দেশে অনেক খাতে নীতি দ্রুত পরিবর্তন হয়। সে তুলনায় চা খাতে স্থিতিশীলতা আছে। এমনিতেই নতুন বিনিয়োগের খাতও সীমিত। মূলত বাজার বড় হতে থাকায় এই খাতে বিনিয়োগ করেছি। কারণ, চা–বাগানে প্রতি মুহূর্তে মূল্য সংযোজিত হয়। একবারে মুনাফা বেশি না হলেও ধারাবাহিক মুনাফার সুযোগ রয়েছে।

নাদের খান, পেডরোলো গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক

দেশীয়দের হাতে সাফল্য

স্কটল্যান্ডে নিবন্ধিত কোম্পানি জেমস ফিনলে এ দেশ থেকে চা ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার সময় তাদের সাতটি বড় বাগানে (কোম্পানির হিসেবে ১৬টি বাগান) চায়ের উৎপাদন ছিল ৯৪ লাখ কেজি। দেশীয় উদ্যোক্তাদের হাতে আসার পর বেড়ে গত বছর তা দাঁড়ায় ১ কোটি ৬৮ লাখ কেজিতে।

ফিনলের উদ্যোক্তারা জানান, চা–বাগানের মালিকানা তাঁদের হাতে আসার পর মুনাফার বড় অংশই বাগানে বিনিয়োগ করেছেন তাঁরা। তাতে উৎপাদনও বেড়েছে।

চা চাষে সাফল্যের কাহিনি আছে পানির পাম্প বাজারজাতকারী গ্রুপ পেডরোলোর হাতে। ২০০৩ সালে চট্টগ্রামের হালদা ভ্যালি বাগানটি ইজারা নেওয়ার সময় ছিল ঝোপঝাড়। উৎপাদন ছিল না এক কেজিও। পরিত্যক্ত বাগানটি ইজারা নেওয়াসহ এ পর্যন্ত ১২০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে গ্রুপটি। এখন বাগানটিতে উৎপাদন হচ্ছে বছরে ১০ লাখ কেজি চা। ২০১৭ সালে হেক্টরপ্রতি উৎপাদনে শীর্ষস্থানও দখল করে বাগানটি। হালদাসহ গ্রুপটির হাতে দুটি বাগান আছে।

পেডরোলো গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাদের খান প্রথম আলোকে বলেন, দেশে অনেক খাতে নীতি দ্রুত পরিবর্তন হয়। সে তুলনায় চা খাতে স্থিতিশীলতা আছে। এমনিতেই নতুন বিনিয়োগের খাতও সীমিত। মূলত বাজার বড় হতে থাকায় এই খাতে বিনিয়োগ করেছি। কারণ, চা–বাগানে প্রতি মুহূর্তে মূল্য সংযোজিত হয়। একবারে মুনাফা বেশি না হলেও ধারাবাহিক মুনাফার সুযোগ রয়েছে।

জেমকন গ্রুপের সাফল্য আছে চা চাষে। ২০০০ সালে হিমালয়ের পাদদেশে দার্জিলিংয়ের অদূরে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় কাজী অ্যান্ড কাজী চা–বাগানে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করে গ্রুপটি। অর্গানিক চা–বাগান হিসেবে বৈশ্বিক স্বীকৃতিও পায় এ বাগানটি। যুক্তরাষ্ট্র আর যুক্তরাজ্যের বাজারে এই বাগানের চা শোভা পাচ্ছে। গত বছর বাগানটিতে প্রায় পাঁচ লাখ কেজি চা উৎপাদিত হয়।বিজ্ঞাপন

পথ দেখাচ্ছে পুরোনোরা

পারস্যের ইস্পাহান থেকে বোম্বে, কলকাতা থেকে ঢাকা হয়ে চট্টগ্রামে থিতু হওয়া ইস্পাহানি গ্রুপের পারিবারিক ব্যবসা ২০০ বছরের। আসাম টি কোম্পানির সদস্য ছিল ইস্পাহানি পরিবার। পাকিস্তান আমলেও এই কোম্পানি চায়ের বাজারে শীর্ষস্থানে ছিল। ইস্পাহানির চারটি বাগান ছাড়াও ফিনলে টি কোম্পানিতে অংশীদারি রয়েছে।

