খিচুড়ি খেতে বাঙালির কোনো উপলক্ষ প্রয়োজন হয় না। ঋতু নয় বরং খিচুড়ি খেতে আমাদের দরকার মুড। যেকোনো খিচুড়ি যেকোনো ঋতুতে খেতে বাঙালির জুড়ি মেলা ভার। সেটা যদি চাল ছাড়া খিচুড়ি হয় তবে স্বাদে বৈচিত্র্য এনে দিবে। শীতকালে ঠান্ডার সময় গরম গরম খিচুড়ি খেতে ভালো লাগবে ভোজনরসিকদের। রান্না করতে পারেন ভিন্ন স্বাদের দুটি রেসিপি।
ভুনা খিচুড়ি
উপকরণ
সাবু: ১ কাপ
মসুর: ডাল ১ কাপ
হাঁসের ডিম: ২ টা
মাঝারি পেঁয়াজ: ২ টা
রসুন: ৪ কোয়া
দারুচিনি: ১১/২ ইঞ্চি
ছোট এলাচ: ৫ টা
লবঙ্গ: ৫ টা
সাদা জিরা গুঁড়া: ১/২ চা চামচ
ধনে গুঁড়া: ১/২ চা চামচ
তেজপাতা: ৫ টা
গোটা শুকনা মরিচ: ২ টো
গোলমরিচ গুঁড়া: গোটা তিনেক
লবণ ও চিনি: স্বাদমতো
গরম মশলার গুঁড়া: ১/২ চা চামচের একটু কম
আদা বাটা: ১ ইঞ্চি
ঘি: ১/২ কাপ
কিশমিশ: ১ টেবিল চামচ
তৈরির পদ্ধতি
সাবু, ডাল পানি দিয়ে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে কাপড়ের ওপর একটু শুকিয়ে নিন। দুটা ডিম, ধনে গুঁড়া, জিরা গুঁড়া, হলুদ, আদা বাটা, গরম মশলা গুঁড়া দিয়ে ফেটিয়ে নিন। এবার সাবু ও ডালের সঙ্গে ডিম মিশিয়ে ভাল করে মাখুন। ১৫ মিনিট রাখার পরে কড়াইতে ঘি দিয়ে পেঁয়াজ কুচি ভেজে তুলে নিন। ওই ঘিয়ে আস্ত গরম মশলা, তেজপাতা, রসুন, কিশমিশ, সাবু-ডাল দিয়ে মাঝারি আঁচে ভাল করে ভেজে নিন। এর মধ্যে ৮ কাপ পানি দিন। লবণ, স্বাদমতো মিষ্টি, টুকরো আলু দিয়ে দিতে হবে মিশ্রণটি ফুটতে দিন। ফুটে উঠলে ভাল করে নেড়ে আঁচ কমিয়ে ঢাকা দিতে রাখুন। মাঝে মাঝে নেড়ে দিন। খিচুড়ি ফোটার সময় হবে শুকনা মরিচ দিন। সাবু-ডাল সিদ্ধ হলে পেঁয়াজ ভাজা খিচুড়িতে মিশিয়ে দিন। সামান্য ঘি ছড়িয়ে পরিবেশন করুন।
কিমা খিচুড়ি
উপকরণ
দালিয়া/গমের সুজি: ১ কাপ
মসুর ডাল: ১ কাপ
সবজি (পছন্দমতো) টুকরো করা: ২ কাপ
কিমা: ৫০০ গ্রাম
ভেজিটেব্ল অয়েল: ৩ বড় চামচ
গোটা জিরা: ১ চা চামচ
পেঁয়াজ (কুচি): ১ টা
আদা বাটা: ১ চা চামচ
রসুন বাটা: ২ চা চামচ
টমেটো (কুচি): ২ টো
ধনে গুঁড়া: ২ চা চামচ
জিরে গুঁড়া: ১ চা চামচ
হলুদ গুঁড়া: ২ চিমটে
গরম মশলা: ১ বড় চামচ
চিকেন স্টক কিউব: ২ টো
লবণ: স্বাদমতো
মরিচের গুঁড়া: ১ চা চামচ
তৈরির পদ্ধতি
দালিয়া/গমের সুচি ও চাল একসঙ্গে ভাল ভাবে ধুয়ে নিন। পানি ফেলে দিয়ে ২০ মিনিট দালিয়া শুকাতে দিন। এবার প্রেশার কুকারে অল্প আঁচে তেল গরম করে জিরা ফোড়ন দিন। অল্প ভাজা হলে পেঁয়াজ দিয়ে বাদামি রং ধরার আগেই আদা-রসুন বাটা দিয়ে দিন। মিনিট খানেক পর গুঁড়া মশলা দিয়ে ভাল করে ভেজে নিন। তারপর টমেটোর টুকরোগুলো ঢেলে দিয়ে নাড়তে থাকুন। খানিকক্ষণ পর দেখবেন মশলা আর তেল আলাদা হয়ে গিয়েছে। এবার কিমা আর মসুর ডাল দিয়ে রাঁধুন। এই মিশ্রণে সবজি, দালিয়া, চিকেন স্টক কিউব, মশলা, লবণ ও মরিচ দিয়ে প্রেশারে বসিয়ে রাখুন। একবার হুইস্ল দেওয়ার পর আঁচ সিমে এনে আরও দুটো হুইস্ল বাজতে দিন। তারপর আঁচ নিভিয়ে ১০ মিনিট অপেক্ষা করুন। কুকারের ঢাকনা খুলে গরম গরম খিচুড়ি পরিবেশন করুন।
