আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

বিশ্ব

করোনা ভাইরাস: করোনাভাইরাস ঠেকাতে নিউজিল্যান্ড কীভাবে এত সফল হলো?

নিউজিল্যান্ডে লকডাউন ছিল অত্যন্ত কঠোর
নিউজিল্যান্ডে লকডাউন ছিল অত্যন্ত কঠোর

পৃথিবীর অনেক দেশে যখন প্রতিদিন হাজার হাজার করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়ছে, তখন জুন মাসের শেষ দিকে নিউজিল্যান্ডে মাত্র করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিশ্চিত হয়েছিল দুই জনের।

শুধু তাই নয়, তার আগের ২৪ দিন নিউজিল্যান্ডে একজনেরও করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়েনি।

ফলে, দুজনের সংক্রমণ ধরা পড়ার যখন জানা গেল যে কোয়ারেন্টাইনের নিয়ম ভঙ্গের জন্যই এটা ঘটেছে – তখন স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হলো।

প্রশ্ন হচ্ছে, নিউজিল্যান্ড কোভিড-১৯ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে এত সফল হলো কীভাবে?

নিউজিল্যান্ড কখন সীমান্ত বন্ধ করেছিল?

ফেব্রুয়ারি মাসের দুই তারিখ চীনের বাইরে প্রথম করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়ে ফিলিপাইনে।

সে সময় নিউজিল্যান্ডে তখন কোন কোভিড সংক্রমণের খবরই ছিল না।

কিন্তু তার পর দিন থেকেই চীন থেকে বা চীন হয়ে আসা সব বিদেশীর প্রবেশ নিষিদ্ধ করে নিউজিল্যান্ড।

পাশাপাশি নিউজিল্যান্ডের কোন নাগরিক চীন থেকে দেশে ফিরলেই তাকে ১৪ দিন আইসোলেশনে থাকতে হতো।

যখন সারা দুনিয়া জুড়ে ভাইরাস ছড়াতে লাগলো – তখন ইরানের সাথেও বিমান চলাচল নিষিদ্ধ করা হলো। কারণ ইরানই ছিল নিউজিল্যান্ডের প্রথম করোনাভাইরাস কেসের উৎস।

এর পর একে একে উত্তর ইতালি ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আসা যাত্রী এবং সংক্রমণ লক্ষণ দেখা যাচ্ছে এমন যে কারো ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি হলো।

জাসিন্ডা আরডার্ন
জাসিন্ডা আরডার্ন

এর পর মার্চের ১৬ তারিখ থেকে নিউজিল্যান্ডে আগমনকারী নাগরিক-অনাগরিক নির্বিশেষে সবার জন্য দেশটিতে অবতরণের পর আইসোলেশন বাধ্যতামূলক করা হলো।

এর ব্যতিক্রম ছিল শুধু প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোর লোকেরা – যেখানে করোনাভাইরাস প্রায় ছড়ায়নি বলা যায়।

প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডার্ন বলেছিলেন, এটা ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে কঠোর বিধিনিষেধ – যে জন্য তিনি কারো কাছে দু:খ প্রকাশ করবেন না।

এরও কয়েকদিন পর মিজ আরডার্ন এক নজিরবিহীন পদক্ষেপ নিলেন । তিনি নিউজিল্যান্ডের নাগরিক নন, বা বাসিন্দা নন – এরকম প্রায় সবার জন্যই দেশটির সীমান্ত বন্ধ করে দিলেন।

“যখন সারা বিশ্বে সংক্রমণ ছিল মাত্র কয়েক হাজার – সে সময়ই এমন পদক্ষেপ নেবার ফলে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে দেশের জনগণের মধ্যে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকিয়ে দেয়া সম্ভব হয়েছিল” – বিবিসিকে বলছিলেন অধ্যাপক মার্টিন বেরকা, নিউজিল্যান্ডের ম্যাসি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অর্থনীতিবিদ।

আগেভাগে লকডাউন, এবং ভাইরাস নির্মূলের পরিকল্পনা

মার্চ মাসের মাঝামাঝি এটা স্পষ্ট হয়ে গেল যে সাধারণ ফ্লু মহামারির কর্মপরিকল্পনা দিয়ে এই নতুন করোনাভাইরাস ঠেকানো যাবে না – বলছিলেন নিউজিল্যান্ডে শীর্ষস্থানীয় সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মাইকেল বেকার।

চীনের উহান শহরের লকডাউনের সাফল্যের ব্যাপারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক রিপোর্টে এটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে নিউজিল্যান্ডকে শুরু থেকেই সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিতে হবে এবং তার উদ্দেশ্য হতে হবে ভাইরাসটি একেবারে উচ্ছেদ করা – বলেন অধ্যাপক বেকার।

নিউজিল্যান্ডে এখন দোকান ও ক্যাফে খুলে দেয়া হয়েছে।
নিউজিল্যান্ডে এখন দোকান ও ক্যাফে খুলে দেয়া হয়েছে।

মার্চের শেষ দিকে জনগণকে দ্রুত পরিবর্তনশীল পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত করতে আরো কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়। নিউজিল্যান্ডে জারি করা হয় চার-স্তর বিশিষ্ট এক সতর্কতা ব্যবস্থা।

মার্চ মাসের ২৫ তারিখ এই হুঁশিয়ারি চতুর্থ স্তরে উন্নীত করা হয়। এর আওতায় জারি করা হয় দেশব্যাপি এক সার্বিক লকডাউন, সবাইকে বাড়িতে থাকতে বলা হয়। চালু থাকে শুধুমাত্র জরুরি সেবাসমূহ।

