আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

পরিবেশ

গ্রামকে ‘শহর’ না বানিয়ে হোক আলাদা উন্নয়ন

সম্প্রতি কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত একটি বিশেষ খবরে দৃষ্টি আটকে গেল। ব্যক্তিগত উদ্যোগে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, কবরস্থান ও শ্মশান স্থাপন করতে এখন থেকে সরকারের অনুমোদন নিতে হবে। সেই সঙ্গে ইউনিয়ন পরিষদের ‘মাস্টারপ্ল্যান’ তৈরি না হওয়া পর্যন্ত ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং বাড়িঘর নির্মাণে ইউনিয়ন পরিষদকে অবহিত করতে হবে।

এই খবরের একটি দিক খুব আশাজাগানিয়া। এটা নিঃসন্দেহে খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, ইউনিয়নের জন্যও ভৌত পরিকল্পনা বা ফিজিক্যাল প্ল্যানিং করা হচ্ছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই সামগ্রিক ভৌত পরিকল্পনা কেন গুরুত্বপূর্ণ? আলোচিত ভৌত পরিকল্পনার দার্শনিক ও অর্থনৈতিক ভিত্তি কী হবে? কারা এই ভৌত পরিকল্পনা প্রণয়নে নেতৃত্ব দিলে মানুষ ও জগতের অন্য সবার সর্বাধিক কল্যাণ নিশ্চিত করা যাবে?

প্রথমেই বলতে হয়, স্বাধীনতার পরপরই দেশের সামগ্রিক ভৌত পরিকল্পনার আলাপ-আলোচনা শুরু হয়েছিল। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্থাপত্য-আচার্য মাজহারুল ইসলামের পরামর্শ নিয়ে সেদিকে এগোতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর সেই উদ্যোগেরও মৃত্যু হয়।বিজ্ঞাপন

মাজহারুল ইসলাম মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত দেশটিকে খুব আন্তরিকভাবে গোছাতে চেয়েছিলেন। তিনি অনেকের কাছে এ জন্য সাহায্যও চেয়েছিলেন পরবর্তী সময়ে। কিন্তু সাহায্য তো পাননি, বরং ১৯৭১ সালে প্রাপ্ত কাজগুলোও তাঁর কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল।

প্রকৃতপক্ষে কোনো একটি দেশের জন্য ভৌত পরিকল্পনামাফিক গ্রাম, অঞ্চল ও শহরকে গড়ে তোলাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। এর কারণ, বাস্তব পরিসর (রিয়েল স্পেস) ভীষণভাবে সেখানকার জনগণের চিন্তার ধরন, ব্যক্তিত্ব ও মানসিকতা বিনির্মাণে ভূমিকা রাখে। মানুষ প্রকৃতির সন্তান, সেই প্রকৃতির সঙ্গেই আমৃত্যু ব্যক্তির নাড়ির বন্ধন জড়িয়ে থাকে। ব্যক্তি শুধু জমিনের ওপর আশ্রয় নেন, তা নয়, অনেক সময় এখানে তাঁর সামগ্রিক বিকাশও রচিত হয়। জনসাধারণের পারস্পরিক সম্পর্ক, সামগ্রিক যোগাযোগ, আধ্যাত্মিকতা, প্রয়োজনীয় সম্পদের জোগান, গৃহ নির্মাণ, বিনোদন, জ্ঞান-অর্জনসহ সবকিছুই সম্পাদিত হয় ওই ভৌত পরিসরে।বিজ্ঞাপন

আমাদের দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনায় প্রায়শই পশ্চিমা চিন্তার অন্ধ অনুকরণ পরিলক্ষিত হয়। সব ক্ষেত্রেই ঔপনিবেশিক ব্যবস্থার আবেশ যেন আমাদের আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রাখে। সবকিছুতেই উপনিবেশের মাতৃরাষ্ট্রগুলোকে নকল করার একধরনের প্রবণতা এখানে বিরাজমান। এ জন্যই তো আমাদের নীতিনির্ধারকেরা প্রায়শই শহরগুলোকে সুইজারল্যান্ড বা লন্ডন বানাতে চান!

তা ছাড়া একটি দেশের ভৌত বিন্যাস, অবকাঠামো বা স্থাপত্যের সৌকর্য দিয়ে দেশটি নিজের পরিচয় বিশ্ব সভ্যতায় তুলে ধরতে পারে। ইতিহাসে তার অবস্থান অনেকটা নির্ণীত হয় ভৌত স্থাপনার ভিত্তিতেই। এই বিবেচনা আরও প্রাসঙ্গিক হিসেবে সামনে আসে, যখন বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত রাষ্ট্র থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে অগ্রসর হতে থাকে। শুধু তা-ই নয়, ভৌগোলিক কারণেও বাংলাদেশ বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রগুলোর কাছে এখন অত্যন্ত আগ্রহের একটি দেশ। তাই এখানকার ভৌত পরিসরের বিন্যাস ও ব্যবস্থাপনা যেমন সুপরিকল্পিত হতে হবে, তেমনি তা সুদূরপ্রসারী প্রজ্ঞার ওপর নির্ভর করে গড়ে উঠতে হবে।