ট্রান্সকম গ্রুপের ভিত গড়ে উঠেছিল চা ব্যবসা দিয়ে। গ্রুপটির প্রয়াত চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানের দাদা খান বাহাদুর ওয়ালিউর রহমান ১৮৮৫ সালে আসামে চা–বাগান শুরু করেন। দেশভাগের পর সিলেটে নতুন করে চা–বাগান করেন পরিবারের সদস্যরা। ট্রান্সকম গ্রুপের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে এম রহমান টি কোম্পানি, মণিপুর টি কোম্পানি এবং মেরিনা টি কোম্পানির মাধ্যমে চায়ের ব্যবসায় যুক্ত আছে গ্রুপটি।

দেশীয় কোম্পানিগুলোর মধ্যে পুরোনো আরেকটি এম আহমেদ গ্রুপ। ১৯২১ সালে লন্ডনের অক্টাভিয়াস স্টিল অ্যান্ড কোম্পানি থেকে মৌলভীবাজারের চান্দবাগ চা–বাগান ইজারা নিয়ে চা চাষে যুক্ত হয় গ্রুপটি। বর্তমানে গ্রুপের আটটি বাগান রয়েছে। ম্যাগনোলিয়া ব্র্যান্ডের চা বাজারজাত করছে তারা।

এম আহমেদ টি অ্যান্ড ল্যান্ডস কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ব্যাংক এশিয়ার ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাফওয়ান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘চা ব্যবসায় এখন ৯৯ বছর চলছে। আটটি বাগানে এখন বছরে ৩২ লাখ কেজি চা উৎপাদিত হচ্ছে।’

প্রায় ৯৬ বছর আগে নিবন্ধিত কেদারপুর টি কোম্পানি লিমিটেডের মালিকানায় ১৯৬০ সালে যুক্ত হন দৈনিক সংবাদ পত্রিকার প্রয়াত প্রধান সম্পাদক আহমেদুল কবির। পর্যায়ক্রমে পরিত্যক্ত তিনটি বাগান কিনে ফলনে সাফল্য দেখায় দেশীয় কোম্পানিটি। পরে ব্রিটিশ অক্টাভিয়াস স্টিল কোম্পানি থেকে সাতগাঁও বাগানও যুক্ত হয় তাদের বহরে।

কোম্পানির বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক লায়লা রহমান কবিরের হাত ধরে মধুপুর বাগান সর্বোচ্চ গুণগত মানের চা উৎপাদনের জন্য ২০১৮ সালে পুরস্কার পেয়েছে। এখনো নিলামে সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হয় এই বাগানের চা।

টিকে আছে তিন ব্রিটিশ কোম্পানি

স্টারলিং কোম্পানি হিসেবে পরিচিত ইউরোপিয়ান কোম্পানিগুলোর মধ্যে ব্যবসা ধরে রেখেছে ডানকান ব্রাদার্স বাংলাদেশ লিমিটেড। চা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ডানকানের হাতে আছে ১৬টি বাগান। জমির মোট পরিমাণ ৪৫ হাজার ৭৬৮ একর। এ ছাড়া দ্য নিউ সিলেট টি কোম্পানি এবং দেউন্ডি টি কোম্পানির পাঁচটি বাগান আছে এই তালিকায়। এই তিন কোম্পানিই যুক্তরাজ্যে নিবন্ধিত।

চা বোর্ডের তথ্যে দেখা যায়, ২০০৬ সালে ফিনলের বাগান দেশীয় শিল্প গ্রুপের হাতে আসার পর থেকে এ পর্যন্ত উৎপাদন বেড়েছে ৭৯ শতাংশ। একই সময়ে ডানকানের বাগানের উৎপাদন বেড়েছে ১৮ শতাংশ। দেউন্ডি টি কোম্পানির উৎপাদন বেড়েছে ৩৬ শতাংশ।

একই সময়ে দেশীয় শিল্প গ্রুপের উৎপাদন তুলনা করে দেখা যায়, ইস্পাহানির চার বাগানে ১১৪ শতাংশ, ট্রান্সকমের তিন বাগানে ৫২ শতাংশ এবং কেদারপুর টি কোম্পানির চার বাগানে ৫০ শতাংশ উৎপাদন বেড়েছে, যা ব্রিটিশ কোম্পানির উৎপাদন হারের চেয়ে বেশি।

