আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

এগ্রোবিজ

দুর্দিনেও কৃষকের মুখে হাসির ঝিলিক

ধানের দাম পেয়ে খুশি কৃষকেরা। ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বারঢালি এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো
ধানের দাম পেয়ে খুশি কৃষকেরা। ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বারঢালি এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

আকাশে মেঘ-বৃষ্টির লুকোচুরি। কাস্তের টানে খেতের মুঠি মুঠি ধান কেটে চলছে শ্রমিকের দল। তারই মাঝে মাঝে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ধান মুখে তুলে উড়ে যাচ্ছে কবুতরের ঝাঁক। পাকা ধানের ম–ম গন্ধে মাতোয়ারা চারপাশ।

মেঘ-বৃষ্টিকে ফাঁকি দিয়ে সূর্য যখন তপ্ত রোদ ছড়ায়, শ্রমিকের দেহ তখন খানিকটা দম নিতে চায়। দম নেওয়ার ফুরসত পেয়েই শ্রমিকেরা মেতে ওঠেন গালগল্পে। শ্রমিক আহসান আলী বলছিলেন করোনা আর ধানের বাজারদর নিয়ে। তিনি বলেন, ‘করোনায় সব মানুষলার মরণ দশা। তবে যা কহ কৃষকলা কিন্তু টাকা পাছে।’

আহসান আলীর কথা কেড়ে নিয়ে গোবিন্দ নারায়ণ বলে ওঠেন, ‘মহাজনক কহিবা হবে, শুধু ধান কাটার মজুরি দিলেই হবেনি। ভালোমন্দ খিলাবাও হবে।’ মজুরির পরও ভালো-মন্দ খাওয়াতে হবে, এমন জিজ্ঞাসায় শ্রমিকেরা সমস্বরে বলে উঠলেন, করোনার খারাপ সময়ের মধ্যেও কৃষক এবার ধানের দাম পাচ্ছেন। কথা শুনে পাশেই দাঁড়ানো কৃষক খসিউর রহমান হাসলেন। মাথা নেড়ে শ্রমিকদের আবদারে সায় দিয়ে তিনি বললেন, ‘খাওয়াব, অবশ্যই খাওয়াব।’

করোনা পরিস্থিতিতে দেশের জনজীবন, শিল্প-অর্থ-বাণিজ্য—সবকিছুতে একধরনের স্থবির দশা। মানুষের মধ্যে হা-হুতাশ। এসবের মধ্যেও ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষকের মুখে হাসির ঝিলিক। অন্য বছর কষ্টের ফসল বাজারে নিয়ে দাম শুনে হতাশ হলেও এবার করোনা পরিস্থিতিতেও ফসলের দাম ভালো পাওয়ায় তাঁদের মুখে হাসি।

ধানের পাশাপাশি গম ও ভুট্টার দামও বেড়েছে
গতবার আমনে ৫ বিঘা জমিতে ধান চাষ করে লাভ তো দূরে থাক, উৎপাদন খরচই ওঠাতে পারেননি সদর উপজেলার ভেলাজানের কৃষক আবদুল গনি। লোকসানের কারণে ধান চাষে আগ্রহ হারিয়ে এ বছরের বোরো মৌসুমে তিনি দুই বিঘা কম জমিতে ধান আবাদ করেন। লোকসানের শঙ্কা থাকলেও তিনি করোনাকালে বাজারে ধানের ভালো দাম পেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘গত আমনে পাঁচ বিঘা জমির ধান বিক্রি করে যে দাম পেয়েছিলাম, এবার দুই বিঘা কম জমিতে ধান আবাদ করে তার চেয়ে বেশি টাকা পেয়েছি। ধানের দাম পেয়ে এবার পাঁচ বিঘা জমিতেই ধান আবাদের প্রস্তুতি নিয়েছি।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ঠাকুরগাঁও কার্যালয় সূত্র জানায়, চলতি বোরো মৌসুমে জেলায় ৫৮ হাজার ৪৮০ হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ হয়েছে। এতে ফলন হয়েছে ২ লাখ ৪৩ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন ধান। আর গত বছর ৬২ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে আবাদ করে ফলন হয়েছিল ২ লাখ ৬৭ হাজার ৪৮৪ মেট্রিক টন ধান। সে সময় প্রতি মণ ধানের দাম ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা হলেও এবার কৃষকেরা সেই ধানের দাম পাচ্ছেন ৮০০ টাকা।

দেশের সর্বোচ্চ গম উৎপাদনকারী জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে গত বছর ৫২ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে গম আবাদ হলেও এ মৌসুমে আবাদ হয়েছে ৫০ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে। গত মৌসুমে ২ লাখ ৮৯ হাজার মেট্রিক টন উৎপাদন হয়। এই মৌসুমে উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ ৭ হাজার ৬৮৫ মেট্রিক টন। গত বছর কৃষকেরা প্রতি মণ গম ১ হাজার ৭০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি করলেও এ মৌসুমে পেয়েছেন ২ হাজার থেকে ২ হাজার ১০০ টাকা।

তবে ভুট্টা আবাদ ও ফলনের চিত্র একটু ভিন্ন। জেলায় গত বছর ৩০ হাজার ৯৯০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা আবাদ হলেও এবার ৩৪ হাজার ৭৮০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। আর ফলন হয়েছে ৩ লাখ ৬৫ হাজার ৮৭৭ মেট্রিক টন। গত বছর কৃষকেরা প্রতি মণ ভুট্টার দাম ৩৫০ টাকা পেলেও এবার পাচ্ছেন ৫০০ টাকা।

গত বছর ৭ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে সবজি আবাদ হলেও চলতি মৌসুমে আবাদ হয়েছে ৭ হাজার ৮৮৫ হেক্টরে। গত বছর ফলন হয়েছিল ১ লাখ ৫৬ হাজার ৭৬৩ মেট্রিক টন। এ বছর হয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার ৮৪১ মেট্রিক টন। গত বছর প্রতি কেজি সবজি বিক্রি হয়েছে ১০ থেকে ২০ টাকা। কিন্তু বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়।