কিন্তু দুঃখের বিষয়, আমাদের দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনায় প্রায়শই পশ্চিমা চিন্তার অন্ধ অনুকরণ পরিলক্ষিত হয়। সব ক্ষেত্রেই ঔপনিবেশিক ব্যবস্থার আবেশ যেন আমাদের আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রাখে। সবকিছুতেই উপনিবেশের মাতৃরাষ্ট্রগুলোকে নকল করার একধরনের প্রবণতা এখানে বিরাজমান। এ জন্যই তো আমাদের নীতিনির্ধারকেরা প্রায়শই শহরগুলোকে সুইজারল্যান্ড বা লন্ডন বানাতে চান! অথচ চরিত্রগত দিক থেকে প্রতিটি দেশ যেমন ভিন্ন ভিন্ন, ঠিক তেমনি একটি দেশের একেক অঞ্চল একেক রকম বৈচিত্র্যের অধিকারী। কোনো একটি দেশের নিজ ভূখণ্ডের মধ্যেই রয়েছে সীমাহীন বৈচিত্র্য। এই বৈচিত্র্য সেখানকার ভাষা, ভূপ্রকৃতি, খাদ্যাভ্যাস, সংস্কৃতি, উৎপাদনব্যবস্থা, রুচি, নান্দনিকতাবোধ, আত্মীয়তার পরিচর্যা—বলতে গেলে সব ক্ষেত্রে।

তাই সবার জন্য এক রকম উন্নয়নচিন্তা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। এই যে সবাইকে অভিন্ন উন্নয়নের সঙ্গে যুক্ত করার প্রয়াস, তা প্রচণ্ডরূপে ঔপনিবেশিক দৃষ্টিভঙ্গিরই বহিঃপ্রকাশ। ইউরোপের আধুনিকতার দর্শনের ভেতর এই একমাত্রিকতার প্রবণতা তুমুলভাবে বিদ্যমান। এই অঞ্চলের সাম্প্রতিক জ্ঞানচিন্তার আবহও এর বাইরে যেতে পারেনি খুব একটা।

সামগ্রিক উন্নয়নচিন্তায় শুধু নয়, ভৌত অবকাঠামো নির্মাণে বাংলাদেশের কর্তাব্যক্তিরাও যে পশ্চিমা রীতির মুখস্থ অভিন্নতার নীতি মেনে চলতে আনন্দ পান, তা দেশব্যাপী ছড়িয়ে থাকা ইউনিয়ন পরিষদ ভবনগুলোর একই রকম নির্মাণশৈলীর দিকে তাকালে বোঝা যাবে। আরও পরিষ্কার হবে, যদি আমরা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে নির্মিত উপহারের ঘরগুলোর দিকে তাকাই। পাহাড়ি অঞ্চলের জন্য যে ঘর, উপকূলেও তা-ই। নদীতীরের জন্য যে নকশা, শহরতলিতে তা-ই অক্ষুণ্ন রাখা হয়েছে। অথচ যেকোনো কাণ্ডজ্ঞানসম্পন্ন মানুষই জানেন, মানুষের ব্যবহারোপযোগী স্থাপনা নির্মিত হওয়া উচিত, সেই এলাকার ভৌগোলিক, সাংস্কৃতিক ও অন্যান্য বৈচিত্র্যকে বিবেচনায় রেখে।

এই সূত্র ধরে বলা দরকার, দেশের ইউনিয়ন পর্যায়ের জন্য ভৌত পরিকল্পনা করতে চাইলে ‘সবার জন্য অভিন্নতার নীতি’ থেকে সরে আসতে হবে। এ জন্য দেশপ্রেমিক ও পরিবেশ-সংবেদী স্থপতিদের নেতৃত্বে টাস্কফোর্স গঠন করা যেতে পারে। কারণ, স্থপতিরাই ভৌত পরিকল্পনার সার্বিক বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা ও অনুশীলন করেন। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করি, স্থপতি মাজহারুল ইসলাম স্বপ্ন দেখতেন, একদিন দেশে একটি ভৌত পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় গঠিত হবে এবং এই প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের প্রতি ইঞ্চি জমিনকে একদিন সুবিবেচনাপ্রসূত ও দূরদর্শী বিন্যাসের মধ্যে আনা সম্ভব হবে। ‘ঢাকা মহানগর সমন্বিত মহাপরিকল্পনা ২০২০-২০৫০’ প্রকল্পের জন্য যেমন বিভিন্ন বিষয়ের (স্থাপত্য, নৃবিজ্ঞান, নগর-পরিকল্পনা, পরিবেশবিজ্ঞান, জনস্বাস্থ্য, যোগাযোগ অধ্যয়ন, সমাজবিজ্ঞান, অর্থনীতি, রাজনীতি) বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের নিয়ে একটি পরামর্শক কমিটি করা হয়েছে।

তেমনি গোটা দেশের আঞ্চলিক ও গ্রামীণ পরিকল্পনার জন্য এ রকম কোনো পরামর্শক কমিটি গঠিত হয়েছে কি না, তা জনগণকে জানানো যাক। না হলে তা এখনই সংগঠিত করাটাই সমীচীন হবে। এর কারণ, বর্তমানে বিপুল মানুষ নিজস্ব উদ্যোগে যেমন বহু স্থাপনা নির্মাণ করছেন, তেমনি সরকারও অসংখ্য উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এসব স্থাপনা একবার গড়ে উঠলে একেবারে নির্মল অর্থে নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা বেশ কঠিন হবে। আরেকটি কথা, সার্বিক ভৌত পরিকল্পনার জন্য সাধারণ জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণও থাকা চাই, নামকাওয়াস্তে হলে চলবে না।বিজ্ঞাপন

শহুরে চিন্তা দিয়ে গ্রামকে নির্মাণ করতে চাইলে তা খুব বিবেচনাপ্রসূত কিছু হবে না। তাই গ্রামের মৌলিক চরিত্র অক্ষুণ্ন রাখতে হবে। সেই সঙ্গে প্রবল ও পয়সাওয়ালাদের অন্যায় দাপট থেকে গ্রামের মানুষকে মুক্তি দিতে হবে। সেখানে আইনের শাসন ও মানুষের মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে।