বাজার বড় হচ্ছে

ভারতীয় লেখক ও সাবেক মন্ত্রী শশী থারুর ইনগ্লোরিয়াস অ্যাম্পায়ার বইতে জানাচ্ছেন, উপমহাদেশে চা চাষ শুরুর প্রথম এক শ বছরে এখানকার উৎপাদিত চা নেওয়া হতো ব্রিটেনে, যেখানে চাহিদা বেশি। ১৯৩০ সালের মহামন্দায় ব্রিটেনে চায়ের চাহিদার পতন হয়। ইতিহাস বলছে, ইউরোপিয়ান কোম্পানিগুলো তখন বিনা পয়সায় মানুষের মুখে চা তুলে উপমহাদেশেও বাজারজাত শুরু করে।

তবে বিনা পয়সায় চা খেয়ে ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে এ দেশের মানুষও। গত দুই দশকে চা ভোগের হার দ্রুতগতিতে বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাজারের আকার ছাড়িয়েছে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা। এই বাজার ধরতে যুক্ত হয়েছে দেশীয় শিল্প গ্রুপও। উদ্যোক্তাদের আশা, বাজার বড় হতে থাকায় উৎপাদনের পরিমাণে ও পণ্যের বৈচিত্র্যে আরও সাফল্য যুক্ত হবে এদেশীয় শিল্প গ্রুপের হাত ধরে।

বিজ্ঞাপন
মন্তব্য করুন

অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন

Leave a Reply

এগ্রোবিজ

যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশে হতে পারে সারের সংকট

সারের সংকট
সারের সংকট
সারের সংকট

চলতি বোরো মৌসুমে সার কিনতে কৃষকদের সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা করে বেশি দিতে হয়েছে। আর সরকারকেও সার বাবদ ভর্তুকি দিতে হচ্ছে বাজেটে বরাদ্দের তিন গুণের বেশি—প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশ এখন মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) সার আমদানি নিয়ে বিপাকে পড়েছে।

ধান, আলু ও সবজি চাষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এমওপি সারের ৬০ শতাংশ আনা হতো রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে। ওই দুই দেশ নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়ায় এখন বাংলাদেশকে এমওপি কিনতে হচ্ছে কানাডা থেকে। বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়া ও আমদানিতে অনিশ্চয়তার কারণে বাংলাদেশে সারের সংকট হতে পারে। ভর্তুকির চাপ সামলাতে বাংলাদেশকে সব ধরনের সারের খুচরা মূল্য বাড়াতে হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিবিষয়ক সংস্থা ইউএসডিএর চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ‘বাংলাদেশে সার সরবরাহ ও ব্যবহারে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের এমওপি সারের ২০ শতাংশ সরবরাহ কমানো হলে সামনের বোরো মৌসুমে ধান, গম ও রবি মৌসুমের অন্যান্য ফসলের উৎপাদন ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কমতে পারে। এতে বাংলাদেশের খাদ্য উৎপাদন ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে।

এমনিতেই এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমাদের ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সারের কারণে নতুন করে যাতে আর সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।

এ এম এম শওকত আলী, সাবেক কৃষিসচিব

তবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, দেশে চলতি বোরো মৌসুমে নতুন করে আর সারের দরকার হবে না। সামনে আলুর মৌসুমে ইউরিয়া, এমওপিসহ অন্যান্য সারের চাহিদা বাড়বে। ওই সময়ের জন্য সার সরবরাহ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ কানাডা ও মধ্যপ্রাচ্যের সার সরবরাহকারী দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে।

জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কানাডা থেকে মোট আট লাখ টন এমওপি সার আমদানির উদ্যোগ নিয়েছি। এ ব্যাপারে ওই দেশের সঙ্গে আমাদের সমঝোতা স্মারক হয়েছে। ফলে এই সার নিয়ে সরকারের কোনো দুশ্চিন্তা নেই। তবে সার বাবদ সরকারের বিপুল পরিমাণে ভর্তুকি বাড়ছে। এই চাপ নিয়েও সরকার ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ওই ভর্তুকি দিয়ে যাবে।’