খেতে বসেই ধান বিক্রি
ঠাকুরগাঁও-বালিয়াডাঙ্গী আঞ্চলিক সড়কের বারঢালী এলাকার একটি মাঠে ধান কাটছিলেন জনা দশেক শ্রমিক। পাশেই দাঁড়িয়ে এক ব্যক্তির সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলছিলেন কৃষক আতাউর রহমান। তিনি ওই ব্যক্তিকে বিদায় জানিয়ে শ্রমিকদের তাগাদা দিতে দিতে উৎফুল্লচিত্তে বলতে লাগলেন, ‘তাড়াতাড়ি ধান কাটো। সব ধান বিক্রি হয়ে গেছে।’ কে কিনল, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ওই লোকটাই ধানের পাইকার। প্রতি মণ ধান ৮০০ করে কিনে নিয়েছেন।’

কৃষক আতাউর জানালেন, গত বছর এই সময়ে হাটে নিয়েও ধান ৪০০ টাকায় বিক্রি করা যায়নি। এবার পাইকাররা খেতে থেকেই দ্বিগুণ দামে ধান কিনে নিচ্ছেন।

১০ বছরের মধ্যে দাম সর্বোচ্চ
হঠাৎ আকাশ ঘন মেঘে ছেয়ে গেল। তা দেখে শুকাতে দেওয়া ধান ঢেকে দিতে ছুটলেন কৃষকেরা। ধান ঢাকা শেষ হলে আশ্রয় নিলেন একটি ছাপরা ঘরে। একটু পর শুরু হলো বৃষ্টি। সেই বৃষ্টির মধ্যে গল্প জুড়ে বসলেন কৃষক আজহারুল ইসলাম। ধান নিয়েই তাঁর গল্প। তিনি বললেন, একসময় এলাকায় কত জাতের ধান হতো। ধানের নানা বাহারি নাম মুগ্ধ করত মানুষকে। উচ্চফলনশীল ধানের দাপটে মাত্র কয়েক যুগে সেই ধানগুলো অতীত হয়ে গেছে। এবারের বাজার নিয়ে তিনি বলেন, ‘কয়েক বছর ধান আবাদ করে লস খেয়েছি। এইবার ধানের বাজার ভালো। করোনায় ধানের দাম না পাইলে কৃষককে না খেয়ে মরতে হতো।’

পাশে দাঁড়িয়ে আজহারুলের কথাগুলো শুনছিলেন শহিদুল ইসলাম। তিনি জানালেন, এক বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করে ৪০ মণের বেশি ধান কখনো পাননি। কিন্তু এবার পেয়েছেন ৪৫ মণের ওপরে। শহিদুল বলেন, ‘করোনা অন্য পেশার মানুষের দুশ্চিন্তার কারণ হলেও কৃষকের মুখে হাসি এনে দিয়েছে। আমরা ফসল বেঁচে লাভ পাচ্ছি। তাতে করোনার কষ্ট ভুলে গেছি।’

কৃষক শহিদুল আরও বলেন, বছর বছর ধান চাষ করে লোকসান গুনেছেন। ৪০০-৫০০ টাকার বেশি দামে ধান বিক্রি করতে পারেননি। এবার ১ মণ ব্রি–২৮ জাতের চিকন ধান ৮০০ টাকা, আর হাইব্রিড জাতের মোটা ধান ৭৫০ টাকা বিক্রি করছেন। বিগত ১০ বছরের মধ্যে ধানের এই দামই সর্বোচ্চ। প্রতিবছর এমন দাম পেলে কৃষকের লোকসান হতো না।

কিছুটা এগিয়ে যেতে দেখা গেল একদল নারী ভুট্টার খোসা ছাড়াচ্ছেন। কৃষক পরেশ রায় জানালেন, তিন বছর পর এবার ভুট্টা বিক্রি করে কৃষক লাভের মুখ দেখছেন। গত মৌসুমের শুরুতে কৃষক প্রতি মণ ভুট্টা বিক্রি করেছিলেন ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায়। এতে উৎপাদন খরচই উঠত না। এবার বিক্রি করছেন কমপক্ষে ৫০০ টাকা মণ।

আরেক কৃষক জানালেন, গত বছর প্রতি মণ গমের বাজারদর ছিল ৭২০ টাকা। এ মৌসুমে কৃষক গম বিক্রি করছেন ১ হাজার টাকা দরে। ধান, ভুট্টা, গমের পাশাপাশি সবজিতেও কৃষক ভালো দাম পাচ্ছেন। বাজারে প্রতি কেজি করলা, শসা, ঢ্যাঁড়স, বেগুনসহ সবজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে।

খেত থেকে সবজি তুলে ট্রাকে সাজাচ্ছেন কৃষকেরা। সদর উপজেলার বরদেশ্বরী এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো
খেত থেকে সবজি তুলে ট্রাকে সাজাচ্ছেন কৃষকেরা। সদর উপজেলার বরদেশ্বরী এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

রানীশংকৈল উপজেলার নেকমরদ হাট ধান-গম কেনাবেচার জন্য প্রসিদ্ধ। সারা বছর ক্রেতা বিক্রেতাদের হাঁকডাক লেগেই থাকে। ধান ব্যবসায়ী এনামুল হক জানালেন, এ বছর সারা দেশে ৭৫ হাজার মেট্রিক টন গম ও ৮ লাখ মেট্রিক টন বোরো ধান কিনছে সরকার। সরকারের ঘোষণার পরেই বাজারে ধানের দাম বাড়তে শুরু করে।

জেলা বাজার অনুসন্ধানকারী মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, করোনার প্রভাবে খাদ্যসংকটের শঙ্কা থেকে সরকার গুদামে প্রতি কেজি গম ২৮ টাকা ও বোরো ধান ২৬ টাকা দরে কিনছে। সরকারের সময়োপযোগী এ পদক্ষেপে কৃষকেরা এই সংকটেও লাভের মুখ দেখছেন। অন্য বছর ধান বাজারে নিয়ে গিয়েও দাম না পেয়ে সড়কে ফসল ছিটিয়ে প্রতিবাদ করতেন কৃষক। কিন্তু এবার তাঁরা বেশ খুশি।