জনগণের সত্যিকারের প্রত্যাশার প্রতি সম্মান রেখে বিশেষজ্ঞদের দেশপ্রেম ও প্রজ্ঞার ওপর নির্ভর করে ভৌত পরিকল্পনার কাজটি রচিত হওয়া দরকার। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য, সরকার সম্প্রতি একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে, ‘আমার গ্রাম আমার শহর’। সেই প্রকল্পের জন্য ‘গ্রামীণ জন-প্রত্যাশা ও পরিকল্পনা’ শিরোনামে একটি পুস্তিকা (২০১৯) প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে বিভিন্ন খাতের জন্য লিপিবদ্ধ জনপ্রত্যাশার যে চিত্র আমরা পাই, তা আমাদের ওই ঔপনিবেশিক উন্নয়নচিন্তা প্রভাবিত একমাত্রিক বিশ্বব্যবস্থার কথাই মনে করিয়ে দেয়। গ্রামগুলো যদি কেন্দ্রমুখী চরিত্রের শহরের মতো হয়ে ওঠে, তাহলে শহরের সিংহভাগ কদর্যতাও দিনে দিনে গ্রামে আস্তানা খুঁজে নেবে।

বলা দরকার, নিবিড় শহরায়ণ বিশ্বায়নেরই নিষ্ঠুর উপজাত। গ্রামীণ অর্থনীতিকে বিপন্ন করে শাসনব্যবস্থা বিকশিত হয়। মধ্যস্বত্বভোগী, বড় ব্যবসায়ী ও আমলাদের বিকাশ ঘটে এখানে। শিল্পকারখানার জন্য সস্তা শ্রমিকের জোগান নিশ্চিত করার বিষয়টি কাঠামোগতভাবেই শহরে গুরুত্ব পায়। অধিকাংশ মানুষের জন্য সার্বিক মানবীয় সুযোগ সৃষ্টি করাটা এখানে খুব একটা সম্ভবপর হয়ে ওঠে না। বসবাসের জন্য বিরাটসংখ্যক মানুষকে ঠাঁই নিতে হয় অস্বাস্থ্যকর ও অপরাধপ্রবণ বস্তিতে। ন্যূনতম নাগরিক চাহিদা পূরণের জন্য প্রবল গতিতে ছুটতে হয় মানুষকে। আর নিরন্তর ছুটতে গিয়ে এই শহর নামের নিষ্ঠুর পরিসরে মানুষ অধিক মাত্রায় মানসিক বিষণ্নতায় ভুগতে শুরু করেন। শহরে ব্যবহার্য প্রায় সব জিনিসের কাঁচামাল অন্যত্র থেকে নিয়ে আসতে হয়। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সৃষ্টি হয় বিভিন্ন রকম দূষণের। পানি, মাটি, বাতাস, আলো, শব্দ ও দৃশ্যদূষণে নগরের মানুষ আজ একেবারে নাকাল। টাকাকড়ির মতো কৃত্রিম সম্পদের ওপর শহর খুব নির্ভরশীল হয়। পয়সা ছাড়া সেখানে একমুহূর্তও চলে না। সেই অর্থে শহর স্বয়ংসম্পূর্ণ নয় মোটেই।

এর বিপরীতে গ্রাম কিন্তু আত্মনির্ভরশীল। সেখানে প্রকৃত সম্পদের (খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, ভেষজ উদ্ভিদ ইত্যাদি) অঢেল উৎস এখনো বিদ্যমান। সুতরাং শহুরে চিন্তা দিয়ে গ্রামকে নির্মাণ করতে চাইলে তা খুব বিবেচনাপ্রসূত কিছু হবে না। তাই গ্রামের মৌলিক চরিত্র অক্ষুণ্ন রাখতে হবে। সেই সঙ্গে প্রবল ও পয়সাওয়ালাদের অন্যায় দাপট থেকে গ্রামের মানুষকে মুক্তি দিতে হবে। সেখানে আইনের শাসন ও মানুষের মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে। পরিশেষে বলতে চাই, মানুষসহ জগতের সব প্রাণের সর্বাধিক কল্যাণ রচনা করাটাই হবে উন্নয়নের প্রধানতম লক্ষ্য। সেই অভিপ্রায় নিয়েই যেন প্রান্তিক অঞ্চলগুলোর জন্য ভৌত পরিকল্পনা গ্রহণ যায়।

বিজ্ঞাপন
মন্তব্য করুন

অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন

Leave a Reply

পরিবেশ

ছাদ বাগানের জন্য কয়েকটি টিপস

ছাদ বাগানীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। টবে, ড্রামে গাছ লাগানো হয়। কেউ ফল, কেউবা সবজির গাছ লাগান। কেউ সফল হন। কেউ সফল হন না। ছোট ছোট কিছু ভুল বাগানীরা করে থাকেন। সে কারণে যত্ন নিলেও ফল আসে না। এখানে ছাদ বাগানীদের জন্য কিছু টিপস দেয়া হলো, যা মানলে সফলতা পাওয়া সহজ হতে পারে।

প্রথমেই মনে রাখতে হবে, টবে বা ড্রামে গাছ লাগালে তাকে খাবার দিতে হবে। প্রকৃতিতে বিদ্যমান গাছের মতো সে খাবার সংগ্রহ করতে পারে না। রোগ-বালাই হলো কিনা সেটাও বুঝে ব্যবস্থা নিতে হবে। ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে।