শীতকাল এলেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে খেজুরের রস খাওয়ার চল বেড়ে যায়। অনেকে গাছ থেকে খেজুরের কলসি নামিয়ে সরাসরি কাঁচা রস খেয়ে থাকেন।
আবার অনেকে এই রস চুলায় ফুটিয়ে সিরাপ, পায়েস বা ক্ষীর বানিয়ে খান। এছাড়া রসের তৈরি ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়, ভেলি গুড়, বালুয়া গুড়, মিছরি গুড়সহ নানা ধরণের পিঠার বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।
নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক
খেজুর আরব দেশের প্রচলিত ফল হলেও ওইসব দেশে খেজুর, মূলত ফল উৎপাদননির্ভর, যেখানে কিনা বাংলাদেশের খেজুর গাছ রস উৎপাদননির্ভর।
কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, বাংলাদেশে সাধারণত কার্তিক থেকে মাঘ অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ হয়ে থাকে।
দেশটির সবচেয়ে বেশি রস সংগ্রহ হয় যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে।
মূলত খেজুর গাছের ডালপালা পরিষ্কার করে, ডগার দিকের কাণ্ড চেঁছে তাতে একটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি চোঙ বসিয়ে দেয়া হয়। চোঙের শেষ প্রান্তে ঝুলিয়ে দেয়া হয় একটি মাটির হাড়ি বা কলসি।
সেই চোঙ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রস এসে জমা হতে থাকে মাটির হাড়ি বা কলসিতে। এভাবে একটি গাছ থেকে দৈনিক গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লিটার রস সংগ্রহ করা যায় বলে কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গিয়েছে।
কিন্তু গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
উপকরণ: বাঁধাকপির কুচি ৪ কাপ, কই মাছের টুকরো ৬টি, তেজপাতা ১টি, শুকনো মরিচ ২টি, মেথি অল্প পরিমাণ, মরিচবাটা ১ চা-চামচ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, লবণ পরিমাণমতো, নারকেল কোরানো স্বল্প পরিমাণে, হলুদ পরিমাণমতো ও সরিষার তেল পরিমাণমতো।
প্রণালি: তেলে শুকনো মরিচ ও মেথি ফোড়ন দিতে হবে। ফোড়ন হয়ে এলে হালকা করে ভেজে উঠিয়ে রাখতে হবে। ওই তেলেই বাঁধাকপির কুচি ও পেঁয়াজ কুচি দিয়ে ভালো করে কষে নিতে হবে। তারপর লবণ, মরিচ ও হলুদবাটা দিয়ে আরও কিছুক্ষণ বসাতে হবে। সেদ্ধ হয়ে এলে অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে ভাজা মাছগুলো দিয়ে ঢাকা দিতে হবে। পানি শুকিয়ে গেলে এবং মাছ সেদ্ধ হয়ে এলে অল্প পরিমাণ নারকেল কোরানো দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।