কমানো হয়েছে চাহিদা

বাংলাদেশে চলতি অর্থবছরে ৬৯ লাখ টন রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয়েছে। এর মধ্যে ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি—এই চার ধরনের সার ব্যবহার হয় ৫৭ লাখ টন। আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের ওই চার ধরনের সারের চাহিদা কমিয়ে ৫৫ লাখ ৫০ হাজার টনে নামিয়ে আনা হয়েছে।

দেশে প্রয়োজনীয় সারের ৮০ শতাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এর মধ্যে এমওপি সারের বড় অংশ আসে রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে।

প্রসঙ্গত, ওই চারটি প্রধান সার কৃষকদের কাছে বিক্রির ক্ষেত্রে সরকার ভর্তুকি দিয়ে থাকে। চলতি অর্থবছরে সরকার প্রাথমিকভাবে সারে ভর্তুকি বাবদ ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে গত ছয় মাসে সারের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। বেশির ভাগ সারের দাম তিন থেকে চার গুণ বেড়ে যাওয়ায় সরকারকে ভর্তুকির পরিমাণ ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা করতে হয়। কিন্তু অর্থবছরের শেষের দিকে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে হিসাব করে দেখা হয়েছে, ভর্তুকির পরিমাণ এবার বেড়ে কমপক্ষে ৩০ হাজার কোটি টাকা গিয়ে দাঁড়াবে।

জিপসাম, জিংক সালফেট ও অ্যামোনিয়াম সালফেট ও ম্যাগনেসিয়াম সালফেট সারে সরকার কোনো ভর্তুকি দেয় না। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কিনে ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কাছে তা বিক্রি করে থাকেন। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষককেও বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে।

সাবেক কৃষিসচিব এ এম এম শওকত আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমনিতেই এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমাদের ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সারের কারণে নতুন করে যাতে আর সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। আর সরকারের অন্যান্য খাতের ভর্তুকি কমিয়ে প্রয়োজনে সারে ভর্তুকি বাড়াতে হবে, যাতে সারের দাম কম থাকে। কারণ, কৃষকের হাতে এখন টাকা কম। বিশ্ববাজার থেকেও খাদ্য আমদানি করা সামনের দিনে আরও কঠিন হতে পারে। ফলে দেশের উৎপাদন ঠিক রাখতে সারের দাম ও জোগান ঠিক রাখা উচিত।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

বিদেশ থেকে খালি হাতে ফিরে ড্রাগন চাষে সাফল্য

বাগানে চাষ করা ড্রাগন হাতে মিরাজুল ইসলাম
বাগানে চাষ করা ড্রাগন হাতে মিরাজুল ইসলাম

মিরাজুল ইসলাম (৩৩)। ১০ বছর সৌদি আরবে ছিলেন। আকামা জটিলতায় খালি হাতে দেশে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। এক বছর বেকার থাকার পর ইউটিউবে পতিত জমিতে ড্রাগন চাষের ভিডিও দেখেন। বাবার কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে নেমে পড়েন ড্রাগন চাষে। দেড় বছরের ব্যবধানে এখন উপজেলার সবচেয়ে বড় ড্রাগন বাগান তাঁর। এ বছর খরচ বাদে আট থেকে নয় লাখ টাকা লাভের আশা করছেন তিনি।

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার ইন্দুরকানি গ্রামের বাসিন্দা মিরাজুল। উপজেলার টগরা গ্রামে দেড় একর জমিতে তিনি ড্রাগনের বাগান তৈরি করেছেন। তাঁর বাগানে এখন সাড়ে তিন হাজার ড্রাগন ফলের গাছ আছে।

মিরাজুল ইসলাম বলেন, শ্রমিক হিসেবে ১০ বছর সৌদিতে কাজ করে ২০১৯ সালে দেশে ফেরেন তিনি। আকামা সমস্যার কারণে শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। কিছু একটা করবেন বলে ভাবছিলেন। একদিন ইউটিউবে ড্রাগন চাষের ভিডিও দেখতে পান। সেই থেকে ড্রাগন চাষে আগ্রহ জন্মে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে দেড় একর পতিত জমি ড্রাগন চাষের উপযোগী করেন। গাজীপুর থেকে ৬০ টাকা দরে ৬০০ চারা নিয়ে আসেন। বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে শুরু করেন চাষাবাদ। পরের বছর জুনে ফল পাওয়া শুরু করেন।