দাম পেয়ে আমনে কৃষকের মন
কয়েক বছর টানা ধান আবাদ করে লোকসানে পড়েছিলেন কৃষকেরা। চলতি বোরো মৌসুমেও করোনায় সেই শঙ্কা পেয়ে বসেছিল কৃষককে। কিন্তু এবার ভালো দাম পেয়ে কৃষকেরা নতুন উদ্যমে আমন চাষে মন দিয়েছেন। বীজতলা তৈরির পর তা পরিচর্যায় লেগে পড়েছেন। অনেকে কৃষক জমিতে চারা রোপণও করে ফেলেছেন। জেলায় এবার ১ লাখ ৩৬ হাজার ৯২৫ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

সদরের দাসপাড়ার কৃষক অশোক বর্মণ বোরো মৌসুমে সাত বিঘা জমিতে ধান আবাদ করেছিলেন। বোরোর ভালো দাম পেয়ে এবার তিনি আরও তিন বিঘা জমিতে আমন আবাদের পরিকল্পনা করেছেন। অশোক বলেন, ‘ধানের এমন দাম পাইলে, আমাদের আর কী লাগে!’

থমকে গেছে সবজি রপ্তানি
কয়েক বছর ধরে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের বাজারে সবজি পাঠাত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। গত বছর জেলা থেকে ২০০ মেট্রিক টন সবজি রপ্তানি হয়েছিল। সদরের চামেশ্বরী গ্রামের মেহেদী আহসান উল্লাহ চৌধুরী ১৪ বিঘা জমিতে জৈব পদ্ধতিতে করলা, লাউ, শসা ও বেগুনের আবাদ করেছেন। কৃষিতে বিশেষ অবদান রাখার জন্য তিনি ২০১৮ সালে ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার’ পান। মেহেদী আহসান উল্লাহ চৌধুরী বলেন, বাজারে জৈব পদ্ধতিতে উৎপাদিত সবজির চাহিদা একটু বেশি। তাঁর উৎপাদিত সবজি দেশের বিভিন্ন এলাকার পাশাপাশি এজেন্সির মাধ্যমে ইংল্যান্ড, দুবাই, বাহরাইন, সৌদি আরব, অস্ট্রেলিয়া, শ্রীলঙ্কা, হংকংসহ ১০টি দেশে রপ্তানি হয়। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার বিদেশে সবজি পাঠানো সম্ভব হয়নি। এতে তাঁরা ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছেন। ক্ষতির কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, বিদেশে যেসব সবজি পাঠানো হয়, সেগুলো অর্গানিক। কোনো রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার হয় না। অর্গানিক সবজির ফলনও কম হয়। এ কারণে বাজারদরও একটু বেশি। বিদেশে সবজি পাঠাতে না পেরে তা স্থানীয় বাজারে সাধারণ সবজির দরেই বিক্রি করতে হচ্ছে।

সরকারিভাবে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শঙ্কা
বুধারু রায়ের মতো অনেকেই সরকারি গুদামে বিক্রির অপেক্ষা না করে বাজারে ধান বিক্রি করে দিয়েছেন। গুদামে ধান বিক্রিতে কৃষকের আগ্রহ না থাকায় ধান সংগ্রহ অভিযান শুরুর এক মাস হলেও ঠাকুরগাঁওয়ের খাদ্যগুদামে ধান সংগ্রহ হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ১ দশমিক ৬১ শতাংশ।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, এবার জেলায় বোরো ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১১ হাজার ৩০৯ মেট্রিক টন। লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা হচ্ছে। ধানের বাজারদর বেড়ে যাওয়ায় বিশেষ ক্ষেত্রে একজন কৃষকের জন্য সর্বোচ্চ ৬ টন ধান বিক্রির সুযোগ রাখা হয়েছে। প্রতি কেজি ধানের মূল্য ধরা হয়েছে ২৬ টাকা। কেনার ক্ষেত্রে খাদ্যগুদাম কর্তৃপক্ষ ধানের আর্দ্রতা নির্ধারণ করেছে সর্বোচ্চ ১৪ শতাংশ। এ ছাড়া বিজাতীয় পদার্থ পয়েন্ট ৫ শতাংশ, ভিন্ন জাতের মিশ্রণ ৮ শতাংশ, অপুষ্ট ও বিনষ্ট দানা ২ শতাংশ এবং চিটা দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত হলেও কৃষকেরা ধান বিক্রি করার সুযোগ পাবেন।

বিদায়ী জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বাবুল হোসেন বলেন, ‘কৃষকের ফসলের ন্যায্যমূল্য দিতেই সরকারি গুদামে খাদ্যশস্য কেনার কর্মসূচি নেওয়া হয়। এখন বাজারে ধানের দাম বাড়তি। এ পর্যায়ে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হলো কি না, তা নিয়ে ভাবছি না। কৃষক ধানের দাম পেলেই হলো। সেটা সরকারি গুদামে বা বাজারে যেখানেই বিক্রি করে হোক।’

থমকে গেছে কৃষিভিত্তিক অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৮ সালের মার্চে ঠাকুরগাঁও সফরে এসেছিলেন। বড় মাঠের জনসভায় তিনি ৯টি প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতি দেন। এর মধ্যে একটি ছিল কৃষিভিত্তিক বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল। এ প্রকল্পটির কাজ করোনা পরিস্থিতিতে থমকে গেছে। জেলা প্রশাসক কে এম কামরুজ্জামান সেলিম বলেন, কৃষিভিত্তিক বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য জায়গা নির্ধারণের কাজটি চললেও এখন তা করোনার কারণে গতি হারিয়ে ফেলেছে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সেটা শুরুর সুযোগ নেই। তবে জেলায় ওই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে কৃষকেরা লাভবান হবেন।

কৃষিযন্ত্র আর মোটরসাইকেল শোরুমে ভিড়
মোটরসাইকেলের শোরুম গুড্ডু মোটরস। সুসজ্জিত শোরুমে নানা মডেলের মোটরসাইকেলের ছবি। কিন্তু ছবি থাকলেও সেখানে নেই কোনো মোটরসাইকেল। করোনাকালে মোটরসাইকেল আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন শোরুমটি ফাঁকা। দুই ব্যক্তি শোরুমে গিয়ে খানিক বাদে বেরিয়ে গেলেন। তাঁদের মধ্যে একজন বালিয়া গ্রামের মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, তিনি কৃষিকাজ করেন। ট্রাক্টর ভাড়া নিয়ে তাঁকে জমি চাষ করতে হয়। এবার ফসলের দাম পেয়ে একটি ট্রাক্টর কেনার কথা ভেবে এখানে এসেছিলেন।

করোনার জন্য সব সরকারি, সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান বন্ধ। এতে মাইক ও ডেকোরেটর ব্যবসায় ধস নেমেছে। টিকে থাকতে জেলা শহরের লতিফ ডেকোরেটরের স্বত্বাধিকারী আবদুল লতিফ নেমেছেন কাঁচামালের ব্যবসায়। ছবি: প্রথম আলো
করোনার জন্য সব সরকারি, সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান বন্ধ। এতে মাইক ও ডেকোরেটর ব্যবসায় ধস নেমেছে। টিকে থাকতে জেলা শহরের লতিফ ডেকোরেটরের স্বত্বাধিকারী আবদুল লতিফ নেমেছেন কাঁচামালের ব্যবসায়। ছবি: প্রথম আলো

সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে শোরুমের স্বত্বাধিকারী আহসান হাবিব বলেন, মাস তিনেক ধরে কোনো মোটরসাইকেল আসছে না। যা সংগ্রহে ছিল সব বিক্রি হয়ে গেছে। এখন প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ জন ক্রেতা মোটরসাইকেল কিনতে এসে ঘুরে যাচ্ছেন। ক্রেতাদের বেশির ভাগই কৃষক। তাঁর একটি ট্রাক্টরেরও শোরুম রয়েছে, সেখানেও একই অবস্থা।

ডেকোরেটর ছেড়ে সবজি বিক্রেতা
শহরের অস্থায়ী সবজি বাজার। বাজারে রঙিন কাপড়ে ঘেরা একটি দোকান। টেবিলে সাজানো নানা সবজি। দোকানটি আবদুল লতিফের। কদিন আগেও তাঁর জমজমাট ডেকোরেটর ব্যবসা ছিল। করোনার জন্য সব সরকারি, সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান বন্ধ, এতে মাইক ও ডেকোরেটর ব্যবসায় ধস নেমেছে। টিকে থাকতে আবদুল লতিফ কাঁচামালের ব্যবসায় নেমেছেন। তিনি বলেন, মাস চার ধরে ব্যবসা বন্ধ। বেতন দিতে না পেরে কর্মচারীদের বিদায় করে দিয়েছেন। নিজের সংসার চালানোই কঠিন হয়ে পড়ায় কাঁচামালের দোকান নিয়ে বসলেন।

নানা সুখবর ও অনুষ্ঠানের আয়োজন জানাতে শহরে সারা বছর চলত মাইকে প্রচারণা। সেদিন এখন নেই। শহরবাসীর কানে এখন খুব কমই মাইকের শব্দ ভেসে আসে। শহরের সাউন্ড সিস্টেম ব্যবসায়ী আবুল হোসেন বলেন, সাউন্ড সিস্টেমের অধিকাংশ দোকান খোলা থাকলেও নেই ব্যস্ততা। সকালে বাসা থেকে এসে দোকান খুলে বসে থেকে আবার সন্ধ্যায় ফিরে যান ব্যবসায়ীরা। দিন শেষে হিসাবের খাতা শূন্য। শহরের একতা মাইকের স্বত্বাধিকারী আবুল হোসেন বলেন, শহরে ১০ জনের বেশি মাইক ব্যবসায়ী রয়েছেন। বিভিন্ন ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক অনুষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। প্রায় সাড়ে তিন মাসে তাঁদের তিন শ টাকাও আয় হয়নি। তবে কর্মচারীদের খরচ দিতে হচ্ছে। জমানো টাকা যা ছিল, তা–ও শেষ হয়ে গেছে।

ঠাকুরগাঁও জেলায় প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় গত ১১ এপ্রিল। ২৫ জুলাই পর্যন্ত করোনা শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৩০৬ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ২২১, আর মারা গেছেন ৫ জন।

  • করোনার জন্য সব সরকারি, সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান বন্ধ। এতে মাইক ও ডেকোরেটর ব্যবসায় ধস নেমেছে। টিকে থাকতে জেলা শহরের লতিফ ডেকোরেটরের স্বত্বাধিকারী আবদুল লতিফ নেমেছেন কাঁচামালের ব্যবসায়। ছবি: প্রথম আলো

    করোনার জন্য সব সরকারি, সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান বন্ধ। এতে মাইক ও ডেকোরেটর ব্যবসায় ধস নেমেছে। টিকে থাকতে জেলা শহরের লতিফ ডেকোরেটরের স্বত্বাধিকারী আবদুল লতিফ নেমেছেন কাঁচামালের ব্যবসায়। ছবি: প্রথম আলো

  • খেত থেকে সবজি তুলে ট্রাকে সাজাচ্ছেন কৃষকেরা। সদর উপজেলার বরদেশ্বরী এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

    খেত থেকে সবজি তুলে ট্রাকে সাজাচ্ছেন কৃষকেরা। সদর উপজেলার বরদেশ্বরী এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

  • ধানের দাম পেয়ে খুশি কৃষকেরা। ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বারঢালি এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

    ধানের দাম পেয়ে খুশি কৃষকেরা। ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বারঢালি এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

  • করোনার জন্য সব সরকারি, সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান বন্ধ। এতে মাইক ও ডেকোরেটর ব্যবসায় ধস নেমেছে। টিকে থাকতে জেলা শহরের লতিফ ডেকোরেটরের স্বত্বাধিকারী আবদুল লতিফ নেমেছেন কাঁচামালের ব্যবসায়। ছবি: প্রথম আলো
  • খেত থেকে সবজি তুলে ট্রাকে সাজাচ্ছেন কৃষকেরা। সদর উপজেলার বরদেশ্বরী এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো
  • ধানের দাম পেয়ে খুশি কৃষকেরা। ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বারঢালি এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো
বিজ্ঞাপন
মন্তব্য করুন

অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন

Leave a Reply

এগ্রোবিজ

যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশে হতে পারে সারের সংকট

সারের সংকট
সারের সংকট
সারের সংকট

চলতি বোরো মৌসুমে সার কিনতে কৃষকদের সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা করে বেশি দিতে হয়েছে। আর সরকারকেও সার বাবদ ভর্তুকি দিতে হচ্ছে বাজেটে বরাদ্দের তিন গুণের বেশি—প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশ এখন মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) সার আমদানি নিয়ে বিপাকে পড়েছে।

ধান, আলু ও সবজি চাষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এমওপি সারের ৬০ শতাংশ আনা হতো রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে। ওই দুই দেশ নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়ায় এখন বাংলাদেশকে এমওপি কিনতে হচ্ছে কানাডা থেকে। বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়া ও আমদানিতে অনিশ্চয়তার কারণে বাংলাদেশে সারের সংকট হতে পারে। ভর্তুকির চাপ সামলাতে বাংলাদেশকে সব ধরনের সারের খুচরা মূল্য বাড়াতে হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিবিষয়ক সংস্থা ইউএসডিএর চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ‘বাংলাদেশে সার সরবরাহ ও ব্যবহারে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের এমওপি সারের ২০ শতাংশ সরবরাহ কমানো হলে সামনের বোরো মৌসুমে ধান, গম ও রবি মৌসুমের অন্যান্য ফসলের উৎপাদন ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কমতে পারে। এতে বাংলাদেশের খাদ্য উৎপাদন ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে।

এমনিতেই এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমাদের ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সারের কারণে নতুন করে যাতে আর সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।

এ এম এম শওকত আলী, সাবেক কৃষিসচিব

তবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, দেশে চলতি বোরো মৌসুমে নতুন করে আর সারের দরকার হবে না। সামনে আলুর মৌসুমে ইউরিয়া, এমওপিসহ অন্যান্য সারের চাহিদা বাড়বে। ওই সময়ের জন্য সার সরবরাহ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ কানাডা ও মধ্যপ্রাচ্যের সার সরবরাহকারী দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে।

জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কানাডা থেকে মোট আট লাখ টন এমওপি সার আমদানির উদ্যোগ নিয়েছি। এ ব্যাপারে ওই দেশের সঙ্গে আমাদের সমঝোতা স্মারক হয়েছে। ফলে এই সার নিয়ে সরকারের কোনো দুশ্চিন্তা নেই। তবে সার বাবদ সরকারের বিপুল পরিমাণে ভর্তুকি বাড়ছে। এই চাপ নিয়েও সরকার ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ওই ভর্তুকি দিয়ে যাবে।’

কমানো হয়েছে চাহিদা

বাংলাদেশে চলতি অর্থবছরে ৬৯ লাখ টন রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয়েছে। এর মধ্যে ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি—এই চার ধরনের সার ব্যবহার হয় ৫৭ লাখ টন। আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের ওই চার ধরনের সারের চাহিদা কমিয়ে ৫৫ লাখ ৫০ হাজার টনে নামিয়ে আনা হয়েছে।

দেশে প্রয়োজনীয় সারের ৮০ শতাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এর মধ্যে এমওপি সারের বড় অংশ আসে রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে।

প্রসঙ্গত, ওই চারটি প্রধান সার কৃষকদের কাছে বিক্রির ক্ষেত্রে সরকার ভর্তুকি দিয়ে থাকে। চলতি অর্থবছরে সরকার প্রাথমিকভাবে সারে ভর্তুকি বাবদ ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে গত ছয় মাসে সারের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। বেশির ভাগ সারের দাম তিন থেকে চার গুণ বেড়ে যাওয়ায় সরকারকে ভর্তুকির পরিমাণ ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা করতে হয়। কিন্তু অর্থবছরের শেষের দিকে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে হিসাব করে দেখা হয়েছে, ভর্তুকির পরিমাণ এবার বেড়ে কমপক্ষে ৩০ হাজার কোটি টাকা গিয়ে দাঁড়াবে।

জিপসাম, জিংক সালফেট ও অ্যামোনিয়াম সালফেট ও ম্যাগনেসিয়াম সালফেট সারে সরকার কোনো ভর্তুকি দেয় না। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কিনে ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কাছে তা বিক্রি করে থাকেন। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষককেও বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে।

সাবেক কৃষিসচিব এ এম এম শওকত আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমনিতেই এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমাদের ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সারের কারণে নতুন করে যাতে আর সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। আর সরকারের অন্যান্য খাতের ভর্তুকি কমিয়ে প্রয়োজনে সারে ভর্তুকি বাড়াতে হবে, যাতে সারের দাম কম থাকে। কারণ, কৃষকের হাতে এখন টাকা কম। বিশ্ববাজার থেকেও খাদ্য আমদানি করা সামনের দিনে আরও কঠিন হতে পারে। ফলে দেশের উৎপাদন ঠিক রাখতে সারের দাম ও জোগান ঠিক রাখা উচিত।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

বিদেশ থেকে খালি হাতে ফিরে ড্রাগন চাষে সাফল্য

বাগানে চাষ করা ড্রাগন হাতে মিরাজুল ইসলাম
বাগানে চাষ করা ড্রাগন হাতে মিরাজুল ইসলাম

মিরাজুল ইসলাম (৩৩)। ১০ বছর সৌদি আরবে ছিলেন। আকামা জটিলতায় খালি হাতে দেশে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। এক বছর বেকার থাকার পর ইউটিউবে পতিত জমিতে ড্রাগন চাষের ভিডিও দেখেন। বাবার কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে নেমে পড়েন ড্রাগন চাষে। দেড় বছরের ব্যবধানে এখন উপজেলার সবচেয়ে বড় ড্রাগন বাগান তাঁর। এ বছর খরচ বাদে আট থেকে নয় লাখ টাকা লাভের আশা করছেন তিনি।

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার ইন্দুরকানি গ্রামের বাসিন্দা মিরাজুল। উপজেলার টগরা গ্রামে দেড় একর জমিতে তিনি ড্রাগনের বাগান তৈরি করেছেন। তাঁর বাগানে এখন সাড়ে তিন হাজার ড্রাগন ফলের গাছ আছে।

মিরাজুল ইসলাম বলেন, শ্রমিক হিসেবে ১০ বছর সৌদিতে কাজ করে ২০১৯ সালে দেশে ফেরেন তিনি। আকামা সমস্যার কারণে শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। কিছু একটা করবেন বলে ভাবছিলেন। একদিন ইউটিউবে ড্রাগন চাষের ভিডিও দেখতে পান। সেই থেকে ড্রাগন চাষে আগ্রহ জন্মে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে দেড় একর পতিত জমি ড্রাগন চাষের উপযোগী করেন। গাজীপুর থেকে ৬০ টাকা দরে ৬০০ চারা নিয়ে আসেন। বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে শুরু করেন চাষাবাদ। পরের বছর জুনে ফল পাওয়া শুরু করেন।

ড্রাগনের বাগান করতে মিরাজুলের খরচ হয়েছিল ছয় থেকে সাত লাখ টাকা। ইতিমধ্যে ফল বিক্রি করে তাঁর খরচ উঠে গেছে। সাধারণত মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত গাছে ফল আসে। বছরে ছয় থেকে সাতবার পাকা ড্রাগন সংগ্রহ করা যায়। এখন পরিপক্ব ও রোগমুক্ত গাছের শাখা কেটে নিজেই চারা তৈরি করেন। ড্রাগন চাষের পাশাপাশি বাগানে চুইঝাল, এলাচ, চায়না লেবুসহ মৌসুমি সবজি চাষ করেন। এ ছাড়া ড্রাগনের চারাও উৎপাদন করে বিক্রি করেন তিনি।

মিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বাগানের বেশির ভাগ গাছে এ বছর ফল ধরেছে। গত মঙ্গলবার বাগান থেকে দেড় টন ফল সংগ্রহ করেছেন। ২৫০ টাকা কেজি দরে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পাইকারদের কাছে বিক্রি করেছেন। স্থানীয় বাজারে ৩০০ টাকা কেজি দরে ড্রাগন বিক্রি হয়। নভেম্বর পর্যন্ত আরও পাঁচ–ছয়বার বাগান থেকে ফল তোলা যাবে। আশা করছেন, খরচ বাদে এবার আট থেকে নয় লাখ টাকা লাভ থাকবে।

মিরাজুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমার বাগান থেকে চারা নিয়ে অনেকে বাড়িতে ও ছাদে ছোট পরিসরে ড্রাগনের বাগান করেছেন। আমি এ পর্যন্ত ৪০ টাকায় দেড় হাজার চারা বিক্রি করেছি।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পূর্ণ বয়সের একটি ড্রাগনের চারা রোপণের পর ২৫ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। এর মৃত্যুঝুঁকি নেই বললেই চলে। তবে কয়েক দিন পরপর সেচ দিতে হয়। বৃষ্টির পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হয়। ড্রাগন ফল চাষে রাসায়নিক সার দিতে হয় না।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইশরাতুন্নেছা বলেন, মিরাজুল ইসলামকে ড্রাগন চাষে নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে আসছে কৃষি বিভাগ। উপজেলায় তাঁর বাগানটি সবচেয়ে বড়। তিনি নিরলস পরিশ্রম করে ছোট থেকে বাগানটি বড় করেছেন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

নাসিরনগরে বন্যায় তলিয়ে গেল কৃষকের বাদামখেত

নাসিরনগরের গোয়ালনগর ইউনিয়নে অতিবৃষ্টি ও আগাম বন্যায় তলিয়ে গেছে কৃষকদের বাদামখেত। আজ মঙ্গলবার ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রামে
নাসিরনগরের গোয়ালনগর ইউনিয়নে অতিবৃষ্টি ও আগাম বন্যায় তলিয়ে গেছে কৃষকদের বাদামখেত। আজ মঙ্গলবার ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রামে

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নে অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে কৃষকের প্রায় ৩০ হেক্টর বাদাম চাষের জমি। কয়েক দিন আগে উজানের পানিতে তাঁদের পাকা ধানের জমি তলিয়ে গিয়েছিল। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষকেরা বাদাম চাষ করেছিলেন। আবারও ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ার বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হলেন চাষিরা।

উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১১ এপ্রিল উপজেলায় শিলাবৃষ্টি এবং ১৪ থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত উজানের পানিতে কৃষকের পাকা ধানের জমি তলিয়ে যায়। কৃষকেরা সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ২০০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করেছিলেন। এর মধ্যে উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নে ৩০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করা হয়। উপজেলায় এবার প্রায় ৫০ হাজার মণ বাদাম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। কিন্তু উজানের পানিতে হঠাৎ বন্যায় সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

গোয়ালনগর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আজহারুল হক বলেন, ‘নাসিরনগর উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাদাম চাষ করা হয় আমাদের ইউনিয়নে। কিন্তু এ বছর আগাম বন্যার কারণে কৃষকেরা তাঁদের ফসল ঘরে তুলতে পারেননি। তাঁদের সব ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।’

ওই এলাকার বাদামচাষি মেরাজ মিয়া বলেন, তিনি ছয় বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করেন। দু-এক দিনের মধ্যে বাদাম তুলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু খেতে গিয়ে দেখেন সব বাদাম পানির নিচে। এখন এই বাদাম তুলে কোনো লাভ নেই। এগুলো গরুও খাবে না।