“অন্যদের জন্য দৃষ্টান্ত”

ওই সময় নিউজিল্যান্ডে মাত্র ১০২ জনের সংক্রমণ রেকর্ড করা হয়েছিল। তখনো কেউ মারা যায়নি।

তুলনামূলকভাবে ওই সময় যুক্তরাজ্যে ৬,৫০০ জন আক্রান্ত হয়েছিলেন, এবং মারা গিয়েছিলেন ৩৩০ জন।

যুক্তরাজ্য কখনো তার সীমান্ত বন্ধ করে নি। তবে জুন মাসের প্রথম দিকে সকল আগমনকারী যাত্রীকে বাধ্যতামূলক আইসোলেশনে থাকতে হবে বলে নিয়ম করেছিল। জুলাই মাসের প্রথম দিকে কিছু দেশের জন্য সেই নিয়ম আবার তুরে নেয়া হয়।

যুক্তরাজ্য সরকারের বক্তব্য ছিল যে তারা “বৈজ্ঞানিক পরামর্শের ভিত্তিতে সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ” নিচ্ছিল। তা ছাড়া যেহেতু যুক্তরাজ্যে জনগোষ্ঠীর মধ্যে সংক্রমণ ততদিনে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল তাই সীমান্তে বিধিনিষেধ আরোপ করলে তার প্রভাব হতো খুবই সীমিত।

নিউজিল্যান্ড প্রতিদিন ১০ হাজার কনট্যাক্ট ট্রেসিং করাতে পারছে
নিউজিল্যান্ড প্রতিদিন ১০ হাজার কনট্যাক্ট ট্রেসিং করাতে পারছে

অধ্যাপক বেরকা বলছিলেন, “ব্রিটিশদের মত আমরা যদি বেশি সময় অপেক্ষা করতাম এবং দীর্ঘ সময় পর্যন্ত সবকিছু খোলা রাখতাম – তাহলেএটা বিরাট সমস্যার পরিণত হতো। আমাদের অর্থনৈতিক সমস্যা হয়তো অন্য কিছু দেশের তুলনায় সামান্য বেশি হয়েছে কিন্তু এর ফল হয়েছে এই যে আমরা বিচ্ছিন্ন হলেও মুক্ত এবং স্বাস্থ্যসম্মতভাবে চলতে পারছি।

“অধ্যাপক বেকার বলছেন, লকডাউন কার্যকর করার ক্ষেত্রে নিউজিল্যান্ড দারুণ কাজ করেছে। সংক্রমণ যখন শীর্ষে তখনও নিউজিল্যান্ডে দৈনিক সংক্রমিতের সংখ্যা ছিল মাত্র ৮৯ জন।

তারা দেশবাসীকে তাদের আহ্বানে মনপ্রাণ দিয়ে সাড়া দেয়াতে পেরেছে – বলছিলেন তিনি।

টেস্ট আর কনট্যাক্ট ট্রেসিং

লকডাউনের সময় ব্যাপকভাবে টেস্ট ও কনট্যাক্ট ট্রেসিংএর এক কর্মসূচি কার্যকর করা হয়।

নিউজিল্যান্ড এখন প্রতিদিন ১০,০০০ টেস্ট করাতে পারছে, এবং কোন সংক্রমিত ব্যক্তি চিহ্নিত হবার সাথে সাথে তার সংস্পর্শে আসা লোকদের আইসোলেশনে যাবার নির্দেশ দিচ্ছে।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা নিউজিল্যান্ডের প্রশংসা করে তাদেরকে অন্য দেশের জন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে তুলে ধরেছে।

নিউজিল্যান্ডের যে সমালোচনা হয়নি তা অবশ্য নয়।

লকডাউন চলতে থাকার ফলে প্রথমদিকে যে রাজনৈতিক ঐকমত্য ছিল তাতে চিড় ধরতে শুরু করে।

তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা সাইমন ব্রিজেস লকডাউনের ফলে অর্থনীতি এবং মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতির কথা তুলে ধরে বলেন, এ ক্ষতি লকডাউন না থাকলে যে ক্ষতি হতো তার চেয়ে বেশি।

লকডাউনের অর্থনৈতিক ক্ষতি নিয়ে মানুষের মধ্যে থেকেও প্রশ্ন উঠেছে।

তবে লকডাউন ভাঙার জন্য পুলিশ যে শত শত লোককে অভিযুক্ত করে – তা প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন ৮০ শতাংশ লোকই।

এ সাফল্য কি ধরে রাখা যাবে?

জুন মাসের ৮ তারিখ জাসিন্ডা আরডার্ন ঘোষণা করলেন, ১৭ দিন ধরে জনগোষ্ঠীর মধ্যে কোন সংক্রমণ হয় নি এবং আক্রান্ত সবাই পুরোপুরি সেরে উঠেছেন – ফলে আপাতত নিউজিল্যান্ড ভাইরাস ছড়ানো থামাতে পেরেছে।

লকডাউন তুলে নেয়া হলো। প্রাত্যহিক জীবন এখন প্রায় স্বাভাবিক হয়ে এসেছে, যদিও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কিছু নিয়ম এখনও বলবৎ আছে।

নিউজিল্যান্ডে জীবন এখন প্রায় স্বাভাবিক
নিউজিল্যান্ডে জীবন এখন প্রায় স্বাভাবিক

কিন্তু বিদেশীদের জন্য সীমান্ত এখনো বন্ধ। কবে খোলা হবে তারও কোন ইঙ্গিত নেই। কর্মকর্তারা বলছেন, এ ক্ষেত্রে আত্মসন্তুষ্টি বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।