ড্রাগনের বাগান করতে মিরাজুলের খরচ হয়েছিল ছয় থেকে সাত লাখ টাকা। ইতিমধ্যে ফল বিক্রি করে তাঁর খরচ উঠে গেছে। সাধারণত মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত গাছে ফল আসে। বছরে ছয় থেকে সাতবার পাকা ড্রাগন সংগ্রহ করা যায়। এখন পরিপক্ব ও রোগমুক্ত গাছের শাখা কেটে নিজেই চারা তৈরি করেন। ড্রাগন চাষের পাশাপাশি বাগানে চুইঝাল, এলাচ, চায়না লেবুসহ মৌসুমি সবজি চাষ করেন। এ ছাড়া ড্রাগনের চারাও উৎপাদন করে বিক্রি করেন তিনি।

মিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বাগানের বেশির ভাগ গাছে এ বছর ফল ধরেছে। গত মঙ্গলবার বাগান থেকে দেড় টন ফল সংগ্রহ করেছেন। ২৫০ টাকা কেজি দরে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পাইকারদের কাছে বিক্রি করেছেন। স্থানীয় বাজারে ৩০০ টাকা কেজি দরে ড্রাগন বিক্রি হয়। নভেম্বর পর্যন্ত আরও পাঁচ–ছয়বার বাগান থেকে ফল তোলা যাবে। আশা করছেন, খরচ বাদে এবার আট থেকে নয় লাখ টাকা লাভ থাকবে।

মিরাজুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমার বাগান থেকে চারা নিয়ে অনেকে বাড়িতে ও ছাদে ছোট পরিসরে ড্রাগনের বাগান করেছেন। আমি এ পর্যন্ত ৪০ টাকায় দেড় হাজার চারা বিক্রি করেছি।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পূর্ণ বয়সের একটি ড্রাগনের চারা রোপণের পর ২৫ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। এর মৃত্যুঝুঁকি নেই বললেই চলে। তবে কয়েক দিন পরপর সেচ দিতে হয়। বৃষ্টির পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হয়। ড্রাগন ফল চাষে রাসায়নিক সার দিতে হয় না।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইশরাতুন্নেছা বলেন, মিরাজুল ইসলামকে ড্রাগন চাষে নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে আসছে কৃষি বিভাগ। উপজেলায় তাঁর বাগানটি সবচেয়ে বড়। তিনি নিরলস পরিশ্রম করে ছোট থেকে বাগানটি বড় করেছেন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

নাসিরনগরে বন্যায় তলিয়ে গেল কৃষকের বাদামখেত

নাসিরনগরের গোয়ালনগর ইউনিয়নে অতিবৃষ্টি ও আগাম বন্যায় তলিয়ে গেছে কৃষকদের বাদামখেত। আজ মঙ্গলবার ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রামে
নাসিরনগরের গোয়ালনগর ইউনিয়নে অতিবৃষ্টি ও আগাম বন্যায় তলিয়ে গেছে কৃষকদের বাদামখেত। আজ মঙ্গলবার ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রামে

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নে অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে কৃষকের প্রায় ৩০ হেক্টর বাদাম চাষের জমি। কয়েক দিন আগে উজানের পানিতে তাঁদের পাকা ধানের জমি তলিয়ে গিয়েছিল। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষকেরা বাদাম চাষ করেছিলেন। আবারও ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ার বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হলেন চাষিরা।

উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১১ এপ্রিল উপজেলায় শিলাবৃষ্টি এবং ১৪ থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত উজানের পানিতে কৃষকের পাকা ধানের জমি তলিয়ে যায়। কৃষকেরা সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ২০০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করেছিলেন। এর মধ্যে উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নে ৩০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করা হয়। উপজেলায় এবার প্রায় ৫০ হাজার মণ বাদাম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। কিন্তু উজানের পানিতে হঠাৎ বন্যায় সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

গোয়ালনগর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আজহারুল হক বলেন, ‘নাসিরনগর উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাদাম চাষ করা হয় আমাদের ইউনিয়নে। কিন্তু এ বছর আগাম বন্যার কারণে কৃষকেরা তাঁদের ফসল ঘরে তুলতে পারেননি। তাঁদের সব ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।’