১. মাটির সাথে অবশ্যই কিছু কোকোপিট মেশাবেন। গাছের গোড়া স্যাতস্যাতে হতে দিবেন না। স্যাতস্যাতে হলে অসংখ্য রোগ হবে। মাটি ভেজা থাকবে তবে স্যাতস্যাতে না। কেকোপিট মেশালে পানি কম দিলেও হবে। কোকোপিট (নারকেলের ছোবলার গুড়া) পানি ধরে রাখে। অতি বৃষ্টি হলে গোড়ায় পানি জমতে দেয় না। হালকা হওয়ায় ছাদে ওজনের চাপ পড়ে না। এছাড়া কোকোপিটে কিছু পুষ্টি উপাদান আছে। যা গাছের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। কোকোপিটে চারা দ্রুত গজায়, বড় হয়। মাটির চেয়ে কোকোপিটে চারা ভালো হয়।

২. গাছের জন্য বিরিয়ানি হলো সরিষার খৈল-পচা পানি। মাটির হাড়িতে খৈল পচাতে হবে। কমপক্ষে ৫ দিন। ৭ দিন কিংবা বা ১৫ দিন হলে উত্তম। অল্প পানিতে পচিয়ে তার সাথে আরো পানি মিশিয়ে দিতে হবে। এটি গাছের জন্য অত্যন্ত উপকারী। একটু গন্ধ হয়, তাই অল্প একটু গুড় দিতে পারেন। ছাদে হাড়িতে পচালে বাসায় গন্ধ আসবে না। বৃষ্টির সময় খৈল-পচা পানি দেবেন না। পুকুরের নিচে থাকা পাক কাদা গাছের জন্য খুব উপকারী।

৩. আমরা জানি, মাটিতে অসংখ্য ক্ষতিকর ছত্রাক থাকে। যা গাছকে মেরে ফেলার জন্য যথেস্ট। তাই মাটি রেডি করার সময় কিছুটা বায়োডামা সলিট দিবেন। এটি উপকারী ছত্রাক। মাটিতে ক্ষতিকারক উপাদানগুলো মেরে ফেলে। আবার জৈব সারের কাজও করে। গাছের জন্য মাটি হবে ঝুরঝুরে, হালকা।

৪. যাই লাগান না কেন, ভালো জাতের বীজ কিনা নিশ্চিত হয়ে নেবেন। ভালো বীজে ভালো ফসল হবে। নতুবা যতই যত্ন নেন না কেন, সব পরিশ্রম বেলাশেষে জলে যাবে। বীজ থেকে নিজে চারা করা উত্তম। কারণ বাজার থেকে যে চারা কিনবেন সেটার জাত ভালো হবে সে নিশ্চয়তা কোথায়? ছত্রাকনাশক দিয়ে বীজ শোধন করে নেয়া উত্তম। পদ্ধতি হলো- ছত্রাকনাশক দেয়া পানিতে কিছুটা সময় বীজ ভিজিয়ে রাখতে হবে। ম্যানসার, মেটারিল দুটি ছত্রাকনাশক।

৫. গাছ বেশি তো ফলন বেশি- এটি ভুল ধারণা। অল্প জায়গায় বেশি গাছ লাগানো যাবে না। গাছ পাতলা করে লাগাতে হবে। বেশি লাগালে গাছ প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাবে না। একটি ফলের ক্রেটে মাত্র দুটি গাছ। একটি টবে একটি গাছ। ক্রেট বা টবে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।

৬. ছাদে মাচা দেয়া সমস্যা। কারণ ঘুঁটি থাকে না। এ জন্য ফলের ক্রেটের চারপাশে লাঠি বেঁধে সহজে মাচা দেয়া যায়। লতাপাতা জাতীয় গাছ লাগানোর পাত্র একটু গভীর হলে উত্তম। গাছের জন্য সবচেয়ে বেশি ভালো জৈব সার হলো পাতা-পচা সার, তারপর ভার্মি কম্পোস্ট, তারপর গোবর সার। পাতা-পচা সার সহজলভ্য নয়। দাম বেশি। কিন্তু ভার্মি কম্পোস্ট সহজলভ্য। মাটির সঙ্গে মিনিমাম ৪০% জৈব সার দেয়া উত্তম।
৭. নিম কীটনাশককে ক্ষতিকারক পোকা-মাকড় খুব অপছন্দ করে। এটি দিলে তারা বিরক্ত বোধ করে। গাছে বাসা বাঁধতে পারে না। প্রতি সাত দিনে একবার সব গাছের পাতায় নিম কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। মাসে একবার ইপসম সল্ট স্প্রে করে দেয়া উত্তম। একইভাবে মাসে একবার পানির সঙ্গে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড মিশিয়ে স্প্রে করা ভালো।

৮. ডাটা, পুইশাক, লালশাক, ধনেপাতা এসব লাগাতে পারেন। মাত্র ২৫ দিনে খেতে পারবেন। লালশাক লাগালে নেট দিয়ে ঘিরে দেবেন। শাকপাতা লাগালে দ্রুত আউটপুট পাবেন। যা আপনাকে প্রেরণা দেবে। পুইশাক গাছের পাতায় দাগ হলে পাতা কেটে দিন। অথবা ছত্রাকনাশক স্প্রে করেন। অথবা গাছ উঠিয়ে আবার লাগান। ইউরিয়া সার দিলে পুইশাক দ্রুত বাড়বে। শশা গাছের বৃদ্বির জন্য ডিএপি সার দিলে ভালো হবে। শশা গাছে ছাড়া ছাড়া ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হয়। খুব রোদ, গাছের গোড়ায় মালচিং করে দিয়ে উত্তম ফল মিলবে। মালচিং হলো গাছের গোড়ায় বিশেষ পলিথিন কিংবা শুকনো পাতা, খড় দিয়ে ঢেকে দেয়া।