এক সপ্তাহ পরই এর সত্যতা বোঝা গেল।

সম্প্রতি যুক্তরাজ্য থেকে আসা দুজন মহিলা করোনাভাইরাস পজিটিভ বলে চিহ্নিত হলেন। তাদের পরীক্ষা না করেই কোয়ারেন্টিন থেকে আগে আগে বাইরে বেরুনোর অনুমতি দেয়া হয়েছিল, এবং তারা অসুস্থ হবর আগে পর্যন্ত গাড়ি চালিয়ে সারা দেশ ঘুরেছিলেন।

এর পর জানা যায়, বেশ কিছু লোককে উপযুক্ত পরীক্ষা ছাড়াই কোয়ারেন্টিন থেকে বেরুনোর অনুমতি দেয়া হয়েছিল – যা সরকারের ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ার শামিল।

যদিও এর ফলে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়েনি, কিন্তু ব্যাপক জনরোষের মুখে স্বাস্থ্য মন্ত্রী ডেভিড ক্লার্ককে পদত্যাগ করতে হয়।

অধ্যাপক বেকার বলেন, নিউজিল্যান্ড একটি প্রত্যন্ত এবং ছোট দেশ বলে অর্থনৈতিক মূল্য স্বাভাবিকভাবেই হবে অত্যন্ত চড়া। কারণ সরকারি ভর্তুকি একসময় শেষ হযে যাবে এবং দেশটির বিদেশী পর্যটক ও কর্মী দরকার।

নিউজিল্যান্ড ছোট দেশ বলেই তারা সফল হতে পেরেছে, তাই নয় কি?

অধ্যাপক বেকার বলছেন, নিউজিল্যান্ডের বিচ্ছিন্নতা আর কম ঘনত্বের জনসংখ্যা তাদের জন্য সহায়ক হয়েছে ঠিকই, কিন্তু কার্যকর সরকার ও অবকাঠামো থাকলে এটা সব দেশেই করা সম্ভব – যেমন ভিয়েতনাম, তাইওয়ান ও চীন।

“বরং যে দেশগুলোর অবস্থা আমাকে অবাক করেছে তারা হলো যুক্তরাজ্য, ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকা। সাধারণত: জনস্বাস্থ্য ক্ষেত্রে আমরা তাদেরকেই নেতৃত্বে ভুমিকায় দেখি।“

তবে যুক্তরাজ্য সরকার সবসময়ই বলেছে যে করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে তাদের কৌশল বৈজ্ঞানিক নির্দেশনাই অনুসরণ করেছে।

  • নিউজিল্যান্ডে এখন দোকান ও ক্যাফে খুলে দেয়া হয়েছে।

    নিউজিল্যান্ডে এখন দোকান ও ক্যাফে খুলে দেয়া হয়েছে।

  • জাসিন্ডা আরডার্ন

    জাসিন্ডা আরডার্ন

  • নিউজিল্যান্ডে লকডাউন ছিল অত্যন্ত কঠোর

    নিউজিল্যান্ডে লকডাউন ছিল অত্যন্ত কঠোর

  • নিউজিল্যান্ডে জীবন এখন প্রায় স্বাভাবিক

    নিউজিল্যান্ডে জীবন এখন প্রায় স্বাভাবিক

  • নিউজিল্যান্ড প্রতিদিন ১০ হাজার কনট্যাক্ট ট্রেসিং করাতে পারছে

    নিউজিল্যান্ড প্রতিদিন ১০ হাজার কনট্যাক্ট ট্রেসিং করাতে পারছে

  • নিউজিল্যান্ডে এখন দোকান ও ক্যাফে খুলে দেয়া হয়েছে।
  • জাসিন্ডা আরডার্ন
  • নিউজিল্যান্ডে লকডাউন ছিল অত্যন্ত কঠোর
  • নিউজিল্যান্ডে জীবন এখন প্রায় স্বাভাবিক
  • নিউজিল্যান্ড প্রতিদিন ১০ হাজার কনট্যাক্ট ট্রেসিং করাতে পারছে
বিজ্ঞাপন
মন্তব্য করুন

অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন

Leave a Reply

ফসল

লাভজনক সবজি চাষ পদ্ধতি

সবজি একটি গুরুত্বপূর্ণ ফসল। কৃষি বিজ্ঞানের ভাষায় সবজিকে উদ্যানতাত্বিক ফসল (Horticultural crops) বলা হয়ে থাকে। পুষ্টিমানের দিক থেকে সবজি ফসল যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি বাণিজ্যিকভাবেও এর গুরুত্ব অপরিসীম। সেজন্য সবজি চাষের আধুনিক কলাকৌশল জানা জরুরি।

আর আধুনিক কলাকৌশল বলতে বৈজ্ঞানিক উপায়ে চাষাবাদকেই বোঝানো হয়ে থাকে। বাংলাদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু সবজি চাষের জন্য খুবই উপযোগী। তবে সারাদেশে যেমন সব ধরনের সবজি উৎপাদিত হয়না ঠিক তেমনি সকল সবজিই আবার সারাবছর উৎপাদিত হয়না। একেক অঞ্চলে একেক ধরনের শাকসবজি উৎপাদিত হয়ে থাকে। আবার বছরের বিশেষ বিশেষ সময়ে বিশেষ বিশেষ সবজির জাত উৎপাদন করা যায়।

