আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

দৈনন্দিন

খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা এবং কৃষি পণ্যের অপচয়রোধে চ্যালেঞ্জ ও করণীয়

বাংলাদেশের কৃষি গত কয়েক দশকের গবেষণা, সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের নিরলস প্রচেষ্টায় বিংশ শতাব্দী পেরিয়ে একবিংশ শতাব্দীতে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জনের মাধ্যমে সারা বিশ্বে এখন কৃষির অন্যতম রোল মডেল। ফসলের নিবিড়তা কয়েকগুন বৃদ্ধির মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন উল্লেখযোগ্যহারে বৃদ্ধি পেয়েছে, দানা শস্যে হয়েছে স্বয়ংসর্ম্পূণ। অনেক কৃষিপণ্যেই আমাদের দেশের অবস্থান বিশ্বে এক হতে দশের মধ্যে। দেশের জনসংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষির বহুমুখী কর্মকান্ডের ক্ষেত্রও বেড়েছে। অনেকেই কৃষিকে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচিত করায় নতুন নতুন কৃষিপণ্য উৎপাদনে এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। তরুন ও যুবক বয়সের অনেকেই হচ্ছে উদ্যোক্তা এবং স্বপ্ন চেখছে কৃষিপণ্য রপ্তানী করতে ভুমিকা রাখার। ইতোমধ্যে কৃষি বান্ধব সরকার কৃষিকে বাণিজ্যিকীকরণে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। কৃষকের পণ্য সরাসরি বিক্রয়ের জন্য চালু হয়েছে কৃষকের বাজার। ই-কৃষির ফলস্বরুপ-বিভিন্ন অনলাইন ভিত্তিক প্লাটফরম চালু হয়েছে যা কৃষিপণ্যকে সরাসরি ক্রেতার নাগালের নিয়ে এসেছে। এতদ্সত্ত্বেও কৃষিপণ্যের সংগ্রহোত্তর অপচয়ের পরিমান বিশেষ করে ফল ও সবজিতে শতকরা ২৫ – ৪৫ এবং মৌসুমে এর পরিমান অনেক বেশি যা টাকার অংকে দশ হাজার কোটি টাকার উপরে। কৃষি উৎপাদন বহুলাংশে বৃদ্ধি পেলেও অপচয় কমানো এখন সময়ের দাবি।