৯. ফুল আসার পরে প্রানোফিক্স অথবা মিরাকুরান গাছের পাতায় শেষ বিকালে স্প্রে করবেন। বাসায় দুইটি গ্রুপের ছত্রাকনাশক রাখা ভালো। যেমন- ম্যানসার, মেটারিল। ১৫ দিনে একবার স্প্রে করবেন। এগরোমিন্ড গোল্ড অনুখাদ্য বা অন্য কোনো অনুখাদ্য বাসায় রাখতে হবে। মাসে কমপক্ষে একবার স্প্রে করবেন। অতিরিক্ত গরম, বৃষ্টি, খাদ্যের অভাব, গাছ রোগাক্রান্ত, আবহাওয়া দ্রুত আপডাউন করা ইত্যাদি কারণে ফুল ঝরে পড়তে পারে। আবার পরাগায়ন না হলে ঝরে পড়তে পারে। এ জন্য হাতের মাধ্যমে পরাগায়ন করতে হবে। পুরুষ ফুলের পরাগদণ্ড নারী ফুলে গর্ভে ঘষে দিতে হবে।

১০. ছাদ বাগানে গাছ মারা যাওয়ার অন্যতম কারণ পানি বেশি বা কম দেয়া। যতটুকু লাগে ঠিক ততটুকু পানি দিতে হবে। কোন গাছের কি চাহিদা, রোগ একটু স্টাডি করলে সহজে সফল হতে পারবেন।

১১. গাছের পাতার নিচে খেয়াল করবেন। বেগুন গাছের পোকা মারার জন্য সেক্স ফোরেমান ফাঁদ লাগাবেন। ডগা ছিদ্র বা ফল ছিদ্র হলে সাইপারমেত্রিন গ্রুপের কীটনাশক দিতে হবে। একটি বেগুন গাছ অনেক দিন ফল দেয়। ঢেড়স গাছ বেশি রোদ পড়ে এমন জায়গায় লাগাবেন। বেগুন, ঢেড়স, লালশাক, পুইশাক, ধনেপাতা, ডাটা শাক- এসব গাছের খুব যত্ন করতে হয় না।

১২. রসুন আর লবঙ্গ বেটে সেই পানি গাছে স্প্রে করলে পোকা কম আসবে। মরিচ গাছে নেপথলিন বেঁধে দিন, পোকা কম আসবে। পাতা কোকড়ালে ভার্মিটেক কিংবা এবোম কীটনাশক দিন। কোকড়ানো পাতা ফেলে দিন। মরিচ গাছে দশ দিন পর পর ডায়মেথট গ্রুপের (যেমন টাফগর) কীটনাশক দিলে উপকার হবে। সবকিছু করছেন, তারপরও কাজ হচ্ছে না। এক্ষেত্রে গাছের জায়গা বদল করেন, উঠিয়ে অন্যত্র লাগান।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

দৈনন্দিন

নিপাহ্‌ ভাইরাসঃ খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়

নিপাহ্‌ ভাইরাস খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়
নিপাহ্‌ ভাইরাস খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়
খেজুরের রস সংগ্রহের প্রক্রিয়া।

শীতকাল এলেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে খেজুরের রস খাওয়ার চল বেড়ে যায়। অনেকে গাছ থেকে খেজুরের কলসি নামিয়ে সরাসরি কাঁচা রস খেয়ে থাকেন।

আবার অনেকে এই রস চুলায় ফুটিয়ে সিরাপ, পায়েস বা ক্ষীর বানিয়ে খান। এছাড়া রসের তৈরি ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়, ভেলি গুড়, বালুয়া গুড়, মিছরি গুড়সহ নানা ধরণের পিঠার বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।

নিপাহ্‌ ভাইরাস আতঙ্ক

খেজুর আরব দেশের প্রচলিত ফল হলেও ওইসব দেশে খেজুর, মূলত ফল উৎপাদননির্ভর, যেখানে কিনা বাংলাদেশের খেজুর গাছ রস উৎপাদননির্ভর।

কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, বাংলাদেশে সাধারণত কার্তিক থেকে মাঘ অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ হয়ে থাকে।

দেশটির সবচেয়ে বেশি রস সংগ্রহ হয় যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে।

মূলত খেজুর গাছের ডালপালা পরিষ্কার করে, ডগার দিকের কাণ্ড চেঁছে তাতে একটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি চোঙ বসিয়ে দেয়া হয়। চোঙের শেষ প্রান্তে ঝুলিয়ে দেয়া হয় একটি মাটির হাড়ি বা কলসি।

সেই চোঙ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রস এসে জমা হতে থাকে মাটির হাড়ি বা কলসিতে। এভাবে একটি গাছ থেকে দৈনিক গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লিটার রস সংগ্রহ করা যায় বলে কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গিয়েছে।

কিন্তু গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে নিপাহ্‌ ভাইরাস আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

পরিবেশ

জেনে নিন এই মরসুমে কোন কোন ঔষধি উদ্ভিদের চাষ আপনার জন্য সেরা

দেশের বিভিন্ন রাজ্যেই বর্ষার (Monsoon 2021) প্রভাবে চলছে বৃষ্টিপাত। এসময় কৃষকেরা খারিফ শস্য (Kharif Crops) বপনে তৎপর হয়ে ওঠেন। এই খরিফ মরসুমে কৃষকভাইরা সাধারণত অঞ্চলভেদে ধান, অড়হর, সোয়াবিন সহ বিভিন্ন চাষে মনযোগ দিয়ে থাকেন ৷ তবে এসব ছাড়াও, ঔষধি গুন সমৃদ্ধ (Medicinal Crops) গাছ চাষে বর্ষায় যে কতটা লাভ হতে পারে সে সম্পর্কে অনেকেই হয়তো জানেন না৷