উপকরণ: বড় শোল মাছ ৫০০ গ্রাম, টমেটো টুকরো আধা কাপ, সরিষার তেল ৩ টেবিল চামচ, টমেটোবাটা আধা কাপ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, আদাবাটা ১ চা-চামচ, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, হলুদ গুঁড়া ১ চা-চামচ, ধনেপাতা আধা কাপ, শুকনো মরিচের গুঁড়া ১ চা-চামচ, লবণ স্বাদ অনুসারে ও কাঁচা মরিচ ৭-৮টি (চেরা)।
প্রণালি: শোল মাছ লবণ, হলুদ ও সরিষার তেল মাখিয়ে ভেজে তুলে রাখতে হবে। আর ওই তেলেই পেঁয়াজ কুচি দিতে হবে। পেঁয়াজ বাদামি রং হলে রসুন, আদা, মরিচের গুঁড়া, হলুদ ও লবণ দিয়ে ভালোভাবে কষাতে হবে। টমেটোবাটা দিতে হবে, কিছুক্ষণ কষানোর পর প্রয়োজনমতো গরম পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে ভেজে রাখা মাছগুলো দিতে হবে। ঝোল মাখা-মাখা হলে টমেটোর টুকরো আর ধনেপাতা দিয়ে কিছুক্ষণ পর নামিয়ে ফেলতে হবে। নামানোর আগে কাঁচা মরিচ দিতে হবে।
উপকরণ: ছোট টুকরো করে কাটা টাকি মাছ ২ কাপ, ডুমো ডুমো করে কাটা লাউ ৪ কাপ, হলুদ সিকি চা-চামচ, লবণ পরিমাণমতো, পেঁয়াজ ১ কাপ, ধনেপাতা কুচি পরিমাণমতো, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, কাঁচা মরিচ ১০-১২টি, আদাবাটা আধা চা-চামচ ও রাঁধুনি বাটা সিকি চা-চামচ।
প্রণালি: তেলে পেঁয়াজ দিয়ে হালকা করে ভেজে নিতে হবে। তারপর একে একে রসুনবাটা, আদাবাটা ও রাধুনি (গুঁড়া সজ) বাটা ও হলুদের গুঁড়া দিয়ে ভালো করে কষাতে হবে। কষানো হলে লাউ দিতে হবে। লাউ দিয়ে কিছুক্ষণ কষিয়ে অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে আগে থেকে হালকা করে ভেজে রাখা টাকি মাছ দিতে হবে। পানি শুকিয়ে এলে কাঁচা মরিচের ফালি ও সবশেষে ধনেপাতা দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।
উপকরণ: চিংড়ি মাছ ২০০ গ্রাম, সয়াবিন তেল পরিমাণমতো, বাঁধাকপি কুচি ১ কাপ, ক্যাপসিকাম কুচি ১ কাপ, টমেটো কুচি আধা কাপ, পেঁয়াজপাতা কুচি ১ কাপ, কাঁচা মরিচবাটা ১ চা-চামচ, ধনেপাতাবাটা ১ চা-চামচ, হলুদের গুঁড়া পরিমাণমতো, চিলি সস ২ চা-চামচ, টমেটো সস ২ চা-চামচ, বাঁধাকপির ভেতরের পাতা ৪টি, ভিনেগার ২ চা-চামচ, রসুন ১ চা-চামচ ও লবণ স্বাদমতো।
প্রণালি: বাঁধাকপির শক্ত অংশ ফেলে দিন। পাতার ভেতরের অংশ একটু ভাপিয়ে রাখুন। মাছ ধুয়ে ভিনেগার মাখিয়ে রাখুন। এবার কড়াইয়ে সয়াবিন তেল গরম হলে তাতে রসুন কুচি দিয়ে মাছগুলো দিন। একে একে কোঁচানো বাঁধাকপি, ক্যাপসিকাম, টমেটো ও পেঁয়াজপাতা দিয়ে নেড়েচেড়ে নিন। এরপর কাঁচা মরিচবাটা, ধনেপাতাবাটা, চিলি সস ও টমেটো সস দিয়ে নেড়ে নিন। পানি শুকিয়ে এলে নামিয়ে বাঁধাকপির পাতায় অল্প করে চিংড়ি মাছ সুতা দিয়ে বেঁধে স্টিমারে ভাপিয়ে নিন। সুতো কেটে পাতা খুলে পরিবেশন করুন।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন