আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

পরিবেশ

ক্ষতবিক্ষত নৈসর্গিক শ্বাসমূলীয় বন

এখন আর আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না। বিষ দিয়ে চলছে সর্বনাশা মাছ শিকার। ধ্বংস হচ্ছে লাখ লাখ রেণুপোনা। মাছ ধরতে ধরতেই এসব কথা বলছিলেন সুন্দরবনের সঙ্গে নাড়ির টানে বাঁধা আম্বিয়া খাতুন। এ নিবিড় সম্পর্কের মধ্যেই তারা ভালো থাকে।

আজ বিশ্ব ম্যানগ্রোভ বা শ্বাসমূলীয় বন দিবস। জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা বা ইউনেসকোর উদ্যোগে ২০১৬ সাল থেকে প্রতিবছর ২৬ জুলাই দিনটি পালিত হয়ে আসছে। ম্যানগ্রোভ ইকোসিস্টেমস বা শ্বাসমূলীয় বাস্তুসংস্থানের টেকসই সংরক্ষণ, ব্যবস্থাপনা ও ব্যবহার নিশ্চিত করতে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০১৫ সালে ইউনেসকো দিনটি বিশ্ব ম্যানগ্রোভ দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।

সুন্দরবন বিশ্বের বৃহত্তম শ্বাসমূলীয় বন। একই সঙ্গে বন, জলাভূমি, সামুদ্রিক ও উপকূলীয় বাস্তুতন্ত্রের সমন্বয়ে গঠিত এমন প্রাকৃতিক বন পৃথিবীতে দেখা যায় না। নজরকাড়া নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি এ বন সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্যে ভরপুর। সারা দেশের মেরুদণ্ডী ও অমেরুদণ্ডী প্রাণীর আনুমানিক মোট প্রজাতি ১১ হাজার ৮০০টির মধ্যে সুন্দরবনেই আছে ২ হাজার ২০০। বৈশ্বিকভাবে বিপদাপন্ন ৩১টির বেশি প্রজাতি আছে এখানে। সুন্দরবনে মোট উদ্ভিদ প্রজাতির সংখ্যা ৩৩৪। বিশ্বের মোট ৪৮ প্রজাতির শ্বাসমূলীয় বৃক্ষের মধ্যে সুন্দরবনেই রয়েছে ১৯টি। সুন্দরবনের প্রায় ৬২ শতাংশ বাংলাদেশে। পৃথিবীর বেশির ভাগ ম্যানগ্রোভ বনে দুই থেকে তিন প্রজাতির শ্বাসমূল রয়েছে। আর সুন্দরবনে ছয় ধরনের শ্বাসমূল দেখা যায়, যা বনটিকে স্বাতন্ত্র্য দিয়েছে।

বিশ্বমানচিত্রে বাংলাদেশের ঐশ্বর্য, মর্যাদা ও ঐতিহ্য তুলে ধরতে সুন্দরবনের বড় ভূমিকা রয়েছে। অনন্য গুরুত্ব বিবেচনায় ‘কনভেনশন অন ওয়েটল্যান্ডস’ ১৯৯২ সালে সুন্দরবনকে রামসার জলাভূমি অঞ্চল হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ জীববৈচিত্র্যপূর্ণ জলাভূমিগুলোকে রামসার এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। অসামান্য মূল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৯৭ সালে ইউনেসকো এই বনকে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত করে।

২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় আইলা, ২০০৭ সালে সিডর, ২০২০ সালে আম্পান ও ২০২১ সালে ইয়াসের গতি, প্রাণহানি ও সম্পদের অপূরণীয় ক্ষতি সুন্দরবন কমিয়ে দিয়েছে। সুন্দরবনের এই ভূমিকার কথা সেখানকার বনজীবীদের মধ্যেও পাওয়া যায়। বেসরকারি সংস্থা ‘উন্নয়ন অন্বেষণে’র মাঠভিত্তিক গবেষণাকালে বনজীবী খলিল ঢালী বলছিলেন, সুন্দরবন না থাকলে ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসে তাদের ঘরবাড়ির অস্তিত্বই থাকত না। বনের গাছাপালা ও জীবজন্তুর অনেক ক্ষতি হলেও বেঁচে যায় মানুষের জীবন ও জীবিকা।

‘বিপন্ন বিশ্ব ঐতিহ্যে’র ঝুঁকি

ভালোবাসা ও গর্বের এবং ক্রিকেট খেলায় এ দেশের শৌর্যবীর্যের প্রতীক সুন্দরবন নিয়ে ২০১৪ সাল থেকে বড় ধরনের উৎকণ্ঠার শুরু। ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্য কেন্দ্র ওই বছর জুলাই মাসে রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে আপত্তি তোলে। একই বছর ডিসেম্বর মাসে তেলবাহী জাহাজডুবির ঘটনার পর সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে অবৈধ নৌপথ নিয়ে আপত্তি ওঠে। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে সুন্দরবনে রামপালসহ অন্যান্য প্রকল্পের প্রভাব খতিয়ে দেখতে একটি মিশন পাঠানোর ঘোষণা দেয় ইউনেসকো। ২০১৬ সালের আগস্টে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বিশ্ব ঐতিহ্য ধরে রাখতে রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প সুন্দরবন থেকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া, ভারতের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সুন্দরবনে মিঠাপানির প্রবাহ বাড়ানো এবং সুন্দরবন ঘিরে বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রসহ যেসব শিল্পকারখানা গড়ে উঠছে, সে সম্পর্কে একটি পূর্ণাঙ্গ ও সমন্বিত পরিবেশগত প্রভাব সমীক্ষা করার তিনটি শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়।

সরকারের অনুরোধে সুন্দরবন ঘুরে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা ও নানা নথি পর্যালোচনা করে এ বছরের ১৬ জুন ইউনেসকোর ‘রিঅ্যাকটিভ মনিটরিং মিশনের’ এক প্রতিবেদনে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ বন্ধ রাখা, কোনো ভারী শিল্পকারখানার অনুমোদন না দেওয়া এবং ইতিমধ্যে গড়ে ওঠা শিল্পকারখানাগুলোর প্রভাব মূল্যায়নবিষয়ক সমীক্ষার শর্ত দেওয়া হয়েছে। তবে সুন্দরবনকে বিপন্ন বিশ্ব ঐতিহ্য বা লাল তালিকাভুক্ত করা হবে কি না, সে বিষয়ে আগামী বছর ইউনেসকোর সভায় সিদ্ধান্ত হবে। এর আগে ২০১৯ সালে কমিটির ৪৩তম সাধারণ সভায় সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় রাখতে ৯টি শর্ত দেওয়া হয়েছিল।

কমছে সবুজের বিস্তার ও ঘনত্ব

ষোড়শ শতাব্দীতে প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ আবুল ফজল তাঁর আইন-ই-আকবরি বইয়ে কুষ্টিয়া ও যশোর পর্যন্ত সুন্দরবনের বিস্তৃতির কথা উল্লেখ করেছেন। ১৭৭৬ সালে বাংলাদেশ অংশের বিস্তার ছিল ১৭ হাজার বর্গকিলোমিটার। ২০১৬ সালের এক হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশ অংশের বিস্তার ৬ হাজার ৪৬৭ বর্গকিলোমিটার।

বনে গাছপালার পরিমাণ মারাত্মকভাবে যে কমে গেছে, তা বনজীবী রজব সরদারও মনে করেন। তাঁর ভাষ্য, চারপাশে গাছপালা দেখা গেলেও ভেতরে ব্যাপক অঞ্চলজুড়ে ফাঁকা বা সামান্য গাছপালা দেখা যায়।

‘উন্নয়ন অন্বেষণে’র গবেষণা অনুযায়ী, খুলনার কয়রা অঞ্চলের নির্দিষ্ট এলাকায় দুই দশকে (২০০০-২০) বনের ঘনত্ব কমেছে প্রায় অর্ধেক। প্রথম দশকে (২০০০-১০) ব্যাপক হারে ঘন বন উজাড় হয়ে কমতে থাকে বনের বিস্তার। এ সময়ে পতিত জমি বৃদ্ধির হার তুলনামূলক কম থাকলেও পরবর্তী দশকে (২০১০-২০) প্রায় দ্বিগুণ হারে খালি বা পতিত জমির পরিমাণ বেড়েছে। অন্য এক হিসাবে রামপাল কয়লাভিত্তিক প্রকল্প এলাকায় মাত্র সাত বছরে প্রায় সাড়ে তিন হাজার একর বালু দিয়ে ভরাট করে ধূসর ভূমিতে পরিণত করা হয়েছে।

হুমকিতে প্রাণবৈচিত্র্য

আইইউসিএনের হিসাব অনুযায়ী, মোট ৪০টির বেশি প্রজাতির উভচর, সরীসৃপ, পাখি ও স্তন্যপায়ী প্রাণীকে মহাবিপন্ন বা সংকটাপন্ন হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। সুন্দরবনে বিপদগ্রস্ত বন্য প্রাণী প্রজাতির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত—বেঙ্গল টাইগার, অজগর, রাজগোখরা, অ্যাডজুট্যান্ট স্টর্ক পাখি বা হাড়গিলা, সাদা পেটের সমুদ্র ইগল, দুই প্রজাতির উদ্‌বিড়াল, মাসকেড ফিনফুট বা কালামুখ প্যারাপাখি, রিং লিজার্ড, মেছো বাঘ, স্যান্ডপাইপার বা চামচঠুঁটো বাটান পাখি, ইগল এবং লেজার অ্যাডজুট্যান্ট বা মদনটাক পাখি। বৈশ্বিকভাবে বিলুপ্তপ্রায় বাটাগুর বাসকা প্রজাতির কচ্ছপ সুন্দরবনে পাওয়া গেলেও এখন বিপন্ন। এ ছাড়া গাঙ্গেয় ডলফিন, ইরাবতী ডলফিন এবং লোনাপানির কুমির প্রজাতিও বিপন্ন। বর্তমানে লোনাপানির কুমির আছে মাত্র ১৯০টি, ইরাবতী ডলফিন ২০০টি এবং গাঙ্গেয় ডলফিন ১৬০টি। এ ছাড়া গত চার দশকে সুন্দরবন থেকে মাছ উৎপাদন কমেছে প্রায় ৫৬ শতাংশ।

সুন্দরবনের পাশের একটি গ্রামের হাসুবিবির অভিজ্ঞতাতেও ওই চিত্রের সাক্ষ্য মেলে। তিনি বলেন, ‘ছোটবেলায় এই নদীতে (শাখবাড়িয়া নদী) কুমির ভাসতে দেখেছি। শুশুক দেখা যেত। সব হারায়ে গেছে।’

সুন্দরবন ও দক্ষিণ উপকূলের নদ-নদীতে মৃত ডলফিন (শুশুক) ভেসে আসছে। ডলফিনের শরীরে জখমের চিহ্নও দেখা যায়। কুদ্দুস ঢালী বলছিলেন, ‘আগে অনেক শকুন, ইগল দেখতাম বনে। এখন কালেভদ্রেও এগুলো দেখা যায় না।’

বন থেকে মাছ, কাঁকড়া, চিংড়ি, মাছের রেণু ও অন্যান্য জলজ প্রাণী বেশি পরিমাণ আহরিত হচ্ছে। পানিতে বিষ দেওয়ায় ও ঘন জাল ব্যবহার করে মাছ ধরায় জলজ প্রাণী মারা যাচ্ছে। বিলুপ্ত হওয়ার ঝুঁকিতে নানা জলজ জীব। বিস্তার ক্রমশ ছোট হয়ে আসায় অনেক উদ্ভিদ প্রজাতির পরিমাণ কমছে। সবচেয়ে বেশি চলে যাচ্ছে সুন্দরীগাছ। বাণিজ্যিক চিংড়ি চাষে মাটিতে লবণাক্ততার আগ্রাসনে সুন্দরীর মতো কম লবণসহিষ্ণু গাছ মরতে বসেছে।