বিশেষ করে বর্ষাকালেই এমন বহু ঔষধি গুন সম্পন্ন গাছ রয়েছে যাদের চাষ হতে পারে লাভজনক৷

বর্ষাকালে কোন কোন ঔষধি উদ্ভিদের চাষ করা যেতে পারে অথবা এই চাষ কীভাবেই বা করা যাবে সে বিষয়ে সঠিক তথ্য না পাওয়ার কারণেই অনেকের কাছে বিষয়টি অধরা৷ চলুন এই প্রতিবেদনে এমনই কিছু গাছ নিয়ে আলোচনা করা যাক যা কৃষকদের জন্য হতে পারে লাভদায়ক৷ তবে সঠিক সময়ে, সঠিক রোপন, সেচ, কীটনাশক দেওয়ার প্রয়োজন এগুলিতে, না হলে এর ওপর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে৷

অশ্বগন্ধা –

বর্ষায় এর চাষ ভালো৷ জুন থেকে অগস্ট পর্যন্ত এর চাষ করতে পারেন৷ এর বিভিন্ন জাত রয়েছে৷ উন্নত মানের গাছের চাষে কৃষকের লাভের পরিমাণও বৃদ্ধি পেতে পারে৷ উল্লেখ্য, প্রতি হেক্টরে ৫ কিলোগ্রাম বীজ ব্যবস্থা করতে হবে৷ যদি কেউ ১ হেক্টর জমিতে অশ্বগন্ধার চাষ করতে চায় তাহলে তাকে প্রায় ৫০০ বর্গমিটারে নার্সারি তৈরি করতে হবে৷ প্রায় ১ সেন্টিমিটার গভীরে বীজ বপন করতে হবে৷

শতমূলী –

শীত বাদ দিয়ে বছরের যে কোনও সময়ে এই গাছের চাষ করতে পারেন৷ বর্ষাকালে এই চারা রোপন করলে সহজেই তা বেড়ে উঠতে থাকে৷ তবে বীজ বপনের আগে বীজ ১ দিন পর্যন্ত হালকা গরম জলে ভিজিয়ে রাখতে হয়৷

যষ্টিমধু –

জুলাই থেকে অগস্ট পর্যন্ত এর চাষ করা হয়৷ আর তাই জুন থেকেই এর প্রস্তুতি শুরু করে দেন কৃষকেরা৷ জলনিকাশি ব্যবস্থা উচ্চমানের হওয়া প্রয়োজন এই গাছ চাষের জন্য৷ মনে রাখতে হবে এর চাষের আগে জমিতে কমপক্ষে ১৫ টন গোবর সার দেওয়া প্রয়োজন, এরপরেই এটি চাষ করা উচিত৷

ঘৃতকুমারী –

এর ভালো উৎপাদনের জন্য জলনিকাশি ব্যবস্থা ঠিক রাখতে হবে৷ এই ধরনের ঔষধি গুনসম্পন্ন গাছ শীতকাল বাদ দিয়ে যে কোনও সময় চাষ করতে পারেন৷ বর্ষাকালে দূরত্ব রেখে বীজ বপন করতে হবে৷ কম সময়ের মধ্যেই ব্যবহারোপযোগী হয়ে ওঠে এগুলি৷

অগ্নিশিখা বা কলিহারি –

এটি চাষের জন্য কৃষকেরা জুন মাসেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন৷ জুলাইয়ে ভালো বৃষ্টিতে এর চাষ শুরু করা যেতে পারে৷ উল্লেখ্য, ১ হেক্টর জমির জন্য প্রায় ১০ ক্যুইন্টাল কন্দের প্রয়োজন৷ এটি চাষের আগেও জমিতে গোবর সার প্রয়োগ করে তা প্রস্তুত করে নিতে হবে৷

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

পরিবেশ

শিখে নিন টবে দারুচিনির চাষের কৌশল

পৃথিবীতে ভোজ্য মসলা যতরকম আছে তারমধ্যে দারুচিনি সবথেকে উল্লেখযোগ্য। এই প্রাচীনতম মসলা বহুদিন ধরে ওষধি হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে চলেছে। এছাড়াও খাবারে স্বাদ বাড়ানো থেকে শুরু করে, পানীয় এবং তরল মশলাদার খাবারে স্বাদ বাড়ানোর জন্যও এই দারচিনির ব্যবহার হয়। এলাচ, গোলমরিচ, লবঙ্গের সাথে সাথে দারুচিনির নামও মসলা হিসেবে একই পংক্তিতে উচ্চারিত হয়। বহু কৃষক দারুচিনির চাষ করে ভীষণভাবে উপকৃত হয়েছেন। বাজারে এই দারুচিনির চাহিদা প্রচুর পরিমানে থাকায়, এই চাষে ভালো লাভ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও সৌখিন মানুষেরাও ভালোবেসে দারুচিনির চাষ বাড়িতে করে থাকেন। দারুচিনি গাছের বাকল, ফুল, কুঁড়ি, পাতা, ফল, শেকড় সবকিছুই কাজে লেগে যায়। দারুচিনি গাছ বাড়িতে চাষ করতে গেলে ঘরে ছাদে দুই জায়গাতেই চাষ করা যায়।