ওই এলাকার বাদামচাষি মেরাজ মিয়া বলেন, তিনি ছয় বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করেন। দু-এক দিনের মধ্যে বাদাম তুলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু খেতে গিয়ে দেখেন সব বাদাম পানির নিচে। এখন এই বাদাম তুলে কোনো লাভ নেই। এগুলো গরুও খাবে না।

মো. রজব আলী নামের এক কৃষক বলেন, ‘আমাদের ইউনিয়নের জামারবালি, সোনাতলা ও মাইজখোলা গ্রামে বাদামখেত আছে। গত তিন দিনে পাঁচ-ছয় ফুট পানি বাড়ায় সব তলিয়ে গেছে। এখন বাদাম তুলতে কাজের লোকও পাওয়া যাচ্ছে না।’

কৃষক ফতু মিয়া বলেন, গোয়ালনগর ইউনিয়নের বাদাম চাষের জমিগুলো হঠাৎ পানি আসায় তলিয়ে গেছে। ফসল তলিয়ে তাঁদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেল। কয়েক দিন আগেও পাকা ধান পানির নিচে তলিয়ে গিয়েছিল। কৃষকদের দাবি, গোয়ালনগরে বাদাম চাষের জমি তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকদের প্রায় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আবু সাইদ প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলার কয়েকটি চরাঞ্চলে বাদাম চাষ করা হয়। চরাঞ্চলের উঁচু জমিতে প্রথমে আলু চাষের পর বাদাম চাষ করা হয়। আগাম বন্যার কারণে নিচু এলাকার কিছু বাদামখেত পানিতে তলিয়ে গেছে।

আবু সাইদ আরও বলেন, ১৫-২০ দিন আগে উপজেলার প্রায় সব বাদাম উঠে গেছে। গোয়ালনগর ইউনিয়নে ৩০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করা হয়েছিল। এর মধ্যে এক হেক্টর জমির বাদাম তলিয়ে গেছে। সব মিলিয়ে ৭০ হাজার টাকার মতো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সিলেটে বন্যা হওয়ায় এমনটি হয়েছে বলে তিনি জানান।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

পানি দিতে অতিরিক্ত টাকা

পানি দিতে অতিরিক্ত টাকা
পানি দিতে অতিরিক্ত টাকা

ঠাকুরগাঁওয়ে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) একটি গভীর নলকূপের সেচের পানি সরবরাহে কৃষকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হচ্ছে। ভুক্তভোগী কৃষকদের কাছ থেকে পাওয়া এমন অভিযোগের তদন্ত করে সত্যতা পেয়েছে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষ। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বড় বালিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে।

ভুক্তভোগী কৃষকেরা বলছেন, সেচের পানির জন্য প্রিপেইড কার্ডের বাইরে কোনো টাকা দেওয়ার নিয়ম নেই। কিন্তু বিএমডিএর ১০৮ নম্বর গভীর নলকূপের অপারেটরের দায়িত্বে থাকা বিউটি বেগমের স্বামী আকতারুজ্জামান বোরো ধান চাষের জন্য প্রতি বিঘার জন্য ১ হাজার ২০০ টাকা ও অন্য মৌসুমে ৩০০ টাকা নেন। ১০ বছর ধরে তিনি এভাবেই বাণিজ্য করে আসছেন।

সম্প্রতি রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে বিএমডিএর গভীর নলকূপ থেকে খেতে সেচের পানি পেতে হয়রানির শিকার দুই কৃষকের মৃত্যুর ঘটনা দেশজুড়ে আলোচিত হয়।

ঠাকুরগাঁও জেলায় বিএমডিএর ১ হাজার ৪৩১টি গভীর নলকূপ রয়েছে। এর মধ্যে সচল ১ হাজার ৪১৮টি। সেচের আওতায় ৭৬ হাজার ৫০০ পরিবারের জমি রয়েছে ৫৩ হাজার ৫০০ হেক্টর।

* সেচের পানির জন্য প্রিপেইড কার্ডের বাইরে কোনো টাকা দেওয়ার নিয়ম নেই। * সেচের আওতায় ৭৬ হাজার ৫০০ পরিবারের জমি আছে। * কৃষকদের নলকূপের আবেদন পেলে যাচাই করে স্কিম তৈরি করা হয়।