সারাদেশে সারাবছরই যেসকল সবজি সহজে উৎপাদিত হয়ে থাকে তাদের কিছু শাকসবজির কথা এখানে তুলে ধরছি। লালশাক, ডাটাশাক, পুইশাক, কলমিশাক, মিষ্টিআলু শাক, ঢেড়শ, গাজর, বরবটি, টমেটো, লাউ ও লাউশাক, পাটশাক, শশা, কাঁচকলা, বেগুন, পেপে, করলা, কচুশাক, কচুর লতি, ধনে পাতা, পুদিনা পাতা ইত্যাদি পরিচিত শাকসবজি। তাছাড়া অপরিচিত বিশেষ কিছু সবজি বিশেষ বিশেষ এলাকার বিশেষত্ব হিসেবে উৎপাদিত হয়ে থাকে। উপরোক্ত ফসলগুলোর মধ্যে কিছু শুধু শাক আর বাকীগুলো শাক এবং সবজি উভয় হিসেবেই প্রচলিত রয়েছে।

কৃষিতাত্বিকভাবে রবি (শীতকাল) ও খরিপ (গ্রীষ্মকাল)- এ দুধরনের মৌসুম রয়েছে। খরিপের আবার দুটি ভাগ, যথা- খরিপ-১ (আগাম গ্রীষ্ম) এবং খরিপ-২ (বর্ষাকাল)। তবে শীতকালীন শাকসবজির মধ্যে বাহারি ও রকমারি বৈচিত্র একটু বেশি। শুধুমাত্র শীতকালে উৎপাদিত হয় এমন ফসলগুলোর মধ্যে রয়েছে- টমেটো, শীতলাউ, ফুলকপি, বাধাকপি, গাজর, সীম, মূলা, ব্রকলি, বাটিশাক, ওলকপি, শালগম, বেগুন, গোল আলু ইত্যাদিই প্রধান। অপরদিকে শুধুমাত্র গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে উৎপাদিত হয় এমন ফসলের মধ্যে রয়েছে- বিভিন্ন ধরনের কচু, ওলকচু, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, কাকরোল, পটোল, করলা, মিষ্টি কুমড়া, চাল কুমড়া ইত্যাদিই প্রধান।

সবজি ফসল উৎপাদন অন্যান্য ফসলের মতো নয়। সবজি ফসল উৎপাদনের জন্য বিশেষ ধরনের যত্নের প্রয়োজন হয়। আর বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আবাদ করতে গেলে অল্প পরিমাণ জায়গায় অধিক পরিমাণ ফসল ফলিয়ে লাভবান হওয়া সম্ভব। সবজি আবাদেও জন্য বাড়ির আঙ্গিনায় অথবা অপেক্ষাকৃত উঁচু জায়গা বেছে নিতে হবে। সেখানে ভালোভাবে চাষ-মই দিয়ে জমির মাটি জো অবস্থায় ঝুরঝুরে করে সেখানে এক মিটার প্রশস্ত এবং প্রয়োজনমত জমির আকার-আকৃতির সাথে সঙ্গতি রেখে লম্বা বেড তৈরী করে নিতে হবে। প্রতিটি বেডের মাঝখানে ৬ থেকে ৮ ইঞ্চি পরিমাণ গর্ত করে নালা সৃষ্টি করতে হবে। অর্থাৎ নালার মাটি তুলেই দুইপাশে বেড প্রয়োজনমত উঁচু করতে হবে।

এভাবে বেড তৈরীর একটি বিশেষত্ব হলো শাকসবজি চাষাবাদ অন্য সাধারণ ফসল আবাদের চেয়ে একটু ভিন্ন। এর জন্য প্রয়োজন হয় বাড়তি সতর্কতা ও যত্নের। শাকসবজির চাষাবাদে যেমন শুষ্ক মৌসুমে সেচের চাহিদা থাকে অপরদিকে বর্ষাকালে অতিরিক্ত বৃষ্টির পানি বের করে দেওয়ার প্রয়োজন হয়। সেজন্যই বেড তৈরী করে মাটি কিছুটা উঁচু করা হয় সেখানে আবার নালা তৈরী করে নিষ্কাষনের ব্যবস্থাও রাখা হয়। কিন্তু বেড এবং নালা তৈরী না করলে সেটা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আবাদ হয়না। সেঠা হয় সাধারণ শাকসবজি চাষ। এতে ফলন অনেক কমে যায়।

পেপে, কাঁচকলা- এ জাতীয় সবজি বসতবাড়ির আঙ্গিনায়, রাস্তা বা পুকুরের ধারে সহজেই আবাদ করা যায়। লালশাক, ডাটা শাক, পাটশাক, মূলাশাক, গাজর, শালগম ইত্যাদি সবজি তৈরীকৃত বেডে ছিটিয়ে বীজ বুনে দিলেই ভালো ফলন পাওয়া যায়। তাছাড়া টমেটো, বেগুন, ফুলকপি, বাধাকপি, ঢেড়শ, কচু, ওলকচু ইত্যাদি সবজি এক মিটারের বেডে দুই সারি করে নির্ধারিত দূরত্বে চারা লাগিয়ে আবাদ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। সেজন্য এসব সবজি উৎপাদনের জন্য আলাদাভাবে নার্সারিতে চারা তৈরী করে নিতে হয়। অপরদিকে লাউ, মিষ্টি কুমড়া, শশা, চাল কুমড়া, পটোল, কাকরোল, করলা, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, সীম, বরবটি ইত্যাদি লতাজাতীয় সবজি চাষের জন্য উক্ত বেডে দুইটি সারি করে সেখানে জাংলা দিয়ে দিতে হয়। সাধারণত বেডের দুইপাশে খুটি দিয়ে পরে তা ইংরেজি অক্ষর ‘এক্স’ আকৃতিতে বা ‘ভি’ আকৃতিতে বাঁকিয়ে বেঁধে দিতে হয়।