মনে রাখতে হবে এই চাষ করতে গেলে উপযুক্ত পরিমানে রোদ দরকার। বাংলার জলবায়ুতে মূলত শীতকালে এই চাষ করা সবথেকে ভালো। জানুয়ারি মাসে দারুচিনি গাছে ফুল ফোটা আরম্ভ করে, এবং এই গাছের ফল পাকতে আরম্ভ করে জুলাইয়ে। সেইসময়ই ফল থেকে বীজ সংগ্রহ করে নিয়ে এসে বাগানে বা টবে রোপন করে দেওয়া উচিত।

প্রয়োজনীয় রোদ (Sunlight)

কড়া সূর্যালোক দারুচিনি জন্য প্রয়োজনীয়, তাই এটি পর্যাপ্ত রোদ পাওয়া যায় এমন জায়গায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দারুচিনি রোপন করতে গেলে রৌদ্রোজ্জ্বল স্থান যেমন জানালার ধারে, ব্যালকনি কিংবা ছাদের খালি স্থান ব্যবহার করতে হবে।

উপযুক্ত মাটি (Soil)

দারুচিনি চাষের জন্য ভাল মানের মাটি ব্যবহার করা আবশ্যক। বাগানের মাটি ব্যবহার না করাই ভালো, কেননা এতে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। অনে সময় আমরা আশেপাশ থেকে মাটি নিয়েই টব ভরে গাছ লাগানো হয়।  বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সংবেদনশীল গাছগুলোতে এই উপায় কার্যকরী হয় না। নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভাল এমন মাটি ব্যবহার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে উত্তম নিষ্কাশনযুক্ত বেলে দোআঁশ মাটি ব্যবহার করা সবথেকে উত্তম। জেনে রাখা ভালো দারুচিনি খরা একদমই সহ্য করতে পারে না। মাটির বিকল্প হিসেবে ১৫% ট্রাইকোকমপোস্টযুক্ত কোকোডাস্ট ব্যবহার করা যেতে পারে।

বাইরে চাষ করার জন্য এক মিটার (৩০ সেন্টিমিটার গভীর) পর্যন্ত গর্ত করে মাটি দিয়ে পূরণ করে নিতে হবে। ঘরের ভিতরে বা ছাদবাগানের দারুচিনি চাষের জন্য একটি বড় পাত্র প্রয়োজন হবে।

রোপন (Planting)

দারুচিনির বীজ সংগ্রহও করা যায় অথবা নার্সারি থেকে দারুচিনির গাছ কিনেও আনা যায়।

বাইরে চাষের ক্ষেত্রে

দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে ১ মিটার x ১ মিটার এবং ৩০ সেমি গভীরতায় খনন করে মাটি দিয়ে গর্তটি পূরণ করতে হবে।

ঘরের মধ্যে টবে রোপনের ক্ষেত্রে

নিচে গর্ত সহ বড় সিরামিক পাত্র (৬০ x ৫০ সেমি) ব্যবহার করতে হবে। পাত্রটি মাটি বা কোকোডাস্ট দিয়ে পূরণ করে নিতে হবে। ৩০ সেন্টিমিটার গভীরতা এবং ৩০ সেন্টিমিটার প্রস্থের একটি গর্ত তৈরি করতে একটি বাগান ট্রোয়েল ব্যবহার করে নেওয়া ভালো। বীজ ব্যবহার করলে  ১.৫ সেন্টিমিটার গভীর গর্ত তৈরি করে নেওয়া উচিত। এবার গাছটি গর্তের মধ্যে রেখে মাটি দিয়ে চাপা দিতে হবে। বীজ ব্যবহার করলে প্রতি ১.৫ সেমি গর্তে একটি করে বীজ পুঁততে হবে এবং মাটি দিয়ে বীজটি ঢেকে দিতে হবে।

মাটি সবসময় ভেজা রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণ জল দিতে হবে। দারুচিনি গাছ পাত্রে রোপন করার পর, টবের নিচের গর্ত থেকে জল বের না হওয়া পর্যন্ত জল দিতে হবে। টবের উপরের ৫ সেন্টিমিটার শুকিয়ে গেলেই আবার গাছটিকে জল দিতে হবে।

গাছের পরিচর্যা (Caring)

দারুচিনি গাছে নিয়মিত সার প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম বছর ৫০ গ্রাম টিএসপি, ৭৫ গ্রাম এমওপি ও ৫০ গ্রাম ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে। প্রতিবছর ২-৩ কেজি ট্রাইকোকম্পোস্ট ও সার প্রয়োগ শেষে একই হারে টিএসপি, এমওপি ও ইউরিয়া দিতে হবে।

দারুচিনি প্রথম ধরতে দুই থেকে তিন বছর সময় নেয় এবং তার পরে প্রতি দুই বছর পরপরই ফসল দিতে থাকে। দারুচিনি গাছ কম করে ১০-১৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। তাই একে নিয়মিত করে ছোট রাখতে হবে। পাঁচ বছর বয়সী দারুচিনি গাছ থেকে নিয়মিত দারুচিনি সংগ্রহের ডাল পাওয়া সম্ভব। দারুচিনি ব্যবহার করার জন্য যে শাখাগুলি কাটা হবে সেগুলি থেকে বাকল তুলে নিতে হবে, বাকলগুলি ব্যবহার করার আগে জলে ভালোভাবে ভিজিয়ে নেওয়া উচিত।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