বিএমডিএ সূত্রে জানা গেছে, কৃষকদের নলকূপের আবেদন পেলে যাচাই করে স্কিম তৈরি করা হয়। এরপর সমবায়ের ভিত্তিতে অংশীদারি ফি বাবদ এক লাখ টাকা জমা দিতে হয়। এই নলকূপ পরিচালনার জন্য বিএমডিএ একজন অপারেটর নিয়োগ দেন। প্রিপেইড মিটারিং পদ্ধতিতে কৃষকের নিজ নামে প্রিপেইড কার্ড থাকতে হয়। সেই কার্ড থেকে প্রতি ঘণ্টায় সেচের পানির জন্য ন্যূনতম ১১০ টাকা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কেটে নেওয়া হয়। এর বাইরে অতিরিক্ত কোনো টাকা দেওয়ার নিয়ম নেই।

বড় বালিয়া এলাকার কৃষকেরা জানান, ২০১১ সালের দিকে বড় বালিয়া মণ্ডলপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. আকতারুজ্জামান এলাকায় গভীর নলকূপ স্থাপনের উদ্যোগ নেন। ফি হিসেবে এক লাখ জমা দেওয়ার নিয়ম থাকলেও কোনো কৃষক সেটা দিতে এগিয়ে আসেননি। ফলে আকতারুজ্জামান, দাউদুল ইসলাম ও জোবায়দুর রহমান মিলে অংশীদারি ফি দেন। আকতারুজ্জামানের ৮০ শতাংশ টাকা থাকায় গভীর নলকূপের নিয়ন্ত্রণ তিনিই পান। অপারেটর হিসেবে নিয়োগ পান তাঁর স্ত্রী বিউটি বেগম। যদিও কৃষকেরা আকতারুজ্জামানকেই অপারেটর হিসেবে জানতেন।

সেচের পানি পেতে হয়রানির শিকার হয়ে সদর উপজেলার বড় বালিয়া এলাকার ৫০ জন কৃষক গত ১৭ এপ্রিল বিএমডিএ সহকারী প্রকৌশলীর কাছে অভিযোগ দেন। সেখানে গিয়ে কৃষক ও অপারেটরের সঙ্গে কথা বলে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়।

ভুক্তভোগী কৃষকেরা বলেন, ২০১২ সালে নলকূপটি চালু হলে আওতাধীন কৃষকের কাছ থেকে আকতারুজ্জামান সেচের পানির জন্য প্রিপেইড কার্ডের অতিরিক্ত টাকা আদায় শুরু করেন। আর সেই টাকা থেকে তিনি মাঝেমধ্যে অন্য দুই অংশীদারকে কিছু টাকা ভাগ দেন।

ভুক্তভোগী কৃষক মো. শাহজাহান আলী বলেন, গভীর নলকূপটির আওতায় তাঁর ১০ বিঘা জমি রয়েছে। কার্ডের বাইরে টাকা দেওয়ার নিয়ম না থাকলেও আকতারুজ্জামানকে প্রতি বিঘায় সেচের জন্য ১ হাজার ২০০ টাকা দিতে হয়। এই টাকা না দিলে তিনি পানি দেন না।

ওই নলকূপের আওতায় চার বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করছেন কৃষক মো. হেলাল। তিনি অতিরিক্ত টাকা না দেওয়ায় অপারেটর খেতে পানি দেননি। এতে জমি ফেটে যায়। পরে তিনি শ্যালো ইঞ্জিন দিয়ে জমিতে সেচ দিয়ে খেত রক্ষা করেছেন।

আরেক ভুক্তভোগী মোকলেসুর রহমান বলেন, ১০ বছর ধরে সেচের পানির জন্য অতিরিক্ত টাকা দিয়ে আসছেন। এখন বিরক্ত হয়ে বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। এরপরও কোনো বিচার পাননি।