বেড ছাড়াও লতাজাতীয় এসব সবজি অতি সহজেই ক্ষেতের আইলে, রাস্তার ধারে, পুকুরের পাড়ে বিশেষ ব্যবস্থায় আবাদ করে ভালো ফলন পাওয়া যায়। তবে অন্যান্য যেকোন ফসলের তুলনায় এসব সবজি ফসলের একটু বেশি যত্নের প্রয়োজন হয়। বিনা আবাদেই এসব সবজি চাষ করা যেতে পারে। সেজন্য বন্যা পরবর্তীতে পুনর্বাসনের সময় বিনাচাষে এসব আবাদের পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। সম্পূর্ণ জৈবভাবেই এসব সবজি ফসল উৎপাদন সম্ভব। আবাদের পূর্বে সামান্য পরিমাণ প্রয়োজনীয় রাসায়নিক সার ব্যবহার করে বাকীটা মেটাতে হবে বাড়িতে উৎপাদিত জৈব সারের মাধ্যমে। তারপর আন্তপরিচর্যা এবং পোকামাকড়ের আক্রমণ ঠেকাতেও জৈব পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে। তখন এসব উৎপাদিত ফসল সকলের জন্য নিরাপদ খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।

কাজেই এভাবেই সারাবছর নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় স্বষ্পপরিসরে শাকসবজি উৎপাদন করে নিজের চাহিদা মিটিয়ে তা বাণিজ্যিকভাবেও লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে। আমাদের শারীরিক পুষ্টি চাহিদার একটি বিরাট অংশ শাকসবজি থেকে আসা দরকার। দৈনিক একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের গড়ে কমপক্ষে আড়াইশ গ্রাম শাকসবজি খাওয়া প্রয়োজন। আর সেটা নিবিড়ভাবে এবং নিরাপদভাবে খেতে হলে নিজের উৎপাদিত শাকসবজি খাওয়াই সবচেয়ে উত্তম। কাজেই আমাদের সারাবছর অলস সময়টাকে কাজে লাগিয়ে আসুন নিজের বাড়ির আঙ্গিনায় সবজির বাগান গড়ে তুলি।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

বাংলাদেশ

কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ

একজন টেলিভিশন তারকা, কৃষি উন্নয়ন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজের জন্মদিন আজ। তিনি ১৯৫৪ সালের এদিনে জন্মগ্রহণ করেন চাঁদপুরে (সার্টিফিকেট অনুযায়ী তার জন্মতারিখ ২৮শে জুন ১৯৫৬)। শাইখ সিরাজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন ভূগোলে। ছাত্রজীবনেই সম্পৃক্ত হন বাংলাদেশ টেলিভিশন, বেতার ও সংবাদপত্রের সঙ্গে।

কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ

শাইখ সিরাজ ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিমিটেড, চ্যানেল আই-এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও বার্তা প্রধান। টানা সাড়ে চার দশক ধরে তিনি গণমাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে দেশের কৃষি ও কৃষক তথা উৎপাদন-অর্থনৈতিক খাতে অপরিসীম ভূমিকা রেখে চলেছেন।

বাংলাদেশ টেলিভিশনের মাটি ও মানুষ অনুষ্ঠান উপস্থাপনার মধ্য দিয়ে সকল শ্রেণিপেশার মানুষের মধ্যে বিপুল গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেন তিনি। পরে তার নিজস্ব পরিচালনাধীন টেলিভিশন ‘চ্যানেল আই’তে শুরু করেন কৃষি কার্যক্রম হৃদয়ে মাটি ও মানুষ। উন্নয়ন সাংবাদিকতার জন্য তিনি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দু’টি রাষ্ট্রীয় সম্মান স্বাধীনতা পুরস্কার (২০১৮) ও একুশে পদক (১৯৯৫) লাভ করেন।

কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৬৮তম জন্মদিন আজ
কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ

টেলিভিশনসহ গণমাধ্যমের সঙ্গে প্রায় চার দশকের একনিষ্ঠ পথচলার মধ্য দিয়ে শাইখ সিরাজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন উন্নয়ন সাংবাদিকতার এক অগ্রপথিক হিসাবে। গণমাধ্যমে তার উদ্বুদ্ধকরণ প্রচারণায় আমূল পরিবর্তন এসেছে বাংলাদেশের কৃষিতে। বাংলাদেশে খাদ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে সূচিত হয়েছে বৈপ্লবিক সাফল্য।

গ্রামীণ জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এসেছে ইতিবাচক পরিবর্তন। একইসঙ্গে শহর-নগরের মানুষকে করেছেন কৃষিমুখি। ফলে দেশের অর্থনীতিতে কৃষির বহুমুখি অবদান সূচিত হয়েছে।

‘মাটি ও মানুষ’

বাংলাদেশের কৃষিতে গত কয়েক দশকে যে বিরাট পরিবর্তন ঘটেছে, শাইখ সিরাজকে বর্ণনা করা হয় সেই পরিবর্তনের পেছনে অন্যতম প্রধান এক চরিত্র হিসেবে।

বাংলাদেশে যখন বিজ্ঞানীরা একের পর এক নতুন উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান উদ্ভাবন করে চলেছেন, কৃষিতে নতুন ধ্যান ধারণা এবং কৌশল চালুর জন্য সরকারের নানা পর্যায় থেকে চেষ্টা চলছে, সেগুলো সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে বিরাট ভূমিকা রাখে তার কৃষি বিষয়ক অনুষ্ঠান, ‘মাটি ও মানুষ।’