আঙিনা কৃষি

টবে লাগান মিষ্টি তেঁতুল গাছ

পৃথিবীতে জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, হারিয়ে যাচ্ছে বহু প্রাণী ও উদ্ভিদ বৈচিত্র। চাষবাসের জমিরও সংকুলান ঘটছে সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে। গগনচুম্বী বাড়ি ঘিরে ফেলছে সমস্ত ফাঁকা জমিন। শখ করে মানুষ খোলা জায়গায় যে গাছ লাগবে অথবা ফল-ফুলের চারা সেই উপায়ও আর নেই। গাছ লাগানোর জন্য সামান্য জায়গাও ফাঁকা থাকছে না আর। তবে আমাদের করণীয় কী? বৃক্ষরোপন কি তবে অচিরেই বন্ধ হয়ে যাবে। বেঁচে থাকার জন্য তো গাছ লাগাতে হবেই। বাড়ির একটুকরো বারান্দা অথবা ব্যালকনিতেও সুন্দর ভাবে ইচ্ছা করলে গাছ লাগানো যায়। বাড়ির ছাদেও বানানো যায় সুন্দর বাগিচা। শহরের মানুষদের জন্য ছাদ বাগানের কোনও বিকল্পও নেই। বাড়ির মধ্যেকার ব্যালকনি অথবা ছাদের একটুকরো জমিতেও, ইচ্ছা করলে টবে চাষ করা যায় বিভিন্ন ফুলের ও ফলের গাছ।

শাকসবজি, পেয়ারা, লেবু প্রভৃতি দেশীয় গাছ টবে বাড়তে দেওয়া থেকে শুরু করে বর্তমানে বহু বিদেশী গাছের চারাও মানুষ ব্যালকনি অথবা ছাদে চাষ করছেন। তার মধ্যে থাই মিষ্টি তেঁতুল টবের চাষ পদ্ধতি হিসাবে অত্যন্ত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। প্রথমত মিষ্টি তেঁতুলের চাষ করতে গেলে, নার্সারি থেকে এই বিশেষ তেঁতুলের সঠিক বীজ নিয়ে আনতে হবে। তবে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কলম পাওয়া একটু দুষ্কর কাজ। বুঝে সঠিক চারা নিয়ে আসা বাগান মালিকের উপরেই বর্তায়।

থাই মিষ্টি তেঁতুলের ফুল থেকে ফল ধরতে প্রায় ৭ মাস সময় লাগে। বছরে দু’বার থাই মিষ্টি তেঁতুলের গাছে ফল ধরে। প্রথমবার বর্ষাকালে এবং দ্বিতীয়বার শীতকালে। এই গাছের পরিচর্যা আলাদা করে করার কোনও দরকার পড়ে না। গাছের যত্নআত্তি নিতে হয় ঠিকই, কিন্তু তা বলে, আলাদা করে কোনও বিশেষ যত্ন নিতে হয় না।

গাছ লাগানোর পদ্ধতি (Planting):

থাই মিষ্টি তেঁতুল চাষের জন্য আদর্শ মাটি হল, দো-আঁশ বা বেলে দো-আঁশ মাটি। এই দু’টি মৃত্তিকার মধ্যে যে কোনও একটি বেছে নিন। তারপর বেছে নেওয়া মাটির দুই ভাগ অংশের সাথে গোবর, ১০০ গ্রাম, টিএসপি ১০০ গ্রাম, পটাশ, ২৫০ গ্রাম, হাড়ের গুঁড়ো এবং ৫০ গ্রাম সরিষার খোল একসঙ্গে মিশিয়ে ২০ ইঞ্চি মাপের বড় টবে জল মিশিয়ে রেখে দিতে হবে। ১০ থেকে ১২ দিন পর টবের মাটি ভালো করে খুঁচিয়ে দিয়ে আরও ৪-৫ দিন রেখে দিতে হবে। ৪ থেকে ৫ দিন বাদে মিষ্টি তেঁতুলের একটি ভালো চারা ওই টবে লাগান।

পরিচর্যা(Caring):

চারা লাগানোর প্রথম কয়েক মাস তেমন যত্নের দরকার পড়বে না। অবশ্যই গাছে এই সময়টুকু পর্যাপ্ত জলের যোগান, এবং আগাছা পরিষ্কারের কাজ করতে হবে।  ছয় মাস চারা লাগানোর সময়সীমা ফুরোলেই ১ মাস বাদে বাদে গাছে সরষের খোল মিশ্রিত পচা জল দিতে হবে। মনে রাখতে  হবে খোল দেওয়ার আগে গাছের মাটি খুঁচিয়ে নিতে হবে।

রোগ দমন (Disease management):

সাধারণত থাই মিষ্টি তেঁতুল গাছে পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখা যায় না। কিন্তু বর্ষাকালে অনেক সময় তেঁতুল গাছে ছত্রাক হানা দেয়। এর ফলে তেঁতুল ফেটে যায়। এই অসুবিধার থেকে গাছকে বাঁচাতে হলে, বর্ষাকাল আসার আগেই ভালো ছত্রাকনাশক ওষুধ ১০ দিন অন্তর গাছে স্প্রে করে ছড়িয়ে দিতে হবে।

বাংলার বেজায় টক তেঁতুলের সঙ্গে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কোনও তুলনাই চলে না। অত্যন্ত মিষ্টি খেতে এই তেঁতুল থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়ায় চাষ প্রভূত পরিমাণে হলেও, আমাদের রাজ্য এই ফলের চাষ এখনও ততটা গতি পায়নি। কিন্তু আপনি আপনার ব্যালকনি অথবা ছাদে সহজেই এই থাই তেঁতুলের গাছ লাগাতে পারেন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশক: শাইখ সিরাজ
© ২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। দা এগ্রো নিউজ, ফিশ এক্সপার্ট লিমিটেডের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। ৫১/এ/৩ পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থাপথ, ঢাকা -১২০৫
ফোন: ০১৭১২-৭৪২২১৭
ইমেইল: info@agronewstoday.com, theagronewsbd@gmail.com