এ বিষয়ে মো. আকতারুজ্জামান বলেন, তিনি সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেওয়ার পর দেখেন গ্রামে কোনো গভীর নলকূপ নেই। পরে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে নলকূপটি স্থাপন করেন। কৃষকেরা অংশীদারত্বের টাকা দিতে রাজি না হলে তিনি বিএমডিএকে জানান। সে সময় তাঁরা টাকা দিয়ে দিতে পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘পরে আপনি টাকাটা ধীরে ধীরে তুলে নেবেন।’ সেই পরামর্শেই সেচের পানি বাবদ প্রিপেইড কার্ডের অতিরিক্ত কিছু টাকা তিনি নিচ্ছেন। জোর করে কিছু নিচ্ছেন না।

বিএমডিএ ঠাকুরগাঁও কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, অভিযোগটি যাচাই করে সত্যতা পাওয়া গেছে। নলকূপটি সুষ্ঠুভাবে চালানোর জন্য সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ওই অপারেটরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোটেক

কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তারা এক সঙ্গে কাজ করতে রাজি

ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকেরাফাইল ছবি
ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকেরাফাইল ছবি

ডাচ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে দুই দেশের বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা একসঙ্গে কাজ করতে রাজি হয়েছেন।

গতকাল সোমবার নেদারল্যান্ডসের রাজধানী হেগে অনুষ্ঠিত কৃষি খাতের ব্যবসাবিষয়ক এক সম্মেলনে দুই দেশের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা সহযোগিতার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।

নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম রিয়াজ হামিদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত এগ্রি বিজনেস কনক্লেভে বাংলাদেশের প্রায় ৪০জন উদ্যোক্তা ডাচ কৃষি খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি প্রযুক্তি সহযোগিতা ও ব্যবসায়িক সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। দিনব্যাপী আয়োজিত অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেছে ওয়েগেনিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়।

আলোচনায় বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা প্রযুক্তি কিনতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দিলে নেদারল্যান্ডসের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা প্রযুক্তি সহযোগিতা দিতে রাজি থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।

রিয়াজ হামিদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে ডাচরা প্রস্তুত এবং বাংলাদেশি উদ্যোক্তারাও তাদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। এ ছাড়া ডাচ সরকার ইতিমধ্যে বাংলাদেশের বীজ, পশু খাদ্য, পোলট্রি, হর্টিকালচার ও এ্যাকুয়াকালচার বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম সম্পাদন করেছে, যা ওই দেশের বেসরকারি খাতকে আরও উৎসাহিত করেছে।

আলোচনায় কৃষি সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করতে তৈরি আছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্কয়ার, ইস্পাহানি এগ্রো, একে খান অ্যান্ড কোম্পানি, প্যারাগন গ্রুপ, এসিআই, জেমকন গ্রুপসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তিনি জানান, মঙ্গলবার বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা ডাচ প্রযুক্তির প্রয়োগ সরেজমিনে দেখতে যাবেন।

বাংলাদেশের সঙ্গে নেদারল্যান্ডসের পোল্ট্রিখাতে সহযোগিতার আলোচনা অনেকটা এগিয়েছে উল্লেখ করে মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, দুই দেশের মধ্যে মৎস্য, পশুপালন ও হর্টিকালচারে সহযোগিতার বিপুল সম্ভাবনা আছে।

কনক্লেভ আয়োজনে প্রথমবারের মতো দূতাবাসের সঙ্গে অংশীদার হয়েছে নেদারল্যান্ডসের কৃষি মন্ত্রণালয়, নেদারল্যান্ডস এন্টারপ্রাইজ এজেন্সি, নেদারল্যান্ডস ফুড পার্টনারশিপ, ডাচ-গ্রিন-হাইজডেল্টা, লারিভ ইন্টারন্যাশনাল, স্টান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ।

কৃষিজাত পণ্য রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থানকারী নেদারল্যান্ডসের আয়তন বাংলাদেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের কম। ২০২১-এ কৃষিপণ্য ও খাদ্য রপ্তানি করে নেদারল্যান্ডস ১১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি আয় করেছে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশক: শাইখ সিরাজ
© ২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। দা এগ্রো নিউজ, ফিশ এক্সপার্ট লিমিটেডের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। ৫১/এ/৩ পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থাপথ, ঢাকা -১২০৫
ফোন: ০১৭১২-৭৪২২১৭
ইমেইল: info@agronewstoday.com, theagronewsbd@gmail.com