মো. রজব আলী নামের এক কৃষক বলেন, ‘আমাদের ইউনিয়নের জামারবালি, সোনাতলা ও মাইজখোলা গ্রামে বাদামখেত আছে। গত তিন দিনে পাঁচ-ছয় ফুট পানি বাড়ায় সব তলিয়ে গেছে। এখন বাদাম তুলতে কাজের লোকও পাওয়া যাচ্ছে না।’

কৃষক ফতু মিয়া বলেন, গোয়ালনগর ইউনিয়নের বাদাম চাষের জমিগুলো হঠাৎ পানি আসায় তলিয়ে গেছে। ফসল তলিয়ে তাঁদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেল। কয়েক দিন আগেও পাকা ধান পানির নিচে তলিয়ে গিয়েছিল। কৃষকদের দাবি, গোয়ালনগরে বাদাম চাষের জমি তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকদের প্রায় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আবু সাইদ প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলার কয়েকটি চরাঞ্চলে বাদাম চাষ করা হয়। চরাঞ্চলের উঁচু জমিতে প্রথমে আলু চাষের পর বাদাম চাষ করা হয়। আগাম বন্যার কারণে নিচু এলাকার কিছু বাদামখেত পানিতে তলিয়ে গেছে।

আবু সাইদ আরও বলেন, ১৫-২০ দিন আগে উপজেলার প্রায় সব বাদাম উঠে গেছে। গোয়ালনগর ইউনিয়নে ৩০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করা হয়েছিল। এর মধ্যে এক হেক্টর জমির বাদাম তলিয়ে গেছে। সব মিলিয়ে ৭০ হাজার টাকার মতো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সিলেটে বন্যা হওয়ায় এমনটি হয়েছে বলে তিনি জানান।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

পানি দিতে অতিরিক্ত টাকা

পানি দিতে অতিরিক্ত টাকা
পানি দিতে অতিরিক্ত টাকা

ঠাকুরগাঁওয়ে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) একটি গভীর নলকূপের সেচের পানি সরবরাহে কৃষকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হচ্ছে। ভুক্তভোগী কৃষকদের কাছ থেকে পাওয়া এমন অভিযোগের তদন্ত করে সত্যতা পেয়েছে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষ। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বড় বালিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে।

ভুক্তভোগী কৃষকেরা বলছেন, সেচের পানির জন্য প্রিপেইড কার্ডের বাইরে কোনো টাকা দেওয়ার নিয়ম নেই। কিন্তু বিএমডিএর ১০৮ নম্বর গভীর নলকূপের অপারেটরের দায়িত্বে থাকা বিউটি বেগমের স্বামী আকতারুজ্জামান বোরো ধান চাষের জন্য প্রতি বিঘার জন্য ১ হাজার ২০০ টাকা ও অন্য মৌসুমে ৩০০ টাকা নেন। ১০ বছর ধরে তিনি এভাবেই বাণিজ্য করে আসছেন।

সম্প্রতি রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে বিএমডিএর গভীর নলকূপ থেকে খেতে সেচের পানি পেতে হয়রানির শিকার দুই কৃষকের মৃত্যুর ঘটনা দেশজুড়ে আলোচিত হয়।

ঠাকুরগাঁও জেলায় বিএমডিএর ১ হাজার ৪৩১টি গভীর নলকূপ রয়েছে। এর মধ্যে সচল ১ হাজার ৪১৮টি। সেচের আওতায় ৭৬ হাজার ৫০০ পরিবারের জমি রয়েছে ৫৩ হাজার ৫০০ হেক্টর।

* সেচের পানির জন্য প্রিপেইড কার্ডের বাইরে কোনো টাকা দেওয়ার নিয়ম নেই। * সেচের আওতায় ৭৬ হাজার ৫০০ পরিবারের জমি আছে। * কৃষকদের নলকূপের আবেদন পেলে যাচাই করে স্কিম তৈরি করা হয়।

বিএমডিএ সূত্রে জানা গেছে, কৃষকদের নলকূপের আবেদন পেলে যাচাই করে স্কিম তৈরি করা হয়। এরপর সমবায়ের ভিত্তিতে অংশীদারি ফি বাবদ এক লাখ টাকা জমা দিতে হয়। এই নলকূপ পরিচালনার জন্য বিএমডিএ একজন অপারেটর নিয়োগ দেন। প্রিপেইড মিটারিং পদ্ধতিতে কৃষকের নিজ নামে প্রিপেইড কার্ড থাকতে হয়। সেই কার্ড থেকে প্রতি ঘণ্টায় সেচের পানির জন্য ন্যূনতম ১১০ টাকা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কেটে নেওয়া হয়। এর বাইরে অতিরিক্ত কোনো টাকা দেওয়ার নিয়ম নেই।

বড় বালিয়া এলাকার কৃষকেরা জানান, ২০১১ সালের দিকে বড় বালিয়া মণ্ডলপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. আকতারুজ্জামান এলাকায় গভীর নলকূপ স্থাপনের উদ্যোগ নেন। ফি হিসেবে এক লাখ জমা দেওয়ার নিয়ম থাকলেও কোনো কৃষক সেটা দিতে এগিয়ে আসেননি। ফলে আকতারুজ্জামান, দাউদুল ইসলাম ও জোবায়দুর রহমান মিলে অংশীদারি ফি দেন। আকতারুজ্জামানের ৮০ শতাংশ টাকা থাকায় গভীর নলকূপের নিয়ন্ত্রণ তিনিই পান। অপারেটর হিসেবে নিয়োগ পান তাঁর স্ত্রী বিউটি বেগম। যদিও কৃষকেরা আকতারুজ্জামানকেই অপারেটর হিসেবে জানতেন।

সেচের পানি পেতে হয়রানির শিকার হয়ে সদর উপজেলার বড় বালিয়া এলাকার ৫০ জন কৃষক গত ১৭ এপ্রিল বিএমডিএ সহকারী প্রকৌশলীর কাছে অভিযোগ দেন। সেখানে গিয়ে কৃষক ও অপারেটরের সঙ্গে কথা বলে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়।