উৎপাদিত কৃষি পণ্যকে সরাসরি প্রক্রিয়াজাতকরণ করতে যথাযথ প্রযুক্তির ব্যবহার এবং কৃষিপণ্য বাণিজ্যিকীকরণে রয়েছে বহুবিধ চ্যালেঞ্জ। পৃথিবীর অনেক দেশে কৃষি পণ্যের প্রক্রিয়াজাতকরণকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে কৃষিপণ্যকে বাণিজ্যিকীকরণ করা হয়েছে যার উদাহরণ- উৎপাদিত কৃষিপণ্যের ৮৩% মালয়েশিয়া, ৭৮% ফিলিপাইন, ৭০% ব্রাজিল, ৭০% যুক্তরাস্ট্র, ২.৫% ভারতে সেখানে বাংলাদেশে মাত্র প্রায় ১%। উন্নত দেশে সকল পর্যায়ের উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হয়েছে এবং বিপণন নীতি, মানদন্ড ও সার্টিফিকেশন সহজীকরণ করা হয়েছে ফলে প্রক্রিয়াজাতকৃত কৃষিপণ্য হয়েছে মানসম্মত ও রপ্তানীযোগ্য।
ভরা মৌসুমে কৃষিপণ্যের দাম অল্প থাকায় প্রায়ই কৃষক ন্যায্য মূল্য হতে বঞ্চিত হয়ে থাকে। সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনার অভাবে অপচয়ের পরিমানও সেই সময় বাড়তে থাকে যা খাদ্য ও পুষ্ঠি নিরাপত্তার জন্য হুমকীস্বরুপ। শরীরকে সুস্থ রাখতে বছরজুড়ে পুষ্ঠি সমৃদ্ধ খাদ্য সকলের জন্য নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ। প্রক্রিয়াজাতকৃত খাদ্যপণ্য এ ক্ষেত্রে বিরাট ভুমিকা পালন করে। কৃষিপণ্যকে প্রক্রিয়াজাতকরণ করা হলে তা একদিকে যেমন দেশের মানুষের আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে অন্যদিকে খাদ্য ও পুষ্ঠি নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। আবার মানসম্মত খাদ্যপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ করা গেলে তা বিদেশে রপ্তানীর সুযোগ সৃষ্টি করবে।
রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য মোতাবেক বাংলাদেশ ২০১৫ – ২০১৬ সালে পৃথিবীর ১৪ টি অঞ্চলের ১৯৪ টি দেশে প্রায় ৩৪,২৫৭ মিলিয়ন ইউএস ডলার মূল্যের বিভিন্ন উৎপাদিত সামগ্রী রপ্তানী করে। উৎপাদিত পণ্য শতকরা প্রায় ৫৫ ভাগ ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশে, শতকরা প্রায় ২৩ ভাগ আমেরিকা অঞ্চলে, শতকরা প্রায় ১১ ভাগ এশিয়াতে, শতকরা প্রায় ২ ভাগ মধ্যপ্রাচ্যে ও অবশিষ্ট উৎপাদিত পণ্য অন্যান্য অঞ্চলে রপ্তানী করা হয়। উৎপাদিত পণ্যের মধ্যে প্রায় ১১৩২ মিলিয়ন ইউএস ডলার মূল্যের প্রক্রিয়াজাতকরণকৃত কৃষি পণ্য যেমন- হিমায়িত, সতেজ ফল ও সবজির জুস, জ্যাম, জেলী, আচার, চাটনী ইত্যাদি রয়েছে যা মোট রপ্তানী মূল্যের মাত্র শতকরা ৩.৩০ ভাগ। আমাদের উৎপাদিত অনেক কৃষি পণ্যের মধ্যে আম, কলা, আনারস, কাঁঠাল, মিষ্টি লাউ, কচুর লতি ইত্যাদি উৎকৃষ্টমানের হওয়ায় যথাযথ প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যবস্থাপনা ও প্রযুক্তির যথাযথ প্রয়োগ সম্প্রসারণ করা গেলে দেশের চাহিদা পূরনের পাশাপাশি ইউরোপ, আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, মধ্যপ্রাচ্যসহ অন্যান্য দেশে অধিক পরিমানে রপ্তানী বৃদ্ধির সম্ভাবনা তৈরি হবে যা দেশের অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখবে পাশাপাশি কৃষি শিল্পের বিকাশকে ত্বরান্বিত করবে।


কৃষিপণ্য বাণিজ্যিকীকরণে সকল পর্যায়ের উদ্যোক্তার অংশগ্রহণকে প্রাধান্য দেয়া প্রয়োজন। কৃষিপণ্যের অপচয় কমাতে স্থানীয় পর্যায়ে ক্ষুদ্র ও মাঝারী উদ্যোক্তাদের প্রক্রিয়াজাতকরণে উৎসাহিত করতে স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋনের ব্যবস্থা গ্রহণ, পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা অর্জন, উত্তম কৃষি চর্চা, স্বাস্থ্যসম্মত ব্যবস্থাপনা, উপযুক্ত প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রযুক্তি, নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে বিধি-বিধান বা খাদ্য আইন বিষয়ক ইত্যাদি সম্পর্কে অবহিত করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে উপযুক্ত মোড়কজাত দ্রব্যাদি, নূন্যতম ক্ষুদ্র যন্ত্রপাতি সরবরাহ ও প্রক্রিয়াজাতকৃত কৃষিপণ্য বিপণন করতে লাইসেন্সিং এর ব্যবস্থা সহজীকরণ নিশ্চিত করা যাতে উদ্যোক্তারা নূন্যতম ফি প্রদান ও স্বল্প সময়ের মাধ্যমে বিপণন কার্যক্রম নিশ্চিত করতে পারে।

প্রক্রিয়াজাতকরণ কাজে ক্ষুদ্র যন্ত্রপাতি সরবরাহ করতে উদ্যোগ গ্রহণ করা
যথাযথ ভাবে প্রক্রিয়াজাতকরণ কাজে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ব্যবহারের মাধ্যমে গুনগতমান সম্পন্ন খাদ্য তৈরি করতে ড্রায়ার, স্লাইসার, রিফ্রাক্টোমিটার, জুস এক্সট্রাক্টর, সিলিং মেশিন, হাইড্রোকুলার, প্যাকেজিং মেশিন ইত্যাদি সরবরাহ করা গেলে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাগণ সহজেই শুকনো খাদ্য দ্রব্য যেমন- ফলমুল ও শাকসবজি শুকানো, আচার, চাটনী, জুস, জেলী, জ্যাম ইত্যাদি তৈরি করতে পারবে। ভরা মৌসুমের সময় অনেক সময় এক নাগাড়ে কয়েকদিন বৃষ্টি হলে সে সময় ড্রায়ার অপরিহার্য। এছাড়া রৌদ্রে শুকানোর সময় অনেক সময় পশু-পাখি, মোকা-মাকড়, ধুলা বালি খাদ্য দ্রব্যে পড়ার সম্ভাবনা থাকে এতে রোগ-জীবাণুর আক্রমণের ব্যাপক সম্ভাবনাও সৃষ্টি হয়। হ্যান্ড রিফ্রাক্টোমিটার ব্যবহার করে সঠিকভাবে ফলের জ্যাম, জেলী, টমেটো সস, ড্রাইড প্রডাক্ট তৈরি করা যায়।
কাঁচামাল সরবরাহ ও সহজলভ্য করতে উদ্যোগ গ্রহণ করা
স্থানীয় পর্যায়ের উদ্যোক্তা ভরা মৌসুমে ফলমুল ও শাকসবজি যেমন-আম, আনারস, পেঁেপ, কাঁঠাল, আমড়া, চালতা, জলপাই, টমেটো ফুলকপি, বাঁধাকপি, গাজর, বরবটি, মটরশুটি ইত্যাদি স্বল্প মুল্যে ক্রয় করে সারা বছর ব্যবহার করার জন্য সংরক্ষণ করে রাখতে পারে কিন্তু ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় রাসায়নিক দ্রব্য সংগ্রহ করতে না পারায় তা সম্ভব হয় না। ফলে উদ্যোক্তা আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। কিন্তু রাসায়নিক সামগ্রী সহজলভ্য করা হলে এবং স্থানীয় উদ্যোক্তাদের স্বল্পমুল্যে সরবরাহ করা হলে তারা অনায়াসে ফলমুল সংরক্ষণ করে সারা বছর মানসম্মত খাদ্য তৈরি করতে পারবে এবং তা বিপণন করতেও সক্ষম হবে।


প্যাকেজিং প্রযুক্তির সম্প্রসারণ ও সহজলভ্য করতে উদ্যোগ গ্রহণ করা
অল্প পুরুত্বের পলিপ্রোপাইলিন প্যাকেটে সাধারণত: খাদ্য দ্রব্য প্যাকেটজাতকরণ কাজে ব্যবহার করা হয় যা মানসম্মত নয়। কিন্তু ফুড গ্রেড প্যাকেট আমাদের দেশে সহজলভ্য নয় আবার তা ব্যয়বহুল। স্থানীয় পর্যায়ের উদ্যোক্তার জন্য একটি নির্দিষ্ট খাদ্য সামগ্রীর আকার অনুযায়ী প্যাকেট ক্রয় করতে যে পরিমান বিনিয়োগ করা প্রয়োজন তা উদ্যোক্তার জন্য কষ্টসাধ্য। প্যাকেজিং উপকরণ আমদানীতে শূল্ক হ্রাস করা বা প্রয়োজনে শূল্ক প্রত্যাহার, প্যাকেজিং উপকরণ দেশে উৎপাদনের ব্যবস্থা গ্রহণ, প্যাকেজিং যন্ত্রপাতি স্থাপনে উৎসাহিত করা ইত্যাদি ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে প্যাকেট ও প্যাকেটজাত দ্রব্য সহজলভ্য এবং ব্যাপক সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া হলে স্থানীয় পর্যায়ের উদ্যোক্তা উৎসাহী হবে এবং ভোক্তা নির্দ্বিধায় প্রক্রিয়াজাতকরণকৃত খাদ্য সামগ্রী ক্রয় করতে আগ্রহী হবে।


প্রক্রিয়াজাতকরণকৃত খাদ্য সামগ্রী তৈরির কাজে ক্ষুদ্র ঋন প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করা
প্রক্রিয়াজাতকরণ কাজে কাচাঁমাল ক্রয় করতে অর্থের প্রয়োজন। এক্ষেত্রে সরকারী ব্যাংকের মাধ্যমে স্বল্প সুদে ঋনের ব্যবস্থা করা হলে উদ্যোক্তাগণ কিস্তিতে সহজেই প্রক্রিয়াজাতকরণকৃত খাদ্য সামগ্রী বিক্রয় করে ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করতে পারবে। ফলে উদ্যোক্তাগণ ধীরে ধীরে তাঁর ব্যবসাকে সম্প্রসারণ করতে পারবে যা তাঁকে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান করবে, দারিদ্রের অবসান ঘটবে ও পরিবারের সদস্যের আত্মকর্মসংস্থানেরও সুযোগ সৃষ্টি হবে।
উদ্যোক্তাদের হাতেকলমে প্রশিক্ষণ প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করা
স্থানীয় পর্যায়ের উদ্যোক্তাদের প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রযুক্তির প্রয়োগ, যন্ত্রপাতির ব্যবহার, নিজের স্বাস্থ্য সুরক্ষা, স্বাস্থ্য সম্মত পরিবেশে তৈরি করা, খাদ্য দ্রব্য যথাযথ সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণসহ অন্যান্য মানদন্ড বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করার মাধ্যমে অবহিত করা ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা প্রদান করা। প্রশিক্ষণ প্রদানে সরকারী প্রতিষ্ঠান যেমন-কৃষি সম্প্রসারণ, কৃষি গবেষণা, কৃষি বিপণন, বিসিক, বারটান, বিসিএসআইআর, বিএসটিআইসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অভিজ্ঞ কর্মকর্তাবৃন্দ সরাসরি যুক্ত থাকলে তা অধিক ফলপ্রসূ হবে এবং উদ্যোক্তাদের আস্থা বৃদ্ধি পাবে। প্রশিক্ষণে বিশেষ করে নারীদের অধিকহারে অর্ন্তভুক্ত করতে হবে, প্রয়োজনে পুরো পরিবারকে প্রশিক্ষণ দেয়া যেতে পারে।


স্থানীয় উদ্যোক্তাদের সাথে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সংযোগ স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ
স্থানীয় উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে প্রক্রিয়াজাতকরণকৃত খাদ্য সামগ্রী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিপণন ও কাঁচামাল হিসেবে সরবরাহ নিশ্চিত করতে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সাথে আন্ত:সংযোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। উদ্যোক্তা নিশ্চয়তা পেলে ভরা মৌসুমে অধিক পরিমানে বিভিন্ন ফলমুল ও শাকসবজি সহজেই সংরক্ষণ করতে পারবে এবং তা নিজ দেশের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করবে। ফলে কৃষি ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলো বছর ব্যাপী খাদ্য সামগ্রী প্রক্রিয়াজাতকরণ কাজে নিয়োজিত থাকবে এবং অনায়াসে তৈরিকৃত খাবার সকলের নিকট বিক্রয় করতে পারবে। ফলে ফসলের সংগ্রহোত্তর অপচয় কমবে, বিভিন্ন রকম খাবার শহর ও স্থানীয় বাজারে ধীরে ধীরে সহজলভ্য হবে এবং ভোক্তা সহজেই স্থানীয় বাজার হতে সংগ্রহ করে বিক্রয় করতে পারবে।


প্রক্রিয়াজাতকরণ কাজে প্যাকহাউজ ও কুলবুট স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ
সতেজ ফলমুল ও শাকসবজি মাঠ হতে সংগ্রহ করার পর এর শ^সন প্রক্রিয়া দ্রুত চলতে থাকে ফলে গুনগতমানের অপচয় হয় এবং দ্রুত নষ্ট হতে শুরু করে। এক্ষেত্রে সংগ্রহোত্তর পরিচর্যা ও প্রক্রিয়াজাতকরণ করার জন্য প্যাকিং হাউজ সুবিধা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যেখানে সর্টিং, গ্রেডিং, ওয়াশিং, প্যাকিং এবং প্যাকেজিং সুবিধা নিশ্চিত করা যাবে। খাদ্য প্রস্তুতকরণ কাজে স্বাস্থ্যসম্মত ব্যবস্থা ও প্রক্রিয়াজাতকরণকৃত কৃষিপণ্য সংরক্ষণ করার জন্য প্যাকিং হাউজ ব্যবহার অপরিহার্য। উদ্যোক্তাগণকে অঞ্চলভিত্তিক গ্রুপ গঠন করে প্যাকিং হাউজ ব্যবহার ও নিজ উদ্যোগে রক্ষণাবেক্ষণ করার মাধ্যমে স্বল্প খরচে প্রয়োজন অনুযায়ী কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ কাজ অনায়াসে করতে পারবে। কুলবুট স্থাপনা মিনি কোল্ড স্টোরেজের ন্যায় কাজ করে। একটি নির্দিষ্ট রুমকে ইনসুলেটর দিয়ে আবৃত করে উক্ত রুমে এয়ার কন্ডিশনার সংযোগ ও আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রনের ব্যবস্থা নিলে সতেজ ও প্রক্রিয়াজাতকৃত কৃষিপণ্যকে দীর্ঘ সময় গুনগতমান অক্ষুন্ন রেখে সংরক্ষণ করা যায়। সরকারী অর্থায়নে ও সমবায় সমিতির মাধ্যমে প্যাকহাউজ ও কুলবুট প্রযুক্তি নির্মান করা গেলে স্থানীয় পর্যায়ের উদ্যোক্তাগণ কৃষিজাত দ্রব্যাদি অনায়াসে সংরক্ষণ করতে সক্ষম হবেন।


স্থানীয় পর্যায়ের উদ্যোক্তাদের কৃষিপণ্য বিপণনের জন্য নূন্যতম বিধি-বিধান প্রনয়ণের উদ্যোগ গ্রহণ
প্রক্রিয়াজাতকরণকৃত পণ্যের বিপণন ব্যবস্থা সম্প্রসারণে স্থানীয় পর্যায়ে বিপণনের জন্য স্বত্যন্ত্র বিধি-বিধান বা ব্যবসা নীতি থাকা প্রয়োজন যা স্থানীয় একটি রেগুলেটরী প্রতিষ্ঠান (বাংলাদেশ স্টান্ডার্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট-বিএসটিআই এর অনুরুপ একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে। স্থানীয় প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্ব হবে নূন্যতম স্বাস্থ্য সম্মত ব্যবস্থা মেনা চলার শর্তগুলো তৈরি করা ও সার্বক্ষনিক তা পর্যবেক্ষণ করা এবং সেটির নাম মূল্যে লাইসেন্সিং এর ব্যবস্থা করে দেয়া, লাইসেন্স নবায়ন করা ও প্রয়োজনে বাতিল করা, খাদ্য পণ্যের নূন্যতম মানদন্ড (গুনগতমান) নিরুপন করা ও প্রয়োজন অনুযায়ী পর্যবেক্ষণ করা, প্রক্রিয়াজাতকরণকৃত পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে ভোক্তাদের অভিযোগকে তাৎক্ষনিক মূল্যায়ন করা ও প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেয়া। এই প্রতিষ্ঠানটি নূন্যতম বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিবে যেমন: মোড়কজাতকরণ, পণ্যের তথ্যসহ মোড়কের গায়ে লেবেলিং, খাদ্য পণ্যের নির্ধারিত মূল্য, প্রক্রিয়াজাতকরণকৃত খাবার সর্বোচ্চ কত দিন ব্যবহার করা যাবে সেটির তারিখ উল্লেখ থাকা ইত্যাদি যা প্রচলিত আইন ও বিধি-বিধান এর সহিত সামঞ্জ্য রেখে তৈরি করবে। এখানে স্থানীয় উদ্যোক্তা খাদ্য আইন বা বিধি-বিধান অনুসরণ করে নির্দিষ্ট পরিমান যেমন-ক্ষুদ্র উদ্যেক্তা প্রতি মাসে ২ লক্ষ টাকা ও মাঝারী পর্যায়ের উদ্যোক্তা প্রতি মাসে ৪ লক্ষ টাকা পর্যন্ত কৃষিপণ্য বিপণন করতে পারবে। ফলে উদ্যোক্তাগণ অতি সহজেই খাদ্য সামগ্রী তৈরি করে নিজেই বিপণন করতে আগ্রহী হবে এবং উৎসাহিত হয়ে ব্যবসা সম্প্রসারণে উদ্বুদ্ধ হবে।

  1. ড. মো: গোলাম ফেরদৌস চৌধুরী
    উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা
    ও খাদ্য প্রযুক্তি বিষয়ক গবেষক
    পোস্টহারভেস্ট টেকনোলজি বিভাগ
    বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, গাজীপুর
    ই-মেইল: ferdous613@gmail.com

বিজ্ঞাপন
মন্তব্য করুন

অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন

Leave a Reply

দৈনন্দিন

নিপাহ্‌ ভাইরাসঃ খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়

নিপাহ্‌ ভাইরাস খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়
নিপাহ্‌ ভাইরাস খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়
খেজুরের রস সংগ্রহের প্রক্রিয়া।

শীতকাল এলেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে খেজুরের রস খাওয়ার চল বেড়ে যায়। অনেকে গাছ থেকে খেজুরের কলসি নামিয়ে সরাসরি কাঁচা রস খেয়ে থাকেন।

আবার অনেকে এই রস চুলায় ফুটিয়ে সিরাপ, পায়েস বা ক্ষীর বানিয়ে খান। এছাড়া রসের তৈরি ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়, ভেলি গুড়, বালুয়া গুড়, মিছরি গুড়সহ নানা ধরণের পিঠার বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।

নিপাহ্‌ ভাইরাস আতঙ্ক

খেজুর আরব দেশের প্রচলিত ফল হলেও ওইসব দেশে খেজুর, মূলত ফল উৎপাদননির্ভর, যেখানে কিনা বাংলাদেশের খেজুর গাছ রস উৎপাদননির্ভর।

কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, বাংলাদেশে সাধারণত কার্তিক থেকে মাঘ অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ হয়ে থাকে।

দেশটির সবচেয়ে বেশি রস সংগ্রহ হয় যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে।

মূলত খেজুর গাছের ডালপালা পরিষ্কার করে, ডগার দিকের কাণ্ড চেঁছে তাতে একটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি চোঙ বসিয়ে দেয়া হয়। চোঙের শেষ প্রান্তে ঝুলিয়ে দেয়া হয় একটি মাটির হাড়ি বা কলসি।

সেই চোঙ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রস এসে জমা হতে থাকে মাটির হাড়ি বা কলসিতে। এভাবে একটি গাছ থেকে দৈনিক গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লিটার রস সংগ্রহ করা যায় বলে কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গিয়েছে।

কিন্তু গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে নিপাহ্‌ ভাইরাস আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

দৈনন্দিন

কই মাছে বাঁধাকপির ছেঁচকি – দা এগ্রো নিউজ

কই মাছে বাঁধাকপির ছেঁচকি
কই মাছে বাঁধাকপির ছেঁচকি

উপকরণ: বাঁধাকপির কুচি ৪ কাপ, কই মাছের টুকরো ৬টি, তেজপাতা ১টি, শুকনো মরিচ ২টি, মেথি অল্প পরিমাণ, মরিচবাটা ১ চা-চামচ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, লবণ পরিমাণমতো, নারকেল কোরানো স্বল্প পরিমাণে, হলুদ পরিমাণমতো ও সরিষার তেল পরিমাণমতো।

প্রণালি: তেলে শুকনো মরিচ ও মেথি ফোড়ন দিতে হবে। ফোড়ন হয়ে এলে হালকা করে ভেজে উঠিয়ে রাখতে হবে। ওই তেলেই বাঁধাকপির কুচি ও পেঁয়াজ কুচি দিয়ে ভালো করে কষে নিতে হবে। তারপর লবণ, মরিচ ও হলুদবাটা দিয়ে আরও কিছুক্ষণ বসাতে হবে। সেদ্ধ হয়ে এলে অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে ভাজা মাছগুলো দিয়ে ঢাকা দিতে হবে। পানি শুকিয়ে গেলে এবং মাছ সেদ্ধ হয়ে এলে অল্প পরিমাণ নারকেল কোরানো দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

দৈনন্দিন

ধনেপাতা ও টমেটোয় শোল মাছ – দা এগ্রো নিউজ

ধনেপাতা ও টমেটোয় শোল মাছ
ধনেপাতা ও টমেটোয় শোল মাছ

উপকরণ: বড় শোল মাছ ৫০০ গ্রাম, টমেটো টুকরো আধা কাপ, সরিষার তেল ৩ টেবিল চামচ, টমেটোবাটা আধা কাপ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, আদাবাটা ১ চা-চামচ, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, হলুদ গুঁড়া ১ চা-চামচ, ধনেপাতা আধা কাপ, শুকনো মরিচের গুঁড়া ১ চা-চামচ, লবণ স্বাদ অনুসারে ও কাঁচা মরিচ ৭-৮টি (চেরা)।