আন্তদেশীয় নদীতে উজানে বাঁধ নির্মাণে ভাটির নদীগুলোতে পানিপ্রবাহ কমে পলি জমে ও ভরাট হয়ে সুন্দরবনের ভূমির উচ্চতা দেড় থেকে দুই ফুট বাড়ায় জোয়ারের পানি আসতে পারছে না। পাতা ও গুল্মের পচন না হওয়ায় শুকিয়ে এখন অগ্নিকাণ্ড ঘটছে। গত দুই দশকে আগুন লেগেছে প্রায় ২৪ বার এবং অন্তত ৮২ একর বনভূমির গাছপালা পুড়েছে।

হারিয়ে যাওয়া চকরিয়া সুন্দরবন

কক্সবাজারের চকরিয়ায় ছিল দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সুন্দরবন। প্রাথমিকভাবে আয়তন ৪৫ হাজার ৫০০ একর থাকলেও পরবর্তী সময়ে সরকার বেশ কিছু অংশ কৃষিজমির জন্য বন্দোবস্ত করলে আয়তন দাঁড়ায় ২১ হাজার একর। এখন অস্তিত্ব নেই।

সম্প্রতি এখানে ম্যানগ্রোভ বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি সম্প্রসারণ করে বনটি ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সরকার নদী ও সাগরের মোহনায় জেগে ওঠা নতুন চরে বন ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ইতিবাচক উদ্যোগ নিয়েছে। অন্যদিকে দেশের বিভিন্ন প্রাকৃতিক বনভূমিতে সাফারি পার্ক নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে প্রকৃতি ও প্রাণবৈচিত্র্য হুমকিতে পড়বে।

সুন্দরবনের মৌয়ালরা এপ্রিল, মে ও জুন মাসে মধু সংগ্রহ করতে বনে যান। সুন্দরবনে আমার এক গবেষণার সময় কথা হয় খলিল ঢালীর সঙ্গে। তিনি জানান, তাঁরা মৌচাকের একটি নির্দিষ্ট অংশ (প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ) কেটে বাকি অংশ পরবর্তী প্রজননের জন্য রেখে দেন। ধাতব সরঞ্জাম ব্যবহার না করে হাত দিয়ে এবং আগুন না লাগিয়ে শুধু শুকনা পাতা দিয়ে ধোঁয়া তৈরি করায় অল্প বয়স্ক মৌমাছি মারা যায় না এবং মৌচাকটি পুনরায় ব্যবহার করা যায়।

গোলপাতা সংগ্রহকারীরা বছরে একাধিকবার একই অঞ্চল থেকে সংগ্রহ করেন না। পাতা প্রায় ৯ ফুট লম্বা হলেই কাটেন। জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নতুন গোলপাতা জন্মানোর সময় সংগ্রহ করেন না। কচি গাছ কাটা হয় না। এমনভাবে কাটেন, যাতে গাছের কেন্দ্রীয় পাতা এবং তার পাশের পাতার কোনো ক্ষতি না হয়।

বনজীবী হাবিবুর রহমান গাজীর ভাষ্য, তাঁরা হাত দিয়ে জাল বোনেন। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকম জাল দিয়ে মাছ ধরেন। হাতে বোনা জালে ছোট মাছ, রেণু বা ডিম নষ্ট হয় না। কিন্তু কারেন্ট জাল, বাইনজালে ছোট মাছ, রেণু মারা পড়ে। বহিরাগতদের এসব প্রথাগত কৌশল জানা থাকে না। মুনাফা লক্ষ্য হওয়ায় বহিরাগতরা অনিয়ন্ত্রিতভাবে বনজ সম্পদ সংগ্রহ করে।

লোকজ এবং প্রথাগত জ্ঞান ব্যবহার করে কমিউনিটিভিত্তিক মাছ, কাঁকড়া, চিংড়ি, শামুক এবং উদ্ভিদের সমন্বিত চাষব্যবস্থা উপকূলীয় অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে অত্যন্ত উপযুক্ত। এ প্রক্রিয়া বাণিজ্যিক চিংড়ি চাষের চেয়ে টেকসই, পরিবেশবান্ধব এবং লাভজনক।

সংরক্ষণে সম্মিলিত সহব্যবস্থাপনা

সরকার সুন্দরবনের ৫২ শতাংশ এলাকা অভয়ারণ্য ও চারপাশে ১০ কিলোমিটার এলাকা প্রতিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, এসব এলাকায় শিল্পকারখানা স্থাপন নিষেধ রয়েছে। কিন্তু সেখানে কারখানা স্থাপন থামানো যাচ্ছে না।

সরকারিভাবে দেশের ৪১টি এলাকাকে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়েছে। ২২টি সংরক্ষিত এলাকায় স্থানীয় জনসাধারণকে সম্পৃক্ত করে সহব্যবস্থাপনা পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। সংরক্ষিত এলাকাগুলোতে সরকার, স্থানীয় জনগণ এবং আইইউসিএনের মতো বিভিন্ন সংস্থার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বাঘ, ঘড়িয়াল, ডলফিন, শকুন ইত্যাদি প্রজাতি সংরক্ষণে ইতিবাচক ফল পাওয়া যাচ্ছে। সম্মিলিত উদ্যোগ নেওয়া গেলে বন্য প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা পাবে।

বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধার, ২০২০-পরবর্তী জীববৈচিত্র্য কাঠামো ও সামাজিক স্বাধীনতা

বিদ্যমান বন আইন ঔপনিবেশিক। মোদ্দা কথা, সুন্দরবন থেকে রাজস্ব আয়। কিন্তু স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করে প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং লোকজ ও প্রথাগত জ্ঞানকেন্দ্রিক টেকসই ব্যবহার আইনের ভিত্তি হওয়া জরুরি। বন আইন, ২০১৯ খসড়ায় বিভিন্ন দিকের ওপর মতামত চাওয়া হয়েছে। আইইউসিএন বাংলাদেশ জাতীয় কমিটির পক্ষ থেকে মতামত ও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

জীববৈচিত্র্য ও বাস্তুসংস্থানের টেকসই পুনরুদ্ধারে নতুন সুনির্দিষ্ট পথনকশা নির্ধারণ দরকার। ২০২০-পরবর্তী নতুন জীববৈচিত্র্য কাঠামো নির্ধারণের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই অভীষ্ট অর্জনে ও বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধার দশকে দেশের মোট স্থলভূমির ৩০ শতাংশ এবং জলভূমির ৩০ শতাংশের (৩০:৩০:৩০) সংরক্ষণ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা যেতে পারে।

স্থানীয় জনগণের কাছে সুন্দরবন এক নৈসর্গিক জীবন্ত সত্তা। মানুষ ও প্রকৃতির মধ্যে আন্তসম্পর্ক, পরস্পরনির্ভরশীলতা ও সহযোগিতার আধার ও আধেয়। প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের কৃত্রিম সীমানা নির্ধারণ নয়, বরং মানুষ, প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্যকে তার নিজের আবহে ভালো থাকাই সামাজিক স্বাধীনতা। সামাজিক স্বাধীনতা লালনের মাধ্যমে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকবে এবং মানুষ ও পরিবেশ উভয়েরই ভালো থাকা নিশ্চিত হবে।

বিজ্ঞাপন
মন্তব্য করুন

অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন

Leave a Reply

পরিবেশ

ছাদ বাগানের জন্য কয়েকটি টিপস

ছাদ বাগানীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। টবে, ড্রামে গাছ লাগানো হয়। কেউ ফল, কেউবা সবজির গাছ লাগান। কেউ সফল হন। কেউ সফল হন না। ছোট ছোট কিছু ভুল বাগানীরা করে থাকেন। সে কারণে যত্ন নিলেও ফল আসে না। এখানে ছাদ বাগানীদের জন্য কিছু টিপস দেয়া হলো, যা মানলে সফলতা পাওয়া সহজ হতে পারে।

প্রথমেই মনে রাখতে হবে, টবে বা ড্রামে গাছ লাগালে তাকে খাবার দিতে হবে। প্রকৃতিতে বিদ্যমান গাছের মতো সে খাবার সংগ্রহ করতে পারে না। রোগ-বালাই হলো কিনা সেটাও বুঝে ব্যবস্থা নিতে হবে। ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে।

১. মাটির সাথে অবশ্যই কিছু কোকোপিট মেশাবেন। গাছের গোড়া স্যাতস্যাতে হতে দিবেন না। স্যাতস্যাতে হলে অসংখ্য রোগ হবে। মাটি ভেজা থাকবে তবে স্যাতস্যাতে না। কেকোপিট মেশালে পানি কম দিলেও হবে। কোকোপিট (নারকেলের ছোবলার গুড়া) পানি ধরে রাখে। অতি বৃষ্টি হলে গোড়ায় পানি জমতে দেয় না। হালকা হওয়ায় ছাদে ওজনের চাপ পড়ে না। এছাড়া কোকোপিটে কিছু পুষ্টি উপাদান আছে। যা গাছের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। কোকোপিটে চারা দ্রুত গজায়, বড় হয়। মাটির চেয়ে কোকোপিটে চারা ভালো হয়।

২. গাছের জন্য বিরিয়ানি হলো সরিষার খৈল-পচা পানি। মাটির হাড়িতে খৈল পচাতে হবে। কমপক্ষে ৫ দিন। ৭ দিন কিংবা বা ১৫ দিন হলে উত্তম। অল্প পানিতে পচিয়ে তার সাথে আরো পানি মিশিয়ে দিতে হবে। এটি গাছের জন্য অত্যন্ত উপকারী। একটু গন্ধ হয়, তাই অল্প একটু গুড় দিতে পারেন। ছাদে হাড়িতে পচালে বাসায় গন্ধ আসবে না। বৃষ্টির সময় খৈল-পচা পানি দেবেন না। পুকুরের নিচে থাকা পাক কাদা গাছের জন্য খুব উপকারী।

৩. আমরা জানি, মাটিতে অসংখ্য ক্ষতিকর ছত্রাক থাকে। যা গাছকে মেরে ফেলার জন্য যথেস্ট। তাই মাটি রেডি করার সময় কিছুটা বায়োডামা সলিট দিবেন। এটি উপকারী ছত্রাক। মাটিতে ক্ষতিকারক উপাদানগুলো মেরে ফেলে। আবার জৈব সারের কাজও করে। গাছের জন্য মাটি হবে ঝুরঝুরে, হালকা।

৪. যাই লাগান না কেন, ভালো জাতের বীজ কিনা নিশ্চিত হয়ে নেবেন। ভালো বীজে ভালো ফসল হবে। নতুবা যতই যত্ন নেন না কেন, সব পরিশ্রম বেলাশেষে জলে যাবে। বীজ থেকে নিজে চারা করা উত্তম। কারণ বাজার থেকে যে চারা কিনবেন সেটার জাত ভালো হবে সে নিশ্চয়তা কোথায়? ছত্রাকনাশক দিয়ে বীজ শোধন করে নেয়া উত্তম। পদ্ধতি হলো- ছত্রাকনাশক দেয়া পানিতে কিছুটা সময় বীজ ভিজিয়ে রাখতে হবে। ম্যানসার, মেটারিল দুটি ছত্রাকনাশক।

৫. গাছ বেশি তো ফলন বেশি- এটি ভুল ধারণা। অল্প জায়গায় বেশি গাছ লাগানো যাবে না। গাছ পাতলা করে লাগাতে হবে। বেশি লাগালে গাছ প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাবে না। একটি ফলের ক্রেটে মাত্র দুটি গাছ। একটি টবে একটি গাছ। ক্রেট বা টবে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।

৬. ছাদে মাচা দেয়া সমস্যা। কারণ ঘুঁটি থাকে না। এ জন্য ফলের ক্রেটের চারপাশে লাঠি বেঁধে সহজে মাচা দেয়া যায়। লতাপাতা জাতীয় গাছ লাগানোর পাত্র একটু গভীর হলে উত্তম। গাছের জন্য সবচেয়ে বেশি ভালো জৈব সার হলো পাতা-পচা সার, তারপর ভার্মি কম্পোস্ট, তারপর গোবর সার। পাতা-পচা সার সহজলভ্য নয়। দাম বেশি। কিন্তু ভার্মি কম্পোস্ট সহজলভ্য। মাটির সঙ্গে মিনিমাম ৪০% জৈব সার দেয়া উত্তম।
৭. নিম কীটনাশককে ক্ষতিকারক পোকা-মাকড় খুব অপছন্দ করে। এটি দিলে তারা বিরক্ত বোধ করে। গাছে বাসা বাঁধতে পারে না। প্রতি সাত দিনে একবার সব গাছের পাতায় নিম কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। মাসে একবার ইপসম সল্ট স্প্রে করে দেয়া উত্তম। একইভাবে মাসে একবার পানির সঙ্গে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড মিশিয়ে স্প্রে করা ভালো।

৮. ডাটা, পুইশাক, লালশাক, ধনেপাতা এসব লাগাতে পারেন। মাত্র ২৫ দিনে খেতে পারবেন। লালশাক লাগালে নেট দিয়ে ঘিরে দেবেন। শাকপাতা লাগালে দ্রুত আউটপুট পাবেন। যা আপনাকে প্রেরণা দেবে। পুইশাক গাছের পাতায় দাগ হলে পাতা কেটে দিন। অথবা ছত্রাকনাশক স্প্রে করেন। অথবা গাছ উঠিয়ে আবার লাগান। ইউরিয়া সার দিলে পুইশাক দ্রুত বাড়বে। শশা গাছের বৃদ্বির জন্য ডিএপি সার দিলে ভালো হবে। শশা গাছে ছাড়া ছাড়া ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হয়। খুব রোদ, গাছের গোড়ায় মালচিং করে দিয়ে উত্তম ফল মিলবে। মালচিং হলো গাছের গোড়ায় বিশেষ পলিথিন কিংবা শুকনো পাতা, খড় দিয়ে ঢেকে দেয়া।

৯. ফুল আসার পরে প্রানোফিক্স অথবা মিরাকুরান গাছের পাতায় শেষ বিকালে স্প্রে করবেন। বাসায় দুইটি গ্রুপের ছত্রাকনাশক রাখা ভালো। যেমন- ম্যানসার, মেটারিল। ১৫ দিনে একবার স্প্রে করবেন। এগরোমিন্ড গোল্ড অনুখাদ্য বা অন্য কোনো অনুখাদ্য বাসায় রাখতে হবে। মাসে কমপক্ষে একবার স্প্রে করবেন। অতিরিক্ত গরম, বৃষ্টি, খাদ্যের অভাব, গাছ রোগাক্রান্ত, আবহাওয়া দ্রুত আপডাউন করা ইত্যাদি কারণে ফুল ঝরে পড়তে পারে। আবার পরাগায়ন না হলে ঝরে পড়তে পারে। এ জন্য হাতের মাধ্যমে পরাগায়ন করতে হবে। পুরুষ ফুলের পরাগদণ্ড নারী ফুলে গর্ভে ঘষে দিতে হবে।

১০. ছাদ বাগানে গাছ মারা যাওয়ার অন্যতম কারণ পানি বেশি বা কম দেয়া। যতটুকু লাগে ঠিক ততটুকু পানি দিতে হবে। কোন গাছের কি চাহিদা, রোগ একটু স্টাডি করলে সহজে সফল হতে পারবেন।

১১. গাছের পাতার নিচে খেয়াল করবেন। বেগুন গাছের পোকা মারার জন্য সেক্স ফোরেমান ফাঁদ লাগাবেন। ডগা ছিদ্র বা ফল ছিদ্র হলে সাইপারমেত্রিন গ্রুপের কীটনাশক দিতে হবে। একটি বেগুন গাছ অনেক দিন ফল দেয়। ঢেড়স গাছ বেশি রোদ পড়ে এমন জায়গায় লাগাবেন। বেগুন, ঢেড়স, লালশাক, পুইশাক, ধনেপাতা, ডাটা শাক- এসব গাছের খুব যত্ন করতে হয় না।

১২. রসুন আর লবঙ্গ বেটে সেই পানি গাছে স্প্রে করলে পোকা কম আসবে। মরিচ গাছে নেপথলিন বেঁধে দিন, পোকা কম আসবে। পাতা কোকড়ালে ভার্মিটেক কিংবা এবোম কীটনাশক দিন। কোকড়ানো পাতা ফেলে দিন। মরিচ গাছে দশ দিন পর পর ডায়মেথট গ্রুপের (যেমন টাফগর) কীটনাশক দিলে উপকার হবে। সবকিছু করছেন, তারপরও কাজ হচ্ছে না। এক্ষেত্রে গাছের জায়গা বদল করেন, উঠিয়ে অন্যত্র লাগান।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

দৈনন্দিন

নিপাহ্‌ ভাইরাসঃ খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়

নিপাহ্‌ ভাইরাস খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়
নিপাহ্‌ ভাইরাস খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়
খেজুরের রস সংগ্রহের প্রক্রিয়া।

শীতকাল এলেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে খেজুরের রস খাওয়ার চল বেড়ে যায়। অনেকে গাছ থেকে খেজুরের কলসি নামিয়ে সরাসরি কাঁচা রস খেয়ে থাকেন।

আবার অনেকে এই রস চুলায় ফুটিয়ে সিরাপ, পায়েস বা ক্ষীর বানিয়ে খান। এছাড়া রসের তৈরি ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়, ভেলি গুড়, বালুয়া গুড়, মিছরি গুড়সহ নানা ধরণের পিঠার বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।

নিপাহ্‌ ভাইরাস আতঙ্ক

খেজুর আরব দেশের প্রচলিত ফল হলেও ওইসব দেশে খেজুর, মূলত ফল উৎপাদননির্ভর, যেখানে কিনা বাংলাদেশের খেজুর গাছ রস উৎপাদননির্ভর।

কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, বাংলাদেশে সাধারণত কার্তিক থেকে মাঘ অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ হয়ে থাকে।

দেশটির সবচেয়ে বেশি রস সংগ্রহ হয় যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে।

মূলত খেজুর গাছের ডালপালা পরিষ্কার করে, ডগার দিকের কাণ্ড চেঁছে তাতে একটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি চোঙ বসিয়ে দেয়া হয়। চোঙের শেষ প্রান্তে ঝুলিয়ে দেয়া হয় একটি মাটির হাড়ি বা কলসি।

সেই চোঙ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রস এসে জমা হতে থাকে মাটির হাড়ি বা কলসিতে। এভাবে একটি গাছ থেকে দৈনিক গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লিটার রস সংগ্রহ করা যায় বলে কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গিয়েছে।

কিন্তু গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে নিপাহ্‌ ভাইরাস আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

পরিবেশ

জেনে নিন এই মরসুমে কোন কোন ঔষধি উদ্ভিদের চাষ আপনার জন্য সেরা

দেশের বিভিন্ন রাজ্যেই বর্ষার (Monsoon 2021) প্রভাবে চলছে বৃষ্টিপাত। এসময় কৃষকেরা খারিফ শস্য (Kharif Crops) বপনে তৎপর হয়ে ওঠেন। এই খরিফ মরসুমে কৃষকভাইরা সাধারণত অঞ্চলভেদে ধান, অড়হর, সোয়াবিন সহ বিভিন্ন চাষে মনযোগ দিয়ে থাকেন ৷ তবে এসব ছাড়াও, ঔষধি গুন সমৃদ্ধ (Medicinal Crops) গাছ চাষে বর্ষায় যে কতটা লাভ হতে পারে সে সম্পর্কে অনেকেই হয়তো জানেন না৷

বিশেষ করে বর্ষাকালেই এমন বহু ঔষধি গুন সম্পন্ন গাছ রয়েছে যাদের চাষ হতে পারে লাভজনক৷

বর্ষাকালে কোন কোন ঔষধি উদ্ভিদের চাষ করা যেতে পারে অথবা এই চাষ কীভাবেই বা করা যাবে সে বিষয়ে সঠিক তথ্য না পাওয়ার কারণেই অনেকের কাছে বিষয়টি অধরা৷ চলুন এই প্রতিবেদনে এমনই কিছু গাছ নিয়ে আলোচনা করা যাক যা কৃষকদের জন্য হতে পারে লাভদায়ক৷ তবে সঠিক সময়ে, সঠিক রোপন, সেচ, কীটনাশক দেওয়ার প্রয়োজন এগুলিতে, না হলে এর ওপর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে৷

অশ্বগন্ধা –

বর্ষায় এর চাষ ভালো৷ জুন থেকে অগস্ট পর্যন্ত এর চাষ করতে পারেন৷ এর বিভিন্ন জাত রয়েছে৷ উন্নত মানের গাছের চাষে কৃষকের লাভের পরিমাণও বৃদ্ধি পেতে পারে৷ উল্লেখ্য, প্রতি হেক্টরে ৫ কিলোগ্রাম বীজ ব্যবস্থা করতে হবে৷ যদি কেউ ১ হেক্টর জমিতে অশ্বগন্ধার চাষ করতে চায় তাহলে তাকে প্রায় ৫০০ বর্গমিটারে নার্সারি তৈরি করতে হবে৷ প্রায় ১ সেন্টিমিটার গভীরে বীজ বপন করতে হবে৷

শতমূলী –

শীত বাদ দিয়ে বছরের যে কোনও সময়ে এই গাছের চাষ করতে পারেন৷ বর্ষাকালে এই চারা রোপন করলে সহজেই তা বেড়ে উঠতে থাকে৷ তবে বীজ বপনের আগে বীজ ১ দিন পর্যন্ত হালকা গরম জলে ভিজিয়ে রাখতে হয়৷

যষ্টিমধু –

জুলাই থেকে অগস্ট পর্যন্ত এর চাষ করা হয়৷ আর তাই জুন থেকেই এর প্রস্তুতি শুরু করে দেন কৃষকেরা৷ জলনিকাশি ব্যবস্থা উচ্চমানের হওয়া প্রয়োজন এই গাছ চাষের জন্য৷ মনে রাখতে হবে এর চাষের আগে জমিতে কমপক্ষে ১৫ টন গোবর সার দেওয়া প্রয়োজন, এরপরেই এটি চাষ করা উচিত৷

ঘৃতকুমারী –

এর ভালো উৎপাদনের জন্য জলনিকাশি ব্যবস্থা ঠিক রাখতে হবে৷ এই ধরনের ঔষধি গুনসম্পন্ন গাছ শীতকাল বাদ দিয়ে যে কোনও সময় চাষ করতে পারেন৷ বর্ষাকালে দূরত্ব রেখে বীজ বপন করতে হবে৷ কম সময়ের মধ্যেই ব্যবহারোপযোগী হয়ে ওঠে এগুলি৷

অগ্নিশিখা বা কলিহারি –

এটি চাষের জন্য কৃষকেরা জুন মাসেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন৷ জুলাইয়ে ভালো বৃষ্টিতে এর চাষ শুরু করা যেতে পারে৷ উল্লেখ্য, ১ হেক্টর জমির জন্য প্রায় ১০ ক্যুইন্টাল কন্দের প্রয়োজন৷ এটি চাষের আগেও জমিতে গোবর সার প্রয়োগ করে তা প্রস্তুত করে নিতে হবে৷

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

পরিবেশ

শিখে নিন টবে দারুচিনির চাষের কৌশল

পৃথিবীতে ভোজ্য মসলা যতরকম আছে তারমধ্যে দারুচিনি সবথেকে উল্লেখযোগ্য। এই প্রাচীনতম মসলা বহুদিন ধরে ওষধি হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে চলেছে। এছাড়াও খাবারে স্বাদ বাড়ানো থেকে শুরু করে, পানীয় এবং তরল মশলাদার খাবারে স্বাদ বাড়ানোর জন্যও এই দারচিনির ব্যবহার হয়। এলাচ, গোলমরিচ, লবঙ্গের সাথে সাথে দারুচিনির নামও মসলা হিসেবে একই পংক্তিতে উচ্চারিত হয়। বহু কৃষক দারুচিনির চাষ করে ভীষণভাবে উপকৃত হয়েছেন। বাজারে এই দারুচিনির চাহিদা প্রচুর পরিমানে থাকায়, এই চাষে ভালো লাভ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও সৌখিন মানুষেরাও ভালোবেসে দারুচিনির চাষ বাড়িতে করে থাকেন। দারুচিনি গাছের বাকল, ফুল, কুঁড়ি, পাতা, ফল, শেকড় সবকিছুই কাজে লেগে যায়। দারুচিনি গাছ বাড়িতে চাষ করতে গেলে ঘরে ছাদে দুই জায়গাতেই চাষ করা যায়।

মনে রাখতে হবে এই চাষ করতে গেলে উপযুক্ত পরিমানে রোদ দরকার। বাংলার জলবায়ুতে মূলত শীতকালে এই চাষ করা সবথেকে ভালো। জানুয়ারি মাসে দারুচিনি গাছে ফুল ফোটা আরম্ভ করে, এবং এই গাছের ফল পাকতে আরম্ভ করে জুলাইয়ে। সেইসময়ই ফল থেকে বীজ সংগ্রহ করে নিয়ে এসে বাগানে বা টবে রোপন করে দেওয়া উচিত।

প্রয়োজনীয় রোদ (Sunlight)

কড়া সূর্যালোক দারুচিনি জন্য প্রয়োজনীয়, তাই এটি পর্যাপ্ত রোদ পাওয়া যায় এমন জায়গায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দারুচিনি রোপন করতে গেলে রৌদ্রোজ্জ্বল স্থান যেমন জানালার ধারে, ব্যালকনি কিংবা ছাদের খালি স্থান ব্যবহার করতে হবে।

উপযুক্ত মাটি (Soil)

দারুচিনি চাষের জন্য ভাল মানের মাটি ব্যবহার করা আবশ্যক। বাগানের মাটি ব্যবহার না করাই ভালো, কেননা এতে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। অনে সময় আমরা আশেপাশ থেকে মাটি নিয়েই টব ভরে গাছ লাগানো হয়।  বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সংবেদনশীল গাছগুলোতে এই উপায় কার্যকরী হয় না। নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভাল এমন মাটি ব্যবহার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে উত্তম নিষ্কাশনযুক্ত বেলে দোআঁশ মাটি ব্যবহার করা সবথেকে উত্তম। জেনে রাখা ভালো দারুচিনি খরা একদমই সহ্য করতে পারে না। মাটির বিকল্প হিসেবে ১৫% ট্রাইকোকমপোস্টযুক্ত কোকোডাস্ট ব্যবহার করা যেতে পারে।

বাইরে চাষ করার জন্য এক মিটার (৩০ সেন্টিমিটার গভীর) পর্যন্ত গর্ত করে মাটি দিয়ে পূরণ করে নিতে হবে। ঘরের ভিতরে বা ছাদবাগানের দারুচিনি চাষের জন্য একটি বড় পাত্র প্রয়োজন হবে।

রোপন (Planting)

দারুচিনির বীজ সংগ্রহও করা যায় অথবা নার্সারি থেকে দারুচিনির গাছ কিনেও আনা যায়।

বাইরে চাষের ক্ষেত্রে

দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে ১ মিটার x ১ মিটার এবং ৩০ সেমি গভীরতায় খনন করে মাটি দিয়ে গর্তটি পূরণ করতে হবে।

ঘরের মধ্যে টবে রোপনের ক্ষেত্রে

নিচে গর্ত সহ বড় সিরামিক পাত্র (৬০ x ৫০ সেমি) ব্যবহার করতে হবে। পাত্রটি মাটি বা কোকোডাস্ট দিয়ে পূরণ করে নিতে হবে। ৩০ সেন্টিমিটার গভীরতা এবং ৩০ সেন্টিমিটার প্রস্থের একটি গর্ত তৈরি করতে একটি বাগান ট্রোয়েল ব্যবহার করে নেওয়া ভালো। বীজ ব্যবহার করলে  ১.৫ সেন্টিমিটার গভীর গর্ত তৈরি করে নেওয়া উচিত। এবার গাছটি গর্তের মধ্যে রেখে মাটি দিয়ে চাপা দিতে হবে। বীজ ব্যবহার করলে প্রতি ১.৫ সেমি গর্তে একটি করে বীজ পুঁততে হবে এবং মাটি দিয়ে বীজটি ঢেকে দিতে হবে।

মাটি সবসময় ভেজা রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণ জল দিতে হবে। দারুচিনি গাছ পাত্রে রোপন করার পর, টবের নিচের গর্ত থেকে জল বের না হওয়া পর্যন্ত জল দিতে হবে। টবের উপরের ৫ সেন্টিমিটার শুকিয়ে গেলেই আবার গাছটিকে জল দিতে হবে।

গাছের পরিচর্যা (Caring)

দারুচিনি গাছে নিয়মিত সার প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম বছর ৫০ গ্রাম টিএসপি, ৭৫ গ্রাম এমওপি ও ৫০ গ্রাম ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে। প্রতিবছর ২-৩ কেজি ট্রাইকোকম্পোস্ট ও সার প্রয়োগ শেষে একই হারে টিএসপি, এমওপি ও ইউরিয়া দিতে হবে।

দারুচিনি প্রথম ধরতে দুই থেকে তিন বছর সময় নেয় এবং তার পরে প্রতি দুই বছর পরপরই ফসল দিতে থাকে। দারুচিনি গাছ কম করে ১০-১৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। তাই একে নিয়মিত করে ছোট রাখতে হবে। পাঁচ বছর বয়সী দারুচিনি গাছ থেকে নিয়মিত দারুচিনি সংগ্রহের ডাল পাওয়া সম্ভব। দারুচিনি ব্যবহার করার জন্য যে শাখাগুলি কাটা হবে সেগুলি থেকে বাকল তুলে নিতে হবে, বাকলগুলি ব্যবহার করার আগে জলে ভালোভাবে ভিজিয়ে নেওয়া উচিত।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

আঙিনা কৃষি

টবে লাগান মিষ্টি তেঁতুল গাছ

পৃথিবীতে জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, হারিয়ে যাচ্ছে বহু প্রাণী ও উদ্ভিদ বৈচিত্র। চাষবাসের জমিরও সংকুলান ঘটছে সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে। গগনচুম্বী বাড়ি ঘিরে ফেলছে সমস্ত ফাঁকা জমিন। শখ করে মানুষ খোলা জায়গায় যে গাছ লাগবে অথবা ফল-ফুলের চারা সেই উপায়ও আর নেই। গাছ লাগানোর জন্য সামান্য জায়গাও ফাঁকা থাকছে না আর। তবে আমাদের করণীয় কী? বৃক্ষরোপন কি তবে অচিরেই বন্ধ হয়ে যাবে। বেঁচে থাকার জন্য তো গাছ লাগাতে হবেই। বাড়ির একটুকরো বারান্দা অথবা ব্যালকনিতেও সুন্দর ভাবে ইচ্ছা করলে গাছ লাগানো যায়। বাড়ির ছাদেও বানানো যায় সুন্দর বাগিচা। শহরের মানুষদের জন্য ছাদ বাগানের কোনও বিকল্পও নেই। বাড়ির মধ্যেকার ব্যালকনি অথবা ছাদের একটুকরো জমিতেও, ইচ্ছা করলে টবে চাষ করা যায় বিভিন্ন ফুলের ও ফলের গাছ।

শাকসবজি, পেয়ারা, লেবু প্রভৃতি দেশীয় গাছ টবে বাড়তে দেওয়া থেকে শুরু করে বর্তমানে বহু বিদেশী গাছের চারাও মানুষ ব্যালকনি অথবা ছাদে চাষ করছেন। তার মধ্যে থাই মিষ্টি তেঁতুল টবের চাষ পদ্ধতি হিসাবে অত্যন্ত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। প্রথমত মিষ্টি তেঁতুলের চাষ করতে গেলে, নার্সারি থেকে এই বিশেষ তেঁতুলের সঠিক বীজ নিয়ে আনতে হবে। তবে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কলম পাওয়া একটু দুষ্কর কাজ। বুঝে সঠিক চারা নিয়ে আসা বাগান মালিকের উপরেই বর্তায়।

থাই মিষ্টি তেঁতুলের ফুল থেকে ফল ধরতে প্রায় ৭ মাস সময় লাগে। বছরে দু’বার থাই মিষ্টি তেঁতুলের গাছে ফল ধরে। প্রথমবার বর্ষাকালে এবং দ্বিতীয়বার শীতকালে। এই গাছের পরিচর্যা আলাদা করে করার কোনও দরকার পড়ে না। গাছের যত্নআত্তি নিতে হয় ঠিকই, কিন্তু তা বলে, আলাদা করে কোনও বিশেষ যত্ন নিতে হয় না।

গাছ লাগানোর পদ্ধতি (Planting):

থাই মিষ্টি তেঁতুল চাষের জন্য আদর্শ মাটি হল, দো-আঁশ বা বেলে দো-আঁশ মাটি। এই দু’টি মৃত্তিকার মধ্যে যে কোনও একটি বেছে নিন। তারপর বেছে নেওয়া মাটির দুই ভাগ অংশের সাথে গোবর, ১০০ গ্রাম, টিএসপি ১০০ গ্রাম, পটাশ, ২৫০ গ্রাম, হাড়ের গুঁড়ো এবং ৫০ গ্রাম সরিষার খোল একসঙ্গে মিশিয়ে ২০ ইঞ্চি মাপের বড় টবে জল মিশিয়ে রেখে দিতে হবে। ১০ থেকে ১২ দিন পর টবের মাটি ভালো করে খুঁচিয়ে দিয়ে আরও ৪-৫ দিন রেখে দিতে হবে। ৪ থেকে ৫ দিন বাদে মিষ্টি তেঁতুলের একটি ভালো চারা ওই টবে লাগান।

পরিচর্যা(Caring):

চারা লাগানোর প্রথম কয়েক মাস তেমন যত্নের দরকার পড়বে না। অবশ্যই গাছে এই সময়টুকু পর্যাপ্ত জলের যোগান, এবং আগাছা পরিষ্কারের কাজ করতে হবে।  ছয় মাস চারা লাগানোর সময়সীমা ফুরোলেই ১ মাস বাদে বাদে গাছে সরষের খোল মিশ্রিত পচা জল দিতে হবে। মনে রাখতে  হবে খোল দেওয়ার আগে গাছের মাটি খুঁচিয়ে নিতে হবে।

রোগ দমন (Disease management):

সাধারণত থাই মিষ্টি তেঁতুল গাছে পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখা যায় না। কিন্তু বর্ষাকালে অনেক সময় তেঁতুল গাছে ছত্রাক হানা দেয়। এর ফলে তেঁতুল ফেটে যায়। এই অসুবিধার থেকে গাছকে বাঁচাতে হলে, বর্ষাকাল আসার আগেই ভালো ছত্রাকনাশক ওষুধ ১০ দিন অন্তর গাছে স্প্রে করে ছড়িয়ে দিতে হবে।

বাংলার বেজায় টক তেঁতুলের সঙ্গে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কোনও তুলনাই চলে না। অত্যন্ত মিষ্টি খেতে এই তেঁতুল থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়ায় চাষ প্রভূত পরিমাণে হলেও, আমাদের রাজ্য এই ফলের চাষ এখনও ততটা গতি পায়নি। কিন্তু আপনি আপনার ব্যালকনি অথবা ছাদে সহজেই এই থাই তেঁতুলের গাছ লাগাতে পারেন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশক: শাইখ সিরাজ
© ২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। দা এগ্রো নিউজ, ফিশ এক্সপার্ট লিমিটেডের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। ৫১/এ/৩ পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থাপথ, ঢাকা -১২০৫
ফোন: ০১৭১২-৭৪২২১৭
ইমেইল: info@agronewstoday.com, theagronewsbd@gmail.com