ভুক্তভোগী কৃষকেরা বলেন, ২০১২ সালে নলকূপটি চালু হলে আওতাধীন কৃষকের কাছ থেকে আকতারুজ্জামান সেচের পানির জন্য প্রিপেইড কার্ডের অতিরিক্ত টাকা আদায় শুরু করেন। আর সেই টাকা থেকে তিনি মাঝেমধ্যে অন্য দুই অংশীদারকে কিছু টাকা ভাগ দেন।

ভুক্তভোগী কৃষক মো. শাহজাহান আলী বলেন, গভীর নলকূপটির আওতায় তাঁর ১০ বিঘা জমি রয়েছে। কার্ডের বাইরে টাকা দেওয়ার নিয়ম না থাকলেও আকতারুজ্জামানকে প্রতি বিঘায় সেচের জন্য ১ হাজার ২০০ টাকা দিতে হয়। এই টাকা না দিলে তিনি পানি দেন না।

ওই নলকূপের আওতায় চার বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করছেন কৃষক মো. হেলাল। তিনি অতিরিক্ত টাকা না দেওয়ায় অপারেটর খেতে পানি দেননি। এতে জমি ফেটে যায়। পরে তিনি শ্যালো ইঞ্জিন দিয়ে জমিতে সেচ দিয়ে খেত রক্ষা করেছেন।

আরেক ভুক্তভোগী মোকলেসুর রহমান বলেন, ১০ বছর ধরে সেচের পানির জন্য অতিরিক্ত টাকা দিয়ে আসছেন। এখন বিরক্ত হয়ে বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। এরপরও কোনো বিচার পাননি।

এ বিষয়ে মো. আকতারুজ্জামান বলেন, তিনি সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেওয়ার পর দেখেন গ্রামে কোনো গভীর নলকূপ নেই। পরে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে নলকূপটি স্থাপন করেন। কৃষকেরা অংশীদারত্বের টাকা দিতে রাজি না হলে তিনি বিএমডিএকে জানান। সে সময় তাঁরা টাকা দিয়ে দিতে পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘পরে আপনি টাকাটা ধীরে ধীরে তুলে নেবেন।’ সেই পরামর্শেই সেচের পানি বাবদ প্রিপেইড কার্ডের অতিরিক্ত কিছু টাকা তিনি নিচ্ছেন। জোর করে কিছু নিচ্ছেন না।

বিএমডিএ ঠাকুরগাঁও কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, অভিযোগটি যাচাই করে সত্যতা পাওয়া গেছে। নলকূপটি সুষ্ঠুভাবে চালানোর জন্য সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ওই অপারেটরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোটেক

কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তারা এক সঙ্গে কাজ করতে রাজি

ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকেরাফাইল ছবি
ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকেরাফাইল ছবি

ডাচ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে দুই দেশের বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা একসঙ্গে কাজ করতে রাজি হয়েছেন।

গতকাল সোমবার নেদারল্যান্ডসের রাজধানী হেগে অনুষ্ঠিত কৃষি খাতের ব্যবসাবিষয়ক এক সম্মেলনে দুই দেশের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা সহযোগিতার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।

নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম রিয়াজ হামিদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত এগ্রি বিজনেস কনক্লেভে বাংলাদেশের প্রায় ৪০জন উদ্যোক্তা ডাচ কৃষি খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি প্রযুক্তি সহযোগিতা ও ব্যবসায়িক সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। দিনব্যাপী আয়োজিত অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেছে ওয়েগেনিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়।

আলোচনায় বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা প্রযুক্তি কিনতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দিলে নেদারল্যান্ডসের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা প্রযুক্তি সহযোগিতা দিতে রাজি থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।

রিয়াজ হামিদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে ডাচরা প্রস্তুত এবং বাংলাদেশি উদ্যোক্তারাও তাদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। এ ছাড়া ডাচ সরকার ইতিমধ্যে বাংলাদেশের বীজ, পশু খাদ্য, পোলট্রি, হর্টিকালচার ও এ্যাকুয়াকালচার বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম সম্পাদন করেছে, যা ওই দেশের বেসরকারি খাতকে আরও উৎসাহিত করেছে।

আলোচনায় কৃষি সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করতে তৈরি আছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্কয়ার, ইস্পাহানি এগ্রো, একে খান অ্যান্ড কোম্পানি, প্যারাগন গ্রুপ, এসিআই, জেমকন গ্রুপসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তিনি জানান, মঙ্গলবার বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা ডাচ প্রযুক্তির প্রয়োগ সরেজমিনে দেখতে যাবেন।

বাংলাদেশের সঙ্গে নেদারল্যান্ডসের পোল্ট্রিখাতে সহযোগিতার আলোচনা অনেকটা এগিয়েছে উল্লেখ করে মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, দুই দেশের মধ্যে মৎস্য, পশুপালন ও হর্টিকালচারে সহযোগিতার বিপুল সম্ভাবনা আছে।

কনক্লেভ আয়োজনে প্রথমবারের মতো দূতাবাসের সঙ্গে অংশীদার হয়েছে নেদারল্যান্ডসের কৃষি মন্ত্রণালয়, নেদারল্যান্ডস এন্টারপ্রাইজ এজেন্সি, নেদারল্যান্ডস ফুড পার্টনারশিপ, ডাচ-গ্রিন-হাইজডেল্টা, লারিভ ইন্টারন্যাশনাল, স্টান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ।

কৃষিজাত পণ্য রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থানকারী নেদারল্যান্ডসের আয়তন বাংলাদেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের কম। ২০২১-এ কৃষিপণ্য ও খাদ্য রপ্তানি করে নেদারল্যান্ডস ১১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি আয় করেছে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশক: শাইখ সিরাজ
© ২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। দা এগ্রো নিউজ, ফিশ এক্সপার্ট লিমিটেডের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। ৫১/এ/৩ পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থাপথ, ঢাকা -১২০৫
ফোন: ০১৭১২-৭৪২২১৭
ইমেইল: info@agronewstoday.com, theagronewsbd@gmail.com