প্রণালি: শোল মাছ লবণ, হলুদ ও সরিষার তেল মাখিয়ে ভেজে তুলে রাখতে হবে। আর ওই তেলেই পেঁয়াজ কুচি দিতে হবে। পেঁয়াজ বাদামি রং হলে রসুন, আদা, মরিচের গুঁড়া, হলুদ ও লবণ দিয়ে ভালোভাবে কষাতে হবে। টমেটোবাটা দিতে হবে, কিছুক্ষণ কষানোর পর প্রয়োজনমতো গরম পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে ভেজে রাখা মাছগুলো দিতে হবে। ঝোল মাখা-মাখা হলে টমেটোর টুকরো আর ধনেপাতা দিয়ে কিছুক্ষণ পর নামিয়ে ফেলতে হবে। নামানোর আগে কাঁচা মরিচ দিতে হবে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

দৈনন্দিন

লাউ টাকি – দা এগ্রো নিউজ

লাউ-টাকি
লাউ-টাকি

উপকরণ: ছোট টুকরো করে কাটা টাকি মাছ ২ কাপ, ডুমো ডুমো করে কাটা লাউ ৪ কাপ, হলুদ সিকি চা-চামচ, লবণ পরিমাণমতো, পেঁয়াজ ১ কাপ, ধনেপাতা কুচি পরিমাণমতো, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, কাঁচা মরিচ ১০-১২টি, আদাবাটা আধা চা-চামচ ও রাঁধুনি বাটা সিকি চা-চামচ।

প্রণালি: তেলে পেঁয়াজ দিয়ে হালকা করে ভেজে নিতে হবে। তারপর একে একে রসুনবাটা, আদাবাটা ও রাধুনি (গুঁড়া সজ) বাটা ও হলুদের গুঁড়া দিয়ে ভালো করে কষাতে হবে। কষানো হলে লাউ দিতে হবে। লাউ দিয়ে কিছুক্ষণ কষিয়ে অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে আগে থেকে হালকা করে ভেজে রাখা টাকি মাছ দিতে হবে। পানি শুকিয়ে এলে কাঁচা মরিচের ফালি ও সবশেষে ধনেপাতা দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

দৈনন্দিন

বাঁধাকপির পাতায় চিংড়ি – দা এগ্রো নিউজ

বাঁধাকপির পাতায় চিংড়ি
বাঁধাকপির পাতায় চিংড়ি

উপকরণ: চিংড়ি মাছ ২০০ গ্রাম, সয়াবিন তেল পরিমাণমতো, বাঁধাকপি কুচি ১ কাপ, ক্যাপসিকাম কুচি ১ কাপ, টমেটো কুচি আধা কাপ, পেঁয়াজপাতা কুচি ১ কাপ, কাঁচা মরিচবাটা ১ চা-চামচ, ধনেপাতাবাটা ১ চা-চামচ, হলুদের গুঁড়া পরিমাণমতো, চিলি সস ২ চা-চামচ, টমেটো সস ২ চা-চামচ, বাঁধাকপির ভেতরের পাতা ৪টি, ভিনেগার ২ চা-চামচ, রসুন ১ চা-চামচ ও লবণ স্বাদমতো।

প্রণালি: বাঁধাকপির শক্ত অংশ ফেলে দিন। পাতার ভেতরের অংশ একটু ভাপিয়ে রাখুন। মাছ ধুয়ে ভিনেগার মাখিয়ে রাখুন। এবার কড়াইয়ে সয়াবিন তেল গরম হলে তাতে রসুন কুচি দিয়ে মাছগুলো দিন। একে একে কোঁচানো বাঁধাকপি, ক্যাপসিকাম, টমেটো ও পেঁয়াজপাতা দিয়ে নেড়েচেড়ে নিন। এরপর কাঁচা মরিচবাটা, ধনেপাতাবাটা, চিলি সস ও টমেটো সস দিয়ে নেড়ে নিন। পানি শুকিয়ে এলে নামিয়ে বাঁধাকপির পাতায় অল্প করে চিংড়ি মাছ সুতা দিয়ে বেঁধে স্টিমারে ভাপিয়ে নিন। সুতো কেটে পাতা খুলে পরিবেশন করুন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশক: শাইখ সিরাজ
© ২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। দা এগ্রো নিউজ, ফিশ এক্সপার্ট লিমিটেডের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। ৫১/এ/৩ পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থাপথ, ঢাকা -১২০৫
ফোন: ০১৭১২-৭৪২২১৭
ইমেইল: info@agronewstoday.com, theagronewsbd@gmail.com