“শুরুতে এই অনুষ্ঠানটা হতো আমার দেশ নামে। তখন এটি ৫০ মিনিটের পাক্ষিক অনুষ্ঠান। পরে এটিকেই ‘মাটি ও মানুষ’ নামে সাপ্তাহিক অনুষ্ঠানে রূপান্তরিত করি। আমার মনে হয়েছিল বাংলাদেশের মানুষের বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানের চেয়ে বেশি দরকার শিক্ষামূলক মোটিভেশনাল অনুষ্ঠান। কৃষকদের যদি নতুন বীজ, নতুন প্রযুক্তি, নতুন কৌশল, এসব ঠিকমত বোঝানো যায়, তাহলে কৃষিতে বিরাট পরিবর্তন নিয়ে আসা সম্ভব।”

গত চার দশক ধরে শাইখ সিরাজ হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশের কৃষকদের কাছে কৃষি বিষয়ক তথ্যের প্রধান উৎস। উনিশ’শ আশির দশকে, যখনো টেলিভিশন ঘরে ঘরে পৌঁছায়নি, তখনো গ্রামের হাটেবাজারে, কমিউনিটি সেন্টারে প্রতি শনিবার সন্ধ্যায় ‘মাটি ও মানুষ’ দেখার জন্য ভিড় করতো মানুষ।

কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৬৮তম জন্মদিন আজ
কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ

তবে কৃষকদের নতুন ধরণের কৃষিতে উৎসাহিত করার কাজটা সহজ ছিল না।

“আজকের কৃষক এবং তিরিশ বছর আগের কৃষকের মধ্যে তফাৎ আকাশ আর পাতাল। তখন কৃষকের কাছে একজন কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা যে কথা বলতেন, একজন টেলিভিশন উপস্থাপক হিসেবে আমি যেকথা বলতাম, সেটা তারা মানতে চাইতো না। তারা ভাবতো, আমরা যেধরণের কৃষির কথা বলছি, যদি সেটাতে ভালো ফসল না হয়? এ কারণে সে সহজে মোটিভেট হতে চাইতো না। সহজে নতুন প্রযুক্তি নিতে চাইতো না।”

“আমি যখন আশির দশকে উচ্চফলনশীল নতুন জাতের ধানের কথা বলছি, গমের কথা বলছি, তখন পরিস্কার তারা আমাকে বলতো এই রাবার ভাত খাবো না। তখন পর্যন্ত উদ্ভাবিত নতুন জাতের ধানের মান তেমন ভালো ছিল না। ভাতটা ছিল রাবারের মতো, ভাতের দানা উপর থেকে থালার উপর ফেললে সেটি রাবারের মতো ড্রপ করতো।”

কিন্তু বিজ্ঞানীরা যখন তাদের গবেষণায় নতুন নতুন সাফল্য পাচ্ছিলেন, আর সেই সঙ্গে শাইখ সিরাজও তার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কৃষকদের মন জয় করার জন্য নতুন কৌশল নিচ্ছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের অশোকা ফেলো শাইখ সিরাজ খাদ্য নিরাপত্তা ও দারিদ্র বিমোচন বিষয়ে সাংবাদিকতায় অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসাবে তিনি ২০০৯ সালে অর্জন করেন জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার এ এইচ বুর্মা এ্যাওয়ার্ড। এ ছাড়া তিনি পেয়েছেন এশিয়ার মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার গুসি পিস প্রাইজ, বৃটেনের বিসিএ গোল্ডেন জুবিলি অনার এ্যাওয়ার্ডস। বৃটিশ হাউজ অব কমন্স তাকে প্রদান করেছে বিশেষ সম্মাননা, বৃটিশ-বাংলাদেশ ব্যবসায়ী সংগঠন তাকে দিয়েছে গ্রীন এ্যাওয়ার্ড। এ ছাড়া পেয়েছেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির স্বর্ণপদক, ডা. ইব্রাহিম মেমোরিয়াল স্বর্ণপদক, রণদা প্রসাদ সাহা স্বর্ণপদকসহ অর্ধশত দেশি-বিদেশি পুরস্কার ও সম্মাননা।

কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ
কৃষকের বন্ধু ও কৃষি উন্নয়ন এর পথিকৃৎ শাইখ সিরাজের ৭০তম জন্মদিন আজ

চ্যানেল আই ও বাংলাদেশ টেলিভিশনে কৃষি বিষয়ক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত লিখে থাকেন। তিনি এদেশে কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে নিরস বিষয় হিসাবে উপেক্ষিত কৃষিতে জাতীয় সংবাদের প্রধান খবরের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন। শাইখ সিরাজের প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- মৎস্য ম্যানুয়েল, মাটি ও মানুষের চাষবাস, ফার্মার্স ফাইল, মাটির কাছে মানুষের কাছে, বাংলাদেশের কৃষি: প্রেক্ষাপট ২০০৮, কৃষি ও গণমাধ্যম, কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট (সম্পাদিত), আমার স্বপ্নের কৃষি, কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট (২০১১), সমকালীন কৃষি ও অন্যান্য প্রসঙ্গ (২০১১), কৃষি ও উন্নয়ন চিন্তা (২০১৩) ইত্যাদি।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশে হতে পারে সারের সংকট

সারের সংকট
সারের সংকট
সারের সংকট

চলতি বোরো মৌসুমে সার কিনতে কৃষকদের সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা করে বেশি দিতে হয়েছে। আর সরকারকেও সার বাবদ ভর্তুকি দিতে হচ্ছে বাজেটে বরাদ্দের তিন গুণের বেশি—প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশ এখন মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) সার আমদানি নিয়ে বিপাকে পড়েছে।

ধান, আলু ও সবজি চাষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এমওপি সারের ৬০ শতাংশ আনা হতো রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে। ওই দুই দেশ নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়ায় এখন বাংলাদেশকে এমওপি কিনতে হচ্ছে কানাডা থেকে। বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়া ও আমদানিতে অনিশ্চয়তার কারণে বাংলাদেশে সারের সংকট হতে পারে। ভর্তুকির চাপ সামলাতে বাংলাদেশকে সব ধরনের সারের খুচরা মূল্য বাড়াতে হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিবিষয়ক সংস্থা ইউএসডিএর চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ‘বাংলাদেশে সার সরবরাহ ও ব্যবহারে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের এমওপি সারের ২০ শতাংশ সরবরাহ কমানো হলে সামনের বোরো মৌসুমে ধান, গম ও রবি মৌসুমের অন্যান্য ফসলের উৎপাদন ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কমতে পারে। এতে বাংলাদেশের খাদ্য উৎপাদন ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে।

এমনিতেই এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমাদের ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সারের কারণে নতুন করে যাতে আর সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।

এ এম এম শওকত আলী, সাবেক কৃষিসচিব

তবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, দেশে চলতি বোরো মৌসুমে নতুন করে আর সারের দরকার হবে না। সামনে আলুর মৌসুমে ইউরিয়া, এমওপিসহ অন্যান্য সারের চাহিদা বাড়বে। ওই সময়ের জন্য সার সরবরাহ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ কানাডা ও মধ্যপ্রাচ্যের সার সরবরাহকারী দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে।

জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কানাডা থেকে মোট আট লাখ টন এমওপি সার আমদানির উদ্যোগ নিয়েছি। এ ব্যাপারে ওই দেশের সঙ্গে আমাদের সমঝোতা স্মারক হয়েছে। ফলে এই সার নিয়ে সরকারের কোনো দুশ্চিন্তা নেই। তবে সার বাবদ সরকারের বিপুল পরিমাণে ভর্তুকি বাড়ছে। এই চাপ নিয়েও সরকার ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ওই ভর্তুকি দিয়ে যাবে।’

কমানো হয়েছে চাহিদা

বাংলাদেশে চলতি অর্থবছরে ৬৯ লাখ টন রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয়েছে। এর মধ্যে ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি—এই চার ধরনের সার ব্যবহার হয় ৫৭ লাখ টন। আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের ওই চার ধরনের সারের চাহিদা কমিয়ে ৫৫ লাখ ৫০ হাজার টনে নামিয়ে আনা হয়েছে।

দেশে প্রয়োজনীয় সারের ৮০ শতাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এর মধ্যে এমওপি সারের বড় অংশ আসে রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে।

প্রসঙ্গত, ওই চারটি প্রধান সার কৃষকদের কাছে বিক্রির ক্ষেত্রে সরকার ভর্তুকি দিয়ে থাকে। চলতি অর্থবছরে সরকার প্রাথমিকভাবে সারে ভর্তুকি বাবদ ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে গত ছয় মাসে সারের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। বেশির ভাগ সারের দাম তিন থেকে চার গুণ বেড়ে যাওয়ায় সরকারকে ভর্তুকির পরিমাণ ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা করতে হয়। কিন্তু অর্থবছরের শেষের দিকে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে হিসাব করে দেখা হয়েছে, ভর্তুকির পরিমাণ এবার বেড়ে কমপক্ষে ৩০ হাজার কোটি টাকা গিয়ে দাঁড়াবে।

জিপসাম, জিংক সালফেট ও অ্যামোনিয়াম সালফেট ও ম্যাগনেসিয়াম সালফেট সারে সরকার কোনো ভর্তুকি দেয় না। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কিনে ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কাছে তা বিক্রি করে থাকেন। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষককেও বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে।

সাবেক কৃষিসচিব এ এম এম শওকত আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমনিতেই এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমাদের ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সারের কারণে নতুন করে যাতে আর সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। আর সরকারের অন্যান্য খাতের ভর্তুকি কমিয়ে প্রয়োজনে সারে ভর্তুকি বাড়াতে হবে, যাতে সারের দাম কম থাকে। কারণ, কৃষকের হাতে এখন টাকা কম। বিশ্ববাজার থেকেও খাদ্য আমদানি করা সামনের দিনে আরও কঠিন হতে পারে। ফলে দেশের উৎপাদন ঠিক রাখতে সারের দাম ও জোগান ঠিক রাখা উচিত।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোটেক

কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তারা এক সঙ্গে কাজ করতে রাজি

ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকেরাফাইল ছবি
ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকেরাফাইল ছবি

ডাচ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে দুই দেশের বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা একসঙ্গে কাজ করতে রাজি হয়েছেন।

গতকাল সোমবার নেদারল্যান্ডসের রাজধানী হেগে অনুষ্ঠিত কৃষি খাতের ব্যবসাবিষয়ক এক সম্মেলনে দুই দেশের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা সহযোগিতার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।

নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম রিয়াজ হামিদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত এগ্রি বিজনেস কনক্লেভে বাংলাদেশের প্রায় ৪০জন উদ্যোক্তা ডাচ কৃষি খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি প্রযুক্তি সহযোগিতা ও ব্যবসায়িক সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। দিনব্যাপী আয়োজিত অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেছে ওয়েগেনিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়।

আলোচনায় বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা প্রযুক্তি কিনতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দিলে নেদারল্যান্ডসের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা প্রযুক্তি সহযোগিতা দিতে রাজি থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।

রিয়াজ হামিদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে ডাচরা প্রস্তুত এবং বাংলাদেশি উদ্যোক্তারাও তাদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। এ ছাড়া ডাচ সরকার ইতিমধ্যে বাংলাদেশের বীজ, পশু খাদ্য, পোলট্রি, হর্টিকালচার ও এ্যাকুয়াকালচার বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম সম্পাদন করেছে, যা ওই দেশের বেসরকারি খাতকে আরও উৎসাহিত করেছে।

আলোচনায় কৃষি সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করতে তৈরি আছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্কয়ার, ইস্পাহানি এগ্রো, একে খান অ্যান্ড কোম্পানি, প্যারাগন গ্রুপ, এসিআই, জেমকন গ্রুপসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তিনি জানান, মঙ্গলবার বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা ডাচ প্রযুক্তির প্রয়োগ সরেজমিনে দেখতে যাবেন।

বাংলাদেশের সঙ্গে নেদারল্যান্ডসের পোল্ট্রিখাতে সহযোগিতার আলোচনা অনেকটা এগিয়েছে উল্লেখ করে মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, দুই দেশের মধ্যে মৎস্য, পশুপালন ও হর্টিকালচারে সহযোগিতার বিপুল সম্ভাবনা আছে।

কনক্লেভ আয়োজনে প্রথমবারের মতো দূতাবাসের সঙ্গে অংশীদার হয়েছে নেদারল্যান্ডসের কৃষি মন্ত্রণালয়, নেদারল্যান্ডস এন্টারপ্রাইজ এজেন্সি, নেদারল্যান্ডস ফুড পার্টনারশিপ, ডাচ-গ্রিন-হাইজডেল্টা, লারিভ ইন্টারন্যাশনাল, স্টান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ।

কৃষিজাত পণ্য রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থানকারী নেদারল্যান্ডসের আয়তন বাংলাদেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের কম। ২০২১-এ কৃষিপণ্য ও খাদ্য রপ্তানি করে নেদারল্যান্ডস ১১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি আয় করেছে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

পতিত জমিতে চিনাবাদাম চাষে লাভবান হচ্ছেন কৃষক

মেহেরপুর: পতিত ও অনুর্বর বেলে মাটির জমিতে চিনাবাদাম চাষ করে লাভবান হচ্ছেন মেহেরপুরের চাষিরা। ফলন ও বাজার দর ভালো এবং কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় দিন দিন এই এলাকায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বাদামের চাষ। 

সদর উপজেলার মদনাডাঙ্গা, শ্যামপুর, টেংগারমাঠ ও গোপালপুর গ্রামের অধিকাংশ জমির মাটি বেলে। ফলে এই এলাকার চাষিরা ধান, গম, পাটসহ অন্যান্য ফসল আবাদ করে খুব একটা লাভবান হতে পারেন না।

ধান কাটার পর এ সব জমি সাধারণত পতিত থাকে। এজন্য ৯০ দিনের ফসল হিসেবে অল্প খরচে বাদাম চাষ করছেন এলাকার চাষিরা।  

মেহেরপুর জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, জেলায় এবার বাদাম চাষ হয়েছে ১৫ হেক্টর জমিতে। এবার এক বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করতে চাষিদের খরচ হয়েছে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা সেক্ষেত্রে বাদামের ফলন হয়েছে ৬ থেকে ৭ মণ। আর এ  ফলনে প্রায় ২০ হাজার টাকা ঘরে তুলছেন তারা। বাজারে প্রতিমণ বাদাম বিক্রি হচ্ছে ২৭শ’ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত।  সদর উপজেলার মদনাডাঙ্গা গ্রামের বাদাম চাষি খাঁজা আহমেদ, কাওছার আলী ও ফিরোজ হোসেন বাংলানিউজকে জানান, এলাকার মাটি বেলে হওয়ায় সাধারণত সবজি, আলু ও অন্যান্য ফসল চাষ করার পর জমি পতিত থাকে। সে সময়ে চিনা বাদামের চাষ করা হয়। বাদাম চাষে খরচ কম এবং উৎপাদন ও বাজার দর ভাল। তাই দিন দিন চাষিরা তাদের পতিত জমিতে চিনা বাদামের চাষ শুরু করছেন।  

এছাড়া বাদাম ছাড়ানো, শুকানোসহ যাবতীয় কাজ করে থাকেন এখানকার নারীরা। বাদামের গাছ আবার শুকিয়ে জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করছেন গৃহিণীরা।  

নারী শ্রমিক সাহানা খাতুন ও জরিমন নেছা বাংলানিউজকে বলেন, আমরা বাদাম ছাড়ানো ও শুকানোর কাজ করে থাকি। এলাকার ২৫/৩০ জন নারী শ্রমিক এ কাজ করে আসছেন।  
গৃহিণী সাজেদা খাতুন ও জামেলা খাতুন জানান, বাদামের লতা জালানি হিসেবে বেশ ভাল। তাই লতাও বিক্রি হচ্ছে।

মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. আক্তারুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, চিনা বাদামের চাষ সাধারণত পতিত জমিতে হয়ে থাকে। এলাকার চাষিরা এই জমিতে বাদামের চাষ করে বাড়তি আয় করছেন। তাই বাদাম চাষ যাতে আরও সম্প্রসারিত হয় সেজন্য কৃষি বিভাগ চাষিদের বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছে।  

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশক: শাইখ সিরাজ
© ২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। দা এগ্রো নিউজ, ফিশ এক্সপার্ট লিমিটেডের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। ৫১/এ/৩ পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থাপথ, ঢাকা -১২০৫
ফোন: ০১৭১২-৭৪২২১৭
ইমেইল: info@agronewstoday.com, theagronewsbd@gmail.com